আলোচনা নোট - ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের গুণাবলী – মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম

ইসলামের অর্থ ও সংগাঃ
⏯ আনুগত্য করা, কোন কিছু মাথা পেতে নেয়া।
⏯ এর মূল ধাতু سلــم অর্থ হল শান্তি ও সন্ধি।
⏯ পরিভাষায়Ñএকমাত্র আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল সা. প্রদর্শিত জীবন পদ্ধতি অনুসরণ করা এবং এর বিপরীত সমস্ত মত ও পথ পরিহার করে চলাকেই বলা হয় ইসলাম।
⏯ ইসলামী আদর্শ কবুলের মাধ্যমে মহান আল্লাহর সাথে একটা চুক্তিতে আবদ্ধ হতে হয়ঃ
﴿إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَىٰ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ ۚ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ ۖ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنجِيلِ وَالْقُرْآنِ ۚ وَمَنْ أَوْفَىٰ بِعَهْدِهِ مِنَ اللَّهِ ۚ فَاسْتَبْشِرُوا بِبَيْعِكُمُ الَّذِي بَايَعْتُم بِهِ ۚ وَذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ﴾
⏯ سلــم  অর্থ শান্তিঃ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে মানুষের সমাজকে এই অশান্তির কবল থেকে মুক্ত করার জোর তাগিদ ইসলামে রয়েছে বলে ইসলাম শান্তির বাহক।
⏯ ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ আন্দোলন। মানুষের গোলামী হতে মুক্ত করে  আল্লাহর গোলামী ও সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে মানুষকে সুখী সুন্দর জীবন যাপনের সুযোগ দেয় ইসলাম।
⏯ মানুষের প্রকৃত শান্তি, মুক্তি ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন হলো ইসলাম।
⏯ ইসলামী-এমন এক বিধান যার সামনে নিজস্ব যাবতীয় কিছু ত্যাগ করে আত্ম সমর্পণ করতে হয়। আর করলে পরে এই বিধান সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

আন্দোলনের অর্থ ও সংগাঃ
⏯ আন্দোলন Movement, حركت  একটি রাজনৈতিক পরিভাষা।
সাধারণ অর্থ-কোন দাবী দাওয়া প্রতিষ্ঠার জন্য এবং কোন কিছু রদ বা বাতিল করার জন্য কিছু লোকের সংঘবদ্ধ নড়াচড়া বা উদ্যোগ গ্রহণ করা।
ব্যাপক ও সামগ্রীক রূপ-প্রতিষ্ঠিত কোন কিছুকে অপসারণ করে সেখানে নতুন কিছু কায়েম  করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা, প্রানান্তকর চেষ্টা।
এক কথায়-সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য পরিচালিত সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা বা সংগ্রাম সাধনার নাম আন্দোলন।
আন্দোলনঃ দোলন থেকে যার উৎপত্তি। দোলন মানে নাড়া ছাড়া। আন্দোলন মানে নড়াছাড়া, অশান্তি, অশৃংখলা, অব্যবস্থাপনা। একটি সুদুর প্রসারী লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য সাময়িক নাড়াছাড়া, অশান্তি, অশৃংখলা, অব্যবস্থাপনা হলো আন্দোলন।

ইসলাম ও আন্দোলনঃ
⏯ আন্দোলন, সংগ্রাম, বিপ্লব শব্দাবলী ইসলামের বেলায় নতুন আমদানী করা জিনিস নয়।
⏯ কুরআন ইসলামকে শুধু আ-দ্বীন বলেনি। বরং বলেছে ইসলামের আগমন হয়েছে অন্যান্য সকল বিপরীত দ্বীনের উপর বিজয়ী হবর জন্য-لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ
⏯ বিপরীত শক্তির উপর বিজয়ী হবার স্বাভাবিক দাবী হল আন্দোলন। হাদীসের বক্তব্য- الجهادُ  ماض ِ إلى يوم ِ القيامــةِ

ইসলামী আন্দোলনের পরিধিঃ
⏯ আন্দোলনের আরবী প্রতিশব্দ  الحـركــة 
⏯ ইসলামী আন্দোলন Ñ الحــــركـة الإسـلاميـة
⏯ কুরআনের পরিভাষা অনুযায়ী Ñ الجهــاد في سبيــل الله
⏯ حــركة  শব্দে ভাব আর جهاد শব্দের ভাবের মাঝে পার্থক্য আছে। 
⏯ জিহাদ অর্থ যথাসাধ্য চেষ্টা সাধনা, চূড়ান্ত প্রচেষ্টা, প্রাণান্তকর সাধনা।
⏯ জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ অর্থ আল্লাহর পথে চূড়ান্ত ও প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা।
আল্লাহর পথঃ দুনিয়ার মানুষের জীবন যাপনের জন্য আল্লাহ যে পথ ও পন্থা  নবী রাসূলের মাধ্যমে নির্ধারণ করে দিয়েছেন, সেটাই আল্লাহর পথ।
জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ এর পরিধি- দ্বীন প্রতিষ্টার সূচনা থেকে সাফল্য পর্যন্ত এবং সাফল্য পরবর্তী করণীয় বিষয়ে যা কার্যক্রম তা সবই জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ্।
জিহাদ মানে যুদ্ধ-এটি জিহাদের একটি অপব্যাখ্যা। এটি জিহাদেও একটি অংশ মাত্র। যার সূচনা হয় আল্লাহর দাসত্ব কবুলের আহবানের মধ্য দিয়ে।

জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর কাজের পর্যায়ঃ
১। দাওয়াত ইলাল্লাহ। 
২। শাহাদাত আলান নাস। 
৩। কিতাল ফি সাবিলিল্লাহ্ । 
৪। ইকামাতে দ্বীন। 
৫।আমর বিল মারুফ ও নাহী আনিল মুনকার।

১. দাওয়াত ইলাল্লাহ্ঃ

⏯ শেষ নবী এবং সকল নবীর আন্দোলনের কার্যক্রমের সূচনা হয়েছে দাওয়াতের মাধ্যমেঃ
﴿لَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَىٰ قَوْمِهِ فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ إِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ﴾
“নুহকে আমি তার সম্প্রদায়ের কাছে পাঠাই। সে বলেঃ হে আমার স্বগোত্রীয় ভাইয়েরা! আল্লাহর ইবাদত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই। আমি তোমাদের জন্য একটি ভয়াবহ দিনের আযাবের আশংকা করছি।” (আরাফঃ ৫৯)
﴿وَإِلَىٰ عَادٍ أَخَاهُمْ هُودًا ۗ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ ۚ أَفَلَا تَتَّقُونَ﴾
“আর আদ (জাতি)ও কাছে আমি পাঠাই তাদের ভাই হূদকে। সে বলেঃ হে আমার সম্প্রদায়ের ভাইয়েরা! তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নাই। এরপরও কি তোমরা ভ‚ল পথে চলার ব্যাপারে সাবধান হবে না?” (আরাফঃ ৬৫)
﴿وَإِلَىٰ ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحًا ۗ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ ۖ قَدْ جَاءَتْكُم بَيِّنَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ ۖ هَٰذِهِ نَاقَةُ اللَّهِ لَكُمْ آيَةً ۖ فَذَرُوهَا تَأْكُلْ فِي أَرْضِ اللَّهِ ۖ وَلَا تَمَسُّوهَا بِسُوءٍ فَيَأْخُذَكُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ﴾
“আর সামুদের কাছে পাঠাই তাদের ভাই সালেহকে। সে বলেঃ হে আমার সম্প্রদায়ের ভাইয়েরা! তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই। তোমাদের কাছে তোমাদের রবের সুস্পষ্ট প্রমাণ এসে গেছে। আল্লাহর এ উটনীটি তোমাদের জন্য নিদর্শন। কাজেই তাকে আল্লাহর জমিতে চরে খাবার জন্য ছেড়ে দাও। কোন অসদুদ্দেশ্যে এর গায়ে হাত দিয়ো না। অন্যথায় একটি যন্ত্রনাদায়ক আযাব তোমাদের উপর আপতিত হবে।” (আরাফঃ ৭৩)
﴿وَإِلَىٰ مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْبًا ۗ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ ۖ قَدْ جَاءَتْكُم بَيِّنَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ ۖ فَأَوْفُوا الْكَيْلَ وَالْمِيزَانَ وَلَا تَبْخَسُوا النَّاسَ أَشْيَاءَهُمْ وَلَا تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ بَعْدَ إِصْلَاحِهَا ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ﴾
“আর মাদইয়ানবাসীদের কাছে আমি তাদের ভাই শোয়াইবকে পাঠাই। সে বলেঃ হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! আল্লাহর ইবাদত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই্ তোমাদের কাছে তোমাদের রবের সুস্পষ্ট পথনির্দেশনা এসে গেছে। কাজেই ওজন ও পরিমাপ পুরোপুরি দাও, লোকদের পাওনা জিনিস কম করে দিয়ো না। এবং পৃথিবী পরিশুদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর তার মধ্যে আর বিপর্যয় সৃষ্টি করো না। এরই মধ্যে রয়েছে তোমাদের কল্যাণ, যদি তোমরা যথার্থ মুমিন হয়ে থাকো।” (আল আরাফঃ ৮৫)

⏯ নবীর জীবনের প্রথম ভাষন-يا أيُّها النَّاس قولوا لا إلَهَ إلَّا اللَّهُ تُفلِحوا

⏯ দাওয়াত ইলাল্লাহ সম্পর্কে কুরআনঃ

- সরাসরি নির্দেশঃ 
﴿ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ ۖ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ ۖ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ﴾
“হে নবী! প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তা এবং সদুপদেশ সহকারে তোমার রবের পথের দিকে দাওয়াত দাও এবং লোকদের সাথে বিতর্ক করো সর্বোত্তম পদ্ধতিতে। তোমার রবই বেশী ভাল জানেন কে তাঁর পথচ্যুত হয়ে আছে এবং সে আছে সঠিক পথে। (আন নাহল-১২৫(

