বই নোটঃ দায়ী ইলাল্লাহ ও দাওয়াত ইলাল্লাহ
সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী
অনুবাদঃ আব্দুস শহীদ নাসিম
§ বইটির নামঃ দায়ী ইলাল্লাহ দাওয়াত ইলাল্লাহ।
§ বইয়ের শুরুতে অনুবাদক একটি ভূমিকা লিখেছেন।
§ বইটিতে আলোচিত হয়েছে ৩টি বিষয়ঃ
১. দায়ী ইলাল্লাহ-আল্লাহর দিকে আহবানকারীর গুণাবলীঃ ০৫-১১ পৃষ্টা।
২. দাওয়াত ইলাল্লাহ-আল্লাহর দিকে দাওয়াতঃ ১২-৪১পৃষ্টা।
৩. প্রথম
যুগের দায়ী-রাসূল সা. এর দাওয়াতের প্রথম
তিন বছরঃ ৪২-৪৮ পৃষ্টা।
অনুবাদক সম্পর্কেঃ
§ বহু গ্রন্থ প্রণেতা।
§ লেখাপড়াঃ লতিফগঞ্জ ফাজিল মাদ্রাসায় পড়ালেখা
করেন। কোটচাঁদপুর কেএমএইচ কলেজে লেখাপড়া।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
অনার্স ও মাস্টার্স বাংলা।
§ জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য ছিলেন। বর্তমানে
কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য।
§ বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা সোসাইটির চেয়ারম্যান।
§ পরিচালক, মাওলানা মওদূদী রিসার্চ একাডেমী
§ বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা সোসাইটিঃ
কুরআন মজিদ পড়তে শিখা ও শিখানো, এর মর্ম ও তাৎপর্য উপলব্ধি করা ও করানো, এর অনুসরণ ও
প্রবর্তন করা এবং কুরআনি শিক্ষার প্রচার ও প্রসার ।
অনুবাদকের দূ’টি কথাঃ
§ রাসূল প্রেরিত হয়েছেন দায়ী ইলাল্লাহর দায়িত্ব পালনের জন্য।
§ ইসলামী আন্দোলনে ও বিপ্লবের প্রধান কাজ-ইসলামী জীবন ব্যবস্থার দিকে দাওয়াত দান।
§ যিনি ইসলামী আন্দোলনের কর্মী-তার প্রকৃত
পরিচয় তিনি দায়ী ইলাল্লাহ।
§ এই বইতে আলোচিত হয়েছে দুইটি বিষয়ঃ
১. দায়ীর গুণাবলী।
২. দাওয়াতের কর্মপন্থা।
§ বইটি একটি সংকলন-যা সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী রাহি. এর সীরাতে সরওয়ারে আলম ও খোতবাতে ইউরোপ
বই থেকে সংকলন করা হয়েছে।
একঃ আল্লাহর দিকে আহবানকারীর গুণাবলী
§ MSA তথা মুসলিম
স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন এর বার্ষিক সম্মেলনে মাওলানা মওদূদীর শুভেচ্ছা বাণী হিসাবে রেকর্ডকৃত
প্রশ্নোত্তর। যা ১৯৭৯ এর ৮ এপ্রিল সাক্ষাৎকার হিসাবে
গ্রহণ করা হয়। যাতে MSA প্রতিনিধি প্রশ্ন করেন, মাওলানা উত্তর প্রদান করেন।
§ দায়ীর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলীঃ
-কুরআনে
বলা হয়েছেঃ
﴿وَمَنْ أَحْسَنُ
قَوْلًا مِّمَّن دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ
الْمُسْلِمِينَ﴾
‘ঐ ব্যক্তির চাইতে উত্তম কথা আর কার হতে
পারে, যে আল্লাহর দিকে ডাকলো,
নেক আমল করলো আর
ঘোষণা করলো: ‘আমি একজন মুসলমান’ (হামীমুস সাজদাহঃ ৩৩)
-আয়াতটি নাযিল হয়েছেঃ
· মক্কার কঠিন
বিরোধিতার পরিবেশে।
· রাসূলের
অনুসারীদের উপর চলছিল কঠিন নির্যাতন।
· এমন পরিবেশে “আমি একজন মুসলমান” বলাটা
সহজ কাজ ছিল না।
· সেই পরিবেশে বলা
হচ্ছেঃ সেই ব্যক্তির কথা উত্তম, যে আল্লাহর দিকে ডাকে।
· দায়ীর দাওয়াত
হবে আল্লাহর দিকে।
· দায়ীর সামনে কোন
পার্থিব উদ্দেশ্য থাকবে না।
§ দায়ীর বৈশিষ্টঃ ৩টি
১. দায়ী তাওহীদের দিকে দাওয়াত দেবেন।
২. দায়ী আমলে সালেহের অধিকারী হবেন।
৩. দায়ী “আমি একজন মুসলমান”-এমন ঘোষনা প্রদান করবেন।
১. দায়ী তাওহীদের দিকে দাওয়াত দেবেন। আর তা হলোঃ
· দাসত্ব কেবল
আল্লাহর।
· আনুগত্য কেবল
আল্লাহ।
· উপাসনা কেবল
আল্লাহ।
· ভয় কেবল
আল্লাহকে।
· পাওয়ার আশা কেবল
আল্লাহকে।
· আনুগত্য কেবল
আল্লাহর হুকুমের।
· অনুসরণ কেবল
আল্লাহর বিধানের।
· আনুগত্যের
উদাহরণঃ
মানুষ কাজের সময় চিন্তা করে কার গোলামী ও
আনুগত্য করছি এবং কার কাছে জবাবদিহি করতে হবে। একই ভাবে মানুষের সকল তৎপরতার ও
কাজের উদ্দেশ্য হবে আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের নির্দেশিত বিধান অনুযায়ী
ব্যক্তিজীবন ও সমাজজীবন গঠনের মাধ্যমে
আল্লাহর সন্তোষ অর্জন।
২. দায়ী আমলে সালেহের অধিকারী হবেন। আর তা হলোঃ
· তাকে নেক আমল
করতে হবে।
· আমল ঠিক না
থাকলে দাওয়াতে প্রভাব থাকে না।
· যে জিনিসের
দাওয়াত দেয়া হবে, সেই জিনিসের প্রতিচ্ছবি হতে হবে।
· বন্ধু, সমাজ,
আত্মীয় জনের নিকট উচ্চ ও পবিত্র চরিত্রের ব্যক্তি বলে স্বীকৃত হতে হবে।
· শ্রেষ্ট দায়ী
রাসূল সা. ছিলেন উন্নত চরিত্রের অধিকারী, যার সাক্ষী দিতো তার চরম বিরোধী প্রতিটি
মানুষ।
· শ্রেষ্ঠ দায়ী
রাসূল সা. এর চরিত্র এমন ছিল যে, তিনি যার যত কাছের ছিলেন, তিনি তত আগে তার
নবুয়াতের স্বীকৃতি দিয়েছেন। যেমনঃ হযরত খাদিজা রা., হযরত যায়েদ রা., হযরত আবু বকর
রা., হযরত আলী রা.
· দায়ীর জীবন হবে
দাওয়াতের মাপকাঠিতে তৈরী দাওয়াতের বাস্তব সাক্ষ্য ও প্রতিচ্ছবি।
· দায়ীর আমল
দাওয়াতের সাক্ষ্য বহন করবে।
· দায়ীর জীবন হবে
রাসূল সা. এর ব্যাপারে আবু জেহেলের উক্তির মতোঃ
“হে মুহাম্মদ সা.! আমরা তো তোমাকে মিথ্যা
বলছি না। আমরা তো ঐ দাওয়াতকে মিথ্যা বলছি যা তুমি নিয়ে এসেছো”। অর্থাৎ নিকৃষ্টতম দুশমনও তাঁর সত্যবাদিতার
প্রবক্তা ছিলো। এটাই হচ্ছে নৈতিক চরিত্রের পবিত্রতা, স্বভাব
ও আচরণের উচ্চতা।
৩. দায়ী
“আমি একজন মুসলমান”-এমন ঘোষনা প্রদান করবেন।
-
কুরআন ঘোষনা
করছেঃ
﴿وَقَالَ إِنَّنِي
مِنَ الْمُسْلِمِينَ﴾ ...এবং সে ঘোষণা করে আমি একজন মুসলামান।
· রাসূলের সময়ে
মক্কায় “আমি
একজন মুসলমান” ঘোষনা প্রদান সহজ ছিলনা, মামুলি ছিলো না।
· “আমি
একজন মুসলমান” ঘোষনা করা মানে হিংস্র পশুদেরকে নিজের উপর
হামলা করার আহবান করা।
· অর্থাৎ দায়ী
নিকৃষ্টতম শত্রুদের সামনে, চরম বিরুধী পরিবেশেও নিজের মুসলমান পরিচয় লুকিয়ে না রাখা।
· মুসলমান পরিচয়
দিতে কোন লজ্জা, সংকোচ ও ভয় থাকবে না।
· দায়ী হবেন
দৃঢ়চেতা, বাহাদুর।
· দায়ী হওয়া কোন
কাপুরুষের কাজ নয়।
· রাসূল সা. এর জীবনে বারবার এই দৃঢ়চেতা মনোভাব
প্রদর্শিত হয়েছে। হুনাইনের যুদ্ধ এখানে উল্লেখযোগ্য। যেখানে তিনি অগ্রসর হতে হতে
বলেছিলেনঃ
أنا النبي لا كذب، أنا ابن عبد المطلب “মিথ্যার লেশ নেই আমি নবী মহা-সত্য জেনে রাখো আমি আদুল
মুত্তালিবের পৌত্র”।
দুইঃ দাওয়াত ইলাল্লাহ
দাওয়াতের প্রাথমিক অবস্থার সংক্ষিপ্ত আলোচনা
§ রাসূল সা. এর দাওয়াতের
স্থানঃ
1.
আরবের বিখ্যাত ও কেন্দ্রীয় শহর-মক্কা।
2.
নিজ শহর।
3.
নিজ গোত্র।
§ রাসূল সা. এর দাওয়াতের
সূচনায় তাকে দেয়া হেদায়াত, যা তিন ধরণের বিষয়বস্তু সমন্বিতঃ
1.
দায়িত্ব পালনের জন্য নিজেকে নিজে তৈরী করা, কাজের পন্থা ও পদ্ধতি শিক্ষা দেয়া হয়।
2.
যে সব ভূল ধারণার কারণে জীবনের চলার পথ ভূল পথে পরিচালিত হয়, সে সব ভূল ধারণার প্রতিবাদ করা হয় প্রকৃত
তত্ত্ব ও রহস্য গুলোর প্রাথমিক তথ্য ও সত্য কথা গুলো বলে।
3.
আসল জীবন যাপনের পদ্ধতির প্রতি আহবান করা হয়। আর সেই
পদ্ধতিতে আল্লাহর হেদায়াতের যে সব মৌলিক চরিত্র নীতি রয়েছে তার বিশ্লেষণ করে বলা
হয়-এই পদ্ধতি অনুসরণের মাঝে
রয়েছে বিশ্বমানবতার চিরন্তন কল্যাণ ও সৌভাগ্য।
§ উপরোক্ত তিন ধরণের নির্দেশিকা প্রদান করা হয়ঃ
· ছোট্ট ছোট্ট
বাণীর মাধ্যমে।
· স্বচ্ছ, ঝরঝর, মিষ্টি মধুর
ভাষায়। যে ভাষা ছিল অত্যন্ত প্রভাব বিস্তারকারী
· ভাষা ব্যবহৃত
হয়েছিল, যাদেরকে দাওয়াত দেয়া
হচ্ছে তাদের রুচি অনুযায়ী উন্নত সাহিত্যিক মোড়কে সজ্জিত করে।
· দাওয়াত
উপস্থাপনের এই ধরণ তার শ্রুতাদের মনের ভিতরে তীরের মতো বিদ্ধ হতো।
· দাওয়াত যারা
শুনতো তাদের এতো ভাল লাগতো যে, তারা এর সূর, লয় ইত্যাদিতে আত্মহারা হয়ে মনের
অজান্তে তা তারা উচ্চারণ করতো, আবৃত্তি করতো।
· দাওয়াত দেয়া
চিরন্তন সত্যের দিকে, আর তা বুঝানোর জন্য উদাহরণ দেয়া হতো স্থানীয় বিষয়-যা
শ্রোতাদের নিকট ছিল পরিচিত। যেমনঃ
আবরদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, আকীদা, চরিত্র,
সামাজিক কুসংস্কার। এতে করে তারা প্রভাবিত হতো।
§ দাওয়াতের প্রতিক্রিয়াঃ
· রাসূল সা. এর প্রাথমিক দাওয়াতের মেয়াদ ছিল ৪ বছর-তার মাঝে ৩ বছর ছিল গোপনে।
· প্রাথমিক
দাওয়াতের প্রতিক্রিয়াঃ তিন ভাবে-
1.
