আল্লামা দেলাওয়ার হোসাঈন সাঈদী রাহি. তার হায়াতে জিন্দেগীতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সফর করেন। সেখানে আয়োজিত বিভিন্ন প্রবাসী সমাবেশে বক্তব্য প্রদান করেন। তেমনি একটি সমাবেশে তার জামায়াতে ইসলামীতে যোগাদান সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। তার উত্তর প্রদান করেন আল্লামা সাঈদী বিস্তারিত ভাবে। একটি ভিডিও ক্লিপ থেকে তা হুবহু পত্রস্ত হলোঃ
জনৈক প্রবাসীর প্রশ্নের সারকথাঃ উলামায়ে
কিরামদের বিরুধীতা সত্ত্বেও জামায়াতে ইসলামীতে যোগাদান করলাম কেন?
আল্লামা সাঈদীর উত্তরঃ
এখন উলামায়ে কিরাম যারা বিরোধীতা করেন-আমরা
ছোট হলেও আমরাও তো কিছু কুরআন হাদীস শিখেছি, কুরআন হাদীস থেকে কিছু জ্ঞানার্জন করেছি।
এক্বামাতে দ্বীন-দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা-এটা
হচ্ছে ফরয দায়িত্ব। সেই ফরয দায়িত্ব হিসাবে আমার চিন্তায়, আমার বিবেচনায় বাংলাদেশে,
এই আধুনিক যুগে, স্টেট পরিচালনা করার জন্য, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা অনুযায়ী,
আধুনিক বিশ্বে আধুনিক রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যোগ্যতা সম্পন্ন লোক তৈরী করছে জামায়াতে
ইসলামী-এটা আমার কাছে প্রমানিত। এই জন্য আমি জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেছি।
যারা বিরোধীতা করছেন, উনারা যদি এর থেকে
ভাল কোন পার্টি করতেন। আমি অবশ্যই সেখানে যোগদান করতাম। এখনো, এখনো যদি জামায়াতের চাইতে
কেউ যদি কোন ভাল পার্টি করেন, তাহলে আমি এটায় পড়ে থাকবো কেন? আমি সেটায়ই যাবো ইনশাআল্লাহ।
কাজেই আমরা ইসলাম চাই। আমরা একথাও বলেছি
যে, বিএনপির সময়েও বলেছি, এখন আওয়ামীলীগের সময়ও বলছি-জামায়াতে ইসলামীকেই ইসলাম কায়েম
করতে হবে-এর কোন মানে নাই। আওয়ামীলীগ সরকারও যদি বলে যে, আমরা কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী
দেশ চালাবো। আমি প্রকাশ্য ঘোষনা দিয়েছি, যদি তা বলেন তারা, জামায়াতে ইসলামী করার কোন
প্রয়োজন নাই। আমরা তাহলে এই সরকারকেই সহযোগিতা করবো।
আমরা কুরআন সুন্নাহ চাই। যারা বিরোধীতা
করেন জামায়াতে ইসলামীর-উনারা শুধু বিরোধীতাই করেছেন। জাতির জন্য গ্রহণযোগ্য একটা সংগঠন
কায়েম করা-এ ব্যাপারে কি অবদান রেখেছেন? একটা সংগঠন (বিভিন্ন দল নাম আপনি বলতে পারেন,
আমি তাদের নাম গুলো নিলাম না, ইসলামের নামে বিভিন্ন দল আছে) কিন্তু তারা শুধু একটা
ইসলামী দল বানাইলেইতো হলো না।
আমার দেশে ৬৪টিটি জেলা আছে। ইসলামী গভর্নমেন্ট
মানে কি? গভর্নমেন্টটা পরিচালিত হবে ইসলামী আইন অনুযায়ী, ইসলামী কানুন অনুযায়ী।
এখন আপনি ইসলামি গভর্নমেন্ট ফরম করবেন।
৬৪টি ডিসি আপনাকে দিতে হবে। আপনি যদি কোন মসজিদের ইমাম সাহেবকে ধরে ডিসির পদে যদি দিয়ে
দেন, আগে থেকে যদি কোন ট্রেনিং দেয়া না থাকে, তাহলে ৫দিন ডিসির চেয়ারে বসিয়া পলাইয়া
যাবে, চালাইতে পারবে না। (কথা ঠিক কি না বলেন?)
