একঃ সূরা আল বাকারাঃ ১৮৩
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ
كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ﴾
হে ঈমানদাগণ! তোমাদের ওপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী নবীদের অনুসারীদের ওপর ফরয করা হয়েছিল৷ এ থেকে আশা করা যায়, তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার গুণাবলী সৃষ্টি হয়ে যাবে৷
এই আয়াত থেকে আমরা জানলামঃ ৩টি বিষয়
১. রোযা ফরয।
২. রোযা পূর্ববর্তীদের উপরও ফরয ছিল।
৩. রোযার উদ্দেশ্য মানুষকে মুত্তাকী করা।
দুইঃ সূরা আল বাকারাঃ ১৮৪
﴿أَيَّامًا مَّعْدُودَاتٍ ۚ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوْ
عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ۚ وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ
فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ ۖ فَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَّهُ ۚ
وَأَن تَصُومُوا خَيْرٌ لَّكُمْ ۖ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ﴾
এ কতিপয় নিদিষ্ট দিনের রোযা৷ যদি তোমাদের কেউ হয়ে থাকে রোগগ্রস্ত অথবা মুসাফির তাহলে সে যেন অন্য দিনগুলোয় এই সংখ্যা পূর্ণ করে৷ আর যাদের রোযা রাখার সামর্থ আছে (এরপরও রাখে না)তারা যেন ফিদিয়া দেয়৷ একটি রোযার ফিদিয়া একজন মিসকিনকে খাওয়ানো৷ আর যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ও সানন্দে কিছু বেশী সৎকাজ করে, তা তার জন্য ভালো৷ তবে যদি তোমরা সঠিক বিষয় অনুধাবন করে থাকো৷ তাহলে তোমাদের জন্য রোযা রাখাই ভালো৷
এই আয়াত থেকে আমরা জানলামঃ ৮টি বিষয়
১. রোযা একটি নির্দিষ্ট সময়ে রাখতে হয়।
২. রোগাক্রান্তরা নির্দিষ্ট সময়ে রোযা না রেখে
পরে রাখতে পারবে।
৩. মুসাফির সফরকালীন সময়ে রোযা ছেড়ে দেয়ার
সুযোগ আছে।
৪. রোযার কাফফারা হলো ফিদিয়া।
৫. ফিদিয়া মানে একজন মিসকিনকে খাওয়ানো।
৬. রোগী বা মুসাফির যদি রোযা রাখে, তাহলে তা উত্তম।
৭. একজন মিসকিনের স্থলে একাধিক মিসকিনকে খাওয়ানোও
উত্তম।
৮. ফিদিয়া দিয়ে রোযা বাদ দেয়া নয়, বরং রোযা রাখাটাই উত্তম কাজ।
তিনঃ সূরা আল বাকারাঃ ১৮৫
﴿شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى
لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَىٰ وَالْفُرْقَانِ ۚ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ
الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ ۖ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ
مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ۗ يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ
الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَىٰ مَا
هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ﴾
