অন্ধকারঃ
অন্ধকার মানে মূর্খতা ও অজ্ঞতার অন্ধকার। যে অন্ধকারে পথ হারিয়ে মানুষের নিজের
কল্যাণ ও সাফল্যের পথ থেকে দূরে সরে যায় এবং সত্যের বিরুদ্ধাচরণ করে নিজের সমস্ত
শক্তি ও প্রচেষ্টাকে ভুল পথে পরিচালিত করে।
আখেরাতঃ
একটি ব্যাপক ও পরিপূর্ণ অর্থবোধক শব্দ। আকীদা-বিশ্বাসের বিভিন্ন
উপাদানের সমষ্টির ভিত্তিতে এ আখেরাতের ভাবধারা গড়ে উঠেছে। বিশ্বাসের নিম্নোক্ত
উপাদানগলো এর অন্তরভুক্ত। একঃ এ দুনিয়ায় মানুষ কোন
দায়িত্বহীন জীব নয়। বরং নিজের সমস্ত কাজের জন্য তাকে আল্লাহর সামনে জবাবদিহি করতে হবে। দুইঃ দুনিয়ার বর্তমান ব্যবস্থা
চিরন্তন নয়। এক সময় এর মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে এবং সে সময়টা একমাত্র আল্লাহই জানেন। তিনঃ এ দুনিয়া শেষ হবার পর আল্লাহ
আর একটি দুনিয়া তৈরি করবেন। সৃষ্টির আদি থেকে নিয়ে
কিয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীতে যত মানুষের জন্ম হয়েছে সবাইকে সেখানে একই সংগে পুনর্বার
সৃষ্টি করবেন। সবাইকে একত্র করে তাদের কর্মকান্ডের হিসেব নেবেন। সবাইকে তার কাজের পূর্ণ
প্রতিদান দেবেন। চারঃ আল্লাহর এ সিদ্ধান্তের
প্রেক্ষিতে সৎলোকেরা জান্নাতে স্থান পাবে এবং অসৎলোকদেরকে নিক্ষেপ করা হবে
জাহান্নামে। পাঁচঃ বর্তমান জীবনের অর্থনৈতিক
সমৃদ্ধি ও অসমৃদ্ধি সাফল্য ও ব্যর্থতার আসল মানদন্ড নয়। বরং আল্লাহর শেষ বিচারে যে
ব্যক্তি উত্রে যাবে সে-ই হচ্ছে সফলকাম আর সেখানে যে উতরোবে না সে ব্যর্থ।
আযওয়াজঃ
শব্দটি আরবী ‘যওজ’ নামক শব্দের বহু বচন। যার
অর্থ জোড়া। শব্দটি স্বামী ও স্ত্রী উভয় অর্থে
ব্যবহৃত হয়। স্বামীর জন্য স্ত্রী হলো যওজ আর
স্ত্রীর জন্য স্বামী হলো যওজ।
আযাঃ
আযা শব্দের অর্থ অশুচিতা, অপরিচ্ছন্নতা আবার
রোগ-ব্যধিও। হায়েয কেবলমাত্র একটি
অশুচিতা ও অপরিচ্ছন্নতাই নয় বরং চিকিৎসা শাস্ত্রের দৃষ্টিতে এই অবস্থাটি সুস্থতার
তুলনায় অসুস্থতারই বেশী কাছাকাছি।
আল্লাহর ঘরকে পবিত্র রাখাঃ
পাক-পবিত্র রাখার অর্থ কেবলমাত্র ময়লা-আবর্জনা থেকে পাক-পবিত্র রাখা নয়।
আল্লাহর ঘরের আসল পবিত্রতা হচ্ছে এই যে , সেখানে আল্লাহর ছাড়া আর
কারোর নাম উচ্চারিত হবে না। যে ব্যক্তি আল্লাহর ঘরে বসে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে
মালিক, প্রভু, মাবুদ, অভাব পূরণকারী ও ফরিয়াদ শ্রবনকারী হিসেবে ডাকে, সে আসলে তাকে নাপাক ও অপবিত্র করে দিয়েছে। এ আয়াতে অত্যন্ত সূক্ষ্ম পদ্ধতিতে
কুরাইশ মুশরিকদের অপরাধসমূহের প্রতি ইংগিত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছেঃ এ যালেমরা
ইবরাহীম ও ইসমাঈলের উত্তরাধিকারী হবার জন্য গর্ব করে বেড়ায় কিন্তু উত্তারাধিকারের
হক আদায় করার পরিবর্তে এরা উল্টো সেই হককে পদদলিত করে যাচ্ছে। কাজেই ইবরাহীম
আলাইহিস সালামের সাথে যে অংগীকার করা হয়েছিল তা থেকে বনী ইসরাঈলরা যেমন বাদ পড়েছে
তেমনি এই ইসমাইলী মুশরিকরাও বাদ পড়ে গেছে।
আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয়ঃ
আল্লাহর পথে ব্যয় করার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর দীনকে প্রতিষ্ঠিত
করার জন্য যে প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালানো হয় তাতে অর্থ ব্যয় করা।
আয়াতঃ
আরবীতে আয়াতের আসল মানে হচ্ছে নিশানী বা আলামত। এই নিশানী কোন জিনিসের পক্ষ থেকে
পথনির্দেশ দেয়। কুরআনে
এই শব্দটি চারটি ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। ১. নিছক আলামত বা নিশানী। ২. প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ ও প্রত্মতাত্বিক নিদর্শনসমূহ। কারণ এই বিশ্ব-জাহানের
অসীম ক্ষমতাধর আল্লাহর সৃষ্টি প্রতিটি বস্তুই তার বাহ্যিক কাঠামোর অভ্যন্তরে নিহিত
সত্যের প্রতি ইংগিত করছে। ৩. নবী-রসূলগণ যেসব 'মু'জিযা' (অলৌকিক
ক্রিয়াকর্ম)দেখিয়েছেন সেগুলো। কারণ নবী-রসূলগণ যে এ বিশ্ব-জাহানের সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন প্রভুর
প্রতিনিধি এই মু'জিযাগুলো ছিল আসলে তারই প্রমাণ ও আলামত। ৪. কুরআনের বাক্যগুলো। কারণ এ বাক্যগুলো কেবল সত্যের দিকে
পরিচালিত করেই ক্ষান্ত নয় বরং প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর পক্ষ থেকে যে কোন কিতাবই এসেছে , তার কেবল বিষয়বস্তুই নয়, শব্দ, বর্ণনাভংগী ও বাক্য গঠনরীতির মধ্যেও এই গ্রন্থের মহান মহিমান্বিত রচয়িতার
অতুলনীয় বৈশিষ্ট্যের নিদর্শনসমূহ সুস্পষ্টভাবে অনুভূত হয়েছে। কোথায় 'আয়াত' শব্দটি কোন্ অর্থ গ্রহণ করতে হবে তা বাক্যের পূর্বাপর আলোচনা থেকে সর্বত্র
সুস্পষ্টভাবে জানা যায়।
ইবাদতঃ
শব্দটি আরবী ভাষায় ৩টি অর্থে ব্যবহৃত হয়। ১. পূজা
ও উপাসনা করা। ২. আনুগত্য ও হুকুম মেনে চলা। ৩.
