ঈদুল আযহার কথকথা - মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম

(লেখাটি  অসমাপ্ত পড়ার সময় কুরআনের আয়াত গুলো কুরআন শরীফের সাথে মিলিয়ে পড়ুন)

মুহাম্মদ নজরুল ইসলামঃঃ বিখ্যাত আরবী অভিধান ‘আল মাওরিদ’ এ ঈদ শব্দের অর্থ বলা হয়েছে feast  আর feast নামক ইংরেজী শব্দের বাংলা তরজমা হলো অনেক যেমন-ভোজধর্মোৎসবপর্বতীব্র আনন্দভূরিভোজন করাভোজ দেওয়াভূরিভোজন করানোপরিতৃপ্ত করা ইত্যাদি ঈদ হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত তীব্র আনন্দ করার উৎসব আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য দাওয়াত বিধায় ঐদিন হলো ভূরিভোজনের সুযোগবেশী বেশী করে খাওয়ার দিনরোযা না রাখার দিন আর মুসলমানদের জীবনে ঈদ বছরে দুইটি এক ঈদুল ফিতর আর অপরটি ঈদুল আযহা বাংলা ভাষাভাষীরা এটাকে কুরবানীর ঈদ আবার কেউ কেউ বড় ঈদ নামে আখ্যায়িত করে থাকেন

আযহা মানে ত্যাগ করা, বলিদান করা

ঈদুল আযহা শব্দ দূ’টি উচ্চারণ করার সাথে সাথে মানসপটে ভেসে উঠে একটি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী লাল টুকটুকে সুঠাম দেহের অধিকারী শিংওয়ালা গরু শনিবারে রাতের বেলা অনেক মানুষের পদচারণা আর উৎসব মুখুর ধ্বনির মাধ্যমে যিনি হাজির হতেন আমাদের বাড়ীতে এর পর ২/৩দিন তাকে সীমাহীন খাতির যত্ন করা হতো এর পর সকলে মিলে ঈদের দিনের সকাল বেলা তাকে শক্ত করে ধরে জবাই করে দেয়া সীমাহীন লাল টুকুটুকে রক্ত জমা হতো একটি গর্তে সেই রক্ত এক সময় জমাট বেঁধে তুলতুলে হয়ে উঠতো সেই রক্ত নিয়ে আব্বুর অগোচরে খেলা করা কতই না মজার

কিন্তু আমরা কি জানি ঈদুল আযহার গল্পের পিছনের গল্প এই গল্প শুধু গল্প নয়-এক লোমহর্ষক কাহিনী মনিবের নির্দেশের প্রতি সীমাহীন নিবেদিত এক গোলামের কাহিনী এই গোলাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ গোলামদের একজন, কিন্তু তবুও তিনি সর্বশ্রেষ্ট গোলাম নন এই গোলাম প্রধান প্রধান গোলামদের একজন, কিন্তু তিনি একমাত্র গোলাম নন এই গোলাম, সেই গোলাম-যাকে গোলামীর পরীক্ষা দিতে হয়েছে জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি-একবার, দুইবার, বারবার পরীক্ষা দিতে হয়েছে জন্মের আগে, পরীক্ষা দিতে হয়েছে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর, পরীক্ষা দিতে হয়েছে কৈশোরে, যৌবনে, বার্ধ্যক্যে, সব সময়ে-সব বয়সে

তিনি যখন পৃথিবীতে আগমনের বয়স, কখন তদানিন্তন সরকার জন্ম নিয়ন্ত্রণের কালাকানুন শুধু জারি করেনি, বরং জন্ম নিরোধ ঘোষনা করে স্বামী স্ত্রীতে যাতে মিলিত হতে না পারেন, নতুন প্রজন্ম যাতে পৃথিবীর মুখ দেখতে না পারে, সেজন্য স্বামী স্ত্রীর পারস্পরিক মেলামেশা নিষিদ্ধ ঘোষনা করে কিন্তু সকল কালাকানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে সরকারের উচ্ছিষ্ট ভোগী এক কর্মকর্তার পৌরষে তিনি আগমন করেন এবং দুনিয়াতে ভূমিষ্ট হোন

