ইসলামী
সংগঠনঃ দাওয়াত ও কর্মসূচী-কুরআন হাদীসের আলোকে
মুহাম্মদ
নজরুল ইসলাম
মানুষ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি-আশরাফুল
মাখলুকাত। যাদের সৃষ্টি করা হয়েছে আল্লাহর গোলামীর জন্য। মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য
সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ঘোষনাঃ
﴿وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ﴾
“কেবলমাত্র
গোলামী করার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে মানব এবং জীন জাতিকে।” (সূরা আয-যারিয়াতঃ ৫৬)
কুরআনে করীমের সূচনাতেই তাই আল্লাহ তামাম
জাহানের সকল মানুষকে উদ্দেশ্য করে নির্দেশ করেছেনঃ
﴿يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ
وَالَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ﴾
“হে মানব
জাতি। তোমরা গোলামী কর তোমাদের রবের, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং সৃষ্টি করেছেন
তোমাদের পূর্ববর্তীদের। আশা করা যায় (এ গোলামী করার মাধ্যমে) তোমরা মুত্তাকী হতে
পারবে।” (সূরা আল-বাকারাঃ
২১)
রাসূলে কারীম সা. এ সম্পর্কে বলেছেন, যা হাদীসে
হযরত মুয়া’জ রা. বর্ণিত হয়েছে এই ভাবেঃ
عَنْ مُعَاذٍ t قَالَ كُنْتُ رِدْفَ النَّبِيِّ ﷺ عَلَى حِمَارٍ يُقَالُ لَهُ عُفَيْرٌ، فَقَالَ يَا مُعَاذُ، هَلْ تَدْرِي
حَقَّ اللَّهِ عَلَى عِبَادِهِ وَمَا حَقُّ الْعِبَادِ عَلَى اللَّهِ. قُلْتُ اللَّهُ
وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ فَإِنَّ حَقَّ اللَّهِ عَلَى الْعِبَادِ أَنْ يَعْبُدُوهُ
وَلاَ يُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا، وَحَقَّ الْعِبَادِ عَلَى اللَّهِ أَنْ لاَ يُعَذِّبَ
مَنْ لاَ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا. فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ ﷺ أَفَلاَ أُبَشِّرُ بِهِ النَّاسَ قَالَ لاَ تُبَشِّرْهُمْ فَيَتَّكِلُوا.
“আমি নবী
সা. এর পিছনে একটি গাধার পিঠে বসা ছিলাম। তিনি বললেনঃ হে মুআজ!তুমি কি জানো
বান্দার উপর আল্লাহর হক কি এবং আল্লাহর উপর বান্দার হক কি? আমি বললাম, আল্লাহ ও
তাঁর রাসূল ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ বান্দার উপর আল্লাহর হক হলঃ তারা তাঁর ইবাদত
করবে এবং তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না। আর আল্লাহর উপর বান্দার হক হলঃ যে
ব্যক্তি তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করে না, তিনি তাকে শাস্তি দিবেন না। আমি বললাম, হে আল্লাহর
রাসূল! আমি কি মানুষকে এ সুসংবাদ দিবো না? তিনি বললেনঃ তুমি তাদের এ সুসংবাদ দিয়ো না, তাহলে তারা
এর উপর নির্ভর করে বসে থাকবে।” (বুখারী)
সেই গোলামী করতে আল্লাহর খলিফার দায়িত্ব দিয়ে
মানুষকে প্রেরণ করা হয়েছে দুনিয়ার বুকে। সাথে দেয়া হয়েছে পথ নির্দেশিকা বা
‘হেদায়াত’। আল্লাহর সুস্পষ্ট নির্দেশ-খলিফার দায়িত্ব পালন করতে এবং সত্যিকার গোলাম
হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করতে ঐ হেদায়াতকে অনুসরণ করতে হবে। নইলে রয়েছে ভয়াবহ
পরিণাম-জাহান্নাম ঠিকানা। বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে মানুষের স্রষ্টা আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মানুষেকে দুনিয়ায় পাঠাতে গিয়ে বলেছেনঃ
﴿فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُم مِّنِّي هُدًى فَمَن تَبِعَ هُدَايَ
فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ﴾﴿وَالَّذِينَ كَفَرُوا
وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا أُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ﴾
“অতঃপর আমার
তরফ থেকে তোমাদের প্রতি পথ নির্দেশিকা বা হেদায়াত যাবে। যারা ঐ হেদায়াতের অনুসরণ
করবে তাদের কোন ভয় থাকবেনা এবং ওরা চিন্তিত থাকবেনা। আর যারা কুফরী করবে এবং
মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে আমার আয়াত সমূহ, তারা হবে জাহান্নামের অধিবাসী। যেখানে থাকবে তারা
অনন্তকাল।” (সূরা আল-বাকারাঃ
৩৮)
অতএব, মানুষ যদি হেদায়াতের রাস্তা তথা ‘সিরাতাল
মুসতাকীম’ ধরে চলতে পারে, তাহলেই তার সৃষ্টির স্বার্থকতা। আর না চললে
ব্যর্থ এবং বিফলতা। মানব সৃষ্টির সূচনায় ফেরেশতাদের সমাবেশে মানুষের স্রষ্টা
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছিলেনঃ ﴿إِنِّي جَاعِلٌ فِي
الْأَرْضِ خَلِيفَةً﴾ ‘আমি যমীনে
আমার প্রতিনিধি বা খলিফা প্রেরণ করবো’। তখন ফেরেশতারা বলেছিলঃ ﴿أَتَجْعَلُ فِيهَا مَن
يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاءَ﴾ ‘আপনি কি এমন এক সম্প্রদায়কে প্রেরণ করবেন, যারা ওখানে
ফাসাদ সৃষ্টি করবে, রক্তক্ষরণ ঘটাবে’। তারা মনে করেছিল, খলিফা মানে তাদের মতো তাসবিহ তাহলিল করার কাজ করবে-এমন এক
সৃষ্টি। তাই তারা আরো একটু বাড়িয়ে বললোঃ ﴿وَنَحْنُ نُسَبِّحُ
بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ﴾ ‘আর আমরা
তো আপনার প্রশংসা করছি-তাসবিহ করছি, আপনার পাক-পবিত্রতা
বর্ণনা করছি’। তখন আল্লাহ বলেছিলেন, ﴿إِنِّي أَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُونَ﴾ ‘আমি যা
জানি, তোমরা তা
জাননা’।
মানুষকে হেদায়াতের পথে চলে প্রমাণ করতে হবে-মানুষঃ
একটি স্বার্থক সৃষ্টির নাম। মানুষকে রক্তক্ষরণ ও ফাসাদ সৃষ্টির জন্য তৈরী করা
হয়নি। মানুষের পথ সিরাতাল মুস্তাকীমের পথ। সেই হোদায়াতের পথ ধরে চলার মাধ্যমে
আল্লাহর রেজামন্দি
হাসিল করা ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠনের লক্ষ্য। ইসলামী সংগঠনের যাবতীয কাজ এবং তৎপরতা সে লক্ষ্যে নিবেদিত।
উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য
কাতার প্রবাসীদের নিয়ে গঠিত একটি সংগঠনের
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিম্নরূপঃ
“আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে প্রবাসী
বাংলাদেশীদের ভিতর ইসলামের প্রচার, ইসলামের আলোকে চরিত্র সৃষ্টি এবং বাংলাদেশে
ইসলামী সমাজ ও শান্তির পরিবেশ সৃষ্টিতে সহযোগিতা করাই... ... ... এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য।”
আল্লাহ প্রদত্ত হেদায়াতের অনুসরণ করে যে মানুষ, সে মানুষই আল্লাহর নিকট মুমিন বা ঈমানদার। আর ঐ সকল মানুষ আল্লাহর
নিকট তাদের জান-মাল সর্বস্ব বিক্রি করে দেয়। নিজের স্বাধীনতা, ইচ্ছা, এখতিয়ারকে
সম্পূর্ণ নিবেদিত করে দেয় আল্লাহ নির্দেশের সম্মুখে। প্রমাণ করে নিজেকে একজন অনুগত
‘গোলাম’ হিসাবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেনঃ
﴿إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَىٰ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ
وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ ۚ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ
فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ ۖ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ
وَالْإِنجِيلِ وَالْقُرْآنِ ۚ وَمَنْ أَوْفَىٰ بِعَهْدِهِ مِنَ اللَّهِ ۚ فَاسْتَبْشِرُوا
بِبَيْعِكُمُ الَّذِي بَايَعْتُم بِهِ ۚ وَذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ﴾
“আল্লাহ মুমিনদের থেকে জান্নাতের বিনিময়ে তাদের
জান ও তাদের মাল খরিদ করে নিয়েছেন, এরা আল্লাহর পথে লড়াই করে, অতঃপর (এই
লড়াইয়ে কখনো কাফেরদের) তারা হত্যা করে,
(কখনো আবার
শত্রুর হাতে) তারা নিজেরা নিহত হয়। (মুমিনদের সাথে) এই খাঁটি ওয়াদা (এর আগে)
তাওরাত ইঞ্জিলেও করা হয়েছিল, (আর এখন তা) এই কুরআনে (করা হচ্ছে) এই ওয়াদা
পালন করা আল্লাহর নিজস্ব দায়িত্ব, আর আল্লাহর চাইতে কে বেশী ওয়াদা পূরণ করতে পারে? অতএব (হে
