তেলাওয়াত ও তরজমাঃ
﴿ المص﴾
১) আলিফ, লাম, মীম, সোয়াদ।
﴿كِتَابٌ أُنزِلَ
إِلَيْكَ فَلَا يَكُن فِي صَدْرِكَ حَرَجٌ مِّنْهُ لِتُنذِرَ بِهِ وَذِكْرَىٰ
لِلْمُؤْمِنِينَ﴾
২) এটি তোমার প্রতি নাযিল করা একটি কিতাব৷ কাজেই তোমার মনে যেন এর সম্পর্কে কোন
সংকোচ না থাকে৷ এটি নাযিল
করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, এর মাধ্যমে
তুমি (অস্বীকারকারীদেরকে )ভয় দেখাবে এবং মুমিনদের জন্যে এটি হবে একটি স্মারক।
﴿اتَّبِعُوا مَا أُنزِلَ
إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا مِن دُونِهِ أَوْلِيَاءَ ۗ قَلِيلًا
مَّا تَذَكَّرُونَ﴾
৩) হে মানব সমাজ! তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের
ওপর যা কিছু নাযিল করা হয়েছে তার অনুসরণ করো এবং নিজেদের রবকে বাদ দিয়ে অন্য
অভিভাবকদের অনুসরণ করো না৷ কিন্তু তোমরা খুব কমই উপদেশ মেনে থাকো।
﴿وَكَم مِّن قَرْيَةٍ
أَهْلَكْنَاهَا فَجَاءَهَا بَأْسُنَا بَيَاتًا أَوْ هُمْ قَائِلُونَ﴾
৪) কত জনপদ আমি ধ্বংস করে দিয়েছি৷ তাদের ওপর আমার
আযাব অকস্মাত ঝাঁপিয়ে পড়েছিল রাতের বলা অথবা দিনের বেলা যখন তারা বিশ্রামরত ছিল।
﴿فَمَا كَانَ دَعْوَاهُمْ
إِذْ جَاءَهُم بَأْسُنَا إِلَّا أَن قَالُوا إِنَّا كُنَّا ظَالِمِينَ﴾
৫) আর যখন আমার আযাব তাদের ওপর আপতিত হয়েছিল তখন
তাদের মুখে এ ছাড়া আর কোন কথাই ছিল না যে, সত্যিই আমরা জালেম ছিলাম।
﴿فَلَنَسْأَلَنَّ
الَّذِينَ أُرْسِلَ إِلَيْهِمْ وَلَنَسْأَلَنَّ الْمُرْسَلِينَ﴾
৬) কাজেই যাদের কাছে আমি রসূল পাঠিয়েছি তাদেরকে
অবশ্যি জিজ্ঞাসাবাদ করবো৷ এবং
রসূলকেও জিজ্ঞাসা করবো (তারা পয়গাম পৌছিয়ে দেবার দায়িত্ব কতটুকু সম্পাদন করেছে
এবং এর কি জবাব পেয়েছে)।
﴿فَلَنَقُصَّنَّ
عَلَيْهِم بِعِلْمٍ ۖ وَمَا كُنَّا غَائِبِينَ﴾
৭) তারপর আমি নিজেই পূর্ণ জ্ঞান সহকারে সমুদয় কার্যাবিবরণী তাদের
সামনে পেশ করবো৷ আমি তো আর সেখানে অনুপস্থিত ছিলাম না!
﴿وَالْوَزْنُ يَوْمَئِذٍ
الْحَقُّ ۚ فَمَن ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ﴾
৮) আর ওজন হবে সেদিন যথার্থ সত্য।
﴿وَمَنْ خَفَّتْ
مَوَازِينُهُ فَأُولَٰئِكَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنفُسَهُم بِمَا كَانُوا
بِآيَاتِنَا يَظْلِمُونَ﴾
৯) যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই হবে সফলকাম এবং যাদের
পাল্লা হালকা হবে তারা নিজেরাই হবে নিজেদের ক্ষতি সাধনকারী৷ কারণ তারা আমার আয়াতের সাথে জালেম সূলভ
আচরণ চালিয়ে গিয়েছিল।
﴿وَلَقَدْ مَكَّنَّاكُمْ
فِي الْأَرْضِ وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيهَا مَعَايِشَ ۗ قَلِيلًا مَّا تَشْكُرُونَ﴾
১০) তোমাদেরকে আমি ক্ষমতা-ইখতিয়ার সহকারে পৃথিবীতে
প্রতিষ্ঠিত করেছি৷ এবং তোমাদের জন্যে এখানে জীবন ধারণের উপকরণ সরবরাহ
করেছি৷কিন্তু তোমরা খুব কমই শোকর গুজারী করে থাকো।
নামকরণঃ
§ আরাফ মানেঃ উচু স্থান। যা আরবী عُرْفٌ শব্দের বহু বচন। উর্ধ্ব, উচু স্থান, প্রাচীরের উপরিভাগ,
টিলাভূমি,
ভূমি থেকে অপেক্ষাকৃত উচু স্থান
ইত্যাদি বুঝাতে এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
§ আরাফ হলোঃ জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী একটি
স্থান-(الحاجز بين الجنة والنار)-জান্নাত ও
জাহান্নামের মধ্যবর্তী একটি অন্তরায়। যেখান থেকে জান্নাত ও
জাহান্নাম দেখা যাবে। এখানে জান্নাত প্রার্থী কিছু লোককে রাখা হবে। যেহেতু এই স্থানে অবস্থান করার কারণে সকলকে দেখা যাবে এবং
একে অপরকে চিনতে পারবে, তাই এর নাম রাখা হয়েছে আরাফ।
§ এই সূরায় জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে উচু স্থানে
অবস্থানকারী তথা আরাফের অধিবাসীদের সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে বলে এই সূরার নামকরণ করা
হয়েছেঃ সূরা আল আরাফ।
§ এই সূরা ৪৬ নম্বর আয়াতে আরাফ শব্দকে এর নাম হিসাবে গ্রহণ
করা হয়েছে।
﴿وَبَيْنَهُمَا حِجَابٌ ۚ وَعَلَى الْأَعْرَافِ رِجَالٌ يَعْرِفُونَ
كُلًّا بِسِيمَاهُمْ ۚ وَنَادَوْا أَصْحَابَ الْجَنَّةِ أَن سَلَامٌ عَلَيْكُمْ ۚ
لَمْ يَدْخُلُوهَا وَهُمْ يَطْمَعُونَ﴾ ﴿وَإِذَا صُرِفَتْ
أَبْصَارُهُمْ تِلْقَاءَ أَصْحَابِ النَّارِ قَالُوا رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا
مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ﴾
এ উভয় দলের
মাঝখানে থাকবে একটি অন্তরাল৷ এর উচু স্থানে (আ’রাফ) অপর কিছু লোক থাকবে৷
তারা জান্নাতে প্রবেশ করেনি ঠিকই কিন্তু তারা হবে তার প্রার্থী৷ তারা প্রত্যেককে তার লক্ষণের সাহায্যে চিনে নেবে। জান্নাতবাসীদেরকে
ডেকে তারা বলবেঃ “তোমাদের প্রতি শান্তি হোক! ”আর যখন তাদের দৃষ্টি জাহান্নামবাসীদের দিকে ফিরবে, তারা
বলবেঃ “হে আমাদের রব! এ জালেমের সাথে আমাদের শামিল করো না।”
§ কুরআনে الْأَعْرَافِ শব্দটি এসেছে ২বার। এই সূরার ৪৬ এবং ৪৮ নম্বর আয়াতে।
আলোচ্য বিষয়ঃ
§ কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তুঃ রিসালাতের প্রতি ঈমান আনার দাওয়াত।
§ আলোচনা মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যঃ আল্লাহর পাঠানো রাসূলকে
মানার জন্য শ্রোতাদের উদ্বুদ্ধ করা।
-
সতর্ক
ও ভয় দেখানো হয়েছে মক্কাবাসীদেরকে-যাতে তারা অতীতের জাতির মতো রাসূলকে অস্বীকার করার কারণে
মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন না হয়।
-
দাওয়াতের
ডিরেকশন-মক্কাবাসীদের থেকে ফিরিয়ে আহলে কিতাব ও সমগ্র মানুষের প্রতি পেশ করা
হয়েছে। আর তা থেকে এই আভাস পাওয়া যায় যে,
হিজরত নিকটবর্তী এবং রাসূলের জন্য
শুধু নিকটের মানুষদের দাওয়াত দেয়ার যুগ শেষ হয়ে যাচ্ছে।
-
ইহুদীদেরকেও
সম্বোধণ করা হয়েছে।
-
নবীর
প্রতি ঈমান আনার পর মুনাফেকী আচরণের পরিণাম কি, তা জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
-
শেষ
পর্যায়ে দাওয়াতের কৌশল সম্পর্কে রাসূল সা.