আমি বলছি সেই গোলামের কথা, যার নাম ইব্রাহীম যে গোলাম আমাদের সকলের তথা মুসলিম জাতির পিতা যিনি নানাবিধ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ত্যাগের উত্তম পরাকাষ্টা প্রদর্শন করে

পৃথিবীতে আগমনের সাথে সাথে তার নিরাপত্তার স্বার্থে মা কর্তৃক এই গোলাম হোন নির্বাসিত নবজাতক শিশু অবস্থায়ই তিনি তার মালিকের পরীক্ষার সম্মূখীন হোন  যে কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে সূরা আল আনআম এর ৭৬-৭৮ নম্বর আয়াতে এই ভাবেঃ

﴿فَلَمَّا جَنَّ عَلَيْهِ اللَّيْلُ رَأَىٰ كَوْكَبًا ۖ قَالَ هَٰذَا رَبِّي ۖ فَلَمَّا أَفَلَ قَالَ لَا أُحِبُّ الْآفِلِينَ﴾﴿فَلَمَّا رَأَى الْقَمَرَ بَازِغًا قَالَ هَٰذَا رَبِّي ۖ فَلَمَّا أَفَلَ قَالَ لَئِن لَّمْ يَهْدِنِي رَبِّي لَأَكُونَنَّ مِنَ الْقَوْمِ الضَّالِّينَ﴾﴿فَلَمَّا رَأَى الشَّمْسَ بَازِغَةً قَالَ هَٰذَا رَبِّي هَٰذَا أَكْبَرُ ۖ فَلَمَّا أَفَلَتْ قَالَ يَا قَوْمِ إِنِّي بَرِيءٌ مِّمَّا تُشْرِكُونَ﴾

“অতপর যখন রাত তাকে আচ্ছন্ন করলো তখন একটি নক্ষত্র দেখে সে বললোঃ এই আমার মালিক কিন্তু যখন তা ডুবে গেলো, সে বললোঃ যারা ডুবে যায় আমি তো তাদের ভক্ত নই তারপর যখন চাঁদকে আলো বিকীরণ করতে দেখলো, বললোঃ এই আমার মালিক কিন্তু যখন তাও ডুবে গেলো তখন বললোঃ আমার মালিক যদি আমাকে পথ না দেখাতেন তাহলে আমি পথভ্রষ্টদের অন্তরভুক্ত হয়ে যেতাম এরপর যখন সূর্যকে দীপ্তিমান দেখলো তখন বললোঃ এটাই আমার মালিক, এটি সবচেয়ে বড়! কিন্তু তাও যখন ডুবে গেলো তখন ইবরাহীম চীৎকার করে বলে উঠলোঃ হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! তোমরা যাদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক করো তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই

সেই পরীক্ষায় এই গোলাম গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হলেন, যখন তিনি ঘোষান করলেঃ

﴿إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا ۖ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ﴾

“আমি তো একনিষ্ঠভাবে নিজের মুখ সেই সত্তার দিকে ফিরিয়ে নিয়েছি যিনি যমীন ও আসমান সৃষ্টি করেছেন এবং আমি কখনো মুশরিকদের অন্তরভুক্ত নই।” (সূরা আল আনআমঃ ৭৯)

এই গোলাম পরিণত বয়সে তার মালিকের নির্দেশে তার নিজ ঘর থেকে তার মালিকের দাসত্ব গ্রহণ করার জন্য আহবান জানাতে পিছপা হোননি তার বাবা ‘আযর’ ছিলেন মূর্তিপূজক তিনি মূর্তি পূজা ত্যাগ করার আহবান জানালেন যার বিবরণ দেয়া হয়েছে কুরআনে হাকীমের সূরা আল আনআমের ৭৪ নম্বর আয়াতে এই ভাবেঃ

﴿وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ لِأَبِيهِ آزَرَ أَتَتَّخِذُ أَصْنَامًا آلِهَةً ۖ إِنِّي أَرَاكَ وَقَوْمَكَ فِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ﴾

“ইবরাহীমের ঘটনা স্মরণ করো যখন সে তার পিতা আযরকে বলেছিল, তুমি কি মূর্তিগুলোকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করছোআমি তো দেখছি, তুমি ও তোমার জাতি প্রকাশ্য গোমরাহীতে লিপ্ত।”

