প্রতিবারে
নির্বাচন আসলে আওয়ামীলীগ একেক ধরণের পলিসি এপ্লাই করে। আর বিরোধীদল গুলো গত বছরের পলিসি
টেকানোর প্রস্তুতি নিয়ে বসে থাকে। দিন শেষে দেখা যায়, বিরোধী দল যে পরিস্থিতি মোকাবেলার
জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল, সেই পরিস্থিতির আশেপাশেও আওয়ামীলীগ ছিলনা। ভিন্ন একটি প্রক্রিয়ায়
তারা আবার ক্ষমতায় এসেছে। আর তখন গনতন্ত্রের ঠিকাদার রাষ্ট্রগুলো ঐ নির্বাচনের সরকারকে
নিয়ে কাজ করে। কাজ করে তাদের স্বার্থে-স্বার্থ আদায়ের জন্য।
প্রশ্ন
হলোঃ বাংলাদেশের কাছে মার্কিনীরা কি চায়? যা চায়, তা দিতে আওয়ামীলীগ প্রস্তুত কি না?
যদি প্রস্তুত থাকে, তাহলে যত ধরণের মিডিয়াবাজী হোক না কেন, অবশেষে আওয়ামীলীগ তাদের
নীল নকসা অনুযায়ী একটি পাতানো বা দেখানো নির্বাচন করবে। দিন শেষে সেই নির্বাচনকে মার্কিনীরা
মেনে নিয়ে সেই সরকারের সাথে তারা কাজ করবে। এই ভিসা নীতি তখন আর কার্যকর থাকবেনা। বরং
তারা বলবেঃ আমরা বাংলাদেশে সামগ্রিক অবস্থার উপর গভীর (!) নজর রাখছি।
শুরুতেই
বলেছিলাম, মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণার প্রেক্ষিতে বিরোধীদল গুলো বেজায় খুশী। মনে হচ্ছে,
এখন আন্দোলনের আর কোন প্রয়োজনই নাই। মার্কিনীরা চলমান সরকারকে নামিয়ে দিয়ে উনাদেরকে
বলবেঃ মেহেরবানী করে ক্ষমতার আসন গ্রহণ করুন। ইতিমধ্যে জামায়াতে ইসলামী মাঠে নামার
ঘোষনা দিয়ে দিয়ে মিডিয়ার কাভারেজ আদায় করে নিয়েছে। অন্যান্য বিরোধীদল গুলো টকশোতে ঝড়
উঠাচ্ছেন। আর তথাকথিত সুশীলেরা এমন ভাবে কথা বলছেন, যেমন গত ৫ বছর আওয়ামীলীগের কোন
নিমক উনারা গ্রহণ করেননি।
অতীতের
নির্বাচন গুলোতে বিরোধীদল যখন নির্বাচন বৈকট করলো, আর ভাবলো-আমরা নির্বাচনে না গেলে
নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবেনা, আন্তর্জাতিক মহল এ নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেবেনা। তখন
আওয়ামীলীগ সংখ্যাগরিষ্ট আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হলো। ফাঁকা মাঠে ট্রাইবেকারে
গোল দিয়ে দীর্ঘ ৫ বছর ক্ষমতায় থাকলো। বিরোধীদল গুলোকে এমন টেঙ্গানী দিলে, তারা শুধু
ঈদেরপর আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষনার কথা জাতিকে শুনালেন। কিন্তু কত ঈদ এলো, কত ঈদ গেল।
জাতি আর আন্দোলন নামক জিনিসটা চোঁখে দেখলো না। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতির
মাঠে কোনঠাসা করে মন মানসিকতায় ১০০ ভাগ আওয়ামীলীগ ড. কামাল হোসেনকে আওয়ামীলীগ বিরোধীদলের
নেতা বানিয়ে দিল। ড. কামাল হোসেন বিরোধী দলের নেতা হয়ে (যিনি তার জীবনে কখনো নির্বাচিত
এমপি হতে পারেননি), আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় নেয়ার সকল ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করলেন। বিরোধীদল
গুলো সুষ্ঠু নির্বাচনের মুলার সামনে যখন লোভাতুর ক্ষমতালোভীর মতো ঝুলে নির্বাচনকে প্রচন্ড
