আলোচনাঃ আমাদের পরিচয়
আমি কে? কি আমার
পরিচয়? আমাকে কেন সৃষ্টি করা
হয়েছে? আমি কেন পৃথিবীতে এসেছি? আমার
দায়িত্ব আর কর্তব্য কি? আমি
কিভাবে চলবো? আমার গন্তব্য
কোথায়? ইত্যাদি বিষয় কি আমি
জানি?
-
আমাদের পরিচয় আমাদের জানতে হবে। কারণঃ
الكَيِّس
مَنْ دَانَ نَفْسَهُ، وَعَمِلَ لِما بَعْدَ الْموْتِ، وَالْعَاجِزُ مَنْ أَتْبَعَ
نَفْسَه هَواهَا، وتمَنَّى عَلَى اللَّهِ
শাদ্দাদ
ইবনু আওস রা. থেকে বর্ণিত, নবী সা. বলেছেনঃ সে ব্যক্তি জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন, যে তার
নিজের আত্মপর্যালোচনা করে এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য (নেক) আমল করে। আর ঐ
লোক দুর্বল যে স্বীয় প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, আবার
আল্লাহর কাছে অবাস্তব আশা পোষণ করে। (তিরমিযী)
- আমরা সাধারণ ভাবে ৩টি পরিচয়কে ধারণ
করি। আর তা হলোঃ
1.
মানুষ।
2.
মুসলমান।
3.
বাংলাদেশী।
মানুষ
o
আদম সৃষ্টির
মধ্য দিয়ে মানুষের সৃষ্টি।
يَا
أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ
وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً
হে মানব
জতি! তোমাদের মালিককে ভয় করো। তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একটি প্রাণ থেকে। আর সেই
একই প্রাণ থেকে সৃষ্টি করেছেন তার জোড়া। তারপর তাদের দুজনার থেকে সারা
দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। (আন নিসাঃ ১)
o মানুষ সৃষ্টি করা হয়েছে মাটি থেকেঃ النَّاسُ
كُلُّهُمْ بَنُو آدَمَ وَآدَمُ خُلِقَ مِنْ تُرَابٍমানুষ হলো আদমের সন্তান। আর আদমকে সৃষ্টি
করা হয়েছে মাটি থেকে। (তিরমিযী)
o
মাটির বৈশিষ্ট
কি?
§ মাটিঃ যা পায়ের নিচে
থাকে। মানুষের পরিধানের সবচেয়ে সম্মানিত বস্তু হলো টুপি-যা মাথায় থাকে। আর সবচেয়ে অসম্মাণিত বস্তু জুতা-যা পায়ের নিচে থাকে। আর মাটি হলো সেই জুতার নিচের বস্তু।
§ মাটিঃ যাকে মানুষ অত্যন্ত মূল্যবান মনে করে। যার
জন্য ভাইয়ে ভাইয়ে শুধু
ঝগড়া নয়, খুন খারাবি
হয়ে থাকে। এক ইঞ্চি মাটি নিয়ে দেশে দেশে যুদ্ধ হয়।
§ মাটিঃ যা নিয়ে কবি
গান লিখেছেনঃ
ইঞ্চি ইঞ্চি মাটি, সোনার চাইতে খাটি, নগদ রক্ত দিয়ে কেনা,
শত্রু বা হানাদার, একটি কনাও তার, কেড়ে নিতে কেউ পারবে না।
ইঞ্চি ইঞ্চি মাটি, সোনার চাইতে খাটি, নগদ রক্ত দিয়ে কেনা,
কসম সেই খোদার, একটি কনাও তার, কেড়ে নিতে কেউ পারবে না।
o
মাটির তৈরী
এই মানুষের অবস্থা কি?
§ মানুষ মল ত্যাগের পর মানুষ নাকে হাত দেয়।
§ মানুষের মল মানুষ সারের জন্য ব্যবহার করে না।
§ মানুষ একটা চলন্ত ডাস্টবিন, যে
দূর্গন্ধময় একটি ময়লার বাক্স নিয়ে চলা ফেরা করে।
o
মাটির তৈরী
এই মানুষকে আল্লাহ দিয়েছেন সীমাহীন মর্যাদাঃ
وَلَقَدْ
كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُم
مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَىٰ كَثِيرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا
تَفْضِيلًا
এতো আমার অনুগ্রহ, আমি বনী আদমকে মর্যাদা দিয়েছি এবং
তাদেরকে জলে স্থলে সওয়ারী দান করেছি, তাদেরকে পাক-পবিত্র জিনিস থেকে
রিযিক দিয়েছি এবং নিজের বহু সৃষ্টির ওপর তাদেরকে সুস্পষ্ট প্রাধান্য দিয়েছি। (বনি
ইসরাঈলঃ ৭০)
§ সম্মানিত মানুষকে আমরা যখন কিছু দেই, তখন সুন্দর করে প্যাকেট করে দেই।
§ বনী আদমকে খাবার হিসাবে যত জিনিস দেয়া হয়েছে, সব কিছু
আল্লাহ প্যাকেট করে দিয়েছেন।
o
মাটির তৈরী
মানুষকে আল্লাহ দিয়েছেন একটি সুন্দর অবয়বঃ
لَقَدْ
خَلَقْنَا الْإِنسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ ** ثُمَّ رَدَدْنَاهُ أَسْفَلَ
سَافِلِينَ
আমি
মানুষকে পয়দা করেছি সর্বোত্তম কাঠামোয়। তারপর তাকে উল্টো ফিরিয়ে নীচতমদেরও নীচে পৌঁছিয়ে
দিয়েছি। (আত তীনঃ ৪-৫)
o
আদম আ. যেমন মানুষ ছিলেন, সকল নবী রাসূলও মানুষ ছিলেন,
আমাদের নবীও মানুষ ছিলেন। তবে উনারা সাধারণ মানুষ ছিলেন না-বরং মহামানব ছিলেনঃ
وَقَالُوا
مَالِ هَٰذَا الرَّسُولِ يَأْكُلُ الطَّعَامَ وَيَمْشِي فِي الْأَسْوَاقِ، لَوْلَا
أُنزِلَ إِلَيْهِ مَلَكٌ فَيَكُونَ مَعَهُ نَذِيرًا
তার বলে, “এ কেমন
রাসূল, যে খাবার খায় এবং হাটে বাজারে ঘুরে বেড়ায়? কেন তার
কাছে কোন ফেরেশতা পাঠানো হয়নি, যে তার সাথে থাকতো এবং (অস্বীকারকারীদেরকে) ধমক
দিতো? (আল ফুরকানঃ ৭)
وَمَا
أَرْسَلْنَا قَبْلَكَ إِلَّا رِجَالًا نُّوحِي إِلَيْهِمْ ۖ فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ
إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ، وَمَا جَعَلْنَاهُمْ جَسَدًا لَّا يَأْكُلُونَ
الطَّعَامَ وَمَا كَانُوا خَالِدِينَ.
আর হে মুহাম্মাদ!
