আমার উস্তাদ মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম সিদ্দিকীঃ কিছু স্মৃতি কিছু কথা
(১)
মাওলানা
আব্দুল কাইয়ুম সিদ্দিকী আর নেই। তার দুনিয়ার সফর শেষ করে তিনি তার মালিকের বরাবরে
হাজিরা দিতে এখন আমাদের কাছে ‘নাই’। আমার প্রিয়
শিক্ষক জনাব আব্দুল কাইয়ুম সিদ্দিকী
চলে গেলেন ওপারের সুন্দর জীবনে। আল্লাহ তাকে জান্নাতের মেহমান হিসাবে কবুল করুন।
হাজার
হাজার শিক্ষকের শিক্ষককে আল্লাহ উত্তম মর্যাদা দিন।
ফাজেল
শ্রেণীতে তার কাছে তাফসীরে জালালাইন পড়েছি ১৯৯০ সালে। তিনি আমার সরাসরি শিক্ষক।
তদানিন্তন মৌলভী বাজার টাউন সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্র ছিলাম আমরা। মৌলভী বাজারের
পশ্চিম বাজার জামে মসজিদের দক্ষিণ পাশে সেই ক্যাম্পাসটি এখন আছে কি নাই-তা বলতে
পারবো না। কিন্তু সেই ক্যাম্পাসটি ঘিরে আমার কেটেছে দুইটি বছর। আর সেই দুইটি বছরে
হুজুরের সাথে বেশ কয়েকটি স্মৃতি।সেই স্মৃতি গুলো নিয়ে লেখা ইচ্ছে আছে-তবে অন্য কোন
সময়ে।
মাওলানা
আব্দুল কাইয়ুম সিদ্দিকী আমার ব্যক্তিগত জীবনের তিনজন ফেভারেইট টিচারের তৃতীয়জন। এর
মধ্যে একজন চলে গেছেন অনেক আগে। তিনি সুজাউল আলিয়া মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ জনাব
মাওলানা আজিজুর রহমান শাহবাগী রাহিমাহুল্লাহ। যিনি জনাব আব্দুল কাইয়ুম সিদ্দিকীরও
শিক্ষক ছিলেন।
দ্বিতীয়জন রুগে সুখে এখনো আছেন, একটি
সিনিয়র মাদ্রাসার প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করছেন। আল্লাহ তাকে হায়াতে
তাইয়্যিবাহ দান করুন। যার কাছে আমি আলিম শ্রেণীতে নুরুল আনোয়ার পড়েছি।
জনাব
মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম সিদ্দিকী ব্যক্তিগত জীবনে হাসিখুশী চেহারার সদালাপী একজন
মানুষ ছিলেন। তার সান্নিধ্যে যে কোন মানুষ তার হয়ে যেতো। ছাত্রদের বুঝানোর
ক্ষেত্রে তার দারুন উপস্থাপনা তাকে আমার কাছে ফেভারেইট টিচারের মর্যাদায় নিয়ে
গেছে।
দূর্ভাগ্যজনক
হলেও সত্য যে, মৌলভী বাজার টাউন
সিনিয়র মাদ্রাসা ছেড়ে আসার পর, আর কখনো তার সাথে সাক্ষাত
হয়েছে বলে মনে পড়ছেনা। শুধু একবার তার মাদ্রাসায় হাজির হয়েছিলাম, যখন মাদ্রাসাটি পশ্চিম বাজারের ক্যাম্পাস ছেড়ে স্থানান্তরিত হয়েছিল সৈয়দ
শাহ মোস্তফা রাহ. এর মাজারের পশ্চিমে শাহ মোস্তাফা রোডে।
তিনি
মৌলভী বাজার জেলার বড়লেখার তারাদরম গ্রামের কৃতি সন্তান ছিলেন। তার বড় ভাই, ছোট ভাই, ছেলে ভাতিজা মিলিয়ে বিশাল
এক আলিম পরিবার। এক সময়ে তার গ্রামের বাড়ীর পশ্চিমের বাড়ীতে লজিং ছিলাম। তার
ভাতিজা রফিক (কাজী মাওলানা রফিক উদ্দিন) এর সাথে একই সাথে সুজাউল আলিয়া মাদ্রাসা
ভিন্ন শ্রেণীতে পড়ালেখা করার সুযোগ হয়েছিল।
আজ
ফেইসবুকের কল্যাণে তার ইনতিকালের খবরটি জানতে পারলাম। যদি দেশে থাকতাম, তাহলে যে অবস্থায়ই থাকিনা কেন-তার জানাযায় হাজির হওয়ার
চেষ্টা করতাম।
হে
আরশের মালিক আমার ফেভারেট টিচার, হাজার
