তেলাওয়াত ও অনুবাদঃ
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ
آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ
إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ
ۚ وَإِن كُنتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوا ۚ وَإِن كُنتُم مَّرْضَىٰ أَوْ عَلَىٰ
سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِّنكُم مِّنَ الْغَائِطِ أَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَاءَ
فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ
وَأَيْدِيكُم مِّنْهُ ۚ مَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُم مِّنْ حَرَجٍ
وَلَٰكِن يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ
تَشْكُرُونَ﴾
৬) হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নামাযের জন্য তৈরী হও, তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত দুটি কনুই
পর্যন্ত ধুয়ে ফেলো, মাথার ওপর
হাত বুলাও এবং পা দুটি গোড়ালী পর্যন্ত ধুয়ে ফেলো। যদি তোমরা “জানাবাত” অবস্থায় থাকো, তাহলে গোসল করে পাক সাফ হয়ে যাও। যদি তোমরা রোগগ্রস্ত হও বা সফরে থাকো অথবা
তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি মলমূত্র ত্যাগ করে আসে বা তোমরা নারীদেরকে স্পর্শ করে
থাকো এবং পানি না পাও, তাহলে
পাক-পবিত্র মাটি দিয়ে কাজ সেরে নাও। তার ওপর হাত রেখে নিজের
চেহারা ও হাতের ওপর মসেহ করে নাও। আল্লাহ তোমাদের জন্য জীবনকে
সংকীর্ণ করে দিতে চান না কিন্তু তিনি চান তোমাদেরকে পাক-পবিত্র করতে এবং তাঁর
নিয়ামত তোমাদের ওপর সম্পূর্ণ করে দিতে, হয়তো তোমরা শোকর গুজার হবে।
﴿وَاذْكُرُوا نِعْمَةَ
اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَمِيثَاقَهُ الَّذِي وَاثَقَكُم بِهِ إِذْ قُلْتُمْ سَمِعْنَا
وَأَطَعْنَا ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ﴾
৭) আল্লাহ তোমাদের যে নিয়ামত দান করেছেন তার কথা
মনে রাখো এবং তিনি তোমাদের কাছ থেকে যে পাকাপোক্ত অংগীকার নিয়েছেন তা ভুল যেয়ো না। অর্থাৎ
তোমাদের একথা-আমরা শুনেছি ও আনুগত্য করেছি। আর আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ
মনের কথা জানেন।
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ
آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ لِلَّهِ شُهَدَاءَ بِالْقِسْطِ ۖ وَلَا
يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَىٰ أَلَّا تَعْدِلُوا ۚ اعْدِلُوا هُوَ
أَقْرَبُ لِلتَّقْوَىٰ ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا
تَعْمَلُونَ﴾
৮) হে ঈমানদারগণ! সত্যের ওপর স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত ও
ইনসাফের সাক্ষদাতা হয়ে যাও। কোন দলের শত্রুতা
তোমাদেরকে যেন এমন উত্তেজিত না করে দেয় যার ফলে তোমরা ইনসাফ থেকে সরে যাও। ইনসাফ ও
ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠিত করো। এটি আল্লাহভীতির সাথে বেশী
সামঞ্জস্যশীল। আল্লাহকে ভয় করে কাজ করতে থাকো। তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ সে
সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত আছেন ।
﴿وَعَدَ اللَّهُ
الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ ۙ لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ
عَظِيمٌ﴾
৯) যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে আল্লাহ তাদের
সাথে ওয়াদা করেছেন যে, তাদের ভুল-ত্রুটি মাফ করে দেয়া হবে এবং
তারা বিরাট প্রতিদান লাভ করবে।
﴿وَالَّذِينَ كَفَرُوا
وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا أُولَٰئِكَ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ﴾