তোমার পূর্বেও আমি মানুষদেরকেই রাসূল বানিয়ে পাঠিয়েছিলাম, যাদের
কাছে আমি অহী পাঠাতাম। তোমরা
যদি না জেনে থাকো তাহলে আহলে কিতাবদেরকে জিজ্ঞেস করো। (আল আম্বিয়াঃ ৭-৮)
সেই রসূলদেরকে আমি এমন দেহ বিশিষ্ট করিনি যে, তারা খেতো না
এবং তারা চিরজীবিও ছিল না।
قُلْ
إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَىٰ إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَٰهُكُمْ إِلَٰهٌ
وَاحِدٌ ۖ فَمَن كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا
وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا
হে
মুহাম্মাদ! বলো, আমি তো একজন মানুষ তোমাদেরই মতো, আমার
প্রতি অহী করা হয় এ মর্মে যে, এক আল্লাহ তোমাদের ইলাহ, কাজেই
যে তার রবের সাক্ষাতের প্রত্যাশী তার সৎকাজ করা উচিত এবং বন্দেগীর ক্ষেত্রে নিজের
রবের সাথে কাউকে শরীক করা উচিত নয়। (আল কাহাফঃ
১১০)
o মানুষের ২টি কাজঃ
১.
ইবাদত করা।
وَمَا
خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
জিন ও
মানুষকে আমি শুধু এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা
আমার দাসত্ব করবে। (আল যারিয়াতঃ
৫৬)
২. খলিফার দায়িত্ব পালন করা।
وَإِذْ
قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً ۖ قَالُوا
أَتَجْعَلُ فِيهَا مَن يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ
بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ ۖ قَالَ إِنِّي أَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُونَ
আবার সেই
সময়ের কথা একটু স্মরণ কর যখন তোমাদের রব ফেরেশতাদের বলেছিলেন, “আমি
পৃথিবীতে একজন খলীফা-প্রতিনিধি নিযুক্ত করতে চাই।” তারা বললো, “আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে
নিযুক্ত করতে চান যে সেখানকার ব্যবস্থাপনাকে বিপর্যস্থ করবে এবং রক্তপাত করবে? আপনার
প্রশংসা ও স্তুতি সহকারে তাসবীহ পাঠ এবং আপনার পবিত্রতা বর্ণনা তো আমরা করেই
যাচ্ছি।” আল্লাহ
বললেন, “আমি জানি যা তোমরা জানো না।” (আল বাকারাহঃ ৩০)
o
মানুষ কিভাবে
এ দায়িত্ব পালন করবে, এজন্য আল্লাহ দিয়েছেন হেদায়াত।
قُلْنَا
اهْبِطُوا مِنْهَا جَمِيعًا ۖ فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُم مِّنِّي هُدًى فَمَن تَبِعَ
هُدَايَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
আমরা
বললাম, “তোমরা সবাই এখান থেকে নেমে যাও। এরপর যখন আমার পক্ষ থেকে কোন হিদায়াত তোমাদের কাছে
পৌছুবে তখন যারা আমার সেই হিদায়াতের অনুসরণ করবে তাদের জন্য থাকবে না কোন ভয় দুঃখ
বেদনা। (আল বাকারাহঃ
৩৮)
o
মানুষ বেহেশতে
ছিল। জান্নাত হলো আমাদের সকলের
বাপের বাড়ী বা মা-বাপের বাড়ী। মা-বাবার সম্পত্তিতে সন্তানের উত্তরাধিকার রয়েছে। আমরাও সন্তান হিসাবে আমাদের মা বাবার বাড়ী জান্নাতের
উত্তরাধিকারী। অতএব, আমাদের মা বাপের বাড়ী জান্নাত হলো আমাদের ফাইন্যাল ডেসটিনেশন। আমাদেরকে ওখানেই ফিরতে হবে।
o আবার মানুষ বেহেশতে ফেরে আসবে। আর এজন্য আল্লাহ হেদায়াত দিয়েছেন এবং সাথে গাইড দিয়েছেন।
§ হেদায়াত হলোঃ কিতাব-যা
থিওরী-এটা একটা মানচিত্রের মতো-Map of Jannah.
§ গাইড হলোঃ নবী ও রাসূল-যা প্রেকটিক্যাল-এটি
মানচিত্রকে বুঝিয়ে দেয়ার মতো একজন ইন্সট্রাক্টর বা গাইড।
o
যুগে যুগে
গাইডরা এসে মানুষের আক্বীদা সহীহ করেছেন।
o
আকীদা সহীহ
করা মানে-চিন্তার বিশুদ্ধি করণ।
সর্বশ্রেণীর মানুষের নিকট ইসলামের প্রকৃতরূপ তুলে ধরে
চিন্তার বিশুদ্ধিকরণ ও বিকাশ সাধনের মাধ্যমে জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইসলামের অনুসরণ
করার অনুভূতি জাগ্রত করা।
o
সহীহ আক্বীদা
কি?
আমাদেরকে জানতে
হবেঃ
১. আমরা আল্লাহর গোলাম।
সকল নবী রাসূল এসে মানুষের চিন্তার মধ্যে থাকা ঝামেলা সমূহ পরিষ্কার করে এই চিন্তুা
পরিস্কার করে দিয়েছেন যে, তুমি আল্লাহর গোলামঃ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ
إِلَٰهٍ غَيْرُهُ “হে আমার
সম্প্রদায়ের লোকেরা! আল্লাহর বন্দেগী করো। তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই। যেমনঃ
নূহ আঃ তার কাওমকে আহবান করলেনঃ لَقَدْ
أَرْسَلْنَا نُوحاً إِلَى قَوْمِهِ فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُواْ اللَّهَ مَا
لَكُم مِّنْ إِلَـهٍ غَيْرُهُ إِنِّيَ أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ
নুহকে আমি তার
সম্প্রদায়ের কাছে পাঠাই। সে বলেঃ
হে আমার স্বগোত্রীয় ভাইয়েরা! আল্লাহর ইবাদত করো, তিনি
ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই। আমি
তোমাদের জন্য একটি ভয়াবহ দিনের আযাবের আশংকা করছি। (আল আরাফঃ ৫৯)
হুদ আঃ আদ জাতিকে আহবান জানালেনঃ وَإِلَى
عَادٍ أَخَاهُمْ هُوداً قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُواْ اللّهَ مَا لَكُم مِّنْ
إِلَـهٍ غَيْرُهُ أَفَلاَ تَتَّقُونَ
আর আদ (জাতি)র কাছে
আমি পাঠাই তাদের ভাই হূদকে। সে বলেঃ “হে আমার সম্প্রদায়ের ভাইয়েরা
!তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই। এরপরও
কি তোমরা ভুল পথে চলার ব্যাপারে সাবধান হবে না?” (আল আরাফঃ
৬৫)
সালেহ আঃ কে প্রেরণ করা হয়েছিল সামুদ জাতির
প্রতি-তিনি বললেনঃ وَإِلَى ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحاً
قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُواْ اللّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـهٍ غَيْرُهُ
আর সামুদের কাছে আমি
তাদের ভাই সালেহকে পাঠালাম সে বললো, “হে আমার কওমের লোকেরা! আল্লাহর
বন্দেগী করো। তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই। (হুদঃ ৬১)
শুয়াইব আঃ একই ভাবে মাদইয়ানবাসীকে ডাক দিলেনঃ
وَإِلَى
مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْباً قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُواْ اللّهَ مَا لَكُم مِّنْ
إِلَـهٍ غَيْرُهُ
আর মাদ্য়ানবাসীদের
কাছে আমি তাদের ভাই শো’আয়েবকে পাঠালাম। সে বললোঃ “হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা!