হাজার আলেমের উস্তাদকে তুমি রহমতের চাদরে ঢেকে রাখো। জান্নাতে তুমি তার জন্য একখান
ঘর বানিয়ে দিও। আমীন।
(২)
মাওলানা
আব্দুল কাইয়ুম সিদ্দিকী। আমার ফেভারেইট শিক্ষকদের একজন। মৌলভী বাজার জেলার বড়লেখা
উপজেলার তারাদরম গ্রামে তার বাড়ী হলেও জীবন যৌবন কাটিয়েছেন মৌলভী বাজার শহরে
অত্যন্ত আভিজাত্যে, দাপটে, সম্মানে।
তারাদরম
মসজিদের পশ্চিমের বাড়ীতে উনাদের পৈত্রিক আবাস। উনার আব্বা ছিলেন সুজাউল আলিয়া
মাদ্রাসার উস্তাদ বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন (উনার নামটা এই মুহুর্তে মনে আসছেনা; মুদরিছ আলী অথবা মুদাস্সির আলী-এমন একটি নাম হবে হয়ত)। উনাদের
সব বড় ভাই মানসুর আলী সাহেব ছিলেন আমার আব্বার পরিচিত-ব্যবসায়িক সূত্রে। যার কারণে
উনাকে চাচা ডাকতাম। উনার সাথে প্রথম দেখা উনার আব্বার নামাযে জানাযা এবং পরবর্তী
জুমুয়াবারে আয়োজিত দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে। আমার জীবনের দ্বিতীয় দীর্ঘ মিলাদ মাহফিল
ছিল ওটি। ঐ মিলাদ মাহফিল পরিচালনা করেন উনার বড় ভাই জনাব মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস।
ব্যক্তিগত জীবনে আব্দুল কাইয়ুম সিদ্দিকী ছিলেন আব্দুল কুদ্দুস সাহেবের চেয়ে অনেক
নামকরা ও নামজাদা। কিন্তু সেই দিন উনার তার বড় ভাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মাণ দেখে
অভিভূত হয়েছিলাম। ছোট ভাই হিসাবে কিভাবে বড় ভাইয়ের সামনে বালকের মতো থাকতে হয়, তা দেখতে পেয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা এসেছে সেদিন থেকে-তখন আমি ছিলাম সুজাউল
আলিয়া
মাদ্রাসার দশম শ্রেণীর ছাত্র।
১৯৮৯
সাল। সত্য ও সুন্দরের সাথে অবিরাম পথ চলার অংশ হিসাবে পথ চলার মুরব্বী জনাব নজরুল
ইসলাম শোয়েব এর নির্দেশে আমাকে চলে যেতে হলো মৌলভী বাজার শহরে। ফাজিল পড়তে হবে
মৌলভী বাজার টাউন সিনিয়র মাদ্রাসায়। ইতিমধ্যে পাথারিয়া গাংকুল মনসুরিয়া সিনিয়র
মাদ্রাসা থেকে আলিম পাশ করেছি। সেই সময়ে মৌলভী বাজার টাউন সিনিয়র মাদ্রাসার
প্রিন্সিপাল মুহতারাম আব্দুল কাইয়্যিম সিদ্দিকী।
যথারীতি
ভর্তি ফরম পুরণ করে ইন্টারভিউ বোর্ডের সম্মুখীন হলাম। ভাইস প্রিন্সিপাল জনাব আকমল
আলী হুজুর এবং প্রভাষক জনাব আমিনুল বাহার জামালী হুজুর ইন্টারভিউ নিলেন। ইন্টারভিউ
ভালই হলো। কিন্তু শেষে তাদের খেয়াল হলো আমি সুজাউল মাদ্রাসা থেকে দাখিল এবং গাংকুল
মাদ্রাসা থেকে আলিম পাশ করেছি। তাহলে তো আমার আক্বীদায় সমস্যা হতে পারে। তাই তারা
রিজেক্ট করে দিলেন। আমার ভর্তি হবে না। ভর্তি ফরমও ফেরত দিলেন।
উপয়ান্তর
না দেখে আমি প্রিন্সিপাল জনাব আব্দুল কাইয়ুম সিদ্দিকী সাহেবের স্মরণাপন্ন হলাম।
তার আগে ভেবে নিলাম-তাকে কি বলতে হবে। তাকে যা বললাম, তা এই ভাবে: “আমি আপনার এলাকার
লোক। আমার বাড়ী চান্দগ্রাম। আপনার বড় ভাই মনসুর চাচা আমার আব্বার বন্ধু হোন। আমি
