দারসুল কুরআন – সূরা বনী ইসরাঈল – আয়াত ০১ : ইসরা ও মিরাজ – মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম

দারসুল কুরআন-ইসরা ও মিরাজ




পরম করুণাময় মেহেরবান আল্লাহর নামে

তেলাওয়াত ও অনুবাদঃ

﴿سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَىٰ بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا ۚ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ﴾

পবিত্র তিনি যিনি নিয়ে গেছেন এক রাতে নিজের বান্দাকে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আক্‌সা পর্যন্ত, যার পরিবেশকে তিনি বরকতময় করেছেন, যাতে তাকে নিজের কিছু নিদর্শন দেখান আসলে তিনিই সবকিছুর শ্রোতা ও দ্রষ্টা

সূরার নামকরণঃ

সূরার ২টা নামঃ

1.  বনী ইসরাঈলঃ উপমহাদেশে ঐ নামে প্রসিদ্ধ সূরার ৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ

﴿وَقَضَيْنَا إِلَىٰ بَنِي إِسْرَائِيلَ فِي الْكِتَابِ لَتُفْسِدُنَّ فِي الْأَرْضِ مَرَّتَيْنِ وَلَتَعْلُنَّ عُلُوًّا كَبِيرًا﴾

2.  ইসরাঃ আরব এলাকায় ঐ নামে প্রসিদ্ধ সূরার ১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ

﴿سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَىٰ بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى﴾

শানে নুযুলঃ

§  প্রসিদ্ধ বর্ণনা মতে হিজরতের এক বছর আগের সমসাময়িক সময়ে ২৭ রজব মেরাজ থেকে প্রত্যাবর্তনের পর

ব্যাখ্যাঃ

﴿سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَىٰ بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا ۚ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ﴾

পবিত্র তিনি, যিনি এক রাত্রে তাঁর বান্দাকে মসজিদে হারাম থেকে দূরবর্তী  সে মসজিদ-মসজিদে আকসা-পর্যন্ত নিয়ে গেলেন যার চতূষ্পার্শ তিনি বরকত দান করেছেন-যেন তাকে নিজের কিছু নিদর্শন পর্যবেক্ষণ করাতে পারেন প্রকৃত পক্ষে তিনি সব দেখেন এবং শুনেন

§  سُبْحَانَ আল্লাহ হচ্ছেনঃ পবিত্রতম সত্তা

§  الَّذِي أَسْرَىٰ بِعَبْدِهِ যিনি তার বান্দাকে ভ্রমন করালেনঃ রাসূল হলেন আল্লাহর গোলামযাকে তার মালিক পরিভ্রমন করালেন

§  لَيْلًا সময়টা কখন ছিলঃ রাতের বেলা

§  مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى  ভ্রমনটার শুরু কোথা থেকে কোথায়ঃ মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আক্বসা পর্যন্ত

§  الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ  আর এই জায়গাটাকে রাসূলের পরিভ্রমনের কারণেঃ বরকতময় করা হলো

§  لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا  বরকতময় করার কারণ কি? যাতে রাসূলকে আল্লাহর নিদর্শণ দেখানো যায়

§  إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ আর এটা করার কারণ হলোঃ রাসূলের মনের মাঝে যে বিষয়গুলো ছিল, তা আল্লাহর কাছে এমন ছিল যে, তিনি তা শুনতেছেন এবং দেখতেছেন

§  রাসূল এলেন আল্লাহ যমীনে, যাতে আল্লাহর বান্দারা নির্বিবাদে তার গোলামী করতে পারে, সেজন্য একটি পরিবেশ তৈরী করতে সকল কাজে যাতে আল্লাহর গোলামী নিশ্চিত হয় সেই অবস্থার তৈরী করতে

§  এই অবস্থা তৈরীর জন্য প্রয়োজন একটি সার্বভৌম ব্যবস্থা-যার নেতৃত্ব থাকতে রাসূলের হাতে

§  সেই নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাওহীদের আওয়াজ দিয়ে কাজ শুরু করলেন নবী মুহাম্মদ সা. ইতিমধ্যে ১২টি বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে তার গতিপথ রুখে দিকে বিরোধী পক্ষ সকল ধরণের অপচেষ্টা চালিয়েছে এবং চালাচ্ছে কিন্তু সকল বাঁধার দেয়াল টপকে তাওহীদের দাওয়াত পৌছে গেছে আরবের কোনায় কোনায় যার ফলশ্রুতিতে আরবে এমন কোন কাওম বা গোত্র ছিল না, যার ২/৪জন লোক এই দাওয়াতে প্রভাবিত হয়নি খোদ মক্কাতে এই কাজের জন্য আন্তরিকতা সম্পন্ন ছোট্ট একটি দল তৈরী হয়ে গিয়েছে, যারা সকল বাঁধা অতিক্রম করে মনজিলে পৌছার জন্য প্রস্তুত

§  অপরদিকে মদীনার প্রভাবশালী গোত্র আওস ও খাজরাজ যাদের বিরাট নেতৃত্বশীল একটি গ্রুপ এই কাজের সমর্থকে পরিণত হয়ে গিয়েছে

§  সেই ব্যবস্থা তৈরী জন্য রাসূল সা. প্রাথমিক কাজ শেষ করেছেন এখন প্রয়োজন কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন করে মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় যাওয়া মানুষ গুলোকে একত্রিত করে মুহাজির ও আনসারদের সমন্বয়ে ইসলামের মূলনীতির ভিত্তিতে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা

§  মদীনায় এই ধরণের অবস্থা তৈরী হলে সার্বভৌম সেই রাষ্ট্রের রূপরেখা কি হবে, কোন নীতিমালার ভিত্তিতে ইসলামী হুকুমাত পরিচালিত হবে, তার প্রেকটিক্যালি শিক্ষা দেয়ার জন্য রাসূলকে আল্লাহ তার সান্নিধ্যে নিয়ে গেলন আর আয়াত বা নিদর্শণ সমূহ দেখালেন যাকে আমরা বলি মেরাজ

§  মেরাজ থেকে ফিরে ইসলামী রাষ্ট্রের রূপরেখা কি হবে, মেনিফেষ্টো কি হবে, ইশতিহার কি হবে-কিসের ভিত্তিতে নবগঠিত রাষ্ট্রটি পরিচালিত হবে-তার বিবরণ পেশ করলেন নবী সা. যার সূচনা বক্তব্য শুরু হয়েছে এই আয়াত দিয়ে

§  তারপর সূরার তৃতীয় ও চতূর্থ রুকুর ২৩-৩৭ নম্বর আয়াতে ইসলামী রাষ্ট্রের ১৪ দফা ইশতিহার পেশ করা হয়