আল্লাহর বন্দেগী করো। তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই। (হুদঃ ৮৪)
মুসা আঃ এর কর্ম সম্পর্কে আল্লাহ জানাচ্ছেনঃ وَلَقَدْ
أَرْسَلْنَا مُوسَى بِآيَاتِنَا أَنْ أَخْرِجْ قَوْمَكَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى
النُّورِ
আমি এর আগে মূসাকেও
নিজের নিদর্শনাবলী সহকারে পাঠিয়েছিলাম। তাকেও আমি হুকুম দিয়েছিলাম, নিজের
সম্প্রদায়কে অন্ধকার থেকে বের করে আলোকের মধ্যে নিয়ে এসো। (ইব্রাহীমঃ ৫)
ইব্রাহীম আঃ তার জাতিকে আহবান করলেনঃ وَإِبْرَاهِيمَ
إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ ٱعْبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱتَّقُوهُ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ
إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
আর ইবরাহীমকে পাঠাই যখন সে
তার সম্প্রদায়কে বলে, “আল্লাহর বন্দেগী করো এবং তাঁকে ভয় করো। এটা তোমাদের জন্য ভালো যদি তোমরা জানো। (আল আনকাবুতঃ ১৬)
মুহাম্মদ সা. সারা বিশ্ব মানবতাকে আহবান
করলেনঃ يا أيُّها الناسُ، قولوا: لا إلهَ
إلَّا اللهُ، تُفلِحوا
হে মানব সকল! তোমরা
ঘোষনা করো-আল্লাহ ছাড়া গোলামীর উপযুক্ত আর কেউ নাই। তাহলে তোমরা সফলতা
লাভ করবে। (মুসনাদে
আহমদ)
২. আল্লাহর
কে?
اللَّهُ
لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ۚ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ
ۚ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ
عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ ۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ
وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ ۚ وَسِعَ
كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ ۖ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا ۚ وَهُوَ
الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ
আল্লাহ এমন এক
চিরঞ্জীব ও চিরন্তন সত্তা যিনি সমগ্র বিশ্ব-জাহানের দায়িত্বভার বহন করছেন , তিনি
ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তিনি
ঘুমান না এবং তন্দ্রাও তাঁকে স্পর্শ করে না। পৃথিবী ও আকাশে যা কিছু আছে সবই তাঁর। কে আছে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? যা কিছু
মানুষের সামনে আছে তা তিনি জানেন এবং যা কিছু তাদের অগোচরে আছে সে সম্পর্কে তিনি
অবগত। তিনি নিজে যে জিনিসের জ্ঞান মানুষকে দিতে চান সেটুকু ছাড়া
তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ব করতে পারে না। তাঁর কর্তৃত্ব আকাশ ও
পৃথিবী ব্যাপী। এগুলোর রক্ষণাবেক্ষন তাঁকে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত করে না। মূলত
তিনিই এক মহান ও শ্রেষ্ঠ সত্তা। (আয়াতুল কুরসী-আল বাকারাহঃ
২৫৫)
قُلْ
هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ ** اللَّهُ الصَّمَدُ** لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ ** وَلَمْ
يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ
বলো, তিনি
আল্লাহ, একক। আল্লাহ কারোর ওপর নির্ভরশীল নন এবং সবাই তাঁর ওপর
নির্ভরশীল। তাঁর কোন সন্তান নেই এবং তিনি
কারোর সন্তান নন। এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই। (আল ইখলাছ)
هُوَ
اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ ۖ
هُوَ الرَّحْمَٰنُ الرَّحِيمُ ** هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ
الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ
الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ ۚ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ **
هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ ۖ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ
ۚ يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ وَهُوَ الْعَزِيزُ
الْحَكِيمُ
আল্লাহই সেই মহান
সত্তা যিনি ছাড়া আর কোন মা’বুদ নেই। অদৃশ্য
ও প্রকাশ্য সবকিছুই তিনি জানেন। তিনিই
রহমান ও রহীম। আল্লাহ-ই সেই মহান
সত্তা যিনি ছাড়া কোন মা’বুদ নেই। তিনি বাদশাহ, অতীব
পবিত্র, পূর্ণাঙ্গ শান্তি, নিরাপত্তাদানকারী, হিফাযতকারী, সবার
ওপর বিজয়ী, শক্তি বলে নিজের নির্দেশ কার্যকরী করতে সক্ষম। এবং সবার চেয়ে বড় হয়েই বিরাজমান থাকতে সক্ষম। আল্লাহ সেই সব শিরক থেকে পবিত্র যা লোকেরা করে থাকে। সেই পরম সত্তা তো আল্লাহ-ই যিনি সৃষ্টির
পরিকল্পনাকারী, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের র্নিদেশ দানকারী এবং সেই অনুপাতে
রূপদানকারী। উত্তম
নামসমূহ তাঁর-ই। আসমান ও
যমীনের সবকিছু তাঁর তাসবীহ বা পবিত্রতা বর্ণনা করে চলেছে। তিনি পরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানী। (আল হাশরঃ ২২-২৪)
৩. আমাদের
চলতে হবে নবীদের দেখানো পথে।
يا
أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي
الْأَمْرِ مِنكُمْ ۖ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ
وَالرَّسُولِ
হে ঈমানগারগণ!
