· ইবাদত আরবী
শব্দ। ইবাদত
শব্দটি আরবী। আব্দ শব্দ থেকে ইবাদত শব্দটি গঠন করা হয়েছে।
· ইবাদাত
শব্দটি আরবী ‘আবদ’ (عَبُدُ) হতে
উদ্ভূত হয়েছে।
· ‘আবদ’ অর্থ
দাস ও গোলাম। এ শব্দের সাথে আল্লাহর গুণবাচক শব্দ যোগ করে নাম রাখা হয়-আবদুর রহীম, আবদুর
রাহমান, আবদুল কারীম ইত্যাদি। এসব নামের অর্থ হলো আল্লাহর দাস।
· ইবাদত
শব্দের অর্থ দাসত্ব বা দাসের কাজ, বন্দেগী ও গোলামী করা। । আল্লাহ গোলাম হিসেবে তাঁর হুকুম ও রাসূলের তরীকামতো যা করা হয় সেসবই আল্লাহর
দাসত্ব। শুধু নামায-রোযাই ইবাদত নয়। আল্লাহর হুকুমমতো করলে সব কাজই ইবাদত।
· যে
ব্যক্তি অন্যের দাস সে যদি তার বাস্তবিকই মনিবের সমীপে একান্ত অনুগত হয়ে থাকে এবং
তার সাথে ঠিক ভৃত্যের ন্যায় ব্যবহার করে, তবে একে বলা হয়
বন্দেগী ও ইবাদাত।
· কেউ যদি
কারো চাকর হয় এবং মনিবের কাছ থেকে পুরোপুরি বেতন আদায় করে, কিন্তু তবুও সে যদি ঠিক চাকরের ন্যায় কাজ না করে তবে বলতে হবে যে, সে নাফরমানী ও বিদ্রোহ করেছে। আসলে একে অকৃতজ্ঞতা বলাই বাঞ্ছনীয়।
· তিনটি
প্রক্রিয়ার সমন্বয়ে যে কার্যটি
সম্পন্ন হয় আরবী পরিভাষায় তাকেই বলে ‘ইবাদাত’। কাজ তিনটি হলোঃ
১. মনিবের দাসত্ব স্বীকার।
২. মনিবের আনুগত্য।
৩. মনিবের সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষা করা।
· বুনিয়াদী
ইবাদত হলোঃ ১. নামায, ২. রোযা, ৩. হজ্জ, ৪. যাকাত। এসব ইবাদতের দ্বারা আল্লাহর দাসত্ব করার
অভ্যাস করানো হয়; যাতে দুনিয়ার অন্য সব কাজ আল্লাহর পছন্দমতো
করার যোগ্যতা সৃষ্টি হয়। ঐ চারটি ইবাদত অন্য সব কাজকে ইবাদত বানিয়ে দেয়।
· মুমিনের
জীবনের দীনদারী ও দুনিয়াদারী আলাদা আলাদা নয়। গোটা জীবনই দীনদারী ও ইবাদত।
· মানুষের
জীবন আল্লাহর দাসত্বের অধীন না হলে শয়তানের দাসত্বের অধীন হতে বাধ্য।
· মাওলানা
মওদূদীর মতেঃ
চিকিৎসক রোগীকে নিরাময় করতে না পারলে বলা হয় যে, সে
চিকিৎসায় ব্যর্থ হয়েছে,কৃষক ভাল ফসল জন্মাতে না পারলে
কৃষিকার্যে তার ব্যর্থতা সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত হয়। তেমনি আপনারা যদি আপনাদের
জীবনের উদ্দেশ্য লাভ অর্থাৎ ইবাদাত করতে না পারেন তবে বলতে হবে যে, আপনাদের জীবন ব্যর্থ হয়েছে।
o
ইবাদতঃ যে উদ্দেশ্যে মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছেঃ
﴿وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا
لِيَعْبُدُونِ﴾
“আমি জিন
ও মানব জাতিকে কেবল আমারই ইবাদাত ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি।” (সূরা আয
যারিয়াতঃ ৫৬)
o ইবাদতঃ বান্দার প্রতি আল্লাহর হকঃ
عَنْ
مُعَاذٍ قَالَ كُنْتُ رِدْفَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم عَلَى حِمَارٍ يُقَالُ
لَهُ عُفَيْرٌ فَقَالَ يَا مُعَاذُ هَلْ تَدْرِيْ حَقَّ اللهِ عَلَى عِبَادِهِ
وَمَا حَقُّ الْعِبَادِ عَلَى اللهِ قُلْتُ اللهُ وَرَسُوْلُهُ أَعْلَمُ قَالَ
فَإِنَّ حَقَّ اللهِ عَلَى الْعِبَادِ أَنْ يَعْبُدُوْهُ وَلَا يُشْرِكُوْا بِهِ
شَيْئًا وَحَقَّ الْعِبَادِ عَلَى اللهِ أَنْ لَا يُعَذِّبَ مَنْ لَا يُشْرِكُ
بِهِ شَيْئًا فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَفَلَا أُبَشِّرُ بِهِ النَّاسَ قَالَ
لَا تُبَشِّرْهُمْ فَيَتَّكِلُوْا
মু‘আয (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উফাইর নামক একটি গাধার পিঠে আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-এর পেছনে আরোহী ছিলাম। তিনি আমাকে বললেন,
হে মু‘আয, তুমি কি জান
বান্দার উপর আল্লাহর হক কী? এবং আল্লাহর উপর বান্দার হক কী?
