দারসুল কুরআন – সূরা আল কাহফ – আয়াত ০১-১২ – মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম

দারসুল কুরআন


দারসুল কুরআন

সূরা আল কাহফ - আয়াত ০১-১২


পরম করুণাময় মেহেরবান আল্লাহর নামে

তেলাওয়াত ও অনুবাদঃ

﴿سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَىٰ بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا ۚ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ﴾

পবিত্র তিনি যিনি নিয়ে গেছেন এক রাতে নিজের বান্দাকে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আক্‌সা পর্যন্ত, যার পরিবেশকে তিনি বরকতময় করেছেন, যাতে তাকে নিজের কিছু নিদর্শন দেখান আসলে তিনিই সবকিছুর শ্রোতা ও দ্রষ্টা

﴿الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَنزَلَ عَلَىٰ عَبْدِهِ الْكِتَابَ وَلَمْ يَجْعَل لَّهُ عِوَجًا ۜ﴾

প্রশংসা আল্লাহরই যিনি তাঁর বান্দার প্রতি এ কিতাব নাযিল করেছেন এবং এর মধ্যে কোনো বক্রতা রাখেননি

﴿قَيِّمًا لِّيُنذِرَ بَأْسًا شَدِيدًا مِّن لَّدُنْهُ وَيُبَشِّرَ الْمُؤْمِنِينَ الَّذِينَ يَعْمَلُونَ الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ أَجْرًا حَسَنًا﴾

একদম সোজা কথা বলার কিতাব, যাতে লোকদেরকে আল্লাহর কঠিন শাস্তি থেকে সে সাবধান করে দেয় এবং ঈমান এনে যারা সৎকাজ করে তাদেরকে সুখবর দিয়ে দেয় এ মর্মে যে, তাদের জন্য রয়েছে ভালো প্রতিদান

﴿مَّاكِثِينَ فِيهِ أَبَدًا﴾

সেখানে তারা থাকবে চিরকাল

﴿وَيُنذِرَ الَّذِينَ قَالُوا اتَّخَذَ اللَّهُ وَلَدًا﴾

আর যারা বলে, আল্লাহ কাউকে সন্তানরূপে গ্রহণ করেছেন, তাদেরকে ভয় দেখায়

﴿مَّا لَهُم بِهِ مِنْ عِلْمٍ وَلَا لِآبَائِهِمْ ۚ كَبُرَتْ كَلِمَةً تَخْرُجُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ ۚ إِن يَقُولُونَ إِلَّا كَذِبًا﴾

এ বিষয়ে তাদের কোনো জ্ঞান নেই এবং তাদের বাপ-দাদারও ছিলো না তাদের মুখ থেকে বেরুনো একথা অত্যন্ত সাংঘাতিক! তারা নিছক মিথ্যাই বলে

﴿فَلَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَّفْسَكَ عَلَىٰ آثَارِهِمْ إِن لَّمْ يُؤْمِنُوا بِهَٰذَا الْحَدِيثِ أَسَفًا﴾

হে মুহাম্মাদ! যদি এরা এ শিক্ষার প্রতি ঈমান না আনে, তাহলে দুশ্চিন্তায় তুমি হয়তো এদের পেছনে নিজের প্রাণটি খোয়াবে

﴿إِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَى الْأَرْضِ زِينَةً لَّهَا لِنَبْلُوَهُمْ أَيُّهُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا﴾

আসলে পৃথিবীতে এ যাকিছু সাজ সরঞ্জামই আছে এগুলো দিয়ে আমি পৃথিবীর সৌন্দর্য বিধান করেছি তাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য যে, তাদের মধ্য থেকে কে ভালো কাজ করে

﴿وَإِنَّا لَجَاعِلُونَ مَا عَلَيْهَا صَعِيدًا جُرُزًا﴾

সবশেষে এসবকে আমি একটি বৃক্ষ-লতাহীন ময়দানে পরিণত করবো

﴿أَمْ حَسِبْتَ أَنَّ أَصْحَابَ الْكَهْفِ وَالرَّقِيمِ كَانُوا مِنْ آيَاتِنَا عَجَبًا﴾

তুমি কি মনে করো গূহা ও ফলক ওয়ালারা আমার বিস্ময়কর নিদর্শনাবলীর অন্তরভুক্ত ছিলো?

﴿إِذْ أَوَى الْفِتْيَةُ إِلَى الْكَهْفِ فَقَالُوا رَبَّنَا آتِنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً وَهَيِّئْ لَنَا مِنْ أَمْرِنَا رَشَدًا﴾

১০ যখন কজন যুবক গূহায় আশ্রয় নিলো এবং তারা বললোঃ হে আমাদের রব! তোমার বিশেষ রহমতের ধারায় আমাদের প্লাবিত করো এবং আমাদের ব্যাপার ঠিকঠাক করে দাও

﴿فَضَرَبْنَا عَلَىٰ آذَانِهِمْ فِي الْكَهْفِ سِنِينَ عَدَدًا﴾

১১ তখন আমি তাদেরকে সেই গূহার মধ্যে থাপড়ে থাপড়ে বছরের পর বছর গভীর নিদ্রায় মগ্ন রেখেছি

﴿ثُمَّ بَعَثْنَاهُمْ لِنَعْلَمَ أَيُّ الْحِزْبَيْنِ أَحْصَىٰ لِمَا لَبِثُوا أَمَدًا﴾

১২ তারপর আমি তাদেরকে উঠিয়েছি একথা জানার জন্য যে, তাদের দু দলের মধ্য থেকে কোনটি তার অবস্থান কালের সঠিক হিসেব রাখতে পারে

সূরার নামকরণঃ

§ এই সূরার প্রথম রুকুর নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ ﴿أَمْ حَسِبْتَ أَنَّ أَصْحَابَ الْكَهْفِ وَالرَّقِيمِ كَانُوا مِنْ آيَاتِنَا عَجَبًا﴾ (তুমি কি মনে করো গূহা ও ফলক ওয়ালারা আমার বিস্ময়কর নিদর্শনাবলীর অন্তরভুক্ত ছিলো?) এখানে উল্লেখিত আল কাহফ (الْكَهْفِ) শব্দকে এর নাম হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছে। এর মানে হলো, এটা এমন সূরা যার মাঝে আল কাহফ শব্দ এসেছে।

عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، سَمِعْتُ الْبَرَاءَ بْنَ عَازِبٍ رضى الله عنهماـ قَرَأَ رَجُلٌ الْكَهْفَ وَفِي الدَّارِ الدَّابَّةُ فَجَعَلَتْ تَنْفِرُ فَسَلَّمَ، فَإِذَا ضَبَابَةٌ ـ أَوْ سَحَابَةٌ ـ غَشِيَتْهُ، فَذَكَرَهُ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ‏ اقْرَأْ فُلاَنُ، فَإِنَّهَا السَّكِينَةُ نَزَلَتْ لِلْقُرْآنِ، أَوْ تَنَزَّلَتْ لِلْقُرْآنِ.‏

