সূরা আন-নিসাঃ আয়াত সংখ্যা-১৭০, রুকু সংখ্যা-২৪
তেলাওয়াত ও
বাংলা তরজমাঃ
§ কুরআনের আয়াত মূল কুরআনের সাথে মিলিয়ে পড়ুন। বিভিন্ন ডিভাইসে ফন্ট সাপোর্ট না করার কারণে শব্দ ও
হারাকাতে এদিক ওদিক হওয়ার আশংকা রয়েছে।
§ এই দারসটি এখনো প্রক্রিয়াধীন। কোন অনুষ্ঠানে পেশ করার উপযোগী হিসাবে এখনো তৈরী হয়নি।
﴿
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ
وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا
وَنِسَاءً ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ ۚ إِنَّ
اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا﴾
১) হে মানব জতি ! তোমাদের রবকে ভয় করো। তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একটি প্রাণ থেকে। আর সেই একই প্রাণ থেকে সৃষ্টি করেছেন তার জোড়া। তারপর তাদের দুজনার থেকে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু
পুরুষ ও নারী। সেই আল্লাহকে ভয় করো যার দোহাই দিয়ে
তোমরা পরস্পরের কাছ থেকে নিজেদের হক আদায় করে থাকো এবং আত্মীয়তা ও নিকট সম্পর্ক
বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাকো।
নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, আল্লাহ তোমাদের ওপর কড়া নজর রেখেছেন।
﴿وَآتُوا
الْيَتَامَىٰ أَمْوَالَهُمْ ۖ وَلَا تَتَبَدَّلُوا الْخَبِيثَ بِالطَّيِّبِ ۖ
وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَهُمْ إِلَىٰ أَمْوَالِكُمْ ۚ إِنَّهُ كَانَ حُوبًا
كَبِيرًا﴾
২) এতিমদেরকে তাদের ধন-সম্পদ ফিরিয়ে দাও। ভালো সম্পদের সাথে মন্দ সম্পদ বদল করো না। আর তাদের সম্পদ তোমাদের সম্পদের সাথে মিশিয়ে গ্রাস করো না। এটা মহাপাপ।
﴿وَإِنْ
خِفْتُمْ أَلَّا تُقْسِطُوا فِي الْيَتَامَىٰ فَانكِحُوا مَا طَابَ لَكُم مِّنَ
النِّسَاءِ مَثْنَىٰ وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ ۖ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا
فَوَاحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَدْنَىٰ أَلَّا تَعُولُوا﴾
৩) আর যদি তোমরা এতিমদের (মেয়েদের) সাথে
বেইনসাফী করার ব্যাপারে ভয় করো, তাহলে যেসব মেয়েদের তোমরা
পছন্দ করো তাদের মধ্যে থেকে দুই , তিন বা চারজনকে বিয়ে করো। কিন্তু যদি তোমরা তাদের সাথে ইনসাফ করতে পারবে না বলে
আশংকা করো , তাহলে একজনকেই বিয়ে করো। অথবা তোমাদের অধিকারে সেসব মেয়ে আছে তাদেরকে বিয়ে করো। বেইনসাফীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এটিই অধিকতর সঠিক
পদ্ধতি।
﴿وَآتُوا
النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ۚ فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ
نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا﴾
৪) আর আনন্দের সাথে (ফরয মনে করে) স্ত্রীদের
মোহরানা আদায় করে দাও। তবে যদি তারা নিজেরাই
নিজেদের ইচ্ছায় মোহরানার কিছু অংশ মাফ করে দেয়, তাহলে তোমরা
সানন্দে তা খেতে পারো।
﴿وَلَا
تُؤْتُوا السُّفَهَاءَ أَمْوَالَكُمُ الَّتِي جَعَلَ اللَّهُ لَكُمْ قِيَامًا
وَارْزُقُوهُمْ فِيهَا وَاكْسُوهُمْ وَقُولُوا لَهُمْ قَوْلًا مَّعْرُوفًا﴾
৫) আর তোমরা যে ধন –সম্পদেকে আল্লাহ তোমাদের
জীবন ধারণের মাধ্যমে পরিণত করেছেন, তা নির্বোধদের
হাতে তুলে দিয়ো না। তবে
তাদের খাওয়া পরার ব্যবস্থা করো এবং সদুপদেশ দাও।
﴿وَابْتَلُوا
الْيَتَامَىٰ حَتَّىٰ إِذَا بَلَغُوا النِّكَاحَ فَإِنْ آنَسْتُم مِّنْهُمْ
رُشْدًا فَادْفَعُوا إِلَيْهِمْ أَمْوَالَهُمْ ۖ وَلَا تَأْكُلُوهَا إِسْرَافًا
وَبِدَارًا أَن يَكْبَرُوا ۚ وَمَن كَانَ غَنِيًّا فَلْيَسْتَعْفِفْ ۖ وَمَن كَانَ
فَقِيرًا فَلْيَأْكُلْ بِالْمَعْرُوفِ ۚ فَإِذَا دَفَعْتُمْ إِلَيْهِمْ
أَمْوَالَهُمْ فَأَشْهِدُوا عَلَيْهِمْ ۚ وَكَفَىٰ بِاللَّهِ حَسِيبًا﴾
৬) আর এতিমদের পরীক্ষা করতে থাকো, যতদিন না তারা বিবাহযোগ্য বয়সে পৌঁছে যায়। তারপর যদি তোমরা তাদের মধ্যে যোগ্যতার সন্ধান পাও, তাহলে
তাদের সম্পদ তাদের হাতে সোর্পদ করে দাও। তারা বড় হয়ে নিজেদের অধিকার দাবী করবে, এ ভয়ে কখনো
ইনসাফের সীমানা অতিক্রম করে তাদের সম্পদ তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলো না। এতিমদের যে অভিভাবক সম্পদশালী হবে সে যেন পরহেজগারী
অবলম্বন করে ( অর্থাৎ অর্থ গ্রহণ না করে) আর যে গরীব হবে সে যেন প্রচলিত পদ্ধতিতে
খায়। তারপর তাদের সম্পদ যখন তাদের হাতে
সোপর্দ করতে যাবে তখন তাতে লোকদেরকে সাক্ষী বানাও। আর হিসেব নেবার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।
﴿لِّلرِّجَالِ
نَصِيبٌ مِّمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ
مِّمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ مِمَّا قَلَّ مِنْهُ أَوْ كَثُرَ ۚ
نَصِيبًا مَّفْرُوضًا﴾
৭) মা–বাপ ও আত্মীয়-স্বজনরা যে ধন-সম্পত্তি
রেখে গেছে তাতে পুরুষদের অংশ রয়েছে। আর
মেয়েদের অংশ রয়েছে সেই ধন-সম্পত্তিতে, যা মা-বাপ ও
আত্মীয়-স্বজনরা রেখে গেছে, তা সামান্য হোক বা বেশী এবং এ অংশ (আল্লাহর পক্ষ থেকে ) নির্ধারিত।
﴿وَإِذَا
حَضَرَ الْقِسْمَةَ أُولُو الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينُ
فَارْزُقُوهُم مِّنْهُ وَقُولُوا لَهُمْ قَوْلًا مَّعْرُوفًا﴾
৮) ধন-সম্পত্তি ভাগ-বাঁটোয়ারার সময় আত্মীয়
–স্বজন, এতিম ও মিসকিনরা এলে তাদেরকেও ঐ সম্পদ থেকে
কিছু দিয়ে দাও এবং তাদের সাথে ভালোভাবে কথা বলো।
﴿وَلْيَخْشَ
الَّذِينَ لَوْ تَرَكُوا مِنْ خَلْفِهِمْ ذُرِّيَّةً ضِعَافًا خَافُوا عَلَيْهِمْ
فَلْيَتَّقُوا اللَّهَ وَلْيَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا﴾
৯) লোকদের একথা মনে করে ভয় করা উচিত, যদি তারা অসহায় সন্তান পিছনে ছেড়ে রেখে যেতো, তাহলে
মরার সময় নিজেদের সন্তানদের ব্যাপারে তাদের কতই না আশংকা হতো! কাজেই তাদের
আল্লাহকে ভয় করা ও ন্যায়সংগত কথা বলা উচিত।
﴿إِنَّ
الَّذِينَ يَأْكُلُونَ أَمْوَالَ الْيَتَامَىٰ ظُلْمًا إِنَّمَا يَأْكُلُونَ فِي
بُطُونِهِمْ نَارًا ۖ وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيرًا﴾
১০) যারা এতিমদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা আগুন দিয়ে নিজেদের পেট পূর্ণ করে এবং তাদেরকে অবশ্যি জাহান্নামের
জ্বলন্ত আগুনে ফেলে দেয়া হবে।
নামকরণঃ
§ سُمّيت سورة النساء بهذا الاسم لكثرة ما ورد فيها من أحكام
تتعلّق بالنساء بدرجة كبيرة لم توجد في غيرها من السور الأخرى، لذلك أطلق
عليها أيضاً سورة النساء الكبرى
§ فإن وجه تسمية سورة النساء بهذا الاسم، هو ما اختصت به من ذكر
أحكام النساء فيها.
