তেলাওয়াত ও অনুবাদঃ
وَلَقَدۡ اَخَذَ اللّٰهُ مِيۡثَاقَ بَنِىۡۤ
اِسۡرٰٓءِيۡلَۚ وَبَعَثۡنَا مِنۡهُمُ اثۡنَىۡ عَشَرَ نَقِيۡبًاؕ وَّقَالَ
اللّٰهُ اِنِّىۡ مَعَكُمۡؕ لَٮِٕنۡ اَقَمۡتُمُ الصَّلٰوةَ وَاٰتَيۡتُمُ
الزَّكٰوةَ وَاٰمَنۡتُمۡ بِرُسُلِىۡ وَعَزَّرۡتُمُوۡهُمۡ وَاَقۡرَضۡتُمُ اللّٰهَ
قَرۡضًا حَسَنًا لَّاُكَفِّرَنَّ عَنۡكُمۡ سَيِّاٰتِكُمۡ وَلَاُدۡخِلَنَّكُمۡ
جَنّٰتٍ تَجۡرِىۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُۚ فَمَنۡ كَفَرَ بَعۡدَ ذٰلِكَ
مِنۡكُمۡ فَقَدۡ ضَلَّ سَوَآءَ السَّبِيۡلِ
১২) আল্লাহ বনী ইসরাঈলদের থেকে পাকাপোক্ত অঙ্গীকার
নিয়েছিলেন এবং তাদের মধ্যে বারো জন ‘নকীব’ নিযুক্ত করেছিলেন। আর তিনি তাদেরকে বলেছিলেনঃ
আমি তোমাদের সাথে আছি। যদি তোমরা নামায কায়েম করো, যাকাত দাও,
আমার রসূলদেরকে মানো ও তাদেরকে সাহায্য করো এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দিতে থাকো, তাহলে
নিশ্চিত বিশ্বাস করো আমি তোমাদের থেকে তোমাদের পাপগুলো মোচন করে দেবো এবং তোমাদের এমন সব বাগানের মধ্যে প্রবেশ করাবো যার তলদেশ দিয়ে ঝরণাধারা
প্রবাহিত হবে। কিন্তু এরপর তোমাদের মধ্য থেকে যে
ব্যক্তি কুফরী নীতি অবলম্বন করবে, সে আসলে সাওয়া-উস-সাবীল তথা সরল সঠিক পথ হারিয়ে ফেলেছে।
فَبِمَا نَقۡضِهِمۡ مِّيۡثَاقَهُمۡ لَعَنّٰهُمۡ
وَجَعَلۡنَا قُلُوۡبَهُمۡ قٰسِيَةًۚ يُّحَرِّفُوۡنَ الۡكَلِمَ عَنۡ مَّوَاضِعِهٖۙ
وَنَسُوۡا حَظًّا مِّمَّا ذُكِّرُوۡا بِهٖ وَلَا تَزَالُ تَطَّلِعُ عَلٰى خَآٮِٕنَةٍ مِّنۡهُمۡ اِلَّا
قَلِيۡلاً مِّنۡهُمۡۚ فَاعۡفُ عَنۡهُمۡ وَاصۡفَحۡؕ اِنَّ اللّٰهَ يُحِبُّ
الۡمُحۡسِنِيۡنَ
১৩) তারপর তাদের নিজেদের অঙ্গীকার ভঙ্গের কারণেই আমি
তাদেরকে নিজের রহমত থেকে দূরে নিক্ষেপ করেছি এবং তাদের হৃদয় কঠিন করে দিয়েছি। এখন তাদের
অবস্থা হচ্ছে এই যে, তারা শব্দের হেরফের করে কথাকে একদিক থেকে
আর একদিকে নিয়ে যায়, যে শিক্ষা তাদেরকে দেয়া হয়েছিল তার বড়
অংশ তারা ভুলে গেছে এবং প্রায় প্রতিদিনই তাদের কোন না কোন বিশ্বাসঘাতকতার খবর তুমি
লাভ করে থাকো, তাদের অতি অল্প সংখ্যক লোকই এ দোষমুক্ত আছে
(কাজেই তারা যখন এ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে তখন তাদের যে কোন কুকর্ম মোটেই অপ্রত্যাশিত
নয়) । তাই তাদেরকে মাফ করে দাও এবং তাদের কাজকর্মকে ক্ষমার
দৃষ্টিতে দেখো। আল্লাহ তাদেরকে পছন্দ করেন যারা সৎকর্মশীলতা ও
পরোপকারের নীতি অবলম্বন করে।
وَمِنَ الَّذِيۡنَ قَالُوۡۤا اِنَّا نَصٰرٰٓى
اَخَذۡنَا مِيۡثَاقَهُمۡ فَنَسُوۡا حَظًّا مِّمَّا ذُكِّرُوۡا بِهٖ فَاَغۡرَيۡنَا بَيۡنَهُمُ الۡعَدَاوَةَ
وَالۡبَغۡضَآءَ اِلٰى يَوۡمِ الۡقِيٰمَةِؕ وَسَوۡفَ يُنَبِّئُهُمُ اللّٰهُ بِمَا
كَانُوۡا يَصۡنَعُوۡنَ
১৪) এভাবে যারা বলেছিল আমরা “নাসারা” তাদের থেকেও আমি পাকাপোক্ত অঙ্গীকার নিয়েছিলাম। কিন্তু
তাদের স্মৃতিপটে যে শিক্ষা সংবদ্ধ করে দেয়া হয়েছিল তারও বড় অংশ তারা ভুলে গেছে। শেষ
পর্যন্ত আমি তাদের মধ্যে চিরকালের জন্য শত্রুতা ও পারস্পরিক হিংসা –বিদ্বেষের বীজ
বপন করে দিয়েছি। আর এমন এক সময় অবশ্যি আসবে যখন আল্লাহ
তাদের জানিয়ে দেবেন তারা দুনিয়ায় কি করতো।
يٰۤاَهۡلَ الۡكِتٰبِ قَدۡ جَآءَكُمۡ رَسُوۡلُنَا
يُبَيِّنُ لَكُمۡ كَثِيۡرًا مِّمَّا كُنۡتُمۡ تُخۡفُوۡنَ مِنَ الۡكِتٰبِ
وَيَعۡفُوۡا عَنۡ كَثِيۡرٍ ؕ قَدۡ جَآءَكُمۡ مِّنَ
اللّٰهِ نُوۡرٌ وَّكِتٰبٌ مُّبِيۡنٌۙ
১৫) হে আহলি কিতাব! আমার রসূল তোমাদের কাছে এসে গেছে। সে
আল্লাহর কিতাবের এমন অনেক কথা তোমাদের কাছে প্রকাশ করছে যেগুলো তোমরা গোপন করে
রাখতে এবং অনেক ব্যাপারে ক্ষমার চোখেও দেখছে। তোমাদের
কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে এসে গেছে এক জ্যোতি এবং আমি একখানি সত্য দিশারী কিতাব,
يَهۡدِىۡ بِهِ اللّٰهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضۡوٰنَهٗ
سُبُلَ السَّلٰمِ وَيُخۡرِجُهُمۡ مِّنَ الظُّلُمٰتِ اِلَى النُّوۡرِ بِاِذۡنِهٖ
وَيَهۡدِيۡهِمۡ اِلٰى صِرٰطٍ مُّسۡتَقِيۡمٍ
১৬) যার মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর সন্তোষকামী লোকদেরকে
শান্তি ও নিরাপত্তার পথপ্রদর্শন করেন এবং নিজ ইচ্ছাক্রমে
তাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোকের দিকে নিয়ে আসেন এবং সরল-সঠিক পথের দিকে