আমি বললাম, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন।
তিনি বললেন, বান্দার উপর আল্লাহর হক হলো, বান্দা তাঁর ‘ইবাদাত করবে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক
করবে না। আর আল্লাহর উপর বান্দার হক হলো, তাঁর ‘ইবাদাতে কাউকে শরীক না করলে আল্লাহ্ তাকে শাস্তি দিবেন না। আমি বললাম,
হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমি কি লোকদের এ সুসংবাদ দিব না? তিনি বললেন,
তুমি তাদের সুসংবাদটি দিও না, তাহলে লোকেরা এর
উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।
o ইবাদতঃ যা হবে একনিষ্ট ভাবেঃ
﴿وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ
مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا
الزَّكَاةَ ۚ وَذَٰلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ﴾
তাদেরকে তো এ ছাড়া আর কোন হুকুম দেয়া হয়নি যে , তারা নিজেদের দীনকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে একনিষ্ঠভাবে তাঁর
ইবাদাত করবে , নামায কায়েম করবে ও যাকাত দেবে, এটিই যথার্থ সত্য ও সঠিক দীন৷ (সূরা বাইয়্যিনাহঃ ৫)
إن الله لا يقبل من العمل إلا ما كان خالصا وابتغى
به وجهه
আল্লাহ তাআলা শুধু সে আমলই গ্রহণ
করেন, যা ইখলাছের সাথে এবং আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার উদ্দেশ্যে করা
হয়। (নাসায়ী)
o ইবাদতঃ যা হবে শিরক মুক্তভাবেঃ
﴿وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ
شَيْئًا ﴾
আর তোমরা সবাই আল্লাহর বন্দেগী করো৷ তাঁর
সাথে কাউকে শরীক করো না৷ (সূরা আন নিসাঃ ৩৬)
o ইবাদতঃ কতক্ষণ করতে হবে?
﴿وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّىٰ يَأْتِيَكَ
الْيَقِينُ﴾
এবং যে চূড়ান্ত সময়টি আসা
অবধারিত সেই সময় পর্যন্ত নিজের রবের বন্দেগী করে যেতে থাকো৷ (সূরা হিজরঃ ৯৯)
o ইবাদতঃ নবী রাসূলদের দাওয়াতের সারকথাঃ
يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ
إِلَٰهٍ غَيْرُهُ
“আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত
করো না” অর্থাৎ দাসত্ব ও আনুগত্য লাভের যোগ্য সারা জাহানে
একজনই মাত্র বাদশাহ আছেন— তিনি হচ্ছেন আল্লাহ তাআলা; অনুসরণযোগ্য মাত্র একটি বিধান বা আইন আছে—তাহলো
আল্লাহর দেয়া জীবনব্যবস্থা এবং একটি মাত্র সত্ত্বাই আছে,যার
পূজা-উপাসনা, আরাধনা করা যেতে পারে। আর সেই সত্তাই হচ্ছে
একমাত্র আল্লাহ।
o ইবাদতঃ কুরআন নাযিলের করা হয়েছে একনিষ্ট ভাবে
যা সম্পাদনের জন্যঃ
﴿إِنَّا أَنزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ
بِالْحَقِّ فَاعْبُدِ اللَّهَ مُخْلِصًا لَّهُ الدِّينَ﴾
[হে মুহাম্মদ (সা)] আমি তোমার
কাছে হকসহ এ কিতাব নাযিল করেছি৷ তাই তুমি একনিষ্ঠভাবে কেবল আল্লাহর ইবাদাত করো৷ (সূরা যুমারঃ ২)
o
ইবাদতঃ যার মূল হচ্ছে-তাকওয়া। যেমনঃ
§ পুরো ইবাদতের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ
﴿يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي
خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ﴾
হে মানব জাতি ৷ ইবাদাত করো তোমাদের রবের , যিনি তোমাদের ও তোমাদের
পূর্বে যারা অতিক্রান্ত হয়েছে তাদের সবার সৃষ্টিকর্তা, এভাবেই
তোমরা নিষ্কৃতি লাভের আশা করতে পারো ৷ (সূরা বাকারাঃ ২১)
§ নামাযের ব্যাপারে বলা হয়েছেঃ
﴿وَأَنْ أَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَاتَّقُوهُ ۚ
وَهُوَ الَّذِي إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ﴾