ও সাহাবায়ে কিরামদের নির্দেশনা
দেয়া হয়েছে। আর তাহলোঃ
১. বিরুদ্ধবাদীদের উত্তেজনা সৃষ্টি, নিপীড়ন ও দমনমূলক কাজের মোকাবেলায় ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার নীতি অবলম্বন করা।
২. আবেগ ও উত্তেজনার বশে মূল উদ্দেশ্যের ক্ষতি হতে পারে এমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করা।
নাযিলের সময়কাল
§ মক্কী জীবনের শেষ দিকে নাযিল হওয়া সূরা সমূহের একটি সূরা। সূরা আল আনআমের মতোই একটি
সূরা।
§ সূরা আনআম আগে নাযিল হয়েছে, না সূরা আল আরাফ-এ ব্যাপারে
মুফাস্সিরগনের কোন সুস্পষ্ট বক্তব্য নাই। তবে সমসাময়িক সময়ে নাযিল হয়েছে বলে সকল
মুফাস্সির একমত পোষন করেন।
§ পার্থক্য এতটুকু যে, সূরা আল আনআম একসাথে নাযিল হয়েছে-যখন
রাসূল সা. উটের উপর সওয়ার ছিলেন। আর সুরা আরাফ একসাথে নাযিল হয়নি।
§ সূরা আল আনআমের বিষয়বস্তু যেমন ছিল আকীদা-এই সূরার
বিষয়বস্তুও আকীদা।
§ সূরা আল আনআমে আকীদা সম্পর্কে শুধু বর্ণনা এসেছে। আর এই
সূরাতে শুধু বর্ণনা নয়, বরং আকীদার বিষয়বস্তু, এর তাৎপর্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
§ সূরা নাযিলের সময়ে আরবের
জাহিলিয়াতের চেহারা প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, অতীতের জাহিলিয়াতের
মতো বর্তমানের জাহিলিয়াতের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য একই ধরণের। যেমনঃ যুক্তিকে দেখেও
না দেখা, ব্যক্তি স্বার্থের কারণে সকল যুক্তিকে উপেক্ষা করা।
§ ১৬৩-
ব্যাখ্যাঃ
﴿ المص﴾
১) আলিফ,লাম,মীম,সোয়াদ।
§ কুরআনে মোট ২৯টি সূরার শুরুতে এই ধরণের শব্দাবলী এসেছে। এই ধরণের
শব্দাবলীকে হুরুফে মুক্বত্তিয়াত বলে।
§ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এর মতে ﴿ المص﴾
মানে أنا الله أفصل
§ الله لطيف مجيد صادق
﴿كِتَابٌ أُنزِلَ إِلَيْكَ
فَلَا يَكُن فِي صَدْرِكَ حَرَجٌ مِّنْهُ لِتُنذِرَ بِهِ وَذِكْرَىٰ
لِلْمُؤْمِنِينَ﴾
২) এটি তোমার প্রতি নাযিল করা একটি কিতাব। কাজেই তোমার মনে যেন এর
সম্পর্কে কোন সংকোচ না থাকে। এটি নাযিল করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, এর মাধ্যমে তুমি
(অস্বীকারকারীদেরকে) ভয় দেখাবে এবং মুমিনদের জন্যে এটি হবে একটি স্মারক।
এই কিতাব |
كِتَابٌ |
আপনার প্রতি নাযিল করা হয়েছে |
أُنزِلَ إِلَيْكَ |
অতএব যেন না থাকে |
فَلَا يَكُن |
আপনার অন্তরে সে সম্পর্কে কোন সন্দেহ |
فِي صَدْرِكَ حَرَجٌ
مِّنْهُ |
যেন আপনি সতর্ক করতে পারেন এর মাধ্যমে |
لِتُنذِرَ بِهِ |
এবং এটি উপদেশ মুমিনদের জন্য |
وَذِكْرَىٰ
لِلْمُؤْمِنِينَ |
﴿كِتَابٌ
أُنزِلَ إِلَيْكَ﴾ এই কিতাব আপনার প্রতি নাযিল
করা হয়েছে।
§ কিতাব বলতে এখানে সূরা আরাফকে বুঝানো হয়েছে।
§ কেহ কেহ বলেছেন, কিতাব বলতে পুরো
কুরআনকে বুঝানো হয়েছে।
﴿ فَلَا
يَكُن فِي صَدْرِكَ حَرَجٌ مِّنْهُ﴾ কাজেই তোমার মনে যেন এর সম্পর্কে কোন সংকোচ না
থাকে।
§ মানেঃ
-
এই
কিতাব কোন ধরণের সংকোচ, ইতস্ততভাব এবং ভয়-ভীতি ছাড়াই মানুষের কাছে পৌছে দাও।
-
বিরুধীরা
কিভাবে গ্রহণ করবে এই পরোয়া করোনা। তাদের বিরুধীতা ক্ষেপে যাওয়া, বিদ্রুপ করা, আজে বাজে কথা বলা, শত্রুতা বেড়ে
যাওয়া-যাই
হোক না কেন।
-
একে
নিশ্চিন্তে, নিসংকোচে
পৌছে দাও, গড়িমসি
করো না।
§ আয়াতে ব্যবহৃত শব্দ হচ্ছেঃ حَرَجٌ তাফহীমুল
কুরআনে যার অর্থ করা হয়েছে সংকোচ। حَرَجٌ এর
আভিধানিক অর্থ হলোঃ এমন ঘন ঝোপঝাড়, যার ভিতর দিয়ে চলা কঠিন।
§ فِي
صَدْرِكَ حَرَجٌ বা মনে হারাজ থাকার মানে হলোঃ
বিরোধীতা ও বাঁধা প্রতিবন্ধকতা মাঝে মানুষ নিজের চলার পথ পরিস্কার না দেখে চলতে
পারে না, মানুষ থেকে যায়।
§ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. حَرَجٌ শব্দের তাফসীর করেছেনঃ
সন্দেহ। তার মতে ﴿ فَلَا يَكُن فِي صَدْرِكَ حَرَجٌ مِّنْهُ﴾ এর অর্থ ﴿ فَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الْمُمْتَرِينَ﴾ কাজেই এ ব্যাপারে তোমরা কখনোই কোন প্রকার সন্দেহের শিকার
হয়ো না। (সূরা আল বাকারা-১৪৭, তাফসীরে উসমানী)
§ আল্লাহ যে রাসূল প্রেরণ করেছেন, তার শান নয় যে, তার প্রতি যে
কিতাব নাযিল হয়েছে অথবা কিতাবের বিধি-বিধানের ব্যাপারে তার অন্তরে সামান্যতম খটকা, সন্দেহ বা সংশয়
উদিত হবে।
§ কুরআনে হাকীমে বাঁধা প্রতিবন্ধকতার এই বিষয়টাকে يَضِيقُ صَدْرُ শব্দের
মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। যেমনঃ
-
সূরা
আল-হিজর
এর ৯৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ ﴿وَلَقَدْ نَعْلَمُ
أَنَّكَ يَضِيقُ صَدْرُكَ بِمَا يَقُولُونَ﴾ হে মুহাম্মদ! আমি জানি এরা যেসব কথা বলে বেড়াচ্ছে তাতে তোমার মন সংকুচিত
হয়ে যাচ্ছে।” মানে
জিদ, হঠকারিতা
ও সত্য বিরোধিতা এমন পর্যায়ে নেমে এসেছে যে,
তাদেরকে কিভাবে সোজা পথে আনা যাবে, এই চিন্তায় আপনি
পেরেশান হয়ে পড়েছেন।
-
সূরা
হুদ এর ১২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ ﴿فَلَعَلَّكَ تَارِكٌ
بَعْضَ مَا يُوحَىٰ إِلَيْكَ وَضَائِقٌ بِهِ صَدْرُكَ أَن يَقُولُوا لَوْلَا
أُنزِلَ عَلَيْهِ كَنزٌ أَوْ جَاءَ مَعَهُ مَلَكٌ ﴾ এমন যেন না হয়ে যে,
তোমার দাওয়াতের জবাবে তারা তোমার
কাছে কোন ধনভান্ডার অবতীর্ণ হয়নি কেন?
তোমার সাথে কোন ফেরেশতা আসেনি কেন? একথা বলবে ভেবে
তুমি তোমার প্রতি নাযিল করা কোন কোন অহী প্রচার করা বাদ দিয়ে দেবে এবং বিব্রত বোধ
করবে।“
-
সূরা
আনআমে বলা হয়েছে-
§ সূরা আল আহকাফঃ ৩৫. ﴿فَاصْبِرْ
كَمَا صَبَرَ أُولُو الْعَزْمِ مِنَ الرُّسُلِ﴾ অতএব, হে নবী, দৃঢ়চেতা রসূলদের মত ধৈর্য ধারণ করো।
﴿ لِتُنذِرَ بِهِ وَذِكْرَىٰ لِلْمُؤْمِنِينَ﴾ এটি নাযিল
করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, এর মাধ্যমে তুমি (অস্বীকারকারীদেরকে) ভয় দেখাবে এবং মুমিনদের জন্যে এটি হবে
একটি স্মারক।
§ ভয় দেখাতে হবে কুরআন দিয়ে। ওয়াজের বিষয়বস্তু বা তাবলীগের
বিষয়বস্তু হবে কুরআন।
§ এখানে সূরা আসল উদ্দেশ্য বলা হচ্ছেঃ ভয় দেখানো। মানেঃ
-
রাসূল
সা. এর
দাওয়াত কবুল না করার পরিণাম কি সে সম্পর্কে সতর্ক করার সাথে সাথে ভয় দেখানো হচ্ছে
এবং গাফেলদেরকে সজাগ করা হচ্ছে।
-
সাথে
সাথে এটাকে মুমিনদের জন্য স্মারকও। মানে-
o
তাদেরকে
স্মরণ করে দেয়া হচ্ছে যে, ভয় ভীতি দেখানো একটি বোনাস জাতীয় লাভ। কিন্তু এই মিশন ভয়
ভীতি দেখানোর মাধ্যমে সাকসেসফুল হয়না।
o
কাফেরদের
জন্য এটা নাজির আর মুমিনদের জন্য এটা যিকর বা উপদেশ।
﴿اتَّبِعُوا مَا أُنزِلَ
إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا مِن دُونِهِ أَوْلِيَاءَ ۗ قَلِيلًا
مَّا تَذَكَّرُونَ﴾
৩) হে মানব সমাজ! তোমাদের রবের পক্ষ থেকে
তোমাদের ওপর যা কিছু নাযিল করা হয়েছে তার অনুসরণ করো এবং নিজেদের রবকে বাদ দিয়ে
অন্য অভিভাবকদের অনুসরণ করো না। কিন্তু তোমরা খুব কমই উপদেশ
মেনে থাকো।
তোমরা তার অনুসরণ করো |
اتَّبِعُوا |
যা তোমাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে |
مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم |
তোমাদের মালিকের পক্ষ থেকে |
مِّن رَّبِّكُمْ |
এবং তোমরা অনুসরণ করো না |
وَلَا تَتَّبِعُوا |
তাকে ছাড়া অভিভাবকদেরকে |
مِن دُونِهِ أَوْلِيَاءَ |
খুব কমই তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর থাকো |
قَلِيلًا مَّا
تَذَكَّرُونَ |
﴿اتَّبِعُوا
مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا مِن دُونِهِ أَوْلِيَاءَ
﴾ তোমাদের
রবের পক্ষ থেকে তোমাদের ওপর যা কিছু নাযিল করা হয়েছে তার অনুসরণ করো এবং নিজেদের
রবকে বাদ দিয়ে অন্য অভিভাবকদের অনুসরণ করো না।
§ উপরের এই বক্তব্য সারা দুনিয়ার মানুষের জন্য প্রযোজ্য। (ইবনে
কাসীর)
§ উপরের এই বক্তব্য হলো এই সূরার কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয়।
§ এই সূরার আসল দাওয়াত হলোঃ
-
দুনিয়ায়
মানুষের চলার জন্য প্রয়োজনঃ
পথ প্রদর্শনা বা হেদায়াত।
-
নিজের
স্বরূপ, বিশ্বজাহানের
স্বরূপ, নিজের
সৃষ্টির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বুঝার জন্য প্রয়োজনঃ জ্ঞান।
-
নিচের
আচার-আচরণ, চরিত্র-নৈতিকতা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক জীবন
ধারাকে সঠিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করার জন্য জন্য প্রয়োজনঃ কিছু মূলনীতির।
-
সেই
সব মূলনীতির জন্য প্রয়োজনঃ আল্লাহকে পথ নির্দেশক হিসাবে মানা।
-
আল্লাহর নির্দেশনা বা হেদায়াত কেবলমাত্র রাসূলের
মাধ্যমেই পাওয়া যায়। বিধায় কেবল তাকেই অনুসরণ করতে হবে।
-
আল্লাহ
ছাড়া অন্য কারো পথ নির্দেশনা লাভের জন্য আল্লাহ থেকে অন্যদিকে মুখ ফিরানো বা তার
নেতৃত্বে নিজেকে সমর্পন একটি একটি মৌলিক ভ্রান্ত কর্মপদ্ধতি।
-
আল্লাহ
বিমুখ এই সব কর্মপদ্ধতির পরিণাম হলো মানুষের ধ্বংস। যা অতীতেও হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে।
§ أَوْلِيَاءَ
শব্দের অর্থ অভিভাবকগন। মানুষ যার নির্দেশে ও নেতৃত্বে চলে
তাকে প্রকৃত পক্ষে নিজের ওলি বা অভিভাবক হিসাবে গন্য করে। শব্দটি ولي শব্দের বহু বচন।
-
সূরা
আশ শুরা এর ৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ ﴿وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِن دُونِهِ أَوْلِيَاءَ اللَّهُ حَفِيظٌ
عَلَيْهِمْ وَمَا أَنتَ عَلَيْهِم بِوَكِيلٍ﴾ যারা তাঁকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে
নিজেদের অভিভাবক বানিয়ে নিয়েছে আল্লাহই তাদের তত্বাবধায়ক। তুমি তাদের জিম্মাদার নও।
-
কুরআনে
হাকীমে ولي শব্দটির যে সব অর্থ করা হয়েছেঃ
১. মানুষ যার কথামত
কাজ করে, যার
নির্দেশনা মেনে চলে, যার রচিত নিয়ম-পন্থা,
রীতি-নীতি এবং আইন-কানুন অনুসরণ
করে।
﴿لَّعَنَهُ اللَّهُ ۘ وَقَالَ لَأَتَّخِذَنَّ مِنْ عِبَادِكَ
نَصِيبًا مَّفْرُوضًا﴾ ﴿وَلَأُضِلَّنَّهُمْ
وَلَأُمَنِّيَنَّهُمْ وَلَآمُرَنَّهُمْ فَلَيُبَتِّكُنَّ آذَانَ الْأَنْعَامِ
وَلَآمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللَّهِ ۚ وَمَن يَتَّخِذِ الشَّيْطَانَ
وَلِيًّا مِّن دُونِ اللَّهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُّبِينًا﴾ ﴿يَعِدُهُمْ
وَيُمَنِّيهِمْ ۖ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلَّا غُرُورًا﴾
সূরা আন-নিসাঃ
১১৮.যাকে আল্লাহ
অভিশপ্ত করেছেন৷ (তারা সেই শয়তানের আনুগত্য করছে) যে আল্লাহকে বলেছিল, আমি তোমার
বান্দাদের থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ নিয়েই ছাড়বো।
১১৯. আমি তাদেরকে
পথভ্রষ্ট করবো৷ তাদেরকে আশার ছলনায় বিভ্রান্ত করবো৷ আমি তাদেরকে হুকুম করবো এবং
আমার হুকুমে তারা পশুর কান ছিঁড়বেই ৷ আমি তাদেরকে হুকুম করবো এবং আমার হুকুমে তারা
আল্লাহর সৃষ্টি আকৃতিতে রদবদল করে ছাড়বেই৷ যে ব্যক্তি আল্লাহকে বাদ দিয়ে এই
শয়তানকে বন্ধু ও অভিভাবক বানিয়েছে সে সুস্পষ্ট ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন৷
১২০. সে তাদের
কাছে ওয়াদা করে এবং তাদেরকে নানা প্রকার আশা দেয়,
কিন্তু শয়তানের সমস্ত ওয়াদা
প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।
﴿اتَّبِعُوا مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلَا
تَتَّبِعُوا مِن دُونِهِ أَوْلِيَاءَ ۗ قَلِيلًا مَّا تَذَكَّرُونَ﴾
সূরা আল-আরাফঃ
৩.