রজব মাসঃ

ঐতিহাসিক মেরাজ সংঘটিত হয় রজব মাসে তাই আমরা এই সুযোগে রজব মাস সম্পর্কে কিছু বিষয় জেনে নেবোঃ

1.  রজব মাস হারাম বা সম্মাণিত মাস সমূহের একটি মাসঃ

عَنْ أَبِي بَكْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ الزَّمَانُ قَدِ اسْتَدَارَ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ، السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا، مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ، ثَلاَثَةٌ مُتَوَالِيَاتٌ ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الْحِجَّةِ وَالْمُحَرَّمُ، وَرَجَبُ مُضَرَ الَّذِي بَيْنَ جُمَادَى وَشَعْبَانَ‏‏.‏

হযরত আবু  বাকরাহ রা. থেকে বর্ণিত, নবী সা. বলেন, আল্লাহ তা’আলা যেদিন আসমান যমীন সৃষ্টি করেছেন, সে দিন থেকে সময় যেরূপে আবর্তিত হচ্ছিল আজও তা সেরূপে আবর্তিত হচ্ছে বারো মাসে এক বছর এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত যুলকায়িদাহ, যুলহিজ্জাহ ও মুহাররম তিনটি মাস পরপর রয়েছে আর এক মাস হল রজব-ই-মুযার, যা জুমাদা ও শাবান মাসের মধ্যে অবস্থিত (বুখারী)

2.  রজব মাস অত্যাধিক নফল রোযা রাখার মাসঃ

حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ حَكِيمٍ الأَنْصَارِيُّ، قَالَ سَأَلْتُ سَعِيدَ بْنَ جُبَيْرٍ عَنْ صَوْمِ، رَجَبٍ وَنَحْنُ يَوْمَئِذٍ فِي رَجَبٍ فَقَالَ سَمِعْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ رضى الله عنهما يَقُولُ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَصُومُ حَتَّى نَقُولَ لاَ يُفْطِرُ ‏.‏ وَيُفْطِرُ حَتَّى نَقُولَ لاَ يَصُومُ ‏.‏

হযরত উসমান ইবনু হাকীম আল আনসারী রাহি. বলেন, আমি সাঈদ ইবনু জুবাইর রা. এর কাছে রজব মাসে সাওম পালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম তখন রজব মাস চলছিল তিনি উত্তরে বললেনঃ আমি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. কে বলতে শুনেছি, রাসুলুল্লাহ সা. সাওম পালন করে যেতেন-এমনকি আমরা মনে করতাম তিনি হয়ত আর সাওম ছাড়বেন না আবার কখনও তিনি সাওম থেকে বিরত থাকতেন-এমনকি আমরা মনে করতাম, তিনি হয়ত আর সাওম পালন করবেন না (মুসলিম)

3. রজব মাস আসলে নবী সা. দোয়া করতেনঃ

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ رَجَبٌ قَالَ اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ وَشَعْبَانَ وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ قَالَ وَكَانَ يَقُولُ لَيْلَةُ الْجُمُعَةِ لَيْلَةٌ أَغَرُّ وَيَوْمُ الْجُمُعَةِ يَوْمٌ أَزْهَرُ.

হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. রজব মাস আসলে এ দুআ পড়তেন, হে আল্লাহ! রজব ও শাবান মাসের আমাদেরকে বারাকাহ দান করো আর আমাদেরকে রামাদ্বান মাস পর্যন্ত পৌঁছাও বর্ণনাকারী আনাস রা. আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলতেন, জুমুআর রাত আলোকিত রাত জুমুআর দিন আলোকিত দিন (বায়হাক্বী)

মুহাদ্দিসগন এই হাদীসটিকে দূর্বল হাদীস বলে আখ্যায়িত করেছেন

4. রজব মাসকে বধির মাস বলা হয়ঃ

আইয়ামে জাহেলিয়াতের সময়ে এই মাসকে বধির মাস বলা হতো কারণ এই মাসটি হারাম মাস সমূহের একটি হওয়াতে এই মাসে শোনা যেতো না কোন নির্যাতিত মানুষের চিৎকার, বাজতো না যুদ্ধের দামামা কিংবা শোনা যেতো না কোন অস্রের ঝনঝনানি

§  এই রজব মাসেই সংঘটিত হয় ঐতিহাসিক ‘মিরাজ’

§  কুরআনে হাকীমে মিরাজকে বলা হয়েছে “ইসরা”

§  ‘ইসরা’ মানে নৈশ্যভ্রমন

§  আজকের দারসের আলোচ্য বিষয় “মিরাজ”

মিরাজ কি?

§  মিরাজ মানে উত্থান বা উর্ধ্বে গমন করা

§  আল্লাহর নবী ও রাসূলগনকে নবুয়াতের দায়িত্ব পালনের ট্রেনিং এর অংশ হিসাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁকে তার নিকটে নিয়ে যাওয়াকে মিরাজ বলে

§  সকল নবী ও রাসূলের মিরাজ সংগঠিত হয়েছিল তবে একই স্থানে একই ভাবে হয়নি

§  আদম আ. এর মেরাজ-জান্নাতের মধ্যে

§  মুসা আ. এর মেরাজ-তুর পাহাড়ে

§  ইব্রাহীম আ. এর মেরাজ-মরুভূমিতে

§  মুহাম্মদ সা. এর মেরাজ-আরশে মুয়াল্লাতে

মিরাজের ঘটনাঃ

মিরাজের ঘটনা বর্ণনাকারী সাহাবী সংখ্যাঃ ২৫-৪৫ যেমনঃ

১. আনাস বিন মালিক রা.

২. মালিক বিন সা’সায়া রা.

৩. আবু যর গিফারী রা.

৪. আবু হুরায়রা রা.

৫. উমর রা.

৬. আলী রা.

৭. আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা.

৮. আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা.                  

৯. আবু সাঈদ খুদুরী রা.

১০. হুযাইফা ইবনে ইয়ামান রা.

১১. আয়েশা সিদ্দিকা রা.        

১২. শাদ্দাদ বিন আউস রা.

১৩. উম্মে হানী রা.