মুমিনেরা) তোমরা তাঁর সাথে যে কেনাবেচার কাজটি (সম্পন্ন) করলে, তাতে আনন্দ
প্রকাশ করো এবং এটি হচ্ছে এক মহা সাফল্য।” (সূরা আত-তাওবাঃ ১১১)
যখন একজন মানুষ আল্লাহর পথে নিজের জান এবং
মালসহ সর্বস্ব উজাড় করে আল্লাহর কাছে তা বিক্রির বাস্তব প্রমাণ দেয়। তখনই প্রমাণিত
হয় সে আল্লাহ প্রদত্ত হেদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাই কুরআন শিক্ষা দেয় মুমিনদের এই
ঘোষনা প্রদানেরঃ
﴿إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ
وَالْأَرْضَ حَنِيفًا ۖ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ﴾
“আমি একমুখী
হয়ে নিজের লক্ষ্য সে মহান সত্তার দিকে কেন্দ্রীভূত করছি, যিনি আসমান
ও জমীন সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের দলভূক্ত নই।” (সূরা আল-আনআমঃ ৭৯)
﴿قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ
رَبِّ الْعَالَمِينَ﴾
“বল! আমার
নামায, আমার ত্যাগ
ও কুরবানী, আমার জীবন এবং আমার মৃত্যু সেই
আল্লাহর জন্য, যিনি সারা জাহানের রব (প্রতিপালক)।” (সূরা আল-আনআমঃ ১৬২)
হাদীসে রাসূলের বিবরণ কুরআনের সেই কথা গুলোকে
আরো স্পষ্টতর করে। মুমিন জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সা. এর বক্তব্যঃ
وَعَنْ أَبِي أُمَامَة َt قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ مَنْ أَحَبَّ لِلَّهِ وَأَبْغَضَ
لِلَّهِ وَأَعْطَى لِلَّهِ وَمَنَعَ لِلَّهِ فَقَدِ اسْتكْمل الْإِيمَان.
“হযরত আবু
উমামা রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেছেনঃ “যে ভালবাসল আল্লাহর জন্য, শত্রুতা
রাখল আল্লাহর জন্য, কাউকে দান করল আল্লাহর জন্য, দান করা
থেকে বিরত থাকল আল্লাহর জন্য, সে পরিপূর্ণ ঈমানদান।” (আবু দাউদ)
عَنِ الْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ t أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ ذَاقَ طَعْمَ الإِيمَانِ مَنْ رَضِيَ بِاللَّهِ رَبًّا وَبِالإِسْلاَمِ
دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ ﷺ رَسُولاً.
হযরত আব্বাস রা. হতে বণিত, তিনি রাসূলূল্লাহ
সা. থেকে শুনেছেন যে, তিনি বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে আল্লাহকে রব, ইসলামকে
দ্বীন এবং মুহাম্মদ সা.কে রাসূল হিসাবে গ্রহণ করল, সে ঈমানের
প্রকৃত স্বাদ গ্রহণ করল।”
প্রবাসী এই সংগঠন তার সামগ্রিক তৎপরতার লক্ষ্য
তাই নির্ধারণ করেছে মহান মনিবের সন্তুষ্টি। (মুসলিম)
দাওয়াত
এই সংগঠন কাতার প্রবাসীদের মাঝে কাজ করতে
নিম্নোক্ত দুই দফা দাওয়াত প্রদান করেঃ
(১) সাধারণ ভাবে সকল মানুষ ও বিশেষ ভাবে
প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি আল্লাহর দাসত্ব ও রাসূল সা. এর আনুগত্য করার আহবান।
(২) ইসলাম গ্রহণকারী ও ঈমানের দাবীদার সকল
মানুষের প্রতি বাস্তব জীবনে কথা কাজের গরমিল পরিহার করে খাঁটি ও পূর্ণ মুসিলম
হওয়ার আহবান।
কুরআনে হাকীমে যে কথা গুলো বলা হয়েছে নিম্নোক্ত
ভাষায়ঃ
﴿وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولًا أَنِ اعْبُدُوا
اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ ۖ فَمِنْهُم مَّنْ هَدَى اللَّهُ وَمِنْهُم
مَّنْ حَقَّتْ عَلَيْهِ الضَّلَالَةُ ۚ فَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَانظُرُوا كَيْفَ
كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ﴾
“আমি অবশ্যই
প্রত্যেকটি জাতির কাছে কোন না কোন রাসূল পাঠিয়েছি, যাতে করে
(এই কথার ঘোষনা দেয়া হয় যে,) তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত করো এবং (আল্লাহর)
না-ফরমানী শক্তি সমূহকে বর্জন করো, সে জাতির মধ্যে অতঃপর আল্লাহ কিছু লোককে
হেদায়াত দান করেন আর কতেক লোকের উপর গোমরাহী চেপে বসে গেছে। অতএব (হে মানুষ) তোমরা
(আল্লাহর) যমীনে পরিভ্রমন করো এবং দেখো যারা (রাসূলদের) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে
তাদের কি (ভয়াবহ) পরিণাম হয়েছিল। (সূরা আন-নাহলঃ ৩৬)
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا
الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْ ۖ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ
فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ
وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا﴾
“হে মানুষ
তোমরা যারা ঈমান এনেছো, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, (তাঁর) রাসূলের
আনুগত্য কর এবং (রাসূলের পর) সে সব লোকদের-যারা তোমাদের (ঈমানদার জনগোষ্ঠীর) মাঝে
(বিশেষভাবে) দায়িত্বপ্রাপ্ত, অতঃপর তোমাদের মাঝে যদি কোন ব্যাপারে মতবিরোধের
সৃষ্টি হয়, তাহলে সেই (বিরোধপূর্ণ) বিষয়টিকে (ফায়সালার
জন্য) আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাও, যদি তোমরা (সত্যিকার অর্থে) আল্লাহর উপর এবং
শেষ বিচারের দিনের উপর ঈমান এনে থাকো! (তাহলে) এই পদ্ধতিই হচ্ছে (তোমাদের মাঝে
বিরোধ মিমাংসার) সর্বোৎকৃষ্ট (পন্থা) এবং সুষ্ঠু পরিণতির দিক থেকেও (এটি) হচ্ছে
উত্তম পন্থা।” (আন-নিসাঃ
৫৯)
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً
وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ ۚ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ﴾
“হে ঈমানদার
লোকেরা তোমরা (যখন একবার ইসলাম স্বীকার করে নিয়েছো, তখন এই সব
মানুষদের মতো না চলে বরং) পুরোপরিই ইসলামের ছায়াতলে এসে যাও এবং কোন অবস্থায়ই
(অভিশপ্ত) শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। কেননা শয়তান হচ্ছে মানুষের প্রকাশ্যতম
দূশমন।” (সূরা আল-বাকারাঃ
২০৮)
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا
تَفْعَلُونَ﴾﴿كَبُرَ مَقْتًا عِندَ اللَّهِ أَن تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُونَ﴾
“হে
ঈমানদারগন! কেন তোমরা এমন কথা বল, যা তোমরা করোনা। আল্লাহর নিকট ক্রোধ উদ্রেককারী
ব্যাপার হচ্ছে এই যে, তোমরা যা বল, তা তোমরা
করোনা।” (সূরা আস-সফঃ
০২-০৩)
﴿إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ
وَلَن تَجِدَ لَهُمْ نَصِيرًا﴾
“নিশ্চয়ই
মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থান করবে। (আর এই ফায়সালা হয়ে যাওয়ার
পর সেদিন) তুমি তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী খুঁজে পাবেনা।” (সূরা আন-নিসাঃ ১৪৫)
আর এসব আয়াতই মানুষদের আল্লাহর দাসত্ব ও রাসূল
সা.এর আনুগত্যের পাশাপাশি মানুষদেরকে কথা ও কাজের গরমিল পরিহারের আহবান জানায়। নবী
ও রাসূল সা. গন মানুষদেরকে মূলতঃ সে আহবানই জানিয়েছেন। আহবান জানিয়েছেন বিশ্বনবী
মুহাম্মদ সা. একই ধারাবাহিকতায়। আর এই সংগঠনের দাওয়াত কুরআনের সুস্পষ্ট নির্দেশ ও
নবী রাসূলগনের যথাযথ অনুসরণের ফলশ্রুতি।
কর্মসূচী
আধুনিক বিশ্বের অত্যাধুনিক জাহেলিয়াতের এ যুগে
ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় এই সংগঠনের কর্মসূচী-‘যুগোপযোগী, যুক্তিভিত্তিক
ও বিজ্ঞান সম্মত কর্মসূচী’। যা অতীতের অভিজ্ঞতা, বর্তমান
সমস্যা আর ভবিষ্যতের সম্ভাবনার আলোকে গৃহীত, কুরআন সুন্নাহর আলোকে স্থীরিকৃত-অর্থাৎ এ
কর্মসূচী গুলো গ্রহণ করা হয়েছে কুরআনের নির্দেশনা এবং রাসূল সা. এর ইসলামী
আন্দোলন ও সংগঠনের কর্মসূচীর আলোকে। এ পর্যায়ে প্রতিটি কর্মসূচী ধারাবাহিক ভাবে
উপস্থাপিত হল।
প্রথম দফা কর্মসূচী
দাওয়াত ও তাবলীগঃ আহবান ও প্রচার
“সর্ব শ্রেণীর মানুষের নিকট ইসলামের প্রকৃতরূপ তুলে ধরে চিন্তার
বিশুদ্ধিকরণ ও বিকাশ সাধনের মাধ্যমে জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইসলামের অনুসরণ করার
অনুভূতি জাগ্রত করা।”
এ ব্যাপারে কুরআনের নির্দেশঃ
﴿وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّن دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ
صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ﴾
“আর তাঁর
কথার চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে, যে আহবান করে আল্লাহর দিকে, আমলে সালেহ
(নেক আমল) করে এবং ঘোষনা করে আমি মুসলমানদের অন্তর্ভূক্ত।” (সূরা হা-মীম-আস সাজদাঃ ৩৩)
﴿ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ
الْحَسَنَةِ ۖ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ
أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ ۖ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ﴾
“ডাক তোমার
রবের পথের দিকে হিকমাত ও উত্তম নসীহতের সাথে। আর লোকদের সাথে
পরস্পর বিতর্ক কর উত্তম পন্থায়। তোমার রবই অধিক অবগত আছেন, কে তাঁর পথ
হতে গোমরাহ রয়েছে আর কে সঠিক পথে আছে।” (সূরা আন-নাহলঃ ১২৫)
وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ
بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنْ الْمُنْكَرِ وَأُوْلَئِكَ هُمْ الْمُفْلِحُونَ
“অবশ্যই
তোমাদের মাঝে থাকবে এমন একটি দল, যারা আহবান করবে কল্যাণের দিকে। আদেশ করবে সৎ
কাজের আর বাঁধা দেবে অসৎ কাজে। আর এরাই সফলকাম।” (সূরা আলে ইমরানঃ ১০৪)
হাদীসের বর্ণনা থেকে জানা যায়ঃ
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَو t قَال قَالَ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ بَلَّغُوْا وَلَوْعَنِّيْ اَيَةٍ وَحَدَّثُوْا عَنْ بَنِيْ اِسْرَائِيْلَ
وَلاَ حَرَجَ، وَمَنْ كَذِبَ عَلَىَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّا مَقْعَدَهُ مِنِ
النَّارِ.
“আব্দুল্লাহ
ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সা. এরশাদ করেছেনঃ পৌছে দাও, যদি আমার
পক্ষ থেকে একটি আয়াতও হয়। বনী ইসরাঈল সম্পর্কে আলোচনা কর-তাকে কোন দোষ নাই। আর যে
আমার প্রতি ইচ্ছা করে মিথ্যারোপ করে, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে সন্ধান করে।” (বুখারী)
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَة َt اَنَّ رَسُوْلَ الله ﷺ قَالَ مَنْ دَعَا اِلَى هُدًى كَانَ
لَهُ مِنَ الاَجْرِ مِثْلُ اُجُوْرِ مَنْ تَبِعَهُ لاَيَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ اُجُوْرِهِمْ
شَيْئًاوَمَنْ دَعَا اِلَى ضَلاَلَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الاِثْمِ مِثْلَ اَثَامِ
مَنْ تَبِعَهُ لاَيَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ اَثَامَهَمْ شَيْئًا
“আবু
হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. বলেনঃ যে ব্যক্তি সঠিক পথের
দিকে ডাকে তার জন্য এ পথের অনুসারীদের বিনিময়ের সমান বিনিময় রয়েছে। এতে তাদের বিনিময়
কিছু মাত্র কম হবে না। আর যে ব্যক্তি ভ্রান্ত পথের দিকে ডাকে, তার উক্ত
পথের অনুসারীদের গুনাহের সমান গুনাহ হবে। এতে তাদের গুনাহ কিছুমাত্র কম হবেনা।” (মুসলিম)
নবী মুহাম্মদ সা. এর আন্দোলনের প্রথম দফা
কর্মসূচী ছিল দাওয়াত ইলাল্লাহ। আর নবীজির জীবনের সিংহভাগ কর্ম জুড়ে আছে সেই
দাওয়াতী কার্যক্রম। তাই এই সংগঠন তার সর্বপ্রথম যে কর্মসূচী নির্ধারণ করেছে, তা হচ্ছে
দাওয়াত ও তাবলীগ বা আহবান ও প্রচার।
দ্বিতীয় দফা কর্মসূচী
তানযীম ও তারবিয়াতঃ সংগঠন ও প্রশিক্ষণ
“ইসলামকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে
অনুসরণে আগ্রহী ব্যক্তিদেরকে সংগঠিত করা ও তাদেরকে ইসলামী জ্ঞান প্রদান ও আদর্শ
চরিত্রবানরূপে গড়ে তুলে জাহেলিয়াতের যাবতীয় চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় ইসলামের
শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার যোগ্যতা সম্পন্ন কর্মী রূপে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে প্রশিক্ষণ
দান করা।”
এ দফার দুইটি দিকঃ
১. তানযীম
বা সংগঠন।
২.