আপনার বাড়ীর পশ্চিমের বাড়ী ফাতির আলী সাহেবের বাড়ীতে লজিং ছিলাম। আপনাদের বাড়ীতে
আমি অনেক গিয়েছি। বরই আলাতে (রফিকদের বর্তমান বাড়ী) অনেক বেড়েয়েছি। আমি আপনার
মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার জন্য আমার আব্বা আমাকে পাঠিয়েছেন। আমি সুজাউল মাদ্রাসায় এবং
গাংকুল মাদ্রাসায় পড়ার কারণে ইন্টারভিউ বোর্ডের হুজুররা আমাকে ভর্তি দিচ্ছেন না।
উনারা হয়ত ভাবছেন, সুজাউল মাদ্রাসায় এবং গাংকুল
মাদ্রাসায় যারা পড়ে, তারা সবাই শিবির করে। আমি ভর্তি
হবো না বলে চলে যাচ্ছিলাম। হঠাত ভাবলাম-আপনি তো আছেন, তাহলে
একবার বলে দেখি কোন হেল্প করেন কি না। তাই চলে এলাম। এখন আপনি বলে দিন, আমি কি করবো? উনি আমার ভর্তি ফরমে চোঁখ বুলালেন এবং উত্সাহের
সাথে বললেন, অবশ্যই তোমার ভর্তি হবে। তুমি আমার এলাকার
ছেলে। তোমাকে যদি আমি ভর্তি না করি, তাহলে কাকে ভর্তি
করবো। এর পর মন্তব্য লিখে স্বাক্ষর দিলেন। আমি সাথে সাথে ইন্টারভিউ বোর্ডের কাছে
কাগজ গুলো নিয়ে গেলাম। উনারা তিরস্কারাচ্ছন্ন চোঁখে আমার দিকে তাকালেন। বললেন:
তাহলে আমাদের কাছে কেন এসেছো। অফিসে যাও, ভর্তি হয়ে
নাও। আমি সে অনুযায়ী অফিসে গিয়ে ভর্তি হয়ে গেলাম।
যথারীতি
ক্লাশ করতে থাকলাম। আব্দুল কাইয়ুম সিদ্দিকী হুজুর তাফসীরের ক্লাশ নিতেন, আকমল আলী হুজুর হাদীস আর আমীনুল বাহার জামালী হুজুর বালাগাত।
সবচেয়ে উপাদেয় ক্লাশ ছিল মুহতারাম আব্দুল কাইয়ুম সিদ্দিকী হুজুরের ক্লাশ। তন্ময়
হয়ে তার তাফসীর শুনতাম। তিনি তাফসীরে জালালাইন থেকে নিয়মিত দারস দিতেন। উনার ক্লাশ
থেকে প্রয়োজনীয় অংশ নোট নিতাম। তার দারস গুলো এতো সাবলিল ছিল যে, বিষয় গুলো বুঝার জন্য আর পড়তে হতো না। পরীক্ষার খাতায় অনায়াসে লিখে
ফেলতাম। এভাবে করে তিনি আমার ফেভারেট টিচারের তালিকায় স্থান করে নিলেন।
উনার
সহযোগিতার দরজাটা ছিল উদার। যার আরেকটি প্রমাণ মিলবে এই স্মৃতিময় ঘটনা থেকে। আমি তখন ফাজেল ক্লাশের শেষ ভাগের ছাত্র। তখন ফাজেল
টেস্ট পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষার পর রেজাল্ট হবে। রেজাল্টের পর ফাইন্যাল পরীক্ষার
জন্য ফরম ফিলাম হবে। সেই ফরমে ছবি দিতে হবে, তথ্য
দিতে হবে, স্বাক্ষর করতে হবে। কিন্তু আমার ডাক এসেছে
সত্য ও সুন্দরের পথে অবিরাম পথ চলার কাজে। আমাকে যেতে হবে চট্টগ্রাম
বিশ্ববিদ্যালয়ে। চট্টগ্রাম বিশ্ব বিদ্যালয়ে তখন চলছে চাকসু নির্বাচনের তত্পরতা।
হামীদ-মানসুর হামীদ পরিষদের পক্ষে কাজ করতে হবে।
এতো
দিনে আমি জনাব আব্দুল কাইয়ূম সিদ্দিকীর সাহেবের কাছে একজন নিরলস শিবির নেতা হিসাবে
পরিচিত হয়ে আছি। সেই বিষয়টি আলোচনা করবো অন্য কোন স্মৃতি চারণে। সত্য ও সুন্দরের
সাথে অবিরাম পথ চলার মুরব্বী জনাব নজরুল ইসলাম শোয়েব নির্দেশ দিলেন, যেভাবে হোক ম্যানেজ করে
আমাকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে হবে টেস্ট পরীক্ষা শেষ হওয়ার দিনই। কিন্তু
তা কিভাবে সম্ভব?