ঘটনার বিবরণঃ

§  জিব্রাঈল আ. নবী সা.কে মসজিদে হারাম থেকে বুরাকে করে মসজিদে আকসায় নিয়ে যান

§  বুরাকে চড়েঃ

o বুরাক এমন এক যান, যার গতি বিজলীর চেয়েও দ্রুত এটা এতটাই ক্ষিপ্রগতির যার একেকটি কদম পড়ে দৃষ্টির শেষ সীমায় গিয়ে

o প্রাণীটি গাধার চেয়ে বড়ঘোড়া থেকে ছোট যার রং সাদা

প্রথমেঃ যান মদীনায় জিব্রাঈল বলেনঃ এখানে আপনি হিজরত করে আসবেন

দ্বিতীয়তঃ সিনাই পাহাড়ে-যেখানে মুসার সাথে আল্লাহর কথা হয়

তৃতীয়তঃ বাইতুল্লাহাম-যেখানে ঈসা আ. ভূমিষ্ট হন

চতূর্থতঃ বাইতুল মাকাদ্দাস

o মসজিদে আকসায় সকল নবীদের সাথে নামায

নামায পড়ে বের হওয়ার সময় জিবরাঈল আ. নবীজীর সামনে দুটি পেয়ালা পেশ করলেন একটি দুধের অপরটি শরাবের নবীজী দুধের পেয়ালা গ্রহণ করলেন জিবরাঈল আ. বললেনআপনি (দ্বীনের) স্বভাবসিদ্ধ বিষয়টি নির্বাচন করেছেন নবীজী মদের পেয়ালা নেওয়ার পরিবর্তে দুধের পেয়ালা গ্রহণ করায় জিবরীল আ. বলেনআপনি যদি মদের পেয়ালা নিতেন তাহলে আপনার উম্মত বিভ্রান্ত হয়ে পড়ত (বুখারী)

o অতঃপর জিব্রাঈল আ. এর সাথে উর্ধ্বগমন

o বিভিন্ন আসমানে নবীদের সাথে সাক্ষাৎঃ

১. হযরত আদম আ.

২. হযরত ইয়াহইয়া ও হযরত ঈসা আ.

৩. হযরত ইউসুফ আ.

৪. হযরত ইদ্রীস আ.

৫. হযরত হারুন আ.

৬. হযরত মুসা আ.

৭. হযরত ইব্রাহীম আ.

নবীজী বলেনহযরত ইবরাহীম আ. তখন বাইতুল মামুরে হেলান দিয়ে ছিলেন বাইতুল মামুরযেখানে প্রতিদিন সত্তর হাজার ফেরেশতা আসে এরপর এই সত্তর হাজার আর ফিরে আসে না এভাবে প্রতিদিন সত্তর হাজার করে ফেরেশতাদের নতুন নতুন কাফেলা আসতে থাকে

পঞ্চমঃ অতঃপর চরম উচ্চতায় আরোহন-সিদরাতুল মুনতাহায়

o রবের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ

o ওই খানে জান্নাত ও জাহান্নাম দেখা

নবীজী বলেনজান্নাতের প্রাসাদগুলো মুক্তার তৈরি আর তার মাটি হল মেশকের (বুখারী)

নবীজী এ সফরে একদল লোককে দেখলেনতাদের নখগুলো তামার নিজেদের নখ দিয়ে তারা নিজের গাল ও বুকে আঁচড় কাটছে জিজ্ঞাসা করলেনজিবরাঈলএরা কারা? বললেনএরা ওই সমস্ত লোকযারা মানুষের গোশত খেত এবং তাদের সম্ভ্রমে আঘাত হানত অর্থাৎ গীবত করত এবং মানুষকে লাঞ্ছিত করত (মুসনাদে আহমাদ/আবু দাউদ)

এ সফরে নবীজী দেখলেনএকদল লোকের ঠোঁট আগুনের কাঁচি দিয়ে কাটা হচ্ছে জিজ্ঞাসা করলেনএরা কারা? জিবরাঈল বললেনএরা বক্তৃতা করত  বটেকিন্তু নিজেরা আমল করত না  (মুসনাদে আহমাদ)

o ৫ ওয়াক্ত নামায ফরয

o ইসলামী রাষ্ট্রের ১৪ দফা মূলনীতি সম্পর্কে টেনিং দেয়া হলো

ষষ্ঠতঃ অতঃপর মসজিদে হারামে প্রত্যাবর্তন

মিরাজ দৈনিক না আত্মীকঃ

§  سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَىٰ  দিয়ে কথা শুরু করার মানেই হলোঃ

o এটা স্বাভাবিক কোন ঘটনা নয় বরং ব্যতিক্রমী অলৌকিক ধরণের কিছু বিষয়

o এমন ঘটনা, যা আল্লাহর অসীম ক্ষমতা দিয়ে সংঘটিত হয়েছে

§  ভ্রমন করানো বা নিয়ে যাওয়া মানে দৈহিক

o স্বপ্নের মাধ্যমে দেখানো হলে এতো ভূমিকার দরকার পড়তো না

o “একরাতে নিজের বান্দাকে নিয়ে যান” দ্বারা ফিজিক্যাল সফরই বুঝানো হয়

o বিধায়, তা আধ্যাত্মিক বা কাশফের মাধ্যমে নয় রুহানী সফর নয় বরং দৈহিক সফর ও চাক্ষুষ পর্যবেক্ষণ

§  ১৪ বছর আগে যা বুঝা সম্ভব ছিল না, তা এখন বুঝা সম্ভব যেমনঃ

o ১৪ বছর আগে মক্কা থেকে ফিলিস্তিন একরাতে ভ্রমন সম্ভব ছিলনা কিন্তু এখন উড়জাহাজ আবিষ্কারের মাধ্যমে সম্ভব

o যে আবিস্কার এখন হয়েছে, সেই আবিস্কার আল্লাহর কাছে সব সময় ছিল

o নির্বাচনের রেজাল্ড বা পরীক্ষার রিজাল্ট যা এক মুহুর্তে সম্ভব সেই বিষয়টা আল্লাহর জন্য আগে সম্ভব ছিল

o একটা পিপড়ার জন্য গ্লোবের এই প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে অনেক সময় দরকার কিন্তু একজন মানুষ পিপড়াকে হাত দিয়ে উঠিয়ে একস্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যেতে মুহুর্ত প্রয়োজন

§  হযরত আবু বকরকে প্রশ্ন----জবাবঃ আমিতো আসমানের খবরও বিশ্বাস করি

দৈহিক সফর হলে সমস্যাঃ

§  আল্লাহর কাছে নিয়ে যাওয়া মানে আল্লাহ একটি নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করেন

§  আল্লাহ একটি বিশেষ স্থানে অবস্থান করা অপরিহার্য কি?

