মুহাম্মদ নজরুল ইসলামঃঃ মাওলানা আব্দুল হাই খাঁন। লন্ডন প্রবাসী আমার একান্ত প্রিয় একজন মানুষ। একান্ত শ্রদ্ধা ও ভালবাসার পাশাপাশি একজন আপন বন্ধু মানুষ। তিনি আর আমাদের মাঝে নাই। দীর্ঘদিন দূরারোগ্যব্যাধির যন্ত্রনা সহ্য করে তিনি তার মাবুদের সাক্ষাতের জন্য চলে গেছেন। যে সব মৃত্যু সংবাদ আমার চোঁখে অশ্রু এনেছে, তার মৃত্যু সংবাদ তার একটি।
সদা হাস্যজ্জ্বল সদালাপী টগবগে এক যুবকের নাম
জনাব আব্দুল হাই খাঁন। বয়সের দিক দিয়ে পঞ্চাশের কোটা অনেক আগেই তিনি ফাঁড়ি দিলেও
দেখতে একদম যুবক। তার মতো একজন বন্ধু মানুষকে কাছে পেলে সময় কিভাবে চলে যায়, তা
উপলব্দি করা খুবই কঠিন।
তার সাথে আমার একটা মিল আমি সব সময় খোঁজে
পেয়েছি। আর তা হলো সাদাকে সাদা বলা, কালোকে কালো বলা আর এই বলার
ক্ষেত্রে কোন কম্প্রমাইজ না করা। আল্লাহর এ বান্দাকে অত্যন্ত স্পষ্টবাদী সুবক্তা
হিসাবে আমি দেখেছি সব সময়।
আশির দশকের শেষ পর্যন্ত তিনি জামায়াত ইসলামীর বিরুদ্ধে অবস্থান করে জামায়াতে ইসলামীকে কাফির পর্যন্ত ফতোয়া দিতেন। সেই আব্দুল হাই খান সময়ের ব্যবধানে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাথী হয়েছিলেন। সিলেট অঞ্চলের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন মরহুম আল্লামা খলিলুর রাহমান মুহাজিরে হিন্দুস্তানী, যিনি ফুলতলী মাসলাকের প্রসিদ্ধ বক্তা ছিলেন। তাঁর পুত্র জনাব আব্দুল হাই খান একাএকা এপথে আসেননি। নিজ চিন্তা গবেষনা আর যুক্তিতে একমত করে নিজ বাবাকেও এই পথে শামীল করেছিলেন।
ওয়ায়েজ হিসাবে জনাব আব্দুল হাই খাঁনের চিত্তাকর্ষক কথামালায় মুগ্ধ হয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা তার মাহফিলে যেমন বসে থাকতো মানুষ, রাজনীতির ময়দানে খুরদার, অবলবর্ষী বক্তা হিসাবে তিনি ছিলেন ময়দান রাজপথ কাপানো। ৯০ এর দশকে তার বক্তব্যের আওয়াজে তদান্তিন সময়ের গন-আদালতের ধারকরা কেঁপে উঠেছে বারবার। আর বক্তব্যের পাশাপাশি বন্দুর ও কন্টকাকীর্ণ এই পথে তিনি ছিলেন সব সময় ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর এক অগ্রপথিক।মানুষের জন্য সেবা, মানবতার
জন্য তার দরদ তার এলাকার মানুষ দেখেছে বারবার। সুদূর প্রবাসে থেকে জন্মভূমির আর্ত
মানবতা আর ইসলামী আন্দোলনের মাঠকর্মীদের জন্য তার ছিল পরম দরদ। আল্লামা খলিলুর
রাহমান ফাউন্ডেশন গঠন করে সীমাহীন সহযোগিতা করেছেন তিনি জন্মভূমির মানুষদের।
বড়লেখার ইসলাম প্রিয় মানুষ তাকে নিয়ে এক সময় স্বপ্ন দেখতো।
কেউ শাহবাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আর কেউ তাকে বড়লেখা নির্বাচনী এলাকার এমপি
হিসাবে স্বপ্ন দেখতো। কিন্তু প্রয়োজনের তাগিদে তিনি এক সময় জন্মভূমি ছেড়ে দূর
প্রবাসে চলে যাওয়াতে সে স্বপ্ন আর পুরণ হয়নি।
জনাব আব্দুল হাই খান দীর্ঘদিন থেকে দূরারোগ্য ব্যাধিতে
আক্রান্ত থাকলেও যারাই তার সাথে দেখা করতে গেছেন, তাদের বয়ানীতে জানা যায় যে, তিনি সব
সময় তার রবের প্রতি ছিলেন শুকরগোজার।
জনাব আব্দুল হাই খান চলে গেলেন। রেখে গেলেন তার সাথে থাকা
অগনিত স্মৃতি। চয়নিকা গার্মেন্টস, সুরভী বই ঘর, ডাক বাংলো মসজিদ, দারুশ
শীফা ফার্মেসী, বড়লেখার শিরিশতলা,
শাহবাজপুরের ইউনিয়ন অফিস চত্বর-সব যেন ভাসছে বারবার আজ
মানসপটে।
আমরা মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। তার
শোকাতুর পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছি। জান্নাতুল ফিরদাউসে তার জন্য তার
মালিকের কাছে উচ্চ মাকাম কামনা করছি।
১৯ মার্চ ২০২০
মাওলানা আব্দুল হাই খানঃ এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস-মুহাম্মদ আবুল হোসাঈন খান
0 Comments