হযরত আবু ইসহাক রা. বলেন, বার’আ ইবনু আযিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সাহাবী (উসায়দ ইবনু হুযায়ব) (রাত্রি কালে) সূরা কাহফ তিলাওয়াত করছিলেন। তাঁর বাড়িতে একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল। ঘোড়াটি তখন (আতঙ্কিত হয়ে) লাফালাফি করতে লাগল। তখন ঐ সাহাবী শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য আল্লাহর নিকটে দু’আ করলেন। তারপর তিনি দেখতে পেলেন, একখন্ড মেঘ এসে তাকে ঢেকে ফেলেছে। তিনি নবী সা. এর নিকটে বিষয়টি আলোচনা করলেন। তিনি বললেন, হে অমুক! তুমি এভাবে তিলাওয়াত করতে থাকবে। ইহা তো সাকীনা (প্রশান্তি) ছিল, যা কুরআন তিলাওয়াতের কারণে নাযিল হয়েছিল। (বুখারী)

عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، قَالَ سَمِعْتُ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ يَزِيدَ، سَمِعْتُ ابْنَ مَسْعُودٍ، يَقُولُ فِي بَنِي إِسْرَائِيلَ وَالْكَهْفِ وَمَرْيَمَ وَطَهَ وَالأَنْبِيَاءِ إِنَّهُنَّ مِنَ الْعِتَاقِ الأُوَلِ وَهُنَّ مِنْ تِلاَدِي‏.‏

হযরত ইবনে মাসঊদ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি সূরা বনী ইসরাঈল, সূরা কাহ্ফ, সূরা মরিয়ম, সূরা তাহা এবং সূরা আম্বিয়া সম্পর্কে বলতেন যে, এগুলো হচ্ছে সূরা সমূহের মাঝে উন্নত এবং এগুলো ইসলামের প্রাথমিক যুগে অবতীর্ণ হয়েছে। (বুখারী)

عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ حَفِظَ عَشْرَ آيَاتٍ مِنْ أَوَّلِ سُورَةِ الْكَهْفِ عُصِمَ مِنَ الدَّجَّالِ 

হযরত আবূ দারদা রা. থেকে বর্ণিত। নবী সা. বলেছেন, যে ব্যাক্তি সূরা কাহফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করবে সে দাজ্জাল এর ফিতনা থেকে রক্ষা পাবে। (মুসলিম)

عن أبي سعيد الخدري قال مَن قَرَأَ سورةَ الكَهْفِ لَيْلةَ الجُمُعةِ أضاءَ له من النُّورِ فيما بيْنَه وبيْنَ البَيتِ العَتيقِ

হযরত আবু সাঈদ আল-খুদরী রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ “যে ব্যক্তি জুমুআ’র রাতে সূরা কাহফ পড়বে এটি তার জন্য তার মাঝে ও আল-বাইতুল আতীকের মধ্যবর্তী (স্থান) আলোকিত করে দিবে।” (আদ দারমী)

من قرأ سورةَ الكهفِ في يومِ الجمعةِ ، أضاءَ له مِنَ النُّورِ ما بَينَ الجُمُعتَيْن

“যে ব্যক্তি জুমুআ’র দিন সূরা কাহফ পড়বে এটি তার জন্য দুই জুমুআ’র মধ্যবর্তী (সময়) নূরে আলোকিত করে দিবে।” (আল হাকীম)

وعن ابن عمر رضي الله عنهما قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: مَن قَرَأَ سُورةَ الكَهفِ في يَومِ الجُمُعةِ سَطعَ له نورٌ من تحتِ قدَمهِ إلى عَنانِ السَّماءِ يُضيءُ بِهِ يومَ القِيامَةِ وغُفِرَ لَهُ ما بينَ الجُمعَتينِ

হযরত ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি জুমুআ’র দিন সূরা কাহফ পড়বে তার জন্য তার পায়ের নীচ থেকে আসমানের মেঘমালা পর্যন্ত একটি আলো বিচ্ছুরিত হবে এবং দুই জুমুআ’র মধ্যবর্তী তার যা (গুনাহ) আছে সেটা থেকে তাকে মাফ করে দেয়া হবে।” (আত তারগীব ওয়াত তারহীব)

শানে নুযুলঃ

§ এই সূরা থেকে রাসূল সা. মক্কী জীবনের তৃতীয় অধ্যায়ে নাযিল হওয়া সুরা গুলো শুরু হয়েছে।

§ মক্কী জীবনের চারটি প্রধান অধ্যায় রয়েছে। যেমনঃ

১. প্রথম অধ্যায়ঃ নবুয়াতের শুরু থেকে নবুয়াতের প্রকাশ্য ঘোষণা পর্যন্ত প্রায় ৩ বছর। যখন গোপনে এবং টার্গেট ভিত্তিক দাওয়াত প্রদান করা হয়েছে।

২. দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ নবুওয়াতের প্রকাশ্য ঘোষণার পর ২ বছর সময়। যখন বিরোধিতা শুরু হয় এবং প্রতিরোধে রূপ নেয় এবং তা ঠাট্টা, বিদ্রুপ, উপহাস, দোষারোপ, গালিগালাজ, মিথ্যা প্রচারণা এবং  ক্রমান্বয়ে জোটবদ্ধভাবে বিরোধিতা করার পর্যায়ে পৌঁছে যায়

৩. তৃতীয় অধ্যায়ঃ নবুওয়াতের ৫ম বছর ১০ বছর-যা আবু তালিব ও হযরত খাদিজা রা. এর ইনতিকাল পর্যন্ত সময় ৫ বছর। যখন চরম উৎপীড়নের সূচনা হয় এবং এক পর্যায়ৈ বিরোধীতার মাত্রা চরম আকার ধারণ করে। আবিসিনিয়াতে হিজরত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবরোধ করা হয়।

৪. চতূর্থ অধ্যায়ঃ নাবুওয়াতের ১০ম থেকে ১৩শ বছর পর্যন্ত ৩ বছর। যা ছিল সবচেযে কঠিন ও বিপজ্জনক সময়। তায়েফে গমন ও প্রত্যাখ্যাত হওয়া, হজ্জে আগত আরববাসীকে দাওয়াত, হত্যার ষড়যন্ত্র, আনসারদের ইসলাম গ্রহণ ও হিজরত।

