ঈদের নামাযের তাকবীরঃ ১২ না ৬ – মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম

ভূমিকাঃ

ইদানিংকালে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, যারা মসজিদমুখী নন, নামাযের ব্যাপারে যারা গাফেল, তাদেরকে নামাযের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য আমাদের পেরেশানী কমে গেছে। আমাদের পেরেশানীর লক্ষ্যবস্তু এখন যারা মসজিদমুখী এবং যারা নামাযের পাবন্দ তারা। আমরা যারা এতদিন থেকে নামায পড়ছি, তাদের নামায নাকি হচ্ছেনা। কারণ রাসূল সা. এর একটি হাদীসে বলা হয়েছে “তোমরা নামায পড়, যেভাবে আমাকে নামায পড়তে দেখো”। আর রাসূলের সেই নামায আর আমাদের নামাযে নাকি বিস্তর ফরাক। তাই হানাফী মাযহাবের অনুসারীদের নামায হচ্ছেনা।



প্রতি ঈদে এই ধরণের একটি মাসআলা সামনে আসে যে, ঈদের নামাযের তাকবীর কতটি? মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসের সুযোগে দেখেছি যে, ইমাম সাহেব তাকবীর কতটি দেন, তা নামাযের মাঝে হিসাব রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই ইমামের আল্লাহু আকবার ধ্বনির সাথে আল্লাহু আকবার বলে হাত উঠানো, আর অপেক্ষায় থাকা কখন তিনি তাকবীর বলা বন্ধ করে ক্বিরাত শুরু করবেন-এছাড়া উপায় নাই।

আমাদেরই এক সহকর্মী ঈদের নামাযে ১২ তাকবীর হওয়ার পক্ষে আল্লাহর রাসূলের বেশক’টি হাদীস উল্লেখ করে বলেছেন এগুলো সহীহ হাদীস। আর চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন যে, হাদীসের কোথাও ৬ তাকবীরের কথা নেই। স্বভাবতঃ প্রশ্ন জাগে, তাহলে আমরা যারা ৬ তাকবীরে ঈদের নামায পড়ি তারা কি হাওয়ার উপর ভর করে ৬ তাকবীর দেয়া শুরু করলাম। বিশদ অধ্যয়নের পর বেরিয়ে আসে ৬ তাকবীরের পক্ষে সহীহ হাদীসের দলীল এবং ১২ তাকবীরের পক্ষে উপস্থাপিত হাদীস সমূহের সহীহ না হওয়ার পক্ষে প্রমাণ। আর এ নিয়েই  আমাদের এই প্রয়াস “ঈদের নামাযের তাকবীর”

সকলের সদয় অবগতির জন্য উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ঈদের নামাযের তাকবীরের ক্ষেত্রে হাদীসে রাসূলে কেবলমাত্র ৬ তাকবীর অথবা কেবলমাত্র ১২ তাকবীরই বলা হয়নি। বিধায় মুসলিম উম্মাহ যেটির উপরই আমল করতে চায়, সেটিরই সুযোগ রয়েছে। 

দ্বীনকে কঠিন না করে সহজ করতে হবে। যারা নামায পড়ছেন, তাদের নামাযের ত্রুটি না খুঁজে, যারা নামায পড়ছেন না তাদেরকে নামাযী বানানোর জন্য উদ্যোগী হতে হবে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের এই প্রচেষ্টাকে ইবাদত হিসাবে কবুল করুন। আমীন।।


ঈদের নামাযে ১২ তাকবীর এর পক্ষে পেশকৃত হাদীস গুলোর পর্যালোচনাঃ

উলামায়ে আহলে হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী বুখারী, মুসলিম, নাসায়ী এই তিন হাদীস গ্রন্থে ঈদের সালাতের তাকবীর সম্পর্কে কোন হাদীস নেই। অন্যান্য হাদীস গ্রন্থ সমূহে ঈদের সালাতে ১২ তাকবীর সম্পর্কে মোট ১৫২টি বা তার অধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ৬ তাকবীরের কোন অস্তিত্ব হাদীসের কিতাব সমূহে অনুপস্থিত। তারা তাদের মতের পক্ষে উল্লেখ যোগ্য যে সকল হাদীস উপস্থাপন করেন, সে গুলোর বিশুদ্ধতার ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেন হানাফী উলামায়ে কিরামগন। যেমন নিম্নের হাদীস সমূহ-যেখানে ঈদের নামাযে ১২ তাকবীর প্রদানের প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু হানাফী উলামারা এ সব হাদীসকে গ্রহণ না করে যুক্তি প্রদান করেছেন, যা হাদীসের নিচে উপস্থাপিত হলোঃ

