যিয়ারাতে মাদীনাতুন নাবী সাঃ


https://drive.google.com/file/d/19Vn5Z_4xew0WuX5AVDOzQpwf0PVovX3E/view?usp=sharing

আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

সুপ্রিয় পাঠক! যারা হজ্জ বা উমরা করতে সৌদী আরবে গমন করেন, তাদের প্রায় সকলেই নবী সা. এর শহর মাদীনাতুন নবীতে যান মসজিদুন নবীতে নামায আদায় করতে বা নবী সা. এর রওজা যিয়ারাত করতে এবং গমন করেন নবী সা. এবং সাহাবায়ে কিরামদের স্মৃতি বিজড়িত স্থান সমূহে। মদীনায় গমনকারী সেই সব সম্মানিত হাজী সাহেবানদের সুবিধার্থে তাদের করণীয় বিষয়গুলো নিম্নে পত্রস্থ হলো।

১.মাসজিদে নববীতে প্রবেশঃ

মাসজিদে নববীতে প্রবেশ করতে প্রথমে ডান পা ঢুকাতে হবে এবং মাসজিদে প্রবেশের দোয়া পড়তে হবেঃ

اَللَّهُمَّ افْتَحْ لِيْ اَبْوَابَ رَحْمَتِكَ

‘‘হে আল্লাাহ্! আমার জন্য তোমার রাহমাতের দরজা খুলে দাও।’’

২.তাহিয়্যাতুল মাসজিদঃ

মাসজিদের প্রবেশের পর মাসজিদে নববীর যে কোন স্থানে দাড়িয়ে তাহিয়্যাতুল মাসজিদ দু’রাকাত নামায পড়ে নিতে হবে। মসজিদে নাবীর ১নম্বর গেইটের নাম বাবুস সালাম। এই গেইট বা তার পার্শবর্তী গেইট দিয়ে প্রবেশ করলে আপনি সহজে রাসূল সা. এর রওজা যিয়ারত করতে পারবেন।

৩. রিয়াদুল জান্নাহঃ

রিয়াদুল জান্নাহ্ নামক স্থানে গমন করতে হবে। এই রিয়াদুল জান্নাহ্ বা বেহেশতের বাগানে দাড়িয়ে দূ’রাকাত নামায আদায় করতে হবে। মাসজিদে নববীর মিম্বর আর রাসূল সা.এর কবরের মধ্যবর্তী স্থানকে রিয়াদুল জান্নাহ্ বলা হয়। রাসূল সা. বলেছেনঃ

مَا بَيْنَ بَيْتِي وَمِنْبَرِي رَوْضَةٌ مِنْ رِيَاضِ الْجَنَّةِ 

“আমার ঘর ও মিম্বর এর মধ্যবর্তী স্থানটুকু জান্নাতের বাগানসমূহের একটি বাগান।”

অত্যাধিক ভীড়ের কারণে এই জায়গায় প্রবেশ করার জন্য পূর্বেই এ্যাপোয়েন্টম্যান্ট নিতে হবে। মোবাইলে নির্ধারিত এ্যাপ ডাউনলোড করে এ্যাপোয়েন্টম্যান্ট নিয়ে নির্ধারিত সময়ে সেখানে উপস্থিত হতে হবে। দিনের সর্বশেষ এ্যাপোয়েন্টম্যান্ট নিতে পারলে এ্যাপোয়েন্টম্যান্টের জন্য ৩০ মিনিট এবং ফজরের সালাতের জন্য আরো ৩০ মিনিট সময় অতিরিক্ত সেখানে অবস্থান করতে পারবেন।

৪.রাসূল সা.এর কবর যিয়ারাতঃ

রিয়াদুল জান্নাহতে নামায আদায় করুন অথবা অন্য কোথাও। নামায শেষ করে পূর্ণ আদবের সাথে মাসজিদের মিম্বরের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। কোন নামাযীর নামাযের সামনে দিয়ে অতিক্রম না করে মিম্বরের নিকটেই রাসূল সা.এর কবরের নিকট গমন করতে হবে। এখানে স্মরণ রাখতে হবে যে, নবী সা.এর কবরের সামনে দাঁড়াতে হবে অত্যন্ত আদবের সাথে। মনের মধ্যে নবী সা. এর সংগ্রাম মূখুর জীবনকে হাজির করতে হবে। নবী সা.এর সংগ্রামী জীবনের পাশাপাশি তার ত্যাগী ও মানব দরদী জীবনকে মনের পর্দায় নিয়ে আসতে হবে। নবীর জীবনের ত্যাগ আর পরিশ্রমের সাথে নিজের জীবনকে মিলাতে হবে। আর সালাম দিতে হবে অত্যন্ত নিচু স্বরে। সালাম জানাতে হবে এভাবেঃ

اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهْ

‘‘হে নবী সা. আপনার প্রতি সালাম, আল্লাহর রাহমাত ও বারাকাত’’।

এর পর মনে মনে দরূদ পাঠ করে দোয়া করবেঃ

اَللَّهُمَّ آتِهِ الْوَسِيْلَةَ وَالْفَضِيْلَةَ، وَابْعَثْهُ الْمَقَامَ الْمَحْمُوْدَ الَّذِيْ وَعَدْتَهُ.