রমযানের মাস, এ মাসেই কুরআন নাযিল করা হয়েছে , যা মানব জাতির জন্য পুরোপুরি হিদায়াত এবং এমন দ্ব্যর্থহীন শিক্ষা সম্বলিত, যা সত্য –সঠিক পথ দেখায় এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য সুস্পষ্ট করে দেয়৷ কাজেই এখন থেকে যে ব্যক্তি এ মাসের সাক্ষাত পাবে তার জন্য এই সম্পূর্ণ মাসটিতে রোযা রাখা অপরিহার্য এবং যে ব্যক্তি রোগগ্রস্ত হয় বা সফরে থাকে, সে যেন অন্য দিনগুলোয় রোযার সংখ্যা পূর্ণ করে৷ আল্লাহ তোমাদের সাথে নরম নীতি অবলম্বন করতে চান, কঠোর নীতি অবলম্বন করতে চান না৷ তাই তোমাদেরকে এই পদ্ধতি জানানো হচ্ছে, যাতে তোমরা রোযার সংখ্যা পূর্ণ করতে পারো এবং আল্লাহ তোমাদের যে হিদায়াত দান করেছেন সে জন্য যেন তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করতে ও তার স্বীকৃতি দিতে এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো৷
এই আয়াত থেকে আমরা জানলামঃ ৮টি বিষয়
১. রামাদ্বান কুরআন নাযিলের মাস।
২. কুরআন মানুষের জন্য হেদায়াত।
৩. কুরআন হলো সত্য পথযাত্রীর জন্য পথপ্রদর্শক।
৪. কুরআন হক আর বাতিলের মাঝে পার্থক্য নির্ণয়
করে।
৫. আল্লাহ কর্তৃক ফরয করা রোযা রামাদ্বানে
রাখতে হবে।
৬. অসুস্থ ও মুসাফির রামাদ্বানে রোযা না রাখলে
সমপরিমাণ রোযা পরে রাখতে হবে।
৭. আল্লাহ বান্দার জন্য সহজ করতে চান, কঠিন করতে চাননা।
৮. পূর্ণ একমাস রোযা রাখা, আল্লাহর হেদায়াত প্রাপ্তির জন্য তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করা ও তার স্বীকৃতি প্রদান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
চারঃ সূরা আল বাকারাঃ ১৮৭
﴿أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَىٰ نِسَائِكُمْ
ۚ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ ۗ عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ
كُنتُمْ تَخْتَانُونَ أَنفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنكُمْ ۖ فَالْآنَ
بَاشِرُوهُنَّ وَابْتَغُوا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَكُمْ ۚ وَكُلُوا وَاشْرَبُوا
حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ
مِنَ الْفَجْرِ ۖ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ ۚ وَلَا
تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ ۗ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ
فَلَا تَقْرَبُوهَا ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ آيَاتِهِ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ
يَتَّقُونَ﴾
রোযার সময় রাতের বেলা স্ত্রীদের কাছে যাওয়া তোমাদের জন্য হালাল করে দেয়া হয়েছে৷ তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাক৷ আল্লাহ জানতে পেরেছেন, তোমরা চুপি চুপি নিজেরাই নিজেদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছিলে৷ কিন্তু তিনি তোমাদের অপরাধ মাফ করে দিয়েছেন এবং তোমাদের ক্ষমা করেছেন৷ এখন তোমরা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে রাত্রিবাস করো এবং যে স্বাদ আল্লাহ তোমাদের জন্য বৈধ করে দিয়েছেন তা গ্রহণ করো৷ আর পানাহার করতে থাকো৷ যতক্ষণ না রাত্রির কালো রেখার বুক চিরে প্রভাতের সাদা রেখা সুস্পষ্টভাবে দৃষ্টিগোচর