কিছু মানুষ যারা ছিল সৎ এবং সত্যপন্থী, তারা দাওয়াত কবুল করে, তারা মুসলিম উম্মাহর সাথে সম্পৃক্ত হয়।
2.
বিরাট সংখ্যক মানুষ যারা ছিল মূর্খ, স্বার্থপর কিংবা বংশীয় প্রথার অন্ধ প্রেমে
বিভোর, তারা বিরোধীতা করে।
3.
মাত্র ৪ বছরের প্রচেষ্টায় এ দাওয়াত নবীর বংশ কিংবা শহর
কুরাইশ ও মক্কা পেরিয়ে বাহিরের বিশাল ক্ষেত্রে পৌছে যায়।
§ দাওয়াতের দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ
· ইসলামী
আন্দোলনের সাথে জাহেলিয়াতের প্রাণপণ দ্বন্দ্বের সূচনা।
· এই প্রক্রিয়া চলে
৮ থেকে ৯ বছর পর্যন্ত।
· বিরোধীদের
সংখ্যাও বাড়ে। মক্কা আর কুরাইশ পেরিয়ে বিরোধীতা শুরু হয় আরবের অধিকাংশ অঞ্চলে।
· শুরু হয় আন্দোলন
বন্ধ করার প্রচেষ্টা-মিথ্যা
প্রোপাগান্ডা, অপবাদ, দোষারোপ, সন্দেহ-সংশয়, কুট প্রশ্ন,
অপপ্রচার, প্ররোচনা, রাসূলের
কাছে আসতে বিরত রাখা, ইসলাম গ্রহণকারীদের উপর নির্যাতন,
অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবরোধ।
· নির্যাতনের
মাত্রা বাড়লে কিছু লোক হিজরত করে হাবশায় দুই বার এবং শেষ বারে মদীনায়।
· এসব নির্যাতনের
পরেও দাওয়াতের কাজ চলে আন্দোলন হয় সম্প্রসারিত।
· দাওয়াতের
রেজাল্ট হলোঃ
মক্কার প্রতিটি বংশ ও পরিবারে কমপক্ষে
একজন ইসলাম গ্রহণ করে।
·
অধিকাংশ বিরোধীতার কারণ ছিলঃ
ক. নিজেদের নিকটজনরা ইসলাম গ্রহণ করেছে। যেমন ভই, পুত্র,
জামাই, কন্যা, বোন, ভগ্নিপতি ইত্যাদি।
খ. তারা শুধু ইসলাম গ্রহণ করেনি, বরং তারা এর জন্য নিজেকে
উৎসর্গ করে দিয়েছিল।
গ. যারাই ইসলাম গ্রহণ করেছিল, তারা সকলে ছিল জাহেলী সমাজের
সবচেয়ে ভাল লোক।
ঘ. ইসলামে প্রবেশ করে ওরাই হয়ে উঠেছিল সৎ, সত্যপন্থী,
পবিত্র নৈতিক চরিত্রের অধিকারী।
ঙ. এমন অবস্থায় আন্দোলনের শ্রেষ্ঠত্ব আর বিশিষ্টতা
বিশ্ববাসীর নিকট সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।
·
দাওয়াতের দ্বিতীয় অধ্যায়ে যেসব আয়াত নাযিল হয়, তার বৈশিষ্ট ছিলঃ
ক. আবেগময়ী।
খ. ঈমানদারদের প্রাথমিক দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে দেয়া।
গ. জামায়াতী জিন্দেগীর চেতনা পয়দা করা।
ঘ. চরিত্র, স্বভাব ও পবিত্র জীবন যাপন শিক্ষা দেয়া।
ঙ. দাওয়াতের কর্মপন্থা শিখানো।
চ. সাফল্যের ওয়াদা।
ছ. জান্নাতের সুসংবাদ।
জ. ধৈর্য, দৃঢ়তা, উচ্চ সাহসিকতার
সাথে জিহাদে অংশ নেয়া।
ঞ. ত্যাগ ও কুরবানীর জজবা তৈরী।
·
দাওয়াতের দ্বিতীয় অধ্যায়ে যেসব আয়াত নাযিল হয়, তার আরো বৈশিষ্ট ছিলঃ
ক. কাফেরদের বিরুধীতা, সত্যবিমুখতা, গাফলতির পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করা।
খ. ইতিহাসের উল্লেখ করে ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির পরিণতি স্মরণ করে দেয়া।
গ. আসমান জমিনের সুস্পষ্ট নিদর্শণ সমূহ তুলে ধরে তাওহীদ ও আখেরাতের প্রমাণ
পেশ করা।
ঘ. শিরক, সেচ্চাচারিত, আখেরাতকে
অস্বীকার, পুর্বপুরুষদের অনুসরণ ইত্যাদির ভূল তুলে ধরা হয়
যক্তি আর দলীল দিয়ে।
ঙ. জাহিলিয়াতকে বুদ্ধি আর বিবেকের জগতে অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়।
চ. আল্লাহর গজব, অভিশাপ, কিয়ামত,
জাহান্নাম ইত্যাদি ভয় দেখানো হয়।
ছ. চারিত্রিক ও ভূল জীবন যাপনের জন্য এবং মুমিনদের নির্যাতন করার জন্য
তিরস্কার করা হয়।
-
দাওয়াতী কাজের দ্বিতীয় অধ্যায়টি নানাবিধ মনযিলে বিভক্ত।
প্রতি মনজিল দাওয়াতী কাজ ব্যাপক হওয়ার সাথে সাথে বিরুধীতাও প্রকট হওয়া নজরে আসে।
-
এই সময়ে রাসূল সা.কে বিস্তারিত পথ নির্দেম প্রদান করা হয়।
-
এই কঠিন মুহুর্ত মোকাবেলায় যে চারিত্রিক শক্তি ব্যবহার করা
হয়েছিল তার একটি বর্ণনা নিম্নে পেশ করা হবে।
দাওয়াত দানের হিকমাহ ও মাওয়েযাগত পদ্ধতি
§ দ্বীনের দাওয়াত দানের পদ্ধতি দুইটিঃ ১. হিকমাত। ২. মাওয়েযায়ে হাসানা।
§ কুরআনে এই পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ
﴿ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ
بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ ۖ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ
أَحْسَنُ ۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ ۖ وَهُوَ أَعْلَمُ
بِالْمُهْتَدِينَ﴾
‘হে নবী তোমার রবের পথে লোকদেরকে ডাকো
‘হেকমত’ এবং মাওয়েযায়ে হাসানার মাধ্যমে’। (আন নহলঃ ১২৫)
§ দাওয়াতে হিকমাত প্রয়োগ মানেঃ
· বেওকুফের মতো বোকামীর
সাথে দাওয়াত না দেয়া।
· বুদ্ধিমত্তার সাথে, শ্রোতার মানসকিতা ও সামর্থ ও ধারণ ক্ষমতা বুঝে
দাওয়াত দেয়া।
· স্থান, সময় ও সুযোগ অনুযায়ী কথা বলা।
· সকলকে একই ডান্ডা
দিয়ে সোজা করার চেষ্টা না করা।
· দাওয়াতের ক্ষেত্রে
লক্ষণীয়ঃ
o ব্যক্তির রোগ নির্ণয়।
o যুক্তি ও প্রমাণের সাহায্যে চিকিৎসা-যাতে মনের গভীরের সকল রোগ নির্মূল করে।
§ মাওয়েযায়ে হাসানা-এর দুটি অর্থঃ
১. শ্রোতাকে শুধু যুক্তি প্রমাণ নয়, অনুভূতিকে জাগিয়ে তুলা।
· অন্যায় ও ভ্রান্তির ব্যাপারে জন্মগত ঘৃণা ও নফরতকে জাগিয়ে তুলা।
· অন্যায় ও ভ্রান্তির অশুভ পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করা।
· হেদায়াত ও আমলে সালেহের প্রতি আকর্ষণ ও মহব্বত পয়দা করা।
২. সহানুভূতি, আন্তরিকতা ও একান্ত দরদের সাথে উপদেশ প্রদান
করা।
· তুচ্ছ বা ক্ষুদ্র জ্ঞান না করা।
· নিজেকে বিরাট কিছু মনে না করা।
· নিজেকে শ্রোতার জন্য দরদী, সহানুভূতিশীর
উপস্থাপনা করা।
· নিজেকে কল্যাণকামী হিসাবে প্রমাণ করা।
· কথা ও আলোচনায় তর্ক, বাহাছ, জ্ঞান বুদ্ধির দাপট না দেখানো।
· উগ্র আলোচনা, অপবাদ দেয়া,
চোট লাগানো কথা পরিহার করা।
· প্রতিদ্বন্দ্বীকে জব্দ করার উদ্দেশ্যে আলোচনা না করা।
· বাচালতা পরিহার করা।
· সুমধুর আলোচনা ও কথা বার্তা হওয়া।
· উচ্চমানের ভদ্রতা ও শালীনতার চারিত্রিক বৈশিষ্টের অধিকারী হওয়া।
· কথাকে যুক্তি ও দিলে লাগা দলীল দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করা।
· জি, গোস্বা, উগ্রতা পয়দা হয়,
এমন কথা ত্যাগ করা।
· সরল সোজা ভাবে কথা বলা।
·
শ্রোতা বাঁকা
পথে অগ্রসর হচ্ছে অনুভূত হলে কথা বন্ধ করে দেয়া।
সত্য পথের ডাকার জন্যে প্রয়োজনে ঠান্ডা মাথা ও
পরিবেশগত উত্তম পন্থা
§ ঈমানদাররা যখন কাফের মুশরিক বা বিরোধীদের সাথে কথা বলবে, তখনঃ
· মিথ্যা, অতিরঞ্জিত ও দ্রুত কথা বলবে না।
· কোন না হক ও অন্যায় কথা বলবে না।
· বাজে কথার উত্তরে বাজে কথা বলবে না।
· পরিবেশ অনুযায়ী মেপে মেপে কথা বলবে।
· ন্যায়, সত্য ও দাওয়াতের মর্যাদসূচক কথা
বলবে।
§ কুরআনে কারীমে এসম্পর্কে বলা হয়েছেঃ
﴿وَقُل لِّعِبَادِي يَقُولُوا
الَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ۚ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنزَغُ بَيْنَهُمْ ۚ إِنَّ
الشَّيْطَانَ كَانَ لِلْإِنسَانِ عَدُوًّا مُّبِينًا﴾﴿رَّبُّكُمْ أَعْلَمُ بِكُمْ
ۖ إِن يَشَأْ يَرْحَمْكُمْ أَوْ إِن يَشَأْ يُعَذِّبْكُمْ ۚ وَمَا أَرْسَلْنَاكَ
عَلَيْهِمْ وَكِيلًا﴾
‘হে মুহাম্মদ! আমার বান্দাদের বলে দাও,
তারা যেনো
সর্বোত্তম ভাবে কথা বলে। আসলে শয়তান তাদের মধ্যে ঝগড়া ফাসাদ সৃষ্টি করার চেষ্টা
করে। প্রকৃতপক্ষে শয়তান মানুষের প্রকাশ্য দুশমন। তোমাদের রব তোমাদের অবস্থা
সম্পর্কে সর্বাধিক জানেন তিনি ইচ্ছে করলে তোমাদেরকে অনুগ্রহ করতে পারেন। আর তিনি চাইলে
তোমাদের আযাবাও দিতে পারেন। আর হে নবী, আমরা তোমাকে লোকদের উপর উকীল বানিয়ে
পাঠাইনি’। (বনী ইসরাঈলঃ ৫৩-৫৪)
§ ঈমানদাররা যখন বিরোধীদের কথা জবাব দেবে, তখনঃ
· রাগ উঠলে বা মেজাজ নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে মনে হলে বুঝতে হবে-শয়তা উস্কানী দিচ্ছে।
· শয়তান দাওয়াতের উদ্দেশ্যকে নষ্ট করতে চায়। সে চায় মানুষ সংস্কার ও সংশোধনের কাজ বাদ দিয়ে
ঝগড়া ফাসাদে লিপ্ত হয়।
§ ঈমানদাররা কখনো এ দাবী করবে না যে, আমরা বেহেশতী, অমুক বা ওরা দোযখী।
§ ঈমানদাররা মনে রাখবেঃ
· কাজের ফায়সালা আল্লাহর হাতে।
· নবীর কাজও দাওয়াত দান অবধি সীমাবদ্ধ।
· মানুষের ভাগ্যের চাবি নবীর হাতে দেয়া হয়নি। বিধায় নবী কারো জন্য রহমত ও কারো জন্য আযাবের ফায়সালা
দিতে পারেন না।
দাওয়াত দানকারীর মর্যাদা ও দায়িত্ব
§ কুরআনে হাকীমে বলা হয়েছেঃ
﴿قَدْ جَاءَكُم بَصَائِرُ مِن
رَّبِّكُمْ ۖ فَمَنْ أَبْصَرَ فَلِنَفْسِهِ ۖ وَمَنْ عَمِيَ فَعَلَيْهَا ۚ وَمَا
أَنَا عَلَيْكُم بِحَفِيظٍ﴾
‘দেখো তোমাদের কাছে তোমাদের রবের নিকট
