দারসুল কুরআন – সূরা আন নাহল – আয়াত ১২৫-১২৬ – মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম

 

দারসুল কুরআন

দারসুল কুরআনঃ বিষয়-দাওয়াত ইলাল্লাহ

সূরা আন নাহলঃ আয়াত ১২৫-১২৬ 

পরম করুণাময় মেহেরবান আল্লাহর নামে

তেলাওয়াত ও অনুবাদঃ

﴿ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ ۖ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ ۖ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ﴾

১২৫ ডাক তোমার রবের পথের দিকে, হিকমাত ও উত্তম নসীহতের সাথে আর লোকদের সাথে পরস্পর বিতর্ক কর উত্তম পন্থায় তোমার রবই অধিক অবগত আছেন, কে তাঁর পথ হতে গোমরাহ হয়েছে, আর কে সঠিক পথে আছে

﴿وَإِنْ عَاقَبْتُمْ فَعَاقِبُوا بِمِثْلِ مَا عُوقِبْتُم بِهِ ۖ وَلَئِن صَبَرْتُمْ لَهُوَ خَيْرٌ لِّلصَّابِرِينَ﴾

১২৬ যদি তোমরা কাউকে শাস্তি দাও, তাহলে ঠিক ততোটুকু শাস্তি দেবে, যতোটুকু অন্যায় তোমাদের সাথে করা হয়েছে তবে যদি তোমরা ধৈর্য্য ধারণ কর, তাহলে ধৈর্য্যশীলদের জন্য তাই উত্তম

আলোচ্য আয়াত সমূহের গুরুত্বঃ

হযরত হরম ইবনে হাইয়ানের মৃত্যুর সময় তার আত্মীয়-স্বজনরা ওসীয়াতের অনুরোধ করলে তিনি বললেনঃ

মানুষ সাধারণত অর্থ সম্পদের ব্যাপারে ওসীয়াত করে অর্থ সম্পদ আমার কাছে নেই কিন্তু আমি তোমাদের আল্লাহর আয়াত সমূহ বিশেষতঃ সূরা নাহলের শেষ আয়াত সমূহের ব্যাপারে ওসিয়াত করছি এগুলো শক্ত ভাবে আঁকড়ে থাকবে (তাফসীরে কুরতুবী)

সূরার নামকরণঃ

সুরার ৬৮ নং আয়াতে  وَأَوْحَى رَبّـُـــكَ إِلـَــى النَّحْـــلِ থেকে নামকরণ করা হয়েছে  نَحْــلْ অর্থ-মৌমাছি

শানে নুযুলঃ

§ সূরাটি মক্কী জীবনের শেষ দিকে নাযিল হয়েছে(তাফহীম)

§ দার কুতুনী ইবনে আব্বাস রা. এর রেওয়ায়েত বর্ণনা করেনঃ ওহুদ যুদ্ধে ময়দান থেকে মুশরিকরা ফিরে গেলে ৭০ জন সাহাবীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় এর মাঝে নবী সা. এর চাচা হযরত হামযা রা. এর দেহ ও ছিল যা ছিল নাক-কান কাটা ও বিকৃত দেখে নবী সা. দারুন মর্মাহত হলেন এবং বললেনঃ আল্লাহর কসম, আমি হামযার বদলে মুশরিকদের ৭০জনের মৃত দেহ বিকৃত করব’ তার প্রেক্ষিতে এ আয়াত গুলো নাযিল হয় নবীকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় আপনাকে পাঠানে হয়েছে দাওয়াত দেয়ার জন্য মানুষকে জাহান্নামের পথ থেকে জান্নাতের পথে নিয়ে যাবার জন্য আপনার অধিকার আছে প্রতিশোধের কিন্তু কল্যাণ সবর করে দাওয়াত প্রদানের মধ্যে

বিষয়বস্তুঃ

মুসলমানদের দাওয়াত প্রদানে তাকিদ, দাওয়াত প্রচারের পূর্ণাঙ্গ কর্মপন্থা, মূলনীতি ও শিষ্টাচারের পূর্ণ বিবরণ

ব্যাখ্যাঃ

﴿ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ ۖ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ ۖ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ﴾

১২৫ ডাক তোমার রবের পথের দিকে, হিকমাত ও উত্তম নসীহতের সাথে আর লোকদের সাথে পরস্পর বিতর্ক কর উত্তম পন্থায় তোমার রবই অধিক অবগত আছেন, কে তাঁর পথ হতে গোমরাহ হয়েছে, আর কে সঠিক পথে আছে

اُدْعُ

·      اُدْعُ অর্থঃ 

ডাক, দাওয়াত দাও, আহবান করা, Call / Call to Allah/ Call to Islam.

