খুররম
মুরাদ
লেখক
পরিচিতিঃ
- তিনি ১৯৩২ সালে ভারতের ভূপালে জন্ম গ্রহন করেন। ১৯৪৭ সালে দেশে ভাগের সময় স্বপরিবারে চলে আসেন লাহোরে।
- পড়ালেখায় তিনি NED University of Engineering and Technology থেকে পুরোকৌশল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে ডিগ্রী লাভ করেন। একই বিভাগ থেকে মাস্টারস ডিগ্রি লাভ করেন University of Minnesota থেকে।
- ১৯৬৫ সালে আইয়ুব খানের জামানায় এই ইজ্ঞিনিয়ার ছিলেন ডিএনডি বাঁধের রুপকার।
- ১৯৭৫ সালে মসজিদুল হারামের এক্সটেনশন কাজের তিনি ছিলেন প্রধান প্রকৌশলী। যার কোন পারিশ্রমিক তিনি নেননি। তার বদান্যতার পুরস্কার হিসাবে হেরেম শরীফে তার নামে বাবে মুরাদ নামে একটি দরজা আছে।
- ১৯৫১-৫২ সেশনে ইসলামী ছাত্র সংঘের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। ইসলামী ছাত্রসংঘের সংবিধানের খসড়া তিনি প্রণয়ন করেন।
- জামায়াতে ইসলামতে যোগদানের পর তিনি ১৯৬৩-৭০ সাল জামায়াতে ঢাকা মহানগরীর আমীরের দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের নায়েবে আমীরের দায়িত্ব পালন করেন।
- ১৯৭৮-৮৬ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ইউকে এর মহাপরিচালক নিযুক্ত হয়ে সেখানে কাজ করেন।
- মাওলানা মওদূদী রাহ. কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত “তরজমানুল কুরআন” পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
- ১৯৯৬ সালের ১৭ ই ডিসেম্বর ইন্তেকাল করেন।
- তিনি বহু গ্রন্থ প্রণিতা। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক, কুরআন অধ্যয়ন সহায়িকা, ঈমানদারী, নিয়ত ও আমল তার গ্রন্থ সমূহের অন্যতম।
- তিনি এমন একজন নেতা, যিনি মুখে যা বলেন, কলমে যা লিখেন, সে অনুযায়ী জীবনকে পরিচালিত করেন।
বিষয়বস্তুঃ
- করাচীতে জামিয়াতুল ফালাহর উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে “নেতা ও শিক্ষক হিসেবে নবী করিম (সাঃ)” শিরোনামে তার সীরাত ও আদর্শের আলোচনা করতে হয়। আর এ আলোচনা ই পরবর্তিতে বই আকারে বের হয়।
- ইসলামী আন্দোলনে নেতার গুনাবলী কেমন হওয়া প্রয়োজন তা লেখক রাসুল (সাঃ) এর জীবনের আলোকে উপস্থাপন করেছেন। মুলতঃ রাসুল (সাঃ) এর নেতা হিসেবে কি গুনাবলী ছিল তাই তিনি তুলে ধরেছেন।
- ১৯৮৭ সালে ইসলামী নেতৃত্বের গুনাবলী শিরোনামে বইটির অনুবাদ করেন জনাব আব্দুস শহীদ নাসিম।
মুল
বইটিতে ৫ টি অধ্যায়ঃ
১. রাসুল (সাঃ) এর আদর্শ।
২.
রাসুল
(সাঃ) এর দাওয়াত ও দাওয়াতের উদ্দেশ্য।
৩.
নবী পাক
(সাঃ) এবং দাওয়াতে দ্বীন।
৪.
বিরুদ্ধবাদীদের
সাথে রাসুল (সাঃ) এর আচরন।
৫.