বুকে
সাহস নিয়ে জনাব আব্দুল কাইয়ুম সিদ্দিকী হুজুরের স্মরণাপন্ন হলাম তার সহযোগিতার
প্রত্যাশায়। কারণ উল্লেখ না করে একটা বিশেষ কাজে আমাকে মৌলভী বাজারের বাহিরে থাকতে
হবে-এই বিষয়টা বুঝিয়ে বলে এডভান্স ফরম ফিলাপ করে নেয়ার আবেদন করলাম। তিনি বললেন:
নজরুল! এমন কি সমস্যা যা আমাকে বলা যাবে না। বলে ফেল। দেখি কি সহযোগিতা করতে পারি।
আমি কোন ধরণের বণিতা না করে সরাসরি তাকে চট্টগ্রাম যাওয়ার কথাটা বলে ফেললাম। তিনি
সাথে সাথে আমার আবেদন মনজুর করে এডভ্যান্স ফরম ফিলাপের সুযোগ করে দিলেন এবং আমাকে
চট্টগ্রাম যেতে সহযোগিতা করলেন। এই সময়ে আমার কাছে পর্যাপ্ত টাকা ছিলনা বলে তিনি
কিছু টাকা পরে দেয়ার বিষয়টিও মেনে নিয়ে তার অফিস সহকারীকে নিজে ডেকে এনে বিষয়টি
বুঝিয়ে দিলেন।
জনাব
আব্দুল কাইয়ূম সিদ্দিকীর এই সহযোগিতার জন্য সীমাহীন প্রফুল্ল হয়ে এই দিন শেষেই
রাতের বেলা চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম বড়লেখার গোয়ালী এলাকার মেরাজ
ভাইকে সাথে নিয়ে। চট্টগ্রামে প্রায় দুই সপ্তাহ থাকার সেই স্মৃতিটি যখন মানসপটে
ভাসে তখন মানসপটে আব্দুল কাইয়ুম সিদ্দিকী হুজুরও
ভাস্মর হোন নিয়মিত।
আল্লাহ
তাকে জান্নাতে উত্তম মাকাম দান করুন।
(৩)
মাওলানা
আব্দুল কাইয়ুম সিদ্দিকী। আমার ফেভারেইট এই শিক্ষককে নিয়ে কিছু স্মৃতি কিছু কথার
প্রথম পর্ব লিখেছিলাম গতকাল। স্মৃতির ঝুলি থেকে আজ দ্বিতীয় পর্ব।
মুহতারামকে
নিয়ে আমার আরেকটি স্মৃতি, যা সুখকর
না হলেও স্মৃতি। তখন আমি মৌলভী বাজার টাউন
সিনিয়র মাদ্রাসায় সত্য ও সুন্দরের সাথে অবিরাম পথ চলার কাফেলার সভাপতি। সভাপতি
নামটা অনেক বড় হলেও সেই সময়ে কাফেলাটা অনেক বড় ছিল না। আসলে আমি সত্য ও সুন্দরের
পথে তরুন ছাত্র সমাজকে আহবান জানানোর দায়িত্ব নিয়ে মৌলভী বাজারে গিয়েছিলাম। সেই
সময়ে বয়সটা কতটুকু আর ছিল। তাই সিনিয়রদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ছিল আমাদের কাজ।
একটু একটু করে ১জন ২জন আমাদের মিছিলে শামীল হচ্ছে, আর
আমরা হাটি হাটি পা পা করে হাটছি। তখনকার সময়ে মৌলভী বাজার টাউন সিনিয়র মাদ্রাসায়
ছিল আনজুমানে তালামিযে ইসলামিয়ার জয়জয়কার অবস্থা। প্রিন্সিপাল আব্দুল কাইয়ুম
সিদ্দিকী সহ সকল শিক্ষক ছাত্র সবাই ছিলেন সেই ঘরণার। তাই পদে পদে ভয়, শংকা নিয়ে আমাদের পথ চলা।
ইসলামী
ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন তখন নতুন সাথী হিসাবে
দাখিল পাশ করে একই মাদ্রাসায় আলিম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছেন। সেই সময়ে কমিটি গঠনে আমি
সভাপতি আর উনি সেক্রেটারীর দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়েছি মাত্র।
সেপ্টেম্ব
১৯৮৯ সাল। কোন এক দুপুরে আমি মাদ্রাসায় অনুপস্থিত ছিলাম। তখন আমাদের কাফেলার সকল
তৎপরতা চলতো শাহ মোস্তাফা রোডের দেওয়ান মনজিল কেন্দ্রীক। আমি সেখানে মুলি বাশের
