নোট প্রস্তুতঃ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম
জন্মঃ
১৯৩৬ সালের ১৫ মার্চ।
মৃত্যুঃ ২০২১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর।
শিক্ষাঃ উর্দূতে এম.এ.
কর্মজীবনঃ সাংবাদিক, লেখক, গবেষক, সম্পাদক, অনুবাদক।
১৯৮৭ সালঃ বাংলা সাহিত্য পরিচষদের পরিচালক।
১৯৯৯ সালঃ ইসলামিক ল’ রিসার্চ সেন্টার এন্ড
লিগ্যাল এইচ বাংলাদেশের ভাইস চেয়ারম্যান।
লেখাঃ
প্রবন্ধঃ ৩০০ এর বেশী।
বইঃ মৌলিক রচনা, অনুবাদ ও সম্পাদনা সহ ১৭৬টি।
সম্পাদকঃ এক সময় দৈনিক সংগ্রামের ইতিহাস ঐতিহ্য
ও শাহীন শিবির পাতার সম্পাদক। মাসিক কলম, মাসিক পৃথিবীর সম্পাদক। বাংলা সাহিত্য
পরিষদ পত্রিকা, ইসলামী আইন ও বিচার পত্রিকার সম্পাদক।
যুগশ্রেষ্ঠ লেখক
ও অনুবাদক মরহুম আব্দুল মান্নান তালিব রহ. স্মরণে.
বহু বছর আগের
কথা। তখনও দেশ স্বাধীন হয়নি। মরহুম আব্দুল মান্নান তালিব সাহেব কাজের সন্ধানে
পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়েছেন। কিন্তু কাজ পাচ্ছেন না। সারাদিন নানা স্থানে কাজ
খোঁজেন আর রাতের বেলায় এসে মসজিদে ঘুমান। ঘটনাচক্রে সেই মসজিদেই বাদ আসর আলোচনা করেন মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী রহি.।
একদিন এরকমই একটি
আলোচনায় আব্দুল মান্নান তালিব নিজেও শরীক হলেন। আলোচনার শেষে প্রশ্নোত্তর সেশনে
একজন মুসুল্লীর একটি প্রশ্নের উত্তর মাওলানা যেভাবে দিলেন, আব্দুল মান্নান
তালিবের তা মনোপুত হলো না। তার মনে হলো, উত্তরটি আরো বিস্তারিত দিলে
ভালো হতো।
কিন্তু ঐ
অনুষ্ঠানের আদবের কথা ভেবে তিনি চুপ রইলেন। সন্ধার পরে লোকজন চলে যাওয়ার পর তিনি
নিজেই উত্তরটি ডিটেইলে লিখলেন। মাওলানার বই থেকেও রেফারেন্স দিলেন। বেশ বড়ো করে
উত্তরটি লেখার পর তিনি ঐ মসজিদের ইমাম সাহেবের কাছেই তা হস্তান্তর করলেন এবং
অনুরোধ করলেন, যাতে তিনি মাওলানাকে এই উত্তরটি পৌঁছে দেন।
পরেরদিন মাওলানা
আলোচনা করতে মসজিদে আসলে ইমাম সাহেব তাকে আব্দুল মান্নান তালিব সাহেবের হাতে লেখা
উত্তরটি দিলেন। মাওলানা পড়ে বিমোহিত হলেন। তার উত্তর তার চেয়ে সুন্দর করে একজন
মানুষ লিখে দিয়েছে-এই মেধায় তিনি বিস্মিত হলেন। যেহেতু পরেরদিনের আসরে তালিব সাহেব
ছিলেন না, তাই মাওলানা ইমাম সাহেবকেই আব্দুল মান্নান তালিবের খোঁজ
লাগাতে বললেন।
সেই রাতে যখন
ঘুমানোর জন্য ঐ মসজিদে তালিব সাহেব গেলেন, তখন ইমাম সাহেব বললেন, মাওলানা আগামীকাল
বিকালের আলোচনায় আপনাকে থাকতে বলেছেন। আব্দুল মান্নান তালিব পরেরদিন বিকালের সেই
আলোচনায় থাকলেন।
মাওলানার সাথে
তার কথোপকথন হলো। মাওলানা যখন জানলেন, তালিব সাহেব বেকার, কাজ খুঁজে
বেড়াচ্ছেন, রাতে মসজিদে মসজিদে থাকছেন, তখন শুধুমাত্র
তার লেখা উত্তরের ওপর ভর করে তাকে তরজমানুল কুরআনের সহকারী সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ
দিয়ে দিলেন। আব্দুল মান্নান তালিবের দেয়া লিখিত উত্তরটায় মাওলানা মওদূদী এতটাই
বিস্মিত হয়েছিলেন যে, আলাদা করে কোনো ইন্টারভিউ নেয়ারও তিনি প্রয়োজন বোধ
করেননি।
প্রকাশকের কথাঃ
§ মানুষের
কোন উদ্দেশ্য, আন্দোলন, সংস্কারমূলক পদক্ষেপ ততক্ষণ পর্যন্ত সফলকাম হতে পারেনা,
যতক্ষণ না সেই আন্দোলন যারা করবেন তাদের মাঝে সেই আন্দোলনের যেসব বিশেষ গুণ আছে,
তা সৃষ্টি না হবে।
§ উদ্দেশ্য
যতই মহৎ হোক, বিপ্লব যতই মুক্তির প্রতিশ্রুতিশীল হোক, আন্দোলনের সফলতার স্বপ্ন
কেবল স্বপ্নই থেকে যাবে, যদি আন্দোলনের কর্মীরা তাদের চরিত্রকে সুন্দর, বলিষ্ট আর
উন্নত আর উজ্জল করতে না পারেন।
§ আখেরাতে
আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়ার উত্তম পথ হলো সমস্যায় ভরা এই দুনিয়ায় ইসলামী সমাজ
কায়েমের সংগ্রামে অবতীর্ণ হবেন-এছাড়া ভাল আর কোন পথ নাই।
§ আর
সংগ্রামে যারা অবতীর্ণ হবেন, তাদের কাছে স্বাভাবিক ভাবে আশা করা হয় অধিক
কর্মপ্রেরণা, ত্যাগ এবং কুরবানী, বিশেষ যোগ্যতা ও বৈশিষ্ট।
§ মাওলানা
মরহুম সেই সব গুণাবলীর প্রতি আলোকপাত করেছেন এই বইয়ে-যা
ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পূঁজি হওয়া দরকার।
§ উল্লেখ্য
যে, এই গুণাবলী গুলো নিয়ে ছোট্ট একটি পুস্তিকা লিখেছেনঃ
মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযম রাহি. ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের প্রাথমিক পূঁজি নামে।
ভূমিকাঃ
·
ইসলামী সমাজ
প্রতিষ্ঠা করতে যারা চান, তাদেরকে ৩টি নিরাশার দিক উপলব্দি করতে হবেঃ
১. ইসলামী সমাজ হোক এই আকাংখার
অভাব নেইঃ
-
অভাব আগ্রহ ও উদ্যোগ গ্রহণের।
-
অভাব যোগ্যতার।
-
অভাব মৌলিক গুণাবলীর।
২. জাতির প্রভাবশালী অংশ
বিকৃতি ও ভাঙ্গনে ব্যস্তঃ
-
যারা ভাংগনে নেই তারা
সৃষ্টি ও বিন্যাসের চিন্তামুক্ত।
-
সংস্কার ও গঠনের কাজে
নিয়োজিতদের সংখ্যা খুবই ছোট্ট।
৩. পরিগঠন ও ভাঙ্গার কাজ
করে সরকারঃ
-
গনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উপযুক্ত ব্যক্তিদের
হাতে ক্ষমতা প্রদানই সরকারের উপযুক্ততার উপর নির্ভরশীল।
-
বিকৃতি ও ভাঙ্গনে যারা ব্যস্ত, তারা জনগন যাতে
উপযুক্ত ব্যক্তিকে নির্বাচিত করতে না পারে, সেজন্য জনগনকে প্ররোচিত করে এবং তারা
প্র্র্ররোচিত করার এই কাজে তাদের সকল শক্তি ব্যয় করে।
উপরের তিনটা বিষয় চিন্তা
করলে যে নিরাশার সৃষ্টি হয়, তাতে মনে হয় এখানে কি সফলতা সম্ভব? কিন্তু বিপরীতে
রয়েছে আরো কিছু দিক, যা নিরাশা কাটিয়ে আলো দেখা যায়।
·
ইসলামী সমাজ
প্রতিষ্ঠা করতে যারা চান, তাদেরকে ৪টি আশার দিকে দৃষ্টি দিতে হবেঃ
১. এটা কেবল অসৎ লোকের
আবাসস্থল নয়ঃ
-
এখানে সৎলোকও আছে।
-
এই সৎ লোকেরা শুধু সংশোধন ও চরিত্র
গঠনের আখাংখা পোষণ করেনা, তাদের আগ্রহ ও যোগ্যতাও আছে।
-
যদি যোগ্যতার কোন ঘাটতিও
থাকে, তাহলে তা খুব সামান্য চেষ্টায় বাড়ানো সম্ভব।
২. আমাদের জাতি পুরোটাই অসৎপ্রবল
নয়ঃ
-
অশিক্ষা আর অজ্ঞতার কারণে
জাতি প্রতারিত।
-
প্রতারণাকারীদের তৎপরতায় জাতি
সন্তুষ্ট নয়।
-
বিচক্ষতার সাথে সংগঠিত ও
নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টা চালালে জনমত জনশক্তিতে পরিণত হবে।
-
জাতির বৃহত্তম অংশ সমাজের
অসৎ শক্তি গুলোর অনাচারের পরিপোষক নয়।
৩. বিকৃতির কাজ যারা করে
তাদের অসুবিধাঃ
-
তারা সকল ধরণের সুযোগ সুবিধা পায় ২টি সুবিধা
ছাড়া। আর তা হলোঃ
১. চারিত্রিক শক্তি।
২. ঐক্যের শক্তি।
৪. দ্বীন কায়েমের কাজ
আল্লাহর নিজের কাজঃ
-
এই কাজে যারা চেষ্টা করে তারা আল্লাহর সমর্থন
লাভ করে।
-
আল্লাহর সমর্থন লাভের শর্ত হলোঃ ২টি
১. সবর ও আন্তরিকতার সাথে
কাজ করা।
২. বুদ্ধি ও বিচক্ষনতার
সাথে কাজ করা।
-
আল্লাহর দ্বীনের কাজ যারা করে তাদের সংখ্যা কম
হোক বা উপকরণ কম হোক, আল্লাহর সাহায্য তাদের সকল অভাব পুরণ করে।
·
নিরাশার পর আশার এই আলোচনা সম্ভাবনার দ্বার
উম্মুক্ত করে। তবে তার জন্য প্রয়োজনঃ
1.
আশা আকাংখার মনজিল অতিক্রম করে কিছু করার জন্য অগ্রসর হওয়া।
2.
সাফল্যের জন্য আল্লাহর নির্ধারিত নীতি ও পদ্ধতিতে অগ্রসর হওয়া।
3.
কেবল সমালোচনা নয়, কেবল কথার জোরে নয়, হাত ও পায়ের শক্তিকে ব্যবহার
করা।
4.
মনে রাখতে হবে,
-
দোয়া আর আশার মাধ্যমে জমিন সবুজ শ্যামল হয় না,
শীষ উৎপন্ন হয়না।
-
ফেরেশতারা লড়াইয়ের জন্য আসেনা, আসে যারা
লড়াইকারী তাদের সাহায্য করার জন্য।
-
কেবল উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে নয়, যথার্থ চিন্তা
ভাবনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
·
যখনই কোন কাজ শুরু করা হয় তখন উত্থাপিত হয়
উদ্দেশ্য কি, কর্মসূচী কি? কিন্তু কোন কাজের সিদ্ধান্ত আর কর্মসূচীর মাঝখানে
আরেকটা জিনিস অবস্থা করে, তাহলো কর্মী-যা কাজের আসল ভিত্তি ও নির্ভর।
·
কাজ করার জন্য সংকল্প আর কর্মসূচীর সাথে সাথে
প্রয়োজন কর্মসূচী বাস্তবায়নে ব্যক্তি ও ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত ও সামস্টিক চারিত্রিক
গুণাবলী।
-
কোন কর্মসূচী ও পরিকল্পনার বাস্তবায়িত হওয়া বা
না হওয়ার মূল কার্যকর শক্তি হলো ব্যক্তি ও দলের চারিত্রিক গুণাবলী।
·
সেই সব গুণাবলী নিয়ে
ধারাবাহিক আলোচনা করা হবে এই বইতে। যেমনঃ
1.
যারা কাজ করবেন-তাদের ব্যক্তিগত যে সব গুণ
থাকা দরকার।
2.
যারা কাজ করবেন-তাদের সামিষ্টিক যে সব গুণ
থাকা দরকার।
3.
যে কাজ করবেন-সে কাজে সাফল্য অর্জনের জন্য যে
সব গুণ থাকা দরকার।
4.
যারা কাজ করবেন-তাদেরকে ব্যক্তিগত ও সামষ্টিকভাবে
যেসব বড় বড় দোষত্রুটি থেকে মুক্ত থাকা দরকার।
5.
কিছু গুণাবলী আছে যা
অভিপ্রেত-তার বিকাশ সাধন, আর কিছু গুণাবলী আছে যা
অনভিপ্রেত-তার থেকে ব্যক্তিগত ভাবে এবং সামষ্টিক ভাবে মুক্ত থাকা দরকার।
·
যারা দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ করবেন, তাদেরকে এই
সব গুণাবলীর বিষয় উপলব্দি করতে হবে।
-
অভিপ্রেত গুণাবলীর লালন
করতে হবে, অনভিপ্রেত গুণাবলী থেকে মুক্ত থাকতে হবে।
-
সমাজ গঠনের জন্য প্রথম শর্ত হচ্ছেঃ ব্যক্তি
গঠন। কারণ যে নিজেকে সাজাতে পারে না, সে
অন্যকে সাজাতে পারে না।
ব্যক্তিগত গুণাবলী
ইসলামী সমাজ গঠনের কাজের ভিত্তি হিসাবে প্রত্যেক
ব্যক্তির মধ্যে যে সব গুণাবলী থাকা প্রয়োজন ।
1. ইসলামের যথার্থ জ্ঞান।
2. ইসলামের
প্রতি অবিচল বিশ্বাস।
3. চরিত্র
ও কর্ম।
4. দ্বীন
হচ্ছে জীবনোদ্দেশ্য।
একঃ ইসলামের যথার্থ জ্ঞানঃ
·
অধ্যাপক
গোলাম আযম রাহি. গুণাটাকে বলেছেনঃ দ্বীনের ইলম।
·
সহজ কথায়
আমরা এটাকে বলবোঃ দ্বীনের নির্ভূল জ্ঞান। আর তাহলোঃ
1. জানা ও বুঝা।
2. সংক্ষিপ্ত জ্ঞান নয়, বিস্তারিত জ্ঞান।
3. জ্ঞান কতটুকু হবে, তা নির্ভশীল মানুষের যোগ্যতার উপর।
4. সকলকে মুফতি বা মুজতাহিদ হওয়া শর্ত নয়।
5. ইসলামী আক্বীদাকে জাহেলী চিন্তা থেকে মুক্ত থাকার মত জ্ঞান।
6. ইসলামী কর্মপদ্ধিতিকে জাহেলী নীতি পদ্ধতি থেকে আলাদা থাকার মত জ্ঞান।
7. জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশ জানার মত জ্ঞান।
8. ইসলামকে বুঝানোর জন্য দাওয়াতী কাজের প্রয়োজনীয় জ্ঞান।
9. সাধারণ কর্মীদের জ্ঞান থাকবে গ্রাম শহরের মানুষদের সহজ করে দ্বীন বুঝানোর মতো
জ্ঞান।
10.
শিক্ষিত কর্মীদের জ্ঞান
থাকবেঃ
-
বুদ্ধিজীবি শ্রেণীর উপর
প্রভাব বিস্তার করার মতো জ্ঞান।
-
শিক্ষিত লোকদের
সন্দেহ-সংশয় দূর করে দেয়ার মতো জ্ঞান।
-
বিরুদ্ধবাদীদের যুক্তপূর্ণ
ও সন্তোষজনক জবাব দেয়ার মতো জ্ঞান।
-
জীবন সমস্যার ইসলামী
সমাধান বলে দেয়ার মতো জ্ঞান।
-
যে সমাজ ভাঙ্গা হবে, সেই সমাজে নতুন কিছু
নির্মানের জ্ঞান।
দুইঃ ইসলামের প্রতি অবিচল বিশ্বাসঃ
·
অধ্যাপক
গোলাম আযম রাহি. গুণাটাকে বলেছেনঃ ইয়াকীন।
·
সহজ কথায়
আমরা এটাকে বলবোঃ দ্বীনের প্রতি নির্ভুল বিশ্বাস। আর
তাহলোঃ
1. যা
কায়েম করবেন,
-
তার প্রতি অবিচল ঈমান রাখা।
-
তা সত্য ও নির্ভূল-এ ব্যাপারে হতে হবে
সংশয়হীন।
2. চিন্তার
ক্ষেত্রে হবে একাগ্র।
3. কাজ
করা সম্ভব নয়,
-
সন্দেহ, সংশয় ও দোদূল্যমানতা নিয়ে।
-
মানসিক সংশয়, বিশৃংখল চিন্তা ও দৃষ্টিভংগী
নিয়ে।
4. হতে
হবে নিঃশংস ভাবে আল্লাহর উপর বিশ্বাসী হয়ে।
5. কুরআনের
আলোকে, আল্লাহর উপর ঈমান আনতে হবে-তার গুণাবলী, ক্ষমতা, অধিকারে তথা আল্লাহর
সার্বভৌমত্বে।
6. কুরআনের
বর্ণিত চিত্র অনুযায়ী আখেরাতকে বিশ্বাস করতে হবে।
7. রেসালাতে
বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে এমন ভাবে যে,
মুহাম্মদ সা. দেখানো পথই
একমাত্র সত্যপথ, তার বিরোধী তার পথের সাথে সমঞ্জস্য নেই এমন সকল পথই ভ্রান্ত পথ।
8.