থেকে অন্তর্দৃষ্টির আলো এসে পৌঁছেছে। এমন যে লোক নিজের দৃষ্টি শক্তির সাহায্যে কাজ
করবে সে নিজেরই কল্যাণ সাধন করবে। আর যে অন্ধত্ব গ্রহণ করবে সে নিজেই ক্ষতিগ্রস্থ
হবে। আমি তোমাদের উপর পাহারাদার নই’। (আনয়ামঃ ১০৪)
§ উপরোক্ত আয়াতে “আমি তোমাদের উপর পাহারাদার
নই” এর অর্থঃ
· রাসূলের দায়িত্ব হলো আল্লাহর নিকট থেকে যে আলো এসেছে, তা তোমাদের কাছে পৌছে দেয়া।
· সেই আলোকে চোঁখ খুলে দেখা অথবা না দেখা এই কাজ আমার নয়।
· বিধায়, যারা চোঁখ বন্ধ রাখবে,
তাদের চোঁখ খুলে দেয়া বা তাদেরকে জোর করে তা দেখিয়ে দেয়া-এটা রাসূলের দায়িত্ব নয়।
﴿اتَّبِعْ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ
مِن رَّبِّكَ ۖ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ وَأَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِينَ﴾﴿وَلَوْ
شَاءَ اللَّهُ مَا أَشْرَكُوا ۗ وَمَا جَعَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيظًا ۖ وَمَا
أَنتَ عَلَيْهِم بِوَكِيلٍ﴾
‘হে নবী! আপনার রবের নিকট থেকে অবতীর্ণ
অহীর অনুসরণ করুন। তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। মুশরিকদের জন্যে ব্যস্ত হয়ে
পড়বেন না। যদি আল্লাহর ইচ্ছা হতো (এরা শিরক না করার) তবে এরা শিরক করতো না। আমি আপনাকে এদের উপর পাহারাদার নিযুক্ত করিনি। আপনি তাদের
উপর কোনো হাবিলদারও নন’। (আনয়ামঃ ১০৬-১০৭।)
§ উপরোক্ত আয়াতের তাৎপর্য হলোঃ
· রাসূলকে দায়ী বানানো হয়েছে, পুলিশ বানানো
হয়নি। বিধায় মানুষের পিছে লেগে থাকার দারকার
নাই।
· রাসূলের দায়িত্ব হলো-হক আদায় করে সত্যকে
প্রকাশ করবেন, মানুষের সামনে আল্লাহর নুর পেশ করবেন।
· রাসূলকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি-মানুষকে হকপন্থী
বানিয়ে ছাড়ার।
· রাসূলের নবুয়াতের সীমানায় কোন বাতিল পন্থী থাকবেনা এমন কোন দায়িত্ব
রাসূলের নয় এবং এজন্য রাসূলকে জবাবদিহি করতে হবে না।
· আল্লাহর যদি ইচ্ছা হতো দুনিয়ায় কোন বাতিলপন্থী থাকবেনা, তাহলে তিনি তা একটা ‘তাকভীনি’ ইশারায়
সকলকে সত্যপন্থী বানিয়ে ফেলতেন, রাসূলকে দিয়ে কাজ করানোর দরকার
ছিল না।
· কিন্তু আল্লাহ ইচ্ছা এভাবে নয়। আল্লাহ ইচ্ছা হলোঃ হক আর বাতিল গ্রহণে মানুকে স্বাধীনতা দেয়া
হবে। হকের আলো দিয়ে পরীক্ষা করা হবে যে, সে কোনটা গ্রহণ করে।
·
রাসূলের সঠিক
কর্মপন্থা হলোঃ
ক. আলো দেখিয়ে দেয়া, সেই
অনুযায়ী চলতে থাকা, চলতে পথে যারা দাওয়াত কবুল করবে তাদেরকে বুকে
নিয়ে সংগে থাকা-তার দুনিয়াবী অবস্থান যাই হোক।
খ. যারা দাওয়াত কবুল করবেন না, তাদের পিছে লেগে
না থাকা। যারা খারাপ পরিণতির দিতে যেতে চায়, যারা গোঁড়ামী গ্রহণ করে, তাদেরকে সেদিকে যাবার জন্য ছেড়ে
দেয়া।
দীন প্রচারের সহজ পন্থা
§ কুরআনে হাকীমে বলা হয়েছেঃ
﴿وَنُيَسِّرُكَ
لِلْيُسْرَىٰ﴾﴿فَذَكِّرْ إِن نَّفَعَتِ الذِّكْرَىٰ﴾
‘আর হে নবী! আমি তোমাকে সহজ পন্থার সুবিধে
দিচ্ছি। কাজেই তুমি উপদেশ দিয়ে যাও। যদি উপদেশ ফলপ্রসু হয়’। (আল আ’লাঃ ৮-৯)
§ নবী সা.কে আল্লাহ জানিয়ে দিচ্ছেনঃ
1. দ্বীনের ব্যাপারে আল্লাহ নবীকে কোন অসুবিধায় ফেলতে চাননা।
2. যারা বধির কিংবা অন্ধ, তাদেরকে পথ দেখানোর
দায়িত্ব নবীর নয়।
3. নবীর জন্য সহজ কাজঃ উপদেশ দিতে থাকা।
4. নবীর উপদেশের লক্ষ্য হলোঃ আল্লাহর বান্দাদের মধ্য থেকে সেই সব
বান্দাদের খুঁজে বের করা, যারা উপদেশ গ্রহণ করে সঠিক পথ অনুযায়ী চলতে
চায়।
5. নবীকে নজর দিতে হবে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের দিকে।
6. নবীর উচিত নয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বাদ দিয়ে ঐসব মানুষের পিছে
ব্যস্ত হওয়া, অভিজ্ঞতা যাদের ব্যাপারে বলে যে, ওরা নসিহত গ্রহণে ইচ্ছুক নয়।
দীন প্রচারের দৃষ্টিকোন থেকে প্রকৃত গুরুত্বপূর্ণ
লোক কারা
§ কুরআনে হাকীমে বলা হয়েছেঃ
﴿وَلَا تَطْرُدِ الَّذِينَ
يَدْعُونَ رَبَّهُم بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ ۖ مَا عَلَيْكَ
مِنْ حِسَابِهِم مِّن شَيْءٍ وَمَا مِنْ حِسَابِكَ عَلَيْهِم مِّن شَيْءٍ
فَتَطْرُدَهُمْ فَتَكُونَ مِنَ الظَّالِمِينَ﴾
‘আর হে নবী! যারা রাতদিন তাদের
পরওয়ারদিগারকে ডাকতে থাকে আর তাঁর সন্তোষ অনুসন্ধান নিরত থাকে,
তুমি তাদেরকে
দূরে সরিয়ে দিওনা। তোমার উপর তাদের হিসাবের কোনো দায়-দায়িত্ব নেই আর তাদের উপরও
তোমার হিসাবের কোনো যিম্মাদারী নেই। তা সত্ত্বেও যদি তুমি তাদেরকে দূরে সরিয়ে দাও,
তবে তুমি
যালেমদের মধ্যে গণ্য হবে’। (আনয়ামঃ ৫২)
§ কুরআনের এই আয়াতের তাৎপর্য হলোঃ
1. যারা সত্যের প্রতি আগ্রহী হয়ে নবীর কাছে আসে, বড় বড় মানুষদেরকে খাতির করতে গিয়ে নবী যেন, ঐ সত্যানুসন্ধিৎসু
মানুষদের দূরে ঠেলে না দেন।
2. ইসলাম গ্রহণের আগে কেউ কোন অপরাধ করলে, তার দায় দায়িত্ব দায়ীর উপর নয়-নবীর উপর নয়।
§ এই তাৎপর্যের একটি প্রেক্ষাপট আছে। আর তাহলোঃ
· প্রথম দিকে যারা রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছিলেন, তাদের বেশীর ভাগ ছিলেন দরিদ্র ও শ্রমজীবি মানুষ।
· কুরাইশ সরদার ও স্বচ্ছল মানুষের প্রশ্ন ছিলঃ
ক. নবীর পাশে কেবল দাস, মুক্ত
দাস এবং নিচুশ্রেণীর লোকরা জড়ো হয়েছে।
খ. আমাদের মধ্য থেকে মনোনিত করতে আল্লাহ বেলাল,
আম্মার, সোহাইব, খাব্বাব
এই ধরণের লোকদেরকে খুঁজে
পেলেন।
গ. ঈমান গ্রহণের আগে যাদের কোন চারিত্রিক দূর্বলতা ছিল, তাকে নিয়ে কথা বলতোঃ কালকে যার চরিত্র এমন ছিল সেও দেখি আজ আল্লাহর দলের জন্য
মনোনিত।
হযরত ইবনে উম্মে মাকতুমের ঘটনা
§ কুরআনে হাকীমে বলা হয়েছেঃ
﴿عَبَسَ وَتَوَلَّىٰ﴾﴿أَن
جَاءَهُ الْأَعْمَىٰ﴾
‘বেজার হলো এবং মুখ ফিরিয়ে নিল। কারণ সে
অন্ধ তাঁর নিকট এসেছে’। (আবাসাঃ ১-২)
· ইবনে উম্মে মাকতুম নামক একজন অন্ধ সাহাবী-যার সম্পর্কে কুরআনের এই আয়াত নাযিল হয়।
· ঘটনার বিবরণ হলোঃ ঐ সাহাবী
রাসূল সা.কে ইসলাম সম্পর্কে জানতে তখন জিজ্ঞেস করলেন,
যখন রাসূল সা. মক্কার কিছু সরদার ও সমাজপতিদের
ইসলামের দাওয়াত কবুল করার জন্য উদ্বুদ্ধ করছিলেন। ইবনে মাকতুমের প্রশ্ন রাসূলের আলোচনায় ব্যাঘাত ঘটে, তিনি তাঁর দিকে নজর দিলেন না। আল্লাহ এতে সূরা আবাসা সূরা নাযিল করলেন।
§ এই সূরায় জ্ঞাতব্য বিষয় হলোঃ
· ইবনে মাকতুমের প্রতি অনাগ্রহে রাসূলকে শাসন বা তিরস্কার সূরা
মূল বিষয় নয়।
· সূরার মূল বিষয় হলো কাফের কুরাইশ সরদারদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ।
· সূরার মূল বিষয় দ্বীন প্রচারের সঠিক পন্থা শিক্ষা দেয়া।
· ইবনে মাকতুমে প্রতি অনাগ্রহ আর কুরাইশ সরদারদের প্রতি মনোযোগ
মানে এই নয় যে, রাসূল কর্তৃক বড় লোকদের সম্মাণ ও মর্যাদা দেয়া
আর অন্ধ ব্যক্তিকে নগণ্য মনে করা।
· এর মানে এই নয় যে, রাসূলের মনে কোন নৈতিক
বক্রতা ছিল বলে আল্লাহ তাকে শাসন ও তিরস্কার করেছেন।
· মূল বিষয় হলোঃ কোন দায়ী যখন কোথাও কাজ শুরু
করে, তখন তার দৃষ্টি থাকে সমাজের প্রভাবশালীদের দিকে-যারা দাওয়াত কবুল করলে দাওয়াতের কাজ সহজ হয়ে যায়। দূর্বল মানুষ দাওয়াত কবুল করলেও দাওয়াতের কাজে
পার্থক্য হয় না।
· আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা জানিয়ে দিলেন এটা দাওয়াতের নির্ভূল
পথ নয়। বরং দাওয়াতের ক্ষেত্রে তারা অগ্রাধিকার
পাবে, যারা সত্যের অনুসন্ধানী-তারা হোক দূর্বল
বা অক্ষম কিংবা প্রতিপত্তিহীন। যাদের সত্যের অনুসন্ধানী নয়, তারা সমাজের বড় কেউ হলেও সে একেবারে
গুরুত্বহীন।
·
এর মাধ্যমে
জানা গেলঃ
ক. ইসলামের দাওয়াত সকলের কাছে পৌছবে।
খ. যাদের মাঝে সত্য গ্রহণের আগ্রহ আছে,
তারা দাওয়াতে অগ্রাধিকার পাবে।
গ. যারা অহংকারী, যারা দায়ীকে
তাদের মুখাপেক্ষী মনে করে-তাদের পিছনে লেগে থাকা দাওয়াতের মর্যাদার
জন্য অপমান কর।
§ কুরআনে হাকীমে এই সূরায় আরো উল্লেখ করা হয়েছেঃ
﴿وَمَا يُدْرِيكَ لَعَلَّهُ
يَزَّكَّىٰ﴾﴿أَوْ يَذَّكَّرُ فَتَنفَعَهُ الذِّكْرَىٰ﴾﴿أَمَّا مَنِ
اسْتَغْنَىٰ﴾﴿فَأَنتَ لَهُ تَصَدَّىٰ﴾﴿وَمَا عَلَيْكَ أَلَّا يَزَّكَّىٰ﴾﴿وَأَمَّا
مَن جَاءَكَ يَسْعَىٰ﴾﴿وَهُوَ يَخْشَىٰ﴾﴿فَأَنتَ عَنْهُ تَلَهَّىٰ﴾﴿كَلَّا
إِنَّهَا تَذْكِرَةٌ﴾﴿فَمَن شَاءَ ذَكَرَهُ﴾
‘হে নবী! তুমি
কেমন করে জানবে! সে হয়তো পরিশুদ্ধ হতো কিংবা উপদেশ গ্রহণ করতো এবং উপদেশদান তার
জন্যে কল্যাণকর হতো। যেলোক বেপরোয়া ভাব দেখায়, তুমি তার প্রতি লক্ষ্যারোপ করছো। অথচ সে
যদি পরিশুদ্ধ না হয়, তবে তোমার উপর তার দায়িত্ব কি?