-রাসূলের কাজ ও পথের পরিচয় বুঝাতেঃ
﴿قُلْ هَٰذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ ۚ عَلَىٰ بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي ۖ وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ﴾
“তাদেরকে পরিষ্কার বলে দাওঃ আমার পথতো এটাই, আমি আল্লাহর দিকে ডাকি, আমি নিজেও পূর্ণ আলোকে নিজের পথ দেখছি এবং আামর সাথীরাও। আর আল্লাহ পাক-পবিত্র এবং শিরককারীদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।” (ইউসুফঃ ১০৮)
﴿يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا﴾﴿وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ بِأَنَّ لَهُم مِّنَ اللَّهِ فَضْلًا كَبِيرًا﴾
“এবং তাদের জন্য আল্লাহ বড়ই সম্মানজনক প্রতিদানের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। হে নবী! আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষী বানিয়ে, সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী করে আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহবানকারী রূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপ হিসাবে।” (আহযাবঃ ৪৫-৪৬)

- দায়ীর প্রশংসা করেঃ 
﴿وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّن دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ﴾
“সেই ব্যক্তির কথার চেয়ে আর কার কথা উত্তম হবে যে আল্লাহর দিকে ডাকলো, সৎ কজ করলো এবং ঘোষণা করলো আমি মুসলমান।” (হা-মীম-আস সিজদাঃ ৩৩)

- উম্মতে মুহাম্মাদীর দায়িত্ব ও কর্তব্য ব্যাখ্যা করেঃ 
﴿وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ﴾
“তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক অবশ্যি থাকতে হবে, যারা নেকী ও সৎকর্মশীলতার দিকে আহবান জানাবে, ভালো কাজের নির্দেশ দেবে ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে। যারা এ দায়িত্ব পালন করবে, তারাই সফলকাম হবে। (আল ইমরানঃ ১০৪)

- সকল নবীদের দাওয়াতের সুর ও আবেদন একই ধরনের। যেমনঃ
১। সবাই তাওহীদের দাওয়াত দিয়েছেন, গাইরুল্লাহর সার্বভৌমত্ত¡ পরিহারের আহবান করেছেন। 
২। সমাজের খুটিনাটি সমস্যার প্রসঙ্গে না গিয়ে আল্লাহর আইন না থাকায় যে সব বড় বড় সমস্যায় মানুষ জর্জরিত সে গুলোর কড়া সমালোচনা করেছেন। 
৩। দাওয়াত কবুল না করার পরিণাম সম্পর্কে দুনিয়া ও আখেরাতে যা হতে পারে সে সম্পর্কে সতর্ক ও ভীতি প্রদর্শন করেছেন।
- নবীদের দাওয়াতের মেজাজ গভীর ভাবে অনুধাবন ও অনুশীলন করলে বুঝা যায়, সে সময়ের সমাজ ব্যবস্থা বদলের আপোষহীন বিপ্লবী ঘোষনা। আর এজন্য প্রতিষ্ঠিতদের সাথে সংঘাত অনিবার্য।

২. শাহাদাত আলান নাসঃ
- নবীর পরিচয় তিনি দায়ী, আবার তিনির অন্য পরিচয় তিনি দাওয়াতের বাস্তব নমূনা,মূর্ত প্রতীক রূপে শাহেদ এবং শহীদ।
- কুরআনের বক্তব্যঃ
﴿إِنَّا أَرْسَلْنَا إِلَيْكُمْ رَسُولًا شَاهِدًا عَلَيْكُمْ كَمَا أَرْسَلْنَا إِلَىٰ فِرْعَوْنَ رَسُولًا﴾
“আমি তোমাদের নিকট একজন রাসূল পাঠিয়েছি তোমাদের জন্য সাক্ষী স্বরূপ। যেমন ফেরাউনের নিকট একজন রাসূল পাঠিয়েছিলাম। (মুজ্জাম্মিলঃ ১৫)
﴿يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا﴾
“এবং তাদের জন্য আল্লাহ বড়ই সম্মানজনক প্রতিদানের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। হে নবী! আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষী বানিয়ে, সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী করে।” (আহযাবঃ ৪৫)
﴿وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِّتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا ۗ وَمَا جَعَلْنَا الْقِبْلَةَ الَّتِي كُنتَ عَلَيْهَا إِلَّا لِنَعْلَمَ مَن يَتَّبِعُ الرَّسُولَ مِمَّن يَنقَلِبُ عَلَىٰ عَقِبَيْهِ ۚ وَإِن كَانَتْ لَكَبِيرَةً إِلَّا عَلَى الَّذِينَ هَدَى اللَّهُ ۗ وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُضِيعَ إِيمَانَكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ بِالنَّاسِ لَرَءُوفٌ رَّحِيمٌ﴾
“আর এভাবেই আমি তোমাদেরকে একটি ‘মধ্যমপন্থী’ উম্মাতে পরিণত করেছি, যাতে তোমরা দুনিয়াবাসীদের উপর সাক্ষী হতে পারো এবং রাসুল হতে পারেন তোমাদের উপর সাক্ষী। প্রথমে যে দিকে মুখ করে তুমি নামায পড়তে, তাকে তো কে রাসূলের অনুসরণ করে এবং কে উল্টো দিকে ফিরে যায়, আমি শুধু তা দেখার জন্য কিবলাহ নির্দিষ্ট করেছিলাম। এটি ছিল অত্যন্ত কঠিন বিষয়, তবে তাদের জন্য মোটেই কঠিন প্রমাণিত হয়নি, যারা আল্লাহর হিদায়াত লাভ করেছিল। আল্লাহ তোমাদের এই ঈমানকে কখনো নষ্ট করবেন না। নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, তিনি মানুষের জন্য অত্যন্ত ¯েœহশীল ও করূনাময়। (আল বাকারাঃ ১৪৩) 
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ لِلَّهِ شُهَدَاءَ بِالْقِسْطِ ۖ وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَىٰ أَلَّا تَعْدِلُوا ۚ اعْدِلُوا هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَىٰ ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ﴾
“হে ঈমানদারগন! সত্যের উপর স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত ও ইনসাফের সাক্ষ্যদাতা হয়ে যাও। কোন দলের শত্রæতা তোমাদেরকে যেন এমন উত্তেজিত না করে দেয় যার ফলে তোমরা ইনসাফ ও ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠিত করো। এটি আল্লাহ ভীতির সাথে বেশী সামঞ্জস্যশীল। আল্লাহকে ভয় করে কাজ করতে থাকো। তোমরা যা কিছু করো, আল্লাহ সে সম্পর্কে পুরোপরি অবগত আছেন। (আল মায়েদাঃ ৮)
﴿أَمْ تَقُولُونَ إِنَّ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطَ كَانُوا هُودًا أَوْ نَصَارَىٰ ۗ قُلْ أَأَنتُمْ أَعْلَمُ أَمِ اللَّهُ ۗ وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن كَتَمَ شَهَادَةً عِندَهُ مِنَ اللَّهِ ۗ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ﴾
“অথবা তোমরা কি একথা বলতে চাও যে, ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও ইয়াকুব সন্তানরা সবাই ইয়াহুদী বা খৃষ্টান ছিল? বলো, তোমরা বেশী জানো, না আল্লাহ বেশী জানেন? তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হতে পারে, যার কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি সাক্ষ্য রয়েছে এবং সে তা গোপন করে চলে? তোমাদের কর্মকান্ডের ব্যাপারে আল্লাহ গাফেল নন।” (আল বাকারাঃ ১৪০)

