মুহাম্মদ নজরুল
ইসলামঃঃ জামায়াত বিএনপির একটি
কানেকশন বুদ্ধি হওয়ার শুরু
থেকে শুনে আসছি। বিশেষ
করে জামায়াতের সাথে বিএনপি
বা বিএনপির সাথে জামায়াত
মিলে যখন সরকার গঠন
করে অথবা বিএনপির শাসনামলে
যখন জামায়াত ২টি মন্ত্রনালয়
নিয়ে অংশীদার হয়, তখন থেকে
বিষয়টি বেশ আলোচনায়। কিন্তু
আওয়ামীলীগ আর বিএনপি যখন
পারস্পরিক জামায়াত নিয়ে আলোচনা
করে,
তখন জামায়াতকে যেমন আওয়ামলীগ
দূরে ঠেলে দেয়, তেমনি বিএনপিও
জামায়াতকে কাছে না টেনে
দূরেই ঠেলে দেয়। আমাদের
আজকের আলোচনাটা যদিও সেই
বিষয়ে নয়, কিন্তু প্রসংগক্রমে
তার একটু আলোচনার দাবী
রাখে। যেমনঃ
১. জামায়াতে ইসলামীকে
আওয়ামীলীগ যুদ্ধাপরাধী দল হিসাবে
মনে করে। এই কারণে
বিএনপি কিন্তু বিরোধী অবস্থানে
যায়নি, বরং তারাও জামায়াতে ইসলামীকে
যুদ্ধাপরাধী দল মনে করে।
২. রাজনৈতিক প্রয়োজনে
আওয়ামলীগ যেমন জামায়াতের সাথে
আন্দোলন করেছে, জামায়াতের সাথে
বৈঠক করেছে। একই
কারণে কিন্তু বিএনপি জামায়াতকে
পরিত্যাক্ত ঘোষণা করেনি। বরং
বিএনপিও রাজনৈতিক স্বার্থে জামায়াতের
সাথে আন্দোলন করেছেন, সরকার পরিচালনা
করেছে।
৩. এরশাদ বিরোধী
আন্দোলনের পর যখন নির্বাচন
হয় এবং খালেদা জিয়া
প্রথম প্রধানমন্ত্রী হোন, তখন
জামায়াতের নিঃশর্ত সমর্থন নিয়েই
বিএনপি সরকার গঠন করে। একই নির্বাচনে আওয়ামীলীগ বেশী
আসন না পেলেও তারা
তলে তলে জাতীয়পার্টির সাথে
ঐক্য গড়ে জামায়াতের সমর্থন
নিয়ে সরকার গঠনে উদ্যোগী
হয়। জামায়াতের সাথে
আলোচনায় গ্রীন সিগনাল না পাওয়াতে
তারা বিষয়টি প্রকাশ করেনি।
৪. এরশাদ সরকারের
আমলে ৯৬ এর সংসদ
নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ১০টি
আসন লাভ করে। এই নির্বাচনে
আওয়ামলীগের সাথে মিলে জামায়াত
নির্বাচনে অংশ নেয়। বিএনপি
নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এই ইস্যুতে
জামায়াতকে বিশ্বাসঘাতক গালি
দিতে এখনো বিএনপি নেতারা
অত্যন্ত পারঙ্গম।
৫. আব্দুর রহমান
বিশ্বাস যখন রাষ্ট্রপতি হোন, তখন
জামায়াতের ভোটেই বিএনপি মনোনীত
প্রার্থী হিসাবে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। একই সময়ে আওয়ামলীগের প্রার্থী
বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরী
জামায়াতের তদানিন্তন আমীর অধ্যাপক
গোলাম আযমের বাসায় গিয়ে
সালাম দিয়ে দোয়া নিয়ে
আসেন, যাতে জামায়াতের এমপিদের ভোট
আওয়ামীলীগের প্রার্থী পান।
৬. কেয়ারটেকার সরকার
প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যখন আওয়ামলীগ-জাতীয়পার্টি-জামায়াতে
ইসলামী যুগপথ আন্দোলন করে, তখন
আমি উপজেলা পর্যায়ের ছাত্রনেতা
ও উপজেলা ছাত্রসংগঠনের সভাপতি
