মুহাম্মদ নজরুল
ইসলামঃঃ বুজুর্গ একটি খানকার প্রধান। তিনি বছরের প্রতি রামাদ্বানে একটি রাত তার নির্বাচিত অনুসারীদের নিয়ে জড়ো হোন। কিছু নাসিহত করেন। তারপর তার অনুসারীদের নিয়ে তার মালিকের সমীপে মুনাজাত করেন। তিনি কাঁদেন, অনুসারীদের কাঁদান।
গত বছর করোনার কারণে তিনি তার অনুসারীদের থেকে ছিলেন দূরে বহু দূরে। তাই তার অনুসারীদের মাঝে উনি থাকতে পারেননি। এই বার তিনি আবার ফিরে এসেছেন তার অনুসারীদের মাঝে।
প্রতি বছরের ন্যায় এই রামাদ্বানে তিনি অনলাইনে মিলিত
হলেন অনুসারীদের নিয়ে। প্রতিবছর ৫০ থেকে ৭০জন সুযোগ পেলেও এবার সুযোগ পেলেন দেড় শতাধিক। কিন্তু এবার তিনি তার ব্যতিক্রম করলেন।
কি ব্যতিক্রম? প্রতি বছর তিনি মুনাজাতে কাঁদেন, তাঁর অনুসারীরাও মুনাজাতে কাঁদে। এবার তিনি তার দেয়া নসহিত সমূহ বলতে গিয়েই কাঁদলেন, কাঁদালেন তাঁর অনুসারীদের। কিন্তু কেন কাঁদলেন এবং কাঁদালেন? এর উত্তরে বলতে হয় কিছু কথা।
এই খানকাটি উনার নয়। বরং উনি এখানে গদিনশীন। ১৯৮৩ সালে প্রবাসের খেটে খাওয়া মানুষদের নিয়ে এখানে দুইটা খানকা গড়ে তুলা হয়। একটা শহর কেন্দ্রীক আর অপরটা শিল্প নগরী কেন্দ্রীক। সেই দুই খানকার উদ্যোক্তাদের একজন চলে গেছেন ওপারের সুন্দর জীবনে। আর আরেকজন এখনো বেঁচে আছেন,
তবে বসবাস করছেন সত্য ও সুন্দরের সাথে সাত সমুদ্র তেরনদীর ওপারে। কিন্তু খানকা দূ’টি ডালপালা মেলে হয়েছে সমৃদ্ধ। দুইটা থেকে আজ প্রায় দেড়শত ছোট ছোট খানকার বুজুর্গ এখন একজন। দেড় শতাধিক খানকা চলে এই বুজুর্গের পরিচালনায়। সেই খানকা গুলো থেকে বাঁচাই করে অনুসারীদের নিয়ে আসেন রামাদ্বানের গভীর রজনীতে প্রতি বছর। নসিহত করেন, দোয়া করেন। প্রশ্ন থেকে গেল কেন কাঁদলেন এবং কাঁদালেন মুনাজাতে নয়, নসিহতে?
হ্যাঁ! তিনি নসিহতের সময়ই কাঁদলেন এবং তাঁর অনুসারীদের কাঁদালেন। তিনি তার নসিহতের শুরুতেই বললেনঃ আমরা শুরু করেছিলাম ১৯৮৩ সালে। ৩৮ বছর চলে গেছে। এই সময়ে আমাদের অনেক সংগী সাথী বেড়েছে। আমাদের সংখ্যা অনেক বড় হয়েছে। কিন্তু আমাদের সংসার বড় হওয়ার সাথে সাথে আমাদের দূর্বলতাও বেড়েছে। আমাদের মধ্যে অনেক দূর্বলতা রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় দূর্বলতা হচ্ছেঃ আত্মশুদ্ধির ঘাটতি। আমাদেরকে এই দূর্বলতাকে কাটিয়ে উঠতে হবে।
আত্মশুদ্ধির ঘাটতি গুলো এক এক করে তিনি
স্ববিস্তারে উল্লেখ করলেন তার অনুসারীদের উদ্দেশ্যে। অনুসারীদের জাগিয়ে তুললেন দীল উজাড় করা আত্মসমালোচনায়। উপস্থিত সকল অনুসারী নিজের মান আর আমলের অবস্থান উপলব্দি করে ভয়ে কুকিয়ে
গেলেন। নিজের অবস্থান, আল্লাহর
পাকড়াও ইত্যাদি চিন্তা করতে করতে সবাই নিজ থেকে ফুফিয়ে কেঁদে উঠলেন।
উল্লেখ্য যে, আমার কাছে যে থলিটা আছে-সেই থলির
ধারণ ক্ষমতার আলোকে আমি থলিতে বুজুর্গের বক্তব্যের কিছু অংশ ধারণ করতে পেরেছি। তিনি যে গভীরে গিয়ে আলোচনা করেছেন, তা আমি
পুরো মনে রাখতে পারিনি। কিন্তু, তার
আলোচনার রেশ আমাকে এখনো আবেগাফ্লুত করছে, আন্দোলিত করছে।
তিনি বলেনঃ
আত্মশুদ্ধির ঘাটতিকে পুরণ করার জন্য আমাদেরকে আত্মসমালোচনা করতে হবে।
ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলা, আনুগত্যশীল হওয়া, ক্ষমা করে দেয়া, রহমশীল হওয়া ইত্যাদির অনেক অনেক নসিহত আমরা পড়েছি শুনেছি করেছি। কিন্তু আমল করা হয়নি।
আমাদেরকে আত্মসমালোচনা করে এসব ক্ষেত্রে কোথায় কোথায় ঘাটতি রয়েছে, তা খুঁজে বের করতে হবে। অভাবকে দূর করতে হবে।