আন্দোলনের
সাথীদের সাথে রাসুল (সাঃ) এর আচরন।
প্রথম অধ্যায়ঃ রাসুল (সাঃ) এর আদর্শ
ক. আদর্শ নেতা ও শিক্ষক।
খ. কোরআন ও সীরাতে রাসুলের (সাঃ) সম্পর্ক।
গ. কোরআনে সীরাত অধ্যায়ের পন্থা।
ক. আদর্শ নেতা ও শিক্ষকঃ
১. রাসুল (সাঃ) হলেন সিরাজাম মুনীরা।
﴿يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ
شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا﴾﴿وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا
مُّنِيرًا﴾
“এবং তাদের জন্য আল্লাহ বড়ই
সম্মানজনক প্রতিদানের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। হে নবী! আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষী
বানিয়ে। সুসংবাদাতা ও ভীতি প্রদর্শণকারী
করে আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহবানকারীরূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপ হিসেবে। ”
(সূরা আল আহযাবঃ ৪৫-৪৬)
﴿وَجَعَلَ الْقَمَرَ فِيهِنَّ
نُورًا وَجَعَلَ الشَّمْسَ سِرَاجًا﴾
“ওগুলোর
মধ্যে চাঁদকে আলো এবং সূয্যকে প্রদীপ হিসেবে স্থাপন করেছেন”। (সূরা নূহঃ ১৬)
﴿وَجَعَلْنَا سِرَاجًا
وَهَّاجًا﴾
“এবং
একটি অতি উজ্জ্বল ও উত্তপ্ত বাতি সৃষ্টি করেছি”। (সূরা নাবাঃ ১৩)
-
সূয্যকে তৈরী করা হয়েছে তাপ, শক্তি ও জীবন লাভের উৎস
হিসাবে। যার কোন একটি আলোক রশ্মীকে অপরটির উপর শ্রেষ্টত্ব দেয়ার কোন সুযোগ
নাই।
-
একই ভাবে রাসূল সা. হচ্ছেন প্রকৃত জীবন ও তাপ অর্জনের
উৎস। তার পরিচয় কোন একটি বিভাগ দিয়ে করা
কঠিন। তাই তার একমাত্র পরিচয় তিনি আল্লাহর রাসূল। তার জীবনের সকল দিক আমাদের জন্য
অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়। তার জীবনের কোন একটি
দিককে ছোট করে দেখার কোন সুযোগ নাই।
২. রাসূলের জীবন রুহ ও আত্মার পরিতুষ্টির সামগ্রী।
৩. আমল ও কর্মের জন্য আদর্শ।
-
রাসূলের
আমল ও কর্ম থেকে কোনটা রেখে কোনটা নেবো তা নির্ধারণ করা কঠিন, যেমন কঠিন বাগানের
কোন ফুল রেখে কোনটা গ্রহণ করা হবে।
-
আমাদের
থলি ছোট। তাই যাই নেই না কেন, পরে অনেক
কিছুই থেকে যাবে।
-
আমরা
যাই গ্রহণ করিনা কেন, তা যা রেখে দিলাম তা থেকে নিকৃষ্ট নয়-এই দৃষ্টিভংগী আমাদেরকে
গ্রহণ করা সহজ করবো।
-
এখানে
আলোচিত হয়েছে, ধারণ ক্ষমতার সংকীর্ণতা, দৃষ্টির সীমাবদ্ধতা, সময় ও যুগের প্রয়োজন
এবং আমাদের ফায়দা লাভের সহজতার বিষয়গুলো বিবেচনা করে।
৪. আদর্শ শিক্ষক।
-
রাসূল
সা. এর নেতৃত্ব ও শিক্ষকতা জিন্দেগীকে এখানে প্রধান্য দেয়া হয়েছে।
-
এখানে
এই বিষয় আলোচিত হয়েছে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ভাবে। আর তা এ উদ্দেশ্যে যে, জীবনকে রঙিন
করার জন্য সূয্যের একটি রশ্মিই যথেষ্ট।
-
নেতা
বা শিক্ষক হিসাবে রাসূলের জীবনকে পৃথক করে দেখা অসম্ভব ব্যাপার। কারণ নবুয়াতের সুচনা থেকে তিনি শিক্ষক ও পথ
প্রদর্শক ছিলেন, যা জীবনের শেষ অবধি ছিল। আর শিক্ষা ও হেদায়াতের বাস্তবায়নের জন্য
ছিল তার নেতৃত্ব।
৫. শিক্ষাদানই রিসালাতের বুনিয়াদী দায়িত্ব।
-
নবুয়াতী জিন্দেগীর শুরু থেকে শেষ অবধি যে সব বিষয় শিক্ষা দেয়া
হয়েছে, তা হলোঃ আল্লাহর আয়াত, কিতাব, হিকমাত।
-
উপরোক্ত
বিষয়গুলো শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সংঘবদ্ধ করে সেই শিক্ষা অনুযায়ী
জীবন যাপনের আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া হয়েছে।
৬. রাসুল (সাঃ) কে জীবন কাফেলার সেনাপতি বানাতে হবে।
-
ইসলামী
সংগঠনে শামীল হওয়া মানে এই সিদ্ধান্ত নেয়া যে, রাসূল সা.কে আমাদের জীবন কাফেলার
সেনাপতি বানাবো।
-
তার
রেসালাতি দায়িত্ব আনজাম দিতে তৎপর হবো।
খ. কোরআন ও সীরাতে রাসুলের (সাঃ) সম্পর্কঃ
১. সর্বোত্তম সীরাত গ্রন্থ হলো কোরআন মাজীদ।
-
বইয়ের
আলোচনা থাকবে রাসূল সা.এর জীবনের সে সব দিক, যে সব দিকে আলোচনা হয়েছে কুরআনে।
কারণঃ
ক.