§ এই সূরার প্রথম আয়াতে আন-নিসা শব্দটি এসেছে। যাকে এই সূরার চিহ্ন হিসাবে গ্রহণ করে নামকরণ করা হয়েছেঃ
সূরাতুন নিসা।
§ এই সূরাতে নারীদের বিষয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে, বিধায় এই সূরার নাম করণ করা হয়েছে সূরাতুন নিসা। এর অর্থ এই নয় যে, এই সূরায় আর কোন
বিষয় আলোচিত হয়নি। বরং অনেক বিষয়ের সাথে এই
বিষয়ের আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে।
§ সূরা বাকারার পর সূরা নিসা হচ্ছে কুরআনে হাকীমের সবচেয়ে বড়
সূরা।
§ উল্লেখ্য যে, কুরআনে সূরাতুর
রিজাল নামে কোন সূরা নাই।
নাযিল
হওয়ার সময়কাল ও বিষয়বস্তুঃ
§ নাযিলের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী সূরা নিসা নাযিল হয়েছে সূরা আল
মুমতাহানার পর। (ফী যিলালিল কুরআন)
§ সূরার কিছু অংশ ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের সময় নাযিল হয়। আর কিছু অংশ ৬ষ্ট হিজরীতে হুদায়বিয়ার সন্ধির সময়ে নাযিল হয়। সূরার বেশীর ভাগ অংশ নাযিল হয়েছে হিজরতের প্রথম দিকে। বলা যায় ওহুদ যুদ্ধের পর থেকে সূরাটি নাযিল হওয়া শুরু হয়
এবং ৮ম হিজরী পর্যন্ত চলে। যেমনঃ
সূরার ১৪ নম্বর আয়াত, যেখানে ব্যভিচারের হুকুম সম্পর্কে আলোচনা
হয়েছে এবং যা সূরা নূরে ব্যভিচারের শাস্তির কথা যেখানে বলা হয়েছে, তার আগে নাযিল হয়েছে। অপর
দিকে সূরার শেষ আয়াত ইফকের ঘটনার সাথে জড়িত, যা ৪র্থ বা ৫ম
হিজরীতে নাযিল হয়েছে। (ফী
যিলালিল কুরআন)
§ সূরাটি বেশ কয়েকটি ভাষনের সমষ্টি। আর নাযিল হয়েছে ৩য় হিজরীর শেষ থেকে শুরু করে ৪র্থ হিজরীর শেষ বা ৫ম হিজরীর
প্রথম দিক পর্যন্ত, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অংশে।
§ সূরার কোন অংশ কখন নাযিল হয়েছ বা কোন আয়াত কোন ভাষণের
অন্তর্ভূক্ত, তবে কোন কোন বিধান বা ঘটনার দিকে ইংগিক করা
হয়েছে, যার রেওয়ায়েত সমূহ থেকে আমরা নাযিলের সময়কাল সম্পর্কে
জানতে পারি। সেই দৃষ্টিকোন বিবেচনায় নিয়ে আমরা এই সিদ্ধান্তে
পৌছতে পারি যে,
1. উত্তরাধিকার
বন্টন ও এতিমদের অধিকার বিষয়ক আইনঃ যা ওহুদ যুদ্ধের পর নাযিল হয়েছে। যাতে ৭০জন সাহাবী শাহাদাত বরণ করেন। এর ফলে মদীনায় শহীদদের রেখে যাওয়া সম্পদ কিভাবে বন্টন হবে, তাদের এতিম বাচ্ছাদের অধিকার কিভাবে সংরক্ষিত হবে ইত্যাদি প্রয়োজন দেখা
দেখা দেয়। আর সেই প্রয়োজনে সূরা প্রথম ৪ রুকু এবং ৫ম
রুকুর প্রথম ৩ আয়াত নাযিল হয় বলে আমরা ধরে নিতে পারি।
2. যুদ্ধ
চলাকালীন নামাঃ এ বিষয়ে হাদীসের রেওয়ায়েত অনুযায়ী নির্দেশনা আসে যাতুর রিকার
যুদ্ধে। আর এ যুদ্ধটি হয় ৪র্থ হিজরীতে। বিধায় অনুমান করা যায় যে ১৫তম রুকতে যেহেতু এই বিষয়ে কথা
এসেছে, সেহেতু তা ৪র্থ হিজরীতে বা কাছাকাছি সময়ে নাযিল হয়েছে।
3. বনী
নাযিরকে মদীনা থেকে বহিষ্কারঃ বহিস্কারের ঘটনা ঘটে ৪র্থ হিজরীর রবিউল আউয়াল মাসে। বিধায় ইহুদীদের চেহারা বিকৃত করে পেছন দিকে ফিরিয়ে দেয়া
আগে ঈমান আনার আহবান বিষয়ক আয়াত এর আগে নাযিল হয়েছে বলা যায়।
4. তাইয়ামুমের
বিধানঃ যা প্রসিদ্ধ যে, বনীল মুসতালিকের যুদ্ধের সময় পানি সংকটের
কারণে তাইয়ামুমের অনুমতি প্রদান করা হয়। তাইয়ামুম সংক্রান্ত বিষয় এ সূরার ৭ম রুকুতে উল্লেখ করা হয়েছে। বিধায় এই ভাষন ৫ম হিজরীতে নাযিল হয় বলে ধরে নেয়া যায় এজন্য
যে বনীর মুসতালিকের যুদ্ধ ৫ম হিজরীতে সংঘটিত হয়।
নাযিল
হওয়ার কারণ ও আলোচ্য বিষয়ঃ
§ সুর আলোচ্য বিষয় ভাল ভাবে বুঝার জন্য প্রয়োজন সূরা নাযিলের
সময়কালের ইতিহাস জানা।
§ সেই সময়ে রাসূল সা. এর সামনে যে কাজ গুলো ছিল তা ৩টি বড় বড়
ভাগে বিভক্ত। যেমনঃ
1. নব গঠিত
ইসলামী রাষ্ট নামক সংগঠনের বিকাশ সাধন।
হিজরতের পর মদীনা ও তার আশে পাশে এই সংগঠন বা সমাজের সূচনা হয়েছিল। যাতে বিদ্যমান ছিল জাহিলিয়াতের পুরাতন পদ্ধতি। প্রয়োজন ছিল নৈতিকতা, তামাদ্দুন,
সমাজরীতি, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও রাষ্ট্র
পরিচালনায় নতুন নতুন নিয়ম চালু করা। য়ে
তৎপরতা সে সময় এগিয়ে চলছি।
2. সংস্কার
বিরোধী ৩টি শক্তির ইসলামের সাথে যে ঘোরতর সংঘাত চলতেছির, তা অব্যাহত ছিল। শক্তি
৩টি ছিলঃ ১. আরবের মুশরিক সম্প্রদায়। ২.
