আলোচনাঃ রাসূলুল্লাহ সা. ও সাহাবীদের জীবন থেকে শিক্ষা
রাসূল কে?
§ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মানুষ যাতে জান্নাতে ফিরে যেতে
পারে, সেজন্য একটি পথ নির্দেশিকা দিয়েছেন। সেই পথ নির্দেশিকাকে বলা
হয় হেদায়াত।
§ মানুষের কাছে সর্বশেষ ও আপডেটেড হেদায়াত এসেছে যার মাধ্যমে, তিনি মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সা.
§ কুরআন হচ্ছেঃ হেদায়াতের লিখিত রূপ, আর প্রেকিটিক্যাল রূপ হচ্ছেনঃ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা.
§ হযরত আয়েশা রা. কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল,
রাসূলের জীবন চরিত কেমন ছিল? তিনি বলেছেনঃ তোমরা
কি কুরআন পড়নি। তার জীবন
ছিল কুরআন।
§ একটি দীর্ঘ হাদীসে এ কাহিনীটি বর্ণিত হয়েছেঃ
في قصة سعد بن هشام بن عامر حين قدم المدينة ، وأتى عائشة رضي الله
عنها يسألها عن بعض المسائل ، فقال فَقُلتُ : يَا أُمَّ
المُؤمِنِينَ! أَنبئِينِي عَن خُلُقِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَت : أَلَستَ تَقرَأُ
القُرآنَ ؟ قُلتُ: بَلَى. قَالَت: فَإِنَّ خُلُقَ نَبِيِّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيهِ وَسَلَّمَ كَانَ القُرآنَ
সাদ বিন হিশাম বিন আমর রা. যখন মদীনায় আগমন করলেন, তখন তিনি হযরত আয়েশা রা. এর নিকট গমন করলেন। তাকে নানাবিধ মাসআলা জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বলেন, আমি বললামঃ হে উম্মুল মুমিনীন, রাসূলুল্লাহ সা. এর জীবন চরিত সম্পর্কে আমাকে জানান। হযরত আয়শা বললেনঃ তুমি কি কুরআন পড়নি? আমি বললামঃ অবশ্যই পড়েছি। তিনি বললেনঃ নবী সা. জীবন চরিত কুরআনের মাঝে রয়েছে।
সাহাবী কারা?
§ সাহাবী আরবী শব্দ সুহবত শব্দের একটা রূপ। যার বাংলা হলো সাহচার্য।
§ ইসলামী পরিভাষায় সাহাবী বলতে রাসূল সা. এর সংগী সাথীদেরকে বুঝায়।
§ আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. সাহাবীর সংগা প্রসংগে বলেছেনঃ
إن الصحابية من لقي النبية صلى الله عليه وسلم مؤمنا به ومتعلل
الإسلام
সাহাবী সেই ব্যক্তি, যিনি রাসূল সা.
এর প্রতি ঈমান সহকারে তাঁর সাক্ষাৎ লাভ করেছেন এবং ইসলামের উপর মৃত্যু
বরণ করেছেন।
§ সাহাবীর কুরআনী পরিচয়ঃ
যারা কাফেরের ব্যাপারে বজ্র কঠোর আর নিজেদের ব্যাপারে রহম দিলঃ
﴿مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ اللَّهِ ۚ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ
عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ ۖ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا
يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِّنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا ۖ سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِم
مِّنْ أَثَرِ السُّجُودِ ۚ ذَٰلِكَ مَثَلُهُمْ فِي التَّوْرَاةِ ۚ وَمَثَلُهُمْ
فِي الْإِنجِيلِ كَزَرْعٍ أَخْرَجَ شَطْأَهُ فَآزَرَهُ فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوَىٰ
عَلَىٰ سُوقِهِ يُعْجِبُ الزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ ۗ وَعَدَ
اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنْهُم مَّغْفِرَةً
وَأَجْرًا عَظِيمًا﴾
মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল৷ আর যারা তাঁর
সাথে আছে তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে আপোষহীন এবং নিজেরা পরস্পর
দয়া পরবশ৷ তোমরা যখনই দেখবে তখন তাদেরকে চেহারায় সিজদার
চিহ্ন বর্তমান যা দিয়ে তাদেরকে আলাদা চিনে নেয়া যায়৷ তাদের
এ পরিচয় তাওরাতে দেয়া হয়েছে৷ আর ইনযীলে তাদের উপমা পেশ
করা হয়েছে এই বলে যে, একটি
শস্যক্ষেত যা প্রথমে অঙ্কুরোদগম ঘটালো৷ পরে তাকে শক্তি যোগালো তারপর তা শক্ত ও
মজবুত হয়ে স্বীয় কাণ্ডে ভর করে দাঁড়ালো৷ যা কৃষককে খুশী করে কিন্তু কাফের তার
পরিপুষ্টি লাভ দেখে মনোকষ্ট পায়৷ এ শ্রেণীর লোক যারা ঈমান আনয়ন করছে এবং সৎকাজ
করেছে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও বড় পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। (সূরা আল ফাতহঃ ২৯)
যাদেরকে অনুসরণে আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া যায়ঃ
﴿وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ
وَالْأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ
وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ
خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ۚ ذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ﴾
মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে থেকে যারা সবার
আগে ঈমানের দাওয়াত গ্রহণ করার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে এবং যারা পরে নিষ্ঠা সহকারে
তাদের অনুসরণ করছে আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারা আল্লাহর প্রতি
সন্তুষ্ট হয়েছে৷ আল্লাহ তাদের জন্য এমন বাগান তৈরী করে রেখেছেন যার নিম্নদেশে
ঝরণাধারা প্রবাহিত হবে এবং তারা তার মধ্যে থাকবে চিরকাল৷ এটাই মহা সাফল্য। ( সূরা আত তাওবাঃ
১০০)
যাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট এবং যারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টঃ
﴿إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أُولَٰئِكَ
هُمْ خَيْرُ الْبَرِيَّةِ﴾ ﴿جَزَاؤُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِي مِن
تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ۖ رَّضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ
وَرَضُوا عَنْهُ ۚ ذَٰلِكَ لِمَنْ خَشِيَ رَبَّهُ﴾
যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তারা
নিশ্চিত ভাবে সৃষ্টির সেরা৷ তাদের পুরষ্কার রয়েছে তাদের রবের কাছে
চিরস্থায়ী জান্নাত, যার নিম্নদেশে ঝরণাধারা প্রবাহিত৷ সেখানে
তারা চিরকাল থাকবে৷ আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট৷
এসব সে ব্যক্তির জন্য যে তার রবকে ভয় করে৷ (সূরা আল বাইয়্যিনাহঃ
৬,৭)
§ আর হাদীসের বক্তব্য হচ্ছেঃ
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بن مسعود رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ
النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِي،
ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ يَجِيءُ
أَقْوَامٌ تَسْبِقُ شَهَادَةُ أَحَدِهِمْ يَمِينَهُ، وَيَمِينُهُ
شَهَادَتَهُ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত,
রাসূল সা. বলেছেনঃ আমার উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম
লোক হচ্ছে আমার যুগের মানুষেরা। তারপর তার পরের যুগের মানুষেরা, তারপর তার পরের
যুগের মানুষেরা। তারপর এমন একদল লোকের আবির্ভাব
হবে, যাদের কসম হবে তাদের সাক্ষ্যের অগ্রগামী। তাদের কাছে সাক্ষী চাওয়ার আগেই
তারা সাক্ষ্য দেবেন।
وَعَن عمر بن الْخطاب قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: سَأَلْتُ رَبِّي عَنِ اخْتِلَافِ أَصْحَابِي
مِنْ بَعْدِي فَأَوْحَى إِلَيَّ: يَا مُحَمَّدُ إِنَّ أَصْحَابَكَ عِنْدِي
بِمَنْزِلَةِ النُّجُومِ فِي السَّمَاءِ بَعْضُهَا أَقْوَى مِنْ بَعْضٍ وَلِكُلٍّ
نُورٌ فَمَنْ أَخَذَ بِشَيْءٍ مِمَّا هُمْ عَلَيْهِ مِنِ اخْتِلَافِهِمْ فَهُوَ
عِنْدِي عَلَى هُدًى قَالَ: وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: «أَصْحَابِي كَالنُّجُومِ فَبِأَيِّهِمُ اقْتَدَيْتُمْ اهْتَدَيْتُمْ
উমার ইবনুল খত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা.-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ আমি আমার
বরকে আমার মৃত্যুর পর আমার সাহাবীদের মধ্যে মতবিরোধ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি
ওহীর মাধ্যমে আমাকে জানিয়ে দিলেন, হে মুহাম্মাদ! আমার নিকট
তোমার সাহাবীদের মর্যাদা হলো আকাশের তারকারাজির ন্যায়। যার একটি আরেকটি থেকে অধিক উজ্জ্বল। অথচ প্রত্যেকটির মধ্যে আলো রয়েছে। এরূপই
আমার সাহাবীগণ। অতএব তাদের মতভেদ হতে যে কোন লোক কোন একটি অভিমত গ্রহণ করবে, সে আমার সঠিক
পথের উপর প্রতিষ্ঠিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেছেন, আমার
সাহাবীগণ হলেন তারকারাজির মতো। অতএব তোমরা
তাদের যে কাউকে অনুসরণ করবে হিদায়াত পাবে। (রযীন)
§ সাহাবী হচ্ছেন তারাঃ
-
যারা রাসূল
সা.কে দেখেছেন বা সাক্ষাৎ লাভ করেছেন, তার উপর ঈমান
এনেছেন এবং ঈমানের উপর
মৃত্যু বরণ করেছেন।
-
যারা জান্নাতের
পথ সম্পর্কে নবী সা. থেকে
সরাসরি নির্দেশিকা গ্রহণ করেছেন।
-
যারা রাসূলের
পরিচালিত আন্দোলনের জনশক্তি বা ম্যানপাওয়ার
ছিলেন।
-
যারা রাসূলকে
ভালবেসেছেন, বিশ্বাস করেছেন, তার জন্য
নিজেদের সর্বস্ব ত্যাগ করেছেন। এমন কি নিজের জন্মভূমি
ত্যাগ করে চিরজীবনের জন্য
মদীনায় চলে গেছেন।
-
যাদেরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তার দ্বীনের কাজে জন্য বাছাই করেছেনঃ
﴿هُوَ اجْتَبَاكُمْ وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ
حَرَجٍ﴾
তিনি নিজের কাজের জন্য তোমাদেরকে বাছাই করে নিয়েছেন এবং দীনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোনো সংকীর্ণতা আরোপ করেননি৷
রাসূল-এর সাথে আমাদের সম্পর্ক কি?