আলোচনাকে সংক্ষিপ্ত করার জন্য।
খ.
কুরআন ও সীরাতের মাঝে যে নিবীড় সম্পর্ক রয়েছে, তা পরিস্কার করার জন্য।
২. কুরআন সীরাতের নিখুত বর্ণনা আর সীরাত কুরআনের জীবন্ত
মডেল।
-
সীরাতের
গ্রন্থ সমূহে বর্ণনা সমূহ এসেছে রাবীদের মাধ্যমে।
-
কুরআনে
ঐতিহাসিক ও স্থান-কাল-পাত্র বিস্তারিত আলোচনা করা হয়নি।
-
সীরাত
রচয়িতাগন কুরআন থেকে খুব কম প্রমাণ গ্রহণ করেছেন।
-
মুফাস্সিরিনে
কিরাম কুরআনের আলোকে সীরাত আলোচনায় দৃষ্টি দেননি।
-
আমাদের
বিবেচনায় সর্বোত্তম সীরাত গ্রন্থ হলোঃ কুরআন। আর কুরআনের সর্বোত্তম তাফসীর হলোঃ
সীরাত।
৩. কোরআন পড়তে হবে শব্দের পরিবর্তে আমলী যবানে।
-
কুরআনের
বিশুদ্ধ তাফসীর জানতে হলে বা জীবন্ত কুরআন দেখতে হলে, কুরআনকে শব্দের পরিবর্তী
আমলী যবানে।
৪. সীরাতের আলোচনা হবে কুরআনের আলোকে।
-
জীবনন্ত
কুরআন পড়তে চাইলে, তাফসীর গ্রন্থ তথা ইবনে কাসির, কাশ্শাফ, আর রাযী ইত্যাদির চেয়ে
রাসূল সা. এর জিন্দেগীকে পড়তে হবে।
-
রাসূল
সা. এর জিন্দেগী শুরু হয়েছিল ‘ইকরা’ দিয়ে, আর যার ফলাফল হয়েছিলঃ
﴿يَدْخُلُونَ
فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا﴾﴿فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ
ۚ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا﴾
-
রাসূল
সা.কে দেখতে চাইলে,
o
ইবনে হিশাম, ইবনে সাআদ পড়ার আগে কুরআন পড়তে হবে।
o
স্থান-কাল
ও ঘটনাপঞ্জীর দিকে নজর না দিয়ে কুরআন থেকে তার স্বরূপ, গুণবৈশিষ্ট, নীতি ও আচরণ,
নৈতিক চরিত্র, লক্ষ্য উদ্দেশ্য ও জীবন আদর্শ জানতে হবে।
o
ওহীর
শিক্ষক ও ইসলামী আন্দোলনের নেতা হিসাব মুহাম্মদ সা.কে জানতে হবে-যা কুরআনের
প্রতিটি আয়াত ও শব্দে ছড়িয়ে আছে।
গ. কোরআনে সীরাত অধ্যায়ের পন্থাঃ
· ·
কুরআন
অন্যান্য গ্রন্থের মতো কোন গ্রন্থ নয় অথবা সাধারণ কোন সীরাত গ্রন্থও নয়। বিধায়
অন্যান্য গ্রন্থের মতো এখানে বিষয় ভিত্তিক আলোচনা, অধ্যায়-অনুচ্ছেদ, শিরোনাম
অনুসারে আলোচ্য বিষয়, প্যারা-প্যারাগ্রাফ, সূচীপত্র বা ইনডেক্স প্রদান করা হয়নি,
যাতে শিক্ষক বা নেতা হিসাবে তার গুণ বৈশিষ্ট এবং নীতি ও আদর্শ সরাসরি জানা যাবে।