§  এমন প্রশ্নের জবাবঃ

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হয় আগ্রায় অথচ ভারতের প্রধানমন্ত্রী অবস্থান করেন দিল্লিতে অতএব, কোন এক স্থানে বৈঠক হওয়ার অর্থ এটা নয় যে, সেই ব্যক্তি ওখানে অবস্থান করেন বরং ব্যক্তির গুরুত্ব বিবেচনায় ঐতিহাসিক স্থান নির্ধারিত হয়

মিরাজে কি দেখলেনঃ

1.        একদল লোক ফসল কাটছে যত কাটছে ততই বাড়ছে-এরা আল্লাহর পথে জিহাদ কারী

2.        একদল লোকের মস্তক পাথর মেরে চূর্ণ বিচূর্ণ করা হচ্ছে-যাদের অনিহা এবং অনন্তোষ নামাযের জন্য উঠতে দিতনা

3.       কাপড়ের সামনে পিছে তালি দেয়া লোক যারা পশুর মত ঘাস খাচ্ছে-যারা নিজেদের মাল থেকে যাকাত খয়রাত দিতনা

4.       একজন লোক কাঠের বোঝা উঠাতে পারছেনা, অথচ আরো জমা করছে-যার উপর এত দায়িত্ব ছিল, যা বহন করতে পারতো না অথচ আরো জমা করছে

5.       একদল লোক, যারা কাচি দিয়ে জিহবা ও উষ্ট কাটা হচ্ছে-যারা দায়িত্বহীন বক্তা

6.        পাথরের সামান্য ফাটল দিয়ে বলদ লেদ বেরুল আবার ঢুকার চেষ্টা করল পারল না-দায়িত্বহীনের মত ফিতনা সৃষ্টিকারী যে পরে প্রতিকার চায়, কিন্তু পারে না

7.       কিছু লোক নিজের গোশত খাচ্ছে-অপরের বিরুদ্ধে মিথ্যা দোষারূপ ও কটুক্তিকারী

8.       কিছু লোক যারা নিজেদের তামার তৈরী নখ দিয়ে মখমন্ডল ও বুক আঁচড়াচ্ছে-এরা মানুষের অসাক্ষাতে কূকর্ম প্রচার করত ও সম্মানে আঘাত করতো

9.        একদল লোক যাদের ঠোট উটের ঠোটের মত তারা আগুন ভক্ষণ করছিল-এতিমের সম্পদ ভক্ষণকারী

10.    একদল লোক যাদের পেট ছিল বড় এবং বিষাক্ত সাপে পরিপূর্ণ লোকজন তার উপর দিয়ে যাতায়াত করছে-এরা সুদ খোর

11.     একদল লোক যাদের এক পাশে ভাল লোক অন্য পাশে পচা গোশত-দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে সে পচা গোশত খাচ্ছে-এরা নিজের স্ত্রী ছেড়ে যৌন বাসনা অন্যত্র পুরণ করত

12.     এমন মহিলা যাদের স্তনের সাথে লটকানো-ওরা তাদের সন্তানদের ঔরশজাত বলত কিন্তু আসেল তা ছিলনা

মিরাজ সংগঠিত হবার প্রেক্ষাপটঃ

§  নবুয়াতী জিন্দেগীর ১২ বছর চলে গেছে

§  তাওহীদের আওয়াজ বুলন্দের একযুগ পেরিয়ে গেছে

§  দাওয়াতী তৎপরতার মাধ্যমে নবীর কাফেলার একটা অবস্থান সৃষ্টি হয়ে গেছে

§  আবু বকর উমরের মত সুযোগ্য লোক ইসলামের ফর্মায় তৈরী হয়ে গেছে

§  বিরুদ্ধবাদী বাঁধার বিন্দাচল মাড়িয়ে, সকল প্রতিবন্দকতা উপেক্ষা করে নবীর দাওয়াত যখন আরবের প্রতিটি ঘরে ঘরে

§  দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য জীবনের ঝুঁকি নেয়ার মত বিরাট একদল লোক তৈরী হয়ে গেছে

§  মক্কার বাহিরে বিরাট সাহায্যকারী বাহিনী তৈরী হয়ে গেছে (আনসার)

§  ইসলামের আদর্শ ও নীতির ভিত্তিতে কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লোকবল, সুযোগ ও পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে গেছে

§  এমন পরিস্থিতিতে ইসলামী রাষ্ট্রের ইশতেহার ঘোষনা করে মিরাজ সংঘটিত হয়

§  মিরাজ থেকে ফিরে নবী সা. বিশ্ববাসীকে ইসলামী রাষ্ট্রের মূলনীতি সমূহ সম্বলিত এই ইশতিহার ঘোষনা করেন

ইসলামী রাষ্ট্রের ইশতিহারে মূলনীতি সমূহঃ

﴿وَقَضَىٰ رَبُّكَ﴾

তোমার রব ফায়সালা করে দিয়েছেনঃ 

﴿أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ﴾

১. তোমরা কারোর ইবাদাত করো না, একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করো 

﴿ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا ۚ إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا﴾﴿وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا﴾﴿رَّبُّكُمْ أَعْلَمُ بِمَا فِي نُفُوسِكُمْ ۚ إِن تَكُونُوا صَالِحِينَ فَإِنَّهُ كَانَ لِلْأَوَّابِينَ غَفُورًا﴾

২. পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করো যদি তোমাদের কাছে তাদের কোনো একজন বা উভয় বৃদ্ধ অবস্থায় থাকে, তাহলে তাদেরকে “উহ্‌” পর্যন্তও বলো না এবং তাদেরকে ধমকের সুরে জবাব দিয়ো না বরং তাদের সাথে মর্যাদা সহকারে কথা বলো আর দয়া ও কোমলতা সহকারে তাদের সামনে বিনম্র থাকো এবং দোয়া করতে থাকো এই বলেঃ হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া করো, যেমন তারা দয়া, মায়া, মমতা সহকারে শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছিলেনতোমাদের রব খুব ভালো করেই জানেন তোমাদের মনে কি আছে যদি তোমরা সৎকর্মশীল হয়ে জীবন যাপন করো, তাহলে তিনি এমন লোকদের প্রতি ক্ষমাশীল যারা নিজেদের ভুলের ব্যাপারে সতর্ক হয়ে বন্দেগীর নীতি অবলম্বন করার দিক ফিরে আসে

﴿وَآتِ ذَا الْقُرْبَىٰ حَقَّهُ وَالْمِسْكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا﴾

৩. আত্মীয়কে তার অধিকার দাও এবং মিসকীন ও মুসাফিরকেও তাদের অধিকার দাও

﴿إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ ۖ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُورًا﴾

৪. বাজে খরচ করো না যারা বাজে খরচ করে তারা শয়তানের ভাই আর শয়তান তার রবের প্রতি অকৃতজ্ঞ

﴿وَإِمَّا تُعْرِضَنَّ عَنْهُمُ ابْتِغَاءَ رَحْمَةٍ مِّن رَّبِّكَ تَرْجُوهَا فَقُل لَّهُمْ قَوْلًا مَّيْسُورًا﴾

৫. যদি তাদের থেকে (অর্থাৎ অভাবী, আত্মীয়-স্বজন, মিসকীন ও মুসাফির) তোমাকে মুখ ফিরিয়ে নিতে হয় এজন্য যে, এখনো তুমি প্রত্যাশিত রহমতের সন্ধান করে ফিরছো, তাহলে তাদেরকে নরম জবাব দাও