মানুষে সকল চিন্তা ও পদ্ধতি যাচাই করতে হবে
স্বীকৃত মানদন্ডে। আর তা হলো কুরআন ও সুন্নাহ।
-
এই সকল বিষয়গুলোতে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করতে
হবে।
-
যার মাঝে এ ব্যাপারে সামান্য দোদূল্যমান
অবস্থা আছে, তাকে বিল্ডিং এর কারিগরি করার আগে নিজের দূর্বলতার চিকিৎসা করা দরকার।
তিনঃ চরিত্র ও কর্মঃ
·
অধ্যাপক
গোলাম আযম রাহি. গুণাটাকে বলেছেনঃ আমল।
·
বাংলাদেশ
কুরআন সুন্নাহ পরিষদ বিষয়টাকে বলে;
কথা কাজের গরমিল পরিহার
করে খাটি মুসলিম হওয়ার আহবান। আর তা হলোঃ
1. কথা অনুযায়ী কাজ।
2. সত্যকে অনুসরণ।
3. বাতিল থেকে দূরে অবস্থান।
4. দ্বীন
অনুযায়ী নিজের চরিত্র গড়া, কাজ করা।
5. দাওয়াত
দেয়ার আগে নিজে আনুগত্য করা।
6. আমর
বিল মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকারের কাজে কোন চাপের মুখাপেক্ষী না হওয়া।
7. আল্লাহর
সন্তুষ্টি পাওয়া যাবে, কেবল এই কারণে কোন কাজ করা।
8. কোন
কাজ না করলে, তা আল্লাহর অসন্তুষ্ট হবেন এই কারণে না করা।
9. স্বাভাবিক
এবং অস্বাভাবিক, অনুকূল ও প্রতিকুল সকল অবস্থায় সংগ্রাম করে সত্য পথে ঠিকে থাকা।
10. যার
মাঝে উপরোক্ত গুণ নাই, সে দ্বীন কায়েমের আন্দোলনের সাহায্যকারী-সে কর্মী নয়।
·
দ্বীনের পথে সাহায্যকারীঃ
-
যে ইসলামের জন্য সামান্য ভক্তি, শ্রদ্ধা ও দরদ
রাখে।
-
যে ইসলাম অস্বীকারকারী, কিন্তু দ্বীনের পথে
প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিতে তৎপর নয়।
-
এই ধরণের কোটি কোটি সাহায্যকারী দিয়ে দ্বীন
কায়েম হতে পারে না।
-
এই ধরণের কোটি কোটি সাহায্যকারী দিয়ে
জাহিলিয়াতের বিকাশ রুদ্ধ হতে পারে না।
·
দ্বীনের পথে কর্মীঃ
-
যারা জ্ঞান, বিশ্বাস, চরিত্র ও কর্মশক্তি
সমন্বয় করে চলবে।
-
যারা বাহিরের উস্কানী ছাড়াই নিজেদের
আভ্যন্তরিন তাগিদে দ্বীনের চাহিদা ও দাবী পুরণ করবে।
-
আর এই ধরণের কর্মী যখন ময়দানে নামে, তখন
মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে অসংখ্য সমর্থক ও সাহায্যকারী পাওয়া যায়।
চারঃ দ্বীন হচ্ছে জীবনোদ্দেশ্যঃ
·
অধ্যাপক
গোলাম আযম রাহি. গুণাকে বলেছেনঃ নিয়াত।
·
নিয়ত হলোঃ
1. আল্লাহর বাণী বুলন্দ করা।
2. দ্বীনের প্রতিষ্টা কেবল জীবনের আকাংখার পর্যায়ভুক্ত না হওয়া।
3. দ্বীন প্রতিষ্টাকে জীবনের উদ্দেশ্যে পরিণত করা।
·
আমাদের সমাজে এক ধরণের লোক
আছেঃ
-
যারা দ্বীন সম্পর্কে অবগত হয়, দ্বীনের উপর
ঈমান রাখে, দ্বীন অনুযায়ী কাজ করে।
কিন্তুঃ
-
তাদের কাছে দ্বীন কায়েমের সংগ্রাম বা
প্রচেষ্টা তাদের জীবনের লক্ষ্য বিবেচিত হয়না।
-
তারা সততা ও সৎকর্ম করে, সাথে দুনিয়ার কাজ
কারবারে লিপ্ত থাকে।
-
এই ধরণের লোক নিঃসন্দেহে সৎলোক। দ্বীন কায়েম হলে
তারা রাষ্ট্রের ভাল নাগরিক হবে।
কিন্তু যেখানেঃ
-
জাহেলী ব্যবস্থা চারদিক আচ্ছন্ন করে রাখে।
-
জাহেলী জীবন ব্যবস্থা সরিয়ে সে জায়গায় ইসলামী
জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার প্রশ্ন দেখা দেয়।
সেখানেঃ
-
এই ধরণের লোকের উপস্থিতি কোন কাজে আসে না।
-
প্রয়োজন, এমন লোক যারা এই কাজকে জীবনের
উদ্দেশ্যরূপে বিবেচনা করে।
-
এই সব লোক দুনিয়াবী সকল কাজ করে বটে, কিন্তুঃ
o
তাদের জীবন কেবল এই উদ্দেশ্যের চারদিকে আবর্তন
করে।
o
যে উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তারা হয় দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।
o
তাদের সময়-সামর্থ, ধন-মাল, দেহ-প্রাণ সকল
শক্তি ও মানসিক যোগ্যতা ব্যয় করতে তারা প্রস্তুত।
o
জীবন উৎসর্গ করার প্রয়োজন দেখা দিলে তারা হয়না
পিছপা।
o
এধরণের লোকেরাই জাহিলিয়াতের আগাছা কেটে
ইসলামের জন্য পথ পরিস্কার করতে পারে।
উপসংহারঃ
-
উপরের এই গুণ গুলো হলো মৌলিক গুণ-যা ইসলামী
জীবন ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় রত সকল ব্যক্তির জীবনে ব্যক্তিগত ভাবে থাকা
উচিত।
-
এই গুণ গুলোর গুরুত্ব অপরিসীম-এই গুণাবলীর
অধিকারীদের সমাবেশ ছাড়া ইসলামী জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কাজ সম্পাদন করার কল্পনাই
করা যায়না।
-
এই ধরণের গুণাবলী সম্পন্ন ব্যক্তিরা যদি কিছু
করতে চায়, তাহলে কাজ করতে হবে দলভুক্ত হয়ে। সে দলের নাম যাই হোক না কেন।
-
নিছক ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় সমাজ ব্যবস্থায় কোন
পরিবর্তন আনা যায় না। তাই প্রয়োজন বিক্ষিপ্ত প্রচেষ্টার স্থলে সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা।
- “সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টাই একটি সর্ববাদী সত্য কথা” মনে করে এপর্যায়ে আলোচিত হবে এই ধরণের দলের মাঝে দলীয় যেসব গুণ থাকা প্রয়োজন, সে বিষয়ে।
দলীয় গুণাবলী
1.
ভ্রাতৃত্ব ও ভালবাসা।
2.
পারস্পরিক পরামর্শ।
3.
সংগঠন ও শৃংখলা।
4.
সংস্কারের উদ্দেশ্যে সমালোচনা।
একঃ ভ্রাতৃত্ব ও ভালবাসাঃ
·
ইসলামী আন্দোলনের জন্য যে
দল, সে ধরণের দলের প্রত্যেক সদস্যঃ
-
ব্যক্তিগত ভাবে পরস্পরের জন্য ত্যাগ স্বীকার
করা।
o
যেমন বিল্ডিং এর একটা ইট অন্যটার সাথে মজবুত
ভাবে লেগে থাকে। এর এর ফলে বিল্ডিং মজবুত হয়।
-
সম্পর্কে ইস্পাত নির্মিত প্রাচীরের ন্যায়
হওয়া।
-
এজন্য প্রয়োজনঃ
১. আন্তরিক ভালবাসা।
২. পারস্পরিক কল্যাণ
আকাংখা।
৩. সহানুভূতি।
৪. পারস্পরিক ত্যাগ।
-
এজন্য ত্যাগ করতে হবেঃ
১. ঘৃণাকারী মন।
২. মোনাফেকী মেলামেশা।
৩. স্বার্থবাদী ঐক্য।
৪. ব্যবসায়িক রিলেশনের
ন্যায় সম্পর্ক।
৫. পার্থিব স্বার্থ।
·
মনে রাখতে হবে,
-
যখন একদল নিঃস্বার্থ চিন্তার অধিকারী ও
জীবনোদ্দেশ্যের প্রতি প্রগাঢ় অনুরাগী মানুষ একত্রিত হয়, চিন্তার নিঃস্বার্থতা ও
উদ্দেশ্যের প্রতি অনুরাগ নিজেদের মধ্যে আন্তরিকতা ও ভালবাসা সৃষ্টি করে। তখনই কেবল
মজবুত ও শক্তিশালী দল সৃষ্টি হয়।
-
দলের অবস্থা যখন এমন হয়,
o
তখন দল হয় সীসাঢালা প্রাচীরের মতো,
o
শয়তান এতে ফাটল ধরাতে হয় ব্যর্থ।
o
আর কোন বিরোধীতার তুফান দলকে টলাতে পারে না।
দুইঃ পারস্পরিক পরামর্শঃ
·
দলকে কাজ করতে হবে
পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে এবং পরামর্শের নিয়ম নীতি মেনে।
-
যেখানে সকলে নিজের ইচ্ছামতো চলে, এটাকে দল বলে
না-বলে জনমন্ডলী।
-
জনমন্ডলী কোন কাজ সম্পন্ন করতে পারে না।
-
এক ব্যক্তি বা কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তির
গ্রুপ বেশী দিন টিকে থাকতে পারেনা।
-
পরামর্শ করা হলো বহু মানুষ বিতর্ক আলোচনায় অংশ
নেয়া। এতে করে ভাল-মন্দ সকল দিক সামনে আসে।
·
পরামর্শ করা হলে দুইটি
উপকারঃ
1. প্রত্যক্ষ
বা পরোক্ষ পুরো দলের পরামর্শ কার্যকারী থাকে। কেউ চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত মনে করে
না।
2. পুরো
দল সমস্যা ও ঘটনাবলী অনুধাবন করতে পারে। সবাই কাজের প্রতি আগ্রহী হয়। সবাই
সিদ্ধান্তকে নিজের সিদ্ধান্ত মনে করে।
·
পরামর্শের নিয়মনীতিঃ
1. সকলে
ঈমানদারীর সাথে নিজের মত পেশ করবে।
2. কেউ
মনের মাঝে কোন কথা লুকিয়ে রাখবে না।
3. কোন
প্রকার জিদ, হঠধর্মিতা ও বিদ্বেষের আশ্রয় নেবে না।
4. সংখ্যাধিক্যের
মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে।
5. নিজের
মতের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত হলেও সিদ্ধান্ত কার্যকারী করতে সানন্দে অগ্রসর হবে।
তিনঃ সংগঠন ও শৃংখলাঃ
·
সংগঠন, শংখলা,
নিয়মানুবর্তিতা, পারস্পরিক সহযোগিতার উপকারিতা হলো এটি একটি টিমের মতো কাজ করে।
·
একটা সংগঠন ব্যর্থ হয়,
যখন সব ধরণের গুণাবলী
থাকার পরও যখন নিজেদের সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা গুলো বাস্তবায়ন করতে পারে না।
·
আর এই অবস্থা কেবল তখন হয়,
যখন সংগঠন, শৃংখলা আর সহযোগিতার অভাব দেখা দেয়।
·
ধ্বংসের কাজ হৈ হোল্লোড়
ইত্যাদির মাধ্যমে করা যায়, কিন্তু সৃষ্টির কাজ করতে প্রয়োজন সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা।
·
সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা কি?
-
পুরো দলের একসাথে দলের গৃহিত নীতি-নিয়মের
অনুসারী হওয়া মানে সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা।
-
যে পর্যায়ে যাকে দায়িত্বশীল করা হয়, সে
পর্যায়ে তার নির্দেশ মেনে চলা।
-
সকল সদস্যকে কর্তব্য পরায়ণ হওয়া।
-
যাকে যখন যে দায়িত্ব প্রদান করা হয়, তা
নিষ্ঠার সাথে সম্পাদন করা।
-
সম্মিলিত কাজ করার দায়িত্ব যাদের উপর, তারা
পরস্পর সহযোগী হওয়া।
·
দলের উদাহরণ হলো একটা
মেশিনের মতো,
-
যাতে কোন এক জায়গায় সুইচ দেয়ার সাথে সাথে সকল
কলকবজা চলতে শুরু করবে।
-
এই ধরণের মানের দল যে কোন কাজ সম্পাদন করতে
পারে।
-
যে দল মেশিনের মতো স্পীডি নয়, তা চলা না চলা
সমান পর্যায়ে।
চারঃ সংস্কারের উদ্দেশ্যে সমালোচনাঃ
·
দলীয় গুণাবলীর
সর্বশেষ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলোঃ দলের মাঝে সংস্কারের উদ্দেশ্যে
সমালোচনা করার যোগ্যতাও থাকতে হবে।
·
অন্ধ অনুসারী এবং সরলমনারা
দিন শেষে সকল কাজ বিকৃত করে যায়, তারা যতই সঠিক স্থান থেকে কাজ শুরু করুক অথবা যতই
নির্ভূল উদ্দেশ্য লক্ষ্য সামনে নিয়ে অগ্রসর হোক।
·
কারণঃ
-
মানবিক কাজে দূর্বলতার প্রকাশ স্বাভাবিক
ব্যাপার।
-
যেখানে দূর্বলতার প্রতি নজর রাখার কেউ থাকে
না, সেখানে গাফলতি বা অক্ষমতাপূর্ণ নিরবতার কারণে সকল ধরণের দূর্বলতা, নিরুদ্বেগ ও
নিশ্চিতন্ততার আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়।
-
যেখানে দূর্বলতা চিহ্নিত করা দোষ মনে করা হয়,
সেখানে গাফলতি বা অক্ষমতাপূর্ণ নিরবতার কারণে সকল ধরণের দূর্বলতা, নিরুদ্বেগ ও
নিশ্চিতন্ততার আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়।
-
সেখানে দূর্বলতা, নিরুদ্বেগ ও নিশ্চিন্ততা
ধীরে ধীরে বেড়ে দ্বিগুন চারগুণ হয়।
·
সুস্থ-সবল অবয়ব ও রোগমুক্ত
দেহ সম্পন্ন দলের জন্য সমালোচনার অভাব-এর চাইতে ক্ষতিকর আর কিছু নাই।
·
সমালোচনামূলক চিন্তাকে
দাবিয়ে দেয়ার চাইতে বড় অকল্যাণ আকাংখা আর নেই।
·
সমালোচনার উপকারিত হলোঃ
-
দোষ-ত্রুটি যথা সময়ে প্রকাশিত হয়।
-
দোষ-ত্রুটি সংশোধনের প্রচেষ্টা চালানো যায়।
·
সমালোচনার শর্ত হলোঃ
-
সমালোচনা দোষ দেখাবার উদ্দেশ্যে হবে না।
-
সমালোচনা হবে সংশোধনের উদ্দেশ্যে পূর্ণ
আন্তরিকতা সহকারে।
-
সমালোচনা হবে যথার্থ সমালোচনার পদ্ধতিতে।
-
সমালোচনায় সদুদ্দেশ্যে হলেও সমালোচকের বেয়াড়া,
বেকায়দা, অসময়োচিত ও বাজে সমালোচনাও দলকে একই ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন করতে পারে।
পূর্ণতাদানকারী গুণাবলী
·
উপরে যা আলোচনা হয়েছে,
-
তা সবই ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত সংগঠনের
পরিহার্য গুণাবলী।
-
তা সবই প্রাথমিক ও মৌলিক গুণাবলী।
-
এ সব গুণাবলী সর্বনিম্ন
নৈতিক পূঁজি-যা ছাড়া সমাজ সংশোধন ও ইসলামী জীবনব্যবস্থা পরিগঠনের কাজ শুরু করা
যায়না। যেমনঃ নূন্যতম পূঁজি ছাড়া ব্যবসা শুরু করা যায় না।
·
তাদের দ্বারা ইসলামী
সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা চিন্তা করা যায় না,
-
যারা নিজেরা ইসলাম সম্পর্কে অবগত নয়।
-
যারা নিজেরা এ ব্যাপারে মানসিক নিশ্চিন্ততা ও
একাগ্রতা লাভ করতে পারেনি।
-
যারা দ্বীনকে নিজেদের চরিত্র, কর্ম ও বাস্তব
জীবনের ধর্মে পরিণত করতে সক্ষম হয়নি।
-
যারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে নিজেদের
জীবনের উদ্দেশ্যে পরিণত করেনি।
·
উপরোক্ত গুণাবলী
তৈরী হলেও তা কেবল ভাল মানুষের একটা সমাবেশ হবে, কিন্তু সে সমাবেশ কোন ফল দান
করবেনা, যদি না-
-
তারা পরস্পরের সাথে সংযুক্ত না হয়।
-
তাদের মাঝে সহযোগিতা, শৃংখলা ও সংগঠন না থাকে।
-
তারা যদি মিলেমিশে কাজ করার রীতিতে অভ্যস্ত না
হয়।
-
তারা যদি পারস্পরিক পরামর্শ ও মুহাসাবার
পদ্ধতি সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে।
·
বিধায়, উপরে বর্ণিত
ব্যক্তিগত চারটি গুণাবলী এবং সামষ্টিক চারটি গুণাবলী-এ গুলো
হলো কাজ শুরু করার প্রাথমিক পূঁজি-একথা ভালভাবে অনুধাবন করতে হবে।
·
এখন আলোচিত হবেঃ এই কাজের
বিকাশ ও সাফল্যের জন্য অপরিহার্য গুণাবলী নিয়ে। আর তাহলো ৫টিঃ
1.
খোদার সাথে সম্পর্ক ও আন্তরিকতা।
2.
আখেরাতের চিন্তা।
3.
চরিত্র মাধুর্য।
4.
ধৈর্য।
5.