তারবিয়াত বা প্রশিক্ষণ।
সংগঠনঃ
“ইসলামকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে অনুসরণে আগ্রহী ব্যক্তিদের সংগঠিত
করা।”
এ ব্যাপারে কুরআনের ঘোষনাঃ
﴿وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ۚ
وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ
قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنتُمْ عَلَىٰ شَفَا
حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ
لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ﴾
“তোমরা সবাই
মিলে আল্লাহকে (ও তার বিধানকে) শক্ত করে আঁকড়ে ধরো এবং কখনো বিচ্ছিন্ন হয়োনা।
তোমরা (সব সময়) তোমাদের উপর আল্লাহর সেই নিয়ামতের কথা স্মরণ করো-(বিশেষ করে) যখন
তোমরা একে অপরের দুশমন ছিলে-আল্লাহ (তাঁর দ্বীনের বন্ধন দিয়ে) তোমাদেরকে একের জন্য
অপরের মনে ভালবাসার সঞ্চার করে দিলেন। অতঃপর (দেখা গেলো যুগ যুগান্তরের শত্রুতা
ভূলে) তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহে একে অপরের ‘ভাই’ হয়ে গেলে, অথচ তোমরা
ছিলে (শত্রুতা ও হানাহানির) আগুনে ভরা এ (গভীর) খাদের প্রান্তসীমায় দাঁড়ানো, (যে কোন সময়
সেখানে নিমজ্জিত হয়ে তোমরা নিশ্চিত ধ্বংস হয়ে যেতে), সেই
(নিশ্চিত ধ্বংসের কবল) থেকে আল্লাহ তাঁর দ্বীনের রহমাত দিয়ে) তোমাদের উদ্ধার
করলেন। আল্লাহ এভাবে তাঁর (নেয়ামতের) নিদর্শন সমূহ তোমাদের কাছে স্পষ্ট করে বর্ণনা
করেন, যাতে করে
(এর মাধ্যমে) তোমরা সঠিক পথের সন্ধান পেতে পারো।” (সূরা আলে ইমরানঃ ১০৩)
﴿إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِهِ
صَفًّا كَأَنَّهُم بُنْيَانٌ مَّرْصُوصٌ﴾
“আল্লাহ তো
ভালবাসেন তাদের, যারা তাঁর পথে করে সংগ্রাম সুসংঘবদ্ধ হয়ে এমন
ভাবে, যেন তারা
একটি সীসাঢালা প্রাচীর।” (সূরা আস সফঃ ০৪)
﴿شَرَعَ لَكُم مِّنَ الدِّينِ مَا وَصَّىٰ بِهِ نُوحًا وَالَّذِي
أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَىٰ ۖ
أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ ۚ كَبُرَ عَلَى الْمُشْرِكِينَ
مَا تَدْعُوهُمْ إِلَيْهِ ۚ اللَّهُ يَجْتَبِي إِلَيْهِ مَن يَشَاءُ وَيَهْدِي
إِلَيْهِ مَن يُنِيبُ﴾
“(হে মানুষ)
আল্লাহ তোমাদের জন্য সে ‘দ্বীনই’ নির্ধারিত করেছেন, যার আদেশ
তিনি দিয়েছিলেন নুহকে এবং যা আমি তোমাদের কাছে ওহী করে করে পাঠিয়েছি, (উপরন্তু)
যার আদেশ আমি ইব্রাহীম, মুসা ও ঈসাকে দিয়েছিলাম, (এদের
সবাইকে আমি বলেছিলাম যে,) তোমরা সবাই (আমার মনোনীত) এ জীবন বিধানকে (সমাজে)
প্রতিষ্ঠিত করো এবং (কখনো) এতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না, আর তুমি যে
(দ্বীনের) দিকে আহবান করছো এটা মুশরিকদের কাছে একান্ত দূর্বিসহ মনে হয় (মূলত) আল্লাহ
যাকে চান তাকে বাছাই করে নিজের দিকে নিয়ে আসেন এবং যে ব্যক্তি তার অভিমুখী হয় তিনি
তাকে (দ্বীনের পথে) পরিচালিত করেন।” (সূরা আশ-শুরাঃ১৩)
হাদীসে রাসূল হতে জানা যায়ঃ
عَنْ أَبِي ذَرّ ٍt قَالَ:
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ شِبْرًا
فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ الْإِسْلَامِ مِنْ عُنُقِهِ
“হযরত আবু
যর গিফারী রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি
জামায়াত ত্যাগ করে এক বিঘত পরিমাণ দুরে সরে গেল, সে যেন তার
গলা থেকে ইসলামের রজ্জু খুলে নিল।” (আহমদ/আবু দাউদ)
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ t قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ: مَنْ خَرَجَ مِنَ الطَّاعَةِ وَفَارَقَ الْجَمَاعَةَ فَمَاتَ
مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً
“হযরত আবু
হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা.কে একথা বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি
আমীরের আনুগত্য অস্বীকার করতঃ জামায়াত পরিত্যাগ করল এবং সে অবস্থায় মারা গেল। সে
জাহেলিয়াতের মৃত্যু বরণ করল।” (মুসলিম)