§ রাসূল আমাদের জন্য হচ্ছেনঃ আদর্শ
﴿لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا﴾
আসলে তোমাদের জন্য আল্লাহর রসূলের মধ্যে
ছিল একটি উত্তম আদর্শ এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে আল্লাহ
ও শেষ দিনের আকাঙ্ক্ষী এবং বেশী করে আল্লাহকে স্মরণ করে৷ (সূরা আল আহযানঃ ২১)
§ রাসূল হচ্ছেঃ আমাদেরকে জান্নাতের পথ দেখিয়ে দেয়ার গাইড
﴿يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا
وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا﴾﴿وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُّنِيرًا﴾
হে নবী! আমি
তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষী বানিয়ে, সুসংবাদদাতা
ও ভীতি প্রদর্শনকারী করে আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে
আহ্বানকারীরূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপ হিসেবে। (আল আহযাবঃ ৪৫-৪৬)
§ রাসূল হচ্ছেন তিনি, যার প্রতিটি
কথা মানতে হয়, যা আদেশ করেন-তা করতে হয়,
যা নিষেধ করেন-তা ছাড়তে হয়।
﴿وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا
ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ﴾
রসূল যা কিছু তোমাদের দেন তা গ্রহণ করো
এবং যে জিনিস থেকে তিনি তোমাদের বিরত রাখেন তা থেকে বিরত থাকো৷ আল্লাহকে ভয় করো। (সূরা হাশরঃ ৭)
§ রাসূল হচ্ছেন তিনি, যার আনুগত্য
করতে হয় নিঃশর্তভাবেঃ
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا
الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْ ۖ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ
فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ
الْآخِرِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا﴾
হে ঈমানগারগণ ! আনুগত্য করো আল্লাহর এবং
আনুগত্য করো রসূলের আর সেই সব লোকের যারা তোমাদের মধ্যে দায়িত্ব ও ক্ষমতার
অধিকারী৷ এরপর যদি তোমাদের মধ্যে কোন ব্যাপারে বিরোধ দেখা দেয় তাহলে তাকে আল্লাহ ও
রসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও৷ যদি তোমরা যথার্থই আল্লাহ ও পরকালের
ওপর ঈমান এনে থাকো ৷ এটিই একটি সঠিক কর্মপদ্ধতি এবং পরিণতির দিক দিয়েও এটিই
উৎকৃষ্ট৷ (সূরা আন
নিসাঃ ৫৯)
§ মুহাম্মদ সা. শেষ নবীঃ
﴿مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَٰكِن
رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ
عَلِيمًا﴾
(হে লোকেরা!) মুহাম্মাদ তোমাদের পুরুষদের মধ্য থেকে
কারোর পিতা নয় কিন্তু সে আল্লাহর রসূল এবং শেষ নবী আর আল্লাহ সব জিনিসের জ্ঞান
রাখেন৷ (সূরা আল আহযাবঃ ৪০)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى
الله عليه وسلم قَالَ إِنَّ مَثَلِي وَمَثَلَ الأَنْبِيَاءِ مِنْ قَبْلِي كَمَثَلِ
رَجُلٍ بَنَى بَيْتًا فَأَحْسَنَهُ وَأَجْمَلَهُ، إِلاَّ مَوْضِعَ لَبِنَةٍ مِنْ
زَاوِيَةٍ، فَجَعَلَ النَّاسُ يَطُوفُونَ بِهِ وَيَعْجَبُونَ لَهُ، وَيَقُولُونَ
هَلاَّ وُضِعَتْ هَذِهِ اللَّبِنَةُ قَالَ فَأَنَا اللَّبِنَةُ، وَأَنَا خَاتِمُ
النَّبِيِّينَ.
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
নবী সা. বলেন, আমি এবং আমার পূর্ববর্তী
নবীগণের অবস্থা এরূপ, এক ব্যক্তি যেন একটি ভবন নির্মাণ করল;
ইহাকে সুশোভিত ও সুসজ্জিত করল, কিন্তু এক
কোনায় একটি ইটের জায়গা খালি রয়ে গেল। অতঃপর লোকজন ইহার চারপাশে ঘুরে বিস্ময়ের সহিত
বলতে লাগল ঐ শূন্যস্থানের ইটটি লাগানো হল না কেন? নবী সা.
বলেন, আমিই সেই ইট। আর আমিই সর্বশেষ নবী। (বুখারী)
§ মানুষের সাথে মানুষ বেয়াদবী করলে সেটা হয় নিছক বেয়াদবী। কিন্তু রাসূলের সাথে বিয়াদবী মানে-ঈমান চলে যায়। কাফের হয়ে যায়।
§ পৃথিবীর সকল মানুষের চেয়ে যাকে বেশী ভালবাসতে হবে, তিনি হলেন রাসূল মুহাম্মদ সা.
عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " لاَ
يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ
وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ ".
হযরত আনাস রা.থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সা. বলেছেনঃ তোমাদের কেহই ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবেনা, যতক্ষণ না আমি তাদের কাছে প্রিয় না হবে তাদের পিতামতা থেকে এবং তাদের সন্তানদের থেকে এবং সকল মানুষের থেকে।
সাহাবীদের সাথে আমাদের সম্পর্ক কি?
§ সাহাবীরা হলেন, রাসূল এবং আমাদের
মাঝে একটা ব্রীজ বা সিড়ি।
§ রাসূল সা. বলেছেনঃ আমার সাহাবীরা হচ্ছে,
আকাশের এক একটা তারকা। যদি তোমরা তাদের কারো অনুসরণ করো,
তাহলে তোমরা হেদায়াত প্রাপ্ত হবে।
§ সাহাবীকে যদি আমরা না পাই, তাহলে আমরা
কুরআন পাবো না, হাদীস পাবো না, ইসলাম পাবো
না।
§ অতএব, তারা হচ্ছেন আমাদের জন্য হিরো।
রাসূলের জীবন থেকে শিক্ষা-১
§ নেতৃত্বের জন্য প্রয়োজন সমাজ সেবাঃ হিলফুল ফুজুল।
রাসূলের জীবন থেকে শিক্ষা-২
§ নেতৃত্বের জন্য প্রয়োজন নৈতিকতার মাধ্যমে মানুষের আস্থাভাজন হওয়াঃ আল আমীন, আস সাদিক, হাজারে আসওয়াদ।
রাসূলের জীবন থেকে শিক্ষা-৩
§ সমাজ পরিবর্তনের কাজ করতে গেলে বাঁধা আসবেইঃ ভোরের সাফা।
রাসূলের জীবন থেকে শিক্ষা-৪
§
আন্দোলনের জন্য চাই লক্ষ্যের পানে অবিচলঃ আবু তালিবের
নিবেদন।
يا عماه والله لو وضعوا الشمس في يميني والقمر في يساري على أن أترك
هذا الأمر ما تركته حتى يظهره الله أو أهلك دونه.