বন্দেগী ও দাসত্ব করা।
ইবলিসঃ
‘ইবলিস' শব্দের অর্থ হচ্ছে , "চরম হতাশ।" আর পারিভাষিক অর্থে এমন একটি জিনকে ইবলিস বলা হয় যে আল্লাহর হুকুমের
নাফরমানি করে আদম ও আদম সন্তানদের অনুগত ও তাদের জন্য বিজিত হতে অস্বীকৃতি
জানিয়েছিল। মানবজাতিকে পথভ্রষ্ট করার
ও কিয়ামত পর্যন্ত তাদেরকে ভুল পথে চলার প্রেরণা দান করার জন্য সে আল্লাহর কাছে সময়
ও সুযোগ প্রার্থনা করেছিল। আসলে শয়তান ও ইবলিস নিছক কোন জড় শক্তি পিন্ডের নাম নয়। বরং সেও মানুষের মতো একটি
কায়া সম্পন্ন প্রাণীসত্তা। তা ছাড়া সে ফেরেশতাদের অন্তরভুক্ত ছিল, এ ভুল ধারণাও কারো না থাকা উচিত। কারণ পরবর্তী আলোচনাগুলোয় কুরআন নিজেই তার জিনদের অন্তরভুক্ত থাকার এবং
ফেরেশতাদের থেকে আলাদা একটি স্বতন্ত্র শ্রেণীর সৃষ্টি হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট
বক্তব্য পরিবেশন করেছে।
ইসরাঈলঃ
‘ইসরাঈল’
শব্দের অর্থ হচ্ছে আব্দুল্লাহ বা আল্লাহর বান্দা। এটি
হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের উপাধি। আল্লাহর
পক্ষ থেকে তিনি এ উপাধি লাভ করেছিলেন। তিনি
ছিলেন হযরত ইসহাক আলাইহিস সালামের পুত্র ও ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের নাতি। তাঁরই
বংশধরকে বলা হয় বনী ইসরাঈল।
ইসলামে প্রবেশ করাঃ
কোন প্রকার ব্যতিক্রম ও সংরক্ষন ছাড়াই, কিছু অংশকে বাদ না দিয়ে এবং
কিছু অংশকে সংরক্ষিত না রেখে জীবনের সমগ্র পরিসরটাই ইসলামের আওতাধীন করা। চিন্তা-ভাবনা, আদর্শ, মতবাদ, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা, আচরণ, ব্যবহারিক জীবন, লেনদেন এবং তোমাদের সমগ্র প্রচেষ্টা ও কর্মের পরিসরকে পুরোপুরি ইসলামের
কর্তৃত্বাধীনে আনা। জীবনের কিছু অংশে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলা আর
কিছু অংশকে ইসলামী অনুশাসনের বাইরে রাখা, এমনটি যেন না হওয়া।
ইহসানঃ
'ইহসান' শব্দটি এসেছে 'হুসন' থেকে। এর মানে হচ্ছে, কাজ ভালোভাবে ও সূচারুরূপে সম্পন্ন করা। কাজ করার বিভিন্ন ধরণ আছে। তার একটা ধরণ হচ্ছে যে, কাজটা করার দায়িত্ব অর্পন করা হয়েছে সেটি কেবল নিয়ম-মাফিক সম্পন্ন করা। দ্বিতীয় ধরণ হচ্ছে, তাকে সূচারুরূপে সম্পন্ন করা এবং নিজের সমস্ত যোগ্যতা ও উপায় উপকরণ তার পেছনে
নিয়োজিত করে সমস্ত মান-প্রাণ দিয়ে তাকে সুস্পন্ন করার চেষ্টা করা। প্রথম ধরণটি নিছক আনুগত্যে
পর্যায়ভুক্ত। এ জন্য
তাকওয়া ও ভীতি যথেষ্ট। আর দ্বিতীয় ধরণটি হচ্ছে ইহসান। এজন্য ভালোবাসা, প্রেম ও গভীর মনোসংযোগ প্রয়োজন হয়।
ঈলাঃ
এটি ফিকাহর একটি পরিভাষা। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সবসময় মধুর সম্পর্ক থাকা তো
সম্ভব নয়। বিভিন্ন সময় সম্পর্ক ভেঙে
যাওয়ার বহুবিধ কারণ সৃষ্টি হয়ে যায়। কিন্তু আল্লাহর শরীয়াত এমন ধরনের
সম্পর্ক ভাঙা পছন্দ করে না। যার ফলে উভয়ে আইনগতভাবে দাম্পত্য বাঁধনে আটকে থাকে।
কিন্তু কার্যত পরস্পর এমনভাবে আলাদা থাকে যেন তারা স্বামী-স্ত্রী নয়। এই ধরণের সম্পর্ক বিকৃতির
জন্য আল্লাহ চার মাস সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এই চার মাসের মধ্যে উভয়ের মধ্যে
স্বাম-স্ত্রীর সম্পর্ক পুনঃস্থাপিত করতে হবে। অন্যথায় এই সম্পর্ক ছিন্ন করে দিতে হবে। তারপর উভয়ের স্বাধীনভাবে
নিজের ইচ্ছামতো বিয়ে করতে পারবে।
উমরাহঃ
যিলহজ্জ মাসের নির্ধারিত তারিখে কা'বা শরীফ যিয়ারত করাকে হজ্জ
বলে। এই তারিখগুলো ছাড়া অন্য সময় কা'বা যিয়ারত করাকে উমরাহ বলে।
কর্তৃত্বঃ
