দারসুল কুরআন – সূরা আল হুজুরাত – আয়াত ০১-১০ – মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম

 

তেলাওয়াত ও সরল অনুবাদঃ

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

১. হে ঐ সব লোক, যারা ঈমান এনেছো। তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূল থেকে এগিয়ে যেও না। আর আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ সব কিছু শুনেন ও জানেন।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَرْفَعُوا أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ وَلَا تَجْهَرُوا لَهُ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ أَن تَحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ وَأَنتُمْ لَا تَشْعُرُونَ

২. হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের আওয়াজ রাসূলের আওয়াজের চেয়ে উচু করোনা এবং উচ্চস্বরে নবীর সাথে কথা বলোনা যে রূপ তোমরা নিজেরা পরস্পর বলে থাকো। এমন যেন না হয় যে; তোমাদের অজান্তেই তোমাদের সব কাজকর্ম ধ্বংস হয়ে যায়।

إِنَّ الَّذِينَ يَغُضُّونَ أَصْوَاتَهُمْ عِندَ رَسُولِ اللَّهِ أُولَٰئِكَ الَّذِينَ امْتَحَنَ اللَّهُ قُلُوبَهُمْ لِلتَّقْوَىٰ ۚ لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ عَظِيمٌ

৩. যারা আল্লাহর রাসূলের সাথে কথা বলার সময় নিজেদের আওয়াজ নিচু রাখে, তারা আসলে ঐসব লোক, আল্লাহ যাদের অন্তর তাকওয়ার জন্য যাচাই করে নিয়েছেন। তাদের জন্য রয়েছে মাগফিরাত ও মহান বদলা।

إِنَّ الَّذِينَ يُنَادُونَكَ مِن وَرَاءِ الْحُجُرَاتِ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ

৪. (হে রাসূল) যারা আপনাকে হুজরার বাহির থেকে ডাকাডাকি করে তাদের বেশীর ভাগ লোকেরই কান্ডজ্ঞান নেই।

وَلَوْ أَنَّهُمْ صَبَرُوا حَتَّىٰ تَخْرُجَ إِلَيْهِمْ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُمْ ۚ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

৫. যদি আপনার বের হওয়া পর্যন্ত তারা সবর করে থাকতো, তাহলে সেটা তাদেরই জন্য ভাল হতো। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও মেহেরবান।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا أَن تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَىٰ مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ

৬. হে ঐসব লোক যারা ঈমান এনেছো! যদি কোন ফাসেক লোক তোমাদের কাছে কোন খবর নিয়ে আসে, তাহলে এর সত্যতা যাচাই করে নিও। এমন যেন না হয় যে, তোমরা না যেনে কোন কাওমের ক্ষতি করে বসো এবং তারপর যা করেছো, সে জন্য আফসোস করতে থাকো।

﴿وَاعْلَمُوا أَنَّ فِيكُمْ رَسُولَ اللَّهِ لَوْ يُطِيعُكُمْ فِي كَثِيرٍ مِنَ الْأَمْرِ لَعَنِتُّمْ وَلَكِنَّ اللَّهَ حَبَّبَ إِلَيْكُمُ الْإِيمَانَ وَزَيَّنَهُ فِي قُلُوبِكُمْ وَكَرَّهَ إِلَيْكُمُ الْكُفْرَ وَالْفُسُوقَ وَالْعِصْيَانَ أُولَئِكَ هُمُ الرَّاشِدُونَ﴾

৭. ভাল করে যেনে নাও, আল্লাহর রাসূল তোমাদের মাঝে বর্তমান। তিনি যদি বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই তোমাদের কথা মেনে নেন তাহলে তোমরা নিজেরাই অনেক সমস্যার মধ্যে পড়ে যাবে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদের মধ্যে ঈমানের প্রতি ভালবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছেন এবং তা তোমাদের কাছে পছন্দনীয় করে দিয়েছেন। আর কুফরী, পাপাচার ও অবাধ্যতাকে তোমাদের কাছে ঘৃণিত করে দিয়েছেন।

﴿فَضْلًا مِنَ اللَّهِ وَنِعْمَةً وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ﴾

৮. আল্লাহ দয়া ও মেহেরবাণীতে এসব লোকই সৎপথের অনুগামী। আল্লাহ জ্ঞানী ও কুশলী।

﴿وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا فَإِنْ بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَى فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّى تَفِيءَ إِلَى أَمْرِ اللَّهِ فَإِنْ فَاءَتْ فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَأَقْسِطُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ﴾

৯. ঈমানদারদের মধ্যকার দু’টি দল যদি পরস্পর লড়াইয়ে লিপ্ত হয়, তাহলে তাদের মধ্যে মিমাংসা করে দাও। তারপরও যদি দু’টি দলের কোন একটি অপরটির বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করে, তবে যে দল বাড়াবাড়ি করে তার বিরুদ্ধে লড়াই করো। যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। এরপর যদি তারা ফিরে আসে তাহলে তাদের মাঝে ন্যায় বিচারের সাথে মিমাংসা করিয়ে দাও এবং ইনসাফ করো। আল্লাহ ইনসাফকারীদের পছন্দ করেন।

﴿إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ﴾

১০. মু’মিনরা তো পরস্পর ভাই ভাই। অতএব তোমাদের ভাইদের মধ্যকার সম্পর্ক ঠিক করে দাও। আল্লাহকে ভয় করো, আশা করা যায় তোমাদের প্রতি মেহেরবানী করা হবে।

নামকরণঃ

§  সূরাটি একটি মাদানী সূরা, কুরআনের ৪৯ নম্বর সূরা। আয়াত সংখ্যাঃ ১৮

§  ৪র্থ আয়াতের ﴿إِنَّ الَّذِينَ يُنَادُونَكَ مِن وَرَاءِ الْحُجُرَاتِ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ﴾ –এর ﴿ الْحُجُرَاتِ ﴾ বাক্য থেকে গৃহীত।

§  হুজরাত শব্দটি হুজরা শব্দের বহু বচন। যার অর্থঃ কক্ষ, কামরা, রুম।

§  আমাদের এলাকায় মসজিদে ইমাম সাহেব যেখানে থাকেন, তাকে হুজরাহ বলা হয়।

§  এই সূরাকে বলা হয়ঃ সামাজিক রীতি নীতির সূরা। সামাজিক ভারসাম্য রক্ষায় করণীয় আমল সমূহের ব্যাপারে এই সূরায় দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

নাযিল হওয়ার সময়কালঃ

§  সূরাটি বিভিন্ন পরিবেশ ও বিভিন্ন সময়ে নাযিল হওয়া একটি সূরা। এতে যেসব হুকুম আহকাম এবং নির্দেশনা রয়েছে, তা বিষয়বস্তুর সামঞ্জস্যতার আলোকে একসাথে করা হয়েছে।

§  এই সূরা কখন নাযিল হয়েছে, তার সুনির্দিষ্ট বর্ণনা না। তবে বিভিন্ন বর্ণনা, সূরার বিষয় বস্তু ইত্যাদি থেকে  বুঝা যায় যে, সূরাটি মাদানী যুগের শেষ সময়ে নাযিল হয়েছে। যেমনঃ

o  আয়াত নম্বর-০৪: এই আয়াতটি বনী তামীম গোত্রের আচরণ সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। মুফাস্সিরীন বলছেন, বনী তামীম একটি প্রতিনিধি দল মদীনায় এসে নবী সা. এর স্ত্রীগনের হুজরার বাহির থেকে ডাকাডাকি শুরু করে দেয়। আর সীরাতের কিতাব সমূহ বলছে, এই প্রতিনিধিদল মদীনায় আসে ৯ম হিজরীতে।

o  আয়াত নম্বর-০৬: যা বনীল মুসতালিক গোত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট একটা ঘটনার সাথে সম্পর্কিত। যেখানে রাসূল সা. ওয়ালী ইবনে উকবা রা.কে যাকাত কালেকশনের জন্য প্রেরণ করেন। আর ওয়ালীদ ইসলাম কবুল করেন মক্কা বিজয়ের সময়ে।

ভূমিকাতে কিছু জরুরী কথাঃ

§  আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদেরকে তৈরী করে জান্নাত নামক একটা জায়গায় বসবাসের জন্য রেখেছিলেন। ওটাই আমাদের মূল ঠিকানা।

§  আমরা দুনিয়ায় এসেছি আল্লাহর পক্ষ থেকে তার প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করার জন্য। দুনিয়া আমাদের মূল ঠিকানা নয়-জান্নাত মূল ঠিকানা।

§  দুনিয়ায় আমাদের কাজ হলো, দুনিয়ার সব কিছুকে আল্লাহর রঙে রঙিন করা। সহজ কথায়ঃ আল্লাহ যে ভাবে বলেছেন, সেই ভাবে পরিচালনা করার দায়িত্ব পালনের জন্য আমরা দুনিয়ায় এসেছি।

§  আমরা দুনিয়ায় এ দায়িত্ব পালন করার সুবিধার জন্য আল্লাহ আমাদেরকে সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করেছেন।

§  আল্লাহ দুনিয়ার সব কিছু আমাদের অধীন করে দিয়েছেন। দুনিয়ার সব কিছু আমাদের সেবা করার জন্য তৈরী করেছেন।

§  দুনিয়ার সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করার জন্য আল্লাহ একটি নিয়ম দিয়েছেন, সেই নিয়মে ভোগ করতে হবে-এই নিয়মের নাম ইসলাম।

§  যারা আল্লাহর দেয়া নিয়মের দুনিয়ার সব কিছু ভোগ করবে, তাদের জন্য পুরস্কার হিসাবে আখেরাতে জান্নাত থাকবে।

§  আল্লাহর প্রতিনিধি বা খলিফার কাজ হলোঃ

১. নিজে আল্লাহর নিয়মে দুনিয়ার সব কিছু ভোগ করা।

২. সকল মানুষকে আল্লাহর নিয়েমে ভোগ করার জন্য নসিহত করা, নসিহতে না হলে জোর করে তাদেরকে আল্লাহর নিয়ম মানানো।

৩. দুনিয়ার পরিচালনার সকল নিয়ম আল্লাহর বলে দেয়া নিয়মে চালানো।

§  এই ৩টা কাজকে বলা হয় “নিজেকে গড়া এবং সমাজকে গড়া”। এই কাজ করতে গেলে আপনা আপনি হয়না। কারণ শয়তান নামক দুশমন তার মুরিদানের মাধ্যমে এই কাজে বাঁধার তৈরী করে। সেই বাঁধা অতিক্রম করার জন্য প্রয়োজন শক্তি।

