বই নোট - হেদায়াতঃ সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী রাহি. - মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম


বই নোট - হেদায়াত

লেখকঃ সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী

অনুবাদঃ মুহম্মদ আব্দুর রহীম

➧ বিশেষঃ ১৯৫১ সালের ১৩নভেম্বর করাচীতে অনুষ্ঠিত জামায়াতের বার্ষিক সম্মেলনের শেষ অধিবেশনে কর্মীদের উদ্দেশে প্রদত্ত বক্তৃতা।

➧ মাওলানা আব্দুর রহীম সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কথাঃ

⧭ জন্মঃ ১৯ জানুয়ারী ১৯১৮, মৃত্যুঃ ১ অক্টোবর ১৯৮৭, পিরোজপুর জেলা শিয়ালকাঠি গ্রামে।

 প্রাথমিক শিক্ষাঃ

-নিজ বাড়ীর পাশের মসজিদে ৪ বছর।

-১৯৩৪ সালে শর্ষিনা আলীয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে সেখানে ৫ বছর শিক্ষা গ্রহণ। ১৯৩৮ সালে সেখান থেকে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হোন।

-এরপর ভর্তি হোন কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায়। সেখানে থেকে ১৯৪০ সালে ফাজিল এবং ১৯৪২ সালে আলিম পাশ করেন।

 ইসলামিক স্কলার। প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, বিজ্ঞ ফকীহ, ইসলামী চিন্তাবিদ, সুলেখক, সুসাহিত্যিক, পার্লামেন্টায়িান, রাজনীতিবীদ ও অর্থনীতিবিদ।

 তিনি চারবছর শিক্ষকতা করে রিজাইন দেন। নিজে নিজে নিজের সার্টিফিকেট সমূহ ছিড়ে ফেলেন এবং কলম যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন।

 খ্যাতিমান পলিটিশিয়ান।

 জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এর প্রথম আমীর।

-কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় পড়ার সময় তিনি মাওলানা মওদূদী সম্পাদিত ‘তরজমানুল কুরআন’ পড়া শুরু করেন এবং উদ্ভুদ্ধ হোন।

-১৯৪৬ সালে নিখিল ভারত জামায়াতে ইসলামীর সম্মেলনে যোগাদান করনে এবং ১৯৪৬-৪৭ সালে জামায়াতে ইসলামীতে যোগাদান করেন।

-বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর কাজ শুরু হয় যে ৪জন ব্যক্তির মাঝে, মাওলানা আব্দুর রহীম তাদের একজন। বাকীরা হলেনঃ মাওলানা রফি আহমেদ ইন্দারী, খোরশেদ আহমদ ভাট ও মাওলানা কারি জালি আশরাফি নদভি।

-১৯৫১-৫৫ পূর্বপাকিস্তান জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেলে দায়িত্ব পালন করেন।

-১৯৫৬-৬৮ সালে তিনি পূর্বপাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীরের দায়িত্ব পালন করেন।

-১৯৬৮-৭১ সালে তিনি অল পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর নায়ের আমীর নির্বাচিত হোন এবং সেই সময়ে অধ্যাপক গোলাম আযম পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের আমীর হোন। সেই হিসাবে অধ্যাপক গোলাম আযম বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রথম নির্বাচিত আমীর।

-১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মাওলানা পাকিস্তানে অবস্থান করেন।

-১৯৭১-৭৪ সাল নেপালে অবস্থান করে অবস্থান করেন।

-১৯৭৪ সালে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন যখন (১৯৭১-৭৮) বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল।

 ১৯৭৬ সালে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ গঠনের সময় তিনি ভাইস চেয়ারম্যান হোন এবং পরের বছর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোন।

 ১৯৪৮-৪৯ এ তিনি আদর্শ প্রস্তাব, ১৯৫১-৫৬ ক্ষমতাসীন সরকার বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬০-৬২ আইয়ুব খানের বিরোদ্ধে আন্দোলনে কারা বরণ করেন ৬৪জন জামায়াত নেতা সহ।

 পরবর্তীতে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ (আইডিএল) এর ব্যানারে কাজ করেন। যা ১৯৭৯ এর সংসদ নির্বাচনে ৬টি আসন লাভ করে। তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হোন।

 ১৯৮৭ সালে দেশের প্রখ্যাত উলামায়ে কিরাম, পীর মাশায়েখ ও বুদ্ধিজীবিদের নিয়ে গঠিত সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ ও খেলাফত সংগ্রাম পরিষদ গঠনে তার অবদান ছিল। যা পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালের ৩ মার্চ ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন নামে আত্মপ্রকাশ করে।

 ১৯৮৩ সালে ডেমোক্রেটিক লীগের নাম বদল করে ইসলামী ঐক্য আন্দোলন গঠন করে।

 মাওলানা মওদূদী রাহি. ও আল্লামা ইউসুফ আল কারযাভীর অনেক অনেক বইয়ের অনুবাদক।

 তিনি অনুভব করেছিলেন যে, বাংলাভাষী উলামায়ে কিরামদের মাঝে ওয়ায়েজ বক্তা অনেক রয়েছেন, কিন্তু তাদের লিখিত কোন অবদান নেই। সেই উপলব্দি থেকে থেকে তিনি কলকাতায় অধ্যয়নের সময় থেকে গবেষণায় আত্ম নিয়োগ করেন এবং লেখালেখি শুরু করেন।

 তিনি একজন ইসলামী অর্থনীতিবিদ।তিনি ইসলামের অর্থনৈতিক দর্শনকে বাংলা ভাষায় ব্যাপকভাবে তুলে ধরেন। আরবী ভাষায় লিখা তার আল ইকতিসাদ আল ইসলামী বইটি অর্থনীতি ও আরবী বিষয়ে তার পান্ডিতের বড় প্রমাণ।

 তিনি রাবেতা আলম আল ইসলামী ও ওআইসি এর ফেকাহ কমিটির সদস্য ছিলেন।

 ১৯৭৭ সালে অনুষ্ঠিত “বিশ্ব ইসলামী শিক্ষা সম্মেলনে যোগাদান করেন।

 তিনি তানজিন, দৈনিক নাজাত, সাপ্তাহিক জাহানে নও এর সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন।

 তিনি অনেক গ্রন্থ প্রণেতা। তার মৌলিক গ্রন্থ সমূহঃ

১. কালেমায়ে তাইয়্যেবা

২. ইসলামী রাজনীতির ভুমিকা

৩. ইমাম ইবনে তাইমিয়া

৪. কমিউনিজম ও ইসলাম

৫. ইসলামী সমাজে মজুরের অধিকার

৬. ইসলামের অর্থনীতি

৭. সমাজতন্ত্র ও ইস

৮. সূরা ফাতিহার তাফসীর

৯. পাক-চীন বন্ধুত্বের স্বরূপ

১০. তওহীদের তত্বকথা

১১.সুন্নাত ও বিদআত

১২. হাদীস শরীফ ১ম খন্ড ও ২য় খন্ড

১৩.হাদীস সংকলনের ইতিহাস

১৪. ইকবালের রাজনৈতিক চিন্তাধারা

১৫. পাশ্চাত্য সভ্যতা ও ইসলামী সমাজ

১৬. অর্থনৈতিক সুবিচার ও হযরত মুহাম্মদ (সঃ

১৭. হযরত মুহম্মদের অর্থনৈতিক আদর্শ

১৮. খিলাফতে রাশেদা

১৯. হাদীস শরীফ ২য় খন্ড ও ৩য় খন্ড

২০. মহাসত্যের সন্ধানে

২১. সূদ মুক্ত অর্থনীতি

২২. নারী

২৩. ইসলামী অর্থনীতির বাস্তবায়ন

২৪. ইসলামের দৃষ্টিতে বিজ্ঞান

২৫. খোদাকে অশ্বীকার করা হচ্ছে কেন?

