তেলাওয়াত
ও তরজমাঃ
﴿عَفَا اللَّهُ عَنكَ
لِمَ أَذِنتَ لَهُمْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكَ الَّذِينَ صَدَقُوا وَتَعْلَمَ
الْكَاذِبِينَ﴾
৪৩। হে নবী!
আল্লাহ তোমাকে মাফ করুন, তুমি তাদের অব্যাহতি দিলে কেন?
(তোমরা নিজের তাদের অব্যাহতি না দেয়া উচিত ছিল) এভাবে তুমি জানতে
পারতে কারা সত্যবাদী এবং কারা মিথ্যুক।
﴿لَا يَسْتَأْذِنُكَ
الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَن يُجَاهِدُوا
بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِالْمُتَّقِينَ﴾
৪৪। যারা
আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, তারা কখনো তোমার
কাছে তাদের ধনও প্রাণ দিয়ে জিহাদ করা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য আবেদন জানাবে না। আল্লাহ
মুত্তাকীদের খুব ভাল করে জানেন।
﴿إِنَّمَا يَسْتَأْذِنُكَ
الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَارْتَابَتْ قُلُوبُهُمْ
فَهُمْ فِي رَيْبِهِمْ يَتَرَدَّدُونَ﴾
৪৫। এমন
আবেদন তো একমাত্র তারাই করে, যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের
প্রতি ঈমান রাখে না, যাদের মনে রয়েছে সন্দেহ এবং এ
সন্দেহের দোলায় তারা দোদুল্যমান।
﴿وَلَوْ أَرَادُوا
الْخُرُوجَ لَأَعَدُّوا لَهُ عُدَّةً وَلَٰكِن كَرِهَ اللَّهُ انبِعَاثَهُمْ
فَثَبَّطَهُمْ وَقِيلَ اقْعُدُوا مَعَ الْقَاعِدِينَ﴾
৪৬। যদি
সত্যি সত্যিই তাদের বের হবার ইচ্ছা থাকতো তাহলে তারা সে জন্য কিছু প্রস্তুতি
গ্রহণ করতো। কিন্তু তাদের
অংশগ্রহণ আল্লাহ কাছে পছন্দনীয় ছিল না। তাই তিনি
তাদের শিথিল করে দিলেন এবং বলে দেয়া হলোঃ বসে থাকো, যারা
বসে আছে তাদের সাথে।
﴿لَوْ خَرَجُوا فِيكُم
مَّا زَادُوكُمْ إِلَّا خَبَالًا وَلَأَوْضَعُوا خِلَالَكُمْ يَبْغُونَكُمُ
الْفِتْنَةَ وَفِيكُمْ سَمَّاعُونَ لَهُمْ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِالظَّالِمِينَ﴾
৪৭। যদি তারা
তোমাদের সাথে বের হতো তাহলে তোমাদের মধ্যে অনিষ্ট ছাড়া আর কিছুই বাড়াতো না। তারা
ফিতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদের মধ্যে প্রচেষ্টা চালাতো। আর
তোমাদের লোকদের অবস্থা হচ্ছে, তাদের মধ্যে এখনো এমন
লোক আছে যারা তাদের কথা আড়ি পেতে শোনে। আল্লাহ এ
জালেমদের খুব ভাল করেই চেনেন।
﴿لَقَدِ ابْتَغَوُا
الْفِتْنَةَ مِن قَبْلُ وَقَلَّبُوا لَكَ الْأُمُورَ حَتَّىٰ جَاءَ الْحَقُّ
وَظَهَرَ أَمْرُ اللَّهِ وَهُمْ كَارِهُونَ﴾
৪৮। এর আগেও
এরা ফিতনা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে এবং তোমাদের ব্যর্থ করার জন্য ঘুরিয়ে ফিরিয়ে
বিভিন্ন ধরনের কৌশল খাটিয়েছে। এ সত্ত্বেও শেষ
পর্যন্ত তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সত্য এসে গেছে এবং আল্লাহ উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।
﴿وَمِنْهُم مَّن يَقُولُ
ائْذَن لِّي وَلَا تَفْتِنِّي ۚ أَلَا فِي الْفِتْنَةِ سَقَطُوا ۗ وَإِنَّ
جَهَنَّمَ لَمُحِيطَةٌ بِالْكَافِرِينَ﴾
৪৯। তাদের
মধ্যে এমন লোকও আছে, যে বলে আমাকে অব্যাহতি দিন এবং
আমাকে পাপের ঝুঁকির মধ্যে ফেলবেন না। শুনে
রাখো, এরা তো ঝুঁকির মধ্যেই পড়ে আছে এবং জাহান্নাম এ কাফেরদের ঘিরে রেখেছে।
﴿إِن تُصِبْكَ حَسَنَةٌ
تَسُؤْهُمْ ۖ وَإِن تُصِبْكَ مُصِيبَةٌ يَقُولُوا قَدْ أَخَذْنَا أَمْرَنَا مِن
قَبْلُ وَيَتَوَلَّوا وَّهُمْ فَرِحُونَ﴾
৫০। তোমরা
ভাল কিছু হলে তা তাদের কষ্ট দেয় এবং তোমার ওপর কোন বিপদ এলে তারা খুশী মনে সরে
পড়ে এবং বলতে থাকে, “ভালই হয়েছে, আমরা
আগে ভাগেই আমাদের ব্যাপার সেরে নিয়েছি”।
﴿قُل لَّن يُصِيبَنَا
إِلَّا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَنَا هُوَ مَوْلَانَا ۚ وَعَلَى اللَّهِ
فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ﴾
৫১। তাদের
বলে দাও, “আল্লাহ আমাদের জন্য যা লিখে দিয়েছেন, তা ছাড়া আর কোন (ভাল বা মন্দ) কিছুই আমাদের হয় না। আল্লাহই
আমাদের অভিভাবক ও কার্যনির্বাহক এবং ঈমানদরদের তাঁর ওপরই ভরসা করা উচিত”।
﴿قُلْ هَلْ تَرَبَّصُونَ
بِنَا إِلَّا إِحْدَى الْحُسْنَيَيْنِ ۖ وَنَحْنُ نَتَرَبَّصُ بِكُمْ أَن
يُصِيبَكُمُ اللَّهُ بِعَذَابٍ مِّنْ عِندِهِ أَوْ بِأَيْدِينَا ۖ فَتَرَبَّصُوا
إِنَّا مَعَكُم مُّتَرَبِّصُونَ﴾
৫২। তাদের
বলে দাও, “তোমরা আমাদের ব্যাপারে যে জিনিসের অপেক্ষায় আছো
তা দুটি ভালর একটি ছাড়া আর কি? অন্যদিকে আমরা তোমাদের
ব্যাপারে যে জিনিসের অপেক্ষায় আছি তা হচ্চে এই যে আল্লাহ হয় নিজেই তোমাদের শাস্তি
দেবেন, না হয় আমাদের হাত দিয়ে দেয়াবেন? তাহলে এখন তোমরা অপেক্ষা করোএবং আমরা ও তোমাদের সাথে অপেক্ষায় থাকছি”।
﴿قُلْ أَنفِقُوا طَوْعًا
أَوْ كَرْهًا لَّن يُتَقَبَّلَ مِنكُمْ ۖ إِنَّكُمْ كُنتُمْ قَوْمًا فَاسِقِينَ﴾
৫৩। তাদের
বলে দাও, “তোমরা নিজেদের ধন-সম্পদ স্বেচ্ছায় ও সানন্দে ব্যয়
কর অথবা অনিচ্ছাকৃতভাবে ব্যয় কর, তা গৃহীত হবে না। কারণ
তোমরা ফাসেক গোষ্ঠী”।
﴿وَمَا مَنَعَهُمْ أَن
تُقْبَلَ مِنْهُمْ نَفَقَاتُهُمْ إِلَّا أَنَّهُمْ كَفَرُوا بِاللَّهِ
وَبِرَسُولِهِ وَلَا يَأْتُونَ الصَّلَاةَ إِلَّا وَهُمْ كُسَالَىٰ وَلَا
يُنفِقُونَ إِلَّا وَهُمْ كَارِهُونَ﴾
৫৪। তাদের
দেয়া সম্পদ গৃহীত না হবার এ ছাড়া আর কোন কারন নেই যে, তারা
আল্লাহ ও তার রসূলের সাথে কুফরী করেছে, নামাযের জন্য যখ
ন আসে আড়মোড় ভাংতে ভাংতে আসে এবং আল্লাহর পথে খরচ করলে তা করে অনিচ্ছাকৃতভাবে।
﴿فَلَا تُعْجِبْكَ
أَمْوَالُهُمْ وَلَا أَوْلَادُهُمْ ۚ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُعَذِّبَهُم
بِهَا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَتَزْهَقَ أَنفُسُهُمْ وَهُمْ كَافِرُونَ﴾
৫৫। তাদের
ধন-দৌলত ও সন্তানের আধিক্য দেখে তোমরা প্রতারিত হয়ো না। আল্লাহ
চান, এ জিনিসগুলোর মাধ্যমে দুনিয়ার জীবনে তাদের শাস্তি
দিতে। আর
তারা যদি প্রাণও দিয়ে দেয়, তাহলে তখন তারা থাকবে সত্য
অস্বীকার করার অবস্থায়।
﴿وَيَحْلِفُونَ بِاللَّهِ
إِنَّهُمْ لَمِنكُمْ وَمَا هُم مِّنكُمْ وَلَٰكِنَّهُمْ قَوْمٌ يَفْرَقُونَ﴾
৫৬। তারা
আল্লাহর কসম খেয়ে খেয়ে বলে, আমরা তোমাদেরই লোক। অথচ তারা
মোটেই তোমাদের অন্তরভুক্ত নয়। আসলে তারা এমন একদল
লোক যারা তোমাদের ভয় করে।
﴿لَوْ يَجِدُونَ مَلْجَأً
أَوْ مَغَارَاتٍ أَوْ مُدَّخَلًا لَّوَلَّوْا إِلَيْهِ وَهُمْ يَجْمَحُونَ﴾
৫৭। যদি তারা
কোন আশ্রয় পেয়ে যায় অথবা কোন গিরি-গুহা কিংবা ভিতরে প্রবেশ করার মত কোন জায়গা, তাহলে দৌড়ে গিয়ে সেখানে লুকিয়ে থাকবে।
﴿وَمِنْهُم مَّن
يَلْمِزُكَ فِي الصَّدَقَاتِ فَإِنْ أُعْطُوا مِنْهَا رَضُوا وَإِن لَّمْ
يُعْطَوْا مِنْهَا إِذَا هُمْ يَسْخَطُونَ﴾
৫৮। হে নবী!