বেড়া দেয়া একটা ঘরে থাকতামও বটে। ওখানে ছিল একটু খানি মিষ্টি হাসির ধারক জনাব
সিরাজুল ইসলাম মতলিবের বাসা।
বিকালে
খবর পাওয়া গেল-তালামিযের সাথে আমাদের কোন এক ভাইয়ের বচসা হয়ে গেছে। আগামী কাল নাকি
তারা চিনাবে। টানটান উত্তেজনার এক পর্যায়ে বৈঠকের পর বৈঠক অনুষ্ঠানের পর সিদ্ধান্ত
হলোঃ আগামীকাল প্রিন্সিপাল বরাবরে দরখাস্ত দেয়া হবে-ঘটনার বিচার চেয়ে। সেই অনুযায়ী
দরখাস্ত লিখা হলো। পরদিন সকালে সবাই মাদ্রাসায় যাবেন এক সাথে। আমাকে পাঠানো হলো
চৌমহনার ইসলামীয়া লাইব্রেরীতে দরখাস্ত ফটোকপি করার জন্য। আমি যখন দরখাস্ত নিয়ে
দেওয়ান মনজিলে ফিরে এলাম, তখন দেখি
দেওয়ান মনজিল হাহাকার করছে। কেউ নাই, সবাই মাদ্রাসায় চলে
গেছেন। সময় ৫/১০ মিনিটও যায়নি। দেখতে পেলাম আমাদের অনেক ভাই আহত হয়ে দেওয়ান মনজিলে
ফিরে আসছেন। এর মাঝে দেখা গেল পুলিশ। পুলিশ মারমুখী হয়ে দেওয়ান মনজিলে প্রবেশ
করছে। আমি দরখাস্ত কোথায় রাখবো, কোন দিকে পালাবো, কাকে জিজ্ঞেস করবো-ইত্যাদি ভাবতে ভাবতে নিজেকে আবিষ্কার করি পুলিশের
গ্রেফতারীর কবজায়, তারা টেনে হিচড়ে আমাকে নিয়ে গাড়ীতে
উঠায়। পরে জানতে পারি, আমাদের ভাইয়েরা মাদ্রাসায় প্রবেশ
করা মাত্রই তালামিযের ভাইয়েরা জিহাদী প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে (তাদের ভাষায়)
কাফেরদের বিরুদ্ধে অস্র তুলে নেন এবং আমাদের ভাইদের মারতে থাকেন। আমাদের ভাইয়েরা
পালিয়ে আত্মরক্ষা করলেও কিছু ভাই তাৎক্ষনিক প্রতিরোধ গড়ে তুলে। ইত্যবসরে পুলিশের
উপস্থিতিতে দুই পক্ষই পালিয়ে যায়। উল্লেখ্য যে, সেই সময়ে
মাদ্রাসার নিকটেই নদীর ধারে ছিল মৌলভী বাজার থানা।
আমি যখন
থানায় গেলাম, তার আগেই আমার গাড়ীতে
সহযাত্রী আমীনুল ইসলাম সেলিম এবং দেওয়ান হারুনুর রশীদকে গ্রেফতার করে উঠানো হলো।
থানায় পৌছার পর অন্য একটি গাড়ীতে করে হাজির করা হলো দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মতলিবকে।
দিনটি ছিল বুধবার। আমাদেরকে থানাতে অবস্থান করতে হলো বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত।
বৃহস্পতিবার
সকাল। কনকনে শীত হতে রক্ষা পেতে চারজনের সংসারে ইতিমধ্যে লেপ তোষক সরবরাহ করা
হয়েছে। বিধায় ঘুমটা খারাপ হয়নি। মৌলভী বাজারের পুলিশ কাস্টডিতে দীর্ঘদিন পর আমরা
প্রথম মেহমান হওয়াতে আত্মার আত্মীয়রা খাবার দাবারও পাঠিয়েছেন দিল খোলে। বৃহস্পতিবার
সকালে ফজর নামায পড়ে প্রাতঃভ্রমনে বের হলেন জনাব আব্দুল কাইয়ুম সিদ্দিকী হুজুর।
তার আজকের গন্তব্য মৌলভী বাজারের পুলিশ স্টেশন। তিনি আমাদের দেখতে এলেন। আমাদেরকে
যে মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, সেই
মামলার বাদী উনি। কিন্তু তিনি জানেন না-আমরাই যে তার আসামী। তিনি রীতিমতো
কিংকর্তব্য বিমুড় হলেন। তিনি দূঃখ প্রকাশ করলেন। সান্তনা দিলেন। উৎসাহ দিলেন। তার
বক্তব্য থেকে একটা কথা পরিস্কার হলো, আমরা যারা