·     বিজ্ঞাপন প্রচার করাঃ প্রচারেই প্রসার

-         ১০০% হালাল সাবানের বিজ্ঞাপনের কথা আমাদের মনে আছে

-         লাক্স সাবান আমাদের নানী দাদীরা এই সাবান ব্যবহার করছেন তারপরেও সবচেয়ে বেশী যে সাবানের বিজ্ঞাপন টিভিতে প্রচার করা হয়, তার নাম লাক্স

§  কুরআনে আল্লাহ বলছেনঃ

﴿وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًۭا مِّمَّن دَعَآ إِلَى ٱللَّهِ وَعَمِلَ صَـٰلِحًۭا وَقَالَ إِنَّنِى مِنَ ٱلْمُسْلِمِينَ﴾

আর সে ব্যক্তির কথার চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে? যে আল্লাহর দিকে আহবান জানায় এবং ঘোষনা করে যে, আমি মুসলমানদের   অন্তর্ভূক্ত(হা-মীম-আস সাজদাঃ ৩৩)

§  হাদীসঃ

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً وَحَدِّثُوا عَنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَلَا حَرَجَ وَمَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ .

“আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ একটি আয়াত হলেও তা আমার পক্ষ থেকে পৌছিয়ে দাও আর বনী ইসরাঈল সম্পর্কে আলোচনা কর, তাতে কোন দোষ নাই যে ব্যক্তি আমার প্রতি ইচ্ছাপূর্বক মিথ্যা আরোপ করে  তার ঠিকানা  জাহান্নামে সন্ধান করা উচিত” (বুখারী)

وَعَنِ ابنِ مَسعُود رضي الله عنه قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: نَضَّرَ اللهُ امْرَأً سَمِعَ مِنَّا شَيْئاً، فَبَلَّغَهُ كَمَا سَمِعَهُ، فَرُبَّ مُبَلَّغٍ أَوْعَى مِنْ سَامِعٍ.

“আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আল্লাহ্ সেই ব্যক্তির মুখ উজ্জল করুন, যে আমার কোন হাদীস শুনেছে এবং যে ভাবে শুনেছে, সেভাবেই তা অপরের নিকট পৌছিয়েছে কেননা অনেক সময় যাকে পৌছানো হয়, সে ব্যক্তি শ্রোতা অপেক্ষা অধিক রক্ষণাবেক্ষণকারী বা জ্ঞানী হয়ে থাকে (তিরমিযি, ইবনে মাজাহ)

§  দাওয়াতী কাজ করেছেন সকল নবী সকল নবী তাদের তৎপরতার সূচনা করেছেন দাওয়াতের মাধ্যমে 

§  নবী সা. ও সাহাবীদের  পুরো জিন্দেগীই ছিল-দাওয়াতের কাজ

§  নবীর পরিচয় দেয়া হচ্ছেঃ

﴿يَـٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِىُّ إِنَّآ أَرْسَلْنَـٰكَ شَـٰهِدًۭا وَمُبَشِّرًۭا وَنَذِيرًۭا﴾﴿وَدَاعِيًا إِلَى ٱللَّهِ بِإِذْنِهِۦ وَسِرَاجًۭا مُّنِيرًۭا﴾ 

“হে নবী! আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে এবং সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে আর আল্লাহর অনুমতিক্রমে তার দিকে দাওয়াতকারী রূপে ও উজ্জল প্রদীপরূপে” (আল আহযাবঃ ৪৫-৪৬)

§  নামাজ মেরাজে গিয়ে ১২ নং বৎসরে, এর আগের ১২ বছরের কাজ ছিল একটাই-দাওয়াত

§  আবু বকরের জামানায় ধূ-ধূ মরুভূমি উপেক্ষা করে ‘বাহরাইন’ দখল হল-কেবল দাওয়াতী কাজের প্রেরণা

§  ইসলাম এমন একটি জিনিসের নাম, যা কবুল করার মানে অন্যকে তা কবুল করার জন্য বলা যার জন্য মক্কা-মদীনায় সাহাবীদের সকলের কবর নাই

·      দাওয়াতী কাজ জিনিসটা কি?