তাদের কেউ কেউ সাদকাহ বন্টনের ব্যাপারে তোমার বিরুদ্ধে আপত্তি জানাচ্ছে। এ সম্পদ
থেকে যদি তাদের কিছু দেয়া হয় তাহলে তারা খুশী হয়ে যায়, আর
না দেয়া হলে বিগড়ে যেতে থাকে।
﴿وَلَوْ أَنَّهُمْ رَضُوا
مَا آتَاهُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَقَالُوا حَسْبُنَا اللَّهُ سَيُؤْتِينَا
اللَّهُ مِن فَضْلِهِ وَرَسُولُهُ إِنَّا إِلَى اللَّهِ رَاغِبُونَ﴾
৫৯। কতই না
ভাল হতো, আল্লাহ ও তার রসূল যা কিছুই তাদের দিয়েছিলেন
তাতে যদি তারা সন্তুষ্ট থাকতো। এবং বলতো, “আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ঠ। তিনি
নিজের অনুগ্রহ থেকে আমাদের আরো অনেক কিছু দেবেন এবং তাঁর রসূলও আমাদের প্রতি
অনুগ্রহ করবেন। আমরা আল্লাহরই প্রতি
দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রেখেছি”।
ব্যাখ্যাঃ
﴿عَفَا اللَّهُ عَنكَ
لِمَ أَذِنتَ لَهُمْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكَ الَّذِينَ صَدَقُوا وَتَعْلَمَ
الْكَاذِبِينَ﴾
৪৩। হে নবী! আল্লাহ তোমাকে মাফ করুন, তুমি তাদের অব্যাহতি দিলে কেন? (তোমরা
নিজের তাদের অব্যাহতি না দেয়া উচিত ছিল) এভাবে তুমি জানতে পারতে কারা সত্যবাদী এবং
কারা মিথ্যুক।
û তাফহীমুল কুরআনে এই আয়াত নাযিলের
প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে বলা হয়েছেঃ
-
নবী সা. এর স্বাভাবে ছিল কোমলতা ও উদারতা।
-
যে সব মুনাফিক বানোয়াট ওযর উপস্থাপন করে যুদ্ধে যাওয়া থেকে ছুটি চেয়েছিল, নবী সা. জানতের যে তারা ভাওতাবাজি করছে। তারপরও তিনি তাদেরকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন।
-
রাসূলের এই অব্যাহতি প্রদান আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তায়ালার ভাল লাগেনি।
-
তাই আল্লাহ তার রাসূলকে সতর্ক করে দিলেন যে, এই ধরণের উদারনীতি ঠিক নয়।
-
রাসূল সা. এই অব্যাহতি মুনাফিকদের সুযোগ করে দিল তাদের মুনাফীকি ও প্রতারণামূলক কাজকে গোপন করার।
-
যদি রাসূল অব্যাহতি না দিতেন, আর তারা যদি যুদ্ধে না গিয়ে ঘরে বসে থাকতো। এতে করে তারা যে ঈমানের মিথ্যা দাবী করছে,
তা মানুষের সামনে প্রকাশ হয়ে পড়তো।
û তাফসীরে ইবনে কাসীর এ ইবনে আবি হাতিম রাহি. এর বর্ণনা করা একটি হাদীস উল্লেখ করে এটাকে “উত্তম তিরস্কার”
বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
قال
ابن أبي حاتم حدثنا أبي، حدثنا أبو حصين بن سليمان الرازي، حدثنا سفيان بن عيينة
عن مسعر عن عون قال هل سمعتم بمعاتبة أحسن من هذا؟ نداء بالعفو قبل المعاتبة فقال﴿عَفَا ٱللَّهُ عَنكَ لِمَ أَذِنتَ لَهُمْ﴾
ইবনে আবি হাতিম রাহি. বর্ণনা করেছেন যে, আউন রা. স্বীয় সাথীদেরকে জিজ্ঞেস করেন, আপনারা কি এর চেয়ে উত্তম
তিরস্কারের কথা শুনেছেন? মহান আল্লাহ স্বীয় রাসূল সা.কে তিরস্কারপূর্ণ করা বলার পূর্বেই তাঁকে ক্ষমা করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেনঃ “(হে নবী!)
আল্লাহ আপনাকে মাফ করে দিয়েছেন বটে, কিন্তু কেন
আপনি তাদেরকে যুদ্ধ হতে অব্যাহতির অনুমতি দিয়েছো?”
û ইবনে জারীর রাহি. বলেছেনঃ আল্লাহর
পক্ষ থেকে পূর্বের কোন নির্দেশ ছাড়া নবী সা, দু’টি কাজ করেছেন। ১. মুনাফিকদের যুদ্ধ হতে অব্যাহতি। আর ২. বদরের বন্দীদের নিকট থেকে ফিদিয়া গ্রহণ।
û রাসূল কি কাউকে জিহাদ থেকে
অব্যাহতি দিতে পারবেন?
এই ঘটনার পর সূরা নূরের আয়াত
নাযিল করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা তার রাসূলকে সেই অবকাশ প্রদান করেনঃ
﴿فَإِذَا
ٱسْتَـئْذَنُوكَ لِبَعْضِ شَأْنِهِمْ فَأْذَن لِّمَن شِئْتَ مِنْهُمْ﴾
“তাদের কেউ যদি কোন কাজ বা ব্যস্ততার কারণে
তোমার কাছে যুদ্ধের অব্যাহতির অনুমতি প্রার্থনা করে, তবে তুমি তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা
অনুমতি দিতে পারো।” (সূরা আন নূরঃ ৬২)
﴿لَا يَسْتَأْذِنُكَ
الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَن يُجَاهِدُوا
بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِالْمُتَّقِينَ﴾
৪৪। যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, তারা
কখনো তোমার কাছে তাদের ধনও প্রাণ দিয়ে জিহাদ করা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য
আবেদন জানাবে না। আল্লাহ মুত্তাকীদের খুব ভাল করে জানেন।
û তাফসীরে ইবনে কাসীরঃ
-
যারা খাটি ঈমানদার, তারা তোমার কাছে
যুদ্ধ থেকে অব্যাহতি লাভের অনুমতি চাইবে না।
-
কেননা, তারা তো জিহাদকে আল্লাহর নৈকট্য
লাভের উপায় মনে করে।
-
আর সেজন্য তারা সব সময় নিজেদের জান ও মালকে আল্লাহর পথে উৎসর্গ করার আকাংখা নিয়ে
বসে থাকে। আর আল্লাহ তায়ালা কে তাকে ভয় করে, সে সম্পর্কে ভালভাবে অবগত।
﴿إِنَّمَا يَسْتَأْذِنُكَ
الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَارْتَابَتْ
قُلُوبُهُمْ فَهُمْ فِي رَيْبِهِمْ يَتَرَدَّدُونَ﴾
৪৫। এমন আবেদন তো একমাত্র তারাই করে, যারা আল্লাহ
ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে না, যাদের মনে রয়েছে
সন্দেহ এবং এ সন্দেহের দোলায় তারা দোদুল্যমান।
û তাফসীরে ইবনে কাসীরঃ
-
জিহাদ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য যারা অনুমতি চায়, অথচ তাদের কোন শরয়ী ওজর নাই, তারা বেঈমান
লোক-তারা না আনে ঈমান আল্লাহর প্রতি, না
আনে ঈমান আখেরাতের দিনের প্রতি।
-
এরা আখেরাতে পুরস্কারের আশা রাখে না। এদের পরিচয় হলোঃ এদের মূলতঃ
রাসূল সা. যে শরীয়াতের ধারক, তার
প্রতি এখনো সন্দিহান।
-
তারা এখনো উদ্বিগ্ন। তারা এখনো সামনে এক পা দিলেও আরেক পা পিছনে নেয়। তাদের মাঝে না আছে ধৈর্য, না আছে তাদের
মনে স্থিরতা। তারা না এদিকে, না ওদিকে।
û তাফহীমুল কুরআনে এই আয়াত সম্পর্কে
বলা হয়েছেঃ
-
ইসলাম আর কুফুরীর দ্বন্ধ একটি মাপকাটি।
-
এই মাপকটি দিয়ে কে আসল মুমিন আর কে নকল মুমিন তা পার্থক্য করা যায়।
-
ইসলাম আর কুফুরের মাঝে যখন দ্বন্ধ হবে,
তখন নিজের সকল শক্তি ও সামর্থ দিয়ে ইসলামকে বিজয়ী করার কাজ করবে, সেই সত্যিকার মুমিন।
-
ইসলাম আর কুফুরের মাঝে যখন দ্বন্ধ হবে, তখন ইসলামের সহযোগিতায় যারা ইতস্তত করে, জান মাল কুরবানী দিতে হয় কুন্ঠিত, তারা নকল মুমিন-এদের অন্তরে ঈমান নেই।
﴿وَلَوْ أَرَادُوا
الْخُرُوجَ لَأَعَدُّوا لَهُ عُدَّةً وَلَٰكِن كَرِهَ اللَّهُ انبِعَاثَهُمْ
فَثَبَّطَهُمْ وَقِيلَ اقْعُدُوا مَعَ الْقَاعِدِينَ﴾
৪৬। যদি সত্যি সত্যিই তাদের বের হবার ইচ্ছা থাকতো তাহলে তারা সে জন্য কিছু
