তেলাওয়াত ও তরজমাঃ
﴿قُلْ سِيرُوا فِي
الْأَرْضِ ثُمَّ انظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ﴾
১১) এদেরকে
বলে দাও, পৃথিবীর
বুকে একটু চলাফেরা করে দেখো, যারা সত্যকে মিথ্যা বলেছে তাদের
পরিণাম কি হয়েছে।
﴿قُل لِّمَن مَّا
فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ قُل لِّلَّهِ ۚ كَتَبَ عَلَىٰ نَفْسِهِ
الرَّحْمَةَ ۚ لَيَجْمَعَنَّكُمْ إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَا رَيْبَ فِيهِ ۚ
الَّذِينَ خَسِرُوا أَنفُسَهُمْ فَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ﴾
১২) এদেরকে
জিজ্ঞেস করো, আকাশ ও পৃথিবীতে
যা কিছু আছে সেগুলো কার?–বলো, সবকিছু
আল্লাহরই। অনুগ্রহের পথ অবলম্বন করা তিনি
নিজের জন্য অপরিহার্য করে দিয়েছেন। (এ জন্যই তিনি নাফরমানী
ও সীমালংঘন করার অপরাধে তোমাদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে পাকড়াও করেন না।) কিয়ামতের দিন তিনি তোমাদের সবাইকে অবশ্যি একত্র
করবেন। এটি এমন একটি সত্য যার মধ্যে সংশয়-সন্দেহের কোন
অবকাশই নেই। কিন্তু যারা নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংসের মধ্যে
নিক্ষেপ করেছে তারা একথা মানে না।
﴿وَلَهُ مَا سَكَنَ
فِي اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ ۚ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ﴾
১৩) রাতের
আধাঁরে ও দিনের আলোয় যা কিছু বিরাজমান সবই আল্লাহর এবং তিনি সবকিছু শোনেন ও জানেন।
﴿قُلْ أَغَيْرَ
اللَّهِ أَتَّخِذُ وَلِيًّا فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ يُطْعِمُ
وَلَا يُطْعَمُ ۗ قُلْ إِنِّي أُمِرْتُ أَنْ أَكُونَ أَوَّلَ مَنْ أَسْلَمَ ۖ
وَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِينَ﴾
১৪) বলো, আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমি কি আর কাউকে নিজের
অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করবো? সেই আল্লাহকে বাদ দিয়ে–যিনি পৃথিবী ও আকাশের স্রষ্টা এবং যিনি জীবিকা দান করেন, জীবিকা গ্রহণ করেন না? বলো, আমাকে হুকুম দেয়া হয়েছে যেন আমি সবার আগে তাঁর সামনে আনুগ্রত্যের শির নত
করি। (আর তাকিদ করা হয়েছে, কেউ শিরক করলে করুক)কিন্তু তুমি মুশরিকদের অন্তরভুক্ত হয়ো না।
﴿قُلْ إِنِّي
أَخَافُ إِنْ عَصَيْتُ رَبِّي عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ﴾
১৫) যদি
আমি আমার রবের নাফরমানী করি, তাহলে ভয় হয় একটি মহা (ভয়ংকর) দিনে আমাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে।
﴿مَّن يُصْرَفْ
عَنْهُ يَوْمَئِذٍ فَقَدْ رَحِمَهُ ۚ وَذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْمُبِينُ﴾
১৬) সেদিন
যে ব্যক্তি শাস্তি থেকে রেহাই পাবে আল্লাহ তার প্রতি বড়ই অনুগ্রহ করেছেন এবং এটিই
সুস্পষ্ট সাফল্য।
﴿وَإِن يَمْسَسْكَ
اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ ۖ وَإِن يَمْسَسْكَ بِخَيْرٍ
فَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ﴾
১৭) যদি
আল্লাহ তোমার কোন ধরনের ক্ষতি করেন তাহলে তিনি ছাড়া আর কেউ নেই যে তোমাকে ঐ ক্ষতি
থেকে বাঁচাতে পারে।
﴿وَهُوَ الْقَاهِرُ
فَوْقَ عِبَادِهِ ۚ وَهُوَ الْحَكِيمُ الْخَبِيرُ﴾
১৮) আর যদি
তিনি তোমার কোন কল্যাণ করেন, তাহলে তিনি সবকিছুর ওপর শক্তিশালী। তিনি নিজের বান্দাদের ওপর পূর্ণ ক্ষমতা রাখেন এবং তিনি জ্ঞানী ও সবকিছু জানেন।
﴿قُلْ أَيُّ شَيْءٍ
أَكْبَرُ شَهَادَةً ۖ قُلِ اللَّهُ ۖ شَهِيدٌ بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ ۚ وَأُوحِيَ
إِلَيَّ هَٰذَا الْقُرْآنُ لِأُنذِرَكُم بِهِ وَمَن بَلَغَ ۚ أَئِنَّكُمْ
لَتَشْهَدُونَ أَنَّ مَعَ اللَّهِ آلِهَةً أُخْرَىٰ ۚ قُل لَّا أَشْهَدُ ۚ قُلْ
إِنَّمَا هُوَ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ وَإِنَّنِي بَرِيءٌ مِّمَّا تُشْرِكُونَ﴾
১৯) এদেরকে
জিজ্ঞেস করো, কার
সাক্ষ্য সবচেয়ে বড়? –বলো, আল্লাহ আমার
ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী। আর এ কুরআন আমার
কাছে পাঠানো হয়েছে অহীর মাধ্যমে, যাতে তোমাদের এবং আর যার
যার কাছে এটি পৌঁছে যায় তাদের সবাইকে আমি সতর্ক করি। সত্যিই কি তোমরা এমন সাক্ষ দিতে সক্ষম যে, আল্লাহর সাথে আরো ইলাহও আছে? বলে দাও,
আমি তো কখনোই এমন সাক্ষ দিতে পারি না। বলো, আল্লাহ তো একজনই এবং তোমরা যে শিরকে লিপ্ত
রয়েছো আমি তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।
﴿الَّذِينَ
آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَعْرِفُونَهُ كَمَا يَعْرِفُونَ أَبْنَاءَهُمُ ۘ
الَّذِينَ خَسِرُوا أَنفُسَهُمْ فَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ﴾
২০)
যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছে তারা এ বিষয়টি এমন সন্দেহাতীতভাবে চেনে যেমন নিজেদের
সন্তানদেরকে চেনার ব্যাপারে তারা সন্দেহের শিকার হয় না। কিন্তু যারা নিজেরাই নিজেদেরকে ক্ষতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে তারা একথা মানে
না।
নাম করণঃ
§
আনআম বলা হয় গৃহপলিত পশুকে। সূরার ১৬ ও ১৭ নম্বর রুকুতে কোন কোন আনআমের হারাম হওয়া
এবং কোন কোনটি হালাল হওয়া বিষয়ে আরবের মানুষের কাল্পনিক ও কুসংস্কারমূলক ধারণা বিশ্বাসকে
খন্ডন করা হয়েছে। তাই বিষয় বস্তুর বিবেচনায় সূরার নাম করণ করা হয়েছে আল-আনআম।
§
সূরার ১৬ ও ১৭ রুকুতে যা বলা হয়েছেঃ
وَقَالُوۡا
هٰذِهٖۤ اَنۡعَامٌ وَّحَرۡثٌ حِجۡرٌۖ لَّا يَطۡعَمُهَاۤ اِلَّا مَنۡ نَّشَآءُ
بِزَعۡمِهِمۡ وَاَنۡعَامٌ حُرِّمَتۡ ظُهُوۡرُهَا وَاَنۡعَامٌ لَّا يَذۡكُرُوۡنَ
اسۡمَ اللّٰهِ عَلَيۡهَا افۡتِرَآءً عَلَيۡهِؕ سَيَجۡزِيۡهِمۡ بِمَا كَانُوۡا
يَفۡتَرُوۡنَ
১৩৮) তারা বলে, এ পশু ও এ ক্ষেত-খামার সুরক্ষিত। এগুলো একমাত্র তারাই
খেতে পারে যাদেরকে আমরা খাওয়াতে চাই। অথচ এ বিধি-নিষেধ তাদের মনগড়া। তারপর কিছু পশুর পিঠে চড়া ও তাদের পিঠে মাল বহন করা হারাম করে দেয়া হয়েছে আবার
কিছু পশুর ওপর তারা আল্লাহর নাম নেয় না। আর এসব