২৬.আজকের চিন্তাধারা

২৭. আল-কোরআনের আলোকে উন্নত জীবনের আদর্শ

২৮. অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে ইসলাম

২৯. চরিত্র গঠনে ইসলাম

৩০. বিবর্তনবাদ ও সুষ্টিতত্ব

৩১. উমর ইবনে আব্দুল আজিজ

৩২. জিহাদের তাৎপর্য দেহলভীর সমাজ দর্শন

৩৩. বিশ্ব সমস্যা ও ইসলাম

৩৪. অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে ইসলাম

৩৫. আল- কুরআনের আলোকে শিরক ও তাওহীদ

৩৬. আল-কুরআনের আলোকে রাষ্ট্র ও সরকার

৩৭. আসলাম ও মানবাধিকার

৩৮. রাসুলুল্লাহর বিপ্লবী দাওয়াত

৩৯. শিক্ষা ও সংস্কৃতি 

আমাদের কর্মপন্থা সম্পর্কে কয়েকটি জরুরী কথাঃ

একঃ আল্লাহর সাথে সম্পর্ক

➧ এটি এমন একটি উপদেশ, যে উপদেশ আম্বিয়া কিরাম, খোলাফায়ে রাশেদীন এবং জাতির আদর্শ ও সৎ ব্যক্তিগন তাদের সহকর্মীদের দিয়েছেন।

➧ এ উপদেশের সারকথাঃ আল্লাকে ভয় করতে হবে, মনে প্রাণে ভক্তিভাব পোষণ করতে হবে, সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর করতে হবে।

➧ এ বিষয়টি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, সকল বিষয়ের তুলনায় এটাকে প্রাধান্য দেয়া উচিত।

➧ যে সব ব্যাপারে প্রধান্য দিতে হবেঃ

1.    আকীদা বিশ্বাসে-আল্লাহর প্রতি ঈমান।

2.    ইবাদতে-আল্লাহর সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন।

3.    নৈতিক চরিত্রে-আল্লাহর প্রতি ভয় পোষণ।

4.    আচার ব্যবহার ও লেনদেনে-আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ।

➧  আমাদের জীবনের যাবতীয় তৎপরতার মূল উদ্দেশ্য হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি।

➧ আমরা যে কাজের জন্য সংঘবদ্ধ হলাম তা সম্পন্ন হবে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের ভিত্তিতে।

➧ আমাদের আন্দোলন তত মজবুত হবে, যত দৃঢ় ও গভীর হবে আল্লাহর সাথে আমাদের সম্পর্ক। অপর দিকে  আন্দোলন দূর্বল হবে, যদি আল্লাহর সাথে আমাদের সম্পর্ক দূর্বল হলে।

➧ মানুষ যে কাজ করে-তা দুনিয়ার হোক আর আখেরাতের, তার প্রেরণা সে কাজের মূল উদ্দেশ্য হতে লাভ করে। যেমনঃ

1.    আত্মকেন্দ্রীক স্বার্থপর ব্যক্তি।

2.    সন্তান সন্ততির মঙ্গল কামনা কারী।

3.    দেশ ও জাতির খেদমতে আত্মনিয়োগকার।

➧ আল্লাহর সাথে সম্পর্ক একাধিক সম্পর্কের একটি নয়, বরং এ সম্পর্ক একমাত্র মৌলিক ও বাস্তব যোগসূত্রে পরিণত হতে হবে এবং এ সম্পর্ক প্রতিনিয়ত বাড়তে হবে, হ্রাস পেলে চলবেনা।

➧ আল্লাহ রহমতে ইসলামী আন্দোলনের সকল কর্মী এ ব্যাপারে একমত। কিন্তু নিম্নোক্ত প্রশ্নাবলীঃ

1.    আল্লাহ তায়ালার সাথে সম্পর্ক স্থাপনের সঠিক তাৎপর্য কি?

2.    আল্লাহর সাথে কিভাবে সম্পর্ক স্থাপন ও বর্ধিত করা যায়?

3.    আল্লাহ তায়ালার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক আছে কি না?

4.    আল্লাহ সাথে আমাদের সম্পর্ক থেকে থাকলে তা কত খানি? এসব কথা জানার সঠিক উপায় কি?

➧ উপরোক্ত প্রশ্নাবলীর সঠিক জবাব জানা না থাকার কারণে যে সব সমস্যা হচ্ছেঃ

1.    এ পথের পথিকদের অবস্থা হয় সীমাহীন মরুভূমিতে অসহায় মানুষের মতো।

2.    এ পথের পথিক তার আপন লক্ষ পথ সম্পর্কে সঠিক ধারণ করতে পারেনা।

3.    এ পথের পথিক কতটুকু পথ অতিক্রম করেছে, তা বলতে পারেনা।

4.    এ পথের পথিকের বর্তমান অবস্থান স্থলের পরিচয় জানা থাকে না।

5.    এ পথের পথিক বলতে পারেনা, তার মনজিল আর কতদূরে।

6.    ফলে কেউ অস্পষ্ট ধারণার বশবর্তী হয়ে পড়েন।

7.    আবার কেউ এমন পথে অগ্রসর হন, যে পথে চললে লক্ষ্যস্থল পাওয়া যাবেনা।

8.    কারো পক্ষে লক্ষ্যস্থলের দূরের ও কাছের জিনিস নির্ধারণ করা দূঃসাধ্য হয়ে পড়ে।

9.    কেউ সম্পূর্ণ অনিশ্চিত অবস্থার সম্মূখীন হন।

➧ নিম্নে আলোচিত হবে উপরোক্ত প্রশ্নাবলীর জবাব এবং আল্লাহর সাথে সম্পর্ক সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় উপদেশ।

আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের অর্থঃ

1.    আল-কুরআনঃ

মানুষের জীবন-মরণ, ইবাদত-বন্দেগী, কুরবানী ইত্যাদি সব আল্লাহর জন্য।

- আল আনয়ামঃ ১৬২

﴿قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ﴾

- আল বাইয়্যিনাহঃ ৫

﴿وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ﴾

2.    হাদীসে রাসূলঃ

ক. প্রকাশ্য গোপনে সকল কাজেই আল্লাহকে ভয় করা।

خَشيةُ اللهِ في السِّرِّ والعَلَانِيْةِ

খ. নিজের উপায় উপাদানের তুলনায় আল্লাহর শক্তির উপর অধিক ভরসা করা।

 أن تَكونَ بما في يَدَي اللهِ أوثقَ بما في يدِيكَ 

গ. আল্লাহকে খুশী করার জন্য লোকের বিরাগ ভাজন হওয়া।

مَن الْتَمَس رِضا اللهِ بسَخطِ النَّاسِ

ঘ. সব কিছু করা কেবল আল্লাহর জন্য।

 مَن أحبَّ للَّهِ وأبغضَ للَّهِ ، وأعطى للَّهِ ومنعَ للَّهِ فقدِ استَكْملَ الإيمانَ

