মুহাম্মদ নজরুল ইসলামঃঃ ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক জামায়াতে
ইসলামী থেকে পদত্যাগ করেছেন-এই সময়ের হট নিউজ। যে সব পত্রিকা গত এক বছর
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক কোথায় আছেন বা কেন তিনি নিজ জন্মভূমি ছেড়ে বিদেশে
স্বেচ্ছা নির্বাসনে ইত্যাদি নিয়ে কোন কথা বলেনি এই দীর্ঘ সময়ে,
তারাই ফলাও করে প্রচার
করছেন এই খবরটি। আজকের টকশো গুলোও আশা করা যায় এবিষয় নিয়ে জমজমাট হবে।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল এর পক্ষ থেকে এই বিষয়ে
একটা বিবৃতি প্রদান করা হয়েছে, যা তাদের ওয়েবসাইটে ঝকঝক করছে “ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এর পদত্যাগে আমরা ব্যথিত ও মর্মাহতঃ
ব্যরিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এর অতীতের সকল অবদান আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি” শিরোনামে।অবশ্য ব্যরিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের পদত্যাগে তিনি
যে কারণ দেখিয়েছেন, সে সম্পর্কে বিবৃতিতে কিছু বলা হয়নি।
ব্যরিস্টার আব্দুর রাজ্জাক পদত্যাগের কারণ হিসাব যা মিডিয়ার
কল্যাণে আমরা জানতে পাই, তাহলোঃ
১. একাত্তরের ভূমিকার জন্য দলটির ক্ষমা না চাওয়া।
২. দলটির নাম পরিবর্তন না করার বিষয়ে শীর্ষ নেতাদের অনড়
অবস্থান।
৩. সময়ের সংগে সংগে নিজেদের সংস্কার করতে না পারা।
যারা জামায়াতে ইসলামীর সাথে জড়িত,
হাল আমলে তারা
কখনো ব্যরিস্টার সাহেবের পক্ষ থেকে এই ধরণের কোন বক্তব্য শুনেছেন কি?
আমি অন্তত
শুনিনি।
একটা পরিবার যদি বিপদের সম্মুখীন হয়,
আর সেই পরিবারের
কোন সদস্য সেই সময়ে বিপদ থেকে উত্তরণের জন্য যুগপোযোগী পরামর্শ দিয়ে থাকেন,
আর পরিবারের
অন্য সদস্য তা না মানেন, তাহলে পরিবারের সেই জ্ঞানী সদস্য পরিবার ছেড়ে চলে যাওয়ার
সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে কি অবস্থা দাড়ায়?
১. তিনি পরিবার ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণে,
সেই পরিবারে তার
আর কোন কথা বলার সুযোগ থাকেনা-ব্যরিষ্টার সাহেবের ক্ষেত্রে এখন তাই হবে।
২. সেই পরিবার অন্যান্য বিষয়েও তার কোন বক্তব্য রাখার সুযোগ
থাকনা বলে পরিবার পরবর্তি সময়ে ভূল সিদ্ধান্তে পৌছার আশংকা থাকে-ব্যরিস্টার
সাহেবের অনুপস্থিতি তাও থেকে গেলো।
৩. পরিবার কথা না শুনার কারণে পরিবার থেকে কেউ চলে গেলে সে
একঘরে হয়ে থাকে, বিধায় পরিবারে অবস্থানের কারণে তার যে গৌরব ও আত্মতৃপ্তি
ছিল, তা্
আর থাকেনা। পক্ষান্তরে তিনি মানসিক অশান্তির মাঝে অবস্থান করতে থাকেন। ব্যরিস্টার
সাহেবের ক্ষেত্রে এর সবক’টি প্রয়োজ্য।
ব্যরিস্টার সাহেবকে বলবোঃ