আর যেলোক তোমার
নিকট দৌড়ে আসে আর সে ভয়ও করে, তুমি তো তার প্রতি অনীহা প্রদর্শন করছো। কক্ষণও নয়। এটা তো
একটা উপদেশ। যার ইচ্ছা সে এটা গ্রহণ করবে’।(আবাসাঃ ৩-১২)
§ এখানে দ্বীন প্রচারে মূল তত্ত্বা কি তা বুঝাতে দুই ব্যক্তির
উদাহরণ দেয়া হয়েছেঃ
· এক ব্যক্তিঃ যে সত্যের অনুসন্ধানী, বাতিলের অনুসরণে আল্লাহর ভয়ে ভীত এবং সত্য পথ পাওয়ার জন্য নবীর নিকট হাজির।
· আরেক ব্যক্তিঃ যে সত্যের প্রতি অনুরাগী নয়, তাকে সত্য পথের দিশা দেয়া হোক সে প্রয়োজন মনে করে না।
· এই দুই ব্যক্তির মধ্যে দ্বীনের ফায়দা কোন দিকে হবে তা বিবেচ্য
বিষয় নয়। বরং বিবেচ্য বিষয় হলোঃ কে হেদায়াত
গ্রহণ করে নিজেকে শুধরে নিতে প্রস্তুত আর কে গাফেল।
· প্রথম ব্যক্তি প্রতিবন্ধি হিসাবে দ্বীনের কোন উপকার করতে বাহ্যত
যোগ্য নয়-কিন্তু দায়ীর কাছে এই ব্যক্তি হবে গুরুত্বপূর্ণ
ব্যক্তি। কারণ দাওয়াতের মূল টার্গেট আল্লাহর
বান্দাদের সংশোধন করা।
· দ্বিতীয় ব্যক্তি সে যতই প্রভাবশালী হোক, দায়ীকে তার পেছনে দৌড়ানোর প্রয়োজন নাই। কারণ তার বাহ্যিক আচরণ থেকে অনুমান করা যায় যে, সে নিজেকে পরিশুদ্ধ ও পবিত্র করতে চায় না।
§ অন্ধ ব্যক্তির পরিচয়ঃ
· তার পুরো নামঃ আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম রা.
· তিনি একজন প্রখ্যাত সাহাবী।
· তিনি ছিলেন হযরত খাদিজা রা. এর ফুফাত ভাই।
· তার মায়ের নাম উম্মে মাকতুম।
· হযরত খাদিজার পিতা খুয়াইলিদ ও উম্মে মাকতুম পরস্পর ভাই বোন।
· রাসূল সা. এর সাথে তার সম্পর্ক হলোঃ শ্যালক।
· তিনি কোন মর্যাদাহীন ব্যক্তি ছিলেন না।
§ এই ধরণের পরিচয়ের কাউকে রাসূল সা. কমমর্যাদার মনে করেছেন এমন সন্দেহের অবকাশ নাই।
· রাসূল সা. তার সাথে যে আচরণ করেছেন,
তা দাওয়াত সংক্রান্ত দৃষ্টিভংগীর কারণে। আর তাহলো, যাদের
সাথে দাওয়াতের কাজ করা হচ্ছে, তাদের একজন লোকও যদি হেদায়াত কবুল
করে, তাহলে ইসলাম অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
· ইবনে উম্মে মাকতুম অন্ধ হওয়ার কারণে ইসলামের ততটুকু কল্যাণ করতে
পারবেন না, যতটুকু কল্যাণ করা সম্ভব ঐ সরদারদের।
· ইবনে উম্মে মাকতুম যা জানতে চান বা বুঝতে চান, তা পরে যে কোন সময় জানার ও বুঝার সুযোগ রয়েছে।
দীন প্রচারের হিকমত
§ এই ব্যাপারে কুরআনের নির্দেশ হলোঃ
﴿وَلَا تُجَادِلُوا أَهْلَ
الْكِتَابِ إِلَّا بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ﴾
‘আর আহলে কিতাবের লোকদের সাথে উত্তম-পন্থা
ছাড়া তর্কবিতর্কে লিপ্ত হয়েঅনো’। (আনকাবুতঃ ৪৬)
§ এর মানেঃ
· দাওয়াতে বিতর্ক হবে দলিল প্রমাণের মাধ্যমে।
· দাওয়াতে বিতর্কে ব্যবহৃত হবে সভ্য ও শালীন ভাষা।
· দাওয়াত বিতর্ক হবে বুঝা ও বুঝানোর মাধ্যমে।
· দাওয়াতে বিতর্কের লক্ষ্য হবেঃ
o যার সাথে কথা হচ্ছে, তার চিন্তাধারার সংশোধন।
o যার সাথে কথা হচ্ছে তার মনের দরজা খুলে, তাকে সত্য পথে নিয়ে
আসা।
· বিধায়, বিতর্কে কাউকে খাটো করার উদ্দেশ্যে লড়াই করা চলবে
না।
· দায়ীকে বিতর্ক করতে হবে অভিজ্ঞ ডাক্তারের মতো। সতর্ক থাকতে হবে
ডাক্তারের মতো, যাতে ডাক্তারের কোন ভূলের কারণে রোগ না বাড়ে।
§ উপরোক্ত আয়াত গুলোতে মূলত আহলে কিতাবদের সাথে কিভাবে বিতর্ক
হবে, তার বিবরণ দেয়া হয়েছে।
§ এই হেদায়াতের বিবরণ কেবল আহলে কিতাবদের জন্য নয়, বরং দায়ীর জন্য সাধারণ হেদায়াত।
§ এই ধরণের হেদায়াতে কুরআনের আরো বিভিন্ন আয়াতে রয়েছে। যেমনঃ
﴿ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ
بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ ۖ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ
أَحْسَنُ﴾
‘তোমার রবের দিকে ডাকো হিকমাত ও উত্তম
নসীহতের সাথে, আর লোকদের সাথে বিতর্ক করবে উত্তম পন্থায়।’ (আন নহলঃ ১২৫)
﴿وَلَا تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ
وَلَا السَّيِّئَةُ ۚ ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ
وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ﴾
‘ভাল আর মন্দ এক নয় (বিরুদ্ধবাদীদের
হামলা) সর্বোত্তম পন্থায় দফা করো। তাহলে দেখবে-জানের দুশমনও প্রাণের বন্ধু হয়ে
গেছে।’ (ফুস্সিলাতঃ ৩৪)
﴿ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ
أَحْسَنُ السَّيِّئَةَ ۚ نَحْنُ أَعْلَمُ بِمَا يَصِفُونَ﴾
‘মন্দ ও অন্যায়কে সর্বোত্তম পন্থায় দফা
করো (তোমাদের বিরুদ্ধে) তারা যেসব কথা রটনা করছে-তা আমরা জানি।’ (আল মুমেনুনঃ ৯৬)
দাওয়াতে হকের সঠিক কর্মপন্থা
§ এই ব্যাপারে কুরআনের নির্দেশ হলোঃ
﴿خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ
بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ﴾﴿وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ
الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ ۚ إِنَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ﴾﴿إِنَّ
الَّذِينَ اتَّقَوْا إِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِّنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُوا
فَإِذَا هُم مُّبْصِرُونَ﴾
﴿وَإِخْوَانُهُمْ يَمُدُّونَهُمْ فِي الْغَيِّ ثُمَّ لَا
يُقْصِرُونَ﴾
‘হে নবী, কোমল ও ক্ষমা সুন্দর নীতি অবলম্বন কর।
‘মারূফ’ কাজের নিদের্শ দিয়ে যাও এবং মুর্খদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়ো না। শয়তান
কখনো যদি তোমাকে উস্কানী দেয়-তবে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও। তিনি সব জানেন,
সব শুনেন।
প্রকৃত পক্ষে যারা মুত্তাকী, তাদের অবস্থা তো এরূপ যে, শয়তানের প্ররোচনায় কোনো খারাপ খেয়াল
যদি তাদের স্পর্শ করেও তারা সাথে সাথে সাবধান ও সতর্ক হয়ে যায়। অতঃপর (তাদের
সঠিক করণীয় কি) তা তারা সুস্পষ্টভঅবে দেখতে পায়। বাকী থাকলো তাদের (শয়তানের)
ভাই বন্ধুদের কথা। এদের তো শয়তান বক্র পথে টেনে নিয়ে যায়। এবং এদের বিভ্রান্ত
করার ব্যাপারে তার কোনো ত্রুটিই করে না’। (আরাফঃ ১৯৯-২০২)
§ উপরোক্ত আয়াতে রাসূল সা. কে উদ্দেশ্য করে অনাগত
পৃথিবীর সকল দায়ীদের দাওয়াত ও তাবলীগ এবং হেদায়াত ও সংস্কার সংশোধনের হিকমাত বিষয়ে
কয়েকটি বিষয় শিক্ষা দেয়া হয়েছে। যেমনঃ
1. দায়ী কোমল, বিনয়ী, ধৈর্যশীল
ও উদারচিত্ত হওয়া।
2.
দায়ী দাওয়াত
মারুফ তথা সোজা ও সুস্পষ্ট কল্যাণের শিক্ষা দিয়ে-কঠিন দর্শন
ও তাত্ত্বিক কথা দিয়ে নয়।
3.