ঙ. দোয়া কুনুতের প্রতিটি শব্দ আল্লাহর সাথে বান্দার কি ধরনের সম্পর্ক তার পরিচয় বহন করে।

اللَّهُمَّ إنَّا نَسْتَعِينُك ونستعديك ونستغفرك وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْك وَنُثْنِي عَلَيْك الْخَيْرَ ، ونشكرك ولا نكفرك، ونخلع ونترك من يفجرك اللَّهُمَّ إيَّاكَ نَعْبُدُ وَلَك نُصَلِّي وَنَسْجُدُ وَإِلَيْك نَسْعَى وَنَحْفِدُ و نَرْجُو رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَك إنَّ عَذَابَك بِالْكَفار مُلْحِقٌ

চ. তাহাজ্জুদে উঠে নবী সা. যে দোয়া করতেন তাতে আল্লাহর সাথে সম্পর্কের পরিচয় পাওয়া যায়।

اللهمَّ لكَ أسلمتُ وبكَ آمنتُ وعليكَ توكلتُ وإليكَ أنبتُ وخاصمتُ وليكحاكمت  

হে আল্লাহ! আমি তোমারই অনুগত হলাম, তোমার প্রতি ঈমান আনলাম, তোমার উপর ভরসা করলাম, তোমার দিকে আমি নিবিষ্ট হলাম, তোমার জন্যই আমি লড়াই করছি এবং তোমার দরবারেই আমি ফরিয়াদ জানাচ্ছি।

আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির উপায়ঃ

➧ উপায় দুইটিঃ

1.    চিন্তা ও গবেষনার পন্থা।

2.    বাস্তব কাজের পন্থা।

➧ চিন্তা ও গবেষনার পন্থাঃ

  • কুরআন ও হাদীসের সাহায্যে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান লাভ।
  • জ্ঞানলব্দ বিষয়ে সার্বক্ষনিক চিন্তা ভাবনা ও নিজের অবস্থান সম্পর্কে বিচার বিশ্লেষন।
  • এ অনুভুতির সমীক্ষা যত বৃদ্ধি পাবে, আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ততই বৃদ্ধি পাবে।
  • উদাহরণ-আল্লাহ সাথে আমাদের সম্পর্কঃ

  1.     তিনি আমাদের মাবুদ, আমরা তার গোলাম।
  2.     আমরা দুনিয়াতে তার প্রতিনিধি, তিনির অসংখ্য জিনিসের আমরা আমানতদার।
  3.    তার সাথে আমাদের সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী আমাদের জান মালের মালিক উনি, আর জান্নাতে মালিক আমরা।
  4.     আমাদেরকে তার কাছে জবাব দিতে হবে প্রকাশ্য ও গোপনীয় করণীয় সকল কিছুর।

উপরোক্ত বিষয়াবলীর ব্যাপারে আমাদের বিচার বিশ্লেষন করতে হবে, আমরা এ সব সম্পর্ক রক্ষা করতে কতটুকু সফল বা কতটুকু ব্যর্থ । এ ব্যাপারে আমরা যত মনযোগী হবো ততই সম্পর্ক বাড়বে, আর যতই অমনযোগী হবো, ততই সম্পর্ক কমবে।

➧ বাস্তব কাজের পন্থাঃ

  • নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর বিধানের আনুগত্য করা। তার সন্তুষ্টির জন্য প্রত্যেক কাজে প্রাণপণ পরিশ্রম করা।
  • নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর আনুগত্য মানে-কেবল অনিচ্ছায় নয়, বরং স্বতঃস্ফূর্ত আগ্রহ উৎসাহের সাথে, প্রকাশ্য ও গোপনে আল্লাহর যাবতীয় নির্দেশিত কাজ সম্পাদন করা।
  • কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টিই হবে সকল কাজের উদ্দেশ্য।
  • আল্লাহর নিষিদ্ধ সকল কাজ প্রকাশ্য ও গোপনে সকল অবস্থায় ঘৃণার সাথে বর্জন করা।
  • যাবতীয় কার্যকলাপ তাকওয়ার পর্যায়ে উপনীত করা। যার পরবর্তী কর্মপন্থা আপনাকে ইহসানে উপনীত করবে।
  • সকল বিষয়ে কুরবানী।

আল্লাহর সাথে সম্পর্কের বিকাশ সাধনের উপকরণঃ

একঃ সালাত।

  • ফরজ সুন্নাতের সাথে সাথে নফল নামাজ, বিশেষ করে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়।
  • এ ক্ষেত্রে রিয়া পরিহার। (নফল সাদাকা ও যিকির আযকারে রিয়া পরিহার)।

দুইঃ আল্লাহর যিকির।

  • সুফীদের যিকির নয়, বরং রাসূল সা. প্রদর্শিত সার্বক্ষনিক দোয়া।
  • যা অর্থ সহ মূখস্ত করা এবং অর্থের প্রতি লক্ষ্য রেখে সময় মত পড়া।

তিনঃ সওম।

  • ফরজের পাশাপাশি নফল সাওম।
  • প্রতিমাসে ৩টি উত্তম।
  • সওমের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জনের চেষ্টা করা।

চারঃ আল্লাহর পথে অর্থ খরচ।

  • শুধু ফরজ নয়, সাধ্য মতে নফল আদায়।
  • কি পরিমাণ অর্থ সম্পদ ব্যয় করলেন, তা বড় কথা নয়। বরং আল্লাহর জন্য কতটুকু কুরবানী করলেন, তা প্রকৃত বিচার্য।
  • তাযকিয়ায়ে নফসের জন্য সাদাকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
  • সাদাকার সুফল পরীক্ষা-তাওবার সাথে সাথে সাদাকা।

আল্লাহর সাথে সম্পর্ক যাচাই করার উপায়ঃ

➧ এর জন্য “সু-সমাচার প্রাপ্ত” বা কাশফ ও কারামাত প্রকাশর প্রয়োজন নাই।

➧ এজন্য অন্ধকার ঘরে বসে আলো পাওয়ার অপেক্ষা করা জরুরী নয়।

➧ আল্লাহর সাথে সম্পর্ক যাচাই করার ব্যবস্থা আল্লাহ প্রতিটি মানুষের অন্তরের মাঝে রেখেছেন। যা দিনের আলোতে জাগ্রত অবস্থায় পরিমাপ করা যায়।

➧ আল্লাহর সাথে সাথে সম্পর্ক যাচাই করার জন্য নিজের জীবন, কর্ম, চিন্তা ও ভাবধারা নিজে নিজে পর্যালোচনা করা।

➧ পর্যালোচনা কি করা হবে?