কুরআনে উল্লেখিত মূল শব্দ হচ্ছে 'কুরসী'। সাধারণ এ শব্দটি কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও রাষ্ট্রশক্তি অর্থে রূপক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। (বাঙলা ভাষায় এরি সমজাতীয় শব্দ হচ্ছে 'গদি'। গদির লড়াই বললে ক্ষমতা
কর্তৃত্বের লগাই বুঝায়) ।
কাফেরঃ
‘কাফের’
শব্দটি অকৃতজ্ঞ ও অনুগ্রহ অস্বীকারকারী অর্থে ব্যবহৃদ হয়েছে। যে
ব্যক্তি আল্লাহর দেয়া নেয়ামতকে তাঁর পথে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ব্যয় করা
পরিবর্তে মানুষের সন্তুষ্টি লাভের জন্য বয় করে অথবা আল্লাহর পথে কিছু অর্থ ব্যয়
করলে ব্যয় করার সাথে কষ্টও দিয়ে থাকে, সে আসলে অকৃতজ্ঞ এবং আল্লাহর অনুগ্রহ
বিস্মৃত বান্দা। আর সে নিজেই যখন আল্লাহর সন্তুষ্টি চায়
না তখন তাকে অযথা নিজের সন্তুষ্টির পথ দেখাবার আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।
কুফরঃ
কুফরের আসল মানে হচ্ছে গোপন করা, লুকানো। এ থেকেই অস্বীকারের
অর্থ বের হয়েছে। ঈমানের বিপরীত পক্ষে এ শব্দটি বলা হয়। ঈমান অর্থ মেনে নেয়া, কবুল করা, স্বীকার করা। এর বিপরীতে 'কুফর'-এর
অর্থ না মানা, প্রত্যাখ্যান করা, অস্বীকার করা।
করযে হাসানাঃ
এর শাব্দিক অনুবাদ হচ্ছে “ভাল ঋণ”। অর্থাৎ
এমন ঋণ যা কেবলমাত্র সৎকর্ম অনুষ্ঠানের প্রেরণায় চালিত হয়ে নিস্বার্থভাবে কাউকে
দেয়া হয়। অনুরূপ ভাবে আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয়
করলে আল্লাহ তাকে নিজের জন্য ঋণ বলে গণ্য করেন। এ
ক্ষেত্রে তিনি কেবল আসলটি নয় বরং তার উপর কয়েকগুণ বেশী দেয়ার ওয়াদা করেন। তবে এ
জন্য শর্ত আরোপ করে বলেন যে, সেটি ‘করযে হাসানা’ অর্থাৎ এমন ঋণ হতে হবে
আদায়ের পেছনে কোন হীন স্বার্থ বুদ্ধি থাকবে না বরং নিছক আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার
উদ্দেশ্যে এ ঋণ দিতে হবে এবং তা এমন কাজে ব্যয় করতে হবে যা আল্লাহ পছন্দ করেন।
কিসাসঃ
‘কিসাস’
হচ্ছে রক্তপাতের বলা বা প্রতিশোধ। অর্থাৎ হত্যাকারীর
সাথে এমন ব্যবহার করা যেমন সে নিহত ব্যক্তির সাথে করেছে। কিন্তু
এর অর্থ এ নয় যে, হত্যাকারী যেভাবে নিহত
ব্যক্তিকে হত্যা করেছে ঠিক সেভাবে তাকেও হত্যা করত হবে। বরং এর
অর্থ হচ্ছে, সে
একজনকে হত্যা করেছে, তাকেও
হত্যা করা হবে।
খলিফাঃ
যে ব্যক্তি কারো অধিকারের আওতাধীনে তারই অর্পিত ক্ষমতা-ইখতিয়ার ব্যবহার করে
তাকে বলে খলীফা। নিজে মালিক নয় বরং আসল মালিকের প্রতিনিধি। সে নিজে ক্ষমতার অধিকারী নয় বরং মালিক
তাকে ক্ষমতার অধিকার দান করেছেন, তাই সে ক্ষমতা ব্যবহার করে। সে নিজের ইচ্ছে মতো কাজ
করার অধিকার রাখে না। বরং মালিকের ইচ্ছে পূরণ করাই হয় তার কাজ। যদি সে নিজেকে মালিক মনে করে বসে এবং
তার ওপর অর্পিত ক্ষমতাকে নিজের ইচ্ছে মতো ব্যবহার করতে থাকে অথবা আসল মালিককে বাদ
দিয়ে অন্য কাউকে মালিক বলে স্বীকার করে নিয়ে তারই ইচ্ছে পূরণ করতে এবং তার নির্দেশ
পালন করতে থাকে, তাহলে এগুলো সবই বিদ্রোহ ও
বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে গণ্য হবে।
খুলাঃ
শরীয়াতের পরীভাষায় একে বলা হয় 'খুলা' তালাক। অর্থাৎ স্বামীকে কিছু দিয়ে
স্ত্রী তার কাছ থেকে তালাক আদায় করে নেয়া।
জিহাদঃ
জিহাদ অর্থ হচ্ছে, কোন উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য
অর্জনে নিজের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। এটি নিছক যুদ্ধের সমার্থক কোন শব্দ নয়। যুদ্ধের জন্য আরবীতে 'কিতাল' (রক্তপাত)
শব্দ ব্যবহার করা হয়। জিহাদের
অর্থ তার চাইতে ব্যাপক। সব রকমের প্রচেষ্টা ও সাধনা এর অন্তরভূক্ত।
মুজাহিদ এমন এক ব্যক্তিকে বলা হয়, যে সর্বক্ষন নিজের উদ্দেশ্য
ও লক্ষ্য সাধনে নিমগ্ন, যার মস্তিস্ক সবসময় ঐ
উদ্দেশ্য প্রচারণায় নিয়োজিত। মুজাহিদের হাত, পা ও শরীরের প্রতিটি অংগ