﴿وَلَا تَجْعَلْ يَدَكَ مَغْلُولَةً إِلَىٰ عُنُقِكَ وَلَا تَبْسُطْهَا كُلَّ الْبَسْطِ فَتَقْعُدَ مَلُومًا مَّحْسُورًا﴾﴿إِنَّ رَبَّكَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَن يَشَاءُ وَيَقْدِرُ ۚ إِنَّهُ كَانَ بِعِبَادِهِ خَبِيرًا بَصِيرًا﴾

৬. নিজের হাত গলায় বেঁধে রেখো না এবং তাকে একেবারে খোলাও ছেড়ে দিয়ো না, তাহলে তুমি নিন্দিত ও অক্ষম হয়ে যাবেতোমার রব যার জন্য চান রিযিক প্রশস্ত করে দেন আবার যার জন্য চান সংকীর্ণ করে দেন তিনি নিজের বান্দাদের অবস্থা জানেন এবং তাদেরকে দেখছেন

﴿وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُمْ خَشْيَةَ إِمْلَاقٍ ۖ نَّحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَإِيَّاكُمْ ۚ إِنَّ قَتْلَهُمْ كَانَ خِطْئًا كَبِيرًا﴾

৭. দারিদ্রের আশংকায় নিজেদের সন্তান হত্যা করো না আমি তাদেরকেও রিযিক দেবো এবং তোমাদেরকেও আসলে তাদেরকে হত্যা করা একটি মহাপাপ

﴿وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا ۖ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا﴾

৮. যিনার কাছেও যেয়ো না, ওটা অত্যন্ত খারাপ কাজ এবং খুবই জঘন্য পথ

﴿وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ ۗ وَمَن قُتِلَ مَظْلُومًا فَقَدْ جَعَلْنَا لِوَلِيِّهِ سُلْطَانًا فَلَا يُسْرِف فِّي الْقَتْلِ ۖ إِنَّهُ كَانَ مَنصُورًا﴾

৯. আল্লাহ যাকে হত্যা করা হারাম করে দিয়েছেনসত্য ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করো না আর যে ব্যক্তি মজলুম অবস্থায় নিহত হয়েছে তার অভিভাবককে আমি কিসাস দাবী করার অধিকার দান করেছি  কাজেই হত্যার ব্যাপারে তার সীমা অতিক্রম করা উচিত নয়,  তাকে সাহায্য করা হবে

﴿وَلَا تَقْرَبُوا مَالَ الْيَتِيمِ إِلَّا بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ حَتَّىٰ يَبْلُغَ أَشُدَّهُ﴾

১০. ইয়াতীমের সম্পত্তির ধারে কাছে যেয়ো না, তবে হ্যাঁ সুদপায়ে, যে পর্যন্ত না সে বয়োপ্রাপ্ত হয়ে যায়

﴿وَأَوْفُوا بِالْعَهْدِ ۖ إِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْئُولًا﴾

১১. প্রতিশ্রুতি পালন করো, অবশ্যই প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে তোমাদের জবাবদিহি করতে হবে

﴿وَأَوْفُوا الْكَيْلَ إِذَا كِلْتُمْ وَزِنُوا بِالْقِسْطَاسِ الْمُسْتَقِيمِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا﴾

১২. মেপে দেবার সময় পরিমাপ পাত্র ভরে দাও এবং ওজন করে দেবার সময় সঠিক দাঁড়িপাল্লায় ওজন করো এটিই ভালো পদ্ধতি এবং পরিণামের দিক দিয়েও এটিই উত্তম

﴿وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ ۚ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَٰئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا﴾

১৩. এমন কোনো জিনিসের পেছনে লেগে যেয়ো না সে সম্পর্কে তোমার জ্ঞান নেই নিশ্চিতভাবেই চোখ, কান ও দিল সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে

﴿وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا ۖ إِنَّكَ لَن تَخْرِقَ الْأَرْضَ وَلَن تَبْلُغَ الْجِبَالَ طُولًا﴾

১৪. যমীনে দম্ভভরে চলো না তুমি না যমীনকে চিরে ফেলতে পারবে, না পাহাড়ের উচ্চতায় পৌঁছে যেতে পারবে

ইসলামী রাষ্ট্রের ইশতিহারের বিস্তারিত ব্যাখ্যাঃ

১. ইসলামী রাষ্ট্রের প্রথম মূলনীতিঃ ইসলামী রাষ্ট্রে গোলামী হবে একমাত্র আল্লাহর - শুধু মাত্র আল্লাহর

§  ইসলামী রাষ্ট্রে যে সব মূলনীতির ভিত্তিকে গড়ে উঠবে, তার বিবরণ এখানে পেশ করা হচ্ছে এগুলোকে নবী সা. এর আন্দোলনের ঘোষণাপত্রও বলা যায় মক্কী যুগের শেষ এবং আসন্ন মাদানী যুগের প্রারম্ভে এই ঘোষনাপত্র পেশ করা হচ্ছে

§  এই ঘোষনাপত্রের মাধ্যমে আগামীর ইসলামী হুকুমাতের বুনিয়াদ কোন ধরণের চিন্তামূলক, নৈতিক, তামাদ্দুনিক, অর্থনৈতিক ও আইনগত মূলনীতির ওপর রাখা হবে, তা দুনিয়াবাসীর সামনে পেশ করা হয়েছে

﴿وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ﴾

তোমার রব ফয়সালা করে দিয়েছেন যে, তোমরা কাহারও ইবাদত করবেনা-কেবলমাত্র তারই ইবাদত করবে

§  এজন্য আমরা বলিঃ إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ

“হে আমাদের মালিক! আমরা কেবলমাত্র তোমার গোলামী করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য চাই

§  সর্বাবস্থায় সকল কাজে গোলামী হবে আল্লাহর সর্বাবস্থা কিঃ

  আল্লাহ হুকুম দাতা- إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ

﴿مَا تَعْبُدُونَ مِن دُونِهِ إِلَّا أَسْمَاءً سَمَّيْتُمُوهَا أَنتُمْ وَآبَاؤُكُم مَّا أَنزَلَ اللَّهُ بِهَا مِن سُلْطَانٍ ۚ إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ ۚ أَمَرَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ ۚ ذَٰلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ﴾

তাঁকে বাদ দিয়ে তোমরা যাদের বন্দেগী করছো তারা শুধুমাত্র কতকগুলো নাম ছাড়া আর কিছুই নয়, যে নামগুলো তোমরা ও তোমাদের পিতৃ-পুরুষরা রেখেছো, আল্লাহ এগুলোর পক্ষে কোন প্রমাণ পাঠাননি শাসন কর্তৃত্ব আল্লাহ ছাড়া আর কারোর নেই তাঁর হুকুম-তোমরা তাঁর ছাড়া আর কারোর বন্দেগী করবে না এটিই সরল সঠিক জীবন পদ্ধতি, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না। (ইউসুফঃ ৪০)