পরিচালিত করেন।
لَّقَدۡ كَفَرَ الَّذِيۡنَ قَالُوۡۤا اِنَّ
اللّٰهَ هُوَ الۡمَسِيۡحُ ابۡنُ مَرۡيَمَؕ قُلۡ فَمَنۡ يَّمۡلِكُ مِنَ اللّٰهِ
شَيۡـًٔا اِنۡ اَرَادَ اَنۡ يُّهۡلِكَ الۡمَسِيۡحَ ابۡنَ مَرۡيَمَ وَاُمَّهٗ
وَمَنۡ فِىۡ الۡاَرۡضِ جَمِيۡعًاؕ وَلِلّٰهِ مُلۡكُ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِ
وَمَا بَيۡنَهُمَاؕ يَخۡلُقُ مَا يَشَآءُؕ وَاللّٰهُ عَلٰى كُلِّ شَىۡءٍ
قَدِيۡرٌ
১৭) যারা বলে, “মারয়াম পুত্র মসীহই
আল্লাহ” তারা অবশ্যি কুফরী করেছে। হে
মুহাম্মাদ! ওদেরকে বলে দাও, আল্লাহ যদি মারয়াম পুত্র মসীহকে,
তার মাকে ও সারা দুনিয়াবাসীকে ধ্বংস করতে চান, তাহলে তাঁকে তাঁর এ সংকল্প থেকে বিরত রাখার ক্ষমতা কার আছে? আল্লাহ তো আকাশসমূহের এবং এ দু’য়ের মধ্যে যা কিছু
আছে সবকিছুর মালিক। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন। তাঁর
শক্তি সবকিছুর ওপর পরিব্যাপ্ত।
وَقَالَتِ الۡيَهُوۡدُ وَالنَّصٰرٰى نَحۡنُ
اَبۡنٰٓؤُا اللّٰهِ وَاَحِبَّآؤُهٗؕ قُلۡ فَلِمَ يُعَذِّبُكُمۡ بِذُنُوۡبِكُمۡؕ
بَلۡ اَنۡتُمۡ بَشَرٌ مِّمَّنۡ خَلَقَؕ يَغۡفِرُ لِمَنۡ يَّشَآءُ وَيُعَذِّبُ
مَنۡ يَّشَآءُؕ وَلِلّٰهِ مُلۡكُ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِ وَمَا بَيۡنَهُمَا وَاِلَيۡهِ الۡمَصِيۡرُ
১৮) ইহুদী ও খৃস্টানরা বলে, “আমরা
আল্লাহর সন্তান এবং তাঁর প্রিয়পাত্র।” তাদেরকে
জিজ্ঞেস করো, তাহলে তোমাদের গোনাহের জন্য তিনি তোমাদের
শাস্তি দেন কেন? আসলে তোমরাও ঠিক তেমনি মানুষ যেমন আল্লাহ
অন্যান্য মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তিনি যাকে চান মাফ করে দেন
এবং যাকে চান শাস্তি দেন। পৃথিবী ও আকাশসমূহ এবং এ দুয়ের মধ্যকার
যাবতীয় সৃষ্টি আল্লাহর মালিকানাধীন এবং তাঁরই দিকে সবাইকে যেতে হবে।
يٰۤاَهۡلَ الۡكِتٰبِ قَدۡ جَآءَكُمۡ رَسُوۡلُنَا
يُبَيِّنُ لَكُمۡ عَلٰى فَتۡرَةٍ مِّنَ الرُّسُلِ اَنۡ تَقُوۡلُوۡا مَا جَآءَنَا
مِنۡۢ بَشِيۡرٍ وَّلَا نَذِيۡرٍ فَقَدۡ جَآءَكُمۡ بَشِيۡرٌ وَّنَذِيۡرٌؕ
وَاللّٰهُ عَلٰى كُلِّ شَىۡءٍ قَدِيۡرٌ
১৯) হে আহলি কিতাব! আমার এ রসূল এমন এক সময় তোমাদের
কাছে এসেছেন এবং তোমাদেরকে দ্বীনের সুস্পষ্ট শিক্ষা দিচ্ছেন যখন দীর্ঘকাল থেকে
রসূলদের আগমনের সিল্সিলা বন্ধ ছিল, তোমরা যেন একথা বলতে না
পারো, আমাদের কাছে তো সুসংবাদ দানকারী ও ভীতি প্রদর্শনকারী
আসেনি। বেশ, এই দেখো, এখন সেই সুসংবাদ দানকারী ও ভীতি প্রদর্শনকারী এসে গেছেন এবং আল্লাহ
সবকিছুর ওপর শক্তিশালী।
পূর্ববর্তী আয়াতের সাথে যোগসূত্রঃ
§ পূর্বের আয়াত মুমিনদের
অঙ্গিকারের কথামালা উল্লেখ করা হয়েছিল। এখনকার আয়াত গুলোতে বনী ইসরাঈল বা
আহলে কিতাবদের অঙ্গিকার দিয়ে শুরু করা হয়েছে। যাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ওদের কাছ
থেকেও অংগীকার নেয়া হয়েছিল।
ব্যাখ্যাঃ
﴿وَلَقَدۡ اَخَذَ اللّٰهُ
مِيۡثَاقَ بَنِىۡۤ اِسۡرٰٓءِيۡلَۚ وَبَعَثۡنَا مِنۡهُمُ اثۡنَىۡ عَشَرَ نَقِيۡبًاؕ
وَّقَالَ اللّٰهُ اِنِّىۡ مَعَكُمۡؕ لَٮِٕنۡ اَقَمۡتُمُ الصَّلٰوةَ وَاٰتَيۡتُمُ
الزَّكٰوةَ وَاٰمَنۡتُمۡ بِرُسُلِىۡ وَعَزَّرۡتُمُوۡهُمۡ وَاَقۡرَضۡتُمُ اللّٰهَ
قَرۡضًا حَسَنًا لَّاُكَفِّرَنَّ عَنۡكُمۡ سَيِّاٰتِكُمۡ وَلَاُدۡخِلَنَّكُمۡ
جَنّٰتٍ تَجۡرِىۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُۚ فَمَنۡ كَفَرَ بَعۡدَ ذٰلِكَ
مِنۡكُمۡ فَقَدۡ ضَلَّ سَوَآءَ السَّبِيۡلِ﴾
১২) আল্লাহ বনী ইসরাঈলদের থেকে পাকাপোক্ত অঙ্গীকার নিয়েছিলেন এবং তাদের মধ্যে বারো জন ‘নকীব’ নিযুক্ত করেছিলেন। আর তিনি তাদেরকে বলেছিলেনঃ আমি তোমাদের সাথে আছি। যদি তোমরা নামায কায়েম করো, যাকাত দাও, আমার রসূলদেরকে মানো ও তাদেরকে সাহায্য করো এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দিতে থাকো, তাহলে নিশ্চিত বিশ্বাস করো আমি তোমাদের থেকে তোমাদের পাপগুলো মোচন করে দেবো এবং তোমাদের এমন সব বাগানের মধ্যে প্রবেশ করাবো যার তলদেশ দিয়ে ঝরণাধারা প্রবাহিত হবে। কিন্তু এরপর তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি কুফরী নীতি অবলম্বন করবে, সে আসলে সাওয়া-উস-সাবীল তথা সরল সঠিক পথ হারিয়ে ফেলেছে।
§ وَلَقَدۡ اَخَذَ اللّٰهُ مِيۡثَاقَ بَنِىۡۤ اِسۡرٰٓءِيۡلَۚ
وَبَعَثۡنَا مِنۡهُمُ اثۡنَىۡ عَشَرَ نَقِيۡبًا-আল্লাহ