প্রথম হাদীসঃ

قال الشافعي: سمعت سفيان بن عيينة، يقول: سمعت عطاء أبن أبي رباح، يقول: سمعت عبد الله بن عباس (رضـ)، يقول: أشهد على رسول الله (صـ) أنه كبر في صلاة العيدين في الأولى سبعاً سوى تكبيرة الاحرام وفي الثانية خمساً سوى تكبيرة القيام.
“ইমাম শাফিয়ী রাহ. বলেন, আমি সুফিয়ান ইবনে উয়াইনাকে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, আমি আতা ইবনে আবু রাবাহকে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, আমি রাসূল সা. এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি দূ’ঈদের সালাতের ১ম রাকাতে তাকবীরে তাহরীমাহ ব্যতিত ৭ তাকবীর দিয়েছেন এবং ২য় রাকাতে দাড়ানোর তাকবীর ব্যতিত ৫ তাকবীর দিয়েছেন।” (কিতাবুল উম্ম, খ.১, পৃ. ২৩৬)

আহলে হাদীসের উলামায়ে কিরামগন বলেন, হাদীসটি সনদ অধিক সহীহ এবং বর্ণনাকারীগণ অধিক গ্রহণযোগ্য আর অধিক প্রতিষ্ঠিত শব্দ سمعت (আমি নিজে শুনেছি) দ্বারা এসেছে।

হানাফী উলামায়ে কিরামগন ঐ হাদীসের ব্যাপারে বলেন,
এই হাদীসের তথ্যসূত্র উল্লেখ করা হয়েছে ‘কিতাবুল উম্ম’। কিন্তু উপরোক্ত সনদের কোন হাদীস কিতাবুল উম্মে নেই। শুধু তাই নয়, সহীহ হাদীসের যত কিতাব আছে, তার একটিতেও এমন সনদের হাদীস নেই। কিতাবুল উম্মে ঈদের তাকবীর সম্পর্কে যত হাদীস রয়েছে, তার কোন একটি হাদীসও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত নয়।

এই হাদীসের যে সনদ উল্লেখ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ বানানো একটি সনদ। কারণ সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা আতা ইবনে আবু রাবাহের ছাত্র নন। রিজাল শাস্ত্রের কোথাও তিনি ছাত্র হওয়ার কথা উল্লেখ নেই। অপর দিকে তিনি ছাত্র হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম এজন্য যে, সুফিয়ান ইবনে উয়াইনার জন্ম ১০৭ হিজরীতে আর আতা ইবনে আবু রাবাহের মৃত্যু ১১৪ হিজরীতে। মাত্র ৭ বছর বয়সে কুফার অধিবাসী সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা অতিদূরের মক্কার অধিবাসী আতা ইবনে আবু রাবাহের ছাত্র হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। আর মাত্র ৭বছর বয়সের একজন ব্যক্তির বক্তব্যের গ্রহণযোগ্যতারও প্রশ্ন রয়েছে।

দ্বিতীয় হাদীসঃ

عن كثير بن عبد الله، عن أبيه، عن جده، أن النبي (صـ) كبر في العيدين في الأولى سبعاً قبل القراءة والآخرة خمساً قبل القراءة.
“কাসীর ইবনে আব্দুল্লাহ আল মাযানী থেকে বর্ণিত, তিনি তার পিতা আব্দুল্লাহ ইবনে আমর আল মুযানী থেকে, তিনি তার পিতামহ (আমর ইবনে আওফ আল মুযানী রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী করীম সা. উভয় ঈদের নামাযেই প্রথম রাকাআতে কিরাত পাঠের পূর্বে সাতবার তাকবীর বলেছেন এবং দ্বিতীয় বা পরবর্তী রাকাআতে কিরাআত পাঠের পূর্বে পাঁচবার তাকবীর বলেছেন।” (তিরমিযি, ইবনে মাজাহ, দারিমী, মিশকাত)

হানাফী উলামায়ে কিরামগন ঐ হাদীসের ব্যাপারে বলেন,
হাদীসটির সনদ অত্যন্ত দূর্বল বা যয়ীফ।  কারণ হাদীসের সনদে একজন বর্ণনাকারীর নাম ‘কাসির ইবনে আব্দুল্লাহ’। তার সম্পর্কে ইমাম শাফেয়ী রাহ. বলেন, সে মিথ্যুকদের অন্যতম (هو ركن من أركان الكذب)।

ইবনে হিব্বান কাসির ইবনে আব্দুল্লাহ সম্পর্কে বলেন, কাসির ইবনে আব্দুল্লাহ তার পিতা এবং তার পিতা তার দাদা থেকে যে সনদ বর্ণনা করেছেন, এটি একটি মওযু তথা বানোয়াট সনদ। এমন সনদ কোন হাদীসের কিতাবে উল্লেখ করা অনুচিত (يروي عن أبيه عن جده نسخة موضوعة لا يحل ذكره في الكتب)

ইমাম বুখারী রাহ. এর মতে কাসির ইবনে আব্দুল্লাহ  منكر الحديث  তথা তার হাদীস অগ্রহণযোগ্য।