- আল্লাহ আইন দাতা           - আল্লাহ বিধান দাতা               - আল্লাহ শাসন কর্তা

- আল্লাহ জীবন দাতা           - আল্লাহ রিজিক দাতা

  গোলামী হবে নামাযে এবং সমাজে

  ব্যবসা, অফিস, রাজনীতি, সংসদ, আন্তর্জাতিক সকল ক্ষেত্রে গোলামী হবে আল্লাহর

  ইসলামী হুকুমাতকে যদি একটি ইমারত মনে করা হয়, তাহলে সেই ইমারতে বুনিয়াদ হলোঃ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা এই বিশ্বের মালিক, বাদশাহ এবং তারই আইন এবং শরীয়াত এই হুকুমাতে আইন।

§  ফেরশতাদের সমাবেশে আল্লাহর ঘোষনা ছিলঃ

﴿وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً ۖ قَالُوا أَتَجْعَلُ فِيهَا مَن يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ ۖ قَالَ إِنِّي أَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُونَ﴾

আবার সেই সময়ের কথা একটু স্মরণ কর যখন তোমাদের রব ফেরেশতাদের বলেছিলেন, “আমি পৃথিবীতে একজন খলীফা-প্রতিনিধি নিযুক্ত করতে চাইতারা বললো, “আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে নিযুক্ত করতে চান যে সেখানকার ব্যবস্থাপনাকে বিপর্যস্থ করবে এবং রক্তপাত করবেআপনার প্রশংসা ও স্তুতিসহকারে তাসবীহ পাঠ এবং আপনার পবিত্রতা বর্ণনা তো আমরা করেই যাচ্ছি আল্লাহ বললেন, “আমি জানি যা তোমরা জানো না” (আল বাক্বারাহঃ ৩০)

  বাঘঃ মানুষ পাইলেই ঘাড় মটকাবে কিন্তু বাঘের এই ক্ষমতা থাকার পরও যে বাঘকে মানুষের অনুগত করা যাবে, মানুষের ইশারায় উঠবস করবে-সে বাঘ অনুগত বাঘ

  ময়না পাখিঃ যার ধর্ম হচ্ছে-পিঞ্জিরের ভিতর থাকলে, যা বলবেন তাই বলে আনুগত্যের উত্তম পরাকাস্টা প্রদর্শন করে কিন্তু বাস্তবতা হলোঃ ময়না পাখির খাচার দরজা খুললেই সে পলায়ন করে যে ময়না পাখি খাচার দরজা খোলার পরও চলে যায় না সেই অনুগত ময়না পাখি

§  মানুষকে স্বাধীনতা দেয়ার পর গোলামীর হুকুমঃ

﴿يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ﴾

হে মানব জাতি ইবাদাত করো তোমাদের রবেরযিনি তোমাদের ও তোমাদের পূর্বে যারা অতিক্রান্ত হয়েছে তাদের সবার সৃষ্টিকর্তাএভাবেই তোমরা নিষ্কৃতি লাভের আশা করতে পারো(আল বাক্বারাহঃ ২১)

§  এই অবস্থায় যে মানুষ আনুগত্যহীনতার ক্ষমতা থাকার পরও আল্লাহর আনুগত্য ও গোলামী করে, সেই প্রকৃত গোলাম

§  আর সেই গোলামী হবেঃ

ক. কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য-বিশুদ্ধ নিয়তে

খ. রাসূল সা. এর দেখানো তরিকা অনুযায়ী

গ. শিরক মুক্ত হয়ে

§  কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য-বিশুদ্ধ নিয়তে

বিশুদ্ধ নিয়ত কুরআনে নির্দেশঃ

وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ

আর তাদেরকে কেবল এ নির্দেশই প্রদান করা হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে তাঁরই জন্য দ্বীনকে একনিষ্ঠ করে” (আল বাইয়্যিনাহঃ ৫)

قُلۡ إِنِّيٓ أُمِرۡتُ أَنۡ أَعۡبُدَ ٱللَّهَ مُخۡلِصٗا لَّهُ ٱلدِّينَ

বলুন, ‘আমি তো আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি, আল্লাহর আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে তাঁর ‘ইবাদাত করতে” (আয যুমারঃ ১১)

আল্লাহর রাসূল সা. এর সেই প্রসিদ্ধ হাদীস, যা আমরা সকলেই জানি আলকামাহ ইবনে ওয়াক্কাস আল লাইসী রা. বলেন যে, আমি হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা. কে বলতে শুনেছি, রাসূল সা. বলেছেনঃ

إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ فَهِجْرَتُهُ إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ، وَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ لِدُنْيَا يُصِيبُهَا، أَوِ امْرَأَةٍ يَتَزَوَّجُهَا، فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ

সকল কাজ নিয়ত অনুযায়ী হয় কোনো ব্যক্তি যা নিয়ত করে সেটা তাই হয় সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে হিজরত করলো, তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্যই হলো এবং যে ব্যক্তি দুনিয়াবী স্বার্থে অথবা কোনো নারীকে বিয়ের উদ্দেশ্যে হিজরত করলো, তার হিজরত সেই উদ্দেশ্যেই হবে যা সে নিয়ত করেছে (বুখারী ও মুসলিম)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏إِنَّ اللَّهَ لاَ يَنْظُرُ إِلَى صُوَرِكُمْ وَأَمْوَالِكُمْ وَلَكِنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ وَأَعْمَالِكُمْ‏ ‏.‏

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের বাহ্যিক চাল-চলন ও বিত্ত-বৈভবের প্রতি নযর করেন না; বরং তিনি নযর করেন তোমাদের অন্তর ও আমলের প্রতি (মুসলিম)

ঈমানদারের ভালবাসা, শত্রুতা সবকিছু হবে কেবল আল্লাহর জন্য যেমনটা আমরা জানি আরেকটি প্রসিদ্ধ হাদীসের মাধ্যমে হযরত আবু উমামাহ রা. বর্ণিত হাদীসটি মিশকাতুল মাসাবিহ গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেছেনঃ

مَنْ أَحَبَّ لِلَّهِ وَأَبْغَضَ لِلَّهِ وَأَعْطَى لِلَّهِ وَمَنَعَ لِلَّهِ فَقَدِ اسْتكْمل الْإِيمَان