§ আলোচ্য সূরা তৃতীয় অধ্যায় তথা ৫ম নব্বী সন থেকে ১০ম নব্বী সন পর্যন্ত।

o  জুলুম, নিপীড়ন, মারধর ও অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি।

o  বিপুল সংখ্যক মুসলমানকে দেশ ত্যাগ করে হাবশায় হিজরত।

o  মক্কায় থাকা মুসলমান ও নবী সা. এবং তাঁর পরিবার ও বংশের লোকদের আবু তালেব গিরি গুহায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক বয়কটে অবরুদ্ধ জীবন যাপন।

o  আবু তালেব ও হযরত খাদীজার রা. দু’জনের মৃত্যুর মাধ্যমে এ অধ্যায়ে সমাপ্তি।

§  পরবর্তী মুসলমানদের মক্কায় জীবন যাপন অসম্ভব হয়ে পড়ে নবী সা.কে সমস্ত মুসলমানদের নিয়ে মক্কা ত্যাগ করতে হয়

§ সূরা আল কাহফের বিষয়বস্তু থেকে বুঝা যায়, মক্কী যুগের এ তৃতীয় অধ্যায়ের শুরুতে সূরাটি নাযিল হয়েছে যখন জুলুম, নিপীড়ন, বিরোধিতা ও প্রতিবন্ধকতা চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল  কিন্তু তখনও মুসলমানরা হাবশায় হিজতরত করেননি।

§ হাবশায় হিজরতর আগে এই সূরার মাধ্যমে নির্যাতিত মুসলমানদেরকে আসহাবে কাহফের কাহিনী শুনানো হয়, যাতে তাদের হিম্মত বেড়ে যায় এবং তারা জানতে পারে যে, ঈমানদাররা নিজেদের ঈমান বাঁচাবার জন্য ইতিপূর্বে কি করেছে

বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্যঃ

§ মক্কার কুরায়েশরা নাযার ইবনে হারিস ও উকবা ইবনে মুইতকে মদীনার ইহুদী আলিমদের কাছে পাঠায়। মদীনার ইহুদী আলেমরা মুহাম্মদ সা.কে পরীক্ষা করার জন্য একটি প্রশ্নপত্র রেডি করে দিল।

§ নবী সা. এর পরীক্ষা নেবার উদ্দেশ্যে মক্কার মুশরিকরা আহলে কিতাবদের সাথে পরামর্শ করে তাকে ৩টি প্রশ্ন করলো। আর সেই প্রশ্নগুলোর জবাবে এই সূরা আল কাহফ নাযিল হয়।

§ মুশরিকদের ৩টি প্রশ্ন ছিলঃ

১. আসহাবে কাহফ কারা ছিলেন?

২. খিযিরের ঘটনাটি এবং তার তাৎপর্য কি?

৩. যুলকারনাইনের ঘটনাটি কি?

§ উপরের ৩টি প্রশ্নের সাথে সম্পর্কিত কাহিনী হলো ইহুদী আর খৃষ্টানদের ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত কাহিনী। মক্কা বা হিজায এলাকায় এর কোন চর্চা বা জানাশোনা ছিল না। একই কারণে মুহাম্মদ সা.ও এই ঘটনা গুলো জানার সুযোগ নাই। এখন যদি মুহাম্মদ সা. এর কাছে সত্যিই গায়েবের ইলম আসে, তাহলে তিনি বলতে পারবেন। আর যদি বলতে না পারেন, তাহলে প্রমাণিত হবে যে, তার কাছে গায়েবের ইলম আসে না।

§ আল্লাহর রাসূল সা. কে দিয়ে আল্লাহ এই প্রশ্নগুলোর শুধু জবাব দেননি, বরং এই ৩টি ঘটনার সাথে মক্কার কাফেরদের ইসলামের সাথে আচরণের খাপে খাপ মিলিয়ে বর্ণনা করলেন। যেমনঃ

১. আসহাবে কাহফ সম্পর্কে বলা হয়ঃ

o  আসহাফে কাহফ যে তাওহীদের প্রবক্তা ছিলেন, কুরআন সেই তাওহীদের দাওয়াত পেশ করে।

o  আসহাবে কাহফের অবস্থা ছিল মক্কার মজলুম মুসলমানের মতো, আর তারা যে জাতির মধ্যে ছিলেন, তাদের মনোভাব এবং ভূমিকা ছিল মক্কার কুরাইশ কাফেরদের ভূমিকার মতো।

o  ঈমানদারদের জন্য শিক্ষা হলোঃ যদি কাফৈরদের নির্যাতন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে যায় এবং ঈমানদার যদি তার সমাজে শ্বাস গ্রহণের অধিকারও হারিয়ে ফেলে, তবুও বাতিলের সামনে মাথা নত করা যাবে না। বরং আসহাবে কাহফের মতো আল্লাহর উপর ভরসা করে বের হয়ে যাওয়া উচিত।

o  কাফেরদেরকে বলা হয়, আসহাবে কাহফের কাহিনী আখেরাতের বিশ্বাসের একটি নির্ভূল প্রমাণ। আসহাবে কাহফকে যে ভাবে দীর্ঘদিন মৃত্যু নিদ্রায় রেখে আবার জীবিন করে তোলা হয়েছে, তেমনি ভাবে মৃত্যুর পর মানুষকে পূণরায় জীবিত করা হবে-এটা আল্লাহর ক্ষমতার বাহিরে নয়। তাই বিশ্বাস করতে হবে।

২. আসহাবে কাহফের কাহিনী শুনানো হয়েছে সেই সব লোকদের যারা ছিল মক্কার সরদার বা সচ্ছল পরিবারের লোক এবং যারা নওমুসলিমদের উপর জুলুম নিপীড়ন চালাচ্ছিল।  

o  নবী সা. কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে,

১. জালেমদের সাথে আপোস না করা।

২. গরীব সাথীদের মোকাবেলায় বড় লোকদের গুরুত্ব না দেয়া

o  ধনী লোকদের নসীহত করা হয়েছে যে, দুইদিনের আয়েশী জীবন দেখে আখেরাত ভূলে যেও না।

৩. খিযির আর মুসার কাহিনীর মাঝে রয়েছে কাফেরদের প্রশ্নের জবাব আর মুমিনদের জন্য সান্তনার বাণী। খিজির আর মুসার কাহিনীর শিক্ষা হলোঃ

o  আল্লাহর বিশাল সৃষ্টিজগত যেসব উদ্দেশ্য ও কল্যাণকারিতার ভিত্তিতে, তা মানুষের দৃষ্টি আড়ালে রাখা হয়েছে। মানুষের দৃষ্টির সামনের পর্দা উঠিয়ে দিলেই মানুষ দেখতে পারবে কোথায় ক্ষতি আর কোথায় কল্যাণ রয়েছে।

o  যেহেতু মানুষের মাঝে ইনফরমেণ গ্যাপ রয়েছে, তাই কথায় কথায় এমন কেন হলো, এ কি হয়ে গেল? এতো বড় ক্ষতি হলো! এমন কথা মানুষকে বলতে দেখা যায়।