প্রশিক্ষণঃ
(ইসলামকে
জীবনের সর্বক্ষেত্রে অনুসরণে আগ্রহী ব্যক্তিদেরকে সংগঠিত করার কাজটি হয়ে যাবার পর)
“তাদেরকে ইসলামী জ্ঞান প্রদান ও আদর্শ চরিত্রবান রূপে গড়ে তুলে জাহেলিয়াতের
যাবতীয় চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার যোগ্যতা সম্পন্ন কর্মীরূপে
গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে প্রশিক্ষণ দান করা।”
এ ব্যাপারে কুরআন বলছেঃ
﴿هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولًا مِّنْهُمْ يَتْلُو
عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ
وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ﴾
“তিনি সেই
সত্তা, যিনি
নিরক্ষরদের মাঝ থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন। যিনি তাদেরকে তাঁর আয়াত সমূহ পড়ে
শুনান। তাদের পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদের শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমাত। অথচ ইতিপূর্বে
তারা ছিল গোমরাহীতে নিমজ্জিত।” (সূরা আল-জুমুয়াঃ ০২)
﴿وَمَا كَانَ الْمُؤْمِنُونَ لِيَنفِرُوا كَافَّةً ۚ فَلَوْلَا
نَفَرَ مِن كُلِّ فِرْقَةٍ مِّنْهُمْ طَائِفَةٌ لِّيَتَفَقَّهُوا فِي الدِّينِ
وَلِيُنذِرُوا قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُوا إِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُونَ﴾
“মুমিনদের
কখনো (কোন অভিযানে) সবার একত্রে বের হওয়া ঠিক নয় (তারা) এমন কেন করলো না যে, তাদের
প্রত্যেক দল থেকে কিছু কিছু লোক বের হতো এবং দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞানানুশীলন করতো।
অতঃপর যখন তারা (অভিযান শেষে) নিজ জাতির কাছে ফিরে আসতো, তখন তাদের
জাতিকে তারা (আযাবের) ভয় দেখাতো। আশা করা যায় এতে তারা সতর্ক হয়ে চলবে। (সূরা আত-তাওবাঃ ১২২)
হাদীসে রাসূলের বর্ণনায় এ কাজটিকে গুরুত্ব দেয়া
হয়েছে এভাবেঃ
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ t قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى
كُلِّ مُسْلِمٍ
“হযরত আনাস
রা. থেকে বর্ণিত, নবী সা. বলেছেনঃ প্রত্যেক মুসলমানদের উপর জ্ঞান
অর্জন করা ফরয।” (ইবনে
মাযাহ)
قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ t تَدَارُسُ الْعِلْمِ سَاعَةً مِنْ اللَّيْلِ خَيْرٌ
مِنْ إِحْيَائِهَا
“হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাতের কিছু সময় ইলমে দ্বীনের পারস্পরিক আলোচনায়
থাকা সারারাত জেগে ইবাদত করার অপেক্ষা উত্তম।” (দারেমী)
তৃতীয় দফা
ইসলাহে মুয়া’শারাঃ সমাজ সংস্কার ও সেবার কাজ
“ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সামাজিক সংশোধন,
নৈতিক পূণর্গঠন, সাংস্কৃতিক পরিবর্তন সাধন ও দূঃস্থ মানবতার সেবা করা।”
বিষয়টাকে এই সংগঠন বাংলা ভাষায় সমাজ সংস্কার ও
সেবার কাজ বলে থাকে। এ ব্যাপারে কুরআন বলছেঃ
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُحِلُّوا شَعَائِرَ اللَّهِ
وَلَا الشَّهْرَ الْحَرَامَ وَلَا الْهَدْيَ وَلَا الْقَلَائِدَ وَلَا آمِّينَ
الْبَيْتَ الْحَرَامَ يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِّن رَّبِّهِمْ وَرِضْوَانًا ۚ وَإِذَا
حَلَلْتُمْ فَاصْطَادُوا ۚ وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ أَن صَدُّوكُمْ
عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ أَن تَعْتَدُوا ۘ وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ
وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ ۚ وَاتَّقُوا
اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ﴾
“হে ঈমানদার
বান্দারা, তোমরা আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অসম্মাণ কর না।
সম্মানিত মাসগুলোকেও (যুদ্ধ-বিগ্রহের জন্য) কখনো হালাল বানিয়ে নিওনা। (আল্লাহর
নামে) উৎসর্গকৃত জন্তুসমূহ ও যে সব জন্তুর গলায় (এই উৎসর্গের চিহ্ন হিসাবে) পট্টি