কিছু আল্লাহ সম্পর্কে তাদের মিথ্যা রটনা। শীঘ্রই আল্লাহ তাদেরকে এ মিথ্যা রটনার প্রতিফল দেবেন।
وَقَالُوۡا
مَا فِىۡ بُطُوۡنِ هٰذِهِ الۡاَنۡعَامِ خَالِصَةٌ لِّذُكُوۡرِنَا وَمُحَرَّمٌ
عَلٰٓى اَزۡوٰجِنَاۚ وَاِنۡ يَّكُنۡ مَّيۡتَةً فَهُمۡ فِيۡهِ شُرَكَآءُؕ
سَيَجۡزِيۡهِمۡ وَصۡفَهُمۡؕ اِنَّهٗ حَكِيۡمٌ عَلِيۡمٌ
১৩৯) আর তারা বলে, এ পশুদের পেটে যা কিছু আছে তা আমাদের পুরুষদের জন্য
নির্দিষ্ট এবং আমাদের স্ত্রীদের জন্য সেগুলো হারাম। কিন্তু যদি তা মৃত হয় তাহলে
উভয়েই তা খাবার ব্যাপারে শরীক হতে পারে। তাদের এ মনগড়া কথার প্রতিফল আল্লাহ তাদেরকে অবশ্যি দেবেন। অবশ্যি তিনি
প্রজ্ঞাময় ও সবকিছু জানেন।
قَدۡ
خَسِرَ الَّذِيۡنَ قَتَلُوۡۤا اَوۡلَادَهُمۡ سَفَهًۢا بِغَيۡرِ عِلۡمٍ
وَّحَرَّمُوۡا مَا رَزَقَهُمُ اللّٰهُ افۡتِرَآءً عَلَى اللّٰهِؕ قَدۡ ضَلُّوۡا
وَمَا كَانُوۡا مُهۡتَدِيۡنَ
১৪০) নিঃসন্দেহে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যারা নিজেদের
সন্তানদেরকে নির্বুদ্ধিতা ও অজ্ঞতাবশত হত্যা করেছে এবং আল্লাহর দেয়া জীবিকাকে
আল্লাহর সম্পর্কে মিথ্যা ধারণাবশত হারাম গণ্য করেছে নিঃসন্দেহে তারা পথভ্রষ্ট
হয়েছে এবং তারা কখনোই সত্য পথ লাভকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
وَمِنَ
الۡاَنۡعَامِ حَمُوۡلَةً وَّفَرۡشًاؕ كُلُوۡا مِمَّا رَزَقَكُمُ اللّٰهُ وَلَا
تَتَّبِعُوۡا خُطُوٰتِ الشَّيۡطٰنِؕ اِنَّهٗ لَكُمۡ عَدُوٌّ مُّبِيۡنٌۙ
১৪২) আবার তিনিই গবাদী পশুর মধ্যে এমন পশুও সৃষ্টি করেছেন, যাদের সাহায্যে যাত্রী ও ভারবহনের কাজ নেয়া হয় এবং যাদেরকে খাদ্য ও বিছানার
কাজেও ব্যবহার করা হয়। খাও এ জিনিসগুলো থেকে, যা
আল্লাহ তোমাদের দান করেছেন এবং শয়তানের অনুসরণ করো না, কারণ সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
مٰنِيَةَ
اَزۡوٰجٍۚ مِّنَ الضَّاۡنِ اثۡنَيۡنِ وَمِنَ الۡمَعۡزِ اثۡنَيۡنِؕ قُلۡ
اٴٰلذَّكَرَيۡنِ حَرَّمَ اَمِ الۡاُنۡثَيَيۡنِ اَمَّا اشۡتَمَلَتۡ عَلَيۡهِ
اَرۡحَامُ الۡاُنۡثَيَيۡنِؕ نَبِّـُٔوۡنِىۡ بِعِلۡمٍ اِنۡ كُنۡتُمۡ صٰدِقِيۡنَۙ
১৪৩) এ আটটি নর ও মাদী, দু’টি মেষ শ্রেণীর ও দু’টি ছাগল
শ্রেণীর। হে মুহাম্মাদ! এদেরকে জিজ্ঞেস করো, আল্লাহ
এদের নর দু’টি হারাম করেছেন, না মাদী
দু’টি অথবা মেষ ও ছাগলের পেটে যে বাচ্চা আছে সেগুলো? যথার্থ জ্ঞানের ভিত্তিতে আমাকে জানাও যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো।
وَمِنَ
الۡاِبِلِ اثۡنَيۡنِ وَمِنَ الۡبَقَرِ اثۡنَيۡنِؕ قُلۡ اٴٰلذَّكَرَيۡنِ حَرَّمَ
اَمِ الۡاُنۡثَيَيۡنِ اَمَّا اشۡتَمَلَتۡ عَلَيۡهِ اَرۡحَامُ الۡاُنۡثَيَيۡنِؕ
اَمۡ كُنۡتُمۡ شُهَدَآءَ اِذۡ وَصّٰٮكُمُ اللّٰهُ بِهٰذَاۚ فَمَنۡ اَظۡلَمُ
مِمَّنِ افۡتَرٰى عَلَى اللّٰهِ كَذِبًا لِّيُضِلَّ النَّاسَ بِغَيۡرِ عِلۡمٍؕ
اِنَّ اللّٰهَ لَا يَهۡدِىۡ الۡقَوۡمَ الظّٰلِمِيۡنَ
১৪৪) আর এভাবে দু’টি উট শ্রেণীর ও দু’টি গাভী
শ্রেণীর মধ্য থেকে। জিজ্ঞেস করো, আল্লাহ এদের নর দু’টি
হারাম করেছেন, না মাদী দু’টি, না সেই বাচ্চা যা উটনী ও গাভীর পেটে রয়েছে? তোমরা
কি তখন উপস্থিত ছিলে যখন আল্লাহ তোমাদেরকে এদের হারাম হুকুম দিয়েছিলেন? কাজেই তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হবে যে আল্লাহর নামে মিথ্যা কথা বলে? তার উদ্দেশ্য হচ্ছে, সঠিক জ্ঞান ছাড়াই মানুষকে ভ্রান্ত পথে পরিচালিত করা।
নিঃসন্দেহে আল্লাহ এহেন জালেমদের সত্য-সঠিক পথ দেখান না।
قُل لَّاۤ
اَجِدُ فِىۡ مَاۤ اُوۡحِىَ اِلَىَّ مُحَرَّمًا عَلٰى طَاعِمٍ يَّطۡعَمُهٗۤ اِلَّاۤ
اَنۡ يَّكُوۡنَ مَيۡتَةً اَوۡ دَمًا مَّسۡفُوۡحًا اَوۡ لَحۡمَ خِنۡزِيۡرٍ
فَاِنَّهٗ رِجۡسٌ اَوۡ فِسۡقًا اُهِلَّ لِغَيۡرِ اللّٰهِ بِهٖۚ فَمَنِ اضۡطُرَّ
غَيۡرَ بَاغٍ وَّلَا عَادٍ فَاِنَّ رَبَّكَ غَفُوۡرٌ رَّحِيۡمٌ
১৪৫) হে মুহাম্মাদ! এদেরকে বলে দাও, যে ওহী আমার কাছে এসেছে তার মধ্যে তো আমি এমন কিছু পাই না যা খাওয়া কারো ওপর
হারাম হতে পারে, তবে মরা, বহমান
রক্ত বা শুয়োরের গোশ্ত ছাড়া। কারণ তা নাপাক। অথবা যদি অবৈধ হয় আল্লাহ ছাড়া অন্য
কারোর নামে যবেহ করার কারণে। তবে অক্ষম অবস্থায় যে ব্যক্তি (তার
মধ্য থেকে কোন জিনিস খেয়ে নেবে) নাফরমানীর ইচ্ছা না করে এবং প্রয়োজনের সীমা না
পেরিয়ে, সেক্ষেত্রে অবশ্যি তোমার রব ক্ষমাশীল ও অনুগ্রহকারী।
§
তাফসীরে তাওযীহুল কুরআনে বলা হয়েছেঃ
-
আনআম মানে চতূষ্পদ জন্তু। আরবের মুশরিকদের মাঝে চতূষ্পদ
জন্তু সম্পর্কে ছিল ভ্রান্ত ধারণা। তারা মূর্তির নামে পশু ওয়াকফ করে তাকে খাওয়া হারাম মনে
করতো। সূরাতে সেই সব ভ্রান্ত নীতির মূলোৎপাটন করা হয়েছে। বিধায় এই সূরার নাম রাখা হয়েছে
সূরা আল আনআম।
§
সূরা আল আনআমের বৈশিষ্ট্য
-
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, কয়েকটি আয়াত
ছাড়া পুরো সুরা একসাথে মক্কায় নাযিল হয়েছে। সত্তর হাজার ফেরেশতা তাসবীহ
পড়তে পড়তে এই সুরা অবতরণ করেছিলেন।
-
সূরা আল আনআম নাযিল হওয়ার পর তাসবীহ পড়তে শুরু করেন
এবং বলেনঃ এই সূরাকে ঘিরে ফিরিশতারা আসমান থেকে জমীন পর্যন্ত ঘিরে
-
আবু ইসহাক ইসফারায়িনি বলেন,
o সূরাতে তাওহীদের সমস্ত মূলনীতি
ও পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে।
o সূরাটি আলহামদুলিল্লাহ দ্বারা
শুরু করা হয়েছে। যার মাধ্যমে এই ম্যাসেজ দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহ কারো প্রশংসার মুখাপেক্ষী নন।
নাযিলের সময়কালঃ
§
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. এর বর্ণনা অনুযাযী সূরাটি একই সাথে মক্কায় নাযিল
হয়েছে।
§
হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ-যিনি হযরত মুআয বিন জাবাল রা. এর চাচাত বোন। তিনি বলেনঃ রাসূল সা. উটনীর পিঠে আরোহিত অবস্থায় এই সূরাটি নাযিল হতে থাকে। যখন আমি উটনীটির লাগাম ধরে ছিলাম। তখন উটনীটির অবস্থা এমন হয়েছিল যে, বোঝার ভারে মনে হচ্ছিল এই বুঝি উটনীর
হাড়গোড় ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে।
§
হযরত আসমার বর্ণনা অনুযাযী যে, রাতে এই সূরাটি নাযিল হয়, রাসূল সা.