হে মানব সমাজ! তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের ওপর যা কিছু নাযিল করা হয়েছে তার
অনুসরণ করো এবং নিজেদের রবকে বাদ দিয়ে অন্য অভিভাবকদের অনুসরণ করো না৷ কিন্তু তোমরা
খুব কমই উপদেশ মেনে থাকো।
﴿يَا بَنِي آدَمَ لَا يَفْتِنَنَّكُمُ الشَّيْطَانُ كَمَا أَخْرَجَ
أَبَوَيْكُم مِّنَ الْجَنَّةِ يَنزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا
سَوْآتِهِمَا ۗ إِنَّهُ يَرَاكُمْ هُوَ وَقَبِيلُهُ مِنْ حَيْثُ لَا تَرَوْنَهُمْ
ۗ إِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِينَ أَوْلِيَاءَ لِلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ﴾ ﴿وَإِذَا فَعَلُوا
فَاحِشَةً قَالُوا وَجَدْنَا عَلَيْهَا آبَاءَنَا وَاللَّهُ أَمَرَنَا بِهَا ۗ
قُلْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ ۖ أَتَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ مَا
لَا تَعْلَمُونَ﴾ ﴿قُلْ أَمَرَ رَبِّي بِالْقِسْطِ ۖ وَأَقِيمُوا وُجُوهَكُمْ عِندَ
كُلِّ مَسْجِدٍ وَادْعُوهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ ۚ كَمَا بَدَأَكُمْ
تَعُودُونَ﴾ ﴿فَرِيقًا هَدَىٰ
وَفَرِيقًا حَقَّ عَلَيْهِمُ الضَّلَالَةُ ۗ إِنَّهُمُ اتَّخَذُوا الشَّيَاطِينَ
أَوْلِيَاءَ مِن دُونِ اللَّهِ وَيَحْسَبُونَ أَنَّهُم مُّهْتَدُونَ﴾
সূরা আল-আরাফঃ
২৭. হে
বনী আদম! শয়তান যেন তোমাদের আবার ঠিক তেমনিভাবে বিভ্রান্তির মধ্যে নিক্ষেপ না করে
যেমনভাবে সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করেছিল এবং তাদের লজ্জাস্থান
পরস্পরের কাছে উন্মুক্ত করে দেবার জন্যে তাদেরকে বিবস্ত্র করেছিল৷ সে ও তার সাথীরা
তোমাদেরকে এমন জায়গা থেকে দেখে যেখান থেকে তোমরা তাদেরকে দেখতে পাও না৷ এ
শয়তানদেরকে আমি যারা ঈমান আনে না তাদের অভিভাবক করে দিয়েছি।
২৮. তারা
যখন কোন অশ্লিল কাজ করে তখন বলে, আমাদের বাপ-দাদারদেকে আমরা এভাবেই করতে দেখেছি এবং আল্লাহই
আমাদের এমনটি করার হুকুম দিয়েছেন৷ তাদেরকে বলে দাও আল্লাহ কখনো নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনার
হুকুম দেন না৷ তোমরা
কি আল্লাহর নাম নিয়ে এমন কথা বলো যাকে তোমরা আল্লাহর কথা বলে জানো না?
২৯. হে
মুহাম্মাদ! তাদেরকে বলে দাও আমার রব তো সততা ও ইনসাফের হুকুম দিয়েছেন৷তাঁর হুকুম
হচ্ছে, প্রত্যেক
ইবাদত নিজের লক্ষ্য ঠিক রাখো এবং নিজের দীনকে একান্তভাবে তাঁর জন্য করে নিয়ে
তাঁকেই ডাকো ৷ যেভাবে তিনি এখান তোমাদের সৃষ্টি করেছেন ঠিক তেমনিভাবে তোমাদের
আবার সৃষ্টি করা হবেও।
৩০. একটি
দলকে তিনি সোজা পথ দেখিয়ে দিয়েছেন কিন্তু অন্য দলটির ওপর গোমরাহী সত্য হয়ে চেপেই
বসেছে৷ কারণ তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে শয়তানদেরকে নিজেদের অভিভাবকে পরিণত করেছে এবং
তারা মনে করছে, আমরা
সঠিক পথেই আছি।
২. যার নির্দেশনার
উপর মানুষ আস্তা স্থাপন করে এবং মনে করে সে তাকে সঠিক রাস্তা প্রদর্শনকারী এবং
ভ্রান্তি থেকে রক্ষাকারী।
﴿اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجُهُم مِّنَ
الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ ۖ وَالَّذِينَ كَفَرُوا أَوْلِيَاؤُهُمُ الطَّاغُوتُ
يُخْرِجُونَهُم مِّنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمَاتِ ۗ أُولَٰئِكَ أَصْحَابُ
النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ﴾
সূরা আল-বাকারাহঃ
২৫৭.
যারা ঈমান আনে আল্লাহ তাদের সাহায্যকার ও সহায়। তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর মধ্যে নিয়ে আসেন। আর যারা কুফরীর
পথ অবলম্বন করে তাদের সাহায্যকারী ও সহায় হচ্ছে তাগুত ৷সে তাদের আলোক থেকে
অন্ধকারের মধ্যে টেনে নিয়ে যায়। এরা আগুনের অধিবাসী। সেখানে থাকবে এরা চিরকালের জন্য।
﴿وَمَن يَهْدِ اللَّهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِ ۖ وَمَن يُضْلِلْ فَلَن
تَجِدَ لَهُمْ أَوْلِيَاءَ مِن دُونِهِ ۖ وَنَحْشُرُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
عَلَىٰ وُجُوهِهِمْ عُمْيًا وَبُكْمًا وَصُمًّا ۖ مَّأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ ۖ
كُلَّمَا خَبَتْ زِدْنَاهُمْ سَعِيرًا﴾
সূরা বনী ইসরাঈলঃ
৯৭.
যাকে আল্লাহ পথ দেখান সে-ই পথ লাভ করে এবং যাদেরকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন তাদের জন্য
তুমি তাঁকে ছাড়া আর কোনো সহায়ক ও সাহায্যকারী পেতে পারো না। এ লোকগুলোকে আমি
কিয়ামতের দিন উপুড় করে টেনে আনবো অন্ধ, বোবা ও বধির করে। এদের আবাস
জাহান্নাম।
যখনই তার আগুন স্তিমিত হতে থাকবে আমি তাকে আরো জোরে জ্বালিয়ে দেবো।
﴿وَتَرَى الشَّمْسَ إِذَا طَلَعَت تَّزَاوَرُ عَن كَهْفِهِمْ ذَاتَ
الْيَمِينِ وَإِذَا غَرَبَت تَّقْرِضُهُمْ ذَاتَ الشِّمَالِ وَهُمْ فِي فَجْوَةٍ
مِّنْهُ ۚ ذَٰلِكَ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ ۗ مَن يَهْدِ اللَّهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِ ۖ
وَمَن يُضْلِلْ فَلَن تَجِدَ لَهُ وَلِيًّا مُّرْشِدًا﴾
সূরা আল-কাহাফঃ
১৭.
তুমি যদি তাদেরকে গুহায় দেখতে, তাহলে দেখতে সূর্য উদয়ের সময় তাদের গুহা ছেড়ে ডান দিক থেকে
ওঠে এবং অস্ত যাওয়ার সময় তাদেরকে এড়িয়ে বাম দিকে নেমে যায় আর তারা গুহার মধ্যে
একটি বিস্তৃত জায়গায় পড়ে আছে৷ এ হচ্ছে আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন৷ যাকে আল্লাহ সঠিক পথ দেখান
সে-ই সঠিক পথ পায় এবং যাকে আল্লাহ বিভ্রান্ত করেন তার জন্য তুমি কোনো পৃষ্ঠপোষক ও
পথপ্রদর্শক পেতে পারো না।
﴿إِنَّهُمْ لَن يُغْنُوا عَنكَ مِنَ اللَّهِ شَيْئًا ۚ وَإِنَّ
الظَّالِمِينَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ ۖ وَاللَّهُ وَلِيُّ الْمُتَّقِينَ﴾
সূরা আল-জাশিয়াহঃ
১৯.
আল্লাহর মোকাবিলায় তারা তোমরা কোন কাজেই আসতে পারে না৷ জালেমরা একে অপরের বন্ধু এবং মুত্তাকীনদের বন্ধু আল্লাহ।
৩. যার সম্পর্কে
মানুষ মনে করে, আমি পৃথিবীতে যাই করি না কেন, সে আমাকে তার
কুফল থেকে রক্ষা করবে। এমনকি যদি আল্লাহ থাকেন এবং আখেরাত সংঘটিত হয় তাহলে তার
আযাব থেকেও রক্ষা করবেন।
﴿لَّيْسَ بِأَمَانِيِّكُمْ وَلَا أَمَانِيِّ أَهْلِ الْكِتَابِ ۗ
مَن يَعْمَلْ سُوءًا يُجْزَ بِهِ وَلَا يَجِدْ لَهُ مِن دُونِ اللَّهِ وَلِيًّا
وَلَا نَصِيرًا﴾
সূরা আন-নিসাঃ
১২৩.
