বক্তৃতায় নয়-আচরণে ব্যবহারে মানুষ এসেছিল ইসলামের ছায়াতলে – মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম

১. মালেক বিন দীনার (রহঃ)-এর একজন ইহুদী প্রতিবেশী ছিল। সে মালেক বিন দীনারের গৃহের দেওয়াল ঘেষে একটি গোসলখানা নির্মাণ করে। দেওয়ালটি ছিল ভাঙ্গা। সেই ভাঙ্গা জায়গা দিয়ে ময়লা-আবর্জনা প্রবেশ করত। মালেক বিন দীনার প্রতিদিন তার ঘর পরিস্কার করতেন। কিন্তু প্রতিবেশীকে তিনি কিছুই বলতেন না। প্রতিবেশীর দেওয়া কষ্টে দীর্ঘদিন তিনি এভাবে ধৈর্যধারণ করে থাকলেন। এই কষ্টে অতিশয় ধৈর্যধারণের কারণে ঐ প্রতিবেশীর কাছে খারাপ লাগল। সে বললহে মালেক! আমি তোমাকে এই দীর্ঘ কষ্ট দিয়েছিঅথচ তুমি ধৈর্যধারণ করেছ। আর তুমি আমাকে এ বিষয়ে কিছুই বলনি। মালেক (রহঃ) বললেনরাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَا زَالَ جِبْرِيلُ يُوصِينِي بِالْجَارِ، حَتَّى ظَنَنْتُ أَنَّهُ سَيُوَرِّثُهُ- জিবরীল (আঃ) আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে উপদেশ দিতে থাকতেন। এমনকি আমি মনে করলাম যেতিনি প্রতিবেশীকে আমার উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিবেন একথা শুনে ইহুদী লজ্জিত হল এবং ইসলাম গ্রহণ করল। (ইমাম গাযালীইহইয়াউ উলূমিদ্দীন ২/২১৩ পৃঃ)

২. সাহল ইবনে আব্দুল্লাহ আত-তসতরী (রহঃ)-এর একজন অগ্নিপূজক প্রতিবেশী ছিল। সে সাহল (রহঃ)-এর বাড়ীর উপর তলায় থাকত। সেই অগ্নিপূজক তার মেঝেতে বড় ছিদ্র করে। সেই ছিদ্র পথে সে সাহল (রহঃ)-এর গৃহে প্রতিদিন ময়লা-আবর্জনা ফেলত। সাহল (রহঃ) ঐ ছিদ্রের নীচে একটি গামলা বা পাত্র রাখতেন। যার মধ্যে ময়লা-আবর্জনা পতিত হত। অতঃপর রাত্রে তিনি পাত্রটি নিয়ে ময়লা-আবর্জনা দূরে ফেলে আসতেন। এভাবে দীর্ঘদিন সাহল (রহঃ) ঐ বাড়ীতে অবস্থান করেন। অবশেষে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন সাহল (রহঃ) তার ঐ অগ্নিপূজক প্রতিবেশীকে ডেকে পাঠান। সে আসলে তাকে বললেনএই ঘরের ভিতরে দেখ। সে তখন ঐ ছিদ্র ও ময়লা-আবর্জনা দেখে বললহে শায়খ! এসব কি?

তিনি বললেনদীর্ঘদিন যাবৎ তোমার ঘর থেকে এসব পতিত হচ্ছে। আমি দিনের বেলা তা জমা করি এবং রাত্রে তা দূরে ফেলে আসি। আজকে আমার যে অবস্থা দেখছযদি এ অবস্থা আমার না হতাহলে আমি তোমাকে এ বিষয়ে অবহিত করতাম না। আর আমি আশঙ্কা করছি যেএ কারণে তোমার সাথে আমার আচরণ খারাপ হয়ে যেতে পারে। সুতরাং তোমার যা করণীয় কর। তখন ঐ অগ্নিপূজক বললহে শায়খ! আপনি এই দীর্ঘ সময়ে আমার সাথে এই উত্তম ব্যবহার করেছেনআর আমি আমার কুফরীর উপরে অটল রয়েছি! আপনি হাত বাড়িয়ে দিনআমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যেআল্লাহ ব্যতীত আর কোন হক মাবূদ নেই এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ) আল্লাহর রাসূল। এরপর সাহল (রহঃ) মৃত্যুবরণ করেন। (আব্দুল্লাহ ইবনে আসআদ আল-ইয়াফেঈআত-তারগীব ওয়াত-তারহীব (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহতাবি)পৃঃ ১২১-২২ক্রমিক নং ৪৩৮)

Post a Comment

0 Comments