জামায়াতের ভোট কত? মিডিয়া এবং টকশোজীবিরা
বলছে ৫ থেকে ৬% । বিএনপির ভোট কত? মিডিয়া এবং টকশোজীবিরা বলছে ৩২ থেকে ৩৪% । কিন্তু
এই হিসাব তো গত ১৫ বছর আগের। এখনকার হিসাবটা কেউ সামনে আনছে না। এটাই বড় ধরণের মিডিয়া
অপপ্রচার।
গত ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদের যাতাকলে সবচেয়ে বেশী নির্যাতিত দল কোনটি? সম্মিলিত জবাবঃ জামায়াতে ইসলামী। যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে জামায়াতের অবস্থান এখন কি হবে?
➧ নির্যাতিত হওয়ার কারণে সাধারণ ভোটারদের সিম্পিতি জামায়াতের দিকেই হবে।
➧ নির্যাতন দেখে যাদের অন্তর কেঁপে উঠেছে, তারা শুধু সিম্পিতি নয়, বরং জামায়াতের দিকেই ঝুকে পড়েছে।
➧ আল্লামা সাঈদীর মেডিক্যাল কিলিং এর পর সাঈদী ভক্ত লক্ষ জনতা তার প্রতিশোধের জন্য জামায়াতের দিকেই ঝুকে পড়েছে।
➧ জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে জুডিশিয়াল কিলিং এর মাধ্যমে হত্যা করার পর তার এলাকার সাধারণ মানুষ নিরপরাধ মানুষকে ফাঁসি দেয়ার প্রতিবাদে এখন জামায়াতের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
➧ জামায়াতে দীর্ঘ ১৫ বছরের ত্যাগ আর সীমাহীন নির্যাতনের পরও দেশ থেকে পলায়ন না করে দেশের মাটি আঁকড়ে ধরে দেশে অবস্থান করার কারণে জামায়াত দেশপ্রেমিক প্রাকটিক্যাল নেতৃত্ব হিসাবে আস্তা অর্জন করতে পেরেছে।
➧ ১৫ বছর ব্যাপী জামায়াতের নানাবিধ সামাজিক কাজ মানুষের মাঝে আস্থার অবস্থান তৈরী করতে পেরেছে।
➧ জামায়াতের ডায়নামিক নেতৃত্ব এবং দূরদর্শী রাজনৈতিক অবস্থান দেশপ্রেমিক ও নিপিড়িত মানুষের মনে আশার সঞ্চার করেছে।
➧ সৎ ও যোগ্যতার সমন্বয়ে একদল নৈতিকতা সম্পন্ন জনশক্তি তৈরী করে কেবল জামায়াতের নেতৃত্বে দূর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত রাষ্ট্র গঠন সম্ভব, এমনটা প্রমাণিত হয়েছে।
➧ জামায়াত অন্যান্য ইসলামী দল গুলোর সাথে ঐক্য গড়ার জন্য অত্যন্ত প্রজ্ঞার সাথে একটা পরিবেশ তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে, ইসলামী ঘরণার লোক গুলো ঐক্য না হলেও এখন জামায়াতকেই ভোট প্রদান করবে।
এত কিছুর কোন বিবরণ ও হিসাব মিডিয়া ও টকশোজীবিরা উপস্থাপন করছেন না। এই না করাটা পরিকল্পিত। এই গুলো বিবেচনায় নিলে জামায়াতের ভোট এখন আর ১৫ বছর আগের ৫ বা ৬% এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং তা এখন ৪০ থেকে ৫০% এর ঘরে ঘুরাঘুরি করছে।
গত ১৫ বছরে বিএনপি এমন কি কি নেক কাজ করেছে যে, পূর্বের হিসাব ৩২ থেকে ৩৪% এর মধ্যে তাদের ভোট থাকবে?