প্রস্তুতি গ্রহণ করতো। কিন্তু তাদের অংশগ্রহণ আল্লাহ কাছে পছন্দনীয় ছিল না। তাই তিনি তাদের শিথিল করে দিলেন এবং বলে দেয়া হলোঃ বসে
থাকো, যারা বসে আছে তাদের সাথে।
﴿وَلَوْ أَرَادُوا الْخُرُوجَ لَأَعَدُّوا لَهُ عُدَّةً وَلَٰكِن
كَرِهَ اللَّهُ﴾
যদি সত্যি সত্যিই তাদের বের
হবার ইচ্ছা থাকতো তাহলে তারা সে জন্য কিছু প্রস্তুতি গ্রহণ করতো। কিন্তু
তাদের অংশগ্রহণ আল্লাহ কাছে পছন্দনীয় ছিল না।
û তাফহীমুল কুরআনে এই আয়াত সম্পর্কে
বলা হয়েছেঃ
-
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার পছন্দনীয় ছিল না যে,
যাদের মনের তাগিদ নাই-তারা যুদ্ধে অংশ নেবে।
-
তাদের মধ্যেঃ
*
জিহাদের প্রেরণা ছিল না।
*
জিহাদের সংকল্প ছিলনা।
*
শাহাদাতের তামান্না ছিলান।
-
তারা যুদ্ধে অংশ নিয়েছে মুসলমানদের সামনে লজ্জিত হবে এই ভয়ে,
অসন্তুষ্ট চিত্তে।
-
তাদের কর্তৃক কোন ধরণের খারাপ কিছু ঘটানোর আশংকা ছিল।
-
যদি তারা এমন কিছু ঘটাতো তাহলে মুসলিম বাহিনী বিরাট ক্ষতির মুখে পড়তো।
﴿انبِعَاثَهُمْ فَثَبَّطَهُمْ وَقِيلَ اقْعُدُوا مَعَ الْقَاعِدِينَ﴾
তাই তিনি তাদের শিথিল করে
দিলেন এবং বলে দেয়া হলোঃ বসে থাকো, যারা বসে আছে তাদের সাথে।
û তাফসীরে ইবনে কাসীরঃ
-
মুনাফিকদের যদি যুদ্ধে যাওয়ার ইচ্ছা থাকতো, তাহলে তারা নূন্যতম প্রস্তুতি গ্রহণ করতো।
-
যুদ্ধ গমনের ঘোষনার পর তাদের মাঝে এধরণের
তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়নি।
-
আল্লাহরও পছন্দ ছিলনা যে, তারা মুমিনদের সাথে যুদ্ধে যাক, তাই তাদেরকে পিছনে সরিয়ে রেখেছেন।
-
স্বাভাবিক ভাবে তাদেরকে বলে দেয়া হয়েছে যে, যুদ্ধ থেকে যা দূরে অবস্থান করছে, তাদের সাথে তোমরাও অবস্থান কর।
﴿لَوْ خَرَجُوا فِيكُم
مَّا زَادُوكُمْ إِلَّا خَبَالًا وَلَأَوْضَعُوا خِلَالَكُمْ يَبْغُونَكُمُ
الْفِتْنَةَ وَفِيكُمْ سَمَّاعُونَ لَهُمْ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِالظَّالِمِينَ﴾
৪৭। যদি তারা তোমাদের সাথে বের হতো তাহলে তোমাদের মধ্যে অনিষ্ট ছাড়া আর
কিছুই বাড়াতো না। তারা ফিতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদের মধ্যে প্রচেষ্টা চালাতো। আর তোমাদের লোকদের অবস্থা হচ্ছে, তাদের মধ্যে এখনো এমন লোক আছে যারা তাদের কথা আড়ি পেতে শোনে। আল্লাহ এ জালেমদের খুব ভাল করেই চেনেন।
﴿لَوْ خَرَجُوا فِيكُم مَّا زَادُوكُمْ إِلَّا خَبَالًا
وَلَأَوْضَعُوا خِلَالَكُمْ يَبْغُونَكُمُ الْفِتْنَةَ﴾
যদি তারা তোমাদের সাথে বের
হতো তাহলে তোমাদের মধ্যে অনিষ্ট ছাড়া আর কিছুই বাড়াতো না। তারা
ফিতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদের মধ্যে প্রচেষ্টা চালাতো।
û তাফসীরে ইবনে কাসীরঃ
-
যদি তারা মুসলিমদের সাথে যুদ্ধে যেতো, তাহলোঃ
*
তারা ভীরু, তারা কাপুরুষ।
*
তাদের যুদ্ধ করার সাহস নাই।
*
মুসলমানদের সাথে গেলেও তারা দূরে দূরে থাকতো।
*
মুসলমানদের পরস্পরের মাঝে বিবাদ সৃষ্টির চেষ্টা
করতো।
*
মুসলমানদের মাঝে নতুন ফেতনা খাড়া করে জটিল
পরিস্থিতির সৃষ্টি করতো।
﴿وَفِيكُمْ سَمَّاعُونَ لَهُمْ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ
بِالظَّالِمِينَ﴾
আর তোমাদের লোকদের অবস্থা
হচ্ছে, তাদের মধ্যে এখনো এমন লোক আছে যারা তাদের কথা আড়ি পেতে
শোনে। আল্লাহ এ
জালেমদের খুব ভাল করেই চেনেন।
û তাফসীরে ইবনে কাসীরঃ
-
মুসলমানদের মাঝে অনেক লোক রয়েছে, যারা ঐসব মুনাফিকদের কথা মানে, তাদের মতামতকে সমর্থন করে, তাদের কাজকর্মকে সুনজরে দেখে।
-
ঐ সব মুসলমানেরা ভূলের মাঝে রয়েছে বলে এই
মুনাফিকদের খারাপ কাজের ব্যাপারে তারা বেখবর।
-
কিন্তু এই বেখবর অবস্থা মুমিনদের জন্য খুবই
খারাপ। আর এই খারাপের পরিণতি হলোঃ মুনাফিকদের তৎপরতায়
মুসলমানরা নিজেরা পরস্পরে বিবাদে জড়িয়ে পড়া।
û
ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক রাহি. বলেন,
-
যারা অনুমতি চেয়েছিল, তাদের অন্যতম ছিল আব্দুল্লাহ
ইবনে উবাই এবং জাদ ইবনে কায়েস। যারা প্রসিদ্ধ ও প্রভাবশালী মুনাফিক সরদার।
-
অনুমতি প্রদানের মাধ্যমে তাদেরকে মুসলিম বাহিনী
থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া হয়। যদি তারা বাহিনীর সাথে থাকতো, তাহলে তাদের অনুগত লোকেরা
মুসলমানদের ক্ষতি সাধন করতো।
-
মুনাফেকদের বাহ্যিক অবস্থা ছিল সীমাহীন
সৌন্দর্য মন্ডিত। ফলে কিছু কিছু মুসলিম তাদের সেই বাহ্যিক
অবস্থা দেখে বিভ্রান্ত হতেন। তাদের ভালবাসতেন, তাদের কথার আলোড়িত হতেন।
-
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এইসব লেবাসদারীদের
যুদ্ধে অংশ গ্রহণ না করাকে প্রকৃত মুসলমানদের জন্য গনিমত ঘোষনা করলেন। কেননা, ওরা সাথে থাকলে ফেতনা ফাসাদ সৃষ্টি করতো। নিজে কাজ করতো না, অন্যদের কাজ করতে দিতো না।
-
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা বলেনঃ
﴿وَلَوْ رُدُّواْ لَعَـٰدُواْ لِمَا نُهُواْ عَنْهُ وَإِنَّهُمْ
لَكَـٰذِبُونَ﴾
“যদি তাদের দ্বিতীয়বার দুনিয়ায়
পাঠিয়ে দেয়া হয়, তবে তারা আবার নুতন ভাবে ঐ কাজই করবে,
যা থেকেতাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। নিশ্চয়ই তারা মিথ্যাবাদী।” (আল আনআমঃ ২৮)
﴿وَلَوْ عَلِمَ ٱللَّهُ فِيهِمْ خَيْرًا لأَسْمَعَهُمْ وَلَوْ
أَسْمَعَهُمْ لَتَوَلَّواْ وَّهُم مُّعْرِضُونَ﴾
“যদি তাদের অন্তরে কোন কল্যাণ
নিহিত থাকতো তবে অবশ্যই তিনি তাদেরকে শুনিয়ে দিতেন, আর যদি
তিনি তাদেরকে শুনাতেনও তবে তারা তাচ্ছিল্যভরে ফিরে যেতো।” (আল আনফালঃ ২৩)
﴿وَلَوْ أَنَّا كَتَبْنَا عَلَيْهِمْ أَنِ ٱقْتُلُوۤاْ أَنفُسَكُمْ
أَوِ ٱخْرُجُواْ مِن دِيَـٰرِكُمْ مَّا فَعَلُوهُ إِلاَّ قَلِيلٌ مِّنْهُمْ وَلَوْ
أَنَّهُمْ فَعَلُواْ مَا يُوعَظُونَ بِهِ لَكَانَ خَيْراً لَّهُمْ وَأَشَدَّ
تَثْبِيتاً وَإِذاً لأَتَيْنَـٰهُمْ مِّن لَّدُنَّـآ أَجْراً عَظِيماً
وَلَهَدَيْنَـٰهُمْ صِرَٰطاً مُّسْتَقِيماً﴾
“যদি আমি তাদের উপর ফরয করে
দিতাম (দিয়ে বলতাম)-তোমরা আত্মহত্যা কর
কিংবা নিজেদের দেশ থেকে বেরিয়ে যাও, তবে অল্প কয়েকজন ব্যতিত
এই আদেশ কেউই পালন করতো না, আর যদি তারা তাদেরকে যেরূপ উপদেশ
দেয়া হয় তদনুযায়ী কাজ করতো, তবে তাদের জন্যে উত্তম হতো এবং
ঈমানকে অধিকতর দৃঢকারী হতো। আর এ অবস্থায় আমি তাদেরকে বিশেষ করে আমার পক্ষ থেকে মহা
পুরস্কার প্রদান করতাম। আর আমি অবশ্যই তাদেরকে সরল পথ প্রদর্শণ করতাম।” (আন নিসাঃ ৬৬-৬৮)
﴿لَقَدِ ابْتَغَوُا