- শাহাদাত মূলত দাওয়াতের বাস্তব রূপ।

- নবী রাসূলরা দুটি উপায়ে শাহাদাতের দায়িত্ব পালন করেছেন-
১. মৌখিক সাক্ষ্য।
২. আমলী সাক্ষ্য।

- নবী সা. মৌখিক দাওয়াতের সাথে সাথে শুহাদা আলান নাস এর ভূমিকা পালন করেছেন।
- সাহাবায়ে কিরাম ছিলেন দায়ী ইলাল্লাহর দাওয়াতের বাস্তব নমূনা। তাদের নমূনা ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ সাক্ষ্য দিয়েছেন সুরা ফুরকান শেষ ও সূরা মুমিনুন প্রথম রুকুতে।
- ইসলামী আন্দোলনে শাহাদাত আলান নাস-এর গুরুত্ব বেশী। কেননা, এধরনের বাস্তব সাক্ষ্যদানকারী একদল লোক তৈরী হলে পরে  আল্লাহর সাহায্য ও জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর কাজের সাফল্য নির্ভর করে।

৩. কিতাল ফি সাবিলিল্লাহঃ
⏯ দায়ী যখন আমলী শাহাদাত প্রদানে সক্ষম হয়, তখন দায়ীকে তাওয়াত থেকে বিরত রাখতে, আওয়াজ স্তব্দ করে দিতে জুলুম নির্যাতন ও লোভ প্রলোভন যখন হার মানে, সমাজের মানুষের উপর যখন দায়ীর দাওয়াত ফেলে নৈতিক প্রভাব।
⏯ কায়েমী স্বার্থবাদীরা তখন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রতিপত্তির কারণে দায়ীকে নিশ্চিহ করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়।
⏯ মক্কী জিন্দেগীতে প্রতিশোধ নেয়ার সীমিত অনুমতি দেয়া হয়েছে। সূরা নাহল ও শুরার মাধ্যমে।
⏯ মাদানী জিন্দেগীতে সূরা হজ্জের মাধ্যমে  প্রতিশোধ নেয়ার এবং সূরা মুহাম্মাদের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ যুদ্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। বিধায় সূরা মুহাম্মদের আরেক নাম সূরা কিতাল।

⏯ ইসলামী আন্দোলনে এ সংঘাত অনিবার্যঃ
﴿الَّذِينَ آمَنُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ۖ وَالَّذِينَ كَفَرُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ الطَّاغُوتِ فَقَاتِلُوا أَوْلِيَاءَ الشَّيْطَانِ ۖ إِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيفًا﴾
“যারা ঈমানের পথে অবলম্বন করেছে, তারা লড়াই করে তাগুতের পথে। কাজেই শয়তানের সহযোগীদের সাথে লড়ো এবং নিশ্চিত জেনে রাখো, শয়তানের কৌশল আসলে নিতান্তই দূর্বল।” (আন নিসাঃ ৭৬)

⏯ ইসলামী সমাজ পরিচালনার লোক তৈরী, ঈমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া, আমলী শাহাদাতের মাধ্যমে জনগনের মন জয় এবং তাদের সাথী করতে পারলে আন্দোলনের সংঘর্র্ষের স্তর অতিক্রম করে  সাফল্যের দ্বার প্রান্তে উপনীত হতে হয়।