➧ বিএনপি প্রধান বিরোধী দল হিসাবে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে যে নেতৃত্ব জাতি কামনা করেছিল, তা প্রদান করতে ব্যর্থ হয়েছে।
➧ বিএনপির ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন নয়া পল্টনের বিএনপি অফিসের প্রেস কনফারেন্স পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। মিডিয়ার আনুকূল্য না থাকলে বিএনপি নামে যে একটা দল আছে, তা মানুষ খোঁজে পেত না।
➧ কথিত আছে যে, বিএনপি শীর্ষ নেতৃবৃন্দ নিয়মিত ভাবে ফ্যাসিবাদের নিকট থেকে মাশোয়ারা পেয়ে আন্দোলন যাতে না হয়, সেই ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন।
➧ বিএনপি বছরের পর বছর ‘ঈদের পর আন্দোলন’ ঘোষণা দিয়ে জনগনের হাসির খোরাক হয়েছে। কিন্তু কোন ঈদের পরই আন্দোলনে আসেনি।
➧ বিএনপি ১৫ বছর আগে ফ্যাসিবাদের পূর্বে ক্ষমতায় থাকাকালীন যে সীমাহীন দূর্নীতি করে হাওয়া ভবনের জন্ম দিয়েছিল, তা জনগন আজও ভূলেনি। ফ্যাসিবাদের পতনের পর বিভিন্ন স্থানে বিএনপির চর দখলের মতো প্রতিযোগিতা জনগন প্রত্যক্ষ করে আগামীর নেতৃত্বের জন্য তাদেরকে ফিট মনে করতে পারতেছে না।
➧ বিএনপি রাজনীতিকে রীতিমতো মশকারায় পরিণত করেছে। ফ্যাসিবাদের নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের আগ পর্যন্ত নির্বাচন ভাল হয়েছে উল্লেখ করে ফলাফল প্রকাশের পর কারচুপি ও ভোট কেন্দ্র দখলের অভিযোগ এনেছে। এরপর ঐ নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিয়ে তাদের এমপিরা সংসদের গিয়েছে, সরকারী সুযোগ সুবিধা নিয়েছে, সংরক্ষিত আসনে নিজেদের প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনকে বৈধতা দিয়েছে এবং সবশেষে উপনির্বাচন সমূহে অংশ গ্রহণের মাধ্যমে সেই বৈধতার উপর সীল মোহর আরোপ করেছে এবং নিজেদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের পরিচয় দিয়েছে। যা দেশের জনগন ভুলে যায়নি।
➧ সারা দেশে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি একাধিক প্রার্থী এবং একাধিক গ্রুপ বিএনপিকে একটা কাগুজে বাঘ হিসাবে রেখেছে, কিন্তু বাস্তবে তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপির নেতৃত্ব বিশৃংখল ও নেতৃত্বহীন তলানিতে টেকেছে।
➧ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে তার কেন্টনমেন্টের বাসভবন থেকে উচ্ছেদ এবং মিথ্যা মামলায় তাকে কারাগারে নিক্ষেপের এত বড় ঘটনা ঘটার পরও তারা মিডিয়ার সামনে কান্নাকাটি করা ছাড়া কোন আন্দোলন করতে ব্যর্থ হওয়া জনগন আজও ভূলতে পারেনি।
➧ দেশে থেকে পলায়ন করে তারেক রাহমান বিদেশে বসে রাজনীতি করে দেশপ্রেমিক মানুষকে ভাল ম্যাসেজ দেননি। রাজনীতি করতে হলে দেশের মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকা, প্রয়োজনে জেলে যাওয়া, ত্যাগ ও সংগ্রাম ইত্যাদির শিক্ষা বিএনপি বা তারেক রহমান থেকে মানুষ পায়নি।
➧ জিয়াউর রহমানের প্রেমে যারা বিএনপিকে ভালবাসেন, তারা বর্তমান বিএনপির মধ্যে জিয়াউর রহমানের আদর্শ দেখতে পাচ্ছেন না। বরং বিভিন্ন দল থেকে ছুটে আসা নানান মতের ও পথের লোকদের মাধ্যমে বিএনপির পরিচালনা বিএনপিকে BNP সাইনবোর্ডধারী আওয়ামীলীগে রূপান্তরিত করেছে। তাই আওয়ামীলীগের বিকল্প হিসাবে মানুষ বিএনপিকে বিবেচনায় নিচ্ছে না।
➧ একটা দেশ পরিচালনা করার জন্য নেতৃত্বের যে টীম দরকার, তা বিএনপির মধ্যে অনুপস্থিত। এমনকি দল পরিচালনার জন্য যে নেতৃত্বের টীম দরকার, তাও বিএনপিতে এখন নাই। তাই জনগন বিএনপিকে বিবেচনায় নিচ্ছে না।
➧ পলিটিক্যাল সেলিব্রেটি হিসাবে বিএনপিতে মীর্যা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি নেই। যাকে দেখে মানুষ বিএনপির প্রতি আস্তা রাখবে।
➧ সামাজিক কাজে বিএনপির অংশ গ্রহণ অনুবিক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খুঁজতে হয়। বিগত প্রলয়ংকারী বন্যায় বিএনপির কোন তৎপরতা মানুষ খোঁজে পায়নি।
ইত্যাদি বিবেচনায় ১৫ বছর আগের বিএনপি আর এখনকার বিএনপি এক নয়। বিএনপি হারিয়ে গেছে। বিএনপির প্রতি মানুষের আস্তার জায়গাটি এখন জামায়াতের দিকে চলে গেছে। আওয়ামীলীগের বিকল্প হিসাবে এখন মানুষ বিএনপির স্থলে জামায়াত ও ইসলামী ঘরোনার লোকদের হিসাবে নিচ্ছে।
এমন অবস্থায় মিডিয়া আর টকশোজীবিরা বড়
রকমের ফেকরার মধ্যে পড়েছে। তাই তারা ফুলিয়ে ফাপিয়ে ১৫ বছর আগের ভোটের হিসাব বারবার
পেশ করছে। ভোটের হিসাবে এখন যে বিএনপি ১০ থেকে ১৫% এবং জামায়াত যে ৪০ থেকে ৫০% এ চলে
গেছে, সেই সহজ হিসাবটা তারা করতে নারাজ।
কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এখন আর বোকা
নয়। আর এখনকার জামানা সেই বিটিভি আর বটম মোবাইলের জামানা নয়। এখনকার জামানা সোস্যাল
মিডিয়ার জামানা, হোয়াইটসআপ ইউটিউবের জামানা। তাই মিডিয়া আর টকশোজীবিরা শত চেষ্টা করলেও
সফল হবে না। বরং মানুষ ভিন্ন হিসাব করে পরিবর্তনের শ্লোগান দেবে। সবাইকে দেখা শেষ,
একবার জামায়াতকে দেখার পালা বিবেচনায় মানুষ ভোট দেবে এমনটা ভাবছে মানুষ।
0 Comments