ইসলামী আন্দোলনঃ প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকার
(প্রবাসে অবস্থানরত ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য)
ভূমিকাঃ
F অনাদি কাল থেকে ইসলামী আন্দোলন এগিয়ে চলেছে প্রতিবন্ধকার পাহাড়
মাড়িয়ে।
F যুগ যুগ ধরে ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য দুশমনেরা প্রাণপণ চেষ্টা
করেছে। যেমনঃ
o কখনো লাঠি দিয়ে।
o কখনো তীর দিয়ে।
o কখনো তরবারী দিয়ে।
o কখনো কামান বন্দুক দিয়ে।
o কখনো হাইড্রোজেন বোমা বা এটম বোম দিয়ে।
o কখনো পারমানিক বোমা দিয়ে।
F ইসলামী আন্দোলনকে এপর্যন্ত আসতে যে সব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে
আসতে হয়েছেঃ
ক. অপবাদ, অপপ্রচার
ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতা।
খ. মা, বাবা,
স্ত্রী, পুত্র, পরিবারের
পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধকতা।
গ. প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রশক্তির প্রতিবন্ধকতা ।
ঘ. ধনী পূঁজিপতি ও কায়েমী স্বার্থবাদীদে প্রতিবন্ধকতা
।
ঙ. ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিবন্ধকতা ।
চ. অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবরোধের মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতা
।
ছ. কর্মীদের নির্যাতন আর হত্যার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে
প্রতিবন্ধকতা ।
জ. যুদ্ধের মাধ্যমে নির্মূল করার মতো প্রতিবন্ধকতা।
F আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ইসলামী আন্দোলনের
প্রতিবন্ধকতা আসে মাত্র ১টি সোর্স থেকে। আর তা হলো “ইবলিসি শক্তি”।
F আল্লাহ যখন মানুষকে দুনিয়ায় খলিফার দায়িত্ব দিয়ে পাঠাবেন বলে সিদ্ধান্ত জানালেন,
তখন সেই শক্তি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল এই বলে যে, “আমি
অবশ্যই তাদেরকে গোমরাহ করে ছাড়বো”
﴿قَالَ فَبِمَا أَغْوَيْتَنِيْ لأَقْعُدَنَّ لَهُمْ
صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيْمَ ﴾﴿ ثُمَّ لآتِيَنَّهُمْ مِّنْ بَيْنِ أَيْدِيْهِمْ
وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَانِهِمْ وَعَنْ شَمَآئِلِهِمْ وَلاَ تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ
شَاكِرِيْنَ﴾
“সে বললোঃ আপনি আমাকে যেমন উদভ্রান্ত করেছেন,
আমিও অবশ্যই তাদের জন্য আপনার সরল পথে বসে থাকবো। এরপর তাদের কাছে
আসবো তাদের সামনের দিক থেকে, পেছন দিক থেকে, ডান দিক থেকে এবং বাম দিক থেকে। আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না।”
(আল আরাফঃ ১৬-১৭)
F আল্লাহর ঘোষনা হচ্ছেঃ “আল্লাহ তার দ্বীনের আলোকে প্রজ্জলিত রাখবেনই”
﴿يُرِيدُونَ لِيُطْفِؤُوا نُورَ
اللَّهِ بِأَفْوَاهِهِمْ وَاللَّهُ مُتِمُّ نُورِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ﴾
“এরা তাদের মুখের ফুঁ দিয়ে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে
চায়। অথচ আল্লাহর ফায়সালা হলো তিনি তার নূরকে প্রজ্জলিত করবেনই। আর বিষয়টা কাফেরদের
কাছে যতই অপছন্দনীয় হোক না কেন।” (আস সাফঃ ৮)
F ইবলিসি শক্তি তার এই চ্যালেজ্ঞ মোকাবেলা করার জন্য তার নিজের জাতি-জ্বিন
জাতি থেকে কিছু এজেন্ট নিয়েছে, আর মানব জাতি থেকেও কিছু এজেন্ট নিয়েছে।
F ইবলিসি শক্তি তার চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়ন করে যে কাজ বা দিয়ে-তার নাম
“ওয়াসওয়াসা”।
﴿الَّذِيْ يُوَسْوِسُ فِيْ صُدُوْرِ
النَّاسِ ﴾﴿ مِنَ الْجِنَّةِ وَ النَّاسِ﴾
“যে কুমন্ত্রনা দেয় মানুষের অন্তরে। জ্বিনের মধ্য থেকে
অথবা মানুষের মধ্য থেকে।” (আন নাসঃ৫-৬)
F মানুষ যাতে আল্লাহর খলিফা হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে না পারে এজন্য
ইবলিসের এজেন্টরা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। জ্বিন এজেন্টরা মনের মাঝে কুমন্ত্রনা দেয়।
আর মানব এজেন্টরা প্রকাশ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
F ইবলিসের মানুষ এজেন্টরা প্রধানতঃ ৩টি ভাগে বিভক্ত হয়ে প্রতিবন্ধকতা
সৃষ্টি করে।
১. আল্লাহদ্রোহী
রাষ্ট্রশক্তি এবং রাজনৈতিক মতাদর্শ। যেমনঃ
- ইব্রাহীমঃ নমরূদ।
- মুসাঃ ফিরাউন।
- মুহাম্মদঃ আবু জেহেল, আবু লাহাব।
২. কায়েমী
স্বার্থবাদী ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। যেমনঃ
- মুসাঃ নমরুদ/হামান।
