বই নোট - রুকনিয়াতের দায়িত্ব ও মর্যাদা : অধ্যাপক গোলাম আযম - মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম


বই নোট - রুকনিয়াতের দায়িত্ব ও মর্যাদা : মুহাম্মদ নজরুল ইসলা

 


প্রকাশকের কথাঃ

§  জামায়াতে ইসলামী দ্বীন কায়েমের জন্য নিরলস প্রচষ্টার অংশ হিসাবে জামায়াতে শামীল ব্যক্তিদের মাঝে শ্রেণীবিন্যাস করা হয়েছে ঈমানী, ইলমী ও আমলী যোগ্যতার মানদন্ডে।

§  জামায়াতে ইসলামীতে রুকন বা সদস্য বানানো হয় যখন কোন কর্মী ঈমান, ইলম ও আমলের দিক দিয়ে একটি নির্দিষ্ট মানে পৌছেন।

§  জামায়াতে ইসলামীতে যারা রুকন হোন, তাদের রুকনিয়াতের দায়িত্ব হলো, তাকে যে মানে রুকন করা হলো, সেই মানকে ক্রমাগত বৃদ্ধি করা।

§  জামায়াতে ইসলামীর রুকনরা তাদের শপথের উপর টিকে থাকতে না পারার কারণ হলেঅ রুকনিয়াতে দায়িত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে সচেতনতার অভাব।

§  সেই অভাবকে বিবেচনায় রেখে অধ্যাপক গোলাম আযম রাহি. ১৯৮৬ সালের ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর রুকন সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ ভাষন দেন। অপর দিকে ১৯৯২ সালে কারাগার থেকে রুকনদের উদ্দেশ্যে লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন।

§  এই তিনটি ভাষণের সমন্বয় হলোঃ রুকনিয়াতের দায়িত্ব ও মর্যাদা।

ভূমিকাঃ

·         এই বইয়ের সারকথা হলোঃ রুকনিয়াতের শপথের ভিত্তিতে দায়িত্বের বিশ্লেষণ ও দায়িত্ব পালনের ১০ দফা কাজের পরামর্শ।

·         ১০ দাফার দ্বিতীয় দফা হলোঃ ‘রুকনিয়াতের হাইসিয়াত’ সম্পর্কে সজাগ থাকা। যার বিস্তারিত হলোঃ

-    কোন কর্মী যখন ঈমান, ইলম ও আমলের দিক দিয়ে একটা নির্দিষ্ট মানে পৌছেন, তখন তাকে রুকন করা হয়।

-    রুকনের দায়িত্ব হলো ক্রমাগত তার মান বৃদ্ধি করা।

-    রুকনের মান বৃদ্ধি করতে যারা ব্যর্থ হন, তারা হয় পদত্যাগ করেন, নয় তাদের রুকনিয়াত বাতিল হয়।

-    রুকনিয়াতের দায়িত্ব জেনে বুঝে গ্রহণ করার পর তা ত্যাগ করা অস্বাভাবিক এবং বাইয়াত ত্যঅগ ঈমানের জন্য মারাত্মক।

-    যারা পদত্যাগ করেন বা যাদের রুকনিয়াত বাতিল হয়, তারা ‘রুকনিয়াতের হাইসিয়াত’ বা মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন নন।

-    এ সম্পর্কে লিখিত বক্তব্য ইতিমধ্যে ‘রুকনদের মান বৃদ্ধির গুরুত্ব’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে।

রুকনিয়াতের দায়িত্ব

·         জামায়াতে ইসলামীর রুকন সংখ্যা ১৯৮৩ সালে ছিলে ১ হাজারের কম। এসংখ্যা ১৯৮৬ সালে হয় প্রায় ২ হাজার। কারখানা বড় হলে উৎপাদন বাড়ে-এই নীতিতেই রুকন বেড়েছে।

·         ইসলামী আন্দোলনের বৃদ্ধির সাথে সাথে বাতিলের সাথে সংঘর্ষ শুরু হওয়া-এটা স্বাভাবিক। কারণ ইসলামী আন্দোলনের অগ্রগতি বাতিলের গা-জ্বালার কারণ।

·         গনতান্ত্রিক আন্দোলনে জামায়াতের ভূমিকা জামায়াতের প্রতি সচেতন নাগরিকদের প্রত্যাশা বাড়িয়ে দেয়। নাগরিকদের দাবীঃ ১০কোটি মানুষের মৌলিক ও রাজনৈতিক অধিকারের জন্য জামায়াত এগিয়ে যাক।

·         জামায়াতে ইসলামীর সৃষ্টি হয়েছে অধিকার বঞ্চিত মানুষের নিকট আল্লাহর দেয়া প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্বের দায়িত্ব পালনের জন্য।

·         এ দায়িত্ব কখন কিভাবে কতটুকু পালন করবে, তার সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব জামায়াতের মজলিসে শুরার।কিন্তু দায়িত্ব পালনের ঝুকি পোহাতে হয় রুকনদের।

·         জামায়াতের দায়িত্ব পালনের জন্য জেলা উপজেলায় যারা দায়িত্ব পালন করেন, তারা হলেন রুকন।

·         জামায়াতের কর্মসূচী পালনের পরিকল্পনা গৃহিত হয় রুকনদের সামনে রেখে।

·         জামায়াতের সকল জনশক্তিদের কাজে লাগানোর দায়িত্ব যারা পালন করেন, তারা হলেন রুকন।

·         রুকনদের বাইয়াতের জযবাই জামায়াতের প্রধান শক্তি।

রুকন শব্দের বিশ্লেষণ

·         রুকন আরবী শব্দ। যার শাব্দিক অর্থ Support বা Prop অবলম্বন, আশ্রয়, নির্ভর, সমর্থন, ভার বহন, আস্থা, শক্তির উৎস, মযবুত অংশ ইত্যাদি।

·         স্তম্ভ বা খুঁটির উপর অবলম্বন করেই কোন ঘর খাড়া থাকে এবং স্তম্ভই ছাদের ভার বহণ করে বলে স্তম্ভকে রুকন বলা হয়।

·         কোন দালালেন চার কোণের উপর নির্ভর করে মাঝখানের দেয়াল টিকে থাকে বলে কোণকে রুকন বলা হয়।

·         কাবাঘর তাওয়াফের সময় কাবাঘরের যে কোণ হাত দিয়ে স্পর্শ করতে হয়, সেই কোনের নাম রুকনে ইয়ামানী।

·         নামাযের ভিতরের ফরয সমূহকে রুকন বলা হয়, যার উপর নামায শুদ্ধ হওয়া নির্ভর করে।

·         কুরআনে রুকন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে ২ জায়গায়ঃ

১. সূরা হুদাঃ আয়াত ৮০

﴿قَالَ لَوْ أَنَّ لِي بِكُمْ قُوَّةً أَوْ آوِي إِلَىٰ رُكْنٍ شَدِيدٍ﴾

লুত আ. বললেনঃ “হায় আমার যদি এতখানি শক্তি থাকত যে তোমাদেরকে ঠেকাতে পারতাম অথবা যদি কোন মযবুত অবলম্বন পেতাম যার আশ্রয় নিতে পারতাম।” এই আয়াতে রুকন অর্থ অবলম্বন বা আশ্রয়।

২. সূরা আয যারিয়াতঃ আয়াত ৩৯

﴿فَتَوَلَّىٰ بِرُكْنِهِۦ وَقَالَ سَـٰحِرٌ أَوْ مَجْنُونٌۭ﴾

“সে তখন নিজের শক্তির উপর নির্ভর করে মুখ ফিরিয়ে বলল, এ লোক হয় যাদুকর আর না হয় জ্বিনগ্রস্থ।” এই আয়াতে রুকন মানে শক্তি।

·         জামায়াতের পরিভাষা হিাসবে রুকন শব্দের ব্যবহারঃ

-    কুরআনে রুকন শব্দ মূল শাব্দিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। ১ম আয়াতে অবলম্বন, নির্ভর বা আশ্রয় এবং ২য় আয়াতে শক্তি অর্থে।