প্রজ্ঞা।
একঃ খোদার সাথে সম্পর্ক ও আন্তরিকতাঃ
·
এটা পূর্ণতাদানকারী গুণাবলীর
মাঝে প্রথম গুণ।
·
দুনিয়ার যত কাজ আছে, তা
সম্পাদন করতে আল্লাহকে বিশ্বাস করা বা না করা শর্ত নয়। আল্লাহকে অস্বীকার করে
পার্থিব সাফল্য লাভের সম্ভাবনা আছে।
-
এসব কাজের উদ্দেশ্যও আল্লাহকে রাজী ও খুশী করা
নয়।
-
যেমনঃ ব্যক্তি, পরিবার, গোত্র, জাতি বা দেশের
জন্য কাজ।
-
এর মাধ্যমে ব্যক্তিগত স্বার্থ এবং ব্যক্তিগত
লাভের সম্ভাবনা আছে।
·
ইসলামী জীবন ব্যবস্থা
কায়েম করা এই ধরণের কাজ নয়, এটা এইসব কাজের সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী কাজ।
-
যতক্ষণ না মানুষের সম্পর্ক আল্লাহর সাথে যথাযথ
শক্তিশালী না হবে, গভীর না হবে, একমাত্র আল্লাহর জন্য না হবে-ততক্ষণ পর্যন্ত এ
কাজে কোন ধরণের সাফল্য সম্ভব নয়।
·
আল্লাহর দ্বীনকে কায়েম
করতে হলেঃ
-
যার দ্বীন তার জন্য সবকিছু করতে হবে।
-
একমাত্র তার সন্তুষ্টিই হবে একমাত্র উদ্দেশ্য।
-
তার সাথে ভালবাসাই এই কাজে একমাত্র
অনুপ্রেরণা।
-
তার সাহায্য ও সমর্থনের উপর আস্থা রাখতে হবে।
-
তার কাছেই কেবল পুরস্কারের আশা করতে হবে।
-
আনুগত্য হবে কেবল মাত্র তার।
-
হেদায়াত ও নসিহত হবে একমাত্র তার।
-
মন আচ্ছন্ন থাকবে তার কাছে জবাবদিহিতার ভয়ে।
-
আর এই সব কিছুতে কেবলমাত্র তিনি, একমাত্র
তিনি, শুধু মাত্র তিনি হবেন। এতে কেউ অংশীদার হবেন না।
·
এমন অবস্থা না হলে কাজ
যথার্থ পথ হতে হবে বিচ্যুত। আর এতে করে অন্য কিছু কায়েম হতে পারে, কিন্তু দ্বীন
কায়েম হতে পারে না।
দুইঃ আখেরাতের চিন্তাঃ
·
পূর্ণতাদানকারী গুণাবলীর
দ্বিতীয়টি হলো আখিরাতের চিন্তা।
·
মুমিনের কাজের জায়গা হলো
দুনিয়া। অতএব, যা কিছু করার তা দুনিয়াতেই করতে হবে।
-
মুমিন দুনিয়াতে কাজ করবে, কিন্তু দুনিয়ার জন্য
কাজ করবে না-করবে আখেরাতের জন্য।
-
মুমিন দুনিয়ার ফলাফলের জন্য পাগলপারা হবে না-হবে
আখেরাতের জন্য।
-
মুমিন সেসব কাজ করবে, যা আখেরাতের জন্য লাভ
জনক। মুমিন সেসব কাছ ছাড়বে, যা আখেরাতের জন্য ক্ষতিকারক।
-
যে সব লাভ আখেরাতের জন্য ক্ষতিকর তা ছাড়বে, আর
যে সব ক্ষতি আখেরাতের জন্য লাভজনক তা ধরবে।
-
মুমিনের একমাত্র চিন্তা হবে আখেরাতের শাস্তি ও
পুরস্কার। দুনিয়ার শাস্তি আর পুরস্কার মুমিনের কাছে বিবেচ্য বিষয় নয়।
-
মুমিনের এই ঈমান থাকবে যে, সে দুনিয়ায় সফল হোক
বা ব্যর্থ, প্রশংসনীয় হোক বা নিন্দনীয়, পুরস্কৃত হোক বা পরীক্ষার সম্মুখীন হোক,
সর্বাবস্থায় সে আল্লাহর নিকট পুরস্কৃত হবে। আখেরাতের সফলতাই তার মূল সাফলতা।
·
এই ধরনের দৃষ্টিভংগী ছাড়া
মানুষের পক্ষে নির্ভূল লক্ষ্যের দিকে এক পা অগ্রসর হওয়াও সম্ভব নয়।
·
দুনিয়ার স্বার্থ যদি
সামান্যও মিশ্রিত হয়, তা পদস্খলন ছাড়া উপায় নাই।
-
দুনিয়ার স্বার্থে যারা কাজ করে, তারা সামান্য
কয়েকটি আঘাতেই হয় হিম্মত হারা।
-
দুনিয়ার স্বার্থ যাদের মনে স্থান পায়, তাদের
দৃষ্টিভংগীর পরিবর্তন হয়ে যায় সাফল্যের কোন না কোন পর্যায়ে।
তিনঃ চরিত্র মাধুর্যঃ
·
উপরের যে গুণ গুলো বলা হলো
তার প্রভাবে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাকে বিজয়ী শক্তিতে পরিণত করে চরিত্র মাধুর্য।
·
আল্লাহর পথে যারা কাজ
করবেন, তাদের উদার মন আর বিশাল হিম্মতের অধিকারী হবে হবে। তাদেরকে হতে হবেঃ
-
সৃষ্টির প্রতি সহানুভূতিশীল।
-
মানবাতর প্রতি দরদী।
-
ভদ্র ও কোমল স্বভাব সম্পন্ন।
-
আত্মনির্ভরশীল।
-
কষ্টসহিষ্ণু।
-
মিষ্টভাষী।
-
সদালাপী।
-
তাদের দ্বারা কারো ক্ষতি হবে এমন ধারণা কেউ
করবেনা।
-
তাদের দ্বারা কল্যাণ ও উপকারের কামনা করবে।
-
সন্তুষ্ট থাকবে যা পেয়েছে তার চেয়ে কমের উপর।
-
পাওনার চেয়ে বেশী দিতে প্রস্তুত থাকবে।
-
মন্দের জবাব দেবে ভাল দিয়ে অথবা মন্দ দিয়ে নয়।
-
নিজ দোষ-ত্রুটি স্বীকার করবে।
-
অন্যের গুণাবলীর কদর
করবে।
-
অন্যের দূর্বলতার প্রতি নজর না দেবার মতো বড়
দিলের অধিকারী হবে।
-
অন্যের দোষ-ত্রুটি ও বাড়াবাড়ি মাফ করে দেবে।
-
প্রতিশোধ নেবেনা।
-
সেবা নিয়ে নয় বরং দিয়ে আনন্দিত হবে।
-
নিজের স্বার্থ নয়, অন্যের ভালোর জন্য কাজ
করবে।
-
দায়িত্ব পালন করবে প্রশংসা পাবার অপেক্ষা না
করে।
-
দায়িত্ব পালন করবে নিন্দাবাদের তোয়াক্কা না
করে।
-
আল্লাহ ছাড়া অন্য কারা কাছে পুরস্কারের দিকে
নজর দেবে না।
-
বল প্রয়োগে দমন করা যাবে না।
-
ধন-সম্পদ দিয়ে ক্রয় করা যাবে না।
-
সত্য ও ন্যায়ের সামনে নির্দ্বিধায় ঝুঁকে পড়বে।
-
শত্রুরাও বিশ্বাস রাখবে।
-
ভদ্রতা ও ন্যায়নীতি বিরোধী কাজ করবে না।
·
উপরের এই সব গুণাবলী
মানুষের মন জয় করে নেয়।
·
এই গুণাবলী গুলোঃ
-
তলোওয়ারের চাইতে ধারালো, হীরা, মনি-মুক্তার
চেয়ে মুল্যবান।
-
এই সব গুণাবলী অর্জনকারী তার চারপাশের এলাকার
উপর বিজয় লাভ করে।
·
আর দল যদি এই সব গুণাবলী অর্জন
করে নেয়, আর সুসংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা চালায়, তাহলেঃ
-
দেশের পর দেশ তাদের কলতলগত হয়।
-
দুনিয়ার কোন শক্তি তাদেরকে পরাজিত করবে পারে
না।
চারঃ ধৈর্যঃ
·
এই গুণটাকে বলা হয়
সাফল্যের চাবিকাঠি।
-
আল্লাহর পথে যারা কাজ করে তাদেরকে ধৈর্যের সকল
অর্থের দিক দিয়ে ধৈর্যশীল হবে হয়।
·
ধৈর্যের পাঁচটি অর্থ
রয়েছেঃ
1.
তাড়াহুড়া না করা, নিজের
প্রচেষ্টার ত্বরিত ফল লাভের জন্য অস্থির না হওয়া এবং বিলম্ব দেখে হিম্মত হারিয়ে না
বসা।
-
যে ধৈর্যশীল,
o
সে সারাজীবন একটা উদ্দেশ্য সম্পাদনের জন্য
অনবরত পরিশ্রম করতে থাকে।
o
বিরতিহীন ব্যর্থতার পরও পরিশ্রম থেকে বিরত হয়না।
-
মানব সংশোধন আর জীবন পরিগঠনের কাজ সীমাহীন
ধৈর্যের মুখাপেক্ষী।
-
বিপুল ধৈর্য ছাড়া মানব সংশোধন আর জীবন
পরিগঠনের কাজ সম্পাদন সম্ভব নয়।
2.
তিক্ত স্বভাব, দূর্বল মত ও
সংকল্পহীনতার রোগে আক্রান্ত না হওয়া।
-
ধৈর্যশীল ভেবে চিন্তে পথ অবলম্বন করে, তারপর
তাতে অবিচল থাকে। একাগ্র ইচ্ছা ও সংকল্পের
পূর্ণ শক্তি নিয়ে অগ্রসর হয়।
3.
বাধা বিপত্তির মোকাবেলা
করা এবং শান্তচিত্তে লক্ষ্য অর্জনের পথে যাবতীয় দূঃখ কষ্ট বরদাশত করা।
-
ধৈর্যশীল সকল ধরণের ঝড়ে, পর্বত প্রমাণ তরঙ্গে
হিম্মত হারা হয় না।
4.
দূঃখ-বেদনা, ভারাক্রান্ত ও
ক্রোধান্বিত না হওয়া ও সহিষ্ণু হওয়া।
-
ব্যক্তিগত সমাজ সংশোধন ও পরিগঠনের কাজে কিছু
ভাংগার কাজ অপরিহায্য হয়ে পড়ে।
-
ভাংতে গেলে বিরোধীতা আসে।
-
এই কাজে গাল খেয়ে হাসবার, নিন্দাবাদ হজম করার
ক্ষমতা রাখতে হয়। দোষারোপ, মিথ্যা অপবাদ ও প্রচারণা এড়িয়ে চলতে হয়। স্থির চিত্তে,
ঠান্ডা মাথায় নিজের কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়।
-
এমন অবস্থায় এই ধরণের ধৈর্য ধারণ না করতে
পারলে এপথে পা না বাড়ানোই উত্তম।
-
এই পথ কাঁটা বিছানো পথ।
-
এই পথে প্রতিটি কাটা দংশন করার জন্য রেডি হয়ে
আছে।
-
অন্য যে কোন পথে বাঁধা ছাড়া অগ্রসর হওয়া যায়,
কিন্তু এই পথে এক ইঞ্চি পথ সামনে এগুতে দেয়া হয়না।
-
এই অবস্থায় চলতে পথে কাঁটা ছাড়াতে ব্যস্ত হলে
চলবে না।
-
এই পথে এমন মানুষের প্রয়োজনঃ
যারা কাপড়ে কাঁটা লাগলে
কাঁটা অংশের সাথে কাপড় রেখে সামনে অগ্রসব হবে।
-
বিরোধীতা কেবল বিরোধীদের পক্ষ থেকে নয়,
নিজেদের সহযোগীদের পক্ষ থেকেও আসে। যেমনঃ
তিক্ত ও বিরক্তিক বাক্য প্রয়োগ।
-
সহযোগীদের ব্যাপারেও ধের্য ও সহিষ্ণুতার পরিচয়
দিতে হবে। নতুবা পুরো দল পথভ্রষ্ট হবে।
5.
সকল প্রকার ভয়ভীত ও
লোভ-লালসার মোকাবেলায় সঠিক পথে অবিচল থাকা, শয়তানের উৎসাহ প্রদান ও নফসের
খাহেশাতের বিপক্ষে নিজের কর্তব্য সম্পাদন করা।
-
হারাম হতে দূরে থাকা।
-
নফসের খায়েশের বিপক্ষে নিজের কাজ সম্পাদন করাা।
-
গোনাহের পথে যত আরাম, লাভ সব প্রত্যাখ্যান
করা।
-
নেকী আর সততার পথে সকল ক্ষতি ও বঞ্চনা বরণ
করা।
-
দুনিয়াপুজারীদের আরাম আয়েশ দেখে লোভ বা আক্ষেপ
না করা।
-
পথ প্রশস্ত, সাফল্য হাতের মুঠোয় পেয়েও দুনিয়ার
স্বার্থকে বাদ নিয়ে নিশ্চিন্ততার সাথে লক্ষ্যের পানে চলা এবং প্রাপ্তিতে সন্তুষ্ট
থাকা।
·
আমাদের কাজের মাঝে কোন দিক
দিয়ে ধৈর্যহীনতা দেখা দিলে আমাদেরকে তার কুফলের সম্মুখীন হতে হবে।
পাঁচঃ প্রজ্ঞাঃ
·
যার উপর নির্ভর করে কাজের
সাফল্য।
·
সারা দুনিয়ায় যে সব
জীবস্থা প্রতিষ্ঠিত রয়েছেঃ
-
তা চালাচ্ছে উন্নত পর্যায়ের বৃদ্ধিজীবি ও
চিন্তাশীল লোকেরা।
-
তাদের সাথে আছে ব্যক্তিত উপায় উপকরণ, বুদ্ধি,
চিন্তাশক্তি এবং জ্ঞান বিজ্ঞানের ক্ষমতা।
·
প্রতিষ্ঠিত এসব জীবন
ব্যবস্থ্যার মোকাবিলায় অন্য একটা জীবন ব্যবস্থ্যা কায়েম ও চলমান রাখা-এটা ছেলে
খেলা নয়-সাধারণ ব্যাপার নয়।
·
ইসলামী জীবন ব্যবস্থা
কায়েমের জন্য কেবল সরলমনা, চিন্তা ও তীক্ষ্ণবুদ্ধি বিবর্জিত লোকদিয়ে সম্ভব নয়। তারা যতই সৎ নেক দিল হোন।
·
ইসলামী জীবন ব্যবস্থ্যা
কায়েমের জন্য প্রয়োজন গভীর দৃষ্টি, চিন্তাশক্তি, বুদ্ধি ও বিবেচনা শক্তি।
·
ইসলামী জীবন ব্যবস্থ্যা
কায়েম করবে তারা, যারা পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিফহাল, বিচার-বিবেচনা ও সিদ্ধান্ত
গ্রহণের ক্ষমতা রাখে, জীবন সমস্যা বুঝার ও সমাধানের যোগ্যতা রাখে।
·
উপরের বলা এই সকল গুণকে
বলে প্রজ্ঞা।
·
প্রজ্ঞা হলোঃ
মানবিক মনস্তত্ব অনুধাবন
করা এবং সে অনুযায়ী ব্যবহার, মনের উপর দাওয়াতের প্রভাব বিস্তার করে লক্ষ্য অর্জনের
পদ্ধতি অবগত হওয়া।
-
সকল রোগির জন্য একই ঔষধ নয়, সকল শত্রুর জন্য
একই লাঠি নয়।
-
মেজাজ ও রোগ অনুযায়ী চিকিৎসা।
-
ব্যক্তি, শ্রেণী ও দলের অবস্থা অনুধাবন করে
ব্যবস্থা গ্রহণ।
·
প্রজ্ঞা হলোঃ
কাজ ও কাজের পদ্ধতি জানা
এবং বাস্তবায়নে বাধা-বিপত্তি, প্রতিবন্ধকতা-বিরোধিতার মোকাবেলা করা।
·
প্রজ্ঞা হলোঃ
পরিস্থিতির প্রতি নজর
রাখা, সময়-সুযোগ অনুধাবন করা, কোন সময় কি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে তা জানা।
-
অবস্থা না বুঝে অন্ধের মতো সামনে অগ্রসর হওয়া,
অসময়োচিত কাজ করা, কাজের সময় ভূল করা-ইত্যাদি প্রজ্ঞামূলক কাজ নয়-গাফেল ও
বুদ্ধিবিবেচনাহীন মানুষের কাজ।
·
প্রজ্ঞা হলোঃ
দ্বীনের ব্যাপারে সুক্ষ্ণ
তত্ত্বজ্ঞান ও দুনিয়ার কাজে তীক্ষ্ণ দূরদৃষ্টি রাখা।
-
নিছক শরীয়াতের বিধিনিষেধ ও মাসায়েল অবগত হয়ে
উপস্থিত ঘটনাবলীকে সেই আলোকে বিচার করা মুফতির কাজ।
-
বিকৃত সমাজের সংশোধন ও জীবন ব্যবস্থাকে
জাহেলিয়াতের ভিত্তি থেকে সমূলে উপড়ে ফেলে দ্বীনের ভিত্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মুফতির
দৃষ্টিভংগী যথেষ্ট নয়।
- বিধি নিষেধের সাথে তার কারণ, যৌক্তিকতা ও ফলাফল সম্পর্কে অবগত হওয়া, পরিস্থিতি ও সমস্যাকে সে দৃষ্টিতে বিচার করা হলো প্রজ্ঞা।
উপসংহারঃ
·
এতক্ষণ যে সব গুণাবলীর বিবরণ পেশ করা হলো, তার ফিরিস্তি দেখে মানুষ ভীত হয়ে
পড়বে। মানুষ ভাববেঃ
-
আল্লাহর কামেল বান্দা ছাড়া এ কাজ কারো পক্ষে
সম্ভব নয়।
-
সাধারণ মানুষের পক্ষে এতো এতো গুণাবলী
অর্জন সম্ভব নয়।
·
মনে রাখতে হবে,
-
প্রতিটি গুণ প্রত্যেকের মাঝে একসাথে পাওয়া
সম্ভব নয়।
-
কাজের শুরুতেই সকলের মাঝে এই সব গুণ থাকতে
হবে-এটা জরুরী নয়।
·
দ্বীন কায়েমের আন্দোলন
যারা করবেন, তারাঃ
-
এই কাজকে নিছক জাতি সেবার কাজ মনে করবে না।
-
মনোজগত পর্যালোচনা করে কাজ করার জন্য যে সব
গুণাবলী প্রয়োজন, তা আছে কি না তা জানার চেষ্টা করবে।
-
উপাদান থাকলে কাজ শুরু করার জন্য এটাই যথেষ্ট।
-
পরে ধীরে ধীরে তা উন্নত করা পরবর্তী পর্যায়ের
কাজ।
-
বীজ যেমন উপরে গাছ এবং নিচে শেকড়মালার রাজ্য
তৈরী করে, অনুরূপ গুণাবলীর উপাদান যদি থাকে, তাহলে তা ধীরে
ধীরে পূর্ণতায় পৌছবে।
- কিন্তু আদতেই যদি উপাদান না থাকে, তাহলে শত চেষ্টা করেও গুণাগুণ সৃষ্টি হওয়া সম্ভব নয়।
মৌলিক ও অসৎ
গুণাবলী
1.
গর্ব ও অহংকার।
2.
প্রদর্শনেচ্ছা।
3.
ত্রুটিপূর্ণ নিয়ত।
একঃ গর্ব ও অহংকারঃ
·
অহংকার কি?
-
এটি সকল ভাল গুণকে মূলোৎপাটনকারী প্রধান ও
সবচেয়ে মারাত্মক অসৎ গুণ।
-
গর্ব অহংকারঃ যার আরেক নাম আত্মাভিমান, নিজের
শ্রেষ্ঠত্বের প্রকাশ।
-
এটি একটি শয়তানী প্রেরণা ও শয়তানী কাজের
উপযোগী গুণ।
-
শ্রেষ্টত্ব বিষয়টা কেবল আল্লাহর সাথে
সংযুক্ত-যার কারণে এই অসৎ গুণ সাথে নিয়ে কোন সৎকাজ করা যায় না।
-
বান্দার মাঝে শ্রেষ্ঠত্ব বা অহংকার একটি
নির্জলা মিথ্যা বিষয়।
-
অহংকারী ব্যক্তি এবং দল-বঞ্চিত হয় আল্লাহর সকল
প্রকার সমর্থন থেকে।
-
আল্লাহর বান্দার মাঝে অপছন্দ করেন যে বিষয়-তাহলো
এই অহংকার।
-
অহংকার নামক রোগে যে ব্যক্তি আক্রান্ত হয়-সে
সঠিক পথ লাভ করতে পারে না।
-
অহংকারী সব সময় নিজের মুর্খতা ও বির্বুদ্ধিতার
পরিচয় দেয়-সম্মুখীন হয় ব্যর্থতার।
-
অহংকারী ব্যক্তি মানুষের কাছে হয় ঘৃণিত-হারিয়ে
ফেলে নৈতিক প্রভাব।
·
অহংকার কিভাবে প্রকাশ পায়?