যে ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে কাউকে ভালোবাসে, আর আল্লাহর ওয়াস্তে কারও সাথে বিদ্বেষ পোষণ করে এবং আল্লাহর ওয়াস্তেই দান-খয়রাত করে, আবার আল্লাহর ওয়াস্তেই দান-খয়রাত থেকে বিরত থাকে সে ঈমান পূর্ণ করেছে (আবু দাঊদ)

عن أبِيْ هُرَيْرَةَ قاَلَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يقول: إِنَّ أَوَّلَ النَّاسِ يُقْضَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَيْهِ رَجُلٌ اسْتُشْهِدَ فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا قَالَ قَاتَلْتُ فِيكَ حَتَّى اسْتُشْهِدْتُ قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ قَاتَلْتَ لِأَنْ يُقَالَ جَرِيءٌ فَقَدْ قِيلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّارِ. وَرَجُلٌ تَعَلَّمَ الْعِلْمَ وَعَلَّمَهُ وَقَرَأَ الْقُرْآنَ فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا قَالَ تَعَلَّمْتُ الْعِلْمَ وَعَلَّمْتُهُ وَقَرَأْتُ فِيكَ الْقُرْآنَ قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ تَعَلَّمْتَ الْعِلْمَ لِيُقَالَ عَالِمٌ وَقَرَأْتَ الْقُرْآنَ لِيُقَالَ هُوَ قَارِئٌ فَقَدْ قِيلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّارِ. وَرَجُلٌ وَسَّعَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَأَعْطَاهُ مِنْ أَصْنَافِ الْمَالِ كُلِّهِ فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا قَالَ مَا تَرَكْتُ مِنْ سَبِيلٍ تُحِبُّ أَنْ يُنْفَقَ فِيهَا إِلَّا أَنْفَقْتُ فِيهَا لَكَ قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ فَعَلْتَ لِيُقَالَ هُوَ جَوَادٌ فَقَدْ قِيلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ ثُمَّ أُلْقِيَ فِي النَّارِ.

হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে একথা বলতে শুনেছিঃ কিয়ামত দিনে মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যার বিচার করা হবে, সে এমন ব্যক্তি যে শাহাদত বরণ করেছে তাকে সামনে নিয়ে আসা হবে তখন (আল্লাহ) তাকে প্রদত্ত নেয়ামতরাজীর পরিচয় করাবেন সে তা চিনতে পারবে বলবেন, কি কাজ করেছ তা দ্বারা? সে বলবে, তোমার পথে যুদ্ধ করে শহীদ হয়ে গেছি তিনি বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ বরং তুমি যুদ্ধ করেছ এই উদ্দেশে যে, তোমাকে বলা হবে উমুক ব্যক্তি বীরযোদ্ধা আর তা তো বলা হয়েছে অতঃপর তার সম্পর্কে নির্দেশ দেয়া হবে, তখন তাকে মুখ নিচের দিকে দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে এবং সেই ব্যক্তির যে জ্ঞানার্জন করেছিল ও মানুষকে তা শিক্ষাদান করেছিল এবং কুরআন পাঠ করেছিল তাকে নিয়ে আসা হবে অতঃপর (আল্লাহ) তাকে প্রদত্ত নেয়ামত সমূহের পরিচয় করাবেন সে উহা চিনতে পারবে তিনি জিজ্ঞেস করবেন, কি আমল করেছ এই নেয়ামত দ্বারা সে বলবে, জ্ঞানার্জন করেছি এবং মানুষকে তা শিখিয়েছি আর আপনার সন্তুষ্টির জন্য কুরআন পাঠ করেছি তিনি বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ, বরং তুমি জ্ঞানার্জন করেছ এই উদ্দেশ্যে যে, (তোমাকে) বলা হবে আলেম বা জ্ঞানী কুরআন পাঠ করেছ এই উদ্দেশ্যে যে, (তোমাকে) বলা হবে ক্বারী বা পাঠক আর তা তো বলা হয়েছে অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হবে, তখন তাকে মুখ নিচের দিকে দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে এবং সেই ব্যক্তির, আল্লাহ যাকে প্রাচুর্য দান করেছিলেন, দান করেছিলেন বিভিন্ন ধরণের সম্পদ তাকে নিয়ে আসা হবে অতঃপর (আল্লাহ) তাকে প্রদত্ত নেয়ামত রাজীর পরিচয় করাবেন সে উহা চিনতে পারবে তখন তিনি প্রশ্ন করবেন, কি কাজ করেছ এই নেয়ামত সমূহ দ্বারা? সে জবাব দিবে, যে পথে অর্থ ব্যয় করলে আপনি খুশি হবেন এ ধরনের সকল পথে আপনার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে অর্থ সম্পদ ব্যয় করেছি তিনি বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ বরং তুমি এরূপ করেছ এই উদ্দেশ্যে যে, (তোমাকে) বলা হবে, সে দানবীর আর তা তো বলাই হয়েছে অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হবে তখন তাকে মুখ নিচের দিকে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে’’ (মুসলিম ও নাসাঈ)

§  রাসূল সা. এর দেখানো তরিকা অনুযায়ী

وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ علَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ.

হযরত আয়িশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, “যে ব্যক্তি এমন কর্ম করল, যার সম্পর্কে আমাদের কোন প্রকার নির্দেশ নেই, তা প্রত্যাখ্যাত’’ (মুসলিম)

§  শিরক মুক্ত গোলামী শিরক তিন প্রকারেরঃ

1.     الشرك بالنفس (আশশিরক বিন নাফস) – নিজ মনকে আল্লাহর সাথে শরীক করা আল্লাহর পছন্দের উপর নিজের পছন্দকে স্থান দেয়া

2.     الشرك بالذات (আশশিরক বিয যাত) – আল্লাহর যাতের সাথে শিরক করা যেমনঃ মূর্তি পূঁজা করা, ঈসা আ. কে আল্লাহর পুত্র মনে করা

3.    الشرك بالصفات (আশশিরক বিস সিফাত) – আল্লাহর গুণের সাথে কাউকে শরীক করা যেমনঃ পীর সাহেব সন্তান দেবেন

§  লুকমান হাকীম তার সন্তানকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছেনঃ

﴿وَإِذْ قَالَ لُقْمَـٰنُ لِٱبْنِهِۦ وَهُوَ يَعِظُهُۥ يَـٰبُنَىَّ لَا تُشْرِكْ بِٱللَّهِ ۖ إِنَّ ٱلشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌۭ﴾

স্মরণ করো যখন লুকমান নিজের ছেলেকে উপদেশ দিচ্ছিল, সে বললো, “হে পুত্র! আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না যথার্থই শিরক অনেক বড় জুলুম (লুকমানঃ ১৩)

﴿قُلْ تَعَالَوْا أَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَيْكُمْ ۖ أَلَّا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا﴾