§  শয়তানের মুরিদানদের বাঁধা অতিক্রম করার জন্য উপায় বাতলে দেবার জন্য যুগে যুগে আল্লাহ মানব জাতির জন্য শিক্ষক প্রেরণ করেছেন। পৃথিবীতে আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা সর্বশেষ শিক্ষকের নামঃ মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ।

§  মুহাম্মদ সা. এর শিক্ষা হচ্ছেঃ শয়তানের মুরিদানদের মোকাবেলা করতে হলে প্রয়োজনঃ সংগঠন।

§  সংগঠন সম্পর্কে তিনি বলেছেনঃ

عن ابن عمر ، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم ، قال : " من خرج من الجماعة قيد شبر فقد خلع ربقة الإسلام من عنقه حتى يراجعه

ومن مات وليس عليه إمام جماعة فإن موتته موتة جاهلية

§  তাই তার সহচর যারা ছিলেন, তারা বুঝেছেনঃ

 لا إسلام إلا بجماعة ولا جماعة إلا بإمارة ولا إمارة إلا بطاعة

§  শয়তানের মুরিদানদের মোকাবেলা করার জন্য আমরা একটি সংগঠনের অধীনে জমা হয়েছি। আমরা প্রত্যাশা করি, আমরা এক সাথে থাকলে শয়তান আমাদের আক্রমণ করতে পারবেনা। এই সংগঠন থেকে যদি আমরা এক বিঘত পরিমাণ দূরে সরে যাই, তাহলে আমাদের মৃত্যু হবে জাহেলিয়াতের মৃত্যু। তাই আমাদেরকে আমরণ এই সংগঠনে থাকতে হবে।

§  সংগঠনে নানা ধরণের ভাই আছেন। যেমনঃ

o  শিক্ষিত, অশিক্ষিত, কম শিক্ষিত, বেশী শিক্ষিত।

o  লেবার, সুপারভাইজার, মুদির।

o  মোল্লা-মাষ্টার, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী-খরিদদার।

o  সিলেটী, চিটাগাংগী, নোয়াখালী, রাজশাহী।

o  ধনী-গরিব, উচ্চ বংশ-নিম্নবংশ।

o  শহরের মানুষ, অঁজো পাড়া গায়ের মানুষ, পাহাড়ী জঙ্গলের মানুষ, হাওর ও চরের মানুষ।

§  এই নানামুখী মানুষের সমাবেশে বিরাট সংখ্যক ভাই রয়েছেন, যারা আপনাদেরকে তাদের দায়িত্বশীল মনে করেন।

§  সংগঠনের সাধারণ সদস্যরা মনে করেন যে, তারা নিজেরা অযোগ্য-আপনি যোগ্য, তাদের পক্ষ থেকে আপনি সংগঠনের এই দায়িত্ব ভাল পালন করতে পারবেন। তাদের আচার ব্যবহার ভাল নাই, তাদের লেনদেন ভাল নেই, তাদের পড়াশোনা ভাল নয়-আপনি এই সব ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। তাই তারা আপনাকে তাদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন।

§  সংগঠনের দায়িত্বশীলরা আপনাকে কাছে থেকে দেখেনি। দূর থেকে দেখে চকচক করেছে। আপনার থেকে প্রকাশিত চকচকের উপর ভরসা করে তারা মনে করেছেন যে, আপনার দিলটাও বাহিরের মতো। আপনাকে দায়িত্বশীল হিসাবে মনোনয়ন দিয়েছেন।

§  সেই সব প্রত্যাশার জন্য, আকাংখার আশ্রয়স্থলদের নিয়ে আজকের আয়োজন। আপনাদেরকে সেই প্রত্যাশা পুরণ করতে হবে।

§  সেই প্রত্যাশা পুরণের জন্য সাংগঠনিক জীবনে কিছু লক্ষণীয় বিষয় নিয়ে আজকের দারসুল কুরআন।

সম্পূর্ণ সূরার আলোচ্য বিষয়ঃ

§  এ সুরার বিষয়বস্তু হলো মুসলমানদেরকে এমন আদব-কায়দা, শিষ্টাচার ও আচরন শিক্ষা দেয়া যা তাদের ঈমানসুলভ স্বভাব-চরিত্র ও ভাবমূর্তির উপযুক্ত ও মানানসই।

§  প্রথম পাঁচ আয়াতে আল্লাহ ও তার রাসূলের সাথে আদব কায়দা শিক্ষা দেয়া হয়েছে।

§  এরপর নির্দেশ দেয়া হয়েছে প্রতিটি খবর বিশ্বাস করা এবং সে অনুযায়ী কর্মকান্ড করে বসা ঠিক নয়।

§  মুসলমানদের দুটি দল যদি কোন সময় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে সে ক্ষেত্রে অন্য মুসলমানদের কর্মনীতি।

§  মুসলমানদেরকে কিছু খারাপ বিষয় থেকে আত্বরক্ষার নির্দেশ দেয়া হয়েছে-

o  একে অপরকে ঠাট্রা-বিদ্রুপ করা

o  বদনাম উপহাস করা

o  উপনামে ডাকা

o  গোপন বিষয় খোজাখুজি

§  সবশেষে বলা হয়েছে- ঈমানের মৌখিক দাবী প্রকৃত জিনিস নয় বরং সরল মনে আল্লাহ ও রাসূলকে মানা, কার্যত অনুগত থাকা এবং কুরবানী।

আলোচ্য বিষয়ঃ

§  মুসলমানদেরকে তাদের ঈমানদার সুলভ স্বভাব চরিত্র ও ভাবমূর্তির উপযুক্ত ও মানানসই আদব-কায়দা, শিষ্টাচার ও আচরণ শিক্ষা দেয়া। যেমনঃ

o  আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ব্যাপারে আদব-কায়দা ও শিষ্টাচার বলা হয়েছে প্রথম ৫ আয়াতে।

o  ইনফরমেশন পাওয়ার পর তা সাথে সাথে বিশ্বাস করে এ্যাকশনে যাওয়া নয়, বরং যাচাই করে নেয়ার তাগিদ।

o  মুসলমানদের মাঝে যদি পারস্পরিক সংঘাতে কর্মনীতি কি?

o  মুসলমানদের যে সব জিনিস থেকে আত্মরক্ষা করতে হবে। যেমনঃ

- একে অপরকে ঠাট্রা বিদ্রূপ করা।

- বদনাম ও উপহাস করা।

- খারাপ নামে আখ্যায়িত করা।

- খারাপ ধারণা পোষণ করা।

- অন্যে গোপনীয় বিষয় খোঁজাখুঁজি ও অনুসন্ধান করা।

- অসাক্ষাতে মানুষের বদনাম করা।

o  গোত্র ও বংশীয় বৈষম্যে আঘাত দিয়ে ঘোষনা করা হয়েছে যে, ‍“সমস্ত মানুষ এই মূল উৎস থেকে সৃষ্টি হয়েছে। তাদেকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভিক্ত করা হয়েছে পারস্পরিক পরিচয়ের জন্য, গর্ব ও অহংকার প্রকাশের জন্য নয় এবং একজন মানুষের ওপর আরেকজন মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব লাভের জন্য আর কোন বৈধ ভিত্তি নেই।“

o  ঈমান মৌখিক দাবীতেই কেবল শেষ নয়, বরং সরল মনে আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে মানা, কার্যত অনুগত হয়ে থাকা এবং আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর পথে জান ও মাল কুরবানী করা।

ব্যাখ্যাঃ

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

১. হে ঐ সব লোক, যারা ঈমান এনেছো। তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূল থেকে এগিয়ে যেও না। আর আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ সব কিছু শুনেন ও জানেন।

·   لَا تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ - আল্লাহ ও তাঁর রসূলের চেয়ে অগ্রগামী হয়ো না। 

o  ঈমানের প্রথম ও মৌলিক দাবী হচ্ছেঃ যে আল্লাহকে নিজের মালিক হিসাবে মানে এবং রাসূল সা.কে জান্নাতের পথ প্রদর্শক হিসাবে গ্রহণ করে, তাহলে তাকে তার এই ঈমানের উপর সত্যবাদীতা প্রমাণ করতে হবে এই ভাবে যে,

ক. নিজ মতামত ও ধ্যান-ধারণাকে কখনো আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের সিদ্ধান্তের চেয়ে অগ্রাধিকার দেবে না।

খ. বিভিন্ন ব্যাপারে স্বাধীন মতামত পোষণ করতে পারবে না।

গ. সিদ্ধান্ত গ্রহণে সব সময় আগে দেখে নেবে যে, এই ব্যাপারে আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ কি।

o  لَا تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ -" আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অগ্রগামী হয়ো না।" মানেঃ

§  তার আগে আগে চলবে না।

§  পেছনে পেছনে চলো।

§  তাঁর আনুগত্য হয়ে থাকো।

§  নির্দেশ দাতা হয়োনা, আনুগত্যকারী হও।

o  সূরা আহযাবে  একই কথা বলা হয়েছে একটু নরম ভাবেঃ

وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ ۗ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِينًا

যখন আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোনো বিষয়ের ফায়সালা দিয়ে দেন তখ কোনো মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীর সেই ব্যাপারে নিজে ফায়সালা করার কোনো অধিকার নেই। আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নাফরমানী করে সে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত হয়। (আয়াতঃ ৩৬)

§  অর্থাৎ ঈমানদার নিজেদের ব্যাপারে কখনো আপনা থেকে অগ্রগামী হয়ে কোন বিষয় ফায়সালা করবেনা। বরং তার দেখা উচিত যে, সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে আল্লাহর কিতাব বা রাসূলের সুন্নাহতে কি নির্দেশনা রয়েছে।

§  এটি ইসলামী আইনের একটি মৌলিক দফা। অগ্রগামী না হওয়ার এই নির্দেশ কেবল ব্যক্তিগত ব্যাপারে নয়, বরং সামাজিক ব্যাপারেও প্রযোজ্য। প্রযোজ্য সরকার, বিচারালয় এবং পার্লামেন্ট সব কিছুতে।

§  মুয়াজ বিন জবল রা.কে যখন ইয়ামানের শাসনকর্তা নিয়োগ করে পাঠানো হয়ে, তখন নবী সা প্রশ্ন করেছিলেনঃ তুমি কিসের ভিত্তিতে ফায়সালা করবে? তিনি জবাব দিলেনঃ "আল্লাহর কিতাব অনুসারে"। নবী ( সা) বললেনঃ যদি কোন বিষয়ে কিতাবুল্লাহর মধ্যে হুকুম না পাওয়া যায় তাহলে কোন জিনিসের সাহায্য নেবে? তিনি জবাব দিলেন , আল্লাহর রসূলের সুন্নাতের সাহায্য নেব। তিনি বললেনঃ যদি সেখানেও কিছু না পাও? তিনি বললেনঃ তাহলে আমি নিজে ইজতিহাদ করবো। একথা শুনে নবী ( সা) তার বুকের ওপর হাত রেখে বললেনঃ সে আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করছি যিনি তাঁর রসূলের প্রতিনিধিকে এমন পন্থা অবলম্বন করার তাওফীক দান করেছেন যা তার রসূলের কাছে পছন্দনীয়।