হয়৷ তখন এসব কাজ ত্যাগ করে রাত পর্যন্ত নিজের রোযা পূর্ণ করো৷ আর যখন তোমরা মসজিদে ই’তিকাফে বসো তখন স্ত্রীদের সাথে সহবাস করো না৷ এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা , এর ধারে কাছেও যেয়ো না৷ এভাবে আল্লাহ তাঁর বিধান লোকদের জন্য সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, আশা করা যায় এর ফলে তারা ভুল কর্মনীতি গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে৷
এই আয়াত থেকে আমরা জানলামঃ ৭টি বিষয়
১. রোযার সময় রাতের বেলা স্ত্রীর কাছে যাওয়া
হালাল।
২. স্বামী স্ত্রী পরস্পর পোষাকের মতো।
৩. অতীতে রোযা রেখে (দিনের বেলা) স্ত্রীর কাছে যাওয়ার অপরাধ আল্লাহর জানা, কিন্তু তিনি অতীত ক্ষমা করে দিয়েছেন।
৪. সুবহে সাদিক পর্যন্ত পানাহারের সুযোগ রয়েছে।
৫. সুবহে সাদিক থেকে রাত আসা পর্যন্ত তথা দিনের
বেলা স্ত্রীর কাছে যাওয়া আর পানাহার ত্যাগ করা।
৬. মসজিদে এতেকাফ কালীন সময়ে স্ত্রীদের কাছে
গমন হারাম।
৭. আল্লাহর কিছু সীমা রেখা আছে, যার নিকটে না যাওয়া।
পাঁচঃ সূরা আল বাকারাঃ ১৯৬
﴿وَأَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلَّهِ ۚ فَإِنْ
أُحْصِرْتُمْ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ ۖ وَلَا تَحْلِقُوا رُءُوسَكُمْ
حَتَّىٰ يَبْلُغَ الْهَدْيُ مَحِلَّهُ ۚ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوْ بِهِ
أَذًى مِّن رَّأْسِهِ فَفِدْيَةٌ مِّن صِيَامٍ أَوْ صَدَقَةٍ أَوْ نُسُكٍ ۚ
فَإِذَا أَمِنتُمْ فَمَن تَمَتَّعَ بِالْعُمْرَةِ إِلَى الْحَجِّ فَمَا
اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ ۚ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ
فِي الْحَجِّ وَسَبْعَةٍ إِذَا رَجَعْتُمْ ۗ تِلْكَ عَشَرَةٌ كَامِلَةٌ ۗ ذَٰلِكَ
لِمَن لَّمْ يَكُنْ أَهْلُهُ حَاضِرِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ۚ وَاتَّقُوا
اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ﴾
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যখন হজ্জ ও উমরাহ করার নিয়ত করো তখন তা পূর্ণ করো৷ আর যদি কোথাও আটকা পড়ো তাহলে যে কুরবানী তোমাদের আয়ত্বাধীন হয় তাই আল্লাহর উদ্দেশ্যে পেশ করো৷ আর কুরবানী তার নিজের জায়গায় পৌছে না যাওয়া পর্যন্ত তোমরা নিজেদের মাথা মুণ্ডন করো না৷ তবে যে ব্যক্তি রোগগ্রস্ত হয় অথবা যার মাথায় কোন কষ্ট থাকে এবং সেজন্য মাথা মুণ্ডন করে তাহলে তার ‘ফিদিয়া’ হিসেবে রোযা রাখা বা সাদকা দেয়া অথবা কুরবানী করা উচিত৷ তারপর যদি তোমাদের নিরাপত্তা অর্জিত হয় (এবং তোমরা হজ্জের আগে মক্কায় পৌছে যাও) তাহলে তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি হজ্জের সময় আসা পর্যন্ত উমরাহর সুযোগ লাভ করে সে যেন সামর্থ অনুযায়ী কুরবানী করে৷ আর যদি কুরবানীর যোগাড় না হয়, তাহলে হজ্জের যামানায় তিনটি রোযা এবং সাতটি রোযা ঘরে ফিরে গিয়ে, এভাবে পুরো দশটি রোযা যেন রাখে৷ এই সুবিধে তাদের জন্য যাদের বাড়ী-ঘর মসজিদে হারামের কাছাকাছি নয়৷ আল্লাহর এ সমস্ত বিধানের বিরোধিতা করা থেকে দূরে থাকো এবং ভালোভাবে জেনে নাও আল্লাহ কঠিন শাস্তি প্রদানকারী৷