  • আল্লাহর সাথে করা চূক্তি পর্যালোচনা।
  • আল্লাহর আমনত ভোগের পর্যালোচনা।
  • আল্লাহর দেয়া সময়, শ্রম, যোগ্যতা, প্রতিভা, ধন-সম্পদ আল্লাহর কাজে ব্যয়ের পর্যালোচনা।
  • স্বার্থ বা মতের উপর আঘাত লাগলে বিরক্ত বা রাগান্বিত হওয়ার বিষয় পর্যালোচনা।
  • আল্লাহদ্রোহীতা দেখলে নিজের মাঝে সৃষ্ট রাগ ও মানসিক অশান্তি পর্যালোচনা।

➧ উপরোক্ত পদ্ধতিতে পর্যালোচনার মাধ্যমে বুঝতে পারা যায়, আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি-ঘাটতির অগ্রগতি ও অবনতি। এজন্য ইসতিখারা, কাশফ, কারামাত, নূরের তাজাল্লি ইত্যাদি প্রচেষ্ঠার আশ্রয় নেয়ার কোন দরকার নাই। এসব হতে বিরত থাকতে হবে।

➧ কাফশ হলোঃ

  • বস্তু জগতের প্রবঞ্চনামূলক বৈচিত্রের মাঝে অবস্থান করে তাওহীদের নিগূঢ় তত্ত্বা অনুধাবন করা।
  • শয়তানের আর তার মুরিদদের প্রলোভন আর ভয়ভীতির মোকাবেলা করে সত্য ও সরল পথে প্রতিষ্ঠিত থাকা।
  • কুফরী, ফাসেকী ও গুমরাহীর অন্ধকারের মাঝে সত্যের আলো দেখতে পাওয়া।
  • আল্লাহকে বর স্বীকার করে তার উপর কায়েম থাকা এবং তার দেখানো পথে চলাঃ

﴿إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنتُمْ تُوعَدُونَ﴾

যারা বলছে যে, আল্লাহ আমাদের রব। অতঃপর তারা এব্যাপারে অটল-অবিচল থাকে, নিঃসন্দেহে তাদের উপর ফেরেশতা নাযিল হয় (এবং তাদেরকে বলে) তোমরা ভয় করো না, দুঃখ করো না, বরং তোমাদের সাথে যে জান্নাতের ওয়াদা করা হয়েছে তার সুসংবাদে আনন্দিত হও।” - সূরা হা-মীম আস সিজদাঃ৩০

➧ আত্মসমালোচনার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সম্পর্কে নিজের অবস্থান নির্ধারণ করতে হবে।

 

দুইঃ আখেরাতকে অগ্রাধিকার দান

➧ কুরআনঃ স্থায়ী অনন্ত জীবন লাভের ক্ষেত্র হচ্ছে আখেরাত। দুনিয়া পরীক্ষার স্থান।

➧ আমাদের পরীক্ষা দিতে হবেঃ

  1. আমরা আল্লাহ প্রদত্ত খলিফার দায়িত্ব যথাযথ ভাবে  পালন করলাম কি না।
  2. আমরা অনুগত বান্দা হিসাবে জীবন যাপন করলাম না বিদ্রোহী হিসাবে।
  3. পরীক্ষাকালীন সময়ে কোথায় বসে পরীক্ষা দিলাম, তা বড় কথা নয়। বরং আল্লাহর অনুগত বান্দা হতে পারলাম কিনা, তার মর্জির সঠিক তাবেদার হতে পারলাম কি না, তাই বিবেচ্য।

➧ আখেরাত শুধু স্বীকার করে নেয়ার মত কোন বিষয় নয়। বরং আমল দিয়ে কাজে কর্মে দেখানোর বিষয়। আর তা না হলে আখেরাত অবিশ্বাসী আর আমাদের কর্মকান্ডে পার্থক্য থাকবেনা।

➧ দুনিয়া নামক জিনিসটা আমাদের হাতের কাছে বলে এর সুখ দুঃখে আমরা আনন্দিত বা ব্যথিত হই। প্রকৃত আখেরাতমূখী ব্যক্তিকে আখেরাতের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সফলতার জন্য  আনন্দিত এবং ব্যর্থতার জন্য ব্যতিত হতে হবে।

➧ মুখে “দুনিয়া কিছুই নয়” কথাটা বলা খুবই সহজ। কিন্তু অন্তর হতে এর বাসনা-কামনা এবং চিন্তাধারা হতে এর প্রভাব-প্রতিপত্তি বিদূরিত করা মোটেই সহজ নয়।

আখেরাতের চিন্থার লালনঃ

➧ আখেরাতের চিন্থা লালন করার জন্য ২টি উপায়ঃ

  1. চিন্তা ও আদর্শমূলক।
  2. বাস্তব কর্মপন্থা।

➧ চিন্তা ও আদর্শিক অনুশীলনের পন্থাঃ

1. কুরআন অধ্যয়নঃ

أمنت باليون الاخر ‘আমি আখেরাতের প্রতি ঈমান আনলাম’ মুখে বলেই ক্ষান্ত না হয়ে অর্থ বুঝা ও কালামে পাক অধ্যয়নের অভ্যাস করা। যাতে মনের মাঝে আখেরাত সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা স্থায়ী হয়।

2. হাদীস অধ্যয়নঃ

এর মাধ্যমে আখেরাত সম্পর্কে চাক্ষুস অভিজ্ঞতার মতো বিবরণ পাওয়া যায়।

3. কবর যিয়ারতঃ

মকসুদ হাসিলের জন্য নয়, বরং নবী সা.এর নির্দেশানুযায়ী মৃত্যুর স্মরণের জন্য। বিধায় বিশিষ্টজনের কবর নয়, বরং গরীবদের কবর যিয়ারত। আর প্রাচীন রাজা বাদশাহদের শূণ্য ও পাহারাদার বিবর্জিত বিরাটকার কবর।

➧ বাস্তব কমপন্থাঃ

  1. স্তব জীবনে প্রতি পদে একদিকে আখেরাত বিশ্বাস অপর দিকে দুনিয়াদারী এসে হাতছানি দেয়। এমতাবস্থায় প্রথম দিকে অগ্রসর হবার চেষ্টা করতে হবে।
  2. দুনিয়া আপনাকে টেনে নিয়ে গেলেও, যখন বুঝবেন তখনই ফিরে আসতে হবে।
  3. আপনাকে হিসাব করতে হবে বিভিন্ন প্রেক্ষিতে আপনি কি দুনিয়ার তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিতে পারছেন। হিসাবের পর আপনার আখেরাতমূখীতার জন্য আপনাকে উদ্যোগী হতে হবে।
  4. আখেরাত মূখী হবার জন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন নিজের উদ্যোগ। তবে বাহিরের সাহায্য চাইলে আপনাকে দুনিয়াদার লোকদের সংশ্রব ছেড়ে আপনার বিবেচনায় যারা আখেরাতকে প্রাধান্য দেন, তাদের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি ও যোগাযোগ বাড়াতে হবে।

তিনঃ অযথা অহমিকা বর্জন

➧ আমাদের অগ্রগতি দেখে আমাদের অহমিকার কোন সুযোগ নেই।

➧ আমরা যেন এ ধারণা কখনো পোষণ না করি যে,

  1.     আমরা এখন পূর্ণত্ব লাভ করেছি।
  2.     আমরা এখন প্রয়োজনীয় সকল যোগ্যতা অর্জন করেছি।
  3.     আমাদের আরো চেষ্টা যত্ন করতে হবে, এমন কোন বস্তু নেই।

➧ কিছু সংখ্যক লোকের প্রচারঃ

  1.     জামায়াত নিছক একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান।
  2.     জামায়াতে আত্মশুদ্ধি বা আধ্যাত্মিকতার কোন নাম নিশানা নেই।
  3.     জামায়াত কর্মীদের মাঝে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক এবং আখেরাতের চিন্তার অভাব রয়েছে।
  4.    জামায়াতের পরিচালক নিজে কোন পীরের মুরিদ নন, কোন খানকা হতে তাকওয়া বা ইহসান-কামালিযাতের ট্রেনিং লাভ করেননি।
  5.     জামায়াত কর্মীদের কামালিয়াত হাসিলের জন্য ট্রেনিং গ্রহণের কোন সুযোগ নেই।