আনুগত্য করো আল্লাহর এবং আনুগত্য করো রসূলের আর সেই সব লোকের যারা তোমাদের মধ্যে
দায়িত্ব ও ক্ষমতার অধিকারী। এরপর যদি তোমাদের মধ্যে কোন ব্যাপারে বিরোধ দেখা দেয়
তাহলে তাকে আল্লাহ ও রসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। (আন নিসাঃ ৫৯)
وَمَا
آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا ۚ وَاتَّقُوا
اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
রসূল যা কিছু
তোমাদের দেন তা গ্রহণ করো এবং যে জিনিস থেকে তিনি তোমাদের বিরত রাখেন তা থেকে বিরত
থাকো। আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। (আল হাশরঃ ৭)
৪. এই জীবনই
শেষ জীবন নয়।
وَالَّذِينَ
يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ وَبِالْآخِرَةِ
هُمْ يُوقِنُونَ
আর যে কিতাব তোমাদের
ওপর নাযিল করা হয়েছে (অর্থাৎ কুরআন) এবং তোমার আগে যেসব কিতাব নাযিল করা হয়েছিল সে
সবগুলোর ওপর ঈমান আনে আর আখেরাতের ওপর একীন রাখে। (আল বাকারাহঃ ৪)
اعْلَمُوا
أَنَّمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَلَهْوٌ وَزِينَةٌ وَتَفَاخُرٌ بَيْنَكُمْ
وَتَكَاثُرٌ فِي الْأَمْوَالِ وَالْأَوْلَادِ ۖ كَمَثَلِ غَيْثٍ أَعْجَبَ
الْكُفَّارَ نَبَاتُهُ ثُمَّ يَهِيجُ فَتَرَاهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَكُونُ حُطَامًا
ۖ وَفِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ شَدِيدٌ وَمَغْفِرَةٌ مِّنَ اللَّهِ وَرِضْوَانٌ ۚ
وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ
ভালভাবে জেনে রাখো
দুনিয়ার এ জীবন, একটা খেলা, হাসি তামাসা, বাহ্যিক
চাকচিক্য, তোমাদের পারস্পরিক গৌরব ও অহংকার এবং সন্তান সন্তুতি ও
অর্থ-সম্পদে পরস্পরকে অতিক্রম করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। এর উপমা হচ্ছে, বৃষ্টি
হয়ে গেল এবং তার ফলে উৎপন্ন উদ্ভিদরাজি দেখে কৃষক আনন্দে উৎফূল্ল হয়ে উঠলো। তারপর
সে ফসল পেকে যায় এবং তোমরা দেখতে পাও যে, তা হলদে
বর্ণ ধারণ করে এবং পরে তা ভূষিতে পরিণত হয়। পক্ষান্তরে আখেরাত এমন স্থান
যেখানে রয়েছে কঠিন আযাব, আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। পার্থিব জীবন
প্রতারণার উপকরণ ছাড়া আর কিছুই নয়। (আল হাদীদঃ
২০)
فَمَنْ
يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَه ** وَمَنْ
يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَه
তারপর যে অতি অল্প
পরিমাণ ভালো কাজ করবে সে তা দেখে নেবে। এবং যে
অতি অল্প পরিমাণ খারাপ কাজ করবে সে তা দেখে নেবে। (আল যিলযালঃ ৭-৮)
فَأَمَّا
مَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ ** فَهُوَ فِي عِيشَةٍ رَاضِيَةٍ ** وَأَمَّا مَنْ
خَفَّتْ مَوَازِينُهُ ** فَأُمُّهُ هَاوِيَةٌ
তারপর যার
পাল্লা ভারী হবে, সে মনের মতো সুখী জীবন লাভ করবে। আর যার পাল্লা হালকা হবে, তার
আবাস হবে গভীর খাদ। (আল কারিয়াঃ
৬-৯)
قُلْ
إِن كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ
وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا
وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُم مِّنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ
فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّىٰ يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ ۗ وَاللَّهُ لَا
يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ
হে নবী!
বলে দাও, যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের
সন্তান ও তোমাদের ভাই তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের আত্মীয়-স্বজন, তোমাদের
উপার্জিত সম্পদ, তোমাদের যে ব্যবসায়ে মন্দা দেখা দেয়ার ভয়ে তোমরা তটস্থ
থাক এবং তোমাদের যে বাসস্থানকে তোমরা খুবই পছন্দ কর-এসব যদি আল্লাহ ও তার রসূল
এবং তার পথে জিহাদ করার চাইতে তোমাদের কাছে বেশী প্রিয় হয়, তাহলে
আল্লাহর ফায়সালা তোমাদের কাছে না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর। আল্লাহ ফাসেকদেরকে কখনো সত্য পথের সন্ধান দেন না। (আত তাওবাঃ ২৪)
o
যদি গাইডদের
দেখানো পথে আমরা চলতে পারি, তাহলে আমরা ফিরে যাবো মা বাবার বাড়ীতে।
o
মানুষের
জন্য দুনিয়াটা ক্ষনিকের আবাস, মুসাফির খানা, এখানে আরাম আয়েশ উদ্দেশ্য নয়। বরং যত তাড়াতাড়ি বাড়ীতে ফেরা যায়, সেটাই সব সময় চিন্তায় থাকতে হবে।
মুসলিম
o
আদম আ. মানুষ ছিলেন। সারা পৃথিবীর মানুষ আদম আ. এর সন্তান।
o
আদম আ. এর সকল সন্তানের পরিচয় হলো-তারা মানুষ।
o
আদম আ. এর সন্তানরা যতক্ষণ হেদায়াতের উপর ঠিকে ছিল, ততক্ষণ মানুষ
নামক একটা পরিচয়ই যথেষ্ট ছিল। হেদায়াতটা ছিলঃ
قُلْنَا
اهْبِطُوا مِنْهَا جَمِيعًا ۖ فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُم مِّنِّي هُدًى فَمَن تَبِعَ
هُدَايَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
আমরা
বললাম, “তোমরা সবাই এখান থেকে নেমে যাও। এরপর যখন আমার পক্ষ থেকে কোন হিদায়াত তোমাদের কাছে
পৌছুবে তখন যারা আমার সেই হিদায়াতের অনুসরণ করবে তাদের জন্য থাকবে না কোন ভয় দুঃখ
বেদনা।” (আল বাকারাহঃ
৩৮)
o
মানুষ যখন
হেদায়াত থেকে দূরে চলে গেল। তখন মানুষের মধ্যে আর মানুষত্ব থাকলো না।
o
হেদায়াতের
কিতাবকে মানুষ তাদের মন মর্জি অনুযায়ী পরিবর্তন করে ফেললো। শুধু তাই নয়, তারা নবী রাসূলদেরকে
আল্লাহর অংশীদার করে নিল।
o
এমতাবস্তায়
প্রকৃত মানুষ তথা যে সব মানুষ হেদায়াতের উপর ঠিকে থাকলো, তাদের আরেকটা নাম দেয়া হলো। হেদায়াত প্রাপ্তদের নতুন নাম হলোঃ মুসলিম।
o
আমরা মুসলিম
জাতি, আমাদের জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম আ.
مِّلَّةَ
أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ ۚ هُوَ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِينَ
তোমাদের
পিতা ইবরাহীমের মিল্লাতের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাও। আল্লাহ আগেও তোমাদের নাম রেখেছিলেন “মুসলিম”। (আল হাজ্জঃ
৭৮)
o
আমাদের কর্তব্য
আমাদের বংশ পরিচয় বা খান্দানী পরিচয় সম্পর্কে অবগত হওয়া। আমাদের জাতির পিতার ইব্রাহীমের পরিচয় কি?
o
ইব্রাহীম
কে ছিলেন?