৪. যুলকারনাইনের কাহিনী বর্ণনা করে শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে,

o  তোমরা তো সমান্য সরদার। আর এর মোহে তোমরা হয়ে উঠেছো অহংকারী। অথচ যুলকালাইন, সে ছিল কত বড় জবরদস্ত বিজেতা ও শাসক, বিশাল উায় উপকরণের মালিক। তারপরও সে তার পরিচয় ভূলে যায়নি।

§ কাফেরদের পরীক্ষামূলক প্রশ্ন সমূহের উত্তর দিয়ে আলোচনার টেবিল পুরো উল্টে দিয়ে আবার শুরুর কথা শুনানো হয়েছেঃ তাওহীদ ও আখেরাত পুরোপরি সত্য-তা মেনে নাও, নিজেকে সংশোধন করো, জবাবদিহির মানসিকতা নিয়ে জীবন যাপন করো-এতেই মঙ্গল। না হলে ধ্বংস অনিবার্য।

আসহাবে কাহফের ঘটনা সংক্ষেপঃ

§ নগরীর নামঃ আফসোস (Ephesus) খৃষ্টপূর্ব প্রায় এগারো শতকে যে নগরী গড়ে উঠে এবং একসময় নগরীটি মূর্তিপূজার কেন্দ্রে পরিণত হয় নগরীর মানুষ চাঁদ বিবি নামে খ্যাত ডায়নার (diana) পূজা করতো তার নামে নির্মিত মন্দিকে দুনিয়ার অত্যাশ্চর্য বিষয় বলে গণ্য করা হতো

§ হযরত ঈসা আ. এর পর যখন তাঁর দাওয়াত রোম সাম্রাজ্যে পৌঁছুতে শুরু করে তখন এ শহরের ৭জন যুবক শিরক থেকে তাওবা করে এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে তাদের ধর্মান্তরের কথা শুনে কাইজার ডিসিয়াস (রাজা) তাদের নিজের কাছে ডেকে পাঠান প্রশ্ন করেন, তাদের ধর্ম কি? যুবকরা জানতো, কাইজার ঈসা আ. এর অনুসারীদের রক্তের পিপাসু কিন্তু তারা কোন প্রকার ছয় না করে পরিস্কার বলে দেয়ঃ আমাদের রব তিনিই যিনি পৃথিবী ও আকাশের রব তিনি ছাড়া অন্য কোন মাবুদকে আমারা ডাকি না যদি আমরা এমনটি করি তাহলে অনেক বড় গুনাহ করবো

§ কাইজার রাগান্মিত হয়ে তাদের বলেন, তোমাদের মুখ বন্ধ করো, নয়তো আমি এখানেই তোমাদের হত্যা করবো তারপর বলেন, তোমরা এখনো শিশু তাই তোমাদের তিনদিন সময় দিলাম ইতিমধ্যে যদি তোমরা নিজেদের মত বদলে ফেলো এবং জাতির ধর্মে ফিরে আসো তাহলে তো ভাল, নয়তো তোমাদের শিরচ্ছেদ করা হবে

§ তিন দিনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে যুবক সাতজন শহর ত্যাগ করে কোন পাহাড়ের গুহায় লুকিয়ে থাকার জন্য বের হলো। তাদের সাথে ছিল একটি কুকুর। দীর্ঘ পথ চলার ক্লান্তি নিয়ে তারা পাহাড়ের একটি গুহায় আশ্রয় নেয় এবং ঘুমিয়ে পড়ে। কুকুরটি তাদের গুহার মুখে অবস্থান নেয়।

§ এই কাহিনী ২৫০ সালের। এর ১৯৭ সাল পর ৪৪৭ সালে তাদের ঘুম ভাঙ্গে। যখন কাইজার দ্বিতীয় থিয়োডোসিসের শাসন চলছিল এবং সেই সময়ে সকল মানুষ মূর্তিপূজা ত্যাগ করে খৃষ্টধর্ম গ্রহণ করেছিল।

§ সাত জন যুবক যখন ঘুম থেকে জেগে উঠে এই সময়ে পুরো রোমান সাম্রাজ্য জুড়ে আখেরাতে সম্পর্কিত মতবিরোধ চলছিল। কাইজার বিষয়টা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন এবং এমন কোন নিদর্শনের অপেক্ষায় ছিলেন, যার মাধ্যমে মানুষকে আখেরাতের প্রতি বিশ্বাসী করে গড়ে তোলা যায়।

§ যুবকরা ঘুম থেকে জেগে উঠে পারস্পরিক হিসাব করতে থাকে  যে কতক্ষণ ঘুমিয়েছিল। কেউ পুরো একদিন আবার কেউ দিনের কিছু অংশ এমন আলোচনা চলতে থাকে। এমন সময় তাদের ক্ষুধা লাগে। তাদের মধ্যে একজনের নাম ছিল জীন (Jean), তাকে পার্শবর্তী বাজারে খাবার নিয়ে আসার জন্য পাঠায়। তার হাতে ছিল ২৫০ সালে প্রচলিত কয়েকটি রূপার মুদ্রা।

§ জীনকে যখন খাবার আনতে পাঠানো হয়, তখন তাকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের জন্য বলে দেয়া হয়, যাতে কেউ বুঝতে না পারে যে, তারা ওখানে লুকিয়ে আছে। কারণ তাদের জানা ছিল না যে তারা ১৯৭ বছর ঘুমিয়ে ছিল এবং তাদের মধ্যে ভয় কাজ করছিল যে, যদি মানুষ তাদের ঠিকানা জানতে পারে তাহলে তাদেররকে ধরে নিয়ে যাবে, ডায়নার পূজা করতে বাধ্য করবে।

§ জীবন শহরে বা বাজরে গিয়ে অবাক হয়ে যায়। তিনি দেখেন সকল মানুষ ঈসায়ী হয়ে গেছে, শহরের সব কিছু বদলে গেছে। কেউ আর ডায়না দেবীর পূজা করছে না।

§ জীবন একটি দোকান থেকে রুটি কিনলেন এবং দোকানীকে একটি রূপার মুদ্রা দিলেন, যে মুদ্রাতে কাইজার ডিসিয়াসের ছবি ছাপানো ছিল। দোকানদার মুদ্রাটি দেখে অবাক হয়ে প্রশ্ন কলোঃ এই মুদ্রাটি সে কোথায় পেয়েছে। জীন বললো, এটা তার নিজের টাকা-কোথা থেকে নিয়ে আসেনি। দুই জনের মধ্যে এ নিয়ে কথাকাটি শুরু হলে লোকজন জমা হয়ে গেল এবং অবশেষে বিষয়টি নগর প্রদানের কাছে চলে গেল।