الْفِتْنَةَ مِن قَبْلُ وَقَلَّبُوا لَكَ الْأُمُورَ حَتَّىٰ جَاءَ الْحَقُّ
وَظَهَرَ أَمْرُ اللَّهِ وَهُمْ كَارِهُونَ﴾
৪৮। এর আগেও এরা ফিতনা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে এবং তোমাদের ব্যর্থ করার জন্য
ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন ধরনের কৌশল খাটিয়েছে। এ সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সত্য এসে গেছে এবং আল্লাহ
উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।
﴿لَقَدِ ابْتَغَوُا الْفِتْنَةَ مِن قَبْلُ وَقَلَّبُوا لَكَ
الْأُمُورَ﴾
এ সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত তাদের
ইচ্ছার বিরুদ্ধে সত্য এসে গেছে এবং আল্লাহ উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।
û তাফসীরে ইবনে কাসীরঃ
-
মুনাফিকদের প্রতি নবী সা. এর অন্তরে আল্লাহ ঘৃণা সৃষ্টি
কারা জন্য এখানে আল্লাহ এই কথা গুলো বলছেন।
-
নবীকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছেঃ
*
মুনাফিকরা বহুদিন ধরে ফিতনা ও ফাসানের আগুন
জ্বালিয়ে যাচ্ছে।
*
নবীর কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টির জন্য সকল ধরণের
তদবীর করছে।
*
মদীনা নবী আসার পর থেকে পুরো আরব এক হয়ে বিপদের
বৃষ্টি বর্ষণ করতেছে।
*
মদীনার ইয়াহুদী ও মুনাফিকরা মদীনায় বিদ্রোহ
ঘোষনা করে দিয়েছে।
-
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা একদিনে তাদের সকল
ষড়যন্তের প্রসাদ চুরমান করে দেন। বদরের যুদ্ধের ফলাফল তাদের সকল আগ্রহকে ঠান্ডা করে দেয় এবং
তারা সম্পূর্ণভাবে নিরাশ হয়ে যায়।
-
উদাহরণ হিসাবে মুনাফিক সরদার আব্দুল্লাহ ইবনে
উবাই এর একটি বক্তব্য উল্লেখ্যযোগ্যঃ
“এই লোকগুলো এখন আমাদের ক্ষমতা
বাইরে চলে গেছে। এখন আমাদের এ ছাড়া কোন উপায় নেই যে, আমরা বাহ্যতঃ ইসলামের অনুকূলে
থাকবো, কিন্তু অন্তরে যা আছে তা তো আছেই। সময় সুযোগ আসলে দেখা যাবে এবং দেখানো যাবে।”
﴿حَتَّىٰ جَاءَ الْحَقُّ وَظَهَرَ أَمْرُ اللَّهِ وَهُمْ
كَارِهُونَ﴾
এ সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত তাদের
ইচ্ছার বিরুদ্ধে সত্য এসে গেছে এবং আল্লাহ উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।
û তাফসীরে ইবনে কাসীরঃ
-
মুনাফিকদের এতো সব ষড়যন্ত্রের পর দ্বীনে হকের
উন্নতি হতে থাকে, তাওহীদের বিকাশ হতে থাকে আর মুনাফিকরা হিসার আগুনে জ্বলতে থাকে।
-
অবশেষে দ্বীনে হক প্রতিষ্ঠিত হয়, আল্লাহর কালেমার বিজয়ী ডংকা বেজে উঠে।
-
আল্লাহর দ্বীনের বিজয়ে মুনাফিকদের পেট ফুলতে
থাকে, তাদের কাছে এই বিজয় খুবই অপ্রীতিকরণ মনে হয়।
﴿وَمِنْهُم مَّن يَقُولُ
ائْذَن لِّي وَلَا تَفْتِنِّي ۚ أَلَا فِي الْفِتْنَةِ سَقَطُوا ۗ وَإِنَّ
جَهَنَّمَ لَمُحِيطَةٌ بِالْكَافِرِينَ﴾
৪৯। তাদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যে বলে আমাকে
অব্যাহতি দিন এবং আমাকে পাপের ঝুঁকির মধ্যে ফেলবেন না। শুনে রাখো, এরা তো ঝুঁকির মধ্যেই পড়ে আছে এবং জাহান্নাম এ কাফেরদের ঘিরে রেখেছে।
﴿وَمِنْهُم مَّن يَقُولُ ائْذَن لِّي وَلَا تَفْتِنِّي ﴾
তাদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যে বলে আমাকে অব্যাহতি দিন
এবং আমাকে পাপের ঝুঁকির মধ্যে ফেলবেন না।
û তাফহীমুল কুরআনে এ সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ
-
মুনাফিকদের কর্তৃক মিথ্যা বাহানা বানিয়ে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ না করার অনুমতি চাওয়ার প্রসংগে এখানে বলা হচ্ছে।
-
তাদের মধ্যে কেউ কেউ এমন দূষ্ট পর্যায়ের ছিল যে, তারা যুদ্ধে না যাওয়ার জন্য ধর্মীয় ও নৈতিক বাহানা তৈরী করেছিল। যাতে করে যুদ্ধে গিয়ে সে পাপের মাঝে না পড়ে।
-
তেমনি একটি হাদীস রয়েছে জাদ্দ ইবনে কায়েস সম্পর্কেঃ
সে রাসূল সা.
এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে বললোঃ সে একজন সৌন্দর্য পিপাসু লোক। তার এই দূর্বলতার কথাটা তার কওমের লোকজন জানেননা। মেয়েদের ব্যাপারে সে সবর করতে পারেনা। এমতাবস্তায় যদি সে রোমান মেয়েদের দেখে পদস্খলন হয়ে যায়,
তাহলে পাপের মধ্যে পড়ে যাবে। তাই রাসূল সা.কে বলে তাকে যেন পাপের মধ্যে ঠেলে না দিয়ে জিহাদে অংশ নেয়া থেকে রুখসত প্রদান করেন।
û তাফসীরে ইবনে কাসীরঃ
হাদীসটির বর্ণনা পাওয়া যায় এই
ভাবেঃ জাদ
ইবনে কায়েস ছিলেন বনু সালামা গোত্রের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি।
একদিন রাসূলুল্লাহ সা. যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য জাদ ইবনে কায়েসকে বললেনঃ هل لك يا جد العام في جلاد بني
الأصفر؟ “তুমি এ বছর কি বনী আসফাকে দেশান্তর করার কাজে আমাদের সংগী হবে?” সে উত্তরে বললোঃ يا رسول الله أو تأذن لي ولا تفتني، فوالله لقد عرف قومي ما رجل أشد
عجباً بالنساء مني، وإني أخشي إن رأيت نساء بني الأصفر أن لا أصبر عنهن. “হে আল্লাহর রাসূল সা.! আমাকে যুদ্ধে গমন না করার অনুমতি দিন এবং আমাকে বিপদে ফেলবেন না। আল্লাহর কসম! আমার কাওম জানে যে, আমার চেয়ে স্ত্রীলোকদের প্রতি বেশী আকৃষ্ট আর কেউ নেই। আমি আশংকা করছি যে, আমি যদি বনী আসফারের নারীদের দেখতে পাই তবে ধৈর্যধারণ করতে পারবো না।” তখন রাসূল সা. তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন এবং বলেনঃ قد أذنت لك “আমি তোমাকে অনুমতি দিলাম।”
﴿أَلَا فِي الْفِتْنَةِ سَقَطُوا﴾
শুনে রাখো, এরা তো ঝুঁকির মধ্যেই পড়ে
আছে
û ঐ মুনাফিকদের সম্পর্কে বলা হচ্ছে-শুনে রাখো, এরা তো ঝুঁকির মধ্যেই পড়ে আছে।
û
তাফহীমুল কুরআন বলছেঃ
-
তারা ফিতনা বা পাপের ঝুঁকি থেকে রেহাই পাবার দুহাই দিলেও আসলে তারা মুনাফেকী, মিথ্যাচার, রিয়া ইত্যাদি কঠিন পাপের মাঝে ডুবে আছে।
-
তারা ছোট ছোট ফিতনার সম্ভবনা দেখিয়ে ভয় আর পেরেশানী প্রকাশ করে নিজেদেরকে বড় মুত্তাকি প্রমাণের করার চেষ্টা করছে।
-
ইসলাম আর কুফুরের চূড়ান্ত দ্বন্ধে ইসলামের পক্ষ সমর্থনে দেরী করা বড় ধরণের পাপ ও ফিতনা। তারা নিজেদেরকে সেই ফিতনায় ডুবিয়ে রেখেছে। এর চাইতে বড় ফিতনা আর নাই।
û তাফসীরে ইবনে কাসীরঃ
-
উপরোক্ত জাদ এর পরিণতি উল্লেখ করে একটি হাদীস বর্ণনা করেন। রাসূল সা.
তার গোত্র বনু সালামার লোকদের জিজ্ঞেস করলেনঃ من سيدكم يا بني سلمة؟ “হে বনু সালামার লোকেরা! তোমাদের নেতা কেমন?”
তারা বললোঃ الجد بن قيس على أنا نبخله
“আমাদের নেতা জাদ ইবনে কায়ে,
সে বড়ই কৃপণ।” তখন রাসূল সা.