১০) যারা কুফরী করবে এবং আল্লাহর আয়াতকে মিথ্যা বলবে, তারা হবে
জাহান্নামের অধিবাসী।
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ
آمَنُوا اذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ هَمَّ قَوْمٌ أَن يَبْسُطُوا
إِلَيْكُمْ أَيْدِيَهُمْ فَكَفَّ أَيْدِيَهُمْ عَنكُمْ ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ
وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ﴾
১১) হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর সে অনুগ্রহের কথা স্মরণ
করো, যা তিনি ( এ সাম্প্রতিককালে) তোমাদের প্রতি করেছেন, যখন
একটি দল তোমাদের ক্ষতি করার চক্রান্ত করেছিল কিন্তু আল্লাহ তাদের চক্রান্ত নস্যাৎ
করে দিয়েছিলেন। আল্লাহকে ভয় করে কাজ করতে থাকো।
ঈমানদারদের আল্লাহর ওপরই ভরসা করা উচিত।
পূর্ববর্তী আয়াতের সাথে যোগসূত্রঃ
§ পূর্বের আয়াত সমূহে মানুষের দুনিয়ার জীবন ও পানাহার
সম্পর্কে বিধি বিধান আলোচিত হয়েছে। আর এখানে ইবাদত সম্পর্কিত বিধি বিধান আলোচিত হবে।
ব্যাখ্যাঃ
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ
آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ
إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ
ۚ وَإِن كُنتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوا ۚ وَإِن كُنتُم مَّرْضَىٰ أَوْ عَلَىٰ
سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِّنكُم مِّنَ الْغَائِطِ أَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَاءَ
فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ
وَأَيْدِيكُم مِّنْهُ ۚ مَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُم مِّنْ حَرَجٍ وَلَٰكِن
يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ
تَشْكُرُونَ﴾
৬) হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নামাযের জন্য তৈরী হও, তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত দুটি কনুই পর্যন্ত ধুয়ে ফেলো, মাথার ওপর হাত বুলাও এবং পা দুটি গোড়ালী পর্যন্ত ধুয়ে ফেলো। যদি তোমরা “জানাবাত” অবস্থায় থাকো, তাহলে গোসল করে পাক সাফ হয়ে যাও। যদি তোমরা রোগগ্রস্ত হও বা সফরে থাকো অথবা তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি মলমূত্র ত্যাগ করে আসে বা তোমরা নারীদেরকে স্পর্শ করে থাকো এবং পানি না পাও, তাহলে পাক-পবিত্র মাটি দিয়ে কাজ সেরে নাও। তার ওপর হাত রেখে নিজের চেহারা ও হাতের ওপর মসেহ করে নাও। আল্লাহ তোমাদের জন্য জীবনকে সংকীর্ণ করে দিতে চান না কিন্তু তিনি চান তোমাদেরকে পাক-পবিত্র করতে এবং তাঁর নিয়ামত তোমাদের ওপর সম্পূর্ণ করে দিতে, হয়তো তোমরা শোকর গুজার হবে।
§
إِذَا
قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ-যখন তোমরা নামাযের জন্য তৈরী হও
o
প্রশ্ন হচ্ছেঃ নামাযের জন্য দাড়ালে বলতে
কি যখনই নামাযের জন্য দাড়াবে তখনই কি অজু করতে হবে?
উত্তর হচ্ছেঃ না। বরং ইবনে আব্বাস বলেছেনঃ এই অবস্থায় অপবিত্র থাকলে তথা
অজু না থাকলে অজু করতে হবে। হযরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রা. একই ওজুতে
কয়েক ওয়াক্তের নামায আদায় করতেন। তিনি বলেছেনঃ অপবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার
অজু দ্বারা সালাত আদায় করতে থাকবে।
o
إِذَا
قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ এর তাফসীর হচ্ছেঃ অপবিত্র অবস্থায় যখন তোমরা সালাতের
উদ্দেশ্যে দাড়াবে। (হযরত সুদ্দী
রাহ.)
o
إِذَا
قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ এর অন্য তাফসীর হচ্ছেঃ “হে মুমিনগন! তোমরা যখন ঘুম থেকে উঠে সালাত আদায়ের ইচ্ছা করবে, তখন তোমরা অজু করবে।” (যায়েদ ইবনে আসলাম রাহ.)