§ নগর প্রধানের পদবী ছিল কোতোয়াল। তিনি বললেন, তুমি  এই গুপ্তধন যে জায়গা থেকে এনেছো, সেই জায়গা আমাকে দেখাৗ। জীবন অবাক হয়ে বললোঃ কিসের গুপ্তধন? এই মুদ্রা আমার নিজের, কোন গুপ্তধনের কথা আমার জানা নাই। তখন কোতোয়াল বললেনঃ তোমার কথা গ্রহণ করা যাচ্ছে না, কারণ তোমার কাছে যে মুদ্রা রয়েছে, তা কয়েক শো বছরের পুরোনো। এই মুদ্রা তো আমাদের মুরব্বীরাও দেখেনি, আর তুমি তো যুবক।

§ তাদের কথাবার্তায় যখন জীবন বুঝতে পারে যে, কাইজার ডিসিয়াস কয়েক যুগ আগে মারা গেছে, তখন সে বিস্মিত হয়ে পড়ে। নিজেকে প্রকৃতিস্থ করে বলেঃ মাত্র গতকালই আমার ছয়জন সাথীকে নিয়ে আমরা শহর থেকে পালিয়েছিলাম ডিসিয়াসের জুলুম থেকে বাঁচার জন্য এবং আমরা সবাই একটা গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। তারা এখনো সেখানে রয়েছে। আমি তাদের জন্য খাবার নিতেই শহরে এসেছি।

§ জীনের কথা শোনে কোতোয়াল তাকে নিয়ে গুহার দিকে চললো আর সংগী হলো অসংখ্য উৎসুক জনতা। এদিকে খবরটা কাইজার ডিসিয়াসের কাছেও পাঠানো হয়। তিনি নিজে এসে গুহাতে উপস্থিত হোন।

§ গুহাতে এসে সবাই তাদের থেকে বরকত নিতে থাকে। এক সময় তারা  গুহার মধ্যে শুয়ে পড়েন এবং সেখানেই তাদের মৃত্যু হয়।

§ সাতজন যুবকের এই নিদর্শণ দেখে উপস্থিত লোকেরা মৃত্যুর পর আরেকটা জীবন আছে, তা বিশ্বাস করে। কাইজারের নির্দেশে গুহার মধ্যে একটি ইবাদত খানা নির্মাণ করা হয়।

ব্যাখ্যাঃ

﴿الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَنزَلَ عَلَىٰ عَبْدِهِ الْكِتَابَ وَلَمْ يَجْعَل لَّهُ عِوَجًا ۜ﴾

  ১। সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য যিনি তাঁর বান্দাহর জন্য আল কিতাব নাযিল করেছেন এবং তার জন্য বক্রতা রাখেননি।

§ الْحَمْدُ لِلَّهِ - সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য

o  আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা সর্বাবস্তায় প্রশংসার যোগ্য-তা শুরুতেও, শেষেও, সুখে-দুঃখে, জয়ে-বিপদে। কুরআনে বহু জায়গায় আল্লাহ নিজের প্রশংসা করেছেন, যেন মানুষ বুঝতে পারে—সব কিছুর মূল মালিক, হুকুমদাতা ও অনুগ্রহকারী তিনি।

§ الَّذِي أَنزَلَ عَلَىٰ عَبْدِهِ الْكِتَابَ - যিনি তাঁর বান্দাহর জন্য আল কিতাব নাযিল করেছেন

o  কুরআনের অবতরণ আল্লাহর এক মহান নিয়ামত। এই অংশে বলা হয়েছে, আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল মুহাম্মদ সা. এর উপর কুরআনের অবতরণ হচ্ছে মানবজাতির জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ অনুগ্রহ।

§ وَلَمْ يَجْعَل لَّهُ عِوَجًا - এবং তার জন্য বক্রতা রাখেননি।

আরবী ভাষায় কোন প্রকার বক্রতা বা একদিকে ঝুকে পড়াকে عوج বলা হয়।

এই কথার দুইটি অর্থ রয়েছে।

. কুরআনের মাঝে এমন কোন কথাবার্তা নাই, যা বুঝতে পারা যায় না

. সত্য ন্যায়ের বাহিরে এমন কোন কথা নেই যা হকপন্থী মানুষ মানতে ইতস্তত করতে পারে।

৩. কুরআন মানুষকে অন্ধকার থেকে আলো তথা অজ্ঞতা, শিরক, পাপ থেকে ঈমান, জ্ঞান, সৎপথের দিকে মানুষকে নিয়ে যায়।

৪. কুরআন সরল পথের দিকনির্দেশনা দেয়, যাতে কোনো বিকৃতি নেই।

৫. কুরআন অবিশ্বাসীদের জন্য সতর্কবার্তা এবং বিশ্বাসীদের জন্য সুসংবাদ।

﴿قَيِّمًا لِّيُنذِرَ بَأْسًا شَدِيدًا مِّن لَّدُنْهُ وَيُبَشِّرَ الْمُؤْمِنِينَ الَّذِينَ يَعْمَلُونَ الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ أَجْرًا حَسَنًا﴾

  ২। (এই কিতাব) সুপ্রতিষ্ঠিত যাতে করে তা তাঁর পক্ষ থেকে কঠিন আযাব সম্পর্কে সাবধান করে দেয় এবং সুখবর দেয় মুমিনদেরকে যারা নেক কাজ করে। অবশ্যই তাদের জন্য উত্তম বদলা রয়েছে।

§ قَيِّمًا لِّيُنذِرَ بَأْسًا شَدِيدًا مِّن لَّدُنْهُ وَيُبَشِّرَ الْمُؤْمِنِينَ  - এই কিতাব সুপ্রতিষ্ঠিত যাতে করে তা তাঁর পক্ষ থেকে কঠিন আযাব সম্পর্কে সাবধান করে দেয় এবং সুখবর দেয় মুমিনদেরকে যারা নেক কাজ করে।

o  এই কিতাব অসৎ লোকদের ভয় দেখায়।

o  এই কিতাব সৎ লোকদের সুসংবাদ প্রদর্শন করে।

o  এই কিতাব বিরুদ্ধাচরণকারী আর প্রত্যাখানকারীদের কঠিন শাস্তির খবর দেয়-যে শাস্তি হবে দুনিয়াতে ও আখেরাতে। এমন শাস্তি, যা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ দিতে পারে না।

o  এই কিতাব মহাপুরস্কারের সুসংবাদ দেয়-যারা ঈমান আনবে, আমলে সালেহ করবে-যে পুরস্কার হবে চিরস্থায়ী জান্নাত।

§ قَيِّمًا  মানে সুপ্রতিষ্ঠিত ভাবে। অন্য কথায়, অন্যান্য কিতাব সমূহের প্রতিষ্ঠাকারী হিসাবে অথবা সঠিক ভাবে।

﴿مَّاكِثِينَ فِيهِ أَبَدًا﴾

  ৩। তাতে তারা চিরদিন অবস্থানকারী।

o  এই কিতাব মহাপুরস্কারের সুসংবাদ দেয়-যারা ঈমান আনবে, আমলে সালেহ করবে-যে পুরস্কার হবে চিরস্থায়ী জান্নাত। যেখানে তারা চিরকাল থাকবে।