সেই রাতেই সূরাটি লিপিবদ্ধ করান।
§
সূরা বিষয়বস্তু সম্পর্কে চিন্তা করলে মনে হয় যে, সূরাটি মক্কী যুগের শেষের দিকে নাযিল হয়েছে। আর হযরত আসমার বর্ণনাও সেই কথার সত্যতা প্রমাণ করে। কারণ তিনি ছিলেন আনসারদের
অন্তর্ভূক্ত, যিনি হিজরতের
পর ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি যদি ভক্তি শ্রদ্ধার কারণে সেই সময়ে মক্কায় গিয়ে থাকেন, তাহলে তা মক্কী জীবনের শেষ দিকেই হওয়ার
কথা। তাছাড়া এর আগে রাসূল সা. এর সাথে মদীনাবাসীদের এমন ঘনিষ্ট সম্পর্ক হয়নি যে, একজন
মহিলা তার খেদমতে হাজির হবেন।
শানে নুযুল বা নাযিলের উপলক্ষ্যঃ
§
সূরাটি যে প্রেক্ষাপটে নাযিল হলোঃ
-
রাসূল সা. দাওয়াতী কাজের ১২ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে।
-
কুরাইশদের বাঁধা ও নির্যাতন চরমে পৌছেছিল।
-
দাওয়াত কবুলকারীদর একটা অংশ নির্যাতন থেকে বাঁচতে হাবশায়
হিজরত করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
-
রাসূল সা.কে সাহায্যকারী আবু তালিব ও হযরত খাদিজা ইনতিকাল করেছেন।
-
সকল ধরণের পার্থিব সাহায্য থেকে বঞ্চিত হয়ে কঠোর প্রতিবন্ধকতার
মধ্য দিয়ে রাসূল সা. ইসলামের প্রচার
ও রিসালাতের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
-
রাসূল সা. এর দাওয়াতে সাড়া দিয়েছিল কিছু সৎ লোক। আর সামগ্রিক ভাবে ইসলামের প্রতি একটা ঝোঁক ছিল।
-
যার মাঝে সেই ঝোঁক দেখা যেতো, তাকে তিরস্কার, গালিগালাজ, শারিরিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক নির্যাতনে জর্জরিত করা হতো।
-
পুরো মেঘাচ্ছন্ন আকাশে-অন্ধকার বিভীষিকাময় পরিবেশে ইয়াসরিব তথা মদীনার দিক থেকে পাওয়া
গেলো একটুখানি হালকা আশার আলো।
-
মদীনার আওস ও খাযরাজ গোত্রের প্রভাবশালী মানুষেরা রাসূল
সা. এর হাতে আকবা নামক স্থানে
বাইয়াত গ্রহণ করে গিয়েছেন।
-
মদীনায় কোন ধরণের বাঁধা ছাড়াই ইসলামের প্রসার লাভ শুরু
হয়েছিল। এর এই মদীনার ক্ষুদ্র প্রারম্ভিক বিন্দুর মাঝে ছিল ভবিষ্যতের বিপুল সম্ভাবনা, তা সাধারণ দৃষ্টিতে বুঝা সম্ভব ছিল না।
- রাসূল সা. এর আন্দোলনকে বাহ্যিক ভাবে মনে করা হতোঃ
1. ইসলাম একটি দূর্বল আন্দোলন।
2. যার পিছনে কোন বৈষয়িক ও বস্তুগত শক্তি
নাই।
3. এর উদ্যোক্তার পিছনে পরিবার আর বংশের
দূর্বল সমর্থন ছাড়া কোন সমর্থন নাই।
4. ইসলাম যারা গ্রহণ করেছে, তাদের সংখ্যা
মুষ্টিমেয়, তারা অসহায় ও বিক্ষিপ্ত-বিচ্ছিন্ন।
5. অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, গাছের মরা
পাতা যেমন মাটিতে ঝরে পড়ে, একই ভাবে জাতির বিশ্বাস, মত ও পথ
থেকে সরে গিয়ে কিছু মানুষ সমাজ থেকে দূরে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।
আলোচ্য বিষয় সমূহঃ
§
আলোচ্য বিষয় ৭টি। যথাঃ
একঃ শিরকের খণ্ডন, তাওহীদের প্রতি ঈমান আনার আহবান।
দুইঃ আখেরাতের প্রতি ঈমানের প্রচার ও দুনিয়ার জীবন সবকিছু
এই চিন্তার অপনোদন।
তিনঃ জাহেলীয়াতের সকল কাল্পনিক বিশ্বাস ও কুসংস্কারের
প্রতিবাদ।
চারঃ ইসলামের মৌলিক নৈতিক বিধানের শিক্ষা।
পাঁচঃ রাসূল সা. এবং তার দাওয়াতের বিরুদ্ধে উত্থাপিত
আপত্তি ও প্রশ্নের জবাব।
ছয়ঃ দাওয়াতী কাজের দীর্ঘ সফরে সফলতা না আসায় রাসূল সা. ও মুসলমানদের অস্থিরতা ও
হতাশার কারণে সান্তনা প্রদান।
সাতঃ অস্বীকারকারী ও বিরোধী পক্ষকে উপদেশ দেয়া, ভয় দেখানো, সতর্ক করা।
§
মক্কী জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ঃ
-
মাদানী সূরা গুলো নাযিলের সময়কাল প্রায় জানা অথবা সমান্য
চেষ্ট করলে সময়কাল চিহ্নিত করা যায়।
-
মাক্কী সূরা নাযিলের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় না। খুব কম সংখ্যক মক্কী সূরা রয়েছে, যার নাযিলের সময়কাল ও প্রেক্ষাপট সম্পর্কে নির্ভুল ও
নির্ভরযোগ্য বর্ণনা পাওয়া যায়। কারণঃ
§
মক্কী যুগের খুটিনাটি আলোচনা ইতিহাসে কম হয়েছে। তুলনামূলক ভাবে মাদানী যুগের আলোচনা বেশী হয়েছে।
§
মক্কী সূরা গুলোতে ঐতিহাসিক সাক্ষ্য প্রমানের বদলে সূরার
বিষয়বস্তু, আলোচ্য বিষয়
ও বর্ণনা পদ্ধিতি, নাযিলের পটভূমি সংক্রান্ত ইংগিত ইত্যাদির উপর নির্ভর করতে হয়েছে।
§
বিধায় মক্কী সূরার গুলো নাযিলের সুনির্দিষ্ট সময় ও প্রেক্ষাপট
বলা মুশকিল।
§
গবেষণা ও অনুসন্ধানের পদ্ধতি অনুসরণ করে নবী সা.এর
মক্কী জীবনের ইলামী দাওয়াতের দৃষ্টিকোণ থেকে চারটি প্রধান প্রধান ও উল্লেখযোগ্য
পর্যায়ে লক্ষ করা যায়ঃ
১. তিন বছরঃ নবুওয়াতের
সূচনা থেকে নবুওয়াতের প্রকাশ্য ঘোষণা পর্যন্ত।
- এ সময় গোপনে দাওয়াতী কাজ
চলে।
- বিশেষ ব্যক্তিদেরকে
দাওয়াত দেয়া হয়।
- মক্কার সাধারণ লোকেরা এ দাওয়াত
সম্পর্কে কিছুই জানতো না।
২. দুই বছরঃ নবুওয়াতের
প্রকাশ্য ঘোষণার পর থেকে জুলুম-নির্যাতনের শুরু পর্যন্ত।
- এ সময় বিরোধিতা শুরু হয়।
- বিরোধীতা প্রতিরোধের রূপ
নেয়।
- বিরোধীতা ঠাট্টা, বিদ্রুপ, উপহাস,
দোষারোপ, গালিগালাজ, মিথ্যা
প্রচারণা এবং জোটবদ্ধভাবে বিরোধিতা পর্যায়ে পৌঁছে।
- মুসলমানদের ওপর
জুলুম-নির্যাতন শুরু হয়ে যায়।
- যারা তুলনামূলকভাবে বেশী
গরীব, দুর্বল ও আত্মীয়
বান্ধবহীন ছিল প্রাথমিক পর্যায়ে তারাই হয় সর্বাধিক নির্যাতনের শিকার।
৩. পাঁচ বছরঃ চরম বিরোধীতার সূচনা তথা নবুয়াতের ৫ম
বছর থেকে ১০ বছর পর্যন্ত।
- এ সময় আবু তালিব ও হযরত
খাদীজা রা. ইন্তিকাল করেন।
- এ সময়ে বিরোধীতা চরম আকার
ধারণ করতে থাকে।
- কাফেরদের
জুলুম-নির্যাতনের কারণ মুসলমানদের আবিসিনিয়া হিজরত।
- নবী সা. তাঁর পরিবারবর্গ
ও অন্যান্য মুসলমানদেরসহ আর্থনৈতিক ও সামাজিক বয়কট। রাসূল সা. তাঁর সমর্থক ও সংগী-সাথীদের
নিয়ে শিয়াবে আবু তালিবে অবরুদ্ধ হওয়া।
৪. তিন বছরঃ নবুওয়াতের দশম বছর থেকে ১৩শ বছর
পর্যন্ত।
- যা ছিল নবী সা. ও তাঁর সাথীদের জন্য সবচেয়ে কঠিন ও বিপজ্জনক
সময়। যখন মুসলমানদের জন্য মক্কায় জীবন যাপন করা কঠিন হয়ে উঠেছিল।
- দাওয়াতের জন্য রাসূল সা. তায়েফে গেলেন। সেখানেও আশ্রয় পেলেন না।
- হজ্জের সময় আরবের সকল গোত্রকে
দাওয়াত দেয়া হলো। কিন্তু কোন সাড়া মিলল না।
- মক্কাবাসী রাসূল সা.কে হত্যা বা বন্দী করা বা এলাকা থেকে বিতাড়িত
করার ফন্দি করলো।
- অবশেষে আল্লাহ আনসারদের মনের
দুয়ার খুলে দিলেন। রাসূল সা. মদীনায় হিজরত
করলেন।
§ উপরোক্ত পর্যায় সমূহে কুরআনে