· কুরআন থেকে সীরা অধ্যয়নও তথ্য সংগ্রহের Mechodology বা পন্থার মূলনীতি ২টিঃ
· কুরআন থেকে সীরা অধ্যয়নও তথ্য সংগ্রহের Mechodology বা পন্থার মূলনীতি ২টিঃ
১. কুরআনে
যেসব হেদায়াত ও হুকুম এবং বিধান দেয়া হয়েছে , সেগুলো নবী (সাঃ) ও তার সাথী মুমিনদের বলা হয়েছে। যেমনঃ يا أيها الرسول، يا
أيها النبي، ياأيها الذين أمنوا ইত্যাদি।
যেমনঃ
ক. তিনি প্রথম মুসলিম ও
প্রথম মুমিন এবং সর্বাধিক আমলকারী ও মান্যকারী-أول المسلمين، أول المؤمنين
খ.
তাঁর কথা ও কাজে কোন বৈপরিত্য ছিল না।
গ. তাঁকে কেবল তাবলীগের দায়িত্ব দেয়া
হয়নি, সাথে সাহেদ হওয়ারও দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
ঘ. তিনি দৈনন্দিন জীবনে যিকর, তাসবীহ,
তাকবীর, কিয়ামুল লাইল করতেন।
ঙ. তিনি জিহাদ করতেন।
চ. তিনি পরামর্শ করতেন।
ছ. তিনি কোমল আচরণ, দয়া ও ক্ষমা করতেন।
জ. তিনি জাহেলদের সাথে অহেতুক বিতর্কে লিপ্ত
হতেন না।
ঞ. কুরআনে যেখানে তার গুনাবলী বর্ণনা করা
হয়েছে, তা সূয্যের মতো প্রোজ্জল।
২. কুরআনে ঘটনাবলীর বর্ণনা যেখানে আছে সেখানেই সীরাতের আলোচনা।
যেমনঃ
ক. فلا يحزنك قولهم (তাদের কথা ও বক্তব্য যেন
তোমাকে চিন্তিত না করে) দিয়ে বিরোধীতা ও প্রপাগান্ডার ঝড় উঠেছিল বলে সীরাত বর্ণনা
করা হয়েছে।
খ. কুরআন অধ্যয়নের মাধ্যমে আমরা দেখি রাসুল
(সাঃ) ইজতিহাদ করেছেন। পদে পদে তিনি
আল্লাহর কাছ থেকে ওহী প্রাপ্ত হননি। যেমনঃ
১. বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নেয়া সিদ্ধান্ত
সমূহের কুরআনী পয্যালোচনা প্রমাণ করে যে, এসব সিদ্ধান্ত তিনি ইজতিহাদ করে
নিয়েছেন। ওহী কর্তৃক সিদ্ধান্ত পয্যালোচনার
সুযোগ নাই। যেমনঃ
o
বদরে আবু সুফিয়ানের বাহিনীর মোকাবেলা করবনে, না আবু
জেহেলের বানিজ্য কাফেলার? বদর যুদ্ধের বন্দীদের সাথে কি আচরণ হবে? ওহুদে মদীনার
ভিতরে থেকে যুদ্ধ না বাহিরে গিয়ে যুদ্ধ? মুনাফিকদের ওজর কবুল করবেন কি না? আযান
প্রবর্তন, খলিফা কে হবে?
o
কোন বিষয় আল্লাহর পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত থাকলে তা আগেই
জানিয়ে দেয়া হতো। যেমনঃ খন্দকের পর বনু কুরাইযার অভিযান, হুদায়বিয়ার সন্ধির ঘটনা
ইত্যাদি।
২.