“হে আল্লাহ! তাকে ওয়াসিলাহ, শ্রেষ্ঠত্ব দান করো এবং তাকে আপনার ওয়াদাকৃত মাকামে মাহমুদে উন্নীত করো।”

৫. হযরত আবু বাকার রা.এর করব যিয়ারাতঃ

নবী সা. এর কবরের ডান পাশেই রয়েছে হযরত আবু বাকার রা.এর কবর। যিনি ইসলামের প্রথম খলিফা। রাসূল সা. এর দূর্দিনের সাথী, গারে সুরের সাথী, হিজরতের সাথী। একই ভাবে রাসূল সা.এর ইন্তিকালের পর ইসলামের দূর্দিনে দ্বীন ইসলামের ত্রাণকর্তা। সেই প্রিয় ব্যক্তিত্বের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে তাকে সালাম জানাতে হবে। অতঃপর তার মাগফিরাতের জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করতে হবে। সালাম জানাতে হবে এভাবেঃ

اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا اَبَا بَكَرٍ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهْ

‘‘হে আবু বাকার রা. আপনার প্রতি সালাম, আল্লাহর রাহমাত ও বারাকাত।’’

৬. হযরত উমর রা.এর কবর যিয়ারতঃ

হযরত আবু বকর রা.এর কবরের ডান পাশে রয়েছে হযরত উমর রা.এর কবর। আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর রা., যার পরিচয় ‘ফারুক’ বলে-যাকে বলা হয় সত্য-মিথ্যা আর ইসলাম-কুফুরের মাঝে পার্থক্য নির্ণয়কারী। যার সম্পর্কে নবী সা. বলেছেনঃ যদি আমার পরে কেউ নবী হতো, তাহলে সে হতো উমর। সেই সুপ্রিয় ব্যক্তিত্বের কবরের সামনে দাড়িয়ে সালাম করতে হবে ও দোয়া করতে হবে। আর সালাম জানাতে হবে এ ভাবেঃ

اَلسَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا عُمَـرُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهْ

‘‘হে উমার রা. আপনার প্রতি সালাম, আল্লাাহর রাহমাত ও বারাকাত।’’

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা দরকার যে, কেহ কেহ বারাকাতের আশায় মাসজিদে নববীর খুটি, দেয়াল, রাসূল সা.এর কবরের নিকটে গ্রীল, দেয়াল ইত্যাদি চুমা দেন, হাত দিয়ে মুসেহ করে মুখে হাতে বুকে চোঁখে মর্দন করেন। ইত্যাদি কর্ম সুস্পষ্ট বিদায়াত এবং সহীহ হাদীস থেকে তার পক্ষে কোন দলীল আমাদের জানা নেই। বিধায় রাসূল সা.এর দেখানো তরীকার পরিপন্থী হওয়ায় তাতে গুনাহ হতে পারে। বিধায় সওয়াবের আশায় গমন করে যাতে আমরা গুনাহ কামাই না করি, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

৭. আহলুল বাকীর কবরে গমনঃ

আহলুল বাকী হচ্ছে মাসজিদে নববীর নিকটবর্তী কবরস্থান। যেখানে হযরত উসমান রা.সহ অগনিত সাহাবায়ে কিরাম রা.এর কবর রয়েছে। রাসূল সা.এর কবর যিয়ারত করে যে দরজা দিয়ে বের হবেন, সে দিকে সুজাসুজি হাটলেই তা চোঁখে পড়ে। আসর এবং ফজর নামাযের পর যার গেইট খোলা থাকে। সেখানে গমন করে  সেখানকার কবরগুলো যিয়ারত করতে হবে। করব যিয়ারাতের দোয়াঃ

اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ ياَ أَهْلَ الدِّياَرِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُسْلِمِيْنَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَلاَحِقُوْنَ، نَسْأَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَة. অথবা  اَلسَّلاَمُ عَلى أَهْلِ الدِّياَرِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُسْلِمِيْنَ وَ يَرْحَمُ اللهُ الْمُسْتَقْدِمِيْنَ مِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِيْنَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بـِكُمْ لَلاَحِقُوْنَ.

