ফেইসবুক জিহাদীদের ভাইরাল প্রক্রিয়া ও স্ববিরোধীতা

https://muhammadnazrulislam.blogspot.com/

মুহাম্মদ নজরুল ইসলামঃঃ জামায়াত ঘরোনার বেশ কিছু ফেইসবুক জিহাদী রয়েছেন, যাদের জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ ফেইসবুকের কী বোর্ড পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। জামায়াতের অত্যাবশ্যকীয় দৈনন্দিন কাজ তথা দাওয়াতী কাজ করা, বৈঠকে উপস্থিত হওয়া, ব্যক্তিগত রিপোর্ট সংরক্ষণ ও পেশ, মাসিক সাহায্য প্রদান এবং সামাজিক কাজ-এসব কাজে তাদেরকে পাওয়া যায় না। অনিয়মিত কাজ তথা মিছিল, মিটিং, সমাবেশ, এককালীন দানেও তাদের অনুপস্থিতি লক্ষণীয়।

এই সব ফেইসবুক জিহাদী ভাইয়েরা ভাইরাল করে সর্বমহলে পরিচিত করেছেন ফেইসবুক এমপি ব্যারিস্টার সুমনকে। যার সুচনা হয়েছিল লন্ডনে তার একটি ঘরোয়া সমাবেশে, যেখানে তিনি তথাকথিত যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালের একজন প্রসিকিউটর হিসাবে বিশদ বিবরণ দিয়ে বক্তব্য প্রদান করেছিলেন।

মাওলানা মামুনুল হক, যিনি নিজ দলের ও নিজ ঘরোনার সিদ্ধান্ত ও একটিভিটিজের আত্মসমালোচনা করে জামায়াতে ইসলামীর প্রশংসা করে একটি চমকপ্রদ বক্তব্য প্রদান করেছিলেন। সেই ক্লিপটি ফেইসবুক জিহাদী ভাইয়েরা শেয়ার কমেন্টের মাধ্যমে ভাইরাল করেছিলেন।

শায়খ আহমাদুল্লাহ, যার লিবারেল ও চমৎকার প্রশ্নোত্তরের জন্য তিনি সমাদৃত। তার তৎপরতা সমূহকে প্রমোট করে ফেইসবুক জিহাদী ভাইয়েরা তাকে পরিচিত করেছেন।

ফেইসবুক এমপি যে নির্বাচনের মাধ্যমে এমপি হলেন, সেই নির্বাচনকে জামায়াতে ইসলামী ডামি নির্বাচন মনে করে। অথচ ফেইসবুক ভাইয়েরা তাকে ভাইরাল করতে আদাজল খেয়ে নামলেন কেবল এজন্য যে, তিনি আওয়ামীলীগের রানিং এমপি ও প্রতিমন্ত্রীকে বিশাল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন। অথচ এই নির্বাচনটাকেই জামায়াতে ইসলামী বৈধতা দেয় না। কারো বিজয়ে বা পরাজনে খুশী বা বেজার হওয়া পক্ষান্তরে নির্বাচনকে বৈধতা দেয়া বৈ কি হতে পারে?

মাওলানা মামুনুর হক সাহেব জামায়াত সম্পর্কিত বক্তব্য প্রদানের মাত্র কয়েকদিন পর তিনি এমন একটি বক্তব্য প্রদান করলেন, যা জামায়াতে ইসলামীর জন্য নেগেটিভ বক্তব্য। তখন আমরা আবার দেখলাম মামুনুল হক সাহেবকে ঐ জিহাদী ভাইয়েরা ইসলাম থেকে খারিজ করে দিলেন।

শায়খ আহমাদ উল্লাহ কখনও কোনদিন বলেননি যে, তিনি জামায়াতে ইসলামী করেন। কিন্তু তার জন্য পাগলপারা হয়ে জামায়াতী লোকেরাই বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাফসীর মাহফিলসহ ইসলামী জলসার আয়োজন করেন। এর মাধ্যমে জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতায় তাকে পরিচিত ও গ্রহণযোগ্য করে গড়ে তোলা হয়। আবার সেই আহমদ উল্লাহ সাহেব যখন জামায়াতের জন্য নেগেটিভ বিবেচিত এমন বক্তব্য প্রদান করলেন (বক্তব্যের সূত্রটি অত্যন্ত দূর্বল, তাই তিনি তা বলেছেন কি না, তা সিউর নয়), তখন আমরা দেখলাম আবার এই ফেইসবুক জিহাদী ভাইয়েরা তার গোশত নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিলেন।

অথচ, জামায়াতে ইসলামীর জন্য যাদের জান কুরবান, যারা জামায়াতে ইসলামীর নিয়মিত রুকন এবং একই সাথে বড় পর্যায়ের আলিম, তাদেরকে আমরা প্রমোট করিনা, ভাইরাল করিনা। আমার নিজের উপজেলায় প্রতি বছর শীত মওসূমে প্রায় একশত এর মতো মাহফিল হয়ে থাকে, যার অধিকাংশই জামায়াতীদের তত্ত্বাবধানে। কিন্তু সেখানে জামায়াতে ইসলামীর কোন দায়িত্বশীল আলেমে দ্বীনকে (২/১টি ব্যতিক্রম ছাড়া) দাওয়াত দিতে দেখিনা। তাহলে দোষ দেবো কাকে।

মিজানুর রহমান আযহারী-তিনি কি কখনো বলেছেন যে, আমি জামায়াতে ইসলামী করি। জামায়াতে ইসলামী কি কখনো বলেছে যে, আযাহারী জামায়াতে ইসলামী করেন। আমীর হামযা, আব্বাসী সহ মেক্সিমামের ক্ষেত্রে একই কথা। তাহলে আমরা লক্ষ্যহীন জিহাদ নিয়ে অগ্রসর হয়ে একদিন কাউকে উঠাচ্ছি, আরেকদিন তাকে নামাচ্ছি-এমনটা কেন? আমীরে জামায়াত ও আযহারীর লাইভ বক্তব্য কেন একই সময়ে হয় আর সেখানে আযহারীর লাইভের দর্শক কেন হয় ৬০ হাজার-যেখানে আমীরে জামায়াতের মাত্র ১০ হাজার। জামায়াতের দায়িত্বশীলদের ফেইসবুক পোষ্ট গুলোতে কেন এতো কম লাইক-শেয়ার-কমেন্ট হয়? কেন সেগুলো ভাইরাল হয় না?

এই জিহাদ, ফেইসবুকের জিহাদ, এটি কি একটি স্ববিরোধী জিহাদ হচ্ছেনা?

প্রসংগত মনে রাখবেন, ফেইসবুক আপনার আদর্শের প্রচারের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ফেইসবুক আপনাকে যত ভিউ দেখায়, বাস্তবে কিন্তু ভিউ সেই ধরণের হয়না, ফেইসবুকের মেকানিজম থেকে তাদের ব্যবসায়িক সুবিধার্থে তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভংগীর আলোকে ভিউ দেখানো হয়ে থাকে। বিধায়, আপনি আপনার বক্তব্য যতজনের কাছে পৌছিয়েছেন বলে মনে করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন, বাস্তব অবস্থা কিন্তু তা নয়। বিধায় ফেইসবুক জিহাদ বাদ দিয়ে নফসের বিরুদ্ধে জিহাদে অবতীর্ণ হওয়া প্রয়োজন।

আমার লেখা অন্যান্য আর্টিক্যাল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন।

Post a Comment

1 Comments

আপনার লিখা পড়ে অনেক ভাল লাগল,তবে লিখার সাথে জামাতের রুকন আলেমদের নাম গুলো দিলে।