﴿وَيُنذِرَ الَّذِينَ قَالُوا اتَّخَذَ اللَّهُ وَلَدًا﴾

  ৪। আর তাদেরকেও সতর্ক করে দেয়, যারা বলে-আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন।

o  এই কিতাব তাদেরকে শাস্তি হতে সতর্ক করে সে সব লোকদের যারা বলেঃ আল্লাহর সন্তান রয়েছে।

o  আল্লাহর সন্তান রয়েছে বলে যারা দাবী করে, তারা হলোঃ খৃষ্টান, ইহুদী এবং আরব মুশরিকরা।

o  তারা বলতোঃ ফেরেশতারা আল্লাহর কন্যা।

﴿مَّا لَهُم بِهِ مِنْ عِلْمٍ وَلَا لِآبَائِهِمْ ۚ كَبُرَتْ كَلِمَةً تَخْرُجُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ ۚ إِن يَقُولُونَ إِلَّا كَذِبًا﴾

  ৫। এতে তাদের তো কোন জ্ঞান-ই নেই, আর না ছিল তাদের বাপ-দাদাদের। তা-তো  জঘন্য কথা যা তাদের মুখ থেকে বের হয়; তারা (এতে) মিথ্যা ছাড়া কিছুই বলে না।

§ مَّا لَهُم بِهِ مِنْ عِلْمٍ وَلَا لِآبَائِهِمْ - এ বিষয়ে তাদের কোনো জ্ঞান নেই এবং তাদের বাপ-দাদারও ছিলো না

তারা নিজেদের ভক্তি শ্রদ্ধার বাড়াবাড়ি থেকে এমন একটি মনগড়া মত বানিয়ে দিয়েছে যে, অমুককে আল্লাহর পুত্র। কিংবা অমুককে আল্লাহ পু্ত্র হিসাবে গ্রহণ করেছেন। এ ব্যাপারে তারা যেমন কিছু জানেনা, তেমনি তাদের পূর্বপুরুষরাও কিছু জানেনা এবং এই ধরণের কথা যে, আল্লাহর ব্যাপারে বেয়াদবী ও মিথ্যাচার সেই অনুভূতিও ওদের নাই।

§ كَبُرَتْ كَلِمَةً تَخْرُجُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ - তা-তো  জঘন্য কথা যা তাদের মুখ থেকে বের হয়।

মানে তাদের কথার পক্ষে তাদের বলা কথা ছাড়া কোন ভিত্তি নাই এবং তাদের কাছে কোন দলীল প্রমাণ নাই। তাদের কাছে আছে কেবল মিথ্যাচার ও অপবাদ।

﴿فَلَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَّفْسَكَ عَلَىٰ آثَارِهِمْ إِن لَّمْ يُؤْمِنُوا بِهَٰذَا الْحَدِيثِ أَسَفًا﴾

  ৬। আপনি তো সম্ভবত তাদের পেছনে আক্ষেপ করতে করতে আপনার নিজের জীবন শেষকারী হয়ে যাবেন, তারা এ কথায় ঈমান না আনে।

§ নবী সা. এর মাঝে সে সময়ে একটা মানসিক টানাপোড়ন চলছিল-এই আয়াতে সেই দিকে ইংগিত করা হয়েছে।

§ রাসূল সা. এবং তার সংগী সাথীদের কষ্ট দেয়া হচ্ছিল, এজন্য তাঁর মনে কোন দূঃখ ছিল না। বরং তার দূঃখের বিষয় হলোঃ তার জাতি তার দাওয়াতে সাড়া না দেয়া। তিনি এই জাতিকে নৈতিক অধপতন, ভ্রষ্টাচার ও বিভ্রান্তি থেকে বের করে আনতে চাইছিলেন। তিনি মনে করছিলেন যে, যদি তার জাতি এই ভ্রষ্টতা থেকে বেরিয়ে না আসে, তাহলে তার ফল ধ্বংস ও আল্লাহর আযাব। তিনি সেই পরিণতি থেকে রক্ষা করার জন্য দিনরাত চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন।

§ তাদের অবস্থাটি বর্ণিত হয়েছে একটি হাদীসে এই ভাবেঃ

عن جابر رضي الله عنه قال‏:‏ قال رسول الله صلى الله عليه وسلم مَثَلي ومَثَلُكم كمَثَل رجل أوقد نارًا ، فجعل الجنادبُ والفَرَاشُ يقَعْنَ فيها ، وهو يذبُّهنَّ عنها ، وأنا آخذ بحَجُزِكم عن النار ، وأنتم تفلتون من يدي

“আমার ও তোমাদের দৃষ্টান্ত এমন এক ব্যক্তির মতো যে আলোর জন্য আগুন জ্বালালো কিন্তু পতংগরা তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে শুরু করলো পুড়ে মারার জন্য সে এদেরকে কোন ক্রমে আগুন থেকে বাঁচাবার চেষ্টা করে কিন্তু এ পতংগরা তার কোন প্রচেষ্টাকেই ফলবতী করতে দেয় না আমার অবস্থা অনুরূপ আমি তোমাদের হাত ধরে টান দিচ্ছি কিন্তু তোমরা আগুনে লাফিয়ে পড়ছো” (বুখারী ও মুসলিম)

§ এই আয়াতে বাহ্যিক ভাবে এটুকু বলা হয়েছেঃ সম্ভবত তুমি এদের পিছনে নিজের প্রাণটি খোয়াবে।

§ কিন্তু সূক্ষ্মভাবে নবী সা.কে সান্তনা দেয়া হয়েছে যে, এদের ঈমান আনা বা না আনা-এর দায় তোমার উপর বর্তায় না। বিধায় তুমি অনর্থক নিজেকে দূঃখ ও শোকের মাঝে জালাইতেছো। তোমার কাজ হলো সুখবর দেয়া, ভয় দেখানো-মুমিন বানানো হয়।

§ بَاخِعٌ এর ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসির রাহি. বলেনঃ أي مهلك نفسك بحزنك عليهم অর্থাৎ তুমি তাদের কথা চিন্তা করে নিজের সত্ত্বাকে ধ্বংস করো বা তুমি আত্মহত্যা করো।

§ بِهَٰذَا الْحَدِيثِ মানে আল কুরআন।

§ কুরআনে অন্যত্র এই কথাগুলো বলা হয়েছে এই ভাবেঃ

﴿فَلَا تَذْهَبْ نَفْسُكَ عَلَيْهِمْ حَسَرَٰتٍ﴾ 

(হে নবী!) অযথা ওদের জন্য দুঃখে ও শোকে তুমি প্রাণপাত করো না (ফাতিরঃ ৮)

﴿وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَلَا تَكُ فِي ضَيْقٍ مِّمَّا يَمْكُرُونَ﴾