-    জামায়াতে ইসলামী তার সদস্য বা রুকদেরকে কুরআনে বর্ণিত দুই অর্থেই রুকন আখ্যা দিয়ে থাকে।

-    জামায়াতে ইসলামী তার পুরো জনশক্তিকে ইসলামী আন্দোলনের মূল শক্তি মনে করে না। বিধায় জামায়াতের পরিকল্পনা গ্রহণের সময় রুকন সংখ্যা ও রুকনদের যোগ্যতাকে বিবেচনায় নেয়া হয়।

-    জামায়াতের ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা ও জেলা সংগঠন নূন্যতম রুকন সংক্যার ভিত্তিতে গঠনতান্ত্রিক মর্যাদা পায়।

-    রুকনদের মধ্য থেকে একজন স্থানীয় শাখায় আমীর হোন এবং ইমারত তথা রুকনদের ভোটে নির্বাচিত আমীর ছাড়া কোন শাখা ইমারাতের মর্যাদা পায় না।

-    রুকন একটি বিশেষ মর্যাদা সম্পন্ন পদ, যা সদস্য শব্দ দিয়ে আদায় হয় না।

-    জামায়াতে ইসলামীর ব্যবহৃত পরিভাষা সমূহ যেমনঃ জামায়াত, আমীর, শুরা, রুকন ইত্রাদি কুরআন ও হাদীস থেকে গৃহিত। যার অনুবাদ বা বিকল্প শব্দ দ্বীন পরিভাষার স্থলাভিষিক্ত হবার যোগ্য নয়।

·         গঠনতন্ত্রে রুকনের মর্যাদা

-    জামায়াতের লক্ষ লক্ষ সহযোগী সদস্য ও কর্মী থাকার পরও তাদের দায়িত্ব, কর্তব্য, ক্ষমতা ও অধিকার নিয়ে জামায়াতের গঠনতন্ত্রে কোন আলোচনা করা হয়নি। আলোচনা করা হয়েছে কেবল রুকনদের দায়িত্ব, কর্তব্য, ক্ষমতা ও অধিকার নিয়ে।

-    জামাতের সর্বস্তরে আমীর ও শুরা নির্বাচনে কেবলমাত্র রুকনদের ভোটাধিকার রয়েছে।

-    জামায়াতের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জামায়াতের পলিসি নির্ধারণ, পরিকল্পনা গ্রহণ, আন্দোলনের কর্মসূচী প্রণয়ন এবং বাজের নির্ধাণের অধিাকর কেবল আমীরে জামায়াত ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার। তাই এই সব দায়িত্বে যাদের, তাদের বাছাই করার ইখতিয়ার কেবল রুকন ছাড়া অন্য কাউকে দেয়া হয়নি।

-    একই দুষ্টিভংগীর কারণে জামায়াত সকল ধরণের যোগ্যতা থাকার পরও জামায়াতের রুকনিয়াতের শপথ না নেয়ার কারণে কাউকে জাতীয় সংসদে জনগনের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য মনোনয়ন দেয় না।

রুকনিয়াতের শপথের বিশ্লেষণ

·         বাইয়াতের শপথনামা বা হলফ নামা, যার মাধ্যমে রুকনগন জামায়াতের নিকট বাইয়াত হোন-তার তাৎপর্য অনুধাবন জরুরী।

·         শপথ বাক্যের শুরুতে যা বলতে হয়ঃ

“আমি জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এর গঠনতন্ত্রে বির্ণত আকীদা উহার ব্যাখ্যা সহকারে ভালভাবে বুঝিয়া লওয়ার পর আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে সাক্ষী রাখিয়া পূর্ণ দায়িত্ববোদের সহিত সাক্ষ্য দিতেছি যে….”

·         শপথের ভূমিকায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কথা রয়েছেঃ

১. কালেমা হলো জামায়াতে ইসলামীর মৌলিক আকীদা। কালেমা তাইয়্যেবার যে ব্যাখ্যা জামায়াতের গঠনতন্ত্রে দেয়া আছে, তা ভালভাবে বুঝে নিয়ে সেই কালেমাকে বকুল করার কথা স্বীকার করা।

২. আল্লাহকে সাক্ষী রেখে শপথ নেয়া।

৩. পূর্ণ দায়িত্ববোধের সাথে কালেমায়ে শাহাদাতের ঘোষণা দেয়া হচ্ছে।

·         শপথের পয়লা দফা

-    শপথ নামার প্রথম দফাটি আকীদার সাথে সম্পর্কিত। আকীদার সম্পর্ক ঈমানের ভিত্তির সাথে। তাই কালেমার ব্যাখ্যার উপর জোর দেয়া হয়েছে।

أَشْهَدُ أَنَّ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ الله وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

-    জামায়াতের গঠনন্ত্রে কালেমায়ে তাইয়েবার যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে, তার সারকথা রয়েছে উপরোক্ত কালেমায়ে শাহাদাতের মধ্যে।

-    যিনি এই শাহাদাতের ঘোষনা প্রদান করেন,  তিনি বুঝাতে চানঃ

o মুসলিম সমাজে প্রচলিত ও না বুঝে উচ্চারিত মন্ত্রের মতো কালেমাকে তিনি গ্রহণ করছেন না।

o যে আকীদা কুরআন ও সুন্নাহ হতে বুঝান হয়েছে, সে ব্যাখ্যা তিনি মনে প্রাণে কবুল করছেন।

o এই ব্যাখ্যার মধ্যে রয়েছেঃ বিশুদ্ধ তাওহীদ, শিরক,রিসালাত।

·         শপথের দ্বিতীয় দফা

-    একজন রুকন দ্বিতীয় দফায় ঘোষনা করেন যে,

o জামায়াতের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো তার জীবনের উদ্দেশ্য।

o দুনিয়ার কোন স্বার্থ হাসিলের জন্য তিনি জামায়াতে শামীল হচ্ছেন না। বরং দ্বীন কায়েমের চেষ্টা করে সন্তুষ্টি ও পরকালে নাজাত লাভ তার জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য।

o তিনি জামায়াত থেকে কিছু নেয়ার জন্য এখানে আসতেছেন না, বরং তিনি জামায়াতে আসতেছেন আখিরাতের কামিয়াবির লক্ষ্যে। আর এই লক্ষ্যের জন্য তিনি তার সবকিছু জামায়াতের হাতে তুলে দেয়ার নিয়ত করে জামায়াতের রুকনিয়াত কবুল করছেন।

-    শপথের এই দফার গুরুত্ব যারা ভূলে যান, তারাই নানা অজুহাতে রুকনিয়াতের দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেন।

-    নিস্ক্রয় হওয়া বা মনোক্ষুন্ন হযে কাজে ঠিরা হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে প্রমাণ হয় যে একজন রুকন শপথের দ্বিতীয় দফাটি ভূলে গেছেন, যখনঃ

ক. জামায়াতের মাধ্যমে কোন সুযোগ বা মর্যাদা না পেলে বা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিলে।

খ. কোন দায়িত্বশীলের কাছ থেকে আশানুরুপ ব্যবহার না পেলে।

গ. কোন বিষয়ে তার মতামত গৃহিত না হলে।

-    আল্লাহর সন্তুষ্টি যদি হয় একমাত্র উদ্দেশ্য, তাহলে রুকনিয়াতের দায়িত্ব পালনে কখনো অবহেলা চলে না।

·         শপথের তৃতীয় দফা

-    শপথের তৃতীয় দফা হলো জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্র মেনে চলা ও নিয়ম শৃংখলার আনুগত্যের ওয়াদা।

-    জামায়াতের গঠনতন্ত্রের ৭নং ধারায় রুকন হবার যে শর্তাবলী উল্লেখ করা হয়েছে, সেই শর্তাবলী মনে চলার ওয়াদা করা হয় তৃতীয় দফা শপথের মাধ্যমে। আর এই ওয়াদা পালনের জন্য প্রয়োজন গঠনতন্ত্রের ৯ ও ১০ ধারায় যে দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা বলা হয়েছে, তার প্রতি লক্ষ্য রাখা।