বাপকে দাওয়াত দেয়ার পর গোলামকে নির্দেশ প্রদান করা হলো তার জাতিকে এক আল্লাহর দাসত্ব করার আহবান জানাতে সূরা আল আম্বিয়াতে যার বিবরণ এসেছে এই ভাবেঃ আয়াত ৫২-৬৭

﴿إِذْ قَالَ لِأَبِيهِ وَقَوْمِهِ مَا هَٰذِهِ التَّمَاثِيلُ الَّتِي أَنتُمْ لَهَا عَاكِفُونَ﴾﴿قَالُوا وَجَدْنَا آبَاءَنَا لَهَا عَابِدِينَ﴾﴿قَالَ لَقَدْ كُنتُمْ أَنتُمْ وَآبَاؤُكُمْ فِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ﴾﴿قَالُوا أَجِئْتَنَا بِالْحَقِّ أَمْ أَنتَ مِنَ اللَّاعِبِينَ﴾﴿قَالَ بَل رَّبُّكُمْ رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الَّذِي فَطَرَهُنَّ وَأَنَا عَلَىٰ ذَٰلِكُم مِّنَ الشَّاهِدِينَ﴾﴿وَتَاللَّهِ لَأَكِيدَنَّ أَصْنَامَكُم بَعْدَ أَن تُوَلُّوا مُدْبِرِينَ﴾﴿فَجَعَلَهُمْ جُذَاذًا إِلَّا كَبِيرًا لَّهُمْ لَعَلَّهُمْ إِلَيْهِ يَرْجِعُونَ﴾﴿قَالُوا مَن فَعَلَ هَٰذَا بِآلِهَتِنَا إِنَّهُ لَمِنَ الظَّالِمِينَ﴾﴿قَالُوا سَمِعْنَا فَتًى يَذْكُرُهُمْ يُقَالُ لَهُ إِبْرَاهِيمُ﴾﴿قَالُوا فَأْتُوا بِهِ عَلَىٰ أَعْيُنِ النَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَشْهَدُونَ﴾﴿قَالُوا أَأَنتَ فَعَلْتَ هَٰذَا بِآلِهَتِنَا يَا إِبْرَاهِيمُ﴾﴿قَالَ بَلْ فَعَلَهُ كَبِيرُهُمْ هَٰذَا فَاسْأَلُوهُمْ إِن كَانُوا يَنطِقُونَ﴾  ﴿فَرَجَعُوا إِلَىٰ أَنفُسِهِمْ فَقَالُوا إِنَّكُمْ أَنتُمُ الظَّالِمُونَ﴾﴿ثُمَّ نُكِسُوا عَلَىٰ رُءُوسِهِمْ لَقَدْ عَلِمْتَ مَا هَٰؤُلَاءِ يَنطِقُونَ﴾﴿قَالَ أَفَتَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكُمْ شَيْئًا وَلَا يَضُرُّكُمْ﴾﴿أُفٍّ لَّكُمْ وَلِمَا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ ۖ أَفَلَا تَعْقِلُونَ﴾