হাকীমের বিভিন্ন আয়াতে নাযিল হয়। এসব আয়াতে যে সব ইংগিত পাওয়া যায়, তা থেকে সেই সময়কার পটভূমি ফোটে উঠে। আর সেই সব প্রেক্ষাপট থেকে আয়াত বা সূরাকে মক্কী বলে নির্ধারণ করা হয়েছে।
ব্যাখ্যাঃ
﴿قُلْ سِيرُوا فِي الْأَرْضِ ثُمَّ انظُرُوا
كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ﴾
১১) এদেরকে
বলে দাও, পৃথিবীর বুকে একটু চলাফেরা করে দেখো, যারা সত্যকে
মিথ্যা বলেছে তাদের পরিণাম কি হয়েছে।
-
আল্লাহ যে সব জাতি ও মানব গোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করেছেন, নিজ অবস্থান থেকে যদি একটু বের হওয়া যায়,
তাহলে দেখা যাবে পৃথিবীতি সেই সব প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া
যাবে এবং ঐতিহাসিক কাহিনী সমূহ জানা যাবে।
-
আর এসব ধ্বংসাবশেষ ও কাহিনী এ কথারই সাক্ষ্য দেবে যে, হক থেকে মুখ ফিরালে তথা সত্য গ্রহণ না করলে এবং
বাতিলের অনুসরণ করার ব্যাপারে বাড়াবাড়ী করলে কি ধরণের পরিণতির সম্মুখীন হতে হয়।
-
আরবের মুশরিকরা বানিজ্যিক সফরে শাম দেশে যেতো এবং সে
সময় সামুদ জাতি এবং লুত আ. এর কাওম যে এলাকায় বসবাস করতো, সেই এলাকা দিয়ে যাতায়াত করতো এবং
তারা সেই জাতির ধ্বংসাবশেষ দেখতে পেতো। কুরআন তাদের দাওয়াত দিচ্ছেঃ এ সব জাতির
পরিণাম দেখে শিক্ষা গ্রহণ কর। (তাওযীহুল কুরআন)
- কুরআনে ১৪টি স্থানে سِيۡرُوۡا
শব্দটি এসেছে। এর মধ্যে ৭টি স্থানে সরাসরি পরিণাম এবং অন্যান্য স্থানে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও
ক্ষমতা বুঝানো হয়েছে।
قَدۡ خَلَتۡ مِنۡ قَبۡلِكُمۡ سُنَنٌۙ فَسِيۡرُوۡا
فِىۡ الۡاَرۡضِ فَانظُرُوۡا كَيۡفَ كَانَ عَاقِبَةُ الۡمُكَذِّبِيۡنَ
সূরা আলে ইমরান: ১৩৭
তোমাদের আগে অনেক যুগ অতিক্রান্ত হয়েছে। পৃথিবীতে
ঘোরাফেরা করে দেখে নাও যারা (আল্লাহর বিধান ও হিদায়াতকে) মিথ্যা বলেছে তাদের
পরিণাম কি হয়েছে।
সূরা আল আনআম: ১১
قُلۡ سِيۡرُوۡا فِىۡ الۡاَرۡضِ ثُمَّ انظُرُوۡا
كَيۡفَ كَانَ عَاقِبَةُ الۡمُكَذِّبِيۡنَ
এদেরকে বলে দাও, পৃথিবীর বুকে একটু চলাফেরা করে দেখো, যারা
সত্যকে মিথ্যা বলেছে তাদের পরিণাম কি হয়েছে।
সূরা ইউসুফ: ১০৯
وَمَاۤ اَرۡسَلۡنَا مِنۡ قَبۡلِكَ اِلَّا رِجَالاً
نُّوۡحِىۡۤ اِلَيۡهِمۡ مِّنۡ اَهۡلِ الۡقُرٰٓىؕ اَفَلَمۡ يَسِيۡرُوۡا فِىۡ الۡاَرۡضِ
فَيَنۡظُرُوۡا كَيۡفَ كَانَ عَاقِبَةُ الَّذِيۡنَ مِنۡ قَبۡلِهِمۡ
وَلَدَارُ الۡاٰخِرَةِ خَيۡرٌ لِّلَّذِيۡنَ اتَّقَوۡاؕ اَفَلَا تَعۡقِلُوۡنَ
হে মুহাম্মাদ! তোমার পূর্বে আমি যে নবীদেরকে
পাঠিয়েছিলাম তাঁরা সবাই মানুষই ছিল, এসব জনবসতিরই অধিবাসী ছিল এবং তাঁদের কাছেই আমি অহী পাঠাতে
থেকেছি। তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করেনি এবং তাদের পূর্বে যেসব জাতি চলে গেছে তাদের
পরিণাম দেখেনি? নিশ্চিতভাবেই আখেরাতের আবাস তাদের জন্য আরো
বেশী ভালো যারা (নবীর কথা মেনে নিয়ে) তাকওয়ার পথ অবলম্বন করেছে। এখনো কি তোমরা
বুঝবে না?
সূরা আন নাহল: ৩৬
وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِىۡ كُلِّ اُمَّةٍ رَّسُوۡلاً
اَنِ اعۡبُدُوۡا اللّٰهَ وَاجۡتَنِبُوۡا الطّٰغُوۡتَۚ فَمِنۡهُمۡ مَّنۡ هَدَى
اللّٰهُ وَمِنۡهُمۡ مَّنۡ حَقَّتۡ عَلَيۡهِ الضَّلٰلَةُؕ فَسِيۡرُوۡا فِىۡ
الۡاَرۡضِ فَانْظُرُوۡا كَيۡفَ كَانَ عَاقِبَةُ الۡمُكَذِّبِيۡنَ
প্রত্যেক জাতির মধ্যে আমি একজন রসূল পাঠিয়েছি এবং তার
মাধ্যমে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি যে, “আল্লাহর বন্দেগী করো এবং তাগূতের বন্দেগী পরিহার করো।” এরপর তাদের মধ্য থেকে কাউকে আল্লাহ সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন এবং কারোর
ওপর পথভ্রষ্টতা চেপে বসেছে। তারপর পৃথিবীর বুকে একটু
ঘোরাফেরা করে দেখে নাও যারা সত্যকে মিথ্যা বলেছে তাদের পরিণাম কি হয়েছে।
সূরা আল হাজ্জ: ৪৬
اَفَلَمۡ يَسِيۡرُوۡا فِىۡ الۡاَرۡضِ فَتَكُوۡنَ
لَهُمۡ قُلُوۡبٌ يَّعۡقِلُوۡنَ بِهَاۤ اَوۡ اٰذَانٌ يَّسۡمَعُوۡنَ بِهَاۚ
فَاِنَّهَا لَا تَعۡمَى الۡاَبۡصَارُ وَلٰكِنۡ تَعۡمَى الۡقُلُوۡبُ الَّتِىۡ فِىۡ
الصُّدُوۡرِ
তারা কি পৃথিবীর বুকে ভ্রমণ করেনি, যার ফলে তারা উপলব্ধিকারী হৃদয় ও
শ্রবণকারী কানের অধিকারী হতো? আসল ব্যাপার হচ্ছে, চোখ অন্ধ হয় না বরং হৃদয় অন্ধ হয়ে যায়, যা বুকের
মধ্যে আছে।
সূরা আন নামাল: ৬৯
قُلۡ سِيۡرُوۡا فِىۡ الۡاَرۡضِ فَانْظُرُوۡا كَيۡفَ
كَانَ عَاقِبَةُ الۡمُجۡرِمِيۡنَ
বলো, পৃথিবী পরিভ্রমন করে দেখো অপরাধীদের পরিণতি কি হয়েছে।
সূরা আল আনকাবুত: ২০
قُلۡ سِيۡرُوۡا فِىۡ الۡاَرۡضِ فَانْظُرُوۡا كَيۡفَ
بَدَاَ الۡخَلۡقَ ثُمَّ اللّٰهُ يُنۡشِئُ النَّشۡاَةَ الۡاٰخِرَةَؕ اِنَّ
اللّٰهَ عَلٰى كُلِّ شَىۡءٍ قَدِيۡرٌ
এদেরকে বলো, পৃথিবীর বুকে চলাফেরা করো এবং দেখো তিনি কিভাবে সৃষ্টির সূচনা
করেন, তারপর আল্লাহ দ্বিতীয়বারও জীবন দান করবেন। অবশ্যই
আল্লাহ সব জিনিসের ওপর শক্তিশালী।
সূরা আর রূম: ৯ এবং ৪২
اَوَلَمۡ يَسِيۡرُوۡا فِىۡ الۡاَرۡضِ فَيَنۡظُرُوۡا
كَيۡفَ كَانَ عَاقِبَةُ الَّذِيۡنَ مِنۡ قَبۡلِهِمۡؕ كَانُوۡۤا اَشَدَّ مِنۡهُمۡ
قُوَّةً وَّاَثَارُوۡا الۡاَرۡضَ وَعَمَرُوۡهَاۤ اَكۡثَرَ مِمَّا عَمَرُوۡهَا
وَجَآءَتۡهُمۡ رُسُلُهُمۡ بِالۡبَيِّنٰتِؕ فَمَا كَانَ اللّٰهُ لِيَظۡلِمَهُمۡ
وَلٰكِنۡ كَانُوۡۤا اَنۡفُسَهُمۡ يَظۡلِمُوۡنَؕ
আর এরা কি কখনো পৃথিবীতে ভ্রমণ করেনি? তাহলে এদের পূর্বে যারা অতিক্রান্ত হয়েছে তাদের পরিণাম এরা
দেখতে পেতো। তারা এদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী ছিল,
তারা জমি কর্ষণ করেছিল খুব ভালো করে এবং
এত বেশি আবাদ করেছিল যতটা এরা করেনি। তাদের কাছে তাদের
রাসূল আসে উজ্জ্বল নিদর্শনাবলী নিয়ে। তারপর আল্লাহ
তাদের প্রতি জুলুমকারী ছিলেন না কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করছিল।
قُلۡ سِيۡرُوۡا فِىۡ الۡاَرۡضِ فَانْظُرُوۡا كَيۡفَ
كَانَ عَاقِبَةُ الَّذِيۡنَ مِنۡ قَبۡلُؕ كَانَ اَكۡثَرُهُمۡ مُّشۡرِكِيۡنَ
(হে নবী!) তাদেরকে বলে দাও, পৃথিবীর বুকে পরিভ্রমণ করে দেখো
পূর্ববর্তী লোকদের পরিণাম কি হয়েছে! তাদের অধিকাংশই মুশরিক ছিল।
সূরা সাবা: ১৮
وَجَعَلۡنَا بَيۡنَهُمۡ وَبَيۡنَ الۡقُرَى الَّتِىۡ
بٰرَكۡنَا فِيۡهَا قُرًى ظَاهِرَةً وَّقَدَّرۡنَا فِيۡهَا السَّيۡرَؕ سِيۡرُوۡا