হওয়ার প্রেক্ষিতে আওয়ামীলীগের সাথে
অনুষ্ঠিত লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকে
তদানিন্তন উপজেলা আমীরের সঙ্গী
হয়ে উপস্থিত হয়েছি, তার হিসাব
মিলানো কঠিন। কেন্দ্রীয়
পর্যায়ে এই ভাবে কত মিটিং
শহীদ আলী আহসান মুহাম্মদ
মুজাহিদ, শহীদ কামারুজ্জামান এবং
শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা
এর সাথে হয়েছে, তার হিসাবও
মিলানো কঠিন।
উপরে বর্ণিত আলোচনার সবক’টি রাজনৈতিক
আলোচনা এবং ইস্যু ভিত্তিক
আলোচনা। কিন্তু আওয়ামলীগ, বিএনপি
এবং জামায়াতে ইসলামী পৃথক
পৃথক দল। তাদের
নাম আলাদা, আদর্শ আলাদা, অফিস
আলাদা, লক্ষ্য ও কর্মসূচী আলাদা। কিন্তু প্রশ্ন জাগেঃ এই দল গুলো
কে কার কত কাছাকাছি? আজকের
আলোচনায় আমরা সেই বিষয়টির
প্রতি আলোকপাত করতে চাই।
ক. আওয়ামীলীগঃ
১. আওয়ামীলীগ বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও স্বপ্ন(?) বাস্তবায়ন
করতে চায়।
২. আওয়ালীগের উদ্বোধনী শ্লোগান
হলোঃ মুজিব সেনা-এক হও। শেখ শেখ শেখ মুজিব-লও লও লও সালাম। জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু।
৩. আওয়ামলীগের মূলনীতিঃ বাঙালী
জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র।
খ. বিএনপিঃ
১. বিএনপি মরহুম প্রেসিডেন্ট
জিয়াউর রহমানের আদর্শ বাস্তবায়ন
করতে চায়।
২. বিএনপির উদ্বোধনী শ্লোগান
হলোঃ জিয়ার সৈনিক-এক হও। স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া-লও লও লও সালাম। বাংলাদেশ বাংলাদেশ-জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ। শহীদ জিয়া-ওমর হোক।
৩. বিএনপির মূলনীতিঃ সৃষ্টিকর্তার
উপর পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্তা, বাংলাদেশী
জাতীয়তাবাদ, গনতন্ত্র, অর্থনৈতিক ও সামাজিক
ন্যায় বিচার অর্থে সমাজতন্ত্র।
গ. জামায়াতঃ
১. নবী মুহাম্মদ সা. এর আদর্শ
বাস্তবায়ন করতে চায়।
২. জামায়াতের উদ্বোধনী শ্লোগান
হলোঃ নারায়ে তাকবীর-আল্লাহু আকবার। দ্বীন ইসলাম দ্বীন ইসলাম-জিন্দাবাদ
জিন্দাবাদ। বাংলাদেশ বাংলাদেশ-জিন্দাবাদ
জিন্দাবাদ। আমার নেতা
তোমার নেতা-বিশ্বনবী মুস্তাফা।
৩. জামায়াতের মূলনীতিঃ তাওহীদ, রেসালাত, আখেরাত, খেলাফাত।
তিনটি দলের তিনটি বিষয়
যদি আমরা আলোচনা করি, তাহলে
আমরা দেখবোঃ
ক. আওয়ামীলীগ আর বিনএপি
আদর্শিক দিক দিয়ে এক। দুই পক্ষই দুইজন মানুষকে
প্রতিষ্ঠা করার কাজ করছে। পার্থক্য শুধু এখানে যে, একজন
শেখ মুজিবের বন্দনায় ব্যস্ত। আরেকপক্ষ জিয়াউর রাহমানের বন্দনায়। এদিক দিয়ে জামায়াতের আদর্শ
সম্পূর্ণ ভিন্ন মেরুতে। তারা
চায় আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ
সা.