চূড়ান্ত পরিণতি না তোমাদের আশা-আকাংখার ওপর নির্ভর করছে, না আহলি কিতাবদের আশা- আকাংখার ওপর ৷ অসৎকাজ যে করবে সে তার
ফল ভোগ করবে এবং আল্লাহর মোকাবিলায় সে নিজের কোন সমর্থক ও সাহায্যকারী পাবে না৷
﴿فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ
فَيُوَفِّيهِمْ أُجُورَهُمْ وَيَزِيدُهُم مِّن فَضْلِهِ ۖ وَأَمَّا الَّذِينَ
اسْتَنكَفُوا وَاسْتَكْبَرُوا فَيُعَذِّبُهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا وَلَا يَجِدُونَ
لَهُم مِّن دُونِ اللَّهِ وَلِيًّا وَلَا نَصِيرًا﴾
সূরা আন-নিসাঃ
১৭৩.
যারা ঈমান এনে সৎকর্মনীতি অবলম্বন করেছে তারা সে সময় নিজেদের পূর্ণ প্রতিদান লাভ
করবে এবং আল্লাহ নিজ অনুগ্রহ তাদেরকে আরো প্রতিদান দেবেন৷ আর যারা বন্দেগীকে
লজ্জাকর মনে করেছে ও অহংকার করেছে, তাদেরকে আল্লাহ য্ন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেবেন এবং আল্লাহ ছাড়া
আর যার যার সাহায্য ও পৃষ্ঠপোষকতার ওপর তারা ভরসা করে, তাদের মধ্যে কাউকেও তারা সেখানে পাবে না৷
﴿وَأَنذِرْ بِهِ الَّذِينَ يَخَافُونَ أَن يُحْشَرُوا إِلَىٰ
رَبِّهِمْ ۙ لَيْسَ لَهُم مِّن دُونِهِ وَلِيٌّ وَلَا شَفِيعٌ لَّعَلَّهُمْ
يَتَّقُونَ﴾
সূরা আল-আনআমঃ
৫১.
আর হে মুহাম্মাদ ! তুমি এ অহীর জ্ঞানের সাহায্যে তাদেরকে নসিহত করো যারা ভয় করে যে, তাদেরকে তাদের
রবের সামনে কখনো এমন অবস্থায় পেশ করা হবে যে, সেখানে তাদের সাহায্য-সমর্থন বা সুপারিশ করার জন্য তিনি
ছাড়া আর কেউ (ক্ষমতা ও কর্তৃত্বশালী) থাকবে না৷ হয়তো ( এ নসিহতের কারণে সতর্ক হয়ে)
তারা আল্লাহভীতির পথ অবলম্বন করবে৷
﴿وَكَذَٰلِكَ أَنزَلْنَاهُ حُكْمًا عَرَبِيًّا ۚ وَلَئِنِ
اتَّبَعْتَ أَهْوَاءَهُم بَعْدَمَا جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ مَا لَكَ مِنَ اللَّهِ
مِن وَلِيٍّ وَلَا وَاقٍ﴾
সূরা আর-রাদঃ
৩৭.
এ হেদায়াতের সাথে আমি এ আরবী ফরমান তোমার প্রতি নাযিল করেছি৷ এখন তোমার কাছে যে
জ্ঞান এসে গেছে তা সত্ত্বেও যদি তুমি লোকদের খেয়াল খুশীর তাবেদারী করো তাহলে
আল্লাহর মোকাবিলায় তোমার কোন সহায়ও থাকবে না, আর কেউ তাঁর পাকড়াও থেকেও তোমাকে বাঁচাতে পারবে না৷
﴿وَمَا أَنتُم بِمُعْجِزِينَ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ ۖ
وَمَا لَكُم مِّن دُونِ اللَّهِ مِن وَلِيٍّ وَلَا نَصِيرٍ﴾
সূরা আল-আনকাবুতঃ
২২.
তোমরা না পৃথিবীতে অক্ষমকারী , না আকাশে এবং আল্লাহর হাত থেকে রক্ষা করার মতো কোন অভিভাবক ও
সাহায্যকারী তোমাদের নেই৷
﴿خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ۖ لَّا يَجِدُونَ وَلِيًّا وَلَا
نَصِيرًا﴾
সূরা আল-আহযাবঃ
৬৫.
যার মধ্যে তারা থাকবে চিরকাল, কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না৷
﴿أَلَا لِلَّهِ الدِّينُ الْخَالِصُ ۚ وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِن
دُونِهِ أَوْلِيَاءَ مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ
زُلْفَىٰ إِنَّ اللَّهَ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ فِي مَا هُمْ فِيهِ يَخْتَلِفُونَ ۗ
إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي مَنْ هُوَ كَاذِبٌ كَفَّارٌ﴾
সূরা আল-যুমারঃ
৩.
সাবধান! একনিষ্ঠ ইবাদাত কেবল আল্লাহরই প্রাপ্য৷ যারা তাঁকে ছাড়া অন্যদেরকে অভিভাবক বানিয়ে রেখেছে (আর
নিজেদের এ কাজের কারণ হিসেবে বলে যে,) আমরা তো তাদের ইবাদাত করি শুধু এই কারণে যে, সে আমাদেরকে
আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেবে৷ আল্লাহ নিশ্চিতভাবেই তাদের মধ্যকার সেসব বিষয়ের ফায়সালা করে
দেবেন যা নিয়ে তারা মতভেদ করছিলো৷ আল্লাহ এমন ব্যক্তিকে হিদায়াত দান করেন না, যে মিথ্যাবাদী ও
হক অস্বীকারকারী৷
৪. যার সম্পর্কে
মানুষ মনে করে, পৃথিবীতে তিনি প্রাকৃতিক উপায়ে তাকে সাহায্য করেন, বিপদাপদে তাকে
রক্ষা করেন। রুজি-রোজগার দান করেন,
সন্তান দান করেন, ইচ্ছা পুরণ করেন
এবং অন্যান্য সব রকমের প্রয়োজন পুরণ করেন।
﴿أُولَٰئِكَ لَمْ يَكُونُوا مُعْجِزِينَ فِي الْأَرْضِ وَمَا كَانَ
لَهُم مِّن دُونِ اللَّهِ مِنْ أَوْلِيَاءَ ۘ يُضَاعَفُ لَهُمُ الْعَذَابُ ۚ مَا
كَانُوا يَسْتَطِيعُونَ السَّمْعَ وَمَا كَانُوا يُبْصِرُونَ﴾
সূরা হুদঃ
২০.
তারা পৃথিবীতে
আল্লাহকে অক্ষম করতে পারতো না এবং আল্লাহর মোকাবিলায় তাদের কোন সাহায্যকারী ছিল
না৷ তাদেরকে এখন দ্বিগুণ আযাব দেয়া হবে৷ তারা কারোর কথা শুনতেও পারতো না এবং তারা নিজেরা কিছু
দেখতেও পেতো না৷
﴿قُلْ مَن رَّبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ قُلِ اللَّهُ ۚ قُلْ
أَفَاتَّخَذْتُم مِّن دُونِهِ أَوْلِيَاءَ لَا يَمْلِكُونَ لِأَنفُسِهِمْ نَفْعًا
وَلَا ضَرًّا ۚ قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الْأَعْمَىٰ وَالْبَصِيرُ أَمْ هَلْ تَسْتَوِي
الظُّلُمَاتُ وَالنُّورُ ۗ أَمْ جَعَلُوا لِلَّهِ شُرَكَاءَ خَلَقُوا كَخَلْقِهِ
فَتَشَابَهَ الْخَلْقُ عَلَيْهِمْ ۚ قُلِ اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ
الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ﴾
সূরা আর-রাদঃ
১৬.
এদেরকে জিজ্ঞেস করো, আকাশ
ও পৃথিবীর রব কে ? - বলো
আল্লাহ! তারপর
এদেরকে জিজ্ঞেস করো, আসল
ব্যাপার যখন এই তখন তোমরা কি তাঁকে বাদ দিয়ে এমন মাবুদদেরকে নিজেদের
কার্যসম্পাদনকারী বানিয়ে নিয়েছো যারা তাদের নিজেদের জন্যও কোন লাভ ও ক্ষতি করার
ক্ষমতা রাখে না ? বলো
অন্ধ ও চক্ষুস্মান কি সমান হয়ে থাকে ? আলো ও আঁধার কি এক রকম হয় ? যদি এমন না হয়, তাহলে তাদের বানানো শরীকরাও কি আল্লাহর মতো কিছু সৃষ্টি
করেছে, যে
কারণে তারাও সৃষ্টি ক্ষমতার অধিকারী বলে সন্দেহ হয়েছে ? -
বলো, প্রত্যেকটি জিনিসের স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ৷ তিনি একক ও
সবার ওপর পরাক্রমশালী৷
﴿مَثَلُ الَّذِينَ اتَّخَذُوا مِن دُونِ اللَّهِ أَوْلِيَاءَ كَمَثَلِ
الْعَنكَبُوتِ اتَّخَذَتْ بَيْتًا ۖ وَإِنَّ أَوْهَنَ الْبُيُوتِ لَبَيْتُ
الْعَنكَبُوتِ ۖ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ﴾
সূরা আল-আনকাবুতঃ
৪১.
যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে পৃষ্ঠপোষক বানিয়ে নিয়েছে তাদের দৃষ্টান্ত হলো
মাকড়সা৷ সে নিজের একটি ঘর তৈরি করে এবং সব ঘরের চেয়ে বেশি দুর্বল হয় মাকড়সার ঘর৷
হায় যদি এরা জানতো!
-
ওলি
শব্দটি কুরআনে বর্ণিত উপরোক্ত আয়াত সমূহ কোন কোন স্থানে একটি অর্থ বুঝাতে ব্যবহৃত
হয়েছে, আবার
কোন কোন স্থানে সবগুলো অর্থ একত্রে বুঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে।
- উপরোক্ত আয়াতে যে ওলি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে উপরোক্ত ৪টি অর্থের সকল অর্থ বুঝাবে।
﴿
قَلِيلًا مَّا تَذَكَّرُونَ﴾ কিন্তু তোমরা খুব কমই উপদেশ মেনে থাকো।
§ ইবনে কাসিরঃ আল্লাহ বলেন-হে নবী সা.