নেতৃত্বের আসনে থাকি, তাদের অনেকের অগোচরে তৃণমূলে অনেক
কিছু হয়ে যায়।
পরের
দিন বৃহস্পতিবার আমাদেরকে কোর্টে চালান দেয়া হলে সেখানে আমাদের জামীন না দেয়ার
জন্য আমাদের জাতীয় আপার সৈনিক উকিলরা ছিলেন যুদ্ধাংদেহী অবস্থায়। অবশেষে আমরা
জামীন না পেয়ে শশুড় বাড়ীর লাল দালানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। তিন দিন সেখানে
থাকার সুযোগ হলো সাপ্তাহিক ছুটির সুবাদে। সাপ্তাহিক ছুটি শেষ হবার পর আমরা প্রথম
কর্মদিবসে জজকোর্ট থেকে জামীন পেয়ে শশুড়ালয় থেকে বেরিয়ে আসলাম।
পরের
দিন হুজুরের খেদমতে হাজির হলাম। তিনি অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে আমাকে গ্রহণ করলেন
এবং সেই দিন থেকে অন্য রকম এক ভালভাসায় আমাকে গ্রহণ করতেন বলে আমার কাছে মনে হলো।
মৌলভী
বাজার টাউন সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্রজীবনের শেষ বেলা। মাদ্রাসার বার্ষিক ওয়াজ
মাহফিল। প্রচারের জন্য মাইকিং করা হবে। সে জন্য সেরা মাইকবাজদের বাছাই করা হলো।
আমি নিজেকে সেরা মাইকবাজদের একজন মনে করতাম। কিন্তু আমাকে ডাকা হলো না।
প্রিন্সিপাল মুহতারাম আব্দুল কাইয়ুম সিদ্দিকী বাছাইকৃত মাইকবাজদের নিকট থেকে
শুনছেন কিভাবে তারা বলবে সেই ঘোষনাটি। আমি চুপিচুপি তার অফিসে ঢুকে গেলাম। তিনি
অত্যন্ত আদরে আমাকে গ্রহণ করলেন। মাইকবাজ যারা সেখানে ছিলেন, তারা বিব্রত হয়ে গেলেন। তারা জানেন যে, আমি খুব ভাল মাইকবাজ। তারা চাননা আমি ওখানে অংশ নেই। কিন্তু হুজুর সবাইকে
অবাক করে দিয়ে বললেন, দেখি নজরুল ইসলাম-তুমি একবার বলো।
আমি সেরা মাইকবাজের সেরা পারপর্মেন্সটি দেখাতে চেষ্টা করলাম। এরপর উনি
এক নম্বরে আমার নামটি দিয়ে বললেনঃ তোমাকে পুরো দিন থাকতে হবে। সব জায়গায় তোমার
ঘোষনা আসতে হবে। যা তার আমার প্রতি আন্তরিকতাকে স্পর্শ করলো।
ওয়াজের
দিনে যথারীতি ওয়াজ শুরু হলো। প্রিন্সিপাল হুজুর সীমাহীন ব্যস্ত। সেই সময়েও উনি
আমার দিকে লক্ষ রাখলেন। খেয়েছি কি না-জানতে চাইলেন। বাসায় গিয়ে খাবো বলাতে নিজের
জন্য বাসা থেকে আনা খাবার আমাকে খাইয়ে ছাড়লেন।
হুজুর
আজ তুমি চলে গেলে আমার মতো আরো অনেক অনেকদের রেখে সূদূরের সীমাহীন সীমান্তে। তোমার
ভালবাসার আঁচর পড়ে থাকলো আমাদের মাঝে। তোমার এ ভালবাসার প্রতিদান তোমার মালিক
তোমাকে দেবেন এই প্রত্যাশা থাকলো।
(৪)
মাওলানা
আব্দুল কাইয়ুম সিদ্দিকী। আমার মরহুম প্রিয় শিক্ষককে নিয়ে কিছু স্মৃতি কিছু কথার
প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব লিখেছিলাম। স্মৃতির
ঝুলি থেকে আজ তৃতীয় এবং শেষ পর্ব।
পরিস্থিতি
অনুযায়ী আচরণ করতে পটু ছিলেন আমাদের প্রিয় হুজুর মুহতারাম আব্দুল কাইয়ুম সিদ্দিকী।
আমি একদিন কিংকর্তব্য বিমুড় হয়ে পড়েছিলাম তার বাসাতে। কিন্তু তিনি অতি সহজে
পরিস্থিতি উতরে উঠতে ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নিয়ে আমাকে বাঁচিয়ে দিলেন।