দায়ীকে দাওয়াত
দিতে হবে সত্য অনুসন্ধানে আগ্রহী লোকেদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে-বিতর্ক এড়িয়ে।
4.
দায়ী মন মেজাজে
উত্তেজনা অনুভূত হলে তা শয়তানের প্ররোচনা মনে করতে হবে।
1. দায়ী কোমল, বিনয়ী, ধৈর্যশীল ও উদারচিত্ত হওয়া।
· নিজ কর্মীদের ক্ষেত্রে-কোমল ও প্রেমময়।
· সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে-দরদী ও সহানুভূতিশীল।
· বিরোধীদের ক্ষেত্রে-সহিষ্ণু।
· কঠিন ও উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশে-ঠান্ডা মেজাজ।
· কঠিন বিরুদ্ধবাদীদের ক্ষেত্রে-কটিন বিরোধিতা।
· নিজ সহকর্মীদের ক্ষেত্রে-দূর্বলতা বরদাশত
করা।
· অসহনীয় কথার ক্ষেত্রে-উদারচিত্তে এড়িয়ে যাওয়া।
· বিরোধীদের শক্ত কথা, মিথ্যা, অপবাদ, জ্বালা যন্ত্রণা, দুষ্কৃতিমূলক
বাঁধার ক্ষেত্রে-উদার ও ক্ষমার দৃষ্টিতে
হজম করা।
· কঠোরতা, কড়া ব্যবহার, তিক্ত কথা-বার্তা এবং প্রতিশোধ মূলক উত্তেজনা দাওয়াতের
কাজে বিষের ন্যায়-যার পরিণতি দাওয়াতের কাজ ভেঙে চুরমার হয়।
· রাসূল সা. বলেছেনঃ
· আমার রব আমাকে আদেশ দিয়েছেন যে, ‘আমি ক্রোধ সন্তোষ উভয় অবস্থাতেই ইনসাফের কথা বলবো। যে আমার সাথে
সম্পর্কচ্ছেদ করবে আমি তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করবো। যে আমাকে আমার ন্যায্য
অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে, আমি তাকে তার ন্যায্য অধিকার
প্রদান করবো। যে আমার প্রতি যুলুম করবে, আমি তাকে মাফ করে
দেবো’।
· রাসূল সা. যাদেরকে দাওয়াতের কাজে পাঠাতেন, তাদের হেদায়াত
দিতেন এভাবেঃ
عن أنس رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يسِّروا ولا تعسِّروا، وبشِّروا ولا تنفِّروا
‘তোমরা যেখানেই যাবে, তোমাদের আগমন যেনো লোকদের কাছে সুসংবাদের
বিষয় হয়-ঘৃণা ও অসন্তোষের ষিয় নয়। তোমরা লোকদের জন্যে সহজতা বিধানকারী
হবে-কাঠিন্য ও কঠোরতা বিধানকারী নয়’। (বুখারী ও মুসলিম)
· আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা রাসূল সা. এর এই গুণের প্রশংসা করে বলেছেনঃ
﴿فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ
اللَّهِ لِنتَ لَهُمْ ۖ وَلَوْ كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانفَضُّوا مِنْ
حَوْلِكَ﴾
‘এটা আল্লাহরই অনুগ্রহ যে, তুমি লোকদের
প্রতি খুবই বিনম্র। নতুবা তুমি যদি পাষাণাত্মা ও রূঢ় ব্যবহারকারী হতে তবে এসব লোক
তোমার চতুস্পার্শ্ব থেকে সরে যেতো’। (আল ইমরানঃ ১৫৯)
2. দায়ী দাওয়াত মারুফ তথা সোজা ও সুস্পষ্ট কল্যাণের শিক্ষা দিয়ে-কঠিন দর্শন ও তাত্ত্বিক কথা দিয়ে নয়।
· মানুষ যা মারুফ বা ভাল বলে মনে করে অথবা সাধারণ বুদ্ধিতে যা
ভাল মনে করা যায় তার দিকে দাওয়াত দেয়া।
· সাধারণ দাওয়াত সাধারণ মানুষ ও সুধীদের সহজে প্রভাবিত করে।
· এটা হলো দাওয়াতের হিকমাত-যার মাধ্যমে
রাসূল সা. সফলতা লাভ করে।
· এটা হলো হিকমত-যার মাধ্যমে রাসূল
সা. এর পর পার্শবর্তী দেশ সমূহের প্রায় সকল মানুষ মুসলমান হয়ে
যায়।
3. দায়ীকে দাওয়াত দিতে হবে সত্য অনুসন্ধানে আগ্রহী লোকেদেরকে প্রশিক্ষণের
মাধ্যমে-বিতর্ক এড়িয়ে।
· দাওয়াত হবে যারা যুক্ত ও বুদ্ধির সাথে দাওয়াত বুঝতে প্রস্তুত, তাদের প্রতি।
· তর্ক, ঝগড়া ও তিক্ত কথার জবাব দেবে না।
· তর্ক করলে অর্থহীন কাজে সময় নষ্ট হয়-যা প্রচার, প্রসার ও সংশোধনে ব্যয় হওয়া উচিত।
4. দায়ী মন মেজাজে উত্তেজনা অনুভূত হলে তা শয়তানের প্ররোচনা মনে
করতে হবে।
· এক্ষেত্রে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইতে হবে, যাতে দাওয়াতে হকের ক্ষতি হয় এমন কোন তৎপরতা দায়ী কর্তৃক সংঘটিত না হয়।
· দাওয়াতে হকের কাজ সব সময় ঠান্ডা দিলে হতে হয়।
· দাওয়াতী কাজে বাঁধার শয়তান প্ররোচনা দিতে অনেক বড় বড় ধোঁকা ও
ধর্মীয় পরিভাষার ব্যবহার করে।
· শয়তানী কাজ ও ওয়াসওয়াসা এবং খারাপ চিন্তা অনুভব হতেই সাবধান
ও সতর্ক হওয়া মুত্তাকীর গুণ।
· শয়তানের ওয়াসওয়াসার সামনে টিকতে পারেনা যারা, তারা আত্মপূজার অন্ধকারে নিমজ্জিত।
5. উপসংহারঃ
· মুত্তাকী আর মুত্তাকী নয়-এই দুই ধরণের
লোকদের জীবন পদ্ধতি ভিন্নতর।
· বদখেয়াল, অন্যায় বাসনা ও খায়েশ এবং বদনিয়ত
মুত্তাকিদের স্বভাব বিরোধী।
· উদাহরণঃ পায়ে কাটা ফুটা, চোখে ময়লা ঢুকা,
সাদা কাপড়ে ময়লা লাগা-ইত্যাদিতে যেমন অবস্থা হয়,
মুত্তাকীদের তেমন অবস্থা হয়।
তীব্র বিরুদ্ধতার পরিবশে আল্লাহর পথে দাওয়াত
§ এই ব্যাপারে কুরআনের নির্দেশ হলোঃ
﴿وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا
مِّمَّن دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ
الْمُسْلِمِينَ﴾
“এবং সে ব্যক্তির কথার চাইতে ভাল কথা কার
হবে, যে
আল্লাহর দিকে ডাকলো, নেক আমল করলো এবং বললোঃ আমি মুসলমান?”
(হা-মীম-আসসেজদাঃ ৩৩)
§ দ্বীনের দাওয়াত যখন চরম বৈরী পরিবেশ, তখনঃ
· আল্লাহকে রব হিসাবে মেনে নেয়া অতি বড় মৌলিক নেক কাজ।
· সোজা পথ অবলম্বন করা অতি বড় মৌলিক নেক কাজ।
· সর্বোচ্চ স্থরের নেক কাজঃ কঠিন পরিবেশে ঘোষনা দেয়া-আমি মসুলমান।
§ নিজেকে মুসলাম ঘোষনা করা মানেঃ
· আল্লাহর দাসত্বের প্রতি দাওয়াত দান করা।
· দাওয়াতের কাজ করতে গিয়ে নিজের আমলকে পবিত্র রাখা, যাতে কেউ ইসলামের পতাকাবাহীদের কোন দোষ বাহির করতে না পারে।
উত্তম নেকী দ্বারা মন্দের মোকাবিলা করা
§ কুরআনে আরো সামনে অগ্রসর হয়ে বলা হয়েছেঃ
﴿وَلَا تَسْتَوِي
الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُ ۚ ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا
الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ﴾
‘হে নবী ভাল আর মন্দ সমান নয়। মন্দের
মুকাবিলা করো সে নকী দিয়ে-যা অতীব উত্তম। তাহলে দেখতে পাবে-তোমার সাথে যাদের ছিল
চরম শত্রুতা তারা হয়ে গেছে তোমার পরম বন্ধু’। (হা-মীম-আসসেজদাঃ ৩৪)
§ এই আয়াত যেই পরিস্থিতিতে নাযিল হয়েছে, তা হলোঃ
· হকের দাওয়াতের বিরুধীতা করা হচ্ছিল চরম হটকারিতা ও কঠিন আক্রমণাত্মক
ভূমিকায়।
· ব্যবহৃত হচ্ছিল বিরোধীতার নানাবিধ হাতিয়ার।
· নানান ধরণের কষ্ট, নির্যাতন করা হচ্ছিল।
· বাধ্য হয়ে কিছু মানুষকে হিজরত করতে হয়েছিল।
· দাওয়াতী কাজে বাধা দিতে রেডি রাখা হয়েছিল সার্বক্ষনিক গন্ডগোল
ও হট্টগোল সৃষ্টিকারী গ্রুপ।
· দাওয়াতী কাজের সকল পথ বন্ধ মনে হচ্ছিল।
§ এমন পরিস্থিতিতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা রাসূল সা.কে এই হেদায়াত দিচ্ছেনঃ
1. নেকী আর বদী বা ভাল ও মন্দ এক সমান নয়।
· বদী ও অন্যায় সত্তা হিসেবে দূর্বল ও অসহায়।
· স্বভাবগত ভাবে মানুষ অন্যায় ও পাপকে ঘৃণা করে।
· পাপীরাও মনে করে যে তারা মিথ্যাবাদী, জালেম ও স্বার্থের জন্য কাজ করছে।
· পাপীরা নিজেরা নিজেদের কাছে নিজেদের মর্যাদাহীন মনে করে।
· পাপীরা মনের দিক দিয়ে নিজেকে চোর চোর ভাবে বলে সাহসী হতে পারে
না।
· নেকী বাহ্যিক ভাবে অসহায় ও অক্ষম দেখালেও বিরতিহীন ভাবে কাজ
করলে নেকীই বিজয়ী হয়।
· নেকীর মাঝে আছে শক্তি, যা দিলকে করে প্রভাবিত।
· মানুষের নৈতিকতা খারাপ হলেও মানুষ নেকীর মর্যাদা হৃদয়ে অনুভব
করে।
· নেকী আর বদী যখন মুখোমুখি হয়, তখন মানুষের
সামনে উভয়ের প্রকৃত চেহারা ফোটে উঠে।
· বদী আর নেকীর দীর্ঘ সংগ্রামের পর খুব কম লোক পাওয়া যায় যারা
অন্যায় আর পাপের প্রতি শ্রদ্ধাহীন এবং নেকীর প্রতি আসক্ত ও কুরবান না হয়।
2.পাপের মোকাবেল হবে অতি উত্তম ও উচ্চ মানের নেকী দ্বারা।
· নেক কাজঃ অন্যায় আচরণকারীকে ক্ষমা করা।
· উচ্চমানের নেক কাজঃ অন্যায় আচরণকারীকে ক্ষমার সাথে তার প্রতি
ইহসান ও তার উপকার করা।
· এই আচরণের সুফলঃ কঠিন শত্রু প্রাণের বন্ধু হবে-যা মানব স্বভাব।
·
উচ্চমানের
কয়েকটি নেক কাজঃ
১. গালি দিলে চুপ থাকুন-সাথে তার কল্যাণ কামনা
করুন।
২. যে ক্ষতি করতে চায় তার বাড়াবাড়ি সহ্য করুন-সাথে তার ক্ষতি হতে তাকে রক্ষা করুন।
- দুনিয়াতে এমন নিকৃষ্ট মানের মানুষ খুবই কম পাওয়া যায় যারা ক্ষমা
ও সদাচরণের বিনিময় দংশন করতেই থাকে।
হকের দাওয়াতে সবরের গুরুত্ব
§ কুরআনে হাকীম তারপর হেদায়াত দিচ্ছেঃ
﴿وَمَا يُلَقَّاهَا إِلَّا
الَّذِينَ صَبَرُوا وَمَا يُلَقَّاهَا إِلَّا ذُو حَظٍّ عَظِيمٍ﴾
‘এ গুণ কেবল তাদের ভাগ্যেই জুটে,
যারা ধৈর্যধারণ
করে। আর এ মর্যাদা লাভ করতে পারে কেবল তারাই যারা বড়ই ভাগ্যবান’। (হা-মীম-আসসেজদাঃ ৩৫)
§ অন্যায়ের মোকাবেলায় নেকী করা এবং উচ্চ মানের আচরণ করা এই
কাজটা একবার বা সাময়িক ভাবে করা খুব কঠিন নয়। কিন্তু বছরের পর বছর বাতিলপন্থীদের
নৈতিকতার সীমা লংঘনের মোকাবেলায় দ্বীনের খাতিরে ধারাবাহিক ভাবে উচ্চ মানের নেকী করতে থাকা সম্ভবপর নয়।
§ প্রসংগত কবি মতিউর রহমান মল্লিক রাহি. এর একটি গান উল্লেখ
যোগ্যঃ
হঠাৎ করে জীবন দেয়া খুবই সহজ তুমি জান কি?