রাসূল সা. মানুষ হওয়ার কারণে তিনি আমাদের জন্য আদর্শ ও অনুকরণীয়। তিনি মানুষের মতো হলেই কেবল তার অনুসরণ সম্ভব। যেমনঃ
o
তিনি ফেরেশতা নন।
o
গোটা আন্দোলন পরিচালনায় তার ভূমিকা মেশিনের মতো নয়।
o
যদি তা না হতো, তাহলে আমরা মনে করা অন্যায় হতো না যে,
এখন আর ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চলতে পারেনা। কারণ এখন আর সকল বিষয়ে আল্লাহ থেকে
ফায়সালা বুঝে নেয়ার কেউ নেই।
গ. রাসূল যদি ইজতিহাদ আর পরামর্শের সমন্বয়ে
আন্দোলন পরিচালনা করেন, তাহলে আমরা তার বা তার অনুসারীদের কাছে পৌছতে পারবোনা ঠিক।
তবে তাদের কাজের শত ভাগের একভাগে পৌছার তামান্না করতে পারি।
দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ রাসুল (সাঃ) এর দাওয়াত ও
দাওয়াতের উদ্দেশ্য
-
দাওয়াত ও আন্দোলনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য থাকতে হবেঃ
o
স্পষ্ট ও সুস্পষ্ট।
o
এ সম্পর্কে থাকতে হবে সঠিক ধারণা-সুস্পষ্ট বুঝ।
o
স্থায়ী-ক্ষণস্থায়ী নয়, রদবদল করার মতে নয়।
o
বিকৃত হবার মতো নয়।
o
একাধিক হলে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিন্যাস।
o
ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ হবে কুরআন ভিত্তিক।
১. দাওয়াতের সম্পর্ক আল্লাহর সাথে।
-
রাসূলের দাওয়াতের সম্পর্ক ছিল তার রবের সাথে
-
ইসলামী দাওয়াতের মূলকথা হলো, গোটা
জিন্দেগীর জ্ঞানের একমাত্র উৎস আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা।
-
হেদায়াতের একমাত্র মালিক আল্লাহঃ
﴿اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ﴾ ﴿خَلَقَ الْإِنسَانَ مِنْ عَلَقٍ﴾ ﴿اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ﴾ ﴿الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ﴾ ﴿عَلَّمَ الْإِنسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ﴾
“পড়ো (হে নবী), তোমার
রবের নামে। যিনি সৃষ্টি করেছেন। জমাট বাঁধা রক্তের দলা থেকে মানুষকে সৃষ্টি
করেছেন। পড়ো এবং তোমার রব বড় মেহেরবানী। যিনি কলমের সাহায্যে জ্ঞান শিখিয়েছেন।
মানুষকে এমন জ্ঞান দিয়েছেন, যা সে জানতো না”। (সূরা আলাকঃ ১-৫)
﴿قُلْ هَلْ مِن شُرَكَائِكُم مَّن يَهْدِي إِلَى الْحَقِّ ۚ قُلِ اللَّهُ يَهْدِي لِلْحَقِّ ۗ أَفَمَن يَهْدِي إِلَى الْحَقِّ أَحَقُّ أَن يُتَّبَعَ أَمَّن لَّا يَهِدِّي إِلَّا أَن يُهْدَىٰ ۖ فَمَا لَكُمْ كَيْفَ تَحْكُمُونَ﴾
“তাদেরকে
জিজ্ঞেস করো, তোমাদের তৈরী করা শরীকদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি যে সত্যের দিকে
পথনির্দেশ করে? বলো, একমাত্র
আল্লাহই সত্যের দিকে পথনির্দেশ করেন
তাহলে বলো, যিনি সত্যের দিকে পথনির্দেশ করেন তাহলে বলো, যিনি
সত্যের দিকে পথনির্দেশ করেন তিনি আনুগত্য লাভের বেশী হকদার না যাকে পথ না দেখলে পথ
পায় না- সে বেশী হকদার? তোমাদের হয়েছে কি? কেমন উল্টো সিদ্ধান্ত করে বসছো?” (সূরা
ইউনুসঃ ৩৫)
-
রাসূল সা. এর দাওয়াতে এমন কোন প্রমাণ ছিল না যে, এই দাওয়াত
তার নিজের দাওয়াত নয়। তবুও তিনি বারবার এই
দাওয়াতের সম্পর্ক আল্লাহর সাথে এই কথা উল্লেখ করেছেন, যাতে
দাওয়াতের সম্পর্ক দায়ীর সাথে-এই ভয় কেটে যায়। ভবিষ্যতের দায়ীরা এই
ভ্রান্তিতে নিমজ্জিত না হয়।
২. এক আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব।
-
রাসূল সা. এর দাওয়াত ও আন্দোলনের বুনিয়াদ ছিল সকল মিথ্যা খোদার শ্রেষ্ঠত্ব খতম
