আলোচনা নোট - ইলম বা জ্ঞানার্জন


   علم ইলম) আরবী শব্দ বাংলাতে যাকে বলে জ্ঞান
 ইলম অর্জন করা ফরয
 ইলম অর্জন করতে হয় পড়ার মাধ্যমে
 উসুলীনদের কথাঃ
ما لا يتم الواجب إلا به فهو واجب
কোন ওয়াজিব যদি কোন বস্তুর সাহায্য ছাড়া আদায় করা সম্ভব হয়না, তাহলে সেই জিনিসটিও গ্রহণ করা ওয়াজিব
 যেহেতু পড়া ছাড়া ইলম অর্জন সম্ভব নয়, তাই পড়াও ওয়াজিব তথা ফরয
 কুরআনে হাকীমের প্রথম নির্দেশ হচ্ছে পড় ( اقْرَأْ )। 
 ঈমান আনা যেমন ফরয, ইলম অর্জন তথা জ্ঞান অর্জন করা তেমন ফরয
 জ্ঞান ছাড়া ঈমান কি তা বুঝা যায় না, তাই ঈমানের আগে জ্ঞান অর্জন ফরয
 ঈমানের ফরয আদায় হবেনা, যদি না জ্ঞান অর্জনের ফরয আদায় করা হয়
 দুধ কিনতে হলে তার আগে দুধ রাখার পাত্র ঠিক করতে হয় অর্থাৎ পাত্র আগে, দুধ পরে
 জ্ঞান অর্জন আগে, ঈমান পরে
 ঈমান হলো দুধ, আর তার পাত্র হলো জ্ঞান
 ইমাম বুখারী রাহ. সহীহ আল বুখারীতে একটি অধ্যয় এনেছেন যার নামঃ العلم قبل القول والعمل অর্থাৎ ইলম কথা কাজ তথা বক্তব্য আমলের আগে
 সহজ কথায়ঃ যা বলবেন-জেনে বলবেন যা করবেন-জেনে করবেন
 সূরা মুহাম্মদে ১৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা বলছেনঃ
﴿فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا اللَّهُ﴾
 “অতএব, জেনে নাও নিশ্চয়ই আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য আর কেউ নাই”। 
 জ্ঞান মানুষ সৃষ্টি করা যায়না। মানুষ যা করে তাহলো আবিস্কার।
♧ আবিস্কারকে ইংরেজীতে বলেঃ Discover. অর্থাৎ যা আবিস্কার করা হবে, সেখানে একটা বস্তু Cover দিয়ে আড়াল করে রাখা হয়েছে সেই Cover টাকে ছিড়ে ফেলতে হবে, যদি Discover করতে হয়। 
 তাহলে আপনি যদি কোন খনি আবিস্কার করতে হয়, তাহলে খনির উপরের Cover টা সরাতে হবে আর তার জন্য প্রয়োজন প্রচুর জ্ঞান। 
 একই ভাবে ঈমান, ইসলাম, তাকওয়া, ইহসান, তাওহীদ, রিসালাত, আখেরাত, জান্নাত, জাহান্নাম সব কিছু আপনি জানতে হলে বা Discover করতে হলে প্রচূর জ্ঞান অর্জন করতে হবে জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে Cover সরিয়ে ফেলতে হবে। 
 আপনি যখন দাওয়াতের কাজ করবেন, তখন প্রত্যক্ষ করবেনঃ যার পিছনে আপনি দাওয়াতের কাজ করছেন সে অহেতুক ধারণা নিয়ে বসে আছে তার ধারণাতে সে পাগল-দিওয়ানা আপনি তার মন থেকে, চোঁখ থেকে পর্দাটা তথা Cover টা একটু সরিয়ে দিন সে সাথে সাথে প্রকৃত আলো দেখতে পাবে। 
 জ্ঞান অর্জন কে করবে? উত্তর হচ্ছেঃ মানুষ
 জ্ঞান অর্জন সব মানুষের পক্ষে করা সম্ভব নয় যেমনঃ পূর্বেই বলা হয়েছে, দুধ নিতে হলে বোতল দরকার জ্ঞান অর্জনের জন্য বুদ্ধি দরকার عقل (আকল) দরকার। 
 আকল সব মানুষের থাকেনা তাই সব মানুষ জ্ঞান অর্জন করতে পারেনা
 বুদ্ধি বা আকল হচ্ছে আল্লাহর দান সুত্রে পাওয়া যায়-ওহবী। 
 আকল ওয়ালাদেরকে জ্ঞান অর্জন করতে হয়। তাই আল্লাহ বারবার জিজ্ঞেস করেন। কুরআনে কমপক্ষে ৪৯ বার বলেছেনঃ  أَفَلَا تَعْقِلُونَ﴿