নাসায়ী রাহ. বলেন, তার হাদীস متروك বা পরিত্যাক্ত।

উপরোক্ত হাদীস সম্পর্কে ইমাম তিরমিযি রাহ. বলেন, “আমি হাদীসটি সম্পর্কে ইমাম বুখারী রাহ. এর কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, এটিই ঈদের তাকবীর সম্পর্কে সর্বোচ্চ সহীহ হাদীস।”

বিধায় একজন মিথ্যুক রাবীর হাদীস যদি সর্বোচ্চ সহীহ হাদীস হয়, তাহলে ১২ তাকবীর সম্পর্কে অপরাপর হাদীসের অবস্থা কি তা সহজে বোধগম্য এবং ১২ তাকবীর সম্পর্কে বাকী হাদীসগুলোর গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু।

তৃতীয় হাদীসঃ

عن نافع مولى عبد الله بن عمر(رضـ)، أنه قال : شهدت الأضحى والفطر مع أبي هريرة ، فكبر في الركعة الأولى سبع تكبيرات قبل القراءة، وفي الآخرة خمس تكبيرات قبل القراءة، قال مالك: وهو الأمر عندنا.
“নাফি রাহ. বলেন, আমি আবু হুরায়রা রা. এর সাথে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার নামাযে উপস্থিত হয়েছি, তিনি কিরাতের পূর্বে প্রথম রাকাআতে সাতটি তাকবীর ও দ্বিতীয় রাকআতে পাঁচটি তাকবীর বলেছেন। ইমাম মালিক রাহ. বলেন, আমাদের নিকট এটিই (শরয়ী) হুকুম।” (আল মুওয়াত্তা)

চতূর্থ হাদীসঃ

عن علي بن أبي طالب (رضـ) أنه كبر في العيدين والاستسقاء سبعاً و خمساً.
“আলী ইবনে আবি তালিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি দুই ঈদের সালাতে প্রথম রাকাআতে সাত তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকাআতে পাঁচ তাকবীর দিতেন এবং উচ্চস্বরে কিরাআত পড়তেন।”

পঞ্চম হাদীসঃ
عن أبن عباس (رضـ)، أنه كبر في العيد في الركعة الأولى سبعاً، ثم قرأ وكبر في الثانية خمساً.
“ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি ঈদের সালাতে প্রথম রাকাআতে সাত তাকবীর দিয়েছেন। অতঃপর কিরাআত পড়েছেন এবং দ্বিতীয় রাকাতে পাঁচ তাকবীর দিয়েছেন।”

হানাফী উলামায়ে কিরামগন ঐ হাদীস গুলোর ব্যাপারে বলেন,
উপরোক্ত ৩টি হাদীসের প্রথমটিতে আবু হুরায়রা রা., দ্বিতীয়টিতে হযরত আলী রা. এবং শেষ হাদীসে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এর আমল বর্ণনা করা হয়েছে, রাসূল সা. এর আমল বা উক্তি বর্ণনা করা হয়নি।

মাওকুফ তথা সাহাবায়ে কিরামদের আমল শরীয়াতের দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য শর্ত হলো হাদীসে মারফু সহীহের খেলাফ না হওয়া। কিন্তু উপরোক্ত ৩টি হাদীস ৬ তাকবীরের পক্ষে বর্ণিত হাদীসে মারফু সহীহ-এর খেলাফ। আর এধরণের হাদীস মাওকুফ, যা আমলযোগ্য নয়।

যদি প্রশ্ন করা হয় যে, ১২ তাকবীরের পক্ষেও হাদীস রয়েছে, তাহলে বলতে হবে-১২ তাকবীরের সমস্ত হাদীস যয়ীফ হওয়ায় অগ্রহণযোগ্য।

ষষ্ট হাদীসঃ

عن عمر بن الخطاب (رضـ)، أنه صلى صلاة العيد فكبر في الأولى سبعاً وفي الثانية خمساً يرفع يديه مع كل تكبير.
“উমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি ঈদের সালাত পড়েছেন। প্রথম রাকাতে তিনি সাত তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকাআতে পাঁচ তাকবীর  দিয়েছেন এবং প্রত্যেক তাকবীরে দূ’হাত উত্তোলন করেছেন।”

হানাফী উলামায়ে কিরামগন ঐ হাদীসের ব্যাপারে বলেন,
হযরত উমর রা. বর্ণিত এই হাদীসটির উদ্বৃতি প্রদান করা হয় বায়হাকী শরীফ থেকে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে বায়হাকী শরীফে এমন হাদীস নেই। বিধায় যারা বায়হাকী শরীফের উদ্বৃতি বলে উল্লেখ করেন, তারা অসত্যের আশ্রয় গ্রহণ করে থাকেন।

প্রকৃত পক্ষে তাহাবী শরীফে একটি লম্বা হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, উমর রা. এর যুগে ঈদের নামাযে ৬টি তাকবীর হওয়ার উপর ইজমা সংগঠিত হয়েছে।

যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেয়া হয় যে, বায়হাকী শরীফে উপরোক্ত হাদীস খানা রয়েছে, তাহলেও সেই কথাই প্রয়োজন্য যা বর্ণিত হয়েছে হযরত আবু হুরায়রা রা. হযরত আলী ইবনে আবি তালিব রা. এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণিত মাওকুফ হাদীসের ক্ষেত্রে তথা সাহাবায়ে কিরামদের আমল শরীয়াতের দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য শর্ত হলো হাদীসে মারফু সহীহের খেলাফ না হওয়া। কিন্তু উপরোক্ত ৩টি হাদীস ৬ তাকবীরের পক্ষে বর্ণিত হাদীসে মারফু সহীহ-এর খেলাফ। আর এধরণের হাদীস মাওকুফ, যা আমলযোগ্য নয়।

সপ্তম হাদীসঃ

عن عائشة (رضـ)، أن رسول الله (صـ) كان يكبر في العيدين سبعاً، وخمساً قبل القراءة.
“আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. দুই ঈদের সালাতে কিরাআতের পূর্বে সাত ও পাঁচ তাকবির দিতেন।”

অষ্টম হাদীসঃ
عن عائشة (رضـ) أن رسول الله (صـ) كان يكبر في الفطر والأضحى، في الأولى سبع تكبيرات، وفي الثانية خمساً.
“আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার সালাতের প্রথম রাকাআতে সাতবার ও দ্বিতীয় রাকাআতে পাঁচবার তাকবীর বলতেন।”

হানাফী উলামায়ে কিরামগন ঐ হাদীস দূ’টির ব্যাপারে বলেন,
হাদীসগুলো যয়ীফ। কারণ হাদীসের সনদে একজন রাবী হলেন আব্দুল্লাহ্ ইবনে লাহীয়া, যাকে অধিকাংশ মুহাদ্দিস যয়ীফ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

ইমাম তিরমিযী রাহ. বলেন, ইবনে লাহীয়ার হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করা যাবেনা। 

ইমাম নাসায়ী রাহ. বলেন, তিনি যয়ীফ।

আল্লামা শাওকানী রাহ. বলেন, ইবনে লাহীয়া যয়ীফ রাবী।

ইয়াহইয়া ইবনে মায়ীন রাহ. বলেন,  ইবনে লাহীয়া ضعيف الحديث (হাদীস বর্ণনায় দূর্বল)। তার হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করা যাবেনা।

ইমাম সা’দী বলেন, ইবনে লাহীয়ার হাদীস শিক্ষা করা তার হাদীস থেকে দলীল পেশ করা, তার হাদীস হিসাবে গণনা করা কোনটাই ঠিক না।

বিধায় কেবলমাত্র হযরত আয়েশা রা. বর্ণনা করেছেন বলেই তা গ্রহণ করার সুযোগ নেই, হাদীসের গ্রহণযোগ্যতা ও বিশুদ্ধতা হাদীস গ্রহণকারীর বিভিন্ন গুণাগুণের উপর নির্ভরশীল। 

নবম হাদীসঃ
عن عبد الله بن عمرو بن العاص (رضـ)، قال: قال نبي الله (صـ) التكبير في الفطر سبع في الأولى، وخمس في الأخرة، والقراءة بعدهما كلتيهما.
“আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সা. ইরশাদ করেন, ঈদুল ফিতরের প্রথম রাকাআতে সাত তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকাআতে পাঁচ তাকবীর এবং উভয় রাকাতে তাকবীরের পরেই ক্বিরাআত পাঠ করতে হয়।”

হানাফী উলামায়ে কিরামগন ঐ হাদীসের ব্যাপারে বলেন,
এই হাদীসের বর্ণনাকারীদের একজন হলেন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুর রাহমান তায়িফী। যিনি একজন বিতর্কিত রাবী।

ইয়াহইয়া ইবনে মায়ীন তাকে একবার বলেছে صويلح আবার আরেকবার বলেছেন যয়ীফ।

ইমাম বুখারী রাহ. বলেন, فيه نظر মানে তার ব্যাপারে সমস্যা আছে। 

ইমাম নাসায়ী রাহ. বলেছেন, তিনি মজবুত রাবী নন।

আলী ইবনে মাদানী রাবী সম্পর্কে সেই মত ব্যক্ত করেছেন, যা ব্যক্ত করেছেন ইয়াহইয়া ইবনে মায়ীন।
বিধায় যেখানে রাবীর গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্ন, সেখানে তার হাদীসে কিভাবে বিশুদ্ধ বলা হবে।

দশম হাদীসঃ

عن أبراهيم بن عبد الله يعني ابن فرّوخ، عن أبيه، قال: صليت خلف عثمان العيد فكبر سبعا و خمسا.
“ইব্রাহীম ইবনে আব্দুল্লাহ তথা ইবনে ফুররূখ রাহ. তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ ইবনে ফুররূখ রাহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, আমি উসমান রা. এর পিছনে ঈদের সালাত পড়েছি। তিনি প্রথম রাকাআতে সাত তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকাআতে পাঁচ তাকবীর দিয়েছেন।”