বনী ইসরাঈলদের থেকে পাকাপোক্ত অঙ্গীকার নিয়েছিলেন এবং তাদের মধ্যে বারো জন ‘নকীব’
o
নকীব মানে পর্যবেক্ষক, রক্ষণাবেক্ষণকারী ও
তদন্তকারী।
o
বনী
ইসরাঈলের ১২ গ্রোত্রে ১২জন নকীব নিয়োগ করা হয়েছিল-যাদের কাজ ছিল নিজ গ্রোত্রের লোকদের প্রতি নজরু রাখা, যাতে তাদেরকে
বেদ্বীনি ও নৈতিকতা বিরোধী কার্যকলাপ
থেকে রক্ষা করা চেষ্টা করা যায়।
o
বাইবেলে
এই নকীবদের সাধারণ সর্দারের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। কিন্তু কুরআনে তাদেরকে নৈতিক ও ধর্মীয় পর্যবেক্ষক
ও রক্ষণাবেক্ষণকারী বলে গন্য করেছে।
o
এখানে
এই অঙ্গিকারের কথা উল্লেখ করে এবং অঙ্গিকার ভংগকারীদের অবস্থা বর্ণনা করে
মুসলমানদের অঙ্গিকার ভংগ করা থেকে বিরত থাকার ইংগিত দেয়া হচ্ছে।
o
তাফসীরে
ইবনে কাসিরে ১২জন নকীব এর নাম ও তাদের গোত্র উল্লেখ করা হয়েছে এভাবেঃ
১. আদবীর গোত্র-শামুন ইবনে আকওয়ান।
২. শামউন গোত্র-শাফাত ইবনে জাদ্দী।
৩. ইয়াহুদা গোত্র-কালিব ইবনে ইউফনা।
৪. ফীখাইল গোত্র-ইবনে ইউসুফ।
৫. ইফরাঈম গোত্র-ইউশা ইবনে নুন।
৬. বিন ইয়ামিন গোত্র-কিতাতামী ইবনে ওয়াফুন।
৭. যাবুলুন গোত্র-জাদ্দী ইবনে শুরী।
৮. মিনশারী গোত্র-হাদ্দী ইবনে সুফী।
৯. দান আমলাসিল গোত্র-ইবনে হামল।
১০. আশা গোত্র-সাতুর।
১১. নাফতালী গোত্র-বাহর।
১২. ইয়াখারা গোত্র-লাবিল।
o আল্লাহর রাসূল সা. মদীনার আনসারদের
কাছ থেকে যে বাইয়াত বা অঙ্গিকার নিয়েছিলেন-যা ইতিহাসে আকাবার শপথ নামে পরিচিত। তাতেও ১২জন সর্দার ছিলেন। তারা হলেন আউস গোত্রের ৩জন আর খাযরাজ গোত্রের ৯জন। তারা হলেনঃ
১. হযরত উসায়েদ ইবনে হুযায়ের রা.
২. হযরত সা‘দ ইবনে হালিমা রা.
৩. হযরত রুফায়া ইবনে আব্দুল মুগযির রা. অথবা আব্দুল হাইসাম ইবনে তাইহান রা.
৪. হযরত আবু উমামাহ আসআদ ইবনে যাররাহ রা.
৫. হযরত সাদ ইবনে রাবী রা.
৬. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রা.
৭. হযরত রাফি ইবনে মালিক ইবনে আযলান রা.
৮. হযরত বারা ইবনে মারূর রা.
৯. হযরত উবাইদা ইবনে সামিত রা.
১০. হযরত সা‘দ ইবনে উবাইদাহ রা.
১১. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে হারাম রা.
১২. হযরত মুনযির ইবনে আমর ইবনে খামরাস রা.
o উম্মতে মুহাম্মদীতে ১২জন খলিফা
হবেন।
হযরত মাশরুক রা. বর্ণিত
হাদীসঃ
عن مسروق قال كنا جلوساً عند عبد الله بن مسعود، وهو يقرئنا القرآن،
فقال له رجل يا أبا عبد الرحمن هل سألتم رسول الله صلى الله عليه وسلم كم يملك هذه
الأمة من خليفة؟ فقال عبد الله ما سألني عنها أحد منذ قدمت العراق قبلك، ثم قال
نعم، ولقد سألنا رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال " اثنا عشر كعدة نقباء بني إسرائيل " هذا حديث غريب
হযরত
মাশরুক থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেনঃ আমরা আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর পাশে বসেছিলাম। তিনি সে সময় আমাদেরকে কুরআন পাঠ শিক্ষা দিচ্ছিলেন। এমন সময় তাকে এক ব্যক্তি
জিজ্ঞেস করলোঃ হে আবু আব্দুর রহমান, এ উম্মতের কতজন খলিফা হবেন? একথা কি আপনারা রাসূল সা.কে জিজ্ঞেস করেছিলেন? হযরত আব্দুল্লাহ
ইবনে মাসউদ বললেনঃ আমি যখন থেকে ইরাকে এসেছি, কেউ আমাকে এরপূর্বে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেনি। এরপর তিনি বললেনঃ হ্যাঁ! এ সম্পর্কে আমরা
রাসূল সা.কে
জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ ১২জন হবে। বনী ইসরাঈলের দলপতিও এমন সংখ্যা ছিল। (হাদীসটি গরীব)
§ ১২জন খলিফার এই হিসাব বের করার চেষ্টা করেছেন ইমাম ইবনে
কাছীর তার তাফসীরে এই ভাবেঃ
১. খোলাফায়ে রাশেদার ৪ খলিফা।
২. উমর ইবনে আব্দুল আজীজ।
৩. বনু আব্বাসের মধ্যে কোন
কোন খলিফা।
৪. ইমাম মাহদী।
§ وَاٰمَنۡتُمۡ بِرُسُلِىۡ وَعَزَّرۡتُمُوۡهُمۡ -
আমার রসূলদেরকে মানো ও তাদেরকে সাহায্য করো
o
মানে আমার পক্ষ থেকে যে রাসূলই আসুক, যদি তোমরা তার দাওয়াত কবুল করতে
থাকো এবং সাহায্য করতে থাকো।
§ وَاَقۡرَضۡتُمُ اللّٰهَ قَرۡضًا حَسَنًا - এবং
আল্লাহকে উত্তম ঋণ দিতে থাকো
o
আল্লাহকে কর্জে হাসানা দেয়া মানে-আল্লাহর পথে ধন সম্পদ ব্যয় করতে
থাকা।
o
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা যেহেতু আল্লাহর পথে ব্যয় করা সম্পদকে কয়েক গুণ
বাড়িয়ে ফেরত দিয়ে থাকেন, সেহেতু কুরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করাকে
আল্লাহ ঋণ হিসাবে চিত্রিত করেছেন।