হে আমার চাচা আল্লাহর কসম তারা যদি আমার ডান হাতে সূর্য আর বাম হাতে চন্দ্র রেখে দেয় এ কর্ম ছেড়ে দেয়ার শর্তে তবুও আমি তা পরিত্যাগ করবো না। যতক্ষণ পর্যন্ত তাকে আল্লাহ বিজয়ী না করবে কিংবা তাতে আমিই ধ্বংস না হয়ে যায়।
রাসূলের জীবন থেকে শিক্ষা-৫
§
আন্দোলনে করতে গেলে শারিরিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়ঃ তায়েফের
ঘটনা।
-
১০ হিজরীর
ঘটনা। শবেমাত্র শিয়াবে আবি তালিবের অবরোধ শেষ
হয়েছে। রাসূল ও তার সাথীরা দীর্ঘ কয়েক বছর চরম দূর্ভোগের মাঝ সময় কাটান। এমতাবস্থায়
রাসূলের স্ত্রী আর চাচা ইনতিকাল করেন।
-
মক্কাবাসীরা
রাসূলের দাওয়াত কবুল না করায় রাসূলের তায়েফ গমন করলেন, সেখানে বনী সাকীফ গোত্রকে দাওয়াত দিতে। সাথে যায়েদ ইবনে হারেস। সেখানথেকে নির্যাতিত
হয়ে ফিরলেন।
-
রাসূল সা.
একটি বাগানে আশ্রয় নিয়ে দোয়া করলেনঃ
হে আল্লাহ! আমি শুধু তোমার কাছে আমার অসহায়ত্ব ও অক্ষমতা এবং মানুষের দৃষ্টিতে
নিজের অমর্যাদা ও মূল্যহীনতার অভিযোগ করছি। হে সর্বাধিক দয়ালূ ও করুণাময়। তুমি সকল
দূর্বলদের রব। আমার রবও তুমিই। তুমি আমাকে কার হাতে ছেড়ে দিচ্ছো? এমনকোন অপরিচিতের হাতে কি যে আমার সাথে কঠোর আচরণ করবে? কিংবা এমন কোন দুশমনের হাতে কিক যে আমার বিরুদ্ধে জয় লাভ করবে? তুমি যদি আমার প্রতি অসন্তুষ্ট না হও, তাহলে আমি কোন
বিপদের পরওয়া করি না। তবে তোমার নিরাপত্তা ও কল্যাণ ভাল করলে সেটা হবে আমার জন্য বেশী
প্রশস্ততা। আমি আশ্রয় চাআ তোমার সত্তার সেই নুরের যা অন্ধকারকে আলোকিত এবং দুনিয়া ও
আখেরাতের ব্যাপার সমুহের পরিশুদ্ধ করে। তোমার গযব যেন আমার উপর নাযিল না হয় তা থেকে
তুমি আমাকে রক্ষা করো এবং আমি যেন তোমার ক্রোধ ও তিরস্কারের যোগ্য না হই। তোমার মর্জিতেই
আমি সন্তুষ্ট যেন তুমি আমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাও। তুমি ছাড়া আর কোন জোর বা শক্তি
নেই।”
-
কারনুল মানাযিল
নামক স্থানে মেষের ছায়ার মতো অনুভব। হযরত জিব্রাইলের পাহাড়ের ব্যবস্থাপক ফেরেশতাসহ
আগমন এবং তার উক্তি- “আপনার কাওম আপনাকে যে জবাব দিয়েছে আল্লাহ তা শুনেছেন। এই তো আল্লাহ
পাহাড়ের ব্যবস্থাপক ফেরেশতাকে পাঠিয়েছেন। আপনি যা ইচ্ছা তাকে নির্দেশ দিতে পারেন।“
-
পাহাড়ের
ফেরেশতার উক্তি- “আপনি যদি আদেশ দেন তাহলে দুই দিকের পাহাড় এই সব লোকদেও উপর চাপিয়ে
দেই।”
- রাসূল সা. জবাবে বললেন, “না, আমি আশা করি আল্লাহ তাদের বংশে এমন সব লোকক সৃষ্টি করবেন, যারা এক ও লা-শরীক আল্লাহর দাসত্ব করবে।”
রাসূলের জীবন থেকে শিক্ষা-৬
§
নেতাকে অধীনস্তদের প্রতি হতে হয় রহমদিলঃ
একজন সাহাবীর রোযা ভংগের ঘটনা-
﴿فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللَّهِ لِنتَ لَهُمْ ۖ وَلَوْ كُنتَ
فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ ۖ فَاعْفُ عَنْهُمْ
وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ ۖ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ
عَلَى اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ﴾
( হে নবী!) এটা আল্লাহর বড়ই অনুগ্রহ যে, তোমার
ব্যবহার তাদের প্রতি বড়ই কোমল৷ নয়তো যদি তুমি রুক্ষ স্বভাবের বা কঠোর চিত্ত হতে,
তাহলে তারা সবাই তোমার চার পাশ থেকে সরে যেতো ৷ তাদের ক্রটি ক্ষমা
করে দাও৷ তাদের জন্য মাগফিরাতে দোয়া করো এবং দীনের ব্যাপারে বিভিন্ন পরামর্শে
তাদেরকে অন্তরভুক্ত করো৷ তারপর যখন কোন মতের ভিত্তিতে তোমরা স্থির সংকল্প হবে তখন
আল্লাহর ওপর ভরসা করো৷ আল্লাহ তাদেরকে পছন্দ করেন যারা তাঁর ওপর ভরসা করে কাজ
করে। (আলে ইমরানঃ
১৫৯)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى
النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ إِنَّ الأَخِرَ وَقَعَ عَلَى امْرَأَتِهِ
فِي رَمَضَانَ. فَقَالَ " أَتَجِدُ مَا تُحَرِّرُ رَقَبَةً ".
قَالَ لاَ. قَالَ " فَتَسْتَطِيعُ أَنْ تَصُومَ شَهْرَيْنِ
مُتَتَابِعَيْنِ ". قَالَ لاَ. قَالَ " أَفَتَجِدُ مَا تُطْعِمُ
بِهِ سِتِّينَ مِسْكِينًا ". قَالَ لاَ. قَالَ فَأُتِيَ النَّبِيُّ صلى
الله عليه وسلم بِعَرَقٍ فِيهِ تَمْرٌ ـ وَهُوَ الزَّبِيلُ ـ قَالَ "
أَطْعِمْ هَذَا عَنْكَ ". قَالَ عَلَى أَحْوَجَ مِنَّا مَا بَيْنَ
لاَبَتَيْهَا أَهْلُ بَيْتٍ أَحْوَجُ مِنَّا. قَالَ " فَأَطْعِمْهُ
أَهْلَكَ ".
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
এক ব্যক্তি নবী সা. এর কাছে এসে বলল, এই হতভাগা স্ত্রী সহবাস করেছে রমজানে। তিনি
বললেনঃ তুমি কি একটি গোলাম আজাদ করতে পারবে? লোকটি বলল,
না। তিনি বললেনঃ তুমি কি ক্রমাগত দু’মাস সিয়াম পালন করতে পারবে?
লোকটি বলল, না। তিনি বললেনঃ তুমি কি ষাটজন
মিসকীন খাওয়াতে পারবে? সে বলল, না।
এমতাবস্থায় নবী সা. এর নিকট এক ঝুড়ি খেজুর এল। নবী সা. বললেনঃ এগুলো তোমার তরফ থেকে লোকদেরকে আহার করাও। লোকটি বলল, আমার চাইতেও বেশী অবাবগ্রস্থ কে? অথচ মদিনার উভয় লাবার অর্থাৎ হাররার মধ্যবর্তী স্থলে আমার পরিবারের চাইতে অধিক অভাবগ্রস্থ কেউ নেই। নবী সা. বললেনঃ তাহলে তোমার পরিবারকেই খাওয়াও।
রাসূলের জীবন থেকে শিক্ষা-৭
§
নেতাকে হতে হয় নীতির প্রশ্নে আপোষহীনঃ
একজন মহিলার চুরির ঘটনা-
عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها أَنَّ امْرَأَةً مِنْ بَنِي
مَخْزُومٍ سَرَقَتْ، فَقَالُوا مَنْ يُكَلِّمُ فِيهَا النَّبِيَّ صلى الله عليه
وسلم فَلَمْ يَجْتَرِئْ أَحَدٌ أَنْ يُكَلِّمَهُ، فَكَلَّمَهُ أُسَامَةُ بْنُ
زَيْدٍ، فَقَالَ " إِنَّ بَنِي إِسْرَائِيلَ كَانَ إِذَا سَرَقَ فِيهِمُ
الشَّرِيفُ تَرَكُوهُ، وَإِذَا سَرَقَ الضَّعِيفُ قَطَعُوهُ، لَوْ كَانَتْ
فَاطِمَةُ لَقَطَعْتُ يَدَهَا ".