§  মুসলিম বিচারক আর অমুসলিম বিচারকের মধ্যকার মূল পার্থক্য তুলে ধরে এমন বস্তু হচ্ছেঃ নিজের ইজতিহাদের চেয়ে আল্লাহর কিতাব ও রসূলের সুন্নাতকে অগ্রাধিকার দেয়া এবং হিদায়াত লাভের জন্য সর্বপ্রথম এ দুটি উৎসবের দিকে ফিরে যাওয়া

§  আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আল্লাহর কিতাবই যে সর্বপ্রথম উৎস এবং তারপরই যে রসূলের সুন্নাত- এ ব্যাপারে চূড়ান্ত ঐকমত্য প্রতিষ্ঠীত।

§  ব্যক্তির কিয়াস ও ইজতিহাদ তো দূরের কথা গোটা উম্মতের ইজমাও এ দুটি উৎসের পরিপন্থী কিংবা তা থেকে স্বাধীন হতে পারে না।

§  নবী (সাঃ) হযরত যায়েদের (রা) জন্য হযরত যয়নবের (রা) সাথে বিয়ের পয়গাম দিয়েছিলেন এবং হযরত যয়নব ও তার আত্মীয়রা তা নামঞ্জুর করেছিলেন। ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণনা করেছেন, নবী (সাঃ) যখন এ পয়গাম দেন তখন হযরত যয়নব (রা) বলেনঃأنا خير منه نسبا - لا أرضاه لنفسي وأنا أيم قريش ‍"আমি বংশীয় দিক দিয়ে তার থেকে উত্তম" "আমি অভিজাত কুরাইশ পরিবারের মেয়ে, তাই আমি তাকে নিজের জন্য পছন্দ করি না।" তাঁর ভাই আবদুল্লাহ ইবনে জাহশও (রা) এ ধরনের অসম্মতি প্রকাশ করেছিলেন এর কারণ ছিল এই যে, হযরত যায়েদ নবী (সাঃ) এর আযাদ করা গোলাম ছিলেন এবং হযরত যয়নব ছিলেন তাঁর ফুফু (উমাইমাহ বিনতে আবদুল মুত্তালিব)-এর কণ্যা। এত উঁচু ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে, তাও আবার যাতা পরিবার নয়, নবীর নিজের ফুফাত বোন এবং তার বিয়ের পয়গাম তিনি দিচ্ছিলেন নিজের আযাদ করা গোলামের সাথে একথা তাদের কাছে অত্যন্ত খারাপ লাগছিল। এ অবস্থায় এ আয়াত নাযিল হয়। এ আয়াত শুনতেই হযরত যয়নব ও তাঁর পরিবারের সবাই নির্দ্বিধায় আনুগত্যের শির নত করেন। এরপর নবী (সাঃ) তাদের বিয়ে পড়ান। তিনি নিজে হযরত যায়েদের (রা) পক্ষ থেকে ১০ দীনার ও ৬০ দিরহাম মোহরানা আদায় করেন, কনের কাপড় চোপড় দেন এবং কিছু খাবার দাবারের জিনিসপত্র পাঠান।

·  وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ - আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও জানেন।

§ অর্থাৎঃ

- এই নির্দেশনার ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো।

- যদি তোমরা কখন এই নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে মুক্ত ও স্বেচ্ছাচারী হওয়ার নীত গ্রহণ করো কিংবা নিজ মতামতকে অগ্রাধিকার দাও। তাহলে মনে রেখো, আল্লাহ দেখছেন-তিনি বুঝাপড়া করবেন।

§ একদিন রাসূল (সা.) আবু দারদা (রাঃ) কে আবু বকর (রাঃ) এর অগ্রে চলতে দেখে সর্তক করে বললেনঃ তুমি কি এমন ব্যক্তির অগ্রে চল যিনি ইহকাল ও পরকালে তোমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ? তিনি আরও বললেনঃ দুনিয়াতে এমন কোন ব্যক্তির উপর সুর্যোদয় ও সুর্যাস্ত হয়নি যে পয়গম্বরদের পর হযরত আবু বকর থেকে উত্তম ও শ্রেষ্ঠ। (রুহুল বয়ান)

·  আমরা কি করি?

§ আমরা দ্বীনের জন্য লম্বা লম্বা বক্তব্য দেই। কিন্তু আমল করার বিষয় যখন আসে, তখন ভূলে যাই।

§ আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে আল্লাহ ও তার রাসূলের নির্দেশনা দেখিনা।

§ আমরা খুব সামান্য সমস্যায় পড়ে রুখসতের তরিকা গ্রহণ করি।

§ আমরা চাকুরীর জন্য ওয়াস্তা খোঁজি, জরিমানা মাফ করানোর জন্য ওয়াসতা খোঁজি, জাওয়াজাতের কাজ করার জন্য খরচ যা লাগবে, তা সমস্যা নয় অফার দিয়ে ওয়াস্তা খোঁজি।

§ আমরা দ্বীন সম্পর্কে খুব কম জানি। অথচ আমাদের বক্তব্যে তা মনে হয়না।

§ আমরা বড় বড় মাওলানাদের সমালোচনা করি। মাত্র ২/১টি বাংলা বই পড়ে আমরা মহা পন্ডিত। মনে করিঃ যাহা জানার তা কেবল আমি জানি অথবা আমাদের সংগঠনের লোকে জানে।

§ আমরা ফেইসবুক চালাই মন্তব্য করি-আমার সংগঠনের দৃষ্টিভংগী দেখিনা।

§ সংগঠনের সমালোচনার জবাবে আমি সমালোচনা করি। কিন্তু আমার সংগঠনে একজন জবাব দেয়ার দায়িত্বে আছেন, তা মনে রাখিনা।

§ আমরা মুজিবুর রহমান মনজুর ১৪ গোষ্ঠী উদ্ধার করি। কিন্তু এ ব্যাপারে আমীরে জামায়াত বলেছেনঃ আমরা এই সম্পর্কে কোন কথা বলবো না। পক্ষেও না, বিপক্ষেও না।

§ আমরা চলার সময় দায়িত্বশীলকে সামনে দেই না।

§ দায়িত্বশীল রেখে আমরা মন্তব্য করা শুরু করি।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَرْفَعُوا أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ وَلَا تَجْهَرُوا لَهُ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ أَن تَحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ وَأَنتُمْ لَا تَشْعُرُونَ

২. হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের আওয়াজ রাসূলের আওয়াজের চেয়ে উচু করোনা এবং উচ্চস্বরে নবীর সাথে কথা বলোনা যেরুপ তোমরা নিজেরা পরস্পর বলে থাকো। এমন যেন না হয় যে; তোমাদের অজান্তেই তোমাদের সব কাজকর্ম ধ্বংস হয়ে যায়।

·  يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَرْفَعُوا أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ وَلَا تَجْهَرُوا لَهُ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ - হে মু’মিনগণ! নিজেদের আওয়ায রসূলের আওয়াযের চেয়ে উঁচু করো না এবং উচ্চস্বরে নবীর সাথে কথা বলো না, যেমন তোমরা নিজেরা পরস্পর বলে থাকো। 

§  এ বক্তব্যে মাধ্যমে রাসূল সা. এর মজলিসে উঠাবসা ও যাতায়াতের আদব-কায়দা ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া হয়েছে।

§ নবীর সাথে সাক্ষাত বা কথাবার্তার সময় নবীর স্টেটাস তথা তাঁর সম্মান ও মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রাখার জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে। যেমনঃ

ক. কারো কন্ঠ যেন নবীর কন্ঠ থেকে উচ্চ না হয়।

খ. তাকে সাধারণ মানুষের মতো এড্রেস করা যাবেনা।

§ নবী এখন নাই। কিন্তু তার মজলিস আছে। তাই যে সব মাহফিলে কুরআন বা হাদীসের আলোচনা হয়, তখন সেই সব মাহফিলেও এমনি আদব রক্ষা করতে হবে।

§ নবীর অবর্তমানে নবীর কাজ যারা করছেন, তাদের মধ্যে যারা নবীর আন্দোলনের দায়িত্বশীল, তাদের সাথে আচরণ কিভাবে হবে, এই আয়াতে সে হেদায়াত দেয়া হয়েছে।

§ সম্মাণিত লোকের সাথে কিভাবে কথা বলতে হবে, তার নসিহত এখানে পাওয়া যায়।

·  أَن تَحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ وَأَنتُمْ لَا تَشْعُرُونَ-এমন যেন না হয় যে, তোমাদের অজান্তেই তোমাদের সব কাজ-কর্ম ধ্বংস হয়ে যায়।

§ আয়াতের এই অংশে রাসূল সা. এর ব্যক্তিসত্তার মর্যাদা ও অবস্থান উপস্থাপিত হয়েছে।

§ দুনিয়াতে যত সম্মাণিত লোক হোক, তার সাথে বেয়াদবী যেমন কুফুরী হবে না, তেমনি শাস্তি যোগ্য হবেনা। কিন্তু রাসূলের সাথে বেয়াদবী শাস্তিযোগ্য অপরাধ ও যা কুফুরী এবং গোনাহ।

§ রাসূলের প্রতি সম্মাণ প্রদর্শনে অবহেলা, আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শনে অবহেলার পর্যায়ভূক্ত।

§ ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্বশীলদের প্রতি অসম্মাণও একই পর্যায়ে পড়ে।

إِنَّ الَّذِينَ يَغُضُّونَ أَصْوَاتَهُمْ عِندَ رَسُولِ اللَّهِ أُولَٰئِكَ الَّذِينَ امْتَحَنَ اللَّهُ قُلُوبَهُمْ لِلتَّقْوَىٰ ۚ لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ عَظِيمٌ

৩. যারা আল্লাহর রাসূলের সাথে কথা বলার সময় নিজেদের আওয়াজ নিচু রাখে, তারা আসলে ঐসব লোক, আল্লাহ যাদের অন্তর তাকওয়ার জন্য যাচাই করে নিয়েছেন। তাদের জন্য রয়েছে মাগফিরাত ও মহান বদলা।