বললেনঃ وأي داء أدوأ من البخل! ولكن
سيدكم الفتى الجعد الأبيض بشر بن البراء بن معرور “কৃপণতা অপেক্ষা কঠিন রোগ আর কি আছে? জেনে রেখো যে, তোমাদের নেতা হচ্ছে সাদা দেহ ও সুন্দর চুল বিশিষ্ট নব যুবক বিশর ইবনে বারা ইবনে মারূর।”
﴿وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمُحِيطَةٌ بِالْكَافِرِينَ﴾
এবং জাহান্নাম এ কাফেরদের
ঘিরে রেখেছে।
û
তাফহীমুল কুরআন বলছেঃ
-
যে তাকওয়ার অজুহাত দিয়ে জিহাদ থেকে দুরে থেকেছে, যে তাকওয়ার মাধ্যমে তারা জাহান্নাম থেকে দূরে থাকতে চেয়েছে, সেই তাওকয়ার প্রদর্শনীই তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছে।
﴿إِن تُصِبْكَ حَسَنَةٌ
تَسُؤْهُمْ ۖ وَإِن تُصِبْكَ مُصِيبَةٌ يَقُولُوا قَدْ أَخَذْنَا أَمْرَنَا مِن
قَبْلُ وَيَتَوَلَّوا وَّهُمْ فَرِحُونَ﴾
৫০। তোমরা ভাল কিছু হলে তা তাদের কষ্ট দেয় এবং তোমার ওপর কোন বিপদ এলে তারা
খুশী মনে সরে পড়ে এবং বলতে থাকে, “ভালই হয়েছে, আমরা আগে ভাগেই আমাদের ব্যাপার সেরে নিয়েছি”।
﴿إِن تُصِبْكَ حَسَنَةٌ تَسُؤْهُمْ ۖ وَإِن تُصِبْكَ مُصِيبَةٌ
يَقُولُوا قَدْ أَخَذْنَا أَمْرَنَا مِن قَبْلُ وَيَتَوَلَّوا وَّهُمْ فَرِحُونَ﴾
তোমরা ভাল কিছু হলে তা তাদের
কষ্ট দেয় এবং তোমার ওপর কোন বিপদ এলে তারা খুশী মনে সরে পড়ে এবং বলতে থাকে, “ভালই হয়েছে, আমরা আগে ভাগেই আমাদের
ব্যাপার সেরে নিয়েছি”।
û তাফসীরে ইবনে কাসীরঃ
-
এখানে মুনাফিকদের দিলের মধ্যে যে অসুখ আছে, তার
বর্ণনা করা হচ্ছে।
-
তাদের অবস্থা ছিল,
*
যখন মুসলমানদের বিজয়, সাহায্য, কল্যাণ ও উন্নতি হতো, তখন তারা চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তো।
*
অপর দিকে যখন মুসলমানদের কোন বিপদ আসতো, তখন তারা আনন্দ লাভ করতো।
*
মুসলমানদের বিপদের সময় তারা নিজেদের চতুরতার
প্রশংসা করে বলতোঃ এজন্যই তো আমাদের তাদের থেকে দূরে রয়েছি।
﴿قُل لَّن يُصِيبَنَا
إِلَّا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَنَا هُوَ مَوْلَانَا ۚ وَعَلَى اللَّهِ
فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ﴾
৫১। তাদের বলে দাও, “আল্লাহ আমাদের জন্য যা লিখে দিয়েছেন, তা ছাড়া আর কোন (ভাল বা মন্দ) কিছুই আমাদের হয় না। আল্লাহই আমাদের অভিভাবক ও কার্যনির্বাহক এবং ঈমানদরদের
তাঁর ওপরই ভরসা করা উচিত”।
﴿قُل لَّن يُصِيبَنَا إِلَّا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَنَا هُوَ
مَوْلَانَا ۚ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ﴾
তাদের বলে দাও, “আল্লাহ আমাদের জন্য যা লিখে
দিয়েছেন, তা ছাড়া আর কোন (ভাল বা
মন্দ) কিছুই আমাদের হয় না। আল্লাহই
আমাদের অভিভাবক ও কার্যনির্বাহক এবং ঈমানদরদের তাঁর ওপরই ভরসা করা উচিত”।
û
তাফহীমুল কুরআন বলছেঃ
-
এই আয়াতের মাধ্যমে দুনিয়াপূজারী আর আল্লাহতে বিশ্বাসীদের মানসিকতার পার্থক্য স্পষ্ট করা হয়েছে।
-
যারা দুনিয়াপূজারী-তারা সব কিছু করে নিজের নফসের আকাংখা পুরণ করার জন্য।
-
দুনিয়ার পূজারীর কাছে সুখ আর আনন্দ হলো-কোন বৈষয়িক উদ্দেশ্য হাসিল করা।
-
দুনিয়া পূজারী মানুষ তাই দুনিয়াতে কোন উদ্দেশ্য সাধন করতে পারলেই আনন্দিত হয়, না পারলে মনবল হারিয়ে ফেলে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। সফল হলে হয় সাহসী, বিফল হলে হয় হিম্মত হারা।
-
আল্লাহ বিশ্বাসী মানুষের আল্লাহকে সন্তুষ্ট করাই তার সব কিছু।
-
আল্লাহ বিশ্বাসী মানুষের ভরসা নিজের শক্তি বা বস্তুগত কোন কিছু উপর থাকে না। ভরসা থাকে একমাত্র আল্লাহর
উপর।
-
আল্লাহ বিশ্বাসীদের বিপদের সম্মুখীন হওয়া বা সাফল্য অর্জন করা-সবই তারা মনে করে আল্লাহর
ইচ্ছার প্রতিফলন। যার কারণে তারা বিপদে ভাঙে না, সাফল্যে অহংকারী হয় না। কারণঃ
১. আল্লাহ বিশ্বাসী বিপদ ও সাফল্য দুইটিকেই আল্লহ পক্ষ থেকে আগত মনে করে। পরীক্ষা মনে করে নিরাপদে পার পেতে চায্
২. আল্লাহ বিশ্বাসীর কোন বৈষয়িক উদ্দেশ্য থাকে না এবং বৈষয়িক সাফল্য বা ব্যর্থতাকে সে বিবেচনায় নেয় না। তার একটি মাত্র উদ্দেশ্য-আল্লাহর সস্তুষ্টি। আর বৈষয়িক সাফলের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে কতটুকু অগ্রসর হলো-তা মাপা যায় না। বরং দায়িত্ব পালন কতটুকু করা হয়েছে, তার ভিত্তিতে মাপা যায়। আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করে দুনিয়াতে হেরে গেলেও সফলতা।
-
ঈমান গ্রহণের পর দুনিয়ার সাফল্য নিয়ে ভাবা বা দুনিয়া পূজা মুনাফিকি কাজ। আর আল্লাহ সেইসব দুনিয়া পূজারী মুনাফিকদের বলে দিতে বলছেন যে, আমাদের বিষয়টি তোমাদের থেকে একটু ভিন্ন। আমাদের আনন্দ আর বেদনার নিয়ম পদ্ধতি আর তোমাদের আনন্দ ও বেদনার নিয়ম পদ্ধতি একটু আলাদা। তোমাদের নিশ্চিন্ত হওয়া বা অস্তির হওয়ার উৎস একটি,
আমাদের অন্যটি।
û
তাফসীরে ইবনে কাসীরঃ
-
এখানে
আগের আয়াতের মুনাফিকদের জাবাব দেয়া হচ্ছে। মুসলমানদের বলা হচ্ছেঃ তোমরা জবাব দাও। বলো, দূঃখ আর অশান্তি আমাদের তকদীরের লিখন আর আমরা আল্লাহর
ইচ্ছার অধীন। তিনি আমাদের অভিভাবক, তিনি আমাদের বর, তিনিই
আমাদের আশ্রয়ের জায়গা। আমরা মুমিন, আমাদের ভরসার জাযগা আল্লহ তায়ালা। তিনিই আমাদের জন্য যথেষ্ট। তিনি উত্তম কার্যসম্পাদনকারী।
﴿قُلْ هَلْ تَرَبَّصُونَ
بِنَا إِلَّا إِحْدَى الْحُسْنَيَيْنِ ۖ وَنَحْنُ نَتَرَبَّصُ بِكُمْ أَن
يُصِيبَكُمُ اللَّهُ بِعَذَابٍ مِّنْ عِندِهِ أَوْ بِأَيْدِينَا ۖ فَتَرَبَّصُوا
إِنَّا مَعَكُم مُّتَرَبِّصُونَ﴾
৫২। তাদের বলে দাও, “তোমরা আমাদের ব্যাপারে যে জিনিসের
অপেক্ষায় আছো তা দুটি ভালর একটি ছাড়া আর কি? অন্যদিকে
আমরা তোমাদের ব্যাপারে যে জিনিসের অপেক্ষায় আছি তা হচ্ছে এই যে আল্লাহ হয় নিজেই
তোমাদের শাস্তি দেবেন, না হয় আমাদের হাত দিয়ে দেয়াবেন? তাহলে এখন তোমরা অপেক্ষা করোএবং আমরা ও তোমাদের সাথে অপেক্ষায় থাকছি”।
﴿قُلْ هَلْ تَرَبَّصُونَ بِنَا إِلَّا إِحْدَى الْحُسْنَيَيْنِ﴾
তাদের বলে দাও, “তোমরা আমাদের ব্যাপারে যে
জিনিসের অপেক্ষায় আছো তা দুটি ভালর একটি ছাড়া আর কি?”