নামায কায়েম করো এবং তাঁর
নাফরমানী করা থেকে দূরে থাকো৷ তাঁরই কাছে তোমাদের সমবেত করা হবে। (সূরা আনআমঃ ৭২)
§ যাকাতের ব্যাপারে বলা হয়েছেঃ
﴿وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ
مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا
الزَّكَاةَ ۚ وَذَٰلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ﴾
তাদেরকে তো এ ছাড়া আর কোন হুকুম
দেয়া হয়নি যে , তারা নিজেদের দীনকে একমাত্র আল্লাহর জন্য
নির্ধারিত করে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদাত করবে , নামায কায়েম
করবে ও যাকাত দেবে, এটিই যথার্থ সত্য ও সঠিক দীন৷ (সূরা
বাইয়্যিনাহঃ ৫)
§ রোযার ব্যাপারে বলা হয়েছেঃ
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ
عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ
تَتَّقُونَ﴾
হে ঈমানদাগণ! তোমাদের ওপর রোযা
ফরয করে দেয়া হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী নবীদের অনুসারীদের ওপর ফরয করা হয়েছিল
৷ এ থেকে আশা করা যায়, তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার গুণাবলী সৃষ্টি হয়ে
যাবে ৷ (সূরা বাকারাঃ ১৮৩)
§ হজ্জের ব্যাপারে বলা হয়েছেঃ
﴿ وَتَزَوَّدُوا فَإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ
التَّقْوَىٰ ۚ وَاتَّقُونِ يَا أُولِي الْأَلْبَابِ﴾
হজ্জ সফরের জন্য পাথেয় সংগে নিয়ে
যাও আর সবচেয়ে ভালো পাথেয় হচ্ছে তাকওয়া ৷ কাজেই হে বুদ্ধিমানেরা ! আমার নাফরমানী
করা থেকে বিরত থাকো ৷ (সূরা বাকারাঃ ১৯৭)
o
ইবাদতঃ কবুল হওয়ার শর্ত ২টিঃ
১. বিশুদ্ধ নিয়াত।
২. রাসূল সা. এ তরিকা।
o
ইবাদতঃ প্রকারভেদ
§ মালি ইবাদতঃ যেমন-যাকাত, হাজ্জ।
§ বাদানী ইবাদতঃ যেমন-নামায, রোযা।
§ আনুষ্ঠানিক ইবাদতঃ যার অপর
নাম বুনিয়াদী ইবাদত। যেমনঃ নামায, রোযা, যাকাত, হজ্জ।
§ অনানুষ্ঠানিক ইবাদতঃ সামগ্রিক
জীবন। সকল কাজে আল্লাহর গোলাম হিসাবে
নিজেকে উপস্থাপন করা।
§ নামাযঃ
﴿إِنَّنِي أَنَا اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا
أَنَا فَاعْبُدْنِي وَأَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي﴾
আমিই আল্লাহ,
আমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, কাজেই তুমি আমার ইবাদত করো এবং
আমাকে স্মরণ করার জন্য নামায কায়েম করো৷ (সূরা ত্বা-হাঃ ১৪)
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ارْكَعُوا
وَاسْجُدُوا وَاعْبُدُوا رَبَّكُمْ وَافْعَلُوا الْخَيْرَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ﴾
হে ঈমানদারগণ! রুকূ’ ও সিজদা করো, নিজের
রবের বন্দেগী করো এবং নেক কাজ করো, হয়তো তোমাদের ভাগ্যে
সফলতা আসবে৷ (সূরা হাজ্জঃ ৭৭)
﴿اتْلُ
مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَأَقِمِ الصَّلَاةَ ۖ إِنَّ الصَّلَاةَ
تَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ ۗ وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ ۗ
وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ﴾
(হে নবী!) তোমার প্রতি অহির মাধ্যমে যে কিতাব পাঠানো হয়েছে তা তেলাওয়াত করো
এবং নামায কায়েম করো, নিশ্চিতভাবেই
নামায অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে৷ আর আল্লাহর
স্মরণ এর চাইতেও বড় জিনিস৷ আল্লাহ জানেন তোমরা যা কিছু
করো৷ (সূরা আনকাবুতঃ ৪৫)
o ইবাদতঃ জিনিসটা কি?
এটা বুঝানোর
জন্য নামায রোযার হাকীকত বইয়ের ইবাদত অধ্যায় পড়তে হবে, বুঝতে হবে, বুঝাতে হবে।
0 Comments