যারা সংকীর্ণমনা, তাদের
মনে এ রোগটির অনুপ্রবেশ করে ৩টি বিশেষ পথে। যেমনঃ
প্রথম পথঃ
-
আশপাশের দ্বীনি ও নৈতিক অবস্থার তুলনায়
নিজেদের অবস্থা অনেকটা ভাল হয়ে উঠে।
-
কিছু উল্লেখ্যযোগ্য জনসেবামূলক কাজ সম্পাদন
করে।
-
অন্যের মুখে স্বীকৃতি শুনা যায়।
-
শয়তান তখন ওয়াসওয়াসা প্রদান করে-মহা বুজর্গ
হয়ে গেছো।
-
শয়তানের প্ররোচনায় নিজের মুখে ও কাজের মাধ্যমে
শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করতে থাকে।
-
সৎকাজের অনুপ্রেরণায় কাজ শুরু হলেও ধীরে ধীরে
তা ভূল পথে অগ্রসর হয়।
দ্বিতীয় পথঃ
-
যারা খালিস নিয়তে নিজের এবং মানুষের সংশোধনের
চেষ্টা চালায়।
-
যাদের এই চেষ্টার মাধ্যমে কিছু সদগুণাবলী
অর্জন হয়।
-
যারা এক সময়ে সাধারণ মানুষের মাঝে বিশেষ
বৈশিষ্টের অধিকারী হয়ে যায় এবং তাদের কিছু কিছু বৈশিষ্ট বা জনসেবামূলক কাজ
উল্লেখ্য হয়ে পড়ে।
-
যাদের কাজ গুলো মানুষের সামনে করা হয়, সেই কাজ
গুলো মানুষের দৃষ্টিতে পড়ে অটোমেটিক।
-
এই অবস্থায় যদি মনের লাগম ঢিলা হয়, তাহলে এই
তৎপরতাই শয়তানের প্ররোচনায় অহংকার, আত্মপ্রীতি ও আত্মম্ভরিতায় পরিণত হয়।
তৃতীয় পথঃ
-
বিরোধীরা যখন কাজে বাঁধার সৃষ্টি করে, তখন
তারা ব্যক্তিসত্ত্বার গলদ আবিস্কারের চেষ্টা করে।
-
বিরোধীদের সেই অপতৎপরতার মোকাবেলায় বাধ্য হয়ে
আত্মরক্ষার জন্য নিজের পক্ষ অবলম্বন করে বা নিজের সম্পর্কে কিছু বলতে হয়।
-
এই বলার মাঝে কিছু ঘটনা থাকে, কিছু বাস্তব
সত্য বিষয় থাকে-যার মাধ্যমে নিজের গুণাবলী প্রকাশ হয়ে পড়ে।
-
এই প্রকাশে সামান্য ভারসাম্যহীন হলে তা বৈধতার
সীমা ডিঙিয়ে গর্বের সীমান্তে পৌছে যায়।
- তাই
গর্ব ও অহংকার একটি মারাত্মক বস্তু। প্রত্যেক ব্যক্তি আর দলকে এই সম্পর্কে থাকতে
হবে সতর্ক।
·
গর্ব ও অহংকার থেকে বাঁচার
উপায়ঃ ৪টি
১. বন্দেগীর অনুভূতি।
২. আত্মবিচার।
৩. মহৎ ব্যক্তিদের প্রতি
দৃষ্টি।
৪. দলগত প্রচেষ্টা।
১. বন্দেগীর
অনুভূতিঃ
o
যা সংস্কার ও সংশোধনের জন্য কাজ করবেন, সেই
ব্যক্তি ও দলের মাঝে বন্দেগীর অনুভূতি শুধু থাকবে নয়, বরং জীবিত ও তরতাজা থাকতে
হবে।
o
তাদেরকে মনে রাখতে হবেঃ
-
অহংকার ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ একমাত্র আল্লাহর
গুণ।
-
বান্দার পরিচয় হলো, অসহায়, দীন, অক্ষম।
-
বান্দার যদি কোন সৎগুণ থাকে, তাহলে তা আল্লাহর
মেহেরবানীর ফসল। বিধায় এই গুণগুলো অহংকারের নয়, বরং গুণদানকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতার
বিষয়।
o
এই গুণগুলো পাওয়ার কারণে আল্লাহর প্রতি আরো
দীনতা প্রকাশ করা এবং সামান্য এই মূলধনকে সৎকর্মশীল সেবায় নিযুক্ত করা।
o
এই ধরণের অনুভূতি রাখতে ও করতে পারলে আল্লাহ
আরো মেহেরবানী করবেন এবং মূলধন আরো ফুলে ফেঁপে বড় হয়ে উঠবে।
o
সৎগুণ সৃষ্টির পর অহংকার করলে তা অসদগুণের
পরিণত হয়। যা উন্নতি নয়, অবনতির পথ।
২. আত্মবিচারঃ
o
যে নিজের ভাল গুণ অনুভবের সাথে সাথে নিজের
দূর্বলতা, দোষ ও ত্রুটি বিচ্যুতিগুলো দেখে, সে কখনো আত্মপ্রীতি ও আত্মম্ভরিতার
শিকার হয় না।
o
যার নিজের গোনাহ ও দোষ-ত্রুটির প্রতি নজর
থাকে, ইস্তেগফারে ব্যস্ত থাকার কারণে তার অহংকারের চিন্তা করার সময় থাকে না।
৩. মহৎ
ব্যক্তিদের প্রতি দৃষ্টিঃ
o
দৃষ্টি দিতে হবেঃ
-
নিচের দিকে নয়, উপরের দিকে।
-
যারা নিজের থেকে শ্রেষ্ট ও উন্নত তাদের দিকে।
-
দ্বীন ও নৈতিকতার উন্নত ও মূর্ত প্রতীক যারা,
তাদের দিকে।
-
মুহাসাবা করতে হবেঃ নিজের অবস্থান কোথায়? কত
নিচে?
o
নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার যেমন উন্নতি রয়েছে,
তেমনি অবনতিও রয়েছে সীমাহীন।
-
সবচাইতে খারাপ মানুষও যদি নিচের দিকে দৃষ্টি
দেয়, তাহলে তার চেয়েও হীন খারাপ মানুষ দেখতে পারবে।
-
ঐ ব্যক্তি যখন তার অবস্থা তার নিচের লোকের
অবস্থা থেকে ভাল মনে করে তৃপ্তি অনুভব করে, তখন সে আর তাকে উন্নত করতে পারে না।
-
আর এই অবস্থায় শয়তান তাকে ওয়াসওয়াসা দেয়, আরো
একটু নিচে নামার সুযোগ রয়েছে এমন ধরণের ওয়অসওয়াসা প্রদান করে।
-
আর এই অবস্থা কেবল তারাই চিন্তা করতে পারে,
যারা নিজেদের উন্নতির দুশমন।
o যারা
নিজেদের উন্নতির আকাংখা পোষণ করে-
তারা সব সময় উপরের দিকে
তাকাবে। উন্নতির একধাপ অগ্রসর হলে তার উপরের দিকে তাকাবে। আর এই ভাবে তাকালে তার
মনে গর্ব ও অহংকার তৈরী হয়না, বরং অবনতির অনুভূতি কাটার মতো বিঁধে রয়। আর সেই
কাঁটার ব্যাথ্যা তাকে উন্নতির চরম শিখরে পৌছতে উদ্বুদ্ধ করে।
৪. দলগত
প্রচেষ্টাঃ
o
দলকে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে যাতে সর্বস্তরে
সকল প্রকার গর্ব, অহংকার ও আত্মম্ভরিতা সম্পর্কে অবগত হয়ে তাৎক্ষণিক তার বিরুদ্ধে
ব্যবস্থা নেয়া যায়।
o
এই ব্যবস্থা গ্রহণে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে
মানুষের মাঝে কৃত্রিম দীনতা ও নগন্যতার প্রদর্শণীর রোগ সৃষ্টি না হয়।
o
আত্মম্ভরিতা দুর করার জন্য তার গায়ে কৃত্রিম
দীনতা-হীনতার পর্দা ঝুলানো আরেক ধরণের মারাত্মক অহংকার।
দুইঃ প্রদর্শনেচ্ছাঃ
·
প্রদর্শনেচ্ছা-যা অহংকারের
চেয়েও মারাত্মক, যা সৎকাজকে কুরে কুরে খেয়ে ফেলে।
·
প্রদর্শনেচ্ছা কি?
-
প্রদর্শনেচ্ছা-লোক দেখানোর জন্য, মানুষের
প্রশংসা কুড়াবার জন্য যে কাজ করা হয়।
-
প্রদর্শনেচ্ছা-ব্যক্তির জন্য হতে পারে, দলের
জন্যও হতে পারে, সৎকাজও হতে পারে।
-
প্রদর্শনেচ্ছা-আন্তরিকতা পরিপন্থী কাজ, ঈমান
পরিপন্থী কাজ।
-
প্রদর্শনেচ্ছা-যাকে প্রচ্ছন্ন শিরক গন্য করা
হয়ে থাকে।
·
আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি
ঈমানের দাবী হলোঃ
-
কাজ করা হবে-একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
-
কাজ করা হবে-একমাত্র আখেরাতে পুরস্কারের আশায়।
-
কাজ করা হবে-দুনিয়ার বদলে আখেরাতের ফলাফলের
প্রতি দৃষ্টি রেখে।
·
প্রদর্শনেচ্ছা লক্ষ্যঃ
-
মানুষের সন্তুষ্টি অর্জন।
-
মানুষের পক্ষ থেকে পুরস্কার লাভ।
-
আর এর মানে হলোঃ মানুষকে আল্লাহর শরীক ও
প্রতিদ্বন্দ্বি বানিয়ে ফেলা।
·
এই অবস্থায় মানুষ আল্লাহর
দ্বীনের যে পরিমাণ কাজ করা হোক, নেতৃত্বের যে পর্যায়ে থাকা হোক, সেই কাজ ও খেদমত
কোন অবস্থায়ই আল্লাহর জন্য হবেনা, দ্বীনের জন্য হবে না। আর এই কাজ আল্লাহর কাছে
সৎকাজ হিসাবেও গন্য হবে না।
·
প্রদর্শনেচ্ছার স্বাভাবিক
বৈশিষ্টঃ
-
কাজের চেয়ে কাজের বিজ্ঞাপনের চিন্তা বেশী করা।
-
যে কাজে ঢাকঢোল পেটানো হয়, যা মানুষের প্রশংসা
অর্জন করে, তাকে কাজ মনে করা।
-
যে কাজ নিরব-যার খবর আল্লাহ ছাড়া আর কেউ রাখেন
না, তাকে কাজ মনে না করা।
-
এই ধরণের অবস্থা কাজের পরিমন্ডলকে সীমাবদ্ধ
করে প্রচারযোগ্য কাজ পর্যন্ত। প্রচারের পর সেই কাজের আর কোন খবর থাকে না।
·
প্রদর্শনেচ্ছা রোগ হবার পর
যক্ষারোগ যেমন মানুষের জীবনী শক্তি ক্ষয় করে, তেমন ভাবে মানুষের আন্তরিকতা বিলিন
হতে থাকে।
·
ফলেঃ
-
লোকে দেখবেনা, এমন কাজ করা বা নিজের দায়িত্ব
বা কর্তব্য মনে করে কোন কাজ করা সম্ভব হয়না।
-
সকল কাজকে লোক দেখানোর মর্যাদা ও মৌখিক
প্রশংসা পাবার মূল হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
-
মানুষ যা পছন্দ করে কেবল তা করা হয়।
-
মানুষের ঈমানদারী, কোন কাজ করার পক্ষে মত
দিলেও দুনিয়ার মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা নষ্ট হয়ে যাবে মনে করে তা করা সম্ভব হয়না।
·
প্রদর্শনেচ্ছা নামক ফেতনা
থেকে মুক্ত থাকা তাদের জন্য তুলনামূলক ভাবে সহজ-যারা ঘরের কোণে বসে আল্লাহ আল্লাহ
করে। কিন্তু যারা বৃহত্তর সমাজে প্রবেশ
করে সমাজের সংশোধন, জনসেবা ও সমাজ গঠনমূলক কাজ করেন, তারা প্রদর্শনেচ্ছার বিপদের
মুখে দাড়িয়ে থাকেন।
-
সমাজ সংস্কারের কাজের লোকেদেরকে জনসম্মুখে
প্রকাশিত হয় এমন কাজ করতে হয়, জনগনকে পক্ষে নিতে জনগনের উপর প্রভাব বিস্তার করতে
কাজ করতে হয়। ফলে মানুষ তাদের দিকে এগিয়ে
আসে, তাদের প্রশংসা করে, তাদের বিরোধীতা করে। এমতাবস্থায় আত্মরক্ষার খাতিরে নিজের
ভাল কাজ গুলোর কথা বলতে হয়।
·
বিধায়,
-
খ্যাতির সাথে খ্যাতির মোহ না থাকা।
-
প্রদর্শণী সত্ত্বেও প্রদর্শনেচ্ছা না থাকা।
-
জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও তাকে লক্ষ্যে পরিণত
না করা।
-
প্রশংসাবাণী পাওয়া সত্ত্বেও তা পাওয়া আকাংখা
না করা ছোট্ট কথা নয়।
·
প্রদর্শনেচ্ছাকে কঠোর
পরিশ্রম, প্রচেষ্টা ও সাধনার মাধ্যমে ধমন করতে হয়। সামান্য গাফলতি এই রোগের
জীবানুতে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
·
প্রদর্শনেচ্ছা থেকে বাঁচার
উপায়ঃ ২টি
১. ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা।
২. সামষ্টিক প্রচেষ্টা।
ব্যক্তিগত প্রচেষ্টাঃ
-
ব্যক্তিগত ভাবে অত্যন্ত সংগোপনে কিছু সৎকাজ
করা।
-
নিজে আত্মসমালোচনা করে দেখতে হবে গোপনে কাজ আর
জনসমক্ষের কাজের মাঝে কোনটিতে বেশী আকর্ষণ অনুভূত হয়।
-
যদি জনসমক্ষের কাজের বেশী আকর্ষণ অনুভূত হয়,
তাহলে সাথে সাথে সাবধান হওয়া দরকার-কারণ প্রদর্শনেচ্ছা অনুপ্রবেশ করছে।
-
এজন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করে আশ্রয় চাওয়া,
দৃঢ় সংকল্প হয়ে মনের অবস্থার পরিবর্তনে চেষ্টা করা।
সামষ্টিক প্রচেষ্টাঃ
-
দল তার নিজস্ব সীমানায় প্রদর্শনেচ্ছাকে ঠাই
দেবে না।
-
কাজের প্রচার ও প্রকাশকে যথার্থ প্রয়োজন
পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখা।
-
প্রদর্শনেচ্ছার সামান্য প্রভাব অনুভূত হওয়ামাত্র
পথ রোধ করা।
-
অমুক কাজ করলে জনপ্রিয়তা পাওয়া যাবে-দলীয়
পরামর্শ ও আলোচনায় এমন খাত পরিহার করা।
-
দলের ভিতরে নিন্দাবাদ বা জিন্দাবাদের পরওয়া না
করে কাজ করার মানসিকতা সৃষ্টি।
-
নিন্দাবাদে ভেংগে পড়া, প্রশংসায় উদ্দেলিত
হওয়ার মানসিকতা লালন না করা।
-
সর্বোপরি যদি দলের মাঝে কিছু প্রদর্শনী
মনোবৃত্তির লোক পাওয়া যায়, তাহলে তাদেরকে উৎসাহিত না করে তাদের রোগের চিকিৎসার
ব্যবস্থা করা।
তিনঃ ত্রুটিপূর্ণ নিয়তঃ
·
নিয়তের গলদ-যার উপর কোন
সৎকাজের ভিত্তি স্থাপন করা যায় না।
·
আল্লাহর নিকট সফলকাম হওয়ার
আন্তরিক ও দুনিয়াবী স্বার্থ বিহীন নিয়ত ছাড়া দুনিয়ায় কোন সৎকাজ হতে পারে না।
·
নিয়তের সাথে কোন ব্যক্তিগত
বা দলীয় স্বার্থ থাকা উচিত নয়।
·
নিয়তে কোন ধরণের দুনিয়াবী
স্বার্থ জড়িত থাকবে না। এমন কি কোন ব্যাখ্যা সাপেক্ষ নিজের লাভের আশা জড়িত থাকবে
না।
·
দুনিয়াবী স্বার্থের এই
ধরণের মহব্বত শুধু আল্লাহর নিকট মানুষের পাওনা নষ্ট করবেনা। বরং দুনিয়াতেও ঠিকমতো
কাজ করা যাবে না।
·
নিয়তের ত্রুটির প্রভাব পড়ে
কাজের উপর। আর ফলে কাজ হয় ত্রুটিপূর্ণ। আর
ত্রুটিপূর্ণ কাজ দিয়ে মন্দকে খতম করা ভালকে প্রতিষ্ঠা করার কাজে সাফল্য লাভ সম্ভব
নয়।
·
যেমনঃ
-
আংশিক সৎকাজে নিয়তকে ত্রুটিমুক্ত রাখা-এটা
কঠিন নয়-এরজন্য সামান্য আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ও সাচ্চা প্রেরণাই যথেষ্ট।
-
সমগ্র দেশের জীবন ব্যবস্থা সংশোধন করে সেখানে
ইসলামের ভিত্তির উপর সেই জীবন ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করার কাজ যারা করবেন, তারা
নিজের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কেবল চিন্তার পরিগঠন বা প্রচার-প্রপাগান্ডা অথবা
চরিত্র সংশোধনের প্রচেষ্টার উপর নির্ভর করতে পারেনা। বরং নিজেদের উদ্দেশ্যের দিকে
পুরো দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার মোড় বদলানোর জন্য কাজ করতে হয়।
-
এভাবে ক্ষমতা হয় সরাসরি তাদের কাছে আসে অথবা
তাদের সমর্থিত দলের কাছে আসে।
-
এই দুই অবস্থার কোনটিতেও রাজনৈতিক পরিবর্তন
বাদ দিয়ে ক্ষমতার কথা চিন্তা করা যায় না। যেমন চিন্তা করা যায় না সমূদ্রের গর্ভে
অবস্থান করে গায়ে পানি না লাগানোর মতো।
·
আর এজন্য যে দল এই কাজ
করবে, তার জনশক্তির নিয়ত আর পুরো দলের সামষ্টিক নিয়ত থাকতে হবে ক্ষমতার লোভমুক্ত।
আর তার জন্য প্রয়োজন আত্মিক পরিশ্রম ও আত্মশুদ্ধি।
·
ত্রুটিপূর্ণ নিয়তের
নির্ভূল দৃষ্টিভংগীঃ
-
রাজনৈতিক ব্যবস্থা পরিবর্তন হলে, যারা
পরিবর্তন চায় সেইসব ব্যক্তি বা তাদের পছন্দনীয় ব্যক্তিদের কাছে ক্ষমতা অটোমেটিক
ক্ষমতা চলে আসে।
-
কিন্তু যারা নিজেদের জন্য ক্ষমতা চায় আর যারা
নিজেদের লক্ষ্য ও আদর্শের জন্য ক্ষমতা চায় এই দুই শ্রেণীর মাঝে পার্থক্য আছে। এর মাঝে রয়েছে দূ’টি সামঞ্জস্যশীল বস্তুতে
সুক্ষ্ণ পার্থক্যঃ
১. নীতি ও আদর্শের কর্তৃত্ব
চাওয়া।
২. নীতি ও আদর্শের বাহকদের
নিজেদের জন্য কর্তৃত্ব চাওয়া।
-
নিয়তের ত্রুটি হলো নীতি ও আদর্শের বাহকের
নিজেদের জন্য কর্তৃত্ব চাওয়া।
·
রাসূল সা. ও সাহাবায়ে
কিরাম রাজনৈতিক কর্তৃত্বের প্রয়োজনে চেষ্টা করেন। কিন্তু কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা যখন
হলো, তখন তাদের আচরণ থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে, ক্ষমতা হস্তগত করা তাদের উদ্দেশ্য
ছিল না।
·
যারা নিজেদের কর্তৃত্ব
চেয়েছিল, তাদের উদাহরণ ইতিহাসের পাতায় পাতায়।
·
যারা সাচ্চা দিলে ইসলামী
নীতি ও আদর্শ অনুযায়ী জীবন ব্যবস্থার সার্বিক কর্তৃত্ব চান, তাদেরকে ব্যক্তিগত
ভাবে এই পার্থক্য বুঝতে হবে এবং নিয়তকে ত্রুটিমুক্ত রাখতে হবে।
· যে দল ইসলামী নীতি ও আদর্শ অনুযায়ী জীবন ব্যবস্থার সার্বিক কর্তৃত্ব চায়, তাদেরকে চেষ্টা চালাতে হবে যাতে তাদের মধ্যে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রত্যাশা প্রবেশ করতে না পারে।
মানবিক
দূর্বলতা
·
মানবিক দূর্বলতা
ভিত্তিমূলকে ধ্বসিয়ে দেয়ার মতো শক্তিশালী নয়। কিন্তু যা কাজকে বিকৃত করে, আর
বেশীদিন এগুলো চলতে থাকলে মানবিক দূর্বলতা সমূহ ধ্বংসকর হয়ে উঠে।
·
মানবিক দূর্বলতার পথ ধরে
শয়তান মানুষের ভাল কাজের পথ রোধ করে এবং মানবিক চেষ্টাকে খারাপের দিকে নিয়ে যায়,
সমাজে সৃষ্টি করে বিপর্যয়।
·
সমাজদেহের সুস্থতার জন্য
মানবিক দূর্বলতার দোষগুলো বন্ধ করা প্রয়োজন। আর সমাজ সংশোধন ও সত্য দ্বীন যারা
কাযেম করবেন, তারা এবং তাদের দল তো এই দোষগুলো থেকে পুরো মুক্ত থাকা উচিত।
·
মানবিক দূর্বলতার দোষ
গুলোকে ভালভাবে বিশ্লেষন করলে প্রমাণিত হয় যে, এগুলো এমন এক একটি দোষ, যা একাধিক
দোষের জন্ম দেয়।
·
নিম্নে মানকি দূর্বলতার
একেকটি দোষ নিয়ে আলোচনা করে তা থেকে বাঁচার জন্য করণীয় উল্লেখ করা হলো।
১.