ইহুদী গোত্র সমূহ। ৩. মুনাফিক সম্প্রদায়।
3. বিরোধী
শক্তির সকল বাধা মোকাবেলা করে ইসলামের দাওয়াতকে সামনে এগিয়ে নেয়া। এজন্য
প্রয়োজন ছিল নতুন নতুন ক্ষেত্রে প্রবেশ ও ইসলামকে বিজয়ীর আসনে প্রতিষ্ঠা।
§ এই সব তৎপরতার সহায়ক হিসাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে যতগুলো ভাষণ
নাযিল হয়, তা সব এই কাজ গুলোর সাথে সম্পর্কিত। যেমনঃ
1. ইসলামের
সামাজিক অবকাঠামো নির্মানের প্রাথমিক অবস্থার নির্দেশনা ও বিধান এসেছে সূরা
বাকারাতে। আর সম্প্রারিত ইসলামের বিধান ও নির্দেশনা
এসেছে সূরা নিসাতে। যাতে সামাজিক জীবনধারার সংশোধন ও সংস্কারের
বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। যেমনঃ
ক.
পরিবার গঠন নীতি।
খ, বিয়েকে বিধি-নিষেধের আওতায় আনা।
গ.
নারী-পুরুষের সম্পর্কের সীমা।
ঘ.
এতিমের অধিকার নির্দিষ্ট করণ।
ঙ.
মীরাস বন্টনের নিয়ম কানুন।
চ.
অর্থনৈতিক লেন-দেনে পরিশুদ্ধি।
ছ.
ঘরোয়া বিবাদ নিষ্পত্তির পদ্ধতি।
জ.
অপরাধ দন্ডবিধির ভিত রচনা।
ঝ.
মদ্যপারেন বিধি-নিষেধ আরোপ।
ঞ.
তাহারাত ও পাক-পবিত্রতা অর্জনের বিধান।
ট.
আল্লাহর বান্দার সাথে সৎ ও সত্য নিষ্ঠ মানুষের কর্মধারা শিক্ষা।
ঠ.
মুসলমানদের দলীয় শৃংখলা প্রতিষ্ঠার বিধান।
ড. আহলে
কিতাবদের নৈতিক, ধর্মীয় মনোভাব ও কর্মনীতির বিশ্লেষন।
ঢ.
মুনাফিকদের কর্মনীতির সমালোচনা।
ণ. খাটি
ও যথার্থ ঈমানদারী এবং ঈমান ও নিফাকের পার্থক্য।
2. ওহুদ
যুদ্ধের পরবর্তীতে সৃষ্ট নাজুক পরিস্থিতিতে মুশরিক, ইহুদী ও
মুনাফেকদের সাহস বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট অবস্থার পেক্ষিতে মুসলমানদের মোকাবেলায়
উদ্বোদ্ধকরণে আবেগময় ভাষন।
যুদ্ধাবস্থায় করণীয় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা, মুসলমানদের মাঝে
মুনাফিক ও দূর্বল ঈমানদারদের ছড়িয়ে দেয়া হতাশা ও নৈরাজ্যের প্রেক্ষিতে সকল খবর
দায়িত্বশীল পর্যন্ত পৌছানো ও অনুসন্ধান না করে প্রচারের উপর নিষেধাজ্ঞা।
3. সে সময়ে
মুসলমানদের বারবার যুদ্ধে যাওয়া ও রাতের বেলা কোন অভিযানে যাওয়ার দরকার হতো। আর এই সময় বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে পানির সংকট দেখা দিতো। এমতাবস্থায় ওজু গোসলের জন্য তাইয়ামুমের অনুমতি দেয়া হয়, নামায সংক্ষেপ করা ও ভয়কালীন নামাযের পদ্ধতি শিক্ষা
দেয়া হয়। কাফের অধ্যুষিত এলাকার মুসলমানদের হিজরত করে দারুল ইসলামে চলে আসার নসিহত করা হয়।
4. বনী
নাযির। যারা মদীনা সনদ অনুযায়ী মুসলমানদের সাথে
চূক্তিবদ্ধ ছিল। কিন্ত তারা ইসলামের শত্রুদের খোলাখুলি
সহযোগিতাই শুধু করেনি। ররং মদীনায় রাসূল সা. ও
মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকে। তাদের কার্যকলাপের সমালোচনা করা, তাদের সতর্ক করা
এবং তাদের মদীনা থেকে বহিস্কার করা।
5. মুনাফিকদের
একেক দলের কর্মপদ্ধতি ছিল একে ধরণের। বিধায়
তাদের কোন দলের সাথে কোন পদ্ধতির ব্যবহার করা হবে, তার
সিদ্ধান্ত নেয়া মুসলমানদের জন্য ছিল কঠিন। তাই এদেরকে পৃথক পৃথক দলে বিভক্ত করে তাদের সাথে আচরণ কি তা বর্ণনা করা হয়েছে।
6. মদীনা
সনদের সাথে চূক্তিবন্ধ নিপপেক্ষ গোত্র সমূহের সাথে মুসলমানদের কি ব্যবহার হবে, তা উল্লেখ করা হয়েছে।
7. সংঘাত
সংঘর্ষের বিদ্যমান মুসলমান দলটির জয়লাভ করার একমাত্র মাধ্যম ছিল তাদের নৈতিক
চরিত্রের উন্নতি। তাই মুসলমানদের উন্নত নৈতিক চরিত্রের শিক্ষা
দেয়া হয়েছে। দলের মধ্যে দৃশ্যমান দূর্বলতার কঠোর
সমালোচনা করা হয়েছে।
8. ইসলাম
জাহিলিয়াতের মোকাবেলায় নৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংশোধনের আহবান জানিয়ে আসছিল। সেই বক্তব্যটি স্ববিস্তারে উপস্থাপন করা হয়েছে। সাথে সাথে ইহুদী, খৃষ্টান ও
মুশরিক সম্পদারেন ভ্রান্ত ধর্মীয় ধারণা-বিশ্বাস নৈতিক চরিত্রনীতি ও কর্মকান্ডের
সমালোচনা করে তাদের সামনে সত্য ইসলামের দাওয়াত পেশ করা হয়েছে।
আয়াত
সমূহের ব্যাখ্যাঃ
﴿يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن
نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا
كَثِيرًا وَنِسَاءً ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ
وَالْأَرْحَامَ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا﴾
১) হে মানব জতি ! তোমাদের রবকে
ভয় করো। তিনি
তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একটি প্রাণ থেকে। আর সেই একই প্রাণ থেকে সৃষ্টি করেছেন তার জোড়া। তারপর তাদের দুজনার থেকে সারা
দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। সেই আল্লাহকে ভয় করো যার দোহাই দিয়ে তোমরা পরস্পরের কাছ
থেকে নিজেদের হক আদায় করে থাকো এবং আত্মীয়তা ও নিকট সম্পর্ক বিনষ্ট করা থেকে বিরত
থাকো।
নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, আল্লাহ তোমাদের ওপর কড়া নজর
রেখেছেন।
§ يَا أَيُّهَا النَّاسُ এখানে হে মানব সকল বলে তামাম পৃথিবীর সকল মানুষকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। এই মানুষ, সে পুরুষ হোক অথবা মহিলা,
সে কুরআন নাযিলের সময় থাকুন বা থাকুক। তার সে সময়ে জন্ম গ্রহণ করে থাকুক অথবা কিয়ামত পর্যন্ত যখনই জন্ম নেক।
§ اتَّقُوا رَبَّكُمُ বলার মানে হচ্ছেঃ এমন একটি সত্ত্বার বিরুদ্ধাচরণ করা কি সম্ভব হতে পারে,
যিনি তামাম জাহানের লালন-পালনের জিম্মাদার। যার রুবুবিয়াত বা পালন নীতির দৃষ্টান্ত সৃষ্টির প্রতিটি
স্তরে স্তরে বিদ্যমান।
§ يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ
الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا
رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً - এই পুরো বক্তব্যটা হচ্ছে পুরো সুরা আলোচনার ভূমিকা। কারণ সূরাতে আলোচিত হবেঃ
1. মানুষের
পাারস্পকি অধিখার।
2. পারিবারিক
ব্যবস্থাকে উন্নত ও সুগঠিত করার আইন কানুন।
3. আল্লাহকে
ভয় করা এবং তার নারাজি থেকে আত্মরক্ষার তাগিদ।
4. মানুষের
পরিচয় দেয়া হয়েছে যে, মানুষের উৎপত্তি, রক্ত-মাংস,
শারিরিক গঠন সব কিছু এক কেন্দ্র বিন্দু থেকে। প্রকৃত পক্ষে প্রত্যেকে প্রত্যেকের অংশ।
§ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ “তোমাদের একটি
প্রাণ থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে” মানে আল্লাহ প্রথমে এক ব্যক্তি তথা আদম আ. থেকে মানব
জাতির সৃষ্টি করেন। সূরা
আলে ইমরানের ৫৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ إِنَّ مَثَلَ عِيسَىٰ عِندَ اللَّهِ كَمَثَلِ
آدَمَ ۖ خَلَقَهُ مِن تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهُ كُن فَيَكُونُ আল্লাহর কাছে ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের মতো। কেননা আল্লাহ তাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেন এবং হুকুম দেন, হয়ে যাও, আর তা হয়ে যায়।
§ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا “সেই একই প্রাণ থেকে সৃষ্টি করেছেন তার জোড়া”
o
তাফসীর কারক
ও বাইবেলের বক্তব্য হচ্ছেঃ আদমের পাঁজর থেকে হাওয়া আ.কে সৃষ্টি করা হয়েছে।
o
তামলুদের
বক্তব্য হলোঃ হাওয়াকে সৃষ্টি করা হয়েছে ডান দিকের ১৩শ হাড় থেকে।
o
কুরআনে হাওয়ার
সৃষ্টি প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।
o
বিধায় আল্লাহ
যেহেতু অস্পষ্ট রেখেছেন, সেহেতু আমরা এর পিছনে সময় নষ্ট করবো না।
§ وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ
بِهِ وَالْأَرْحَامَ ঐ আল্লাহকে যার দোহাই
দিয়ে তোমরা একে অপর থেকে হক দাবী করে থাকো। যার নাম উচ্চারণ করে শপথ করে তোমরা নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করো। আর রেহেমের সম্পর্ক তথা আত্মীয়তার সম্পর্ক তা পিতার দিক
থেকে হোক আর মায়ের দিক থেকে হোক, তার অধিকার আদায়ের ব্যাপারে
সচেতন হও।
o
আত্মীয়তার
সম্পর্ক বুঝাতে আরহাম শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যার এক বছর
হচ্ছে ‘রেহেম’। রেহেম বলা হয় মায়ের
গর্ভে যে স্থানে সন্তান অবস্থান করে। আর
বুঝানো হয়েছে, জন্মসূত্রে মানুষ একই রেহেম থেকে এসেছে। আত্মীয়তার সম্পর্ককে রক্ষা করা বুঝাতে ‘সিলায়ে রেহমী’ আর
সম্পর্ক কর্তন বুঝাতে ‘কেতয়ে রেহমী’ শব্দাবলী ব্যবহার হয়ে থাকে।
o
মিশকাত
শরীফের একটি হাদীস, যা সিলাহ রেহমীর ব্যাপারে উল্লেখ যোগ্য। রাসূল সা. বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার রিযিকের প্রাচূর্য ও
দীর্ঘ হায়াত প্রত্যাশা করে, তার উচিত আত্মীয় স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক
গড়ে তুলা।
﴿وَآتُوا الْيَتَامَىٰ أَمْوَالَهُمْ ۖ وَلَا تَتَبَدَّلُوا
الْخَبِيثَ بِالطَّيِّبِ ۖ وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَهُمْ إِلَىٰ أَمْوَالِكُمْ ۚ
إِنَّهُ كَانَ حُوبًا كَبِيرًا﴾
২) এতিমদেরকে তাদের ধন-সম্পদ
ফিরিয়ে দাও। ভালো সম্পদের সাথে মন্দ সম্পদ বদল করো না। আর তাদের সম্পদ তোমাদের সম্পদের সাথে
মিশিয়ে গ্রাস করো না। এটা মহাপাপ।
§ وَآتُوا الْيَتَامَىٰ أَمْوَالَهُمْমানে “এতিমদেরকে তাদের ধন-সম্পদ ফিরিয়ে দাও” অর্থাৎ যতদিন তারা শিশু বা
নাবালেগ, ততদিন তাদের ধন-সম্পদ তাদের প্রয়োজনে ব্যয়
করো। তারা প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে গেলে তাদের সম্পদ
তাদেরকে ফিরিয়ে দাও।
§ وَلَا تَتَبَدَّلُوا الْخَبِيثَ بِالطَّيِّبِ মানে “ভাল সম্পদের সাথে মন্দ সম্পদ বদল করো না” যার অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক।
1.
