শহীদ মুরসির শেষ ভাষণ। দুনিয়াব্যাপী মুসলিম উম্মাহর প্রেরণা। আদালতে প্রসেকিউশন টিম ও বিচারকদের উদ্দেশ্যে যে কথাগুলো বলার পরপরই প্রেসিডেন্ট মুরসি মাটিতে পড়ে যান এবং শাহাদাত বরণ করেনঃ
০১. ফিলিস্তিনের হামাসের সাথে কথা বলার অপরাধে তোমরা আমাকে অভিযুক্ত করেছ, কিন্তু কি আশ্চর্য্য সেই তোমরাই এখন হামাসের সাথে ডিল করছো!
০২. আমার সময়ে সিনাই উপত্যকায় জঙ্গি গোষ্ঠীর তৎপরতার কারণে তোমরা আমাকে এসবের পেছনের ইন্ধনদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করেছ! অথচ সিনাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমার রাজনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর সেখানে আমি তাদের বিরুদ্ধে সফল সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছিলাম! আজতো আমি জেলে বন্দি। তাহলে এখনো কেন সিনাইতে জঙ্গি গোষ্ঠীর ব্যাপক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে?
০৩. তোমরা আমাকে মিশরের অভ্যন্তরে সহিংস ঘটনার জন্যে অভিযুক্ত করেছো! অথচ আজ দেখ মসজিদ, গির্জা সহ এমন কোনো জায়গা বাকি নেই, যেখানে সহিংস ঘটনা ঘটছেনা! ভয়াবহতার কারণে মিশরের বহু শহর ও গ্রাম থেকে মানুষেরা অন্যত্র চলে গিয়েছে!
আজতো আমি জেলে বন্দি। তাহলে এখনো কেন ঘটে চলেছে এসব?
০৪. প্রশাসন আমাকে কেবল কারারুদ্ধ করেই ক্ষান্ত হয় নাই! আমার উপরে প্রতিদিন নির্যাতন চালানো হয়েছে। তোমরা (প্রশাসনের আজ্ঞাবাহী বিচারকরা) উপেক্ষা করে চলেছো সেসব নিপীড়ণের কথা। তোমরা নানান উপায়ে আমাকে হত্যার চেষ্টা করছো। আমার দেশের লোকজন ও সারাবিশ্ব যাতে মনে করে আমি অসুখে আক্রান্ত হয়ে সাধারণভাবে মরে গিয়েছি, যাতে মানুষের কম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, তোমরা সেই প্রক্রিয়াই আজ আমার উপর প্রয়োগ করছো।
০৫. কেউই জানেনা এই বর্বর জুলুমের শেষ কোথায় (কেবলমাত্র আল্লাহ ছাড়া)! আমার আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে অবহিত আছেন।
সকল পাপিষ্ঠ, জালিম, অন্যায়কারী, বিশ্বাসঘাতক, সরকারি সন্ত্রাসী ও খেয়ানতকারীদের উদেশ্যে আমি বলবো "হাসবুনাল্লাহি নি'মাল ওয়াকিল"!
০৬. আমি আল্লাহর সামনে উপনীত হবো। তাঁর কাছ থেকে উত্তম প্রতিদান পেতে, তাই আজ ধৈর্য্যের চরম মুহুর্ত গুলো পার করে চলেছি। আমি নিশ্চিত, অবশ্যই আমি অপরাধীদেরকে সেদিন আল্লাহর সম্মুখে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করাবো, যখন আল্লাহ সমস্ত অপরাধীদের বিচার শুরু করবেন!