·         শপথ নামার আসল কথা

-    শপথের আসল কথা কুরআনের সূরা আল আনআম এর ১৬২ নম্বর আয়াত তেলাওয়াত করে আল্লাহর কাছে পূর্ণ আত্মসমর্পনের ওয়াদা করা হয়।

-    আল্লাহর মর্জির নিকট নিজের সব চাওয়া পাওয়াকে কুরবান করে দেয়অর এই ওয়াদা আল্লাহর খাঁটি বান্দার জন্য বড় ধরণের তৃপ্তি। যাকে সুফিদের ভাষায় বলা হয় ‘ফানা ফিল্লাহ’।

·         শপথ নামার মাধ্যমে রুকনিয়াতের শপথ নিয়ে তিনি ঘোষনা করেন যে,

১. আল্লাহকে সাক্ষী রেখে পূর্ণ দায়িত্বানুভূতির সাথে তাওহীদ ও রিসালাতের সঠিক ইসলামী আকীদা কবুল করার ঘোষনা।

২. আল্লাহর দ্বীন কায়েমের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য জামায়াতের রুকনিয়াত কবুলের ঘোষনা।

৩. জামায়াতের গঠনতন্ত্র মোতাবেক জামায়াতের সংগঠনের পূর্ণ আনুগত্যের ঘোষনা।

৪. নিজের জান মালসহ সমগ্র সত্তাকে আল্লাহর মর্জির নিকট সপোর্দ করার ঘোষনা।

-    গঠনতন্ত্রের ৮ নং ধারা অনুযায়ী আমীরে জামায়াত বা তার প্রতিনিধির সামনে রুকনিয়াতের ঘোষনা আল্লাহকে সাক্ষী রেখে প্রকাশ্যে ওয়াদাবদ্ধ হওয়ার নাম রুকনিয়াত। রুকনিয়াত কবুলের এই পরিভাষাকে ইসলামী পরিভাষায় বলা হয় বাইয়াত।

ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেক রুকনের দায়িত্ব

·         ইকামাতে দ্বীন সকল ফরযের চেয়ে বড় ফরয।

·         ইকামাতে দ্বীনের কাজ একা করা যায় না। কারতে হয় জামায়াতবদ্ধ হয়ে। তাই জামায়াতবদ্ধ হওয়া দ্বিতীয় বড় ফরয।

·         আমরা জামায়াতের রুকন হয়েছি সেই দ্বিতীয় বড় ফরয দায়িত্ব পালনের জন্য।

·         সংগঠনের পক্ষ থেকে যার উপর যে দায়িত্ব অর্পন করা হয়, সেই দায়িত্ব পালন করা সাংগঠনিক কর্তব্য।

·         সাধারণ ভাবে সকল রুকনের ব্যক্তিগত দায়িত্বঃ

১. আত্ম-সমালোচনার দায়িত্ব।

-    ঈমান, ইলম ও আমলের মান সন্তোষজনক কিনা তার নিয়মিত পর্যালোচনা করা।

২. মান বৃদ্ধির দায়িত্ব।

-    দ্বীনি মান ও সংগঠনের দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা দিন দিন বাড়ছে কিনা সেদিকে দৃষ্টি রাখা।

৩. জামায়াতের প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব।

-    আমাদের কথা ও কাজ এবং আচার-আচরণ ও লেনদেন ইসলামী মানের করে গড়ে তুলে জামায়াতের প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব পালন করা।

৪. যোগ্য লোক তৈরীর দায়িত্ব।

-    পরামর্শে অংশ গ্রহণ, কাজে দায়িত্ব প্রদানের মাধ্যমে সম্ভাবনাময় দায়িত্বশীল গড়ে তোলা।

-    অন্যকে দায়িত্বশীল বানানোর সাধনা নিজের যোগ্যতাকে বৃদ্ধি করে।

-    দায়িত্বশীল তৈরীতে সক্ষম দায়িত্বশীলদেরকে বৃহত্তর দায়িত্ব প্রদান করা।

৫. রুকনিয়াতের দায়িত্ব পালনে অবহেলা।

-    শয়তান, নফস বা কোন মানুষ অপরের দোষ-ত্রুটিকে অজুহাত হিসাবে খাড়া করে দায়িত্ব পালনে সামান্যতম ত্রুটি হতে না দেয়া।

৬. সমস্যা উর্ধ্বতন দায়িত্বশীলকে অবগত করণ।

-    আর্থিক দূরবস্থা, পারিবারিক সংকট, অসুস্থতা বা অন্য যে কোন কারণে দায়িত্ব পালনে সমস্যা হলে উর্ধ্বতন দায়িত্বশীলের সাথে পরামর্শ গ্রহণ করা। সমস্যার কারণে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কাজ না করা বা অবহেলা করা শপথের খেলাফ।

৭. আল্লাহর নিকট জাবাবদিহিতা।

-    কাম্য যেহেতু আল্লাহর সন্তুষ্টি, সেহেতু আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার মনোভাব থাকতে হবে। বিধায়, কে দায়িত্ব পালন করলো বা না করলো তা নয়, আমি আমার দায়িত্ব পালন করলাম কিনা, সে মানসিকতা পোষণ করতে হবে।

রুকনদের সমষ্টিগত দায়িত্ব

·         জামায়াতের অনিবার্য দাবী হলোঃ দেশের ১০কোটি মানুষকে আল্লাহর পথে আনা।

·         দেশের জনতাকে আল্লাহর পথে আনার দায়িত্ব সফলভাবে পালন করতে প্রয়োজন জামায়াতের রুকনগনের জনগণের নেতৃত্বের মর্যাদা পাওয়া।

·         নেতৃত্বের সিলসিলা সৃষ্টি হতে হবে দেশ ভিত্তিক নেতৃত্ব থেকে গ্রাম পর্যন্ত। যারা সংগঠনের দায়িত্বশীল হবেন, তারা জনগনের ও নেতা হবেন।

·         জনগনের নিকট ইসলামী ব্যক্তিত্ব নেতৃত্বের মর্যাদা না পেলে ইসলাম বিজয় সম্ভব নয়।

·         জামায়াতের দায়িত্বশীলদেরকে জননেতা হিসাবে তৈরীর জন্য  গৃহিত কর্মসূচীতে যা লক্ষণীয়ঃ

  1. জামায়াতের দায়িত্বশীলকে একই সাথে ধর্মীয় নেতা ও রাজনৈতিক নেতা হতে হবে। যোগ্যতার সাথে দ্বীনি দাওয়াত ও রাজনৈতিক বক্তব্য পেশ করতে হবে। নামাযের ইমামতির সাথে জনগনের অভাব অভিযোগের প্রতিকারে ইমামতি করতে হবে।
  2. যেসব আন্দোলনে ভূমিকা পালনে অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়, সে সব আন্দোলনে ভূমিকা পালন করতে হবে। যেমনঃ মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং জনসেবামূলক কাজে ভূমিকা পালন। এজন্য রুকনদের মধ্যে একটি মযবুত টীম থাকতে হবে।
  3. জামায়াতের পার্শ্ব সংগঠন সমূহকে এলাকায় সক্রিয় করে স্থানীয় নেতৃত্ব গড়ে তোলা।
  4. জামায়াতের সমাজ সেবামুলক কাজকে এলাকায় সম্প্রসারিত করার মাধ্যমে স্থানীয় নেতৃত্ব গড়ে তোলা।

-    মূল সংগঠনের নেতৃত্বের অধীনে এসব কাজ হলে স্থানীয় নেতৃত্ব মূল নেতৃত্বকে শক্তিশালী করবে এবং জামায়াতের নেতৃত্বের পেছনে জনগন সংঘবদ্ধ হবে।

·         রুকনিয়াতে দায়িত্ববোধে সংকট

-    সমাজ জীবনে মানুষের বিভিন্ন রোগ পরিলক্ষিত হয়। যার রোগ তিনির দায়িত্ব হলো রোগের চিকিৎসা। কিন্তু কোন ক্ষেত্রে ব্যক্তি চিকিৎসা না করলে অন্যজন বা আত্মীয়রা চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