বেঁধে দেয়া হয়েছে, যারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি অর্জনের
লক্ষ্যে আল্লাহর পবিত্র (কাবা) ঘরের দিকে রওয়ানা দিয়েছে (তাদের তোমরা অসম্মান করো
না), তোমরা যখন ইহরামুক্ত হবে তখন তোমরা শিকার করতে পারো। (বিশেষ) কোন একটি
সম্প্রদায়ের বিদ্বেষ-(এমন বিদ্বেষ যার কারণে) তারা তোমাদের আল্লাহর পবিত্র মসজিদে
আসার পথ বন্ধ করে দিয়েছিল, যেন তোমাদের (কোন রকম) সীমালংঘন করতে প্ররোচিত
না করে। তোমরা (শুধু) নেককাজ ও তাকওয়ার ব্যাপারেই একে অপরের সহযোগিতা করো, পাপ ও
বাড়াবাড়ির কাজে (কখনো) একে অপরের সহযোগিতা কর না, সর্বাবস্থাই
আল্লাহকে ভয় কর, কেননা আল্লাহ (পাপের) দন্ডদানের ব্যাপারে
অত্যন্ত কঠোর।” (সূরা আল-মায়িদাঃ
০২)
﴿وَآتِ ذَا الْقُرْبَىٰ حَقَّهُ وَالْمِسْكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ
وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا﴾﴿إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ
الشَّيَاطِينِ ۖ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُورًا﴾
“তোমরা
(তোমাদের) আত্মীয় স্বজনকে তাদের (যথার্থ) পাওনা আদায় করে দেবে, অভাবগ্রস্তও
মুসাফিরদের (তাদের হক আদায় করে দেবে,)
কখনো
অপব্যয় করোনা। অবশ্যই অপব্যয়কারীরা হচ্ছে শয়তানের ভাই, আর শয়তান
হচ্ছে তার মালিকের প্রতি বড়ই অকৃতজ্ঞ।” (সূরা বনী ইসরাঈলঃ ২৬-২৭)
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ارْكَعُوا وَاسْجُدُوا
وَاعْبُدُوا رَبَّكُمْ وَافْعَلُوا الْخَيْرَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ۩﴾
“হে
ঈমানদারগন! তোমরা রুকু কর এবং সেজদা কর আর তোমাদের রবের গোলামী কর এবং কল্যাণ মূলক
কাজ করো। আশা করা যায় (এ কাজ করার মাধ্যমে) তোমরা সফলতা লাভ করবে।” (সূরা আল-হাজ্জঃ ৭৭)
عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ t قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ مَنْ لاَ يَرْحَمِ النَّاسَ لاَ يَرْحَمْهُ
اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ .
“জারীর ইবনে
আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেনঃ যে ব্যক্তি মানুষকে দয়া
করে না, আল্লাহ
তাকে দয়া করেন না।” (বুখারী ও
মুসলিম)
এ সূদীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে ইসলামী সংগঠনের
কাজ-কর্মকে কুরআন সুন্নাহর দৃষ্টিকোন থেকে উপস্থাপনের প্রয়াস চালানো হল। আমাদের এ
প্রয়াসের উদ্দেশ্য ইলমের চর্চার মাধ্যমে মাবুদের রেজামন্দি অর্জন। নিজে যা জানলাম, তা অন্যের
কাছে সম্ভাব্য সকর প্রচেষ্টায় পৌছে দিয়ে নিজের উপর
অর্পিত দায়িত্ব থেকে মুক্তি লাভের কর্মসূচীতে এ প্রয়াসও একটি। এ লিখনির মাধ্যমে
আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, যারা দূর থেকে অবলোকন করছেন ইসলামী সংগঠনকে, তারা যেন
চিন্তার সুযোগ পান এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে উদ্যোগী হোন। আর যারা ইসলামী সংগঠনের ঘরের
লোক, যারা ইসলামী
সংগঠনের ভিতরে থেকে বিভিন্ন স্তরে কাজ করছেন, তারা যেন নিজের দৈনন্দিন তৎপরতায় একে প্রয়োজনীয়
তথ্য উপাদান হিসাবে কাজে লাগাতে পারেন। নিজের বিশ্বাস ও কর্মসূচীর সমর্থনে তথ্য
ভান্ডারে যেন নিজেকে করতে পারেন সমৃদ্ধ-এ প্রয়াস তাদের সে উদ্দেশ্য সাধনে সামান্য
হলেও সহযোগিতা করবে।
তবে আমরা যারা ইসলামী সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্ট
এবং যারা আমরা দূরে থেকে ইসলামী সংগঠনকে অবলোকন করছি, তাদের
সকরকে একটি কথা অত্যন্ত মনযোগ দিয়ে হৃদয় দিয়ে বুঝতে হবে যে, আমরা সবাই
সৃষ্টিগত ভাবে আল্লাহর গোলাম। আর গুলামী যথাযথ ভাবে করার মাঝেই আমাদের কল্যাণ ও
মুক্তি নিহিত। বিধায় যে কোন প্লাটফর্মে তথা যে কোন ইসলামী সংগঠনে অবস্থান করে উপরোক্ত
কাজ গুলো সম্পাদনের মাধ্যমে আমরা যে গোলাম-একথা প্রমাণ দিতে হবে।
আল্লাহ আমাদের যাবতীয় প্রচেষ্টাকে ইবাদত হিসাবে কবুল করুন। আমীন।
0 Comments