১. শিরকের বিরুদ্ধে এক
বলিষ্ট সৈনিক ছিলেন।
وَإِذْ
قَالَ إِبْرَاهِيمُ لأَبِيهِ آزَرَ أَتَتَّخِذُ أَصْنَاماً آلِهَةً إِنِّيۤ
أَرَاكَ وَقَوْمَكَ فِي ضَلاَلٍ مُّبِينٍ
ইবরাহীমের ঘটনা
স্মরণ করো যখন সে তার পিতা আযরকে বলেছিল, তুমি কি মূর্তিগুলোকে ইলাহ হিসেবে
গ্রহণ করছো? আমি তো দেখছি, তুমি ও তোমার জাতি প্রকাশ্য
গোমরাহীতে লিপ্ত। (আল আনআ’মঃ
৭৪)
وَإِذْ
قَالَ إِبْرَاهِيمُ لأَبِيهِ وَقَوْمِهِ إِنَّنِي بَرَآءٌ مِّمَّا تَعْبُدُونَ
স্মরণ করো সেই সময়টি
যখন ইবরাহীম তার বাপ এবং কওমকে বলেছিলো। “তোমরা যাদের দাসত্ব করো তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। (আয যুখরুফঃ ২৬)
وَإِبْرَاهِيمَ
إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ ٱعْبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱتَّقُوهُ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ
إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
আর ইবরাহীমকে পাঠাই যখন সে
তার সম্প্রদায়কে বলে, “আল্লাহর বন্দেগী করো এবং তাঁকে ভয় করো। এটা তোমাদের জন্য ভালো যদি তোমরা জানো। (আল আনকাবুতঃ ১৬)
وَمَن
يَرْغَبُ عَن مِّلَّةِ إِبْرَاهِيمَ إِلَّا مَن سَفِهَ نَفْسَهُ ۚ وَلَقَدِ
اصْطَفَيْنَاهُ فِي الدُّنْيَا ۖ وَإِنَّهُ فِي الْآخِرَةِ لَمِنَ الصَّالِحِينَ
এখন কে ইবরাহীমের
পদ্ধতিকে ঘৃণা করবে? হ্যাঁ, যে নিজেকে মূর্খতা ও নির্বুদ্ধিতায় আচ্ছন্ন করেছে সে
ছাড়া আর কে এ কাজ করতে পারে? ইবরাহীমকে তো আমি দুনিয়ায় নিজের জন্য নির্বাচিত
করেছিলাম, আর আখেরাতে সে সৎকর্মশীলদের মধ্যে গণ্য হবে। (আল বাকারাহঃ ১৩০)
وَوَصَّىٰ
بِهَا إِبْرَاهِيمُ بَنِيهِ وَيَعْقُوبُ يَا بَنِيَّ إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَىٰ
لَكُمُ الدِّينَ فَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ
ঐ একই পথে চলার জন্য
সে তার সন্তানদের উপদেশ দিয়েছিল এবং এরি উপদেশ দিয়েছিল ইয়াকুবও তার সন্তানদেরকে। সে বলেছিল, “আমার সন্তানেরা! আল্লাহ তোমাদের
জন্য এই দীনটিই পছন্দ করেছেন।১৩২ কাজেই
আমৃত্যু তোমরা মুসলিম থেকো।” (আল বাকারাহঃ
১৩২)
২. ত্যাগের মহিমায় ভাস্মর
এক গোলাম।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাকে পরীক্ষা করলেন
নানা ভাবেঃ
§
পৃথিবীতে আসতে বাধাঃ
§
পৃথিবীতে আসার পর তাওহীদের পরীক্ষাঃ
§
নমরূদ কর্তৃক অগ্নিকূন্ডে নিক্ষেপঃ কাহিনীটি বর্ণনা করা হয়েছে সূরা আল আম্বিয়াতে ৫১-৭০ আয়াতে বিস্তারিত
ভাবে”
وَلَقَدْ
آتَيْنَا إِبْرَاهِيمَ رُشْدَهُ مِن قَبْلُ وَكُنَّا بِهِ عَالِمِينَ
৫১) এরও আগে আমি ইবরাহীমকে শুভ বুদ্ধি ও সত্যের জ্ঞান দান করেছিলাম এবং আমি
তাকে খুব ভালোভাবেই জানতাম।
إِذْ
قَالَ لِأَبِيهِ وَقَوْمِهِ مَا هَٰذِهِ التَّمَاثِيلُ الَّتِي أَنتُمْ لَهَا
عَاكِفُونَ
৫২) সে সময়ের কথা স্মরণ করো যখন সে তার নিজের বাপকে ও জাতিকে বলেছিল, “এ
মূর্তিগুলো কেমন, যেগুলোর প্রতি তোমরা ভক্তিতে গদগদ হচ্ছো?”
قَالُوا
وَجَدْنَا آبَاءَنَا لَهَا عَابِدِينَ
৫৩) তারা জবাব দিলঃ “আমাদের বাপ-দাদাদেরকে আমরা এদের ইবাদাতরত অবস্থায়
পেয়েছি।”
قَالَ
لَقَدْ كُنتُمْ أَنتُمْ وَآبَاؤُكُمْ فِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ
৫৪) সে বললো, তোমরাও পথভ্রষ্ট এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও সুস্পষ্ট
ভ্রষ্টতার মধ্যেই অবস্থান করছিল।”
قَالُوا
أَجِئْتَنَا بِالْحَقِّ أَمْ أَنتَ مِنَ اللَّاعِبِينَ
৫৫) তারা বললো, তুমি কি আমাদের সামনে তোমার প্রকৃত মনের কথা বলছো, না নিছক
কৌতুক করছো?
قَالَ
بَل رَّبُّكُمْ رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الَّذِي فَطَرَهُنَّ وَأَنَا عَلَىٰ
ذَٰلِكُم مِّنَ الشَّاهِدِينَ
৫৬) সে জবাব দিল, “না, বরং আসলে তোমাদের রব তিনিই যিনি পৃথিবী ও আকাশের রব
এবং এদের স্রষ্টা। এর স্বপক্ষে আমি তোমাদের সামনে সাক্ষ দিচ্ছি।
وَتَاللَّهِ
لَأَكِيدَنَّ أَصْنَامَكُم بَعْدَ أَن تُوَلُّوا مُدْبِرِينَ
৫৭) আর আল্লাহর কসম, তোমাদের অনুপস্থিতিতে আমি তোমাদের মূর্তিগুলোর
ব্যাপারে অবশ্যি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”
فَجَعَلَهُمْ
جُذَاذًا إِلَّا كَبِيرًا لَّهُمْ لَعَلَّهُمْ إِلَيْهِ يَرْجِعُونَ
৫৮) সে অনুসারে সে সেগুলোকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেললো এবং
শুধুমাত্র বড়টিকে ছেড়ে দিল, যাতে তারা হয়তো তার দিকে ফিরে আসতে পারে।
قَالُوا
مَن فَعَلَ هَٰذَا بِآلِهَتِنَا إِنَّهُ لَمِنَ الظَّالِمِينَ
৫৯) (তারা এসে মূর্তিগুলোর এ অবস্থা দেখে) বলতে লাগলো, “আমাদের
ইলাহদের এ অবস্থা করলো কে, বড়ই জালেম সে।”
قَالُوا
سَمِعْنَا فَتًى يَذْكُرُهُمْ يُقَالُ لَهُ إِبْرَاهِيمُ
৬০) (কেউ কেউ) বললো, “আমরা এক যুবককে এদের কথা বলতে শুনেছিলাম, তার নাম
ইবরাহীম।”
قَالُوا
فَأْتُوا بِهِ عَلَىٰ أَعْيُنِ النَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَشْهَدُونَ
৬১) তারা বললো, “তাহলে তাকে ধরে নিয়ে এসো সবার সামনে, যাতে
লোকেরা দেখে নেয়” (কিভাবে তাকে শাস্তি দেয়া হয়)।
قَالُوا
أَأَنتَ فَعَلْتَ هَٰذَا بِآلِهَتِنَا يَا إِبْرَاهِيمُ
৬২) (ইবরাহীমকে নিয়ে আসার পর) তারা জিজ্ঞেস করলো, “ওহে
ইবরাহীম! তুমি কি আমাদের ইলাহদের সাথে এ কাণ্ড করেছো ?”