-    জামায়াতে ইসলামীতে রুকনদের মধ্যে সাংগঠনিক বা দ্বীনি দৃষ্টিতে রোগ দেখা দেয়। তার চিকিৎসা করতে হবে। এটা রুকনের নিজের যেমন দায়িত্ব, আশপাশের রুকনদেরও দায়িত্ব।

-    রুকনদের সাংগঠনিক রোগ দেখা দিলে তাদের মধ্যে দায়িত্ববোধের অভাব দেখা দেয়। যারা ইকামতে দ্বীনকেই জীবনের প্রধান লক্ষ্য ঘোষনা করে ভূলে যাননি, তাদেরকে আবার সহজে দায়িত্ব সচেতন করা যায়।

-    যারা জীবনের প্রধান লক্ষ্য  ভুলে যান, তাদেরকে কোন ক্রমেই আগের মত সক্রিয় করা সম্ভব হয় না।

-    হেদায়াতের ইখতিয়ার আল্লাহর হাতে। হেদায়াত একটি নিয়ামত। এই নিয়ামত থেকে আল্লাহ যে কোন সময় যে কাউকে মাহরুম করতে পারেন। যার কারণে হেদায়াতের উপর আমরা যাতে সব সময় থাকতে পারি, সেজন্য আল্লাহ দোয়া শিখিয়ে তা অব্যাহত রাখার তাগিদ দিয়েছেনঃ

﴿رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً ۚ إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ﴾

“হে আমাদরে প্রভূ, তুমিই যখন আমাদের হেদায়াত করেছ তখন এ হেদায়াত দেবার পর আমাদের দিলে কোন প্রকার বক্রতা সৃষ্টি হতে দিও না। তোমার দয়ার ভান্ডার থেকে আমাদের উপর রহমত নাযিল কর। একমাত্র তুমিই প্রকৃত দাতা।”

-    আল্লাহর পথ সরল এবং সোজা পথ। কিন্তু এই পথ থেকে বিচ্যুত হওয়া কঠিন নয়। এই পথে বাঁধা আছে। অমনযোগী হলে বিচ্যুতির আশংকা আছে। আর সেজন্য বিচ্যুতি থেকে বাঁচার গ্যারান্টি দেয় জামায়াতী জিন্দেগী। যা বিচ্যুতির আশংকা দেখা দিলে সকলে মিলে ফিরিয়ে নিয়ে আসে।

-    জামায়াতের রুকনিয়াতের দায়িত্ব ত্যাগ করা কখন জায়েজঃ যখন একজন রুকন দেখবেন যে, তিনি যে উদ্দেশ্যে জামায়াতে ইসলামীর রুকনিয়াত গ্রহণ করেছিলেন, সে উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য আরো উন্নততর কোন দ্বীনি সংগঠন রয়েছে, যেখানে তিনি রুকন হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এই ধরণের দায়িত্বত্যাগকে সংগঠন বদল করে দায়িত্ব হস্তান্তর বলা হবে মাত্র। কিন্তু কোন অজুহাত খাড়া করে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি লাভের চেষ্টা ঈমানেরজন্য মারাত্বক।

·         জামায়াতের সম্মেলনে যোগদানের দায়িত্ব

·         ১৯৪৬ সালে ৪ মাসের ব্যবধানে জামায়াতে দুটো কেন্দ্রীয় রুকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

·         দ্বিতীয় রুকন সম্মেলনে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কিছু সংখ্যক রুকন অনুপস্থিত থেকে ছুটি চান এবং সিদ্ধান্তের সাথে একমত থাকবেন ওয়াদা করেন।

·         আমীরে জামায়াত মাওলানা মওদূদী রাহি. মন্তব্য করেনঃ  এই ভাইয়েরা রুকনিয়াতের দায়িত্ববোধের অভাবে ব্যক্তিগত প্রয়োজনকে বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন। একমাত্র রুকন হওয়ার যোগ্য তারা, যারা জামায়াতের ডাকে সাড়ে দেয়।

·         জামায়াতের রুকন সামরিক বাহিনীর মতো-যাদেরকে বিউগল বাজানোর সাথে সাথে একটা নির্দিষ্ট স্থানে হাজির হয়ে আনুগত্য প্রদর্শণ করতে হয়। জামায়াতের রুকনরাও যখনই আহবান করা হবে, তখনই সাড়া দিয়ে আনুগত্য প্রদর্শণ করবেন।

·         অনুপস্থিত থাকার অনুমতি না নিয়ে বিনা নোটিশে অনুপস্থিত থাকার বাইয়াতের স্পিরিটের খেলাফ। যেমনঃ দ্বীনের বড় কোন খেদমতের অজুহাতে নামাযের জামায়াত ত্যাগ করার সুযোগ নাই।

·         জামায়াতের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেন্দ্রীয় রুকন সম্মেলন হলো সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী।

কেন্দ্রীয় রুকন সম্মেলন ’৮৬ এর বিদায়ী হেদায়াত

রুকনদের টারগেট সম্পর্কে আমীরে জামায়াতের ভাষণ

·         জামায়াতের রুকনগন দ্বীনে দায়িত্ব পালন যোগ্যতার সাথে করত হলে ১০টি টার্গেটঃ

১. আল্লাহ পাকের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক অন্তরে অনুভব করা।

-    দুনিয়ার জীবনের প্রধান কর্মসূচী যারা ইসলামী আন্দোলনকে গ্রহণ করেছেন, তাদের চলার পথে আসল পাথেয় হলো আল্লাহর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।

-    ইসলামী আন্দোলনের পথ একটি অনিশ্চিত পথ। যেমনঃ বিনা বিচারে জেলে আটকে থাকা, শহীদ হওয়া বা আহত হওয়া, হালাল পথে চলতে আর্থিক অনটনে থাকা, ইসলামী বিরোধী আত্মীয়দের নিকট থেকে বিপদে সাহায্য না পাওয়া, সন্তানদের কর্তৃক ক্ষোভের শিকার ও এই পথ ত্যাগের চাপ সৃষ্টি ইত্যাদি।

-    আল্লাহর সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছাড়া এই সব সমস্যার মোকাবেলায় অসহায় থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে আল্লাহর পথে চলার যোগ্যতা সৃষ্টির জন্য আল্লাহ বান্দাকে পরীক্ষা করেন।

-    যদি আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের জানমাল বিক্রি করে থাকি জান্নাতের বিনময়ে, তাহলে এই পরীক্ষার মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে।

-    আমরা যখন পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জেলে যাই, তখন আল্লাহকে কাছে পাওয়ার অনুভূতি সষ্টি হয়। আল্লাহ বলেনঃ

﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ قَالُوا۟ رَبُّنَا ٱللَّهُ ثُمَّ ٱسْتَقَـٰمُوا۟ تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ ٱلْمَلَـٰٓئِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا۟ وَلَا تَحْزَنُوا۟ وَأَبْشِرُوا۟ بِٱلْجَنَّةِ ٱلَّتِى كُنتُمْ تُوعَدُونَ﴾

“নিশ্চয়ই যারা আল্লাহকেই একমাত্র রব হিসাবে ঘোষণা করার পর একথার উপর মযবুত হয়ে থাকে, আল্লাহর ফেরেশতারা তাদের উপর নাযিল হয়ে (তাদের অন্তরে সান্তনা দেবার জন্য) বলে, “তোমরা ভয় পেয়ো না ও ঘাবড়ে যেও না, বরং ঐ জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর যার ওয়াদা তোমাদের সাথে করা হয়েছে।” (সূরা হা-মীম আস-সাজদাঃ ৩০)

-    সামান্য বিপদে দিশেহারা ও পালাবার ফিকর করে তারা, যারা ইসলামী আন্দোলনের পথে যে কোন কঠিন পরীক্ষা আসতে পারে বলে মন-মগজে আগে থেকে প্রস্তুত থাকে।