প্রত্যংগ জিহাদের উদ্দেশ্য সম্পাদনের জন্য সারাক্ষন প্রচেষ্টা, সাধনা ও পরিশ্রম করে চলছে। জিহাদের উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য সে নিজের সম্ভাব্য সমস্ত উপায়-উপকরণ
নিয়োগ করে, পূর্ণ শক্তি দিয়ে এই পথের
সমস্ত বাধার মোকাবিলা করে, এমনকি শেষ পর্যন্ত যখন প্রাণ
উৎসর্গ করার প্রয়োজন দেখা দেয় তখন নির্দ্বিধায় এগিয়ে যায়। এর নাম 'জিহাদ'।
আল্লাহর পথে জিহাদ হচ্ছেঃ এ সবকিছু একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য
করতে হবে। এই দুনিয়ায় একমাত্র আল্লাহর
দীন তথা আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান প্রতিষ্ঠিত হবে এবং আল্লাহর বানী ও বিধান
দুনিয়ায়া সমস্ত মতবাদ, চিন্তা ও বিধানের ওপর বিজয়
লাভ করবে। মুজাহিদের সামনে এ ছাড়া আর
দ্বিতীয় কোন উদ্দেশ্য ও লক্ষ থাকবে না।
তাওবাঃ
তাওবার আসল অর্থ হচ্ছে ফিরে আসা। বান্দার পক্ষ থেকে তাওবার অর্থ হচ্ছে এই যে, সে সীমালংঘন ও বিদ্রোহের পথ পরিহার করে বন্দেগীর পথে পা বাড়িয়েছে। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে
তাওবা করার অর্থ হচ্ছে এই যে, তিনি নিজের লজ্জিত ও অনুতপ্ত
দাসের প্রতি অনুগ্রহ সহকারে দৃষ্টি দিয়েছেন এবং বান্দার প্রতি তাঁর দান পুনর্বার
বর্ষিত হতে শুরু করেছে।
তাগুতঃ
আভিধানিক অর্থে এমন প্রত্যেকটি ব্যক্তিকে
‘তাগুত’ কলা হবে, যে নিজের
বৈধ অধিকারের সীমানা সংঘন করেছে। কুরআনের পরিভাষায়
তাগুত এমন এক বান্দাকে বলা হয়, যে বন্দেগী ও দাসত্বের সীমা
অতিক্রম করে নিজেই প্রভূ ও খোদা হবার দাবীদার সাজে এবং আল্লাহ বান্দাদেরকে নিজের
বন্দেগী ও দাসত্বে নিযুক্ত করে। আল্লাহর মোকাবিলায়
বান্দার প্রভূত্বের দাবীদার সাজার এবং বিদ্রোহ করার তিনটি পর্যায় আছে। প্রথম
পর্যায় বান্দা নীতিগত ভাবে তাঁর শাসন কর্তৃত্বকে সত্য বলে মেনে নেয়। কিন্তু
কার্যত তার বিধানের বিরুদ্ধাচরণ করে। এক
েবলা হয় ফাসেকী। দ্বিতীয় পর্যায়ে সে
আল্লাহর শান কর্তৃত্বেকে নীতগত ভাবে মেনে েনা নিয়ে নিজের স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়
অথবা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারো বন্দেগী ও দাসত্ব করতে থাকে। একে
বলা হয় কুফরী। তৃতীয় পর্যায়ে সে
মালিকক ও প্রভূর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করে তার রাজ্যে এবং তার প্রজাদের মধ্যে
নিজের হুকুম চালাতে থাকে। এই শেষ পর্যায়ে যে
বান্দা পৌছে যায় তাকে বলা হয় ‘তাগুত’। কোন
ব্যক্তি এই তাগুতকে অস্বীকার না করা পর্যন্ত কোন দিনে সঠিক অর্থে আল্লাহর মুমিন
বান্দা হতে পারে না।
তালুতঃ
বাইবেলে তাকে 'শৌল' নামে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি ছিলেন বনী ইয়ামীন গোত্রের একজন ত্রিশ বছরের যুবক। বনী ইসরাঈরলদের মধ্যে তার
চেয়ে সুন্দর ও সুশ্রী পুরুষ দ্বিতীয়জন ছিল না। তিনি এমনি সুঠাম ও দীর্ঘ দেহের অধিকারী
ছিলেন যে, লোকদের মাথা বড়জোর তার কাঁধ
পর্যন্ত পৌছতো। নিজের বাপের হারানো গাধা
খুঁজতে বের হয়েছিলেন। পথে সামুয়েল নবীর অবস্থান স্থলের কাছে পৌছলে আল্লাহ তাঁর নবীকে ইংগীত করে
জানালেন, এই ব্যক্তিকে আমি বনী
ইসরাঈলদের বাদশাহ হিসেব মনোনীত করেছি। কাজেই সামুয়েল নবী তাকে নিজের গৃহে ডেকে আনলেন। তেলের কুপি নিয়ে তার মাথায়
ঢেলে দিলেন এবং তাকে চুমো খেয়ে বললেনঃ ''খোদা
তোমাকে 'মসহ' করেছেন, যাতে তুমি তার উত্তরাধিকারের
অগ্রনায়ক হতে পারো।'' অতপর তিনি বনী ইসরাঈলদের সাধারণ সভা ডেকে তার বাদশাহ হবার কথা ঘোষণা করে দিলেন।'' (১-সামুয়েল
৯ ও ১০ অধ্যায় )।