আত্মপূজা।
২.
মেজাজের ভারসাম্যহীনতা।
একঃ আত্মপূজাঃ
·
মানুষের মাঝে যত ধরণের
দূর্বলতা আছে, তার মাঝে সবচেয়ে বড় ও মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টিকারী দূর্বলতা হলোঃ
স্বার্থপূজা। আর তার সৃষ্টি হলো
আত্মপ্রীতির প্রেরণা থেকে। আর আত্মপ্রীতি হলো একটি স্বাভাবিক প্রেরণা।
·
আত্মপ্রীতি জিনিসটা নিজের
সীমার মাঝে দরকারী এবং উপকারী বস্তু-দোষণীয় বস্তু নয়।
·
আল্লাহ মানুষের ফিতরতের
মাঝে নিজের জন্য ভাল চাওয়ার প্রেরণা জাগ্রত রেখেছেন। যার ফলে মানুষ নিজের হেফাজত,
নিজের কল্যাণ এবং নিজের উন্নতির জন্য প্রচেষ্টা চালায়।
·
আত্মপ্রীতির এই অবস্থাতে
শয়তান প্ররোচনা দেয়। ফলে তা আত্মপূজা ও আত্মকেন্দ্রীকতায় রূপান্তরিত হয়। তখন আত্মপ্রীতি ভাল থেকে মন্দের উৎসে পরিণত হয়।
ফলে নতুন নতুন দোষের জন্ম হয়। যেমনঃ
ক. আত্মপ্রীতি।
খ. হিংসা বিদ্বেষ।
গ. কূ-ধারণা।
ঘ. গীবত।
ঙ. চোগলখোরী।
চ. কানাকানি ও ফিসফিসানী।
ক. আত্মপ্রীতিঃ
·
আত্মপ্রীতি নামক ভাল গুণটা
তখনই খারাপের দিকে যায়, যখন মানুষ নিজেকে ত্রুটিহীন এবং সকল গুণাবলীর আধার মনে
করে। যখন নিজের দোষ ও দূর্বলতাকে ঢাকা দেয়। যখন নিজের দোষ-ত্রুটির ব্যাখ্যা করে
সবদিক দিয়ে নিজেকে ভাল মনে করে মানসকি নিশ্চিন্ততা লাভ করে।
·
সেই সময়ে আত্মপ্রীতির
প্রেরণা মাথাচাড়া দেয়, সাপের মতো ধীরে ধীরে সন্তপর্ণে সামনে অগ্রসর হয়।
·
ফল হয়ঃ
এই আত্মপ্রীতি তার সংশোধন
ও উন্নতির দরজা নিজ হাতে বন্ধ করে দেয়।
·
দ্বিতীয় পর্যায়ে
আত্মপ্রীতি “আমি কত ভাল’ অনুভূতি নিয়ে মানব সমাজে তৎপর হয়। সে যা ভাল মনে করেছে, সে ভাবে অন্যরাও তা ভাল
মনে করুক। সে কেবল প্রশংসা শুনতে চায়-সমালোচনা তার পছন্দ হয়না।
·
যে কোন কল্যাণমূলক নসিহত
তার আত্মমর্যাদাকে পীড়া দেয়।
·
ফলে হয়ঃ
এই আত্মপ্রীতির বাহির থেকে
তাকে সংশোধন করার দরজাও বন্ধ করে দেয়।
·
চিরন্তন কথা হলোঃ
সামাজিক জীবনে সব কিছু
নিজের পছন্দ অনুযায়ী হওয়া কোন অবস্থায় সম্ভব নয়। বিধায়, আত্মপ্রেমিক ও আত্মপূজারী
এই ক্ষেত্রে সব জায়গায় ধাক্কা খায়। সমাজের অসংখ্য গুণাবলী যা তার মাঝে নেই, সেই সব
গুণাবলী আত্মপূজারীর অহমে আঘাত করে-সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে পড়ে। সংঘর্ষশীল হয় সমাজের
সামগ্রিক অবস্থা।
·
ফলে হয়ঃ
সে শুধু সংশোধন থেকে
বঞ্চিত হয় না, বরং অন্যের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, পরাজয়ে আহত ও বিক্ষুব্ধ হয়ে
নিজেকে মারাত্মক অসৎ কাজের মধ্যে নিক্ষেপ করে।
·
তখন আত্মপূজারী দেখেঃ
-
অনেক লোক তার চেয়ে ভাল।
-
অনেক লোককে সমাজ তার চেয়ে বেশী দাম দেয়।
-
লোক তাকে প্রত্যাশিত মর্যাদা প্রদান করছেনা।
-
অনেক লোক তার মর্যাদা হাসিলের পথে বাঁধার
সৃষ্টি করে।
-
অনেক লোক তার সমালোচনা ও মর্যাদাহানী করে।
·
ফলে তার মনে বিভিন্ন জনের
বিরুদ্ধে হিংসা, বিদ্বেষ ও ঘৃণার আগুন জ্বলে উঠে। আর সে জন্য সেঃ
-
অন্যের অবস্থা অনুসন্ধান করে।
-
অন্যের দোষ খুঁজে বেড়ায়।
-
গীবত করে।
-
গীবত শুনে স্বাদ গ্রহণ করে।
-
চোগলখুরী করে।
-
কানাকানি করে।
-
ষড়যন্ত্র করে।
·
আত্মপূজারীর অবস্থা যদি
আরো খারাপ হয়ে নৈতিকতার বাঁধন ঢিলে হয়ে যায়, অথবা অনবরত এই সব কাজ করার কারণে ঢিলে
হয়ে পড়ে, তাহলে সে আরো একধাপ সামনে অগ্রসর হয়েঃ
-
মিথ্যা দোষারোপ করে।
-
অপপ্রচার করে।
·
এমন অবস্থায় আত্মপূজারী
ব্যক্তি নৈতিকতার সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌছে যায়। সে অবস্থা থেকে কেবলমাত্র সে বাঁচতে
পারেঃ
যদি সে কোন পর্যায়ে সে তার
নিজের প্রথম পর্যায়ের ভূল অনুভব করতে পারে-যে ভূল তাকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে।
·
ব্যক্তি যখন আত্মপ্রীতির
রোগে আক্রান্ত হয়, তখন তার ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তৃত্ব হয় বড় জোর কয়েক ব্যক্তি
পর্যন্ত। কিন্তু সমাজে যদি তাদের সংখ্যা
বেশী হয়ে যায়, তাহলে তার প্রভাবে পুরো সমাজ হয় বিপর্যস্ত। এতে করে সমাজে দেখা দেয়ঃ
-
পরস্পরে মধ্যে কূ-ধারণা।
-
গোয়েন্দা মনোবৃত্তি।
-
পরদোষ অনুসন্ধান।
-
গীবত।
-
চোগলখোরী
-
পরস্পরের বিরুদ্ধে মানসিক অসৎবৃত্তি।
-
হিংসা ও হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা।
-
আহত অহকার এর প্রতিরোধ স্পৃহা।
-
গ্রুপ সৃষ্টির পথ।
-
গঠনমূলক প্রতিযোগিতা হয় বন্ধ।
-
মধুর সম্পর্কের সম্ভাবনা হয় বন্ধ।
-
দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষ হয় অনিবার্য।
-
এ রোগে আক্রান্ত হয় ভাল ভাল লোক।
-
গীবতকারীর উপর হারায় আস্তা।
-
সৎ ব্যক্তিত্ব সংঘর্ষ মুক্ত থাকলেও
দ্বন্দ্বমুক্ত থাকতে পারেনা।
·
যারা সমাজ সংশোধন ও
পরিগঠনের দলীয় ভাবে করতে চান, তাদেরকেঃ
-
এধরণের অসৎ ব্যক্তিদের থেকে মুক্ত হতে হবে।
-
আত্মপূজা দলের জন্য কলেরা ও বসন্তের জীবানুর
চাইতেও ক্ষতিকর।
-
আত্মপূজার উপস্থিতিতে কোন সৎকাজ ও সংশোধনের
চিন্তাই করা যায় না।
·
বাঁচার উপায়ঃ
১. তাওবা ও ইস্তেগফার।
২. সত্যের প্রকাশ।
তাওবা ও
ইস্তেগফারঃ
o
ইসলামী শরীয়া এই রোগ শুরু
হওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসা শুরু এবং এর পথ রোধ করার নির্দেশ দেয়।
o
কুরআন ও হাদীসে
ঈমানদারদেরকে তাওবা ও ইস্তেগফারের নসিহত করা হয়েছে। যাতে মুমিনরাঃ
-
আত্মপূজা ও আত্মপ্রীতির রোগে আক্রান্ত না হয়।
-
আত্মম্ভরিতায় লিপ্ত না হয়।
-
নিজের দূর্বলতা ও দোষ-অনুভব করতে থাকে।
-
নিজের ভূল-ভ্রান্তি স্বীকার করতে থাকে।
-
কোন বড় কাজ করার পর অহংকারে বুক ফুলায় না।
-
বড় কাজ করার পর দীনতার সাথে আল্লাহর কাছে ভূল
ত্রুটির জন্য মাফ চায়।
o
রাসূল সা. এর চেয়ে বড়
পূর্ণতার অধিকারী কেউ নেই। ইতিহাসের
শ্রেষ্টতম কাজ করার পর আল্লাহ তাকে নির্দেশ দিয়েছেনঃ
নিজের মালিকের প্রশংসাসহ
তার পবিত্রতা বর্ণনা করো এবং তার কাছে মাফ চাও, তিনি তাওবা কবুলকারী।
﴿إِذَا
جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ﴾﴿وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ
اللَّهِ أَفْوَاجًا﴾﴿فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ ۚ إِنَّهُ كَانَ
تَوَّابًا﴾
যখন আল্লাহর সাহায্য এসে যায় এবং বিজয় লাভ হয়। আর ( হে নবী!) তুমি যদি দেখ যে লোকেরা দলে দলে
আল্লাহর দীন গ্রহণ করছে। তখন তুমি তোমার রবের হামদ সহকারে তাঁর তাসবীহ পড়ো এবং তাঁর কাছে মাগফিরাত চাও৷ অবশ্যি তিনি বড়ই তাওবা
কবুলকারী।
عن < قالت: كان رسول الله ﷺ يكثر أن يقول قبل موته سبحان الله
وبحمده، أستغفر الله، وأتوب إليه (متفق عليه)
হযরত আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সা. তাঁর ইনতিকালের পূর্বে
প্রায়ই বলতেন, আমি আল্লাহর প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করছি, আমি আল্লাহর কাছে
মাগফিরাত চাচ্ছি এবং তাঁর কাছে তাওবা করছি।”
عن أبي هريرة < قال: سمعت رسول الله ﷺ يقول: والله إني لأستغفر الله وأتوب إليه في اليوم أكثر
من سبعين مرة.
আল্লাহর কসম, আমি প্রতিদিন সত্তর বারের বেশী আল্লাহর নিকট ইস্তেগফার ও তাওবা
করি।
o
কুরআন ও হাদীসের এই শিক্ষা
বুঝে নিলে এবং দিলের মধ্যে গেঁথে নিলে কোন ব্যক্তির মনে আত্মপূঁজার বীজ বপণ করা
যাবে না।
সত্যের
প্রকাশঃ
o
তাওবা ও ইস্তেগফারের
মাধ্যমে এই রোগ সারার কথা। এরপরও যদি না সারে তাহলে ইসলামী শরীয়া নির্দেশ দেয়
চরিত্র ও কর্মের প্রকাশ ও বিকাশের পথ রোধ করা। যেমনঃ
1. নিজেকে
সমালোচনার উর্ধে মনে করা এবং নিজের কথা ও মতামতের স্বীকৃতি আদায় করার চেষ্টা
করা-এটা একটা রোগ।
2. অন্য
কেউ ভূলের সমালোচনা করবে-এমন অবস্থা বরদাশত হবে না।
o
ইসলামী শরীয়াত এখানেঃ
-
সৎকাজের আদেশ আর অসৎ কাজের নির্দেশ দিচ্ছে।
-
জালেম শাসকের সামনে হক কথা বলাকে সর্বোত্তম
জিহাদ গন্য করছে।
o
মুসলিম সমাজে সৎকাজের আদেশ
ও অসৎ কাজের নির্দেশ প্রদানের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে সমাজে আত্মপূজা
স্থান না পায়।
খ. হিংসা ও বিদ্বেষঃ
·
আত্মপূজার প্রথম প্রকাশ
পায় আত্মপ্রীতির মাধ্যমে। আর দ্বিতীয় যে রূপে প্রকাশিত হয়, তাহলোঃ হিংসা ও
বিদ্বেষ।
·
কারণ কি?
আত্মপূজার আত্মপ্রীতিতে যে
আঘাত দেয়, তার বিরুদ্ধেই মানুষ হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণ করতে থাকে। এরপর সম্পর্ক
খারাপ হতে থাকে।
·
ইসলামী শরীয়াত হিংসা ও
বিদ্বেষকে শাস্তিযোগ্য গোনাহ বলে উল্লেখ করেছে।
·
রাসূল সা. বলেছেনঃ
-
সাবধান! হিংসা করো না। কারণ হিংসা মানুষের
সৎকাজগুলোকে এমনভাবে খেয়ে ফেলে যেমন আগুন শুকনো কাঠকে জ্বালিয়ে ছাই করে দেয়।
-
তোমরা পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করো না।
-
পরস্পরকে হিংসা করো না।
-
পরস্পরের সাথে কথা বলা বন্ধ করো না।
-
কোন মুসলমানের জন্যে তার মুসলমান ভাইয়ের সাথে
তিন দিনের বেশী সম্পর্ক ছিন্ন অবস্থায় থাকা বৈধ নয়।
গ. কূ-ধারণাঃ
·
এইটি আত্মপূজার তৃতীয়
প্রকাশ।
-
কূ-ধারণা সৃষ্টি হলে মানুষ মানুষের দোষ খুঁজে
বেড়ায়-গোয়েন্দা মনোবৃত্তি নিয়ে।
·
কূ-ধারণার তাৎপর্যঃ
-
নিজের ছাড়া অন্য সকল সম্পর্কে ধারণা রাখা যে,
তারা সবাই খারাপ।
-
মানুষের যে সব আপত্তিকর বিষয় দেখা যায়, তার
ভাল ব্যাখ্যার পরিবর্তে খারাপ ব্যাখ্যা করা-অনুসন্ধান না করে।
·
কূ-ধারণার ফসল হলোঃ
গোয়েন্দাগিরি
-
মানুষ সম্পর্কে প্রথমে খারাপ ধারণা পোষণ।
-
খারাপ ধারণার পক্ষে প্রমাণ সংগ্রহের জন্য খবর
নিতে থাকা।
·
কুরআনে কূ-ধারণা ও
গোয়েন্দাগিরি-দূ’টোকেই গোনাহ বলে গন্য করেছেঃ
﴿اجْتَنِبُوا
كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ ۖ وَلَا تَجَسَّسُوا﴾
অনেক বেশী ধারণা করা থেকে
দূরে থেকো, কারণ কোন কোন ধারণা গোনাহের পর্যায়ভূক্ত, আর গোয়েন্দাগিরি করো না।
(সূরা আল হুজুরাতঃ ১২)
·
রাসূল সা. বলেছেনঃ
সাবধান, কূ-ধারণা করো না,
কারণ কূ-ধারণা মারাত্মক মিথ্যা।
·
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.
বলেনঃ
আমাদেরকে গোয়েন্দাগিরি
করতে ও অন্যের দোষ খুঁজে বেড়াতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে আমাদের সামনে কোন কথা প্রকাশ
হয়ে গেলে আমরা পাকড়াও করবো।
·
মুয়াবিয়া রা. বলেন, রাসূল
সা. বলেছেনঃ
তোমরা মুসলমানদের গোপন
অবস্থার ব্যাপারে অনুসন্ধান চালাতে থাকলে তাদেরকে বিগড়িয়ে দেবে।
ঘ. গীবতঃ
·
আত্মপ্রীতি, হিংসা ও
বিদ্বেষ এবং কূ-ধারণার পর শুরু হয় গীবত।
·
গীবত কি?
-
সর্বাবস্থায় ব্যক্তিকে লাঞ্ছিত ও হেয়
প্রতিপন্ন করা।
-
লাঞ্ছনা দেখে মনে আনন্দ অনুভব করা।
-
লাঞ্ছনা থেকে নিজে লাভবান হবার জন্য অসাক্ষাতে
দূর্ণাম করা।
·
হাদীসে রাসূলে গীবতের
সংজ্ঞাঃ
তোমার ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে
তার কথা এমনভাবে বলা, যা সে জানতে পারলে অপছন্দ করতো। রাসূল সা.কে জিজ্ঞেস করা করা
হলোঃ যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে ঐ দোষ থেকে থাকে, তাহলেও কি তা গীবতের পর্যায়ভূক্ত?
