(একজন উমরাহ যাত্রীর জন্য প্রস্তুতি, পড়ালেখা এবং করণীয়)
হাজী সাহেব,
আস্সালামু আলাইকুম। আপনাকে সুস্বাগতম
আজকের উমরা গাইডের আলোচনাতে। আপনি হজ্জে যান বা যান কেবল উমরাহতে, আপনাকে একবার উমরাহ
করতেই হবে। ইহরাম অবস্থায় মক্কা গমনের
মানেই হলোঃ আপনাকে একটি উমরাহ করতে হবে। তাই আপনার সুবিধার জন্যই সহায়িকা আকারে পত্রস্থ হলো এই আয়োজনঃ উমরাহ গাইড। আপনাকে শুরুতেই অনুরোধ করবো “হজ্জের হাকীকত” নামক বই খানা পড়ে নিতে।
এতে করে আপনার উমরাহ বা হজ্জ হবে একটি জীবন্ত হজ্জ বা উমরাহ। কিন্তু যদি না পড়েন,
তাহলে উমরাহ বা হজ্জ আদায় হবে ঠিকই-কিন্তু তা হবে কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা এবং
কর্তব্য আদায় মাত্র।
পূর্বপ্রস্তুতি পর্বঃ
একজন
উমরাহ বা হজ্জ যাত্রী
ভাই বোনকে উমরাহ গমনের
জন্য যে সব জিনিস
সাথে থাকতে হবেঃ
১. একটি
লাগেজ। যা ট্রলি
সিসটেম হলে ভাল হয়।
২. ইহরামের
কাপড়, বেল্ট, প্লাস্টিকের সেন্ডেল, সাবান, টুথ পেষ্ট
ও ব্রাশ, ওয়ান টাইম রেজার, নেইল কাটার, আতর, সেফটি
পিন,
কাগজ, কলম,
চিরুনী, ক্রিম, ভ্যাসলিন ইত্যাদি।
৩. পরিধানের
জন্য প্রয়োজনীয় জামা কাপড়। কাপড় ধৌত করার ঝামেলা
থেকে বাঁচার জন্য বেশী
করে কাপড় এবং আবহাওয়া
উপযোগী কাপড়।
৪. সফরের
সময় খাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয়
শুকনো খাবার, টিস্যু পেপার, বোতলজাত
পানি ইত্যাদি।
৫. বমির
অভ্যাস থাকলে ২/৪টি পলিথিনের
কিস ব্যাগ।
৬. মোবাইল
সেট এবং মোবাইল চার্জার (উল্লেখ্য যে, মক্কা মদীনার হোটেল গুলোতে বেশীর ভাগ স্থানে টু-পিন
চকেট রয়েছে। তাই আপনার সাথে দুই ধরণের চার্জারই থাকা উচিত)।
৭. প্রয়োজনীয়
সৌদীয়ান রিয়াল।
৮. মানি
ব্যাগে এক কপি পাসপোর্ট
সাইজের ছবি এবং একজন
নিকটাত্মীয়ের নাম ঠিকানা ও মোবাইল
নম্বর সম্বলিত একটি চিরকুট।
৯. কুরআন
হাদীস ও ইসলামী বইয়ের
একটি করে কপি।
১০. হজ্জের
মাসলা মাসায়েল সংক্রান্ত প্রয়োজনীয়
বই বা নোট।
(মা-বোনেরা তাদের
হ্যান্ড ব্যাগে যে সব নিত্য
প্রয়োজনীয় জিনিস রাখতেই হয়, তা রাখবেন
যত্ন সহকারে। কারণ
তা যে কোন সময়
আপনার প্রয়োজন হয়ে যেতে
পারে)
ইহরাম পর্বঃ
উমরাহকারীর
উমরাহের আনুষ্ঠানিকতা শুরু
হয় ইহরাম পরিধানের মধ্য
দিয়ে। আর এজন্য
আছে কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থান। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে
মক্কাতে পৌছা মানুষদের জন্য
৫টি প্রধান প্রবেশ পথকে
ইহরাম পরিধানের স্থান নির্ধারণ
করেছেন রাসূল সা.। পরিভাষায়
ইহরাম গ্রহণের এই স্থানকে
বলে মিকাত।
ইহরাম
মানে হলো সকল সাধারণ
পোষাক ত্যাগ করে দুই
খন্ড সাদা কাপড়ের চাদরকে
পোষাক হিসাবে গ্রহণ করা। আর হ্যাঁ! তা কেবল
মাত্র পুরুষদের জন্য। মহিলাদের
জন্য পাক সাফ সাধারণ
পোষাকই ইহরামের পোষাক বলে
গন্য। তবে এমন
পোষাক, যা পর্দা ও রুচিশীলতা
রক্ষা করে। আর পার্থক্য
এতটুকু যে, মহিলাদেরকে ইহরাম
অবস্থায় মুখ মন্ডল খোলা
রাখতে হয়।
ইহরামের
জন্য নির্ধারিত পোষাক পরিধানের
আগে পুরুষ মহিলা উভয়কে
গোসল করে পবিত্র হতে
হয়। অতএব, মিকাতে পৌছে
একজন উমরাহকারীর কাজ হলো
গোসল করা। সৌদী
সরকার হাজী সাহেবদের সুবিধার
জন্য প্রতিটি মীকাতে শত শত বাথরোমের
ব্যবস্থা করে রেখেছেন আর সেখানে
একজন হাজী সাহেবের জন্য
প্রয়োজনীয় সকল কিছুই পাওয়া
যায়।
তবে
ঐ এলাকায় এক ধরণের অসাধু
ব্যক্তি রয়েছে। যারা
আপনাকে অফার দেবে এই বলে
যে,
ওখানে গোসলের ভাল ব্যবস্থা
রয়েছে। পাশে নামাযেরও
ব্যবস্থা রয়েছে। আপনি
ঐ অফার গ্রহণ করার পর আপনাকে
টাকা গুনতে হবে। অথচ
ওখানকার পয়সা দিয়ে কিনা
সুবিধার চেয়ে সৌদী সরকারের
ফ্রী ব্যবস্থা অনেক অনেক
উন্নত। বিধায় সৌদী
সরকারের রাখা নির্দিষ্ট স্থানেই
আপনি গাড়ী থেকে নামুন
এবং ওখানেই গোসল করুন
এবং পাশের বিশাল মসজিদে
নামায পড়ুন। আশা
করি বিষয়টি বুঝা হয়েছে।
অতএবঃ
১. একটি
বড় পলিথিনের কিস ব্যাগে
ইহরামের কাপড়, বেল্ট, প্লাস্টিকের সেন্ডেল, সাবান, তোয়ালে, আতর, ব্রাশ, পেষ্ট
ইত্যাদি নিয়ে বাথরোমে প্রবেশ
করতে হবে। মনে
রাখতে হবে যে, নোখ কাটা, সেইভ
করা,
বগল বা নাভীর নিচের
লোম পরিস্কার করার কাজটা
বাড়ীতে থাকা অবস্থায়ই করে
নিতে হবে।
২. বাথরুমে
সাবান দিয়ে ভাল ভাবে
গোসল করে নিতে হবে। সাবান নির্বাচনের ক্ষেত্রে সুগন্ধি
সাবান পরিহার করাই উত্তম।
৩. গোসলের
পর সাথে থাকা শুকনো
টাওয়াল দিয়ে মাথা ও শরীরের
পানি উঠিয়ে নিতে হবে।
৪. সাথে
থাকা সুগন্ধি শরীরে ব্যবহার
করতে হবে। ইহরামের
কাপড়ে সুগন্ধি ব্যবহার করা
যাবেনা।
৫. ইহরামের
একটি চাদরকে লুঙ্গির মতো
করে পরিধান করতে হবে। ইহরামের কাপড়কে শক্ত করে
ধারণ করার জন্য উপরে
বেল্ট লাগাতে হবে।
৬. বেল্টের
পকেটে আপনার মোবাইল, টাকা পয়সা, প্রয়োজনীয়
কাগজপত্র রেখে দিতে হবে। বেল্ট ক্রয়ের সময় আপনার উপরোক্ত প্রয়োজন পুরণ করে এমন এবং নিরাপদ বেল্ট
ক্রয় করতে হবে। (উল্লেখ্য যে, ইহরাম পরিধানের স্থান-মিকাতে ইহরামের কাপড়, সেন্ডেল,
বেল্ট, সাবান, নেইল কাটার ইত্যাদি সকল প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অসংখ্য দোকান রয়েছে)।
৬. ইহরামের
অপর চাদর খানা গায়ে
পরিধান করতে হবে। মহিলারা
একই ভাবে নিজেদের পাক
সাফ পোষাক পরিধান করে
নেবেন।
৭. বাথরুমে
প্রবেশ করার সময় সাথে
নেয়া সকল জিনিস পলিথিনের
ব্যাগে ঢুকিয়ে নিতে হবে।
৮. গোসলের
পর রয়েছে নামায। প্রতিটি মীকাতেই মসজিদ রয়েছে। পাশেই পাওয়া যাবে
মসজিদ। সেখানে গিয়ে
দুই রাকাত নামায পড়বে। তবে যদি কোন মহিলা
সেই সময়ে মাসিক অসুস্থতায়
থাকেন, তাহলে তিনি নামায পড়বেন
না।
৯. নামায
শেষ হলে মসজিদ থেকে
বের হয়ে কিবলামুখী হয়ে
উমরার নিয়ত করতে হবে। উমরার নিয়ত মুখে উচ্চারণ
করা শর্ত। অতএব
বলতে হবেঃ اللهم لبيك عمرة (আল্লাহুম্মা
লাব্বাইকা উমরাহ) যার অর্থ
হচ্ছেঃ হে আল্লাহ! উমরা পালনের
জন্য আমি তোমার সমীপে
হাজির।
১০. নিয়ত
মুখে বলার পর তালবিয়া
পড়তে হবে কোরাসের মতো
করেঃ
لبيك اللهم لبيك، لبيك لا شريك لك لبيك، إن الحمد والنعمت لك والملك،
لاشريك لك.