আত্মশুদ্ধির জন্য আত্ম সমালোচনা কেন?
আত্মশুদ্ধি মানে পবিত্রকরণ তথা আত্মাকে পরিশুদ্ধ করণের প্রক্রিয়াতে থাকা।
নিজেকে শুদ্ধ না করে ওয়াজ করলে শ্রেুাতাদের মাঝে আছর পড়েনা।
এই আত্মশুদ্ধিকে বলে তাযকিয়ায়ে নাফস।
আত্মশুদ্ধি মানে এখলাছের সাথে কাজ করা। কালবকে কালবে সালিম–এর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া।
কালবে সালিম হলো কালবকে কালিমামুক্ত করা।
কালব আর আমলকে এহসানের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া–কালবের সৌন্দর্য করণ।
কালবকে তাহারাত বা পবিত্র করণ।
আমরা তাসাউফ তাসাউফ বলে আওয়াজ দেই। আসল তাসাউফ কি জানেন? আমরা যে জুব্বা গায়ে দেই, তাকে এখানে বলা হয় সুফ। সুফ যেমন সাদা তাকে, কালবকে এমনই সাদা সাদা ধবধবে সাদা করে গড়ে তুলা। কলবকে সকল প্রকার দাগমুক্ত করে গড়ে তুলা ও করে রাখা। এটাই প্রকৃত তাসাউফ।
আল্লাহর রাসূল সা.কে পাঠানো হয়েছে যে সব দায়িত্ব দিয়ে, তার অন্যতম হলোঃ পরিশুদ্ধ করণ। সূরা জুমুয়াতে ২ নম্বর আয়াতে বর্ণনা তিনি স্মরণ করে দেন।
﴿هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولًا مِّنْهُمْ
يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ
وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ﴾
“তিনিই মহান সত্তা যিনি উম্মীদের মধ্যে তাদেরই একজনকে রসূল করে পাঠিয়েছেন যে তাদেরকে তাঁর আয়াত শুনায়, তাদের জীবনকে সজ্জিত ও সুন্দর করে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয়। অথচ ইতিপূর্বে তারা স্পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত ছিল।”
বুজুর্গ নসিহত করলেনঃ পরিশুদ্ধ থাকার জন্য আমাদেরকে ১০টি কাজ করতে হবে
একঃ ঈমানে
পরিশুদ্ধি
তাওহীদ, রেসালাত, আখেরাতের প্রতি স্বচ্ছ ঈমান। শিরকমুক্ত ঈমান।
দুইঃ তাকওয়া
অবলম্বন
হারাম থেকে বেঁচে থাকা। ফরয ও ওয়াজিব মেনে চলা।
সূরা আলে ইমরানের ১০২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাকওয়ার হক আদায় করে তাকওয়া অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেনঃ
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ
وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ﴾
“হে ঈমানদারগণ ! তোমরা যথাযথভাবে আল্লাহকে ভয়
করো। মুসলিম থাকা অবস্থায় ছাড়া যেন তোমাদের
মৃত্যু না হয়।”
আর এই তাকওয়া সৃষ্টির জন্যই রোযা ফরয করা হয়েছে। যেমনটা উল্লেখ করা হয়েছে
সূরা আল বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে”
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ
كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ﴾
“হে ঈমানদাগণ! তোমাদের ওপর রোযা ফরয করে দেয়া
হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী নবীদের অনুসারীদের ওপর ফরয করা হয়েছিল । এ থেকে আশা করা যায়, তোমাদের
মধ্যে তাকওয়ার গুণাবলী সৃষ্টি হয়ে যাবে।”
আর যা তাকওয়া তৈরী করে তার চেষ্টা সাধনাকারীর পুরস্কার হিসাবে আল্লাহ বলেছেনঃ
كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ لَهُ إِلا الصِّيَامَ فَإِنَّهُ لِي
وَأَنَا أَجْزِي بِهِ
“হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেনঃ আদম সন্তানের
প্রত্যেকটি আমল তার নিজের জন্য-তবে সিয়াম ছাড়া। নিশ্চয়ই সিয়াম রা রোযা কেবলমাত্র আমার জন্য। বিধায় এর পুরস্কারও আমি নিজে প্রদান করবো”
