মুহাম্মদ নজরুল ইসলামঃঃ মুসলামানদের করোনা ভাইরাস আক্রান্ত করবেনা, দোয়া দরুদ তাসবিহ ইত্যাদির মাধ্যমেই কেবল করোনা ভাইরাস ধ্বংস হবে, করোনা ভাইরাসের চিকিৎসা স্বপ্নের মাধ্যমে হবে ইত্যাদি জামায়াতের বক্তব্য নাকি অন্য কিছু?
ইদানিং কালে জামায়াতী বক্তা হিসাবে পরিচিত কিছু আলেমে
দ্বীন উপরোক্ত ধারায় কিছু বক্তব্য প্রদান এবং তা ইউটিউব ও অন্যান্য সোসাল মিডিয়াতে
ভাইরাল হওয়ার প্রেক্ষিতে জামায়াতের অবস্থান সম্পর্কে একটি ভূল ধারণার সৃষ্টি হওয়া
স্বাভাবিক। তাই জামায়াতের অবস্থান পরিস্কার হওয়া দরকার (উল্লেখ্য যে, জামায়াতের অবস্থান
পরিস্কার করার জন্য আমি অফিসিয়েল দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ নই, এটি আমার ব্যক্তিগত
পর্যবেক্ষণ)।
জামায়াতের অবস্থানঃ
একঃ জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করলে নবাগত লোকদের প্রাথমিক ভাবে যে ২/৩টি বই পড়ার
জন্য দেয়া হয়, তার একটি হচ্ছে “চরিত্র গঠনের মৌলিক উপদান”। বইটির ভূমিকায় লেখক নঈম সিদ্দিকী উল্লেখ করেছেনঃ কিন্তু কিছু সংখ্যক লোক যদি মহামারি
আক্রান্ত এলাকা থেকে দূরে অবস্থান করে নিজেদের স্বাস্থ্যোন্নতির কাজে ব্যাপৃত থাকে
এবং নিশ্চিন্তে মহামারিকে নৈতিক মৃত্যুর বিভীষিকা চালিয়ে যাবার ব্যাপক অনুমতি দান
করে, তাহলে আমাদের মতে এর চাইতে বড় স্বার্থপরতা আর হতে
পারে না। ……মহামারী আক্রান্ত এলাকায় জনগণের সেবা করার জন্য আমাদের নিজেদের
স্বার্থরক্ষার সম্ভাব্য সকল ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
বইটি সংশ্লিষ্ট পৃষ্টার স্ক্রিনশর্টঃ
বইটি লিখা হয়েছে আমার জন্মেরও আগে, আর লেখক ইতিমধ্যে ইনতিকাল করেছেন বহুদিন আগে। আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনে এই বইটি কমপক্ষে ২০বার পড়েছি। আর জামায়াতে ইসলামীতে যারা সংশ্লিষ্ট তারা আমার মতো একাধিকবার এই বইটি পড়তে হয়। সেই বইয়ের হেদায়াতের আলোকেই জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান সকল কালে সব সময়ে।
দুইঃ করোনা ভাইরাস সম্পর্কে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ড. শফিকুর রহমানের ২টি ভিডিও
ভাইরাল হয়েছে।
প্রথম ভিডিওটিতে তিনি কুরআনের আয়াত উল্লেখ করে বলেন, করোনা ভাইরাস সহ সকল আপদ বিপদ মানুষের
কর্মফল। তিনি তার বক্তব্যের
উপসংহারে আহবান জানানঃ
১. করোনাকে ভয় না করে করোনার স্রষ্টা আল্লাহকে ভয় করতে হবে।
২. করোনা সম্পর্কে বর্তমান
দুনিয়ার বৈজ্ঞানিক ও চিকিৎসকদের করণীয় ও বর্জনীয় পর্যায়ের পরামর্শ গুলো দেড় হাজার
বছর আগে আল্লাহ মানুষকে দিয়েছেন। আমাদেরকে চিকিৎসকদের সেই সব মানতে হবে।
৩. আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের প্রতি পরীক্ষা হিসাবে এই ভাইরাস এসেছে, তাই আমাদেরকে আল্লাহ
রাব্বুল আলামীনের দিকে ফিরে যেতে হবে। আমাদের ভূলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে
হবে, সাহায্য কামনা করতে হতে, তাওফীক কামনা করতে হবে, ভবিষ্যতে অপরাধ অপকর্ম না করার
অঙ্গিকার করতে হবে।
৪. রাসূল সা. এই ধরণের বিপদে একটি দোয়া পড়তে বলেছেন। সেই দোয়া আমাদেরকে পড়তে হবে।
আর তাহলোঃ اللهم إني أعوذبك
من البرص والجنون والجذام ومن سيئ الأسقام নফল রোযা, নফল নামায, সাদাকা ইত্যাদির মাধ্যমে