o  মানব সৃষ্টির সূচনাতে শয়তান চ্যালেঞ্জ দিয়ে ছিলঃ

﴿قَالَ فَبِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيمَ﴾﴿ثُمَّ لَآتِيَنَّهُم مِّن بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَانِهِمْ وَعَن شَمَائِلِهِمْ ۖ وَلَا تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَاكِرِينَ﴾

সে বলল-আপনি আমাকে গুমরাহ্ করেছেন আমি লোকদের জন্য সিরাতাল  মুস্তাকীমের পাশে ওৎ পেতে থাকবো সামনা, পেছন, ডান, বাম সব দিক থেকেই তাদেরকে ঘিরে ফেলবো আপনি তাদের অধিকাংশকে শোকর গোজার বান্দা রূপে পাবেননা” (আল আ’রাফঃ  ১৬-১৭)

o  আল্লাহ্ চ্যালেঞ্জের জবাব দিলেনঃ

﴿قَالَ اخْرُجْ مِنْهَا مَذْءُومًا مَّدْحُورًا ۖ لَّمَن تَبِعَكَ مِنْهُمْ لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنكُمْ أَجْمَعِينَ﴾

লাঞ্ছিত এবং উপেক্ষিত হিসাবে বেরিয়ে যা লোকদের মাঝে যারাই তোর আনুগত্য করবে আমি তাদেরকে এবং তোকে দিয়ে জাহান্নাম ভর্তি করব (আল আ’রাফঃ ১৮)

o  অতএব, সৃষ্টির সূচনা থেকে মানুষ শত্র“র সম্মূখীন সে শত্র“র নাম- ইবলিস

o  মানুষ ইবলিসের শিকারে পরিণত হবে-এটা আল্লাহর জানা

o  মানুষ নিজের মর্জিমত চললে সীরাতাল মুস্তাকীম হতে বিপথে চলতে পারে তাই আল্লাহ্ স্বয়ং মানুষের পথ দেখাবার দায়িত্ব নিয়ে নিলেন

o  মানষকে দুনিয়ায় পাঠানোর সময় আল্লাহ্ তার ওয়াদা ঘোষনা করলেনঃ

﴿فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُم مِّنِّي هُدًى فَمَن تَبِعَ هُدَايَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ﴾

অতঃপর আমার পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য হেদায়াত আসবে যারা তা অনুসরণ করবে তাদের ভয় ও চিন্তার কোন কারণ থাকবেনা (আল বাক্বারাহঃ ৩৮)

﴿وَالَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا أُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ﴾

আর যারা অস্বীকার করবে এবং মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে আমার আয়াত সমূহ তারা হবে জাহান্নামের অধিবাসী সেখানে থাকবে তারা অনন্তকাল (আল বাক্বারাহঃ ৩৯)

o  শয়তান যে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল সীরাতাল মুস্তাকীমে দাড়াবে, শোকর গোজার হতে বাঁধা দেবে-তার সেই চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নকারী তারা- হেদায়াতকে অনুসরণ করবেনা যারা

o  শয়তানের সাথে জাহান্নামবাসী হবে তারা

o  আল্লাহ্ প্রদত্ত ঐ হেদায়াতের নাম হচ্ছে-ইসলাম

﴿إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ﴾

আল্লাহর নিকট স্বীকৃত জীবন বিধান একমাত্র আল্ ইসলাম (আলে ইমরানঃ ১৯)

o  ইসলাম ছাড়া অন্য কিছু হেদায়াত নয়ঃ

﴿وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ﴾

যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন বিধান অবলম্বন করতে চায়, তার কাছ থেকে তা কবুল করা হবেনা আর আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্থ” (আলে ইমরানঃ ৮৫)

·      দাওয়াত দেয়া ব্যক্তিগত ভাবে সবার দায়িত্বঃ

﴿يَـٰٓأَيُّهَا ٱلْمُدَّثِّرُ﴾﴿قُمْ فَأَنذِرْ﴾﴿وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ﴾

হে আবৃত শয্যা গ্রহণকারী উঠ সাবধান কর, আর তোমার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষনা কর(আল মুদ্দাস্সিরঃ ১-৩)

§  দাওয়াত দেয়া দলের দায়িত্বঃ

﴿وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ﴾

তোমাদেও মধ্যে এমন একটি দল অবশ্যই থাকবে, যারা মানব জাতিকে কল্যানের পথে আহবান জানাবে, সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজে বাঁধা দেবে, তারাই সফলকাম” (আল ইমরানঃ ১০৪)

§  দাওয়াত দেয়া রাষ্ট্রের দায়িত্বঃ

﴿الَّذِينَ إِن مَّكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنكَرِ ۗ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ﴾