(লাব্বাইক
আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকা
লা শারীকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নিয়মাতা
লাকা ওয়াল মুলক। লা শারীকা
লাক)
এর অর্থ
হচ্ছেঃ হাজির হে
আল্লাহ! আমি হাজির
তোমার সমীপে। আমি হাজির তোমার
সমীপে-তোমার কোন
অংশীদার নাই। আমি
তোমার দরবারে হাজির। নিশ্চয়ই সকল
প্রসংশা তোমার জন্য,
সকল নিয়ামত তোমার
জন্য এবং সকল
রাজত্বও তোমারই।
তোমার কোন অংশীদার নাই।
১১. পুরুষেরা
আওয়াজ করে তালবীয়া পড়বে। মহিলারা নিচু স্বরে পড়বে। এই তালবিয়া পড়া চলবে
আল্লাহর ঘর চোঁখে দেখা
পর্যন্ত। তালবিয়া পড়তে
পড়তে মীকাত থেকে আল্লাহর
ঘরের উদ্দেশ্যে যেতে হবে।
যারা আকাশ পথে জেদ্দা অবতরণ করবেন,
তাদেরকে মনে রাখতে হবে যে, আপনার উড়োজাহাজ জেদ্দা পৌছার আগেই মিকাত অতিক্রম করে নেয়। বিধায় আপনাকে নিজ বাসায় গোসল
সেরে দুই রাকাত নফল নামায পড়ে ঘর থেকে বের হোন ইহরামের কাপড় পরিধান করে। অবশ্য বিমান বন্দরে বা উড়োজাহাজে
মিকাতে পৌছার আগে ইহরামের কাপড় পরা যায়। কিন্তু উড়োজাহাজে বা বিমান বন্দরে প্রয়োজনীয় স্থান
পাওয়া মুশকিল হওয়ার কারণে বাসায়ই ইহরামের কাপড় পরিধান করা ভাল। ইহরামের কাপড় পরিধান অবস্থায়
বিমান বন্দরে এক্সটা সুবিধা পাওয়া যায়। সকল কর্মচারী উমরাহ যাত্রী হিসাবে সম্মাণ করে থাকে।
বাসায় হোক, কিংবা বিমান বন্দরে
অথবা উড়োজাহাজে-যেখানেই আপনি ইমরামের কাপড় পরিধান করবেন, সেখানে উমরার নিয়ত না করে
মিকাতের নিকটবর্তী হওয়া অবধি অপেক্ষা করুন। আপনার উড়োজাহাজের পাইলট মিকাতে পৌছার আগেই
আপনাকে ইহরাম পরিধান ও উমরার নিয়ত করার ঘোষনা দেবে। তখনই নিয়ত করুন। এতে করে এতক্ষণ
আপনি ইমরামের সময়ে নিষিদ্ধ বস্তুর বাধ্যবাধকতায় থাকবেন না।
ইহরাম কালীন সময়ে যা নিষিদ্ধঃ
ইহরাম
গ্রহণের পর আপনি এখন
অন্য জগতের এক মানুষ। আপনি চিন্থা করুন যে, আপনার
সামাজিক অবস্থান কোথায়? আপনি কত বিত্তশালী? আপনার
ক্ষমতার পরিধি কতটুকু? এবার নজর
দিন আপনার শরীরের দিকে, নজর
দিন আপনার আশে পাশের
কোন হাজী সাহেবের দিকে। কি দেখলেন? দুনিয়ার সবকিছু
ছেড়ে দিয়ে মাত্র দুইটি
চাদরের মালিক আপনি। আপনি
আর আপনার পাশের জনের
মাঝে কোন পার্থক্য নাই। আপনি লক্ষ্য করুন যে, এই পোষাকেই
আপনাকে এই ধরণী থেকে
চলে যেতে হবে। তাহলে
কিসের এতো বাহাদূরী, কিসের এতো
বড়াই।
নিজেকে প্রশ্ন করুনঃ আপনি কে? উত্তর আসবে-আপনি
একজন দাস, আপনার কোন
অস্তিত্ব ছিল না, একজন মহান
সত্তা তার দাসগিরি করার
জন্য আপনাকে তৈরী করেছেন। আপনি আবর্জনায় ভরা একটি
ডাস্টবিন-যে ডাস্টবিনের ময়লা পৃথিবীর
নিকৃষ্ট ময়লা সমূহের একটি-আপনি
সেই চলন্ত ডাস্টবিন।আপনি যেখানে আছেন সেখানে
আপনার অবস্থানের কোন গ্যারান্টি
নাই। যে কোন
সময় আপনার ট্রান্সফার অর্ডার
আসতে পারে। তখন
আপনি সাথে সাথেই প্রন্থান
করতে হবে। প্রস্তান করতে হবে শুধু এমন নয়-প্রস্থান করে যেখানে যাবেন, সেখানে এখানকার
একটিভিটিজ এর পংখানুপংখু হিসাব দিতে হবে। জবাব দিয়েই কান্ত হওয়া যাবেনা-আপনার জবাব
নিপূণ হাতে তৈরী একটি রেকর্ড নামার সাথে মিলিয়ে দেখা হবে। এমনই এক নিরুপায়
প্রাণী এই আপনি। আপনি
এখন চলে যাওয়ার পোষাক
পরে আপনার মালিকের বরাবরে
হাজিরা দেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে
তৈরী। তাই বলছেনঃ
লাব্বাইক-আমি হাজির।
যে মালিকের
হুজুরে হাজির হতে আপনি
ইহরাম গ্রহণ করলেন, সেই মালিক
আপনার জন্য হালাল এমন
কিছু বিষয় ক্ষনিকের জন্য
হারাম করে দিচ্ছেন। আপনাকে
সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে
হবে। আপনাকে ইহরামকালীন
সময়ে নিম্নোক্ত কাজগুলো থেকে
সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে। যেমনঃ
১. চুল
কাটা, নখ কাটা, শরীরের লোম