- মুহাম্মদঃ সুদখোর ইহুদী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী।
৩. ধর্মব্যবসায়ী
মধ্যস্বত্বভোগী। যেমনঃ
- ইব্রাহীমঃ পিতা আযর (ধর্মগুরু)।
- মুহাম্মদঃ তাওরাত ও ইনজিলের আলেমগন।
F আমাদের দেশ বাংলাদেশ। ওখানে ইবলিসের মানুষ এজেন্টরা ইসলামী আন্দোলনের
প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে ৪টা শক্তি মিলিত হয়ে। যেমনঃ
১. সামরিক জান্তা।
২. মিডিয়া।
৩. রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও দল।
৪. আমলাতন্ত্র।
F আমরা যদি এই আলোচনাটা বাংলাদেশে বসে করতাম। আর আমার সামনে উপস্থিত
সবাই যদি হতেন বাংলাদেশের আন্দোলনের পুড় খাওয়া কর্মী। তাহলে আমরা বাংলাদেশের আর্ত সামাজিক
অবস্থার সাথে মিলিয়ে আলোচনা করতে পারতাম। কিন্তু যেহেতু আমরা প্রবাসী। তাই এখানে আমাদের
প্রতিবন্ধক গুলোকেই হাইলাইট করে এ পর্য্যায়ে আলোচনা করতে চাই।
F বর্তমান বিশ্বের এই প্রেক্ষিতে আমাদের মতো দূর্বলদের সামনে যে সব
প্রতিবন্ধকতা আসছে এবং আসবে, তা আমরা ধারাবাহিক ভাবে উপস্থাপন
করবো। সাথে সাথে এর প্রতিরোধে আমাদের কি পদক্ষেপ হওয়া উচিত, তাও
উল্লেখ করবো ইনশা আল্লাহ।
F আমাদের সামনে আসা প্রতিবন্ধকতাকে আমরা ১২টি ভাগে ভাগ করে
আলোচনা করতে চাই। যেমনঃ
1. নফসের প্রতিবন্ধকতাঃ
2. সমাজ, সামাজিকতা
ও রসম রেওয়াজের মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতাঃ
3. অশিক্ষা বা কুশিক্ষার কারণে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতাঃ
4. অভাবের কারণে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতাঃ
5. ভয়ের মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতাঃ
6. সম্পদ-স্ত্রী-সন্তানের ও পরিবারের মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতাঃ
7. ইসলামী পন্ডিত কর্তৃক প্রতিবন্ধকতাঃ
8. প্রভাবশালী ব্যক্তি ও গোষ্ঠী কর্তৃক প্রতিবন্ধকতাঃ
9. সরকার কর্তৃক প্রতিবন্ধকতাঃ
10. মিডিয়া বা তথ্য সন্ত্রাসের মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতাঃ
11. সংগঠনের ভিতরের লোক কর্তৃক প্রতিবন্ধকতাঃ
12. সংগঠন বিরোধী লোক কর্তৃক প্রতিবন্ধকতাঃ
এক: নফসের প্রতিবন্ধকতা
F নফসের
মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিতে প্রধান ভূমিকা রাখে ইবলিসের স্বজাতীয় তথা জ্বিন এজেন্টরা।
তারা অবশ্য তাদের কাজে কিছু মানব এজেন্টকেও ব্যবহার করে থাকে। যেমনঃ কখনো স্ত্রী,
কখনো পুত্র, কখনো বন্ধু, কখনো প্রতিবেশী ইত্যাদি কাউকে তারা এজেন্ট হিসাবে ব্যবহার করে।
﴿وَنَفْسٍ وَمَا سَوَّاهَا﴾﴿فَأَلْهَمَهَا فُجُورَهَا وَتَقْوَاهَا﴾﴿قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا﴾
“শপথ নফসের এবং যিনি তা সুবিন্যস্ত করেছেন তাঁর। অতঃপর
তাকে অসৎ কর্ম ও সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন। সেই সফলকাম, যে নিজেকে
পরিশুদ্ধ রাখে।” (আশ শামসঃ ৭-৯)
F নফস ৩ প্রকারের। যেমনঃ
১. নাফসে আম্মারাঃ
﴿وَمَا أُبَرِّئُ نَفْسِيْ إِنَّ
النَّفْسَ لأَمَّارَةٌ بِالسُّوْءِ إِلاَّ مَا رَحِمَ رَبِّيَ إِنَّ رَبِّيْ غَفُوْرٌ
رَّحِيْمٌ﴾
“(হযরত ইউসুফ আ. বলেছিলেন) আমি নিজেকে নির্দোষ বলিনা।
নিশ্চয়ই মানুষের মন মন্দ কর্মপ্রবণ। কিন্তু সে নয়-আমার পালনকর্তা যার প্রতি অনুগ্রহ
করেন। নিশ্চয়ই আামর পালনকর্তা ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”(ইউসুফঃ ৫৩)
২. নফসে লাউয়ামাঃ
﴿وَلَا أُقْسِمُ بِالنَّفْسِ
اللَّوَّامَةِ﴾
“আরো শপথ করি সেই মনের, যে নিজেকে
ধিক্বার দেয়।” (আল কিয়ামাহঃ ২)
৩. নফসে মুতমায়িন্নাহঃ
﴿مَنْ كَفَرَ بِاللّهِ مِنْ
بَعْدِ إيمَانِهِ إِلاَّ مَنْ أُكْرِهَ وَقَلْبُهُ مُطْمَئِنٌّ بِالإِيمَانِ وَلَـكِنْ
مَّنْ شَرَحَ بِالْكُفْرِ صَدْراً فَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ مِّنَ اللّهِ وَلَهُمْ عَذَابٌ
عَظِيمٌ﴾
“যার উপর জবরদস্তি করা হয় এবং তার অন্তর বিশ্বাসে অটল
থাকে সে ব্যতিত যে কেউ বিশ্বাসী হওয়ার পর আল্লাহতে অবিশ্বাসী হয় এবং কুফরীর জন্য মন
উম্মুক্ত করে দেয় তাদের উপর আপতিত হবে আল্লাহর গযব এবং তাদের জন্য রয়েছে শাস্তি ।”
(আন নাহলঃ ১০৬)
﴿يَا أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ﴾
“হে প্রশান্ত মন।” (আল ফাজরঃ ২৭)
F সফলকাম নফস আল্লাহর রেজামন্দীর জন্য জান রাজি রাখেঃ
﴿وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْرِيْ
نَفْسَهُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللّهِ وَاللّهُ رَؤُوفٌ بِالْعِبَادِ﴾
“আর মানুষের
মাঝে এক শ্রেণীর লোক রয়েছে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টিকল্পে নিজেদের নফসকে বাজি রাখে। আল্লাহ
হলেন তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত মেহেরবান।” (আল বাকারাঃ ২০৭)
﴿وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُواْ
فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُواْ أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُواْ اللّهَ فَاسْتَغْفَرُواْ لِذُنُوبِهِمْ
وَمَن يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ اللّهُ وَلَمْ يُصِرُّواْ عَلَى مَا فَعَلُواْ وَهُمْ
يَعْلَمُونَ﴾
“তারা কখনও কোন
অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা কোন মন্দ কাজে জড়িত হয়ে নিজের উপর জুলুম করে ফেললে,
আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ
ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবেন। তারা নিজের কৃতকর্মের জন্য হঠকারিতা প্রদর্শন করেনা এবং
জেনে শুনে তাই করতে থাকেনা।” (আলে ইমরানঃ ১৩৫)
F দুশমন নফসটাকে রক্ষা করতে হবে। নফসকে মুসলমান বানাতে হবেঃ
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا
قُوْا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيْكُمْ نَاراً وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا
مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَا يَعْصُوْنَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُوْنَ
مَا يُؤْمَرُوْنَ﴾
“মুমিনগন! তোমরা
নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা করো, যার ইন্দন হবে মানুষ আর পাতর। যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোর স্বভাব ফেরেশতাগন।
তারা আল্লাহ যা আদেশ করেন, তা অমান্য করেনা এবং যা করতে আদেশ
করা হয়, তাই করে।” (আত তাহরীমঃ ৬)
﴿قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا﴾
“নিঃসন্দেহে
সফল হয়ে গেছে সেই ব্যক্তি, যে তার নফসকে পরিশুদ্ধ করেছে।” (আশ
শামসঃ ০৯)
F নফসটাকে নিয়ে যেতে হবে সেই স্ট্যান্ডার্ডে, যাতে আল্লাহ বলেনঃ
﴿يَاأَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ﴾﴿ارْجِعِيْ إِلَىْ رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً﴾﴿فَادْخُلِيْ فِيْ عِبَادِيْ﴾﴿وَادْخُلِيْ جَنَّتِيْ﴾
“হে প্রশান্ত
নাফস! তুমি তোমার রবের নিকট ফিরে যাও সন্তুষ্ট
ও সন্তোষভাজন হয়ে। অতঃপর আমার বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাও। এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ
করো।” (আল ফাজরঃ২৭-৩০)
F আপনার করনীয়ঃ
o মনটাকে কাজ দিতে হবে। পড়ুন বইঃ মনটাকে কাজ দিন।
o নিজেকে কাজ দিয়ে নিজের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে
দিন।
o আমলের সিডিউল তৈরী করুন পরিকল্পনার সাথে সাথে।
যেমনঃ এই গুলো পড়বোই। এই কাজ এই তারিখে করবো।
o কন্টাক্ট গুলোর সিডিউল কনফার্ম করে নেবো মাসের
শুরুতে।
o সময় অপচয় রোধ করুন।
o সার্বক্ষনিক যিকির-বিল লিসান ওয়া বিল আমল।
দুই: সমাজ, সামাজিকতা ও রসম রেওয়াজের মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতা
F সমাজ আপনাকে প্রতিরোধ করছে। সহযোগিতা করছেনা। রাসূলের সমাজও বাঁধা
দিয়েছিল।
F মাওলানা মওদূদী রাহ. ওসম রেওয়াজ এক ধরণের খোদা বলে উল্লেখ করেছেন
এবং ৩ ধরণের খোদাকে অস্বীকার করে ইসলামে প্রবেশ করতে বলেছেন।
১. নফসের দাসত্ব,
২. বাপ-দাদা ও বংশের রসম রেওয়াজের দাসত্ব,
৩. দুনিয়ার মানুষের দাসত্ব।
F সামাজিকতা রক্ষায় আপনি বিভিন্ন দাওয়াতে যান। অথবা আপনার ওখানে দাওয়াত
পেয়ে অনেকে আসে। লক্ষ্য রাখতে হবেঃ
১. আপনি অন্য কর্তৃক প্রভাবিত হচ্ছেন, না আপনি প্রভাবিত করছেন। দাওয়াত কার সিডিউলে হচ্ছে।
২. আপনার স্ত্রী অন্যের স্ত্রী কর্তৃক প্রভাবিত
হচ্ছে না অন্যের স্ত্রীর উপর প্রভাব ফেলছে?
৩. আপনার ছেলে আপনার সাথে আর আপনার মেয়ে আপনার স্ত্রীর
সাথে থাকছে কিনা? পার্টিতে গিয়ে ঐ বাসার মেয়ের সাথে
আপনার ছেলে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে কিনা। অথবা ঐ বাসার ছেলের সাথে আপনার মেয়ে আড্ডা দিচ্ছে
কিনা?
৪. আপনার ঐ সমাজ অথবা সামাজিকতা আপনাকে নানাবিধ
সাংগঠনিক কাজ থেকে বিরত থাকতে প্রেক্ষাপট তৈরী করছে কিনা?
