সরকার দল, বিরুধী দল আর নির্বাচন কমিশনের প্রতি খোলা চিঠি – মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম

 


মুহাম্মদ নজরুল ইসলামঃঃ খোলা চিঠি এজন্য যে, বন্ধ করা চিঠি প্রাইভেট সেক্রেটারী বা একান্ত সচিবের টেবিল পেরিয়ে অনেক সময়ই গন্তব্য পর্যন্ত পৌছিনা। আর  পৌছলেও তখন পানি অনেক দূর গড়িয়ে যায়। অথচ বিষয়টি আমার বিবেচনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যাশা করি যাদের বরাবরে এ খোলা চিঠি, তারা যথাযথ গুরুত্ব দেবেন সকল সীমাবদ্ধতাকে ডিঙ্গিয়ে। যদি বিষয়টি হয় জাতির কল্যাণে, তাহলে নিবেন যথাযথ ও তড়িৎ পদক্ষেপ।

          নির্বাচনের আগের কথা। নির্বাচন বলতে আমি গত কমপক্ষে ৩টি নির্বাচনের কথা বলছি। প্রার্থী মনোনয়নের জন্য প্রধান দূটি দলের বিরাট নির্বাচনী হাট বসেছিল। দীর্ঘ সময় ব্যাপী দেনদরবার আর বুঝাপড়া এবং লেনদেনের ইন্টারভিউহয়েছিল ৩০০টি নির্বাচনী আসনের জন্য দলীয় প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে। অবশেষে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের দিন পর্যন্ত এ তৎপরতা আমরা অবলোকন করি। এবং এ তৎপরতা ঈদুল আযহার পূর্বে যে হাট বসে সেই হাটকেও হার মানিয়েছিল। অনেক টাকা ওয়ালা তথা মালদার আদমী দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত দলীয় নেতাদেরকে কালো বা সাদা টাকার বান্ডিলের নিচে ফেলে  নিজেরা প্রার্থী হতে সক্ষম হয়েছেন। আবার একদলে মনোনয়ন না পেয়ে মাত্র ২/১ দিনের ব্যবধানে তার নিকট দীর্ঘ দিনের বিরুধী দলেগমন করে বিদ্যুৎ গতিতে মনোনয়ন লাভ করেছেন। এই কারিশমা আমাদের প্রধান দূটি দল দেখাতে সক্ষম হয়েছেন। আবার যারা টাকা বা অন্য কোন প্রক্রিয়ায় মনোনয়ন লাভ করতে পারেননি এবং দলত্যাগ করে ভিন্ন দলে গিয়েও মনোনয়ন লাভের  সুযোগ পাননি, তারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর লেবাসে। এর মাঝে কেউ কেউ আবার বিজয়ী ও হয়েছেন। কিন্তু রাজনৈতিক দল আর রাজনৈতিক নেতারা আমাদের কি উপহার দিলেন। দলের প্রতি তাদের আনুগত্য দেখে যারা খেটে খাওয়া মানুষ, যাদের পলিটিক্স বুঝার ক্ষমতা নেই। তারা রীতিমত বেয়াক্কল হয়ে যান। এমন কি যাদের নিয়ে দেশের মানুষ বলাবলি করে যে, ‘তাদের কর্মীদের আনুগত্য প্রসংশনীয়’-সেই জামায়াতের ও ২/১জন নেতার বিদ্রোহী প্রার্থীহওয়ার অপরাধে দলীয় শাস্তির সম্মূখীন হতে হয়।

          তাই বলছিলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আর মাননীয় বিরুধী দলের নেত্রী এবং সম্মানীত  প্রধান নির্বাচন কমিশনার! আসন্ন নির্বাচনের প্রাক্ষালে জাতি কি আরেকটি  নেতানেত্রী বেচা কেনার বিরাট নির্বাচনী হাটদেখবে? জাতি কিন্ত তা দেখতে চায়না। আমাদের জাতির মাঝে অনেক অসৎ লোক থাকতে পারে, কিন্তু জাতি সামগ্রিক ভাবে অসৎ প্রবণ নয়। আর যারা অসৎ প্রবণ, তারাও প্রকাশ্যে স্বীকার করেনা যে, তারা এ কাজ গুলো করে। তারা তাদের কাজের জন্য অনুতপ্ত না হলেও বিব্রত বটে। এবং এ কাজের জন্য জনসমক্ষে গর্ববোধ করতে লজ্জাবোধ করে। বিধায় ভাবছিলাম যদি  এমন একটি আইন হতো, যার মাধ্যমে নির্বাচনী হাটে নেতা বেচাকিনার রাজনীতি বন্ধ করা যেত। যে আইনের সার কথা হলঃ