এই আয়াত থেকে আমরা জানলামঃ ১টি বিষয়
১. উমরা বা হজ্জ করতে গেলে সেখানে ভূল করলে মক্কায় থাকা অবস্থায় ৩টি আর বাড়ীতে ফিরে ৭টি মোট ১০ রোযা রাখতে হবে।
ছয়ঃ সূরা আন নিসাঃ ৯২
﴿وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ أَن يَقْتُلَ مُؤْمِنًا إِلَّا خَطَأً ۚ
وَمَن قَتَلَ مُؤْمِنًا خَطَأً فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مُّؤْمِنَةٍ وَدِيَةٌ
مُّسَلَّمَةٌ إِلَىٰ أَهْلِهِ إِلَّا أَن يَصَّدَّقُوا ۚ فَإِن كَانَ مِن قَوْمٍ
عَدُوٍّ لَّكُمْ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مُّؤْمِنَةٍ ۖ وَإِن كَانَ
مِن قَوْمٍ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُم مِّيثَاقٌ فَدِيَةٌ مُّسَلَّمَةٌ إِلَىٰ
أَهْلِهِ وَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مُّؤْمِنَةٍ ۖ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ
شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ تَوْبَةً مِّنَ اللَّهِ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا
حَكِيمًا﴾
কোন মুমিনের কাজ নয় অন্য মুমিনকে হত্যা করা, তবে ভুলবশত হতে পারে৷ আর যে ব্যক্তি ভুলবশত কোন মুমিনকে হত্যা করে তার কাফ্ফারা হিসেবে একজন মুমিনকে গোলামী থেকে মুক্ত করে দিতে হবে এবং নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসদেরকে রক্ত মূল্য দিতে হবে তবে যদি তারা রক্ত মূল্য মাফ করে দেয় তাহলে স্বতন্ত্র কথা৷ কিন্তু যদি ঐ নিহত মুসলিম ব্যক্তি এমন কোন জাতির অন্তরভুক্ত হয়ে থাকে যাদের সাথে তোমাদের শত্রুতা রয়েছে তাহলে একজন মুমিন গোলামকে মুক্ত করে দেয়াই হবে তার কাফ্ফারা৷ আর যদি সে এমন কোন অমুসলিম জাতির অন্তরভুক্ত হয়ে থাকে যাদের সাথে তোমাদের চুক্তি রয়েছে তাহলে তার ওয়ারিসদেরকে রক্ত মূল্য দিতে হবে এবং একজন মুমিন গোলামকে মুক্ত করে দিতে হবে৷ আর যে ব্যক্তি কোন গোলাম পাবে না তাকে পরপর দুমাস রোযা রাখতে হবে৷ এটিই হচ্ছে এই গোনাহের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে তাওবা করার পদ্ধতি৷ আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও জ্ঞানময়৷
এই আয়াত থেকে আমরা জানলামঃ ১টি বিষয়
১. ভুলে হত্যা করার কাফফারা হলো-একাধারে ২মাস রোযা রাখতে হবে।
সাতঃ সূরা আল মায়িদাঃ ৮৯
﴿لَا يُؤَاخِذُكُمُ اللَّهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ
وَلَٰكِن يُؤَاخِذُكُم بِمَا عَقَّدتُّمُ الْأَيْمَانَ ۖ فَكَفَّارَتُهُ إِطْعَامُ
عَشَرَةِ مَسَاكِينَ مِنْ أَوْسَطِ مَا تُطْعِمُونَ أَهْلِيكُمْ أَوْ كِسْوَتُهُمْ
أَوْ تَحْرِيرُ رَقَبَةٍ ۖ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ ۚ
ذَٰلِكَ كَفَّارَةُ أَيْمَانِكُمْ إِذَا حَلَفْتُمْ ۚ وَاحْفَظُوا أَيْمَانَكُمْ ۚ
كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ﴾