➧ জামায়াতের বিরুদ্ধে প্রচারণার মূল উদ্দেশ্য হলঃ

  1. জামায়াতের কর্মী  ও আগ্রহশীল লোকদের প্রতি বীতশ্রদ্ধার সৃষ্টি।
  2. জামায়াত কর্মী ও আগ্রহশীলদের সে আস্তানায় ফিরিয়ে নেয়া, যেখানে কুফুরীর আশ্রয়ে থেকে ইসলামের সামান্য খেদমত করাকে বিরাট কীর্তি মনে করা হয়। যেখানে ইসলামকে পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসাবে প্রতিষ্ঠার কোন কল্পনারও অস্তিত্ব নেই। বরং এটাকে একটি অধর্মীয় প্রস্তাব মনে করা হয়।

➧ জামায়াত প্রাথমিক পর্যায়েই মানুষের মাঝে তাকওয়া ও পরহেযগারী ও ইহসানের যে পবিত্র ভাবধারা সৃষ্টি করে, তা জীবনব্যাপী আত্মশুদ্ধির ট্রেনিং লাভের পরও-এমনকি ট্রেনিং দাতার মাঝেও দেখা যায়না।

➧ কামালিয়াত সম্পর্কে আমাদের অবস্থান নিয়ে যাতে আহমিকার সৃষ্টি না হয়, সে দিকে নজর রাখতে হবে।

➧ আহমিকার বিপদ থেকে বাঁচার জন্য ৩টি নির্গঢ় সত্য ভালভাবে বুঝতে হবেঃ

1. কামালিয়াত (পূর্ণত্ব) একটি সীমাহীন ব্যাপার। যা আমাদের দৃষ্টির বাহিরে। মানুষের কর্তব্য, কামালিয়াতে শীর্ষদেশে পৌছতে ক্রমাগত প্রচেষ্টা।  যদি কেউ মনে করেন, আমি কামিল হয়ে গেছি। তাহলে বুঝতে হবে-তার উন্নতি থেমে গেল এবং অবনতি শুরু হলো।

2. ইসলাম আমাদের সামনে মানুষত্বের যে উচ্চতম আদর্শ উপস্থাপিত করেছে, অন্যান্য ধর্মের উচ্চ স্তর অপেক্ষাও তা উর্ধ্বে। আম্বিয়ায়ে কিরাম, সাহাবায়ে কিরাম, ও জাতির আদর্শ পুরুষগন  আমাদের সামনে কামালিয়াতে আদর্শ মান। আমাদের সে মানে পৌছার জন্য চেষ্টা করতে হবে।

হাদীসঃ

من نظر في دينِه إلى من هو فوقَه فاقتدى به, ومن نظرَ في دُنياه إلى من هو دونَه، فحَمِدَ اللهَ على ما فضله به عليه كتبه اللهُ شاكرًا صابرًا ومن نظر في دينِه إلى من هو دونَه ونظرَ في دُنياه إلى من هو فوقَه فأَسِفَ على ما فاتَه منه لم يكتبه اللهُ شاكرًا ولا صابرًا.

“যে ব্যক্তি নিজের দ্বীনের ব্যাপারে অপেক্ষাকৃত উন্নত লোকের প্রতি দৃষ্টি রেখে তার অনুসরণ করবে এবং পার্থিব বিষয়ে অপেক্ষাকৃত দূর্বল ব্যক্তিকে দেখে আল্লাহ তায়ালার দান সামগ্রীর শুকরিয়া প্রকাশ করবে, সে আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞ ও ধৈর্যশীলরূপে পরিগণিত হবে। আর যে ব্যক্তি দ্বীনের ব্যাপারে অপেক্ষাকৃত দূর্বল লোকের প্রতি লক্ষ্য করবে এবং পার্থিব ব্যাপারে অধিক ধনশালীদের প্রতি লক্ষ্য করবে, কোন বিষয়ের অভাব থাকলে সেই জন্য সে আফসোস করবে, আল্লাহর দরবারে সেই ব্যক্তি কৃতজ্ঞ এবং ধৈর্যশীলরূপে পরিগনিত হতে পারবে না।”

3. জামায়াতের এপর্যন্তকার গুণ-বৈশিষ্ট অর্জন বর্তমান বিকৃত পরিবেশের কারণে সম্ভব হয়েছে। ইসলামের নিম্নতম স্টান্ডার্ডের সাথে তুলনা করলে ব্যক্তি ও সংগঠনিক জীবনে অনেক ত্রুটি ধরা পড়বে। তা বিনয়ের সাথে স্বীকার করতে হবে-তবে বিনয় প্রকাশের জন্য নয়, বরং আন্তরিক স্বীকৃতির জন্য।

ট্রেনিং কেন্দ্র সমূহের উপকারিতাঃ

➧ কামালিয়াতের প্রকৃত মানে পৌছার জন্য জামায়াত করেছে ট্রেনিং এর নতুন ব্যবস্থা।

➧ আমাদের ট্রেনিং কোর্সের দুটি ভাগঃ

  1. শিক্ষামূলক।
  2. অনুশীলনমূলক।
১. ট্রেনিং মূলকঃ 
শিক্ষার্থীদের মাঝে অল্প সময়ের মধ্যে কুরআন-হাদীস শিক্ষাফিকাহর হুকুম আহকাম ও জামায়াতের বইপত্রের প্রয়োজনীয় অংশে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা দান।
২. অনুশীলনমূলকঃ
স্বল্পকালীন নির্মল ও স্বচ্ছ ইসলামী পরিবেশে বসবাসের সুযোগ লাভ, নিয়মানুবর্তিতা, শৃংখলা রক্ষা, সৌভ্রাতৃত্ব এবং প্রীতি সৌহার্দের অভ্যাস জন্মানো, একে অপরের গুনাবলী আহরণ, পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে নিজেদের দূর্বলতা সমূহ দূর করার সুযোগ।

চারঃ নিজেদের ঘর সামলান

➧ আল্লাহর ঘোষনাঃ  ﴿قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا ﴾

➧ পরিবারের লোকদের খাবার ও কাপড়ের জন্য যেমন আমাদের চিন্তা করতে হয়, তারা যাতে দোজখের জ্বালানি না হয়, সে দিকেও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের দায়িত্ব হলো চেষ্টা করা। চেষ্টার পরও যদি কেউ ভূল পথে অগ্রসর হয়, তাহলে আমাদের কোন দায়িত্ব নাই।

➧ অভিযোগঃ আমরা সাধারণ মানুষের কল্যাণ ও সংশোধনের জন্য যতটা চেষ্টা করি, নিজ পরিবার, সন্তান সন্ততির জন্য ততটুকু চেষ্টা করিনা।

➧ নিজ ঘর সামলানোর ব্যাপারে সাধারণ নীতিঃ

1. আমাদের একান্ত প্রিয়জনকে শান্তি ও কল্যাণের পথে অগ্রসর হতে দেখে আমাদের চক্ষু যাতে জুড়ায় এবং প্রাণ শীতল হয় সে জন্য আমাদের সকলের ঐকান্তিক বাসনা থাকা উচিত।  আমাদের চেষ্টা ও যত্ন থাকা জরুরী।