فِيۡهَا لَيَالِىَ وَاَيَّامًا اٰمِنِيۡنَ
আর আমি তাদের ও তাদের যে জনবসতিগুলোতে সমৃদ্ধি দান
করেছিলাম, সেগুলোর
অন্তর্বর্তী স্থানে দৃশ্যমান জনপদ গঠন করেছিলাম এবং একটি আন্দাজ অনুযায়ী তাদের
মধ্যকার ভ্রমণের দূরত্ব নির্ধারণ করেছিলাম। পরিভ্রমণ
করো এসব পথে রাত্রিদিন পূর্ণ নিরাপত্তা সহকারে।
-
প্রথমে বলা হয়েছেঃ سِيرُوا তার পর
বলা হয়েছেঃ انظُرُوا কোথাও ثُمَّ انظُرُوا
বলা হয়েছে আর কোথাও فَانْظُرُوۡا বলা হয়েছে।
-
ইমাম বায়জাবীর মতে,
o ব্যবসা বানিজ্যের উদ্দেশ্যে ভ্রমন করা মোবাহ-বৈধ। বিনাশপ্রাপ্ত অবাধ্যদের পরিণতি পর্যবেক্ষণ করা ওয়াজিব-অত্যাবশ্যক।
o ব্যবসা বা অন্য কোন উদ্দেশ্যে কোথাও ভ্রমনে গেলে অবাধ্যদের বিনাশপ্রাপ্ত জনপদের নিদর্শণ দেখা অবশ্যই কর্তব্য।
﴿قُل لِّمَن مَّا فِي السَّمَاوَاتِ
وَالْأَرْضِ ۖ قُل لِّلَّهِ ۚ كَتَبَ عَلَىٰ نَفْسِهِ الرَّحْمَةَ ۚ
لَيَجْمَعَنَّكُمْ إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَا رَيْبَ فِيهِ ۚ الَّذِينَ
خَسِرُوا أَنفُسَهُمْ فَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ﴾
১২) এদেরকে
জিজ্ঞেস করো, আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সেগুলো কার? –বলো, সবকিছু
আল্লাহরই। অনুগ্রহের পথ অবলম্বন করা তিনি নিজের জন্য অপরিহার্য করে দিয়েছেন। (এ জন্যই
তিনি নাফরমানী ও সীমালংঘন করার অপরাধে তোমাদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে পাকড়াও করেন না)
কিয়ামতের দিন তিনি তোমাদের সবাইকে অবশ্যি একত্র করবেন। এটি এমন একটি সত্য যার
মধ্যে সংশয়-সন্দেহের কোন অবকাশই নেই। কিন্তু যারা নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংসের মধ্যে
নিক্ষেপ করেছে তারা একথা মানে না।
§ قُل لِّمَن مَّا فِي السَّمَاوَاتِ
وَالْأَرْضِ ۖ قُل لِّلَّهِ-এদেরকে জিজ্ঞেস করো, আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সেগুলো কার? –বলো, সবকিছু আল্লাহরই ।
-
এখানে কুরআনের একটি চমকপ্রদ বর্ণনাভংগী উপস্থাপিত হয়েছে। প্রথমে প্রশ্ন করা হয়েছে এবং প্রশ্ন করার সাথে সাথে উত্তর দেয়া হয়েছেঃ
প্রশ্নঃ পৃথিবী ও আকাশের মধ্যে যা
কিছু আছে, সেগুলো কার?
এখানে প্রশ্নকর্তা প্রশ্নকর্তা প্রশ্ন করে জবাবের অপেক্ষায়।
শ্রোতা জানে-উত্তর হচ্ছেঃ
আল্লাহর। কিন্তু জবাব দেয়ার সাহস করেনা অথবা সঠিক জবাবটা দিতে চায় না। জবাব দিলে মুশরিকী আকীদার বিরুদ্ধে প্রমাণ উপস্থাপিত হবে।
বিধায় প্রশ্নকারী জবাবও দিয়ে দিতে নির্দেশ দেন।
জবাবঃ বলো-সব কিছু আল্লাহর জন্য।
§
كَتَبَ
عَلَىٰ نَفْسِهِ الرَّحْمَةَ- অনুগ্রহের পথ
অবলম্বন করা তিনি নিজের জন্য অপরিহার্য করে দিয়েছেন।
-
তিনি ফায়সালা করেছেন যে, বান্দার প্রতি তিনি দয়াময়, ত্বরিৎ শাস্তি প্রদান করেন না এবং তাদের ফিরে আসার ও তাওবা করার সুযোগ
দেন।
عن أبي هريرة رضي الله عنه، قال قال النبي صلى الله
عليه وسلم إن الله لما خلق الخلق، كتب كتاباً عنده فوق العرش
إن رحمتي تغلب غضبي "
হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ “আল্লাহ তায়ালা মাখলুককে সৃষ্টি করার পর লাওহে মাহফুজে লিখে দেন-আমার রহমত আমার গজবের উপর জয়যুক্ত থাকবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
عن أبي هريرة، عن النبي صلى الله عليه وسلم، قال:
"لَمَّا فَرَغَ اللَّهُ مِنَ الخَلْقِ كَتَبَ كِتاباً: إنَّ رَحْمَتي
سَبَقَتْ غَضَبِي ".
হযরত আবু হুরায়রা রা. নবী সা. থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি সম্পন্ন
করার পর তিনি ঘোষণা করেন, আমার
গজবের চেয়ে রহমত বেশী।
عن سليمان، قال: "إن الله تعالى لما خلق
السماء والأرض، خلق مائة رحمة، كل رحمة ملء ما بين السماء إلى الأرض، فعنده تسع
وتسعون رحمة، وقسَّم رحمةً بين الخلائق فبها يتعاطفون وبها تشرب الوحش والطير
الماء، فإذا كان يوم القيامة قصرها الله على المتقين وزادهم تسعاً وتسعين ".
হযরত সুলাইমান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ
তায়ালা আসমান জমিন যখন সৃষ্টি করলেন, তখন একশত রহমতও সৃষ্টি
করলেন। প্রতিটি রহমত আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থান জুড়ে আছে। ৯৯টি রহমত আল্লাহ
তায়ালা তাঁর নিকট থেকে দিয়েছেন, আর মাত্র একটি যা সমগ্র
সৃষ্টি জগতের মধ্যে বন্টন করেছেন। তাতেই তারা পরস্পর মায়া-মমতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
পশু পাখি এক ঘাটে পানি পান করে। তারপর কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তাঁর রহমত শুধু
মুত্তাকীদের জন্য সীমিত রাখবেন এবং অতিরিক্ত ৯৯টি রহমত তাদেরকে দান করবেন।
-
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ আল্লাহ পাকের নিকটে রয়েছে একশত রহমত। তার মধ্যে একটি রহমাত বন্টন করে দেয়া হয়েছে মানুষ, জ্বীন, চতূষ্পদ জন্তু, কীটপতঙ্গ ইত্যাদির মধ্যে। তাই তারা পরস্পরের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে এবং পরস্পরকে ভালবাসে। বন্য পশুকূলও এ কারণে ভালবাসে তাদের শাবককে। অবশিষ্ট নিরান্নইটি রহমাত আল্লাহ তার কাছে জমা রেখেছেন। পূণরুত্থানের দিন ঐ রহমাত দেয়া হবে তাঁর প্রকৃত বান্দাদেরকে। (মুসলিম)
-
রহমত আল্লাহ তায়ালার
একটি গুণ। তার জাত ও অন্যান্য সিফাতের মতো এটি একটি চিরস্থায়ী গুণ।
-
হযরত উমর বিন খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. এর দরবারে বন্দী হিসাবে হাজির করা হলো কয়েকজন বনবাসীকে। তাদের মধ্যে একজন মহিলা ছিল, যার বুক ছিল দুধে পরিপূর্ণ। সে মহিলা হঠাৎ একটি শিশুকে দেখতে পেয়ে তার দিকে ছুটে গেল এবং তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে পরম যত্নে তাকে দুধ পান করালো। রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, দেখো, এই শিশুটির মাতাটি তার সন্তানকে কি কখনো আগুনে নিক্ষেপ করতে পারে? আমরা বললামঃ কস্মিন কালেও নয়। রাসূল সা. বললেনঃ এই মহিলার সন্তানের প্রতি ভালবাসা অপেক্ষা আল্লাহ তার গোলামদের উপর অনেক বেশী দয়াময়।
-
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার এই দয়া
ও রহমত কিয়ামতের দিন কেবল ঈমানদারদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।
وَرَحْمَتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ ۚ
