হে দ্বীনের দায়ীঃ আপনাকেই বলছি

মুহাম্মদ নজরুল ইসলামঃঃ

হে দ্বীনের দায়ী! আপনার সাথে বেশ ক’দিন আগে বিস্তর আলাপে আপনার সম্পর্কে অনেক জানার সুযোগ হলো। আপনার তৎপতা আর বক্তৃতার মোহনীয়তায় আমি এবং আমরা মুগ্ধ। আপনার গতিশীল নেতৃত্বে খরা জমিনে ফুটুক শান্তির বারিধারা-এই প্রত্যাশা আমাদের সকলের।

হে দ্বীনের দায়ী! আপনার গতিশীল নেতৃত্ব আর মোহনীয় বক্তৃতার সাথে সাথে ব্যক্তিগত জীবনে আপনার আমলটা কেমন তা আমার অজনাই থেকে গেল। ব্যক্তিগত আমলের বিষয়গুলো ব্যক্তিগত থাকুক-এটাই আমি পছন্দ করি। ব্যক্তিগত আমল গুলো মালিক আর গোলাম, আল্লাহ আর বান্দার মধ্যে সীমাবন্ধ থাকাই উত্তম বলে মনে করি। কিন্তু সব সময় চিন্তা করি কুরআনের সেই আয়াতকে নিয়ে, যেখান বলা হয়েছেঃ হে ঈমানদারগন! তোমরা কেন এমন কথা বলো, যা তোমরা করোনা। আল্লাহর নিকট রাগ উদ্রেককারী বিষয় হলো-তোমরা তা বলো, যা তোমরা করনো।

হে দ্বীনের দায়ী! আপনার দুনিয়াবী অর্জনের অনেক বিষয় জানতে পেরে তৃপ্ত হলাম। দ্বীনের পথের পথিকেরা যতই স্বচ্ছল হবেন, দ্বীনের কাজ ততই গতিশীল হবে। সহযাত্রীরা ততই সুবিধা পাবেন। দ্বীনের পথে অবারিত সময় দেয়া যাবে। এই কথা গুলো ভেবে আপনার বৈষয়িক উন্নতিতে তৃপ্তই নয় শুধু আনন্দিত হলাম।

আপনার কোটি টাকা দামের বাসা, লক্ষ লক্ষ টাকা মূল্যের ফ্লাট, বিঘা বিঘা অনেক অনেক বিঘা পরিমাণের ক্ষেতের জমির সাথে সাথে বিভিন্ন বানিজ্যিক প্লটের মালিকানা আপনার আগামীর সময়ে আপনাকে নিরচ্ছিন্ন সময় দিতে সহযোগিতা করবে ভেবে অনেক অনেক আশ্বস্ত হলাম।

আপনি কোন কোন প্রতিষ্ঠান থেকে দানবীর হিসাবে সম্বর্ধিত হলেন, তা আপনার জবানীতে শোনার সাথে সাথে আপনার ড্রইং রুমে সাজিয়ে রাখা মনোরম ক্রেস্ট গুলোও দেখতে পেলাম। ভালই লাগলো।

আপনার হল রুমে রাখা এ্যালবামটিও আমার দেখার সুযোগ হয়েছিল। আপনার বাসায় মাশাআল্লাহ অনেক সেলিব্রেটি এসেছেন, আবার অনেককে নিয়ে আপনি বড় বড় নামকরা হোটেলে পার্টি দিয়েছেন-সব কিছু অত্যন্ত সুন্দর ভাবে সাজানো রয়েছে এ্যালবামটিতে। খুবই ভাল লাগলো, যখন দেখলামঃ আপনার এ্যালবামটা কেবল ইসলামিক বা দ্বীনি সেলিব্রেটিদের দিয়ে সাজানো। দ্বীনের দুশমনদের সাথে আপনার কোন যোগাযোগ নাই-এটা খুবই আশাব্যঞ্জক।