করে এক ও লা শারীক আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষনা ও প্রতিষ্ঠা।
-
রাসূল সা. এর রবের নির্দেশঃ ﴿وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ﴾ “তোমার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো”। (সূরা মুদ্দাস্সিরঃ ৩)
·
রাসূল সা. তার দাওয়াতের জন্য এই দুইটি (তথা
আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ও আল্লাহর শ্রেষ্টত্ব) বিষয়কে
প্রাথমিক ও বুনিয়াদী বিষয় হিসাবে গুরুত্বে দিয়েছেন।
·
তিনি চেয়েছেন যে, এই দূ’টি বিষয় কেবল মতবাদ বা
চিন্তা গবেষনার বস্তু হিসাবে পরিগনিত না হয় বা বক্তব্য বিবৃতির মাঝে সীমাবদ্ধ না
থাকে।
·
মানুষের মনে মগজে যাতে এই দূ’টি বিষয় সব সময় তরতাজা থাকে, এজন্য তিনি মুজাহিদদের জীবনের সাথে বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার জুড়িয়ে
দিয়েছিলেন। তার মাঝে আবার তাওহীদ, রেসালাত ও আল্লাহর সাথে সম্পর্কের বিষয়টা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।
·
রাসূল সা. আল্লাহর শ্রেষ্টত্ব ঘোষনা ও প্রতিষ্ঠার পথে যে কয়টি
বিষয়কে গুরুত্ব প্রদান করেছেন, তাহলোঃ
ক.আল্লাহর
বন্দেগীর প্রাধান্য।
খ.
মিথ্যা
খোদাদের বিরুদ্ধে জিহাদ।
গ.
দাওয়াতের
হেফাজত।
ঘ.
দাওয়াতের
সকল অংগের প্রতি লক্ষ্যারোপ।
ক. আল্লাহর বন্দেগীর প্রাধান্যঃ
-
রাসূলের দাওয়াতের বিভিন্ন অধ্যায় আছে। যেমনঃ রাজনৈতি ও
অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল, সামাজিক সংশোধন, তরবারী উত্তোলন, গনীমতের মাল সংগ্রহ, কাফেরদের সাথে সন্ধি,
যুদ্ধ, চূক্তি। এই সকল বিষয়ে তিনি
আল্লাহর দাসত্ব, আনুগত্য বিষয়টি হতে গাফিল হননি।
-
কুরআনের পাতায় পাতায় আমরা এই বিষয়টির প্রতিদ্বনি পাই।
যেমনঃ
o
বুনিয়াদী দাওয়াত ছিল-
﴿ذَٰلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ ۖ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ فَاعْبُدُوهُ﴾
“এ তো
আল্লাহ তোমাদের রব৷ তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই৷ সবকিছুর তিনিই স্রষ্টা৷ কাজেই
তোমরা তাঁরই বন্দেগী করো৷ তিনি সবকিছুর তত্বাবধায়ক৷” (সূরা আল আনআমঃ ১০২)
o
কখন প্রাণাকর্ষী ভাষায় আহবান করা হয়েছে-
﴿فَفِرُّوا إِلَى اللَّهِ﴾
“অতএব
আল্লাহর দিকে ধাবিত হও৷ আমি তাঁর পক্ষ থেকে তোমার জন্য স্পষ্ট সাবধানকারী৷” (সূরা যারিয়াতঃ ৫০)
o
রাজা বাদশাহর নিকট চিঠি লিখতে একই দাওয়াত প্রদান করা হতো-
o
ইহুদীদের নিকট একই জিনিসের দাবী করেছেন। যেমন নাজরান
প্রতিনিধি দলের কাছে দাওয়াত-
﴿تَعَالَوْا إِلَىٰ كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلَّا نَعْبُدَ إِلَّا اللَّهَ وَلَا نُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا وَلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللَّهِ﴾
“এসো
এমন একটি কথার দিকে, যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই ধরনের ৷ তা হচ্ছেঃ আমরা আল্লাহ ছাড়া কারোর বন্দেগী ও দাসত্ব করবো না৷ তাঁর সাথে
কাউকে শরীক করবো না৷ আর আমাদের কেউ আল্লাহ ছাড়া আর কাউকেও নিজের রব হিসেবে গ্রহন
করবে না ৷ ” (সূরা আলে ইমরানঃ ৬৪)
o
জিহাদ ও শাহাদাতে হকের দায়িত্ব প্রদান করতে-
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ارْكَعُوا وَاسْجُدُوا وَاعْبُدُوا رَبَّكُمْ......................﴾
﴿وَجَاهِدُوا
فِي
اللَّهِ
حَقَّ
جِهَادِهِ..............