হানাফী উলামায়ে কিরামগন ঐ হাদীসের ব্যাপারে বলেন,
মুসনাদে আহমদের টীকায় এই হাদীস সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, হাদীসটি নিতান্ত যয়ীফ। কারণ এর সনদে মাহবুব ইবনে মুহরিজ নামক একজন রাবী রয়েছেন, যিনি যয়ীফ। একই ভাবে আর একজন রাবী হলেন ইব্রাহীম ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে ফররুখ, তিনি মাযহুল।

ইমাম দারা কুতনী রাহ. রাবী মাহবুব ইবনে মুহরি সম্পর্কে বলেন, তিনি যয়ীফ।

একাদশতম হাদীসঃ
عن ابن عمر(رضـ)، قال: قال رسول الله (صـ) التكبير في العيدين في الركعة الأولى سبع تكبيرات وفي الأخيرة خمس تكبيرات.
“আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, দুই ঈদের সালাতে তাকবীর হলো প্রথম রাকাআতে সাত তাকবীর আর দ্বিতীয় রাকাআতে পাঁচ তাকবীর।”

হানাফী উলামায়ে কিরামগন ঐ হাদীসের ব্যাপারে বলেন,
সুনানে দারা কুতনীর টীকায় বলা হয়েছে, হাদীসটি যয়ীফ। কারণ ফরজ ইবনে ফুজালা ذاهب الحديث অর্থাৎ যয়ীফ।

ইমাম  বুখারী ও মুসলিম রাহ. বলেন, منكر الحديث

ইমাম নাসায়ী বলেন, যয়ীফ।

ইবনে যারীন বলেছেন, তিনি যয়ীফ।


দ্বাদশতম হাদীসঃ

عن سعد (رضـ) مؤذن رسول الله (صـ) أن رسول الله (صـ) كان يكبر في العيدين في الأولى سبعاً قبل القراءة، وفي الأخرة خمساً قبل القراءة.
“রাসূল সা. এর মুয়ায্যিন সা’দ রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সা. দুই ঈদের সালাতের প্রথম রাকাআতের পূর্বে সাত তাকবীর এবং শেষ রাকাআতে কিরাআতের পূর্বে পাঁচ তাকবীর বলতেন।”

হানাফী উলামায়ে কিরামগন ঐ হাদীসের ব্যাপারে বলেন,
ইবনে মাজাহ হাদীস গ্রন্থের টীকায় বলা হয়েছে, হাদীসটির সনদ যয়ীফ কারণ সনদে একজন রাবী হলেন, আব্দুর রাহামন ইবনে সাদ, তিনি যয়ীফ।

ইয়াহইয়া ইবনে মায়ীন উক্ত রাবীকে একই ভাবে যয়ীফ বলেছেন।

ত্রয়োদশতম হাদীসঃ
عن جعفر بن محمد، عن أبيه، قال: كان علي يكبر في الفطر والأضحى والاستسقاء سبعا في الأولى، وخمسا في الأخرى، ويصلي قبل الخطبة، ويجهر بالقراءة، قال كان رسول الله (صـ) وأبو بكر وعمر وعثمان يفعلون ذلك.
“জাফর ইবনে মুহাম্মদ রাহ. তাঁর পিতা মুহাম্মদ আল বাকির রাহ. থেকে বর্ণনা করে বলেন, আলী রা. ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহার সালাতে প্রথম রাকাআতে সাত তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকাআতে পাঁচ তাকবীর দিতেন আর খুতবার পূর্বে সালাত আদায় করতেন এবং উচ্চ স্বরে কিরাত পাঠ করতেন। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. আবু বকর রা., উমর রা. ও উসমান রা. অনুরূপই ১২ তাকবীর দিতেন।”

হানাফী উলামায়ে কিরামগন ঐ হাদীসের ব্যাপারে বলেন,
উপরোক্ত হাদীসে মুহাদ্দিস মুহাম্মদ প্রথমে হযরত আলী রা. এর আমল বর্ণনা করেছেন। এর পর রাসূল সা. আবু বকর রা., উমর রা. এবং উসমান রা. এর আমল বর্ণনা করেছেন। অথচ এই মুহাদ্দিস মুহাম্মদ-এর হযরত আলী সহ বর্ণিত সাহাবীদের কারো সাথে দেখা হয়নি। ফলে হাদীসের সনদে যে শুন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তাকে হাদীস শা¯্ররে ভাষায় ইনকিতা বলা হয়। আর যে সনদে ইনকিতা পাওয়া যায় ঐ হাদীসকে বলে হাদীসে মুনকাতি। আর মুনকাতি হাদীস যয়ীফ এবং অপ্রমাণযোগ্য হয়ে থাকে।