o
إِذَا
قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ এর আরেকটি তাফসীর হচ্ছেঃ অজু থাকুন অথবা না থাকুক
সর্বাবস্থায় তোমরা যখন নামাযের জন্য দাড়াবে, তখন নতুন ভাবে অজু করবে। “খুলাফায়ে রাশেদীনের প্রত্যেকে প্রত্যেক সালাতের জন্য নতুন
অজু করতেন”। (ইবনে সীরিন রাহ.)
o
একদল মুফাস্সির ধারণা করেন যে, ইসলামের প্রাথমিক যুগে প্রতি ওয়াক্ত নামাযের জন্য পৃথক পৃথক অজু করা ফরয ছিল।
কিন্তু পরে তা মানসুখ হয়ে যায়।
o
মক্কা বিজয়ের দিন রাসূল সা. অজু করে মোজার উপর মাসেহ করে সেই অজু দিয়ে কয়েক ওয়াক্ত নামায আদায় করলে হযরত
উমর রা. বলেছিলেন: হে আল্লাহর রাসূল সা.! আজ আপনি এমন কাজ করলেন যা ইতিপূর্বে কখনো করেননি। তখন রাসূল
সা. বললেন: “হ্যাঁ, আমি ভূলে এরূপ করিনি, বরং জেনে শোনে ইচ্ছা করেই করেছি।”
§ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى
الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ - তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত
দুটি কনুই পর্যন্ত ধুয়ে ফেলো, মাথার ওপর হাত বুলাও এবং পা দুটি গোড়ালী
পর্যন্ত ধুয়ে ফেলো।
o
কুল্লি করা ও নাক সাফ করা মুখ ধোয়ার মধ্যে শামীল। মুখ ধোয়ার পরিপূর্ণতার জন্য
কুল্লি করা ও নাক সাফ করা আবশ্যক।
o
কান মাথার অংশ, তাই মাথা মসেহ মানে কানের ভিতর বাহিরও এর মাঝে শামীল।
o
অজু করার পূর্বে যে হাত দিয়ে অজু করা হচ্ছে, সেই হাতের পবিত্রতা প্রয়োজন। বিধায়, দুই হাত ধুয়ে
নিতে হবে।
o
রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ অজুর বদৌলতে আমার উম্মতের মুখমন্ডল নূরানী এবং হাত পা
উজ্জল হবে। কাজেই, যে তার মুখমন্ডল উজ্জল করতে চায়, সে যেন তা করে।
§
وَإِن
كُنتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوا - যদি তোমরা “জানাবাত” অবস্থায় থাকো, তাহলে গোসল করে পাক সাফ হয়ে
যাও।
o
কুরআনের মূল শব্দ হচ্ছেঃ জুনুবান। এর মানে হলোঃ দূর হয়ে যাওয়া, দূরত্ব ও
সম্পর্কহীনতা। সম্পর্ক না থাকলে পরিচিতি হয়না, তাই অপরিচিত মানুষকে আরবীতে বলে আজনবী। জানাবত মানে অপবিত্র
অবস্থা।
o
শরীয়াতের পরিভাষায় জুনুব বা জানাবাত হলোঃ সহবাস অথবা স্বপ্ন যোগে অথবা অন্য যে
কোন ভাবে বীর্যপাতের কারণে যে নাপাকী অবস্থা হয়, সেই অবস্থাকে জানাবত বলে। কারণ এই