 বুদ্ধি অর্জন করার জিনিস নয়, জ্ঞান অর্জন করার জিনিস
 যারা বুদ্ধি নিয়ে জন্ম নেয় না বা যারা পরে বুদ্ধি হারিয়ে ফেলে, তাদেরকে পাগল বলা হয়
 বুদ্ধি সকলের হয়না। তাই যাদের আকল নাই, তাদের জন্য শরীয়াতের বিধান প্রযোজ্য নহে
 মানব শিশু দুনিয়াতে আসে জ্ঞান নিয়ে আসেনা-বুদ্ধি নিয়ে আসে সূরা নাহল এর ৭৮ নম্বর আয়াতে যা বর্ণনা করা হয়েছে এভাবেঃ 
﴿وَاللَّهُ أَخْرَجَكُم مِّن بُطُونِ أُمَّهَاتِكُمْ لَا تَعْلَمُونَ شَيْئًا 
“আল্লাহ তোমাদেরকে বের করেছেন তোমাদের মায়ের পেট থেকে এমন অবস্থায় যে, তোমরা কিছুই জানতে না”
 এমন কি নবী মুহাম্মদ সা.ও জানতেন না। যা বর্ণনা করা হয়েছে সূরা নিসার ১১৩ নম্বর আয়াতে। আল্লাহ বলেনঃ
﴿ وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُن تَعْلَمُ 
“এবং তোমাকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে এমন বিষয়ের যা তুমি জানতে না”।
 রাসূল সা. কে শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে হযরত জিব্রাঈল আ. এর মাধ্যমেঃ 

 অতএব, আমরাও জানতাম না-রাসূল সা.ও জানতেন না।
 তাহলেঃ গাউসুল আযম খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় ১৮ পারা হিফজ করলেন কিভাবে? (নাউযুবিল্লাহ)
 কুরআনকে পড়তে হবে সুন্দর করে। ডিজাউন করে। ডেকোরেশন করে। গায়কীয় স্টাইলে।
 হাদীসে বলা হয়েছে। আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেনঃ 
من لم يتغن بالقرآن فليس منا
“যে কুরআনকে গানের মতো করেনা, সে আমার দলভূক্ত নয়”।
 বিধায়, সাংস্কৃতিক প্রয়োজন পুরণ করবে কুরআন। তাই আমরা দেশে দেশে নানা ধরণের কুরআন পড়তে দেখি।
 আমরা কুরআন পড়তে দেখি ৭ কিরাতে।
 আমরা কুরআন পড়তে দেখি সুদাইসী স্টাইলে, আব্দুল বাসিত স্টাইলে, হুজাইফী স্টাইলে, সুরাইমী স্টাইলে।
 কুরআন আমরা পড়তে দেখি আয়াতে আয়াতে থেমে থেমে। দেখি পুরা সূরা ফাতেহা এক শ্বাসে পড়তে। দেখি সমবেত উচ্চারণে।
 কুরআন একই সাথে সকল প্রয়োজন পুরণ করবে। গান, অর্থ, ইবাদত, মুয়ামেলাত, বিচার, আদালত সকল বিষয়ে। যা বলা হয়েছে সূরা আন নাহল এর ৮৯ নম্বর আয়াতেঃ 
﴿ وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِّكُلِّ شَيْءٍ ﴾
“আমি এ কিতাব তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যা সব জিনিস পরিস্কার ভাবে তুলে ধরে”।
 আল কুরআন জ্ঞানের কিতাব।
 আল কুরআন আল্লাহর কালাম।
 নবীদেরকে আল্লাহ বুদ্ধি দিয়েছেন একথা কোথাও বলেননি। বলেছেন জ্ঞান দিয়েছেন।  যেমনঃ
♦ আদম আ.-সূরা বাকারাঃ ৩১
﴿وَعَلَّمَ آدَمَ الْأَسْمَاءَ كُلَّهَا ﴾
“অতঃপর আল্লাহ আদমকে সমস্ত জিনিসের নাম শিখালেন”।
 ইউসুফ আ.-সূরা ইউসুফঃ ২২
﴿وَلَمَّا بَلَغَ أَشُدَّهُ آتَيْنَاهُ حُكْمًا وَعِلْمًا ﴾
“আর যখন সে তার পূর্ণ যৌবনে উপনীত হলো, আমি তাকে ফয়সালা করার শক্তি ও জ্ঞান দান করলাম”।
 খিজির আ.-সূরা আল কাহফঃ ৬৫
﴿فَوَجَدَا عَبْدًا مِّنْ عِبَادِنَا آتَيْنَاهُ رَحْمَةً مِّنْ عِندِنَا وَعَلَّمْنَاهُ مِن لَّدُنَّا عِلْمًا﴾
“এবং সেখানে তারা আমার বান্দাদের মধ্য থেকে এক বান্দাকে পেলো, যাকে আমি নিজের অনুগ্রহ দান করেছিলাম এবং নিজের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ জ্ঞান দান করেছিলাম”।
 লুত আ.-সূরা আল আম্বিয়াঃ ৭৪
﴿وَلُوطًا آتَيْنَاهُ حُكْمًا وَعِلْمًا ﴾
“আর লুতকে আমি প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দান করেছিলাম”।
 দাউদ ও সুলাইমান আ.-সূরা আন নামালঃ ১৫
﴿وَلَقَدْ آتَيْنَا دَاوُودَ وَسُلَيْمَانَ عِلْمًا ﴾
“আমি দাউদ ও সুলাইমানকে জ্ঞান দান করলাম”।
 সুলাইমান আ.-সূরা আল আম্বিয়াঃ  ৭৯
﴿فَفَهَّمْنَاهَا سُلَيْمَانَ ۚ وَكُلًّا آتَيْنَا حُكْمًا وَعِلْمًا ﴾
“সে সময় আমি সুলাইমানকে সঠিক ফায়সালা বুঝিয়ে দিয়েছিলাম, অথচ প্রজ্ঞা ও জ্ঞান আমি উভয়কেই দান করেছিলাম”।
 মুসা আ.-সূরা আল ক্বাসাসঃ ১৪
﴿وَلَمَّا بَلَغَ أَشُدَّهُ وَاسْتَوَىٰ آتَيْنَاهُ حُكْمًا وَعِلْمًا ﴾
“মূসা যখন পূর্ণ যৌবনে পৌছে গেলো এবং তার বিকাশ পূর্ণতা লাভ করলো, আমি তখন তাকে হুকুম ও জ্ঞান দান করলাম।”
 মুহাম্মদ সা.-সূরা ত্বা-হাঃ ১১৪
﴿ رَّبِّ زِدْنِي عِلْمًا﴾
“এবং দোয়া করো, হে আমার পরওয়ারদিগার! আমাকে আরো জ্ঞান দাও”।