২. রুকনিয়াতে হাইসিয়াত সম্পর্কে সজাগ থাকা।

-    যারা রুকন হিসাবে নিজের মর্যাদা ও পজিশন সম্পর্কে সজাগ থাকেন, তাদের জন্য  রুকনিয়াতের মান উন্নত করা সহজ।

-    আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজের বেলায় বিবেকে বাধে তাদের, যারা রুকনিয়াতের মর্যাদা বুঝেন। মাঝে মাঝে তাতে দূর্বলতা দেখা দিলেও যখনই তাকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়, তখন তিনি ঐ কাজ পরিহার করেন।

-    রুকনের জন্য সাজে না, এমন কাজ তখনই একজন রুকন করতে পারেন, যখন তিনি রুকনিয়াতের চেতনা হারিয়ে ফেলেন।

-    রুকন যখন আত্ম সমালোচনা করবেন, তখন রুকনিয়াতের উচ্চ মানকে সামনে রেখেই হিসাব করবেন।

-    “আমার বিবেকের বিরুদ্ধে কিছুতেই চলব না” রুকনকে এই দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

-    যদি কোন রুকন বিবেকের রায়কে উপেক্ষা করেন, তাহলে জরিমানার ব্যবস্থা করতে হবে নফল নামায, রোযা ও বাইতুল মালে ইয়ানত দিয়ে। নফসকে শক্ত হাতে ধরতে হবে।

৩. ইতায়াতে আমীরের হক আদায় করা।

-    ইমরাতের দায়িত্বশীল তথা নিম্ন থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সকল দায়িত্বশীলদের আনুগত্য করতে হবে। রাসূল সা. বলেছেনঃ

“যে আমীরের আনুগত্য করল সে আমারই আনুগত্য করেছে।”

-    যে রুকন হক আদায় করে আনুগত্য করবেন, তিনি যখন নিজে ইমরাতের দায়িত্বে আসবেন তখন তিনি অন্যদের আনুগত্য পাওয়ার যোগ্য হবেন।

-    ওযর পেশ করার দূর্বলতা ত্যাহ করে আমীরের হুকুম পালন করাই এতায়াতের দাবী। মনে রাখতে হবে পরীক্ষা করার জন্য আল্লাহ ওজর সৃষ্টি করেন।

৪. জামায়াতের সিদ্ধান্তকে সর্বাবস্থায় মেনে নেয়া।

-    জামায়াতের সিদ্ধান্ত খোলা মনে মেনে নিতে হবে।

-    যদি কোন রুকন সিদ্ধান্তকে সঠিক মনে না করেন, তাহলে গঠনতান্ত্রিক উপায়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের চেষ্টা করবেন। কিন্তু পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে।

-    স্থানীয় সংগঠনের কোন সিদ্ধান্ত সঠিক মনে না করলে উর্ধবতন জামায়াতের কাছে অভিযোগ পেশ করা যাবে।

-    কারো ব্যক্তিগত মতামতকে জামায়াতের উপরে স্থান দেয়া চলবে না।

-    শরীয়াতের বিরুদ্ধে না হলে ব্যক্তিগত মত কুরবানী করতে সহজে রাযী হওয়া উচিত।

৫. মেজায ঠান্ডা রেখে চলার মযবুত সিদ্ধান্ত নেয়া।

-    মেজায গরম হলে ভদ্র আচরণের সীমা থাকে না।

-    মেজায ঠান্ডা না হওয়া পর্যন্ত চুপ থাকার জন্য রাসূল সা. পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেনঃ

“পাহলোয়ান ঐ ব্যক্তি নয় যে কাউকে কুস্তিতে কাবু করে। ঐ ব্যক্তিই সত্যিকার বীর যে রাগ দমন করতে পারে।”

-    আমীর ও মামুরের মধ্যে যেসব সমস্যা সৃষ্টি হয়, তা প্রধানত কড়া মেজাজের কারণে হয়। সকল সাংগঠনিক সমস্যার জন্য মেজায দায়ী।

-    আমাদের সংগঠনে আইনের শাসন চলে না। এখানে চলে নৈতিক শাসন।

-    কেবলমাত্র গঠনতন্ত্রই শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারে।কিন্তু গঠনতান্ত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণের সময় দরদের পরিচয় দেয়া উচিত।

-    আমরা কোন অবস্থায়ই মেজায দেখিয়ে কথা বলবো না। রাগের মাথায় কথা বলবো না।

-    আক্রমণাত্মক ভাষায় কথা না বলে শান্তভাবে জওয়াব দিয়ে পরাজিত করা সহজ।

৬. পরিবাস্থ লোকদের সংগঠনে সক্রিয় করা।

-    স্ত্রী সন্তান আন্দোলনে সক্রিয় না থাকলে ব্যক্তি তার পরিবারে সন্তোষজনক পরিবেশ পাবেন না।

-    সন্তান ভিন্ন মতবাদে সক্রিয় হয়, তাহলে সংঘর্ষ সৃষ্টি হওয়ার আশংকা থাকে।

-    পরিবারের সকল সদস্যেই যাতে জামায়াতের রুকন বা ছাত্রশিবির বা ছাত্রীসংস্থার সদস্য হওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে।

-    জামায়াত, শিবির ও ছাত্রীসংস্থার সদস্যদের মধ্যে পারিবারের সদস্যদের ভাগ করে টার্গেট দিতে হবে।

-    পরিবারের লোক জান্নাতের পথে আছে, এটা দেখে যাওয়া একজন রুকনের জীবনের স্বার্থকতা এবং মরণের পর আমলে জারিয়া।

-    এই প্রচেষ্টায় সফল হতে হবে মহব্বত, শাসন, সোহাগ, আবেগ, চাপ ইত্যাদির মাধ্যমে।

৭. ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দেরকে জান্নাতের পথ দেখানো।

-    প্রত্যেক রুকনকে আত্মীয়ের আপদ-বিপদ, অসুস্থতা, মৃত্যুতে যে ধরণর পেরেশানী দেখা যায়, এই ধরণের পেরেশানী হতে হবে তাকে জান্নাতের পথে না দেখলে।

-    কুরআনের সূরা আশ শুআরার ২১৪ আয়অতে রাসূল সা.কে নির্দেশ দেয়া হয়েছেঃ

“আপনার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করুন।”

-    আত্মীয়দের মাঝে দরদের সাথে দাওয়াতের কাজ করতে হবে।

৮. সমাজের নিকট দ্বীনের শিক্ষকের মর্যাদা অর্জন।

-    একজন রুকন যেমন বুহ পড়শুনা ও ট্রেনিং এর মাধ্যমে এই পথ চিনতে পেরেছেন, সমাজের মানুষকে এই পথ চিনাবার জন্য দ্বীনের উস্তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।

-    বক্তব্য পাশাপাশি বক্তব্যের বাস্তব রূপ হিসাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে হবে। তা লেবাস-পোষাক, বাহ্যিক চাল-চলন, লেন-দেন, ওয়াদা পালন, আচার ব্যবহার ও গোটা চরিত্রে।

-    জামায়াতে ইসলামীর দাওয়াত তখনই সাফল্যের প্রমাণ দেবে, যখন রুকনগনের মানবিক গুণ সমাজে স্বীকৃতি পাবে।

৯. দায়িত্বশীল হিসাবে সাথীদের গড়ে তোলা।

-    দায়িত্বশীল তিনি নন, যিনি নিজের উপর আসা কাজ গুলো করেন। বরং দায়িত্বশীল তিনি, যিনি সহকর্মী ও সংগী-সাথীদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়ার যোগ্যতা রাখেন।

-    সবাইকে নিয়ে কাজ করলে ২টি ফায়দা হয়। ১. কাজ সম্পন্ন হয়ে যায়। ২. সংগঠনের সবাই কাজের যোগ্য হয়ে গড়ে উঠে।

-    আদর্শ দায়িত্বশীল হলেন তিনি, যিনি তার দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা সম্পন্ন একজন দায়িত্বশীল তার সহকর্মীদের মধ্য থেকে গড়ে তুলেন।