খ. আওয়ামীলীগ আর বিএনপির
শ্লোগান থেকে তাদের লক্ষ্য
যে কেবল দুনিয়া পর্যন্ত
সীমাবদ্ধ, তাই প্রতিয়মান হয়। অপর
দিকে জামায়াতের শ্লোগান সৃষ্টিকর্তার
বড় ও মহানত্ব নিয়ে, তাদের
আদর্শের প্রতীক নবী মুহাম্মদ
সা.কে নিয়ে।
গ. আওয়ামীলীগের মৌলিক
কথার প্রথম কথা বাঙালী
জাতীয়তাবাদ, আর বিএনপির বাংলাদেশী
জাতীয়তাবাদ। অর্থাৎ আওয়ামীলীগ
বাংলাভাষাভাষীদের নিয়ে নিয়ে কাজ
করে আর বিএনপি বাংলাদেশ
নামক রাষ্ট্রের সীমার মধ্যে
যারা অবস্থান করে তাদের
নিয়ে কাজ করে। আওয়ামীলীগের
সীমা রেখে ১৯০৬ সালে
বঙ্গভংগের আগে যেমন ছিল
পশ্চিম বঙ্গ ও পূর্ববঙ্গ
কেন্দ্রীক, ঠিক তেমন। আর বিএনপির
সীমা ১৯৪৭ সালে আলাদা
হওয়া পাকিস্তানের পূর্ব
পাকিস্তানের যে সীমা ছিল
তথা বাংলাদেশের বর্তমান সীমা
কেন্দ্রীক। আর এই জায়গায়
জামায়াতে ইসলামীর সীমা সারা
বিশ্বব্যাপী একটি আদর্শিক সীমা। আর তা হলো সারা
বিশ্বব্যাপী ইসলামী বিপ্লব সাধনের
লক্ষ্যে আপাততঃ জন্মভূমি বাংলাদেশ
কেন্দ্রীক কাজ। সহজ
কথায়, তাওহীদের বিশ্বাসীরা যেখানে আছে, তাদের
সকলকে নিয়ে কাজ।
ঘ. আওয়ামলীগের মৌলিক কথা
ধর্মনিরপেক্ষতা-যার বিবরণ দেয়া
হয়েছে বিশ্বের প্রসিদ্ধ অভিধান
সমূহে ধর্মহীনতা। সেই
জায়গায় বিএনপি তাদের মৌলিক
কথায় একটু এডিট করে
নিয়ে এসেছে সৃষ্টিকর্তার উপর
পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্তা। ধর্মনিরপেক্ষতার বিপরীতে যদি সৃষ্টিকর্তার
উপর পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্তার
কথা আলোচনা করা হয়, তাহলে
প্রথম কথা হলোঃ ধর্মহীনতা
থেকে ধর্মের দিকে অবস্থান। কিন্তু বিএনপির এই ধর্মের
প্রতি অবস্থান আল্লাহর দিকে
অবস্থান নয়। কারণ
তারা আল্লাহর উপর পূর্ণ
বিশ্বাস ও আস্তার কথা
বলেনা। মানে যার
ধর্মে যে ভাবে মনে
করা হয়, ঠিক সেভাবে। মানে তারা আল্লাহর প্রতি
আস্তা রাখার পাশাপাশি ঈশ্বর
ও ভগবানের প্রতি বিশ্বাস ও আস্তার
বিষয়টি সামনে নিয়ে আসতে
চায়। আমাদের মাঝে
প্রচলিত “ধর্ম যার যার” কথারই একটি
রূপ এটি। আর দ্বিতীয়
কথা এমন যে, দলীয় ভাবে
নয়,
বরং ব্যক্তিগত ভাবে সৃষ্টিকর্তাকে
যে যেভাবে মনে করেন, সে ভাবে
আস্তা ও বিশ্বাস রাখবেন। কিন্তু সেই বিশ্বাসের আলোকে
আদর্শ কি হবে, তা পরিস্কার
নয়। এই জায়গায়
জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান সম্পূর্ণ
ভিন্ন। তাদের অবস্থান
যেমন ধর্মনিরপেক্ষ নয়, তেমনি
সৃষ্টি কর্তায় বিশ্বাস নয়। বরং খোলাখুলি আল্লাহর প্রতি
ঈমান এবং আদর্শ হিসাবে
রেসালাত তথা নবী মুহাম্মদ
সা.