তোমরা যে সমস্ত অর্থহীন কসম খেয়ে ফেলো৷ সে সবের জন্য আল্লাহ তোমাদের পাকড়াও করেন না৷ কিন্তু তোমরা জেনে বুঝে যেসব কসম খাও সেগুলোর ওপর তিনি অবশ্যি তোমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন৷(এ ধরনের কসম ভেঙে ফেলার)কাফ্ফারা হচ্ছে, দশ জন মিসকিনকে এমন মধ্যম পর্যায়ের আহার দান করো যা তোমরা নিজেদের সন্তানদের খেতে দাও অথবা তাদেরকে কাপড় পরাও বা একটি গোলামকে মুক্ত করে দাও৷ আর যে ব্যক্তি এর সামর্থ রাখে না সে যেন তিন দিন রোযা রাখে৷ এ হচ্ছে তোমাদের কসমের কাফ্ফারা যখন তোমরা কসম খেয়ে তা ভেঙে ফেলো৷ তোমাদের কসমসমূহ সংরক্ষণ করো৷ এভাবে আল্লাহ নিজের বিধান তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট করেন, হয়তো তোমরা কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ করবে৷
এই আয়াত থেকে আমরা জানলামঃ ১টি বিষয়
১. জেনে বুঝে কসম খাওয়ার কাফফারা হলো ৩দিন রোযা রাখো।
আটঃ সূরা আল মায়িদাঃ ৯৫
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَقْتُلُوا الصَّيْدَ وَأَنتُمْ
حُرُمٌ ۚ وَمَن قَتَلَهُ مِنكُم مُّتَعَمِّدًا فَجَزَاءٌ مِّثْلُ مَا قَتَلَ مِنَ
النَّعَمِ يَحْكُمُ بِهِ ذَوَا عَدْلٍ مِّنكُمْ هَدْيًا بَالِغَ الْكَعْبَةِ أَوْ
كَفَّارَةٌ طَعَامُ مَسَاكِينَ أَوْ عَدْلُ ذَٰلِكَ صِيَامًا لِّيَذُوقَ وَبَالَ
أَمْرِهِ ۗ عَفَا اللَّهُ عَمَّا سَلَفَ ۚ وَمَنْ عَادَ فَيَنتَقِمُ اللَّهُ
مِنْهُ ۗ وَاللَّهُ عَزِيزٌ ذُو انتِقَامٍ﴾
হে ঈমানদারগণ! ইহরাম বাঁধা অবস্থায় শিকার করো না৷ আর তোমাদের কেউ যদি জেনে বুঝে এমনটি করে বসে, তাহলে যে প্রাণীটি সে মেরেছে গৃহপালিত প্রাণীর মধ্য থেকে তারই সমপর্যায়ের একটি প্রাণী তাকে নয্রানা দিতে হবে, যার ফায়সালা করবে তোমাদের মধ্য থেকে দুজন ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তি৷ আর এ নযরানা কাবা ঘরে পৌঁছাতে হবে৷ অথবা এ গুনাহের কাফ্ফারা হিসেবে কয়েক জন মিসকীনকে খাবার খাওয়াতে হবে৷ অথবা সে অনুপাতে রোযা রাখতে হবে, যাতে সে নিজের কৃতকর্মের ফল ভোগ করে৷ পূর্বে যা কিছু হয়ে গেছে সেসব আল্লাহ মাফ করে দিয়েছেন৷ কিন্তু এখন যদি কেউ সে কাজের পুনরাবৃত্তি করে তাহলে আল্লাহ তার বদলা নেবেন৷ আল্লাহ সবার ওপর বিজয়ী এবং তিনি বদ্লা নেবার ক্ষমতা রাখেন৷
এই আয়াত থেকে আমরা জানলামঃ ১টি বিষয়
১. ইহরাম কালীন শিকার করলে কাফফারা হিসাবে রোযা রাখার বিধান রয়েছে।
নয়ঃ সূরা মারইয়ামঃ ২৬
﴿فَكُلِي وَاشْرَبِي وَقَرِّي عَيْنًا ۖ فَإِمَّا تَرَيِنَّ مِنَ
الْبَشَرِ أَحَدًا فَقُولِي إِنِّي نَذَرْتُ لِلرَّحْمَٰنِ صَوْمًا فَلَنْ
أُكَلِّمَ الْيَوْمَ إِنسِيًّا﴾
তারপর তুমি খাও, পান করো এবং নিজের চোখ জুড়াও৷ তারপর যদি তুমি মানুষের দেখা পাও তাহলে তাকে বলে দাও, আমি করুণাময়ের জন্য রোযার মানত মেনেছি, তাই আজ আমি কারোর সাথে কথা বলবো না”৷
এই আয়াত থেকে আমরা জানলামঃ ১টি বিষয়
১. বনী ইসরাঈলের রোযা ছিল, মৌনতা অবলম্বন করা।
দশঃ সূরা আল আহযাবঃ ৩৫