·  إِنَّ الَّذِينَ يَغُضُّونَ أَصْوَاتَهُمْ عِندَ رَسُولِ اللَّهِ أُولَٰئِكَ الَّذِينَ امْتَحَنَ اللَّهُ قُلُوبَهُمْ لِلتَّقْوَىٰ  যারা আল্লাহর রসূলের সামনে তাদের কণ্ঠ নিচু রাখে তারাই সেসব লোক, আল্লাহ যাদের অন্তরকে তাকওয়ার জন্য বাছাই করে নিয়েছেন। 

§ মানেঃ

o  আল্লাহ ও তার রাসূলের সম্মাণের প্রতি তারাই লক্ষ রাখবে, যারা আল্লাহর পরীক্ষায় পাস করেছে। পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ দিয়েছে যে, তাদের অন্তরে তাকওয়া রয়েছে।

o  যে দিলের মাঝে রাসূলের জন্য মর্যাদাবোধ নাই, সে দিলে তাকওয়া নাই।

o  রাসূলের সামনে বড় গলায় কথা বলাঃ অন্তরে তাকওয়া না থাকার প্রমাণ।

o  দায়িত্বশীলের সামনে বড় গলায় কথা বলাঃ অন্তরে তাকওয়া না থাকার প্রমাণ।

·  لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ عَظِيمٌ- তাদের রয়েছে ক্ষমা ও বড় পুরস্কার।  

§ এ ব্যাপারে একটা কাহিনী আছেঃ

একবার বনী তামিম গোত্রের কিছু লোক রাসূল (সা.) এর নিকট উপস্থিত হয়। এই গোত্রের শাসনকর্তা নিয়োগ সম্পর্কিত আলোচনা চলছিল। হযরত আবু বকর (রাঃ) রা’কা ইবনে হাকিমের নাম এবং হযরত উমর (রাঃ) আকরা ইবনে হাফসের নাম প্রস্তাব করেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) এবং হযরত উমর (রাঃ) এর মধ্যে চলমান এ আলোচনা এক পর্যায়ে কথা কাটাকাটিতে উন্নীত হয়ে উভয়ের কন্ঠস্বর উচু হয়ে যায়। (বুখারী)

§ উচ্চ স্বরে কথা না বলা প্রসংগেঃ

o  এ আয়াত নাযিলের পর হযরত আবুবকর (রাঃ) আরজ করলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ আল্লাহর কসম! এখন মৃত্যু পর্যন্ত আপনার সাথে কানাকানির অনুরুপে কথা বলব। (বায়হাকী)

o  হযরত উমর (রাঃ) এরপর থেকে এত আস্তে কথা বলতেন যে, প্রায়ই পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হতো। (সেহাহ)

o  হযরত সাবেত ইবনে কায়সের কন্ঠস্বর স্বভাবগতভাবেই উচু ছিল। এ আয়াত নাযিলের পর তিনি ভয়ে সংযত হলেন এবং কন্ঠস্বর নিচু করলেন। (দুররে মনসুর)

o  কাযী আবু বকর ইবনে আরাবী (রহঃ) বলেন রাসূল (সা.) এর সম্মান ও আদব তার ওফাতের পরও জীবদ্দশার ন্যায় ওয়াজিব।

o  কোন কোন আলেম বলেন তার কবরের সামনে উচ্চস্বরে কথা বরা আদবের খেলাফ। যে মজলিসে হাদীস পাঠ হয় সেখানে হট্টগোল করা বে-আদবী।

o  কন্ঠস্বর উচু করলে আমল বিনষ্ট হবে কেন? সৎকর্ম বিনষ্ট করাঃ ১) কুফরী ২) ঈমান ইচ্ছাধীন কাজ কুফরীও ইচ্ছাধীন কাজ।

o  কিন্তু আয়াতে বলা হয়েছে। সুতরাং এখানে কুফরীর শাস্তি কিভাবে হতে পারে। মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহঃ) তার বায়ানুল কুরআনে এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন - রাসূলের কন্ঠ থেকে উচু হলে বিনষ্ট হওয়ার আশংকা রয়েছে কারণ রাসূল কষ্ট পাবেন।

§ আমরা কি করি?

o  দায়িত্বশীলদের যে একটা শরয়ী মর্যাদা আছে, তা আমরা ভূলে যাই।

o  বৈঠকে কথা বলা আমার অধিকার মনে করি-তাই যেমন খুশী তেমন বলি।

o  আমিরে জামায়াতের নসিহত হচ্ছেঃ আমরা অধিকারের কথা ভূলে যেতে হবে, দায়িত্বের কথা স্মরণে রাখতে হবে।

o  আমরা বৈঠকে অনুমতি ছাড়া কথা বলি।

o  একজন কথা বলেছে, সাথে সাথে আমি জবাব দেই। অথচ আমাকে জবাব দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়নি।

o  বৈঠকে আমরা দুইজন কথা বলি। আমাদেরকে কথা থামাতে হয়।

o  দায়িত্বশীলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

o  বৈঠকে আপনাকে কথা বলার সুযোগ দেয়া দায়িত্বশীলের কর্তব্য। সে কর্তব্য উনি পালন না করলে তার জবাবদিহি উনি করবেন। কিন্তু উনার কর্তব্য পালনে আপনি তাকে জোর করতে পারেন না।

o  বৈঠকের অধিকাংশের মতামতের আলোকে দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত দেবেন। কিন্তু উনি বাধ্য নন। অধিকাংশের মত নয়, এমন সিদ্ধান্ত দেয়ার অধিকারও দায়িত্বশীলের রয়েছে। এমন অবস্থায়ও দায়িত্বশীলের আনুগত্য করতে হবে।

o  কোন অবস্থায়ই দায়িত্বশীলের উপরের মুরব্বীয়ানা করা যাবেনা।

o  দায়িত্বশীলের সাথে যখন কথা বলবেন, তখন হিসাব করবেনঃ কে কথা বেশী বলেছে। আপনি না দয়িত্বশীল। মনে রাখবেনঃ বলবেন কম, শুনবেন বেশী। আপনার কথা কম হতে হবে, দায়িত্বশীলের কথা বেশী হতে হবে।

إِنَّ الَّذِينَ يُنَادُونَكَ مِن وَرَاءِ الْحُجُرَاتِ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ

৪. (হে রাসূল) যারা আপনাকে হুজরার বাহির থেকে ডাকাডাকি করে তাদের বেশীর ভাগ লোকেরই কান্ডজ্ঞান নেই।

·   إِنَّ الَّذِينَ يُنَادُونَكَ مِن وَرَاءِ الْحُجُرَاتِ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ - হে নবী! যারা তোমাকে গৃহের বাইরে থেকে ডাকাডাকি করতে থাকে তাদের অধিকাংশই নির্বোধ।  

§ এ ব্যাপারে একটা কাহিনী আছেঃ

نزلت هذه الآيات الكريمة، في أناس من الأعراب، الذين وصفهم الله تعالى بالجفاء، وأنهم أجدر أن لا يعلموا حدود ما أنزل الله على رسوله، قدموا وافدين على رسول الله صلى الله عليه وسلم، فوجدوه في بيته وحجرات نسائه، فلم يصبروا ويتأدبوا حتى يخرج، بل نادوه: يا محمد يا محمد، [أي: اخرج إلينا]، فذمهم الله بعدم العقل، حيث لم يعقلوا عن الله الأدب مع رسوله واحترامه، كما أن من العقل وعلامته استعمال الأدب.

o  ইমাম বগাভী (রহঃ) কাতাদাহ (রাঃ) এর রেওয়ায়েতক্রমে বর্ণনা করেন বনু তামীমের লোকগণ দুপুরের সময় মদীনায় উপস্থিত হয়েছিল। তখন রাসূল (সা.) কোন এক হুজরায় বিশ্রামরত ছিলেন। তারা ছিল বেদুঈন এবং সামাজিকতার রীতি নীতি থেকে অজ্ঞ। তারা হুজরার বাইরে থেকেই ডাকাডাকি শুরু করলঃ “হে মুহাম্মদ আমাদের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে আসুন” (মাযহারা)

o  সাহাবী ও তাবেয়ীগণ তাদের আলেমদের সাথেও অনুরুপ ব্যবহার করতেন।

o  হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে-আমি যখন কোন আলেম সাহাবীর কাছে থেকে কোন হাদীস লাভ করতে চাইতাম তখন তার গৃহে পৌছে ডাকাডাকি বা দরজার কড়া নাড়া থেকে বিরত থাকতাম এবং দরজার বাইরে বসে অপেক্ষা করতাম। তিনি যখন নিজেই বাইরে আসতেন তখন আমি তার নিকট হাদীস জিজ্ঞেস করতাম। তিনি দেখে বলতেন হে রাসূলুল্লাহর চাচাত ভাই আমাকে আপনি কড়া নেড়ে সংবাদ দিলেনা কেন। উত্তরে বলতাম- আল্লাহর নির্দেশ তাদের বাইরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর। হযরত আবু ওবায়দা (রহঃ) বলেন আমি কোনদিন কোন আলেমের দরজায় গিয়ে কড়া নাড়া দেইনি বরং অপেক্ষা করেছি যে, তিনি নিজেই বাইরে আসলে সাক্ষাত করব। (রুহুল মা’আনী)

o  শিষ্টাচার শিক্ষা দিলেন।

o  হে মুহাম্মদ বলে ডাকা নয়।

o  আমরা নাম ধরে না ডেকে অন্য ভাবে ডাকবো।

o  কারো বাসায় গেলে, উনি বের হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। যাওয়ার আগে ফোন করে যাবেন বা আগে এপোয়েন্টম্যান্ট নিয়ে যাবেন।

o  দায়িত্বশীল রোবট নন, তিনিও রক্তে মাংসে মানুষ। তারও ব্যক্তিগত সুবিধা - অসুবিধা, চাওয়া পাওয়া, বিশ্রাম ইত্যাদির জরুরত আছে।

o  আমার পাঠচক্র ও মেহমান-উনারা অবাঞ্চিত নন, কিন্তু এই সময়ের জন্য অবাঞ্চিত।

o  এ্যাপোয়েন্টম্যান্ট নিয়ে হোক আর এমনি এমনি যাওয়া হোক, সর্বাবস্তায় আদব হচ্ছেঃ আপনি কারো ঘরে প্রবেশ করতে সালামের মাধ্যমে অনুমতি চাইবেন। ৩বার সালাম দিয়েও উত্তর না পেলে ফিরে আসবেন।

o  আল কুরআনের নির্দিশঃ সূরা নিসাঃ ২৭

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّىٰ تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَىٰ أَهْلِهَا ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ

o  একজন সাহবীর প্রশ্নঃ মায়ের ঘরে ঢুকার আগে কি অনুমতি লাগবে?

