কারোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাংলাদেশ ও কাতারের বেশ কিছু বিষয় লক্ষণীয়ঃ
১. লক ডাউন শুরু
হওয়ার সাথে সাথে বাংলাদেশের সারা দেশে উৎসব মুখুর পরিবেশে রাস্তা সমূহ পাশ ফেলে
বন্ধ করে দেয়া হলো। কাতারে সব কিছু খোলা থাকলো। কিন্তু মানুষজন ঘরে বসে থাকলো। এতে
করে ইমার্জেন্সী যোগাযোগ ব্যাহত হলো না।
২. লক ডাউন শুরু
হতেই বাংলাদেশে রাস্তা ও দোকানে বড় বড় বিল বোর্ড ও ব্যানার ঝুলিয়ে দেয়া হলোঃ নো
মাস্ক নো সার্ভিস। কাতারের কোথাও এই ধরনের বিল বোর্ড বা ব্যানার চোঁখে পড়েনি।
প্রতিটি দোকানের প্রবেশ দ্বারে এ-ফোর সাইজের কাগজে স্বাস্থ্য সচেতনতায় করণীয় বিষয়ে
একটা নোটিশ টানিয়ে দেয়া হলো।
৩. করোনা
পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশে প্রতিদিন স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় প্রেস ব্রিফিং শুরু করলো, যেখানে উপচে পড়া ভীড়ের মাঝে মন্ত্রী ও সরকারী কর্মকর্তারা
বক্তব্য দিলেন। কাতারে সাপ্তাহে মাত্র ১দিন কোন কোন সময় দুই সপ্তাহে ১দিন
স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় সীমাহীন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রেস ব্রিফিং করলো। যাতে
পরবর্তী প্রেস ব্রিফিং অবধি করণীয় নির্দেশ করা হলো।
৪. লক ডাউন শুরু
হলে বাংলাদেশে শ্রমজীবি মানুষের উপবাস শুরু হলো। আর সেই অবস্থায় সামাজিক দূরত্বকে
পাত্তা না নিয়ে সমাজকর্মী ও রাজনৈতিক সংগঠন গুলো ত্রান তৎপরতা শুরু করলো। টিভি
চ্যানেল আর সোস্যাল মিডিয়াতে ছবি ভিডিও, প্রচার আর প্রচার। কাতারে সরকার ও নিবন্ধিত চ্যারেটি সংস্থা গুলো কর্মহীন
মানুষের মাঝে ত্রান পৌছে দিল। অসহায় মানুষ সবাই খাবার পেল ঘরে বসে। কিন্তু চোঁখে
পড়ার মতো কোন তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়নি।
৫. স্কুল গুলো
বন্ধ হয়ে গেল। বাংলাদেশে ছাত্রছাত্রীরা বিয়ে বাড়ী, খেলার মাঠ, শপিং মল সব জায়গায় যেতে
পারলো-করোনা বিস্তৃত হলো না। কেবল স্কুলে যেতে পারলো না-কারণ করোনা ছড়িয়ে যাবে।
কাতারে স্কুল বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে জুম মিটিং বা মাইক্রোসফট টিমস-এর আওতায় ক্লাশ
শুরু হয়ে গেল। হোম ওয়ার্ক বেড়ে গেল। পড়ালেখা যথারীতি চললো। দুইটি শিক্ষা বছরের
শুরুর দিনই আমার ছোট মেয়েটি ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণীর বই পেল। আলাদা ইউটিউব চ্যানেল খুলে
প্রতি ক্লাশকে সেখানে আপলোড করা হলো।
৬. স্কুল খোলা
উৎসব। বাংলাদেশে স্কুল খোলা উপলক্ষ্যে সম্মানিত টিচাররা সেনিটাইজার নিয়ে দাড়িয়ে
গেলেন। ফুল দিয়ে শিক্ষার্থীদের বরণ করলেন। কিন্তু কারো হাতে গ্লোব আমার চোঁখে
পড়েনি। জানিনা, সেই ফুলের স্টিক থেকে করোনা ছড়ায়
কি না?
টিভি চ্যানেল আর সোস্যাল মিডিয়া হুমড়ি খেয়ে পড়লো। এদিকে
কাতারে স্কুল খোলার দিনে এমন কোন তৎপরতা চোঁখে পড়েনি। ম্যাসেজের মাধ্যমে সকল
অভিভাবকদের স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কথা জানিয়ে দেয়া হলো। কোন
শিক্ষক ছাত্র ছাত্রীর পাশে আসেননি। দূর থেকে ক্লাস নিচ্ছেন। ছাত্রছাত্রীদের কোন
ফুল দেয়া হয়নি। প্রথম দিন বই সরবরাহ করা হয়েছে একটি নির্দিষ্ট ব্যাগে। বই সাজিয়ে
রাখা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা নিজ নিজ নাম দেখে ব্যাগ উঠিয়ে নিয়েছে।
৭. এখনকার
পরিস্থিতি। বাংলাদেশে রাস্তা ঘাটে হাটে মাঠে বড় বড় সাইন বোর্ড চোঁখে পড়বে-নো মাস্ক
নো সার্ভিস। কিন্তু মাস্ক চোঁখে পড়া মুশকিল। যিনি মাস্ক লাগাবেন, তার কাছে নিজেকে একঘরে একঘরে অবস্থা মনে হয়। অপর দিকে কাতারে মাস্ক ছাড়া কোন মানুষকে বাহিরে পাবেন-এটা
কল্পনা করা মুশকিল। বাংলাদেশ থমকে আছে, কাতার এগিয়ে যাচ্ছে সকল প্রস্তুতি নিয়ে ২০২২ সালের বিশ্বকাপ আয়োজনে।
জ্ঞাতব্যঃ আজ ১৩ সেপ্টেম্বরের হিসাব অনুযায়ী- বাংলাদেশ করোনা
আক্রান্তে বিশ্বের মধ্যে ২৮তম স্থানে অবস্থান করছে। আক্রান্ত সংখ্যাঃ ১৫,৩০,৪১৩ জন; মৃত্যুঃ ২৬,৯৩১ জন। কাতার করোনা আক্রান্তে বিশ্বের মধ্যে ৮৫তম স্থানে অবস্থান করছে।
আক্রান্ত সংখ্যাঃ ২,৩৪,৬৪২ জন; মৃত্যুঃ ৬০৪
জন।
0 Comments