﴿إِنَّ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَالْمُؤْمِنِينَ
وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْقَانِتِينَ وَالْقَانِتَاتِ وَالصَّادِقِينَ
وَالصَّادِقَاتِ وَالصَّابِرِينَ وَالصَّابِرَاتِ وَالْخَاشِعِينَ وَالْخَاشِعَاتِ
وَالْمُتَصَدِّقِينَ وَالْمُتَصَدِّقَاتِ وَالصَّائِمِينَ وَالصَّائِمَاتِ
وَالْحَافِظِينَ فُرُوجَهُمْ وَالْحَافِظَاتِ وَالذَّاكِرِينَ اللَّهَ كَثِيرًا
وَالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللَّهُ لَهُم مَّغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا﴾
একথা সুনিশ্চিত যে, যে পুরুষ ও নারী মুসলিম, মুমিন, হুকুমের অনুগত, সত্যবাদী, সবরকারী, আল্লাহর সামনে বিনত, সাদকাদানকারী, রোযা পালনকারী, নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজতকারী এবং আল্লাহকে বেশী বেশী স্মরণকারী আল্লাহ তাদের জন্য মাগফিরাত এবং প্রতিদানের ব্যবস্থা করে রেখেছেন৷
এই আয়াত থেকে আমরা জানলামঃ ১টি বিষয়
১. মাগফিরাত ও প্রতিদান যাদের জন্য, রোযাদার তাদের অন্যতম।
এগারঃ সূরা আল মুজাদালাহঃ ৩-৪
﴿وَالَّذِينَ يُظَاهِرُونَ مِن نِّسَائِهِمْ ثُمَّ يَعُودُونَ
لِمَا قَالُوا فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مِّن قَبْلِ أَن يَتَمَاسَّا ۚ ذَٰلِكُمْ
تُوعَظُونَ بِهِ ۚ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ﴾ ﴿فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ مِن
قَبْلِ أَن يَتَمَاسَّا ۖ فَمَن لَّمْ يَسْتَطِعْ فَإِطْعَامُ سِتِّينَ مِسْكِينًا
ۚ ذَٰلِكَ لِتُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ۚ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ ۗ
وَلِلْكَافِرِينَ عَذَابٌ أَلِيمٌ﴾
যারা নিজের স্ত্রীর সাথে “যিহার” করে বসে এবং তারপর নিজের বলা সে কথা প্রত্যাহার করে এমতাবস্থায় তারা পরস্পরকে স্পর্শ করার পূর্বে একটি ক্রীতদাসকে মুক্ত করতে হবে৷ এর দ্বারা তোমাদের উপদেশ দেয়া হচ্ছে৷ তোমরা যা করো আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত৷ যে মুক্ত করার জন্য কোন ক্রীতদাস পাবে না সে বিরতিহীনভাবে দুই মাস রোযা রাখবে- উভয়ে পরস্পরকে স্পর্শ করার পূর্বেই৷ যে তাও পারবে না সে ষাট জন মিসকীনকে খাবার দেবে৷তোমাদেরকে এ নির্দেশ দেয়া হচ্ছে এ জন্য যাতে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ওপর ঈমান আনো৷ এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত ‘হদ’৷ কাফেরদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি৷
এই আয়াত থেকে আমরা জানলামঃ
১টি বিষয়
১. যিহার এর কাফফারা হলো একাধারে ৬০ দিন রোযা রাখা।
উপরোক্ত ১১টি আয়াত থেকে আমরা ৩৩টি বিষয় জানলামঃ
1.
রোযা ফরয।
2.
রোযা পূর্ববর্তীদের
উপরও ফরয ছিল।
3.
রোযার উদ্দেশ্য
মানুষকে মুত্তাকী করা।
4.
রোযা একটি নির্দিষ্ট সময়ে রাখতে
হয়।
5.
রোগাক্রান্ত নির্দিষ্ট সময়ে রোযা
না রেখে পরে রাখতে পারবে।
6.
মুসাফির সফরকালীন সময়ে রোযা ছেড়ে
দেয়ার সুযোগ আছে।
7.