কিন্তু তিলে তিলে অসহ জ্বালা সয়ে
খোদার পথে জীবন দেয়া নয় তো সহজ তুমি মান কি?
আবেক সেতো হঠাৎ আগুন
একটু তা তে জ্বলবে দ্বিগুণ
সেই আবেগে গুলির মুখে বক্ষ পেতে দেয়া যেতেও পারে।
কিন্তু বিবেক দিয়ে কঠিন শপথ নিয়ে
খোদার রঙে জীবন রাঙানো নয়তো সহজ তুমি মান কি?
§ এই কাজের জন্য প্রয়োজনঃ
· প্রশান্ত মনে দ্বীনে হকের উন্নতি ও কায়েমে সাবিত কদম থাকার
শক্ত সংকল্প।
· নিজের আত্মাকে জ্ঞান ও বুদ্ধি বিবেকের অনুগত করা।
§ আয়াতে বর্ণিত “যারা বড় ভাগ্যবান”
এটি একটি প্রাকৃতিক নিয়ম।
· অতি বড় উচ্চ মর্যাদার মানুষ এ গুণ অর্জন করতে পারে।
· যে এই গুণ অর্জন করে সে বিজয়ী হয়, তার বিজয় কেউ রুখতে পারে না।
শয়তানের প্ররোচনা থেকে আল্লাহর আশ্রয়
§ কুরআনে হাকীমের নির্দেশঃ
﴿وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ
الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ﴾
‘তোমরা যদি শয়তানের পক্ষ থেকে কোনো
প্রকার প্ররোচনা অনুভব করো, তবে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো’। (হা-মীম-আসসেজদাঃ ৩৬)
§ শয়তান চায় না যে দায়ী হক ও বাতিলের দ্বন্দ্বে ভদ্র ও শালীন আচরণ
করবে, বদী ও অন্যায়ের বিপরীতে দায়ী ন্যায় ও নেকীর আচরণ করবে। আর এটা করা হলে শয়তানের টেনশন বেড়ে যায়।
§ সাধারণ মানুষ দ্বন্দ্বের কারণ খোঁজে না। তারা নিরব দর্শক। তারা বিরুদ্ধবাদীদের হীন, নিকৃষ্ট ও
অন্যায় আচরণ দেখে। একই সাথে
তার মোকাবেলায় শালীনতা, ভদ্রতা, নেকী ও ন্যায়পরায়নতা
দেখে। এতে করে তারা প্রভাবিত হয়।
§ এই দুইটি বিষয়ে আলোকপাত করে বলা হয়েছেঃ “শয়তানের ধোঁকা ও প্ররোচনা থেকে সতর্ক থাকো”। শয়তান কিভাবে ধোঁকা দেবেঃ
· খয়েরখা ও দরদী বন্ধু সেজে।
· অমুক কথার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে হবে।
· এ হামলার মুকাবিলায় তো লড়ে যাওয়া উচিত নতুবা তো তোমাদের কাপুরুষ
বলা যাবে।
§ শয়তানের প্ররোচনার মোকাবেলায় করণীয়ঃ
· অবাঞ্চিত উত্তেজনা অনুভূত হলেই সতর্ক হয়ে যাওয়া।
· ক্রোধভাব মনে হলে সতর্ক হয়ে যাওয়া।
· আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করা।
§ হাদীসে বর্ণিত একটি ঘটনার মাধ্যমে এই আয়াতের তাফসীরঃ
একবার নবী সা.-এর উপস্থিতিতেই এক ব্যক্তি হযরত
আবু বকরকে রা.অকথ্য ভাষায় গালি দিতে থাকলো। হযরত আববকর রা.চুপচাপ তার গালাগাল
শুনতে থাকলেন এবং নবী সা. তা দেখে মুচকি হাসছিলেন। শেষ পর্যন্ত হযরত সিদ্দীক রা.-এর
ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে যায়। জবাব তিনিও একটা শক্ত কথ তাকে বলে দিলেন। তাঁর মুখ থেকে
সে কথাটা বের হতেই নবী করীম সা. দারুন অসন্তোষ পয়ে পড়লেন যা তাঁর চেহারা মুবারকে
পরিস্ফুট হয়ে উঠলো এবং সঙ্গে সঙ্গে তিনি সেখান থেকে উঠে চলে গেলেন। হযরত আবুবকরও
উঠে তাঁর পিছু নিলেন এবাং পথিমধ্যে এ ঘটনার কারণ জিজ্ঞেস করে আরয করলেনঃ ‘লোকটা
আমাকে গালি দিতে থাকলে আপনি চুপচাপ মুচকি হাসছিলেন, আর আমি
তার জবাব দিলে আপনি অসন্তউষ।ট হলেন’। হুজুর সা. বললেন, যতক্ষণ তুমি চুপচাপ ছিলে, ততক্ষণ তোমার সাথে একজন ফেরেশতা ছিলো এবং তোমার পক্ষ থেকে লোকটাকে জবাব
দিচ্ছিল। কিন্তু তুমি নিজেই যখন কথা বলে উঠেলে, তখন ফেরেশতার
স্থলে শয়তান এসে বসলো। আমি তো শয়তানের সঙ্গে বসতে পারি না। (মুসনাদে আহমদঃ হযরত
আবু হুরায়রা রা.)
সত্যের দাওয়াত দানকারীকে নিঃস্বার্থ হওয়া
§ দায়ীকে হতে হবেঃ নিঃস্বার্থ-এটা তার আন্তরিকতা
ও সত্য পরায়তার দলীল।
§ দায়ী ইলাল্লাহর কাজে নবীর কাজকে কুরআনে বলা হয়েছেঃ এতে তার কোন
স্বার্থ নাই।
﴿قُل لَّا أَسْأَلُكُمْ
عَلَيْهِ أَجْرًا ۖ إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرَىٰ لِلْعَالَمِينَ﴾
‘হে নবী,
আপনি বলে দিনঃ এ
দাওয়াত ও তাবলীগের কাজের জন্যে আমি তো তোমাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাচ্ছিনা। এ
তো গোটা জগদ্বাসীর জন্যে সাধারণ উপদেশ ও নসীহত মাত্র’। (আল আনআমঃ ৯০)
﴿وَمَا تَسْأَلُهُمْ عَلَيْهِ
مِنْ أَجْرٍ ۚ إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرٌ لِّلْعَالَمِينَ﴾
আর হে নবী এ কাজের জন্যে তো আপনি তাদের নিকট কোনো
পারিশ্রমিক দাবী করছেন না। এতো গোটা জগদ্বাসীর জন্যে এক সাধারণ নসীহত মাত্র’। (ইউসুফঃ ১০৪)
﴿أَمْ تَسْأَلُهُمْ
خَرْجًا فَخَرَاجُ رَبِّكَ خَيْرٌ ۖ وَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ﴾
‘হে নবী,
আপনি কি তাদের
কাছে কিছু চাচ্ছেন? আপনার জন্যে আপনার রবের দানই উত্তম। আর তিনিই উত্তম রিযিক
দানকারী’। (আল মু’মিনুনঃ ৭২)
﴿قُلْ مَا سَأَلْتُكُم مِّنْ
أَجْرٍ فَهُوَ لَكُمْ ۖ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَى اللَّهِ ۖ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ
شَيْءٍ شَهِيدٌ﴾
‘হে নবী,
আপনি বলে দিন;
আমি যদি তোমাদের
কাছে কোনো পারিশ্রমিক চেয়েই থাকি; তবে তা তোমাদেরই জন্যে। আমার
পারিশ্রমিকের যিম্মাদার তো আল্লাহ। আর তিনি প্রতিটি ব্যাপারের সাক্ষ্য’। (সাবাঃ ৪৭)
﴿قُلْ مَا أَسْأَلُكُمْ
عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُتَكَلِّفِينَ﴾
‘হে নবী আপনি বলে দিন,
এ দ্বীন
প্রচারের জন্যে আমি তোমাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাই না আর না আমি
বানোয়াটকারীদের অন্তর্ভুক্ত’। (ছোয়াদঃ ৮৬)
﴿أَمْ تَسْأَلُهُمْ أَجْرًا
فَهُم مِّن مَّغْرَمٍ مُّثْقَلُونَ﴾
‘হে নবী,
আপনি কি এদের
কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাচ্ছেন যে এরা জোর পূর্বক আদায় করা জরিমানার বোঝার তলায়
পড়ে নিস্পেসিত হচ্ছে?’ (আত তুরঃ ৪০,
আল কালামঃ ৪৬)
﴿قُل لَّا أَسْأَلُكُمْ
عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَىٰ﴾
‘হে নবী এ লোকদের বলে দিনঃ এখানে আমি
তোমাদের কাছে কোনো প্রকার পারিশ্রমিকের দাবীদার নই। তবে নৈকট্যের ভালবাস অবশ্যই
পেতে চাই’। (আশ শুরাঃ ২৩)
﴿قُلْ مَا أَسْأَلُكُمْ
عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ إِلَّا مَن شَاءَ أَن يَتَّخِذَ إِلَىٰ رَبِّهِ سَبِيلًا﴾
‘এ লোকদের বলে দাও এ কাজে আমি তোমাদের
কাছে কিছুই চাইনা। আমার পারিশ্যমিক হচ্ছে এ যে,
যার ইচ্ছ সে
নিজের খোদার পথ গ্রহণ করবে’। (আল ফুরকানঃ ৫৭)
§ قرب (নৈকট্য) শব্দটির তাৎপর্য ও
মুফাস্সিরদের মতামতঃ
1.
আত্মীয়তার
সম্পর্ক।
2.
নৈকট্য ও
নিকটত্ব।
3.
আত্মীয়-স্বজন।
দাওয়াতী কাজের সূচনায় পরকালীন ধারণা বিশ্বাসের
প্রতি অধিকতর গুরুত্ব প্রদান
§ দাওয়াতী কাজের সূচনায় রাসূল
সা.
এর কাজের ভিত্তি ছিল ৩টিঃ
1.
শিরকমুক্ত
তাওহীদ।
2.
রিসালাতে
মুহাম্মদী।
3.