হালালের
পরিবর্তে হারাম উপার্জন করো না।
2.
এতিমদের
ভাল সম্পদের সাথে নিজেদের খারাপ সম্পদ বদল করো না।
﴿وَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تُقْسِطُوا فِي الْيَتَامَىٰ فَانكِحُوا
مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاءِ مَثْنَىٰ وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ ۖ فَإِنْ خِفْتُمْ
أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ۚ ذَٰلِكَ
أَدْنَىٰ أَلَّا تَعُولُوا﴾
৩) আর যদি তোমরা এতিমদের
(মেয়েদের) সাথে বেইনসাফী করার ব্যাপারে ভয় করো, তাহলে
যেসব মেয়েদের তোমরা পছন্দ করো তাদের মধ্যে থেকে দুই , তিন বা
চারজনকে বিয়ে করো। কিন্তু যদি তোমরা তাদের সাথে ইনসাফ করতে পারবে না বলে
আশংকা করো , তাহলে একজনকেই বিয়ে করো। অথবা তোমাদের অধিকারে
সেসব মেয়ে আছে তাদেরকে বিয়ে করো। বেইনসাফীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এটিই অধিকতর সঠিক
পদ্ধতি।
§ وَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تُقْسِطُوا فِي
الْيَتَامَىٰ فَانكِحُوا مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاءِ مَثْنَىٰ وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ “আর যদি তোমরা এতিম মেয়েদের সাথে বেইনসাফী করার ব্যাপারে ভয় করো, তাহলে যে সব মেয়েদের তোমরা পছন্দ করো, তাদের মধ্য
থেকে দুই, তিন বা চারজনকে বিয়ে করো”। মুফাস্সিরগন যার ৩টি অর্থ বর্ণনা করেছেনঃ
1. হযরত
আয়েশা রা. এর ব্যাখ্যাঃ এতিম মেয়েদের ব্যাপারে ইনসাফ রক্ষার আশংকা থাকলে এতিমদের
বাহিরে নিজেদের পছন্দ মতো মেয়েদের বিয়ে করো। ইনসাফ
বলতে এখানে যে অবস্থা ছিল তাহলোঃ অভিভাবকহীন এতীম মেয়েদের বিয়ে করা হতো তিনটি
কারণে। ১. এতিমদের সম্পদ। ২. এতিমদের সৌন্দর্য। ৩.
এতিমদের বিয়ে করলে তাদের সাথে যে আচরণ করা হোক না কেন, কেউ খবরদারী করার নাই।
আর এ ব্যাপারে এই সূরার ১৯নং আয়াতে বলা হয়েছেঃ إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ
ۗ وَمَا اخْتَلَفَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ إِلَّا مِن بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْعِلْمُ
بَغْيًا بَيْنَهُمْ ۗ وَمَن يَكْفُرْ بِآيَاتِ اللَّهِ فَإِنَّ اللَّهَ سَرِيعُ الْحِسَابِ ইসলাম আল্লাহর নিকট একমাত্র দীন –জীবনবিধান। যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল, তারা এ দীন থেকে সরে
গিয়ে যেসব বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেছে, সেগুলো অবলম্বনের এ
ছাড়া আর কোন কারণই ছিল না যে, প্রকৃত জ্ঞান এসে যাওয়ার পর
তারা নিজেদের মধ্যে পরস্পরের ওপর বাড়াবাড়ি করার জন্য এমনটি করেছে। আর যে কেউ আল্লাহর হেদায়াতের আনুগত্য করতে অস্বীকার করে,
তার কাছ থেকে হিসেব নিতে আল্লাহর মোটেই দেরী হয় না।
2. হযরত
আব্দুল ইবনে আব্বাস রা. এবং তার ছাত্র ইকরামা এর ব্যাখ্যাঃ জাহেলী যুগে বিয়ের
সংখ্যায় কোন বাধ্যবাধকতা ছিল না। ফলে
একেকজন ১০টি পর্যন্ত বিয়ে করতো। আর
এতে করে সংসারের খরচ বাড়তো। ফলে
ওরা বাধ্য হয়ে এতিম ভাইঝি বা ভাগ্নি ও অন্যান্য অসহায়দের অধিকারে হস্তক্ষেপ করতো। সেই বেইনসাফী থেকে বাঁচার জন্য সর্বোচ্চ ৪টি বিয়ের
বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা হয়, যাতে তারা সুবিচার পায়।
3. সাঈদ
ইবনে জুবাইর, কাতাদাহ ও অন্যান্য মুফাস্সিরদের ব্যাখ্যাঃ
জাহেলীও যুগে এতিমদের সাথে বেইনসাফী সুনজরে দেখা হতো না। কিন্তু মেয়েদের ব্যাপারে ইসনাফ সংক্রান্ত ব্যাপারে তারা
ছিল বেখবর। বিধায় তারা ইচ্ছামতো বিয়ে করতো। এখানে মূলতঃ সে দিকে ইংগীত করা হয়েছে যে, এতিমদের উপর যুলুমকে তোমরা যেভাবে ভয় করো, মেয়েদের
সাথেও ইনসাফের ব্যাপারে সমান ভয় করো। আর
ইনসাফ রক্ষার স্বার্থে তোমরা ধারাবাহিকতা রক্ষা করো। এক সাথে ৪ বিয়ে না করে ইনসাফের দিক লক্ষ রেখে বিয়ের
সংখ্যা বাড়াও, তবে ৪ হচ্ছে সর্বশেষ সীমা।
§ উপরোক্ত আয়াতের বক্তব্য ৩টি ব্যাখ্যাকে গ্রহণ করার সম্ভাবনা
দেখায়।
§ মাওলানা মওদূদী রাহ. এর মতে আরো একটা ব্যাখ্যা এমন হতে পারে
যে, এতিমদের সাথে যদি এভাবে ইনসাফ করতে না পারো, তাহলে যে সব এতিম মেয়ের সাথে এতিম শিশু সন্তান আছে, তাদেরকে
বিয়ে করো।
§ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً “কিন্তু যদি তোমরা তাদের সাথে ইনসাফ করতে পারবে না বলে আশংকা করো , তাহলে একজনকেই বিয়ে করো।”
o
এই
আয়াতের উপর ফকীহ গনের ইজমা রয়েছে। আর তা
হলো এক সাথে এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৪জন স্ত্রী রাখতে পারবে।
o
হাদীসে
বলা হয়েছেঃ তায়েফ প্রধান গাইলানের ইসলাম গ্রহণ কালে ৯ জন স্ত্রী ছিলেন। রাসূল সা. ৪জন রেখে বাকী ৫জনকে তালাক দেয়ার নির্দেশ দেন।
o
নওফল
ইবনে মুয়াবিয়ার ৫জন স্ত্রী ছিল। রাসূল