রকমের জমজমাট করে তুললো, তখন নির্বাচন হওয়ার আগেই আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় চলে গেল। রাতের আঁধারে ভোট হয়ে গেল। বিরোধীদলকে আওয়ামীলীগ
বড় ধরণের আইকাওয়ালা বাঁশ দিল। নির্বাচনের দিন সকাল ১১টায় জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন
বর্জন করলেও নির্বাচন যে হয়নি, তা বুঝতে বুঝতে বিএনপি এবং অন্যান্য বিরোধীদলকে সময়
লাগলো পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত। এরপর বিএনপি এমপিদের কারো কারো পদত্যাগ,
শপথ না নেয়া, দলের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে হাতে গোনা এমপিদের শপথ, মহিলা
আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রদানের মাধ্যমে নির্বাচনকে প্রত্যক্ষ স্বীকৃতি ইত্যাদি নাটক
দেখেছে জাতি নির্বিকার ভাবে।
এখন
আবার নির্বাচন দোরগোড়ায়। বিএনপি কখনো ভাবছে, জামায়াতে ইসলামী আন্দোলনকে করে তাদেরকে
ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। আবার কখনো ভাবছে মার্কিনীরা তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করে তাদেরকে ক্ষমতায়
বসিয়ে দেবে।
জামায়াতে ইসলামী কি ভাবছে?
জামায়াতে ইসলামীর এক সময়ের ভাবনা ছিল একাএকা নির্বাচন করবে। এই মতামতের
প্রতি সমর্থন তাদের জনশক্তির বড় একটি অংশের। কারণ জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় না গেলে
বা আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকলে জামায়াতের কি কি ক্ষতি করতে পারে, তার একটা হিসাবে ইতিমধ্যে
বুঝা হয়ে গেছে জামায়াতে ইসলামীর। জামায়াতের থেকে সুবিধা পেতে চায় এমন একটি দলও নাই,
যারা জামায়াতের দূর্দিনে জামায়াতের পাশে দাড়িয়েছে। জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি হলো।
কিন্তু সহযাত্রী বিরোধীদলের একজন নেতারও সাহস হয়নি জামায়াতের পক্ষে একটা বিবৃতি দেয়ার।
মাত্র কিছু দিন আগে জেনারেল ইব্রাহীম জামায়াতের থেকে আন্দোলনের বিশাল রকমের প্রত্যাশা
করে বক্তব্য রাখার মঞ্চে জামায়াত নেতা আব্দুল হালিম যে বক্তব্য দেন, তা তাদের উপলব্দিতে
আসেনি। মাত্র ক’দিন আগে মেট্রোপলিটন পুলিশের গেইট থেকে জামায়াত আইনজীবিদের অন্যায়ভাবে
গ্রেফতারের ঘটনা সারা বিশ্বে তোলপাড় হলেও জেনারেল ইব্রাহিম গংরা ছোট্ট একটি বিবৃতি
দেয়ার প্রয়োজন অনুভব করেননি।
জামায়াত
তার নিজস্ব ছকে সামনে এগুচ্ছে। আন্দোলনের বিশাল ঝুকি নিয়ে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর
মতো কোন কিছু জামায়াত করবে মনে করলে ভূল হবে। বিএনপি যদি ক্ষমতায়ও চলে যায়, তাহলে জামায়াতে
ইসলামী চতূর্থ আসমানে চলে যাবে, এমন কোন কিছু ভাবার কোন কারণ নাই। তাই জামায়াত চলছে
অত্যন্ত সতর্ক পদক্ষেপে। সহযাত্রী বিরোধী সংগঠন গুলোর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে অত্যন্ত
সন্তপর্ণে, বিচক্ষণতার সাথে।
কিন্তু আওয়ামীলীগ কি ভাবেছে?