⏯ কিতাল ফি সাবিলিল্লাহ সম্পর্কে কুরআনঃ
﴿وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ لِلَّهِ ۖ فَإِنِ انتَهَوْا فَلَا عُدْوَانَ إِلَّا عَلَى الظَّالِمِينَ﴾
“তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকো যতক্ষণ না ফেতনা নির্মূল হয়ে যায় এবং দীন একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট হয়ে যায়। তারপর যদি তারা বিরত হয় তাহলে জেনে রাখো যালেমদের ছাড়া আর কারোর উপর হস্তক্ষেপ করা বৈধ নয়।”(আল বাকারাঃ ১৯৩)
﴿وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّهِ ۚ فَإِنِ انتَهَوْا فَإِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ بَصِيرٌ﴾
“হে ঈমানদারগন! এ কাফেরদের সাথে এমন যুদ্ধ করো যেন গুমরাহী ও বিশৃংখলা নির্মূল হয়ে যায় এবং দ্বীন পুরোপুরি আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট হয়ে যায়।” (আল আনফালঃ ৩৯)
﴿قَاتِلُوا الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلَا يُحَرِّمُونَ مَا حَرَّمَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَلَا يَدِينُونَ دِينَ الْحَقِّ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ حَتَّىٰ يُعْطُوا الْجِزْيَةَ عَن يَدٍ وَهُمْ صَاغِرُونَ﴾
“আহলি কিতাবদের মধ্য থেকে যারা আল্লাহ ও পরকালের ঈমান আনে না যা কিছু আল্লাহ ও তার রাসূল গণ্য করেছেন তাকে হারাম করো না এবং সত্য দ্বীনকে নিজেদেও দ্বীনে পরিণত করে না, তাদের সাথে যুদ্ধ করো যে পর্যন্ত না তারা নিজের হাতে জিযিয়া দেয় ও পদানত হয়ে থাকে।” (আত তাওবাঃ ২৯)
﴿إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَىٰ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ ۚ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ ۖ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنجِيلِ وَالْقُرْآنِ ۚ وَمَنْ أَوْفَىٰ بِعَهْدِهِ مِنَ اللَّهِ ۚ فَاسْتَبْشِرُوا بِبَيْعِكُمُ الَّذِي بَايَعْتُم بِهِ ۚ وَذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ﴾
“প্রকৃত ব্যাপার এই যে, আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের প্রাণ ও ধন-সম্পদ জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে এবং মারে ও মরে। তাদের প্রতি তাওরাত, ইনজীল ও কুরআনে (জান্নাতের ওয়াদা) আল্লাহর জিম্মায় একটি পাকাপোক্ত ওয়াদা বিশেষ। আর আল্লাহর চাইতে বেশী নিজের ওয়াদা পূরণকারী আর কে আছে? কাজেই তোমরা আল্লাহর সাথে যে কেনা-বেচা করছো সে জন্য আনন্দ করো। এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য।” (আত তাওবাঃ ১১১)

⏯ কেতাল ফি সাবিলিল্লাহ আল কুরআনের ইকামাতে দ্বীনের একটি পরিভাষা। এটি আল্লাহ কর্তৃক নির্দেশিত দ্বীনকে বিজয়ী আদর্শ হিসাবে প্রতিষ্ঠা ও যাবতীয় ফেতনা ফাসাদের মূলোৎপাটনের জন্য।

৪. ইকামাতে দ্বীনঃ
⏯ ইকামাতে দ্বীন অর্থ দ্বীন কায়েমের প্রচেষ্টা। আর দ্বীন কায়েম মানে কোন জনপদে দ্বীন ইসলাম বিজয়ী আদর্শ হিসাবে প্রতিষ্টা হওয়া। দ্বীন পূর্ণ অনুসরণে কোন বাঁধা না থাকা।
⏯ যেখানে কুরআনের আইন কায়েম নাই, সেখানে ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও আইনের কারণে অনেক বিষয় আমল করা সম্ভব হয়না।
⏯ শিক্ষা ব্যবস্থা ইসলাম বিরোধী আদর্শ শিখালে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার মন হয়না।
⏯ যারা সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করেন, তারা ইসলামী আদর্শের বিরোধী হলে সে সমাজের মানুষ ইসলাম অনুসরণের সুযোগ পায় না।
⏯ ব্যক্তি জীবনে ব্যক্তিগত ভাবে দ্বীন যতটুকু মানা হয়, তা পরিপূর্ণ দ্বীনের তুলনায় কিছুই নয়।
⏯ ব্যক্তিগত ভাবে সামগ্রীক ও পরিপূর্ণ দ্বীন তো দূরের কথা আনুষ্ঠানিক ইবাদতগুলো ও করা সম্ভব নয়। যেমনঃ
- নামাজ কায়েম হয় না পড়া হয়।
- যাকাত আদায় করা যায় না।
- রোজার পরিবেশ হয় না রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রন ছাড়া।
- রাষ্ট্রীয় বাধ্যবাধকতার কারণে হজ্জের সুযোগ হয়না।
- সমাজ জীবনের বিভিন্ন পর্যায় আল­াহর আনুগত্য করা সম্ভব হয়না।
- অর্থনীতিতে সুদ মুক্ত থাকা যায়না।
- সমাজ জীবনের বেহায়াপনা জেনা চুরি থেকে বাঁচা সম্ভব হয়না।
- দ্বীন এসেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কায়েম হবার জন্য। যেখানে দ্বীন আনুষ্ঠানিক ও সামগ্রীক দিক ও বিভাগে আমল করা যায়, সেখানেই কেবল দ্বীন কায়েম আছে বলে মনে করতে হবে।
- নবী রাসূলের দায়িত্ব ছিল দ্বীন কায়েম করাঃ 
﴿شَرَعَ لَكُم مِّنَ الدِّينِ مَا وَصَّىٰ بِهِ نُوحًا وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَىٰ ۖ أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ ۚ كَبُرَ عَلَى الْمُشْرِكِينَ مَا تَدْعُوهُمْ إِلَيْهِ ۚ اللَّهُ يَجْتَبِي إِلَيْهِ مَن يَشَاءُ وَيَهْدِي إِلَيْهِ مَن يُنِيبُ﴾
“তিনি তোমাদের জন্য দীনের সেই সব নিয়ম-কানুন নির্ধারিত করেছেন, যার নির্দেশ তিনি নূহকে দিয়েছিলেন এবং (মুহাম্মদ সা.) যা এখন আমি তোমার কাছে ওহীর মাধ্যমে পাঠিয়েছি। আর যার আদেশ দিয়েছিলাম আমি ইব্রাহীম আ. মূসা আ. ও ঈসা আ.কে। তার সাথে তাগিদ করেছিলাম এই বলে যে, এ দ্বীনকে কায়েম করো এবং এ ব্যাপারে পরস্পর ভিন্ন হয়ো না।  (হে মুহাম্মদ) এই কথাটিই এসব মুশরিকদের কাছে অত্যন্ত অপছন্দনীয় যার দিকে তুমি তাদের আহবান জানাচ্ছো। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা আপন করে নেন এবং তিনি তাদেরকেই নিজের কাছে আসার পথ দেখান যারা তাঁর প্রতি রুজু করে। (সূরা আশ শুরাঃ ১৩) 