û
তাফহীমুল কুরআন বলছেঃ
-
এটা হলো মুনাফিকদের প্রত্যাশার জবাব।
*
মুনাফিকরা অভ্যাস অনুযায়ী জিহাদের অংশ গ্রহণ না করাকে নিজেদের বুদ্ধিমত্তার
পরিচয় মনে করেছিল।
*
তারা অপেক্ষায় ছিল এটা দেখতে যে রাসূল সা. ও তাঁর সাহাবীরা বিজয়ী হয়ে ফিরে
আসেন, না রোমের সামরিক শক্তির কাছে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যান।
-
এখানে মুনাফিকদের উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছেঃ
*
তোমরা একটি ফলাফলের অপেক্ষা করতেছো। অথচ ঈমানদারদের জন্য সকল ফলাফলই কল্যাণকর ও ভাল। যেমনঃ তারা বিজয়ী হলে তা
তাদের জন্য ভাল-যা সকলের জানা। আর যদি তারা পরাজিত হয়, তাহলে দুনিয়াবাসী তাকে পরাজিত মনে
করলেও সে অন্য রকম এক সাফল্য।
-
মুমিনের সাফল্যের মাপকাঠি কোন দেশ জয় করা বা কোন সরকার প্রতিষ্ঠা করা নয়।
-
মুমিনের সাফল্যের মাপকাঠি হলো সে আল্লাহর কালেমা কি সুউচ্চে ধারনের জন্য নিজের
মন, মগজ, শরীর, প্রাণ সবকিছু ব্যয় করেছ কি না।
-
মুমিন যদি এই কাজ সঠিক ভাবে করে, তাহলে দুনিয়ার বিচারে সে শূণ্য ফলাফলের
অধিকারী হলেও প্রকৃত পক্ষে সে মুমিন সফলকাম।
û
তাফসীরে ইবনে কাসীরঃ
-
আল্লাহ তার রাসূলকে সম্বোধন করে বলছেনঃ হে
রাসূল! ঐ মুনাফিকদের বলে দাও-তোমরা আমাদের জন্য দু’টি কল্যাণকর বিষয়ের মধ্যে একটির
প্রতিক্ষায় রয়েছে। মানেঃ আমরা যদি শহীদ হয়ে যাই, তাহলে জান্নাতের
মেহমান হবো, আর যদি বিজয়ী হই, তাহলে গনীমতের অংশীদার হবো।
-
অতএব, জয় পরাজয় যাই হোক, কল্যাণকর সবকটি।
-
অপর দিকে মুনাফিকদের জন্য দুইটি মন্দ। হয আল্লাহর আযাব সরাসরি আসবে, নতুবা আমাদের হাত দিয়ে
তোমাদের উপর আল্লাহর মার পড়বে। হয় তোমরা নিহত হবে, নতুবা বন্দী হবে।
﴿وَنَحْنُ نَتَرَبَّصُ بِكُمْ أَن يُصِيبَكُمُ اللَّهُ بِعَذَابٍ
مِّنْ عِندِهِ أَوْ بِأَيْدِينَا ۖ فَتَرَبَّصُوا إِنَّا مَعَكُم مُّتَرَبِّصُونَ﴾
অন্যদিকে আমরা তোমাদের
ব্যাপারে যে জিনিসের অপেক্ষায় আছি তা হচ্ছে এই যে আল্লাহ হয় নিজেই তোমাদের শাস্তি
দেবেন, না হয় আমাদের হাত দিয়ে
দেয়াবেন? তাহলে এখন তোমরা অপেক্ষা
করোএবং আমরা ও তোমাদের সাথে অপেক্ষায় থাকছি”।
﴿قُلْ أَنفِقُوا طَوْعًا
أَوْ كَرْهًا لَّن يُتَقَبَّلَ مِنكُمْ ۖ إِنَّكُمْ كُنتُمْ قَوْمًا فَاسِقِينَ﴾
৫৩। তাদের বলে দাও, “তোমরা নিজেদের ধন-সম্পদ স্বেচ্ছায়
ও সানন্দে ব্যয় কর অথবা অনিচ্ছাকৃতভাবে ব্যয় কর, তা
গৃহীত হবে না। কারণ তোমরা ফাসেক গোষ্ঠী”।
﴿قُلْ أَنفِقُوا طَوْعًا أَوْ كَرْهًا﴾
তাদের বলে দাও, “তোমরা নিজেদের ধন-সম্পদ
স্বেচ্ছায় ও সানন্দে ব্যয় কর অথবা অনিচ্ছাকৃতভাবে ব্যয় কর”
û
তাফহীমুল কুরআন বলছেঃ
-
কথা গুলো বলা বলা হচ্ছে, আরেক ধরণের মুনাফিকদের উদ্দেশ্য করে-যারা জিহাদ থেকে
অব্যাহতি চেয়ে জেহাদের জন্য অর্থ প্রদান করেছে।
-
এই মুনাফিকদের পরিচয় হলোঃ যারা নিজেদের বিপদের মাঝে ফেলতেও চায় না। আবার জিহাদ থেকে একেবারে
বিরত থেকে মুসলমানদের মাঝে নিজের অবস্থান ছোট করতে চায় না বা নিজের মুনাফিকীকে
পাবলিকলি প্রকাশ করতে চায় না।
-
এই ধরনের মুনাফিকরা বলেছিলঃ আমরা যদিও যুদ্ধে যেতে অক্ষমতা কারণে অব্যাহতি
চাইতেছি। কিন্তু যুদ্ধের জন্য অর্থ সাহায্য করতে প্রস্তুতি।
﴿لَّن يُتَقَبَّلَ مِنكُمْ ۖ إِنَّكُمْ كُنتُمْ قَوْمًا فَاسِقِينَ﴾
তা গৃহীত হবে না। কারণ
তোমরা ফাসেক গোষ্ঠী”।
û
তাফসীরে ইবনে কাসীরঃ
-
আল্লাহ তায়ালা মুনাফীকদের দান খয়রাতের আশাবাদী
নন। বিধায়, তারা খুশী মনে বা অসন্তুষ্ট
চিত্তে-যেভাবেই খরচ করুক না কেন, আল্লাহ তা কবুল করবেন না। কারণ তারা ফাসেক-তারা আল্লাহর আদেশ লংঘনকারী।
û
ইবনে জারীর রাহি. বলেনঃ
-
মুনাফিক সরদার জাদ ইবনে কায়েস বলেছিলঃ “আমি
দেখি যে, ধৈর্য ধারণের শক্তি আমার নাই। তবে হে আল্রাহর রাসূল সা.! আমি আপনাকে অর্থ দিয়ে সাহায্য
করবো। তখন এই আয়াত নাযিল হয়।
﴿قُلْ أَنفِقُوا طَوْعًا أَوْ كَرْهًا لَّن يُتَقَبَّلَ مِنكُمْ ۖ
إِنَّكُمْ كُنتُمْ قَوْمًا فَاسِقِينَ﴾
﴿وَمَا مَنَعَهُمْ أَن
تُقْبَلَ مِنْهُمْ نَفَقَاتُهُمْ إِلَّا أَنَّهُمْ كَفَرُوا بِاللَّهِ
وَبِرَسُولِهِ وَلَا يَأْتُونَ الصَّلَاةَ إِلَّا وَهُمْ كُسَالَىٰ وَلَا
يُنفِقُونَ إِلَّا وَهُمْ كَارِهُونَ﴾
৫৪। তাদের দেয়া সম্পদ গৃহীত না হবার এ ছাড়া আর কোন কারন নেই যে, তারা আল্লাহ ও তার রসূলের সাথে কুফরী করেছে, নামাযের
জন্য যখন আসে আড়মোড় ভাংতে ভাংতে আসে এবং আল্লাহর পথে খরচ করলে তা করে
অনিচ্ছাকৃতভাবে।
﴿وَمَا مَنَعَهُمْ أَن تُقْبَلَ مِنْهُمْ نَفَقَاتُهُمْ إِلَّا
أَنَّهُمْ كَفَرُوا بِاللَّهِ وَبِرَسُولِهِ وَلَا يَأْتُونَ الصَّلَاةَ إِلَّا
وَهُمْ كُسَالَىٰ وَلَا يُنفِقُونَ إِلَّا وَهُمْ كَارِهُونَ﴾
৫৪। তাদের
দেয়া সম্পদ গৃহীত না হবার এ ছাড়া আর কোন কারন নেই যে, তারা আল্লাহ ও তার রসূলের
সাথে কুফরী করেছে, নামাযের জন্য যখন আসে আড়মোড়
ভাংতে ভাংতে আসে এবং আল্লাহর পথে খরচ করলে তা করে অনিচ্ছাকৃতভাবে।
û
তাফসীরে ইবনে কাসীরঃ
-
কেন এই দান খয়রাত গ্রহণ করা হবে না?
১. আমল কবুলের শর্ত কুফরী না থাকা, ঈমান থাকা। মুনাফিকদের দান খয়রাত কবুল না করার কারণ কাদের কুফরী।
২. মুনাফিকদের সদিচ্ছা ও সৎ সাহস নাই। সালাতে উদাসীন, অমনযোগী, লোক দেখানো সালাত।
-
রাসূল সা. বলেছেনঃ
أَنَّ اللَّهَ لَا يَمَلُّ حَتَّى تَمَلُّوا، وَأَنَّهُ طَيِّبٌ لَا
يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا.
“আল্লাহ বিরক্ত হন না যে, পর্যন্ত না তোমরা রিক্ত হও। আল্লাহ পবিত্র এবং তিনি পবিত্র জিনিসই কবুল করেন।”
﴿فَلَا تُعْجِبْكَ أَمْوَالُهُمْ
وَلَا أَوْلَادُهُمْ ۚ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُعَذِّبَهُم بِهَا فِي
الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَتَزْهَقَ أَنفُسُهُمْ وَهُمْ كَافِرُونَ﴾
৫৫। তাদের ধন-দৌলত ও সন্তানের আধিক্য দেখে তোমরা প্রতারিত হয়ো না। আল্লাহ চান, এ জিনিসগুলোর
মাধ্যমে দুনিয়ার জীবনে তাদের শাস্তি দিতে। আর তারা যদি প্রাণও দিয়ে দেয়, তাহলে তখন তারা
থাকবে সত্য অস্বীকার করার অবস্থায়।
﴿فَلَا تُعْجِبْكَ أَمْوَالُهُمْ وَلَا أَوْلَادُهُمْ ۚ إِنَّمَا
يُرِيدُ اللَّهُ لِيُعَذِّبَهُم بِهَا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا﴾
তাদের ধন-দৌলত ও সন্তানের
আধিক্য দেখে তোমরা প্রতারিত হয়ো না। আল্লাহ
চান, এ জিনিসগুলোর মাধ্যমে
দুনিয়ার জীবনে তাদের শাস্তি দিতে।
û
তাফহীমুল কুরআন বলছেঃ
-
মুনাফিকরা যে মুনাফিকী নীতি অবলম্বন করছে, তা এই ধন সম্পদ ও সন্তান সন্ততির মায়ায়।
-
দুনিয়ার জীবনে তাদের শাস্তি হলোঃ
*
তারা মুসলিম সমাজে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবে।
*
নতুন ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় তাদের পূর্ব প্রভাব-প্রতিপত্তি, মান-মর্যাদা,
নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব যা ছিল, তা সব মাটিতে মিশে যাবে।
*
যাদের এক সময় কোন মর্যাদা ছিল না, সেই দাস, সাদপুত্র, কৃষক, রাখাল-এমন লোকেরা
কেবলমাত্র ঈমানী নিষ্ঠা আর আন্তুরিকতার কারণে মর্যাদাশালী হবে।
*
দুনিয়াপ্রীতির কারণে মর্যাদাহীন হবে বংশানুক্রমিক সমাজনেতা ও সমাজপতিরা।
-
হযরত উমর রা. এর মজলিসের ঘটনাঃ
*
হযরত উমর রা. এর সাথে সাক্ষাত করতে এসেছেন সুহাই ইবনে আমর ও হাবেস ইবনে
হিশামের মত বড় বড় কুরাইশ সরদার।
*
হযরত উমর রা. আনসার আর মুহাজিরদের
মধ্যে যারা মামুলী পর্যায়ের লোক, তাদের ডেকে ডেকে নিজের কাছে
বসাচ্ছিলেন, আর অন্যদেরকে জায়গা করে দিতে বলছিলেন।
*
সুহাই ইবনে আমর ও হাবেস ইবনে হিশামের মত বড় কুরাইশ সরদারা জায়গা দিতে দিতে
একসময় মজলিসের শেষ প্রান্তে চলে এলেন এবং মজলিস থেকে বের হেয় গেলেন।
*
হারেস ইবনে
হিশাম তার নিজের সংগীদের বললেনঃ তোমরা দেখলে তো আজ আমাদের সাথে কি ব্যবহার করা হলো?