আয়িশা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মাখযুম গোত্রের জনৈকা মহিলা চুরি করেছিল। তখন তারা বলল, দেখত, এ ব্যাপারে কে নবী সা. এর সাথে কথা বলতে পারবে? কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ-ই কথা বলার সাহস করতে করল না। উসামা ইবনে যায়দ (রাঃ) এ ব্যাপারে তাঁর সাথে আলোচনা করলেন। তখন তিনি বললেন, বনী ইসরাইল তাদের সভ্রান্ত পরিবারের কেউ চুরি করলে তাকে ছেড়ে দিত এবং দূর্বল কেউ চুরি করলে তার হাত কেটে দিত। ফাতিমা হলেও অবশ্যই আমি তাঁর হাত কেটে ফেলতাম। (বুখারী)
সাহাবীদের জীবন থেকে শিক্ষা-১
§
ইসলামী আন্দোলনের পথ পরীক্ষার পথঃ
সাহাবায়ে কিরামদেরকে তেমনি ভাবে শক্ত
পরীক্ষা দিতে হয়েছে। যে সব পরীক্ষার মধ্যে ছিলঃ
১. বাড়ী থেকে বের করে দেয়া।
২. কাজ বন্ধ করে দেয়া।
৩. গালি গালাজ করা।
৪. শারিরিক নির্যাতন করা।
৫. মানসকি নির্যাতন করা।
৬. অর্থনৈতিক অবরোধ করা।
৭. সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা।
৮. জুলুম সহ্য করতে না পেরে হাবশায় হিজরত করা।
৯. পরণের কাপড় পর্যন্ত খোলে রাখা।
১০. হত্যা করা।
১১. দিশে থেকে বিতাড়িত হয়ে চিরজীবনের জন্য মদীনায় চলে আসা।
হাদীসে রাসূলঃ
আবু আবদিল্লাহ খাব্বাব ইবনে ইরত রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-আমরার রাসূল সা. এর নিকট মক্কার কাফেরদের বিরোধীতার ব্যাপারে অভিযোগ করলাম। তিনি তখন চাদর মাথার নীচে রেখে কাবার ছায়ায় শুয়েছিলেন। আমরা বললাম-আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য চাবেন না? আর আমাদের জন্য দোয়া করবেন না? তিনি বললেন, “তোমাদের আগের যামানার কোন মুমিনকে ধরে এনে মাটিতে গর্ত করে তাতে দাঁড় করানো হত। তারপর করাত এনে তার মাথার উপর রেখে তাকে দু’টুকরা করা হত, আর কাউকে লোহার চিরুণী দিয়ে শরীরের গোশত ও হাড় আঁচড়িয়ে ছিন্নভিন্ন করে দেয়া হত। তবুও কোন কিছু তাদের দ্বীনের রাস্তায় বাঁধ সাধতে পারেনি। আল্লাহর শপথ! এ দ্বীনকে তিনি পূর্ণভাবে কায়েম করে দেবেন যতক্ষণ না এমন সুদিন আসবে, যখন একজন লোক সানআ’ থেকে হাযরামাউত পর্যন্ত একাকী অনায়াসে (নির্ভয়ে) সফর করবে, তখন সে এক আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করবে না আর তার মেষপাল নেকড়ে ছাড়া আর কিছুর ভয় করবে না। কিন্তু তোমরা তাড়াহুড়া করছো। (বুখারী, আবু দাউদ)
সাহাবীদের জীবন থেকে শিক্ষা-২
§
কঠিন মুহুর্তে স্থির ও দৃঢ় থাকার
হযরত আবু বকর রা. এর জীবন থেকে-
§ নরম ও গরমের সংমিশ্রণঃ তার স্বভাবে ছিল পরস্পর বিরুধী ২টি গুণ। ১. সীমাহীন কোমলতা। ২. সীমাহীন দৃঢ়তা।
§ তিনি যে কোমল ছিলেন, এটা সবাই জানেন। আমরা আলোচনা করবো তার দৃঢ়তা সম্পর্কেঃ
১. রাসূলের ইনতেকালের কঠিন মুহুর্তে স্থির ও দৃঢ় থাকার মূর্ত প্রতীকঃ
عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ أَخْبَرَنِي أَبُو سَلَمَةَ، أَنَّ
عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ زَوْجَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَخْبَرَتْهُ
قَالَتْ أَقْبَلَ أَبُو بَكْرٍ ـ رضى الله عنه ـ عَلَى فَرَسِهِ مِنْ مَسْكَنِهِ
بِالسُّنْحِ حَتَّى نَزَلَ، فَدَخَلَ الْمَسْجِدَ، فَلَمْ يُكَلِّمِ النَّاسَ،
حَتَّى نَزَلَ فَدَخَلَ عَلَى عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ فَتَيَمَّمَ النَّبِيَّ
صلى الله عليه وسلم وَهُوَ مُسَجًّى بِبُرْدِ حِبَرَةٍ، فَكَشَفَ عَنْ وَجْهِهِ،
ثُمَّ أَكَبَّ عَلَيْهِ فَقَبَّلَهُ ثُمَّ بَكَى فَقَالَ بِأَبِي أَنْتَ يَا
نَبِيَّ اللَّهِ، لاَ يَجْمَعُ اللَّهُ عَلَيْكَ مَوْتَتَيْنِ، أَمَّا الْمَوْتَةُ
الَّتِي كُتِبَتْ عَلَيْكَ فَقَدْ مُتَّهَا. قَالَ أَبُو سَلَمَةَ فَأَخْبَرَنِي
ابْنُ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما ـ أَنَّ أَبَا بَكْرٍ ـ رضى الله عنه ـ خَرَجَ
وَعُمَرُ ـ رضى الله عنه ـ يُكَلِّمُ النَّاسَ. فَقَالَ اجْلِسْ. فَأَبَى.
فَقَالَ اجْلِسْ. فَأَبَى، فَتَشَهَّدَ أَبُو بَكْرٍ ـ رضى الله عنه ـ فَمَالَ
إِلَيْهِ النَّاسُ، وَتَرَكُوا عُمَرَ فَقَالَ أَمَّا بَعْدُ، فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ
يَعْبُدُ مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم فَإِنَّ مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم
قَدْ مَاتَ، وَمَنْ كَانَ يَعْبُدُ اللَّهَ فَإِنَّ اللَّهَ حَىٌّ لاَ يَمُوتُ،
قَالَ اللَّهُ تَعَالَى (وَمَا مُحَمَّدٌ إِلاَّ رَسُولٌ) إِلَى
(الشَّاكِرِينَ) وَاللَّهِ لَكَأَنَّ النَّاسَ لَمْ يَكُونُوا يَعْلَمُونَ
أَنَّ اللَّهَ أَنْزَلَ الآيَةَ حَتَّى تَلاَهَا أَبُو بَكْرٍ ـ رضى الله عنه ـ
فَتَلَقَّاهَا مِنْهُ النَّاسُ، فَمَا يُسْمَعُ بَشَرٌ إِلاَّ يَتْلُوهَا.
আবু জুহাইরি বলেন, আবূ সালামা
(রহঃ) বলেন, নবী সা. এর সহধর্মিণী আয়িশা (রাঃ) আমাকে বলেছেন,
(রাসূল সা. এর ওফাতের খবর পেয়ে) আবূ বক্র
(রাঃ) 'সুন্হ'-এ অবস্থিত তাঁর বাড়ি
থেকে ঘোড়ায় চড়ে চলে এলেন এবং নেমে মসজিদে প্রবেশ করলেন। সেখানে লোকদের সাথে কোন
কথা না বলে আয়িশা (রাঃ) এর ঘরে প্রবেশ করে রাসূল সা. এর দিকে
অগ্রসর হলেন। তখন তিনি একখানি 'হিবারাহ' ইয়ামানী চাঁদর দ্বারা আবৃত ছিলেন। আবূ বক্র (রাঃ) নবী সা. এর মুখমণ্ডল উম্মুক্ত করে তাঁর উপর ঝুকে পড়লেন এবং চুমু খেলেন, তারপর কাঁদতে লাগলেন এবং বললেন, ইয়া নবী আল্লাহ!