তিনঃ তাওবা
ইসতেগফার
আমরা কেউ ভূলে উর্ধে নই।
যিনি মনে করেন আমি ভূলের উর্ধে–তিনি শয়তানের ওয়াসওয়ার মধ্যে রয়েছেন।
সব সময় নিজেকে ছোট মনে করতে হবে। আর সব সময় তাওবা করতে হবে। গত
বাঁধা তাওবা নয়, মনে প্রাণে তাওবা করতে হবে। সূরা আত্ তাহরীমের ৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ আহবান করছেন-
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً
نَّصُوحًا عَسَىٰ رَبُّكُمْ أَن يُكَفِّرَ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ
جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ﴾
“হে ঈমানদারগণ, আল্লাহর
কাছে তাওবা করো, প্রকৃত তাওবা। অসম্ভব নয় যে, আল্লাহ তোমাদের
দোষত্রুটিসমুহ দুর করে দিবেন এবং এমন জান্নাতে প্রবেশ করবেন যারা পাদদেশ দিয়ে
ঝরণাসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে।
অন্তর থেকে তাওবা করতে হবে।”
চারঃ তাওয়াক্কুল
সর্বাবস্থায় তাওয়াক্কুল করতে হবে আল্লাহর উপর।
বুজুর্গ বলেন,
আপনাদেরকে সকল ভাইদের থেকে বাঁছাই করে এখানে
নিয়ে আসা হয়েছে। আপনারা দায়িত্বশীল। আর সে জন্য আমি তাওয়াক্কুল বিষয়ে এমন একটি আয়াত শুনাতে চাই, যা মূল দায়িত্বশীলকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ নসিহত করেছেন। যা বর্ণিত হয়েছে সূরা আলে ইমরানের ১৫৯ নম্বর আয়াতে-
﴿فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللَّهِ لِنتَ لَهُمْ ۖ وَلَوْ كُنتَ
فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ ۖ فَاعْفُ عَنْهُمْ
وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ ۖ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ
عَلَى اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ﴾
“(হে নবী!) এটা
আল্লাহর বড়ই অনুগ্রহ যে, তোমার ব্যবহার তাদের প্রতি বড়ই
কোমল। নয়তো যদি তুমি রুক্ষ স্বভাবের বা কঠোর চিত্ত
হতে, তাহলে তারা সবাই তোমার চার পাশ থেকে সরে যেতো । তাদের ক্রটি ক্ষমা করে দাও। তাদের জন্য মাগফিরাতে দোয়া করো এবং দীনের ব্যাপারে বিভিন্ন পরামর্শে তাদেরকে
অন্তরভুক্ত করো। তারপর যখন কোন মতের ভিত্তিতে তোমরা স্থির
সংকল্প হবে তখন আল্লাহর ওপর ভরসা করো। আল্লাহ
তাদেরকে পছন্দ করেন যারা তাঁর ওপর ভরসা করে কাজ করে।”
দায়িত্বশীলদের নরম দিল হতে হবে।
এড়িয়ে চলা জনকে কাছে টেনে নিতে হবে এবং তার
কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে।
মনে রাখবেন,
কেউ যদি মাফ না করে–তাহলে আল্লাহও মাফ করবেন না। তাই অগ্রবর্তী হয়ে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে।
পরামর্শ করে কাজ করতে হবে। আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদের ভালবাসেন।
মাফ পেতে হলে তাওয়াক্কুল করতে হবেঃ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ
الْمُتَوَكِّلِينَ আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদের
ভালবাসেন।
কিন্তু, তাওয়াক্কুলের আগে উপরের কাজ গুলো করে ক্ষমা পাওয়ার উপযুক্ত হতে হবে।
পাঁচঃ যিকর
যিকির হবে কাজে কর্মে।
যিকির হবে দোয়ার মাধ্যমে।
আল্লাহ বলেছেন,
﴿فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوا لِي وَلَا تَكْفُرُونِ﴾
“কাজেই তোমরা আমাকে স্মরণ রাখো, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ রাখবো আর আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো এবং আমার