وَتَكُونُوا
شُهَدَاءَ
عَلَى
النَّاسِ﴾
হে
ঈমানদারগণ! রুকূ’ ও সিজদা করো, নিজের রবের বন্দেগী করো ..............আল্লাহর পথে জিহাদ করো যেমন জিহাদ
করলে তার হক আদায় হয়৷..............এবং তোমরা সাক্ষী হও লোকদের ওপর৷” (সূরা আল হাজ্জঃ ৭৭-৭৮)
o
রাসূল সা. এর দায়িত্ব ও পদমর্াদাকে দায়ী ইলাল্লাহ বলা হয়েছে।
খ. মিথ্যা খোদাদের বিরুদ্ধে
জিহাদ।
-
রাসূলের দাওয়াতের দ্বিতীয় প্রধান্য বিষয় ছিল আল্লাহর
দিকে আহবান।
-
সেই আহবানের ফলে ১. যাদেরকে মানুষ খোদা বানিয়েছিলো। ২.
যারা নিজেরাই খোদা হয়ে বসেছিল। ৩. যে সব শক্তি বা প্রতিষ্ঠান আল্লাহ বিদ্রোহের
ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, রাসূল তাদের সকলের সমালোচনা করেছেন এবং তাদের
বিরুদ্ধে জিহাদে অবতীর্ণ হয়েছেন।
-
রাসূল উপরোক্ত ১. কারো কাজে অংশ নেননি। ২. কারো সাথে
সমঝোতা করেননি। ৩. কাউকে বৈধ বলে স্বীকার করেননি।
-
রাসূল তার দাওয়াত সম্পন্ন করেছেন ১. হিকমাতের সাথে। ২.
মানবিক জযবার সাথে। ৩. নৈতিক আদর্শের সীমার মধ্যে থেকে। ৪. সামান্যতম অবহেলা না করে। ৫. উন্নত নৈতিক আচরণ করে। ৬. সহ অবস্থান না করে। ৭. “আল্লাহর বন্দেগী করো, তাগুত থেকে
সম্পর্কহীন হয়ে দূরে অবস্থান করে” ﴿أَنِ
اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ﴾ নীতি ভিত্তিতে আমল করেছেন।
-
রাসূলের দাওয়াত কেবল পাথরের মূর্তির বিরুদ্ধে ছিলনা। তার দাওয়াত সৃষ্টি করেছিল হাজারো প্রশ্নঃ
o
বাপ দাদার নাম ও তাদের ইজ্জতের প্রশ্ন।
o
গোত্রীয় দলাদলীর প্রশ্ন।
o
সামাজিক রসম রেওয়াজের প্রশ্ন।
o
সোসাইটি বা কালচারের ভূতের প্রশ্ন।
o
বংশ ও বর্ণের প্রশ্ন।
o
জাতীয়তাবাদী ঝগড়া বিবাদের প্রশ্ন।
o
কামনা বাসনা ও নফসের গোলামীর প্রশ্ন।
o
ধন সম্পদ অন্যায় ভাবে সংগ্রহ ও জমিয়ে রাখার প্রশ্ন।
o
নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার প্রশ্ন।
o
চলমান নেতৃত্বের প্রশ্ন।
o
জ্ঞান ও তাকওয়ার প্রশ্ন।
o
ফলে তার বিরুদ্ধবাদীদের বক্তব্য ছিলঃ
﴿أَجَعَلَ