ঘটনাটা
হচ্ছে মুহতাম আব্দুল কাইয়ুম সিদ্দিকী হুজুরের হজ্জ থেকে ফিরার পরদিনের। উনার বাসা
ছিল মাদ্রাসার পিছনে। উনি হজ্জ থেকে ফিরেছেন গতকাল। আজ আমরা মাদ্রাসাতে পৌছেই
বিষয়টা জানতে পারলাম। ক্লাশের সবাই বললেন, হুজুরের সাথে দেখা করতে যাবেন। সে দিন সত্য ও সুন্দরের সাথে অবিরাম পথ
চলার সাথীদের কেউই মাদ্রাসায় নেই। আমি একা। তাই তালামিযের ভাইদের সাথে আমিও সংগী
হলাম অতিউৎসাহে আগ্রহে। কিন্তু আমার জন্য যে বিব্রতকর পরিস্থিতি বা কিংকর্তব্য
বিমুড় অবস্থা অপেক্ষা করছে, তা কে জানে।
মাদ্রাসার
দায়িত্বশীল শিক্ষক থেকে ছুটি নিয়ে আমরা চললাম হুজুরের বাসায়। ঘর ভর্তি দর্শনার্থী।
সোফায় জায়গা নাই। তাই অনেকেই মেঝে বসে আছেন বা দাড়িয়ে আছেন। হুজুর সবার সাথে কথা
বলছেন, দোয়া দিচ্ছেন। এমতাবস্থায় আমরা হাজির
হলাম।
এখানে
একটা কথা বলে রাখা প্রয়োজন যে, পা ছুয়ে
সালাম করা বা কদমবুছি করার প্রেকটিসটা আমার ছোটকালে ছিল। কিন্তু এক সময়ে এটা আমাদের
পরিবার থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায় আমার আব্বার নসিহতে বা নির্দেশে। অবশেষে একসময় মাওলানা
আবুল কালাম আযাদ সাহেবের প্রশ্নোত্তর আসরে উপস্থিত থেকে এই সম্পর্কে যা জানি, তাতে কদমবুছির প্রয়োজনীয়তাটা আমার জীবন থেকে উঠে যায়। আমাকে কেউ কদমবুছি
করুক তা আমি যেমন পছন্দ করিনা, আমিও কাউকে কদমবুছি করিনা। আর
এমন অবস্থাটা কয়েক বছর থেকে চলে আসায় এটা আর আমার পারসোনাল অভিজ্ঞতা থেকে বিলিন
হয়ে গেছে।
হুজুরের
কামরায় প্রবেশ করা মাত্র আমার সতীর্থ ক্লাশমিট সকলে মাথা নিচু করে হুজুরের কদম
মুবারক ছুয়ে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করলেন। আমি সংগত কারণেই পিছে পড়ে গেলাম এবং রীতিমতো
কিংকর্তব্য বিমুড় হয়ে পড়লাম। ভীড়ের কারণে আমি এখনো রোমে প্রবেশ করতে পারিনি, দরজা পর্যন্ত পৌছেছি মাত্র। কিন্তু হুজুরের সাথে চোখাচোখি হয়ে
গেছে ইতিমধ্যে। আমি যে কিংকর্তব্য বিমুড়
এবং বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে আছি, তা হুজুরের নজর
এড়ায়নি। একে একে যখন আমার কদমবুছি করার পালা আসলো, তখন হুজুর
দু’কদম এগিয়ে আসলেন এবং পরম আদরে আমাকে বুকে জড়িয়ে নিলেন। আমি তাকে কদমবুছি করার
সুযোগই দিলেন না। আমার সাথে মুয়ানাকা বা মাছাদারা অথবা মুবাত্বানা করলেন। তিনি
তাৎক্ষনিক পদক্ষেপে আমাকে বিব্রতকর অবস্থা থেকে রক্ষা করলেন। অবস্থা অনুযায়ী
ব্যবস্থা গ্রহণের উপস্থিত প্রজ্ঞা তার ছিল এমন।
আরেকটা
ঘটনা বলে এই লিখার যবনিকা টানতে চাই। ঘটনাটি ঘটেছে ফাজিল পরীক্ষার টেস্ট চলাকালে পরীক্ষার হলে। আমরা ক’জন রীতিমতো ঘাবড়ে গিয়ে ছিলাম।
কিন্তু পরে উৎফুল্ল হলাম, আনন্দিত
হলাম।
ইতিমধ্যে
আমরা পরীক্ষার কয়েকটি সাবজেক্ট শেষ করেছি। প্রথম দিনের পরীক্ষা ছিল তাফসীর তথা
তাফসীরে জালালাইন। যা ইতিমধ্যে পরীক্ষা দেয়া শেষ হয়ে গেছে এবং পরীক্ষার খাতা