فَسَأَكْتُبُهَا لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَالَّذِينَ هُم
بِآيَاتِنَا يُؤْمِنُونَ
কিন্তু আমার অনুগ্রহ সব জিনিসের ওপর পরিব্যপ্ত হয়ে
আছে। কাজেই তা আমি এমন লোকদের নামে
লিখবো যারা নাফরমানী থেকে দূরে থাকবে, যাকাত দেবে এবং আমার
আয়াতের প্রতি ঈমান আনবে। (আল আরাফঃ ১৫৬)
§ لَيَجْمَعَنَّكُمْ إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ
لَا رَيْبَ فِيهِ -কিয়ামতের দিন তিনি তোমাদের সবাইকে অবশ্যি একত্র করবেন। এটি এমন একটি সত্য
যার মধ্যে সংশয়-সন্দেহের কোন অবকাশই নেই।
-
لَيَجْمَعَنَّكُمْ – এর
‘লাম’কে কেউ কেউ ‘লামে তাকিদ’
বলেছেন। আবার কেউ কেউ এটাকে ‘লামে কাসমিয়া’ বলেছেন। যারা কাসমিয়া বলেছেন, তারা বলেনঃ
আল্লাহ পাক কসম খেয়ে বলছেন, তিনি নির্ধারিত দিনে তাঁর সকল বান্দাকে
একত্রিত করবেনই-মুমিনদের এব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু যারা কাফের তারা তাদের এতে সন্দেহ রয়েছে।
-
সূরা আল ওয়াকিয়াতে বলা হয়েছেঃ لَمَجْمُوعُونَ
إِلَىٰ مِيقَاتِ يَوْمٍ مَّعْلُومٍ
– “নিশ্চিতভাবেই পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ের সব মানুষকে একদিন
অবশ্যই একত্রিত করা হবে। সে জন্য সময় নির্দিষ্ট
করে রাখা হয়েছে।”(আয়াতঃ ৫০)
§ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنفُسَهُمْ فَهُمْ لَا
يُؤْمِنُونَ - কিন্তু যারা নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করেছে
তারা একথা মানে না।
-
ইমাম আবু জা’ফর তাবারী বলেন, যারা নিজেরা নিজেদের ধ্বংসে
মধ্যে নিক্ষেপ করেছে অর্থঃ যারা দেব দেবী ও প্রতিমাগুলোকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করেছে।
﴿وَلَهُ مَا سَكَنَ فِي اللَّيْلِ
وَالنَّهَارِ ۚ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ﴾
১৩) রাতের
আধাঁরে ও দিনের আলোয় যা কিছু বিরাজমান সবই আল্লাহর এবং তিনি সবকিছু শোনেন ও জানেন।
-
এখানে ‘সাকানা’দ্বারা মানুষের ঘুমকে বুঝানো
হয়েছে। মানুষের ঘুম এক ধরণের মৃত্যু। মানুষ তখন দুনিয়া সম্পর্কে অচেতন হয়ে যায়।
যেহেতু মানুষ আল্লাহর অধিকারভূক্ত, তাই তিনি যখন ইচ্ছা করেন
তখন তাকে চেতনায় ফিরিয়ে আনেন। এটাকে যদি
আমরা ছোট মৃত্যু মনে করি, তাহলে বড় মৃত্যু বা প্রকৃত মৃত্যুর
পরও মানুষ আল্লাহ জিম্মায় থাকবে এবং তিনি যখন ইচ্ছা করবেন, তখন
জীবন দিয়ে কিয়ামতে হিসাব নিকাশের জন্য উপস্থিত করবেন। (তাওযীহুল কুরআন)
﴿قُلْ أَغَيْرَ اللَّهِ أَتَّخِذُ وَلِيًّا
فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ يُطْعِمُ وَلَا يُطْعَمُ ۗ قُلْ إِنِّي
أُمِرْتُ أَنْ أَكُونَ أَوَّلَ مَنْ أَسْلَمَ ۖ وَلَا تَكُونَنَّ مِنَ
الْمُشْرِكِينَ﴾
১৪) বলো, আল্লাহকে বাদ
দিয়ে আমি কি আর কাউকে নিজের অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করবো? সেই আল্লাহকে
বাদ দিয়ে –যিনি পৃথিবী ও আকাশের স্রষ্টা এবং যিনি জীবিকা দান
করেন, জীবিকা গ্রহণ করেন না? বলো, আমাকে হুকুম
দেয়া হয়েছে যেন আমি সবার আগে তাঁর সামনে আনুগ্রত্যের শির নত করি। (আর তাকিদ করা
হয়েছে, কেউ শিরক করলে করুক) কিন্তু তুমি মুশরিকদের অন্তরভুক্ত হয়ো না।
§ قُلْ أَغَيْرَ اللَّهِ أَتَّخِذُ وَلِيًّا
فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ يُطْعِمُ وَلَا يُطْعَمُ - বলো, আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমি কি আর কাউকে
নিজের অভিভাবক হিসাবে গ্রহণ করবো? সেই আল্লাহকে বাদ দিয়ে-যিনি পৃথিবী ও আকাশের স্রষ্টা এবং যিনি জীবিকা দান করেন, জীবিকা গ্রহণ করেন না।
-
সূরা যুমার-এ বলা হয়েছেঃ
﴿قُلْ أَفَغَيْرَ اللَّهِ تَأْمُرُونِّي أَعْبُدُ أَيُّهَا
الْجَاهِلُونَ﴾
(হে নবী,) এদের
বলে দাও, “হে মূর্খেরা, তাহলে তোমরা
আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারো দাসত্ব করতে বলো আমাকে?” (আয়াতঃ
৬৪)
-
এখানে সুক্ষ্ণ পরিহাসের বিষয় হলোঃ
- মুশরিকরা যাদেরকে ইলাহ বানিয়েছে, ওরা নিজেরা তাদের বান্দাদের জীবিকার ব্যবস্থা করেনা। বরং তাদের নিজেদের জীবিকার জন্য তাদের বান্দাদের মুখাপেক্ষী।
- ফেরাউনরা তাদের খোদায়ীর দাপট দেখিয়েছে তাদের বান্দাদের থেকে কর আর নযরানা নিয়ে।
- কবরে শায়িত ব্যক্তি তখনই উপাস্য হবার চমক দেখাতে পারে, যখন পূজারীরা তাদের কবরের উপরে গম্বুজ তৈরী করে।
- কোন মন্দিরে বা পূজা মন্ডপে পূজারীরা মূর্তি বানিয়ে সুসজ্জিত না করা অবধি দেবতার মহিমা বা কর্তৃত্ব ব্যক্ত হবার পথ নেই।
- বিধায়, এসব বানোয়াট ইলাহরা সকলেই তাদের বান্দাদের মুখাপেক্ষী। কেবলমাত্র আল্লাহ আপন শক্তি ও মহিমায় প্রতিষ্ঠিত, কারো মুখাপেক্ষী নন। বরং সবাই তার মুখাপেক্ষী।
عن أبي هريرة رضي الله عنه، قال دعا رجل من الأنصار
من أهل قباء النبي صلى الله عليه وسلم على طعام، فانطلقنا معه، فلما طعم النبي صلى
الله عليه وسلم وغسل يديه، قال" الحمد لله الذي يطعم ولا يطعم، ومن علينا فهدانا
وأطعمنا، وسقانا من الشراب، وكسانا من العري، وكل بلاء حسن أبلانا، الحمد لله غير
مودع ربي ولا مكافئ ولا مكفور، ولا مستغنى عنه، الحمد لله الذي أطعمنا من الطعام،
وسقانا من الشراب، وكسانا من العري، وهدانا من الضلال، وبصرنا من العمى، وفضلنا
على كثير ممن خلق تفضيلاً، الحمد لله رب العالمين
"
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আহলে কুবার একজন
আনসারী নবী সা.কে খাবারের দাওয়াত করলেন। তাঁর সাথে আমরাও গমন করলাম। অতঃপর যখন নবী সা. খাওয়া শেষ করে তার হাত সমূহ ধৌত করলেন। বললেন, সেই আল্লাহর
শুকরিয়া, যিনি খাওয়ান এবং খান না, তিনি
আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করতঃ আমাদেরকে খাওয়ান, পান করান এবং আমাদের
উলংগ দেহে কাপড় পরান। সুতরাং আমরা সেই আল্লাহকে ছাড়তে পারিনা, তাঁর প্রতি অকৃতজ্ঞ হতে পারিনা এবং আমরা
তাঁর থেকে অমুখাপেক্ষীও থাকতে পারিনা। তিনি আমাদেরকে পথভ্রষ্টতা
থেকে বাঁচিয়েছেন, আমাদের অন্তরের
কালিমা দূর করেছেন এবং সমস্ত মাখলুকের উপর আমাদের মর্যাদা দান করেছেন।”
-
আল্লাহ যদি فَاطِرِ হোন এবং এই কথাটা যদি রাসূলকে
ঘোষনা করার জন্য বলেন এবং রাসূল ঘোষনা করেন, তাহলে তা থেকে প্রমাণ হয়ঃ রাসূল فَاطِر বা خالق নন। বরং তিনি مخلوق
-
এখন প্রশ্ন হলো: কোন ধরণের মাখলুক। মানুষ, জ্বীন, ফেরেশতা,
জীন?