*
সুহাইল ইবনে আমর বললেনঃ এতে উমরের কোন দোষ নেই। দোষ আমাদের। কারণ আমাদের যখন এ দীনের দিকে ডাকা
হয়েছিল তখন আমরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলাম এবং এ লোকেরা দৌড়ে এসেছিল।
*
দুই সরদার আবার হযরত উমর রা. এর কাছে হাজির হলেন এবং বললেনঃ আজ আমরা আপনার আচরণ দেখলাম। আমরা জানি, আমাদের ত্রুটির কারণেই এ অবস্থা হয়েছে। কিন্তু এখন এর প্রতিবিধানের কোন উপায়
আছে কি?
*
হযরত উমররা. মুখে কোন জবাব দিলেন না। তিনি শুধু রোম সীমান্তের দিকে ইশারা
করলেন।
*
হযরত উমরের এই ইশারা মানেঃ এখন জিহাদের ময়দানে
জান-মাল উৎসর্গ করো, তাহলে হয়তো তোমরা নিজেদের হারানো মর্যাদা
আবার ফিরে পাবে।
-
সূরা ত্বা-হাঃ ১৩১ আয়াতে বলা হয়েছেঃ
﴿وَلاَ تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ إِلَىٰ مَا مَتَّعْنَا بِهِ
أَزْوَٰجاً مِّنْهُمْ زَهْرَةَ ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا لِنَفْتِنَهُمْ فِيهِ
وَرِزْقُ رَبِّكَ خَيْرٌ وَأَبْقَىٰ﴾
আর চোখ তুলেও তাকাবে না দুনিয়াবী জীবনের
শান-শওকতের দিকে, যা আমি এদের মধ্য থেকে বিভিন্ন ধরনের লোকদেরকে
দিয়ে রেখেছি৷ এসব তো আমি এদেরকে পরীক্ষার মুখোমুখি করার জন্য দিয়েছি এবং তোমার
রবের দেয়া হালাল রিযিকই উত্তম ও অধিকতর স্থায়ী৷
-
সূরা আল মুমিনুননঃ ৫৫-৫৬ আয়াতে বলা হয়েছেঃ
﴿أَيَحْسَبُونَ أَنَّمَا نُمِدُّهُمْ بِهِ مِن مَّالٍ وَبَنِينَ
نُسَارِعُ لَهُمْ فِى ٱلْخَيْرَٰتِ بَل لاَّ يَشْعُرُونَ﴾
তারা কি মনে করে, আমি যে তাদেরকে অর্থ ও সন্তান দিয়ে সাহায্য করে যাচ্ছি, তা দ্বারা আমি তাদেরকে কল্যাণ দানে তৎপর রয়েছি ? না,
আসল ব্যাপার সম্পর্কে তাদের কোন চেতনাই নেই৷
﴿ وَتَزْهَقَ أَنفُسُهُمْ وَهُمْ كَافِرُونَ﴾
আর তারা যদি প্রাণও দিয়ে দেয়, তাহলে তখন তারা থাকবে সত্য
অস্বীকার করার অবস্থায়।
û
তাফহীমুল কুরআন বলছেঃ
-
এটা মুনাফিকদের অতিরিক্ত শাস্তি।
-
আয়াতের প্রথমাংশে তাদের যে অবমূল্যায়নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তার সাথে এটা
যোগ হবে যে, তারা মৃত্যু পর্যন্ত সত্যিকার ঈমান লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।
-
দুনিয়াতে তাদের যেমন পার্থিব সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত করা হবে, আখেরাতে তেমনি
খারাপ অবস্থা হবে।
﴿وَيَحْلِفُونَ بِاللَّهِ
إِنَّهُمْ لَمِنكُمْ وَمَا هُم مِّنكُمْ وَلَٰكِنَّهُمْ قَوْمٌ يَفْرَقُونَ﴾
৫৬। তারা আল্লাহর কসম খেয়ে খেয়ে বলে, আমরা
তোমাদেরই লোক। অথচ তারা মোটেই তোমাদের অন্তরভুক্ত নয়। আসলে তারা এমন একদল লোক যারা তোমাদের ভয় করে।
﴿وَيَحْلِفُونَ بِاللَّهِ إِنَّهُمْ لَمِنكُمْ وَمَا هُم مِّنكُمْ
وَلَٰكِنَّهُمْ قَوْمٌ يَفْرَقُونَ﴾
৫৬। তারা
আল্লাহর কসম খেয়ে খেয়ে বলে, আমরা তোমাদেরই লোক। অথচ তারা
মোটেই তোমাদের অন্তরভুক্ত নয়। আসলে
তারা এমন একদল লোক যারা তোমাদের ভয় করে।
û
তাফসীরে ইবনে কাসীরঃ
-
এখানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা তার নবীকে
মুনাফিকদের অবস্থার সংবাদ দিচ্ছেন যে, তারা অস্থির, হতবুদ্ধি, উদ্বেগ, সন্ত্রাস ও ব্যাকুলতায় মগ্ন।
-
মুসলিমদের উদ্দেশ্য করে আল্লাহ জানাচ্ছেন যে,
হে মুসলিমরা! এই মুনাফিকরা তোমাদের কাছে এসে তোমাদের মন জয় করা এবং তোমাদের হাত
থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য লম্বা চওড়া কসম খেয়ে বলবেঃ আল্লাহর শপথ! আমারা তোমাদের
সাথেই রয়েছি, আমরা মুসলিম।
-
সূরা বাকারাঃ ১২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ
﴿وَإِذَا لَقُواْ ٱلَّذِينَ ءامَنُواْ قَالُوا ءامَنَّا وَإِذَا
خَلَوْاْ إِلَىٰ شَيَـٰطِينِهِمْ قَالُواْ إِنَّا مَعَكُمْ إِنَّمَا نَحْنُ
مستهزؤون ﴾
যখন এরা মু’মিনদের সাথে মিলিত হয়, বলেঃ “আমরা ঈমান এনেছি,”
আবার যখন নিরিবিলিতে নিজেদের শয়তানদের সাথে
মিলিত হয় তখন বলেঃ “আমরা তো আসলে তোমাদের সাথেই আছি আর ওদের সাথে তো নিছক তামাশা
করছি ৷
﴿لَوْ يَجِدُونَ مَلْجَأً
أَوْ مَغَارَاتٍ أَوْ مُدَّخَلًا لَّوَلَّوْا إِلَيْهِ وَهُمْ يَجْمَحُونَ﴾
৫৭। যদি তারা কোন আশ্রয় পেয়ে যায় অথবা কোন গিরি-গুহা কিংবা ভিতরে প্রবেশ
করার মত কোন জায়গা, তাহলে দৌড়ে গিয়ে সেখানে লুকিয়ে
থাকবে।
﴿لَوْ يَجِدُونَ مَلْجَأً أَوْ مَغَارَاتٍ أَوْ مُدَّخَلًا لَّوَلَّوْا
إِلَيْهِ وَهُمْ يَجْمَحُونَ﴾
যদি তারা কোন আশ্রয় পেয়ে যায়
অথবা কোন গিরি-গুহা কিংবা ভিতরে প্রবেশ করার মত কোন জায়গা, তাহলে দৌড়ে গিয়ে সেখানে
লুকিয়ে থাকবে।
û
তাফহীমুল কুরআন বলছেঃ
-
মুনাফিকদের মানসিক অবস্থার কথা এখানে বলা হয়েছে যে, মুনাফিকরা মুসলমানদের সাথে
নেই।
-
মদীনার মুনাফিকদের ২টি বৈশিষ্ট ছিল। ১. তারা ছিল ধনী। ২. তারা ছিল বয়স্ক।
-
ইবনে কাসির তার আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াহ কিতারে মুনাফিকদের যে তালিকা প্রদান
করেছেন, তাতে মাত্র ১জন যুবকের নাম পাওয়া যায়। কিন্তু ১জনও
গরীব নয়।
-
মুনাফিকেরা ছিল, বিপুল পরিমাণে জমিজমা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। তাদের বহুদর্শিতা ও
অভিজ্ঞতা তাদেরকে বানিয়ে দিয়েছিল সুযোগ সন্ধানী ও সুবিধাবাদী।
-
মদীনায় ইসলাম পৌছার পর মদীনার নাগরিকদের একটা বড় অংশ ইসলাম গ্রহণ করলো
আন্তরিকতা ও ঈমানী জোশ সাথে নিয়ে। এদের মাঝে ঐ সুযোগ সন্ধানী ও সুবিধাবাদীদের ছেলে মেয়ে ও
গোত্রের লোকও ছিল।
-
আর তখন এই সুযোগ সন্ধানী ও সুবিধাবাদীরা পড়লে উভয় সংকটে।
*
যদি তারা কুফরীর পক্ষে থাকে, তাহলে নেতৃত্ব-সরদারী, প্রভাব-প্রতিপত্তি, মান-সম্মান,সুনাম-সুখ্যাতি সব হারাবে। এমনকি তাদের পরিবারেও বিদ্রোহ দেখা দেবে।
*
যদি তারা ইসলাম গ্রহণ করে বা দ্বীনকে সহযোগিতা
করে, তাহলে তার অর্থ হলো পুরো আরব এমনকি আশপাশের
জাতি, গোত্র ও রাস্ট্রের সাথে যুদ্ধে ঝুঁকি নিতে
প্রস্তুত থাকা।
-
সত্য ও ন্যায় আসলেই যে একটা মূল্যবান জিনিস, তা তারা বুঝেনা-যারা দুনিয়াবী
স্বার্থের মোহে ডুবে আছে বা নফসের গোলামীতে পড়ে আছে।
-
সত্য আর ন্যায় এমন এক জিনিস-যার ভালবাসায় পড়লে সকল ধরণের বিপদ মুসিবত মাথা
পেতে নেয়া যায়, নিজে জান মাল সবকিছু উজাড় করে দেয়া যায়।
-
মুনাফিকরা দুনিয়ার সকল কিছু কেবলমাত্র স্বার্থের দৃষ্টিতে, সুবিধাবাদের
দৃষ্টিতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল। আর সেই স্বার্থের কারণেই তারা ঈমানের দাবী করার মাঝেই