৫. আপনি কোন সমাজে বাস করছেন। ঐ সমাজ আপনার নেতৃত্বে
চলে, না আপনি ঐ সমাজের নেতৃত্বে চলেন।
তিন: অশিক্ষা বা কুশিক্ষার কারণে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা
F জানা লোক আর না জানা লোক কখনো সমান নয়।
﴿أَمَّنْ هُوَ قَانِتٌ آنَاءs
اللَّيْلِ سَاجِداً وَقَائِماً يَحْذَرُ الْآخِرَةَ وَيَرْجُو رَحْمَةَ رَبِّهِ قُلْ
هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ
أُوْلُوا الْأَلْبَابِ﴾
“যে ব্যক্তি
রাত্রিকালে সেজদার মাধ্যমে অথবা দাড়িয়ে এবাদত করে, পরাকালের আশংকা
রাখে এবং তার পালনকর্তার রহমত প্রত্যাশা করে, সে কি সমান,
যে এরূপ করে না; বলুন, যারা
জানে এবং যারা জানেনা; তারা কি সমান হতে পারে? চিন্তা-ভাবনা কেবল তারাই করে, যারা
বুদ্ধিমান।” (আয মুমারঃ ৯)
F ইসলামের প্রথম আসমানী নসিহতঃ পড়।
﴿اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي
خَلَقَ ﴾﴿خَلَقَ الْإِنسَانَ مِنْ عَلَقٍ﴾﴿اقْرَأْ وَرَبُّكَ
الْأَكْرَمُ ﴾﴿الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ ﴾﴿عَلَّمَ الْإِنسَانَ
مَا لَمْ يَعْلَمْ﴾
“পড়ুন আপনার রবের নামে যিনি সৃষ্টি
করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে। পড়–ন, আপনার রব
বড়ই দয়ালু। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন।” (আল আলাক্বঃ ১-৫)
o আমাদেরকে অনেক বেশী পড়তে হবে।
o আমাদেরকে জ্ঞানের রাজত্বে শ্রেষ্টত্ব অর্জন
করতে হবে।
F ইসলামী আন্দোলনের প্রতিবন্ধক ধর্মীয় মধ্যসত্বভূগীরা অশিক্ষা আর
কুশিক্ষার কারণে সুযোগ গ্রহণ করে।
F অশিক্ষা ও কুশিক্ষার পর্দা সত্য জানতে বাঁধার সৃষ্টি করে। ফলে ইসলাম
নামক বস্তুটা মানুষের কাছে হয় অন্ধের হাতি দেখার মতো। কিয়াম, চিল্লা, শফিসাব, মওদূদী সাব।
F এজন্য আল্লাহ আমাদেরকে মুসা আ. এর মাধ্যমে দোয়া শিখিয়েছেনঃ
﴿قَالَ رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي
﴾﴿وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي﴾﴿ وَاحْلُلْ عُقْدَةً
مِّن لِّسَانِي﴾﴿ يَفْقَهُوا قَوْلِي﴾
“(মুসা আ.) বললেনঃ
হে আমার রব, আমার বক্ষকে প্রশস্ত করে দিন। এবং আমার কাজ সহজ করে দিন। এবং আমার জিহবা থেকে জড়তা দূর করে দিন। যাতে
তারা আমার কথা বুঝতে পারে।” (ত্বা-হাঃ ২৫-২৮)
﴿وَقُل رَّبِّ زِدْنِي عِلْماً﴾
“এবং বলুন! হে
আমার বর, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দাও। ” (ত্বা-হাঃ ১১৪)
F শিক্ষা ২ ধরণের।
১. পূথিগত শিক্ষা।
২. নৈতিক শিক্ষাঃ
o আপনার সন্তান কি কুরআন পড়তে জানে?
o আপনার সন্তান কি আপনার মতো করে গড়া?
o আপনার সন্তান দুনিয়ায় প্রতিষ্টিত হতে সার্টিফিকেটের
পাহাড় গড়ছে।
o আপনার সন্তানের স্কুল এবং টিউশনির জন্য ট্রান্সপোর্টেশন
আপনি করছেন নিজ দায়িত্বে।
o আপনার প্রোগ্রামে উপস্থিতি এবং আপনার স্ত্রীর উপস্থিতির
বিষয় আপনি ঠিক মতোই তত্ত্বাবধান করছেন।
o আপনার সন্তানের প্রোগ্রামের উপস্থিতির পরিবহণ ব্যবস্থা
কি আপনি তত্ত্বাবধান করছেন।
o আপনার সন্তানের দুনিয়ার সুখের জন্য দায়িত্ব নেয়ার
সাথে সাথে আখেরাতের সুখের দায়িত্ব নিতে হবে।
চার: অভাবের কারণে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা
F অভাবের কারণে মানুষে জাহেলিয়াতের দারস্ত হচ্ছে।
F রাসূল সা. মদীনায় হিজরত করে মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা
করেছেন।
F আল্লাহর রাসূল সা. সীমাহীন প্রচূর্য্য আর অভাব হতে পানাহ
চেয়েছেন।
F হাদীসঃ
F আর্থিক দৈন্যদশা দূর করার জন্য যাকাত ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন।
F অভাবের কারণে মানুষ যাতে সমস্যা পড়ে শয়তানের ষড়যন্ত্রের শিকার
না হয়, সে জন্য হাদিয়া, সাদাকা,
একে অন্যকে খাওয়ানো, কর্যে হাসানা প্রদানের
বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে উৎসাহ প্রদান করেছেন।
F অভাবের সুযোগটাকে কাজে লাগায় শয়তানের মুরিদেরা। এনজিও, সমিতি, ক্লাব, সহায়তা ইত্যাদির
মাধ্যমে আপনাকে বাহ্যিক সহায়তা দিয়ে বন্দী করে। এর পর শুরু হয় মানসিক প্রভাব-এর
কাজ। এক সময় ব্যক্তি অক্টোপাশে বন্দী হয়ে যায়। ফিরে আসতে পারেনা। যেমনঃ অভাবের
কারণে গালস স্কুলে চাকুরী বা সুদী ব্যাংকে চাকুরী নেয়া, এনজিওতে
চাকুরী নেয়া, বিভিন্ন অস্বচ্ছ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকুরী
নেয়া। এই ভেবে যে, এটা সাময়িক। কিন্তু আর ফিরে আসা সম্ভব
হয়না। অবশেষে ঐ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ অবলম্বন করে ফতোয়া দেয়।