-
কুরআনে হাকীম তার জবাব দিচ্ছে: পরের আয়াতে। তথা তিনিও গোলাম ও আনুগত্য করতে হবে।
-
وَلِي ঐ ব্যক্তি, যাকে অভিভাবক
রূপে গ্রহণ করে এবং যাকে প্রতিপালক রূপে স্বীকৃতি দেয়।
§
قُلْ
إِنِّي أُمِرْتُ أَنْ أَكُونَ أَوَّلَ مَنْ أَسْلَمَ ۖ وَلَا تَكُونَنَّ مِنَ
الْمُشْرِكِينَ - বলো, আমাকে হুকুম দেয়া হয়েছে যেন আমি সবার
আগে তাঁর সামনে আনুগ্রত্যের শির নত করি। (আর তাকিদ করা হয়েছে, কেউ শিরক করলে করুক) কিন্তু তুমি মুশরিকদের অন্তরভুক্ত হয়ো
না।
-
তুমি মুশরিকদের দলভূক্ত হয়ো না-কারণ তুমি তোমার রবের নাফরমানী ভয় করো। যা পরের আয়াতে বলা হচ্ছে।
﴿قُلْ إِنِّي أَخَافُ إِنْ عَصَيْتُ رَبِّي
عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ﴾
১৫) যদি আমি
আমার রবের নাফরমানী করি, তাহলে ভয় হয় একটি মহা (ভয়ংকর) দিনে আমাকে শাস্তি ভোগ
করতে হবে।
-
ইমাম আবু জাফর তাবারী বলেন, এখানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা নবী মুহাম্মদ সা.কে উদ্দেশ্য করে বলেন, আল্লাহর সাথে সমকক্ষ
নির্ধারণকারী এ সকল মুশরিক যারা আপনাকে
প্রতিমা পূজার আহবান জানায়, তাদেরকে বলেন দিন, “আমার প্রতিপালক ছাড়া অন্য কিছুর ইবাদত করতে আমাকে
নিষেধ করেছেন এবং এগুলোর ইবাদত করে আমি যদি প্রতিপালকের নিষেধ লংঘন করি, তবে আমি মহাদিন তথা কিয়ামতের দিনের শাস্তির ভয় করি।
-
يَوْمٍ عَظِيمٍ
কিয়ামতের দিবসের প্রচন্ড ভয়াবহতা
ও হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির বিবেচনায় দিনটিকে মহা দিবস বা يَوْمٍ
عَظِيمٍ বলা হয়েছে।
-
সূরা যুমার-৬৫
﴿مَّن يُصْرَفْ عَنْهُ يَوْمَئِذٍ فَقَدْ
رَحِمَهُ ۚ وَذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْمُبِينُ﴾
১৬) সেদিন যে
ব্যক্তি শাস্তি থেকে রেহাই পাবে আল্লাহ তার প্রতি বড়ই অনুগ্রহ করেছেন এবং এটিই
সুস্পষ্ট সাফল্য ।
-
فَمَن زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ
فَازَ- একমাত্র সেই ব্যক্তিই সফলকাম হবে, যে সেখানে জাহান্নামের আগুন থেকে
রক্ষা পাবে এবং যাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। (আলে ইমরানঃ ১৮৫)
-
অর্থাৎ মহাদিনে যাদেরকে নাফরমানীর অপরাধ থেকে মুক্ত
পাওয়া যাবে, তার প্রতি রহম করা হবে। আর এমন ব্যক্তি সফলকাম হিসাবে
বিবেচিত হবে।
﴿وَإِن يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا
كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ ۖ وَإِن يَمْسَسْكَ بِخَيْرٍ فَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ
قَدِيرٌ﴾
১৭) যদি
আল্লাহ তোমার কোন ধরনের ক্ষতি করেন তাহলে তিনি ছাড়া আর কেউ নেই যে তোমাকে ঐ ক্ষতি
থেকে বাঁচাতে পারে। আর যদি তিনি তোমার কোন কল্যাণ করেন, তাহলে তিনি
সবকিছুর ওপর শক্তিশালী।
-
মানে লাভ ক্ষতির মালিক হচ্ছেন আল্লাহ। অকল্যাণ আর
অমঙ্গলকে যদি তিনি থামিয়ে দেন, তাহলে তা কেউ চালু করতে
পারবেনা। পক্ষান্তরে তিনি যদি কল্যাণ ও
মঙ্গলকে চালু করে দেন, তাহলে তাকে কেউ থামাতে
পারবেনা।
-
مَّا يَفْتَحِ اللَّهُ لِلنَّاسِ مِن رَّحْمَةٍ فَلَا
مُمْسِكَ لَهَا ۖ وَمَا يُمْسِكْ فَلَا مُرْسِلَ لَهُ مِن بَعْدِهِ - আল্লাহ যে রহমতের দরজা
মানুষের জন্য খুলে দেন তা রুদ্ধ করার কেউ নেই এবং যা তিনি রুদ্ধ করে দেন তা
আল্লাহর পরে আর কেউ খোলার নেই। (ফাতিরঃ ২)
-
সহীহ হাদীসে রাসূল সা. বলেছেনঃ اللهم لا مانع لما أعطيت، ولا معطي لما منعت، ولا ينفع ذا الجد منك الجد “হে আল্লাহ! তুমি যা দান করো, তা কেউ রোধ করতে পারেনা। আর তুমি যা রোধ করো, তা কেউ দিতে পারে না। আর ধনীদের ধন তোমার আযাব থেকে
বাঁচাতে কোন উপকারে আসবেনা।” (বুখারী)
﴿وَهُوَ الْقَاهِرُ فَوْقَ عِبَادِهِ ۚ
وَهُوَ الْحَكِيمُ الْخَبِيرُ﴾
১৮) তিনি
নিজের বান্দাদের ওপর পূর্ণ ক্ষমতা রাখেন এবং তিনি জ্ঞানী ও সবকিছু জানেন।
-
তিনি সেই আল্লাহ, যার জন্য মানুষের মাথা নুয়ে পড়েছে। তিনি প্রত্যেক জিনিসের
উপর জয়যুক্ত, তাঁর শ্রেষ্টত্ব ও উচ্চ মর্যাদার সামনে সব কিছুই নতি
স্বীকার করেছে।
-
তার সকল কাজ হিকমাতে পরিপূর্ণ। তিনি সকল বস্তুর
অবস্থান সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিফহাল।
-
তিনি কিছু প্রদান করলে, তার প্রাপককেই প্রদান করে থাকেন। কোন কিছু বন্ধ রাখলে যে প্রাপক নয়, তার থেকে বন্ধ রাখেন।
﴿قُلْ أَيُّ شَيْءٍ أَكْبَرُ شَهَادَةً ۖ
قُلِ اللَّهُ ۖ شَهِيدٌ بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ ۚ وَأُوحِيَ إِلَيَّ هَٰذَا
الْقُرْآنُ لِأُنذِرَكُم بِهِ وَمَن بَلَغَ ۚ أَئِنَّكُمْ لَتَشْهَدُونَ أَنَّ
مَعَ اللَّهِ آلِهَةً أُخْرَىٰ ۚ قُل لَّا أَشْهَدُ ۚ قُلْ إِنَّمَا هُوَ إِلَٰهٌ
وَاحِدٌ وَإِنَّنِي بَرِيءٌ مِّمَّا تُشْرِكُونَ﴾
১৯) এদেরকে
জিজ্ঞেস করো, কার সাক্ষ সবচেয়ে বড়?–বলো, আল্লাহ আমার
ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী। আর এ কুরআন আমার কাছে পাঠানো হয়েছে অহীর মাধ্যমে, যাতে তোমাদের
এবং আর যার যার কাছে এটি পৌঁছে যায় তাদের সবাইকে আমি সতর্ক করি। সত্যিই কি তোমরা
এমন সাক্ষ দিতে সক্ষম যে, আল্লাহর সাথে আরো ইলাহও আছে? বলে দাও, আমি তো কখনোই
এমন সাক্ষ দিতে পারি না। বলো, আল্লাহ তো একজনই এবং তোমরা যে শিরকে লিপ্ত রয়েছো আমি
তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।
§ قُلْ أَيُّ شَيْءٍ أَكْبَرُ شَهَادَةً-
এদেরকে জিজ্ঞেস করো, কার সাক্ষ সবচেয়ে বড় ?
অর্থাৎ হে মুহাম্মদ তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, কার সাক্ষ্য সবচেয়ে বেশী গন্য?