আখিরাত।
§ মক্কার কাফিররাঃ
· আল্লাহকে মানতো-তাদের সাথে বিরোধের
ব্যাপারটি ছিল শিরক নিয়ে।
· রাসূলকে রাসূল মানতে রাজী ছিল না। কিন্তু তিনি রেসালতের দাবী করে মিথ্যা বলছেন এমন কথা বলারও সুযোগ
ছিল না এজন্য যে, তার দীর্ঘ ৪০ বছরের জীবন যাপনে তারা কোন মিথ্যা
দেখেনি।
· আপত্তিকর বিষয় ছিল আখেরাতে। অথচ ঈমানের জন্য পরকাল স্বীকার ছিল অপরিহার্য। কারণ পরকালের মাধ্যমেইঃ
o
হক ও বাতিলের
নির্ভূল চিন্তা পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়।
o
ভাল-মন্দ নির্বাচনের মেরুদন্ড পরিবর্তন হয়।
o
দুনিয়া পূজার
পথ ছেড়ে ইসলামের পথে চলা সম্ভব হয়।
§ উপরোক্ত কারণে কুরআনে প্রাথমিক যুগে নাযিল হওয়া সূরা গুলোতে
সবচেয়ে বেশী চেষ্টা চালাতে হয়েছে মানুষের মনে আখেরাতের প্রতি বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত
করতে।
তিনঃ রাসূলুল্লাহ সা. এর গোপন দাওয়াতের তিন বছরঃ
গোপন দাওয়াতের তিন বছর
§ রাসূল সা. রিসালাতের কাজ করেছেন আল্লাহর
শিখানো হিকমাত অনুযায়ী।
§ আল্লাহর শিখানো হিকমাত ছিলঃ
· সূচনাতেই আম দাওয়াত দেয়া হয়নি।
· সূচনাতে দাওয়াত দেয়া হয়েছে সৎকর্মশীল ব্যক্তিদেরকে।
· সূচনাতে দাওয়াত দেয়া হয়েছে দলি-প্রমাণ ও বুদ্ধি যুক্ত মাধ্যমে তিন বছর গোপন পদ্ধতিতে।
· সূচনাতে দাওয়াত দেয়া হয়েছে বিশ্বস্ত লোকদের-যারা দাওয়াতের কথা গোপন রাখবে।
· সূচনাতে বিশ্বস্তদের মধ্যে দাওয়াত প্রাপ্ত হযরত আবু বকর রা. যার সম্পর্কে তাবারী ও ইবনে হিশামঃ
তিনি ছিলেন খুবই মিশুকে ও প্রফুল্ল
চিত্ত। সুন্দুর সুকুমার গুণাবলীর কারণে তার কওমের মধ্যে তিনি খুবই জনপ্রিয় ছিলেন।
কুরাইদের মধ্যে তাঁর চাইতে বড় বংশ-বিশারদ আর কেউ ছিলনা। কুরাইশদের ভাল ও মন্দ
লোদের পরিচয় এবং লোকদের দোষগুণ সম্পর্কে আবুবকর রা.-এর চাইতে বেশী ওয়অকিফহাল আর
কেউ ছিলনা। ব্যবসায় ছিলো তাঁর পেশা। সুন্দর পরিচ্ছন্ন লেনদেনে তিনি ছিলেন
খ্যাতিমান। কওমের লোকেরা তাঁর জ্ঞান, ব্যবসায় এবং
উত্তম আচরণের কারণের তাঁর সাথে অধিক মেলা-মেশা ও উঠা-বসা করতো। এ সুযোগের
সদ্ব্যবহার করে এ সময় তিনি নির্ভরযোগ্য ও আস্থাবান লোকদের কাছে দাওয়াত পৌঁছে
দেন। তাঁর দাওয়াতে আকৃষ্ট হয়ে বেশ কিছু সংখ্যক লোক মুসলমান হয়ে যান। অতঃপর যে
যে ব্যক্তিই মুসলমান হচ্ছিলেন, তার তাদের বন্ধু মহলের সৎ
লোকদের নিকট ইসলামের বাণী পৌঁছে দিচ্ছিলেন। এ সময় মুসলিমগণ মক্কার নির্জণ আস্তানা
সমূহে চুপিসারে নামায পড়তেন যেন তাঁদের ধর্ম পরিবর্তন কেউ জানতে না পারে।
দ্বারে আরকামে দাওয়াতের কেন্দ্র ও ইজতেমা কায়েম
§ দাওয়াতে আড়াই বছরে মক্কার কাফেরদের সাথে সংঘর্ষের আশংকা দেখা
দেয়।
·
ঘটনার বিবরণ
ইবনে ইসহাক এর বর্ণনা অনুযায়ীঃ
একদিন মক্কার মুশরিকরা মুসলামানদেরকে কোনো একটি
ঘাটিতে নামযরত অসস্থায় দেখে ফেলে এবং দুর্বল-কাপুরুষ বলে গালি দিতে আরম্ভ করে। কথা
বাড়তে বাড়তে উভয় দলের মধ্যে সংঘর্ঘ বাধে। হযরত সা’আদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা.এক ব্যক্তির
প্রতি উটের হাড় নিক্ষেপ করলে তার মাথা ফেটে যায়।
·
ঘটনার পরবর্তী
বিবরণ হাফেজ উমাভী এর বর্ণনা অনুযায়ীঃ
যে ব্যক্তির মাথা কেটে গিয়েছিল সে ছিল বনী তাইমের আব্দুল্লাহ ইবনে কাতাল।
এ ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর হুজুর সা. অবিলম্বে
সাফা পর্বতের সন্নিকটে অবস্থিত হযরত আরকামের বাড়ীতে মুসলমানদের ইজতিমা এবং
দাওয়াত ও তাবলীগের কেন্দ্র বানিয়ে নেন।
মুসলমানরা এখানে একত্রিত হয়ে নামায এবং যেসব
লোক গোপনে মুসলমানরা এখানে একত্রিত হয়ে নামায পড়ত এবং যেসব লোক গোপনে মুসলমান
হতে চায় তারাও এখানে আসতে থাকে। ইসলামের ইতিহাসে এই দ্বারে আকাম চির খ্যাতিমান।
গোপন দাওয়াতের তিন বছর সমাপ্তির পর প্রকাশ্যে
সাধারণ দাওয়াত শুরু হবার পরও এই দ্বারে আরকামই মুসলামানদের কেন্দ্র ছিলো।
এখানেই হুজুর সা. আসেতন। এখানে এসেই মুসলমানরা
তাঁর কাছে একত্রিত হতো এবং শেবে আবু তালিবে অন্তরীণ হওয়া পযন্ত এ বাড়ীই ইসলামী
দাওয়াতের কেন্দ্রীয় মর্যাদার অভিষিক্ত ছিলো।
তিন বছর গোপন দাওয়াতের
খতিয়ান
সাধারণ দাওয়াত আরম্ভ হওয়ার
পূর্বে যারা হুজুর সা.-এর প্রতি ঈমান এনে মুসলিম জামায়াতে শামীল হয়েছিলেনঃ
§
বনি হাশিমঃ
1.
জাফর
ইবনে আবু তালিব রা.
2.
তাঁর
স্ত্রী আসমা বিনতে উমাইস খাসআমী। ইনি ছিলেন অকুরাইশ
3.
সাফিয়া
বিনতে আবদুল মুত্তালিব (হুযুর সা. এর ফুফু এবং হযরত যুবায়েরের মা)।
4.
আরওয়া
বিনতে আবদুল মুত্তালিব রা. (হুযুর সা. এর ফুফু এবং তুলাইব ইবনে উমাইর রা.-এর মা)।
§
বনি আবদুল মুত্তালিবঃ
5.
উবাইদা
ইবনে হারেসে ইবনে মুত্তালিব রা.
§
বনি আবদে শামস ইবনে আবদে মান্নাফঃ
6.
আবু
হুযাইফা ইবনে উৎবা ইবনে রাবিআ রা.
7.
তাঁর
স্ত্রী সাহলা বিনতে সুহাই ইবনে আমর রা.
§
বনি উমাইয়াঃ
8.
উসমান
ইবনে আফফান রা.
9.
তাঁর
মাতা আরওয়া বিনতে কুরাইয রা.
10.
কালিদ
ইবনে সাঈদ ইবনে আস ইবনে উমায়া রা.(তার পিতা সায়ীদের কুনিয়াত ছিলোঃ আবু উহাইহা)
11.
তাঁর
স্ত্রী উমাইমা বিনতে খালফ খোজায়ীয়া রা.কেউ কেউ এর নাম উমাইনা লিখেছেন)
12.
উম্মে
হাবীবা বিনতে আবু সফিয়া রা.(প্রথমে উবাইদুল্লাহ ইবনে জাহাশের স্ত্রী ছিলেন। পরে
উম্মুল মু’মিনীনের মর্যাদা লাভ করেন)।
§
বনি উমাইয়ার মিত্র গোত্রসমূহ থেকেঃ
13.
আবদুল্লাহ
ইবনে জাহাশ ইবনে রিয়াব
14.
আবু আহমদ
ইবনে জাহাশ
15.
উবায়দুল্লাহ
ইবনে জাহাশ। এরা ছিলেন বনি গণম বিন দুদানের
লোক, হুযুরের ফুফু উমাইমা বিনতে আবদুল মুত্তালিবের পুত্র এবং
উম্মুল মুমিনীন যয়নব বিনতে জাহাশের ভ্রাতৃবৃন্দ।
§
বনি তাইমঃ
16.
আসমা
বিনতে আবুবকর রা.
17.
উম্মে
রুমান রা.(হযরত আবুবকরের স্ত্রী এবং হযরত আয়েশা ও আবদুর রহমান ইবনে আবুবকরের মা)
18.
তালহা
আবনে উবাইদুল্লাহ রা.
19.
তাঁর মাত
সা’বা বিনতে হাজরামী রা.
20.
হারেস
ইবনে খালদ রা.
§
বনি তাইমের মিত্র গোত্র থেকেঃ
21.
সুহাইব
ইবনে সিনান রুমী রা.
§
বনি আসাদ ইবনে আদুল উজ্জাঃ
22.
যুবায়ের
ইবনে আওয়াম রা.(হযরত খাদীজার ভাতিজা এবং হুযুর সা.-এর ফুফাতো ভাই)
23.
খালেদ
ইবনে হেযাম রা.(হাকীম ইবনে হেযামের ভাই এবং হযরত খাদীজার ভাতিজা)
24.
আসওয়াদ
ইবনে নওফেল রা.
25.
অমর ইবনে
উমাইয়অ রা.
§
বনি আবদুল উজ্জা ইবনে কুসাইঃ
26.
ইয়াযীদ
ইবনে যামআ ইবনে আসওয়াদ রা.
§
বনি যুহরাঃ
27.
আবদুর
রহমান ইবনে আওফ রা.
28.
তাঁর
মাতা শেফা বিনতে আওফ রা.
29.
সাআদ
ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা.(তাঁর আসল নাম ছিল মালেক ইবনে উহাইব)
30.
তাঁর
ভ্রাতা উমাইর ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা.
31.
তাঁর
ভ্রাতা আরে ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা.
32.
মুত্তালিব
ইবনে আযহার রা.(আঃ রহমান ইবনে আওফের চাচাতো ভাই)
33.
তাঁর
স্ত্রী রামলা বিনেত আবি আওফ সাহমীয়া রা.
34.
তুলাইব
ইবনে আযহার রা.
35.
আবদুল্লাহ
ইবনে শিহাব রা.(মায়ের দিক থেকে ইনি ইমাম যুহরীর নানা ছিলেন)।
§
বনি যুহরার মিত্রদের মধ্যে থেকেঃ
36.
আবদুল্লাহ
ইবনে মাসউদ রা.(ইন হুযাইল গোত্রের লোক। বনি যুহরার মিত্র হিসেবে মক্কায় বসবাস
করতেন)।
37.
উৎবা
ইবনে মাসউদ রা.(আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের ভাই)
38.
মিকদাদ
ইবনে আমরুল কিন্দি রা.(আসাওয়াদ ইবনে আবদে ইয়াগুছ তাঁকে মিত্রকরে রেখেছিলেন।
39.
খাব্বাব
ইবনে ইরত রা.
40.
শুরাহ
বিল ইবনে হাসনা আল-কিন্দি রা.
41.
জাবির
ইবনে হাসনা আল কিন্দি রা.(মুবারহবিলের ভ্রাতা)
42.
জুনাদা
ইবনো হাসনা রা.(শুরাহবিলের ভাই)।
§
বনি আদীঃ
43.
সাঈদ
ইবনে যায়েদ ইবনে আমর ইবনে নুফাইল রা.(হযরত উমর রা.এর ভগ্নিপতি ও চাচাতো ভাই)
44.
যায়েদ
ইবনে খাত্তাব রা.(হযরত উমরের বোন)
45.
যায়েদ
ইবনে খাত্তাব রা.(হযরত উমরের বড় ভাই)
46.