তুমি যদি সকলকেই সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করো, তবে
এই লোকেরা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে সরিয়ে দেবে এবং তুমি বিভ্রান্ত হয়ে পড়বে।
অধিকাংশ লোকই ঈমান আনেনা বরং মুশরিকই থেকে যায়।
﴿وَمَا أَكْثَرُ النَّاسِ وَلَوْ حَرَصْتَ بِمُؤْمِنِينَ﴾ ﴿وَمَا تَسْأَلُهُمْ عَلَيْهِ
مِنْ أَجْرٍ ۚ إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرٌ لِّلْعَالَمِينَ﴾ ﴿وَكَأَيِّن مِّنْ آيَةٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَمُرُّونَ
عَلَيْهَا وَهُمْ عَنْهَا مُعْرِضُونَ﴾ ﴿وَمَا يُؤْمِنُ
أَكْثَرُهُم بِاللَّهِ إِلَّا وَهُم مُّشْرِكُونَ﴾
সূরা ইউসুফঃ ১০৩-১০৬
১০৩)
কিন্তু তুমি যতই চাওনা কেন অধিকাংশ লোক তা মানবে না৷
১০৪) অথচ তুমি এ খেদমতের বিনিময়ে
তাদের কাছে কোন পারিশ্রমিকও চাচ্ছো না৷ এটা তো দুনিয়াবাসীদের জন্য সাধারণভাবে একটি
নসীহত ছাড়া আর কিছুই নয়৷ ১০৫) আকাশসমুহে ও পৃথিবীতে কত নিদর্শন রয়েছে, যেগুলো তারা অতিক্রম করে যায় কিন্তু সেদিকে একটুও দৃষ্টিপাত
করে না৷ ১০৬)
তাদের বেশীর ভাগ আল্লাহকে মানে কিন্তু তাঁর সাথে অন্যকে শরীক করে।
§ কুরআনে যত জায়গায় قَلِيلًا
শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, তা মুমিনদের জন্য বলা
হয়েছে। আর كثيرا শব্দ বলা হয়েছে কাফিরদের জন্য। যেমন-
-
কুরআনে
৭১টি স্থানে قَلِيلًا শব্দ
এসেছে।
-
কুরআনে ৭৪টি স্থানে كثيرا শব্দ এসেছে।
﴿وَكَم مِّن قَرْيَةٍ
أَهْلَكْنَاهَا فَجَاءَهَا بَأْسُنَا بَيَاتًا أَوْ هُمْ قَائِلُونَ﴾
৪) কত জনপদ আমি ধ্বংস করে দিয়েছি৷ তাদের
ওপর আমার আযাব অকস্মাত ঝাঁপিয়ে পড়েছিল রাতের বলা অথবা দিনের বেলা যখন তারা
বিশ্রামরত ছিল৷
এবং কত জনপদ রয়েছে |
وَكَم مِّن قَرْيَةٍ |
যাকে আমরা ধ্বংস করেছি |
أَهْلَكْنَاهَا |
এবং তাদের উপর এসেছিল |
فَجَاءَهَا |
আমার শাস্তি |
بَأْسُنَا |
রাতের বেলা |
بَيَاتًا |
অথবা তারা ছিল দুপুরের বিশ্রামে |
أَوْ هُمْ قَائِلُونَ |
﴿وَكَم
مِّن قَرْيَةٍ أَهْلَكْنَاهَا ﴾ কত জনপদ আমি ধ্বংস করে দিয়েছি৷
§ সূরা আনআম আয়াত নম্বরঃ ১০ আল্লাহ বলেনঃ
﴿وَلَقَدِ اسْتُهْزِئَ بِرُسُلٍ مِّن قَبْلِكَ فَحَاقَ بِالَّذِينَ
سَخِرُوا مِنْهُم مَّا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِئُونَ﴾
১০)
হে মুহাম্মাদ! তোমরা পূর্বেও অনেক রসূলের প্রতি বিদ্রূপ করা হয়েছে৷ কিন্তু
বিদ্রূপকারীরা যে অকাট্য সত্য নিয়ে বিদ্রূপ করতো, সেটাই অবশেষে তাদের ওপর চেপে বসেছিল৷
§ সূরা আল হাজ্জ আয়াত নম্বরঃ ৪৫ আল্লাহ বলেনঃ
﴿فَكَأَيِّن مِّن قَرْيَةٍ أَهْلَكْنَاهَا وَهِيَ ظَالِمَةٌ فَهِيَ
خَاوِيَةٌ عَلَىٰ عُرُوشِهَا وَبِئْرٍ مُّعَطَّلَةٍ وَقَصْرٍ مَّشِيدٍ﴾
৪৫)
কত দুষ্কৃতকারী জনপদ আমি ধ্বংস করে দিয়েছি এবং আজ তারা নিজেদের ছাদের ওপর উলটে পড়ে
আছে, কত
কূয়া অচল
এবং কত প্রাসাদ ধ্বংস্তুপে পরিণত হয়েছে৷
§ সূরা আল কাসাস আয়াত নম্বরঃ ৫৮ আল্লাহ বলেনঃ
﴿وَكَمْ أَهْلَكْنَا مِن قَرْيَةٍ بَطِرَتْ مَعِيشَتَهَا ۖ
فَتِلْكَ مَسَاكِنُهُمْ لَمْ تُسْكَن مِّن بَعْدِهِمْ إِلَّا قَلِيلًا ۖ وَكُنَّا
نَحْنُ الْوَارِثِينَ﴾
৫৮)
আর এমন কত জনপদ আমি ধ্বংস করে দিয়েছি যেখানকার লোকেরা তাদের সম্পদ-সম্পত্তির দম্ভ
করতো৷ কাজেই দেখে নাও, ঐসব তাদের ঘরবাড়ি পড়ে আছে, যেগুলোর মধ্যে তাদের পরে কদাচিত কেউ বসবাস করেছে, শেষ পর্যন্ত আমিই
হয়েছি উত্তরাধিকারী৷
﴿
فَجَاءَهَا بَأْسُنَا بَيَاتًا أَوْ هُمْ قَائِلُونَ﴾ তাদের ওপর আমার আযাব অকস্মাত ঝাঁপিয়ে পড়েছিল রাতের বলা অথবা দিনের বেলা যখন
তারা বিশ্রামরত ছিল৷
§ ইবনে কাসীরঃ যখন আল্লাহর আসছিল তখন গভীর রাতে তারা
ঘুমাচ্ছিল অথবা দূপুরে তারা কাইলুলা বা বিশ্রাম করছিল। আর এই দুইটি সময়টি গাফলতির
সময় ও বেকার সময়।
§ যেমন একই সূরা আল আরাফের ৯৭-৯৮ আয়াতে বলা
হয়েছেঃ
﴿أَفَأَمِنَ أَهْلُ الْقُرَىٰ أَن يَأْتِيَهُم بَأْسُنَا بَيَاتًا
وَهُمْ نَائِمُونَ﴾ ﴿أَوَأَمِنَ أَهْلُ
الْقُرَىٰ أَن يَأْتِيَهُم بَأْسُنَا ضُحًى وَهُمْ يَلْعَبُونَ﴾
৯৭)
জনপদের লোকেরা কি এখন এ ব্যাপারে নির্ভয় হয়ে গেছে যে, আমার শাস্তি কখনো অকস্মাত রাত্রিকালে তাদের ওপর এসে পড়বে
না, যখন
তারা থাকবে নিদ্রামগ্ন?
৯৮)
অথবা তারা নিশ্চিন্তে হয়ে গেছে যে, আমাদের মজবুত হাত কখনো দিনের বেলা তাদের ওপর এসে পড়বে না, যখন তারা খেলা
ধুলায় মেতে থাকবে?
সূরা আন নাহলঃ ৪৫-৪৭
﴿أَفَأَمِنَ الَّذِينَ
مَكَرُوا السَّيِّئَاتِ أَن يَخْسِفَ اللَّهُ بِهِمُ الْأَرْضَ أَوْ يَأْتِيَهُمُ
الْعَذَابُ مِنْ حَيْثُ لَا يَشْعُرُونَ﴾ ﴿أَوْ يَأْخُذَهُمْ فِي تَقَلُّبِهِمْ فَمَا هُم بِمُعْجِزِينَ﴾ ﴿أَوْ يَأْخُذَهُمْ
عَلَىٰ تَخَوُّفٍ فَإِنَّ رَبَّكُمْ لَرَءُوفٌ رَّحِيمٌ﴾
৪৫)
তারপর যারা (নবীর দাওয়াতের বিরোধিতায়) নিকৃষ্টতম চক্রান্ত করছে তারা কি এ ব্যাপারে
একেবারে নির্ভয় হয়ে গেছে যে, আল্লাহ তাদেরকে ভূগর্তে প্রোথিত করে দেবেন না অথবা এমন দিক
থেকে তাদের ওপর আযাব আসবে না যেদিক থেকে তার আসার ধারণা-কল্পনাও তারা করেনি?
৪৬)
অথবা আচম্কা চলাফেরার মধ্যে তাদেরকে পাকড়াও করবেন না?
৪৭)
কিংবা এমন অবস্থায় তাদেরকে পাকড়াও করবেন না যখন তারা নিজেরাই আগামী বিপদের জন্য
উৎকণ্ঠায় দিন কাটাবে এবং তার হাত থেকে বাঁচার চিন্তায় সতর্ক হবে ? তিনি যাই কিছু
করতে চান তারা তাঁকে নিষ্ক্রিয় করার ক্ষমতা রাখে না৷ আসল ব্যাপার হচ্ছে, তোমাদের রব বড়ই
কোমল হৃদয় ও করুণাময়৷
﴿فَمَا كَانَ دَعْوَاهُمْ
إِذْ جَاءَهُم بَأْسُنَا إِلَّا أَن قَالُوا إِنَّا كُنَّا ظَالِمِينَ﴾
৫) আর যখন আমার আযাব তাদের ওপর আপতিত
হয়েছিল তখন তাদের মুখে এ ছাড়া আর কোন কথাই ছিল না যে, সত্যিই আমরা
জালেম ছিলাম।
অতঃপর না ছিল তাদের কোন কথা |
فَمَا كَانَ دَعْوَاهُمْ |
যখন তাদের উপর এসেছিল আমার শাস্তি |
إِذْ جَاءَهُم بَأْسُنَا |
তখন তাদের এ ছাড়া কোন কথা ছিল না যে, তারা বললো |
إِلَّا أَن قَالُوا |
নিশ্চয়ই আমরা ছিলাম যালেম |
إِنَّا كُنَّا ظَالِمِينَ |
﴿فَمَا
كَانَ دَعْوَاهُمْ إِذْ جَاءَهُم بَأْسُنَا إِلَّا أَن قَالُوا إِنَّا كُنَّا
ظَالِمِينَ﴾ আর যখন আমার আযাব তাদের ওপর আপতিত হয়েছিল তখন তাদের
মুখে এ ছাড়া আর কোন কথাই ছিল না যে, সত্যিই আমরা জালেম ছিলাম।
§ মক্কাবাসীদের সতর্ক ও ভয় দেখানোর বিষয়টি এখানে বিবৃত হচ্ছে।
§ এখানে মক্কাবাসীদের সামনে একটি জাতির দৃষ্টান্ত স্মরণ করে
দেয়া হচ্ছে। যারা আল্লাহ হেদায়াতের পরিবর্তে মানুষ আর শয়তানের নেতৃত্ব গ্রহণ করে
জীবন পরিচালনা করেছে। আর পরিনাম হিসাবে তারা বিপথগামী ও বিকাগ্রস্থ হয়েছে। আর
তাদেরকে শাস্তি দেয়া হয়েছে, তাদেরকে ধ্বংস করা হয়েছে। কারণ তাদের
অস্তিত্ব একটা অভিশাপে পরিণত হয়েছিল, বিধায় তাদের সেই নাপাক
অভিশাপ থেকে দুনিয়াকে পাক করা হয়েছে।
§ এ পর্যায়ের আলোচনার উদ্দেশ্য দুইটি বিষয়ে সতর্ক করাঃ
১. সংশোধনের জন্য একটা
সুনির্দিষ্ট সময় থাকে। সেই সময় শেষ হওয়ার পর সচেতন হওয়া বা ভূল স্বীকার করার কোন
অর্থ নাই। দায়ীরা দাওয়াত দিল, আপনি তাকে কোন সাড়া না দিয়ে
গাফলতি করলেন-ভোগের নিশায় মত্ত হয়ে স্বেচ্ছাচারী জীবন যাপন
করলে। আর যখন আল্লাহ পাকড়াও আসলো-তখন সচেতন হয়ে উঠলেন-এই আচরণ নাদান ও মূর্খের আচরণ।
২. অসৎ কাজের সীমা যখন শেষ
হয়ে যায়, তখন অবকাশের সীমাও শেষ হয়ে যায়-আল্লাহর পাকড়াও এসে যায়। এমন উদাহরণ ২/১টি নয়,
বরং অসংখ্য। আর আল্লাহ যখন পাকড়াও করেন, তখন
মুক্তির কোন পথ থাকেনা। আর মাবন জাতির ইতিহাসে এমন কাহিনী শতবার, হাজারবার ঘটেছে। বিধায়, একই ভূলের পুনরাবৃত্তি করার
যৌক্তিকতা নেই। বিধায় অবকাশ না নিয়ে সত্যকে গ্রহণ করতে হবে।
§ সূরা আল-আম্বিয়াঃ ১১-১৫
﴿وَكَمْ قَصَمْنَا مِن
قَرْيَةٍ كَانَتْ ظَالِمَةً وَأَنشَأْنَا بَعْدَهَا قَوْمًا آخَرِينَ﴾ ﴿فَلَمَّا أَحَسُّوا
بَأْسَنَا إِذَا هُم مِّنْهَا يَرْكُضُونَ﴾ ﴿لَا تَرْكُضُوا وَارْجِعُوا إِلَىٰ مَا أُتْرِفْتُمْ فِيهِ
وَمَسَاكِنِكُمْ لَعَلَّكُمْ تُسْأَلُونَ﴾ ﴿قَالُوا يَا وَيْلَنَا إِنَّا كُنَّا ظَالِمِينَ﴾ ﴿فَمَا زَالَت تِّلْكَ
دَعْوَاهُمْ حَتَّىٰ جَعَلْنَاهُمْ حَصِيدًا خَامِدِينَ﴾
১১.