﴿رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا﴾

“হে আমাদের রব! আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের এমন গুণ বিশিষ্ট করে তোল যে, যাদের দেখে যেন আমাদের চক্ষু জুড়ায় এবং আমাদেরকে পরহেযগার লোকদের অনুগামী করে দাও।” (সূরা আল ফুরকানঃ ৭৪)

2. আপন সন্তান সন্ততির সংশোধনের দিকে খেয়াল রাখা।

3. অধীনস্ত কর্মীর সন্তান সন্ততির সংশোধনের দিকে খেয়াল রাখা। কারণ শিশুরা সাধারণত পিতার চেয়ে পিতার বন্ধুর প্রভাবে সহজে প্রভাবিত হয়।

পাঁচঃ পারস্পরিক সংশোধন ও এর পন্থা

➧ আন্দোলনের সহযোগির পারস্পরিক দোষ-ত্রুটি সংশোধনের কাজে সহযোগিতা করা এবং সম্মিলিতভাবে আল্লাহর পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য সাহায্য করা কর্তব্য।

➧ পারস্পরিক দোষ-ত্রুটি সংশোধনের সঠিক পন্থাঃ

  1. কারো ব্যাপারে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে তাড়াহুড়া না করে প্রথমে বিষয়টি সুষ্ঠুরূপে বুঝার চেষ্টা করা।
  2. প্রথম অবকাশে সাক্ষাত করে নির্জনে আলাপ।
  3. নির্জন আলাপে সংশোধন না হলে এবং বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার আমীরকে জানানো।
  4. আমীর কর্তৃক ব্যক্তিগত ভাবে সংশোধনের উদ্যোগ।
  5. আমীর ব্যর্থ হলে বিষয়টি বৈঠকে উত্থাপন।
  6. সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অবর্তমানে বিষয় আলোচনা করা যাবেনা, করলে গীবত হবে।

পারস্পরিক সমালোচনার সঠিক পন্থাঃ

  1. সকল স্থানে ও সময়ে আলোচনা করা যাবেনা, বিশেষ বৈঠকে আমীরে জামায়াতের প্রস্তাব বা অনুমোদনক্রমে।
  2. সমালোচনাকারী আল্লাহকে হাজির নাজির যেনে সমালোচনা কেবলমাত্র শুভাকাংখার লক্ষ্যে করবেন। অন্যতায় করবেন না।
  3. সমালোচনার ভাষা ও ভংগী হবে সংশোধনের বাসনা পোষন কারীর মত।
  4. সমালোচনার আগে অভিযোগের ব্যাপারে কোন বাস্তব প্রমাণ আছে কিনা, তা ভেবে দেখা।অহেতুক কারো বিরুদ্ধে কথা বলা কঠিন গুনাহ।
  5. যার সমালোচনা করা হচ্ছে, তিনি ধর্য্য সহকারে সমালোচনা শুনবেন। সততার সাথে ভাববেন। সত্য অকপটে স্বীকার করবেন। অসত্য যুক্তির সাতে খন্ডন করবেন। সমালোচনা শুনে রাগান্বিত হওয়া অহংকার ও আত্মম্ভরিতার লক্ষণ।
  6. সমালোচনা ও এর জবাবের ধারা সীমাহীন ভাবে চলা উচিত নয়, কেননা এতে স্থায়ী বিরোধ ও কথা কাটাকাটির সূত্রপাত হতে পারে। বিষয় পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত আলোচনা চলবে। এর পর মিমাংসা না হলে স্থগিত হবে, যাতে উভয় পক্ষ চিন্তাভাবনার সুযোগ পায়।

➧ যদি সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রশ্ন হয়, তাহলে পরবর্তী বৈঠকে তা উত্থাপন করা যাবে।

➧ উপরোক্ত সীমার মধ্যে থেকে করা সমালোচনা শুধু কল্যাণকর নয়, শৃংখলার জন্য প্রয়োজনীয়ও বটে।

➧ কেউ সমালোচনার উর্ধে নন। তিনি আমীর, শুরা সদস্য বা যেই হোন না কেন। জামায়াতের অস্তিত্বের জন্য ইহা একান্ত অপরিহার্য।

➧ জামায়াতের অধঃপতন সেদিন শুরু হবে, যেদিন সমালোচনার দরজা বন্ধ হবে।

➧ জামায়াতই একমাত্র  প্রতিষ্ঠান, সেখানে  অবাধ ও প্রকাশ্য সমালোচনা হয় তিন চার ঘন্টা ধরে, অথচ কোন বিশৃংখলা হয়না।

ছয়ঃ আনুগত্য ও নিয়ম-শৃংখলা সংরক্ষণ

➧ আমাদের মাঝে আনুগত্য ও নিয়ম-শৃংখলাতে অভাব আছে। বর্তমান সামাজিক পরিবেশ অনুযায়ী আমাদেরকে অনেক সুসংবদ্ধ মনে হলেও  ইসলামের সুমহান আদর্শ ও কঠিন দায়িত্ব ও কর্তব্যের কাছে আমাদের শৃংখলা ও সংগঠন নিতান্ত নগন্য।

➧ আমরা যে লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হচ্ছি তাতে সংখ্যা শক্তি ও উপায় উপাদানের দিক দিয়ে প্রতিপক্ষের সাথে আমাদের কোন তুলনাই হয়না। কেবল তখনই আমাদের উদ্দেশ্যের সফলতা আসবে, যখন দায়িত্বশীলদের একটি ইশারাই প্রয়োজনীয় শক্তির সামাবেশ ঘটাতে পারবে। কেবলমাত্র আমাদের নৈতিক ও সাংগঠনিক শক্তির সহযোগিতাই আমাদের মনজিলে পৌছাতে পারে।

➧ ইসলামী জামায়াতের আমীরের আনুগত্য মূলত আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্যের শামীল।

➧ দ্বীনের সাথে যার যত ঘনিষ্ট সম্পর্ক হবে, তিনি তত আনুগত্য পরায়ন হবেন। আর দ্বীনের ব্যাপারে যিনি হবেন পশ্চাদপদ ও দূর্বল, আনুগত্য ও নিয়ম শৃংখলার ব্যাপারে তিনি তত দূর্বল সাবস্ত হবেন।

➧ আনুগত্য করা হয় আল্লাহর জন্য, এবং পুরস্কার কেবল আল্লাহর কাছে।

➧ ছোট কাজে কেউ যদি আনুগত্য করতে রাযী না হন, আনুগত্য করাটাকে মর্যাদাহানীকর মনে করে, কোন নির্দেশের ফলে মনক্ষুন্ন হন, বিরক্ত হন, অস্বস্থি বোধ করেন, নিজের ইচ্ছা ও স্বার্থের খেলাপ কোন আদেশ পালনে ইতস্তত করেন, বুঝতে হবে তিনি আল্লাহর কাছে সর্বান্তকরণে নত হননি।

জামায়াত নেতৃবৃন্দের প্রতি উপদেশঃ

➧ কর্তাগিরী ফলানোর মানসিকতা সংগত নয়। বা প্রভূত্বের স্বাদ গ্রহণ করা উচিত নয়।

➧ সহকর্মীদের সাথে নম্র ও মধুর ব্যবহার করা কর্তব্য।

➧ যুবক-বৃদ্ধ, দূর্বল-সবল, ধনী-গরীব  ইত্যাদি বাচ বিচার না করে সবার জন্য একই ধারা অবলম্বন করা সমিচীন নয়।