সা. ১জনকে তালাক দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন।
o
ইনসাফ ও
ন্যায় নিষ্ঠার শর্ত পুর্ণ না করে একাধিক স্ত্রী রাখার বৈধতার সুযোগ গ্রহণ আল্লাহর
সাথে প্রতারণা।
o
যে
ব্যক্তি স্ত্রী বা স্ত্রীদের সাথে ইনসাফ করেনা, ইসলামী আদালত
তাদের অভিযোগ শুনে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
§ খৃষ্টবাদী ধ্যান ধারণার লোকেরা এই আয়াতের মাধ্যমে প্রমাণ
করতে চায় যে, কুরআনের উদ্দেশ্য ছিল একাধিক বিয়ের পদ্ধতি
বিলুপ্ত করা। কিন্তু সমাজে এর প্রচলন
বেশী হওয়ার বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে মাত্র।
§ একাধিক স্ত্রী গ্রহণ অনিষ্টকর মনে করা সঠিক নয় এজন্য যে,
1. কোন কোন
সময় নৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রয়োজনে একাধিক বিয়ের প্রয়োজ হয়। যারা এক স্ত্রীতে তুষ্ট হতে পারেনা, তাদের মাধ্যমে
যৌন বিশৃংখলা সৃষ্টির আশংকা রয়েছে।
2. একাধিক
স্ত্রীর চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তির চাহিদা পুরণ না করলে সমাজ সংস্কৃতি ও নৈতিকতায় যে
অনিষ্ট হবে, তা একাধিক স্ত্রী গ্রহণের অনিষ্টতার চেয়ে
ভয়াবহ।
§ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ “অথবা তোমাদের অধিকারে সেসব মেয়ে আছে”।
o
এখানে
ক্রীতদাসী বুঝানো হয়েছে।
o
ক্রীতদাসীদের
বিয়ে করলে সাধারণ মহিলাদের চেয়ে কম দায়িত্ব থাকে।
o
সূরা
নিসাঃ ২৪ নং আয়াতে বলা হয়েছেঃ وَالْمُحْصَنَاتُ
مِنَ النِّسَاءِ إِلَّا مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ۖ كِتَابَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ ۚ
وَأُحِلَّ لَكُم مَّا وَرَاءَ ذَٰلِكُمْ أَن تَبْتَغُوا بِأَمْوَالِكُم
مُّحْصِنِينَ غَيْرَ مُسَافِحِينَ ۚ فَمَا اسْتَمْتَعْتُم بِهِ مِنْهُنَّ
فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً ۚ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا
تَرَاضَيْتُم بِهِ مِن بَعْدِ الْفَرِيضَةِ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا
حَكِيمًا আর
(যুদ্ধের মাধ্যমে) তোমাদের অধিকারভুক্ত হয়েছে এমন সব মেয়ে ছাড়া বাকি সমস্ত সধবাই
তোমাদের জন্য হারাম। এ
হচ্ছে আল্লাহর আইন। এ আইন
মেনে চলা তোমাদের জন্য অপরিহার্য গণ্য করা হয়েছে। এদের ছাড়া বাদ বাকি সমস্ত মহিলাকে অর্থ-সম্পদের মাধ্যমে লাভ করা তোমাদের জন্য
হালাল গণ্য করা হয়েছে। তবে শর্ত হচ্ছে এই যে, তাদেরকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে হবে, অবাধ যৌন
লালসা তৃপ্ত করতে পারবে না। তারপর
যে দাম্পত্য জীবনের স্বাদ তোমরা তাদের মাধ্যমে গ্রহণ করো, তার বদলে তাদের মোহরানা ফরয হিসেবে আদায় করো। তবে মোহরানার চুক্তি হয়ে যাবার পর পারস্পরিক রেজামন্দির মাধ্যমে তোমাদের
মধ্যে যদি কোন সমঝোতা হয়ে যায় তাহলে তাতে কোন ক্ষতি নেই। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও জ্ঞানী।
§ যুদ্ধবন্দিনী মহিলাদের ব্যাপারে বিধানঃ
§ যে সব মহিলাদের স্বামী দারুল হারবে রয়ে গেছে,
o
তারা
হারাম নয়। কারণ দারুল হারাম থেকে দারুল ইসলামে আসার পর
বিয়ে ভেঙে যায়।
o
যুদ্ধবন্দি
মেয়েদের বিয়েও করা যায়, বিয়ে ছাড়া তাদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন
করা যায়।
§ যে সব মহিলা স্বামী স্ত্রী একসাথে যুদ্ধবন্দি হয়েছে, তাদের ব্যাপারে বিধানঃ
o
আবু
হানিফার মতে তাদের বিয়ে অপরিবর্তিত থাকবে।
o
ইমাম
মালেক ও ইমাম শাফেয়ীর মতে বিয়ে অটুট থাকবেনা।
§ যুদ্ধ বন্দিনীদের দাসীদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন ব্যাপারে
বক্তব্য সমূহঃ
একঃ
যুদ্ধ বন্দিনী করার সাথে সাথে যে
কোন সৈনিক যে কারো সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অধিকারী হবেনা। বরং প্রথমে তারা সরকারের জিম্মায় যাবে। সরকার
তার নির্ধারিত ৪টি আচরণ তথাঃ
1. বিনা
শর্তে মুক্তি দেয়া।
2. মুক্তিপণ
গ্রহণ করে মুক্তি দেয়া।
3. বন্দী
বিনিময় করে মুক্তি দেয়া।
4. সৈনদের
মাঝে বন্টন করে দেয়া-করবে। যদি
যদি কাউকে নির্দিষ্ট যুদ্ধ বন্দিনী প্রদান করে, তাহলে সৈনিক
কেবল সেই বন্দিনীর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে।
দুইঃ
সরকার থেকে প্রাপ্ত দাসীর সাথে
কেবল তখনই যৌণ সম্পর্ক করা যাবে, যখন তার মাসিক পিরিওড শেষ
হবে এবং নিশ্চত হওয়া যাবে যে সে গর্ভবতী নয়। যদি গর্ভবতী হয়, তাহলে সন্তান ভূমিষ্ট হওয়া পর্যন্ত সম্পর্ক
স্থাপন অবৈধ।
তিনঃ
যুদ্ধ বন্দিনী হওয়ার জন্য আহলে
কিতাব হওয়া শর্ত নয়।
চারঃ
যুদ্ধ বন্দিনীর সাথে যৌন
সম্পর্কের কারণে যে সন্তান হয়, তা মালিকের সন্তান বলে গন্য
হবে এবং ঐ সন্তানের আইনগত অধিকার ঔরসজাত সন্তানের অধিকারের মতো হবে। ঐ ধরণের বাদী আর বিক্রি করা যাবেনা এবং তার মালিকের
মৃত্যুর পর সে আপনা-আপনি আযাদ হয়ে যাবে।