এদের কার্যকলাপে দুঃখ করো না এবং এদের চক্রান্তের কারণে মনঃক্ষুণ্ন হয়ো না। (আন নাহলঃ ১২৭)

﴿لَعَلَّكَ بَـٰخِعٌۭ نَّفْسَكَ أَلَّا يَكُونُوا۟ مُؤْمِنِينَ﴾

হে মুহাম্মাদ! এ লোকেরা ঈমান আনছে না বলে তুমি যেন দুঃখে নিজের প্রাণ বিনষ্ট করে দিতে বসেছ। (আশ শুআ’রাঃ ৩)

﴿إِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَى الْأَرْضِ زِينَةً لَّهَا لِنَبْلُوَهُمْ أَيُّهُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا﴾

  ৭। আমি অবশ্যই যমীনে যা আছে তাকে তার (যমীনের) জন্য সাজ-সজ্জার উপকরণ করে দিয়েছি যেন আমি তাদেরকে (মানুষকে) পরীক্ষা করতে পরি-কে তাদের মধ্যে কাজে বেশী ভালো।

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ الدُّنْيَا حُلْوَةٌ خَضِرَةٌ، وَإِنَّ اللهَ مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيهَا، فَيَنْظُرُ كَيْفَ تَعْمَلُونَ، فَاتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاءَ، فَإِنَّ أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِي إِسْرَائِيلَ كَانَتْ فِي النِّسَاءِ

হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, নবী সা. বলেন, নিশ্চয় দুনিয়া মধুর ও সবুজ । আর নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে এর প্রতিনিধি নিয়োজিত করে দেখবেন যে, তোমরা কিভাবে কাজ করছ? অতএব তোমরা দুনিয়ার ধোঁকা থেকে বাঁচ এবং নারীর (ফিৎনা থেকে) বাঁচকারণ, বনী ঈসরাঈলের সর্বপ্রথম ফিৎনা নারীকে কেন্দ্র করেই হয়েছিল।’’ (মুসলিম)

﴿وَإِنَّا لَجَاعِلُونَ مَا عَلَيْهَا صَعِيدًا جُرُزًا﴾

  ৮। আর আমি অবশ্যই এর (যমীনের) উপর যা কিছু আছে সবকিছুকে এক গাছপালাহীন মাঠ সমতল যমীন বানিয়ে দেব।

§ এই কথা গুলো বলা হচ্ছে কাফেরদের উদ্দেশ্য করে। যেমন প্রথম আয়াতে নবী সা.কে সম্বোধন করা হয়েছিল।

§ নবী সা.কে সান্তনার বানী শোনানোর পর এখন তাকে অস্বীকারকারীদের সম্বোধন করে বলা হচ্ছেঃ পৃথিবীতে প্রাপ্ত মন ভূলানো চাকচিক্য, সাময়িক সৌন্দর্য-এগুলো সব তোমাদের জন্য পরীক্ষা। এগুলো আল্লাহর যমীনের আল্লাহর গোলামদের আরামের জন্য সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু তোমরা এর মজা লুটাকেই উদ্দেশ্য বানিয়ে নিয়েছো। ফলে তোমরা উপদেশদাতার কথায় কান দিচ্ছো না। কিন্তু এগুলো আরাম আয়েশের জিনিস নয়, বরং পরীক্ষার উপকরণ। এগুলোতে বসিলে তোমাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে, তোমরা এতে ভূলে যাও, নাকি আসল মর্যাদা তথা আল্লাহর বন্দেগীর কথা মনে রেখে সঠিক পথে চলো।

§ দুনিয়ার এই আরাম আয়েশ ঠিক ততদিন চলবে, যতদিন পরীক্ষা চলবে। পরীক্ষা শেষে এই দুনিয়াতে ধূ ধূ প্রান্তর ছাড়া আর কিছু থাকবে না।

§ কুরআনে অন্যত্র বলা হয়েছেঃ

﴿أَوَلَمْ يَرَوْا۟ أَنَّا نَسُوقُ ٱلْمَآءَ إِلَى ٱلْأَرْضِ ٱلْجُرُزِ فَنُخْرِجُ بِهِۦ زَرْعًۭا تَأْكُلُ مِنْهُ أَنْعَـٰمُهُمْ وَأَنفُسُهُمْ ۖ أَفَلَا يُبْصِرُونَ﴾ 

আর এরা কি কখনো এ দৃশ্য দেখেনি যেআমি ঊষর ভূমির ওপর পানির ধারা প্রবাহিত করি এবং তারপর এমন জমি থেকে ফসল উৎপন্ন করি যেখান থেকে তাদের পশুরাও খাদ্য লাভ করে এবং তারা নিজেরাও খায়তবুও কি এরা কিছুই দেখে না? (আস সিজদাহঃ ২৭)

﴿أَمْ حَسِبْتَ أَنَّ أَصْحَابَ الْكَهْفِ وَالرَّقِيمِ كَانُوا مِنْ آيَاتِنَا عَجَبًا﴾

  ৯। হে নবী! আপনি কি মনে করেন যে, গুহার অধিবাসীরা ও রাকীম বা ফলক এর অধিবাসীরা আমার নিদর্শনাবলীল মধ্যে অতি আশ্চর্য বিষয় ছিল?

§ الْكَهْفِ গূহা।

o  আরবী ভাষায় বড় এবং বিস্তুত গুহাকে বলা হয়ঃ কাহফ আর ছোট ও সংকীর্ণ গুহাকে বলা হয়ঃ গার।

§ الرَّقِيمِ ফলক।

o  আর রাকীম এর মূল অর্থ হলো ফলক। কিন্তু বিভিন্ন অর্থ এই আয়াতে গ্রহণ করা হয়েছে। যেমনঃ

১. আসহাবে কাহফ এর ঘটনা যে এলাকায় সংঘটিত হয়েছে সেই এলাকার নাম আর রাকীম। যা আইলাহ বা আকাবাহ এবং ফিলিস্তিনের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত। (কয়েকজন সাহাবী ও তাবেয়ীর মত)

২. আসহাবে কাহফ এর স্মরণে গুহার মুখে একটি স্মৃতি ফলক বা শিলালিপি স্থাপন করা হয়েছিল, তাকে রাকীম বা ফলক হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। (কয়েকজন পুরাতন মুফাস্সিরের মত)

৩. আসহাবে কাহফ-এর স্থানকে বাইবেলে রেকম বা রাকম বলা হয়েছে। যা ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক কেন্দ্র পেট্টা এর প্রাচীন নাম। (মাওলানা আবুল কালাম)

৪. আর রাকীম মানে ফলক বা শিলালিপি। (মাওলানা মওদূদী)

