গোলাম মাওলা রনি আজ (১১ই সেপ্টেম্বর ২০২৪)
আমান আল আযামীকে নিয়ে একটি ভিডিও আপলোড করেছেন তার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে। এই
সম্পর্কে ক’টি কথা বলা প্রয়োজন।
প্রথমে
তার চ্যালেন নিয়ে কিছু বলি। গোলাম মাওলা রনি দিনে গড়ে ৩টি করে ভিডিও তার চ্যানেলে
আপলোড করে থাকেন। তার চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ১ মিলিয়নেরও উপরে। তাছাড়া
তিনি প্রায় প্রতিদিনই মেইনস্ট্রিম মিডিয়া বা বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের টকশো’তে
বক্তব্য দিয়ে থাকেন। বলা যায়, দিনের বড়
একটা অংশ তাকে কথা বলতে হয় বা কথা বলার জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়। আর তার এই কথা
বলাটা উচিত। কেননা টিভি চ্যানেলে কথা বললে তিনি পয়সা পান, ইউটিউব
চ্যানেলে কথা বললে তিনি ডলার ইনকাম করতে পারেন। অতএব, চমকপ্রদ
কথা বলে বা শিরোনাম দিয়ে দর্শক আকর্ষণ করা তার ভিউ বাড়ানোর একটা টেকনিক, যা তার রুটি রুজির জন্য একান্ত প্রয়োজন।
এবার
আসা যাক তার আলোচিত বিষয় নিয়ে। তিনি ভিডিটিতে শিরোনাম আমান আল আযামীকে নিয়ে করলেও
তিনি ভিডিওতে আমান আল আযামীকে নিয়ে কথা বলেছেন ১৯ মিনিট ২৪ সেকন্ড এর মধ্যে মাত্র
১মিনিট ৫৭ সেকন্ড। তাতে তিনি উল্লেখ করেছেনঃ সামরিক বাহিনীতে যারা জিনিয়াস হোন, তারা সোসাল লাইফে তত বেশী উদাসিন থাকেন, তত বেশী সরল সোজা হোন। সাধারণতঃ যারা বেশী লেফট রাইট করেন, তাদের গিলু নামতে নামতে হাটুতে এসে পড়ে যায়। এর মাধ্যমে তিনি বুঝাতে
চেয়েছেন, আমান আল আযামী যদিও জিনিয়াস ছিলেন, কিন্তু সেনাবাহিনীর নিয়মের মধ্যে থাকতে থাকতে তিনি পচে গেছেন। রাজনৈতিক
বিষয়ে কথা বলার যোগ্যতা তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। আর যার কারণে তিনি জাতীয় সংগীত
পরিবর্তন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে অগ্রহণযোগ্য কথা
বলেছেন। মি. গোলাম মাওলা রণি এর মাধ্যমে শুধু আমান আল আযামীকে অপদস্ত করেননি,
তিনি পুরো সেনাবাহিনীর মেধাবী অফিসারদের অপদস্ত করেছেন।
অধ্যাপক
গোলাম আযম সম্পর্কে তিনি কিছু কথা বলে তিনি জামায়াতের রাজনীতির যে বিন্দু বিষর্গও
বুঝেন না, তার প্রমাণ দিয়েছেন। তিনি বলেছেনঃ অধ্যাপক
গোলাম আযম, যিনি জামায়াতের আধ্যাত্মিক নেতা। তিনি কখনো কোন
পদ পদবী হোল্ড না করার পরেও তার নামে দল পরিচলিত হতো। পরে তিনি কিছু দিনের জন্য
আমীর হলেন এবং পরে তা আবার ছেড়ে দিলেন। কিন্তু যতদিন তিনি বেঁচে ছিলেন, তার বুদ্ধি, তার পরামর্শ, তার
কথায় দল চলতো।
মি. রণি
জানেন না যে, অধ্যাপক গোলাম আযম লন্ডনে বা
দেশে যেখানেই থাকুন না কেন, তিনি জামায়াতের আমীর হিসাবে
দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মরহুম আব্বাস আলী খান যখন ভারপ্রাপ্ত আমীরের দায়িত্ব পালন
করছিলেন, তখন মুলত আমীর ছিলেন অধ্যাপক গোলাম আযম। উনার
নাগরিকত্ব মামলার রায় হওয়ার পর অধ্যাপক গোলাম আযমকে জামায়াতের আমীর আনুষ্ঠানিক
ঘোষনা করা হলেও তিনি সব সময় আমীরই ছিলেন। টেকনিক্যাল করণে জামায়াত তা অফিসিয়েলি
ঘোষনা করেনি।
জামায়াতে
আত্মীয়করণের অভিযোগ করেছেন মি. গোলাম মাওলা রণি। তিনি এজন্য মরহুম অধ্যাপক গোলাম