আমের
ইবনে রবীয়া আল আনাযী রা.(ইনি ছিলেন বনি আদির মিত্র। খাত্তাব তাঁকে পুত্র বানিয়ে
রেখেছিলেন। আবু আবদুল্লাহ আনাসী ছিলো তার
কুনিয়াত)
47.
তাঁর
স্ত্রী লাইলা বিনতে আবু হাসমা রা.
48.
মা’মার
ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে নাদমা রা.
49.
নুয়াইম
ইবনে আবদুল্লাহ আননাহহম রা.
50.
আদী ইবনে
নাদলা রা.
51.
উরওয়া
ইবনে আবু উসাসা রা.(আরম ইবনে আসের মায়ের পক্ষের ভাই)
52.
মাসউদ রা.ইবনে
সুয়াইদ ইবনে হারেসা ইবনে নাদালা।
§
বনি আদীর মিত্রদের মধ্য থেকেঃ
53.
ওয়াকিদ
ইবনে আবদুল্লাহ (একে খাত্তাব চুক্তিবদ্ধ করে আশ্রয় দিয়ে রেখেছিলেন)
54.
খালেদ
ইবনে বুকাইর ইবনে আবদে ইয়ালিল লাইছী (রাঃ)
55.
ইয়াস রা.
56.
আমের রা.
57.
আকিল রা.
§
বনি আবদুদ দারঃ
58.
মুসয়াব
ইবনে উমায়ের রা.
59.
আবু রুম
উবনে উমায়ের রা.(মুসআবের ভ্রাতা)
60.
ফিরাস
ইবনে নদর রা.
61.
জহম ইবনে
কায়েস রা.
§
বনি জুমাহঃ
62.
উসমান
ইবনে মাযউন রা.
63.
তাঁর ভাই
কুদামা ইবনে মাযউন রা.
64.
তাঁর ভাই
আবদুল্লাহ ইবনে মাযউন রা.
65.
সায়েম
ইবনে উসমান ইবনে মাযউন রা.
66.
মা’মার
ইবনে হারেস ইবনে মা’মার রা.
67.
তাঁর ভাই
হাতেব ইবনে হারেস রা.
68.
তাঁর
স্ত্রী ফাতেমা বিনতে মুজাললাল আমেরী রা.
69.
মা’মারের
ভাই খাত্তাব ইবনে হারেস রা.
70.
তাঁর
স্ত্রী ফুকাইহা বিনতে ইয়াসার রা.
71.
সুফিয়ান
ইবনে মা’মার রা.
72.
নুবাইহ
ইবনে উসমান রা.
§
বনি সাহামঃ
73.
আবদুল্লাহ
ইবনে হুযাফা রা.
74.
খুনাইস
ইবনে হুযাফা রা.হযরত উমরের জামাই (উম্মুল মুমিনীন হাফসা রা.-র প্রথম স্বামী
75.
হিশাম
ইবনে আস ইবনে ওয়ায়েল রা.
76.
হারেস
ইবনে কায়েস রা.
77.
তাঁর
পুত্র বশীল ইবনে হারেস রা.
78.
তাঁর অপর
পুত্র মা’মার ইবনে হারেস রা.
79.
কায়েস
ইবনে হুযাফা রা.(আবদুল্লাহ ইবনে হুযাফার ভাই)
80.
আবু
কায়েস ইবনে হারেস রা.
81.
আবদুল্লাহ
ইবনে হারেস রা.
82.
সায়েব
ইবনে হারেস রা.
83.
হাজ্জাজ
ইবনে হারেস রা.
84.
বেশর
ইবনে হারেস রা.
85.
সা’ঈদ
ইবনে হারেস রা.
§
বনি সাহমের মিত্রদের মধ্য থেকেঃ
86.
উমায়ের
ইবনে রিযাব রা.
87.
মাহমিয়া
ইবনে জাযউ রা.(ইন ছিলেন হযরত আব্বাসের স্ত্রী উম্মুল ফদলের মায়ের পক্ষের ভাই)।
§
বনি মাখজুমঃ
88.
আবু
সালমা আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল আসাদ রা.(হুজুর সা. এর ফুফাতো ভাই এবং দুধ ভাই। উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালমার প্রথম স্বামী)
89.
তাঁর
স্ত্রী উম্মে সালামা রা. (ইনি এবং তাঁর স্বামী আবু সালমা
আবু জেহেলের নিকটাত্মীয় ছিলেন)
90.
আরকাম
ইবনে আবুল আরকাম রা.(এর দ্বারে আরকামের কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে)
91.
আইয়াস
ইবনে আবু রাবিয়া রা.(আবু জেহেলের মায়ের পক্ষের ভাই ও হযরত খালেদ ইবনে অলীদের
চাচাতো ভাই)
92.
তাঁর
স্ত্রী আসমা বিনতে সালামা তামিমী রা.
93.
অলীদ
ইবনে অলীদ ইবনে মুগীরা রা.
94.
হিশাম
ইবনে আবু হুজাইফা রা.
95.
সালামা
ইবনে হিশাম রা.
96.
হাশেম
ইবনে আবু হুজাইফা রা.
97.
হাববার
ইবনে সুফিয়ান রা.
98.
তাঁর
ভ্রাতা আবদুল্লাহ ইবনে সুফিয়ান রা.
§
বনি মাখযুমের মিত্রদের মধ্য থেকেঃ
99.
ইয়াসির রা.(আম্মার
ইবনে ইয়াসিরের পিতা)
100.
আম্মার
ইবনে ইয়াসির রা.
101.
তাঁর ভাই
আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াসির রা.
§
বনি আমের ইবনে লুওয়াইঃ
102.
আবু
সাবরা ইবনে রুহম রা.(হুজুর সা. এর ফুফু বাররাহ বিনতে আবুল মুত্তালিবের পুত্র)
103.
তাঁর
স্ত্রী উম্মে কুলসুম বিনতে সুহাইল ইবনে আমর রা.(আবু জান্দালের ভগ্নি)
104.
আবদুল্লাহ
ইবনে সুহাইল ইবনে আমর রা.
105.
হাতেম
ইবনে আমর রা.(সুহাইল ইবনে আমরের ভাই)
106.
সালিম
ইবনে আমর রা.সুহাইল ইবনে আমরের ভাই)। ইসাবা গ্রন্থে তাঁকে সুহাইল ইবনে আমরের
ভাতিজা বলা হয়েছে)
107.
সাকরান
ইবনে আমর রা.(সুহাইল ইবনে আমরের ভাই এবং উম্মুল মুমিনীন হযরত সওদা বিনতে যাময়ার
প্রথম স্বামী)
108.
তাঁর
স্ত্রী সওদা বিনতে যাময়া রা.(সুকরানের মুত্যুর পর তিনি উম্মুল মুমিনীনের মর্যাদা
লাভ করেন)
109.
সালিত
উবনে আমরের স্ত্রী ইয়াকাযা বিনতে আলকামা (ইসাবা গ্রন্থে উম্মে ইয়াকাযা লেখা
হয়েছে এবং ইবনে সাআদ তার নাম ফাতেমা বিনতে আলকামা বলেছেন)
110.
মালিক
ইবনে যাময়া রা.(হযরত সওদার ভাই)
111.
ইবনে
উম্মে মাকতুমরা.
§
বনি ফিহর ইবনে মালিকঃ
112.
আবু উবাইদা ইবনে জাররাহ রা.
113.
সুহাইল
ইবনে বাইদা রা.
114.
সা’ঈদ ইবনে কাসে রা.
115.
আমর ইবনে
হারেস ইবনে যুহাইর রা.
116.
উসমান
ইবনে আবদে গানাম ইবনে যুহাইর রা.(হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফের ফুফাতো ভাই)
117.
হারেস ইবনে সা’ঈদ রা.
§
বনি আবদে কুসাইঃ
118.
তুলাইব
উমাইর রা.(হুজুর সা. এর ফুফু আরওয়া বিতে আবদুল মুত্তালিবের পুত্র)।
এ পর্যন্ত উল্লেখিত ব্যক্তিরা সবাআ কোরাইশের বড় বড় খান্দানের
সাথে সম্পর্কিত। এছাড়াও বেশ কিছু সংখ্যক মাওলা, দাস ও
দাসী গোপন দাওয়াতের তিন বছরে ইসলাম কবুল করেন। তাঁদের নাম নিম্নে প্রদত্ত হলোঃ
119.
উম্মে
আয়মান বারকা বিনতে সালাবা (ইন শৈশব থেকে হুজুর সা.-কে কোলে করে লালন পালন করেন।
120.
যিন্নিরা, রূমীয়া, (আমর ইবনে মুয়াম্মিল এর মুক্ত দাসী)
121.
বিলাল ইবনে রাবাহ (রাঃ), (ইনি উমাইয়া ইবনে খালফের দাস ছিলেন)
122.
তাঁর
মাতা হামামা রা.
123.
আবু
ফুকাইয়া ইয়াসার জাহমী রা.সুফওয়ান ইবনে উমাইয়ার আযাদকৃত গোলাম।
124.
লবিবা-মুয়াম্মিল
ইবনে হাবীবের দাসী।
125.
উম্মে
উবাইস রা.বনি তাইম ইবনে মুররাহ অথবা বনি যুহরার দাসী। (পথশ মত যুবাইর ইবনে
বাককারের এবং দ্বিতীয় মত বালাজুরীর)
126.
আমের
ইবনে ফুহাইরা রা.(তোফায়েল ইবনে আবদুল্লাহর গোলাম)।
127.
সুমাইয়া
রা.(হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসারের মাতা এবং আবু হুযাইফা ইবনে মুগীরা মাখযুমীর দাসী)।
এ ছাড়া অকুরাইশদের মধ্যে যারা মক্কার এই প্রাথমিক অধ্যায়ে
ইসলাম কবুল করেন, তাঁরা হচ্ছেনঃ
128.
মেহজান রা.ইবনে
আদরা আসলমী।
129.
মাসউদ রা.ইবনে
রবীয়া ইবনে আমর। ইনি ছিলেন বনি উলুহুন ইবনে খুযাইমার কাররাহ কবিলার লোক।
§ একদম শুরুতে মুসলমান হওয়া ৪জন আর এই তালিকার ১২৯ জন মিলে হয়
১৩৩, যারা রাসূল সা. এর তিন বছরের গোপন দাওয়াতে ইসলামী জামায়াতে শামীল হোন।
§ এরা ছিলেন তারা, যারাঃ
· স্থির স্বভাব, প্রশান্ত চিত্ত ও বিশুদ্ধ চিন্তার অধিকারী।
· শিরকে ক্ষতিকর দিক বুঝতে পেরেছিলেন যুক্তি আর সাধারণ জ্ঞান
দিয়ে।
· মেনে নিয়েছিলেন তাওহীদের তাৎপর্য ও সত্যতা।
· স্বীকৃতি দান করেছিলেন মুহাম্মদ সা.
· মেনে নিয়েছিলেন কুরআনকে আল্লাহর বাণী এবং নিজেদের হিদায়াতের
একমাত্র পথ হিসাবে।
· বুঝে নিয়েছিলেন আখেরাত একটি অবশ্যম্ভাবী মহাসত্য হিসাবে।
§ এই ধরণের মুখলিস ও দ্বীনের উপযুক্ত জ্ঞানওয়ালা কর্মী বাহিনী
গড়ে উঠার পর রাসূল সা. প্রকাশ্য ভাবে ইসলামের দাওয়াতের কাজ শুরু করেন আল্লাহর
নির্দেশে।
﴿ َبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا
صَبْرًا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ﴾
“হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ধৈর্য দান
কর। আমাদের অবিচলিত রাখ এবং এ কাফেরদের উপর আমাদের বিজয় দান কর”।(আল বাকারাঃ ২৫০)
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ
آمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا وَرَابِطُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ
تُفْلِحُونَ﴾
“হে ঈমানদারগন! সবরের পথ অবলম্বন কর।
বাতিলপন্থিদের মোকাবিলায় দৃঢ়তা দেখাও। হকের খেদমত করার জন্য উঠে পড়ে লাগো এবং
আল্লাহকে ভয় করতে থাকো। আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে”। (আলে ইমরানঃ ২০০)
0 Comments