জবাব দিলেন, যদি তার মধ্যে ঐ দোষ থাকে এবং তুমি তা বর্ণনা করে থাকো, তাহলে গীবত
করলে। আর যদি তার মধ্যে ঐ দোষ না থেকে থাকে, তাহলে তুমি গীবত থেকে আরো এক ধাপ
অগ্রসর হয়ে তার উপর মিথ্যা দোষারোপ করলে।
·
কুরআন গীবতকে হারাম গন্য
করেঃ
﴿وَلَا
يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا ۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ
مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ﴾
আর তোমাদের কেউ কারোর গীবত করবে না। তোমাদের কেউ কি নিজের মৃত ভাইয়ের গোশত
খাওয়া পছন্দ করবে? নিশ্চয়ই তা ঘৃণা করবে। (সূরা হুজরাতঃ ১২)
·
রাসূল সা. বলেনঃ
প্রত্যেক মুসলমানের
জান-মাল, ইজ্জত-আবরু, অন্য মুসলমানের জন্য হারাম।
·
কুরআন বলছেঃ
﴿لَّا
يُحِبُّ اللَّهُ الْجَهْرَ بِالسُّوءِ مِنَ الْقَوْلِ إِلَّا مَن ظُلِمَ ۚ وَكَانَ
اللَّهُ سَمِيعًا عَلِيمًا﴾
আল্লাহ অসৎ কাজ সম্পর্কে কথা বলা পছন্দ করেন না, তবে যদি কারোর উপর জুলুম হয়ে
থাকে। (সূরা আন নিসাঃ ১৪৮)
·
হাদীসঃ
দুই ব্যক্তি ফাতেমা বিনতে কায়েসের নিকট বিয়ের পয়গাম পাঠালে সে বিষয়ে তিনি
রাসূল সা. এর সাথে পরামর্শ করেন। রাসূল সা. তাদের একজনকে অভাবী এবং অন্যজনকে
স্ত্রী প্রহারকারী বলে জানিয়ে দেন।
·
কারো দূর্নাম করার নিয়ত
নয়, এমন অন্যের বিরুদ্ধে বলা যাবে। যেমনঃ
1. কারো
মেয়ে বিয়ে দেয়া।
2. কারো
সাথে কারাবার বা ব্যবসা করা।
3. শরয়ী
অনির্ভরযোগ্য বর্ণনার বর্ণনাকারীদের সম্পর্কে বলা।
4. যারা
মানুষের উপর জুলুম করে।
5. যারা
অনৈতিক কাজের প্রসার করে।
6. যারা
ফাসেক কাজের প্রসার করে।
7. যারা
প্রকাশ্যে অসৎ কাজ করে।
ঙ. চোগলখোরীঃ
·
গীবত যে আগুন জ্বালায় সে
আগুন ছড়ানোর কাজ করে চোগলখোরী।
·
স্বার্থবাদীতা হলো চোগলখোরীর
মূল শক্তি।
·
চোগলখোর কারো কল্যাণকামী
হতে পারে না।
·
চোগলখোর মানেঃ
দুইজনের মধ্যে শত্রুতা
সৃষ্টি করতে চায় বা দুইজনের মধ্যে শত্রুতা ঝিইয়ে রাখতে চায় এমন ব্যক্তি।
·
চোগলখোরঃ
ব্যক্তিগত ভাবে ভাল
শ্রেুাতা। দুই পক্ষের কারো কথার প্রতিবাদ না করে মনযোগ দিয়ে শুনে। তারপর একপক্ষের
কথা অন্য পক্ষকে বলে দেয়।
·
চোগলখোরী মানুষের জঘন্যতম
দোষ হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছেঃ
عن حذيفة بن اليمان < أن رسول الله ﷺ قال: (لا يدخل الجنة نمام)
হযরত হুযাইফা ইবনুল ইয়ামন রা. রাসূল সা. বর্ণনা করছেন। রাসূল সা. বলেছেনঃ কোন
চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা।
তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি হচ্ছে সবচাইতে খারাপ, যার দূ’টি মুখ। সে এক দলের
নিকট একটি মুখ নিয়ে আসে আর অন্য দলের নিকট আসে অন্য মুখটি নিয়ে।
·
ইসলামী শরীয়া চোগলখোরীকে
হারাম ঘোষনা করেছে। যার কার্যকরী ক্ষমতা গীবতের চেয়েও বেশী।
·
চোগলখোরীর ব্যাপারে ইসলামী
পদ্ধতি হলোঃ
1.
কোথাও কারোর গীবত শুনলে সংগে সংগে তার
প্রতিবাদ করা।
2.
উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে বিষয়টি উত্থাপন করে
নিষ্পত্তি করা।
3.
বিদ্যমান দোষের জন্য গীবত করা হলে গীবতকারীকে
গীবতের গোনাহ সম্পর্কে অবহিত করা, আর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দোষ সংশোধনের জন্য চেষ্টা
করা।
চ. কানাকানি ও ফিসফিসানীঃ
·
আত্মপূজার সর্বশেষ
বহিপ্রকাশ হলো কানাকানি ও ফিসফিসানী।
·
কানাকানি ও ফিসফিসানী মানেঃ
কানে কানে কথা ও গোপনে
সলা-পরামর্শ করা।
·
এর ফলাফল হলোঃ
ষড়যন্ত্র, দলাদলী, পরস্পর
বিরোধী সংঘর্ষশীল গ্রুপ।
·
কুরআন বলছেঃ
﴿إِنَّمَا
النَّجْوَىٰ مِنَ الشَّيْطَانِ﴾
কানাকানি হচ্ছে শয়তানের কাজ।
·
কুরআন নির্দেশ দিচ্ছেঃ
﴿إِذَا
تَنَاجَيْتُمْ فَلَا تَتَنَاجَوْا بِالْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَمَعْصِيَتِ
الرَّسُولِ وَتَنَاجَوْا بِالْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ﴾
যখন তোমরা নিজেদের মধ্যে কানাকানি করো তখন গোনাহ ও সীমালংঘনের ব্যাপারে এবং
রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করার জন্যে কানাকানি করো না বরং নেকী ও তাকওয়ার ব্যাপারে
কানাকানি করো। (সূরা আল মুজাদালাহঃ ০৯)
·
কানাকানি নয়ঃ
যদি দুই বা কতিপয় ব্যক্তি সদুদ্দেশ্যে এবং তাকওয়ার সীমার মাঝে থেকে কানে কানে
আলাপ করে।
·
কানাকানি যে সব কাজঃ ঐসব
গোপনীয় আলোচনা, যাঃ
1. দলের
দৃষ্টি এড়িয়ে গোপনে গোপনে কানে কানে।
2. অসৎ
কাজের পরিকল্পনা তৈরীর উদ্দেশ্যে।
3. অন্য
কোন দল বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য।
4. রাসূল
সা. এর নির্দেশ ও বিধানের বিরুদ্ধাচরণ করার সংকল্পে।
·
কানাকানিকে উদ্বুদ্ধ কর
নাঃ
-
ঈমানদারী ও আন্তরিকতা সহকারে যে মতবিরোধ করা
হয়। তবে তা হতে হবে প্রকাশ্যে এবং দলের সামনে, প্রতিপক্ষ্যের স্বীকৃতি আদায়ের
জন্য।
·
দলের বাহিরে তখনই আলোচনার
প্রয়োজন দেখা দেয়,
-
যেখানে স্বার্থপরতার মিশ্রণ রয়েছে।
-
এই ধরণের কানাকানি শুভ হয়না।
-
এই ধরণের কানাকানির পরিণতি কূ-ধারণা, দলাদলি ও
হানাহানি।
-
আপোষে গোপন আলোচনায় সৃষ্টি হয় গ্রুপ।
-
শুরু হয় বিকৃতির সূচনা।
-
দলকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে।
-
পরস্পর দলাদলিতে লিপ্ত হয়।
·
রাসূল সা. এ ব্যাপারে
বারবার সতর্ক করে ভীতি প্রদর্শন ও এ থেকে বাঁচার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেনঃ
-
আরবে যারা নামায শুরু করেছে, তারা পূণর্বার
শয়তানের ইবাদত শরু করবে, এ ব্যাপারে শয়তান নিরাশ হয়ে পড়েছে। তাই এখন তাদের মধ্যে
বিকৃতি সৃষ্টি করার ও তাদের পরস্পরকে সংঘর্ষশীল করার সাথে তার সমস্ত আশা-আকাঙ্খা
জড়িত।
-
আমার পর তোমরা কাফের হয়ে যেয়ো না এবং পরস্পরকে
হত্যা করার কাজে লিপ্ত হয়ো না।
·
কানাকানি ফিসফিসানী থেকে
বাঁচার ইসলামী পদ্ধতি হলো, নিজেরা এ ধরণের ফিতনায় অংশ গ্রহণ থেকে বিরত থাকা।
·
রাসূল সা. বলেছেনঃ
-
তারা সৌভাগ্যবান যারা ফিতনা থেকে দূরে থাকে
এবং
-
যে ব্যক্তি যত বেশী দূরে থাকে সে তত বেশী
ভালো।
-
এ অবস্থায় নিদ্রিত ব্যক্তি জাগ্রত ব্যক্তির
চাইতে ভালো এবং
-
জাগ্রত ব্যক্তি দন্ডায়মান ব্যক্তির চাইতে
ভালো।
-
আর দন্ডায়মান ব্যক্তি চলন্ত ব্যক্তি চাইতে
ভালো।
-
অন্য দিকে যদি তারা ফিতনায় অংশ গ্রহণ করে
তাহলে একটি দল হিসেবে নয় বরং সাচ্চা দিলে সংশোধন প্রয়াসী হিসেবে অংশ গ্রহণ করতে
পারে।
-
সূরা হুজরাতে এসম্পর্কে প্রথম রুকুতে
দ্ব্যর্থহীন নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উপসংহারঃ
·
যারা সৎবৃত্তি ও সততার বিকাশের
উদ্দেশ্যে জামায়াতবদ্ধ হয়েছেন,
-
তাদেরকে উপরোক্ত বিষয় সমূহের তাৎপর্য ও তার
প্রকাশ বিকাশ সম্পর্কিত শরয়ী বিধান সমূহ জানতে হবে।
-
তাদেরকে আত্মপ্রীতি ও আত্মম্ভরিতার রোগ থেকে
বাঁচার চেষ্টা করতে হবে।
-
রোগে আক্রান্ত হলে যে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক
ক্ষতি তা উপলব্দি করতে হবে।
-
দলকে দলগত ভাবে সজাগ থাকতে হবে।
-
নিজের পরিমীমার মাঝে কোন ব্যক্তিকে উৎসাহিত
করা যাবে না।
-
যার কথায় হিংসা বিদ্বেষ ও শত্রুতার গন্ধ পাওয়া
যায়, তাকে দাবিয়ে দিতে হবে।
-
কূ-ধারণা পোষনকারী ও গোয়েন্দাগিরিতে লিপ্তদের
বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
-
সমাজের মধ্যে গীবত ও চোগলখোরীর পথ রুদ্ধ করতে
হবে।
-
ফিতনা মাথাচাড়া দিলে সাথে সাথে ইসলামী নীতি ও
পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।
-
কানাকানির বিপদ থেকে সতর্ক থাকতে হবে।
-
বিরোধপূর্ণ বিষয়ে কোন ব্যক্তি কানাকানি করলে
তার সাথে সম্মত না হওয়া।
-
দলের মাঝে যারা কানাকানিতে লিপ্ত তাদের
সংশোধনে ব্রতি হতে হবে।
-
দলের মাঝে কানাকানি বন্ধ করতে না পারলে
কানাকানিতে লিপ্ত ব্যক্তিদের সাথে কানাকানি নয়, বরং ব্যক্তিগত ও দলীয় ভাবে প্রকাশে
বিষয়টি উত্থাপন করতে হবে।
-
মনে রাখতে হবে,
১. যে দলে আন্তরিকতা
সম্পন্ন লোক বেশী, সে দল ফিতনা সম্পর্কে অবগত হয়ে সংগে সংগে প্রতিরোধ করবে।
২. যে দলে ফিতনাবাজ বেশী,
সে দল ফিতনার শিকার হয়ে পর্যুদস্ত হবে।
দুইঃ মেজাজের ভারসাম্যহীনতাঃ
·
মানবিক দূর্বলতার
অনিষ্টকারীর গুলোর মাঝে দ্বিতীয় হলোঃ মেজাজের ভারসাম্যহীনতা।
·
স্বার্থবাদীতা ও মেজাজের
ভারসাম্যহীনতাকে একসাথে রাখলে এটাকে সামান্য দূর্বলতা মনে হয়। কারণঃ
-
এতে অসৎ সংকল্প নাই।
-
এতে অসাধু প্রেরণা নাই।
-
এতে অপবিত্র ইচ্ছা নাই।
-
কিন্তু এর অনিষ্ট করার ক্ষমতা স্বার্থবাদীতার
সমান।
·
মেজাজের ভারসাম্যহীনতার
সৃষ্টি-চিন্তা ও দৃষ্টিভংগী এবং কর্ম ও প্রচেষ্টার ভারসাম্যহীনতা থেকে।
·
জীবনের বহু সত্য রয়েছে,
যার সাথে মেজাজের ভারসাম্যহীনতার হয় সংঘর্ষ।
·
মানুষের জীবনঃ
-
বিপরীতধর্মী বহু উপাদানের আপোষ বিচিত্র
কার্যকারণের সামষ্টিক কর্মের সমন্বয়ে গঠিত।
-
দুনিয়াতে মানুষের বসবাসের ক্ষেত্রে আপোষ
থাকবে, বহু বিচিত্র কাজের সামষ্টিক সমন্বয় থাকবে।
-
মানুষকে এমন ভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে যে, কয়েকজন
মানুষ একত্রিত হলে বহুবিধ বিষয়ের অবতারণা হয়। সেখানে চিন্তা ও দৃষ্টিভংগীর
ভারসাম্য লাগে, কর্ম ও প্রচেষ্টার সমন্বয়
লাগে, যেমন বিশ্বপ্রকৃতিতে সমতা ও ভারসাম্য প্রয়োজন।
·
জীবনে চলার পথেঃ
-
প্রতিটি গতি ধারার প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে।
-
কাজের প্রতিটি দিক অবলোকন করতে হবে।
-
জীবনের প্রতিটি বিভাগকে অধিকার দিতে হবে।
-
প্রকৃতির প্রতিটি দাবীর প্রতি নজর রাখতে হবে।
·
এসব বিষয়ে পরিপূর্ণ
ভারসাম্য সম্ভব না হলেও সাফল্যের জন্য প্রয়োজনীয় ভারসাম্য অপরিহার্য।
-
ভারসাম্য নির্ধারিত মানের যতটা নিকটবর্তী হবে,
ততটা লাভজনক।
-
ভারসাম্য নির্ধারিত মানের যতটা দুরবর্তী হবে,
ততটা সত্যের সাথে সংঘর্ষশীল হবে, অনিষ্টের কারণ হবে।
-
দুনিয়ার সকল বিপর্যয়ের কারণ ভারসাম্যহীন
চিন্তাধারী মানুষের সমস্যা দেখা ও উপলব্দি করার ক্ষেত্রে একচোঁখা নীতি অবলম্বন, ভারসাম্যহীন
পরিকল্পনা গ্রহণ, অসম পদ্ধতি অবলম্বন।
·
গড়ার কাজ করা সম্ভব চিন্তা
ও দৃষ্টিভংগীর ভারসাম্য এবং কর্মপদ্ধতির সমতা মাধ্যমে।
·
ভারসাম্য সমাজ গঠন ও
সংশোধনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একটি বিশেষ গুণ। আর ইসলামী সমাজ গঠনের পরিকল্পনাটি
পুরোপুরি ভারসাম্য ও সমতার একটি বাস্তব নমূনা।
·
ইসলাম ভারসাম্য এইটি
পুঁথির কথা। এটাকে বাস্তবে রূপদিতে প্রয়োজন এমন কর্মী, যাদের দৃষ্টিভংগী হবে সেই
ইসলামী পরিকল্পনার ন্যায় ভারসাম্য। প্রান্তিক রোগীরা বিকৃত করতে পারে, সম্পাদন
করতে পারে না।
·
ভারসাম্যহীনতা সাধারণতঃ
ব্যর্থতারূপে আত্মপ্রকাশ করে।
·
সমাজ সংশোধন ও পরিবর্তনের
যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, তা কেবল নিজে নয়, বরং সমাজের সাধারণ মানুষ এটার
যথার্থতা, উপকারিতা ও কার্যকরী হওয়া সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।
·
চিন্তা, দৃষ্টিভংগী ও
কর্মপদ্ধতিতে যে আন্দোলন ভারসাম্য, সে আন্দোলন সৌভাগ্যের অধিকারী।
·
চরমপন্থী পরিকল্পনা
বাস্তবায়নে প্রয়োজন চরমপন্থী পরিকল্পনা। যাতে সাধারণ মানুষেকে আকৃষ্ট বা আশান্বিত
করার বদলে করা হয় সংশয়িত।
·
চরমপন্থী লোকেরা সংঘটিত
হলেও তারা সমাজকে চরমপন্থী বানাতে পারেনা।
·
যে দল সমজ গঠন ও সংশোধনের
পরিকল্পনা নিয়ে সামনে আগায়, ভারসাম্যহীনতা সে দলের জন্য বিষের মতো।
·
মেজাজের ভারসাম্যহীনতা
প্রকাশ পায় নিম্নোক্ত ৫টি প্রক্রিয়ায়ঃ
ক. একগুয়েমীঃ
খ. একদেশদর্শীতাঃ
গ. সামষ্টিক ভারসাম্যহীনতাঃ
ঘ. সংকীর্ণমনতাঃ
ঙ. দূর্বল সংকল্পঃ
ক. একগুয়েমীঃ
·
মেজাজের ভারসাম্যহীনতার
প্রধানতম প্রকাশ।
·
এ রোগের প্রতিক্রিয়াঃ
- প্রত্যেক জিনিস একদিক দেখ, অপরদিক দেখেনা।
- প্রত্যেক বিষয়ের একদিন গুরুত্ব দেয়, অন্যদিকের গুরুত্ব
দেয়না।
- একবার যে দিকে মন যায় সেদিকেই অগ্রসর হতে থাকে,
অন্যদিকে নজর দিতে প্রস্তুত থাকে না।
- ক্রমাগত নানাবিধ বিষয়ের উপলব্দি করতে ভারসাম্যহীনতার
শিকার হয়।
- মত প্রতিষ্ঠায় একদিকে ঝুঁকতে থাকে।
- যাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে তাকেই আঁকড়ে ধরে বসে থাকে। একই
পর্যায়ের বা তার চাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে থাকে।
- যে জিনিসকে খারাপ মনে করে, তার বিরুদ্ধে সর্বশক্তি
নিয়োগ করে। কিন্তু একই ধরণের অন্য খারাপ জিনিস বা তার চেয়েও বেশী খারাপ
জিনিসের বিরুদ্ধে কোন কথা বলে না।
- নীতিবাদীতা অবলম্বনের পর সে বিষয়ে স্থবির হয়ে যায়,
বাস্তব চাহিদার পরোয়া করে না। অপরদিকে কর্মক্ষেত্রে হয়ে পড়ে নীতিহীন।
- সাফল্যকে উদ্দেশ্য
বানিয়ে সাফল্য অর্জনে ন্যায়-অন্যায় সকল উপায় অবলম্বন করে।
খ. একদেশদর্শীতাঃ
·
একগুয়েমীটা বাড়তে বাড়তে
একদেশদর্শীতার রূপ ধারণ করে।
·
এ রোগের প্রতিক্রিয়াঃ
- নিজের মতের উপর প্রয়োজনের অধিক জোর দেয়া।
- মতবিরোধে কঠোরতা অবলম্বন করা।
- অন্যের চিন্তা ও অন্যের দৃষ্টিভংগীকে ন্যায়ের দৃষ্টিতে
না দেখা, বুঝতে চেষ্টা না করা।
- প্রত্যেক বিরোধী মতের নিকৃষ্টতম অর্থ করা, বিরোধীমতালম্বীদের
হেয় করা-দূরে ঠেলে দেয়া।
- পর্যায়ক্রমে অন্যের জন্য নিজে এবং নিজের জন্য অন্যরা
অসহনীয় হয়ে যাওয়া।
·
এর রোগকে গুণ মনে করে লালন
করলেঃ
- মানুষ হয় ক্রুদ্ধভাব, বদরাগী ও কর্কশ।
- অন্যের নিয়ত সম্পর্কে সন্দেহ করে।
- অন্যের নিয়তে হামলা করে।
·
ইসলামী অনৈসলামী কোন সমাজ
ব্যবস্থায় এই একদেশদর্শীতা খাপ খেতে পারে না।
গ. সামষ্টিক ভারসাম্যহীনতাঃ
·
একব্যক্তি ভারসম্যহীন হলে,
সে দল থেকে বিচ্ছিন্ন হবে, যে উদ্দেশ্যে দলে এসেছিল তা হতে বঞ্চিত হবে, ক্ষতি হবে
ব্যক্তির নিজের।
·
দলে বা সমাজে যদি অনেকজন
ভারসাম্যহীন মন আর মেজাজের অধিকারী হয়, তাহলেঃ
-
প্রত্যেক ধরণের ভারসাম্যহীনতা বিপরীতে জন্ম হয়
এক একটি গ্রুপ।
-
এক চরমপন্থার জবাবে জন্ম হয় আরেক চরমপন্থা।
-
মতবিরোধ হয় কঠোর থেকে কঠোরতর।
-
সংগঠনে দেখা দেয় ভাঙ্গন।
-
সংগঠন বিভক্ত হয় বিভিন্ন গ্রুপে।
-
সংগঠনের উদ্দেশ্য দ্বন্দ্ব সংঘাতে পড়ে হয়
বিনষ্ট।
·
কিছু কিছু কাজ আছে, যা একক
প্রচেষ্টায় করা যায় না। কাজের ধরণই এমন যে তা সামষ্টিক প্রচেষ্টায় তা করতে হয়। আর
সামষ্টিক প্রচেষ্টায় কোন কাজ করতে গেলে সেখানে প্রত্যেককে নিজের কথা বুঝাতে হয়।
সেখানে অন্যের কথা বুঝতে হয়। সেখানে
থাকবেঃ
-
মেজাজের পার্থক্য।
-
যোগ্যতার পার্থক্য।
-
ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য।
-
উপরোক্ত সকল ধরণের পার্থক্যকে সমন্বয় করে
সামঞ্জস্যের সৃষ্টি করতে হয়-না হলে সহযোগিতা পাওয়া সম্ভব হয় না।
·
সামঞ্জস্য সৃষ্টির জন্য
প্রয়োজন দীনতা। আর দীনতা থাকে ভারসাম্যপূর্ণ মেজাজের অধিকারীদের মাঝে-যাদের চিন্তা
ও মেজাজে সমতা রয়েছে।
-
ভারসাম্যহীন লোকদের ঐক্য বেশীদিন টিকে না।
-
একেক ভারসাম্য ওয়ালাদের নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন
গ্রুপ তৈরী হয়।
-
তারপর দেখা দেয় ভাঙ্গন।
-
অবশেষে দেখা যায় গ্রুপে নেতা আছে কর্মী নাই
অবস্থা।
·
সামষ্টিক ভারসাম্যহীনায়
করণীয়ঃ
-
ইহতেছাব বা আত্মপর্যালোচনার মাধ্যমে নিজেদেরকে
বাঁচাতে হবে ভারসাম্যহীনতা জনিত সকল সমস্যা থেকে।
-
দলের সীমার মাঝে যাতে এই রোগ বাড়তে না পারে,
তার জন্য নিতে হবে ব্যবস্থা।
-
রোগে আক্রান্তদের চরমপন্থা অবলম্বন সম্পর্কিত
কুরআ সুন্নাহর নির্দেশাবলী শুনাতে হবে।
·
কুরআন দ্বীনের ব্যাপারে
অত্যাধিক বাড়াবাড়ি আহলে কিতাবদের মৌলিক ভ্রান্তি বলে গন্য করেছেঃ
﴿يَا
أَهْلَ الْكِتَابِ لَا تَغْلُوا فِي دِينِكُمْ﴾
হে আহলে কিতাব! নিজেদের দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না। (সূরা আন নিসাঃ ১৭১)
·
রাসূল সা. বলেছেনঃ
عن عبد الله بن عباس < قال قال رسول الله ﷺ إياكم والغُلُوَّ فإنما أهلك من
كان قبلكم الغُلُوُّ.
