মাদীনাহ মুনাওয়ারাহ ১০টি বিশেষত্ব



মুহাম্মদ নজরুল ইসলামঃঃ মাদীনাতুর রাসূল সা. এটি একটি উত্তম ও পবিত্র শহর ঈমানের আধাঁর আনসার আর মুহাজিরদের মিলনস্থল এই মাদীনা এই শহর, যেখানে আমাদের নবীর কাছে বারবার অবতীর্ণ হয়েছেন জিব্রিলে আমীন বারাকাতের শহর এই মাদীনা, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা যে শহরকে সম্মাণিত মর্যাদাবান করেছেন মক্কা আল মুকাররামার পর পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ স্থান এই মাদীনা এই সেই শহর, যার ফজিলত সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে অগনিত হাদীস হাদীস সমূহে বর্ণিত হয়েছে এই শহরের পবিত্রতা, তার অবস্থান, এখানে দোয়া কবুলের কথা, এখানে রয়েছে রাসূল সা. সাহাবায়ে কিরামদের স্মৃতি বিজড়িত নানাবিধ স্থান অবস্থান

. আল্লাহমাদীনা শহরকে একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল বানিয়েছেনঃ

হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, নবী সা. বলেছেনঃ

 اللَّهُمَّ إِنَّ إِبْرَاهِيمَ حَرَّمَ مَكَّةَ فَجَعَلَهَا حَرَمًا وَإِنِّي حَرَّمْتُ الْمَدِينَةَ حَرَامًا مَا بَيْنَ مَأْزِمَيْهَا أَنْ لاَ يُهَرَاقَ فِيهَا دَمٌ وَلاَ يُحْمَلَ فِيهَا سِلاَحٌ لِقِتَالٍ وَلاَ يُخْبَطَ فِيهَا شَجَرَةٌ إِلاَّ لِعَلْفٍ

“হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই ইব্রাহীম আ. মক্কাকে হারাম ঘোষণা করেছেন এবং তা পবিত্র ও সন্মানিত হয়েছে আর আমি মদিনাকে হারাম ঘোষণা করলাম, যা দুই পাহাড়ের (আইর ও উহুদ) মধ্যস্থলে অবস্থিত অতএব এখানে রক্তপাত করা যাবে না, এখানে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে অস্ত্রবহন করা যাবে না এবং পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্য ব্যতিত গাছপালার পাতাও পাড়া যাবে না” (সহীহ মুসলিম)

২. মাদীনা রাসূল সা. এর দোয়ায় বরকতময় শহরঃ

হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. বর্ণিত হাদীস থেকে জানা যায় যে, রাসূল সা. মদীনা শহরের জন্য দোয়া করেছেন এই ভাবেঃ

اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي مَدِينَتِنَا اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي صَاعِنَا اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي مُدِّنَا 

“হে আল্লাহ! আমাদের এই শহরে বরকত দান করুন হে আল্লাহ! আমাদের সা’ এ বকরত দান করুন হে আল্লাহ! আমাদের মুদ্দ এ বরকত দান করুন” (সহীহ মুসলিম)

. ঈমানের আবার মদীনাতেই ফিরে আসবেঃ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ  إِنَّ الإِيمَانَ لَيَأْرِزُ إِلَى الْمَدِينَةِ كَمَا تَأْرِزُ الْحَيَّةُ إِلَى جُحْرِهَا ‏.

“হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ ঈমান মদিনাতে ফিরে আসবে যেমন সাপ তাঁর গর্তে ফিরে আসে।” (সহীহ বুখারী)

. মদীনায় বসবাস নবী সা. এর শাফায়াত বা সাক্ষী হওয়ার মাধ্যমঃ

হযরত আবু সাঈদ মাওলা আল মাহরী রাহি. থেকে বর্ণিত যে, তিনি আল হাররার রাতগুলোতে আবু সাঈদ আল খুদরী রা. এর নিকট এলেন এবং মদীনাহ থেকে (কোথাও) চলে যাওয়ার পরামর্শ করলেন তিনি তার কাছে এখানকার দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ও নিজের বৃহৎ পরিবারের অভিযোগ করলেন তিনি তাকে আরও জানালেন যে, তিনি এখানকার ক্লেশ ও রুক্ষ আবহাওয়া বরদাশত করতে পারছেন না হযরত আবু সাঈদ রা. তাকে বললেন, তোমার জন্য দুঃখ হয়, আমি তোমাকে মদীনাহ ত্যাগের পরামর্শ দিতে পারি না কারণ, আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছিঃ

لاَ يَصْبِرُ أَحَدٌ عَلَى لأْوَائِهَا فَيَمُوتَ إِلاَّ كُنْتُ لَهُ شَفِيعًا أَوْ شَهِيدًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِذَا كَانَ مُسْلِمًا 

“যে ব্যক্তি এখানকার কষ্ট সহ্য করে মৃত্যুবরণ করবে, কিয়ামতের দিন অবশ্যই আমি তার জন্য শাফা’আত করব অথবা সাক্ষী হব, যদি সে মুসলিম হয়ে থাকে” (সহীহ মুসলিম)