الْآلِهَةَ إِلَٰهًا وَاحِدًا ۖ إِنَّ هَٰذَا لَشَيْءٌ عُجَابٌ﴾وَانطَلَقَ
الْمَلَأُ مِنْهُمْ أَنِ امْشُوا وَاصْبِرُوا عَلَىٰ آلِهَتِكُمْ ۖ إِنَّ هَٰذَا
لَشَيْءٌ يُرَادُ﴾
“সকল
খোদার বদলে সেকি মাত্র একজনকেই খোদা বানিয়ে নিয়েছে ? এতো বড় বিস্ময়কর কথা! আর জাতর
সরদাররা একথা বলতে বলতে বের হয়ে গেলো, “চলো, অবিচল
থাকো নিজেদের উপাস্যদের উপাসনায়৷ একথা তো ভিন্নতর উদ্দেশ্যেই বলা হচ্ছে।” (সূরা আছ ছোয়াদঃ ৫-৬)
গ. দাওয়াতের হেফাজত।
৬. দাওয়াতের সকল অংগের প্রতি লক্ষ্যারোপ।
তিনটি পদ্ধতিতে দাওয়াত দানঃ
১. আল্লাহর ভয় প্রদর্শন
২. আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়া।
৩. আল্লাহর সু-সংবাদ দেওয়া।
তৃতীয় অধ্যায়ঃ নবী পাক (সাঃ) এবং
দাওয়াতে দ্বীন
গুরু দায়িত্বের অনুভুতি ও সার্বক্ষনিক
ব্যাকুলতা।
১. আল্লাহর কাজ মনে করার ধরন।
২. মালিকের তত্বাবধানে।
৩. মর্যাদা ও যিম্মাদারীর অনুভূতি।
৪. দুর্বহ কালাম।
৫. সার্বক্ষনিক ধ্যান ও পেরেশানী।
স্বীয় প্রস্তুতিঃ এই কাজ গুলো করার জন্য
১. কোরআনের সাথে নিবিড় সম্পর্ক।
২. জ্ঞান লাভের তীব্র আকাংখা।
৩. কিয়ামুল লাইল ও তারতীলুল কোরআন।
৪. যিকরে ইলাহী।
৫. সবর।
চতুর্থ অধ্যায়ঃ বিরুদ্ধবাদীদের সাথে
রাসুল (সাঃ) এর আচরণ
⧬ মৌখিক
বিরোধীতা।
⧬ মোকাবিলা
এবং জেহাদ
⧬ উত্তম
নৈতিকতা।
⧬ মন্দের
জবাব ভালো দিয়ে।
⧬ তায়িফের
ঘটনা।
৫ম অধ্যায়ঃ আন্দোলনের সাথীদের সাথে রাসুল
(সাঃ) এর আচরন।
§ ⧬ রাউফুর
রাহীম-
§ ⧬ মর্যাদা
অনুভূতি ও নিবিড় সম্পর্ক।
§ ⧬ তা’লীম ও তাযকিয়া।
§ ⧬ পর্যবেক্ষন
ও ইহতেসাব।
§ ⧬ যোগ্যতা
ও সামর্থ অনুযায়ী আচরন।
§ ⧬ কোমলতা
ও সহজতা।
§ ⧬ ক্ষমা ও
মার্জনা।
§ ⧬ বিনয়।
মনোবাসনাঃ সর্বশেষ লেখকের মনোবাসনা পেশের মাধ্যমে
উপসংহার টানা হয়েছে।
তিনটি বিষয়ে রাসুল (সাঃ) গুরুত্ব দিতেন-
১. মনোবৃত্তিতে ইখলাস।
২. সম্পদ কোরবানীর প্রবল আগ্রহ।
৩. জীবনের লক্ষ্যবিন্দু আখেরাত।
- সম্পদ কোরবানীর মাধ্যমে মনকে পরীক্ষা করা যায়।
- সম্পদ ব্যাতীত আন্দোলন চলেনা।
0 Comments