আমার পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আল্লাহ আপনার জন্য দুই মৃত্যু একত্রিত করবেন না।
তবে যে মৃত্যু আপনার জন্য নির্ধারিত ছিল তা তো আপনি কবুল করেছেন।
আবূ সালামা (রহঃ) বলেন, আবদুল্লাহ
ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমাকে খবর দিয়েছেন যে, (তারপর) আবূ বক্র
(রাঃ) বেরিয়ে এলেন। তখন উমর (রাঃ) লোকদের সাথে কথা বলছিলেন। আবূ বক্র (রাঃ) তাঁকে
বললেন, বসে পড়ুন। তিনি তা মানলেন না। আবূ বক্র (রাঃ) তাঁকে
বললেন, বসে পড়ুন , তিনি তা মানলেন না।
তখন আবূ বক্র (রাঃ) কালিমা-ই-শাহাদাতের দ্বারা (বক্তব্য) আরম্ভ করলেন। লোকেরা উমর
(রাঃ)-কে ছেড়ে তাঁর দিকে আকৃষ্ট হন। আবূ বক্র (রাঃ) বললেনঃ আম্মা বাদ, فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ يَعْبُدُ
مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم فَإِنَّ مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم قَدْ مَاتَ
(তোমাদের মধ্যে যারা মুহাম্মদ এর ইবাদত করতে, মুহাম্মদ
সত্যই ইন্তিকাল করেছেন। ) وَمَنْ كَانَ يَعْبُدُ اللَّهَ
فَإِنَّ اللَّهَ حَىٌّ لاَ يَمُوتُ (আর যারা মহান
আল্লাহর ইবাদত করতে, নিশ্চয়ই আল্লাহ চিরঞ্জিব, অমর।) এর পর তিনি সূরা আলে ইমরানের ১৪৪ নম্বর আয়াত
তিলাওয়াত করলেনঃ
وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ الرُّسُلُ ۚ
أَفَإِن مَّاتَ أَوْ قُتِلَ انقَلَبْتُمْ عَلَىٰ أَعْقَابِكُمْ ۚ وَمَن يَنقَلِبْ عَلَىٰ
عَقِبَيْهِ فَلَن يَضُرَّ اللَّهَ شَيْئًا ۗ وَسَيَجْزِي اللَّهُ الشَّاكِرِينَ
মুহাম্মাদ একজন রসূল ছাড়া তো আর কিছুই নয়৷
তার আগে আরো অনেক রসূলও চলে গেছে৷ যদি তিনি মারা যান বা নিহত হন, তাহলে কি
পেছনের দিকে ফিরে যাবে ? মনে রেখো, যে পেছনের দিকে ফিরে যাবে সে আল্লাহর কোন ক্ষতি করবে না, তবে যারা আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হয়ে থাকবে তাদেরকে তিনি পুরস্কৃত করবেন৷
(হাদীসের বর্ণানাকারী
সাহাবী বলছেন) আল্লাহর কসম, মনে হচ্ছিল
যেন আবূ বক্র (রাঃ)-এর তিলাওয়াত করার পূর্ব পর্যন্ত লোকদের জানাই ছিল না যে,
আল্লাহপাক এ আয়াত নাযিল করেছেন। এখনই যেন লোকেরা আয়াতখানি তার কাছ
থেকে পেলেন। প্রতিটি মানুষকেই তখন ঐ আয়াত তিলাওয়াত করতে শোনা গেল।
২. যাকাত অস্বীকারকারীদের সাথে যুদ্ধ ঘোষনা।
أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ لَمَّا تُوُفِّيَ
رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَكَانَ أَبُو بَكْرٍ ـ رضى الله عنه ـ
وَكَفَرَ مَنْ كَفَرَ مِنَ الْعَرَبِ فَقَالَ عُمَرُ ـ رضى الله عنه كَيْفَ
تُقَاتِلُ النَّاسَ، وَقَدْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم "
أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَقُولُوا لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ.
فَمَنْ قَالَهَا فَقَدْ عَصَمَ مِنِّي مَالَهُ وَنَفْسَهُ إِلاَّ بِحَقِّهِ،
وَحِسَابُهُ عَلَى اللَّهِ ". فَقَالَ وَاللَّهِ لأُقَاتِلَنَّ مَنْ
فَرَّقَ بَيْنَ الصَّلاَةِ وَالزَّكَاةِ، فَإِنَّ الزَّكَاةَ حَقُّ الْمَالِ،
وَاللَّهِ لَوْ مَنَعُونِي عَنَاقًا كَانُوا يُؤَدُّونَهَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ
صلى الله عليه وسلم لَقَاتَلْتُهُمْ عَلَى مَنْعِهَا. قَالَ عُمَرُ ـ رضى الله
عنه ـ فَوَاللَّهِ مَا هُوَ إِلاَّ أَنْ قَدْ شَرَحَ اللَّهُ صَدْرَ أَبِي بَكْرٍ
ـ رضى الله عنه ـ فَعَرَفْتُ أَنَّهُ الْحَقُّ.
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সা. এর ওফাতের পর আবূ বকর (রাঃ)
এর খিলাফতকালে আরবের কিছু সংখ্যক লোক মুরতাদ হয়ে যায়। তখন ‘উমর (রাঃ) [আবূ বকর
(রাঃ) কে লক্ষ্য করে] বললেন, আপনি (সে সব) লোকদের বিরূদ্ধে
কিভাবে যুদ্ধ করবেন (যারা সম্পূর্ণ ধর্ম ত্যাগ করেনি বরং যাকাত দিতে কস্বীকৃতি
জ্ঞাপন করেছে মাত্র)? অথচ রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেনঃ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ
বলার পূর্ব পর্যন্ত মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আদেশ আমাকে দেয়া হয়েছে, যে কেউ তা
বলল, সে তার সম্পদ ও জীবন আমার পক্ষ থেকে নিরাপদ করে নিল।
তবে ইসলামের বিধান লংঘন করলে (শাস্তি দেওয়া যাবে), আর
অন্তরের গভীরে (হৃদয়াভ্যন্তরে কুফরী বা পাপ লুকানো থাকলে এর) হিসাব-নিকাশ আল্লাহর
যিম্মায়।
আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম, তাদের বিরুদ্ধে নিশ্চয় আমি যুদ্ধ করবো যারা সালাত ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে, কেননা যাকাত হল সম্পদের উপর আরোপিত হক। আল্লাহর কসম, যদি তারা একটি মেষ শাবক যাকাত দিতেও অস্বীকার করে যা রাসূলুল্লাহ সা. এর কাছে তারা দিত, তাহলে যাকাত না দেওয়ার কারণে তাদের বিরুদ্ধে আমি অবশ্যই যুদ্ধ করবো। ‘উমর (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম, আল্লাহ আবূ বকর (রাঃ) এর হৃদয় বিশেষ জ্ঞানালোকে উদ্ভাসিত করেছেন বিধায় তাঁর এই দৃঢ়তা, এতে আমি বুঝতে পারলাম তাঁর সিদ্ধান্তই যথার্থ।
সাহাবীদের জীবন থেকে শিক্ষা-৩
§
নেতৃত্বের প্রতি সীমাহীন আস্তা ও বিশ্বাসঃ
হযরত আবু বকর রা. এর সিদ্দিক উপাধী ও মেরাজ এর ঘটনা-
عن عائشة رضي الله عنها قالت: لما أسري بالنبي صلى الله عليه وسلم إلى المسجد الأقصى؛ أصبح يتحدث الناس بذلك؛ فارتدَّ ناس ممن كان آمنوا به وصدقوه، وسعى رجال من المشركين إلى أبي بكر رضي الله عنه، فقالوا: هل لك إلى صاحبك يزعم أنه أُسري به الليلة إلى بيت المقدس؟ قال: أو قال ذلك؟ قالوا: نعم قال: لئن قال ذلك لقد صدق، قالوا: أو تصدقه أنَّه ذهب الليلة إلى بيت المقدس، وجاء قبل أن يصبح؟ فقال: نعم، إني لأصدقه ما هو أبعد من ذلك، أصدقه في خبر السماء في غدوة أو روحة. فلذلك سُمِّي أبا بكر الصديق رضي الله عنه
সাহাবীদের জীবন থেকে শিক্ষা-৪
§
দ্বীনের পথে পুরো সম্পদকে উজাড় করে দেয়াঃ
সাহাবায়ে কিরামদের সম্পদ উজাড় করে
দেয়ার উদাহরণ-
عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ، عَنْ أَبِيهِ،قَالَ سَمِعْتُ عُمَرَ بْنَ
الْخَطَّابِ، - رضى الله عنه - يَقُولُ أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه
وسلم يَوْمًا أَنْ نَتَصَدَّقَ فَوَافَقَ ذَلِكَ مَالاً عِنْدِي فَقُلْتُ
الْيَوْمَ أَسْبِقُ أَبَا بَكْرٍ إِنْ سَبَقْتُهُ يَوْمًا فَجِئْتُ بِنِصْفِ مَالِي
فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَا أَبْقَيْتَ لأَهْلِكَ
" . قُلْتُ مِثْلَهُ . قَالَ وَأَتَى أَبُو بَكْرٍ - رضى الله عنه -
بِكُلِّ مَا عِنْدَهُ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم "
مَا أَبْقَيْتَ لأَهْلِكَ " . قَالَ أَبْقَيْتُ لَهُمُ اللَّهَ
وَرَسُولَهُ . قُلْتُ لاَ أُسَابِقُكَ إِلَى شَىْءٍ أَبَدًا .