বনী ইসরাঈলদের মধ্যে আল্লাহর নির্দেশক্রমে 'মসহ' করে নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত করার ব্যাপারে তিনি ছিলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি। এর আগে হযরত হারুনকে
পুরোহিত শ্রেষ্ট (Chief Priest) হিসেবে 'মসহ' করা হয়েছিল। এরপর মসহকৃত তৃতীয় ব্যক্তি
হলেন হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম এবং চতুর্থ হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম। কিন্তু সুস্পষ্ট বর্ণনা
নেই। নিছক বাদশাহী করার জন্য
মনোনীত করা একথা মেনে নেয়ার জন্য যথেষ্ট নয় যে, তিনি নবীও ছিলেন।
দ্বীনঃ
‘দ্বীন’
অর্থাৎ জীবন পদ্ধতি ও জীবন বিধান। মানুষ দুনিয়ায় যে আইন
ও নীতিমালার ভিত্তিতে তার সমগ্র চিন্তা, দর্শন ও কর্মনীতি গড়ে তোলে তাকে বলা হয়
“দ্বীন”।
'দীন' শব্দটির তাৎপর্য অনুসন্ধান
করলে দেখা যায়, আরবী ভাষায় দীন অর্থ হচ্ছে ''আনুগত্য'' এবং এর পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে জীবন ব্যবস্থা। এমন একটি জীবন ব্যবস্থা যেখানে কোন
সত্তাকে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী বলে মেনে নিয়ে তার প্রদত্ত বিধান ও আইনের
আনুগত্য করা হয়।
পবিত্র রূহঃ
'পবিত্র রূহ' বলতে অহী-জ্ঞান বুঝানো
হয়েছে। অহী নিয়ে দুনিয়ায় আগমনকারী জিব্রীলকেও বুঝানো হয়েছে। আবার হযরত ঈসা আলাইহিস
সালামের পাক রূহকেও বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ নিজেই তাঁকে পবিত্র গুণাবলীতে ভূষিত
করেছিলেন।
ফাসেকঃ
ফাসেক তাকে বলে যে নাফরমান এবং আল্লাহর আনুগত্যের সীমা অতিক্রম করে যায়।
ফিতনাঃ
ফিতনা শব্দটি ঠিক সেই অর্থে ব্যবহৃত, যে অর্থে ইংরেজীতে Persecution শব্দটি ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি বা দল
প্রচলিত চিন্তাধারা ও মতবাদের পরিবর্তে অন্য কোন চিন্তা ও মতবাদকে সত্য হিসেবে
জানার কারণে তাকে গ্রহণ করে নিয়েছে এবং সমালোচনা ও প্রচারের মাধ্যমে সমাজে বর্তমান
প্রচলিত ব্যবস্থার সংশোধনের প্রচেষ্টা চালিয়েছে, নিছক এ জন্য তার ওপর জুলুম-নির্যাতন চালানো।
'ফিতনা' বলতে এমন অবস্থাকে বুঝানো
হয়েছে যখন 'দীন' আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন সত্তার জন্য নির্দিষ্ট হয়ে যায় এবং এ ক্ষেত্রে যুদ্ধের
একমাত্র উদ্দেশ্যই হয় ফিতনাকে নির্মুল করে দীনকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট
করে দেয়া।
সমাজে যখন মানুষের ওপর মানুষের প্রভুত্ব ও সার্বভৌম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়
এবং আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন অসম্ভব হয়ে পড়ে তখন সমাজের এই অবস্থাকে ফিতনা
বলা হয়।
ফুরকানঃ
ফুরকান হচ্ছে এমন একটি জিনিস যার মাধ্যমে
হক ও বাতিলের মধ্যকার পার্থক্য সুস্পষ্ট করে তোলা হয়। বাংলা
ভাষায় ফুরকানের সবচাইতে কাছাকাছি শব্দ হচ্ছে “মানদন্ড”। মানে
হচ্ছে দীনের এমন জ্ঞান, বোধ ও উপলব্ধি যার মাধ্যমে মানুষ হক ও
বাতিল এবং সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করতে পারে।
মধ্যপন্থী উম্মাতঃ
শব্দটি অত্যন্ত গভীর ও ব্যাপক তাৎপর্যের অধিকারী। এর অর্থ হচ্ছে, এমন একটি উৎকৃষ্ট ও উন্নত মর্যাদাসম্পন্ন দল, যারা নিজেরা ইনসাফ, ন্যায়-নিষ্ঠা ও ভারসাম্যের
নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত, দুনিয়ার জাতিদের মধ্যে যারা
কেন্দ্রীয় আসন লাভের যোগ্যতা রাখে, সত্য ও সততার ভিত্তিতে সবার
সাথে যাদের সম্পর্ক সমান এবং কারোর সাথে যাদের কোন অবৈধ ও অন্যায় সম্পর্ক নেই।
মারুফঃ
