আমাদের বিশ্বাসের ধরণ – মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম

মুহাম্মদ নজরুল ইসলামঃঃ আমাদের বিশ্বাসটা কেমন? আমারা কাদরেকে বিশ্বাস করি আর কাদেরকে বিশ্বাস করিনা??

১. যে লোকটা জুয়া খেলে হাজার কোটি টাকার মালিক, শুধু ঘুষই প্রদান করে মাসে ২৫ কোটি টাকা। তখন আমরা তাকে  বিশ্বাস না করারই কথা। কিন্তু যখন সে বলে মন্ত্রীদেরকে সে মাসিক মাসোহারা দেয়, তারেক রহমানকে মাসে ১ কোটি টাকা ঘুষ দেয়, তখন আমরা তাকে অতি সহজে বিশ্বাস করি।
২. যে লোকটা দেশের সকল আদালতে এক সাথে বোমা ফাটায়, যে নিরপরাধ মানুষকে বোমা মেরে হত্যা করার অপরাধে গ্রেফতার হয়। তাকে আমরা বিশ্বাস না করারই কথা। কিন্তু যখন সে বলে, সে কোন না কোন সময়ে জামায়াতের কর্মী ছিল, তখন আমরা তাকে অতি সহজে বিশ্বাস করি।
৩. যে লোকটা চাঁদাবাজি, মোস্তানী, বন উজাড় করা, অন্যের জমি দখল করা, ধর্ষণ, দূর্নীতি ইত্যাদি অভিযোগে অভিযুক্ত, তখন আমরা তাকে বিশ্বাস না করারই কথা। কিন্তু যখন সে নতুন কেনা টুপি মাথায় দিয়ে আমার কাছে ভোট ভিক্ষা নিতে আসে, তখন আমরা তাকে অতি সহজে বিশ্বাস করি।
৪. যে লোকটা একাধারে ১০টি বছর ক্ষমতায় থাকার পর দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, বালিশ-পর্দা-এসি পেরিয়ে পুকুরচুরি, ব্যাংক ডাকাতি, শেয়ার মার্কেট উদাও, ক্যাসিনো, জুয়া ইত্যাদি অপরাধ করে আর তা আমরা মিডিয়ার কল্যাণে জানি, তখন তাকে বিশ্বাস না করারই কথা। কিন্তু যখনই সেই লোকটা বলে, ক্যাসিনো বিএনপি সরকার শুরু করেছিলো, দূর্নীতি আর হাওয়া ভবন বিএনপি সরকারের সময়ে শুরু, তখন আমরা ১০ বছরের দীর্ঘ সময়ের কথা ভূলে এর আগের ১১ নম্বর বছরের কথা অতি সহজেই বিশ্বাস করি।
৫. যে লোকটা ১৫ বছর আগে কাতারী স্পন্সরদের অত্যাচারের গল্প শোনাতো। সেই লোকটা ১২ বছর আগে কোন এক কাতারীর সাথে ৫১/৪৯% অংশিদারিত্বে কোম্পানীর মালিক  এবং সিগন্যাচার অথরিটি হয়ে দোকান এবং সাইট ছাড়া হাজার হাজার ভিসা বিক্রি করে কাতারে লোক নিয়ে আসে কোটি কোটি টাকা অবৈধ উপার্জন করে। তথাকথিত ফ্রি ভিসার লোকদের কাছ থেকে প্রতিমাসে কমিশন নিয়ে কাতারীদের চেয়ে সীমাহীন বেশী জুলুম করে বিশাল অংকের টাকার মালিক। যে ব্যক্তি দেশে একাধিক অট্টালিকার মালিক এবং কাতারে রাজকীয় স্টাইলে বসবাস করে। সেই লোকটার অধীনে হাজার হাজার লোক কাজের অভাবে কাতারের ন্যাশনাল আর নাজমা এলাকায়  মানবেতন জীবন যাপন করে। আমরা ভিসা ব্যবসায়ী ঐ সব লোকদের বিশ্বাস না করারই কথা। কিন্তু ঐ লোকটি কমিউনিটির মিটিং-এ গিয়ে ভাল ডোনেশন দিয়ে যখন বড় পদ ভাগিয়ে নেয় এবং মাইকের সামনে সুন্দর সুন্দর হেদায়াতী বক্তব্য রাখে, তখন আমরা তাকে অতি সহজেই বিশ্বাস করি।
৬. যে লোকটি আমার চোঁখের সামনে দিয়ে চলা ফেরা করে। তার চরিত্র গুণে মুগ্ধ হয়ে তাকে মসজিদের ক্যাশিয়ার বানিয়ে রাখি বছরের পর বছর। যার কাছে আমানতের টাকা রাখি, টাকা বৃদ্ধির জন্য ঐ লোকের হাতে টাকা দেই, তার ব্যাংকের শেয়ার ক্রয় করে প্রতি বছর মুনাফা এবং স্বচ্চ হিসাব গ্রহণ করি। যাদের পরিমন্ডলে মাদক তো দূরের কথা সিগারেটাও পাওয়া কঠিন হয়ে দাড়ায়। যাদেরকে আমরা দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণ, আত্মীয় করণ, ক্যাসিনো, জুয়া, ধর্ষণ ইত্যাদি থেকে অনেক দুরে দেখি। যাকে আদর্শ ও চরিত্রবান হিসাবে গ্রহণ করি। যাদের ইত্যাদি গুনাবলীতে মুগ্ধ হয়ে আমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিশ্বাস করি। কিন্তু ঐ ব্যক্তিটি সম্পর্কে যখন উপরের চরিত্রহীন লোক গুলো মিথ্যা অভিযোগ প্রদান করে বলে ওরা ৭১-এ হত্যা, লঠতরাজ এবং ধর্ষণের সাথে জড়িত ছিল, তখন এই কথাটা আমরা অতি সহজেই বিশ্বাস করি।
হায়! কত বিচিত্র আমাদের বিশ্বাস!! কত বিচিত্র আমাদের ভালবাসা আর ভাললাগা!!!

Post a Comment

0 Comments