♧ আমাদের সকল ধরণের জ্ঞান শিখতে হবে। ইসলামী শিক্ষা বলতে কোন শিক্ষা নাই। ইসলামের শিক্ষা আছে।♧  ইসলামের বাহিরে কোন জ্ঞান নাই। আমাদের বাবা হযরত আদম আ.কে সকল ধরণের জ্ঞান প্রদান করা হয়েছে।♧ আল্লাহ রাসূল মুহাম্দ সা. এর নির্দেশঃ  
عن أبي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم "الْكَلِمَةُ الْحِكْمَةُ ضَالَّةُ الْمُؤْمِنِ فَحَيْثُ وَجَدَهَا فَهُوَ أَحَقُّ بِهَا"

♧ এই জ্ঞানার্জনে আমাদের শিক্ষক হচ্ছেন নবী মুহাম্মদ সা.। তিনি বলেছেনঃ
إنما بعثت معلما
নবী সা. এর শিক্ষক হচ্ছেন স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা। আল্লাহ বলছেনঃ 
﴿وَوَجَدَكَ ضَالًّا فَهَدَىٰ﴾
“তিনি তোমাকে পথ না পাওয়া অবস্থায় পান, তারপর তিনি পথ দেখান”। (সূরা দোহাঃ ০৭)
 مَا كُنتَ تَدْرِي مَا الْكِتَابُ وَلَا الْإِيمَانُ وَلَٰكِن جَعَلْنَاهُ نُورًا نَّهْدِي بِهِ مَن نَّشَاءُ مِنْ عِبَادِنَا ۚ وَإِنَّكَ لَتَهْدِي إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ﴿

তুমি আদৌ জানতে না কিতাব কি এবং ঈমানই বা কি৷ কিন্তু সেই রূহকে আমি একটি আলো বানিয়ে দিয়েছি যা দিয়ে আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা পথ দেখিয়ে থাকি৷ নিশ্চিতভাবেই আমি তোমাকে সোজা পথের দিক নির্দেশনা দান করছি”।





Post a Comment

0 Comments