উঠানো, শরীরের কোন অংশ দিয়ে
রক্তে বের করা।
২. শরীর, পোষাক, খাদ্য
বা পানীয়তে সুগন্ধি ব্যবহার।
৩. কোন
ধরণের শিকার করা বা শিকারীকে
শিকার দেখিয়ে দেয়া।
৪. স্ত্রী
সহবাস করা বা উত্তেজনার
সাথে স্ত্রীর শরীর স্পর্শ
করা বা চুমু দেয়া।
৫. বিয়ে
করা বা বিয়ে প্রস্তাব
দেয়া বা আকদ করা।
৬. হাত
মোজা বা পা মোজা
পরিধান করা।
৭. পুরুষেরা
মাথা ঢাকা। যেমনঃ
পাগড়ী, ক্যাপ, টুপি ইত্যাদির ব্যবহার।
৮. ইহরামের
দুই টুকরা চাদর ছাড়া
অন্য কোন পোষাক পরা।
৯. মসজিদুল
হারামের এলাকার কোন গাছপালা
কর্তন করা বা কোন
ঘাস মাড়ানো।
১০. ইহরামের কাপড় শরীর থেকে পুরোপুরি খুলে নেয়া।
মক্কা পৌছে করণীয়ঃ
জল, স্থল
বা আকাশ যে পথেই
আপনি আসুন না কেন, আপনাকে
মক্কা পৌছতে হবে সড়ক
পথে। মক্কার চার
দিকে আপনার অবস্থানের জন্য
রয়েছে বিভিন্ন মানের হোটেল, ভিলা, ফ্লাট। আর আপনি ইহরাম অবস্থায়
থাকলেও আপনার সাথে রয়েছে
আপনার লাগেজপত্র। তা ছাড়া
আপনি দীর্ঘ পথ অতিক্রম
করে আসার প্রেক্ষিত আপনি
সামান্য হলেও ক্ষুধার্থ। অতএব, আপনাকে
নিম্নোক্ত ১০ দফা করণীয়
সম্পন্ন করতে হবে।
১. আপনি
মক্কা পৌছে কাবা ঘরের
দিকে না গিয়ে আপনাকে
উঠতে হবে আপনার পছন্দনীয়
আবাসে-যেখানে আপনি মক্কায় থাকা
কালীন অবস্থান করবেন।
২. আপনি
বাংলাদেশী হিসাবে মিছফালাহ এলাকায়
থাকলে আপনার জন্য রয়েছে
অনেক সুবিধা। যেমনঃ
বাংলাদেশী হোটেল দোকান রেস্টুরেন্টের
সমাহার ঐ এলাকায়। আর তুলনা
মূলক ভাবে মসজিদুল হারামের
সবচেয়ে নিকটবর্তী এলাকা এটি। আপনি পায়ে হেটে নামাযের
জামায়াতে শামীল হতে পারবেন। আপনি যদি অদ্ভূত পান
খোর হোন, তাহলে আপনার
জন্য মিছফালাহ একটি স্বর্গরাজ্য।
৩. আপনি
যদি নিজ গাড়ীতে যাত্রা
করেন, তাহলে আপনি হারাম এলাকার
দূরে কোন হোটেলে অবস্থান
করলে পার্কি এবং আবাসিক
সুবিধা পাবেন স্বাচ্ছন্দের সাথে। তবে মিসফালাহ এলাকাতে পরিত্যাক্ত বাড়ীর মতো একটি ফ্রি পার্কি বিল্ডিং
আছে। ওখানে রমজান আর হজ্জের মওসুম ছাড়া পার্কিং পাবেন স্বাচ্ছন্দে। উল্লেখ্য যে,
মিছফালাহ এলাকাতে হোটেল সমূহের সামনে যে পার্কিং আছে, তা হোটেলের নয়। বিধায় ঐ সব
পার্কিং-এ দীর্ঘ সময় গাড়ী রাখলে ব্রেকডাউন দিয়ে আপনার গাড়ী উঠিয়ে নেয়া হতে পারে।
আর তা হলে আপনাকে গুনতে হবে ১০০ রিয়ালের জরিমানা।
৪. আপনি
যেখানেই থাকুন না কেন, হোটেলে
পৌছে বাথরুমে গিয়ে প্রথমে
ফ্রেস হয়ে আসুন। সাথে
অজু রাখতে ভূলবেন না।
৫. এর পর সামান্য
নাস্তা গ্রহণ করুন। এ ক্ষেত্রে
সুগন্ধি জাতীয় খাবার পরিহার
করুন। মনে রাখবেন
যে,
আপনি ইহরাম অবস্থায় আছেন।বিধায়, অনেক হালাল বস্তু
এই মুহুর্তে আপনার জন্য
হালাল নয়। আরো
মনে রাখবেন যে, আপনার ক্ষুধা
না থাকলেও কিছু অন্তত
খেয়ে নেয়া উচিত এজন্য
যে,
আপনি কিছু সময়ের ভিতর
উমরার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন
করতে যাবেন-যাতে আপনার
অনেক সময় লাগবে এবং
পরিশ্রমও আছে।
৬. আপনি
যেখানে অবস্থান করছেন, সেখান থেকে
বের হওয়ার সাথে সাথে
ঐ বিল্ডিং এর চার দিক
একবার দেখে নিন। আশ পাশের
কয়েকটি বোর্ড ভাল ভাবে
পড়ে নিন এবং মনে
রাখুন। যে হোটেলে
অবস্থান করছেন, তাদের কার্ড
সাথে নিন।
৭. আপনি
এখন মসজিদুল হারামের দিকে
যাবেন উমরাহ পালনে জন্য। বিধায় ভাল ভাবে বুঝে
নিন যে, মসজিদুল হারাম
যাওয়ার পথে আপনার আবাস
স্থলটি হাতের ডানে না বামে। তা ভাল ভাবে মনে
রাখুন। না হলে
আপনি আপনার আবাস স্থল
হারিয়ে ফেলতে পারেন।
৮. মসজিদে
হারামের দিকে যাত্রার প্রেক্ষিতে
আপনার সাথে কোন অতিরিক্ত
জিনিস রাখবেন না। কেবলমাত্র
আপনার মোবাইলটি এবং কার্ড খানা
সাথে নিন।
৯. আপনি
যে কোন সমস্যায় পড়লে
পুলিশের সহযোগিতা নিন। আপনার
কার্ড দেখিয়ে বলুনঃ ওয়েন
ফানদাকী-আইনা ফানদাক্বুনা (আমাদের হোটেলটি
কোথায়?)