০৭. আমার স্ত্রী ও সন্তানদের প্রতি আমার বার্তা: "আল্লাহ স্বাক্ষী, আমি তোমাদেরকে অনেক ভালোবাসি! এই ভালোবাসার গভীরতার পরিমাপ আল্লাহ ছাড়া আর কেউ করতে পারবেনা! জেলের অভ্যন্তরে প্রতিদিন অমানুষিক অত্যাচারে আমাকে জর্জরিত করা হয়েছে, চিকিত্সা বিহীন ভাবে আমাকে কষ্ট দেওয়া হয়েছে! এতকিছুর পরেও দিনে ও রাতে আমি তোমাদেরকে নিয়ে ভাবতাম। জানিনা কখন তোমাদের সাথে একত্রিত হতে পারবো! সম্ভবত (এই দুনিয়ায় আর নয়) জান্নাতেই আমাদের পুনর্মিলন ঘটবে!
০৮. আমি মিশরের মহান মুক্তিকামী জনতার উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আমি আবারো বলছি- আমি মিশরের মহান মুক্তিকামী জনতার উদ্দেশ্যে বলতে চাই! মিশরে পরিবর্তন আনার ক্ষমতা আপনাদের রয়েছে। আমি আমার যুবক ভাইদেরকে বলবো, "তোমাদের শহীদ ভাইদের মায়েদেরকে হতাশ করোনা! তাদের স্বপ্নকে ভেঙ্গে দিওনা! তোমাদের মজলুম ভাইদেরকে হতাশ করোনা! জুলুম এবং জালিম কোনোটাই স্থায়ী হয়না, আল্লাহই হচ্ছেন স্থায়ী। জালিমদেরকে আল্লাহ কখনোই কবুল করেননা।
মজলুমেরা জালিমদের সামনে এসে দাঁড়াবে, যেদিন আল্লাহই হবেন সর্বেসর্বা। অপরাধের শাস্তি থেকে পালানোর ক্ষমতা কারোই থাকবেনা।
০৯. আমার প্রেসিডেন্সিতে মিশর একবছরও পূর্ণ করতে পারেনি! ইহুদিবাদীদের ঘনিষ্ট মিত্র কিছু আরব দেশের ক্ষমতাসীনরা মিশরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে এবং সরকারি অনেক কর্মচারীদেরকে ক্রয় করে নিয়েছে তাদেরকে দিয়ে দেশের পরিস্থিতি খারাপ করার জন্যে। আজ মিশর ভালো নেই। একটার পর একটা খারাপ ঘটেই চলেছে। কিন্তু জালিমের পতন ও মজলুমদের বিজয় নিশ্চিত না করে মুক্তিকামী জনগণ কখনোই ক্ষান্ত হবেনা।
এটিই ছিল প্রেসিডেন্ট মুরসির শেষ বক্তব্য, যখন তাঁর দুর্বল ও অসুস্থ শরীর মাটিতে পড়ে যায়। গোটা ঘটনা মিশরীয় টিভি চ্যানেল ক্যামেরায় ধারণ করেছিল, কিন্তু শেষ দৃশ্যটি তারা টিভিতে সম্প্রচার করেনি। যখন মুরসী বলছিলেন: "আমি এখন কেবলমাত্র আমার আল্লাহর সাথে মিলিত হওয়ার অপেক্ষা করছি।
হে বিচারকগণ! আকাশের বিচারপতির অভিসম্পাত বর্ষিত হউক তোমাদের মতো নিকৃষ্ট জমিনের বিচারকদের উপর!
এরপর প্রেসিডেন্ট মুরসিকে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখা যায়নি l শাহাদাত অঙ্গুলী আকাশের উত্থিত অবস্থায় তিনি মাটিতে পড়ে যান l
"হে প্রশান্ত আত্মা! চলো তোমার রব্বের দিকে, এমন অবস্থায় যে তুমি (নিজের শুভ পরিণতিতে) সন্তুষ্ট (এবং তোমার রব্বের) প্রিয় পাত্র । শামিল হয়ে যাও আমার (নেক) বান্দাহদের মধ্যে। এবং প্রবেশ করো আমার জান্নাতে।"-- সূরা ফজর: শেষ আায়াত।
(জনাব ড. খলিলুর রাহমান মাদানী কর্তৃক আরবী বক্তৃতা থেকে অনুদিত)
0 Comments