o  মায়ের ঘরে ঢুকতে অনুমতি লাগলে, বোনের ঘরে ঢুকতে অনুমতি লাগবে কিনা?

o  শাশুড়ির ঘরে ঢুকতে অনুমতি লাগলে, শালীর ঘরে ঢুকতে অনুমতি লাগবে কিনা?

o  আপনি দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে শুধু অভিযোগ দেবেন না। যারা জীবনে ব্যর্থ, তারা অভিযোগ করে। সফল ব্যক্তিরা অভিযোগ না করে শুকরিয়া আদায় করে।

وَلَوْ أَنَّهُمْ صَبَرُوا حَتَّىٰ تَخْرُجَ إِلَيْهِمْ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُمْ ۚ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

৫. যদি আপনার বের হওয়া পর্যন্ত তারা সবর করে থাকতো, তাহলে সেটা তাদেরই জন্য ভাল হতো। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও মেহেরবান।

·  وَلَوْ أَنَّهُمْ صَبَرُوا حَتَّىٰ تَخْرُجَ إِلَيْهِمْ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُمْ- যদি তারা তোমার বেরিয়ে আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করতো তাহলে তাদের জন্য ভাল হোত। 

§ নবী সা. এর সাহাবী যারা তার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল, তারাঃ

o  ইসলামী আদব-কায়দা, ভদ্রতা, ও শিষ্টাচারের প্রশিক্ষণ লাভ করেছিলেন।

o  সবসময় নবীর ( সা) সময়ের প্রতি লক্ষ রাখতেন। কারণ তিনি আল্লাহর কাজে কতটা ব্যস্ত জীবন যাপন করেন সে ব্যাপারে তাদের পূর্ণ উপলব্ধি ছিল।

o  ক্লান্তিকর ব্যস্ততার ভেতরে কিছু সময় তার আরামের জন্য, কিছু সময় অধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য এবং কিছু সময় পারিবারিক কাজকর্ম দেখা-শোনার জন্যও অবশ্যই থাকা প্রয়োজন।

o  তারা নবীর সাথে দেখা করার জন্য এমন সময় গিয়ে হাজির হতো যখন তিনি ঘরের বাইরেই অবস্থান করতেন।

o  তাঁকে মজলিসে না-ও পেতো তাহলে তাঁর বেরিয়ে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতো।

o  অত্যাধিক প্রয়োজন ছাড়া তাঁকে বাইরে আসার জন্য কষ্ট দিতো না।

§ আরবের সে পরিবেশে যেখানে সাধারণভাবে মানুষ কোন প্রকার শিষ্টাচারের শিক্ষা পায়নি সেখানে বারবার এমন সব অশিক্ষিত লোকেরা নবীর ( সা) সাথে সাক্ষাতের জন্য এসে হাজির হতো যাদের ধারণা ছিলঃ

o  ইসলামী আন্দোলন ও মানুষকে সংশোধনের কাজ যারা করেন তাদের কোন সময় বিশ্রাম গ্রহণের অধিকার নেই।

o  রাতের বেলা বা দীনের বেলা যখনই ইচ্ছা তাঁর কাছে এসে হাজির হওয়ার অধিকার তাদের আছে।

o  তাঁর কর্তব্য হচ্ছে, যখনই তারা আসবে তাদের সাক্ষাত দানের জন্য তিনি প্রস্তুত থাকবেন।

§ এ প্রকৃতির লোকদের মধ্যে সাধারণভাবে এবং আরবের বিভিন্ন অংশ থেকে আগত লোকদের মধ্যে বিশেষভাবে এমন কিছু অজ্ঞ অভদ্র লোকও থাকতো যারা নবীর ( সা) সাথে সাক্ষাত করতে আসলে কোন খাদেমের মাধ্যমে ভিতরে খবর দেয়ার কষ্টটাও করতো না।

§ নবীর (সা) পবিত্র স্ত্রীদের হুজরার চারদিক ঘুরে ঘুরে বাইরে থেকেই তাঁকে ডাকতে থাকতো।

§ সাহাবীগণ হাদীসে এ ধরনের বেশ কিছু ঘটনা বর্ণনা করেছেন।

§ লোকজনের এ আচরণের রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খুব কষ্ট হতো।

§ কিন্তু স্বভাবগত ধৈর্যের কারণে তিনি এসব সহ্য করে যাচ্ছিলেন।

§ শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা'আলা এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করলেন এবং এ অবশিষ্ট কর্মনীতির জন্য তিরস্কার করে লোকজনকে এ নির্দেশনা দান করলেন যে,

o  যখন তারা তাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্য এসে তাঁকে পাবে না, তখন চিৎকার করে তাঁকে ডাকার পরিবর্তে ধৈর্যের সাথে বসে সে সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবে যখন তিনি নিজেই তাদেরকে সাক্ষাতদানের জন্য বেরিয়ে আসবেন।

·  وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ - আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।

§ ভূলের যদি পুনরাবৃত্তি না করা হয়, তবে অতীতের সকল গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করবেন।

§ আল্লাহ যে ক্ষমা করবেন, এটা আপনার আমার কৃতিত্ব নয়, বরং তার দয়া।

§ অতএব, আমরা দায়িত্বশীলদের সময়সূচীকে বিবেচনায় রাখবো।

§ যখন তখন কারো বাসায় যাবো না।

§ আগে না জানিয়ে যাবো না।

§ টেলিফোন করার সময় নজর রাখবোঃ

১. নামাযের সময় কি না?

২. ঘুমের সময় কিনা?

৩. উনি এই সময়ে সাধারণতঃ ব্যস্ত থাকেন কি না?

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا أَن تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَىٰ مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ

৬. হে ঐসব লোক যারা ঈমান এনেছো! যদি কোন ফাসেক লোক তোমাদের কাছে কোন খবর নিয়ে আসে, তাহলে এর সত্যতা যাচাই করে নিও। এমন যেন না হয় যে, তোমরা না যেনে কোন কাওমের ক্ষতি করে বসো এবং তারপর যা করেছো, সে জন্য আফসোস করতে থাকো।

·  ﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا أَن تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَىٰ مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ﴾ - হে ঈমান গ্রহণকারীগণ, যদি কোন ফাসেক তোমাদের কাছে কোন খবর নিয়ে আসে তাহলে তা অনুসন্ধান করে দেখ। এমন যেন না হয় যে, না জেনে শুনেই তোমরা কোন গোষ্ঠীর ক্ষতি করে বসবে এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে। 

§ এ ব্যাপারে একটা কাহিনী আছেঃ

o  মুসনাদে আহমাদের বরাত দিয়ে তাফসীর ইবনে কাসীর

-    বনী মুস্তালিক গোত্রের সরদার হারেস ইবনে মেরাব ইসলাম গ্রহণের পর রাসুল (সা.) তাকে যাকাত প্রদানের আদেশ দিলেন।

-    তিনি যাকাত প্রদানে স্বীকৃত হলেন এবং তারা গোত্রে যারা ইসলাম গ্রহণ করবে তাদের যাকাত আদায় করে জমা করে রাখবেন বললেন।

-    রাসূল (সা.) কে একটি নিদিষ্ট তারিখে যাকাতের অর্থ নেবার জন্য কোন দুত পাঠাতে বললেন।

-    কিন্তু নির্ধারিত তারিখ পার হয়ে গেলেও দুতের দেখা না পেয়ে হারেস আশংকা করলেন রাসূল (সা.) কোন কারনে তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন।

-    একথা তিনি ইসলাম গ্রহনকারী নেতৃস্থানীয় লোকদের কাছে প্রকাশ করে রাসূল (সা.) এর সাথে সবাই মিলে দেখা করার ইচ্ছা করলেন।

-    এদিকে রাসূল নির্ধারিত তারিখে ওলীদ ইবনে ওকবা কে প্রেরণ করলেন।

-    ওলীদ ইবনে ওকবা (রাঃ) নির্দেশ অনুযায়ী বনু মুস্তালিক গোত্রে পৌছেন। গোত্রের লোকেরা অভ্যর্থনা জানানোর উদ্দেশ্যে বস্তি থেকে বের হয়ে আসে।

-    ওলীদ সন্দেহ করে তারা বোধ হয় পুরাতন শত্রুতার কারণে তাকে হত্যা করতে আসছে। 

-    তিনি ফিরে আসেন এবং রাসূল (সা.) কে বলেন তারা যাকাত দিতে অস্বীকার করেছে এবং আমাকে হত্যা করার ইচ্ছা করেছে।

-    রাসূল (সা.) রাগান্বিত হয়ে খালিদ ইবনে ওলীদ কে ঘটনা পর্যবেক্ষনের নির্দেশ দিলেন।

-    খালিদ ইবনে ওলীদের নেতৃত্বে একদল মুজাহিদ প্রেরণ করেন। তিনি ফিরে এসে সংবাদ দিলেন তারা ঈমানের উপর অটল রয়েছে এবং যাকাত দিতে প্রস্তুত। অতঃপর তা জানতে পেরে হারেস রাসূল (সা.) কে বলেন তিনি ওলীদকে দেখেনইনি।

-    ওলীদ ইবনে উকবা মক্কা বিজয়ের সময় মুসলমান হয়েছিলেন।তাই এটি স্পষ্ট যে এ যুগের বেশীর ভাগ অংশই মাদানী যুগের শেষ পর্যায়ে নাজিলকৃত।

§ এ আয়াত আমাদেরকে কি শিখালো?

o  বড় ধরণের ঘটনা ঘটে যেতে পারে, এমন ধরণের খবরের ক্ষেত্রে খবর প্রদানকারী ব্যক্তিকে যাচাই করে দেখতে হবে।

o  খবর প্রদানকারী যদি ফাসেক হয়, তার বাহ্যিক অবস্থা দেখেই বুঝা যাবে যে, তার কথা নির্ভর যোগ্য নয়। এমন অবস্থায় প্রকৃত ঘটনা অনুসন্ধান করতে হবে।

o  শরীয়ার হুকুম হচ্ছেঃ যার চরিত্র ও কর্ম নির্ভরযোগ্য নয়, এমন সংবাদদাতার সংবাদ গ্রহণ করে কোন ইসলামী সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ বৈধ নয়।

o  এই নীতির ভিত্তিতে হাদীস সহীহ কি না, তা যাচাই করার জন্য হাদীস বিশারদগন ‍"জারহ ও তা'দীল" নীতি  উদ্ভাবন করেন।

o  ফকীহরা নীতি গ্রহণ করেছেন যে, এমন কোন ব্যাপারে ফাসেক ব্যক্তির সাক্ষ গ্রহণযোগ্য হবে না যার দ্বারা শরীয়াতের কোন নির্দেশ প্রমাণিত হয় কিংবা কোন মানুষের ওপর কোন অধিকার বর্তায়।

o  পণ্ডিতগণ একমত যে, সাধারণ পার্থিব ব্যাপারে প্রতিটি খবরই যাঁচাই ও অনুসন্ধান করা এবং খবরদাতার নির্ভরযোগ্য হওয়ার ব্যপারে নিশ্চিত হওয়া জরুরী নয়।  সাধারণ এ খুঁটিনাটি ব্যাপারে এ নীতি খাটে না।