আপনি আশপাশের ক্লিনার ভাইদের
সহযোগিতা নিতে পারেন। আপনি
নির্দিধায় তাদের সাথে বাংলায়
কথা বলুন। কারণ
তাদের বেশীর ভাগই আপনার
দেশী ভাই।
১০. মসজিদুল
হারামে প্রবেশের আগে আপনি
আপনার জুতাটি নির্দিষ্ট বক্সে
রাখুন এবং তার পাশের
গেইট নম্বর মুখস্ত করে
নিন। উমরার আনুষ্ঠানিকতা
সেরে চলে আসুন সেই
গেইটে। ভাগ্য ভাল
থাকলে আপনার জুতাটি বহাল
তবিয়তে পেয়েও যেতে পারেন। তবে যদি না পান, তাহলে
অযথা খোঁজাখোঁজি না করে
নুতন আরেকটি সেন্ডেল কিনে
নিন। কারণ ওখানে
কিছুক্ষণ পরপর জুতার পাহাড়
জমে যায়, তাই তা উঠিয়ে
নেয়া হয়।
আপনি
যদি নিজ গাড়ীতে করে
উমরাতে যান, তাহলে আপনি
কোন হোটেলে না উঠে
ঐ মিছফালাহ পার্কিং-এ গাড়ী
রেখে আপনি প্রথমে উমরাহ
করে নিতে পারেন। এর পর সময়
নিয়ে ভাল হোটেল দেখে
সেখানে আবাস গড়ে তুলবেন। এতে করে আপনি মসজিদুল
হারামে ১টি ওয়াক্ত বেশী
নামায পড়ার সুযোগ পেতে
পারেন।
হাজারে আসওয়াদঃ
হে বোন! আপনাকে
বলছি!! আপনি যদি মাসিক অসুখে
থাকেন। তাহলে আপনাকে
আপনার আবাস স্থলে অবস্থান
করতে হবে। আপাততঃ
আপনি উমরা পালনের জন্য
শারিরিক ভাবে ফিট নন-শরয়ী
ভাবে এক্সেপ্টেড নন। আপনাকে
অপেক্ষা করতে হবে অসুখটা
শেষ হওয়া অবধি।
হে ভাই! আপনাকে
বলছি!! আপাততঃ আমাদের বোনকে
বাসায় রেখে আপনাকে উমরার
কাজটা সেরে নিতে হবে। তাহলে চলুন বাইতুল্লাহর দিকে। তালিবিয়া পড়তে পড়তে আসুন
বাইতুল্লাহর দিকে অগ্রসর হই। আল্লাহর ঘর দর্শন পর্যন্ত
এই তালিবিয়া পাঠ চলবে।
لبيك
اللهم لبيك لبيك لا شريك لك لبيك. إن الحمد والنعمة لك والملك. لا
شريك لك.
“হাজির হে আল্লাহ!
আমি হাজির তোমার
সমীপে।আমি হাজির
তোমার সমীপে-তোমার
কোন অংশীদার নাই। আমি তোমার
দরবারে হাজির।
নিশ্চয়ই সকল প্রসংশা তোমার জন্য,
সকল নিয়ামত তোমার
জন্য এবং সকল
রাজত্বও তোমারই।
তোমার কোন অংশীদার নাই।”
আপনার
পরনের জুতাটা খুলে নির্দিষ্ট
বক্সে রেখে প্রবেশ করুন
মসজিদুল হারামে। আপনি
কমদামের ৫/১০ রিয়ালের জুতা নিন। দামী জুতা নেবেন না। কারণ জুতা আপনি যেখানে রেখে
যাবেন, ফিরে এসে সেখানে আপনার জুতা পাবেন না-এই নিশ্চয়তা প্রায় ৯৯%। ডান
পা প্রথমে প্রবেশ করান
আর দোয়া পড়ুন। ঐ দোয়া
যা মসজিদে প্রবেশের সময়
পড়তে হয়।
بسم الله والصلوة والسلام على رسول الله اللهم
اغفرلي ذنوبي وافتح لي أبواب رحمتك أعوذ بالله العظيم وبوجهه الكريم وبسلطاننه
القديم من الشيطان الرجيم.
“আল্লাহর নামে। সালাত
ও সালাম আল্লাহর রাসূলের উপরে।হে আল্লাহ!
তুমি আমার গুনাহ
সমূহ মাফ করো। আর তোমার
রহমতের দরজা সমূহ
আমার জন্য খুলে
দাও। আর
আমি বিতাড়িত শয়তানের অনিষ্ট থেকে
আশ্রয় চাচ্ছি মহান
আল্লাহর নিকট তার
মহিয়ান সত্তা ও
সনাতন রাজত্বের ওসিলায়।”
মসজিদুল
হারামে প্রবেশের জন্য কোন
গেইট বা দরজা সুনির্দিষ্ট
নেই। আপনি যে গেইট
দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে
পারেন। আপনি যদি
বাব ইসমাঈল দিয়ে প্রবেশ
করেন, তাহলে আপনি সরাসরি পৌছে
যাবেন হাজারে আসওয়াদ বরারব। আর যদি আপনি বাব
আস সালাম দিয়ে প্রবেশ
করেন, তাহলে আপনি সেই বাব
দিয়ে প্রবেশ করলেন, যে বাব
দিয়ে প্রবেশ করেছিলেন নবী
মুহাম্মদ সা. (বাব মানেঃ
গেইট বা দরজা)। কিন্তু
মনে রাখতে হবে যে, এখানে
যা বলা হচ্ছে তা একদম
খাপে খাপ সেখানে পাবেন
না। কারণ মসজিদের
হারাম কমপ্লেক্সে বর্ণাঢ্য আয়োজনে
চলছে উন্নয়ন কাজ। তাই
আজ এই অংশ বন্ধ
থাকলে কাল অন্য অংশ
বন্ধ করে দেয়া হয়। হতে পারে উন্নয়ন কাজের জন্য আপনি
বাবুস সালাম পুরোটাকে বন্ধ
পাবেন।
মসজিদুল
হারামে প্রবেশ করে আপনি
সরাসরি চলে যান বাইতুল্লাহর
দিকে। বাইতুল্লাহ দেখা
মাত্র আপনি তালবিয়া পাঠ
বন্ধ করুন। বাইতুল্লাহর
৪টি কোন রয়েছে। আপনি
আসুন ঐ কোনে, যেখানে স্থাপিত
রয়েছে হাজারে আসওয়াদ বা কালো
পাতর। আপনি লক্ষ
করতেই দেখবেন ওই কোনেই
মানুষের ভীড়। কারণ
ওখান থেকেই তাওয়াফ শুরু
করতে হয়। আবার
প্রতিটি তাওয়াফের শুরুতেই হাজীগন
এখানে একবার দাড়িয়ে কাবার
দিকে হাত উঁচু করে
ধরছেন এবং বিসমিল্লাহি আল্লাহু
ওয়া আকবার বলছেন।
আপনি
সরাসরি চলে আসুন হাজারে
আসওয়াদের নিকটে। ডান
হাত দিয়ে হাজারে আসওয়াদকে
স্পর্শ করুন এবং চুম্বন
করুন। আর দোয়া
পড়ুনঃ
بسم الله والله أكبر. اللهم إيمانا بك وتصديقا
بكتابك ووفاء بعهدك وإتباعا لسنة نبيك محمد صلى الله عليه وسلم.
“আল্লাহর নামে। আল্লাহ মহান। হে আল্লাহ! তোমার উপর ঈমান রেখে, তোমার কিতাবকে সত্যায়ন করে, তোমার প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করে এবং তোমার নবী মুহাম্মদ সা. এর আদর্শের অনুসরণ করে (তাওয়াফ আদায় করছি)।”
হাজারে আসওয়াদ নিয়ে একটা মজার ঘটনা আছে, তা কি পাঠকের মনে আছে। ওটা পড়েছিলাম সেই শৈশবে। হাজারে আসওয়াদকে বলা হয়ে থাকে বেহেশতের পাথর গুলোর একটি। ওটা অনাদিকাল থেকে কাবাঘরের সাথে সংযুক্ত আছে। নবী সা. যখন যুবক, তখন একবার ঢলের পানিতে কাবাঘরের ম্যান্টেনেন্স-এর প্রয়োজন পড়ে গেল। হাজারে আসওয়াদকে সরিয়ে রেখে কাজটা সম্পাদিত হলো। এক সময় হাজারে আসওয়াদকে পূণস্থাপনের পর্যায় এসে গেলো। আরবের প্রসিদ্ধ ৪টি গোত্রের মধ্যে বিবাদ লেগে গেলো। সবাই চাচ্ছে এই রবকতময় কাজটা একা নিজেরা করতে।এবং কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। বিষয়টা অস্র টানাটানির পর্য্যায়ে চলে গেলো। অবশেষে মুরব্বীরা সিদ্ধান্তে পৌছলেন এই মর্মে যে, আগামী কাল প্রত্যুষে যে ব্যক্তি সবার আগে কাবাঘরের সামনে পৌছবে, সেই এই বিষয়ে ফায়সালা দেবে। আর সবাই তার ফায়সালা মেনে নিতে বাধ্য থাকবে।
দিনটা ছিল শীতকাল। স্বাভাবসুলভ ভাবেই যুবক মুহাম্মদ প্রত্যুষে উঠে গায়ে চাদর জড়িয়ে পায়চারির উদ্দেশ্যে বাড়ীর পাশে কাবা ঘরের সামনে হাজির। এর পর সবাই এসে দেখলো যে, মুহাম্মদ সা. ই সবার আগে এসেছেন। তাই সবাই টেনশন মুক্ত হলো এই ভেবে যে, কোন গোত্রবাজই আগে আসতে পারেনি। বরং নগরীর সবচেয়ে ভাল আর আস্তাভাজন মানুষটাই প্রথমে এসেছে। তার সিদ্ধান্ত হবে পক্ষপাতিত্বহীন। কারণ তিনি তার আচরণ, ব্যবহার ইত্যাদি দিয়ে ইতিমধ্যে জনতার মন জয় করে আল আমীন উপাধি ধারণ করেছিলেন।
মুহাম্মদ সা. সকলের কথা শুনে নিজের গায়ের চাদরটা জমিনের উপর বিছিয়ে দিয়ে পাথরটাকে সেই চাদরের উপর রাখলেন। আর সেই গোত্রবাজ ৪ গোত্রের ৪জন লিডারকে চাদরের ৪টি কোনে ধরতে বললেন। ৪জন চাদরের চার কোনায় ধরলেন এবং পথরটাকে নিয়ে গেলেন কাবাঘরের সেই স্থানে যেখানে পাথরটা স্থাপন করা হবে। নবী সা. নিজ হাতে পাথরটা উঠিয়ে সেই স্থানে স্থাপন করলেন। আর এভাবেই মিমাংসা হলে গেলো বিষয়টি। জাতি সংঘাত একটি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ থেকে মুক্তি পেলো।
পাঠক!