قَالَ
بَلْ فَعَلَهُ كَبِيرُهُمْ هَٰذَا فَاسْأَلُوهُمْ إِن كَانُوا يَنطِقُونَ
৬৩) সে জবাব দিল, “বরং এসব কিছু এদের এ সরদারটি করেছে, এদেরকেই
জিজ্ঞেস করো, যদি এরা কথা বলতে পারে।”
فَرَجَعُوا
إِلَىٰ أَنفُسِهِمْ فَقَالُوا إِنَّكُمْ أَنتُمُ الظَّالِمُونَ
৬৪) একথা শুনে তারা নিজেদের বিবেকের দিকে ফিরলো এবং (মনে মনে) বলতে লাগলো, “সত্যিই
তোমরা নিজেরাই জালেম।”
ثُمَّ
نُكِسُوا عَلَىٰ رُءُوسِهِمْ لَقَدْ عَلِمْتَ مَا هَٰؤُلَاءِ يَنطِقُونَ
৬৫) কিন্তু আবার তাদের মত পাল্টে গেলো এবং
বলতে থাকলো, “তুমি জানো, এরা কথা বলে না।”
قَالَ
أَفَتَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكُمْ شَيْئًا وَلَا يَضُرُّكُمْ
৬৬) ইবরাহীম বললো, “তাহলে তোমরা কি আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমনসব জিনিসের পূজা
করছো যারা তোমাদের না উপকার করতে পারে, না ক্ষতি?
أُفٍّ
لَّكُمْ وَلِمَا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ ۖ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
৬৭) ধিক তোমাদেরকে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে যেসব উপাস্যের তোমরা পূজা করছো
তাদেরকে। তোমাদের কি একটুও বুদ্ধি নেই?”
قَالُوا
حَرِّقُوهُ وَانصُرُوا آلِهَتَكُمْ إِن كُنتُمْ فَاعِلِينَ
৬৮) তারা বললো, “পুড়িয়ে ফেলো একে এবং সাহায্য করো তোমাদের উপাস্যদেরকে, যদি
তোমরা কিছু করতে চাও।”
قُلْنَا
يَا نَارُ كُونِي بَرْدًا وَسَلَامًا عَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ
৬৯) আমি বললামঃ “হে আগুন! ঠাণ্ডা হয়ে যাও এবং নিরাপদ হয়ে যাও
ইবরাহীমের জন্য।”
وَأَرَادُوا
بِهِ كَيْدًا فَجَعَلْنَاهُمُ الْأَخْسَرِينَ
৭০) তারা চাচ্ছিল ইবরাহীমের ক্ষতি করতে কিন্তু আমি তাদেরকে
ভীষণভাবে ব্যর্থ করে দিলাম।
§
দেশ থেকে বিতাড়িতঃ
§
বৃদ্ধ বয়স অবধি সন্তান না দেয়ার পরীক্ষাঃ
§
সন্তান পাওয়ার পর তাদেরকে নির্বাসন দেয়ার পরীক্ষাঃ
§
সন্তান বড় হওয়ার পর তাকে কুরবানী করার পরীক্ষাঃ কাহিনীটি বর্ণনা করা হয়েছে সূরা আস সাফ্ফাতঃ ১০০-১১০ আয়াতে বিস্তারিত
ভাবেঃ
رَبِّ
هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ
১০০) হে পরওয়ারদিগার! আমাকে একটি সৎকর্মশীল পুত্র সন্তান দাও।”
فَبَشَّرْنَاهُ
بِغُلَامٍ حَلِيمٍ
১০১) (এ দোয়ার জবাবে) আমি তাকে একটি ধৈর্যশীল পুত্রের সুসংবাদ দিলাম।
فَلَمَّا
بَلَغَ مَعَهُ السَّعْيَ قَالَ يَا بُنَيَّ إِنِّي أَرَىٰ فِي الْمَنَامِ أَنِّي
أَذْبَحُكَ فَانظُرْ مَاذَا تَرَىٰ ۚ قَالَ يَا أَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ ۖ
سَتَجِدُنِي إِن شَاءَ اللَّهُ مِنَ الصَّابِرِينَ
১০২) সে পুত্র যখন তার সাথে কাজকর্ম করার বয়সে পৌঁছুলো তখন (একদিন ইবরাহীম
তাকে বললো, “হে পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখি তোমাকে আমি যাবেহ করছি, এখন
তুমি বল তুমি কি মনে কর?” সে বললো, “হে আব্বাজান! আপনাকে যা হুকুম দেয়া হচ্ছে তা করে
ফেলুন, আপনি আমাকে ইনশাআল্লাহ সবরকারীই পাবেন।”
فَلَمَّا
أَسْلَمَا وَتَلَّهُ لِلْجَبِينِ
১০৩) শেষ পর্যন্ত যখন এরা দু’জন আনুগত্যের শির নত করে দিল এবং ইবরাহীম পুত্রকে
উপুড় করে শুইয়ে দিল।
وَنَادَيْنَاهُ
أَن يَا إِبْرَاهِيمُ
১০৪) এবং আমি আওয়াজ দিলাম, “হে ইবরাহীম!
قَدْ
صَدَّقْتَ الرُّؤْيَا ۚ إِنَّا كَذَٰلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ
১০৫) তুমি স্বপ্নকে সত্য করে দেখিয়ে দিয়েছো। আমি সৎকর্মকারীদেরকে এভাবেই পুরস্কৃত করে থাকি।
إِنَّ
هَٰذَا لَهُوَ الْبَلَاءُ الْمُبِينُ
১০৬) নিশ্চিতভাবেই এটি ছিল একটি প্রকাশ পরীক্ষা।”
وَفَدَيْنَاهُ
بِذِبْحٍ عَظِيمٍ
১০৭) একটি বড় কুরবানীর বিনিময়ে আমি এ শিশুটিকে ছাড়িয়ে নিলাম
وَتَرَكْنَا
عَلَيْهِ فِي الْآخِرِينَ
১০৮) এবং পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে চিরকালের জন্য তার প্রশংসা রেখে দিলাম।
سَلَامٌ
عَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ
১০৯) শান্তি বর্ষিত হোক ইবরাহীমের প্রতি।
كَذَٰلِكَ
نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ
১১০) আমি সৎকর্মকারীদেরকে এভাবেই পুরস্কৃত করে থাকি।
§ সকল পরীক্ষায় ইব্রাহীম গোল্ডেন এ প্লাস মার্ক
পেয়ে পাশ করলেন।
وَإِذِ
ابْتَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ رَبُّهُ بِكَلِمَاتٍ فَأَتَمَّهُنَّ ۖ قَالَ إِنِّي
جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا ۖ قَالَ وَمِن ذُرِّيَّتِي ۖ قَالَ لَا يَنَالُ عَهْدِي
الظَّالِمِينَ
স্মরণ
করো যখন ইবরাহীমকে তার রব কয়েকটি ব্যাপারে পরীক্ষা করলেন এবং
সেসব পরীক্ষায় সে পুরোপুরি উত্রে গেলো, তখন তিনি বললেনঃ “আমি
তোমাকে সকল মানুষের নেতার পদে অধিষ্ঠত করবো।” ইবরাহীম বললোঃ “আর আমার সন্তানদের সাথেও কি এই
অংগীকার ?” জবাব দিলেনঃ “আমার এ অংগীকার যালেমদের ব্যাপারে
নয়।” (আল বাকারাহঃ ১২৪)
§ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ইব্রাহীমের উপর রাজী
আর খুশী হয়ে গেলেন। কুরআনের ঘোষনাঃ
إِنَّ
إِبْرَاهِيمَ كَانَ أُمَّةً قَانِتًا لِّلَّهِ حَنِيفًا وَلَمْ يَكُ مِنَ
الْمُشْرِكِينَ
প্রকৃতপক্ষে
ইব্রাহীম নিজেই ছিল একটি পরিপূর্ণ উম্মত, আল্লাহর হুকুমের অনুগত এবং একনিষ্ঠ। সে
কখনো মুশরিক ছিল না। (আন নাহলঃ ১২০)
o
আজ ইব্রাহীমের
রাজত্ব সারা পৃথিবী ব্যাপী।
o
সারা পৃথিবী
২ ভাগে বিভক্তঃ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য।
o
প্রাচ্যে
এসেছেন সকল নবী। তাই এই এলাকার মানুষের সংস্কৃতি
আর পাশ্চাত্যের সংস্কৃতি ভিন্ন।
o
আমাদের আদর্শের
পরতে পরতে ইব্রাহীমের জয়গানঃ
§
আমাদের আদর্শ হচ্ছে নবী মুহাম্মদ সা. لَّقَدْ كَانَ
لَكُمْ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ আসলে তোমাদের জন্য
আল্লাহর রসূলের মধ্যে ছিল একটি উত্তম আদর্শ। (আল আহযাবঃ ২১)
§
আর সেই আদর্শের ব্যাপারে বলা হয়েছেঃ
قَدْ
كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِيۤ إِبْرَاهِيمَ وَٱلَّذِينَ مَعَهُ إِذْ
قَالُواْ لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَءآؤُاْ مِّنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِن
دُونِ ٱللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ ٱلْعَدَاوَةُ
وَٱلْبَغْضَآءُ أَبَداً حَتَّىٰ تُؤْمِنُواْ بِٱللَّهِ وَحْدَهُ إِلاَّ قَوْلَ
إِبْرَاهِيمَ لأَبِيهِ لأَسْتَغْفِرَنَّ لَكَ وَمَآ أَمْلِكُ لَكَ مِنَ ٱللَّهِ
مِن شَيْءٍ رَّبَّنَا عَلَيْكَ تَوَكَّلْنَا وَإِلَيْكَ أَنَبْنَا وَإِلَيْكَ
ٱلْمَصِيرُ
তোমাদের
জন্য ইবরাহীম ও তাঁর সাথীদের মধ্যে একটি উত্তম আদর্শ বর্তমান। তিনি তাঁর কওমকে
স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছিলেনঃ আমরা তোমাদের প্রতি এবং আল্লাহকে ছেড়ে যেসব উপাস্যের
উপাসনা তোমরা করে থাক তাদের প্রতি সম্পূর্ণরূপে অসন্তুষ্ট। আমরা তোমাদের
অস্বীকার করেছি। আমাদের
ও তোমাদের মধ্যে চিরদিনের জন্য শত্রুতা ও বিদ্বেষের সৃষ্টি হয়ে গিয়েছে-যতদিন তোমরা
এক আল্লাহর প্রতি ঈমান না আনবে। তবে ইবরাহীমের তার বাপকে একথা বলা (এর অন্তরভুক্ত
নয়) “আমি আপনার জন্য অবশ্যই ক্ষমা প্রার্থনা করবো। তবে
আল্লাহর নিকট থেকে আপনার জন্য নিশ্চিত কোন কিছু অর্জন করে নেয়া আমার আয়ত্বাধীন নয়।”(ইবরাহীম ও ইবরাহীমের দোয়া ছিলঃ) হে আমাদের রব, তোমার
ওপরেই আমরা ভরসা করেছি, তোমার প্রতিই আমরা রুজু করেছি আর তোমার কাছেই আমাদের
ফিরে আসতে হবে। (আল মুমতাহিনাহঃ
৪)
§ আমরা যখন নামায শেষ
করতে যাই-তখন দরুদে
ইব্রাহীম পড়তে হয়।
§ আমরা যখন তাওয়াফ শেষ
করি,
তখন আমাদেরকে ২ রাকাত
নামায পড়তে হয় মাকামে
ইব্রাহীমকে সামনে নিয়েঃ وَٱتَّخِذُواْ
مِن مَّقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى এবং ইবরাহীম যেখানে ইবাদাত করার জন্য দাঁড়ায় সে স্থানটিকে
স্থায়ীভাবে নামাযের স্থানে পরিণত করার হুকুম দিয়েছিলাম। (আল বাকারাহঃ
১২৫)
§ আল্লাহর
ঘরের মাঝে রয়েছে ইব্রাহীমের নিদর্শণঃ
فِيهِ
ءَايَٰتٌ بَيِّنَـٰتٌ مَّقَامُ إِبْرَٰهِيمَ وَمَن دَخَلَهُ كَانَ آمِناً وَللَّهِ
عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلْبَيْتِ مَنِ ٱسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً وَمَن كَفَرَ
فَإِنَّ ٱلله غَنِيٌّ عَنِ ٱلْعَٰلَمِينَ
তার
মধ্যে রয়েছে সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ এবং ইবরাহীমের ইবাদাতের স্থান। আর তার অবস্থা
হচ্ছে এই যে, যে তার মধ্যে প্রবেশ করেছে, সে
নিরাপত্তা লাভ করেছে। মানুষের
মধ্য থেকে যারা সেখানে পৌঁছার সামর্থ রাখে, তারা
যেন এই গৃহের হজ্জ সম্পন্ন করে, এটি তাদের ওপর আল্লাহর অধিকার। আর যে ব্যক্তি এ
নির্দেশ মেনে চলতে অস্বীকার করে তার জেনে রাখা উচিত, আল্লাহ
বিশ্ববাসীর মুখাপেক্ষী নন। (আলে ইমরানঃ ৯৭)
§ কুরআনে হাকীমে ৬৯ বার
ইব্রাহীম নাম নেয়া হয়েছে। আর মুহাম্মদ নাম
এসেছে মাত্র ৪বার।
o
আমরা আক্বীদা
ও আমলে ইব্রাহীমি হতে হবে। তাহলে আমরা মুসলিম হতে পারবো।
مَا
كَانَ إِبْرَاهِيمُ يَهُودِيّاً وَلاَ نَصْرَانِيّاً وَلَكِن كَانَ حَنِيفاً
مُّسْلِماً وَمَا كَانَ مِنَ ٱلْمُشْرِكِينَ
ইব্রাহীম ইহুদী ছিল
না, খৃস্টানও ছিল না বরং সে তো ছিল একজন একনিষ্ঠ মুসলিম এবং সে কখনো মুশরিকদের অন্তরভুক্ত ছিল না।
ইবরাহীমের যারা অনুসরণ করেছে তারাই তার সাথে ঘনিষ্ঠতম সম্পর্ক রাখার অধিকারী। (আলে
ইমরানঃ ৬৭)
قُلْ
صَدَقَ ٱللَّهُ فَٱتَّبِعُواْ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفاً وَمَا كَانَ مِنَ
ٱلْمُشْرِكِينَ
বলে দাও, আল্লাহ
যা কিছু বলেছেন, সত্য বলেছেন। কাজেই তোমাদের একাগ্রচিত্তে ও একনিষ্ঠভাবে ইবরাহীমের
পদ্ধতির অনুসরণ করা উচিত। আর ইব্রাহীম শিরককারীদের অন্তরভুক্ত ছিল না। (আলে
ইমরানঃ ৯৫)
قُلْ
إِنَّنِي هَدَانِي رَبِّيۤ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ دِيناً قِيَماً مِّلَّةَ