⏯ এভাবে দ্বীন কায়েমের চূড়ান্ত প্রচেষ্টা  চালানোই ইসলামী আন্দোলনেরÑ
১। জাগতিক লক্ষ্য।
 ২। আখেরাতের লক্ষ্য হল আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নাজাত।

৫. আমর বিল মারুফ ও নাহী আনিল মুনকারঃ
⏯ সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ দেয়ার পর্যায়ঃ
১. সাধারণ ভাগে গোটা উম্মতে মুহাম্মাদীর দায়িত্ব।
২. সরকারী প্রশাসনের মাধ্যমে এ কাজ আনজাম দেয়া শরীয়াতে প্রধান স্পিরিট।
উপরোক্ত সবক’টি কাজের সমষ্টির নাম ইসলামী আন্দোলন।

কর্মীঃ
⏯ যারা কাজ করেন। যেমন-গার্মেন্টস কর্মী, মাঠ কর্মী, এন জি ও কর্মী। যারা ইসলামী আন্দোলনের কাজ করেন, তারা ইসলামী আন্দোলনের কর্মী। 
⏯ আমরা আমরা মনে করি এই প্রবন্ধের পাঠক সবাই কর্মী তথা ইসলামী আন্দোলনের কর্মী।
⏯ আমাদের টার্গেট ইসলাম প্রতিষ্ঠা।

যারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার কর্মী তাদের প্রথমেই জানতে হবেঃ
⏯ আমরা যারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজ করতে চাই, তাদেরকে উস্তাদ মওদুদী রাহ. বলতেছেনঃ ইসলামী সমাজ কায়েম হোক এই ধরনের আশা আকাংখা করার মানুষের কোন অভাব পৃথিবীতে নাই।
⏯ ইসলামী আন্দোলনের আরেক সিপাহসালার নঈম সিদ্দিকী বলতেছেন যে, মানুষের তৎপরতা বাড়ার সাথে সাথে শয়তান তার তৎপরতা বাড়িয়ে দেয়।

ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের কর্মীদের যে সব গুণ থাকতে হবেঃ
১. পূঁজি ঠিক করা-
২. পূঁজিকে বিকশিত করা-
৩. পূঁজিকে ক্ষতি থেকে বাঁচানো-
৪. খোয়াড় থেকে বাঁচা-গলায় রশি পরা-

একঃ পূঁজি ঠিক করা-
১. ইলম-ইসলামের যথার্থ জ্ঞান।
⏯ ইসলামের প্রথম কথা- إقراء
⏯ অন্যান্য ধর্মের কথা হলোঃ পড়বে কেবল ভ্রাম্মন, পাদ্রী, ফাদার। 
⏯ ইসলামের কথাঃ
عن أنسِ بنِ مالكٍ رضي الله عنه قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- «طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ
⏯ না পড়লে জানা যাবে না। তাই জানার জন্য পড়া, মানার জন্য পড়া।
⏯ আপনি কতটুকু জানবেন? আপনার জানার পরিধি হবেঃ
(১) জানা ও বুঝা।
(২) বিস্তারিত জানা।
(৩) জাহেলী চিন্তা থেকে মুক্ত হওয়া। 
(৪) ইসলামী পদ্ধতির প্রতি নজর রাখা। 
(৫) জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে ইসলামের অনুসরণ।
(৬) সহজভাবে দাওয়াত পেশ করার যোগ্যতা সৃৃষ্টি।
(৭) বুদ্ধীজীবি শ্রেণীর উপর প্রভাব বিস্তার।
(৮) বাতেলের প্রশ্নের যুক্তি ভিত্তিক ও সন্তোষ জনক জবাব দান।
(৯) ইসলামের আলোকে সামাধান।