“সে সময়ের কথা স্মরণ করো  যখন সে তার নিজের বাপকে ও জাতিকে বলেছিল, “এ মূর্তিগুলো কেমন, যেগুলোর প্রতি তোমরা ভক্তিতে গদগদ হচ্ছো?” তারা জবাব দিলঃ “আমাদের বাপ-দাদাদেরকে আমরা এদের ইবাদাতরত অবস্থায় পেয়েছি সে বললো, তোমরাও পথভ্রষ্ট এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও সুস্পষ্ট ভ্রষ্টতার মধ্যেই অবস্থান করছিল তারা বললো, তুমি কি আমাদের সামনে তোমার প্রকৃত মনের কথা বলছো, না নিছক কৌতুক করছোসে জবাব দিল, “না, বরং আসলে তোমাদের রব তিনিই যিনি পৃথিবী ও আকাশের রব এবং এদের স্রষ্টা এর স্বপক্ষে আমি তোমাদের সামনে সাক্ষ দিচ্ছি আর আল্লাহর কসম, তোমাদের অনুপস্থিতিতে আমি তোমাদের মূর্তিগুলোর ব্যাপারে অবশ্যি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো” সে অনুসারে সে সেগুলোকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেললো এবং শুধুমাত্র বড়টিকে ছেড়ে দিল, যাতে তারা হয়তো তার দিকে ফিরে আসতে পারে (তারা এসে মূর্তিগুলোর এ অবস্থা দেখে) বলতে লাগলো, “আমাদের ইলাহদের এ অবস্থা করলো কে, বড়ই জালেম সে (কেউ কেউ) বললো, “আমরা এক যুবককে এদের কথা বলতে শুনেছিলাম, তার নাম ইবরাহীম তারা বললো, “তাহলে তাকে ধরে নিয়ে এসো সবার সামনে, যাতে লোকেরা দেখে নেয়” (কিভাবে তাকে শাস্তি দেয়া হয়) (ইবরাহীমকে নিয়ে আসার পর) তারা জিজ্ঞেস করলো, “ওহে ইবরাহীম! তুমি কি আমাদের ইলাহদের সাথে এ কাণ্ড করেছো?” সে জবাব দিল, “বরং এসব কিছু এদের এ সরদারটি করেছে, এদেরকেই জিজ্ঞেস করো, যদি এরা কথা বলতে পারে”একথা শুনে তারা নিজেদের বিবেকের দিকে ফিরলো এবং (মনে মনে) বলতে লাগলো, “সত্যিই তোমরা নিজেরাই জালেম কিন্তু আবার তাদের মত পাল্টে গেলো  এবং বলতে থাকলো, “তুমি জানো, এরা কথা বলে না”ইবরাহীম বললো, “তাহলে তোমরা কি আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমনসব জিনিসের পূজা করছো যারা তোমাদের না উপকার করতে পারে, না ক্ষতিধিক তোমাদেরকে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে যেসব উপাস্যের তোমরা পূজা করছো তাদেরকে তোমাদের কি একটুও বুদ্ধি নেই?”

আল্লাহর তাওহীদ বা একত্ববাদের কথা বলার কারণে, মূর্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার কারণে মালিকের গোলাম ইব্রাহীমকে হতে হয় অগ্নিপরীক্ষার সম্মূখীন তদানিন্তন সময়ের রাজাধিরাজ নমরূদ তাকে বিশাল অগ্নিকূন্ড তৈরী করে তার মাঝে নিক্ষেপ করলো অগ্নিকূন্ডে নিক্ষিপ্ত হবার ভয়, এটাইতো একজন মানুষের জীবনে বড় পরীক্ষা কিন্তু তার মালিক তার থেকে গ্রহণ করলেন নিরব আরেকটি পরীক্ষা তার মালিকের প্রতি তিনি কতটুকু আস্থাবান তার পরীক্ষা অগ্নিকূন্ডে নিক্ষেপ করার পর আল্লাহ ফেরেশতা সরদার জিব্রাঈলকে পাঠালেন গোলাম ইব্রাহীমের কাছে তিনি এসে তার করূণ অবস্থার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন এবং জানতে চাইলেন তিনি কোন সাহায্য চান কি না? যদি সাহায্য চান, তাহলে জিব্রাঈল সাহায্য করতে পারেন কিন্তু এ ধরণের একটি কৌশলী পরীক্ষায়ও গোলাম ইব্রাহীম উত্তীর্ণ হলেন তিনি জিব্রাঈলকে জানালেন যে, আমি এমন কোন মালিকের গোলামী করিনা, যিনি আমার অবস্থা সম্পর্কে অবগত নন তথা আমি তোমার কাছে সাহায্য চাই না বরং আমি যার গোলামী আর একত্ববাদের ঘোষনা প্রদান করে এই অবস্থার মধ্যে এসে পড়েছি, তিনি আমার অবস্থা সম্পর্কে  অবগত তিনি যথা সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন যার কারণে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা গোলাম ইব্রাহীমের প্রতি খুশী হয়ে আগুনকে নির্দেশ দিলেন ইব্রাহীমের জন্য যেন আগুন প্রশান্তির কারণ হয়ে যায় কুরআনে সূরা আল আম্বিয়ার ৬৮-৬৯ নম্বর আয়াতে যার বর্ণনা করা হয়েছেঃ