F করণীয়ঃ
o জনশক্তিকে কাজের সুযোগ করে দেয়া।
o ডিউটি থাকলে ছুটি দেয়া।
o অহেতুক খরচ কমানো।
o নিজে হজ্জ না করে মা বাবার হজ্জ। নিজে হজ্জ না
করে মা-বাবা, শশুড়-শাশুড়ীর উমরাহ। অথচ নিজে
সীমাহীন ঋণগ্রস্থ।
o উদার মনের অধিকারী হয়ে না বুঝে যে কাউকে ঋণ
দেয়ার মানসিকতা পরিহার।
পাঁচ: ভয়ের মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতা
F ক্রস ফায়ারে দেয়া হবে-এটা বাংলাদেশের এখন নিত্য দিনের ভয়
প্রদর্শনের সেনটেস।
F সকল নবীকে এবং ইসলামী আন্দোলনের সর্বযুগে ভয় দেখানো হয়েছে।
F সত্যিকার মুমিন ভয়কে জয় করবে। ভয়কে প্রতিবন্ধকতা মনে করবে।
F ভয় এক ধরণের পরীক্ষা। এই পরিক্ষায় পাশ করতে হয় ধৈর্য্য ধরে
ঠিকে থাকার মাধ্যমে।
﴿وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ
مِّنَ الْخَوفْ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الأَمَوَالِ وَالأنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ
الصَّابِرِينَ﴾
“এবং অবশই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো কিছুটা ভয়,
ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে।
তবে সুসংবাদ সবরকারীদেরকে।” (আল বাক্বারাঃ ১৫৫)
F মনে রাখতে হবে যে, সকল ধরণের বিপদ মুসিবত
আসে আল্লাহর নির্দেশে।
﴿مَا أَصَابَ مِن مُّصِيْبَةٍ
إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ وَمَنْ يُؤْمِنْ بِاللَّهِ يَهْدِ قَلْبَهُ وَاللَّهُ بِكُلِّ
شَيْءٍ عَلِيمٌ ﴾
“আল্লাহর নির্দেশ
ছাড়া কোন বিপদ আসেনা এবং যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করে, তিনি
তার অন্তরকে সৎপথ প্রদর্শণ করেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে পরিজ্ঞাত।” (আত তাগাবুনঃ ১১)
﴿قُل لَّن يُصِيبَنَا إِلاَّ
مَا كَتَبَ اللّهُ لَنَا هُوَ مَوْلاَنَا وَعَلَى اللّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ﴾
“তাদের বলে দাও,
আল্লাহ আমাদের জন্য যা লিখে দিয়েছেন, তা ছাড়া আর
কোন (ভাল বা মন্দ) কিছুই আমাদের হয়না। আল্লাহই আমাদের অভিভাবক ও কার্যনির্বাহক এবং
ঈমানদারদেও তাঁর উপরই ভরসা করা উচিত।” (আত তাওবাঃ ৫১)
ছয়: সম্পদ-স্ত্রী-সন্তানের ও পরিবারের মাধ্যমে
প্রতিবন্ধকতা
F কাহিনীঃ
ভোরের সকাল। সাফা পাহাড়ে দাড়িয়ে মুহাম্মদ। মুহাম্মদ মানে সকলের প্রিয় আল আমীন।
বাঁধা দিলেন নিজের চাচা আবু লাহাব।-তাব্বাত লাকা ইয়া মুহাম্মদ।-পাথর চূড়ে মারলেন।
F পরিবার কর্তৃক প্রতিবন্ধকতা বুঝাতে আমরা কুরআনে আল্লাহ প্রদত্ত ২জন মহিলার
উদাহরণ দিতে পারি। যেমনঃ
﴿ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلاً لِّلَّذِينَ
كَفَرُوْا اِمْرَأَةَ نُوحٍ وَاِمْرَأَةَ لُوطٍ كَانَتَا تَحْتَ عَبْدَيْنِ مِنْ عِبَادِنَا
صَالِحَيْنِ فَخَانَتَاهُمَا فَلَمْ يُغْنِيَا عَنْهُمَا مِنَ اللَّهِ شَيْئاً وَقِيلَ
ادْخُلَا النَّارَ مَعَ الدَّاخِلِينَ﴾
“আল্লাহ তায়ালা
কাফেরদের জন্য নূহ আ. এর স্ত্রী ও লূত আর. এর স্ত্রীর উদাহরণ বর্ণনা করেছেন। তারা ছিল
আমার দুই ধর্মপ্রাণ বান্দার ঘরে। অতঃপর তারা তাদের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করলো। ফলে নূহ
ও লূত তাদেরকে আল্লাহর কবল থেকে রক্ষা করতে পারলোনা এবং তাদেরকে বলা হলোঃ জাহান্নামীদের
সাথে জাহান্নামে চলে যাও।” (আত তাহরীমঃ১০)
F পরিবারের সহযোগিতা বুঝাতে আমরা আরেকজন জান্নাতি মহিলার উদাহরণ দিতে
পারি। যেমনঃ
﴿وَضَرَبَ اللَّهُ مَثَلاً لِّلَّذِينَ
آمَنُوا اِمْرَأَةَ فِرْعَوْنَ إِذْ قَالَتْ رَبِّ ابْنِ لِي عِندَكَ بَيْتاً فِي الْجَنَّةِ
وَنَجِّنِي مِنْ فِرْعَوْنَ وَعَمَلِهِ وَنَجِّنِي مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ﴾
“আল্লাহ মুমিনদের জন্য ফিরাউনের স্ত্রীর
উদাহরণ দিয়েছেন। সে বললোঃ হে আমার রব! আপনার নিকটে জান্নাতে আমার জন্য একটি ঘর বানান।
আমাকে ফিরাউন ও তার দূষ্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন এবং আমাকে জালেম সম্প্রদায় থেকে মুক্তি
দিন।” (আত তাহরীমঃ ১১)
F কুরআনে স্ত্রী সন্তান আর সম্পদকে ফিতনা এবং দুশমন বলা হয়েছেঃ
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوْا
إِنَّ مِنْ أَزْوَاجِكُمْ وَأَوْلَادِكُمْ عَدُوّاً لَّكُمْ فَاحْذَرُوْهُمْ وَإِنْ
تَعْفُوْا وَتَصْفَحُوْا وَتَغْفِرُوْا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيْمٌ ﴾
“হে মুমিনগন!