এরা তো ঐসব লোক যাদেরকে আমি দুনিয়ার ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব দান করলে তারা নামাজ কায়েম করে, যাকাত আদায় করে এবং সৎ কাজের আদেশ দেয় ও অসৎকাজে বাধা দান করে” (আল হাজ্জঃ ৪১)

إِلَـى سَبِيـــلِ رَبِّكَ

·      إِلَـى سَبِيـــلِ رَبِّكَ তোমার রবের পথের দিকে

§  দাওয়াত হবেঃ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ তোমার রবের পথের দিকে

§  দাওয়াতঃ   

·      মুবাল্লিগের নিজের প্রতি নয়

·      তার জাতির বা কোন জাতির প্রতি নয়

·      কোন দলের প্রতি নয়

·      অতএব যিনি দাওয়াত দেবেন, তাকে মনে রাখতে হবেঃ

o  সংগঠনের কোন উপকার করা নয়

o  যাকে দাওয়াত দিচ্ছেন তার প্রতি করুণা নয়

o  দাওয়াত তাবলীগের প্রতি ও করুণা নয়

·      বরং এ দাওয়াতের মাধ্যমেঃ

o  নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন স্রষ্টা যে উদ্দেশ্যে   তৈরী করেছেন সে উদ্দেশ্য সাধনের জন্য

o  আর এ দাওয়াত প্রদানের প্রতিফল ও কেবল আল্লাহর নিকট

§  رَبِّكَ  বলার কারণঃ

o  رب মানে লালন-পালনকারী লালন-পালনের দৃষ্টিভংগী নিয়ে دعوة   দিতে হবে

§  আমাদের দাওয়াতঃ

১.সাধারণভাবে সকল মানুষ ও বিশেষ ভাবে প্রবাসী বাংলাদেশীদেও প্রতি আল্লাহর দাসত্ব ও রাসূল সা. এর আনুগত্য করার আহবান

২. ইসলাম  গ্রহণকারী ও ঈমানের দাবীদার সকল মানুষের প্রতি বাস্তব জীবনে কথা ও কাজের গরমিল পরিহার করে খাঁটিঁ ও পূর্ণ মুসলিম হওয়ার আহ্বান

§  নবীরা ও দাওয়াত দিয়েছেন আল্লাহর দাসত্ব কবুলেরঃ

১.হযরত নূহ আঃ

﴿لَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَىٰ قَوْمِهِ فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ إِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ﴾

আমি নূহ (আঃ) কে তাঁর কাওমের নিকট পাঠিয়েছিলাম তিনি তাঁর কাওমকে ডাক দিয়ে বললেন, হে আমার কওম! তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কর-আল্লাহ্ ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ বা প্রভূ নেই(আল আ’রাফঃ ৫৯)

২. হযরত হুদ আঃ

﴿وَإِلَىٰ عَادٍ أَخَاهُمْ هُودًا ۗ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ ۚ أَفَلَا تَتَّقُونَ﴾

এবং আদ জাতির প্রতি আমি তাদের ভাই হুদ (আঃ) কে পাঠিয়েছিলাম তিনি বললেন, হে আমার দেশবাসী! তোমরা আল্লাহর  দাসত্ব কর তিনি ছাড়া তোমাদের কোন ইলাহ নেই (আল আ’রাফঃ ৬৫)

৩. হযরত সামুদ আঃ

﴿وَإِلَىٰ ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحًا ۗ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ﴾

এবং ছামুদ জাতির প্রতি তাদের ভাই ছালেহ (আঃ)-কে পাঠিয়েছিলাম তিনি তার দেশবাসীকে ডাক দিয়ে বললেন, হে আমার কওমের লোকেরা! তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কবুল কর তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নাই(আল আ’রাফঃ ৭৩)

৪. হযরত  শুয়াইর আঃ

﴿وَإِلَىٰ مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْبًا ۗ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ ﴾

এবং মাদইয়ান বাসীদের প্রতি তাদেরই ভাই শোয়াইর (আঃ) কে পাঠিয়েছিলাম তিনি তার কওমকে ডাক দিয়ে বললেন, হে আমার কওম! তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কবুল কর তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নাই(আল আ’রাফঃ  ৮৫)

৫. নবী মুহাম্মদ সা. আহবান জানানঃ

أيُّها النَّاسُ قولوا لا إلَهَ إلَّا اللَّهُ تُفلِحوا

হে মানব জাতি তোমরা ঘোষনা কর আল্লাহ ছাড়া সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী আর কেউ নেই- তাহলে তোমরা সফল হবে (আল হাদীস)