শুনতে অবাক লাগলেও সত্য যে, এই যে নবীর প্রতি মানুষের এতো আস্থা আর ভালবাসা ছিল-সেই নবী যখন মানুষকে সত্য আর কল্যাণের পথে ডাকলেন, জাহেলী সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তে একটি সুখী সমৃদ্ধশালী ন্যায় বিচারপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার ডাক দিলেন, তখন সেই ওরাই তার প্রতি শত্রুর মতো আচরণ করলো। সমাজের এই ভাল মানুষটাকে তার গোষ্ঠী সহ কারাগারে নিক্ষেপ করলো, তাকে পাগল যাদুকর, কবি ইত্যাদি উপাধি প্রদান করলো, তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করলো, তাকে আর তার অনুসারীদের মক্কা থেকে বহিষ্কার করলো।
পাঠক!
আমাদের প্রিয় জন্মভূমি যখন দূর্নীতির রসাতলে, তখন দেখি একদল মানুষ ক্ষমতা ত্যাগের পর আত্ম বিশ্বাসের সাথে বলে “২টাকার দূর্নীতি করিনি”। মানুষের ভালবাসায় যখন তারা হয় সিক্ত। ঠিক সেই ক্ষণে তাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে নিয়ে রিমান্ডের নামে করা হয় নির্যাতন। তাদের নামে ইতিহাসের মামলা দিয়ে মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে সাক্ষ্য নিয়ে দেয়া হয় ফাঁসির আদেশ। তখন বুঝতে বাকী থাকেনা যে, কেন তাদের প্রতি এই ব্যবহার।
তাওয়াফঃ
তাওয়াফ
মানে চক্কর দেয়া। কোন
কিছুকে কেন্দ্র করে তার
চতূর্দিকে চক্কর দেয়ার নাম
তাওয়াফ। উমরাতে তাওয়াফ
মানে বাইতুল্লাহ বা আল্লাহর
ঘরকে কেন্দ্র করে চক্কর
দেয়া। আর এই তাওয়াফ
হলো উমরার দুইটি গুরুত্বপূর্ণ
কাজের একটি। অপরটি
কি আমরা পরে জানতে
পারবো।
ইসলামে
সকল আনুষ্ঠানিক ইবাদতের একটি
সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। তেমনি
উমরার জন্য তাওয়াফেরও একটি
নিয়ম আছে। আজ আমরা
সেই নিয়মের যা শিখেছি, তা আলোচনা
করবো। অতএব, তাওয়াফ করার
জন্য আপনি তৈরী হোন। আপনি ইতিমধ্যে হাজারে আসওয়াদের
নিকটে পৌছেছেন এজন্য যে, আপানি
জানেন-ওখান থেকেই তাওয়াফ শুরু
করতে হয়। তাই
চলে আসুন হাজারে আসওয়াদের
নিকটে। ডান হাত
দিয়ে হাজারে আসওয়াদকে স্পর্শ
করুন এবং চুম্বন করুন। আর দোয়া পড়ুনঃ
بسم الله والله أكبر. اللهم إيمانا بك وتصديقا
بكتابك ووفاء بعهدك وإتباعا لسنة نبيك محمد صلى الله عليه وسلم.
“আল্লাহর নামে। আল্লাহ মহান। হে আল্লাহ! তোমার উপর ঈমান রেখে, তোমার কিতাবকে সত্যায়ন করে, তোমার প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করে এবং তোমার নবী মুহাম্মদ সা. এর আদর্শের অনুসরণ করে (তাওয়াফ আদায় করছি)।”
আপনি হাজারে আসওয়াদে আসতে গিয়ে থমকে দাড়িয়েছেন? প্রচন্ড ভীড়? কোন টেনশন নেই। ইসলাম আপনার জন্য সহজ করে দিয়েছে। তাই আপনি হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করতে কষ্টকর হলে আপনি হাত দিয়ে হাজারে আসওয়াদের দিকে ইশরা করে উপরে বর্ণিত দোয়াটি পড়ে নিন। মনে রাখবেন হাজারে আসওয়াদে চুমু দিতে গিয়ে ঠেলাঠেলি করা এবং এর মাধ্যমে অন্য মুসলমান ভাইকে কষ্ট দেয়ার সুযোগ নাই।
আপনাকে আরো মনে রাখা উচিত যে, হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করলে চুম্বন দিতে হবে। কিন্তু যদি হাত দিয়ে ইশারা করেন, তাহলে হাতে চুমু দেয়ার দরকার নাই।
আপনি পুরুষ হলে আপনার ইহরামের কাপড়ের যেটি গায়ে জড়িয়েছেন তার মধ্যখান আপনার ডান বগলের নিচ দিয়ে উভয় প্রান্ত বাম কাধের উপরে নিয়ে পরিধান করুন। এই কাজটার নাম ইজতিবা।
এখন আপনাকে তাওয়াফ শুরু করতে হবে। মানে আপনি হাজারে আসওয়াদ বরাবর জায়গা থেকে বাইতুল্লাহকে বামে রেখে হাটা শুরু করবেন। আপনি অবশ্য এভাবেই হাটতে বাধ্য হবেন। কারণ আপনি
দেখবেন যে হাটতে থাকা মানুষের স্রোত যাচ্ছে ঐ দিকেই। বিধায় আপনি স্রোতের উল্টা
দিকে চলতে চাইলে ব্যর্থ হবেন। আপনি হাটতে থাকবেন ক্বাবাঘরকে কেন্দ্র করে। ক্বাবার দরজা পেরিয়ে হাতিম পেরিয়ে আপনি যখন ক্বাবা ঘরের আরো দুইটি কোন অতিক্রম করবেন, তখন দেখবেন সবাই ক্বাবা ঘরের নিকটবর্তী হওয়ার চেষ্টা করছে। ওটা আপনি যে স্থান থেকে তাওয়াফ শুরু করেছিলেন, ঠিক তার আগের কোন। আপনিও এগিয়ে চলুন তাদের সাথে।
ক্বাবা ঘরের এই কোনকে বলে ‘রুকনে ইয়ামানী’। আপনি রুকনে ইয়ামানীতে পৌছে আপনি দেখবেন যে, সম্পূর্ণ ক্বাবা ঘরকে গিলাফ দিয়ে ঢাকা হলেও ওখানে সামান্য জায়গাকে খোলা রাখা হয়েছে। আপনি আপনার হাত দিয়ে সেই জায়গাটাকে স্পর্শ করুন। ওটা স্পর্শ করা সুন্নাত। আপনি কখনও ঐ কোনে চুমু দেয়ার চেষ্টা করবেন না বা কাবা ঘরের কোন স্থানে চুমু দেয়ার চেষ্টা করবেন না।
কারণ আল্লাহর রাসূল সা. এভাবেই আমাদের শিখিয়ে গেছেন।
রুকনে ইয়ামানীতে স্পর্শ করার পর আপনি দেখবেন ক্বাবা ঘরের দিকে প্রচন্ড ভীড়। কারণ সামনে হাজারে আসওয়াদ। ওখানে চুমু দেয়ার জন্য লোকজন প্রতিযোগিতা করছে। হাজারে আসওয়াদ যে কোনে অবস্থিত আপনি সেখান থেকেই তাওয়াফ শুরু করেছিলেন। আপনি রুকনে ইয়ামানী হতে হাজারে আদওয়াদ বরাবর কোনের মাঝে হাটার সময় পড়ুনঃ
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي
الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ.