১০. এলাকার সম্ভাবনাময় লোকদের টারগেট করা।

-    দায়িত্বশীলের সবচেয়ে বগ টার্গেট হলো তার এলাকার সর্বস্তরে যোগ্য  নেতৃত্ব গড়ে তোলা।

-    সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সম্ভাবনাময়দের তালিকা করবেন এবং স্টাডি সার্কেল, টিএস, টিসি ইত্যাদির মাধ্যমে এবং সফর সংগী করে তাদেরকে গড়ে তুলবেন।

-    যাদের মাঝে মৌলিক মানবীয় গুনাবলী বিদ্যমান। অথচ তারা সংগঠনের আসেনি বা অন্য সংগঠনে কাজ করছে, তাদেরকে টার্গেট নিয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ। নেতৃত্বের সংকট তাদের মধ্য থেকে পুরণ করা।

রুকনিয়াতের মর্যাদা

·         প্রাথমিক কথা

·         ‘রুকনিয়াতের মর্যাদা’ এই আলোচনাটা হয়েছিল ১৯৮৯ সালের রুকন সম্মেলনে।

·         রুকনরা রুকনিয়াতের শপথ নিয়েছেন নিজের ইচ্ছায় আল্লাহকে সাক্ষী রেখে। কিন্তু পরে দেখা যায় রুকনরা অবহেলা করেন। যার কারণে সংগঠন রুকনদের মধ্যে সাধারণ মান, নিম্নমান ও বিপদ সীমা নির্ধারণ করে রুকনিয়াত পর্যন্ত বাতিল করতে হয়।

·         রুকন হওয়ার সময় মান ভাল ছিল বলে কর্মী থেকে উন্নতি দিয়ে রুকন করা হয়েছে। রুকন হওয়ার পর সেই মান আরো উন্নত হওয়ার কথা থাকলেও নিচে চলে যায়। তার কারণ ‘রুকনিয়াতের মর্যাদা’ সম্পর্কে সচেতনতার অভাব।

·         রুকন হওয়া মানে কেবল জামায়াতের সদস্যপদ গ্রহণ নয়। বরং আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য জান, মাল, সময়, শ্রম, আবেগ সবকিছু কুরবানীর সিদ্ধান্ত বুঝায়।

·         সাংগঠনিক মর্যাদা

·         লাখ লাখ সহযোগী সদস্যদের মাঝে যারা রুকনিয়াতের কঠিন দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তাদের উপর যে সব সাংগঠনিক ক্ষমতা ও দায়িত্ব দেয়া হয়ঃ

১. কেন্দ্রীয় আমীর সহ সকল স্তরের আমীর নির্বাচন।

২. কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরু সহ সকল স্তরের সদস্য নির্বাচিত হওয়া।

৩. সর্বস্তরে রুনক সম্মেলনে সকল বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা। আমীর, কর্মপরিষদ ও মজলিসে শুরার যে কোন সিদ্ধান্ত নাকচ করার ক্ষমতা।

৪. গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেন্দ্রীয় রুকন সম্মেলন সকল বিষয়ে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী।

·         রুকন বাছাই-এর উদ্দেশ্য

·         জামায়াতে ইসলামীতে যে জনশক্তির শ্রেণী বিন্যাস রয়েছে, তা অন্য কোন রাজনৈতিক দলে নাই। এই ধরণের সাংগঠনিক কড়াকড়ির কি প্রয়োজন? জামায়াতের ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এই পদ্ধতি কেমন করে সম্ভব?

·         জামায়অতে ইসলামী আল্লাহর আইন আর সৎলোকের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ক্ষমতায় যেতে চায়। আর যার জন্য দরকার একদল লোক তৈরী করা। কারণ সৎ লোকের শাসনের জন্য প্রয়োজন সৎ লোক। জামায়াতের স্তর বিন্যাস সেই লোক গঠনের কাজ।

·         বাছাই করা লোকদের রুকন করা হয়, যাতে তারা সৎ লোকের শাসন কায়েমে ভূমিকা পালন করতে পারেন। ঈমান, ইলম, আমল, তাকওয়া, ইখলাস ও কুরবানীর মাধ্যমে ইকামাতে দ্বীনের জন্য যোগ্য হয়ে গড়ে উঠাই রুকন হওয়ার সার্থকতা।

·         এ বাছাই আসল বাছাই নয়

·         রুকন করার জন্য জামায়াতে ইসলামী যে বাছাই করে, তা আসল বাছাই নয়। আসল বাছাই করেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা। আল্লাহর বাছাইয়ে যারা টিকে থাকেন তারা খাঁটি রুকন।

·         যিনি ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হবার সিদ্ধান্ত নেন, তাকে বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে পাশ করতে হয়। সে সব পরীক্ষায় পাশ করলে তাকে রুকন করে নেয়া হয়।  যেমনঃ

১. নিজের ভিতরের শয়তানরূপ নফসের সাথে লড়াই।

২. পরিবার থেকে বাঁধা।

৩. বন্ধু বান্ধব ও সহকর্মীদের বিরোধীতা।

৪. রুযি-রোযগারে হারাম থেকে বেঁচে থাকার সংগ্রাম।

·         রুকনিয়াতের শপথে সময় আল্লাহকে সাক্ষী রেখে আল্লাহর বান্দাদের সামনে ঘোষণা করতে হয়ঃ

﴿قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ﴾

“আমার নামায, আমার ইবাদত, আমার হায়াত ও আমার মওত আল্লাহর রাব্বুল আলামীনের জন্য।”

·         একজন রুকন যখনই এই ঘোষনা দেন, তখনই পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়। এই ঘোষণা কেবল মুখে দেয়া হলো? না কার্যকরী ঘোষনা তার পরীক্ষা আল্লাহ নেন। তিনি বলেছেনঃ

﴿أَحَسِبَ النَّاسُ أَن يُتْرَكُوا أَن يَقُولُوا آمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُونَ﴾﴿وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ ۖ فَلَيَعْلَمَنَّ اللَّهُ الَّذِينَ صَدَقُوا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِينَ

“মানুষ কি এ হিসাব করে যে, ‘ঈমান এনেছি’ দাবী করার পর বিনা পরীক্ষায় তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে? তাদের পূর্ববর্তীদেরকেও আমি পরীক্ষা করেছি। (ঈমান এনেছি) বলার মধ্যে কারা সত্যবাদী ও কারা মিথ্যাবাদী তা আল্লাহ অবশ্যই জেনে নিবেন।” (সূরা আল আনকাবুতঃ ২-৩)

·         আল্লাহ কিভাবে পরীক্ষা করেন

·         আল্লাহ কিভাবে পরীক্ষা করবেন, সে সম্পর্কে সূরা আল বাকারাহঃ আয়াত ১৫৫ তে বলা হয়েছেঃ

﴿وَلَنَبْلُوَنَّكُم بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ﴾

“আমি অবশ্যই ভয়, ক্ষুধা, জান ও মালের ক্ষতি এবং ফসলাদির আয় রোযগারের কমতি দ্বারা তোমাদেরকে পরীক্ষা করব।”

·         উপরোক্ত আয়াতে বর্ণিত পরীক্ষার ব্যাপারে জামায়াতের রুকনদের কম-বেশী অভিজ্ঞতা রয়েছে।

·         যারা উপরোক্ত পরীক্ষা সমূহের কথা জেনেও এই পথে আসার সাহস করে, তারা পরীক্ষা আসলে ধৈর্য ধারণ করতে হিম্মত পায়। তখন তারা ঘাবড়ায় না। বরং আল্লাহর উপর ভরসা করে মযবুত থাকার চেষ্টা করে। যা কুরআনে বলা হয়েছেঃ

﴿وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ﴾﴿الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ

“ঐ সব ধৈর্যশীলকে সুসংবাদ দাও। যারা মুসিবতের সময় বলে যে আমরা তো আল্লাহর জন্য। আর তাঁর কাছেই আমরা ফিরে যাব।” (সূরা আল বাকারাহঃ ১৫৫-১৫৬)