যায়েদ ইব্ন আস্লাম (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উমার ইব্নুল খাত্তাব (রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে দান করার নির্দেশ দেন। ঘটনাক্রমে সেদিন আমার কাছে মাল ছিল। আমি (মনে মনে) বলিঃ আজ আমি আবু বাক্র (রাঃ) এর চাইতে (দানে) অগ্রগামী হব, যদিও কোন দিন আমি দানে তার অগ্রগামী হতে পারিনি। তাই আমি আমার অর্ধেক সম্পদ নিয়ে আসি। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করেনঃ তুমি তোমার পরিবার-পরিজনদের জন্য কি রেখে এসেছ? আমি বলি, এর সম-পরিমাণ সম্পদ। উমার (রাঃ) বলেনঃ আর আবু বাক্র (রাঃ) আনলেন তার সমস্ত সম্পদ। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করেনঃ তুমি তোমার পরিবার-পরিজনদের জন্য কি রেখে এসেছ? তিনি বলেন, আমি তাদের জন্য আল্লাহ্ এবং তার রাসূলকে রেখে এসেছি। উমার (রাঃ) বলেনঃ তখন আমি বলিঃ আমি ভবিষ্যতে কোন দিন কোন ব্যাপারে অধিক ফযীলতের অধিকারী হওয়ার জন্য আপনার সাথে প্রতিযোগিতা করব না। (তিরমিযী)।
সাহাবীদের জীবন থেকে শিক্ষা-৫
§
সাহসের সাথে লক্ষ্য পানে এগিয়ে যাওয়াঃ
হযরত উমর রা. এর জীবন থেকে-
§ যার নেতৃত্বে ইসলামের প্রথম মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল মক্কা অভিমূখে ৪০ জন মুসলমান নিয়ে।
সাহাবীদের জীবন থেকে শিক্ষা-৬
§
গোলামের কাহিনীঃ
হযরত উমর রা. এর জীবন থেকে-
§ ফিলিস্তিন বিজয় উৎসব পালনে আমন্ত্রণ
সাহাবীদের জীবন থেকে শিক্ষা-৭
হযরত উমরের নিজ সন্তানের প্রতি শাস্তি
প্রদানের ঘটনা-
আমি একদিন মসজিদে নববীতে বসা ছিলাম। আরো বাহুলোক
হযরত ফারুকে আযমের কাছে বসা ছিল। তখন এক
যুবতী এসে আমীরুল মু'মিনীনকে সালাম দিল। তিনি সালামের জবাব দিয়ে জানতে চাইলেন, তোমার কিছু বলার আছে? সে বললো, হ্যা আমার পেটে জন্ম নেয়া এ বাচ্চাটি আপনার। তিনি বললেন, আমি তো তোমাকে চিনিই না। যুবতীটি কেঁদে ফেলে বললো, সন্তানটি
আপনার নয়, আপনার ছেলের। তিনি জানতে চাইলেন, হালাল
পথে, না হারাম পথে? সে বললো, আমার দিক থেকে হালাল পথে, কিন্তু তার পক্ষে থেকে
হারাম পথে। উমার (রা) ঘটনাটি পরিষ্কার করে
বলতে বললেন। সে বললোঃ বেশ কিছুদিন আগে আমি একদিন বনী নাজ্জারের এক বাগানের কাছ
দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন আপনার ছেলে আবু শাহমা মদ্যপ অবস্থায় আমার কাছে এসে তার
কামনা চরিতার্থের প্রস্তাব দিল এবং আমাকে জোর করে বাগানের দিকে টেনে নিয়ে বাসনা
চরিতার্থ করলো। আমি বেহুশ হয়ে
পড়েছিলাম। আমি এ ঘটনাটি গোপন রেখেছিলাম। এক সময় আমি পেটে বাচ্চার অস্তিত্ব টের
পেলাম । ফলে আমি অন্যত্র চলে গেলাম। সেখানে আমার এ শিশু জন্ম নিয়েছে। আপনি আমার ও
তার ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশিত বিধান প্রয়োগ করুন। খলিফা উমার (রা) সাথে সাথে ঘোষককে লোক জমায়েত
হবার ঘোষণা দিতে বললেন। মসজিদে লোক সমবেত
হলো। তিনি বললেন, আপনারা কেউ কোথাও যাবেন না, আমি এক্ষুণি আসছি। তারপর তিনি আমাকে বললেন, আপনি
আমার সাথে আসুন। সেখান থেকে তিনি ঘরে এসে
হেঁকে বললেন, আবু শাহমা কি ঘরে আছে? জবাবে
বলা হলো, সে আহার করতে বসেছে। তিনি ভিতরে ঢুকে বললেন, হে
আমার সন্তান! আহার সেরে নাও, এটাই হয়তো তোমার শেষ আহার।
ইবন আব্বাস (রা) বলেন, আমি দেখতে পেলাম যে, সাথে সাথে ছেলের চেহারা বিবর্ণ
হয়ে গেল এবং কাঁপতে কাঁপতে হাতের লোকমা পড়ে গেল। তিনি বললেন, হে আমার সন্তান!
বল তো আমি কে? সে বললো, আপনি আমার পিতা
ও আমীরুল মু'মিনীন। তিনি
বললেন, আমার কি তোমার আনুগত্য লাভের অধিকার আছে? সে বললো, হ্যাঁ, দু’ভাবে আপনি আনুগত্য লাভের অধিকারী। পিতা ও আমীরুল মু'মিনীন
হিসেবে। তখন তিনি বললেন, তোমার নবী ও তোমার পিতার দাবির প্রেক্ষিতে
এখন বল, তুমি কি ইহুদীদের পাল্লায় পড়ে মদ পান করেছো?
সে বললো, হ্যা, তবে আমি
তওবা করেছি। তিনি বললেন, আমার প্রিয় সন্তান! তুমি কি বনী
নাজ্জারের বাগানে গিয়েছিলে এবং সেখানে এক যুবতীর সাথে পাপাচারে লিপ্ত হয়েছিলে?
এ প্রশ্ন শুনে আবু শাহমা চুপ হয়ে গেল ও কাঁদতে লাগলো। তিনি বললেনঃ বেটা! লজ্জার কিছু নেই, সত্য বল। আল্লাহ সত্যবাদীকে ভালাবাসেন। সে ববললো, হ্যা, আমার দ্বারা তা
হয়েছে। তবে আমি সে জন্যে অনুতপ্ত হয়ে
তওবা করেছি। হযরত ফারুকে আযম (রা) সাথে
সাথে তাকে পাকড়াও করলেন এবং তার জামা ধরে টেনে মসজিদে নিয়ে গেলেন। আবু শাহমা তখন
কেঁদে কেঁদে বলছিলো, হে আমার পিতা! তরবারি দিয়ে আমাকে কেটে
টুকরো টুকরো করে ফেলুন, মানুষের সামনে নিয়ে আমাকে লজ্জা
দেবেন না। উমর (রা) তখন সূরা নূর এর আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ ﴿وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَائِفَةٌ مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ﴾ “আর তাদের দুজনের এ দণ্ড দানের সময় মুমিনদের একটি দল উপস্থিত থেকে তা
প্রত্যক্ষ করবে।” এবং জিজ্ঞেস করলেন, তুমি
কি এ আয়াত পড়নি।
অতঃপর উমার (রা) তাকে টেনে নিয়ে মসজিদে
নবীতে আসহাবে রাসূলের (সা) সামনে হাজির করলেন এবং বললেন, যুবতীটি সত্য বলেছে এবং আবু শাহমা তা স্বীকার করেছে। তারপর তিনি তাঁর দাস
আফলাহকে বললেন, একে শক্ত হাতে ধর এবং দোররা মার। এ কাজে
বিন্দুমাত্র শৈথিল্য দেখাবে না। আফলাহ কাঁদতে কাঁদতে ববললো, এ
কাজ আমি করতে পারবো না। তিনি বললেন, আফলাহ! আমার আনুগত্য
মানে রাসূলের (সা) আনুগত্য। তাই আমি যা
নির্দেশ দিই, তাই কর।
ইবন আব্বাস বলেন, তিনি আবু শাহমাকে দিয়ে তার জামা খোলালেন। তা দেখে সবাই জোরে জোরে কান্না জুড়ে দিলেন। আবু শাহমা সকাতরে ববললো, হে আমার পিতা! আমার প্রতি
দয়া করুন! উমারও কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, তোমার প্রতিপালক
তোমার ওপর রহম করুন। আমি তোমাকে এ জন্যেই দণ্ড দিচ্ছি, যেন
আমাদের মালিক তোমার ও আমার উভয়ের উপর দয়া করেন। তারপর তিনি আফলাহকে দোররা মারার নির্দেশ দিলেন।