আহলে হাদীসের উলামায়ে কিরাম যে সব হাদীসে ৬ তাকবীরের কথা বলা হয়েছে সে সব হাদীসকে অগ্রণযোগ্য মনে করেনঃ

প্রথম হাদীসঃ 

وعن سعيد بن العاص، قال: سألت أبا موسى وحذيفة: كيف كان رسول الله (صـ) يكبر في الأضحى والفطر؟ فقال أبو موسى: كان يكبر أربعا تكبيرة على الجنائز. فقال حذيفة: صدق.
“সাঈদ ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার আবু মুসা আল আশআরী রা. ও হুযায়ফাতুল ইয়ামান রা. কে জিজ্ঞেস করলাম যে, রাসূল সা. ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরে কিভাবে (কতবার) তাকবীর বলতেন? তখন আবু মুসা আল আশআরী রা. বললেন, তিনি চার চার তাকবীর বলতেন। যেইরূপ তিনি জানাযার তাকবীর বলতেন। একথা শুনে হুযায়ফাতুল ইয়ামান রা. তার সমর্থন করে বললেন যে, তিন সত্য বলেছেন।”

আহলে হাদীসের উলামায়ে কিরামগন ঐ হাদীসের ব্যাপারে বলেন,
এই হাদীসের ব্যাপারে ইমাম যাহাবী বলেনঃ وإسناد ضعيف. لأن أبا عائشة المذكور "غير معروف". অর্থাৎ হাদীসটির সনদ যঈফ, কারণ উক্ত হাদীসটি বর্ণনাকারী রাবী আবু আয়িশার কোন পরিচয় পাওয়া যায়নি ( লোকটি মুসলিম না ইহুদী, ভালো না মন্দ কিছুই জানা যায়নি। আর আল্লাহর নবী এমন লোকদের হাদীস গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন।)

হানাফী উলামায়ে কিরামগন ঐ হাদীসের ব্যাপারে বলেন,
উপরোক্ত হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে আবু দাউদ শরীফে এবং যাতে  فقال أبوموسى:كذلك كنت أكبر في البصرة. ( আবু মুসা বললেন আমিও বসরা দেশে এভাবেই তাকবীর বলতাম) রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

যেহেতু রাসূল সা. ঈদের তাকবীরকে জানাযার তাকবীরের সাথে তুলনা করেছেন  এবং যেহেতু জানাযাতে প্রথম তাকবীর তাহরিমার জন্য আর বাকী ৩ তাকবীর অতিরিক্ত। সেহেতু ঈদের নামাযেও চার তাকবীরের একটি আসল আর বাকী ৩টি অতিরিক্ত।

উপরোক্ত বক্তব্য হাদীসে মাওকুফ দ্বারা প্রমাণিত। আর হাদীসে মাওকুফের হুকুম হলো, হাদীসে মওকুফ যদি ইজতিহাদী বিষয় না হয় এবং কুরআন ও হাদীসে মারফুর সাথে সাংঘর্ষিক না হয়, তাহলে তা হাদীসে মারফুর মতো শরীয়াতের প্রমাণ হিসাবে গ্রহণযোগ্য।

উপরোক্ত হাদীসের বর্ণনাকারীদের একজন আবু আয়েশা, যাকে আহলে হাদীসের উলামায়ে কিরাম “মাজহুল” বলে আখ্যায়িত করেছেন। এর জবাবে হানাফী উলামাকে কিরাম বলছেন, আবু আয়েশা সম্পর্কে এই দাবী সঠিক নয়। কারণ আবু আয়শা থেকে দুই জন সিকাহ রাবী পাওয়া যায়, এর একজন মাকহুল আর অপর জন্য খালিদ ইবনে মা’দান। আর যে বর্ণনাকারীর দুইজন সিকাহ ছাত্র থাকবে, সে বর্ণণাকারী কখনো মাজহুল থাকেনা-এটাই রিজাল শা¯্ররে নিয়ম। বিধায় বর্ণিত আবু আয়েশা মাজহুল নন। বিধায় হাফিজ ইবনে হাজর আল আসকালানী রাহ. আবু আয়শাকে মাকবুল উল্লেখ করে বলেছেন, তার হাদীস গ্রহণযোগ্য।

দ্বিতীয় হাদীসঃ 

عن عبد الله بن مسعود قال: التكبير في العيدين  خمس في الأولى، واربع في الثانية.
“আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, দুই ঈদের সালাতে তাকবীর সংখ্যা হলো প্রথম রাকাতে পাঁচ তাকরীর এবং দ্বিতীয় রাকাআতে চার তাকবীর।”

আহলে হাদীসের উলামায়ে কিরামগন ঐ হাদীসের ব্যাপারে বলেন,
উপরে বর্ণিত হাদীস দু’টিতে কোথাও ছয় শব্দটি উল্লেখ নেই, বরং প্রথম হাদীসটিতে চার তাকবীরের বর্ণনা আছে এবং দ্বিতীয় হাদীসটিতে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের ব্যক্তিগত উক্তি, যার সাথে রাসূল সা. এর সুন্নাতের কোন সম্পর্ক নেই।