·         যারা আল্লাহর উপর ভরসা করে মযজুবত মনোবল দেখাবেন, তাদের সম্পর্কে পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছেঃ

﴿أُولَٰئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ ۖ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ

“এরাই ঐসব লোক যাদের উপর তাদের রবের পক্ষ থেকে বিরাট অনুগ্রহ ও রহমত বর্ষিত হয়েছে এবং এরাই হিদায়াতপ্রাপ্ত লোক।” (সূরা আল বাকারাহঃ ১৫৭)

·         কুরআনের এই আয়াত বুঝাচ্ছে, ধৈর্য ধারণ করতে পারা আল্লাহর বিরাট রহমত। আর এর বলা হলো আখেরাতে অফুরন্ত পুরস্কার। যে কথা বলা হয়েছে কুরআনে সুরা আলে ইমরানের ১৮৬ আয়াতে এ ভাবে:

﴿لَتُبْلَوُنَّ فِي أَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ وَلَتَسْمَعُنَّ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ وَمِنَ الَّذِينَ أَشْرَكُوا أَذًى كَثِيرًا ۚ وَإِن تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ ذَٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ﴾

·         আল্লাহ কেন এ পরীক্ষা করেন

·         “জামায়াতে ইসলামী আল্লাহর আইন ও সৎ লোকের শাসন কায়েম করতে চায়” এই ঘোষণার অর্থঃ আমাদের হাতে রাষ্ট্র ক্ষমতা আসলে আমরা আল্লাহর আইন কায়েম করবো।

·         আল্লাহর ওয়াদা হলো, এই কাজ করার যোগ্যতা যাদের মাঝে পাওয়া যাবে, তাদেরকে ক্ষমতা দেয়া হবে।

﴿وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِي ارْتَضَىٰ لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُم مِّن بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا﴾

·         এই যোগ্যতা সম্পন্ন একদল লোক তৈরী হলে আল্লাহ তার ওয়াদা পুরণ করবেন করবেন।  কিন্তু এই যোগ্যতা এমন কিছু গুণের সমষ্টি, যা পরীক্ষা ছাড়া সৃষ্টি হয় না।

·         সাহাবায়ে কিরাম, যারা বাড়ীঘর, জমিজমা, আত্মীয়স্বজন এমনকি নিজ জন্মভূমি ত্যাগ করে ১৩ বছরের কঠিন পরীক্ষা দিয়েছেন। তারপর আল্লাহ মদীনায় তাদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়েছেন।

·         রাষ্ট্র ক্ষমতা এমন জিনিস, যাতে রয়েছে ভোগ-বিলাস, ক্ষমতার অপব্যবহার, মানুষের উপর যুলুম ও শোষণ চালানো সুযোগ।

·         বিনা পরীক্ষায় যদি উন্নত মানকি চরিত্র অর্জন করা যেতো, তাহলে আল্লাহ সাহাবায়ে কিরাম থেকে অনর্থক পরীক্ষা নিতেন না।

·         দ্বীনকে বিজয়ী করার চূড়ান্ত এখতিয়ার আল্লাহর। কিন্তু তিনি এমন লোকদের হাতে বিজয় দেন না, যারা এই কাজের অযোগ্য।

·         জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে পরীক্ষা হয়। যেমনঃ জামায়াতে বাইতুলমাল, নির্বাচনী তহবিল, রিলিফের সম্পদ ইত্যাদি ব্যয় করার মাধ্যমে এবং বাতিল শক্তি কর্তৃক জামায়াতকে নির্মুল করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টার মাধ্যমে।

·         সূরা আল আহযাবের ২৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ

﴿مِّنَ ٱلْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌۭ صَدَقُوا۟ مَا عَـٰهَدُوا۟ ٱللَّهَ عَلَيْهِ ۖ فَمِنْهُم مَّن قَضَىٰ نَحْبَهُۥ وَمِنْهُم مَّن يَنتَظِرُ ۖ وَمَا بَدَّلُوا۟ تَبْدِيلًۭا﴾ 

“ঈমানদাদের মধ্যে এমন লোক রয়েছে যারা আল্লাহর নিকট কৃত তাদের ওয়াদাকে সত্য প্রমাণ করেছে। তাদের মধ্যে কতক জীবন দিয়েছে, আর কতক (জীবন দিবার জন্য প্রস্তুত হয়ে) সময়ের অপেক্ষায় আছে। তাদের আচরণ (ওয়াদা পালনের ব্যাপারে তাদের মনোভাব) পরিবর্তন করেনি।”

·         পরীক্ষায় ফেল হয় কেন

·         যখন কোন বিপদ আপদ আসে, তখন তারা পাশ করেন, যারা এটাকে পরীক্ষা মনে করে সতর্ক হয়ে যান।

·         পরীক্ষা আসবে, এটা জানা থাকলে মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকা যায়। সূরা আত তাগাবুনের ১১ নম্বর আয়াত বলা হয়েছেঃ

﴿مَآ أَصَابَ مِن مُّصِيبَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ ٱللَّهِ ۗ وَمَن يُؤْمِنۢ بِٱللَّهِ يَهْدِ قَلْبَهُۥ ۚ وَٱللَّهُ بِكُلِّ شَىْءٍ عَلِيمٌۭ﴾

“কোন বিপদই আল্লাহর অনুমতি ছাড়া আসে না। যে আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে আল্লাহ তার দিলকে (এ অবস্থায়) হেদায়াত দান করেন। আর আল্লাহ তো সবকিছুই জানেন।”

·         সত্যিকার মুমিন বিপদে ঘাবড়ায় না। কারণ সে জানে এই বিপদ আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে এবং এর মাঝে কোন না কোন মঙ্গল রয়েছে।

·         পরীক্ষায় তারাই ফেল করে, যারা বিপদ আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে, এই কথা ভুলে যায়।

·         রুকন যখন তার পরীক্ষার এই পরিধি ভুলে যায়, তখন সে দায়িত্ব পালনে আর সক্রিয় থাকে না।তার প্রভাব পড়ে রিপোর্ট সংরক্ষণ, বৈঠকে উপস্থিতি ও দায়িত্ব পালনের সকল ক্ষেত্রে।

·         রুকন যখন তার পরীক্ষার কথা ভুলে যান, তখন তার জবাবদিহিতার ভাষায় টের পাওয়া যায়।তখন তিনি সংগঠনকে বিভিন্ন ভাবে দোষ দেন এবং নিজের পূর্বের পারফর্মেন্স ফলাও করে প্রকাশ করেন। অবস্থা এমন যে, তিনি সংগঠনের উপর পূর্বে যথেষ্ট অনুগ্রহ করেছেন।

·         কোন রুকনের যখন এমন অবস্থা হয়, তখন তিনি দ্বীনের এই পথে টিকে থাকা সম্ভব হয় না।তিনি ক্রমান্নয়ে পরীক্ষায় ফেল করতে থাকেন এবং এক সময় তার রুকনিয়াত বাতিল করতে হয়।

·         যে রুকন পরীক্ষা মনে করে নিজের অবস্থা সংগঠনকে অবগত করেন, সে রুকনের ব্যাপারে দায়িত্বশীল ভাইয়েরা দরদী হোন এবং তার সমস্যা সমাধানে যথাসাধ্য চেষ্টা করেন।

·         আল্লাহ বাছাই ও ছাঁটাই নীতি

·         হেদায়াত ও গোমরাহী আল্লাহর এখতিয়ার। যার মন মগজ হেয়াতের উপযোগী আল্লাহ তাকে হেদায়াতের নিয়ামত দান করেন।

·         হেদায়াতের নিয়ামত আল্লাহ যাতে সরিয়ে না নেন, সেজন্য আমাদের দোয়া শিক্ষা দেয়া হয়েছেঃ

﴿رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً ۚ إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ﴾