আযম ও শহীদ মাওলানা মতিউর রহমানকে দায়ী করেছেন। অথচ কে না জানে যে, জামায়াতের অধিকাংশ লোকই জানেনা গোলাম আযম সাহেব বা নিজামী
সাহেবের ছেলে মেয়ে কয়জন বা তারা কে কোথায় আছেন। কারণ জামায়াতে ইসলামীতে এসব চলেনা।
জামায়াতে ইসলামী রাজতান্ত্রিক বা পরিবারতান্ত্রিক ধারা চলে না। খুশীর খবর এটা যে,
গোলাম আযম ও নিজামী সাহেবের অধিকাংশ ছেলেরা জামায়াতে ইসলামীর শপথকৃত
কর্মী। কিন্তু দলের মধ্যে তাদের অবস্থান হলো সাধারণ একজন ব্যক্তির অবস্থান যেমন
তেমন।
মি. রণি
তার আলোচনার এক পর্যায়ে বলেছেন, ৫ আগষ্টের
আগে জামায়াতের নেতাদের মোবাইল নম্বর ছিল না। তারা বিদেশী নম্বর ব্যবহার করে বিপিএন
এর মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। রণি সাহেব, যিনি জামায়াতে
ইসলামীর আমীরের মতো ব্যক্তিকেও মাত্র ক’দিন আগে চিনতেন না, তার
কাছে জামায়াতের নেতাদের মোবাইল নম্বর থাকবে কেন? যারা
জামায়াত করেন, তাদের কাছে তাদের নেতাদের মোবাইল নম্বর সব সময়
ঠিকটাক মতো ছিল। পনের বছরের দুঃশাসনের সময়ে একটি মিনিটের জন্য নেতারা জনশক্তি থেকে
বিচ্ছিন্ন ছিল না। কিন্তু উনাদের কাংখিত নেতা যারা, তাদের
মতো জামায়াত নেতাদের হাটুর নিচে গিলু থাকে, তারা আধুনিক
টেকনোলজি ব্যবহার না করার কারণে বারবার তাদের ভূগতে হয়েছে।
অত্যন্ত
আপত্তিকর একটি শব্দ রণি সাহেব তার আলোচনায় উল্লেখ করেছেন। জামায়াতের নেতা কর্মীরা
নাকি অনলাইনে “অকথ্য ভাষায়” কথা বলেছে। আমরা অত্যন্ত দায়িত্বে সাথে বলতে চাই, জামায়াতের নেতা কর্মীরা অকথ্য ভাষায় কথা বলতেই জানেনা। আপনি
যাদেরকে জামায়াতের কর্মী বলছেন, তারা ভিউ ভিক্ষাকারী
জামায়াতের ফেইসবুক ফলোয়ার, যেমন রণি সাহেব একজন ফলোয়ার।
যাদের দায়িত্ব জামায়াত কখনো গ্রহণ করেনা। জামায়াতের বক্তব্য জামায়াতের নির্ধারিত
দায়িত্বশীলগন নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় অফিসিয়েলী প্রদান করে থাকেন।
আরো
অনেক বিষয়ের অবতারণা করে রণি সাহেব তার ভিডিটি দীর্ঘ করেছেন, যাতে ভিউ টাইম বেশী হয় এবং উনি উনার কাংখিত ডলার উপার্জন করতে
পারেন। তার সেই সকল কথা জবাবে বলবোঃ জামায়াতে কোন গৃহ বিবাদ নেই, আঞ্চলিকতা নেই, আভ্যন্তরিণ বিরোধ নেই। জামায়াতে
রয়েছে উদারতা, সার্বজনীনতা এবং ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা।
মীর
কাশেম আলীকে নিয়ে তিনি মিথ্যাচার করেছেন। মীর কাশেম আলী আমেরিকায় নয়, সর্বশেষ কাতারে সফর করেছেন এবং উনার স্বপ্নের দিগন্ত
টেলিভিশনের কাজে উনি এসেছিলেন এবং নির্ধারিত তারিখে উনি ফিরে গিয়েছেন। তাকে কেউ
পরামর্শ দিয়ে দেশে পাঠায়নি, বরং তিনি যাতে বাহিরে থেকে যান,
তার জন্য তার শুভাকাংখীরা পরামর্শ দিয়েছিলেন। আর মীর কাশেম আলীর
সন্তানেরা তার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের কোথাও না থাকার কারণঃ ১. একমাত্র সন্তানকে
উনার তাহাজ্জুদ গোজার নেত্রী আয়না ঘরে বন্দি করে রেখেছিল। ২. মীর কাশেম আলীর
আহামরি এতো সম্পত্তি ছিল না। যা ছিল, তাতে তার উত্তরসূরীরাই
পদাসীন হয়েছেন। তবে তা রক্তের উত্তরসূরী নয়, বরং মীর কাশেম আলীর
আকাংখা ও আদর্শ এবং অনুসৃত নীতি অনুযায়ী আদর্শের উত্তরসীরা পদাসীন হয়েছেন।
0 Comments