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর ব্যক্তিগত উক্তিকে দলীল হিসাবে এজন্য মানা যাবেনা, কেননা তিনি ব্যক্তিগত ভাবে সূরা আন নাস ও সূরা আল ফালাককে কুরআনের অংশ মনে করতেন না।

হানাফী উলামায়ে কিরামগন ঐ হাদীসের ব্যাপারে বলেন,
হাদীসে সরাসরি ৬ শব্দটিই উল্লেখ থাকতে হবে এমন কথা জরুরী নয়। যেমন-বিতির নামাযের ক্ষেত্রে ১৩,১৫,১৭ পর্যন্ত সংখ্যা বলা হেয়েছে, অথচ বিতির নামায কেউ এত রাকাত পড়েন না।

ইবনে মাসউদের উক্তিকে গ্রহণ করার ব্যাপারে প্রথম কথা হলো, যদি সাহাবীদের কোন উক্তি বা আমল যদি হাদীসে মারফু-এর বিপরীত না হয়, তখন তা দলীল হিসাবে গ্রহণ করা যায়। সূরা আন নাস ও আল ফালাক কুরআনের অংশ হওয়া না হওয়া ব্যাপারে ইবনে মাসউদের মত আমরা এজন্য গ্রহণ করবো না যে, ইহা ইজমায়ে সাহাবার বিপরীত। দ্বিতীয় কথা হলো, ইবনে মাসউদের প্রসংগ টেনে তাঁর প্রতি জুলুম করা হয়েছে। কারণ আহলে হাদীস ওয়ালারা ইবনে মাসউদের সূরা আন নাস আর সূরা আল ফালাককে কুরআনের অংশ মনে না করাটাই দেখলেন, কিন্তু যে তথ্য সুত্র থেকে তারা একথা বলেন, সেখানেই পরে বলা হয়েছে যে, ইবনে মাসউদের নিকট সহীহ সনদে সূরা আন নাস ও সূরা আল ফালাক না পৌছার কারণে তিনি এমন উক্তি করেছিলেন। পরে সহীহ সনদে জানার পর তিনি তার উক্তি থেকে ফিরে এসে অন্যান্য সাহাবায়ে কিরামের মত গ্রহণ করেছেন। বিধায় সন্দেহের অবকাশ রইল না।

ঈদের নামাযে অতিরিক্ত ৬ তাকবীর ওয়াজিব হওয়া সম্পূর্ণ হাদীস সম্মতঃ

হাদীস-১ঃ তাহাবী শরীফে বর্ণিত হাদীস-যার সনদকে ইমাম তাহাবী রাহ. হাসান বলে উল্লেখ করেছেন। আর হাসান হাদীস গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে সহীহ হাদীসের মতো।
أن القاسم أبا عبد الرحمن حدثه، قال: حدثني بعض أصحاب رسول (صـ)، قال: صلى بنا النبي (صـ) يوم عيد، فكبر أربعاً، وأربعاً، ثم أقبل علينا بوجهه حين انصرف، قال: لا تنسوا، كتكبير الجنائز، وأشار بأصابعه، وقبض إبهامه. فهذا حديث، حسن الإسناد.
“আবু আব্দুর রাহমান বলেন, আমাকে কতিপয় সাহাবা রা. বলেছেন যে, রাসূল সা. আমাদের নিয়ে ঈদের নামায পড়েছিলেন। তাতে তিনি চার-চার তাকবীর বলেন। অতঃপর নামায শেষে হুযুর সা. আমাদেরকে লক্ষ করে বললেন, ভ‚লে যেওনা, ঈদের নামাযের তাকবীর জানাযার নামাযের তাকবীরের অনুরূপ। সাথে সাথে হুজুর সা. বৃদ্ধাঙ্গুলি মুষ্ঠিবদ্ধ করে অবশিষ্ট চার আঙ্গুল দ্বারা ইঙ্গিত করে দেখালেন।”

উপরোক্ত হাদীসে দুই রাকাআতে চার-চার তাকবীর বলা হয়েছে অর্থাৎ মোট আট তাকবীর হবে। আর তাহলো-প্রথম রাকাআতে তাকবীরে তাহরীমাহ সহ চার তাকবীর, আর দ্বিতীয় রাকাআতে রুকুর তাকবীরসহ চার তাকবীর। যেখানে দুইটি তাকবীর সকল ধরনের নামাযের ন্যায় আর অতিরিক্ত হলো ছয় তাকবীর।