তোমাদের কোন কোন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি তোমাদের দুশমন। অতএব তাদের ব্যাপারে সতর্ক
থাকো। যদি মার্জনা করো, উপেক্ষা করো, ক্ষমা
করো। তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল করুণাময়।” (আত তাগাবুনঃ
১৪)
﴿إِنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ
فِتْنَةٌ وَاللَّهُ عِندَهُ أَجْرٌ عَظِيْمٌ﴾
“তোমাদের ধন-সম্পদ
আর সন্তান-সন্ততি তো কেবল পরীক্ষা স্বরূপ। আর আল্লাহর কাছে রয়েছে মহা পুরস্কার।” (আত
তাগাবুনঃ ১৫)
F কুরআনের অন্যত্র এই জিনিস গুলোকেই দুনিয়ার জীবনের অলংকার বলা হয়েছেঃ
﴿الْمَالُ وَالْبَنُونَ زِينَةُ
الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَالْبَاقِيَاتُ الصَّالِحَاتُ خَيْرٌ عِنْدَ رَبِّكَ ثَوَاباً
وَخَيْرٌ أَمَلاً ﴾
“সম্পদ আর সন্তান-সন্ততি
দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য এবং স্থায়ী নেক আমলগুলো উত্তর আপনার রবের নিকট এবং আশা লাভের
জন্য উত্তম।” (আল কাহফঃ ৪৬)
F সন্তান আর স্ত্রীকে দ্বীনের পথে আনতে হবেঃ
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوْا
قُوْا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيْكُمْ نَاراً وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا
مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَا يَعْصُوْنَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ
مَا يُؤْمَرُوْنَ﴾
“মুমিনগন! তোমরা
নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা করো, যার ইন্দন হবে মানুষ আর পাতর। যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোর স্বভাব ফেরেশতাগন।
তারা আল্লাহ যা আদেশ করেন, তা অমান্য করেনা এবং যা করতে আদেশ
করা হয়, তাই করে।” (আত তাহরীমঃ ৬)
F সম্পদ অর্জনের একটা মাধ্যম হচ্ছে ব্যবসাঃ
o
আঙ্গুল
ফুলে কলাগাছ হওয়ার ব্যবসা। যেমনঃ ডিএক্সএন, ডেসটিনি,
ইনসুরেন্স, ভিসার দালালী।
o
অনেক
ব্যবসাতে আমরা জড়িত হই, যা আসলে ধোঁকা। এই বিষয়ে আমাদের কোন গভীর
পড়ালেখা বা গবেষণা নাই। বিধায় আমরা জানিনা। আমাদের জ্ঞানের পরিধি খুব কম। অথচ
আমাদের ভূমিকা ও বক্তব্য মহাজ্ঞানীর মতো।
o
মাথার
ঘাম পায়ে ফেলে তিল তিল করে মুনাফা অর্জন হলো।
F সম্পদ ব্যয় করতে হবে আল্লাহর পথেঃ
﴿ضَرَبَ اللّهُ مَثَلاً عَبْداً
مَّمْلُوْكاً لاَّ يَقْدِرُ عَلَى شَيْءٍ وَمَنْ رَّزَقْنَاهُ مِنَّا رِزْقاً حَسَناً
فَهُوَ يُنْفِقُ مِنْهُ سِرّاً وَجَهْراً هَلْ يَسْتَوُوْنَ الْحَمْدُ لِلّهِ بَلْ
أَكْثَرُهُمْ لاَ يَعْلَمُوْنَ﴾
“আল্লাহ একটি
দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন, অপরের মালিকানাধীন গোলামের যে,
কোন কিছুর উপর শক্তি রাখে না এবং এমন একজন যাকে আমি নিজের পক্ষ থেকে
চমৎকার রুযী দিয়েছে। অতএব, সে তা থেকে ব্যয় করে গোপনে ও প্রকাশ্যে
উভয়ে কি সমান হয়? সব প্রশংসা আল্লাহর, কিন্তু
অনেক মানুষ জানেনা।” (আন নহলঃ ৭৫)
F সব কিছুর উপর ইসলামী আন্দোলনঃ
﴿قُلْ إِنْ كَانَ آبَاؤُكُمْ
وَأَبْنَآؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوْهَا
وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُمْ مِّنَ
اللّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِيْ سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُواْ حَتَّى يَأْتِيَ اللّهُ
بِأَمْرِهِ وَاللّهُ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ﴾
“হে নবী! বলে
দাও, যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান
ও তোমাদের ভাই তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের আত্মীয়-স্বজন,
তোমাদের উপার্জিত সম্পদ, তোমাদের যে ব্যবসায়ে মন্দা
দেখা দেয়ার ভয়ে তোমরা তটস্থ থাকো এবং তোমাদের যে বাসস্থানকে তোমরা খুবই পছন্দ করো-এসব
যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা. এবং তাঁর পথে জিহাদ করার চাইতে তোমাদের কাছে বেশী প্রিয়
হয়, তাহলে আল্লাহর ফায়সালা তোমাদের কাছে না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা
কর-আল্লাহ ফাসেকদেরকে কখনো সত্য পথের সন্ধান দেন না।” (আত্ তাওবাঃ ২৪)
সাত: ইসলামী পন্ডিত কর্তৃক প্রতিবন্ধকতা
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُواْ
إِنَّ كَثِيْراً مِّنَ الأَحْبَارِ وَالرُّهْبَانِ لَيَأْكُلُوْنَ أَمْوَالَ النَّاسِ
بِالْبَاطِلِ وَيَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِيلِ اللّهِ وَالَّذِيْنَ يَكْنِزُوْنَ الذَّهَبَ
وَالْفِضَّةَ وَلاَ يُنْفِقُوْنَهَا فِيْ سَبِيْلِ اللّهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ
أَلِيمٍ﴾
“হে ঈমানদারগন!