﴿وَاعْلَمُوا أَنَّ فِيكُمْ رَسُولَ اللَّهِ لَوْ يُطِيعُكُمْ فِي كَثِيرٍ مِنَ الْأَمْرِ لَعَنِتُّمْ وَلَكِنَّ اللَّهَ حَبَّبَ إِلَيْكُمُ الْإِيمَانَ وَزَيَّنَهُ فِي قُلُوبِكُمْ وَكَرَّهَ إِلَيْكُمُ الْكُفْرَ وَالْفُسُوقَ وَالْعِصْيَانَ أُولَئِكَ هُمُ الرَّاشِدُونَ﴾

৭. ভাল করে যেনে নাও, আল্লাহর রাসূল তোমাদের মাঝে বর্তমান। তিনি যদি বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই তোমাদের কথা মেনে নেন তাহলে তোমরা নিজেরাই অনেক সমস্যার মধ্যে পড়ে যাবে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদের মধ্যে ঈমানের প্রতি ভালবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছেন এবং তা তোমাদের কাছে পছন্দনীয় করে দিয়েছেন। আর কুফরী, পাপাচার ও অবাধ্যতাকে তোমাদের কাছে ঘৃণিত করে দিয়েছেন।

·  وَاعْلَمُوا أَنَّ فِيكُمْ رَسُولَ اللَّهِ لَوْ يُطِيعُكُمْ فِي كَثِيرٍ مِنَ الْأَمْرِ لَعَنِتُّمْ (ভাল করে যেনে নাও, আল্লাহর রাসূল তোমাদের মাঝে বর্তমান। তিনি যদি বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই তোমাদের কথা মেনে নেন তাহলে তোমরা নিজেরাই অনেক সমস্যার মধ্যে পড়ে যাবে।)

§ আয়াতের এই কথাটি তাদের তৎপরতার ব্যাপারে, যারা বনী মুসতালিক গোত্র সম্পর্কে ওয়ালিদ প্রদত্ত খবরের পর রাসূল সা. কে তাৎক্ষনিক আক্রমণ পরিচালনার জন্য পীড়াপীড়ি করেছিল, মূলতঃ রাসূল সা. সে সময় সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণে দ্বিধান্বিত ছিলেন।

§ আয়াতে এসব লোকদের তিরষ্কার করা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তাদের মাঝে বর্তমান আছেন এ কথাটি যেন ভূলে না যায়। যিনি কোন বিষয়টি কল্যাণকর, তা তাদের চেয়ে বেশী বুঝেন।

§ সে বিষয় তাদের কাছে উপযুক্ত বলে মনে হয়, রাসূলকে সে অনুসারে কাজ করতে হবে মনে করা দূঃসাহনী বিষয়। রবং সে অনুসারে কাজ করলে অনেক বিষয়ে ভূলত্রুটি হবে এবং ভোগান্তি পোহাতে হবে।

﴿فَضْلًا مِنَ اللَّهِ وَنِعْمَةً وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ﴾

৮. আল্লাহ দয়া ও মেহেরবাণীতে এসব লোকই সৎপথের অনুগামী। আল্লাহ জ্ঞানী ও কুশলী।

·  فَضْلًا مِنَ اللَّهِ وَنِعْمَةً  (আল্লাহ দয়া ও মেহেরবাণীতে এসব লোকই সৎপথের অনুগামী।)

§ এখানে উল্লেখ্য যে, উপরে لَوْ يُطِيعُكُمْ فِي كَثِيرٍ مِنَ الْأَمْرِ বলতে সাহাবায়ে কিরামদের সকলকে বুঝানো হয়নি। বরং কিছু অপরিপক্ষ লোকের কথা বুঝানো হয়েছে, যাদের পরামর্শের ভিত্তিকে রাসূল সা. অভিযান পরিচালনা করতে যাচ্ছিলেন। এই চিন্তাটা ভূল ছিল আর তা মুমিনদের পুরো জামায়াত করেনি।

§ মুমিনদের পুরো জামায়াত এরূপ না করা কারণ বা মুমিনদের সঠিক পথের উপর কায়েম থাকার কারণ হলোঃ আল্লাহর দয়া ও মেহেরবানী, যার মাধ্যমে আল্লাহ ঈমানী আরচণকে তাদের জন্য প্রিয় করে দিয়েছেন আর কুফুরী ফাসেকী ও নাফরমানী আচরণকে ঘৃণিত করে দিয়েছেন।

§ বিধায় একই আয়াতে পরবর্তীতে وَلَكِنَّ اللَّهَ حَبَّبَ إِلَيْكُمُ الْإِيمَانَ  বলে ঐ সাহাবীদের বুঝানো হয়েছে, যারা পীড়াপীড়ি করেননি।

§ রাসূলের উপস্থিতি, অধিকাংশ সাহাবীদের মতামত থাকা সত্ত্বে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য পীড়াপীড়ি বিষয়টা সংঘত নয়, সে দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, এ ক্ষেত্রে ঐ সকল সাহাবীদের মাঝে ঈমানে শিথিলতা এসে গিয়েছিল।

·  وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ  (আল্লাহ জ্ঞানী ও কুশলী।)

§ আল্লাহ জ্ঞানী ও কুশলী বিধায় তিনি তার অনুগ্রহ আর মেহেরবানীর নিয়ামত যাকে দান করেন, জ্ঞান ও যুক্তির ভিত্তিতে দান করেন। নিজ জ্ঞানের ভিত্তিতে যাকে উপযুক্ত বলে জানেন-তাকে দান করেন।

﴿وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا فَإِنْ بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَى فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّى تَفِيءَ إِلَى أَمْرِ اللَّهِ فَإِنْ فَاءَتْ فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَأَقْسِطُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ﴾

৯. ঈমানদারদের মধ্যকার দু’টি দল যদি পরস্পর লড়াইয়ে লিপ্ত হয়, তাহলে তাদের মধ্যে মিমাংসা করে দাও। তারপরও যদি দু’টি দলের কোন একটি অপরটির বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করে, তবে যে দল বাড়াবাড়ি করে তার বিরুদ্ধে লড়াই করো। যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। এরপর যদি তারা ফিরে আসে তাহলে তাদের মাঝে ন্যায় বিচারের সাথে মিমাংসা করিয়ে দাও এবং ইনসাফ করো। আল্লাহ ইনসাফকারীদের পছন্দ করেন।

·  وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا (ঈমানদারদের মধ্যকার দু’টি দল যদি পরস্পর লড়াইয়ে লিপ্ত হয়)

§ “যখন ঈমানদারদের মধ্যকার দূ’টি গোষ্ঠী পরস্পর লড়াইয়ে লিপ্ত হয়” আর “যদি ঈমানদারদের দূ’টি দল একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লিপ্ত হয়” এই দূ’টি কথার মাঝে পার্থক্য রয়েছে। মানে-পরস্পর লড়াইয়ে লিপ্ত হওয়া মুসলমানদের নীতি বা স্বভাব নয় বা উচিতও নয়। মুমিন হয়েও লাড়াই করবে,এটা আশা করা যায়না। কিন্তু তারপরও যদি এই ধরণের ঘটনা ঘটে যায়, তাহলে অপরাপর মুসলমানের কি করনীয় তা এখানে বর্ণনা করা হচ্ছে।

§ আরবীতে فرقة মানে দল আবার طائفة মানে দল। কিন্তু  এখানে طائفة  ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ আরবীতে فرقة বলতে বড় দল আর طائفة বলতে ছোট দল বুঝায়। মানে মুসলমানদের বড় দল এতে লিপ্ত থাকার সুযোগ নেই। কিন্তু ছোট ছোট দলের মাঝে হয়ে যেতে পারে।

·  فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا (তাহলে তাদের মধ্যে মিমাংসা করে দাও)

§ এই নির্দেশ তাদের প্রতি, যে সব মুসলমান বিবাদমান দুইটি দলের কোনটিতেই নয়। যাদের পক্ষে সমঝোতার জন্য উদ্যোগী হওয়া সম্ভব।

§ মুসলমানদের দুইটি দল লড়াই করবে আর অন্য মুসলমনরা বসে তামাশা দেখবে-এটা মুসলমানের কাজ নয়।

§ মুসলমানের কাজ হলোঃ

১. অস্তির হওয়া এবং সম্পর্ক স্বভাবিক করণে উদ্যোগী হওয়া।

২. লড়াই থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়া।

৩. আল্লাহর ভয় দেখানো।

৪. দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের সাথে সাক্ষাত।

৫. বিবাদের কারণ জানা।

৬. সমঝোতার চেষ্টা করা।

·  فَإِنْ بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَى فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي (তারপরও যদি দু’টি দলের কোন একটি অপরটির বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করে, তবে যে দল বাড়াবাড়ি করে তার বিরুদ্ধে লড়াই করো)

§ ৩টি কাজের কোনটিই মুসলমানের কাজ নয়। যেমনঃ

১. অত্যাচারীকে অত্যাচার করতে দেয়া।

২. মজলুমকে অসহায় অবস্থায় ছেড়ে দেয়া।

৩. জালেমকে সাহায্য করা।

§ দুই পক্ষে যুদ্ধ হলে মুসলমানের কর্তব্য হলোঃ

১.     দু’পক্ষের মধ্যে সন্ধির ব্যবস্থা করা।

২.    সন্ধি সম্ভব না হলে সত্য ও ন্যায়ের অনুসারীকে সহযোগিতা করা।

৩.    অত্যাচারীর বিরুদ্ধে লড়াই করা।

§ অত্যাচারীর বিরুদ্ধে লড়াই আল্লাহর নির্দেশ, বিধায় তা ওয়াজিব এবং তা জিহাদ।

§ রাসূল সা. বলেছেনঃ القائم فيها خير من الماشي  و القاعد فيها خير من القائم ‘দাড়িয়ে থাকা ব্যক্তি চলতে থাকা ব্যক্তির চেয়ে এবং বসে থাকা ব্যক্তি দাড়িয়ে থাকা ব্যক্তির চেয়ে উত্তম’। এটা সেই ফিতনার সময়ের কথা বুঝানো হয়েছে, যখন মুসলমানরা পরস্পর গোত্র প্রীতি, জাহেলী সংকির্ণতা এবং পার্থিব স্বার্থ অর্জনের প্রতিযোগিতায় যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং কেউই ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকেনা। এ অবস্থায় কোন এক দলকে সহযোগীতা করা আল্লাহর আদেশ অমান্য করা।