আওয়ামীলীগ মার্কিন ভিসা নীতির মুলোকে ময়দানে দিয়ে তারা চলে গেছে
পর্দার অন্তরালে। টকশোবাজরা সেই সুযোগে মিডিয়াকে গরম করছেন। গরম ময়দানে বিরোধীদল গুলো
তৃপ্তির ডেকুর তুলছেন। আর সেই ডেকুর কখন যে নিদ্রায় পরিণত হবে তা আলেমুল গাইবই জানেন।
তবে সেই নিদ্রাতে আওয়ামীলীগ তার আসল কাজটি করবে।
যদি
বিরোধীদল ভেবে থাকে,
১.
আওয়ামীলীগ বিরোধীদল ছাড়া ভোটার বিহিন নির্বাচন করবে, তাহলে ভূল ভাববে।
২.
আওয়ালীগ অতীতের মতো রাতের বেলা নির্বাচনের আয়োজন করবে, তাহলে ভূল ভাববে।
৩.
ফ্রি এন্ড ফেয়ার ইলেকশনের ব্যবস্থা করবে আওয়ামীলীগ, তাহলে ভূল ভাববে।
তাহলে
আওয়ামীলীগ কি করবে?
১.
আওয়ামীলীগ মার্কিন ভিসা ইস্যুকে ভালভাবে কাজে লাগাবে। বিদেশীদের তাবেদার আমরা নই-এমন
ক্রেডিট নেবে।
২.
মার্কিন ভিসা নীতির কারণে তারা পিছনে চলে গেছে এমন ভাব দেখিয়ে বিরোধীদল গুলোকে নির্বাচনে
নিয়ে আসবে এবং জমজমাট নির্বাচনের আয়োজন করবে।
কিন্তু
নির্বাচনের ফলাফলকে নিজেদের করার জন্য আওয়ামীলীগের থাকবে ভিন্ন পরিকল্পনা। সেই পরিকল্পনা
অবশ্যই ভোটার বিহীন নির্বাচন বা রাতের ভোট হবে না। সেই ভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে
আওয়ামীলীগের নিয়োগ দেয়া নির্বাচন কমিশন, নিয়োগকৃত ও ট্রান্সফারকৃত নির্বাচন কমিশনের
কর্মকর্তাগন, সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা অনুগত অফিসারগন, বিভিন্ন ভাবে সুবিধাভোগী আর্মি ও
পুলিশের কর্মকর্তাগন, সেবাদাস প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া আর সুশীলদের মাধ্যমে।
নির্বাচন
শেষ হলে মার্কিনীদের খুশী করার জন্য তাদের প্রয়োজনীয় স্বার্থ তাদেরকে প্রদান করা হবে
এমন অঙ্গিকার তারা আগেই করে নেবে পর্দার আড়ালে। বিধায় নির্বাচন শেষ হলে স্বার্থ আদায়ে
ব্যস্ত হয়ে পড়বে মার্কিন প্রশাসন। তারা ভূলে যাবে তাদের ভিসা নীতির কথা। তারা তাদের
চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশের সামগ্রিক অবস্থার উপর গভীর (!) নজর রাখবে। বাংলাদেশের
ফ্রি এন্ড ফেয়ার ইলেকশন তিমিরেই থেকে যাবে। বিরোধীদল সেই আগের অবস্থায় ফিরে গিয়ে নির্বাচন
সুষ্ঠু হয়নি যিকির তুলবে।
অতএব,
হে
বিরোধীদল, মার্কিন ভিসা নীতিতে বেশী খুশী না হয়ে পাতানো নির্বাচন নয়, শেখ হাসিনার অধীনে
নির্বাচন নয়। বরং তত্তাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য গনআন্দোলনের পথে হাটুন।
দীর্ঘ দিনের আওয়ামী দূঃশাসন আর দূর্নীতি নিয়ে কথা বলুন। টকশো আর অফিস কেন্দ্রীক প্রেসব্রিফিং
বাদ দিয়ে রাজপথের শোডাউনের চিন্তা করুন। পুলিশের টেঙ্গানীর ভয় পরিহার করে আন্দোলনে
ঝাপিয়ে পড়ুন।
৬ই
জুন ২০২৩
1 Comments