কত অত্যাচারী জনবসতিকে আমি বিধ্বস্ত করে দিয়েছি এবং তাদের পর উঠিয়েছি অন্য জাতিকে।
১২.
যখন তারা আমার আযাব অনুভব করলো, পালাতে লাগলো সেখান থেকে।
১৩.
(বলা হলো) “পালায়ো
না, চলে
যাও তোমাদের গৃহে ও ভোগ্য সামগ্রীর মধ্যে, যেগুলোর মধ্যে তোমরা আরাম করছিলে, হয়তো তোমাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”
১৪.
বলতে লাগলো, “হায়, আমাদের
দুর্ভাগ্য! নিশ্চয়ই আমরা অপরাধী ছিলাম।”
১৫. আর তারা এ আর্তনাদ করতেই থাকে যতক্ষণ আমি তাদেরকে কাটা
শস্যে পরিণত না করি, জীবনের
একটি স্ফুলিংগও তাদের মধ্যে থাকেনি।
§ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা. বর্ণনা
করেছেন যে, রাসূল সা. বলেছেনঃ ما هلك قوم حتى يعذروا من أنفسهم কোন কাওমকে
ধ্বংস করে দেয়া হয়নি যে পর্যন্ত না তাদের সকল শাস্তি শেষ করে দেয়া হয়েছে। হাদীসটি
ইবনে মাসউদের কাছ থেকে শুনেছিলেন আব্দুল মালিক। তিনি প্রশ্ন করেছিলেনঃ এটা কিভাবে
হবে? হযরত ইবনে মাসউদ রা. তখন এই আয়াত তেলাওয়াত করেনঃ ﴿فَمَا كَانَ دَعْوَاهُمْ إِذْ جَاءَهُم بَأْسُنَا إِلَّا أَن
قَالُوا إِنَّا كُنَّا ظَالِمِينَ﴾
§ ইবনে জারীর বলেন, এই আয়াত গুলো নবী সা.
এর এই হাদীসের সুস্পষ্ট দলীল।
﴿ فَلَنَسْأَلَنَّ الَّذِينَ أُرْسِلَ إِلَيْهِمْ وَلَنَسْأَلَنَّ الْمُرْسَلِينَ ﴾
৬) কাজেই যাদের কাছে আমি রসূল পাঠিয়েছি
তাদেরকে অবশ্যি জিজ্ঞাসাবাদ করবো এবং রসূলকেও জিজ্ঞাসা
করবো (তারা পয়গাম পৌছিয়ে দেবার দায়িত্ব কতটুকু সম্পাদন করেছে এবং এর কি জবাব
পেয়েছে)
অতঃপর আমি অবশ্যই জিজ্ঞেস করবো |
فَلَنَسْأَلَنَّ |
যাদের কাছে রাসূল প্রেরণ করা হয়েছিল |
الَّذِينَ أُرْسِلَ
إِلَيْهِمْ |
এবং আমি অবশ্যই জিজ্ঞেস করবো রাসূলদেরও |
وَلَنَسْأَلَنَّ
الْمُرْسَلِينَ |
﴿فَلَنَسْأَلَنَّ
الَّذِينَ أُرْسِلَ إِلَيْهِمْ ﴾ কাজেই যাদের কাছে আমি রসূল পাঠিয়েছি তাদেরকে অবশ্যি
জিজ্ঞাসাবাদ করবো।
§ জিজ্ঞাসাবাদ করা মানে কিয়ামতের হিসাব নিকাশ।
§ দুনিয়াতে শাস্তি যদি দেয়া হয়, তাহলে
কিয়ামতে কেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বা হিসাব নিকাশ নেয়া হবে? এর
জবাব হলোঃ
-
দুনিয়ার
আযাবই কেবল অসৎকর্মের চূড়ান্ত ফল নয় এবং অপরাধের পূর্ণ শাস্তি নয়।
-
দুনিয়ার
শাস্তি নামে বড় অপরাধীকে দুনিয়াতে তার জুলুম, অন্যায় ও ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করার সুযোগ ছিনিয়ে নেয়া। দুনিয়ায় কৃত অপরাধের
শাস্তি নয়।
-
দুনিয়ায়
শাস্তি প্রদান হলোঃ অপরাধী অপরাধ মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে বিশেষ অভিযান পরিচালনার মতো
একটা বিষয়। এই অভিযান পরিচালনার আগে নানাবিধ সিগন্যাল প্রদান করা হয়। তারপর
নিয়ন্ত্রিত না হলে অভিযান পরিচালিত হয়।
§ পার্থিব আযাব বারবার আসার আখেরাতের জবাবদিহিতার নিশ্চিত
একটি প্রমাণ।
§ সূরা আল-ক্বাসাসঃ ৬৫
﴿وَيَوْمَ يُنَادِيهِمْ
فَيَقُولُ مَاذَا أَجَبْتُمُ الْمُرْسَلِينَ﴾
আর
তারা (যেন না ভুলে যায়) সেদিনের কথা যেদিন তিনি ডাকবেন এবং জিজ্ঞেস করবেন, "যে রসূল পাঠানো
হয়েছিল তাদেরকে তোমরা কি জবাব দিয়েছিলে?"
§ সূরা আল-মায়িদাহঃ ১০৯
﴿يَوْمَ يَجْمَعُ اللَّهُ
الرُّسُلَ فَيَقُولُ مَاذَا أُجِبْتُمْ ۖ قَالُوا لَا عِلْمَ لَنَا ۖ إِنَّكَ
أَنتَ عَلَّامُ الْغُيُوبِ﴾
যেদিন আল্লাহ সমস্ত
রসূলকে একত্র করে জিজ্ঞেস করবেন, তোমাদের কী জবাব দেয়া হয়েছে ? তারা আরয করবে, আমরা কিছুই জানিনা, গোপন সত্যসমূহের জ্ঞান একমাত্র আপনারই আছে।
﴿
وَلَنَسْأَلَنَّ الْمُرْسَلِينَ﴾ এবং রসূলকেও জিজ্ঞাসা করবো (তারা পয়গাম পৌছিয়ে দেবার দায়িত্ব কতটুকু সম্পাদন
করেছে এবং এর কি জবাব পেয়েছে)
§ আখেরাতের জিজ্ঞাসাবাদ হবে সরাসরি রিসালাতের ভিত্তিতে। যেমনঃ
-
একদিকে
নবী রাসূলদের জিজ্ঞাসা করা হবে যে, মানুষের কাছে আল্লাহর পয়গাম পৌছে দেয়ার ব্যাপারে তারা কি
দায়িত্ব পালন করেছেন।
-
অপরদিকে
মানুষদের জিজ্ঞাসা করা হবে, সেই দাওয়াতের সাথে তারা কি ব্যবহার করেছে।
§ যাদের কাছে নবী বা রাসূল পৌছেননি, তাদের মামলাঃ
-
এ ব্যাপারে
কুরআন কিছু বলেনি।
-
এ
ব্যাপারে আল্লাহর তার ফায়সালা নিজের কাছে সংরক্ষিত।
§ যে ব্যক্তি বা জাতির কাছে নবীর শিক্ষা পৌছে গেছে, তাদের মামলাঃ
-
তারা
নিজেদের কুফরী, অবাধ্যতা, অস্বীকৃতি, ফাসিকী ও
নাফরমাণীর স্বপক্ষে কোন যুক্ত-প্রমাণ পেশ করতে পারবে না।
-
তারা
লজ্জা, আক্ষেপ
ও অনুতাপে কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে জাহান্নামের দিকে অগ্রসর হবে।
§ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বর্ণিত
হাদীসঃ হাদীসটি বুখারী ও মুসলিম দূ’টি গ্রন্থেই এসেছে:
عن
ابن عمر، قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم " كلكم راع، وكلكم مسؤول عن رعيته، فالإمام يسأل عن رعيته، والرجل يسأل
عن أهله، والمرأة تسأل عن بيت زوجها، والعبد يسأل عن مال سيده
-
তোমরা
প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই জিজ্ঞাসিত হবে তাদের দায়িত্বের ব্যাপারে।
অতএব, নেতা
বা ইমাম তার দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে, এবং পুরুষ জিজ্ঞাসিত হবে তার পরিবার তথা স্ত্রী সন্তান
সম্পর্কে, এবং
একজন মহিলা জিজ্ঞাসিত হবে তার স্বামীর সংসার সম্পর্কে, এবং একজন গোলাম তার মালিকের সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।
﴿فَلَنَقُصَّنَّ عَلَيْهِم
بِعِلْمٍ ۖ وَمَا كُنَّا غَائِبِينَ﴾
৭) তারপর আমি নিজেই পূর্ণ জ্ঞান সহকারে
সমুদয় কার্যবিবরণী তাদের সামনে পেশ করবো। আমি তো আর সেখানে অনুপস্থিত
ছিলাম না!