﴿قَالُوا حَرِّقُوهُ وَانصُرُوا آلِهَتَكُمْ إِن كُنتُمْ فَاعِلِينَ﴾﴿قُلْنَا يَا نَارُ كُونِي بَرْدًا وَسَلَامًا عَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ﴾

তারা বললো, “পুড়িয়ে ফেলো একে এবং সাহায্য করো তোমাদের উপাস্যদেরকে, যদি তোমরা কিছু করতে চাও আমি বললামঃ “হে আগুন! ঠাণ্ডা হয়ে যাও এবং নিরাপদ হয়ে যাও ইবরাহীমের জন্য

মনিব কি পরীক্ষা করলেন?

১. তাঁর শ্রেষ্টত্ব ও সার্বভৌমত্বের প্রচার করার আদেশ দিলেন

২. বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত নিঃসন্তান রাখলেন

৩. স্ত্রী ভালবাসা ও সন্তানের ভালবাসার পরীক্ষা

৪. সন্তানের ভালবাসার পরীক্ষা-সন্তান জবেহ করার আদেশ

    § সব পরীক্ষায় এ শ্রেষ্ঠ গোলাম সফল উত্তীর্ণ হলেন আর তিনি হলেন প্রিয় নবী ইব্রাহীম আ.

§ ঈদুল আযহা প্রতি বছর আসে আর আমাদেরকে আমাদের জাতির পিতার সেই ত্যাগের কাহিনী স্মরণ করে দিয়ে বলে যায়, হে মানব জাতি! তোমরা সেই গর্বিত পিতার সন্তান

    § ঈদে পশু কুরবানী একটি প্রতিকী বিষয়-মূলতঃ কুরবানী করতে হয়ে নিজের সর্বস্বঃ

﴿قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ﴾

“বল! আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন আর আমার মরণ, সব কিছু আল্লাহর জন্য-যিনি সারা জাহানের মালিক।” (সূরা আল আনআমঃ ১৬২)

§ আল্লাহর উপর ঈমান এনেছি” এই ঘোষনা প্রদান করলেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বেহেশতের সার্টিফিকেট হাতে ধরিয়ে দেন না

§ ঈমানের ব্যাপারে আল্লাহ পরীক্ষা করেন, করেছেন এবং করবেনঃ

﴿وَمِنَ النَّاسِ مَن يَقُولُ آمَنَّا بِاللَّهِ وَبِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَمَا هُم بِمُؤْمِنِينَ﴾

“কিছু লোক এমনও আছে যারা বলে, আমরা আল্লাহর ওপর ও আখেরাতের দিনের ওপর ঈমান এনেছি, অথচ আসলে তারা মু’মিন নয়।” (সূরা আল বাকারাহঃ ৮)

﴿الم﴾﴿أَحَسِبَ النَّاسُ أَن يُتْرَكُوا أَن يَقُولُوا آمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُونَ﴾﴿وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ ۖ فَلَيَعْلَمَنَّ اللَّهُ الَّذِينَ صَدَقُوا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِينَ﴾

“আলিম- লাম- মীম  লোকেরা কি মনে করে রেখেছে, “আমরা ঈমান এনেছি” কেবলমাত্র একথাটুকু বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে, আর পরীক্ষা করা হবে না? অথচ আমি তাদের পূর্ববর্তীদের সবাইকে পরীক্ষা করে নিয়েছি আল্লাহ অবশ্যই দেখবেন কে সত্যবাদী এবং কে মিথ্যুক।” (সূরা আল আনকাবুতঃ ১-৩)

﴿وَلَنَبْلُوَنَّكُم بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ ۗ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ﴾﴿الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ﴾

“আর নিশ্চয়ই আমরা ভীতি, অনাহার, প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে এবং উপার্জন ও আমদানী হ্রাস করে তোমাদের পরীক্ষা করবো। এ অবস্থায় যারা সবর করে  এবং যখনই কোন বিপদ আসে বলেঃ “আমরা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর দিকে আমাদের ফিরে যেতে হবে।” (সূরা আল বাকারাহঃ ১৫৫-১৫৬)