সাবধান! তোমরা একদেশদর্শীতা ও চরমপন্থা অবলম্বন করো না। কারণ তোমাদের
পূর্ববর্তীরা দ্বীনের ব্যাপারে চরমপন্থা অবলম্বন করেই ধ্বংস হয়েছে।
عَنِ ابنِ مَسْعودٍ < أنَّ النَّبيَّ ﷺ قال: «هَلَكَ المُتنَطِّعونَ»
قالها ثلاثًا. رواه مسلم.
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, রাসূল সা. এক বক্তৃতায় তিনবার বললেনঃ
হালাকাল মুতানাত্তিয়ুন-অর্থাৎ কঠোরতা অবলম্বনকারী ও বাড়াবাড়ির পথ আশ্রয়কারীরা
ধ্বংস হয়ে গেলো।
عن صُدَيِّ بن عجلان < أنه ﷺ قال: إني لم أبعث باليهودية ولا بالنصرانية،
ولكني بعثت بالحنيفية السمحة.
রাসূল সা. তাঁর দাওয়াতের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা প্রসংগে বলেনঃ অর্থাৎ তিনি
পূর্ববর্তী উম্মতের
প্রান্তিকতার মধ্যে এমন ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা এনেছেন, যার মধ্যে
ব্যাপকতা ও জীবন ধারার প্রত্যেকটি দিকের প্রতি নজর দেয়া হয়েছে।
·
দায়ীদের কাজের পদ্ধতি
সম্পর্কে হাদীসে রাসূলে কি বলা হয়েছে?
عن أنس < قال: قال رسول الله ﷺ يسِّروا ولا تعسِّروا وبشِّروا
ولا تنفِّروا.
সহজ করো, কঠিন করো না, সংসংবাদ দাও, ঘৃণা সৃষ্টি করো না।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ < قَالَ دَخَلَ أَعْرَابِيٌّ الْمَسْجِدَ
وَالنَّبِيُّ ﷺ جَالِسٌ قَالَ: فَقَامَ فَصَلَّى، فَلَمَّا فَرَغَ مِنْ صَلَاتِهِ،
قَالَ: اللَّهُمُّ ارْحَمْنِي وَمُحَمَّدًا، وَلَا تَرْحَمْ مَعَنَا أَحَدًا،
فَالْتَفَتَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ فَقَالَ: لَقَدْ تَحَجَّرْتَ وَاسِعًا، فَمَا لَبِثَ
أَنْ بَالَ فِي الْمَسْجِدِ، فَأَسْرَعَ النَّاسُ إِلَيْهِ، فَقَالَ رَسُولُ
اللَّهِ ﷺ أَهْرِيقُوا عَلَيْهِ سَجْلًا مِنْ مَاءٍ، أَوْ دَلْوًا مِنْ مَاءٍ، ثُمَّ قَالَ: إِنَّمَا بُعِثْتُمْ
مُيَسِّرِينَ، وَلَمْ تُبْعَثُوا مُعَسِّرِينَ.
তোমাকে সহজ করার জন্য পাঠানো হয়েছে, কঠিন করার জন্যে নয়।
عن عائشة < أنها قالت: ما خير رسول الله ﷺ بين أمرين قط إلا
أخذ أيسرهما ما لم يكن إثما، فإن كان إثما كان أبعد الناس منه، وما انتقم رسول
الله ﷺ لنفسه في شيء قط إلا أن تنتهك حرمة الله فينتقم بها لله.
কখনো এমন হয়নি যে, রাসূলুল্লাহ সা. দূ’টি বিষয়ের মধ্যে একটি অবলম্বন করার
সুযোগ দেয়া হয়েছে এবং তিনি তার মধ্য থেকে সবচাইতে সহজটাকে গ্রহণ করেননি, তবে যদি
তা গোনাহের নামান্তর না হয়ে থাকে।
عن عائشة < قالت: قال رسول الله ﷺ إن الله يحب الرِّفق في
الأمر كله.
আল্লাহ কোমল ব্যবহার করে, তাই তিনি সকল ব্যাপারে কোমল ব্যবহার পছন্দ করেন।
عن جرير بن عبدالله < قال: سمعت رسول الله ﷺ يقول: مَن يُحرَمِ الرِّفقَ
يُحرَمِ الخيرَ كلَّه.
যে ব্যক্তি কোমল ব্যবহার থেকে বঞ্চিত যে কল্যাণ থেকেও সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত।
عن عائشة < أَن النبيَّ ﷺ قَالَ: إِنَّ اللَّهَ رَفِيقٌ يُحِبُّ الرِّفقَ، وَيُعْطِي
على الرِّفق ما لا يُعطي عَلى العُنفِ، وَما لا يُعْطِي عَلى مَا سِوَاهُ.
আল্লাহ কোমল ব্যবহার করেন এবং তিনি কোমল ব্যবহারকারী ব্যক্তিকে পছন্দ করেন।
তিনি কোমলতার ফলে এমন কিছু দান করেন যে কঠোরতা ও অন্য কোন ব্যবহারের ফলে দান করেন
না।
·
যারা ইসলামী জীবন ব্যবস্থা
প্রতিষ্ঠা করতে চান, কুরআন সুন্নাহ থেকে নিজ মর্জি অনুযায়ী বাছাই না করে বরং নিজের
স্বভাব-চরিত্র, দৃষ্টিভংগীকে কুরআন সুন্নাহর এই দৃষ্টিভংগী অনুযায়ী ঢালাই করার
অভ্যাস করেন, তাহলে তাদের মধ্যে ভারসাম্য ও সমতাপূর্ণ চারিত্রিক গুণাবলী
স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৃষ্টি হবে।
ঘ. সংকীর্ণমনতাঃ
·
কুরআনে এই দূর্বলতাকে বলা
হয়েছেঃ
-
“শুহহে নাফস” বা মনের সংকীর্ণতা।
-
তাকওয়া ও ইহসানের বদলে একটি ভ্রান্ত ঝোঁক
প্রবণতা।
﴿وَمَن
يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ﴾
যে ব্যক্তি মনের সংকীর্ণতা থেকে রেহাই পেয়েছে, সে-ই সাফল্য ভাল করেছে। (সূরা
হাশরঃ ৯)
﴿وَأُحْضِرَتِ
الْأَنفُسُ الشُّحَّ ۚ وَإِن تُحْسِنُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ بِمَا
تَعْمَلُونَ خَبِيرًا﴾
মন দ্রুত সংকীর্ণতার দিকে ঝুঁকে পড়ে৷ কিন্তু যদি তোমরা পরোপকার করো
ও আল্লাহভীতি সহকারে কাজ করো, তাহলে
নিশ্চিত জেনে রাখো, আল্লাহ তোমাদের এই কর্মনীতি সম্পর্কে
অনবহিত থাকবেন না। (সূরা আন নিসাঃ ১২৮)
·
এই রোগে
যিনি আক্রান্ত হোন,
-
তিনি নিজের জীবন ও পরিবেশে
অন্যের জন্য খুব কম স্থান রাখতে চান।
-
অপর দিকে নিজে যতই
বিস্তৃতি হোন না কেন, তার কাছে তা খুব সংকীর্ণ মনে হয়।
-
অন্যরা যতই সংকুচিত হোক,
উনার কাছে লাগে তারা অনেক বিস্তৃত।
-
নিজের জন্য সুযোগ সুবিধা
চান, অন্যের জন্য কোন সুযোগ সুবিধা দিতে চান না।
-
নিজের দোষ ক্ষমার যোগ্য
মনে করেন, অন্যের দোষ ক্ষমা করতে চান না।
-
নিজের অসুবিধাকে অসুবিধা
মনে করেন, অন্যের অসুবিধাকে বাহানা মনে করেন।
-
নিজের দূর্বলতার কারণে যে
সব সুবিধা ভোগ করেন, অন্যকে সে সুবিধা দিতে চান না।
-
অনেক অক্ষমতায় চরমপন্থা
অবলম্বন করলেও নিজের অক্ষমতায় সে পন্থা অবলম্বনে রাজী নন।
-
নিজের পছন্দ, অপছন্দ এবং রুচি
অন্যের উপর চাপিয়ে দেন, অন্যের পছন্দ, অপছন্দ এবং রুচির সম্মাণ করেন না।
-
তার অসৎ গুণ বাড়তে বাড়তে
তার চোগলখোরী ও অন্যের দোষ খুঁজে বেড়ানো এমন বাড়ে যে, অন্যের সামান্য দোষেরও তিনি
সমালোচনা করেন, কিন্তু নিজের দোষের সমালোচনা সহ্য না করে লাফিয়ে উঠেন।
·
এই সংকীর্ণমনতার আরেক রূপ
হলোঃ
ক্রোধান্বিত হওয়া, অহংকার
করা, পরস্পরকে বরদাশত না করা। এমন ব্যক্তি সমাজ জীবনে সকলের জন্য বিপদ স্বরূপ।
·
দলের মাঝে এই রোগের প্রবেশ
বিপদের একটি আলামত।
·
দলবন্ধ প্রচেষ্টার দাবী
হলোঃ পাস্পরিক ভালবাসা ও সহযোগিতা।
·
সংকীর্ণমতা ভালবাসা ও
সহযোগিতার সম্ভাবনা হ্রাস করে, ধ্বংস করে।
·
সংকীর্ণমতার ফল হলোঃ
সম্পর্কের তিক্ততা ও পারস্পরিক ঘৃণা। যা মানুষের মন ভেঙে দেয়, পাস্পরিক সংঘর্ষে
লিপ্ত করে।
·
সংকীর্ণমতার অধিকারীরা কোন
মহান উদ্দেশ্য সাধন করা তো দূরের কথা, সাধারণ সমাজ জীবনের জন্যও উপযোগী নয়।
·
ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা
প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের উপযোগী গুণাবলীর সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী গুণ হলো
সংকীর্ণমনতা।
ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা
প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন সংকীর্ণমতা, কৃপণতা, শাস্তি ও কঠোরতার পরিবর্তে উদারতা,
দানশীলতা, ক্ষমা ও কোমলতা। প্রয়োজন ধৈর্যশীল ও সহিষ্ঞু লোক।
·
ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা
প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব কেবল তারাই পালন করতে পারে। যারাঃ
-
উদার হৃদয়ের অধিকারী।
-
নিজেদের ব্যাপারে কঠোর, অন্যের ব্যাপারে কোমল।
-
নিজেদের ব্যাপারে চায় সর্বনিম্ন সুবিধা,
অন্যের ব্যাপারে চায় সর্বোচ্চ সুবিধা।
-
নিজেদের দোষ দেখে, অন্যদের গুণ দেখে।
-
কষ্ট দেয়ার চেয়ে কষ্ট বরদাশতকারী।
-
চলন্ত ব্যক্তিদের ঠেলে ফেলে দেয় না।
-
পড়ে যাওয়া ব্যক্তিদের হাত ধরে তোলে আনে।
·
আর এই ধরণের ব্যক্তিদের
নিয়ে যে দল সে দল শুধু নিজেদের মজবুত ভাবে সংযুক্ত রাখবে তা নয়, বরং সমাজের বিক্ষিপ্ত
অংশকে করবে বিন্যস্ত ও সংযুক্ত।
·
সংকীর্ণমনারা নিজেরাই হবে
বিক্ষিপ্ত। আর বাহিরের যারা দলে আসবে, তারাও সংকীর্ণমনাদের ঘৃণা করবে।
ঙ. দূর্বল সংকল্পঃ
·
দূর্বল সংকল্প কি?