১. আপনি নিজে একটি দল করুন, যাতে ৭১ এর কোন কালিমা থাকবেনা। আপনার
নতুন গড়া দলের লক্ষ যেন হয় জামায়াতে ইসলামী যে লক্ষে পৌছতে চায়-সেই লক্ষ্য। আমরা
দেখবোঃ আপনার নতুন গড়া দল হালে কতটুকু পানি পায়। যদি পানি পায়,
তাহলে দেখবেন
দলে দলে আপনার চিন্তার সাথে ঐক্যমত পোষনকারী জামায়াত শিবির কর্মীরা আপনার দলে
যোগদান করছে।আর যদি তা না হয়, তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে, আপনি বড় রকমের ভূল করেছেন।
২. জামায়াতে ইসলামী নাম পরিবর্তন করার কোন দরকার নাই।
জামায়াত জামায়াতের জায়গায়ই থেকে একদিন নিঃশেষ হয়ে যাক। আর জামায়াতের লোকেরা নতুন
একটা দল করুক আপনার নেতৃত্বে-যারা আপনার দৃষ্টিভংগীর সাথে একমত হয়। জামায়াতের শুধু
সাইনবোর্ড পরিবর্তন করলেই দল বিলুপ্ত হয়না। যেমন আমরা যে দেশে সংগঠন করি,
সে দলের নাম
জামায়াতে ইসলামী নয়। কিন্তু আমাদের দলকে মানুষ জামায়াত নামেই চিনে। জামায়াতের
নেতারা জামায়াতেই থাকুক। আপনি মডারেটদের নিয়ে নতুন কিছু করেন। আমরা শুধু দেখতে
থাকবো, আপনি
জামায়াতকে জনশক্তি শুণ্য করতে পারলেন কি না?
৩. সময়ের সাথে সাথে নিজেদের সংস্কার করতে পারেনি
জামায়াত-আপনার এই বক্তব্য দ্বারা যদি উদ্দেশ্য হয়, জামায়াত আওয়ামীলীগ বিএনপির মতো
বেলেল্লাপনা হয়ে ধর্মনিরপেক্ষ ভাবে চলবে, তাহলে জামায়াতেরই বা কি দরকার। সবাই
একসাথে আওয়ামীলীগ বা বিএনপি বা অন্য কোন দলে যোগদান করলেই লেটা চুকে যায়।
সবশেষে বলবোঃ
আমরা সংগঠন করি, আমি নিজেকে একজন সাচ্ছা মুসলমান হিসাবে
তৈরী করার জন্য। আমাদের সেই কাজটা সফল হচ্ছে কিনা?
আমরা সংগঠন করি দূর্ণীতি, সন্ত্রাস, ইপটিজিং, ধর্ষণ, বেহায়াপনা থেকে বেঁচে থাকার জন্য। আমরা
সে ক্ষেত্রে সফল কিনা?
আমরা সংগঠন করি, একদল দেশ প্রেমিক আদর্শবান নাগরিক তৈরীর
জন্য-আমরা সেই আন্দোলনের সফল কিনা?
আমরা দল করি কোন এক নেতার নেতৃত্বে নয়,
বরং একটি
কালেকটিভ নেতৃত্ব তথা সংখ্যাধিক্যের মতামতের ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়ার জন্য-সে
ক্ষেত্রে আমরা সফল কিনা?
সংখ্যাধিক্যের মতামতের কারণে আমাদের শিশুকালে মাওলানা
আব্দুর রহীম সাহেবের মতামত মূল্যায়িত হয়নি। সংখ্যাধিক্যের মতামতের ভিত্তিতে
ব্যরিস্টার সাহেবের মতামতও গৃহিত হলোনা। তাতে দূঃখ করার কি আছে-আমি তো আমার
পরামর্শ দিতে পেরেছি, আমি তো আমার দায়িত্ব পালন করেছি-এই দৃষ্টিভংগী যদি আমাদের
হয়, তাহলে
আমরা সফল কিনা?
ক্যারেশমেটিক নেতৃত্বের মাধ্যমে সাময়িক বিজয় নয়,
একদল ভাল মানুষ
তৈরীর আন্দোলনে নিজেকে সার্বক্ষনিক নিয়োজিত রাখতে পারলাম কি না-এই হোক আমাদের
ব্রত। এই আমার প্রত্যাশা।
ফ্রেব্রুয়ারী ২০, ২০১৯
0 Comments