o
কর্জের একটা শর্ত হলোঃ তা হবে উত্তম ঋণ বা কর্জে হাসানা। মানে বৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ আল্লাহর
পথে বয় হবে। আল্লাহর বিধান অনুযায়ী ব্যয় হবে। আন্তরিকতা, সদিচ্ছা ও সৎ সংকল্প সহকারে ব্যয় হবে।
§ لَّاُكَفِّرَنَّ عَنۡكُمۡ سَيِّاٰتِكُمۡ - তাহলে
নিশ্চিত বিশ্বাস করো আমি তোমাদের থেকে তোমাদের পাপগুলো মোচন করে দেবো
o
পাপ মোচন করার দু’টি অর্থঃ
১. সত্য ও সঠিক পথে চলা আর আল্লাহ নির্দেশ অনুযায়ী চিন্তা ও
কাজের প্রভাবে মানুষের নফস নানাবিধ পাপের ময়লা থেকে এবং জীবন বিভিন্ন প্রকারের দোষ
ক্রটি থেকে মুক্ত হয়ে যাবে।
২. উপরোক্ত প্রক্রিয়ায় যদি কারো গুনাহ থেকে যায়, তাহলে
আল্লাহ তাকে মেহেরবানী করে জবাবদিহির সম্মুখীন করেবন না। বরং আল্লাহ দয়া করে খাতা থেকে
গুনাহ গুলো ডিলিট করে দেবেন।
-
যে মৌলিক হেদায়াত ও সংশোধন নীতি গ্রহণ করে, আল্লাহ ছোটখাট ও পরোক্ষ গোনাহের
জন্য পাকড়াও করার কঠোর নীতি অবলম্বন করবেন না।
§
فَقَدۡ ضَلَّ سَوَآءَ
السَّبِيۡلِ - সে আসলে
সাওয়া-উস-সাবীল তথা সরল সঠিক পথ হারিয়ে ফেলেছে।
o
سَوَآءَ السَّبِيۡلِ মানে সরল-সঠিক ভারসাম্যপূর্ণ মধ্যম পথ। কিন্তু এর মাধ্যমে سَوَآءَ السَّبِيۡلِ এর অর্থ যথার্থ ভাবে প্রকাশ হয়না। سَوَآءَ السَّبِيۡلِ পাওয়ার পর যারা সে পথ হারিয়ে
ফেলেছে, সে ধ্বংসের
পথে অগ্রসর হয়েছে।
§
سَوَآءَ السَّبِيۡلِ সম্পর্কে মনস্তাত্মিক ব্যাখ্যাঃ
o মানুষের অস্তিত্বের মাঝে বসবাস করে
ছোটখাটো একটি জগত।
o মানুষের অস্তিত্বের এই জগতে অসংখ্য শক্তি ও যোগ্যতার বসবাস। যেমনঃ মানুষে
ইচ্ছা, আকাংখা, আবেগ, অনুভূতি ও
বিভিন্ন ধরনের প্রবণতা ইত্যাদি।
o মানুষের দেহ, প্রবৃত্তি, আত্মা ও মানবিক প্রকৃতির নানাবিধ চাহিদা রয়েছে প্রতিনিয়ত।
o এক মানুষ থেকে আরেক মানুষ-এভাবে একটা
সমাজ। আর সমাজের সকল মানুষের নানান ধরণের দেহ, প্রবৃত্তি,
আত্মা ও মানবিক প্রকৃতির চাহিদা প্রকাশিত হয় সব সময়।
o এই সব চাহিদা একেক জনের একেক রকমের। একজনেরটা আরেকজনের সাথে
মিলেনা। ফলে সভ্যতা ও সংস্কৃতির উন্নয়ন আর বিকাশের সাথে সাথে
বাড়ে জটিলতা।
o মানবিক প্রয়োজন ও মানব সভ্যতা বিনির্মানে সারা দুনিয়াতে
জীবন ধারণের উপকরণ সমূহ কাজে লাগানোর প্রশ্নে দেখা দেয় মানুষের মাঝে ছোট বড় সমস্যা
বা ইখতিলাফ।
o মানুষ দৃষ্টিগত বা প্রাকৃতিক দূর্বলতার ভারসাম্যপূর্ণ ভাবে
সকল সমস্যার ব্যাপারে দৃষ্টি দিতে পারেনা। ফলে কিছু কিছু সমস্যা
অবহেলিত থেকে যায় দৃষ্টিভংগীর কারণে অথবা প্রাকৃতিক ও মানবিক দূর্বলতার কারণে। আর এর
ফলেঃ
§ সকল সমস্যার ব্যাপারে ইনসাফ রক্ষা সম্ভব হয় না।
§ সকল ইচ্ছা ও আকাংখা পূর্ণ করা যায়না।
§ সকল আবেগ অনুভুতিতে ভারসাম্য নজর দেয়া যায় না।
§ ন্যায় ও সমতা চাহিদা ও দাবী অনুযায়ী রক্ষা করা যায়না।
§ সমাজের সকল সমস্যা যথোপযুক্ত গুরুত্ব আরোপ করে সমাধান বের
করা যায় না।
o মানুষ যখন নিজেই নিজের নেতা হয় অথবা বিধাতায় পরিণত হয়, তথা নিজের
সমস্যা নিজেই সামাধানের দায়িত্ব নেয়, তখন যা হয়ঃ
§ করা প্রয়োজন এমন অনেক বস্তু থেকে একটি বস্তুর দিকে ঝুকে পড়ে।
§ সমাধান করা প্রয়োজন এমন সমস্যা গুলোর কোন একটি সমস্যার
দিকে ঝুকে পড়ে।
§ করা প্রয়োজন বা সমাধান প্রয়োজন এমন অন্যান্য দিক, প্রয়োজন ও
সমস্যার সাথে নিজ ইচ্ছায় অথবা অনিচচ্ছায় বে-ইনসাফী করতে থাকে।
o মানুষ তার নিয়ত ভাল রেখে যখন তার দৃষ্টিতে করা প্রয়োজন এমন
কোন একটি সিদ্ধান্তকে জোরপূর্বক প্রতিষ্ঠিত করতে যায়, তখন জীবনের
ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। সে ভারসাম্যহীন ভাবে বাঁকা
পথে চলতে চলতে বক্রতার শেষ প্রান্তে পৌছে। যা সমাজের অন্যান্য মানুষের
জন্য অসহনীয় হয়ে উঠে।
o এমতাবস্তায় যে সমস্ত দিক, প্রয়োজন ও
সমস্যার সাথে বে-ইনসাফী করা হয়েছিল, তারা
বিদ্রোহ করা শুরু করে এবং ইনসাফের জন্য চাপ দেয়। কিন্তু তারা ইনসাফ পায়না। কারণঃ
§ ইনসাফের দাবী অনুযায়ী যখন অন্য কোন একটা সমস্যাকে হাইলাইট
করা হয়, তখন বাকী সমস্যা গুলো পূর্বের ন্যায়
অবহেলিত থাকে। এভাবেই বারবার ঘটনার পূণরাবৃত্তি হয়।
o এই ভাবে প্রাকৃতিক কারণে মানুষে পক্ষে সরল সোজা পথে চলা
সম্ভব হয়না। বরং যতবার মানুষ নিজের ইচ্ছা মতো যে সমস্যাকে
গুরুত্ব দিয়ে নিজের বানানো পথে সমাধান খোঁজে, ততবার নতুন নতুন এক একটি
সমস্যা সৃষ্টি হয় এবং নতুন নতুন বাঁকা পথ তৈরী হয়।