-
আন্দোলনে আন্তরিকতার সাথে যোগ দেয়।
-
প্রথম দিকে জোশে কাজ করে, সময় গেলে জোশ ভাঁটা
পড়লে নিস্তেজ হয়ে যায়।
-
ফলে যে উদ্দেশ্যের কারণে আন্দোলনে যোগদান
করেছিল, সেই উদ্দেশ্যের সাথে সংযোগ থাকে না।
-
কিন্তু যে যুক্তির ভিত্তিতে সে আন্দোলনে
এসেছিল, তা এখনো মানে, তাকে সত্য বলে ঘোষনা করে এবং মন দিয়েও সাক্ষ্য দেয় যে, এই
কাজটা হওয়া উচিত।
-
তার আবেগ চলে যাওয়ায় সে নিষ্কৃয় হয়ে যায়,
কিন্তু তার মাঝে অসৎউদ্দেশ্য স্থান পায় না।
-
সে লক্ষ্য থেকে সরে না, আদর্শও বদলায় না।
-
সে দল ত্যাগেরও চিন্তা করে না।
·
সংকল্পের দূর্বতা প্রকাশ
পায় যে সকল উপায়েঃ
-
প্রথম দিকে কাজে ফাঁকি দেয়া।
-
দায়িত্ব গ্রহণে ইতস্ততঃ করা।
-
সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয়ে পিছপা হওয়া।
-
দুনিয়ার কাজকে অগ্রাধিকার দেয়া।
-
সময়, শ্রম ও সম্পদে দ্বীনকে জীবনোদ্দেশ্যের
অংশ হ্রাস পাওয়া।
-
দলের সাথে যান্ত্রিক ও নিয়মানুগ সম্পর্ক রাখা।
-
দলের ভালমন্দের সাথে কোন সম্পর্ক না থাকা।
-
দলের বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ না করা।
·
দূর্বল রোগে আক্রান্ত হলে
মানুষের অবস্থা হয় তেমন, যৌবনের পর বার্ধক্য আসে ক্রমান্বয়ে যেমন।
·
এ অবস্থা থেকে বাঁচতে হলেঃ
-
নিজে সচেতন হতে হবে।
-
অন্য কেউ সচেতন করে দিতে হবে।
-
এই দুই অবস্থা না হলে ক্রমান্বয়ে এমন অবস্থা
হবে যে, যে কাজটাকে জীবনের উদ্দেশ্য মনে করা হয়েছিল এক সময়, যে কাজের জন্য নিজের
ধন প্রাণ উৎসর্গ করার নিয়ত করেছিল এক সময়, সেই কাজের সাথে কি আচরণ করা হচ্ছে তা
চিন্তা করারও প্রয়োজন মনে করবে না।
-
এমন কি এ ধরণের গাফলতি আর অজ্ঞানতার কারণে
মানুষের আগ্রহ ও সম্পর্ক হবে নিষ্প্রাণ এবং এই অবস্থায়ই তার মৃত্যু হবে।
·
দলীয় ভাবে করণীঃ
-
দলীয় জীবনে দূর্বল সংকল্পের মানুষের ছোঁয়াছে
দূর্বল চিত্তের ব্যক্তিরা আক্রান্ত হবে এবং নিষ্কৃয় হবে।
-
তাদের উদাহরণ হলোঃ অন্যের দেখাদেখি জান্নাতের
পথ পরিহার করা। মনের রাখতে হবেঃ
o
জান্নাত আমাদের ব্যক্তিগত মকসুদে মনজিল।
o
অন্য গেলে আমি জান্নাতে যাবো-এমন শর্তে আমি
জান্নাতের পথ ধরিনি।
·
দূর্বল সংকল্পধারীদের
লক্ষণ হলোঃ
-
তাদের দৃষ্টান্ত থাকে নিষ্কৃয় লোকেরা।
-
সক্রিয়দরে মাঝে তারা কোন অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত
পায় না।
·
দূর্বল সংকল্প নামক রোগে আক্রান্ত হলে আরো বহু দূর্বলতা প্রকাশ
পায়-সাইড এ্যাফেক্ট হিসাবে। আর বেশীর ভাগ
লোক এই সাইড এ্যাফেক্ট থেকে বাঁচতে পারে না।
·
মানুষের ফিতরাত হলোঃ
-
নিজে দূর্বল একথা মানতে পারে না।
-
সংকল্পে দূর্বলতা দেখা দিয়েছে, এটা স্বীকার
করে না।
-
দূর্বলতাকে ঢাকা দিতে একের পর এক নিকৃষ্টতম পথ
অবলম্বন করে।
-
কাজ না করার জন্য নানান টালবাহানা করা।
-
কোন ভূয়া ওজর দেখিয়ে সাথীদের ধোঁকা দেয়া।
-
নিষ্ক্রিয়তাকে সাহায্য করার জন্য মিথ্যাকে
আহবান করা।
-
মানোন্নয়নের চেষ্টা পরিহারের মাধ্যমে অধ্বঃপতন
শুরু হয়।
·
বাহানা যখন পুরাতন হয়ে
নিরর্থক প্রমাণিত হয়, তখন দলের দোষ ত্রুটিতে মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত বলে প্রকাশ করে।
তবুও নিজের দূর্বলতার কারণে নিষ্কৃয় এটা স্বীকার করে না।
-
যেমন নিজে অনেক কিছু করতে চেয়েছি-সাথীদের
বিকৃতি ও ভ্রান্তি মন ভেঙে দিয়েছে।
-
পরক্ষণে নিজে দাড়াতে না পেরে নিচে নেমে যায়।
-
দূর্বলতার কারণে যে কাজ করতে পারেনি, তা নষ্ট
করতে থাকে।
·
প্রথম দিকে মানসিক আঘাত
চাপা ও অস্পষ্ট থাকে। প্রকাশ করে না। দলের সাথীরা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিলে চিকিৎসার
মাধ্যমে পতন রোধ সম্ভব।
·
কিন্তুঃ
-
অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা সফল হয়না। বরং বিভিন্ন
ব্যক্তির খুঁত আবিস্কার করে।
-
নিজেকে দূর্বলতামুক্ত মর্দে কামিল হিসাবে
উপস্থাপন করে।
-
শয়তান প্ররোচিত করে। ফলে সে যে কাজে সময়
দিচ্ছে, তার স্থলে সংগঠনের কাজ করার জন্য একই সময় দেয়া দরকার ছিল-তা ভূলে যায়।
·
প্রকৃত সঠিক পথ হলোঃ
-
দূর্বলতা দেখলে নিজে নিষ্কৃয় না হয়ে দূর্বলতা
নিরসনে কাজ করা। যেমন নিজের ঘরে আগুন লাগলে বসে না থেকে নিভানোর জন্য চেষ্টা করা।
·
দূর্বল সংকল্পধারীদের
দূঃখজনক দিকঃ
-
নিজের ভূল ঢাকবার উদ্দেশ্যে নিজের আমল নামার
সকল হিসাব অন্যের আমল নামায় বসিয়ে দেয়া।
-
যে দোষে অন্যকে দোষী সাবস্ত করা হয়, সে দোষে
নিজে আক্রান্ত একথা ভূলে যাওয়া।
-
নিজে যখন দূর্বলতার সমালোচনা করে, তখন তার
বক্তব্য দেখে মনে হয় যে, সে যেন এসব দূর্বলতা থেকে মুক্ত।
·
মনে রাখতে হবেঃ
-
দল চালায় মানুষ। আর মানুষের কোন দল দূর্বলতাশূণ্য হয় না।
-
মানুষের কোন কাজ ত্রুটিমুক্ত হয় না।
-
ফেরেশতার মতো নির্ভূল ভাবে কাজ করা দুনিয়ায়
কখনো হয়নি, হবেও না।
-
দূর্বলতা নেই এমন দাবী কখনো করা যাবে না।
-
মানুষ চেষ্টা করবে পূর্ণ মানে পৌছার জন্য।
কিন্তু তারপরও মানুষের কাজ সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত ও নিষ্কলঙ্ক হওয়ার সম্ভাবনা নাই।
·
সংকল্পের দূর্বলতায়
আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যাপারে কথাঃ
-
দূর্বলতা বা দোষ ত্রুটি দূর করে মানের পৌছার
জন্য দোষ গুলোকে চিহ্নিত করা-এটা ভাল কাজ।
-
দূর্বলতা দূরীকরণের চেষ্টার মাধ্যমে সংশোধন ও
উন্নতি। গাফলতিতে ধ্বংস।
-
কাজ না করার জন্য ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক দোষত্রুটি
তালাশ করা শয়তানের ওয়াসওয়াসা ও নফেসের কুটকৌশল।
-
টালবাহানাকারী ব্যক্তি যে কোন অবস্থায় বাহানায়
আশ্রয় গ্রহণ করতে পারে। ফেরেশতারা মানুষের স্থলাভিষিক্ত না হওয়া অবধি এই বাহাবাজীর
অবসান সম্ভব নয়।
-
বাহানা পেশ করার আগে উচিত নিজের দূর্বলতা ও
দোষত্রুটিমুক্ত হবার প্রমাণ পেশ করা।
-
বাহানাবাজির মাধ্যমে দূর্বলতা ও দোষত্রুটি দূর
হয়না, বরং বাড়ে।
-
বাহানাবাজরা সব সময় অন্যান্য দূর্বলমনাদের
দৃষ্টান্ত পেশ করে।
-
বাহানাবাজ নিজের দূর্বলতা প্রকাশ করে সমাজে
উপহাসের পাত্র হতে চায় না। তাই সে নিজের মনকে ধোঁকা দেয়।
-
নিস্কৃয় ব্যক্তিরা সেই বাহানাবাজের অনুসরণ করে
মানসিক পীড়ার ভান করে সাথীদের দূর্বলতা ও দোষ ত্রুটির ফিরিস্তি তৈরী করে।
-
এর মাধ্যমে শুরু হয় অসৎ কাজের সিলসিলা। ফলে দল
হয় দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান ও দোষারোপ ও পাল্টা দোষারোপে রোগে আক্রান্ত। ফলে নৈতিক
চরিত্র হয় বিনষ্ট।
-
এই সিলসিলার ফলে ভাল কর্মীরাও প্রভাবিত হয়ে
মানসিক পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়।
-
এই রোগের চিকিৎসার উদ্দেশ্যে সংগঠন কোন
পদক্ষেপ নিলে বাহানাবাজরা হয় সংগঠিত। গড়ে উঠে ব্লক, শুরু হয় আন্দোলন, প্রমাণ
সংগ্রহ করা সাংগঠনিক কাজে রূপ নেয়। আসল কাজে এতো দিন যারা নিষ্কৃয়, তারা হয়ে উঠেন
সক্রিয়।
-
তাদের এই অবস্থা মনে হয় মৃত ব্যক্তি জীবন্ত
হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই জীবন লাভ মৃত্যুর চাইতেও শোকাবহ।
·
দূর্বল সংকল্প প্রতিরোধে
দলের করণীয়ঃ
-
এটি একটি বিপদ-তাই বিপদ থেকে সাবধান থাকা।
-
জনশক্তি তথা কর্মী ও দায়িত্বশীলদেরকে দূর্বল
সংকল্পের মাধ্যমে কি ক্ষতি হয়, তার একক রূপ কি, তার মিশ্রিত রূপ কি, তার প্রভাব ও
ফলাফল কি ইত্যাদি ভালভাবে জানতে হবে।
-
শুরুতেই তার সংশোধনের উদ্যোগী হতে হবে।
-
সংকল্পের দূর্বলতার মৌলিক রূপ হলোঃ কাজকে সত্য
মনে করা, দলকে যথার্থ মনে করা, কিন্তু নিজে নিষ্ক্রিয় থাকা, কাজে অনীহা থাকা। তা
থেকে প্রতিকারের উপায় সমূহঃ
প্রথম
করণীয়ঃ
-
আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থা জানা।
-
নিষ্ক্রিয়তার আসল কারণ জানা।
-
সত্যিকার অসুবিধা পাওয়া গেলেঃ
o
সংগঠনকে অবগত করা।
o
রোগ দূর করার জন্য সহযোগীতা করা।
o
নিষ্ক্রিয়তার ভূল অর্থ গ্রহণ না করা।
o
অন্য দৃষ্টান্ত থেকে প্রভাবিত না হওয়া।
-
সত্যিকার অসুবিধা সংকল্পের দূর্বলতা হলেঃ
o
আজে বাজে পথে অগ্রসর না হওয়া।
o
বুদ্ধিমত্তার সাথে সংগঠনের সামনে আলাদা ভাবে
তুলে ধরা।
দ্বিতীয়
করণীয়ঃ
-
সংকল্পে দূর্বলতায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে সংগঠন
আলোচনা ও উপদেশের মাধ্যমে দূর্বলতা দূর করার চেষ্টা করা।
-
সংগঠনের ভাল ভাল লোকদের প্রতি নজর দেয়া।
-
মৃতপ্রায় প্রেরণাকে উদ্দীপ্ত করা।
-
সাথে রেখে সক্রিয় করার চেষ্টা করা।
তৃতীয়
করণীয়ঃ
-
দূর্বলতায় আক্রান্ত ব্যক্তির সমালোচনা করতে
থাকা।
-
তার নিষ্ক্রিয়তা ও গাফলতিকে মামুলী বিষয়ে
পরিণত না করা।
-
অন্যরা যাতে একেকজনের কাঁধে ভর দিয়ে বসে যেতে
না থাকে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা।
-
সময় শ্রম ও অর্থ ব্যয়ের সামর্থ ও সে অনুযায়ী
ব্যয় পর্যালোচনা করা।
-
যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মতৎপরতার হার পর্যালোচনা।
-
ব্যক্তিকে এই উদ্দেশ্যে লজ্জিত করা, যাতে সে
নিষ্ক্রিয়তা থেকে বাঁচতে পারে।
-
সমালোচনা নিয়ন্ত্রিত হওয়া, যাতে রোগ আরো বেড়ে
না যায়।
-
রোগ কমাতে না পারলেও বাড়তে না দেয়ার জন্য
বুদ্ধিভিত্তিক পথ গ্রহণ করা।
·
সংকল্পে দূর্বলতার মিশ্রিত
রূপ হলোঃ
-
নিজের দূর্বলতার উপর মিথ্যা ও প্রতারণার
প্রলেপ লাগাবার চেষ্টা।
-
নিজের মাঝে কোন ত্রুটি নাই-এমন প্রমাণের
চেষ্টা।
-
ত্রুটি যা আছে, তা সংগঠনের মাঝে-এমন প্রমাণের
চেষ্টা।
-
এমন চেষ্টা শুধু দূর্বলতা নয়, এটি একটি অসৎ
চরিত্রের প্রকাশও বটে।
-
যে সংগঠন পুরো দুনিয়াকে সংশোধন করতে চায় সততা
ও নৈতিকতা দিয়ে, সেই সংগঠনে এই ধরণের প্রবণতার বিকাশ ও লালন করা ঠিক নয়।
·
সংকল্পে দূর্বলতার রোগে
আক্রান্তরাঃ
1. প্রথম
দিকে কাজ না করার জন্য মিথ্যা ওজর ও বাহানা পেশ করে।
2. দ্বিতীয়
পর্যায়ে নিজের নিষ্ক্রিয়তার জন্য সংগঠনের ভাইদের দূর্বলতা ও সংগঠনের
অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে।
এই দুই ধরণের লোকদের বেলায়
করণীয়ঃ
১. ওজর ও বাহানা
পেশকারীদের বেলায়-
-
মিথ্যা ওজর ও বাহানাকে উপেক্ষা করা যাবে না।
-
উপপেক্ষা করা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাথে
বিশ্বাসঘাতকতা করা।
-
এটি একটি নৈতিক দোষ, যা সংগঠনের সাথে
বিশ্বাসঘাতকতারূপে প্রমাণিত হয়।
-
এই সংগঠনের সাথে যারা সংযুক্ত-তারা একটি মহান
উদ্দেশ্যের জন্য জাল-মাল কুরবানী করার ওয়াদা করেছেন।
-
এমন দলের স্টান্ডার্ড হলোঃ নিজের দূর্বলতার
জন্য কাজ করতে না পারলেও কমপক্ষে নিজের দূর্বলতাকে স্বীকার করার নৈতিক সাহস ও
বিবেক থাকা।
-
দূর্বলতা ঢাকার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নেয়ার চেয়ে
দূর্বলতা স্বীকার করে সারা জীবন দূর্বলতার মাঝে থাকা অনেক ভাল।
-
যে ব্যক্তি মিথ্যা ওজর ও বাহানা পেশ করে, তা
প্রকাশিত হলে সাথে তার নিরিবিলি সমালোচনা করা ও দূর্বলতাকে উৎসাহিত না করা।
-
একক সমালোচনায় কাজ না হলে দলীয় সমালোচনা করতে
হবে এবং দলের সকলের সামনে তার অবস্থা উম্মুক্ত করা।
২. সংগঠনের ভাই ও সংগঠনকে
দায়ীকারীদের বেলায়-
-
মনে রাখতে হবে-এ অবস্থা হচ্ছে বিপদের
সিগন্যাল-এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ফেতনা সৃষ্টির দিকে অগ্রসর হচ্ছেন।
-
এমন ব্যক্তিকে তার তৎপরতা সম্পর্কে প্রশ্ন করা
যাবে না।
-
তাকে দোষারোপ না করে তাকে আল্লাহর ভয় দেখানো।
-
তার ত্রুটিপূর্ণ কর্ম ও চরিত্র উপস্থাপন করে
তাকে লজ্জাপ্রদান করা।
-
পরিশ্রমকারী, সক্রিয় ও তৎপর থাকার যাদের অতীত
আছে, অর্থ ও সময়ের কুরবানীর যাদের ইতিহাস আছে, তাদের নিষ্কৃয়তাকে যুক্তিসংগত ধরে
নিয়ে তার ব্যক্তি ও সংগঠনকে দায়ী করাকে যুক্তি সংগত মানতে হবে। কিন্তু তার তৎপরতা
অন্যর জন্য উদাহরণ হচ্ছে এবং সংগঠনের ক্ষতি করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে, এটা তাকে
বুঝাতে হবে।
-
এই ধরণের ব্যক্তিদের অভিযোগ জানার ব্যাপারে
গড়িমসি ও সংশোধনে বিরত থাকার ঠিক নয়।
-
তাদেরকে বুঝাতে হবে, যাতে তারা দলের জানবাজ
কর্মীদের কাজগুলোকে বেশী করে বলা উচিত।
-
কাজে ফাঁকি দেয়া, ঢিলেমী দেখানো ও ত্রুটিযুক্ত
কাজ করা লোকই দলের ত্রুটি ও দূর্বলতা বর্ণনা করে-যা নৈতিক আন্দোলনে নির্লজ্জতার
নামান্তর।
-
নৈতিক আন্দোলনের বৈশিষ্ট হলোঃ অন্যের সমালোচনা
নয়, কেবল নিজের লজ্জা, ত্রুটি স্বীকার করা, সমালোচনা করা ও সংস্কার করা।
·
নীতিগত কথাঃ
-
একটি দলে সুস্থ ও অসুস্থ দুই ধরণের অংগ থাকে,
তাদের অনুভূতিও দুই রকমের হয়ে থাকে। যেমনঃ
o
সুস্থ অংগ সব সময় নিজের কাজে মগ্ন থাকে। কাজকে
সফলতার দিকে নিয়ে যাওয়াই তার ধন, মন, প্রাণ সবকিছু।
o
অসুস্থ অংগ সব সময় নিজ সামর্থ অনুযায়ী কাজ করে
না। কিছুদিন তৎপর, কিছুদিন নিষ্ক্রিয়।
-
এই দুই ধরণের অনুভূতির উদাহরণ হলোঃ
১. সুস্থ চোঁখের
দৃষ্টিশক্তি।
২. অসুস্থ চোঁখের
দৃষ্টিশক্তি।
-
দল নিজের দূর্বলতা ও ত্রুটি সম্পর্কে জ্ঞান
লাভ করার মাধ্যম হলো দলের সুস্থ অংগ সমূহের অনুভূতি।
-
অসুস্থ অংগের অনুভূতির মাধ্যমে যা পাওয়া যায়,
তা নির্ভরযোগ্য নয়।
-
যে দল আত্মহত্যা করতে চায় না, সে দল অসুস্থ
অংগের অনুভূতিকে ভিত্তি ধরে ফলাফল নির্ধারণ করতে পারে না।
·
করণীয়ঃ
-
ত্রুটি ও দূর্বলতা শুনার সাথে সাথে তাওবা ও
ইস্তেগফার করা।
-
আর মনে রাখতে হবেঃ নিজের ক্ষমতা ও যোগ্যতা
সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করা যেমন অজ্ঞতা, তেমনি যে কোন মন্তব্যকারীর মন্তব্যের
ভিত্তিতে নিজের ত্রুটি ও কর্মক্ষমতা আন্দাজ করাও এক ধরণের অজ্ঞতা।
·
মনে রাখতে হবে, যে দল
আদর্শ বাস্তবায়ন করতে চায়, তার সামনে কাজের যোগ্যতা ও নৈতিকতার দুইটি ভিন্ন মানঃ
১. সর্বোচ্চ মান বা অভিষ্ট
মান-যে মানে পৌছার জন্য থাকবে সব সময় চেষ্টা ও সাধান।
২. সর্বনিম্ন মান বা কাজের
উপযোগী হওয়ার নূন্যতম মান-যে মান নিয়ে কাজ চালানো যায়, তবে এর নিচে মান যেতে পারবে
না।
·
উপরোক্ত দুই ধরণের লোক
সম্পর্কে বিভিন্ন মানসিকতার লোক রয়েছে, যাদের কর্মপদ্ধতিও ভিন্ন ধরণের। যেমনঃ
-
যারা আসল উদ্দেশ্যের জন্য কাজ করাকে গুরুত্ব
দেয় না। বিধায় তার ধন মন সময় শক্তির কোন ক্ষতি হয় না।
-
তারা অভিষ্ট লক্ষ্যের চেয়ে কম মানে কিছুতেই
সন্তুষ্ট হয়না।
-
অভিষ্ট মানের চেয়ে কম দেখলেই অস্থিরতা, বিরূপতা
প্রকাশ করে।
-
সচেতন বা অবচেতন সকল অবস্থায় পলায়ন করার জন্য
অস্থিরতা ও বিরূপতার প্রকাশ ঘটায়।
·
দ্বিতীয় ধরণের মানসিকতার
লোক,
-
তারা উদ্দেশ্যের জন্য কাজ করাকে অধিক গুরুত্ব
দেয়।
-
তারা ভাববাদী। বিধায় তারা অনুধাবন করে যে,
অভীষ্ট মান ও কার্যোপযোগী হবার সর্বনিম্ন মানের মাঝে কি পার্থক্য রয়েছে।
-
এই ধরণের ব্যক্তি বারবার দোটানায় পড়ে।
-
তারা নিজেরা পেরেশানী করে, অন্যদেরকেও
পেরেশানীর মধ্যে ফেলে।
·
এই দুইটি মানের পর তৃতীয়
আরেকটি মান রয়েছে। তৃতীয় ধরণের মানসিকতার লোক-
-
যারা যথার্থ উদ্দেশ্যের জন্য কাজ করে।
-
কাজের ব্যর্থতা ও সফলতার দায়িত্ব তাদের উপর-এ
অনুভূতি তারা রাখে।
-
তারা উপরোক্ত দুই ধরণের মানের পার্থক্য রাখে।
-
কোন গুরুত্বপূর্ণ ও যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়া
উদ্দেশ্যের দিকে অগ্রগতি তাদেরকে প্রভাবিত করতে পারে না।
-
তারা কখনো অভীষ্ট মানের কথা ভূলে না।
-
তারা সর্বনিম্ন মানের প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে
থাকে উৎকন্ঠিত। তবুও সর্বনিম্ন মানের মাধ্যমে কাজ চালিয়ে নেয়।
·
একমাত্র তৃতীয় ধরণের
মানসিকতাই সহায়ক ও সাহায্যকারী হতে পারে। আমাদেরকে এই ধরণের মানসিকতা গড়ে তুলতে
হবে।
0 Comments