কারণে মানুষের তাহারাত অবস্থা থেকে দূরে চলে যায়।
o
জানাবতের অপবিত্রতা থেকে গোসলের মাধ্যমে পবিত্র হতে হয়।
o জানাবত অবস্থায় ৫টি কাজ করা যাবে
না। যেমনঃ
১. নামায পড়া।
২. কুরআন স্পর্শ করা।
৩. কুরআনের আয়াত তেলাওয়াত করা।
৪. মসজিদে প্রবেশ করা।
৫. কাবাঘর তওয়াফ করা।
o
মসজিদে প্রবেশ করতে পারবেনা-এই বক্তব্য একদল ফকীহ ও মুফাস্সিরের। তবে তাদের মতে যদি কোন
কাজে মসজিদের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, তাহলে যেতে পারবে। আরেক দলের মতে অজু করে মসজিদে অবস্থান
করতে পারবে।
§
وَإِن
كُنتُم مَّرْضَىٰ أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ - যদি তোমরা রোগগ্রস্ত হও বা সফরে থাকো
o
মুসাফির অব্স্থায় কেউ জুনুবী হলে সে তাইয়ামুম করে পবিত্র হতে পারবে এবং নামায
আদায় করতে পারবে।
§
لَامَسْتُمُ
النِّسَاءَ - নারীদেরকে স্পর্শ করে থাকো
o
لَامَسْ অর্থ স্পর্শ করা। ফকিহগনের মাঝে মতবিরোধ হলোঃ
১. সহবাস।
২. কেবল মাত্র স্পর্শ করা বা হাত লাগানো।
৩. যৌন আবেগ সহ নারী পুরুষের পরস্পরে স্পর্শ করা-যাতে অজু চলে যায়।
§
فَلَمْ
تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا - এবং পানি না পাও, তাহলে পাক-পবিত্র মাটি
দিয়ে কাজ সেরে নাও।
o
তাইয়াম্মুম মানেঃ ইচ্ছা বা
সংকল্প করা। পাক পবিত্র মাটি দিয়ে পবিত্রতা অর্জনের সংকল্প করা বা ইচ্ছা করাকে
তাইয়াম্মুম বলে।
o
যদি কেউ অযুবিহীন থাকে অথবা গোসলের প্রয়োজন হয়। কিন্তু পানি পাওয়া না যায়, তাহলে
তাইয়ামুম করে নামায পড়তে পারবে।
o
যদি কেউ এমন অসুস্থ হয় এবং অযু বা
গোসল ক্ষতির আশংকা হয়, তাহলে পানি থাকার পরও তাইয়াম্মুম করতে পারবে।
o তাইয়াম্মুমের পদ্ধতিঃ
১. একবার মাটিতে হাত ঘসে মুখ মন্ডলের উপর বুলিয়ে নেয়া এবং
দ্বিতীয়বার হাত ঘসে হাতের কনুই অবধি ঘসে নেয়া।
২. একবার মাটিতে হাত ঘরে মুখ মন্ডল ও হাতে কবজি অবধি ঘসে নেয়া।
দ্বিতীয়বার মাটিতে হাত ঘসার যেমন প্রয়োজন নাই। একই ভাবে কনুই অবধি হাত ঘসার
প্রয়োজন নাই।
৩. তাইয়ামুমের জন্য হাত ঘসিয়ে হাতে মাটি লাগানো শর্ত নয়। বরং
ধুলো বা শুকনো মাটিতে হাত রাখাই যথেষ্ট।
o
মাটিতে হাত ঘসালে পবিত্রতা অর্জন হয় কিভাবে?