হে দ্বীনের দায়ী! আপনার এই সাফল্যের সাথে সাথে দোয়া করি এই সব কিছু ছেড়ে দিয়ে আমরা যখন চলে যেতে হবে অন্য এক জগতে-যেখানে এই সবের কোন কিছুই কোন কাজে আসবে না এবং এই গুলো তথা গাড়ী, বাড়ী, ফ্লাট, প্লট কিছুই সাথে নেয়া যাবে না, সেই জগতেও আপনি সুখে থাকুন, সমৃদ্ধ থাকুন, ভাল থাকুন, সম্মাণের সাথে থাকুন।

হে দ্বীনের দায়ী! আপনার সাথে কথা বলার পর শয়তান আমাকে নিদারুন কুমন্ত্রনা দিয়েছে। সে বলেছে, অমুকের এই এই সাফল্য। কিন্তু তোমার কি আছে? তোমার নিজস্ব কোন বাড়ী নেই। এখনো বাবার তৈরী করা টিনশেডের বাড়ীতে তুমি থাকো। তোমার নিজস্ব কোন একটি প্লটও নাই। তোমার মালিকানায় কোন ফ্লাট নাই। ইদানিং কালে তোমার পরিচিত অনেকজন তোমার এলাকায় বেড়াতে এলো-কিন্তু তাদেরকে নিয়ে একদিন তোমার বাসায় দাওয়াত খাওয়াবার সামর্থ তোমার নাই। ইত্যাদি বিষয় বলে শয়তান আমাকে কুমন্ত্রণা দিয়েছে। কিন্তু কিছু দিনপর আরেকটা বিষয় আমার সামনে আসায় কুমন্ত্রণা হালে পানি পায়নি। বিষয়টি খোলাসা করে আপনাকে বলবো?

হে দ্বীনের দায়ী! আপনি আর আমি মিলে আমরা ক’জন যে সমিতির সদস্য, সেই সমিতি একটি প্রোফিট লেস সমিতি। সেই সমিতির প্রয়োজনে আপনি এবং আমি সহ আমরা সবাই সব সময় আর্থিক সহযোগিতা করি। আমরা মাসিক সহযোগিতার পাশাপাশি নানাবিধ প্রয়োজনে এককালিন সহযোগিতাও করে আসছি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা আমাদের এই আর্থিক অংশ গ্রহণকে খালিস ভাবে কবুল করুন এবং পরকালে এর প্রতিদান দিন-এমনই প্রত্যাশা রইল এবং এমনই প্রত্যাশায় আমরা সহযোগিতা করি। গতকিছু দিন আগে আপনি আমি সকলে মিলে সমিতির প্রয়োজনে সবাইকে মাসিক ইনকামের একটা নির্ধারিত অংশ প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনি আপনার ইনকামের যতটুকু দেয়ার কথা, আমিও ঠিক ততটুকই দেয়ার কথা। কিন্তু আপনার বাসা, বাড়ী, ফ্লাট, প্লট সহ নানাবিধ এ্যাসেট এর যে খবর আমাকে দিলেন, আপনার দৈনন্দিন চলাফেরার খরচের যে খতিয়ান আমাকে দিলেন, সে অনুযায়ী আপনার ইনকাম আমার চেয়ে কয়েকগুণ বেশী বলেই আমি মনে করতে বাধ্য হলাম। সে অনুযায়ী আমার ভাবনা ছিলঃ আমি যদি ১০ হাজার টাকা নিজের মাসিক ইনকাম দেই, তাহলে আপনি দেয়ার কথা কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা।