পাঁচঃ
যুদ্ধ বন্দিনী মালিক ছাড়া অন্য
কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে তার থেকে মালিক সকল খেদমত নেয়ার অধিকার
রাখবে-কেবল যৌনাধিকার ছাড়া।
ছয়ঃ
শরীয়াত স্ত্রীদের সংখ্যার মতো
দাসীদের সংখ্যা নির্ধারণ করেনি।
সাতঃ
অন্য মালিকানাধীন বস্তু যেমন বিক্রি
বা হস্তান্তর করা যায়, যুদ্ধ বন্দিনীকেও বিক্রি বা হস্তান্তর করা
যায়।
আটঃ
বিয়ে যেমন আইন সংগত কাজ, সরকার কর্তৃক দাসীদের উপর কারো মালিকানার অধিকার তেমন ধরণের আইন সংগত কাজ।
নয়ঃ
যুদ্ধবন্দীনি কাউকে একজনের
মালিকানায় দেয়ার পর তাকে ফিরিয়ে নেয়ার অধিকার সরকার রাখে না। যেমন কোন মেয়ের অভিভাবক কোন মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর তাকে আবার ফিরিয়ে নেয়ার
অধিকার রাখেনা।
দশঃ
সাময়িক সময়ের জন্য
যুদ্ধবন্দিনীদেরকে সৈনিকদের মধ্যে বিনোদনের জন্য ভাগ করে দেয়া সম্পূর্ণ অবৈধ কাজ। এটা যেনার সমতুল্য।
﴿وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ۚ فَإِن طِبْنَ
لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا﴾
৪) আর আনন্দের সাথে (ফরয মনে
করে) স্ত্রীদের মোহরানা আদায় করে দাও। তবে যদি তারা নিজেরাই নিজেদের ইচ্ছায় মোহরানার কিছু অংশ
মাফ করে দেয়, তাহলে তোমরা সানন্দে তা খেতে
পারো।
§ মোহরানা মাফ করার ব্যাপারে ফতোয়াঃ হযরত উমর রা. ও কাযী
শুরাইহ-এর ফতোয়া হচ্ছে, যদি কোন স্ত্রী স্বামীকে মোহরানা মাফ করে
দেয় এবং তা আবার দাবী করে, তাহলে তা আদায় করার জন্য স্বামীকে
বাধ্য করা হবে।
﴿وَلَا تُؤْتُوا السُّفَهَاءَ أَمْوَالَكُمُ الَّتِي جَعَلَ
اللَّهُ لَكُمْ قِيَامًا وَارْزُقُوهُمْ فِيهَا وَاكْسُوهُمْ وَقُولُوا لَهُمْ
قَوْلًا مَّعْرُوفًا﴾
৫) আর তোমরা যে ধন –সম্পদেকে
আল্লাহ তোমাদের জীবন ধারণের মাধ্যমে পরিণত করেছেন, তা নির্বোধদের হাতে তুলে দিয়ো না। তবে তাদের খাওয়া পরার ব্যবস্থা করো এবং
সদুপদেশ দাও।
§ এখানে মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি পরিপূর্ণ বিধান উপস্থাপন
করা হয়েছে। আর তাহলোঃ
1. অর্থ
জীবন যাপনের একটি মাধ্যম, যা অজ্ঞ ও নির্বোধদের হাতে তুলে দেয়া
যাবেনা। অর্থের ত্রুটিপূর্ণ ব্যবহার করা যাবেনা-যাতে
সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক অবস্থা ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
2. ইসলামে
ব্যক্তি মালিকানা স্বীকৃত, কিন্তু তা সীমাহীন নয়। বিধায়, অর্থ সঠিক ব্যবহার না করে
এবং সামাজিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয় এমন কাজে ব্যবহার করে তাহলে তার সে অধিকার হরণ করা
যাবে।
3. ইসলাম
মানুষের জীবন যাপনের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করে। কিন্তু মালিকানার অবাধ ব্যবহারে উপর বিধি নিষেধ আরোপ করে। যাতে নৈতিক, তামাদ্দুনিক ও
সামগ্রিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
4. সম্পদের
সুষ্ঠু ব্যবহার যেমন ব্যক্তির দায়িত্ব, একই ভাবে
ব্যবহার নিশ্চিত করা ইসলামী রাষ্ট্রেরও দায়িত্বের অন্তর্ভূক্ত। বিধায় যারা সম্পদ সঠিক ব্যবহারের যোগ্যতা রাখেনা বা অসৎ
পথে ব্যবহার করে, তাদের সম্পদ অভিভাবক বা রাষ্ট্র নিজেদের
নিয়ন্ত্রনে নিয়ে মালিককে তার জীবন নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর ব্যবস্থা
করবে।
﴿وَابْتَلُوا الْيَتَامَىٰ حَتَّىٰ إِذَا بَلَغُوا النِّكَاحَ
فَإِنْ آنَسْتُم مِّنْهُمْ رُشْدًا فَادْفَعُوا إِلَيْهِمْ أَمْوَالَهُمْ ۖ وَلَا تَأْكُلُوهَا
إِسْرَافًا وَبِدَارًا أَن يَكْبَرُوا ۚ وَمَن كَانَ غَنِيًّا فَلْيَسْتَعْفِفْ ۖ
وَمَن كَانَ فَقِيرًا فَلْيَأْكُلْ بِالْمَعْرُوفِ ۚ فَإِذَا دَفَعْتُمْ
إِلَيْهِمْ أَمْوَالَهُمْ فَأَشْهِدُوا عَلَيْهِمْ ۚ وَكَفَىٰ بِاللَّهِ حَسِيبًا﴾
৬) আর এতিমদের পরীক্ষা করতে
থাকো, যতদিন না তারা বিবাহযোগ্য বয়সে পৌঁছে যায়। তারপর যদি তোমরা
তাদের মধ্যে যোগ্যতার সন্ধান পাও, তাহলে তাদের সম্পদ তাদের
হাতে সোর্পদ করে দাও। তারা বড় হয়ে নিজেদের অধিকার দাবী করবে, এ ভয়ে কখনো ইনসাফের সীমানা অতিক্রম করে তাদের সম্পদ তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলো না। এতিমদের যে অভিভাবক সম্পদশালী
হবে সে যেন পরহেজগারী অবলম্বন করে ( অর্থাৎ অর্থ গ্রহণ না করে) আর যে গরীব হবে সে
যেন প্রচলিত পদ্ধতিতে খায়। তারপর তাদের সম্পদ যখন তাদের হাতে সোপর্দ করতে যাবে
তখন তাতে লোকদেরকে সাক্ষী বানাও। আর হিসেব নেবার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।
§ وَابْتَلُوا الْيَتَامَىٰ حَتَّىٰ إِذَا
بَلَغُوا النِّكَاحَ “আর এতিমদের পরীক্ষা
করতে থাকো, যতদিন না তারা বিবাহযোগ্য বয়সে পৌঁছে যায়।” মানে তাদের জ্ঞান বুদ্ধি বিকশিত হওয়ার
দিকে নজর দিতে হবে। নজর
দিতে হবে যে তাদের সম্পদ তারা নিজেরা ব্যবহার করার যোগ্যতা সৃষ্টি হয়েছে কিনা।