অতঃপর আমি বিবরণ পেশ করবো তাদের নিকট পূর্ণ জ্ঞান
সহকারে |
فَلَنَقُصَّنَّ عَلَيْهِم
بِعِلْمٍ |
কেননা আমি ছিলাম না অনুপস্থিত |
ۖ وَمَا كُنَّا
غَائِبِينَ |
﴿فَلَنَقُصَّنَّ عَلَيْهِم بِعِلْمٍ ﴾ তারপর আমি নিজেই পূর্ণ জ্ঞান সহকারে সমুদয় কার্যবিবরণী তাদের সামনে পেশ করবো।
§ ইবনে কাসীরঃ কিয়ামতের দিন আমলনামা পেশ করা হবে এবং
কৃতকর্মের ব্যাপারে আলোচনা করা হবে।
§ এই আয়াতের মর্ম হচ্ছেঃ আমি তাদের সমস্ত বিবরণ অকপটে প্রকাশ
করে দেবো, যেহেতু আমি পূর্ণরূপে জ্ঞাত আছি। আর আমি তো
বেখবর ছিলাম না।
﴿ وَمَا كُنَّا غَائِبِينَ﴾ আমি তো আর সেখানে অনুপস্থিত ছিলাম না!
§ অর্থাৎ কিয়ামতের দিন সকলের আমল নামা খুলে দেয়া হবে। আমল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে। গোপন-প্রকাশ্য, ছোট-বড় সবকিছু
সেখানে দেখতে পাওয়া যাবে। এমনকি অন্তরের গোপন কথাও সেখানে প্রকাশিত হবে।
§ সূরা আল-আনআমঃ ৫৯
﴿وَعِندَهُ مَفَاتِحُ
الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَا إِلَّا هُوَ ۚ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ
ۚ وَمَا تَسْقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلَّا يَعْلَمُهَا وَلَا حَبَّةٍ فِي ظُلُمَاتِ
الْأَرْضِ وَلَا رَطْبٍ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ﴾
তাঁরই
কাছে আছে অদৃশ্যের চাবি, তিনি ছাড়া আর কেউ তা জানে না। জলে- স্থলে যা কিছু আছে সবই তিনি জানেন। তাঁর অজ্ঞাতসারে গাছের একটি
পাতাও পড়ে না।
মৃত্তিকার অন্ধকার প্রদেশে এমন একটি শস্যকণাও নেই যে সম্পর্কে তিনি অবগত নন৷ শুষ্ক
ও আর্দ্র সবকিছুই একটি সুস্পষ্ট কিতাবে লিখিত আছে।
﴿وَالْوَزْنُ يَوْمَئِذٍ
الْحَقُّ ۚ فَمَن ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ﴾
৮) আর ওজন হবে সেদিন যথার্থ সত্য।
এবং সেদিনের ওজন হবে যথার্থ |
وَالْوَزْنُ يَوْمَئِذٍ
الْحَقُّ ۚ |
অতঃপর যাদের পাল্লা ভারী হবে |
فَمَن ثَقُلَتْ
مَوَازِينُهُ |
ফলে তারা হবে সফলকাম |
فَأُولَٰئِكَ هُمُ
الْمُفْلِحُونَ |
﴿وَالْوَزْنُ
يَوْمَئِذٍ الْحَقُّ ﴾ আর ওজন হবে সেদিন যথার্থ সত্য।
§ ওজন ও হকঃ
-
ওজন
আর হকঃ বিষয় দুটি হবে সমার্থক।
-
সেদিন
সত্য ও হক ছাড়া আর কোন জিনিসের সেদিন ওজন থাকবেনা। যার কাছে যতটুক হক থাকবে, সে ততটুক ওজনদার
ও ভারী হবে-তার
ভিত্তিকে ফায়সালা হবে।
-
সেদিন
ওজন ছাড়া কোন বস্তুকে সত্য বলে গন্য করা হবে না।
-
বাতিলপন্থীদের
আমল যখন ওজন করা হবে, তখন
তারা দেখবে তাদের দীর্ঘদিনের আমল হবে-একটি মাছির ডানা পরিমাণ ওজনেরও নয়।
§ সূরা আল-কাহফ ১০৩-১০৬
আয়াতে বলা হয়েছেঃ যারা দুনিয়ার জীবনের সকল কাজ দুনিয়ার জন্য করে গেছে, যারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করে এমন ভাবে কাজ করেছে যেন পরকাল বলতে কিছু
নাই, তাদের কারো কাছে হিসাব দিতে হবে না। আখেরাতে আল্লাহ
তাদের কাজেও ওজনই করবে না।
﴿قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُم بِالْأَخْسَرِينَ أَعْمَالًا﴾ ﴿الَّذِينَ ضَلَّ
سَعْيُهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُونَ
صُنْعًا﴾ ﴿أُولَٰئِكَ الَّذِينَ
كَفَرُوا بِآيَاتِ رَبِّهِمْ وَلِقَائِهِ فَحَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فَلَا نُقِيمُ
لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا﴾ ﴿ذَٰلِكَ جَزَاؤُهُمْ
جَهَنَّمُ بِمَا كَفَرُوا وَاتَّخَذُوا آيَاتِي وَرُسُلِي هُزُوًا﴾
১০৩.
হে মুহাম্মাদ! এদেরকে বলো, আমি কি তোমাদের বলবো নিজেদের কর্মের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী
ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত কারা?
১০৪) তারাই, যাদের দুনিয়ার জীবনের সমস্ত প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম সবসময় সঠিক
পথ থেকে বিচ্যুত থাকতো এবং যারা মনে করতো যে, তারা সবকিছু সঠিক করে যাচ্ছে।
১০৫)
এরা এমন সব লোক যারা নিজেদের রবের নিদর্শনাবলী মেনে নিতে অস্বীকার করেছে এবং তাঁর
সামনে হাযির হবার ব্যাপারটি বিশ্বাস করেনি। তাই তাদের সমস্ত কর্ম নষ্ট হয়ে গেছে, কিয়ামতের দিন
তাদেরকে কোনো গুরুত্ব দেবো না।
১০৬) যে কুফরী তারা করেছে তার প্রতিফল স্বরূপ এবং আমার
নিদর্শনাবলী ও রসূলদের সাথে যে বিদ্রূপ তারা করতো তার প্রতিফল হিসেবে তাদের
প্রতিদান জাহান্নাম৷
﴿ فَمَن
ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ﴾ যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই
হবে সফলকাম
§ যে ব্যাপারে সূরা আল কারিয়াতে বলা হয়েছেঃ
﴿فَأَمَّا مَن ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ﴾ ﴿فَهُوَ فِي عِيشَةٍ رَّاضِيَةٍ﴾
৬) তারপর যার পাল্লা ভারী হবে ৭) সে মনের মতো সুখী জীবন লাভ করবে।
﴿وَمَنْ خَفَّتْ
مَوَازِينُهُ فَأُولَٰئِكَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنفُسَهُم بِمَا كَانُوا
بِآيَاتِنَا يَظْلِمُونَ﴾
৯)
এবং যাদের পাল্লা হালকা হবে তারা নিজেরাই হবে নিজেদের ক্ষতি সাধনকারী। কারণ তারা
আমার আয়াতের সাথে জালেম সূলভ আচরণ চালিয়ে গিয়েছিল৷
এবং যাদের পাল্লা হালকা হবে |
وَمَنْ خَفَّتْ
مَوَازِينُهُ |
তারা সে সব লোক যারা নিজেদের ক্ষতি করেছে |
فَأُولَٰئِكَ الَّذِينَ
خَسِرُوا أَنفُسَهُم |
এই কারণে যে, তারা আমার আয়াত বা নিদর্শ নিয়ে বাড়াবাড়ি করেছে |
بِمَا كَانُوا
بِآيَاتِنَا يَظْلِمُونَ |
﴿وَمَنْ
خَفَّتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَٰئِكَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنفُسَهُم ﴾ এবং যাদের পাল্লা হালকা হবে
তারা নিজেরাই হবে নিজেদের ক্ষতি সাধনকারী।
§ মানুষের জীবনের সকল কাজ ২ ভাবে বিভক্তঃ
১. ইতিবাচক কাজ বা সৎ কাজ।
যেমনঃ সত্যকে জানা, মানা, সত্যকে
অনুসরণ করা, সত্যের জন্য কাজ করা। আখেরাতে এই ধরণের কাজ হবে
ওজনদার, ভারী এবং মূল্যবান।
২. নেতিবাচক কাজ বা অসৎ কাজ।
যেমনঃ সত্য থেকে গাফেল থাকা, সত্য থেকে বিচ্যু হয়ে নফসের
দাসত্ব করা বা অন্য মানুষের দাসত্ব করা অথবা শয়তানের অনুসরণ করা। আখেরাতে এই অসৎ
কাজ শুধু মূল্যহীন হবে না, বরং ইতিবাচক অংশের মর্যাদা কমিয়ে
দেবে।
§ মানুষের উপরোক্ত ইতিবাচক কাজ যদি নেতিবাচক কাজের উপর বিজয়ী
না হয়, তথা নেতিবাচকের ক্ষতিপুরণ দেয়ার পর যদি ইতিবাচক কিছু অবশিষ্ট না থাকে,
তাহলে আখেরাতে সাফল্য লাভ সম্ভব নয়।
§ যদি কিয়ামতের দিন দেখা যায় যে নেতিবাচক কাজের ক্ষতিপুরণ দিতে দিতে ইতিবাচক কাজ সব শেষ হয়ে গেছে, তাহলে তার অবস্থা হবে দেউলিয়া ব্যবসায়ির মতো, যার সমূদয় পূঁজি ক্ষতিপুরণ ও দাবী পূরণ করতে করতে শেষ হয়ে যায়। পরে কিছু কিছু দাবী অনাদায়ী থেকে যায়।
§ সূরা আল-আম্বিয়াঃ ৪৭
﴿وَنَضَعُ الْمَوَازِينَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيَامَةِ فَلَا
تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئًا ۖ وَإِن كَانَ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ
أَتَيْنَا بِهَا ۗ وَكَفَىٰ بِنَا حَاسِبِينَ﴾
৪৭)
কিয়ামতের দিন আমি যথাযথ ওজন করার দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করবো৷ ফলে কোনো ব্যক্তির
প্রতি সামান্যতম জুলুম হবে না৷ যার তিল পরিমাণও কোনো কর্ম থাকবে তাও আমি সামনে
আনবো এবং হিসেব করার জন্য আমি যথেষ্ট।
§ সূরা আন-নিসাঃ ৪০
﴿إِنَّ اللَّهَ لَا يَظْلِمُ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ ۖ وَإِن تَكُ
حَسَنَةً يُضَاعِفْهَا وَيُؤْتِ مِن لَّدُنْهُ أَجْرًا عَظِيمًا﴾
৪০)
আল্লাহ কারো ওপর এক অণু পরিমাণও জুলুম করেন না৷ যদি কেউ একটি সৎকাজ করে, তাহলে আল্লাহ
তাকে দ্বিগুণ করে দেন এবং নিজের পক্ষ থেকে তাকে মহাপুরস্কার প্রদান করেন৷
§ সূরা আল-কারিয়াহঃ ৬-১১
﴿فَأَمَّا مَن ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ﴾ ﴿فَهُوَ فِي عِيشَةٍ رَّاضِيَةٍ﴾ ﴿وَأَمَّا مَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ﴾ ﴿فَأُمُّهُ هَاوِيَةٌ﴾ ﴿وَمَا أَدْرَاكَ مَا