➧ কর্মবন্টনে কর্মীদের ব্যক্তিগত অবস্থার প্রতি নজর রাখা। যে যতটুকু সুযোগ সুবিধা লাভের যোগ্য, তাকে ততটুকু সুযোগ সুবিধা দেয়া।

➧ জামায়াতকে এমনভাবে গড়ে তুলা, যাতে আমীরের নির্দেশকে অর্ডার হিসাবে গ্রহণ করে ও পালন করে।

➧ আমীর যদি অনুরোধ বা উপদেশের স্থলে অর্ডার দিতে বাধ্য হন, তাহলে বুঝতে হবে এখানে সাংগঠনিক চেতনা অভাব।

সাতঃ শেষ উপদেশ

  1. অর্থ ব্যয়।
  2. সময় ব্যয়।

অর্থ ব্যয়ঃ

➧  انفاق في سبيل الله  এর অভ্যাস গড়ে তুলা। আল্লাহর কাজকে ব্যক্তিগত কাজের উপর প্রাধান্য দেয়া। শুধু নিজে মুসলমান নয়, পকেটকেও মুসলমান বানানো।

➧ আল্লাহর হক শুধু প্রাণ,দেহ এবং সময়ের উপর নয়, পকেটেও আছে।

➧ পকেটে আল্লাহর যে হক আছে, তা আদায়ের জন্য আল্লাহ ও রাসূল কোন সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্ধারণ করেন নি। এ পরিমাণ নির্ধারণ করবেন আপনি। কি পরিমাণ ব্যয় করলে আল্লাহর হক আদায় হবে, সে প্রশ্ন আপনিই আপনাকে করতে হবে।

➧ যারা নাস্তিক, আখেরাতও বিশ্বাস করেনা, তারা ভ্রান্ত ও বিকৃত মতবাদের প্রতিষ্ঠার জন্য যে আর্থিক ত্যাগ স্বীকার করছে, তা দেখে আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাসীদের লজ্জিত হওয়া উচিত।

সময় ব্যয়ঃ

➧ দ্বীন কায়েমের জন্য কর্মীরা যতটুকু তৎপর হওয়া দরকার, তার হচ্ছেনা। কিছু কর্মী নিবেদিক ভাবে সময় দিচ্ছে, যাদের দেখে আনন্দ লাগে এবং দোয়া করতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু বেশীর ভাগ কর্মীর মাঝে সেরূপ আগ্রহ দেখা যায় না। ফাসেকী ও আল্লাহ দ্রেুাহীতার প্রাধান্য দেখে, আল্লাহ দ্বীনের বর্তমান অসহায় অবস্থা দেখে মুমিনের অন্তরে যে যাতনা ও ক্ষোভের অগ্নি প্রজ্জলিত হওয়া উচিত, তা খুব কম লোকের মধ্যে দেখা যায়।

➧ আপনাকে এ ব্যাপারে কমপক্ষে ততটুকু অস্তির হতে হবে, নিজ সন্তান অসুস্ত হলে বা ঘরে আগুন লাগার সম্ভাবনা দেখলে যতটুকু হন।

➧ এ ব্যাপারে ও নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে,যে ভাবে ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহর জন্য প্রশ্ন করেছেন, এবং সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

➧ এ জন্য যথেষ্ট যে, সমস্ত বাতিলপন্থীদের কর্মতৎপরতার প্রতি একবার লক্ষ করাই যতেষ্ট। যারা দুনিয়ায় কোন কোন বাতিল মতবাদের প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করছে এবং এর জন্য জান মাল উৎসর্গ করছে।

বিরোধিতাঃ

➧ যারা প্রকৃত সমালোচনা করে তাদের স্বাগতম।

➧ বেশীর ভাগ লোকের সমালোচনা তথ্যনির্ভর নয়, এবং হিংসা পরায়ন ও মিথ্যা।

➧ বিরুধীদের মাঝে আছেঃ

স্বাভাবিক বিরুধী-যারা বিরুধী হওয়ার কথা। যেমনঃ

  1. ক্ষমতাসীন দল ও তাদের পত্রপত্রিকা।       
  2. পাশ্চাত্যের আল্লাহদ্রেুাহী ও ধর্মবিরোধী মতবাদের ধারক ও বাহকরা।
  3. গুমরা দল, যারা   মনে করে ইসলাম কায়েম হলে তাদের কারসাজির পথ বন্ধ হয়ে যাবে।
  4. কমুনিষ্ট।

➧ আলম সমাজ-যাদের বিরুধীতা কাম্য নয়।যারা মিথ্যা প্রচারে গোমরা সহযোগীদের হার মানাচ্ছেন।

➧ জামায়াত কর্মীদের এ ক্ষেত্রে করণীয়ঃ

  1. উত্তেজিত হওয়া যাবেনা। শয়তান আমাদের উত্তেজিত করতে চায়।
  2. উলামাদের ব্যবহারে দুঃখ পেলেও তাদের ব্যাপারে মনে ঘৃণা আনা যাবেনা। কেননা অধিকাংশ আলিম এখনো সত্যনিষ্ট।অৎ
  3. অভিযোগের জবাব না দিতে হবে বইয়ের মাধ্যমে। তর্কে না জড়িয়ে সালাম দিয়ে নিজ কাজে মননিবেশ করতে হবে। যেমন পথিকের জন্য পথের কাটা।
  4. বিরোধীতার জবাব দানে আল্লাহর নির্ধারিত সীমা লংঘন করা যাবেনা।
  5. বিরোধীতার জন্য সাফল্য অগ্রগতির যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তাকে কাজে লাগিয়ে বেশী করে দ্বীনের কাজ করা।  নবীকে আল্লাহ বলেছিলেন-﴿وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ﴾ আমিই তোমার স্মরণকে সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্টিত করেছি।

➧ বিরোধিতার কারণে আমাদের যে সব দিক দিয়ে লাভ হচ্ছেঃ

  1. সরকারী সার্কূলার জারীর মাধ্যমে সরকারী কর্মচারীদের সাথে পরিচিতি হচ্ছে।
  2. গোমরাহ দলগুলো নিজেদের মহলে আমাদের পরিচিতি তুলে ধরছে।
  3. আলেম সমাজ সাধরণের কাছে আমাদেরকে পরিচিত করছে, যা ২০ বছর দাওয়াতী কাজ করেও আমাদের পক্ষে করা সম্ভব নয়।

➧ আমাদের দায়িত্বঃ

যেখানে কুৎসা প্রচার হচ্ছে, সেখানে আমাদের সঠিক পরিচয় তুলে ধরা। এতে করে সঠিক তথ্য জানার মাধ্যমে আমাদের সম্পর্কে আস্থার সাথে সাথে বিরুদ্ধবাদীদের অপপ্রচার ধরা পড়বে। এতে করে ওদের প্রতি মানুষের অনাস্তা সৃষ্টি হবে। আল্লাহ বলেছেনঃ শয়তানের চক্রান্ত দূর্বল হয়ে থাকে।