إِبْرَاهِيمَ حَنِيفاً وَمَا كَانَ مِنَ ٱلْمُشْرِكِينَ
হে মুহাম্মাদ! বলো, আমার রব
নিশ্চিতভাবেই আমাকে সোজা পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। একদম সঠিক নির্ভুল দীন, যার
মধ্যে কোন বত্রুতা নেই, ইবরাহীমের পদ্ধতি, যাকে সে
একাগ্রচিত্তে একমুখী হয়ে গ্রহণ করেছিল এবং সে মুশরিকদের অন্তরভুক্ত ছিল না। (আল আনআ’মঃ
১৬১)
إِنَّ
إِبْرَاهِيمَ كَانَ أُمَّةً قَانِتاً لِلَّهِ حَنِيفاً وَلَمْ يَكُ مِنَ
ٱلْمُشْرِكِينَ
প্রকৃতপক্ষে
ইব্রাহীম নিজেই ছিল একটি পরিপূর্ণ উম্মত, আল্লাহর হুকুমের অনুগত এবং একনিষ্ঠ। সে
কখনো মুশরিক ছিল না। (আন নাহলঃ ১২০)
ثُمَّ
أَوْحَيْنَآ إِلَيْكَ أَنِ ٱتَّبِعْ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفاً وَمَا كَانَ
مِنَ ٱلْمُشْرِكِينَ
তারপর আমি তোমার
কাছে এ মর্মে অহী পাঠাই যে, একাগ্র হয়ে ইবরাহীমের পথে চলো এবং সে মুশরিকদের
দলভুক্ত ছিল না। (আন নাহলঃ ১২৩)
شَرَعَ
لَكُم مِّنَ ٱلدِّينِ مَا وَصَّىٰ بِهِ نُوحاً وَٱلَّذِيۤ أَوْحَيْنَآ إِلَيْكَ
وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَىٰ أَنْ أَقِيمُواْ ٱلدِّينَ
وَلاَ تَتَفَرَّقُواْ فِيهِ
তিনি
তোমাদের জন্য দ্বীনের সেই সব নিয়ম-কানুন নির্ধারিত করেছেন যার নির্দেশ তিনি নূহকে
দিয়েছিলেন এবং (হে মুহাম্মাদ) যা এখন আমি তোমার কাছে অহীর মাধ্যমে পাঠিয়েছি। আর যার
আদেশ দিয়েছিলাম আমি ইব্রাহীম আ., মূসা আ. ও ঈসাকে আ.। তার সাথে তাগিদ
করেছিলাম এই বলে যে, এ দ্বীনকে কায়েম করো এবং এ ব্যাপারে পরস্পর ভিন্ন হয়ো
না। (হে
মুহাম্মাদ) এই কথাটিই এসব মুশরিকের কাছে অত্যন্ত অপছন্দনীয় যার দিকে তুমি তাদের
আহবান জানাচ্ছো। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা আপন করে নেন এবং তিনি তাদেরকেই নিজের
কাছে আসার পথ দেখান যারা তাঁর প্রতি রুজু করে। (আশ শুরাঃ ১৩)
o
মুসলিম হলে
পরে আমরা মুত্তাকী হতে পারবো।
o
মুত্তাকী
হলে আমরা মুফলিহুনদের অন্তর্ভূক্ত হবো।
বাংলাদেশী
o
জাতির কাছে
আজও পরিস্কার হয়নিঃ
- কেন শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়ে পাকিস্তানীদের সাথে আলোচনায়
গেলেন?
- কেন যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে শেখ পরিবারের জন্য পাকিস্তান সরকার
ভাতা প্রেরণ করলো?
- কেন শেখ পরিবারের ১জন সদস্যও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়নি?
- কেন বীরশ্রেষ্ট, বীর প্রতীক,
বীর বিক্রম-এই গুলো আওয়ামীলীগে নেই।
- কেন রাজাকারের তালিকা করা হলে দল ভিত্তিক হিসাবে সেখানে আওয়ামীলীগেই
রাজকার সংখ্যা বেশী পাওয়া যায়?
o
বাংলাদেশের
জন্ম কিভাবে হলোঃ
§ ৪৭ সালে বিভক্তিতে আমাদের
মুরব্বীরা পাকিস্তানের পক্ষে
মতামত দিয়েছিলেন।
§ ৪৭ সালে পাকিস্তান না হলে
আজ বাংলাদেশ না হয়ে
দ্বিতীয় কাশমীর হতো।
o
পাকিস্তানীদের
বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ কি ছিলঃ
§ আমরা শোষিত হচ্ছি।
§ আমরা কথা বলতে পারতেছিনা।
§ আমারা অধিকার বঞ্চিত।
o
৭১ এর আগেও
আমাদের একটা দেশ ছিল, দেশের নাম ছিল, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র ছিল, একটি
স্বাধীন পতাকা ছিলঃ
§ আমাদের সমস্যা
ছিল, আমরা একপক্ষ কর্তৃক নির্যাতিত ছিলাম।
§ আমরা আমাদের অধিকার হতে পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক বঞ্চিত ছিলাম।
§ ৬ দফার আন্দোলন শুরু হয়েছিল, স্বাধীনতার আন্দোলন ছিল না।
§ ২৪শে কোটা বিরুধী আন্দোলন ছিল, হাসিনা বিরোধী আন্দোলন ছিল
না।
§ ২৪শে যেমন কোটা বিরোধী আন্দোলন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের রূপ
নেয় এবং এক পর্যায়ে দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জিত হয় হাসিনার পলায়নের মাধ্যমে।
§ ৭১ও তেমন ৬ দফার আন্দোলন স্বাধীনতার আন্দোলনের রূপ নেয় এবং
পাকিস্তানীদের নির্বিচার হামলার প্রেক্ষিতে মুক্তিযোদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়
পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পনের মাধ্যমে।
@ আমাদের করণীয়ঃ
o
আমাদের সত্যিকার
মানুষ হতে হবে। এজন্য আমাদেরকেঃ
§ প্রকৃত গোলাম হতে।
§ খলিফার দায়িত্ব পালন করতে
হবে।
o
খলিফার দায়িত্ব
পালন করার জন্য আমাদেরকে সত্যিকার মুসলমান হতে হবে। মুসলমান হতে হলেঃ
§ আমাদেরকে ইব্রাহীমি চেতনায় এগিয়ে
আসতে হবে।
§ ইব্রাহীমের মতো গোলাম হতে
হবে।
§ ইসমাঈলের মতো অনুগত ও শোকর
গোজার হতে হবে।
§ ইব্রাহীমি ত্যাগে ভাস্মর হতে
হবে।
o
বাংলাদেশের
নাগরিকদেরকে ইব্রাহীমের প্রকৃত সন্তান হতে হলে ইব্রাহীমি আদর্শের ধারক মুহাম্মদ সা. এর আদর্শ অনুসরণ করতে হবে।
§ রাসূলের দেখানো পথে চলতে
হবে।
§ রাসূলের দেখানো পথে মানুষদের
ডাকতে হবে।
§ রাসূলের দেখানো পথ তথা কুরআন সুন্নাহর পথে ডাকে কুরআন সুন্নাহ পরিষদ।
অন্যান্য বিষয়ে আমার আলোচনার নোট গুলো পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
0 Comments