هِيَهْ﴾ ﴿نَارٌ حَامِيَةٌ﴾
৬)
তারপর যার পাল্লা ভারী হবে ৭) সে মনের মতো সুখী জীবন লাভ করবে ৮)
আর যার পাল্লা হালকা হবে ৯) তার আবাস হবে গভীর খাদ৷ ১০)
আর তুমি কী জানো সেটি কি ? ১১) ( সেটি )জ্বলন্ত আগুন৷
§ সূরা আল-মুমিনুনঃ ১০১-১০৩
﴿فَإِذَا نُفِخَ فِي الصُّورِ فَلَا أَنسَابَ بَيْنَهُمْ
يَوْمَئِذٍ وَلَا يَتَسَاءَلُونَ﴾ ﴿فَمَن ثَقُلَتْ
مَوَازِينُهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ﴾ ﴿وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَٰئِكَ الَّذِينَ خَسِرُوا
أَنفُسَهُمْ فِي جَهَنَّمَ خَالِدُونَ﴾
১০১)
তারপর যখনই শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, তখন তাদের মধ্যে আর কোন আত্মীয়তা বা সম্পর্কে থাকবে না এবং
তারা পরস্পরকে জিজ্ঞেসও করবে না। ১০২)
সে সময় যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই সফলকাম হবে। ১০৩) আর যাদের পাল্লা হাল্কা হবে তারাই হবে এমনসব লোক যারা
নিজেদেরকে ক্ষতির মধ্যে নিক্ষেপ করেছে ৷ তারা জাহান্নামে থাকবে চিরকাল৷
§ দাড়িপাল্লায় কি ওজন করা হবেঃ
এব্যাপারে ৩টি মত পাওয়া যায়। ১. আমল ওজন করা হবে। ২. আমলকারীকে ওজন করা হবে। ৩. আমলকে লিখার সময় ওজন করে করে লেখা হয়।
o কারো কারো মতে, আমল ওজন করা হবে। আর কারো
কারো মতে আমলকারীকে ওজন করা হবে।
o যদি আমল ওজন করা হয়, তাহলে প্রশ্ন হচ্ছেঃ
আমলের কোন আঁকার নাই, আমল দৃশ্যমান কোন পদার্থ নয়। তাহলে
কিভাবে ওজন করা হবে।
o উত্তরে ইবনে কাসীর বলছেনঃ কিয়ামতের দিন আমলকে পদার্থের
আঁকার দান করা হবে। যেমনঃ
§ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস এর হাদীসঃ أن
البقرة وآل عمران يأتيان يوم القيامة كأنهما غمامتان، أو غيابتان، أو فرقان من طير
صواف. সূরা বাকারা ও সূরা আলে ইমরান কিয়ামতের দিন দূ’টি মেঘখন্ডের
আকারে সামনে আসবে। অথবা দূ’টি সামিয়ানার আকারে কিংবা আকাশে
ছড়িয়ে পড়া পাখীদের ঝাঁকের আকারে আসবে।
§ কুরআনের কাহিনী এসেছে বুখারী ও মুসলিমেঃ قصة القرآن، وأنه يأتي صاحبه في صورة شاب شاحب اللون، فيقول من أنت؟
فيقول أنا القرآن الذي أسهرت ليلك وأظمأت نهارك. কুরআনের পাঠকের কাছে কুরআন
একজন উদীয়মান যুবকের আকারে হাজির হবে। কুরআনের পাঠক যুবককে প্রশ্ন করবেঃ তুমি কে? যুবক উত্তর
দেবেঃ আমি কুরআন। আমি তোমাকে রাত্রিকালে জাগিয়ে রাখতাম এবং সারাদিন রোযার হুকুম
পালন করার জন্য পিপাসায় রাখতাম।
§ কবরে কাহিনী সংক্রান্ত হাদীসে বলা হয়েছেঃ فيأتي المؤمن شاب حسن اللون طيب الريح، فيقول من أنت؟ فيقول أنا عملك
الصالح কবরে মুমিনের কাছে একজন
সুগন্ধময় সুন্দর যুবক আসবে। কবরের অধিবাসী তাকে জিজ্ঞেস করবেঃ তুমি কে? উত্তরে বলবেঃ
আমি তোমার নেক আমল।
§ একই কায়দায় বিভিন্ন ভাবে বদ আমলও বিভিন্ন রূপে উপস্থিত হবে।
§ তাছাড়া ওজনের নিকতি কেবল দৃশ্যমান
পাল্লা হবে না। হতে পারে তা তাপ মাপার যন্ত্র, হতে পারে তা আবহাওয়া মাপার যন্ত্র-এসব যন্ত্র দিয়ে যা মাপা হয়, তা দৃশ্যমান নয়। যেমন আমরা-কিলোবাইট থেকে টেরাবাইট পর্যন্ত বলে থাকি, যা একটি মাপের
একক। কিন্তু তা দৃশ্যমান নয়।
o তিরমিজি শরীফের একটি হাদীস থেকে জানা যায়, কিয়ামতের দিন
আমল ওজন না করে আমলকারীকে ওজন করা হবে। রাসূল সা. বলেনঃ
يؤتى
يوم القيامة بالرجل السمين، فلا يزن عند الله جناح بعوضة ثم قرأ ﴿ فَلَا نُقِيمُ لَهُمْ
يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا﴾
কিয়ামতের
দিন একজন মোটা লোককে আনা হবে। কিন্তু সে আল্লাহর কাছে পাখির পালকের সমানও ওজনের
হবে না। এর পর রাসূল সা. এই আয়াত পাঠ করলেনঃ “তাই তাদের সমস্ত কর্ম নষ্ট হয়ে গেছে, কিয়ামতের দিন
তাদেরকে কোনো গুরুত্ব দেবো না৷”
o হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর পা দূ’টি ছিল ছোট। একদিন রাসূল সা. তাঁর প্রশংসা করতে গিয়ে
বললেনঃ
أتعجبون من دقة ساقيه؟ والذي نفسي بيده
لهما في الميزان أثقل من أحد
তোমরা
কি তার সরু সরু পা দূ’টি
দেখে বিস্ময় বোধ করছো? আল্লাহর
শপথ! এই
পা দূ’টো
দাড়িপাল্লায় ওজন করা হলে ওহুদের পাহাড়ের চেয়ে বেশী ওজনদার হবে।
o আমলকে ওজন করে করে লিখা হয় কিভাবে?
তাফসীরে উসমানীতে বলা হয়েছে-
§ আমল যদি এখলাস ও মহব্বাতের সাথে শরীয়াতের নির্দেশ অনুযায়ী
সম্পাদিত হয়, তাহলে তার ওজন বৃদ্ধি পাবে।
§ আমল যদি করা হয় লোক দেখানোর জন্য, শরীয়াতের
নির্দেশের বিরুদ্ধে, তাহলে তার ওজন হ্রাস পাবে।
﴿ بِمَا
كَانُوا بِآيَاتِنَا يَظْلِمُونَ﴾ কারণ তারা আমার আয়াতের সাথে জালেম সূলভ আচরণ চালিয়ে গিয়েছিল।
§ আয়াতকে অস্বীকার করা মানে সত্য থেকে বিচ্যুতি। ইয়াজলিমুন দ্বারা সেই সত্য থেকে বিচ্যুতির দিকে ইংগিত করা হয়েছে। (তাফসীরে উসমানী)
﴿وَلَقَدْ مَكَّنَّاكُمْ
فِي الْأَرْضِ وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيهَا مَعَايِشَ ۗ قَلِيلًا مَّا تَشْكُرُونَ﴾
১০) তোমাদেরকে আমি ক্ষমতা-ইখতিয়ার সহকারে
পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছি এবং তোমাদের জন্যে এখানে জীবন ধারণের উপকরণ সরবরাহ
করেছি। কিন্তু তোমরা খুব কমই শোকর গুজারী করে
থাকো।
নিসন্দেহে আমি তোমাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছি জমিনে |
وَلَقَدْ مَكَّنَّاكُمْ
فِي الْأَرْضِ |
এবং আমি সৃষ্টি করেছি তোমাদের জন্য তাতে জীবন
যাপনের উপকরণ সমূহ |
وَجَعَلْنَا لَكُمْ
فِيهَا مَعَايِشَ ۗ |
খুব কমই তোমরা কৃতজ্ঞতা জানিয়ে থাকো |
قَلِيلًا مَّا
تَشْكُرُونَ |
﴿وَلَقَدْ مَكَّنَّاكُمْ فِي الْأَرْضِ وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيهَا
مَعَايِشَ ۗ قَلِيلًا مَّا تَشْكُرُونَ﴾ তোমাদেরকে আমি ক্ষমতা-ইখতিয়ার সহকারে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছি এবং তোমাদের
জন্যে এখানে জীবন ধারণের উপকরণ সরবরাহ করেছি। কিন্তু তোমরা খুব কমই শোকর গুজারী
করে থাকো।
§ আল্লাহ জমিনে কি দিয়েছেনঃ
o জমিনে ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি দান করা হয়েছে, ফলেঃ
§ মানুষ জমিনকে শাসন করছে, নিজেদের ভিত্তি শক্ত করে
নিয়েছে।
§ জমিনে নদী-নালা প্রবাহিত করছে।
§ ঘর ও সুন্দর সুন্দর দালান বানাচ্ছে।
§ নিজেদের জন্য সকল উপকারী জিনিস উৎপাদন করছে।
o মেঘমালা দিয়েছেন। ফলেঃ
§ বৃষ্টি বর্ষিত হচ্ছে।
§ বৃষ্টির পানিতে ফসল উৎপন্ন হচ্ছে।
§ জমিন জীবিকার বাহন হচ্ছে।
§ সেখান থেকে ব্যবসা হচ্ছে।
§ সুখের সামগ্রী তৈরী হচ্ছে।
§ আল্লাহ মানুষের জন্য জমিনে অনেক নিয়ামত দিয়েছেন। যে
সম্পর্কে বলা হচ্ছেঃ
সূরা ইব্রাহীমঃ ৩৪
﴿وَآتَاكُم مِّن كُلِّ مَا سَأَلْتُمُوهُ ۚ وَإِن تَعُدُّوا
نِعْمَتَ اللَّهِ لَا تُحْصُوهَا ۗ إِنَّ الْإِنسَانَ لَظَلُومٌ كَفَّارٌ﴾
যিনি এমন সবকিছু তোমাদের দিয়েছেন যা তোমরা চেয়েছো। যদি তোমরা আল্লাহর নিয়ামতসমূহ গণনা করতে চাও, তাহলে তাতে সক্ষম হবে না। আসলে মানুষ বড়ই বে-ইনসাফ ও অকৃতজ্ঞ।
শিক্ষাঃ
১. আপনি যে আদর্শ
বাস্তবায়নে কাজ করছেন, যে সংগঠনের
সাথে আপনি সময় দিচ্ছেন, তার
মূল ভিত্তি হচ্ছে আল্লাহ
সুবাহানাহু ওয়া তায়ালা। এ ব্যাপারে
আপনার কোন সন্দেহ থাকলে
হবে না। আর সন্দেহ
দূর করার জন্য আপনার
আকীদাকে সহীহ করতে হবে-এজন্য
প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জন করতে হবে।
২. সর্বাবস্তায় আল্লাহর
নির্দেশকে অনুসরণ করতে হবে।
৩. দাওয়াতের কাজে সাড়া
না পেয়ে হতাশ হওয়ার
কোন করণ নেই। কারণ
ইতিহাস সাক্ষী দেয় কম লোকই
এই কাজে সহযোগিতা করে। ইসলামী আন্দোলন কোয়ান্টিটিতে নয়, কোয়ালিটিতে
সফলতা লাভ করে।
৪. কিয়ামতে আদালতে আখেরাতে
আমাদেরকে সকল কাজের হিসাব
দিতে হবে। সকল
ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হতে হবে-এই বিবেচনায়
আমাদের চলাফেরা করতে হবে।
0 Comments