২. ঈয়াকীন-ইসলামের প্রতি অবিচল বিশ্বাস।
আপনার ঈমানের ধরণ কিভাবে হবে? আপনার ঈমানের পরিধি কি হবেঃ
(১) অবিচল ঈমান আনা।
(২) নিংসংশয় হওয়া।
(৩) চিন্তার একাগ্রহ হওয়া।
(৪) মানসিক সংশয় থেকে মুক্ত হওয়া।
(৫) বিশৃংখল চিন্তা না করা।
(৬) বিশৃঙ্খল দৃষ্টি ভঙ্গি না করা।
(৭) আল্লাহর উপর বিশ্বাস।
(৮) সার্বভৌমত্বের উপর বিশ্বাস।
(৯) রেসালতের উপর বিশ্বাস।

৩. আমল-চরিত্র ও কর্ম।
আপনার আমল অথবা চরিত্র ও কর্মকে ঠিক করার জন্য করণীয়ঃ
(১)  কাজ, কথা অনুযায়ী করা। 
(২)  সত্যকে অনুসরণ করা।
(৩) অসত্য থেকে দূরে থাকা।
(৪) কাউকে দাওয়াত দেওয়ার আগে নিজে প্রথমে আনুগত্য করতে হবে।
(৫) আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কাজ করা।
(৬) অস্বাভাবিক পরিবেশেও তাকে বাতিলের মোকাবিলা করে যেতে হবে।
(৭) জ্ঞান ও বিশ্বাসের সাথে চরিত্র ও কর্ম সম্পাদন।

৪. নিয়ত-দ্বীন হচ্ছে জীবনোদ্দেশ্য।
নিয়ত বা দ্বীনকে জীবনোদ্দেশ্য সাধণের করণীয়ঃ
(১) আল্লাহর বানী  বুলন্দ করা।
(২) দ্বীনের প্রতিষ্টা, জীবনের আকাক্সংখায় র্পযায়ভুক্ত  না হওয়া।
(৩) দ্বীন প্রতিষ্টা,  দৃড় সংকল্প হতে হবে।

দুইঃ পূঁজিকে বিকশিত করা-
১. আল্লাহর সাথে সম্পর্কঃ
⏯ আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের অর্থঃ

⏭ আল্ কুরআনঃ
 মানুষের জীবন-মরণ, ইবাদত-বন্দেগী, কুরবানী ইত্যাদি সব আল্লাহর জন্য-
﴿قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ﴾
“বলো, আমার নামায, আমার ইবাদাতের সমস্ত অনুষ্ঠান, আমার জীবন ও মৃত্যু সবকিছু আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য।” (আল আনআমঃ ১৬২)
﴿وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ ۚ وَذَٰلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ﴾
“তাদেরকে তো এ ছাড়া আর কোন হুকুম দেয়া হয়নি যে, তারা নিজেদের দীনকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে একনিষ্ঠ ভাবে তাঁর ইবাদত করবে, নামায কায়েম করবে ও যাকাত দেবে, এটিই যথার্থ সত্য ও সঠিক দ্বীন।” (আল বাইয়্যিনাহঃ ০৫)

⏭ হাদীসে রাসূলঃ
ক) প্রকাশ্য গোপনে সকল কাজেই আল্লাহকে ভয় করাঃ خشية الله في السر والعلن
খ) নিজের উপায় উপাদানের তুলনায় আল্লাহর শক্তির উপর অধিক ভরসা করাঃ
ان تكون بما في يدى الله اوثق بما في يديك
⏭ আল্লাহকে খুশী করার জন্য লোকের বিরাগ ভাজন হওয়াঃمن التمس رضى الله يسخط الناس
ঘ) সব কিছু করা কেবল আল্লাহর জন্যঃ من احب لله وابغض لله واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان
ঙ) দোয়া কুনুতের প্রতিটি শব্দ আল্লাহর সাথে বান্দার কি ধরনের সম্পর্ক তার পরিচয় বহন করেঃ
চ) তাহাজ্জুদে উঠে নবী সা. যে দোয়া করতেন, তাতে আল্লাহর সাথে সম্পর্কের পরিচয় পাওয়া যায়ঃاللهم لك اسلمت وبك امنت وعليك توكلت واليك انبت وخاصمت واليك حاكمت - হে আল্লাহ! আমি তোমারই অনুগত হলাম, তোমার প্রতি ঈমান আনলাম, তোমার উপর ভরসা করলাম, তোমার দিকে আমি নিবিষ্ট হলাম, তোমার জন্যই আমি লড়াই করছি এবং তোমার দরবারেই আমি ফরিয়াদ জানাচ্ছি।

⏭ আল্লাহর সাথে সম্পর্কের বিকাশ সাধনের উপকরণঃ

- সালাত। ফরজ সুন্নাতের সাথে সাথে নফল নামাজ, বিশেষ করে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়। এ ক্ষেত্রে রিয়া পরিহার। (নফল সাদাকা ও যিকির আযকারে রিয়া পরিহার)।