﴿قُلْ هَٰذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ ۚ عَلَىٰ بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي﴾

হে নবী! তুমি তাদের সুস্পষ্ট বলে দাও যে, এটাই আমার একমাত্র পথ, যে পথে আমি আল্লাহর দিকে আহবান জানাই প্রমানের উপর কায়েম থেকে আমি ও আমার সংগী সাথীরা(ইউসুফঃ ১০৮)

§  দাওয়াত দেবার ক্ষেত্রে ২ টা জিনিসের প্রতি নজর রাখতে হবেঃ

১. হিকমাত

২. মাওয়িজাতে হাসানা

بِالْحِكْمَةِ

§  হিকমাত মানে প্রজ্ঞা

§  الْحِكْمَةِ বলতে ৩ টি জিনিস হতে পারে

১. কুরআন ২. সুন্নাহ্ ৩. যুক্তি

§  রুহুল মায়া’নীর ভাষায়ঃ

 انها الكـــلام  الصـــواب الــواقــع من النفــس اجمـــل مــوقــع

  এমন বিশুদ্ধ বাক্যকে হিকমাত বলে, যা মানুষের মনে আসন করে নেয়

§  প্রজ্ঞা, যাকে বুদ্ধিমত্তা ও বলা যায়

·নির্বোধের মত চোঁখ বন্ধ করে দাওয়াত নয়

·বুদ্ধি খাটিয়ে মন-মানস, যোগ্যতা, অবস্থার প্রতি নজর রেখে

·পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে

·এক লাঠি সবার জন্য নয়

·প্রথমে রোগ নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা

§  হিকমাত সম্পর্কে কুরআনে হাকীমের ঘোষনাঃ

﴿هُوَ ٱلَّذِى بَعَثَ فِى ٱلْأُمِّيِّـۧنَ رَسُولًۭا مِّنْهُمْ يَتْلُوا۟ عَلَيْهِمْ ءَايَـٰتِهِۦ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلْكِتَـٰبَ وَٱلْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا۟ مِن قَبْلُ لَفِى ضَلَـٰلٍۢ مُّبِينٍۢ﴾

তিনি সেই সত্ত্বা যিনি নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন যিনি তাঁর আয়াত সমূহ পড়ে শুনান, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেন অথচ উহার পূর্বে তারা সুস্পষ্ট গুমরাহীতে নিমজ্জিত ছিল(জুমুয়াহঃ ২)

§  হযরত ইব্রাহীম দোয়া করেছিলেনঃ

﴿رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِمْ ۚ إِنَّكَ أَنتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ﴾

হে রব!  এদের প্রতি এদের জাতির ভিতর থেকে এমন একজন রাসূল পাঠান, যিনি তাদেরকে আপনার আয়াতসমুহ পাঠ করে শুনাবেন তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দান করবেন এবং তাদের বাস্তব জীবনকে পরিশুদ্ধ ও সুষ্টূরূপে গড়বেন আপনি নিশ্চয়ই বড় শক্তিমান ও বিজ্ঞ” (আল বাক্বারাহঃ ১২৯)

§  কুরআনে আল্লাহ আরো বলছেনঃ

﴿لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ﴾

আসলে ঈমানদারদের মধ্যে তাদেরই মধ্যে থেকে একজন রাসূল পাঠিয়ে আল্লাহ্ মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন তিনি তাঁর আয়াত তাদেরকে শুনান তাদের জীবনকে পরিশুদ্ধ ও সবিন্যাস্ত করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকামাত শিক্ষা দেন” (আলে ইমরানঃ ১৬৪)

وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ

·      الْمَوْعِظَةِ - এর অর্থঃ শুভেচ্ছামূলক কথা এমনভাবে বলা, যাতে প্রতি পক্ষের মন তা কবুল করার জন্য নরম হয়ে যায়

·      الْحَسَنَةِ - এমন কথা, যাতে প্রতি পক্ষের অন্তর নিশ্চিত হয়ে যায়, সন্দেহ দূর হয়ে যায় এবং সে অনুভব করে যে, দাওয়াতকারীর কোন স্বার্থ এ কথার মধ্যে নেই