§ কিন্তু যেখানে যুদ্ধ হয় মজলুম আর যালেমের, যুদ্ধ হয় দুনিয়ার স্বার্থ ছাড়া, সেখানে মজলুমের পক্ষ ধারণ করতে হবে। যেমন-

ক. হযরত আলী রা. সারা জীবন কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদের পরিবর্তে বিদ্রেুাহীদের বিরুদ্ধে জিহাদ করেছেন।

খ. আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. এর উক্তিঃ

 ما وجدت في نفسي من شيئ ما وجدت من هذه الاية اني لم اقاتل هذه الفئة الباغية كما أمرني الله

“কোন বিষয়ে আমার মনে এতটা খটকা লাগেনি যতটা এ আয়াতের কারণে লেগেছে। কেননা, আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে আমি ঐ বিদ্রোহী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিনি।”

গ. সীমা লংঘনকারীর বিরুদ্ধে লড়াই করা মানে তার বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ এবং অত্যাচার নিরসন করা। মানে এই নয় যে অ¯্র নিয়ে লড়াই করা বা হত্যা করা।

·  حَتَّى تَفِيءَ إِلَى أَمْرِ اللَّهِ (যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে)

§ আয়াতের এই অংশ প্রমাণ করে যে, বিদ্রোহী বা সীমালংঘনকারীকে তার বিদ্রোহ বা সীমালংঘনের শাস্তি দেয়ার জন্য যুদ্ধ নয়। যুদ্ধ তাদেরকে আল্লাহর নির্দেশ মানতে বাধ্য করার জন্য।

§ আল্লাহর নির্দেশ বলতে আল্লাহর কিতাব আর রাসূলের সুন্নাত বুঝাবে।

§ কোন বিদ্রোহী যখনই আল্লাহর নির্দেশ অনুসরণ করতে সম্মত হবে, তখনই শক্তি প্রয়োগ তথা যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। না হয় তা হবে সীমালংঘন।

§ আল্লাহর কিতাব আর রাসূলের সুন্নাত অনুসারে ন্যায় আর অন্যায়ের ফায়সালার করার দায়িত্ব উম্মতের জ্ঞানী ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন লোকেরা।

·  فَإِنْ فَاءَتْ فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ (এরপর যদি তারা ফিরে আসে তাহলে তাদের মাঝে ন্যায় বিচারের সাথে মিমাংসা করিয়ে দাও)

§ যুদ্ধ বন্ধ হয়ে গেলে দু’পক্ষের মাঝে সন্ধি হতে হবে ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে।

§ সন্ধি যদি ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে না হয় তাহলে ন্যায়ের অনুসারীদের অবদমিত করা এবং সীমালংঘনকারীদের সাহস ও উৎসাহ যোগান হয়। আর এতে করে অকল্যাণের মুল কারণ সমূহ বিদ্যমান থাকে। এবং তা বৃদ্ধি হয়ে বারবার বিপর্যয়ের কারণ হয়।

·  وَأَقْسِطُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ (এবং ইনসাফ করো। আল্লাহ ইনসাফকারীদের পছন্দ করেন।)

§ মুসলমানদের মাঝে পারস্পকি য্দ্ধু সম্পর্কে এই আয়াত শরয়ী বিধানের মূল ভিত্তি।

§ যেহেতু রাসূল সা. এর সময়ে মুসলমানদের মাঝে এই ধরণের কিছু ঘটেনি বিধায় রাসূলের কথা বা কাজের মাধ্যমে এর ব্যাখ্যা পাওয়া যায়না। কেবলমাত্র ১টি হাদীস এ সম্পর্কে রয়েছে।

§ হযরত আলী রা. এর সময় যখন মুসলমানদের মাঝে যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং তখন অনেক সাহাবী বর্তমান ছিলেন, তাই তাদের কাজ  ও অনুমোদন থেকে এই সম্পর্কে বিস্তারিত নিয়ম-কানুন পাওয়া যায়। আর এসব বিধান থেকে মুসলমান বিদ্রোহী আর কাফের বিদ্রোহীদও বিরুদ্ধে যুদ্ধের আইনের পার্থক সুস্পষ্ট হয়ে উঠে।  আর তা নিম্নরূপঃ

1.      মুসলমানদের পারস্পরিক যুদ্ধের ধরণ বিভিন্ন। তাই ধরণ অনুযায়ী বিধানও বিভিন্ন। এবং তা ৪টি, যেমনঃ

ক. ইসলামী হুকুমাতের অধীনে প্রজাদের দুই পক্ষ যুদ্ধরত হলে তাদের মাঝে সন্ধি আর সমঝোতা করে দেয়া, কারা সীমালংঘণকারী নির্ণয় করা, শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে সীমালংঘনকারীকে ন্যায় ও সত্য গ্রহণে বাধ্য করা। যা সরকারের দায়িত্ব।

খ. যুদ্ধরত দু’টি পক্ষ যদি হয় দুটি বড় দল বা দুটি মুসলিম সরকার, আর তারা যদি লড়াই করে পার্থিব স্বার্থে। তাহেল মুমিনদের কাজ হলো ফিতনায় অংশ না নেয়া বরং উভয় পক্ষকে আল্লাহর ভয় দেখিয়ে যুদ্ধ হতে বিরত থাকার উপদেশ প্রদান।

গ. উপরোক্ত ২শক্তির মাঝে যদি এক পক্ষ ন্যায়ের উপর হয় আর আরেক পক্ষ  করে বাড়াবাড়ি আর আপোষ মিমাংসায় রাজী না হয়, তাহলে ঈমানদারদের উচিত সীমালংঘনকারীর বিরুদ্ধে ন্যায়ের পক্ষ অবলম্বন করা।

ঘ. যদি প্রজাদের একাংশ ইসলামী সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, তাহলে তাদেরকে বিদ্রোহী হিসাবে আখ্যায়িত করা।

2.     বিদ্রোহী তথা সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে অংশ গ্রহণকারীদের পরিচয় বিভিন্ন ধরণের। যেমনঃ

ক. শরীয়াত সম্মত কারণ ছাড়া কেবল হাংগামা সৃষ্টিতে তৎপর এমন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া সরকারের জন্য বৈধ। আর এসময় সরকারকে সহযোগিতা করা ঈমানদারদের ওয়াজিব। এ সময় সরকার ন্যায়বান কি না এ প্রশ্ন অবান্তর।

খ. শরয়ী যুক্তি ছাড়া সরকার উৎখাতে তৎপর বিদ্রোহী-যাদের বাহ্যিক অবস্থা জালিম ও ফাসিক। এমন অবস্থায় সরকারকে সহযোগিতা করা ওয়াজিব।

গ. বাতিল ব্যাখ্যা, ফাসেদ আকীদা (খারেজী) প্রদর্শণ পূর্বক সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে মুসলিম সরকার ঐ বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। এ অবস্থায় সরকারকে সমর্থন করা ওয়াজিব।

ঘ. বৈধ ভাবে প্রতিষ্ঠিত কর্তৃত্ব ও নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে তাদের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াই বৈধ। সরকারকে সহযোগিতা করা ওয়াজিব।

ঙ. এমন সরকার যার প্রতিষ্ঠা জোরপূর্বক এবং যার নেতৃবৃন্দ ফাসেক। আর বিদ্রোহীরা ন্যায়নিষ্ট, যারা আল্লাহর বিধান কায়েমের চেষ্টা চালাচ্ছে। বাহ্যিক ভাবে যাদেরকে সৎ ও নেককার বলে মনে হয়। এমন গোষ্ঠীকে বিদ্রোহী বলা বা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। যেমনঃ

o  যে নেতার নেতৃত্ব একবার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং তাঁর ব্যবস্থাপনায় রাষ্ট্রে শান্তি, নিরাপত্তা ও আইন-শৃংখলা বজায় আছে। এমন অবস্থায় তিনি ন্যায় পরায়ন বা অত্যাচারী যাই হোন, তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা হারাম। তবে সুস্পষ্ট কুফরীতে লিপ্ত হলে ভিন্ন কথা। (অধিকাংশ ফকিহ ও আহলে হাদীস)।

o  ঐক্যমতের ভিত্তিকে প্রতিষ্ঠিত মুসলিম শাসক, যার মাধ্যমে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে-এমন শাসকের বিরুদ্ধে মুসলমানদের কোন গোষ্ঠী যদি বিদ্রোহ করে-সেই শাসকের পক্ষে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সামর্থবান সকল মুসলমানদের লড়াই করা ওয়াজিব। (ইমাম সারখসী)

o  নেতা বা মুসলিম শাসকবৃন্দ জালেম ও ফাসেক হলেও তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বা লড়াই করা করা হয়েছে। যে বিষয়ে ইজমা হয়েছে। (ইমাম নবী)

o  (এই ইজমার দাবীটি যথার্থ নয় এজন্য যে, ফকিহবিদদের একটি বড় অংশ মনে করেন-বিদ্রোহকারীদের কেবল তখনই বিদ্রোহী বলা যাবে, যখন তারা ন্যায় নিষ্ট ইমামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে। জালেম ও ফাসেক নেতাদের বিরুদ্ধে সৎ ও নেককারদের অবাধ্যতাকে কুরআন বিদ্রোহ বলেনা।)

§ ইমাম আবু হানিফা জালেম ফাসেক নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাকে শুধু জায়েজ মনে করতেন না, ওয়াজিব মনে করতেন।

§ ইমাম আবু হানিফা বনী উমাইয়াদের বিরুদ্ধে যায়েদ ইবনে আলীর বিদ্রোহে অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছেন এবং অন্যদেরকে এভাবে করতে উপদেশ দিয়েছেন।

§ মনসূরের বিরুদ্ধে নাফসের যাকিয়ার বিদ্রোহে ইমাম আবু হানিফা নাফসে যাকিয়াকে সাহায্য করেছেন এবং সেটি কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের চেয়ে উত্তম বলে ঘোষনা করেছেন।

§ ইমাম সারখসীর সিদ্ধান্ত হানাফী সকলের সর্বসম্মত মত নয়। ইবনে হুমাম বলেছেনঃ الباغي فر عرف الفقهاء الخارج عن طاعة امام الحق “সাধারণ ভাবে ফিকাহবিদদের মতে বিদ্রোহী সে-ই যে ন্যায় পরায়ন ইমামের আনুগত্য থেকে বেরিয়ে যায়।”

