মাদক বিষয়ে কিছু কথা – মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম


মাদকঃ আরবীতে যাকে বলে- خمر যার অর্থ-সমাচ্ছন্ন করা, ঢেকে দেয়া

মাদক সম্পর্কে Cambridge ডিকশনারীতে বলা হয়েছেঃ An alcoholic drink which is usually made from grapes but can also be made from other fruits of flowers. It is made by FERMENTING, the fruit with water and suger. অর্থাৎ "মদ হলো নেশাকর পানীয় যা সাধারণত আঙ্গুর থেকে তৈরী হয় তবে অন্যান্য ফল ফুল থেকেও তৈরী হতে পারে এটা উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য চিনি পানির মাধ্যমে ফল দ্বারা তৈরী হয়"

মাদকের পারিভাষিক অর্থঃ "যে সকল বস্তু সেবনে মাদকতা সৃষ্টি হয় এবং বুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে ফেলে অথবা বোধশক্তির উপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে, তাকে মাদক দ্রব্য বলে"

কবির ভাষায় মাদকঃ شربت الخمر حتى ضل عقلي+ كذالك  الخمر تفعل بالعقول
   "মদ পান করে আমার বিবেক হারিয়ে গেছে মদ এভাবেই বুদ্ধিকে নিয়ে খেল-তামাশা করে"

রাসূল সা. প্রদত্ত মদের সংগাঃ
  والخمر ما خامر العقل "মদ বা মাদকদ্রব্য তাই, যা জ্ঞান-বুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে"

মদ নিষিদ্ধের ধারাবাহিকতা-
. মদের অপকারিতা ও পাপ সম্পর্কে জন সচেতনতা তৈরীঃ
يسألونك عن الخمر والميسر قل فيها إثم كبير ومنافع للناس وإثمهما أكبر من نفعهما.
"আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে বলুন! এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ আর মানুষের জন্য উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়" (বাকারা-২১৯)
. সালাতের সময় মদ পান হারামঃ
يأيها الذين أمنوا لا تقربوا الصلاة وأنتم سكارى حتى تعلموا ما تقولون
"হে ঈমানদারগন! তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাক, তখন সালাতের ধারে-কাছেও যেওনা যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও যা কিছু তোমরা বলছো" (নিসা-৪৩)
. মদ চিরতরে হারামঃ
يأيها الذين أمنوا إنما الخمر والميسر والأنصاب والأزلام رجس من عمل الشيطان، فاجتنبوه لعلكم تفلحون، إنما يريد الشيطان أن يوقع بينكم العداوة والبغضاء في الخمر والميسر ويصدكم عن ذكر الله وعن الصلاة فهل أنتم منتهون.
"হে মুমিনগন! মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ শয়তানের কার্য বৈ কিছু নয় অতএব এ গুলো থেকে বেঁচে থা, যাতে মোতরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে অতএব তোমরা এখন কি নিবৃত্ত হবে" (মায়েদাহ-৯০-৯১)

হাদীসে রাসূলে মদঃ
لا يدخل الجنة مدمن خمر "সর্বদা মদ পানকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবেনা"
كل مسكر خمر، وكل خمر حرام (الحديث).
لا تشرب الخمر، فإنه مفتاح كل شر (الحديث).
اجتنبوا الخمر فإنها أم الخبائث (الحديث).
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি নেশাদার দ্রব্য পান করবে আল্লাহ তার ৪০ দিন ছালাত কবুল করবেন নাযদি এ অবস্থায় মারা যায় তাহলে জাহান্নামে যাবে যদি তাওবা করে তাহলে আল্লাহ তার তওবাহ কবুল করবেনআবার নেশাদার দ্রব্য পান করলে আল্লাহ তার ৪০ দিন ছালাত কবুল করবেন না যদি এ অবস্থায় মারা যায়, তাহলে জাহান্নামে যাবে আর যদি তওবাহ করে, তবে আল্লাহ তার তওবাহ কবুল করবেনআবাবর যদি নেশাদার দ্রব্য পান করে আল্লাহ তার ৪০ দিন ছালাত কবুল করবেন না এ অবস্থায় মারা গেলে জাহান্নামে যাবে তওবাহ করলে আল্লাহ তার তওবাহ কবুল করবেন লোকটি যদি চতূর্থবার মদ পান করে আল্লাহ তাকে কিয়ামাতের দিন 'রাদাগাতুল খাবাল' পান করাবেন সাহাবীগন জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল সা. 'রাদাগাতে খাবাল কি? রাসূল সা. বললেন, 'আগুনের তাপে জাহান্নামীদের শরীর হতে গলে পড়া রক্তপূজ মিশ্রিত গরম তরল পদার্থ'
عن أنس (رضـ) قال سمعت رسول الله (صـ) يقول إن من أشراط الساعة أن يرفع العلم ويكثر الجهل ويكثر الزنا ويكثر شرب الخمر ويقل الرجال وتكثر النساء حتى يكون لخمسين امرأه القيّم الواحد.
"আনাস রা. বলেন, আমি রাসূল সা. কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামাতের আলামত সমূহের মধ্যে রয়েছে, ইলম উঠে যাবে, মূর্খতা, ব্যভিচার ও মদ্যপান বেড়ে যাবে পুরুষের সংখ্যা হ্রাস পারে এবং নারীর সংখ্যা বেড়ে যাবে এমনকি ৫০জন মহিলার পরিচালক হবে একজন পুরুষ শুধু তাই নয় শেষ জামানায় মানুষ মদকে বিভিন্ন নামের ছদ্মাবরণে পান করবে বলে রাসূল সা. আমাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন"

মাদকের কূফলঃ
. যে কোন প্রকার মাদকদ্রব্য যা নেশা সৃষ্টি করে, সুস্থ মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটায় এবং জ্ঞান ও স্মৃতিশক্তি লোপ করে দেয়, তা হারাম বা নিষিদ্ধ, চাই তা প্রাকৃতিক হোক যেমন-মদ, তাড়ি, আফিম, গাঁজা, চরস, হাশিশ, মারিজুয়ান ইত্যাদি অথবা রাসায়নিক হোক যেমন-হেরোঈন, মরফিন, কোকেন, প্যাথেড্রিন ইত্যাদি
২. মাদক মানুষের শরীরে বিভিন্ন ক্ষতি সাধন করে থাকে নেশাদ্রব্য গ্রহণের ফলে ধীরে ধীরে মানুষের হজম শক্তি বিনষ্ট হয়, খাদ্যস্পৃহা কমে যায়, চেহারা বিকৃত হয়ে পড়ে, স্নায়ু দূর্বল হয়ে যায়, শারীরিক ক্ষমতা লোপ পায়
৩. এমন মাদকদ্রব্য আছে, যা সম্পূর্ণরূপে কিডনী বিনষ্ট করে দেয় মস্তিষ্কের লক্ষ লক্ষ সেল ধ্বংস করে ফেলে, যেটা কোন চিকিৎসার মাধ্যমেই সারানো সম্ভব নয়।
৪. মাদক দ্রব্য সেবনের ফলে লিভার সিরোসিস রোগের সৃষ্টি হয়, যার চিকিৎসা দূরূহ


Post a Comment

0 Comments