اللهم إني أسألك العفو والعافية في الدنيا والآخرة.
“হে আমাদের রব! তুমি আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ দান করো এবং জাহান্নামের আযাব হতে মুক্তি দান করো। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ ও নিরাপত্তা ভিক্ষা চাই।”
হাজারে আসওয়াদে পৌছার পর আপনার ১টি তাওয়াফ শেষ হবে। এবার পূর্বের ন্যায় দোয়া পড়ে দ্বিতীয় তাওয়াফ শুরু করতে হবে।
মনে রাখতে হবে যে, তাওয়াফ চলাকালীন সময়ে সংগীর সাথে কথাবার্তা না বলে এবং চুপ না থেকে বিভিন্ন সুরা কিরাত তেলাওয়াত করতে হবে। বিভিন্ন দোয়া উচ্চারণ করতে হবে। দোয়া হবে নিজের গুনাহ মাফের জন্য, আপনার কাছে বলে দেয়া সকল মানুষের জন্য, সকল মুমিন মুসলমানের জন্য, তামাম পৃথিবীর সকল মুসলমানের জন্য, নির্যাতি বিশ্ব মানবতার জন্য, আপনার প্রিয় জন্মভূমির জন্য, দেশের ইসলাম আর মুসলমানদের জন্য, আপনার স্ত্রী সন্তান আর পরিবারের জন্য। বিশেষ করে আব্বু আর আমু্মর জন্য।
এভাবেই আপনাকে মোট ৭টি চক্কর দিতে হবে। যার শুরু কাবা ঘরের হাজারে আসওয়াদ বরাবর কোন থেকে এবং সকল কোন ঘুরে এসে শেষ হবে ঠিক ওখানেই।
মনে রাখতে হবে যে, ৭টি চক্করের প্রথম ৩টি চক্কর হবে ছোট ছোট পায়ে তুলনামূলক ভাবে দ্রুত আর শেষ ৪টি তাওয়াফ হবে স্বাভাবিক গতিতে।
আপনি তাওয়াফ করছেন। এখন আপনাকে একটা প্রশ্ন করি! আপনি কেন একটি নিদিষ্ট ঘরকে কেন্দ্র করে তাওয়াফ করছেন? আপনি বলবেনঃ এটা আল্লাহর ঘর-বাইতুল্লাহ। তাই আল্লাহর ঘরকে কেন্দ্র করে চক্কর দিচ্ছি-তাওয়াফ করছি। যদি তা-ই হয়, তাহলে আপনার প্রতি জিজ্ঞাসাঃ আপনার আমার জীবনের এমন হাজারো চক্কর আছে, জীবনের পথ চলা শুরু থেকে আজ অবধি আমি আপনি সবাই চক্করের মধ্যেই আছি। সেই সব চক্কর কোন জিনিসটাকে কেন্দ্র করে হবে? সহজ উত্তরঃ আল্লাহ নির্দেশকে কেন্দ্র করে। অতএব, আপনি তাওয়াফ করার সময় মনের মাঝে এই অনুভূতি সৃষ্টি করতে হবে যে, জীবনের আগামীর সময় গুলোতে যত চক্কর আছে, সকল চক্করে আমি আপনি আল্লাহর নির্দেশকে কেন্দ্র করে চক্কর দেবো।আমার পরিবার, আমার সমাজ, আমার ব্যবসা, আমার রাজনীতি, আমার সামাজিকতা-সকল ক্ষেত্রে আমার চক্কর নিয়ন্ত্রিত হবে আল্লাহর নির্দেশকে কেন্দ্র করে। বাইতুল্লাহ (আল্লাহর ঘর) ছেড়ে যখন আরদুল্লাহ (আল্লাহর জমীনে-সাম্রাজ্যে)প্রত্যাবর্তন করবো, তখন আমার চক্করের কেন্দ্র বদল হবেনা। আপনি আপনার তাওয়াফে এই অঙ্গিকার করুন। ফেলে আসা দিন গুলোতে যে সব চক্বর আল্লাহর নির্দেশের বিপরীত করা হয়েছে, তার জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করুন এই চক্বর গুলো দিতে দিতে।
৭টি তাওয়াফ শেষ হয়েছে? এখন আপনার গায়ে ইহরামের কাপড় ডান বগলের নিচে থেকে বের করে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবে পরে নিন। এবং পড়ুনঃ وَاتَّخِذُواْ مِن مَّقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى - “এবং
তোমরা মাক্বামে ইব্রাহীমকে নামাযের স্থান
বানাও”।
সুন্নাত নামাযঃ
ইতিমধ্যে আপনার ৭টি তাওয়াফ শেষ হওয়ার পর আপনি নিশ্চয়ই বগলের নিচে
থেকে ইরহামের চাদর খান
বের করে স্বাভাবিক ভাবে
পরে নিয়েছেন এবং কুরআনের
সে আয়াত পড়েছেনঃ وَاتَّخِذُواْ مِن مَّقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى - “এবং
তোমরা মাক্বামে ইব্রাহীমকে নামাযের স্থান
বানাও”।
হ্যাঁ! আপনাকে
এখন মাকামে ইব্রাহীমে যেতে
হবে। মাক্বামে ইব্রাহীম
হলো কাবা ঘরের দরজার
সামনে পিতলের শিকল আর কাঁচ
আবৃত একটি বাক্স। যার
ভিতরে একটি পথর রয়েছে
এবং যে পfথরে দুই
পায়ের চিহ্ন বিদ্যমান।
কথিত
আছে যে,
১. এই পfথর
হচ্ছে সেই পাথর, যার উপরে
দাড়িয়ে ইব্রাহীম আ. কাবাঘর নির্মাণ
করেছিলেন। পাথরটি সে সময়
লিফটের কাজ করেছিল বলে
পাথরে চড়ে হযরত ইব্রাহীম
আ.