নিয়ামত অস্বীকার করো না”। (সূরা আল
বাকারাঃ ১৫২)
বুজুর্গ বলেন,
ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হয়েছি, এটা আমাদের সৌভাগ্য। কিন্তু দায়িত্ব পেয়েছি মানে বড় ধরণের পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছি। বিধায়, দায়িত্বের জন্য ভীত হতে হবে।
ছয়ঃ তেলাওয়াতে
কুরআন
কুরআন তেলাওয়াতের খতম করতে হবে। প্রতিটি অক্ষরে অক্ষরে নেকী। বিধায় নিজেদের আমলের পাল্লাকে ভারী করতে হবে।
অর্থসহ পুরো কুরআন পড়তে হবে–কুরআনকে বুঝতে হবে।
﴿ وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِّكُلِّ شَيْءٍ
وَهُدًى وَرَحْمَةً وَبُشْرَىٰ لِلْمُسْلِمِينَ﴾
“আমি এ কিতাব তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যা সব জিনিস পরিষ্কারভাবে তুলে ধরে এবং যা সঠিক
পথনির্দেশনা, রহমত ও সুসংবাদ বহন করে তাদের জন্য যারা
আনুগত্যের শির নত করে দিয়েছে।” (সূরা
আন নাহলঃ ৮৯)
পড়ালেখা করার জন্য আমরা প্রতিবছর যে
সংক্ষিপ্ত সিলেবাস দেই, সেই সিলেবাস নিয়ে বসে থাকার সময় নাই। আরো ব্যাপক ভাবে পড়ালেখা করতে হবে।
পরিশুদ্ধির জন্য নিজের মানোন্নয়নের স্বার্থে নিজের প্লান নিজে নিতে হবে।
হাদীস জানার জন্য চেষ্টা চালাতে হবে।
সাতঃ সুন্নাহর
অনুসরণ
আমাদেরকে সকল কাজে রাসূল সা. এর সুন্নাহ
অনুসরণ করতে হবে। তিনিই আমাদের মডেল-তিনিই আমাদের আদর্শ।
﴿لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ ﴾
“আসলে তোমাদের জন্য আল্লাহর রসূলের মধ্যে ছিল
একটি উত্তম আদর্শ ।” (সূরা আল আহযাবঃ ২১)
﴿قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ
اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ﴾
“হে নবী! লোকদের বলে দাওঃ ‘‘যদি তোমরা যথার্থই আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে
আমার অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং
তোমাদের গোহাহ মাফ করে দেবেন । তিনি
বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়।’’ তাদেরকে
বলোঃ আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য করো।” (সূরা আলে ইমরানঃ ৩১)
আটঃ নফল ইবাদত
নফল ইবাদত বেশী বেশী করে করা।
তাজাজ্জুদের নামায নিয়মিত আদায় করা–যা আল্লাহ পাওয়ার মাধ্যম।
নফল রোযা।
দান খয়রাত।
নয়ঃ সবর অবলম্বন
সদা অবিচল, ক্ষুধা, তৃষ্ঞা, অত্যাচার, অবিচার, সকল ক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ।
যারা দ্বীনের পথে থাকবেন, তাদের জন্য পরীক্ষা রয়েছে। আর
সেসব পরীক্ষায় সবরের মাধ্যমেই উত্তীর্ণ হতে হবে।
﴿وَلَنَبْلُوَنَّكُم بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ
مِّنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ ۗ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ﴾
“আর নিশ্চয়ই আমরা ভীতি, অনাহার, প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে এবং
উপার্জন ও আমদানী হ্রাস করে তোমাদের পরীক্ষা করবো । এ অবস্থায় যারা সবর করে।” (সূরা আল বাকারাঃ ১৫৫)
বুজুর্গ স্মরণ করিয়ে দেন যে,
এই ধৈয্যের পরীক্ষায় অনেক ভাইকে প্রিয় জন্মভূমিতে দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হয়েছে।
ধৈর্যের শেষ সীমা পর্যন্ত সবর অবলম্বন করতে হবে।
দশঃ পশুভিত্তিক
চরিত্র পরিহার
গীবত পরিহার করা।
গীবতের সংগা কি?