·        الْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ মানে সদুপদেশ

·      সদুপদেশ-এর অর্থ-২টি

1.    যাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে, তাকে শুধু যুক্তি দিয়ে ক্ষান্ত করলেই                                                               চলবেনা তার আবেগ অনুভূতির প্রতি আবেদন জানানো

o  দুষ্কৃতি ও ভ্রষ্টতাকে শুধু বুদ্ধি দিয়ে বাতিল করা নয়, বরং মানুষের মনের ঘৃণাকে উদ্দীপিত করণ,অশুভ পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করণ

o  ইসলামের কাজের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করণ

2.   উপদেশ প্রদানে আন্তরিকতা ও কল্যাণ কামনা সুস্পষ্ট করণ

o  যাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে সে যেন মনে করে উপদেশ দাতা তার      সংশোধনের আকাংখী ও তার ভাল চায়

o  যাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে , সে যেন মনে না করে যে উপদেশ দাতা তাকে তাচ্ছিল্য করছে এবং নিজে বড় একথা ভেবে সাধ নিচ্ছে

o  দরদী মন নিয়ে দাওয়াত দেয়া; আজীবন দাওয়াতী টার্গেট + হাজার মানুষের জাহান্নাম মুখী মিছিল + দাওয়াতী কাজের ক্ষেত্র বৃদ্ধি করা

وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ

·      বিতর্ক কর সবোত্তম পদ্ধতিতে

·      جَادِلْهُمْ  শব্দ مجادلـــــة থেকে অর্থঃ তর্ক-বিতর্ক

o  এটি কোন বিতর্ক, বুদ্ধির লড়াই বা মানসিক ব্যায়াম নয়

o  এখানে পেছিয়ে কথা বলা, মিথ্যা দোষারোপ, রূঢ় বাক্যবানে বিদ্ধকরণ চলবেনা

o  প্রতিপক্ষকে চুপ করিয়ে নিজের গলাবাজি করার কাজ নয়

·      বরং

o  বিতর্ক আলোচনায় মধুর বাক্য ব্যবহার

o  উন্নত পর্য্যায়ের ভদ্র আচরণ করতে হবে

o  যুক্তি প্রমাণ হবে ন্যায় সংগত ও হৃদয়গ্রাহী

o  যাকে উদ্দেশ্য করে কথা বলা হচ্ছে, তার মনে যেন জিদ, একগুয়েমী এবং কথার প্যাচ সৃষ্টি হবার সুযোগ না হয়

o  কথা বুঝাতে হবে সুজাসুজি

o  কুঠতর্কে লিপ্ত হওয়া যাবেনা এবং এ অবস্থা সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দিলে আগেই কেটে পড়তে হবে

إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلمُ بِالْمُهْتَدِينَ

“তোমার রবই অধিক অবগত আছেন, কে তাঁর পথ হতে গোমরাহ হয়েছে, আর কে সঠিক পথে আছে

·      মানেঃ

হেদায়াত দানের মালিক আল্লাহ্ , এবং তার জানা আছে কে হেদায়াত পাবে এর পরও তোমার দায়িত্ব দাওয়াত দেয়া তোমাকে তোমার সে দায়িত্ব আদায় করতেই হবে- ادْعُ (ডাকো)

﴿وَإِنْ عَاقَبْتُمْ فَعَاقِبُوا بِمِثْلِ مَا عُوقِبْتُم بِهِ ۖ وَلَئِن صَبَرْتُمْ لَهُوَ خَيْرٌ لِّلصَّابِرِينَ﴾

১২৬ যদি তোমরা কাউকে শাস্তি দাও, তাহলে ঠিক ততোটুকু শাস্তি দেবে, যতোটুকু অন্যায় তোমাদের সাথে করা হয়েছে তবে যদি তোমরা ধৈর্য্য ধারণ কর, তাহলে ধৈর্য্যশীলদের জন্য তাই উত্তম

·      দায়ীর আইনগত অধিকার আছে-বাঁধা দিলে প্রতিহত করা

·      প্রতিহত করতে গিয়ে ‘জুলুম’ করা যাবেনা

·      সীমা লংঘন করা যাবেনা

·      প্রতিশোধের চেয়ে সবর উত্তম

·      প্রবাসের ক্ষেত্রে ‘সবর’ উত্তম

শিক্ষাঃ

১.আমাদের নিজের দ্বীনদারী এবং ঈমানদারীর জন্য অন্যকে দ্বীনের দাওয়াত দিতে হবে

২.দাওয়াত হবে নিয়ম পদ্ধতি অনুসারে

৩.অহেতুক তর্ক নয়, বরং তর্ক হবে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে সুন্দর ভাষায়

সমাপ্ত



Post a Comment

0 Comments