নবী সা. কবর যিয়ারতের প্রতি খুব গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন কবরস্থানে গমন করার জন্য, এ লক্ষ্যে যে, কবরস্থানে গেলে মৃত্যুর কথা স্মরণ হয়।

৮. মাসজিদে কুবা গমনঃ

মসজিদে কুবা মদীনার নিকটবর্তী ইসলামের ইতিহাসে প্রসিদ্ধ মাসজিদ। ইসলামের ইতিহাসে প্রথম জুমুয়ার নামাজ আদায় ও জুমুয়ার খুতবা প্রদান করেন নবী সা. এই মাসজিদে। এ মাসজিদে দু’রাকাত নামাজ পড়া সুন্নাত। আর এই মাসজিদে দু’রাকাত নামাজ পড়া একটি উমরা সমতুল্য। নবী সা. বলেছেনঃ

مَنْ تَطَهَّرَ فِي بَيْتِهِ ثُمَّ أَتَى مَسْجِدَ قُبَاءٍ فَصَلَّى فِيهِ صَلاَةً كَانَ لَهُ كَأَجْرِ عُمْرَةٍ ‏

‘‘যে ব্যক্তি বাড়ী থেকে অজু করে মাসজিদে কুবায় আসবে এবং সেখানে সালাত আদায় করবে, সে ব্যক্তি একটি উমরা করার সমান সওয়াব পাবে।’’(ইবনে মাযাহ)

৯. ওহুদ প্রান্তরঃ

ইসলামের ইতিহাসে ওহুদের যুদ্ধের ঘটনা স্মরণ করে করে ওহুদের ময়দানে গমন। ওহুদের প্রান্তর ইসলামের অনুসারীদের এখনও শিক্ষা দেয় নেতার আনুগত্য যথাযথ ভাবে আদায় করার। এখানে আছে  ‘সাইয়্যিদুশ শুহাদা’ হযরত হামযা রা. সহ ওহুদ যুদ্ধে শাহাদাত বরণকারী সম্মানিত সাহাবায়ে কিরাম রা.দের কবর। সেখানে গিয়ে কবর যিয়ারাত করতে হবে। কিন্তু ওখানে যাদের কবর তাদের নিকট চাওয়ার মত বা তাদের নিকট থেকে পাওয়ার মত কিছু নেই। তাদের নিকট কিছু চাইলে সুস্পষ্ট শিরক হবে। আর শিরকের গুনাহ আল্লাহ মাফ করেন না। তাদের ত্যাগ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে ইসলামের পথে নিজের জীবন বিলিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

অত্যন্ত সতর্ক থাকার জন্য যে বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে, অনেকে ওহুদের পাহাড়ের মাটি বরকতের আশায় সংগ্রহ করেন এবং পাহাড়ে উঠে দোয়া করেন। কিন্তু তা সুস্পষ্ট বিদায়াত।

১০. অন্যান্যঃ

তাছাড়া মাসজিদে যুল-কিবলাতাইন এবং খন্দকের যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থান সমূহ যিয়ারাত করা যায় ইসলামের ইতিহাসের প্রসিদ্ধ স্থান হিসাবে শিক্ষা গ্রহণের প্রত্যাশায়। তবে সহীহ হাদীস মারফত এসকল স্থানে গমনের বারাকাত আছে বলে আমাদের জানা নেই। আর রাসূল সা. বলেছেনঃ

لاَ تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلاَّ إِلَى ثَلاَثَةِ مَسَاجِدَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَمَسْجِدِ الرَّسُولِ وَمَسْجِدِ الْأَقْصَى

‘‘তিন মসজিদ ছাড়া অন্য কোন স্থানের সফর করা যাবেনাঃ আল্ মসজিদুল হারাম, মসজিদির রাসুল-মসজিদে নববী ও মসজিদে আকসা-বায়তুল মাকদেস।’’ (বুখারী)

আরো উল্লেখ্য যে, মক্কা ও মদীনার গুরুত্ব পূর্ণ স্থান সমূহ, যেমনঃ গারে হেরা, গারে ছুর ইত্যাদি স্থানে গিয়ে দোয়া করা, বারাকাতের আশায় সেখানকার মাটি ও পাথর সংগ্রহ করা। এগুলোর কোন শরয়ী ভিত্তি নেই। তাছাড়া সে সব স্থানে কিছু প্রতারক পাহাড়ে উঠার সিড়ি তৈরীর নামে চাঁদা উঠানোর ব্যবসা করে। এদের সাহায্য করার মাঝে কোন কল্যাণ নেই।

আসুন, আমরা সবাই চেষ্টা করি মাদীনাতুন নাবী সা. এর যিয়ারতের মাধ্যমে কল্যাণ হাসিল করি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের যাবতীয় প্রচেষ্টাকে ইবাদত হিসাবে কবুল করুন। আমীন॥



মদীনা মুনাওয়ারাহ সম্পর্কে আমার লিখা “মাদীাহ মুনাওয়ারাহ ১০টি বিশেষত্ব” না পড়ে থাকলে পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন।



Post a Comment

0 Comments