§ ন্যায়নিষ্ঠ নয় এমন ইমামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা জায়েজ। যেমন-হযরত হুসাঈন রা. এর বিদ্রোহ। (ইবনে আকীল ও ইবনুল জুযী)

§ সে বিদ্রোহী, যে ন্যায়নিষ্ঠ ইমামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। (ইমাম শাফেয়ী)

§ বিদ্রোহী যদি ন্যায়নিষ্ঠ ইমামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে অগ্রসর হয়, তবে তার বিরুদ্ধে লড়াই করা যাবে। যদি কেউ উমর ইবনে আব্দুল আযীযের মত ন্যায় নিষ্ঠ ইমামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ কওে, তাহলে তাকে দমন করা ওয়াজিব।(ইমাম মালেক)

§ উমর ইবনে আব্দুল আযীয ভিন্ন অন্য ইমামের ব্যাপার ইমাম মালিককে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তাকে ঐ অবস্থায়ই ছেড়ে দাও। আল্লাহ  অন্য কোন যালেম দিয়ে তাকে শাস্তি দেবেন এবং তৃতীয় কোন জালেম দ্বারা এই উভয়কে শাস্তি দেবেন।

§ বর্তমান সময়ের কোন নেতার বাইয়াত বা আনুগত্যের শপথ নেই।

§ لا نقاتل إلا مع امام عادل يقدمه أهل الحق لا نفسهم “সত্যের অনুসারীগণ, যাকে ইমাম হিসেবে গ্রহণ করেছেন তাকে ছাড়া আর কারো জন্য আমরা যুদ্ধ করবো না।”

3.     বিদ্রোহী সংখায় কম হলে এবং পৃষ্ঠপোষকাতায় বড় দল না থাকলে াব তাদের কাছে যুদ্ধের সরঞ্জাম না থাকলে, তাদের বেলায় বিদ্রোহ সম্পর্কিত আইন প্রযোজ্য নয়। সাধারণ আইন প্রযোজ্য হবে। যেমন-কিসাস, জরিমানা ইত্যাদি। বিদ্রোহ বিষয়ক ফায়সালা কেবল বড় গ্রুপের জন্য।

4.     বিদ্রোহীরা কেবল সশস্্র বিদ্রোহ করলে বা রক্ষপাত ঘটালে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যাবে। কিন্তু কেবলমাত্র তাদের বিদ্রোহী মতের প্রকাশের কারণে হত্যা বা বন্দী করা যাবেনা।

5.     বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অ¯্র ধরার আগে কুরআনের নির্দেশানুযায়ী তাদেরকে বিদ্রোহ ত্যাগ করে ইনসাফ ও ন্যায়ের পথে অনুসরণের আহবান জানাতে হবে, তাদের সন্দেহ ও প্রশ্ন বুঝিয়ে দিতে হবে। কেবলমাত্র তারা অ¯্র ধরলেই অ¯্র ধারণ করা যাবে।

6.     বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সময় হাদীসে রাসুলে বর্ণিত নীতিমালার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। আর তাহলোঃ

ক. আহতদের উপর আঘাত করা হবেনা।

খ. বন্দীদেও হত্যা করা হবেনা।

গ. পলায়নরতদের পিছু ধাওয়া করা হবেনা।

ঘ. তাদের সম্পদকে গনীমত হিসাবে বন্টন করা হবেনা।

-বিদ্রোহীদের ব্যাপারে যুদ্ধে হযরত আলী রা, এর উক্তি ও কর্মঃ

ক. পলায়নরতদের পিছু ধাওয়া করোনা।

খ. আহতদের আক্রমণকরেনা।

গ. বন্দীদের হত্যা করোনা।

ঘ. অ¯্র সমর্পণকারীকে নিরাপত্তা দাও।

ঙ. মানুষের বাড়ীঘরে প্রবেশ করোনা।

চ. গালি দিতে থাকলেও কোন নারীর প্রতি হাত তুলোনা।

ছ. বিরুধী ও তাদের সন্তানদেরকে দাস বানিওনা। ( তোমাদের মধ্যে কে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশাকে তার নিজের অংশে নিতে চাও?)

7.     বিদ্রোহীদের অর্থ সম্পদ সম্পর্কে হযরত আলী রা. অনুসৃত নীতিঃ

ক. সম্পদ গনীমাত হিসাবে গন্য করা হবেনা।

খ. সম্পদ সৈন্যদের মাঝে বন্টন করা যাবেনা।

গ. যুদকালীন সময়ে ক্ষতিগ্রস্থ মালের ক্ষতিপুরুণ দিতে হবেনা।

ঘ. যুদ্ধ শেষে  এবং বিদ্রোহ স্তিমিত হলে তাদের সম্পদ ফিরত দেয়া হবে।

ঙ. যুদ্ধ চলাকালে তাদের অ¯্র ও বাহন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে।

চ. যুদ্ধা¯্র ও বাহন গনিমাত হিসাবে বন্টন করা হবেনা বরং বিদ্রোহের আশংকা না হলে ফিরিয়ে দেয়া হবে। তবে ইমাম আবু ইউসুফ মনে করেন, যুদ্ধা¯্র ও বাহন সরকার গনীমাত হিসাবে গন্য করবে।

8.     বিদ্রোহী বন্দীদের মুক্তি দেয়া হবে পুণরায় বিদ্রোহ নাক করার প্রতিশ্রুতিতে।

9.     বিদ্রোহীদের মাথা কেটে প্রদর্শন করা যাবেনা। রাসূল সা. তা নিষেধ করেছেন। হযরত আবু বকর রা. রোমন বিশপের মাথা কেটে আনা হলে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেনঃ রোমার আর ইরানীদের অন্ধ অনুসরণ আমাদের কাজ নয়।

10. যুদ্ধকালে বিদ্রোহীদের প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির জন্র কিসাস বা ক্ষতি পুরণ বর্তাবেনা।

11.  বিদ্রোহীরা যদি কোন এলাকা দখল করে নিজ প্রশাসন চালু করে বা যাকাত ও টেক্স আদায় করে, তাহলে পূণর্দখলের পর ঐ জনপদের বাসিন্দাদের উপর পুনরায় যাকাত বা কর দাবী করা যাবেনা।

12. বিদ্রোহী অধিকৃত এলাকায় প্রতিষ্ঠিত কোর্টের বিচারক ন্যায় নিষ্ঠ হলে এবং শরীয়াত অনুসারে ফায়সালা প্রদান করলে বিচারকের ঐ রায় বহাল থাকবে। কিন্তু বিদ্রোহীদের কোর্টের ওয়ারেন্ট ইসলামী সরকারের আদালতে বহাল রবেনা।

13. বিদ্রোহীরা যেহেতু ফাসেক। বিধায় তাদের সাক্ষ্য ইসলামী আদালতে গ্রহণযোগ্য হবেনা।

﴿إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ﴾

১০. মু’মিনরা তো পরস্পর ভাই ভাই। অতএব তোমাদের ভাইদের মধ্যকার সম্পর্ক ঠিক করে দাও। আল্লাহকে ভয় করো, আশা করা যায় তোমাদের প্রতি মেহেরবানী করা হবে।

·  إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ  (মু’মিনরা তো পরস্পর ভাই ভাই। অতএব তোমাদের ভাইদের মধ্যকার সম্পর্ক ঠিক করে দাও।)

o দুনিয়ার সকল মুসলমান এক বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ বলে এই আয়াত ঘোষনা করছে।

o “মুসলমানদের ভ্রাতৃত্বের বন্ধন” এমন দৃষ্টান্ত অন্য কোন আদর্শে নেই।

o হাদীসের আলোকে এই আয়াতের লক্ষ্যঃ

ক. রাসূল সা. আমার থেকে ৩টি বিষয়ের বাইয়াত নিয়েছেন।

১. নামায কায়েম করবো।

২. যাকাত আদায় করতে থাকবো।

৩. মুসলমানদের কল্যাণ কামনা করবো। (জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ)

খ. মুসলমানকে গালি দেয়া ফাসেকী এবং তার সাথে লড়াই করা কুফুরী। (আল হাদীস)

গ. প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের জান, মাল ও ইজ্জত হারাম। ( আল হাদীস)

ঘ. এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার উপরে জুলুম করেনা, তাকে সহযোগিতা পরিত্যাগ করেনা এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করেনা। কোন ব্যক্তির জন্য তার কোন মুসলমান ভাইকে হেয় ও ক্ষুদ্র জ্ঞান করার মত অপকর্ম আর নাই। (আল হাদীস)

ঙ. ঈমানদারের সাথে একজন ঈমানদারের সম্পর্ক ঠিক তোমন যেমন দেহের সম্পর্ক মাথার সাথে। সে ঈমানদাদের প্রতিটি দূঃখ-কষ্ট, ঠিক অনুভব কওে যেমন মাথা দেহের প্রতিটি অংশের ব্যথা অনুভব করে। (আল হাদীস)

চ. পারস্পরিক ভালবাসা, সুসম্পর্ক এবং একে অপরের দয়ামায়া ও ¯েœহের ব্যাপারে মুমিনগন একটি দেহের মত। দেহের যে অংশই কষ্ট হোকনা কেন তাতে গোটা দেহ জ্বও ও অনিদ্রায় ভূগতে থাকে। (বুখারী ও মুসলিম)

ছ. মুমিনগন পরস্পরের জন্য একই প্রাচীরের ইটের মতো একে অপরের থেকে শক্তি লাভ করে থাকে।

শিক্ষাঃ

1.      সিদ্ধান্ত গ্রহণের মূল উৎস হচ্ছেন আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল। তাই বাকী সব সিদ্ধান্ত হবে সেই উৎসের ভিত্তিতে।

2.     চলা ফেরায় যেমন দায়িত্বশীলের আগে চলা যাবেনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণেও দায়িত্বশীলের আগে যাওয়া যাবেনা-পাশ কাঠিয়ে যাওয়া যাবে না।

3.     রাসূলের মজলিসে তথা কুরআন হাদীসের আলোচনা হয় এমন বৈঠকে অথবা বৈঠক চলাকালীন এর আশে পাশে কথা বলা যাবেনা।

4.     দায়িত্বশীলের সামনে উচ্চ কন্ঠে কথা বলা যাবেনা। দায়িত্বশীলের কথার উপরে কথা বলা যাবেনা।

5.     কারো সাথে দেখা করতে এ্যাপোয়েন্টম্যান্ট নিয়ে দেখা করতে হবে। টেলিফোন করতে সময় জ্ঞান থাকা চাই।

6.     বড় বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে এ সংক্রান্ত তথ্য ভাল ভাবে যাচাই করে নিতে হবে।