o বিধায় এ যতবার যথগুলো পথ নিজেদের জন্য নিজে তৈরী করেছে, ততবার সব
গুলো পথে নিজদের জন্য একএকটি বক্ররেখার তৈরী করেছে। যা তাকে কোন সময়ই গন্তব্যে
পৌছায় না।
o মানুষের সমাজে অসংখ্য মানুষের নিজেদের তৈরী করা পথ গুলো
একেকটি বক্র রেখা। আর সেই অসংখ্য বক্ররেখার মাঝে একটি রেখা
চলে গেছে-যার অবস্থান ঠিক মধ্যভাগে।
o এই মধ্যভাগে চলা রেখা বা পথে মানুষের সমস্ত শক্তি সামর্থ্য, প্রবণতা,
আশা-আকাংখা, আবেগ, অনুভূতি,
তার দেহ ও আত্মার সমস্ত দাবী ও চাহিদা এবং তার জীবনের যাবতীয়
সমস্যার সাথে পূর্ণ ইনসাফ করা হয়েছে। যেপথে
নেইঃ
§ কোন প্রকার বক্রতা।
§ কোন পক্ষপাতিত্ব।
§ কোন সুযোগ-সুবিধা দান।
§ কোন এক দিকের সাথে জুলুম ও বেইনসাফী।
o মানুষের জীবনের সঠিক উন্নয়ন, ক্রমবিকাশ
এবং তার সাফল্য ও অগ্রগতির জন্য এ ধরনের একটি পথ একান্ত অপরিহার্য।
o মানুষের মূল প্রকৃতি এ পথেরই সন্ধানে ফিরছে।
o মানষ নিজের চেষ্টায় এ রাজপথের
সন্ধান লাভ করতে পারেনা। একমাত্র আল্লাহই তাকে এ পথের
সন্ধান দিতে পারেন।
o মানুষকে এ পথের সন্ধান দেবার জন্য
মানুষের স্রষ্টা তাঁর প্রতিনিধি বা রাসূল পাঠিয়েছেন।
o কুরআন এ পথকেই বলা হয়েছে ‘সাওয়া-উস-সাবীল’
ও ‘সিরাতুল মুস্তাকীম’।
o এই রাজপথটি শুরু দুনিয়া থেকে শেষ আখেরাতে, চলে গেছে এই
পথ অসংখ্য বক্র পথে মধ্য দিয়ে।
o এই রাজপথটি ধরে যে অগ্রসর হবে সে হবে দুনিয়ার জীবনে সঠিক পথের
যাত্রী আর আখেরাতে হবে সফলকাম।
o যে এই পথ হারিয়ে হবে বিভ্রান্ত, চলবে ভূল পথে,
সে আখেরাতে নিক্ষিপ্ত হবে জাহান্নামে। কারণ সকল বক্র পথের লাস্ট
ডেসটিনেশন বা গন্তব্য হলো জাহান্নাম।
§
سَوَآءَ السَّبِيۡلِ সম্পর্কে অজ্ঞ দার্শনিকদের
ব্যাখ্যাঃ
o অজ্ঞ দার্শনিকরা এর নাম দিয়েছেন Dialectic Processবা দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়া। যা মানুষকে এক প্রান্তিকতা
থেকে অন্য প্রান্তিকতায় শুধু ঘুরাতে থাকে। তাদের মতে এটা নাকি মানব
জীবনের উন্নতি, অগ্রগতি ও ক্রমবিকাশের স্বাভাবিক পথ।
o তাদের নির্বুদ্বিতার কারণে তারা এ ধারণা করে বসে যে, এক চরমপন্থী
দাবী (Thesis) মানুষকে একদিকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
o এর চরমপন্থী দাবীর প্রতিক্রিয়ার আরেকটি চরমপন্থী দাবী (Antithesis) এই দাবীকে ঠেলে আরেক প্রান্তে নিয়ে যায়।
o আর এই দুই দাবীর মিশ্রণে তৈরী হয় জীবনের অগ্রগতি ও বিকাশের
তৃতীয় পথ (Synthesis)। অজ্ঞ দার্শনিকদের মতে এটিই
হলো মাবন জীবনের ক্রমোন্নতি ও ক্রমবিকাশের পথ।
o কিন্তু তাদের এই দাবী ঠিক নয়। বরং এই সব গুলো হচ্ছে
মানুষের জীবনের দূর্ভাগ্যেল ধাক্কা। যা মানুষকে সঠিক পথে
পরিচালিত করতে বা মানুষের ক্রমবিকাশের পথে বারবার প্রতিবন্ধকতাই সৃষ্টি করছে। একটি চরম
পন্থা ও প্রান্তিকতাবাদ আরেকটি চরম পন্থা ও প্রান্তিকতাবাদের ঘষাঘষিতে মানুষর ‘সাওয়া-উস-সাবীল’ তথা সঠিক সরল পথ থেকে অনেক অনেক দূরে সরে যায়।
o ‘সাওয়া-উস-সাবীল’ এর
ধারে কাছে না আসার কারণে বেইনসাফীর শিকারদের মাঝে চলে বিদ্রোহ। এভাবে চলতে চলতে চলতে তারা ‘সাওয়া-উস-সাবীল’ এর কাছে আসতে থাকে। তারা ধীরে ধীরে আপোষ করতে
থাকে, ধীরে ধীরে তারা মানুষের জন্য উপকারী ও লাভ জনক বস্তুর অস্তিত্ব লাভ করে।
o এমন পরিস্থিতিতে তাদেরকে ‘সাওয়া-উস-সাবীল’ এর সন্ধান দেয়ার মতো আলোর অনুপস্থিতির কারণে তারা সেই স্থানে ঠিকে থাকে
না। তখন ভিন্ন আরেকটি প্রান্তিকতার দিকে চলে যায়।
o এসব সংকীর্ণ দৃষ্টির দার্শিনিকদের মাঝে যদি কুরআনের আলো
পৌছতো, তাহলে তারা ‘সাওয়া-উস-সাবীল’
কি বস্তু, তা দেখতে পেতেন।
o ‘সাওয়া-উস-সাবীল’ দেখতে
পেলে তারা বুঝতেনঃ
§ ‘সাওয়া-উস-সাবীল’ মানুষের
একমাত্র সঠিক ও নির্ভুল পথ।
§ বক্র রেখার ক্রমাগত প্রান্তিকাতা মানুষের জীবনের ক্রমোন্নতি
ও ক্রমবিকারেশর সঠিক ও নির্ভূল পথ নয়।
﴿فَبِمَا نَقۡضِهِمۡ
مِّيۡثَاقَهُمۡ لَعَنّٰهُمۡ وَجَعَلۡنَا قُلُوۡبَهُمۡ قٰسِيَةًۚ يُّحَرِّفُوۡنَ
الۡكَلِمَ عَنۡ مَّوَاضِعِهٖۙ وَنَسُوۡا حَظًّا مِّمَّا ذُكِّرُوۡا بِهٖ وَلَا تَزَالُ تَطَّلِعُ عَلٰى خَآٮِٕنَةٍ
مِّنۡهُمۡ اِلَّا قَلِيۡلاً مِّنۡهُمۡۚ فَاعۡفُ عَنۡهُمۡ وَاصۡفَحۡؕ اِنَّ
اللّٰهَ يُحِبُّ الۡمُحۡسِنِيۡنَ﴾