কল্যাণ দেখেছিল। তারা মনে করেছিল তাদের দুনিয়াবী স্বার্থ রক্ষার সবচেয়ে অনুকুল ও উপযোগী পথ
এটি।
-
এই মুনাফিকী চরিত্রের মাধ্যমে নিজের মান- মান-সম্ভ্রম, সহায়-সম্পদ ও ব্যবসা-বাণিজ্য যথাযথ ভাবে টিকিয়ে
রাখা যাবে, আবার সকর ধরণের বিপদ থেকেও মুক্তি পাওয়া যাবে।
-
এই মানসিক অবস্থা এখানে বর্ণা করে বুঝানো হচ্ছে যে, প্রকৃতপক্ষে মুনাফিকরা
মুসলমানদের সাথে নেই। বরং তারা ক্ষতির আশংকায় নিজেদেরকে জবরদস্তিমূলক ভাবে মুসলমানদের সাথে বেঁধে
নিয়েছে।
-
মুনাফিকদেরকে মুসলমানদের মাঝে নিজেদের গন্য করতে বাধ্য করেছেঃ
*
তাদের এই ভয় যে, তারা যদি মদীনা অমুসলিম হয়ে
বাস করতে চায়, তাহলে তাদের মর্যাদা প্রতিপত্তি খতম হবে এমনকি নিজ স্ত্রী সন্তানদের
সাথে ও সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে।
*
তাদের ভয়, তারা যদি অমুসলিম থেকে মদীনা ত্যাগ
করে তাহলে তাদের সম্পদ ও ব্যবসা ত্যাগ করতে হবে।
*
কুফরীর কারণে যে ক্ষতি হবে, সেই ক্ষতি বরদাশত
করার মত আন্তরিকতা কুফরীর প্রতি তাদের ছিল না।
*
তারা এই উভয় সংকটে পড়ে মদীনায় থাকতে বাধ্য
হয়েছিল।
*
তাদের মন না চাইলেও তারা অনিচ্ছা সত্ত্বেও
নামায পড়তো, যাকাতকে জরিমানা মনে করে আদায় করতো।
û
তাফসীরে ইবনে কাসীরঃ
-
অথচ প্রকৃত ব্যাপার হলো তার বিপরীত। তারা যদি আশ্রয় গ্রহণের কোন জায়গা পেয়ে যায়, তাহলে তারা
সেদিকে দৌড়ে পালাবে। তাদের কাউকে মুসলমানদের আশে পাশে দেখা যাবে না।
﴿وَمِنْهُم مَّن
يَلْمِزُكَ فِي الصَّدَقَاتِ فَإِنْ أُعْطُوا مِنْهَا رَضُوا وَإِن لَّمْ
يُعْطَوْا مِنْهَا إِذَا هُمْ يَسْخَطُونَ﴾
৫৮। হে নবী! তাদের কেউ কেউ সাদকাহ বন্টনের ব্যাপারে তোমার বিরুদ্ধে আপত্তি
জানাচ্ছে। এ সম্পদ
থেকে যদি তাদের কিছু দেয়া হয় তাহলে তারা খুশী হয়ে যায়, আর
না দেয়া হলে বিগড়ে যেতে থাকে।
﴿وَمِنْهُم مَّن يَلْمِزُكَ فِي الصَّدَقَاتِ فَإِنْ أُعْطُوا
مِنْهَا رَضُوا وَإِن لَّمْ يُعْطَوْا مِنْهَا إِذَا هُمْ يَسْخَطُونَ﴾
হে নবী! তাদের কেউ কেউ সাদকাহ
বন্টনের ব্যাপারে তোমার বিরুদ্ধে আপত্তি জানাচ্ছে। এ সম্পদ
থেকে যদি তাদের কিছু দেয়া হয় তাহলে তারা খুশী হয়ে যায়, আর না দেয়া হলে বিগড়ে যেতে
থাকে।
û
তাফহীমুল কুরআন বলছেঃ
-
যাকাত ফরয হওয়ার পরবর্তী সময়ের ঘটনা।
-
একটি নেসাবের অধিকারী মানুষের প্রতি যাকাত ধার্য করা হয়েছিল।
-
যাকাত আদায়ের পরিমাণ ছিল কৃষি পণ্য, গবাদিপশু, ব্যবসার পণ্য, খনিজদ্রব্য এবং
সোনা রূপার সঞ্চয় থেকে দব্য অনুসারে আড়াই, ৫, ১০ এবং ২০ ভাগ পর্যন্ত।
-
যাকাতের সম্পদ সংগ্রহ করা হতো একটি নিয়ম অনুযায়ী।
-
যাকাতের সকল অর্থ সম্পদ একটি কেন্দ্রে জমা করার পর আরেকটি নিয়ম অনুযায়ী খরচ
করা হতো।
-
যাকাতের এই সংগ্রহ ও খরচের পরিমাণ ছিল বিশাল। যে পরিমাণ সম্পদ আরবের লোক আগে কখনো দেখেনি।
-
যারা মুনাফিক ছিল, তারা এই সম্পদ দেখে লোভ জাগতো। তারা এই সম্পদ থেকে কিছু অংশ কামনা করতো।
-
কিন্তু নিয়ম ছিল অন্যরকম। এখানে যাকাত সংগ্রহ ও খারচের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা
নিজের জন্য বা নিজের সাথে সংশ্লিষ্ট কারো জন্য বিন্দু পরিমাণ কিছু গ্রহণ করতে
পারেন না। নিয়ম বা বিধান এমন গ্রহণকে হারাম ঘোষনা করেছে।
-
নবী সা. এর এই বিতরণ ব্যবস্থায় মুনাফিকরা হতাশ হয়ে পড়ে। তারা অভিযোগ উঠানো শুরু করে। আসল কথা তো বলতে পারেনা। তাই বলে, তাদেরকে সম্পদের উপর কর্তৃত্ব করার
সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। আর বন্টন ইনসাফপূর্ণ হচ্ছে না, পক্ষপাতিত্ব করা হচ্ছে।
û
তাফসীরে ইবনে কাসীরঃ
-
রাসূল সা. যাকাতের মাল যখন এদিক ওদিক বন্টন করে দেন, তখন আনসারদের কেউ একজন
উচ্চস্বরে বলেঃ এটা ইনসাফ নয়। তখন এই আয়াত নাযিল হয়।
-
আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেনঃ
بينا النبي صلى الله عليه وسلم
يقسم مالاً إذ جاءه المقداد بن ذي الخويصرة التميمي، وهو حرقوص بن زهير، أصل
الخوارج فقال: اعدل يا رسول الله، فقال: " ويلك ومن يعدل إذا لم أعدل " فنزلت هذه الآية
রাসূলুল্লাহ সা. যখন হুনাইনির গনীমতের মাল বন্ট
করছিলেন, তখন যুলখুওয়াইসিরা হারকুস নামক এক লোক আপত্তি করে
বলেঃ “ইনসাফ করুন, কেননা আপনি ইনসাফ
করছেন না।” তখন রাসূল সা. তাকে বলেনঃ “তুমি ধ্বংস হও, যদি
না আমি ইনসাফ করে থাকি।” তখন এই আয়াত নাযিল হয়।
﴿وَلَوْ أَنَّهُمْ رَضُوا
مَا آتَاهُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَقَالُوا حَسْبُنَا اللَّهُ سَيُؤْتِينَا
اللَّهُ مِن فَضْلِهِ وَرَسُولُهُ إِنَّا إِلَى اللَّهِ رَاغِبُونَ﴾
৫৯। কতই না ভাল হতো, আল্লাহ ও তার রসূল যা কিছুই
তাদের দিয়েছিলেন তাতে যদি তারা সন্তুষ্ট থাকতো। এবং বলতো, “আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ঠ। তিনি নিজের অনুগ্রহ থেকে আমাদের আরো অনেক কিছু দেবেন এবং
তাঁর রসূলও আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন। আমরা আল্লাহরই প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রেখেছি”।
﴿وَلَوْ أَنَّهُمْ رَضُوا مَا آتَاهُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ﴾
কতই না ভাল হতো, আল্লাহ ও তার রসূল যা কিছুই
তাদের দিয়েছিলেন তাতে যদি তারা সন্তুষ্ট থাকতো।
û
তাফহীমুল কুরআন বলছেঃ
-
যদি তারা সন্তুষ্ট থাকতোঃ
*
গনিমতের মাল থেকে যা কিছু তাদেরকে দেয়া হয়।
*
আল্লাহর অনুগ্রহে যা কিছু তারা উপার্জন করে।
*
অর্থ উপার্জনে আল্লাহর দেয়া উপকরণের মাধ্যমে যে সচ্ছলতা ও সমৃদ্ধি লাভ করেছে।
*
যদি তারা এই সবকে নিজেদের জন্য যথেষ্ট মনে করতো।
﴿وَقَالُوا حَسْبُنَا اللَّهُ سَيُؤْتِينَا اللَّهُ مِن فَضْلِهِ
وَرَسُولُهُ﴾
এবং বলতো, “আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ঠ। তিনি
নিজের অনুগ্রহ থেকে আমাদের আরো অনেক কিছু দেবেন এবং তাঁর রসূলও আমাদের প্রতি
অনুগ্রহ করবেন।
û
তাফহীমুল কুরআন বলছেঃ
-
আরো অনেক কিছু মানে যাকাত ছাড়াও অন্যান্য যে সব সম্পদ রাষ্ট্রের কোষাগারে আসতে
থাকবে, তা থেকে বিধি অনুযায়ী পুর্বের ন্যায় অংশ লাভ করা।
﴿إِنَّا إِلَى اللَّهِ رَاغِبُونَ﴾
আমরা আল্লাহরই প্রতি দৃষ্টি
নিবদ্ধ করে রেখেছি”।
û
তাফহীমুল কুরআন বলছেঃ
-
এর মানে হলোঃ
-
দুনিয়া বা তার তুচ্ছ সম্পদের প্রতি আমাদের নজর নাই।
-
আমাদের নজর আল্লাহর প্রতি, আল্লাহর অনুগ্রহের প্রতি। তার সন্তুষ্টির প্রতি।
-
আমাদের সকল আশা আকাংখা আল্লাহকে কেন্দ্র করে। তিনি যা দেন তাতেই আমরা সন্তুষ্ট।
0 Comments