একঃ নির্বাচনকালীন অন্তভর্তি সরকার দায়িত্ব গ্রহণের ১৫দিনের মধ্যে আসন্ন নির্বাচনে যারা প্রার্থী হবেন বা হতে চান, তারা কোন দল থেকে নির্বাচন করবেন, তা নির্ধারিত হলফ নামায় লিখিত অঙ্গিকার করে নির্বাচন কমিশনকে অবগত করবেন। যাতে তিনি স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করবেন যে, “আমি অমুক দলের পক্ষ হয়ে আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাই। অমুক দল আমাকে প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন না দিলে আসন্ন নির্বাচনের জন্য আমি প্রার্থী হওয়ার অধিকার হরাবো এবং যদি আমি কোন নির্বাচনী এলাকায় নমিনেশন দাখিল করি, তাহলে তা বাতিল বলে গন্য হবে।

দুইঃ নির্বাচন কমিশন উপরোক্ত হলফ নামা প্রাপ্তির পর সকল হলফকারীর নাম দল ভিত্তিক ভাগ করে গোপনীয় দলীল হিসাবে তা সংশ্লিষ্ট দলের প্রধানের নিকট পাঠাবেন।

তিনঃ সংশ্লিষ্ট দল নির্বাচনী তফশীল অনুযায়ী মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনের পূর্ব ঘোষিত সময়ের মধ্যে তাদের দলের পক্ষ থেকে একই নির্বাচনী এলাকার জন্য (প্রথম ও দ্বিতীয়) দুই জন প্রার্থীকে মনোনীত করে সীল গালা যুক্ত খামেতা নির্বাচন কমিশনকে জানাবে।

চারঃ নির্বাচন কমিশন মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনের পূর্ব নির্ধারিত সময়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে সেই সীল গালা যুক্ত খাম অবমুক্ত করবে এবং বিবরণ অনুযায়ী প্রতিটি আসনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে এবং প্রতীক বরাদ্ধ দিবে। বিষয়টি তথ্য বিবরণীর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমে প্রচার করা হবে।

পাঁচঃ রাজনৈতিক দলের প্রদত্ত তালিকায় একটি নির্বাচনী এলাকার জন্য যে দুইজন ব্যক্তির নাম দেয়া হবে, তাদের মধ্যে প্রথম জন প্রার্থী হিসাবে বিবেচিত হবেন। যদি প্রথম জন কোন কারণে নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারেন, তাহলে দ্বিতীয় জন এ দলের প্রার্থী হিসাবে বিবেচিত হবেন।

ছয়ঃ যে সব হলফকারী প্রার্থী তাদের দলের মনোনয়ন লাভে ব্যর্থ হবেন, তারা নির্বাচনের দিন পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করতে পারবেন না। তিনি এই সময় তার দলের প্রধানের নির্দেশনার আলোকে ঐ নির্বাচনী এলাকার বাহিরে অন্য যে কোন নির্বাচনী এলাকায় তার দলের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনের কাজে অংশ নেবেন। যাতে করে মনোনয়ন লাভে ব্যর্থ হওয়ার কারণে তিনি দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে গোপনে অবস্থান নিতে বা তৎপরতা চালাতে সুযোগ না পান।

এই হলো আইনের সারকথা, যা আমি ভাবছি। আমি কোন রাজনীতি বিশেষজ্ঞ নই, নই কোন আইন বিশেষজ্ঞ। বিধায় আইনের ফাঁক বা মারপেচ আমার জানা নেই। যদি সদিচ্ছা থাকে এমন কিছুর, তাহলে সংশ্লিষ্টরা উপরোক্ত বিবরণীর সারকথাকে আইনে রূপান্তরের উদ্যোগ নিতে পারেন। আর যারা এম.পি. হোন তারাই শুধু কেবল আইনী ব্যাপারে বা দেশের ব্যাপারে কথা বলবেন। আর আমরা যারা দেশের অজো পাড়াগায়ের অধিবাসী, তারা যদি আইনি ব্যাপারে কথা বলা বা দেশের কল্যাণে পরামর্শ দেয়া হয় অবাঞ্ছিত, তাহলে আমার কোন কথা নেই।

পরিশেষে আমরা আশা করবোঃ সরকারী দল, বিরোধী দল, এবং নির্বাচন কমিশন সবাই বিষয়টি সদয় বিবেচনায় নিবেন।

২১ মে ২০২১

Post a Comment

0 Comments