§ আল্লাহর পরীক্ষা হয় দুনিয়ার সব কিছু ছেড়ে দেয়ার পরীক্ষাঃ

﴿قُلْ إِن كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُم مِّنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّىٰ يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ ۗ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ﴾

“হে নবী! বলে দাও, যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান ও তোমাদের ভাই তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের আত্মীয়-স্বজন, তোমাদের উপার্জিত সম্পদ, তোমাদের যে ব্যবসায়ে মন্দা দেখা দেয়ার ভয়ে তোমরা তটস্থ থাক এবং তোমাদের যে বাসস্থানকে তোমরা খুবই পছন্দ কর-এসব যদি আল্লাহ ও তার রসূল এবং তার পথে জিহাদ করার চাইতে তোমাদের কাছে বেশী প্রিয় হয়, তাহলে আল্লাহর ফায়সালা তোমাদের কাছে না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর আল্লাহ ফাসেকদেরকে কখনো সত্য পথের সন্ধান দেন না।” (সূরা আত তাওবাহঃ ২৪)

আমরা মনে করিঃ

১. ঈমান এনেছি এ ঘোষান দিলেই মুক্তি

২. একটা সংগঠনের নাম লিখালেই মুক্তি

§ মুক্তি পেতে হলে-মুক্তিপ্রাপ্তদের পথে যেতে হবে, তাদের পথে চলতে হবেঃ

o   যেমনঃ সাহাবীদের জীবনঃ বিলাল, খাব্বাব

o   এই সব জীবনী শুনে এক নদী চোঁখের পানি ফেললে ‍মুক্তি আসবেনা।

o   সাহাবীদের মত ত্যাগ করতে হবে

o   সাহাবীদের মতো মানুষের কানে কানে মুক্তির বানী পৌছাতে হবে আর এজন্যঃ সময়, বাড়ী, ব্যবসা, সম্পদ, স্ত্রী, স্বজন সব কিছুর উর্ধ্বে স্থান দিতে হবে আল্লাহর দ্বীনের কাজকে-দ্বীনের দাওয়াত পৌছানোর কাজকে

§ ঈদুল আযহা আমাদের সেই শিক্ষা দেয় আসুন আমরা ইব্রাহীমের মতো গোলাম হই ইব্রাহীমের মত অনুগত হই যার সম্পর্কে আল্লাহ বলেনঃ

﴿إِنَّ إِبْرَاهِيمَ كَانَ أُمَّةً قَانِتًا لِّلَّهِ حَنِيفًا وَلَمْ يَكُ مِنَ الْمُشْرِكِينَ﴾﴿شَاكِرًا لِّأَنْعُمِهِ ۚ اجْتَبَاهُ وَهَدَاهُ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ﴾﴿وَآتَيْنَاهُ فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً ۖ وَإِنَّهُ فِي الْآخِرَةِ لَمِنَ الصَّالِحِينَ﴾﴿ثُمَّ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ أَنِ اتَّبِعْ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا ۖ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ﴾

“প্রকৃতপক্ষে ইবরাহীম নিজেই ছিল একটি পরিপূর্ণ উম্মতআল্লাহর হুকুমের অনুগত এবং একনিষ্ঠ সে কখনো মুশরিক ছিল না  সে ছিল আল্লাহর নিয়ামতের শোকরকারী আল্লাহ তাকে বাছাই করে নেন এবং সরল সঠিক পথ দেখান  দুনিয়ায় তাকে কল্যাণ দান করেন এবং আখেরাতের নিশ্চিতভাবেই সে সৎকর্মশীলদের অন্তরভুক্ত হবে  তারপর আমি তোমার কাছে এ মর্মে অহী পাঠাই যে, একাগ্র হয়ে ইবরাহীমের পথে চলো এবং সে মুশরিকদের দলভুক্ত ছিল না” (সূরা আন নাহলঃ ১২০-১২৩)


ঈদুল আযহা সম্পর্কে আমার আরেকটি লিখাঃ ঈদুল আযহা-দুই ডজন করণীয় ও বর্জনীয়

পড়ার জন্য ক্লিক করুন এখানে

 

 


Post a Comment

0 Comments