এই যে বিসিএস পরীক্ষা দেয় কেন? লোকেরা
সিভিল এডমিনিস্ট্রেশন পড়ে কেন? সিভিল এডমিনিস্ট্রেশন পড়তে হয়-সিভিল গভর্নমেন্ট চালাবার
জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে হয়।
আমার ৪৬০টি উপজেলা আছে। এই ৪৬০টি উপজেলার
জন্য ৪৬০টি টিএনও দরকার হবে, ৪৬০টি ওসি দরকার হবে, ৬৪টি এসপি দরকার হবে, ব্রোক্সেস্ট
দরকার হবে, টেকনোক্রেট দরকার হবে, রেডিও টেলিভিশন চালানোর জন্য টেকনিশিয়ানের প্রয়োজন
হবে, বিশ্ববিদ্যালয় চালানোর জন্য যোগ্য প্রফেসর লাগবে। এই লোক গুলো যদি আগে থেকে আপনি
তৈরী করার কোন পরিকল্পনা না থাকে, তাহলে হঠাৎ করে আপনি পার্লামেন্টে গিয়ে ঝাড় ফুঁক
দিয়া ফারাক্কা সমস্যার সমাধান করতে পারবেন না। এটার জন্য ট্রেনিং এর প্রয়োজন। জামায়াতে
ইসলামীতো সেই ট্রেনিং দেয়। এটা একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো-আলহামদুলিল্লাহ। এখানে এমএ
পাশ করে যারা আসে-দ্বীনি জ্ঞান মোটেও অর্জন করে নাই, সেই লোক শুধ এমএ পাশ করে জামায়াতে
ভর্তি হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীতে আসার পর তাকে টাইটেল পাশ করলে কুরআন হাদীস সংক্রান্ত
যে জ্ঞান হয়, ততটা জ্ঞান না দিতে পারলেও অন্তত জনসমক্ষে আলেমদের সামনে দারসে কুরআন,
দারসে হাদীস পেশ করার মতো এবং বিভিন্ন মাসায়েল সম্পর্কে জ্ঞান তাকে দেয়া হয়। (প্রবাসীদের
উদ্দেশ্যে বলেন) আপনারা দেশে গিয়ে দেখবেন, আলহামদুলিল্লাহ! বহু ইংরেজী শিক্ষিত, আপনি
দেখলে টের পাবেন না।
চট্টগ্রামে যাদের বাড়ী আছে, তাদেরকে বলি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সময়ের নাম করা নেতা ছিলেন-অধ্যাপক মুফিজুর রহমান। ইংলিশে
মাষ্টারস করেছেন। এখন একটি কলেজের ইংলিশ প্রফেসর তিনি। অধ্যাপক মুফিজুর রহমান সাহেব
যখন বক্তৃতা করেন, আলেম উলামা-দেওবন্দি উলামা হোক আর আলিয়ার উলামা হোক, হা করে তাকাইয়া
থাকে তার হাদীস, তার কুরআনের আলোচনা শুনে-আলহামদুলিল্লাহ। একটা নাম নিলাম, এরকম বহু
আছে। জামায়াতে ইসলামী এভাবে গড়েছে।
আবার যারা টাইটেল পাশ করে এসেছেন। দুনিয়া
সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন না। পররাষ্ট্রনীতি কারে বলে, সুপার পাওয়ার কারে বলে, ন্যাটো
কারে বলে, আশিয়ান কারে বলে, সার্ক কাকে বলে, সেনটো কাকে বলে, সিয়াটু কাকে বলে, লীগ
অব ন্যাশন্স কাকে বলে, ইউনাইটেড ন্যাশন্স অরগেনাইজেশন কাকে বলে, এটুকু জানারই কথা না।
মাদ্রাসা থেকে পড়ে এসেছে, মাদ্রাসায় টাইটেল পাশ করে আসছে। এদেরকে আল্লাহর মেহেরবানী-এমন
জ্ঞান এখানে দেওয়া হয়, যাতে করে আপনি যদি বলেনঃ ইসলামী রাষ্ট্র হলে পরে তার পররাষ্ট্রনীতি
কি ধরণ হবে-আপনি বলুন। আপনাকে অন্তত ঘন্টা খানিক উনি বুঝাইতে পারবে-কুরআন হাদীস থেকে।
ইন্টারেস্টহীন ব্যাংক। সূদ বিহীন ব্যাংকিং
সিসটেম কিভাবে চলবে? সূদ যদি বন্ধ করে দেন, তাহলে ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল আপনি কিভাবে
করবেন? কুরআন হাদীস দিয়ে বলেন। তিনি বলতে পারবেন।
এই ভাবে করে (জামায়াতে ইসলাম) এটা একটা
বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো। আল্লাহর মেহেরবানী যেখানে যতটুকু অভাব থাকে, সে অভাবটুকু পুরণ
করে দেয়ার জন্য প্রচেষ্টা করা হয়। সে জন্যই জামায়াতে ইসলামী যতলোক বিরোধীতা করুন, এই
বিরোধীতার হার এখন কমে আসতেছে আলহামদুলিল্লাহ। শানিত বিরোধীতা অনেক অংশে কমে আসতেছে।
আরও বাকীটুকও যাতে কমে যায়, আপনারা সকলে দোয়া করুন। আল্লাহ পাক আমাদের মধ্যে পারস্পরিক
মহব্বত যেন বৃদ্ধি করে দেন। আমীন।
0 Comments