রোযার কাফফারা হলো ফিদিয়া।
8.
ফিদিয়া মানে একজন মিসকিনকে খাওয়ানো।
9.
রোগী বা মুসাফির যদি রোযা রাখে, তাহলে তা উত্তম।
10.
একজন মিসকিনের স্থলে একাধিক মিসকিনকে
খাওয়ানোও উত্তম।
11.
রোযা রাখাটাই উত্তম কাজ।
12.
রামাদ্বান কুরআন নাযিলের মাস।
13.
কুরআন মানুষের জন্য হেদায়াত।
14.
কুরআন হলো সত্য পথযাত্রীর জন্য
পথপ্রদর্শক।
15.
কুরআন হক আর বাতিলের মাঝে পার্থক্য
নির্ণয় করে।
16.
আল্লাহ কর্তৃক ফরয করা রোযা রামাদ্বানে
রাখতে হবে।
17.
অসুস্থ ও মুসাফির রামাদ্বানে রোযা
না রাখলে সমপরিমাণ রোযা পরে রাখতে হবে।
18.
আল্লাহ বান্দার জন্য সহজ করতে
চান, কঠিন করতে চাননা।
19.
পূর্ণ একমাস রোযা রাখা, আল্লাহর হেদায়াত প্রাপ্তির জন্য তার শ্রেষ্টত্ব
প্রকাশ ও স্বীকৃতি প্রদান ও স্বীকৃতি প্রদান।
20. রোযার সময় রাতের বেলা স্ত্রীর কাছে যাওয়া হালাল।
21.
স্বামী স্ত্রী পরস্পর পোষাকের
মতো।
22. রোযা রেখে স্ত্রীর কাছে যাওয়ার অপরাধ আল্লাহর জানা, কিন্তু তিনি অতীত ক্ষমা করে দিয়েছেন।
23. সুবহে সাদিক পর্যন্ত পানাহারের সুযোগ রয়েছে।
24. সুবহে সাদিক থেকে রাত আসা পর্যন্ত তথা দিনের বেলা স্ত্রীর কাছে
যাওয়া আর পানাহার ত্যাগ করা।
25. মসজিদে এতেকাফ কালীন সময়ে স্ত্রীদের কাছে গমন হারাম।
26.
আল্লাহর কিছু সীমা রেখা আছে, যার নিকটে না যাওয়া।
27.
উমরা বা হজ্জ করতে গেলে সেখানে
ভূল করলে মক্কায় থাকা অবস্থায় ৩টি আর বাড়ীতে ফিরে ৭টি মোট ১০ রোযা রাখতে হবে।
28.
ভুলে হত্যা করার কাফফারা হলো-একাধারে
২মাস রোযা রাখতে হবে।
29.
জেনে বুঝে কসম খাওয়ার কাফফারা
হলো ৩দিন রোযা রাখো।
30.
ইহরাম কালীন শিকার করলে কাফফারা
হিসাবে রোযা রাখার বিধান রয়েছে।
31.
বনী ইসরাঈলের রোযা ছিল, মৌনতা অবলম্বন করা।
32.
মাগফিরাত ও প্রতিদান যাদের জন্য, রোযাদার তাদের অন্যতম।
33.
যিহার এর কাফফারা হলো একাধারে
৬০ দিন রোযা রাখা।
উপরোক্ত
আয়াত সমূহ থেকে যে ৩৩টি পয়েন্ট উল্লেখ করা হলো, তা কোন ধরণের ফতোয়া
নয়। ফতোয়া নির্ধারণের জন্য উসুল রয়েছে। আর
উসুল থেকে ইসলাম বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বিশ্লেষণের পর পন্ডিতরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিমত
ব্যক্ত করে থাকেন। সংশ্লিষ্ট সমূহে সেই সব পন্ডিতদের সিদ্ধান্তের দিতে নজর দিতে
হবে। এখানে উপরোক্ত আয়াত সমূহের সাথে রোযার সংশ্লিষ্টতাই কেবল দেখানো হয়েছে।
0 Comments