§
قُلِ
اللَّهُ ۖ شَهِيدٌ بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ – বলো, আল্লাহ
আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী।
-
অর্থাৎ
রাসূল আল্লাহর পক্ষ থেকে নিযুক্ত এবং তিনি যা কিছু
বলছেন, তা আল্লাহর নির্দেশে বলছেন।
আল্লাহ তার একত্ববাদ ও রুবুবিয়াতের সবচেয়ে বড় সাক্ষী। তার চেয়ে বড় সাক্ষী আর নাই।
-
قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ
جَمِيعًا- হে মুহাম্মাদ ! বলে দাও ,হে মানব সম্প্রদায়, আমি তোমাদের জন্য সেই আল্লাহর রসূল হিসেবে এসেছি। (আল আরাফ: ১৫৮)
§
وَأُوحِيَ
إِلَيَّ هَٰذَا الْقُرْآنُ لِأُنذِرَكُم بِهِ وَمَن بَلَغَ - আর এ কুরআন আমার কাছে পাঠানো
হয়েছে অহীর মাধ্যমে, যাতে তোমাদের এবং আর যার যার
কাছে এটি পৌঁছে যায় তাদের সবাইকে আমি সতর্ক করি।
-
وَمَن يَكْفُرْ بِهِ مِنَ ٱلأَحْزَابِ فَٱلنَّارُ
مَوْعِدُهُ - আর মানব গোষ্ঠীর মধ্য থেকে যে-ই একে অস্বীকার করে তার জন্য যে জায়গার ওয়াদা
করা হয়েছে তা হচ্ছে দোযখ। (হুদঃ ১৭)
-
من بلغه القرآن، فكأنما رأى النبي صلى الله عليه وسلم – যার কাছে কুরআন পৌছে গেল, তার কাছে যেন আমি স্বয়ং তাবলিগ করলাম। (আল হাদীস)
-
بلغوا عن الله، فمن بلغته آية من كتاب الله، فقد بلغه أمر
الله – আল্লাহর আয়াত গুলো পৌছে দাও। কিতাবুল্লাহর আয়াত গুলো যার কাছে পৌছালো, তার কাছে আল্লাহর হুকুম পৌছে গেল। (আল হাদীস)
-
রবি ইবনে আনাস রা. বলেন, এখন যার কাছেই এই কুরআন পৌছে যাবে,
সে যদি রাসূল সা. এর সত্য অনুসারী হয়, তবে তার কর্তব্য হলো, সেও লোকদেরকে আল্লাহর দিকে আহবান
জানাবে-যেভাবে রাসূল সা. আহবান জানিয়েছেন। এবং ঐভাবে সতর্ক করবে, যেমন রাসূল
সা. সতর্ক করেছেন।
§ ۚ أَئِنَّكُمْ لَتَشْهَدُونَ أَنَّ مَعَ
اللَّهِ آلِهَةً أُخْرَىٰ– সত্যিই কি তোমরা এমন সাক্ষ দিতে সক্ষম যে, আল্লাহর সাথে আরো ইলাহও আছে।
-
এই প্রশ্ন দ্বারা এটা বুঝানো হচ্ছে যে, সত্যিকার ভাবে নির্ভূল ভাবে তোমরা কি
জানো যে, এ বিশাল সৃষ্টিজগতে আল্লাহ ছাড়া দ্বিতীয় কোন সার্বভৌম
ক্ষমতা সম্পন্ন রব আছে-যে বেন্দেগীর যোগ্য। উল্লেখ্য যে, এ সাক্ষ্য
কেবল দিতে কেবল আন্দাজ অনুমান যথেষ্ট নয়। বরং প্রত্যক্ষ ও সুনিশ্চিত
জ্ঞান থাকতে হবে। নিশ্চিত জ্ঞানের ভিত্তিতে বলতে হবে।
-
فَإِن شَهِدُوا فَلَا تَشْهَدْ مَعَهُمْ - তারপর যদি তারা সাক্ষ
দিয়ে দেয় তাহলে তুমি তাদের সাথে সাক্ষ দিয়ো না। (আল আনআমঃ ১৫০)
§
قُل
لَّا أَشْهَدُ – বলে দাও, আমি তো কখনো এমন সাক্ষ্য দিতে পারিনা।
-
তোমরা নির্ভূল ও নিশ্চিত জ্ঞান ছাড়া মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে
চাইলে দিতে পারো। কিন্তু আমি এই ধরণের সাক্ষ্য দিতে পারিনা।
§
قُلْ
إِنَّمَا هُوَ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ وَإِنَّنِي بَرِيءٌ مِّمَّا تُشْرِكُونَ - বলো, আল্লাহ তো একজনই এবং তোমরা যে শিরকে লিপ্ত রয়েছো আমি তা
থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।
﴿الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ
يَعْرِفُونَهُ كَمَا يَعْرِفُونَ أَبْنَاءَهُمُ ۘ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنفُسَهُمْ
فَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ﴾
২০) যাদেরকে
আমি কিতাব দিয়েছে তারা এ বিষয়টি এমন সন্দেহাতীতভাবে চেনে যেমন নিজেদের সন্তানদেরকে
চেনার ব্যাপারে তারা সন্দেহের শিকার হয় না। কিন্তু যারা
নিজেরাই নিজেদেরকে ক্ষতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে তারা একথা মানে না।
§ الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ - যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছে।
-
অর্থাৎ যারা তাওরাত ও ইঞ্জিল পেয়েছে, তারা জানে আল্লাহই একমাত্র ইলাহ,
মুহাম্মদ প্রেরিত রাসূল। যেমন চিনে তাদের সন্তানদেরকে।
-
যারা আসমানী কিতাব সমূহের জ্ঞান রাখে, তারা সন্দেহাতীত ভাবে এই সত্য জানে এবং
উপলব্দি করে যে, আল্লাহ একক সত্ত্বা এবং তার সাথে কেউ শরীক নাই। আর তা এই ভাবে জানে, যেমন ছেলেদের
ভীড়ের মধ্যে দাড়িয়ে থাকা নিজের ছেলেকে চিনে।
§ الَّذِينَ – মানেঃ
-
মানেঃ
১. أنه التوراة والإِنجيل অর্থাৎ ইহুদী ও নাসারা তথা তাওরাত ও ইঞ্জিলের অনুসারী
আহলে কিতাব।
২. أنه القرآن – কুরআনঃ যা রাসূল মুহাম্মদ এবং তার আনীত আদর্শের
সুস্পষ্ট প্রমান দিচ্ছে।
§ يَعْرِفُونَهُ كَمَا يَعْرِفُونَ
أَبْنَاءَهُمُ - তারা এ বিষয়টি এমন সন্দেহাতীতভাবে চেনে যেমন নিজেদের
সন্তানদেরকে চেনার ব্যাপারে তারা সন্দেহের শিকার হয় না।
§ يعرفون তিনটি জিনিস হতে পারে।
১. মুহাম্মদ সা.
২. দ্বীন ইসলাম।
৩. কুরআন
-
ইহুদী ও খৃষ্টানরা মুহাম্মদ সা.কে এমন ভাবে চিনে, যেমন করে তারা তাদের সন্তানদের চিনে।
কারণঃ তাওরাত ও ইঞ্জিলে মুহাম্মদ সা. এর দৈহিক আকৃতি, জন্মভূমি,
হিজরত ভূমি, অভ্যাস, চরিত্র
ও কীর্তি সমূহ স্ববিস্তারে বর্ণিত হয়েছে।
এমন কি সাহাবায়ে কিরামদেরও আলোচনা তাওরাতে বর্ণনা করা হয়েছে।
§ কেন বলা হলো নাঃ যেমন সন্তানরা পিতামাতাকে চিনে- كَمَا
يَعْرِفُونَ أَبَاءَهُمُ
কারণ,
-
সন্তানের দেহের প্রত্যেকেটি অংশ পিতামাতার দৃষ্টিতে
থাকে-পিতামাতার দেহের প্রত্যেকটি অংশ সন্তানের দৃষ্টিতে থাকে না।
-
সন্তান শৈশব থেকে যৌবন পর্যন্ত পিতামাতার ক্রোড়ে
লালিত-পালিত হয়। বিধায় তাদের রুচি, চাহিদা, অভ্যাস সবই পিতামাতা জানতে
পারে। যা পিতামাতার ক্ষেত্রে সন্তান জানার সুযোগ থাকে না।
قال
عمر لعبد الله بن سلام: إن الله تعالى أنزل على نبيّه صلى الله عليه وسلم أن أهل
الكتاب يعرفونه كما يعرفون أبناءهم كيف هذه المعرفة قال عبد الله بن سلام: نعرف
نبيّ الله بالنعت الذي نعته الله إذا رأيناه فيكم كما يعرف أخدنا ابنه إذا رآه بين
الغلمان وأيم الله الذي يحلف به ابن سلام لإنه بمحمد أشدُّ معرفة مني بابني فقال
له: كيف قال عبد الله: عرفته بما نعته الله لنا في كتابنا فاشهد أنه هو فأما ابني
فإني لا أدري ما أحدثت أمَّه فقال قد وفقت وصدقت وأصبت.
عن
عمر بن الخطاب أنه قال لعبد الله بن سلام: إن الله قد أنزل على نبيه بمكة{ الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ
يَعْرِفُونَهُ كَمَا يَعْرِفُونَ أَبْنَاءَهُمُ } فكيف هذه المعرفة؟ فقال: لقد عرفته حين رأيته كما أعرف ابني،
ولأَنَا أشد معرفة بمحمد صلى الله عليه وسلم مني بابني، فقال عمر: وكيف ذاك؟ فقال:
إني أشهد أنه رسول الله حقا ولا أدري ما يصنع النساء.
-
আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রা. (যিনি পূর্বে ইহুদী ছিলেন)। হযরত উমর রা. তাকে একবার প্রশ্ন করেন, আল্লাহ বলেছেনঃ يَعْرِفُونَهُ كَمَا يَعْرِفُونَ أَبْنَاءَهُمُ এটা বলার কারণ কি?
উত্তরে আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রা. বলেন, হ্যাঁ আমরা রাসূল সা.কে আল্লাহ তায়ালার বর্ণিত গুনাবলী
দ্বারাই চিনি যা তাওরাতে বর্ণিত হয়েছে। কাজেই আমাদের এই জ্ঞান অকাট্য ও সুনিশ্চিত।
নিজ সন্তানরা এরূপ নয় তাদের পরিচয় সন্দেহ হতে পারে যে, আমাদের
সন্তান কি না?
হযরত যায়েদ ইবনে সানা রা. আহলে কিতাবের একজন ছিলেন। তিনি তাওরাত ও ইঞ্জিলের
বর্ণনার মাধ্যমে রাসূর সা.কে চিনেছিলেন। শুধু মাত্র একটি গুণের সত্যতা তিনি পূর্বে
জানতে পারেননি। পরীক্ষার পর তাও জানতে পারেন। তা হলো এই যে, তাঁর সহনশীলতা ক্রোধের উপর প্রবল
হবে। রাসূলুল্লাহ সা. এর কাছে পৌছে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এ গুণটিও তাঁর মধ্যে
পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান দেখতে পান। তারপর কাল বিলম্ব না করে তিনি মুসলমান হয়ে যান।
§ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنفُسَهُمْ فَهُمْ لَا
يُؤْمِنُونَ - কিন্তু যারা নিজেরাই নিজেদেরকে ক্ষতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে তারা
একথা মানে না।
-
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. ৯৬ লাইনের একটি কবিতার শেষ দুই লাইনে
লিখেছেন:
فَإِنْ كُنْتَ لاَ تَدْرِىْ فَتِلْكَ مُصِيْبَةٌ
*** وَإِنْ كُنْتَ تَدْرِىْ فَالْمُصِيْبَةَ أَعْظَمٌ
“যদি তোমার না জানা থাকে তবে এটা মুসিবত-কিন্তু যদি জানা থাকে তাহলে তো
মুসিবত আরো বড়।“
শিক্ষাঃ
১. আল্লাহর বিধান অস্বীকার করার পরিণাম
ভয়াবহ-পৃথিবী ঘুরলে তা দেখা যায়।
২. সারা দুনিয়ায় আল্লাহর সার্বভৌমত্ব বিরাজমান-আল্লাহ শাস্তি দেন না তার দয়ার কারণে।
৩. আমাদের রিজিকদাতা আল্লাহ-আমাদেরকে বর মানতে হবে
এমন এক সত্তাকে, যাকে আমরা রিযিক দিতে হয় না।
৪. ক্ষমা করা বা শাস্তি দেয়া-আল্লাহর এখতিয়ারের বিষয়।
এতে হস্তক্ষেপ করার কেউ নেই।
0 Comments