গীবতের সংগা দিয়েছেন স্বয়ং রাসূলে কারীম সা.
তিনি বলেছেনঃ তোমার ভাইয়ের অসাক্ষাতে এমন কথা বলা, যা সে
যদি সামনে থাকতো, তাহলে খারাপ পাইতো-তাই গীবত।
গীবত নামক বস্তুটা আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া
থেকেও ঘৃনীত কাজ।
মিথ্যা বলা পরিহার করা।
অপবাদ দেয়ার
অভ্যাস ছাড়তে হবে।
উপহাস করা যাবেনা, নিজেকে ছোট ভাবতে হবে।
অনুমান পরিত্যাগ করতে হবে।
সূরা হুজরাতের আয়াতের আয়াত গুলোর আলোকে আমল করতে হবে-
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّن قَوْمٍ
عَسَىٰ أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَاءٌ مِّن نِّسَاءٍ عَسَىٰ أَن
يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ ۖ وَلَا تَلْمِزُوا أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا
بِالْأَلْقَابِ ۖ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ ۚ وَمَن لَّمْ
يَتُبْ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ﴾
“হে ঈমানদারগণ, পুরুষরা যেন অন্য পুরুষদের বিদ্রূপ না করে। হতে পারে তারাই এদের চেয়ে উত্তম। আর
মহিলারাও যেন অন্য মহিলাদের বিদ্রূপ না করে। হতে
পারে তারাই এদের চেয়ে উত্তম। তোমরা
একে অপরকে বিদ্রূপ করো না। এবং
পরস্পরকে খারাপ নামে ডেকো না। ঈমান
গ্রহণের পর গোনাহর কাজে প্রসিদ্ধ লাভ করা অত্যন্ত জঘন্য ব্যাপার। যারা এ আচরণ পরিত্যাগ করেনি তারাই জালেম।”
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ
الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ ۖ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب
بَّعْضُكُم بَعْضًا ۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا
فَكَرِهْتُمُوهُ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ﴾
“হে ঈমানদাগণ, বেশী
ধারণা ও অনুমান করা থেকে বিরত থাকো কারণ কোন কোন ধারণা ও অনুমান গোনাহ। দোষ অন্বেষন করো না। আর তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে। এমন কেউ কি তোমাদের মধ্যে আছে, যে তার নিজের
মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে? দেখো, তা খেতে তোমাদের ঘৃণা হয়।
আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ অধিক পরিমাণে তাওবা কবুলকারী এবং
দয়ালু।”
সুদের সাথে সকল সম্পর্ক পরিহার করতে হবে।
ঘুষের সাথে সকল সম্পর্ক পরিত্যাগ করতে হবে।
ব্যভিচার করা যাবেনা। ব্যভিচারের সাথে
সংশ্লিষ্ট সকল তত্পরতা থেকে দূরে থাকতে হবে।
সর্বশেষঃ
আমরা তাওবা করবো–তাওবাতান নাসুহাহ।
তাওবার মাধ্যমে নিজেদেরকে আত্মশুদ্ধি করতে হবেঃ
﴿فَأَلْهَمَهَا فُجُورَهَا وَتَقْوَاهَا﴾﴿قَدْ
أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا﴾
“তারপর তার পাপ ও তার তাকওয়া তার প্রতি ইলহাম
করেছেন। নিসন্দেহে সফল হয়ে গেছে সেই ব্যক্তির
নফসকে পরিশুদ্ধ করেছে।”
১মে ২০২১
0 Comments