§ فَإِنْ آنَسْتُم مِّنْهُمْ رُشْدًا فَادْفَعُوا
إِلَيْهِمْ أَمْوَالَهُمْ “তারপর যদি তোমরা তাদের
মধ্যে যোগ্যতার সন্ধান পাও, তাহলে তাদের সম্পদ তাদের হাতে
সোর্পদ করে দাও।” মানে ধন সম্পদ এতিমদের
হাতে তুলে দেযার ২টি শর্তঃ
1. সাবালকত্ব।
2. যোগ্যতা।
§ وَمَن كَانَ غَنِيًّا فَلْيَسْتَعْفِفْ ۖ وَمَن كَانَ فَقِيرًا فَلْيَأْكُلْ
بِالْمَعْرُوفِ “এতিমদের যে
অভিভাবক সম্পদশালী হবে সে যেন পরহেজগারী অবলম্বন করে ( অর্থাৎ অর্থ গ্রহণ না করে)
আর যে গরীব হবে সে যেন প্রচলিত পদ্ধতিতে খায়” মানেঃ এতিমের সম্পদ দেখা শোনা করার
জন্য রিজনেভল পারিশ্রমিক নিতে পারবে।
পারিশ্রমিক কতটুকু নিচ্ছে, তা গোপন করবেনা-প্রকাশ্যে নির্ধারণ করবে
এবং হিসাব রাখবে।
﴿لِّلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِّمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ
وَالْأَقْرَبُونَ وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِّمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ
مِمَّا قَلَّ مِنْهُ أَوْ كَثُرَ ۚ نَصِيبًا مَّفْرُوضًا﴾
৭) মা–বাপ ও আত্মীয়-স্বজনরা যে
ধন-সম্পত্তি রেখে গেছে তাতে পুরুষদের অংশ রয়েছে। আর মেয়েদের অংশ রয়েছে সেই ধন-সম্পত্তিতে, যা মা-বাপ ও আত্মীয়-স্বজনরা রেখে গেছে, তা
সামান্য হোক বা বেশী এবং এ অংশ (আল্লাহর পক্ষ
থেকে ) নির্ধারিত।
§ এখানে প্রথম কথা হলোঃ এই বন্টন আল্লাহ নির্ধারিত। বিধায় এখানে কোন কথা বলা, গবেষনা
করা, ইনসাফ কায়েমের চেষ্টা হিসাবে এদিক সেদিক করার কোন সুযোগ
নাই।
§ এখানে সুস্পষ্ট ভাবে ০৫টি আইনগত নির্দেশ প্রদান করা হচ্ছেঃ
1. মীরাস
কেবল পুরুষের নয়, বরং মেয়েদেরও।
2. মীরাস
কমবেশী পরিমাণের ্আলোকে হবেনা। যতই কম হোক না কেন, তা বন্টন করতে হবে। যদি তা ১ গজ কাপড়ও হয়, আর তার
উত্তরাধিকারী ১০জনও হয়।
3. মীরাসের
বিধান স্থাবর-অস্থাবর, কৃষি-শিল্প যে কোন ধরণের সম্পত্তি হোক,
সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
4. মীরাসে
অধিকার তখন হয়, যখন ব্যক্তি মারা যায় আর এই অবস্থায় তার
সম্পত্তি অবশিষ্ট থাকে। জীবিত
ব্যক্তির সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারীদের হক নাই।
5. মীরাস
আইনে নিকটতম আত্মীয় থাকলে দূরবর্তী আত্মীয় মীরাস লাভ করে না।
﴿وَإِذَا حَضَرَ الْقِسْمَةَ أُولُو الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ
وَالْمَسَاكِينُ فَارْزُقُوهُم مِّنْهُ وَقُولُوا لَهُمْ قَوْلًا مَّعْرُوفًا﴾
৮) ধন-সম্পত্তি ভাগ-বাঁটোয়ারার
সময় আত্মীয় –স্বজন, এতিম ও মিসকিনরা এলে
তাদেরকেও ঐ সম্পদ থেকে কিছু দিয়ে দাও এবং তাদের সাথে ভালোভাবে কথা বলো।
§ এখানে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশদের প্রতি নির্দেশ হলোঃ মীরাস
বন্টনের সময় এমন কিছু আত্মীয় স্বজন উপস্থিত হয়, যাদের পরিচয় হলো
যারা এখন মৃত ব্যক্তির নিকটাত্মীয় হওয়ার কারণে মীরাসে অংশীদার হচ্ছেন, তারা যদি না থাকতেন, তাহলে সেই আত্মীয়রা অংশীদার হয়ে
যেতো। এদের মাঝে নিকট দূরের আত্মীয়, নিজ পরিবারের গরীব মিসকিন, এতিম হতে পারে। তাদের সকলের প্রতি হৃদয়বান ব্যবহার করতে হবে। বড় মনের পরিচয় দিয়ে তাদেরকে কিছু দিতে হবে।
﴿وَلْيَخْشَ الَّذِينَ لَوْ تَرَكُوا مِنْ خَلْفِهِمْ ذُرِّيَّةً
ضِعَافًا خَافُوا عَلَيْهِمْ فَلْيَتَّقُوا اللَّهَ وَلْيَقُولُوا قَوْلًا
سَدِيدًا﴾
৯) লোকদের একথা মনে করে ভয় করা
উচিত, যদি তারা অসহায় সন্তান পিছনে ছেড়ে রেখে
যেতো, তাহলে মরার সময় নিজেদের সন্তানদের ব্যাপারে তাদের কতই
না আশংকা হতো! কাজেই তাদের আল্লাহকে ভয় করা ও ন্যায়সংগত কথা বলা উচিত।
﴿إِنَّ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ أَمْوَالَ الْيَتَامَىٰ ظُلْمًا
إِنَّمَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ نَارًا ۖ وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيرًا﴾
১০) যারা এতিমদের ধন-সম্পদ
অন্যায়ভাবে খায়, তারা আগুন দিয়ে নিজেদের পেট
পূর্ণ করে এবং তাদেরকে অবশ্যি জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুনে ফেলে দেয়া হবে।
§ এই আয়াতের শানে নুযুল হচ্ছেঃ ওহুদের যুদ্ধে আল্লাহর রাসূলের
সাহাবী হযরত সা’দ ইবনে রুবী রা. শাহাদাত বরণ করেন। তার দূ’টি শিশু সন্তান ছিল। একদা
হযরত সা’দ রা. এর স্ত্রী তার দূ’টি শিশু সন্তান সহ রাসূল সা. এর দরবারে হাজির হলেন। তিনি বললেন, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! এরা সাদের মেয়ে। ওদের
আব্বা ওহুদে শাহাদাত বরণ করেন। আর
ওদের চাচা সা’দের সকল সম্পত্তি নিজের আয়ত্বে নিয়ে গেছে-একটি দানও রাখেননি। এমতাবস্থায় কে এই সহায় সম্বলহীন মেয়েদের বিয়ে করবে। এই অবস্থার প্রেক্ষিতে এই আয়াত নাযিল হয়।
শিক্ষাঃ
0 Comments