কুরআনে অত্যন্ত ব্যাপকভাবে মারুফ শব্দটির ব্যবহার লক্ষ করা যায়। এর অর্থ হচ্ছে, এমন একটি সঠিক কর্মপদ্ধতি যার সাথে সাধারণত সবাই সুপরিচিত। প্রত্যেকটি
নিরপেক্ষ ব্যক্তি যার কোন স্বার্থ এর সাথে জড়িত নেই, সে প্রথম দৃষ্টিতেই যেন এর সম্পর্কে বলে ওঠে হাঁ এটিই ভারসাম্যপূর্ণ ও উপযোগী
কর্মপদ্ধতি। প্রচলিত রীতিকেও (Common
Law) ইসলামী
পরিভাষায় ''উর্ফ'' ও ''মা'রুফ'' বলা হয়।
মান্না ও সালওয়াঃ
মান্না ও সালওয়া ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত এক প্রকার প্রাকৃতিক খাদ্য। বনী ইসরাঈররা তাদের
বাস্তুহারা জীবনের সুদীর্ঘ চল্লিশ বছর পর্যন্ত অবিচ্ছিন্নভাবে এই খাদ্য লাভ করতে
থেকেছে। মান্না ছিল ধনিয়ার ধানার
মতো ক্ষুদ্রাকৃতির এক ধরনের খাদ্য। সেগুলোর বর্ষণ হতো কুয়াসার মতো। জমিতে পড়ার পর জমে যেতো। আর সালওয়া ছিল
ক্ষুদ্রাকৃতির কবুতরের মতো একপ্রকার পাখি। আল্লাহর অসীম অনুগ্রহে এই খাদ্যের ওপর
জীবন নির্বাহ করেছে। তাদের কাউকে কোনদিন অনাহারে থাকতে হয়নি।
মালাইকাঃ
শব্দটি আরবী ‘মালাক’ শব্দের বহু বচন। যার
আসল অর্থ বানী বাহক। আর শাব্দিক অর্থ
“যাকে পাঠানো হয়েছে” বা ফেরেশতা। সুস্পষ্ট
কায়া ও অস্থিত্বের অধিকারী একটি শক্তি। আল্লাহ
তার বিশাল সাম্রাজ্যের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় মালাইকার খেদমত নিয়ে থাকেন। ওরা
আল্লাহর বিশাল সাম্রাজ্যের কর্মচারী, যারা আল্লাহর বিধান ও নির্দেশাবলী
প্রবর্তন করে থাকেন।
মুজাহিদঃ
মুজাহিদ এমন এক ব্যক্তিকে বলা হয়, যে সর্বক্ষন নিজের উদ্দেশ্য
ও লক্ষ সাধনে নিমগ্ন, যার
মস্তিস্ক সব সময় ঐ উদ্দেশ্য প্রচারণায় নিয়োজিত। মুজাহিদের
হাত, পা ও
শরীরের প্রতিটি অংগ প্রত্যঙগ জিহাদের উদ্দেশ্য সম্পাদনের জন্য সারাক্ষণ প্রচেষ্টা, সাধনা ও পরিশ্রম করে চলছে। জিহাদের
উদ্দেশ্য পূর্ণ করা জন্য সে নিজের সম্ভাব্য সমস্ত উপায়-উপকরণ নিয়োগ করে, পূর্ণ শক্তি দিয়ে এই পথের
সমস্ত বাধার মোকাবিলা করে, এমনকি
শেষ অবধি যখন প্রাণ উৎসর্গ করার প্রয়োজন দেখা দেয়, তখন নির্দ্বিধায় এগিয়ে যায়।
মুসলিমঃ
যে ব্যক্তি আল্লাহর অনুগত হয়, আল্লাহকে নিজের মালিক, প্রভূ ও মাবুদ হিসেবে মেনে
নেয়, নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহর
হাতে সোপর্দ করে দেয় এবং দুনিয়ায় আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করে
সে-ই মুসলিম।
যালেমঃ
‘যুলুম’ বলা হয় অধিকার হরণকে। যে ব্যক্তি কারো অধিকার
হরণ করলো, সে যালেম। যে ব্যক্তি আল্লাহর
হুকুম পালন করেনা, তাঁর নাফরমানি করে, সে আসরে তিনটি বড় বড় মৌলিক অধিকার হরণ করে। প্রথমতঃ সে আল্লাহর অধিকার হরণ
করে। কারণ আল্লাহর হুকুম পালন
করত হবে, এটা আল্লাহর অধিকার। দ্বিতীয়তঃ এই নাফরমানি করতে গিয়ে
সে যে সমস্ত জিনিস ব্যবহার করে, তাদের সবার অধিকার হরণে
করে। তার দেহের অংগ-প্রতংগ, স্নায়ু মন্ডলী, তার সাথে বসবাসকারী সমাজের
অন্যান্য লোক, তার ইচ্ছা ও সংকল্প পূর্ণ
করার ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত ফেরেশতাগন এবং যে জিনিসগুলো সে তার কাজে
ব্যবহার করে, এরেদ সবার তার উপর অধিকার
ছিল, এদেরকে কেবলমাত্র এদের মালিকের ইচ্ছা অনুযায়ী
ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু যখন তাঁর ইচ্ছার
বিরুদ্ধে সে তাদের ওপর নিজের কর্তৃত্ব ব্যবহার করে তখন সে আসরে তাদের উপর যুলুম
করে। তৃতীয়তঃ তার নিজের অধিকার হরণ
করে। কারণ তার উপর তার আপন
সত্তাকে ধ্বংস থেকে বাঁচবার অধিকার আছে। কিন্তু নাফরমানি করে যখন সে নিজেকে
আল্লাহর শাস্তি লাভের অধিকারী করে তখন সে আসলে নিজের ব্যক্তি সত্তার উপর যুলুম করে।
রবঃ
শব্দটি আরবী ভাষায় ০৩টি
অর্থে ব্যবহৃত হয়। ১. মালিক
ও প্রভূ। ২.