➧ আলেম জনশক্তির প্রতিঃ

  • নিজ নিজ গোত্রের আলেমদের বুঝাতে ব্যক্তিগত বা গ্রুপ ভিত্তিক সাক্ষাৎ, চিঠিপত্র আদান প্রদান।
  • আলেমদেরকে তাদের কাজের পরিণাম সম্পর্কে বুঝাতে তাদের ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দেয়া যে, আধুনিক শিক্ষিতদের সাথে বিরোধের কারণে অতীতে ইসলামের উপর আঘাত এসেছে। জামায়াতে যোগাদানকারী আধুনিক শিক্ষিতদের ব্যাপারে ন্যাক্কারজনক পন্থায় আক্রমন মূলতঃ নিজেদের মুরিদদের আস্থা হারানোর কারণ হবে।
  • আলেমদের বুঝতে হবে যে, ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রবর্তন ও পরিচালনা তাদের কাজ নয়। বরং আধুনিক শিক্ষিতরাই তা করতে পারবে-যারা চিন্তাধারা, কার্যকলাপ ও নৈতিক চরিত্র সংশোধন করতে পেরেছে।
  • আলেমরা জামায়াতে ইসলামীর বিরোধিতা করা মানে-দ্বীনদার দলের নেতৃত্বের পরিবর্তে ফাসেক, ফাজের ও গুমরাহ দলের নেতৃত্ব স্বাচ্ছন্দে বরদাশত করা।
  • আলেমদের বুঝাতে হবে যে, জামায়াতের সাথে মতবিরোধ সাক্ষাৎ, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে দূর করতে হবে।
  • দেওবন্দ ও মাযাহেরীদের চরিত্র হলো, তাদের বুজুর্গগন যান বলেন, তাদের শাগরেদগন তা চোঁখ বন্ধ করে তা প্রচার করেন। তাদের গুরুভক্তি ও উপদল ভিত্তিক চিন্তা এর কারণ। জামায়াতী আলেমদের দায়িত্ব তাদের ভ্রান্ত ধারণা দূর করা ও বুঝিয়ে বলা।

দাওয়াতের সংক্ষিপ্ত কোর্সঃ

➧ সংক্ষিপ্ত কোর্সটি বর্তমানে পাঠ্যপুস্তক তালিকার অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।

➧ নিম্নোক্ত পূস্তক তালিকা-নতুন লোকদের জন্য প্রযোজ্যঃ

  1. বাংলাদেশ ও জামায়াতে ইসলামী।
  2. জামায়াতে ইসলামীর বৈশিষ্ট্য।
  3. ইসলামী দাওয়াত ও কর্মনীতি।
  4. মুসলমানদের অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যত কর্মসূচী।
  5. জামায়াতে ইসলামীর কার্যবিবরণী।
  6. জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাস।
  7. ইসলামী বিপ্লবের ৭ দফা গণদাবী।

➧ উপরোক্ত বই গুলো যারা অধ্যয়ন করে, তাকে জামায়াতে শামীল হওয়ার ব্যাপারে তার নিজের মর্জির উপর ছেড়ে দেতে হবে।

➧ যারা জামায়াতে শামীল হয়ে যাবেন, তারা জামায়াতের সকল বই পড়বেন। আর এটা চিন্তাধারা ও নৈতিক চরিত্র গঠনের জন্য। এটা ইসলামী দৃষ্টিভংগী সম্পর্কে ধারণা লাভ করার জন্য, যাতে দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা গুলোর ইসলামী সমাধান জানা যায়।

মহিলা কর্মীদের প্রতি উপদেশঃ

একঃ দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান লাভের চেষ্টা করা।

  • কুরআন অর্থ বুঝে পড়ার সাথে সাথে হাদীস ফিকাহ পড়া।
  • দ্বীনের মূল বিষয়বস্তু ও ঈমাদের দাবী সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা।
  • ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের দৈনিক কাজে দ্বীনের নির্দেশ জানা।
  • পরিবার সমূহে বিদ্যমান শরীয়াত বিরোধী কাজ ও রসম রেওয়াজ সম্পর্কে জানা।

দুইঃ দ্বীনি জ্ঞানের আলোকে বাস্তব জীবন, নৈতিক চরিত্র, আচার ব্যবহার ও সাংসারিক জীবন গড়ে তোলা।

  • মুসলমান মহিলার এমন চারিত্রিক মজবুতি দরকার, যাতে গোটা সংসার ও আত্মীয় স্বজন বিরোধীতা করলেও সে তার বিশ্বাসে অটল থাকবে।
  • কোন চাপে বিশ্বাসের কাছে নতি স্বীকার করবে না।
  • পরিবারের বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বেয়াদবী ও উশৃংখল আচরণ পরিহার করতে হবে।
  • কিন্তু সর্বাবস্তায় আল্লাহর নির্দেশকে উর্ধে রাখতে হবে।
  • দ্বীনের ব্যাপারে আপোষ না করে দৃঢ়তা রাখতে হবে। এতে করে পরিবেশ শুভ প্রভাব বিস্তার করবে।
  • শরীয়াত বিরোধী রীতিনীতির ও দাবীর কাছে নতি স্বীকার পরিবারের বরকত ও কল্যাণে প্রভাব ফেলবে।

তিনঃ দাওয়াত ও সংশোধনের কাজে পরিবারের লোকেদের সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দেয়া।

  • সন্তান প্রাপ্ত মহিলাদের নিকট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তু হবে তাদের সন্তান সন্ততি। তাদেরকে দ্বীন ও দ্বীনি চরিত্র শিক্ষা দান করা।
  • বিবাহিত মহিলাদের কর্তব্য তাদের স্বামীদের সৎ পথে পরিচালনা।
  • মেয়েদের মায়েদেরকে তার মেয়েকে ভাল ভাল বই পড়ার জন্য দিতে হবে।

চারঃ সাংসারিক কাজের পর অবসর সময় মহিলাদের মাঝে দাওয়াতী কাজে ব্যয় করা।

  • ছোট ছোট মেয়ে এবং অশিক্ষিতা বৃদ্ধাদের লেখাপড়া শেখানো।
  • শিক্ষিত মহিলাদের ইসলামী সাহিত্য পড়তে দেয়া।
  • মহিলাদের মাঝে নিয়মিত বৈঠকের আয়োজন করে দ্বীনি শিক্ষার সুযোগ দেয়া। ভাল বক্তৃতা দিতে না পারলে কোন বইয়ের অংশ বিশেষ পড়ে শোনানো।
  • পাশ্চাত্য ভাবাপন্ন মহিলাদের কর্তৃক মুসলিম মহিলা সমাজকে ভ্রান্ত পথে টেনে নেয়ার পথে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
  • পুরুষরা যখন মহিলাদেরকে ইসলামের পথে আহবান করে, তখন নারীদেরকে পুরুষরা দাসী বানিয়ে রাখতে চায়-এমন কথা বলে বিভ্রান্ত করে। তাই মহিলাদেরকেই মহিলাদের মাঝে কাজ করা আবশ্যক।
  • আল্লাহ ও রাসূলের নির্ধারিত সীমা লংঘন করে উন্নতি আর প্রগতির প্রতি লানত ও ধিক্কার-এই কথা দৃঢ়তার সাথে মহিলাদের ঘোষনা দেয়া। ইসলামের সীমার মধ্যে থেকে উন্নতি ও প্রগতি কিভাবে সম্ভব তার সমাধান পেশ করা।

 

অন্যান্য আরো বইয়ের নোট পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন।

Post a Comment

0 Comments