§ كَانُوا مِنْ آيَاتِنَا عَجَبًا - আমার বিস্ময়কর নিদর্শনাবলীর অন্তরভূক্ত ছিলো।

o  কয়েকজন লোককে দুই তিনশ বছর ঘুমিয়ে রাখা, ঘুমাবার আগে যেমন তারা সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান ছিল তেমনি অবস্থায় জাগিয়ে তোলা-এই কাজটা যে আল্লাহ আকাশ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, তার শক্তিমত্তার প্রমাণ।

﴿إِذْ أَوَى الْفِتْيَةُ إِلَى الْكَهْفِ فَقَالُوا رَبَّنَا آتِنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً وَهَيِّئْ لَنَا مِنْ أَمْرِنَا رَشَدًا﴾

  ১০। যখন কয়েকজন যুবক গুহাতে আশ্রয় নিল এবং তারা বললো-হে আমাদের রব! আমাদেরকে আপনার নিকট থেকে রহমত দান করুন আর আমাদের জন্য আমাদের কাজকর্মের সঠিক ব্যবস্থা করে দিন।

§ এখানে আসহাবে কাহফের সেই যুবকদের কথা বলা হচ্ছে, যারা তাদের দ্বীন ত্যাগে বাধ্য হবে এমন আশংকায় তাদের কওমের নিকট থেকে পালিয়ে গিয়ে একটি পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করলো। গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করার পর তাদের সামনে দুইটি সমস্যা দেখা দিল। ১. তাদের পরবর্তী গন্তব্য স্থির করা। ২. তাদের অবস্থানকালীন সময়ে খাবারের ব্যবস্থা করা। এজন্য তারা তাদের মালিকে কাছে দেয়া করলো: হে আমাদের মালিক! আমাদেরকে আপনার নিকট থেকে রহমান দান করুন অর্থাৎ লোকদের হাত থেকে আমাদের বাঁচান এবং আমাদের কাজকর্মের সঠিক ব্যবস্থা করে দিন  তথা আমাদের রিযিকের ব্যবস্থা করুন অথবা আমাদেরকে সঠিক পথের নির্দেশ করুন কিংবা আমাদের টার্গেট ঠিক করে দিন।

§ যেমনটা আমরা জানতে পারি হযরত আয়েশা রা. বর্ণিত একটি হাদীস থেকে। তিনি বলেনঃ নবী সা. আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। আমি নামায পড়ছিলাম। তার কি একটা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আমি তাতে বিলম্ব করলাম। তিনি বলেনঃ হে আয়েশা! তুমি অবশ্যই সংক্ষিপ্ত অথচ ব্যাপকার্থক দোয়া করবে। নামায শেষ করে আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সংক্ষিপ্ত অথচ ব্যাপকার্থক দোয়া কি? তিনি বলেনঃ তুমি বলোঃ

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنَ الْخَيْرِ كُلِّهِ ، عَاجِلِهِ وَآجِلِهِ ، مَا عَلِمْتُ مِنْهُ وَمَا لَمْ أَعْلَمْ ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الشَّرِّ كُلِّهِ عَاجِلِهِ وَآجِلِهِ ، مَا عَلِمْتُ مِنْهُ وَمَا لَمْ أَعْلَمُ ، وَأَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَمَا قَرَّبَ إِلَيْهَا مِنْ قَوْلٍ أَوْ عَمَلٍ ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ وَمَا قَرَّبَ إِلَيْهَا مِنْ قَوْلٍ أَوْ عَمَلٍ ، وَأَسْأَلُكَ مِمَّا سَأَلَكَ بِهِ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، وَأَعُوذُ بِكَ مِمَّا تَعَوَّذَ مِنْهُ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، وَمَا قَضَيْتَ لِي مِنْ قَضَاءٍ فَاجْعَلْ عَاقِبَتَهُ رُشْدًا

হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট বিলম্বে ও অবিলম্বে, আমার জ্ঞাত ও অজ্ঞাত সব রকম কল্যাণ কামনা করছি। আমি তোমার নিকট বিলম্বে ও অবিলম্বে আমার জানা ও অজানা সব রকম ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আমি তোমার নিকট বেহেশত এবং যে কথা ও কাজ বেহেশতের নিকটবর্তী করে দেয় তা প্রার্থনা করছি। আমি তোমার নিকট দোযখ থেকে এবং যে কথা ও কাজ দোযখের নিকটবর্তী করে দেয় তা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি তোমার নিকট সেই জিনিস চাইতেছি যা মুহাম্মাদ সা. তোমার নিকট চেয়েছেন। আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি সেই জিনিস থেকে যা থেকে মুহাম্মাদ সা. তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। আমার ব্যাপারে তুমি যে ফয়সালা করেছো পরিণামে তাকে (আমার) হেদায়াতের উপায় বানাও” (ইবনে মাজাহ)।

§ হযরত বুসর বিন আরত্বাহ রা. বর্ণিত আরেকটি দোয়া, যা মুসনাদে আহদে বির্ণত হয়েছে। যা নিম্নরূপঃ

اللَّهُمَّ أَحْسِنْ عَاقِبَتِنَا فِي الْأُمُورِ كُلِّهَا، وَأَجِرْنَا مِنْ خِزْيِ الدُّنْيَا وَعَذَابِ الْآخِرَةِ.

হে আল্লাহ! আমাদের সকল কাজে পরিণতি উত্তম করুন এবং আমাদের দুনিয়ার অপমান ও আখিরাতের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।

﴿فَضَرَبْنَا عَلَىٰ آذَانِهِمْ فِي الْكَهْفِ سِنِينَ عَدَدًا﴾

  ১১। অতপর আমি তাদেরকে গুহায় ঘুমন্ত অবস্থায় বহু বছর রেখে দিলাম।

§ গুহায় আশ্রয় গ্রহণকারী যুবকদের দোয়ার জবাবে আল্লাহ তাদেরকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হলো এবং আর সেই ঘুমের মধ্যেই তারা বছরের পর বছর কাটিয়ে দিল।

﴿ثُمَّ بَعَثْنَاهُمْ لِنَعْلَمَ أَيُّ الْحِزْبَيْنِ أَحْصَىٰ لِمَا لَبِثُوا أَمَدًا﴾

  ১২। তারপর আমি তাদেরকে পূণঃজাগিয়ে উঠালাম। যাতে আমি জেনে নিতে পারি দু’দলের কোনটি সঠিক নির্ণয়কারী যা (সময়কাল) তারা অবস্থান করছিল।

§ এক সময় আল্লাহ তাদেরকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুললেন। যাতে ঘুমন্ত এই যুবকদের দল এবং বছরের পর বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর চলমান প্রজন্মের দল-এই দুই দলের মধ্যে কারা সঠিক অবস্থানকাল গণনা করতে পারে।

§ أَمَدًا মানে সংখ্যা বা গণনা। আবার শেষ সীমা অর্থেও এই শব্দটি ব্যবহার হয়ে থাকে।


 


Post a Comment

0 Comments