মুহাম্মদ নজরুল ইসলামঃঃ ১৯৮৬ সালের
মাঝামাঝি সময়। আমার রক্ত কণিকার কারেন্ট তখন চলে সর্বোচ্চ গতিতে। কারণ
তখন আমি ইসলামী ছাত্রশিবিরের একজন সক্রিয় কর্মী। সুজাউল মাদ্রাসা থেকে চান্দগ্রাম
মাদ্রাসা হয়ে ভর্তি হয়েছি গাংকুল মাদ্রাসায়। শিবিরের সাথী শপথ নেয়ার
জন্য দিওয়ানা হালত।
শিবিরের সাথী
হওয়ার জন্য ২টা শর্ত আমাকে বড়ই বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে।
সংগঠনে সময়
দেয়ার কাজ, সংগঠনের কিছু বই নোট করা আর কিছু কুরআন হাদীস মুখস্ত করার
কাজটা অনেক আগেই আমি সেরে রেখেছি। কিন্ত বিব্রতকর ২টি শর্তের
বেড়াজালে বন্দি
হয়ে আমি সাথী হতে পারছিনা। শর্তগুলো হলোঃ
১.
একাধারে কমপক্ষে ৩ মাস নামায কাযা বন্ধ থাকতে হবে।
২.
সাথীদের জন্য নির্ধারিত অধ্যয়নের সিলেবাস পড়ে শেষ করতে হবে।
প্রথম
শর্ত ৩মাস নামায কাযা বন্ধ থাকা। এই শর্তটা পুরণ করতে করতে ২মাস ১৫ দিনের
মাথায় ব্রেক ফেল করেছে। আবার শুরু করেছি। ৩মাসের ভিতরে অন্য
প্রস্তুতিটা
সেরে নিতে পারলেই হলো।
দ্বিতীয় শর্ত
সিলেবাস। সিলেবাসের সকল বই পড়া শেষ করেছি। মাত্র ০১টি বই
ছাড়া। বইটির নাম
“ইসলামী
রাষ্ট্র ব্যবস্থা”। লিখেছেনঃ ড. আব্দুল করিম জায়দান। বাজারে সে বই নাই। সংগঠনের
লাইব্রেরীতেও এই বই নাই।
শ্রদ্ধাভাজন
ডা. হিফজুর রহামন বললেন, মান্নান ভাইয়ের কাছে পেতে পারেন। সেই
সুবাদে একদিন
হাজির হলাম জননেতা আব্দুল মান্নান ভাইয়ের বাড়ীতে। বড়লেখার
শহরের পাদদেশ
মুড়িরগুল এলাকাতে উনার বাড়ী।
জনাব
আব্দুল মান্নান ভাইয়ের বাড়ীতে পৌছে আমার চোঁখ ছানাবড়া। যে দিকে তাকাই,
শুধু বই বই আর
বই। বাঁশবেতের বেড়া দিয়ে তৈরী ঘরে আমাকে বসতে দেয়া হলো,
উপযুক্ত
আপ্যায়নও করানো হলো। আমাকে সীমাহীন সমাদর করা হলো। কিন্তু সমস্যা হলো,
আব্দুল মান্নান
ভাইয়ের বিশাল বই ভান্ডার সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত
আলমিরা নাই।
একজন প্রাইমারী স্কুল মাষ্টার যেখানে পরিবার চালাতে হিমশিম
খাচ্ছেন,
সেখানে নান্দনিক
আলমিরাতে বই সাজিয়ে রাখবেন, সেই সুযোগ আর সামর্থ কোথায়?
আমার
বই খোঁজা শুরু হলো। সেই সুযোগে জনাব আব্দুল মান্নান ভাইয়ের বই গুলোও একটু
গুঁছিয়ে নিচ্ছি। দেখলাম, একই বইয়ের যতটি সংস্করণ বা মুদ্রণ বের হয়েছে,
জনাব আব্দুল
মান্নান তার প্রতিটিই কমপক্ষে ১কপি ক্রয় করেছেন। তিনি যেখানেই যেতেন,
কিছু বই কিনতেন।
আমার এখনো মনে পড়ে নামায রোযার হাকিকত মোট ১৪ কপি
বই পেয়েছিলাম
তার ব্যক্তিগত লাইব্রেরীতে। কিন্তু আমার কাংখিত সেই “ইসলামী
রাষ্ট্র
ব্যবস্থা” নামক বইটি পাচ্ছিনা।
অনেক
চেষ্টা, পরিশ্রমের মধ্যে চলে গেলো কমপক্ষে ৩ঘন্টা। তিনিও ইতিমধ্যে আমাকে
সহযোগিতা করেছেন অনেক। কিন্তু বইটি পাওয়া গেলো না। এর মাঝে আপ্যায়ন শেষ
হলো, জনাব
আব্দুল মান্নান আমার সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে নিলেন। তিনির
সম্পর্কে আমার
কিছুই জানা হলো না। কারণ তাকে আমি কোন প্রশ্ন করবো, এমন বয়স, সাহস, যোগ্যতা কিছুই আমার ছিলনা। জামায়াতের
আন্দোলনে কিংবদন্তী তূল্য মানুষটা তখন আমার কাছে এবং আমার তুলনায়
ছিলেন অনেক অনেক উঁচুতে থাকার এক ব্যক্তিত্ব।
হতাশ
মন নিয়ে যখন উনার বাসা থেকে বিদায় নেবো ভাবছি, এমন অবস্থায় হাজার
বইয়ের স্তুপে
কাভার ছাড়া একটি বইয়ের দিকে নজর গেলো। প্রথম ৫/৬ পৃষ্টা ছাড়া
একটি বই হাতে
নিয়ে দেখি সেই বই আমার কাংখিত সেই বইঃ ইসলামী রাষ্ট্র
ব্যবস্থা।
জনাব
আব্দুল মান্নানের কাছে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা খোঁজতে গিয়ে কে দেখে আমার
তৃপ্তির হাসি। মাত্র ১দিনে আমি পুরো বই পড়ে শেষ করি। কারণ তখন আমার রক্ত
কণিকায় প্রবাহিত হচ্ছিলো সর্বোচ্চ মাত্রার বিদ্যুৎ প্রবাহ। আমি সাথী হবো,
আমি সাথী শপথ
নেবো।
আমার
শ্রদ্ধেয় আব্দুল মান্নান ভাই অসুস্থ। তার জন্য সবাই দোয়া করবেন।



0 Comments