১৩) তারপর তাদের নিজেদের অঙ্গীকার ভঙ্গের কারণেই আমি তাদেরকে নিজের রহমত থেকে দূরে নিক্ষেপ করেছি এবং তাদের হৃদয় কঠিন করে দিয়েছি। এখন তাদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, তারা শব্দের হেরফের করে কথাকে একদিক থেকে আর একদিকে নিয়ে যায়, যে শিক্ষা তাদেরকে দেয়া হয়েছিল তার বড় অংশ তারা ভুলে গেছে এবং প্রায় প্রতিদিনই তাদের কোন না কোন বিশ্বাসঘাতকতার খবর তুমি লাভ করে থাকো, তাদের অতি অল্প সংখ্যক লোকই এ দোষমুক্ত আছে (কাজেই তারা যখন এ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে তখন তাদের যে কোন কুকর্ম মোটেই অপ্রত্যাশিত নয়)। তাই তাদেরকে মাফ করে দাও এবং তাদের কাজকর্মকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখো। আল্লাহ তাদেরকে পছন্দ করেন যারা সৎকর্মশীলতা ও পরোপকারের নীতি অবলম্বন করে।
§ فَبِمَا نَقۡضِهِمۡ مِّيۡثَاقَهُمۡ - তারপর তাদের নিজেদের অঙ্গীকার
ভঙ্গের কারণেই
o বনী ইসরাঈল ২ পর্যায়ে তাদের অংগিকার ভংগ করে। যেমনঃ
১. হযরত মুসা আ. এর সময়ে ফেরাউন ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর আল্লাহ মুসা আ.কে নির্দেশ দিলেন বনী
ইসরাঈলকে নিয়ে শাম দেশে চলে আসতে। সেখানে আদ জাতির লোকের বসবাস ছিল। তাদেরকে আমালিকা বলা হতো-কারণ তারা আমালিক নামক একজন লোকের বংশধর ছিল। যারা ছিল উঁচু, লম্বা ও দূর্ধর্ষ। তাদেরকে যুদ্ধের মাধ্যমে
পরাভূত করতে এবং সেখানে বসবাস করতে নির্দেশ দেয়া হলো। মুসা আ. ১২জন নকীবকে নিযুক্ত করেছিলেন। শামের নিকটে পৌছে শামের অবস্থা জানার জন্য ১২জনকে পাঠালেন। তাদেরকে পাঠানোর সময়
অঙ্গিকার নেয়া হয়েছিল যে, তারা আমালিকের শৌর্য-বীর্য-শক্তিমত্তার বিবরণ বনী ইসরাঈলের নিকট তারা বলবেনা। কারণ এর কারণে বনী ইসরাঈল
মনোবল হারিয়ে ফেলবে এবং মুসা আ. এর সাথে যুদ্ধে যেতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করবে। কিন্তু ১২জন নকীবের ১০জনই
তাদের অঙ্গিকার ভংগ করলো। তারা তাদের গোত্রের নিকট তা ফাঁস করে দিল। বনী ইসরাঈল যুদ্ধে যেতে
অস্বীকার করলো। যা
কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছেঃ فَاذْهَبْ أَنتَ
وَرَبُّكَ فَقَاتِلَا إِنَّا هَاهُنَا قَاعِدُونَ - কাজেই
তুমি ও তোমার রব, তোমরা
দুজনে সেখানে যাও এবং লড়াই করো, আমরা তো এখানে বসেই রইলাম ৷
২. তারা তাওরাতের
বিধান মান্য করে নামায, রোযা, যাকাত ইত্যাদি পালন করার কথা ছিল। কিন্তু তারা তা করেনি। যা বর্ণনা করা হয়েছে সূরা আলে ইমরানে।
﴿وَمِنَ الَّذِيۡنَ
قَالُوۡۤا اِنَّا نَصٰرٰٓى اَخَذۡنَا مِيۡثَاقَهُمۡ فَنَسُوۡا حَظًّا مِّمَّا
ذُكِّرُوۡا بِهٖ فَاَغۡرَيۡنَا بَيۡنَهُمُ الۡعَدَاوَةَ وَالۡبَغۡضَآءَ اِلٰى يَوۡمِ
الۡقِيٰمَةِؕ وَسَوۡفَ يُنَبِّئُهُمُ اللّٰهُ بِمَا كَانُوۡا يَصۡنَعُوۡنَ﴾
১৪) এভাবে যারা বলেছিল আমরা “নাসারা”, তাদের থেকেও আমি পাকাপোক্ত অঙ্গীকার নিয়েছিলাম। কিন্তু তাদের স্মৃতিপটে যে শিক্ষা সংবদ্ধ করে দেয়া হয়েছিল তারও বড় অংশ তারা ভুলে গেছে। শেষ পর্যন্ত আমি তাদের মধ্যে চিরকালের জন্য শত্রুতা ও পারস্পরিক হিংসা –বিদ্বেষের বীজ বপন করে দিয়েছি। আর এমন এক সময় অবশ্যি আসবে যখন আল্লাহ তাদের জানিয়ে দেবেন তারা দুনিয়ায় কি করতো।
§ وَمِنَ الَّذِيۡنَ قَالُوۡۤا اِنَّا نَصٰرٰٓى - এভাবে যারা বলেছিল আমরা “নাসারা”
o
নাসারা (نَصَارَى) শব্দের উৎপত্তি হযরত ঈসার
জন্মভূমির নাম ‘নাসেরা’ (نَاصِره) থেকে। এ কথাটা ভুল। নাসারা
শব্দটির উৎপত্তি ‘নুসরাত’ (نُصرَت) থেকে। ঈসা আ.এর উক্তি مَنْ أَنْصَارِى إِلَى
اللَّهِ (আল্লাহর পথে কে আমার
সাহায্যকারী হবে?) এর জবাবে তাঁর হাওয়ারীগণنَحنُ أَنصَارُ الله (আমরা হবো
আল্লাহর কাজে সাহায্যকারী) বলেছিলেন। সেখান থেকেই (نَصَارَى) শব্দের
উৎপত্তি।
o
খৃস্টান লেখকরা নিছক বাহ্যিক
সাদৃশ্য দেখে এ বিভ্রান্তির শিকার হয়েছেন। খৃস্টবাদের
ইতিহাসের প্রথম যুগে নাসেরীয়া (Nazarenes) নামে একটি সম্প্রদায় ছিল,
যাদেরকে নাসেরী ও ইবূনী বলা হতো।
o
কুরআনের
বক্তব্যঃ তারা নিজেরাই বলেছিলঃ ‘আমরা নাসার’- একথা সুস্পষ্ট
করে যে, খৃস্টানরা নিজেরা কখনো
নিজেদেরকে নাসেরী বলে পরিচয় দেয়নি।
o
ঈসা আ. কখনো নিজের অনুসারীদেরকে ‘ঈসায়ী’
‘খৃস্টান’ বা ‘মসীহী’
নামে আখ্যায়িত করেননি। কেন? কারণঃ
§ তিনি নিজের নামে কোন নতুন ধর্মের ভিত্তি স্থাপন করতে আসেনি। বরং মুসা
আর, ও তাঁর আগের বা পরের নবীগন যে দাওয়াত দিয়েছেলেন, তিনি
এসেছিলেন সেই দাওয়াতের পুনরুজ্জীবন করতে।
§ ঈসা আ. সাধারণ বনী ইসরাঈলদের এবং মূসা আ.