সে মারা শুরু করলো। আবু
শাহমা করুণ স্বরে কাতরাতে লাগলো। আফলাহ
যখন সত্তর দোররায় পৌছালো তখন আবু শাহমা বললোঃ হে আমার | পিতা! আমাকে এক ঢোক পানি পান করান। তিনি বললেন, হে আমার
পুত্র! যদি আমাদের রব তোমাকে পবিত্র করেন তাহলে মুহাম্মাদ (সা) তোমকে হাওজে
কাওসারের পানি পান করাবেন। তারপর আর কখনো তোমার পিপাসা দেখা দেবে না।
তারপর তিনি আফলাহকে লক্ষ্য করে নির্দেশ
দিলেনঃ মারতে থাক। যখন আশি দোররায় পৌছলো, তখন আবু শাহমা বললোঃ আমার আব্বা! আসসালামু আলাইকা। উমার (রা) বললেন, ওয়া
আলাইকাস সালাম। যদি তোমার সাথে মুহাম্মদের (সা) দেখা হয় তাহলে তাকে আমার সালাম
পৌছিয়ে বলবে, আমি তাকে কুরআন পড়তে, তার
ওপর আমল করতে এবং তার দণ্ডবিধি বাস্তবায়ন করতে দেখে এসেছি। তারপর বললেনঃ আফলাহ
মারতে থাক। যখন নব্বই দোররা মারা হলো, তখন আবু শাহমা নিশ্ৰুপ
ও নিস্তেজ হয়ে গেল।
ইবন আব্বাস (রা) বলেনঃ রাসূলুল্লাহর (সা) সাহাবীগণ বললেন, যে কয় দোররা বাকি রয়েছে তা পরে মারুন। উমার (রা) বললেন? পাপের কাজে যখন বিলম্ব করা হয়নি তখন দণ্ডদানে বিলম্ব করা হবে কেন? এ সময় আবু শাহমার মা কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে এসে বলতে লাগলেন, বাকি দোররার প্রত্যেকটির বদলে আমি পায়ে হেঁটে হজ্ব করবো ও এত পরিমাণ সাদকা দিব। তিনি বললেনঃ হজ্ব ও সাদকা দণ্ডের বিনিময় হয় না। আফলাহকে তিনি ফের দোররা মারতে বললেন। শেষ দোররাটি যখন মারা হলো তখন আবু শাহমা চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। ফারুকে আযম তখন তার মাথাটি নিজের কোলে তুলে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললেনঃ সত্যের জন্যে তোর মৃত্যু হলো। তুই শেষ দণ্ডটিও নিয়ে মরেছিস। তোর বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, এমনকি তোর বাপও তোকে রক্ষা করতে পারলোনা।
সাহাবীদের জীবন থেকে শিক্ষা-৮
§
দুনিয়ার জীবনের চেয়ে আখেরাতকে প্রাধান্য দেয়াঃ
হযরত উমর ও হিমসের গভর্ণর সাঈদঃ
হযরত উমর সিরিয়া যাওয়ার পথে একবার হিমস প্রদেশে যাত্রা বিরতি করেন। তিনি হিমসের
জনগনের অবস্থা জানতে চাইলে তারা গভর্ণর সায়ীদ ইবনে আমর আল জুমাহিরা রা. সম্পর্কে গুরুতর
৪টি অভিযোগ পেশ করেন। সায়ীদ সম্পর্কে হযরত উমরের খুব উঁচু ধারণা ছিল। তিনি অভিযোগের
কথা শোনার পর হিমসবাসী ও সায়ীদকে একত্র করলেন। এর পর অভিযোগ সমূহ বলতে বললেন।
প্রথম অভিযোগ ছিলঃ
তিনি প্রত্যহ বিলম্বে অফিসে আসেন। সায়ীদ-এর উত্তরে বললেন ব্যক্তিগত বিষয় আমি বলা
পছন্দ করিনা, তবে খলিফার নির্দেশে বলতে হচ্ছে।
আমার ঘরে কাজের কোন ছেলে-মেয়ে নেই। প্রত্যহ সকালে পরিবারের সদস্যদের জন্য রুটি বানিয়ে
তা গরম করার জন্য কিছু সময় রাখতে হয়। এরপর অজু গোসল সেরে আসতে দেরী হয়।
দ্বিতীয় অভিযোগ ছিলঃ
রাতের বেলা গভর্ণরকে পাওয়া যায়না। তিনি জবাবে বলেন, আমি দিনকে রাষ্ট্রীয় কাজে আর রাতকে আল্লাহর ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট করেছি।
তৃতীয় অভিযোগ ছিলঃ
তিনি মাসে একদিন অফিসে অনুপস্থিত থাকেন। তিনি জবাব দিলেন, আমার কোন কাজের লোক নেই বলে মাসে একদিন বাজার করি। আর পরনের পোষাক ছাড়া আর কোন
পোষাক নেই বলে বাজার করে এসে তা পরিষ্কার করি এবং পোষাক শুকানো পর্যন্ত আমাকে অপেক্ষা
করতে হয়। তাই জোহরের পর ছাড়া অফিসে আসা সম্ভব হয়না।
চতূর্থ অভিযোগ ছিলঃ
মাঝে মধ্যে গভর্ণর অজ্ঞান হয়ে পড়েন, তখন তার
পাশের লোককেও চিনতে পারেননা। জবাবে তিনি বলেন, হে খলিফা!
কুরাইশরা যখন খাব্বার রা.কে নির্মম ভাবে ফাঁসি দিয়েছিল, আমি সে দিন ঐ জনসমুদ্রে ছিলাম। কিন্তু খাব্বাবকে কোন সাহায্য করতে পারিনি। যখন
আমার সেই দৃশ্য মনে হয় আমার মনে হয় আল্লাহ আমাকে মাফ করবেন না এবং এজন্য আমি আতংকিত
হয়ে পড়ি।
এ ঘটনার পরঃ
খলিফা মদীনা গিয়ে স্বর্ণ মুদ্রার ভান্ডার পাঠালেন উপটৌকন হিসাবে। উপটৌকন দেখে সাঈদের
স্ত্রী প্রথমত খুশী হলেন এবং বললেন যে এবার একটা চাকর রাখা সম্ভব হবে এবং ঘরের কিছু
আসবাবপত্র কিনা যাবে।
হযরত সাঈদ স্ত্রীকে বললেন,“তোমাকে এর চেয়ে উত্তম জিনিস
দিতে চাই। তিনি বললেন, এগুলো গরীবদের মাঝে বিলি করে আল্লাহকে
করজে হাসানা দিতে চাই।”
স্ত্রী বললেন, হ্যাঁ! তাই করুন। আল্লাহ নিশ্চয়ই
আমাদেরকে উত্তম জিনিস দান করবেন। হযরত সাঈদ অফিস ত্যাগ করার আগেই সবগুলো দান করে দিলেন।
একদাঃ
হযরত উমর রা. সাঈদের কাছে ১০০জন হত দরিদ্র লোকের তালিকা চাইলেন। সাইদ তালিকা দিলে তাতে দেখা গেল সাঈদের নামটিও রয়েছে। খলিফা ১০০০ দিনার তার জন্য উপটৌকন পাঠালেন। তা দেখে তিনি বললেন, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার স্ত্রী শুনে বললেন, খলিফা উমর কি ইনতিকাল করেছেন। তিনি বললেন, না তার চেয়ে বড় বিপদ। স্ত্রী বললেন, তাহলে কি মুসলিম বাহিনী কোথাও বিপদের শিকার হয়েছে। তিনি বললেন, না তার চেয়েও বিপদ। স্ত্রী বললেন, তাহলে কি? উত্তরে সাঈদ বললেন, আমার কাছে দুনিয়া এসেছে আখেরাত ধ্বংস করার জন্য। তাই তিনি সমস্ত অর্থ তখনই বিলিয়ে দিলেন।
সাহাবীদের জীবন থেকে শিক্ষা-৯
§
আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয়ঃ
হযরত উসমান ও আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয়ঃ
§ হযরত উসমানের উপাধি সমূহঃ
১. গনি-উসমান গনি।
২. আস সাবিকুনাল আউয়ালুন-প্রথমপর্বে ইসলাম গ্রহণকারী।
৩. যুন নুরাইন-দুই নূরের অধিকারী। রুকাইয়া ও উম্মে কলসুম
এর স্বামী।
৪.যুল হিজরাতাইন-দুইবার হিজরত করেন। প্রথমে হাবশায়, পরে মদীনায়। হযরত লুত আ. এর পর পরিবার
পরিজনসহ প্রথম হিজরতকারী।
৫. আশারায়ে মুবাশশারার ১জন।
৬. কাতিবে ওহী।
§ হযরত উমরের হাতে প্রথম বাইয়াত গ্রহণকারী। যিনি হযরত আবু বকরের মৃত্যুর সময়ে তিনি হযরত উমরকে
খলিফা মনোনীত করে যান, যে অঙ্গিকার নামাটির লেখক ছিলেন হযরত উসমান
রা.