হে দ্বীনের দায়ী! শয়তানের কুমন্ত্রণার পর কেন জানি আমি আপনার ইদানিং কালের আর্থিক অনুদান প্রদানের বিষয়টি জানার আগ্রহ তৈরী হলো। সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কোষাধ্যক্ষের নিকট থেকে আপনার ওয়াদাটা কত জানার চেষ্টা করে রীতিমতো কিংকতর্ব্য বিমুড় হলাম। দেখলাম আমি যে পরিমাণকে আমার মাসিক ইনকাম উল্লেখ করেছি, আপনি তার চেয়ে অর্ধেক বা তার চেয়েও কম উল্লেখ করেছেন। এবারের এককালিন আর্থিক অংশ গ্রহণে আপনি ৪ হাজার রিয়াল প্রদান করবেন বলে এই পরিমাণকে আপনার মাসিক ইনকাম বলে উল্লেখ করেছেন। আমি আপনার প্রতিমাসের মাসিক সাহায্যের বিবরণীটাও চেক করলাম। দেখলাম, সেখানেও আপনি প্রতি মাসে আমার চেয়ে অর্ধেকের চেয়েও কম প্রদান করেন।

হে দ্বীনের দায়ী! যোগ বিয়োগ পুরণ ভাগের অংক আপনার মতো আমিও জানি। অনেক ক্ষেত্রে আপনার চেয়ে আমি ভাল জানি। কিন্তু আপনি এটা কি করলেন! আপনি প্রোফিটলেস এই সমিতিতে আল্লাহর জন্য দানের ওয়াদা করেন এবং প্রদান করেন। কিন্তু কেন আপনি ১%কে ৫% বলেন!!

আপনার জবানীতে তাবুকের অভিযানে হযরত আবু বকর রা. এর সর্বস্ত দান করার কাহিনী শুনে আমরা অস্রু ঝরিয়েছি। আসহাবের রাসূলের জীবন কথা বলে মোহনীয় বক্তৃতা আপনি দিয়েছেন, সেই বক্তৃতায় আমরা আন্দোলিত হয়েছি। দীল উজাড় করে দ্বীনের পথে দান করতে হয়, তা আপনার থেকে আমরা শিখেছি। কিন্তু আপনি এটা কি করলেন? যোগ বিয়োগ পুরণ ভাগের অংক কষে, বেসিক না ফুল বেতন, বেতন না ইনকাম, শুধু বেতনের ইনকাম না অন্যান্য তৎপরতার মাধ্যমে প্রাপ্ত ইনকাম, শুধু নিজের ইনকাম না নিজের পোষ্যদের থেকে প্রাপ্ত ইনকাম থেকে ইনকাম ইত্যাদি নানাবিধ যুক্তি তখন আপনার মুখে শুনিন।

শয়তানের কুমন্ত্রণার জবাবে আমি নিজেকে আশ্বস্ত করলাম এই কথা ভেবে যে, আমার মধ্যে কোন বৈপরিত্য নাই। কিন্তু আপনি কি করলেন? আমি আপনাকেও আবারও সেই কথা স্মরণ করে দিচ্ছি, যা কুরআনে হাকীমে উল্লেখ করা হয়েছে এই ভাবেঃ

﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ﴾﴿كَبُرَ مَقْتًا عِندَ اللَّهِ أَن تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُونَ﴾

হে মু’মিনগণ! তোমরা এমন কথা কেন বল যা নিজেরা করো না? আল্লাহর কাছে এটা অত্যন্ত অপছন্দনীয় কাজ যে, তোমরা এমন কথা বলো যা করো না। (সূরা আস সাফঃ ২ ও ৩)

﴿أَتَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنسَوْنَ أَنفُسَكُمْ وَأَنتُمْ تَتْلُونَ الْكِتَابَ ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ﴾

তোমরা অন্যদের সৎকর্মশীলতার পথ অবলম্বন করতে বলো কিন্তু নিজেদের কথা ভুলে যাও। অথচ তোমরা কিতাব পাঠ করে থাকো। তোমরা কি জ্ঞান বুদ্ধি একটুও কাজে লাগাও না(সূরা আল বাকারাহঃ ৪৪)

 

Post a Comment

0 Comments