অভিভাবক, প্রতিপালনকারী, রক্ষণাবেক্ষণকারী ও
সংরক্ষণকারী। ৩.
সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী, শাসনকর্তা, পরিচালক ও সংগঠক।
রাহমান ও রাহীমঃ
মানুষের দৃষ্টিতে কোন জিনিস
খুব বেশী বলে প্রতীয়মান হলে সেজন্য সে এমন শব্দ ব্যবহার করে যার মাধ্যমে আধিক্যের
প্রকাশ ঘটে। আর একটি আধিক্যবোধক শব্দ বলার পর যখন
সে অনুভব করে যে ঐ শব্দটির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জিনিসটির আধিক্যের প্রকাশ করা সন্ভব
হয়নি তখন সে সেই একই অর্থে আর একটি শব্দ ব্যবহার করে। এভাবে
শব্দটির অন্তরনিহিত গুণের আধিক্য প্রকাশের ব্যাপারে যে কমতি রয়েছে বলে সে মনে করছে
তা পূরণ করে। আল্লাহর প্রশংসায় ‘রহমান’ শব্দের পরে আবার ‘রহীম’ বলার মধ্যেও এই একই নিগূঢ়
তত্ত্ব নিহিত রয়েছে। আরবী ভাষায় ‘রহমান’ একটি বিপুল আধিক্যবোধক শব্দ। কিন্তু
সৃষ্টির প্রতি আল্লাহর রহমত ও মেহেরবানী এত বেশী ও ব্যাপক এবং এত সীমাসংখ্যাহীন যে, তা বয়ান করার জন্য সবচেয়ে
বেশী ও বড় আধিক্যবোধক শব্দ ব্যবহার করার পরও মন ভরে না। তাই
তার আধিক্য প্রকাশের হক আদায় করার জন্য আবার ‘রহীম’ শব্দটিও বলা হয়েছে। এর
দৃষ্টান্ত এভাবে দেয়া যেতে পারে, যেমন আমরা কোন ব্যক্তির দানশীলতার গুণ
বর্ণনা করার জন্য ‘দাতা’ বলার পরও যখন অতৃপ্তি অনুভব
করি তখন এর সাথে ‘দানবীর’ শব্দটিও লাগিয়ে দেই। রঙের
প্রশংসায় ‘সাদা’ শব্দটি বলার পর আবার ‘দুধের মতো সাদা’ বলে থাকি।
রিবাঃ
‘রিবা’। আরবী
ভাষায় এর অর্থ বৃদ্ধি। পারিভাষিক অর্থে
আরবরা এ শব্দটি ব্যবহার করে এমন এক বর্ধিত অংকের অর্থের জন্য, যা ঋণদাতা ঋণগ্রহীতার কাছ
থেকে একটি স্থিরীকৃত হার অনুযায়ী মূল অর্থের বাইরে আদায় করে থাকে। আমাদের
ভাষায় একেই বলা হয় সূদ। কুরআন নাযিলের সময় যে
সব ধরনের সুদী লেনদেনের প্রচলন ছিল সেগুলোকে নিম্নোক্ত ভাবে উপস্থাপন করা যায়। যেমন, এক ব্যক্তি অন্য এক
ব্যক্তির হাতের কোন জিনিস বিক্র করতো এবংদাম আদায়ের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করে
দিতো। সময়সীমা অতিক্রম করার পর যদি দাম আদায়
না হতো, তাহলে
তাকে আবার বাড়তি সময় দিতো এবং দাম বাড়িয়ে দিতো। অথবা
যে,ন, একজন অন্য একজনকে ঋণ দিতো। ঋণদাতার
সাথে চূক্তি হতো, উমুক
সময়ের মধ্যে আসল থেকে এই পরিমাণ অর্থ বেশী দিতে হবে। অথাব
যেমন, ঋণদাতা ও
ঋণগ্রহীতার মধ্যে একটি বিশেষ সময়সীমার জন্য একটি বিশেষ হার স্থিরিকৃত হয়ে যেতো। ঐ
সময়সীমার মধ্যে বর্ধিত অর্থসহ আসল অর্থ না হলে আগের থেকে বর্ধিত হারে অতিরিক্ত সময়
দেয়া হতো। এই ধরণের লেনদেনের ব্যাপারে এখানে
বর্ণনা করা হয়েছে।
শয়তানঃ
আরবী ভাষায় সীমালংঘনকারী, দাম্ভিক ও স্বৈরাচারীকে
শয়তান বলা হয়। মানুষ ও জিন উভয়ের জন্য এ শব্দটি
ব্যবহার করা হয়। কুরআনের অধিকাংশ
জায়গায় এ শব্দটি জিনদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হলেও কোন কোন জায়গায় আবার শয়তান
প্রকৃতির মানুষদের জন্যও ব্যবহার করা হয়েছে। সব
ক্ষেত্রে কোথায় শয়তান শব্দটি জিনদের জন্য এবং কোথায় মানুষদের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে
তা সহজেই জানা যায়।শয়তান শব্দটিকে বহুবচনে
‘শায়াতীন’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে এবং “শায়াতীন’ বলতে মুশরিকদের বড় বড়
সরদারদেরকে বুঝানো হয়েছে। এ সরদাররা তখন
ইসলামের বিরোধিতার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছিল।
সবরঃ
সবর শব্দটির শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, বাঁধা দেয়া, বিরত রাখা ও বেঁধে রাখা। এ
ক্ষেত্রে মজবুত ইচ্ছা, অবিচল সংকল্প ও প্রবৃত্তির আশা-আকাংখাকে