হাদীস-২ঃ আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে,
أن سعيد بن العاص، سأل أبا موسى الشعري، وحذيفة بن اليمان، كيف كان رسول الله (صـ) يكبر في الأضحى والفطر؟ فقال أبو موسى: كان يكبر أربعا تكبيرة على الجنائز، فقال حذيفة: صدق، فقال أبوموسى:كذلك كنت أكبر في البصرة.
“সাঈদ ইবনে আস রা. একদিন আবু মুসা আল আশআরী রা. ও হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান রা.তে জিজ্ঞাসা করলেন যে, রাসূল সা. ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার নামাযে কিভাবে তাকবীর বলতেন? জবাবে আবু মুসা আল আশআরী রা. বললেন, জানাযার নামাযের মতো প্রতি রাকাতে চার চার তাকবীর বলতেন। হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান রা. সমর্থন করে বললেন, আবু মুসা আশআরী রা. সত্য বলেছেন। আবু মুসা বললেন, আমিও বসরাতে এভাবেই তাকবীর বলতাম।”

যেহেতু রাসূল সা. ঈদের তাকবীরকে জানাযার তাকবীরের সাথে তুলনা করেছেন  এবং যেহেতু জানাযাতে প্রথম তাকবীর তাহরিমার জন্য আর বাকী ৩ তাকবীর অতিরিক্ত। সেহেতু ঈদের নামাযেও চার তাকবীরের একটি আসল আর বাকী ৩টি অতিরিক্ত।

উপরোক্ত বক্তব্য হাদীসে মাওকুফ দ্বারা প্রমাণিত। আর হাদীসে মাওকুফের হুকুম হলো, হাদীসে মওকুফ যদি ইজতিহাদী বিষয় না হয় এবং কুরআন ও হাদীসে মারফুর সাথে সাংঘর্ষিক না হয়, তাহলে তা হাদীসে মারফুর মতো শরীয়াতের প্রমাণ হিসাবে গ্রহণ যোগ্য।

উপরোক্ত হাদীসের বর্ণনাকারীদের একজন আবু আয়েশা, যাকে আহলে হাদীসের উলামায়ে কিরাম “মাজহুল” বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাদের ভাষায়ঃ হাদীসটির সনদ যঈফ, কারণ উক্ত হাদীসটি বর্ণনাকারী রাবী আবু আয়িশার কোন পরিচয় পাওয়া যায়নি। এর জবাবে হানাফী উলামাকে কিরাম বলছেন, আবু আয়েশা সম্পর্কে এই দাবী সঠিক নয়। কারণ আবু আয়শা থেকে দুই জন সিকাহ রাবী পাওয়া যায়। এর একজন মাকহুল আর অপর জন্য খালিদ ইবনে মা’দান। আর যে বর্ণনাকারীর দুইজন সিকাহ ছাত্র থাকবে, সে বর্ণনাকারী কখনো মাজহুল থাকেনা-এটাই রিজাল শা¯্ররে নিয়ম। বিধায় বর্ণিত আবু আয়েশা মাজহুল নন। বিধায় হাফিজ ইবনে হাজর আল আসকালানী রাহ. আবু আয়শাকে মাকবুল উল্লেখ করে বলেছেন তার হাদীস গ্রহণযোগ্য।

সাহাবায়ে কিরামদের আমলঃ
أن ابن مسعود، كان يكبر في العيدين، تسعا تسعا: أربع قبل القراءة، ثم يكبر، فيركع. وفي الثانية يقرأ، فإذا فرغ، كبر أربعا، ثم ركع.
“আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে ঈদের নামাযের নিয়ম প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে যে, তিনি ঈদের নামাযে ৯টি তাতবীর বলতেন। ৮টি কিরাতের পূর্বে অর্থাৎ তাকবীরে তাহরীমাহ সহ ৪টি। অতঃপর কিরাত পড়ে তাকবীর বলে রুকু করতেন। দ্বিতীয় রাকাআতে কিরাতের পর ৪টি তাকবীর বলতেন এবং ৪র্থ তাকবীরের সাথে রুকু করতেন।”

আমরা কি করবো?
আমরা যারা হাদীস সম্পর্কে কম জ্ঞান রাখি, তাদেরকে অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে যারা বেশী জ্ঞান রাখেন তাদেরকে। না জানা বিষয়গুলো জেনে নিতে হবে বেশী জানা লোকদের থেকে। মনে রাখতে হবে, হাদীসে কিন্তু কেবল ৬ তাকবীরের কথাই বলা হয়নি, আবার শুধু ১২ তাকবীরের কথাও বলা হয়নি। সনদ আর রাবীর কারণে হাদীসের সহীহ হওয়া বা না হওয়ার প্রশ্ন আসছে। বিধায় যত তাকবীরেই আমল করি না কেন, অন্যের আমলের উপর হস্তক্ষেপ না করি। হাদীসে নেই বলার পূর্বে নিশ্চিত হয়ে নেই যে, হাদীস সম্পর্কে নিজের জ্ঞানের পরিধি কতটুকু বিস্তৃত? রাসূলের সকল হাদীস কি নিজের হৃদয়পটে রয়েছে।

Post a Comment

2 Comments

Tareq said…
অত্যন্ত চমৎকার উপস্থাপ।