পন্ডিত ও সংসার বিরাগীদের অনেকে লোকদের মালামাল অন্যায় ভাবে ভোগ করে চলছে এবং আল্লাহ
পথ থেকে লোকদের নিবৃত রাখছে। আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না
আল্লাহর পথে তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দাও।” (আত তাওবাঃ ৩৪)
o সে কালে তারা কিতাবের কিছু অংশ প্রদর্শন করতো আর
কিছু অংশ যাতে মানুষ জানতে না পারে, এজন্য
ঢেকে রাখতো।
o মানুষ যাতে প্রকৃত আসমানী হেদায়াত না জানে এজন্য
মিথ্যার আশ্রয় নিতো।
F আজকেঃ
o নিজের বুজুর্গীর জন্য সত্য উপস্থাপন করেনা।
o লেখা পড়া না করে আলেমের বেশ ধারণ করে।
o শিরক বিদাতের মাধ্যমে মানুষের চোঁখে পর্দা টানিয়ে
রাখে।
o নিজেদের দুনিয়ার স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে দ্বীনকে
বিবেচনা করে।
o সামান্য টাকায় বিক্রি হয়ে যায় (হেফাজত)।
o জ্ঞানের জগতে অবস্থান করে রাজনীতি নিয়ে কথা বলে
(আবু বকর-উমর/আব্দুল্লাহ গং)।
o ইসলামের দূর্যোগে ফতোয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকে।
o ইসলামের বিজয় নিয়ে কোন তৎপরতা নাই, শুধু নানান বিষয়ে ফতোয়া দেয়।
F প্রতিকারঃ
o মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা।
o মকতবে শিক্ষকতা।
o মসজিদে ইমামতি।
o সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ।
o জানাযা, করব
যিয়ারতে শামীল হওয়া।
o দাওয়াত খাওয়া।
আট: প্রভাবশালী ব্যক্তি ও গোষ্ঠী কর্তৃক প্রতিবন্ধকতা
o এদের আধুনিক নাম হলো সুশীল সমাজ।
o ওরা সব সময় মধূ খেতে চায়।
o সরকারের পরিবর্তন হয়, তাদের সুবিধার পরিবর্তন হয়না।
o ওরা ওয়াজ করে। কিন্তু নিজেরা কাজ করার জন্য
ময়দানে আসেনা।
o ওরা মিছিল করেনা, জেলে যায়না, গুলিবিদ্ধ হয়না।
o ওরা দৃশ্যত সুন্দর সুন্দর কথা বললেও ইসলাম আর
ইসলামী আন্দোলনের বিরুধীতায় ওরা এক।
o ওদের মাঝে প্রফেসার, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবি, আইনজীবি, ব্যবসায়ী, আমলা সবাই
রয়েছে।
নয়: সরকার কর্তৃক প্রতিবন্ধকতা
o সর্বকালে ইসলামের পথে বড় প্রতিবন্ধক ছিল সরকার।
o ফিরাউন নমরুদ শাদ্দাদ সবাই নবীদের বিরুধীতা করেছে।
o প্রতিষ্ঠিত সরকার আল্লাহর রাসূলের বিরুধীতা করেছে।
o সরকার বলতে প্রতিষ্ঠিত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা নয়।
যে কোন অঞ্চলের শাসক বা দায়িত্বশীল হতে পারে।
F বর্তমান বিশ্বের ইসলামী আন্দোলনে প্রধান শত্রু হলো সরকার। এই
সরকারঃ
১. জনগনের ভোটে নির্বাচিত হতে পারে।
২. ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে
অধিষ্টিত হতে পারে।
৩. সামরিক শাসক হতে পারে।
৪. আমলাতান্ত্রিক ক্যূ এর মাধ্যমে
প্রতিষ্ঠিত সরকার হতে পারে।
৫. রাজতান্ত্রিক ভাবে আসা সরকার হতে
পারে।
৬. একনায়ক হতে পারে।
F করণীয়ঃ
১. সরকার বলতে সেনাবাহিনী, আদালত, প্রশাসন, গোয়েন্দা বিভাগ
এবং মিডিয়া সব কিছু মিলিয়ে সরকার। ঐ সকল জায়গাতে নিজের লোককে প্রতিষ্ঠা করতে হবে (যেমন তুরস্ক)।
২. সরকার প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে জনগনের সমর্থন পেতে গনভিত্তি রচনা করতে হবে। এজন্য দাওয়াতী কাজকে সর্বস্তরে
বাড়াতে হবে।
৩. নিজস্ব মিডিয়া প্রতিষ্ঠা
করতে হবে। মিডিয়াকে দখল করতে হবে।
দশ: মিডিয়া বা তথ্য সন্ত্রাসের মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতা
F মিডিয়া, যাকে বলে وسائل إعلامية
F প্রিন্ট মিডিয়া এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াঃ
F প্রিন্ট মিডিয়া। যেমনঃ পত্রিকা ম্যাগাজিন ইত্যাদি।
F ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া। যেমনঃ টিভি, রেডিও, সিটি,
ডিভিডি, ইন্টারনেট।
o আপনার সন্তানের কম্পিউটার আপনার ঘরে থাকাই সবচেয়ে
উত্তম।
o যদি সন্তানের ঘরে কম্পিউটার হয়, তাহলে তার মনিটর সব সময় দরজামুখী করুন কৌশলে।
o আপনার সন্তানকে পারত পক্ষে হাই কোয়ালিটির মোবাইল
দেবেন না। যেমন আইফোন, সামসুন ইত্যাদি।
o আপনার সন্তানের ছোট কালের একটি ভূলকে উল্লেখ করে
বুঝাতে হবে যে, এখন সে যা ভাল মনে করছে ১০ বছর
পর ঐটাকেই সে ভূল মনে করবে।
o বিধায় সন্তানকে বুঝাতে হবে যে, তার কম্পিউটার মোবাইল
ইত্যাদি চেক করা অভিভাবকের উপর দায়িত্ব তার কল্যাণের জন্য।
o আপনার সন্তানকে এটা বুঝাতে হবে যে, মা এবং বাবা সামনে যা করা যায়না-তা ই অন্যায়।
o সন্তানকে বুঝাতে হবে যে, মোবাইলে বা কম্পিউটারে সেইভ করা যে জিনিস আব্বু বা আম্মু দেখলে