-
এটি তাহারাতের অনুভূতি ও নামাযের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত রাখার একটি মনস্তাত্বিক
কৌশল।
-
এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন পানি না পেলেও তাহারাতের অনুভূতি জাগ্রত থাকে।
-
এর মাধ্যমে শরীয়াতের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শিত হয়।
-
এর মাধ্যমে মনের মধ্যে নামায পড়ার যোগ্য অবস্থা ও নামায না পড়ার যোগ্য অবস্থার
মধ্যকার পার্থক্যবোধ বিলুপ্ত হবে না।
§
مَا
يُرِيدُ اللَّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُم مِّنْ حَرَجٍ وَلَٰكِن يُرِيدُ
لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ - আল্লাহ তোমাদের জন্য জীবনকে সংকীর্ণ
করে দিতে চান না কিন্তু তিনি চান তোমাদেরকে পাক-পবিত্র করতে এবং তাঁর নিয়ামত
তোমাদের ওপর সম্পূর্ণ করে দিতে।
o
আত্মার পবিত্রতা যেমন নিয়ামত, শরীরের পবিত্রতাও একটি নিয়ামত।
o
মানুষ হেদায়াত লাবে তখনই সক্ষম হবে, যখন সে আত্মা ও শরীরের তাহারাত
অর্জন করতে পারবে।
o
মানুষের উপর তখন আল্লাহর নিয়ামত পূর্ণতা লাভ করবে, যখন মানুষে পূর্ণ হেদায়াত লাভ
করবে।
﴿وَاذْكُرُوا نِعْمَةَ
اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَمِيثَاقَهُ الَّذِي وَاثَقَكُم بِهِ إِذْ قُلْتُمْ سَمِعْنَا
وَأَطَعْنَا ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ﴾
৭) আল্লাহ তোমাদের যে নিয়ামত দান করেছেন তার কথা মনে রাখো এবং তিনি তোমাদের কাছ থেকে যে পাকাপোক্ত অংগীকার নিয়েছেন তা ভুল যেয়ো না। অর্থাৎ তোমাদের একথা-আমরা শুনেছি ও আনুগত্য করেছি। আর আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ মনের কথা জানেন।
§
نِعْمَةَ
اللَّهِ عَلَيْكُمْ - আল্লাহ তোমাদের যে নিয়ামত দান করেছেন
o
আল্লাহর নিয়ামতটা কি?
১. সরল সঠিক পথ দেখিয়ে আলোকিত করা।
২. সারা দুনিয়ার মানুষদের হেদায়াত ও নেতৃত্ব দানের আসনে
অধিষ্ঠিত করা।
§ وَمِيثَاقَهُ الَّذِي وَاثَقَكُم بِهِ-এবং তিনি তোমাদের কাছ থেকে যে পাকাপোক্ত অংগীকার নিয়েছেন।
o
এখানে কোন অঙ্গিকারের কথা বলা হয়েছে? উত্তরঃ
১. আল্লাহ ও রাসূল সা. এর প্রতিটি আদেশ নিষেধ বাস্তায়িত
করার ব্যাপারে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় সর্বাবস্তায় রাসূল সা. এর আনুগত্য করার ব্যাপারে সাহাবায়ে
কিরামদের কাছ থেকে যে অংগীকার গ্রহণ করা হতো, তার দিকে ইংগিত করা হয়েছে।
২. আলমে আরওয়াহতে বনী আদমদের যে প্রশ্ন করা হয়েছে ছিলঃ أَلَسْتُ
بِرَبِّكُمْ ۖ قَالُوا بَلَىٰ ۛ شَهِدْنَا এর মাধ্যমে যে অঙ্গিকার নেয়া হয়েছিল, তার দিকে
ইংগিত করা হয়েছে।
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ
آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ لِلَّهِ شُهَدَاءَ بِالْقِسْطِ ۖ وَلَا
يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَىٰ أَلَّا تَعْدِلُوا ۚ اعْدِلُوا هُوَ
أَقْرَبُ لِلتَّقْوَىٰ ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا
تَعْمَلُونَ﴾