এর উপর বিশ্বাস ও তার
আদর্শ বাস্তবায়ন এবং সামগ্রিক
কাজ আখেরাত ভিত্তিক কাজ।
ঙ. আওয়ামীলীগের মৌলিক
কথা যেমন গনতন্ত্র, বিএনপিরও একই
গনতন্ত্র। এক্ষেত্রে জামায়াতের
কথাও গনতন্ত্র। তবে
তাদের ভাষায়ঃ খেলাফাত। খেলাফাতি
ব্যবস্থাও একটি গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা। গনতন্ত্রের মূল কথা যদি
হয় জনগনের সরকার, জনগনের দ্বারা
সরকার, জনগনের জন্য সরকার, তাহলে তার
সবচাইতে সুন্দর উদাহরণ হলো
খেলাফাত ব্যবস্থা। কারণ
খেলাফত ব্যবস্থা তথা খুলাফায়ে
রাশেদার সকলেই জনগনের সরকার
ছিলেন, তারা জনগন কর্তৃক নির্বাচিত
সরকার ছিলেন এবং তাদের
সরকার ছিল জনগনের জন্য
সরকার। এই একটা
বিষয়ে আমরা তিনটি দলের
অবস্থান একই জায়গায় দেখতে
পাই।
চ. আওয়ামীলীগের মৌলিক
কথা সমাজতন্ত্র। যেখানে
বিএনপি রেখেছে অর্থনৈতিক ও সামাজিক
ন্যায় বিচার অর্থে সমাজতন্ত্র। একসময় সারা বিশ্বে
সমাজতন্ত্রের জয়জয়কার ছিল। কিন্তু
তদানিন্তন সেভিয়েত প্রেসিডেন্ড মিখাইল
গর্ভাচেভ তার গ্লাসনসত ও পেরেস্ত্রয়িকা
নীতির আওতায় তদানিন্তন সমাজতন্ত্রের
কবর রচনা করেন। আদর্শিক
দিক দিয়ে সমাজতন্ত্র একটি
নাস্তিকতাবাদী আদর্শ। যার
মূল কথা হলোঃ আনসিন
ইজ নাথিং-যা দেখিনা
তা বিশ্বাস করিনা, রিলিজিওন ইজ আফিম
ফর দ্যা পিপল-ধর্ম মানুষের
জন্য আফিমের নেশা সমতুল্য। কমিউনিজম বা সমাজতন্ত্রের জয়জয়কারের
সময় বাংলাদেশের সৃষ্টি বলে
সেই আওয়ামীলীগের মৌলিক
কথার মাঝে সমাজতন্ত্রটা জুড়ে
দেয়া হয়েছে। আর বিএনপি
এসে সেই ধারণাটা একেবারে
এমন সাহস ছিল না বলে
তার সাথে সমাজতন্ত্রের সাথে “অর্থনৈতিক
ও সামাজিক ন্যায় বিচার অর্থে” শব্দাবলি
জুড়ে দেয়। কিন্তু
সমাজতন্ত্রের অর্থনৈতিক মূলকথা ছিল “কেউ
থাকবে গাছ তলায়, কেউ থাকবে
সাত তলায়-তা হবে
না,
তা হবে না।” বর্তমান
বিশ্ব ব্যবস্থায় যারা বিএনপি
ও আওয়ামীলীগের শাসন দেখেছেন, তারা বলতে
বাধ্য হবেন যে, তারা কেউই
অর্থনৈতিক নীতিমালায় সমাজতন্ত্রের ধারে
কাছেও ছিলেন না। বরং
সবাই মুক্তবাজার অর্থনীতির জালে
আবদ্ধ হয়ে সামাজিক ন্যায়
বিচারকে শিকে উঠিয়ে রেখে
দেশে পরিচালনা করেছেন। এই প্রেক্ষাপটে
জামায়াতে ইসলামী চায় যাকাত
ভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থা। জামায়াতে
ইসলামী চায় কুরআন সুন্নাহ
আলোকে আল্লাহর আইন এবং
সৎলোকের শাসন।