- আল্লাহর যিকির। সুফীদের যিকির নয়, বরং রাসূল সা. প্রদর্শিত সার্বক্ষনিক দোয়া। যা অর্থ সহ মূখস্ত করা এবং অর্থের প্রতি লক্ষ্য রেখে সময় মত পড়া।

- সওম। ফরজের পাশাপাশি নফল সাওম। প্রতিমাসে ৩টি উত্তম। সওমের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জনের চেষ্টা করা।

- আল্লাহর পথে অর্থ খরচ। শুধু ফরজ নয়, সাধ্য মতে নফল আদায়। কি পরিমাণ অর্থ সম্পদ ব্যয় করলেন, তা বড় কথা নয়। বরং আল্লাহর জন্য কতটুকু কুরবানী করলেন, তা প্রকৃত বিচার্য। তাযকিয়ায়ে নফসের জন্য সাদাকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সাদাকার সুফল পরীক্ষা-তাওবার সাথে সাথে সাদাকা।

২. সংগঠনের সাথে সম্পর্কঃ
⏯ আদেশ ও আনুগত্যের ভারসাম্য রক্ষা করা।
⏯ আনুগত্য করা কেবল সৎ কাজের বেলায়।
⏯ ব্যক্তির পরিবর্তনে আনুগত্যের পরিবর্তন হবেনা।
⏯ দায়িত্বশীলদের করণীয়-

৩. সহযোগিদের সাথে সম্পর্কঃ
⏯ অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়া।
⏯ ভ্রাতৃত্ব সুদৃঢ় করণ।
⏯ বিদ্রোপ না করা।
⏯ দোষ না খোঁজা।
⏯ অপনামের না ডাকা।
⏯ কু-ধারণা না করা।
⏯ গুয়েন্দাগিরি না করা।
⏯ গীবত না করা।

তিনঃ পূঁজিকে ক্ষতি থেকে বাঁচানোঃ
⏯ পর্দা রক্ষা করা।
⏯ বেহায়াপনা ও অশ্লীলতা থেকে বাঁচা।
⏯ লেন-দেন পরিস্কার রাখা।
⏯ সমালোচনার অভ্যাস ত্যাগ করা।
⏯ মতের কুরবানী দেয়া।

চারঃ খোয়াড় থেকে বাঁচা-গলায় রশি পরাঃ
⏯ খোয়াড় বলা হয় গরু ছাগলের জেল খানাকে। গরু যখন কারো ফসল খেয়ে ফেলে, তখন ফসলের মালিক ঐ গরুকে ধরে নিয়ে গ্রাম্য একটি নির্ধারিত জায়গায় রেখে আসে। যেখান থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ জরিমানা দিয়ে গরুকে তার মালিক ছাড়িয়ে নেয়। (অতীতে গ্রাম বাংলায় এমন ছিল)। 
⏯ গরু যাতে অন্য কারো ফসল নষ্ট করতে না পারে এবং খোয়াড়ে যেতে না হয়, সেজন্য গরুর মালিক গরুর গলার সাথে একটা রশি লাগিয়ে রশির অন্যপ্রান্তকে শক্ত মজবুত খুটির সাথে বেঁধে দেয়। 
⏯ গরু খোয়াড়ে যায় ইচ্ছা করে নয়, বরং লোভে পড়ে অন্যের ফসল খাওয়ার কারণে। আর তা থেকে রক্ষা পেতে হলে গলায় রশি লাগানোর কোন বিকল্প নাই।
⏯ মানুষের শত্রু শয়তান মানুষকে সব সময় বিভ্রান্ত করে বিপথে নিয়ে যেতে চায়। মানুষকে আল্লাহর বিধানের মধ্যে জীবন যাপন করতে হলে একই ভাবে গলার মধ্যে শপথের রশি-বাইয়াতের রশি লাগাতে হবে। না হলে খোয়াড় তথা জাহান্নাম অনিবার্য।
⏯ তাই মানুষকে গলায় রশি পরিধানের শপথ নামা পড়তে হবেঃ

 ﴿قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ﴾ ﴿لَا شَرِيكَ لَهُ ۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ﴾
‍"বলো, আমার নামায, আমার ইবাদাতের সমস্ত অনুষ্ঠান, আমার জীবন ও মৃত্যু সবকিছু আল্লাহ রব্বুল আলামীনের জন্য, যার কোন শরীক নেই৷ এরি নির্দেশ আমাকে দেয়া হয়েছে এবং সবার আগে আমিই আনুগত্যের শির নতকারী৷ (আল আনআমঃ ১৬২-১৬৩)
﴿إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا ۖ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ﴾
আমি তো একনিষ্ঠভাবে নিজের মুখ সেই সত্তার দিকে ফিরিয়ে নিয়েছি যিনি যমীন ও আসমান সৃষ্টি করেছেন এবং আমি কখনো মুশরিকদের অন্তরভুক্ত নই৷  (আল আনআমঃ ৭৯)
عن عبد الله بن عمر عن نبي الله صلى الله عليه وسلم أنه قال [من خلع يداً من طاعة لقي الله يوم القيامة ولا حجة له ومن مات وليس في عنقه بيعة مات ميتة جاهلية] رواه مسلم



Post a Comment

1 Comments

Anonymous said…
আলহাদুলিল্লাহ অনেক উপকৃত হলাম।