৮) হে ঈমানদারগণ! সত্যের ওপর স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত ও ইনসাফের সাক্ষদাতা হয়ে যাও। কোন দলের শত্রুতা তোমাদেরকে যেন এমন উত্তেজিত না করে দেয় যার ফলে তোমরা ইনসাফ থেকে সরে যাও। ইনসাফ ও ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠিত করো। এটি আল্লাহভীতির সাথে বেশী সামঞ্জস্যশীল। আল্লাহকে ভয় করে কাজ করতে থাকো। তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ সে সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত আছেন ।
§
يَا أَيُّهَا
الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ لِلَّهِ شُهَدَاءَ بِالْقِسْطِ - হে ঈমানদারগণ! সত্যের ওপর
স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত ও ইনসাফের সাক্ষদাতা হয়ে যাও।
o
সূরা নিসাতে বলা হয়েছে: يَا أَيُّهَا
الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ بِالْقِسْطِ شُهَدَاءَ لِلَّهِ হে ঈমানদারগণ! ইনসাফের পতাকাবাহী ও আল্লাহর সাক্ষী হয়ে যাও।
o
শুধু ইনসাফের দৃষ্টিভংগী অবলম্বন নয়, শুধু ইনসাফের পথে চলা নয়। বরং ইনসাফের
পতাকাবাহী হতে হবে।
o
ইনসাফের পতাকাবাহী মানে-জুলুম খতম করে তার জায়গায় আদল ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা
করতে দৃঢ় সংকল্প হওয়া।
o
ঈমানদারদের কোয়ালিটি হলো: তারা আদল ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সহায়ক
শক্তির যোগানদাতা হবে।
o দুইটি কারণ মানুষকে ন্যায় ও
সুবিচারে বাঁধা প্রদান এবং অন্যায় ও অবিচারে প্ররোচিত করে।
১. নিজের বা বন্ধু-বান্ধব অথবা আত্মীয়-স্বজনের প্রতি
পক্ষপাতিত্ব।
২. কোন ব্যক্তির প্রতি শত্রুতা বা মনোমালিন্য।
সূরা নিসায় الْقِسْطِ আগে বলা হয়েছে। আর পরে বলা হয়েছে: وَلَوْ
عَلَىٰ أَنفُسِكُمْ أَوِ الْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ অর্থাৎ ন্যায় বিচারে অধিষ্ঠিত থাকো, যদিও তা স্বয়ং তোমাদের
অথবা তোমাদের পিতামাতা ও আত্মীয় স্বজনের বিরুদ্ধে যায়। মানে প্রথম কারণটা হাইলাইট
হয়েছে বলে الْقِسْطِ আগে বলা হয়েছে।
সূরা মায়িদাতে لِلَّهِ
شُهَدَاءَ আগে বলা হয়েছে। আর পরে বলা হয়েছে: وَلَا
يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَىٰ أَلَّا تَعْدِلُوا অর্থাৎ কোন সম্প্রদায়েরা শত্রুতা যেন তোমাদেরকে ন্যায় বিচারে পশ্চাৎপদ হতে
উদ্বুদ্ধ না করে। মানে দ্বিতীয় কারণটা হাইলাইট হয়েছে বলে لِلَّهِ
شُهَدَاءَ আগে বলা হয়েছে।
o
অপর দিকে মুমিনদের সাক্ষ্য হবে কেবল আল্লাহর জন্য। মুমিনদের লক্ষ হবে কেবল
আল্লাহর সন্তুষ অর্জন। বিধায় আল্লাহর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে কোন দরদ, সহানুভূতি,
ব্যক্তিস্বার্থ অন্তরায় হয়ে দাড়াবে না।
o
সূরা বাকারা-২৮৩ আয়াতে বলা হয়েছে: আর সাক্ষ কোনক্রমেই গোপন করো না । যে ব্যক্তি
সাক্ষ গোপন করে তার হৃদয় গোনাহর সংস্পর্শে কলুষিত ।
o
পরীক্ষার নম্বর, সনদপত্র, নির্বাচনের ভোট ইত্যাদি সাক্ষ্যের অন্তর্ভূক্ত।
o
প্রকৃত শাহাদত হচ্ছে: আল্লাহর
সাথে কৃত অঙ্গিকার পালন করতে দৃঢ়পদ থাকা এবং এক্ষেত্রে মৃত্যুকে পরওয়া না করে
প্রয়োজনে সত্যের উপর মৃত্যু বরণ করা।
﴿وَعَدَ اللَّهُ
الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ ۙ لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ
عَظِيمٌ﴾
৯) যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে আল্লাহ তাদের সাথে ওয়াদা করেছেন যে, তাদের ভুল-ত্রুটি মাফ করে দেয়া হবে এবং তারা বিরাট প্রতিদান লাভ করবে।
﴿وَالَّذِينَ كَفَرُوا
وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا أُولَٰئِكَ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ﴾
১০) যারা কুফরী করবে এবং আল্লাহর আয়াতকে মিথ্যা বলবে, তারা হবে জাহান্নামের অধিবাসী।
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ
آمَنُوا اذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ هَمَّ قَوْمٌ أَن يَبْسُطُوا إِلَيْكُمْ
أَيْدِيَهُمْ فَكَفَّ أَيْدِيَهُمْ عَنكُمْ ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ وَعَلَى
اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ﴾
১১) হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর সে অনুগ্রহের কথা স্মরণ করো, যা তিনি ( এ সাম্প্রতিককালে) তোমাদের প্রতি করেছেন, যখন একটি দল তোমাদের ক্ষতি করার চক্রান্ত করেছিল কিন্তু আল্লাহ তাদের চক্রান্ত নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন। আল্লাহকে ভয় করে কাজ করতে থাকো। ঈমানদারদের আল্লাহর ওপরই ভরসা করা উচিত।
§
إِذْ
هَمَّ قَوْمٌ أَن يَبْسُطُوا إِلَيْكُمْ أَيْدِيَهُمْ فَكَفَّ أَيْدِيَهُمْ
عَنكُمْ-যখন
একটি দল তোমাদের ক্ষতি করার চক্রান্ত করেছিল কিন্তু আল্লাহ তাদের চক্রান্ত নস্যাৎ
করে দিয়েছিলেন।
o
এখানে যে বিশেষ ঘটনার দিকে ইংগিত করা হলো, তা বর্ণিত হয়েছে হযরত আব্দুল্লাহ
ইবনে আব্বাস রা. এর সূত্রে। ঘটনা হলোঃ
ইহুদীদের একটি দল-বনু
নাযির খাইবারে কাব ইবনে আশরাফের নেতৃত্বে নবী সা. ও তাঁর বিশেষ বিশেষ সাহাবীদেরকে একটি
ভোজ আমন্ত্রণ করেছিল। এই
সংগে তারা গোপনে চক্রান্ত করেছিল যে, নবী (সা) ও সাহাবীগণ এসে গেলে একযোগে তাদের
ওপর আকস্মিকভাবে আক্রমণ চালিয়ে তাদেরকে শেষ করে দেবে এবং এভাবে তারা ইসলামের
মূলোৎপাটনে সক্ষম হবে। বিশেষ ভাবে রাসূল সা.কে
হত্যা করার জন্য আমর ইবনে জাহশকে নিয়োগ করা হয়। কিন্তু আল্লাহর অনুগ্রহে ঠিক সময়ে নবী করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পারলেন। তিনি দাওয়াতে অংশ গ্রহণ করলেন না।
o
সূরার এই আয়াত থেকে বনী ইসরাঈলকে সম্বোধন করে বক্তব্য শুরু হয়েছে, তাই এই ঘটনার
দিকে ইংগিত করে বক্তব্যের সূচনা করা হলো।
o
বনী ইসরাঈলদের উদ্দেশ্য করে প্রদত্ত ভাষনের উদ্দেশ্য দুইটিঃ
১. পূর্বসূরী আহলে কিতাবরা যে পথে চলেছিল, সে পথে চলা
থেকে মুসলমানদের বিরত রাখা। বিধায় মুসলমানদের স্মরণ করে দেয়া হলো যে, তোমাদের থেকে
আজ যেভাবে অংগীকার নেয়া হয়েছে, একই ভাবে আগে নবী ইসরাঈল ও ঈসা আ. এর উম্মত থেকেও অংগীকার নেয়া
হয়েছিল। বিধায় তারা অংগীকার ভংগ করে যেমন পথভ্রষ্ট হয়েছে, তোমরাও সেভাবে অংগীকার ভংগ করে
পথভ্রষ্ট হয়োনা।
২. ইহুদী আর খৃষ্টান সম্প্রদায়কে তাদের ভূলের জন্য সতর্ক করা এবং তাদেরকে দ্বীনে
হকের দাওয়াত দেয়া।
0 Comments