উপরের আলোচনায় দেখলামঃ কেবলমাত্র শাসন পদ্ধিতির ক্ষেত্রে তিনটি দলই একই কথা বলে, যা হলো গনতন্ত্র। আর বাকী সকল ক্ষেত্রে আওয়ামীলীগ আর বিএনপি পাশাপাশিই অবস্থান করছে। জামায়াতে ইসলামী সম্পূর্ণ ভিন্ন আরেক মেরুত অবস্থান করছে।
এতো গেল লিখিত বা বিশ্বাস
কর্মসূচীগত কথা। কিন্তু
ব্যবহারিক বা আমলী জিন্দেগীতে
আমরা যদি দল গুলোর
দিকে থাকাই আর বিশ্লেষষ
করি কে কার কত কাছাকাছি। তাহলে অবস্থা কেমন দাড়ায়?
দুনিয়াতে ধার্মিক-বিধর্মী, আস্তিক-নাস্তিক,
ভাল-খারাপ, পীর-চোর সকলের কাছেই ভাল আর খারাপের সংগা একই ধরণের। আল্লাহ মানুষকে
সৃষ্টিগত ভাবে বিবেক দিয়ে তৈরী করেছেন বলে খারাপ কাজ গুলো করতে গেলে আমাদের
বিবেকের দুয়ারে আর্থিং হয়, রিং বাজে। যখনই আমরা কোন খারাপ কাজ করতে যাই, তখন নিজের
কাছে নিজেকে চোর চোর মনে হয়। তাই খারাপ কাজ গুলো মানুষ গোপনে করতে চায়, আর ভাল কাজ
গুলো প্রকাশে এবং জানিয়ে করতে চায়। কিছু খারাপ কাজ রয়েছে, যা সকলের কাছে খারাপ বলে
গন্য। যেমনঃ
চুরি, ডাকাতি, দূর্নীতি, অপহরণ, চাঁদাবাজি,
সন্ত্রাস, ধুমপান, মদ, জুয়া, মাদক, ব্লু ফিলম, ইভটিজি, ধর্ষণ, মোহরানা আদায় না
করা, যৌতুক গ্রহণ, নারী নির্যাতন, টেন্ডারবাজি, ঘুষ, সুদ, অভদ্র ভাষায় কথা বলা,
পরীক্ষায় নকল করা, খাদ্যে ভেজাল দেয়া, ওজনে কম দেয়া, মজুতদারী, মূল্য বৃদ্ধিতে
সিন্ডিগেট করা, বড়দের সম্মাণ না করা, বখাটেপনা, আড্ডা দেয়া, নামায না পড়া, রোযা না
রাখা, দাপট দেখিয়ে চলা, অন্যের জমি দখল করা ইত্যাদি।
এখন বুকে হাত দিয়ে যদি আমরা সাক্ষ্য দেই যে,
এই কাজ গুলোর কোন কোনটি আওয়ামীলীগ বা ছাত্রলীগ করেনা? কিংবা এই কাজ গুলোর কোন
কোনটি বিএনপি বা ছাত্রদল করেনা? কিংবা এই কাজগুলো আওয়ামীলীগ করে বলে বিএনপি তা
থেকে বিরত থাকে। নতুবা বিএনপি করে বলে আওয়ামীলীগ বিরত থাকে। আমরা দেখতে পাবো এই
অপকর্ম গুলো করতে দুইটি দলই উস্তাদ এবং পারস্পরিক প্রতিযোগিতা পরায়ন।
এই দিক দিয়ে আশার বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশে
উদীয়মান শক্তি জামায়াতে ইসলামী বা ছাত্রশিবির এই কাজগুলো থেকে অনেক অনেক দূরে
অবস্থান করছে। বিএনপি আর আওয়ামলীগ যেখানে পাশাপাশি অবস্থান করছে, সেখানে জামায়াতের
অবস্থান এই ক্ষেত্রে হাজার হাজার মাইল দূরে।
আমাদের দেশে সমস্যা গুলো কোথায়? আমাদের