প্রবর্তিত শরীয়াতের অনুসারীদের থেকে আলদা কোন দল গঠনি করেননি।
§ ঈসা আ. তার অনুসারীদের জন্য আলাদা কোন নামও
রাখেননি।
§ ঈসা. এর প্রাথমিক যুগের অনুসারীরা নিজেদের
ইসরাঈলী মিল্লাত থেকে আলাদা মনে করতেন না।
§ ঈসা আ. এর অনসুরীরা নিজেরা কোন স্বতন্ত্র দল
হিসাবে সংগঠঠিত হোন নি।
§ ঈদা আ. এর অনুসারীরা নিজেদের পরিচিতির জন্য
কোন বৈশিষ্ট্যমূলক নাম না চিহ্ন গ্রহণ করেননি।
§ ঈসা আ. এর অনুসারীরা বাইতুল মাকাদ্দাসে
ইহুদীদের সাথ ইবাদত করতে যেতেন।
§ ঈসা আ. এর অনুসারীরা মুসা আ. এর শরীয়াতের বিধান মেনে চলাকে নিজেদের জন্য কর্তব্য মনে করতেন।
o
ইহুদী ও খৃষ্টানদের বিচ্ছিন্নতাঃ
§ পরবর্তী সময়ে তাদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রম শুরু
হয়। যেমনঃ
o ঈসা আ. এর অনুসারীদের মধ্যে সেন্ট পল ঘোষনা করেনঃ শরীয়াতের
বিধান অনুসরণের আর প্রেয়াজন নাই। ঈসা আ. এর উপর ঈমান আনাই
নাজাত লাভের জন্য যথেষ্ট।
o ইহুদী আলেমগন ঈসা আ. এর অনুসারীদের পথভ্রষ্ট
ঘোষান করে তাদেরকে বনী ইসরাঈল থেকে বিচ্ছিন্ন বলে ঘোষনা করে।
o ঈসা. এর অনুসারীদের বিচ্ছিন্নতার পরও নতুন
সম্প্রদায়ের কোন নাম ছিল না। তারা তাদের পরিচয় দিত “শিষ্য”,
“ভ্রাতৃগন” (ইখওয়ান), “বিশ্বাসী” (মুমিন), “যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে“ (الَّذِيۡنَ
أمنوا), “পবিত্রগন“
ইত্যাদি বলে।
o ইহুদীরা যেহেতু তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে, তাই তারা ঈসা
আ. এর অনুসারীদের “গালালী“, ¬নাসারী“, “নাসরতী“ এবং “¬বেদাতী সম্প্রদায়“ বলে অভিহিত করতো।
o ইহুদীরা বিদ্রেুাপ করে ঈসা আ. এর
অনুসারীদেরকে ঈসা আ. এর জন্মস্থান নাসেরা-এর দিকে ইংগিত করে নাসারী বা নসরতী বলতো। যা খুব বেশী প্রচলিত হতে
পারেনি। বিধায় এ গুলো ঈসা আ. এর
অনুসারীদের নামে পরিণত হয়নি।
o উল্লেখ্য যে, নাসেরা-ফিলিস্তিনের গালীল জেলার অন্তর্গত একটি এলাকার নাম।
o
খৃষ্টান নামের উৎপত্তিঃ
§ “খৃস্টান”(Christian)
এই নামটা প্রথম প্রদান করা হয় তুরস্কের একটি শহর আন্তাকিয়াতে (أَنطَاكِيَّه)।
§ ৪৩ বা ৪৪ খৃষ্টাব্দে মুশরিক অধিবাসীরা ঈসা আ. এর
অনুসারীদের এই নামে অভিহিত করে। ঈসা আ. এর অনুসারী
সেন্টপল ও বার্নাবাস সে সময় আন্তাকিয়াতে পৌছে দাওয়াতের কাজ শুরু করেন।
§ খৃষ্টান নামটাও প্রকৃত পক্ষে বিরোধীদের ঠাট্টা-বিদ্রূপ করার
জন্য রাখা হয়েছিল। ঈসা আ. এর অনুসারীরা
কখনো এই নামকে নিজেদের নাম হিসাবে গ্রহণে রাজী ছিলেন না।
§ এক সময় যদি মুশরেকদের পক্ষ থেকে “যদি তোমাদেরকে
খৃস্টের সাথে যুক্ত করে খৃস্টান বলে ডাকা হয়। তাহলে তাতে তোমাদের লজ্জা
পাবার কি কারণ থাকতে পারে?“ বলতে থাকলে ধীরে ধীরে ঈসা আ. এর অনুসারীরা নিজেদের ঐ নামেই আখ্যায়িত করা শুরু করে। সময়ের
বিবর্তনে তাদের এই অনুভূতি চলে যায় যে আসলে এটি একটি খারাপ নাম বা এটা তাদের
শত্রুদের নেয়া নাম কিংবা এটি বিদ্রুপাত্মক নাম।
o
কুরআনে ঈসা আ. এর অনুসারীদের ঈসায়ী, মসীহী বা খৃষ্টান নামে আখ্যা দেয়া হয়নি। বরং তাদেরকে স্মরণ করিয়ে
দেয়া হয়েছে যে,
§ তোমরা সেই সব লোকদের অন্তর্গত, যাদেরকে ঈসা
আ. (مَنْ أَنصَارِي إِلَى اللَّهِ) বলে আহবান
জানিয়েছিলেন। আর আর তোমরা ( نَحْنُ
أَنصَارُ اللَّهِ ) বলে জবাব দিয়েছিলে।
§ তোমরা প্রাথমিক ও মৌলিক তাত্পর্যের দিক দিয়ে নাসারা বা
আনসার।
﴿يٰۤاَهۡلَ الۡكِتٰبِ
قَدۡ جَآءَكُمۡ رَسُوۡلُنَا يُبَيِّنُ لَكُمۡ كَثِيۡرًا مِّمَّا كُنۡتُمۡ
تُخۡفُوۡنَ مِنَ الۡكِتٰبِ وَيَعۡفُوۡا عَنۡ كَثِيۡرٍ ؕ
قَدۡ جَآءَكُمۡ مِّنَ اللّٰهِ نُوۡرٌ وَّكِتٰبٌ مُّبِيۡنٌۙ﴾
১৫) হে আহলি কিতাব! আমার রসূল তোমাদের কাছে এসে গেছে। সে আল্লাহর কিতাবের এমন অনেক কথা তোমাদের কাছে প্রকাশ করছে যেগুলো তোমরা গোপন করে রাখতে এবং অনেক ব্যাপারে ক্ষমার চোখেও দেখছে। তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে এসে গেছে এক জ্যোতি এবং আমি একখানি সত্য দিশারী কিতাব
§
يُبَيِّنُ لَكُمۡ
كَثِيۡرًا مِّمَّا كُنۡتُمۡ تُخۡفُوۡنَ مِنَ الۡكِتٰبِ وَيَعۡفُوۡا عَنۡ كَثِيۡرٍ - সে আল্লাহর কিতাবের এমন অনেক কথা তোমাদের কাছে প্রকাশ করছে
যেগুলো তোমরা গোপন করে রাখতে এবং অনেক ব্যাপারে ক্ষমার চোখেও দেখছে।
o মানে রাসূল অনেক চুরি ও খেয়ানত ফাঁস করে দিচ্ছেন-যারা দ্বীনে
হক কায়েম করার জন্য ফাঁস করা দরকার।
o
অপর দিকে অনেক বিষয় তিনি
এড়িয়ে যাচ্ছেন, যা ফাঁস করার জন্য এই মূহুর্তে দ্বীন
কায়েমের জন্য খুব দরকার নেই।
﴿يَهۡدِىۡ بِهِ اللّٰهُ
مَنِ اتَّبَعَ رِضۡوٰنَهٗ سُبُلَ السَّلٰمِ وَيُخۡرِجُهُمۡ مِّنَ الظُّلُمٰتِ
اِلَى النُّوۡرِ بِاِذۡنِهٖ وَيَهۡدِيۡهِمۡ اِلٰى صِرٰطٍ مُّسۡتَقِيۡمٍ﴾
১৬) যার মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর সন্তোষকামী লোকদেরকে শান্তি ও নিরাপত্তার পথপ্রদর্শন করেন এবং নিজ ইচ্ছাক্রমে তাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোকের দিকে নিয়ে আসেন এবং সরল-সঠিক পথের দিকে পরিচালিত করেন।
§
يَهۡدِىۡ بِهِ اللّٰهُ
مَنِ اتَّبَعَ رِضۡوٰنَهٗ سُبُلَ السَّلٰمِ - যার মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর সন্তোষকামী