সমস্যা আছে বলে সে মনে করে-তা ই অন্যান্য।
F সোসাল মিডিয়াঃ ফেইসবুক, ব্লগ, ইউটুবি।
o যা রাক্ষুসের মতো সময়কে খেয়ে ফেলে।
o যা নেশার সৃষ্টি করে। ঐ নেশা থেকে বের হওয়া মুশকিল।
o ঐ সব কাজে সময় দিতে হবে ইবাদতের নিয়তে, সময় নির্দিষ্ট করে এবং নেশামুক্ত ভাবে।
o কিছু দিন আগে এক মাদ্রাসা ছাত্রের কান্ড+ফেইসবুক।
F মিডিয়ার প্রভাবঃ
o মিডিয়ার কাজ হলো তিলকে তাল বানানো আর তালকে অদৃশ্য
করে দেয়া।
o পল্টন ময়দানে সমাবেশ বনাম চ্যানেল আই এর রিপোর্ট।
o দোখানে একজন সদস্য ভাইয়ের অবস্থা।
o জানে যে সকল টেলিভিশন আমাদের বিরুধী। এর পরও ঐ টেলিভিশনের
বরাত দিয়ে প্রশ্নবানে জারজরিত করেছে।
F তথ্য সন্ত্রাস রাসূলের যুগে ওটা ছিল।
o প্রচারনা চালানো হতো-ওর কাছে যেওনা, ও পাগল, ওর মাঝে যাদু আছে।
o মানুষ প্রচারণাতে বিভ্রান্ত না হয়ে সত্য জানার জন্য
আগ্রহী হয়েছে।
o শফিকুল ইসলাম মাসুদঃ অপপ্রচারও এক ধরণের প্রচার।
o বিএনপি আমলে মিডিয়ার সৃষ্টি।
o জামায়াতের মিডিয়া সৃষ্টির প্রয়াস।
F করণীয়ঃ
o মিডিয়া কেন্দ্রীক লোক তৈরী করা।
o যুবকদের সাংবাদিকতার পেশায় এগিয়ে আসা।
o ফেইস বুক এবং ব্লগে লেখা।
o আমাদের ভিডিও ক্লিপ গুলো ইউটুবিতে ছড়িয়ে দেয়া।
o প্রিন্ট মিডিয়া এবং ইলেক্ট্রানিক মিডিয়া প্রতিষ্ঠা
এবং প্রতিষ্ঠিত মিডিয়া দখল করা।
এগার: সংগঠনের ভিতরের লোক কর্তৃক প্রতিবন্ধকতা
F গাছের শত্রু। যেমনঃ গরু ছাগল বৃক্ষ খাদক বনাম গাছ পোকা।
F সংগঠনের শত্রু। যেমনঃ আওয়ামীলীগ বনাম নিজ দলের লোক।
F অহেতুক সমালোচনা। সমালোচনায় দায়িত্বশীলরা এগিয়ে।
F গীবতের চর্চা ও মুহাসাবা বন্ধ থাকা।
F শপথের আলোকে না চলা। আক্বীদা ও বিশ্বাসের আলোকে না চলা।
দ্বীনকে দুনিয়ার উপর প্রাধান্য না দেয়া। লেন-দেনে অস্বচ্ছতা। বিশেষ করে নিজের
নিয়ন্ত্রন নয় এমন ব্যবসাতে জড়িতে হয়ে ওয়াদা রক্ষা করতে না পারা।
F এক কথায়ঃ ইসলামী আন্দোলন সফল করতে লক্ষ্য আর কর্মসূচীর মাঝখানে
যাদের অবস্থান সেই সব সম্মানীতি কর্মীদেরকে ব্যক্তিগত গুনাবলী কাংখিত মানে নিয়ে
আসা।
o ব্যক্তিগত গুনাবলী।
o দলীয় গুনাবলী।
o পূর্ণতা দানকারী গুনাবলী।
F এজন্য নিম্নোক্ত বই গুলোতে যে মান প্রত্যাশা করা হয়েছে,
তা আয়ত্ব করার চেষ্ঠা করাঃ
o হেদায়াত।
o চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান।
o ইসলামী আন্দোলন সাফল্যের শর্তাবলী।
o ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি।
o ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক।
বার: সংগঠন বিরোধী লোক কর্তৃক প্রতিবন্ধকতা
F যেমনটা
এই মাত্র বলেছিলাম গাছের উদাহরণ দিয়ে।
F নাস্তিক,
মুরতাদ এবং ইসলাম নামধারী।
F ওরা সর্বশক্তি
দিয়ে সংগঠনকে নির্মূল করতে চাইবে।
F ওরা ছলে
বলে কৌশলে সংগঠনের কর্মীদেরকে এ পথ হতে সরিয়ে ফেলতে চাইবে। তা সম্ভব না হলে হত্যার
পথ বেঁচে নেবে।
F ওরা সংগঠনের
আদর্শকে নিমূল করার জন্য ধারাবাহিক পদক্ষেপ নেবে। আগামীর প্রজন্মের মগজ আর চরিত্র ধ্বংস
করার জন্য দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নেবে।
F ওরা সংস্কৃতির
উপর আঘাত হেনে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসবে চূড়ান্ত লক্ষ্যের পানে।
F মোকাবেলাঃ
জনশক্তিকে ইসলামী জ্ঞান প্রদান আর আদর্শ চরিত্রবান রূপে গড়ে তুলে জাহেলিয়াতের সমস্ত
চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় ইসলামের শ্রেষ্টত্ব প্রমাণ করতে পারে, এমন করে গড়ে তুলতে হবে।
উপসংহার
F যারা ভ্রাতৃত্ব ও ন্যায়ের সৌধের উপর একটি ইসলামী সমাজ বিনির্মাণ করার জন্য ইসলামী
আন্দোলনের কাজ করতে চান, তাদেরকে উপরোক্ত এক ডজন প্রতিবন্ধকতার মোকাবেলা করে প্রতিকারমূলক
বিষয় গুলোর প্রতি নজর দিতে হবে।
F প্রতিবন্ধকতা সময়ের
ব্যবধানে রূপ বদলাবে। ময়দানে নিয়োজিত কর্মীদের অধ্যাবসায় আর গবেষণার মাধ্যমে সেই সব
প্রতিবন্ধকতার মূলোৎপাটনে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা খোঁজে নিতে হবে।
F সকল বাঁধার বৃন্দাচল
মাড়িয়ে সত্য ও সুন্দরের পথে ইসলামী প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের কর্মীদের সামনে এগিয়ে যেতে
হবে বুকে সাহস নিয়ে হাতে হাত কাঁদে কাঁদ মিলিয়ে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা আমাদের
সকল প্রচেষ্ঠাকে ইবাদত হিসাবে কবুল করুন। আমীন।
0 Comments