“হে আমাদের রব, তুমি আমাদরেকে হেদায়াত করার পর আমাদের দিলকে বাঁকা করে দিও না। তোমার পক্ষ থেকে আমাদরকে রহমত দান কর। প্রকৃত দাতা তো তুমিই।” (সূরা আলে ইমরানঃ ৮)

·         হেদায়াত নামক নিয়ামতের কদর করতে হবে। হেদায়াতের উপর টিকে থাকার জন্য সতর্ক থাকতে হবে। অবহেলার কারণে আল্লাহর ছাঁটাইয়ে যাতে না পড়ি, সেজন্য সাবধান হতে হবে। সূরা আশ শূরার ১৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ

﴿ٱللَّهُ يَجْتَبِىٓ إِلَيْهِ مَن يَشَآءُ وَيَهْدِىٓ إِلَيْهِ مَن يُنِيبُ﴾

“আল্লাহ যাকে চান তাকেই আপন করে নেন এবং তাকেই পথ দেখান যে তার দিকে মনোযোগী হয়।”

·         আল্লাহর বাছাই-এর প্রমাণ

·         আল্লাহর দ্বীনের পথে চলার জন্য আপনি বাছাইকৃত হয়েছেন কি না, তা প্রমানিত হয় বাস্তব জীবনের কর্ম তৎপরতায়। যাকে আল্লাহ বাছাই করেন, তার জন্য দ্বীনের পথে চলার সকল বাঁধা উপেক্ষা করার তাওফীক দান করেন।

·         যারা সকল সমস্যা ও আপদ বিপদে না দমে মৃত্যুকে পরওয়া না করে শাহাদাত কামনা করে মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় গিয়ে তদানিন্তন গোঠা আরবের জাহেলী শক্তির মুকাবিলা করতে একটি ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করলেন, তাদের সম্বোধন করে আল্লাহ বলেনঃ

﴿وَجَاهِدُوا فِي اللَّهِ حَقَّ جِهَادِهِ ۚ هُوَ اجْتَبَاكُمْ وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ﴾

“জিহাদের হক আদায় করে আল্লাহর পথে জিহাদ কর। তিনিই তোমাদের বাছাই করে নিয়েছেন। দ্বীনের মধ্যে তিনি তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা (বা কঠোরতা) চাপিয়ে দেননি। (সূরা আল হাজ্জ: ৭৮)

·         সাহাবায়ে কিরাম দ্বীনের জন্য যে কুরবানী দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহ তাদেরকে তাওফীক দিয়েছেন এবং তাদেরকে দ্বীনের জন্য বাছাই করে নিয়েছেন। ফলে তিনি তাদের কঠিন পথকে সহজ করে দিয়েছেন। যেমনটা বলা হয়েছে সূরা আল লাইল এর ৫-৭ আয়াতে:

﴿فَأَمَّا مَنْ أَعْطَىٰ وَٱتَّقَىٰ﴾﴿وَصَدَّقَ بِٱلْحُسْنَىٰ﴾﴿فَسَنُيَسِّرُهُۥ لِلْيُسْرَىٰ﴾

“তরে যে (আল্লাহর পথে) দান করেছে ও (আল্লাহর নাফরমানী থেকে) নিজকে বাঁচিয়েছে এবং যা ভাল তাকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে তার জন্য আমি সহজ পথে চলার সুযোগ করে দেব।

·         হে মাবুদ ছাঁটাই হওয়া থেকে হেফাজত কর

·         রুকনিয়াত কবুল করার মতো হিম্মত করতে পারা, এটা মনিব কর্তৃক আমাদের মধ্যে ইকামতে দ্বীনের জিহাদে জীবন উ’সর্গ করার জযবা প্রদানের ফসল।

·         রুকনিয়াতের শপথের মাধ্যমে কঠিন পথে নানা রকমের পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়, যা আমরা জেনেছি তাফহীমুল কুরআন সহ অন্যান্য ইসলামী সাহিত্য থেকে।

·         আমরা জান্নাতের কাংগাল হিসাবে আমাদের জান ও মালের বিনিময়ে জান্নাত পাওয়ার আশায় আমরা সচেতন ভাবে ও স্বেচ্ছায় আমাদের জান ও মাল আল্লাহর কাছে বিক্রি করেছি।

·         আমরা দুনিয়ার সীমাহীন উন্নতি আর সুখের মোহ ত্যাগ করেই এই পথে এসেছি।

·         আমরা আমাদের হায়াত ও মউত আল্লাহর জন্য উৎসর্গের ঘোষনা দিয়ে এই পথে এসেছে।বিধায় দুনিয়ার কোন সমস্যা আমাদের চলার পথে বাঁধা হতে পারে না।

·         আমাদের শপথের স্পীরিট অনুযায়ী দুনিয়ার কোন ঝামেলো যদি আমাদের চলার পথে বাঁধা হয়ে দাড়ায়, তাহলে বুঝতে হবে আমরা ছাঁটাই এর মুসিবতে পড়ে গেছি।

·         আমরা যদি বাছাইয়ের মধ্য বহাল থাকি, তাহলে কোন বাঁধাই সংকীর্ণতা বলে গণ্য হতে পারে না।

·         যখন মনে হবে আমরা এই ধরণের মুসিবতে পড়ে গেছি, তখন আল্লাহর সাথে সম্পর্কটাকে ঘনিষ্ট করার জন্য সচেষ্ট হতে হবে। আল্লাহ বলেনঃ

﴿نَحْنُ أَوْلِيَآؤُكُمْ فِى ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا وَفِى ٱلْـَٔاخِرَةِ ۖ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَشْتَهِىٓ أَنفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَدَّعُونَ﴾

“দুনিয়া ও আখিরাতে আমিই তোমাদের অভিভাবক। সেখানে (বেহেশতে) তোমরা যা চাইবে তাতো পাবেই এমনকি তোমাদের মনে যা ইচ্ছা করবে তাও পাবে।” (সূরা হা-মীম-আস সাজদাহঃ ৩১)

·         আল্লাহর দরবারে ধরণা দিতে থাকতে হবে, যেন তিনি আমাদেরকে তাঁর বাছাইকৃত বান্দাহদের মাঝে গন্য করেন এবং ছাঁটাই থেকে হেফাজত করেন।

·         রুকনদের মান বৃদ্ধির গুরুত্ব

·         যারা ক্ষমতায় গিয়েছেন এবং আছেন তার কাজ দ্বারা এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, ইসলামী আদর্শ অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করার কোন পরিকল্পনা তাদের নেই, এই যোগ্যতাও তাদের নেই। যার কারণে আল্লাহর আইন ও সৎলোকের শাসন প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নিতে হবে জামায়াতে ইসলামীকে। আর রুকনরা তাদের মান বৃদ্ধি করলে আল্লাহ সে দায়িত্ব পালনের ‍সুযোগ করে দেবেন।

·         দেশের মানুষ যদি রুকনদের আমল-আখলাক ও জনকল্যাণ মুলক কাজে ইসলামের বাস্তব নমুনা না দেখে, তাহলে জামায়াতের উপর তাদের আস্তা সৃষ্টি হবে না। আর জনগনের আস্তা সৃষ্টি না হলে খেদমতেরও সুযোগ তৈরী হবে না।

·         সৎ লোকের অভাব সবাই অনুভব করে। সৎ লোককে নেতৃত্ব দেয়ার কথাও আলোচিত হয়। কিন্তু সেই সৎ লোক দেয়ার দায়িত্ব জামায়াতকেই পালন করতে হবে।

·         তৃণমূলের সকল পর্যায়ে জামায়াতের নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে। জামায়াতের মতো ভাল সাংগঠনিক ব্যবস্থা যদি সৎ লোকের নেতৃত্ব উপহার দিতে না পারে, তাহলে দেশের ভবিষ্যত অন্ধকার।

·         রুকনদের মান বৃদ্ধির উপরিই দ্বীনের বিজয় ও দেশের ক্যঅণ নির্ভর করে।

    আল্লাহ আমাদরেকে দেশের ও দ্বীনের এই বিরাট চাহিদা পূরণের তাওফীক দিন।

 



Post a Comment

0 Comments