লোকদেরকে শান্তি ও নিরাপত্তার পথপ্রদর্শন করেন
o শান্তি ও নিরাপত্তা মানেঃ
§ ভূল দেখা থেকে নিজেকে হেফাজত রাখা।
§ ভূল আন্দাজ-অনুমান করা থেকে নিজেকে
বাঁচিয়ে রাখা।
§ ভূল করাজ করা থেকে নিজে দূরে থাকা।
§ উপরোক্ত কাজ সমূহের ফলাফল থেকেও নিজেকে সংরক্ষিত রাখা।
o
যে আল্লাহর কিতাব ও তার
রাসূলের জীবন থেকে আলো সংগ্রহ করে, চিন্তা ও কাজের প্রতিটি
সীমায় পৌছে, সে বুঝতে পারে যে, সে
কিভাবে এসব ভূলগুলো থেকে নিজেকে সংরক্ষিত থেকেছে।
﴿لَّقَدۡ كَفَرَ الَّذِيۡنَ قَالُوۡۤا اِنَّ
اللّٰهَ هُوَ الۡمَسِيۡحُ ابۡنُ مَرۡيَمَؕ قُلۡ فَمَنۡ يَّمۡلِكُ مِنَ اللّٰهِ
شَيۡـًٔا اِنۡ اَرَادَ اَنۡ يُّهۡلِكَ الۡمَسِيۡحَ ابۡنَ مَرۡيَمَ وَاُمَّهٗ
وَمَنۡ فِىۡ الۡاَرۡضِ جَمِيۡعًاؕ وَلِلّٰهِ مُلۡكُ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِ
وَمَا بَيۡنَهُمَاؕ يَخۡلُقُ مَا يَشَآءُؕ وَاللّٰهُ عَلٰى كُلِّ شَىۡءٍ
قَدِيۡرٌ﴾
১৭) যারা বলে, “মারয়াম পুত্র মসীহই আল্লাহ” তারা অবশ্যি কুফরী করেছে। হে মুহাম্মাদ! ওদেরকে বলে দাও, আল্লাহ যদি মারয়াম পুত্র মসীহকে, তার মাকে ও সারা দুনিয়াবাসীকে ধ্বংস করতে চান, তাহলে তাঁকে তাঁর এ সংকল্প থেকে বিরত রাখার ক্ষমতা কার আছে? আল্লাহ তো আকাশসমূহের এবং এ দু’য়ের মধ্যে যা কিছু আছে সবকিছুর মালিক। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন। তাঁর শক্তি সবকিছুর ওপর পরিব্যাপ্ত।
§ لَّقَدۡ كَفَرَ الَّذِيۡنَ قَالُوۡۤا اِنَّ اللّٰهَ هُوَ
الۡمَسِيۡحُ ابۡنُ مَرۡيَمَ - যারা বলে, “মারয়াম পুত্র মসীহই আল্লাহ”
তারা অবশ্যি কুফরী করেছে।
o খৃষ্টবাদীরা ঈসা আ. এর ব্যক্তিত্বকে মানবিক ও
ইলাহী সত্তার মিশ্রণে গন্য করে ভূল করেছিল। ফলে ঈসা আ. এর প্রকৃত
রূপ গোলক ধাঁধাঁয় পরিণত হয়।
o খৃষ্টীয় আলেমগন এই ধাঁধাঁর রহস্য উন্মোচনের জন্য কল্পনা, অনুমান ও
বাগাডম্বরের আশ্রয় নেয়। এতে করে জটিলতা বেড়ে যায়।
o যারা মিশ্র ব্যক্তিত্বের মানবিক সত্তার উপর জোর দিয়েছিল, তারা ঈসা আ.কে আল্লাহর পুত্র এবং তিন খোদার একজন বানিয়ে ফেলে।
o যারা ইলাহী সত্তার উপর জোর দিয়েছিল, তারা ঈসা আ.কে আল্লাহ দৈহিক প্রকাশ বলে গন্য করে তাঁর ইবাদত করেছেন।
o আরেকটা দল উভয় মতের মাঝমাঝি অবস্থান নিয়ে ঈসা আ.কে মানুষও মনে
করা যায়, আল্লাহও মনে করা যায়। তাদের মতে আল্লাহ এবং ঈসা
পৃথক পৃথক থাকতে পারেন এবং একীভূতও হতে পারেন।
§ يَخۡلُقُ مَا يَشَآءُ - তিনি যা চান সৃষ্টি করেন।
o এই কথা দ্বারা তাদেরকে অজ্ঞ সাবস্ত করা হয়েছে, যারা ঈসা আ.
এর অলৌকিক জন্ম বা তার নৈতিক ও চারিত্রিক শ্রেষ্ঠত্ব অথবা দৃষ্টি ও
অনুভূতি গ্রাহ্য অলৌকিক কাজে বিভ্রন্ত হয়ে তাকে আল্লাহ মনে করেছেন।
o
এর দ্বারা বলা হচ্ছে, ঈসা আল্লাহ
অসংখ্য অলৌকি সৃষ্টির একটি নমূনা মাত্র।
﴿وَقَالَتِ الۡيَهُوۡدُ
وَالنَّصٰرٰى نَحۡنُ اَبۡنٰٓؤُا اللّٰهِ وَاَحِبَّآؤُهٗؕ قُلۡ فَلِمَ
يُعَذِّبُكُمۡ بِذُنُوۡبِكُمۡؕ بَلۡ اَنۡتُمۡ بَشَرٌ مِّمَّنۡ خَلَقَؕ يَغۡفِرُ
لِمَنۡ يَّشَآءُ وَيُعَذِّبُ مَنۡ يَّشَآءُؕ وَلِلّٰهِ مُلۡكُ السَّمٰوٰتِ
وَالۡاَرۡضِ وَمَا بَيۡنَهُمَا وَاِلَيۡهِ الۡمَصِيۡرُ﴾
১৮) ইহুদী ও খৃস্টানরা বলে, “আমরা আল্লাহর সন্তান এবং তাঁর প্রিয়পাত্র।” তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, তাহলে তোমাদের গোনাহের জন্য তিনি তোমাদের শাস্তি দেন কেন? আসলে তোমরাও ঠিক তেমনি মানুষ যেমন আল্লাহ অন্যান্য মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তিনি যাকে চান মাফ করে দেন এবং যাকে চান শাস্তি দেন। পৃথিবী ও আকাশসমূহ এবং এ দুয়ের মধ্যকার যাবতীয় সৃষ্টি আল্লাহর মালিকানাধীন এবং তাঁরই দিকে সবাইকে যেতে হবে।
﴿ يٰۤاَهۡلَ الۡكِتٰبِ
قَدۡ جَآءَكُمۡ رَسُوۡلُنَا يُبَيِّنُ لَكُمۡ عَلٰى فَتۡرَةٍ مِّنَ الرُّسُلِ
اَنۡ تَقُوۡلُوۡا مَا جَآءَنَا مِنۡۢ بَشِيۡرٍ وَّلَا نَذِيۡرٍ فَقَدۡ جَآءَكُمۡ بَشِيۡرٌ وَّنَذِيۡرٌؕ
وَاللّٰهُ عَلٰى كُلِّ شَىۡءٍ قَدِيۡرٌ﴾
১৯) হে আহলি কিতাব! আমার এ রসূল এমন এক সময় তোমাদের কাছে এসেছেন এবং তোমাদেরকে দ্বীনের সুস্পষ্ট শিক্ষা দিচ্ছেন যখন দীর্ঘকাল থেকে রসূলদের আগমনের সিল্সিলা বন্ধ ছিল, তোমরা যেন একথা বলতে না পারো, আমাদের কাছে তো সুসংবাদ দানকারী ও ভীতি প্রদর্শনকারী আসেনি। বেশ, এই দেখো, এখন সেই সুসংবাদ দানকারী ও ভীতি প্রদর্শনকারী এসে গেছেন এবং আল্লাহ সবকিছুর ওপর শক্তিশালী।
§ وَاللّٰهُ عَلٰى كُلِّ شَىۡءٍ قَدِيۡرٌ - আল্লাহ সবকিছুর ওপর
শক্তিশালী।
o এর দুইটি অর্থঃ
১. যে আল্লাহ
ইতিপূর্বে সুসংবাদ দানকারী ও ভীতি প্রদর্শণকারী পাঠাবার ক্ষমতা রাখতেন, সেই আল্লাহ এখন মুহাম্মদ সা.কে সেই একই দায়িত্ব দিয়ে
প্রেণ করেছেন। এই নিযুক্তির ক্ষমতা আগেও ছিল এখনও আছে।
২. যদি তোমরা
সুসংবাদ দানকারী ও ভীতি প্রদর্শনকারীর কতা না মানো, তাহলে
মনে রাখা দরকার যে, আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং সব কিছু করতে সক্ষম। বিধায, তিনি
তোমাদেরকে তোমাদের গোমরাহির কারণে যে শাস্তি দিতে চান, তা
হতে কেউ বিরত রাখতে পারবেনা।
0 Comments