হুজুরের কাছে তথা মুহতারাম আব্দুল কাইয়ুম সিদ্দিকী
হুজুরের কাছে পৌছে গেছে। হুজুর ইতিমধ্যে সকলের খাতা দেখা শেষ করেছেন।
এখানে
বলে রাখা দরকার যে, আমার ক্লাশমিটদের
মাঝে ছিলেন জনাব সাদিকুর রহমান ভাই (কমলগঞ্জ), যিনি শিবিরের
সাথী ছিলেন। জনাব সুলায়মান ভাই (রাজনগর), যিনি শিবিরের
কর্মী ছিলেন তবে অনেক সাথীদের চেয়ে ভাল ছিলেন। ছিলেন শিবিরের তদানিন্তন জেলা
সেক্রেটারী অথবা জেলা অফিস সম্পাদক পরবর্তীতে জেলা সভাপতি জনাব আব্দুল মান্নান
মানিক (জুড়ি-বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী)। আমরা সবাই ব্যক্তিগত অধ্যয়নে তাফহীমূল
কুরআন অধ্যয়ন করতাম এবং আমাদের সিলেবাসের সূরা গুলো তাফহীমূল কুরআন থেকে পড়তাম।
যার কারণে তাফহীমূল কুরআনে সিলেবাসের সূরা সমূহের ব্যাপারে যে সব বক্তব্য ছিল, তা আমাদের মানসপটে ছিল এবং পরীক্ষার খাতায় তার আঁচর পড়েছে।
হুজুর
হঠাৎ করে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করলেন। একেক করে নাম ধরে ডাক দিলেন। নজরুল
ইসলাম-দাড়াও, আব্দুল মান্নান-দাড়াও, সাদিকুর রহমান-দাড়াও। আমরা তিনজন দাড়ালাম। আমরা বিষম ধরা খেলাম। হুজুর
শিবির দেখে দেখে কেন দাড় করাচ্ছেন। কি এমন ঘটনা ঘটলো বুঝতে পারতেছিনা। হুজুর
আমাদেরকে দাড় করিয়ে বিরাট একটা হেদায়াতী বক্তব্য দিলেন। যাতে তিনি আমাদেরকে
পড়াশোনার প্রতি মনযোগী হওয়ার উপদেশ দিলেন, এদিকে সেদিকে
না ঘুরে ক্লাশের বই পড়ার পরামর্শ দিলেন। এর পর হুজুর বললেন, তোমরা কারা? তোমরা পরীক্ষার খাতায় কি লিখেছো? তোমাদের
খাতা গুলো আমি বারবার পড়লাম আর তাফসিরের সাথে মিলালাম। তোমরা একটা কথাও ভূল লিখনি।
যেমন তাফসির হওয়ার কথা, ঠিক তেমনি লিখেছো। কিন্তু বাবারা, তোমরাদের এই লিখা তো তোমাদের কিতাবের সাথে মিলেনা। আমি তোমাদের খাতায়
মার্ক কাটতে চাইছিলাম, কিন্তু মার্ক কাটতে পারিনি। কারণ
তোমরা ভূল তাফসির লিখনি। কিন্তু তোমরা এই তাফসির কোথা থেকে লিখলে। তাফসীরে
জালালাইনের সাথে তো মিলেনা। তোমাদের অন্য ক্লাশমিটের সাথে মিলেনা। কোন গাইড বা নোট
বুকের সাথে মিলেনা। তোমাদের অনেক অনেক মেধা আছে, আমি তোমাদের
জন্য দোয়া করি। তোমরা শুধু তোমাদের মেধাটাকে কিতাবমুখী করো। কিতাবের দিকে নজর দাও।
আমরা
হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। না জানি কত ধরণের আশংকা করছিলাম। দেখলাম হুজুর আমাদের প্রশংসা
করলেন। তার এই প্রশংসা বাক্যে উপস্থিত অনেক ছাত্র শিক্ষক সন্তুষ্ট হোননি। কারণ
আমাদের একটা মার্কা ছিল। আমরা ছিলাম ক্লাশের মাঝে মার্কা মারা।
স্মৃতি
আরো আছে, তার জীবনের মাত্র দুইটি বছরে খানিকটা
সময়ে আমার ঝুলিতে এই স্মৃতি জমা আছে।
কিন্তু যারা বছরের পর বছর তার সান্নিধ্যে থাকার সুযোগ হয়েছিল, তারা নিশ্চয়ই আরো অনেক কিছু স্মৃতিতে ধরে রেখেছেন। আল্লাহ হুজুরকে
জান্নাতে উত্তম মাকাম দান করুন। আমীন।
0 Comments