উপরে নিচে যে কোন
স্থানে যেতেন।
২. পাথরটার
উপরের পায়ের চিহ্ন হলো
হযরত ইব্রাহীম আ. এর পায়ের
চিহ্ন। আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়া তায়ালা ইব্রাহীম আ. এর খেদমত
করার জন্য পাথরকে নির্দেশ
প্রদান করেন এবং পাথর
সে নির্দেশ যথাযথ ভাবে
পালন করতে পারতেছে কিনা
সে ভায়ে গলে নরম
হয়ে যাওয়াতে পাথরে হযরত
ইব্রাহীম আ. এর পায়ে দাগ
পড়ে যায়।
৩. হযরত
ইব্রাহীম আ. কাবা ঘর নির্মাণের
পর এই স্থানে দাড়িয়ে
নামায আদায় করেছিলেন।
উপরের তথ্য গুলো জানা বা না জানার মাঝে আপনার উমরা পালনের কোন সমস্যা হচেছনা। আপনি চলে আসুন মাকামে ইব্রাহীমের এলাকায়। একদম মাকামে ইব্রাহীমের কাছে হতে হবে এমন শর্ত নয়। কিন্তু অবশ্যই আপনাকে কাবাঘর মুখী হয়ে মাকামে ইব্রাহীমের পিছনে কাছে বা দূরে কোথাও দাড়াতে হবে। মাকামে ইব্রাহীমকে আপনিও মুসল্লা বা নামাযের স্থান বানাতে হবে তথা আপনাকে ওখানে ২ রাকাত নামায আদায় করতে হবে। এই নামাযে প্রথম রাকাতে সূরা ফাতেহার পর সুরা কাফিরুন আর দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতেহার পর সূরা ইখলাছ পড়তে হবে।
মনে
রাখতে হবে যে, মাকামে ইব্রাহীম
নামক বস্তুটি আপনি প্রাণ
খুলে দেখতে পারেন। দেখার
সাথে সাথে স্মরণ করতে
পারেন মুসলিম মিল্লাতের পিতা
ইব্রাহীম আ. এর জীবন ও কর্মকে। নিজের জীবনের দৈনন্দিন কাজের
সাথে মিলাতে পারেন তার
জীবনকে। নিজেকে প্রশ্ন
করতে পারেন যে, আপনি পিতার
যোগ্য উত্তরসূরী কি না। তার জীবনের শিক্ষা থেকে
শিক্ষা নিয়ে নতুন করে
জীবন গড়ার শপথ নিতে
পারেন আপনি মাকামে ইব্রাহীমে
দাড়িয়ে। কিন্তু মাকামে
ইব্রাহীম নামক কাঁচ ঘেরা
বস্তুটা চুমু দেয়া বা হাত
দিয়ে স্পর্শ করে বরকতের
জন্য চোঁখে মুখে লাগানো
ইত্যাদিতে আসলে কোন বরকত
নেই,
সওয়াবও নেই।
নামায পড়ুন কায়মনো চিত্তে। নামাযের পর ওখানে নরম দিলে
আল্লাহর দরবারে আপনি যা খুশী
চাইতে পারেন। এর পর আপনি
ইচ্ছা করলে একবার হাজারে
আসওয়াদ স্পর্শ করে আসতে
পারেন। ওটা নির্ভর
করছে ওখানকার ভীড়ের উপর। ভীড় বেশী হলে পরিহার
করাই উত্তম।
এবার
আপনি চলে আসুন সাফা
পাহাড়ের দিকে। ওখানে
আসার পথে আপনি বিভিন্ন
কন্টেনারে জমজমের পানি দেখতে
পারবেন। সাধারণত এক জায়গায়
৩টি কন্টেনার থাকে। তার
মাঝে ২টিতে ঠান্ডা আর ১টিতে
(মাঝের কন্টেনারে) নরমাল পানি থাকে। আপনি প্রাণ ভরে জমজম
পান করুন। কিন্তু
ঠান্ডা নেবেন না স্বাভাবিকটা
নেবেন, তা নির্ধারণ করুন আপনার
স্বাস্থ্যগত অবস্থাকে বিবেচনায় নিয়ে। জমজমের পানি পান করে
আপনি এগিয়ে চলুন সাফা
পাহাড়ের দিকে।
সাফা পাহাড় পেতে হলে আপনাকে যে কাজটি করতে হবেঃ
১. কাবা
ঘরের হাজারে আসওয়াদ বরাবর কোন থেকে
বিপরীত দিকে তথা মসজিদের
দিকে বরাবর অগ্রসর হোন। কাঁচে ঘেরা সাফা পাহাড়
পেয়ে যাবেন ইনশা আল্লাহ।
২. মসজিদুল
হারামের মিনার গুলোর দিকে
একবার চোঁখ ঘুরিয়ে নিন। দেখবেন সর্বত্র জোড়ায় জোড়ায়
মিনার রয়েছে। কেবলমাত্র
১টি স্থানে দেখবেন মাত্র
১টি মিনার। ঐ মিনারের
নিচেই সাফা পাহাড়।
৩. আপনি
আধা শিক্ষিত মানুষ না হলে
আরবী, ইংরেজী এবং উর্দূ ভাষায়
লিখা নির্দেশক অনুসরণ করে
পৌছতে পারেন সাফা পাহাড়ে।
সাফা
পাহাড়ে পৌছে আপনাকে সায়ী
শুরু করতে হবে। যা উমরার
দ্বিতীয় অন্যতম কাজ। তাই
তাড়াহুড়া না করে তৃপ্তির
সাথে জমজম পান করে
আপনি অগ্রসর হোন সাফা
পাহাড়ের দিকে। সাফা
পাহাড়ের যখন নিকটে পৌছবেন
তখন পড়ুনঃ
إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِن شَعَآئِرِ اللّهِ
فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِ أَن يَطَّوَّفَ بِهِمَا
وَمَن تَطَوَّعَ خَيْراً فَإِنَّ اللّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ
“নিঃসন্দেরহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহ নিশানী সমূহের অন্তর্ভূক্ত। কাজেই যে ব্যক্তি বাইতুল্লাহর হজ্জ
বা উমরাহ করে তার জন্য ঐ দুই পাহাড়ের মাঝখানে সাঈ করায় কোন গোনাহ নাই। আর যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ও সাগ্রহে
কোন সৎ ও কল্যাণের কাজ করে, আল্লাহ তা জানেন
এবং তার যথার্থ মর্যাদা ও মূল্য দান করবেন।”
সায়ীঃ
উমরার জন্য আপনাকে এখন সায়ী করতে হবে। সায়ী মানে হাটাহাটি। আপনাকে সাফা এবং
মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে ৭বার হাটতে হবে। আর তাহার শুরু হবে সাফা পাহাড় থেকে। আমরা আশা করি আপনি সায়ী
করার জন্য সাফা পাহাড়ের নিকট পৌছেছেন। অতএব আপনি পড়ুনঃ
إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِن شَعَآئِرِ اللّهِ
فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِ أَن يَطَّوَّفَ بِهِمَا
وَمَن تَطَوَّعَ خَيْراً فَإِنَّ اللّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ
“নিঃসন্দেরহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহ নিশানী সমূহের অন্তর্ভূক্ত। কাজেই যে ব্যক্তি বাইতুল্লাহর হজ্জ
বা উমরাহ করে তার জন্য ঐ দুই পাহাড়ের মাঝখানে সাঈ করায় কোন গোনাহ নাই। আর যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ও সাগ্রহে
কোন সৎ ও কল্যাণের কাজ করে, আল্লাহ তা জানেন
এবং তার যথার্থ মর্যাদা ও মূল্য দান করবেন।”
আপনাকে সাফা এবং মারওয়া নামক এই দুই পাহাড়ের মধ্যে হাটতে হবে এজন্য যে, হযরত ইব্রাহীম আঃ এর স্ত্রী হযরত হাজরা শিশু ইসমাঈল আ. এর জন্য পানি খোঁজতে এই দুই পাহাড়ের মাঝে বার বার দৌড়াদৌড়ি করেছিলেন। মাতৃত্বের সেই পরম প্রকাশ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া
তায়ালার কাছে খুবই পছন্দনীয় হয়েছিল বলে তিনি আমাদের জন্য তা করণীয় করে দিয়েছেন।
আপনি সাফা বা মারওয়া পাহাড়ের যে অংশ দেখার সুযোগ পাবেন, তা পাহাড় গুলোর একদম চূড়া। আর আপনি যে স্থান দিয়ে হাটবেন তাকে আপনি সমতল ভূমি ভাববেন না। বরং তা হচ্ছে দুই পাহাড়ের মাঝে সংযোগ ব্রীজ। ঐ ব্রীজের নিচে পাহাড়ের বিরাট অংশ রয়েছে।এই পাহাড়টি এক সময় উম্মুক্ত ছিল। কিন্তু সৌদি সরকার বর্তমানে তা গ্লাস দিয়ে আবৃত্ত করে রেখেছেন। কারণ আমার মতো আধা শিক্ষিতরা এই পাহাড়ের পাথর
মাটি ইত্যাদি নিতে নিতে তাকে একদম সাবাড় করে দিচ্ছিলেন। অথচ এই পাহাড়ের মাটিতে কোন বরকত আছে বলে আমার পড়া শুনাতে পাইনি।
সাফা পাহাড়ে আরোহন করে আপনি কাবাঘরের দিকে মুখ করে আল্লাহর গুনগান করুন, তসবিহ পড়ুন, দোয়া করুন। আমাদের নবী মুহাম্মদ সা. এই স্থানে নিম্নের
দোয়া করেছেনঃ
لا إله إلا الله وحده لا شريك له له الملك وله
الحمد وهو على كل شيئ قدير. لا إله إلا الله وحده أنجز وعده ونصر عبده وهزم
الأحزاب وحده.
“আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন মাবুদ নাই। তিনি একা তাঁর কোন শরীক নাই। রাজত্ব তারই এবং তারই জন্য সকল প্রশংসা। এবং তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোন মাবুদ নাই। তিনি একা। তিনি কাঁর প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করেছেন। তার বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং সবকটি দলকে একাই পরাজিত করেছেন।”
উপরের এই দোয়াটি ৩বার পড়তে হবে। সাথে অন্য দোয়াও করা যাবে।
এক সময় আপনি পৌছবেন মারওয়া পাহাড়ে। ছাফা পাহাড়ে দাড়িয়ে আপনি কাবাঘরের দিকে তাকিয়ে দু হাত উপরে উঠায়ে সেই দোয়া গুলো পড়ুন, যা আপনি সাফা পাহাড়ে পড়েছিলেন। এবং এক সময় আপনি হাটা শুরু করুন সাফা পাহাড়ের দিকে। ওখানে এসে সেই আগের মতো দোয়া করুন এবং ফিরে যান মারওয়া পাহাড়ের দিকে। মাঝ খানে সবুজ বাতির স্থানে দৌড়াতে
থাকুন যখনই তা আপনি অতিক্রম করবেন। এই ভাবে আপনি ৭বার ছাফা আর মারওয়ার মাঝে হাটুন। ৭বারের হিসাবটা একটু
বুঝিয়ে বলি। ছাফা থেকে মারওয়া পৌছলে আপনি ১বার হাটলেন। আবার মারওয়া থেকে ছাফা আসলে ২বার হাটা হয়ে গেলো। তাহলে ৭নম্বরের হাটাটা গিয়ে শেষ হবে মারওয়া পাহাড়ে গিয়ে।
সাফা থেকে মারওয়া যেতে তথা ৭বার চক্কর দেয়া কম পরিশ্রমের কাজ নয়। বিশেষ করে আধা শিক্ষিত মানুষের মতো ভপুধারীদেরকে রীতি মতো ধরা খেতে হবে। তাই ধীরে ধীরে চলতে হবে। হাটার সময় নানাবিধ দোয়া এবং কুরআন তেলাওয়াত করতে হবে।
৭নং চক্কর শেষ হলে আপনি থাকবেন মারওয়া পাহাড়ে। আপনার হিসাব অনুযায়ী ৭চক্কর শেষ হওয়ার পর যদি আপনি আপনাকে সাফা পাহাড়ে দেখেন, তাহলে বুঝতে হবে যে, আপনি হিসাবে ভূল করেছেন। আপনি ৬ চক্কর দিয়েছেন অথবা ৮ চক্কর দিয়েছেন। অতএব সন্দেহ দূর করতে আপনি সাফা থেকে মারওয়া পাহাড়ে গমন করুন। ওখানে গিয়ে আপনার সায়ী-এর কাজ শেষ হবে। আর মাত্র ১টা কাজ বাকী। তাহলেই শেষ হবে আপনার পবিত্র উমরার সকল কার্যক্রম।
মাথা মুন্ডনঃ
মারওয়া পাহাড়ে গিয়ে সায়ী শেষ হলে আপনি এখন সেলুনের খোঁজ করুন। মাত্র ক’বছর আগে মারওয়া পাহাড়ের সর্বত্র হাজার হাজার সেলুন ছিল। কিন্তু এখন সব ভেঙে নতুন করে গড়া হচ্ছে বলে তা এখন আর ইতিহাস। অতএব আপনি নিজেই খোঁজে বের করতে হবে সেলুন কোথায়। সবচেয়ে ভাল হয় আপনি সেলুনের চিন্থা না করে আপনার বাসার দিকে হাটা শুরু করুন। পথে কোন এক স্থানে আপনার সেলুনের সাথে দেখা হয়ে যাবে। যেখানেই দেখা হবে, সেখানেই কাজ। অতএব মাত্র ১০ রিয়াল দিয়ে আপনি মাথা মুন্ডন করে নিন। মাথা মুন্ডন না করে মাথার সমস্ত চুল ছোট করারও বিধান আছে। তবে মুন্ডন করার মাঝে সওয়াব বেশী। এখন আপনি আপনার সংগী বোনের (যদি থাকে) চুল থেকে অগ্রভাগের সামান্য কেটে দিন। মনে রাখবেন এই কাজটা আপনার মাথা মুন্ডনের পরে করতে হবে, আগে নয়।
আল হামদু লিল্লাহ। মাথা মুন্ডনের মধ্য দিয়ে আপনার উমরার সকল কাজ শেষ হয়ে গেলো। এখন আপনি ইহরামের পোষাক খুলে নিন। আপনি এখন ইহরাম কালীন সময়ে নিষিদ্ধ সকল কাজ করতে পারবেন। আপনি সাধারণ পোষাক পরে নিন।
আপনিঃ
১. এখন আর উমরার চিন্থা না করে নিয়মিত সাধারণ পোষাকে তাওয়াফ করুন।
২. বেশীর ভাগ সময়ে মসজিদুল হারামে অবস্থান করুন এবং প্রাণ ভরে আল্লাহর ঘরকে দেখুন।
৩. নিয়মিত মসজিদুল হারামের নামাযের জামায়াতে শামীল হোন।
৪. মসজিদুল হারামের নয়নাভিরাম স্থাপত্যকলা ঘুরে ঘুরে দেখুন।
৫. পেট ভরে জমজমের পানি পান করতে থাকুন।
৬. মক্কার নিকটবর্তী ঐতিহাসিক স্থান গুলো দেখুন। যেমনঃ
-
মুহাম্মদ সা. এর জন্ম স্থান (মাকতাবা)
-
শিয়াবে আবি তালিব (মাকতাবার পাশে)
-
আবু জেহেলের বাড়ী (হাম্মামাত)
-
হযরত উমর রা. এর ইসলাম গ্রহণের স্থান (জবলে উমর বা ফানদাক উমার)
-
হযরত খাদিজার কবর (জান্নাতুল মুয়াল্লা)
-
গারে হেরা।
-
গারে ছুর।
-
আরাফাতের ময়দান।
-
মুজদালিফার প্রান্তর।
-
মীনার আবাস স্থল।
-
৩টি জামারাত।
এসব স্থান দেখতে গিয়ে আবার মসজিদুল হারামে জামায়াতে নামায পড়ার সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবেন না। যিয়ারাতের সিডিউল করতে হবে নামাযের সময়সূচীকে বিবেচনায় রেখে। মনে রাখতে হবে যে, সাধারণ কোন মসজিদে নামায পড়া আর আর মসজিদুল হারামের নামায পড়ার মাঝে সওয়াবের পার্থক্য ১লাখ রাকাআতের।
ইনশা আল্লাহ হাজ্জাম মাবরুর, সাইয়ান মশকুর, যানবান মাগফুর। তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম।
0 Comments