§ সম্পদ বিতরণে ছিলেন অকৃপণঃ
১. বীরে রুমা-যা খরিদ করে মদীনার মুসলমানদের
জন্য ওয়াকফ করে দেন।
২. তাবুকের অভিযান-পুরো সৈন্যের এক তৃতীয়াংশের
খরচ বহন করেন। যাতে ছিল ৯শ উট, ৫০টি ঘোড়া, কোরচে করে ১ হাজার দিনার।
৩. একজন সায়িলের রাসূলের কাছে আগমন এবং হযরত উসমানের কাছে প্রেরণ।
একজন সাহাবীর নবীর কাছে সাহায্য চাওয়া ও হযরত উসমানে নিকট গমন-
সাহাবীদের জীবন থেকে শিক্ষা-১০
§
কিশোর জীবন থেকে দ্বীনের পথে চলাঃ
হযরত আলী রা. এর জীবন থেকে-
-
যিনি ছিলেন
সবচেয়ে কম বয়সে ঈমান গ্রহণকারী মুসলমানদের প্রথম।
-
হযরত আবু
বকর রা. এর আব্বা আবু কুহাফা হযরত আলীকে দেখলে বলতেনঃ
এই ছোকরারাই আমার ছেলেটাকে বিগড়ে দিয়েছে।
-
হিজরতের সময় আলীকে নিজের বিছানায় শুইয়ে রাসূল হিজরত করেন।
-
রাসূলের চাচাত ভাই, রাসূলের জামাই, ফাতিমার স্বামী।
-
আলী হয়দার নামে পরিচিত-যার তরবারির নাম ছিল যুল ফিকার। তার অপর পরিচিত আলী মুরতাজা, আবু তুরাব।
-
বদরের যুদ্ধে মল্লযুদ্ধে-প্রথম সৈনিক-কাফের আমর এর বিরুদ্ধে।
-
খাইয়ার দুর্গের পরাজয় হয় হযরত আলীর হাতে।
-
নবম হিজরী আমীরে হ্জ।
-
রাসূল সা. এর মৃত্যুর পর তাকে গোসল দেন হযরত আলী।
- আনা মাদীনাতুল ইলম ওয়া আলীয়ু বাবুহা।
সাহাবীদের জীবন থেকে শিক্ষা-১১
§
আল্লাহর উপর নির্ভরতাঃ
হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ ও পরনির্ভরশীলতা
বনাম আল্লাহর নির্ভরতাঃ
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মুহাজির আব্দুর রহমান বিন আওফকে আনছার সা‘দ বিন রাবী‘-এর সাথে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন স্থাপন করে দেন। অতঃপর সা‘দ তার মুহাজির ভাইকে বললেন, ‘আনছারদের মধ্যে আমি সর্বাপেক্ষা ধনী। আপনি আমার সম্পদের অর্ধেক গ্রহণ করুন এবং আমার দু’জন স্ত্রীর মধ্যে যাকে আপনি পসন্দ করেন বলুন, তাকে আমি তালাক দিয়ে দিব। ইদ্দত শেষে আপনি তাকে বিবাহ করবেন’। আব্দুর রহমান বিন ‘আওফ তার আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়ে তাকে দো‘আ করলেন, بارك الله فى اهلك ومالك ‘আল্লাহ আপনার পরিবারে ও ধন-সম্পদে বরকত দান করুন’! আপনি আমাকে আপনাদের বাজার দেখিয়ে দিন। অতঃপর তাঁকে বনু ক্বায়নুক্বা-র বাজার দেখিয়ে দেওয়া হ’ল। তিনি সেখানে গিয়ে পনীর ও ঘি-এর ব্যবসা শুরু করলেন এবং কিছু দিনের মধ্যে সচ্ছলতা লাভ করলেন। এক সময় তিনি বিয়ে-শাদীও করলেন।
সাহাবীদের জীবন থেকে শিক্ষা-১২
§
নেতার নির্দেশের সীমাহীন আনুগত্যঃ
হযরত মিকদাদ রা.
বদর যুদ্ধের সময়ের ঘটনা। অনাকাংখিত পরিস্থিতি
এবং অবশ্যম্ভাবী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মোকাবেলা কিভাবে করা যায়, এ নিয়ে রাসূল
সা. উচ্চ পর্যায়ের পরামর্শ বৈঠক আহবান করলেন। মুহাজিরগনের মধ্যে হযরত আবু বকর ও হযরত
উমর রা. তাদের মূল্যবান পরামর্শ দান করলেন। অতঃপর মিক্বদাদ ইবনুল আসওয়াদ রা. দাড়িয়ে
ওজস্বিনী ভাষায় বললেন, يا رسول الله امض لما أراك الله فنحن معك والله لا
نقول لك كما قالت بنو إسرائيل لموسى: اذْهَبْ أَنْتَ وَرَبُّكَ فَقَاتِلاَ إِنَّا هَاهُنَا
قَاعِدُوْنَ “হে আল্লাহর রাসূল। আল্লাহর
দেখানো পথে আপনি এগিয়ে চলুন। আমরা আপনার সংগে আছ। আল্লাহর কসম! আমরা আপনাকে ঐরূপ বলবোনা,
যেরূপ বণী ইসরাঈল তাদের নবী মুসা আ.কে বলেছিল যে, তুমি ও তোমার রব যাও যুদ্ধ করগে। আমরা এখানে বসে রইলাম। বরং আমরা বলব, اذهب انت وربك فقاتلا انا
معكما مقاتلون، আপনি ও আপনার রব যান ও যুদ্ধ করুন, আমরা আপনাদের
সাহায্যে যুদ্ধরত থাকবো। فو الذى بعثك بالحق لوسرت بنا إلى برك الغماد لجادلنا
معك من دونه حتى تبلغه সেই সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্য
সহকারে প্রেরণ করেছেন, যদি আপনি আমাদেরকে নিয়ে আবিনিয়োর বারকুল
গিমাদ(برك الغماد) পর্যন্ত চলে যান, তবে আমরা অবশ্যই
আপনার সংগে যুদ্ধ করতে করতে সেই পর্যন্ত পৌছে যাবো।
মিক্বদাদের এই জোরালো বক্তব্য শুনে আল্লাহর
রাসূল খুবই প্রীত হলেন এবং তার জন্য কল্যাণের দোয়া করলেন।
সংখ্যালঘু মুহাজিরগনের উপরোক্ত তিন নেতার বক্তব্য
শোনার পর সংখ্যাগুরু আনসারদের পরামর্শ চাইলে আউস গোত্রের নেতা সা’দ বিন মায়াজ রা. বললেন, হে রাসূল! আপনি হয়তো আশংকা করেছেন যে, আমাদের
সংগে আপনার চুক্তি অনুযায়ী আনসারগন কেবল (মদীনার) শহরে অবস্থান করেই আপনাদের সাহায্য
করা কর্তব্য মনে করে। জেনে রাখুন, আমি আনসারদের পক্ষ থেকেই বলছি,
যেখানে ইচ্ছা হয় আপনি আমাদের নিয়ে চলুন। যার সংগে খুশী আপনি সন্ধি করুন
বা ছিন্ন করুন-সর্বাবস্থায় আমরা আপনার সাথে আছি। যাদি আপনি অগ্রসর হয়ে হাবসার বারকুল
গিমাদ পর্যন্ত চলে যান, তাহলে আমরা আপনার সাথেই থাকবো। والله لئن استعرضت بنا هذا
البحر فخضته لخضناه معك আবার যদি আমাদেরকে নিয়ে আপনি এই
সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়েন, তবে আমরাও আপনার সাথে ঝাঁপিয়ে পড়বো। ما تخلف منا رجل واحد، فسر
بنا على بركة الله আমাদের একজন লোকও পিছনে থাকবেনা।
অতএর আপনি আমাদের নিয়ে আল্লাহর নামে এগিয়ে চলুন।
হযরত সা’দের উক্ত কথা শুনে আল্লাহর রাসূল সা. খুবই খুষী হলেন এবং উদ্দীপিত হয়ে বললেন, سيروا وأبشروا فان الله تعالى قد وعدنى إحدى الطائفتين، والله لكانى الآن انظر إلى مصارع القوم চলো এবং সুসংবাদ গ্রহণ করো। কেননা আল্লাহ তায়ালা আমাকে দু’টি দুরৈর কোন একটির বিজয় সম্পর্কে ওয়াদা করেছেন। আল্লাহর কসম। আমি একন ওদের বধ্যভূমিগুলো দেখতে পাচ্ছি।
0 Comments