এমনভাবে শৃংখলাবদ্ধ করা বুঝায়, যার ফলে এক ব্যক্তি প্রবৃত্তির তাড়না ও
বাইরের সমস্যাবলীর মোকাবিলায় নিজের হৃদয় ও বিবেকের পছন্দনীয় পথে অনবরত এগিয়ে যেতে
থাকে।
হিকমাতঃ
হিকমাত অর্থ হচ্ছে, গভীর অন্তর্দিষ্টি ও সঠিক
সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার শক্তি। এখানে একথা বলার
উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে, হিকমতের সম্পদ যে ব্যক্তির কাছে থাকবে সে
কখনো শয়তানের দেখানো পথে চলতে পারবেনা। বরং সে আল্লাহর
দেখানো প্রশস্ত পথ অবলম্বন করবে। শয়তানের
সংকীর্ণমনা অনুসারীদের েদৃষ্টিতে নিজের ধন-সম্পদ আঁকড়ে ধরে রাখা এবং সব সময় সম্পদ
আহরণের নতুন নতুন ফন্দি-ফিকির করাই বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। কিন্তু
যারা আল্লাহ কাছ থেক অন্তরদৃষ্টি লাভ করেছে, তাদের মতে এটা নেহাত
নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাদের মতে, মানুষ যা কিছু উপার্জন করবে, নিজের মাঝারী পর্যায়ের
প্রয়োজন পূর্ণ করা পর সে গুলো প্রাণ কুল সৎকাজে ব্যয় করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। দুনিয়ার
িএই হাতে গোণা কয়েকদিনের জীবনে প্রথম ব্যক্তি দ্বিতীয় জনের তুলনায় হয়তো অনেক বেশী
প্রাচুর্যের অধিকারী হতে পারে। কিন্তু মানুষের জন্য
এই দুনিয়ার জীবনটিই সম্পূর্ণ জীবন নয় ।বরং এটি আসল জীবনের একটি
সামান্যতম অংশ মাত্র। এই সামান্য ও
ক্ষুদ্রতম অংশের সমৃদ্ধি ও সচ্ছলতার বিনিময়ে যে ব্যক্তি বৃহত্তম ও সীমাহীন জীবনের
অসচ্ছরতা, দারিদ্র
ও দৈন্যদশা কিনে নেয় সে আসরে নিরেট বোকা ছাড়া আর কিছু নয়। যে ব্যক্তি
এই সংক্ষিপ্ত জীবনকালের সুযোগ গ্রহণ করে মাত্র সামান্য পুঁজির সহায়তায় নিজের ঐ
চিরন্তন জীবনের সমৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়েছে সে-ই আসরে বুদ্ধিমান।
হিত্তাতুনঃ
শব্দটির দুই অর্থ হতে পারে। এর একটি অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর কাছে নিজের গোনাহর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে করতে প্রবেশ করো। আর
দ্বিতীয় অর্থটি হচ্ছে, ব্যাপক গণহত্যা ও লুটতরাজ
তাদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করতে করতে শহরে প্রবেশ করো।
হিমাঃ
আরবী ভাষায় ''হিমা'' বলা হয় এমন একটি চারণক্ষেত্রকে যাকে কোন নেতা বা বাদশাহ সাধারণ মানুষের মধ্যে
নিষিদ্ধ করে দেন। এই উপমাটি ব্যবহার করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলছেন, প্রত্যেক বাদশাহর একটি হিমা আছে আর আল্লাহর
হিমা হচ্ছে তাঁর সেই সীমানাগুলো যার মাধ্যমে তিনি হালাল ও হারাম এবং আনুগত্য ও
অবাধ্যতার পার্থক্য সৃষ্টি করেছেন। যে পশু 'হিমার' (বেড়া)
চারপাশে চরতে থাকে একদিন সে হয়তো হিমার মধ্যেও ঢুকে পড়তে পারে। দুঃখের বিষয়
শরীয়াতের মৌল প্রাণসত্তা সম্পর্কে অনবহিত লোকেরা সবসময় অনুমতির শেষ সীমায় চলে
যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করে থাকে। আবার অনেক আলেম ও মাশায়েখ এই বিপজ্জনক সীমানায়
তাদের ঘোরাফেরা করতে দেয়ার উদ্দেশ্যে দলীল প্রমাণ সংগ্রহ করে অনুমতির শেষ সীমা
তাদেরকে জানিয়ে দেয়ার কাজ করে যেতে থাকে। অথচ অনুমতির এই শেষ সীমায় আনুগত্য ও
অবাধ্যতার মধ্যে মাত্র চুল পরিমাণ ব্যবধান থেকে যায়। এরই ফলে আজ অসংখ্য লোক গোনাহ
এবং তার থেকে অগ্রসর হয়ে গোমরাহীতে লিপ্ত হয়ে চলেছে। কারণ ঐ সমস্ত
সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম সীমান্ত রেখার মধ্যের পার্থক্য করা এবং তাদের কিনারে পৌছে
নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ কথা নয়।
0 Comments