. মদীনা শহর ফেরেশতাদের দ্বারা সুরক্ষিত ও সংরক্ষিতঃ

হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. বর্ণিত হাদীস থেকে জানা যায়, রাসূল সা. বলেছেনঃ

وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ مَا مِنَ الْمَدِينَةِ شِعْبٌ وَلاَ نَقْبٌ إِلاَّ عَلَيْهِ مَلَكَانِ يَحْرُسَانِهَا حَتَّى تَقْدَمُوا إِلَيْهَا

“সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! মদিনার এমন কোন প্রবেশ পথ বা গিরি সংকট নেই যেখানে তোমাদের মদিনায় ফিরে আসা পর্যন্ত দু’জন করে ফিরিশতা পাহারায় নিযুক্ত নেই” (সহীহ মুসলিম)

. মদীনা শহর প্লেগ রোগ ও দাজ্জালমুক্তঃ

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সা. বলেছেনঃ

عَلَى أَنْقَابِ الْمَدِينَةِ مَلاَئِكَةٌ، لاَ يَدْخُلُهَا الطَّاعُونُ وَلاَ الدَّجَّالُ‏‏.‏

“মদিনার প্রবেশ পথসমূহে ফিরিশতা প্রহরায় নিয়োজিত থাকবে তাই প্লেগ এবং দাজ্জাল মদিনায় প্রবেশ কতে পারবে না(সহীহ বুখারী)

. মদীনা শহরে রয়েছে মসজিদে নাবাউয়ী-যাতে নামায পড়লে একহাজার নামাযের সমতূল্যঃ

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী সা. বলেনঃ

صَلاَةٌ فِي مَسْجِدِي هَذَا أَفْضَلُ مِنْ أَلْفِ صَلاَةٍ فِيمَا سِوَاهُ إِلاَّ الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ

“আমার এই মসজিদে (মসজিদে নাবাউয়ীতে) এক (রাকআত) সালাত মসজিদে হারাম ব্যতিত অন্য কোন মসজিদে এক হাজার (রাকাআত) সালাতের চেয়েও উত্তম” (সহীহ মুসলিম)

. মদীনা শহরে রয়েছে রাওদাতুল জান্নাহ বা জান্নাতের বাগানঃ

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সা. বলেছেনঃ

مَا بَيْنَ بَيْتِي وَمِنْبَرِي رَوْضَةٌ مِنْ رِيَاضِ الْجَنَّةِ، وَمِنْبَرِي عَلَى حَوْضِي‏

“আমার ঘর ও মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থান জান্নাতের বাগানসমূহের একটি বাগান আর আমার মিম্বর অবস্থিত (রয়েছে) আমার হাউয (কাওসার) এর উপর(সহীহ বুখারী)

. মদীনা শহর সুকৃতির লালন ও দূষ্কৃতির নির্মূলের শহরঃ

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ আল সালামী রা. হতে বর্ণিত, এক বেদুঈন রাসূলুল্লাহ সা. এর নিকট ইসলামের উপর বায়’আত নিল এরপর সে মাদীনায় জ্বরে আক্রান্ত হল বেদুঈন রা. এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার বায়’আত ফিরিয়ে দিন রাসূলুল্লাহ সা. অস্বীকৃতি জানালেন আবার সে এসে বলল, আমার বায়’আত ফিরিয়ে দিন রাসূলুল্লাহ সা. অস্বীকৃতি জানালেন এরপর সে আবার এসে বলল, আমার বায়’আত ফিরিয়ে দিন এবারও রাসূল সা. অস্বীকৃতি জানালেন, বেদুঈন বেরিয়ে গেল তখন রাসূলুল্লাহ সা. বললেনঃ

إِنَّمَا الْمَدِينَةُ كَالْكِيرِ تَنْفِي خَبَثَهَا وَيَنْصَعُ طِيبُهَا

“মাদীনা হাপরের মত সে তার মধ্যকার ময়লাকে দূর করে দেয় এবং ভালটুকু ধরে রাখে(সহীহ বুখারী)

১০. মদীনাবাসীর অকল্যাণ কামনা ধ্বংসের কারণঃ

হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, আবুল কাসিম (রাসূলুল্লাহ) সা. বলেছেনঃ

مَنْ أَرَادَ أَهْلَ هَذِهِ الْبَلْدَةِ بِسُوءٍ - يَعْنِي الْمَدِينَةَ - أَذَابَهُ اللَّهُ كَمَا يَذُوبُ الْمِلْحُ فِي الْمَاءِ ‏

“যে ব্যক্তি এই শহরের তথা মদীনার অধিবাসীদের ক্ষতি করতে চাইবে, আল্লাহ তাকে এমনভাবে গলিয়ে দিবেন যেমন লবণ পানিতে গলে যায় (সহীহ মুসলিম)

মদীনা বিষয়ক আরেকটি লিখা “মদীনা সনদ” পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন।



Post a Comment

0 Comments