সমস্যা হলো উপরোক্ত বদ গুণ গুলো আমাদের সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে। আর এই গুলো আইন
করে রোধ করা কখনোই সম্ভব নয়। কারণ যারা আইন প্রয়োগ করবেন, তাদের মাঝেই এই বদগুণ
গুলো বিদ্যমান এবং তারাই এগুলোর পৃষ্টপোষক ও এগুলোর লোভে লোভাতুর।
জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী তার ইসলামী আন্দোলন সাফল্যের শর্তাবলী বইয়ের ভূমিকায় উল্লেখ করেছেনঃ কাজ করার আগ্রহ ও উদ্দেশ্য গ্রহণের সাথে সাথে মানুষ সাধারণতঃ কর্মসূচীর প্রশ্ন উত্থাপন করে। কিন্তু তারা ভুলে যায়, কর্মের সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচীর মধ্যবর্তী স্থানে কর্মীর নিজের সত্তাই হচ্ছে কাজের আসল ভিত্তি ও নির্ভর। এ বিষয়টিকে বাদ দিয়ে কাজ ও কর্মসূচীর কথা বলা ঠিক নয়। কাজ করার জন্য কেবল সংকল্পই যথেষ্ট এবং এরপর শুধুমাত্র কর্মসূচীর প্রশ্ন থেকে যায়, এ কথা মনে করা ভুল। এ ভুল ধারণার কারণে আমাদের এখানে অনেক বড় বড় কাজ শুরু হয়েছে এবং পরে তা চূড়ান্ত লক্ষে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়েছে। কাজেই কর্মসূচী ও পরিকল্পনা আসল নয়, আসল হচ্ছে এগুলোর বাস্তবায়নে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ ও তাদের চারিত্রিক গুণাবলী এবং প্রত্যেক ব্যক্তির ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক গুণাবলী।
তাই জামায়াতের কাজ গুলোর মাঝে রাজনৈতিক কাজ যতটুকু তার চেয়ে
৯৫ ভাগ বেশী কাজ হলো তার কর্মীদের আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ার কাজ। ফলে জামায়াতের মাঝে
আমরা এই বদ গুণ গুলো দেখতে পাইনা।
যার সাথে যার মিলে তার সাথে তার আঁতাত হতে পারে। যেহেতু আওয়ামীলীগ
আর বিএনপির মাঝে ব্যবহারিক আর আমলী দিক দিয়ে কোন পার্থক্য নেই এবং আদর্শিক দিয়ে নাম
মাত্র পার্থক্য, সেহেতু আওয়ামীলীগ বিএনপির সাথে আঁতাত করতে পারে, ঐক্য করতে পারে, কাছাকাছি
অবস্থান করতে পারে।
আমরা যদি বাংলাদেশকে একটি সুখী সমৃদ্ধশালী কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন
করতে চাই, তাহলে আমাদেরকে যারা দেশ পরিচালনা করবেন, তাদের থেকে উপরের বদ গুণ গুলো
দূর করতে হবে অথবা যাদের মাঝে এই বদ গুণ গুলো নাই, তাদেরকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান
করতে হবে।
0 Comments