আল্লাহর কাছে নিজেকে পেশ করি। এই বিপদের সময়ে পরস্পরের সমবেতী হিসাবে আমরা একে
অন্যকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই।
দ্বিতীয় ভিডিওতে তিনি জামায়াতে ইসলামী সদস্যদের
উদ্দেশ্যে নসিহত পেশ করেন। তাতে তিনি বলেন,
১. করোনা ভাইরাসের কারণে নেয়া হোম কোয়ারেন্টিনের কারণে সবচেয়ে বেশী কষ্ট আপতিত
হয়েছে গরীব মানুষদের উপর-বিশেষ করে যারা কায়িক পরিশ্রম করে নিজেদের পরিবার
চালাতেন। এ অবস্থায় এই মানুষ গুলোর মনের কান্না শুনতে হবে। জাতির এই ধরণের
দূর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে সকল সদস্য, কর্মী, সমর্থক ও শুভাকাংখীদেরকে বিপন্ন
মানুষের জন্য এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি। যারা ঐ মানুষ গুলোর কাছে ছুটে যাবেন, তারাই সৌভাগ্যবান হবেন।
বিধায় ইউনিট থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সকলকে দলমত নির্বিশেষে বিপন্ন মানুষের পাশে
দাড়ানোর আহবান জানাচ্ছি। যথা সম্ভব দ্রুত মানুষে ঘরে ঘরে পৌছে যান। আক্রান্ত কেউ
হলে ভীত ও আতংকিত না হয়ে আল্লাহর সাহায্য নিয়ে বিপন্ন মানুষের দিকে হাত বাড়াতে
হবে। মনে রাখতে হবে এই দায়িত্ব পালনের জন্য আমরা অঙ্গিকারবদ্ধ।
২. সমাজের বিত্তবান ও সম্পদশালীদেরকে এগিয়ে আসতে হবে।
৩. চিকিৎসক যারা মানুষের এই মহান সেবায় নিয়োজিত, তাদের অনুরোধঃ আপনারা হিম্মত রাখুন, আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন, সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন
করে বিশেষ এই রোগে মানুষেকে নিঃসংকোচে সেবা দিয়ে যান।
তিনঃ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের
কেন্দ্রীয় সভাপতি সিরাজুল ইসলাম এক ভিডিও বার্তায় সকল শিবির কর্মীদেরকেও একই ধরণের
আহবান জানান।
জামায়াতে ইসলামী তাদের মুরব্বীদের হেদায়াতের আলোকে
খরা, বন্যা, মহামারি, অগ্নিকান্ড সকল ক্ষেত্রে সব সময়ে ঘরে বসে থাকার নীতি অবলম্বন করেনা। বরং
সামর্থ কম হোক কিংবা বেশী-জামায়াতে ইসলামী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সব সময় সবার আগে
ময়দানে ঝাপিয়ে পড়ে-জনসেবায় আত্মনিয়োগ করে। আর সেই কাজে তারা সব সময় আল্লাহর
সাহায্য চায়, সাহায্য পেতে রাসূল সা. এর শিখানো তরিকায় দোয়া, দরুদ, তাসবিহ চলে সব সময়। এই করোনা ভাইরাসেও
তার ব্যতিক্রম নয়। ইতিমধ্যে জামায়াত শিবিরের বিতরণকৃত মাস্ক, সেনিটাজার, সাবান, জনসচেতনা মূলক প্রচারণা
ইত্যাদি ভাইরাল হয়ে গেছে।
যে সব সম্মানিত আলেমে দ্বীন করোনা ভাইরাস নিয়ে স্বপ্ন
দেখছেন অথবা নানাবিধ গল্প ফাঁদছেন, তাদের পরিচয় কি? তারা কি জামায়াতের কেউ।
জামায়াতে ইসলামীর সাথে যে কেউ একমত হতে পারেন, জামায়াতে ইসলামী মতো অনেকেই বলতে
পারেন, চলতে পারেন। কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর বক্তব্য আমাদেরকে জানতে হবে জামায়াতে
ইসলামী অফিসিয়েল সোর্স থেকে।
অতএব, আসুন! জামায়াতে ইসলামীর নির্দেশনার
আলোকে ময়দানে জনসেবায় আত্ম নিয়োগ করি। জনগনকে স্বচেতন করি, স্বাস্থ্য সুরক্ষায়
সহযোগী হওয়ার পাশাপাশি শ্রমজীবি মানুষ যারা হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন, তাদের সহযোগীতায় এগিয়ে
আসি।
২৩ মার্চ ২০২০
0 Comments