হে মুহাম্মাদ! এদেরকে বলো, এসো আমি তোমাদের শুনাই তোমাদের রব তোমাদের ওপর কি বিধি-নিষেধ আরোপ করেছেন তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না। (আল আনআ’মঃ ১৫১)  

§  আগামী দিনের ইসলামী রাষ্ট্রঃ যেখানে আল্লাহর প্রভূত্ত্ব ও খোদায়ী প্রতিফলিত হবে গোলামদের সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে শিরক মুক্ত সমাজ হবে

২. ইসলামী রাষ্ট্রের দ্বিতীয় মূলনীতিঃ ইসলামী রাষ্ট্রে মানুষ বসবাস করবে পারিবারিক ব্যবস্থার অধীনে

﴿وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا ۚ إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا﴾﴿وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا﴾﴿رَّبُّكُمْ أَعْلَمُ بِمَا فِي نُفُوسِكُمْ ۚ إِن تَكُونُوا صَالِحِينَ فَإِنَّهُ كَانَ لِلْأَوَّابِينَ غَفُورًا﴾

পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করো যদি তোমাদের কাছে তাদের কোনো একজন বা উভয় বৃদ্ধ অবস্থায় থাকে, তাহলে তাদেরকে “উহ্‌” পর্যন্তও বলো না এবং তাদেরকে ধমকের সুরে জবাব দিয়ো না বরং তাদের সাথে মর্যাদা সহকারে কথা বলো আর দয়া ও কোমলতা সহকারে তাদের সামনে বিনম্র থাকো এবং দোয়া করতে থাকো এই বলেঃ হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া করো, যেমন তারা দয়া, মায়া, মমতা সহকারে শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন তোমাদের রব খুব ভালো করেই জানেন তোমাদের মনে কি আছে যদি তোমরা সৎকর্মশীল হয়ে জীবন যাপন করো, তাহলে তিনি এমন লোকদের প্রতি ক্ষমাশীল যারা নিজেদের ভুলের ব্যাপারে সতর্ক হয়ে বন্দেগীর নীতি অবলম্বন করার দিক ফিরে আসে

§  আল্লাহর পরে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশী হক এবং অগ্রাধিকার হচ্ছে পিতামাতার

§  সন্তান হবে পিতামাতার অনুগত, খেদমত গোজার, বিনয়াবনত

§  পিতামাতা সন্তানের মুখাপেক্ষী হবে না, বরং সন্তানরা হবে এমন যে তারা নিজেদেরকে পিতামাতার মুখাপেক্ষী মনে করবে

§  কুরআনে এবং হাদীসে আল্লাহর হকের পরই পিতামাতার কথা বলা হয়েছেঃ

﴿وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ۖ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا﴾

আর তোমরা সবাই আল্লাহর বন্দেগী করো তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না বাপ-মার সাথে ভালো ব্যবহার করো। (আন নিসাঃ ৩৬)  

﴿وَوَصَّيْنَا ٱلْإِنسَـٰنَ بِوَٰلِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُۥ وَهْنًا عَلَىٰ وَهْنٍۢ وَفِصَـٰلُهُۥ فِى عَامَيْنِ أَنِ ٱشْكُرْ لِى وَلِوَٰلِدَيْكَ إِلَىَّ ٱلْمَصِيرُ﴾

আর প্রকৃতপক্ষে আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার হক চিনে নেবার জন্য নিজেই তাকিদ করেছি তার মা দুর্বলতা সহ্য করে তাকে নিজের গর্ভে ধারণ করে এবং দু’বছর লাগে তার দুধ ছাড়তে (এ জন্য আমি তাকে উপদেশ দিয়েছি) আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো এবং নিজের পিতা-মাতার প্রতিও, আমার দিকেই তোমাকে ফিরে আসতে হবে। (লুকমানঃ ১৪)

﴿وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْنًا﴾

আমি মানুষকে নিজের পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি। (আন আনকাবুতঃ ৮)

﴿قُلْ تَعَالَوْا أَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَيْكُمْ ۖ أَلَّا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ۖ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا﴾

হে মুহাম্মাদ! এদেরকে বলো, এসো আমি তোমাদের শুনাই তোমাদের রব তোমাদের ওপর কি বিধি-নিষেধ আরোপ করেছেন তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো। (আল আনআ’মঃ ১৫১)  

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم رَغِمَ أَنْفُهُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُهُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُهُ‏.‏ قِيلَ مَنْ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ‏مَنْ أَدْرَكَ وَالِدَيْهِ عِنْدَ الْكِبَرِ أَحَدَهُمَا أَوْ كِلَيْهِمَا ثُمَّ لَمْ يَدْخُلِ الْجَنَّةَ

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ তার নাক ধুলিমলীন হোক, আবার তার নাক ধূলিমলীন হোক, আবার তার নাক ধূলিমলীন হোক জিজ্ঞাসা করা হল, কার ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি বললেন, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতার উভয়কে অথবা তাদের একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেল, এরপরও সে জান্নাতে প্রবেশ করল না (মুসলিম)

عَنْ أَنَسٍ رضى الله عنه قَالَ سُئِلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَنِ الْكَبَائِرِ قَالَ ‏الإِشْرَاكُ بِاللَّهِ، وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ، وَقَتْلُ النَّفْسِ، وَشَهَادَةُ الزُّورِ ‏‏.‏

হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সা. কে কবীরা গুনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে শরীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, কাউকে হত্যা করা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া (বুখারী)

عَنْ أَبَا عَمْرٍو الشَّيْبَانِيَّ، يَقُولُ حَدَّثَنَا صَاحِبُ، هَذِهِ الدَّارِ وَأَشَارَ إِلَى دَارِ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ سَأَلْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَىُّ الْعَمَلِ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ قَالَ ‏الصَّلاَةُ عَلَى وَقْتِهَا ‏‏.‏ قَالَ ثُمَّ أَىُّ قَالَ ‏ثُمَّ بِرُّ الْوَالِدَيْنِ‏‏.‏ قَالَ ثُمَّ أَىُّ قَالَ الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ‏‏.‏ قَالَ حَدَّثَنِي بِهِنَّ وَلَوِ اسْتَزَدْتُهُ لَزَادَنِي‏.‏

হযরত আবু আমর শায়বানী রাহি. থেকে বর্ণিত, তিনি আবদুল্লাহ ইবনু মাসিউদ রা. এর বাড়ীর দিকে ইশারা করে বলেন, এ বাড়ীর মালিক আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে জিজ্ঞাসা করলাম, কোন আমল আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়? তিনি বললেন, যথাসময়ে সালাত আদায় করা পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, এরপর কোনটি? তিনি বললেন, এরপর পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার আবার জিজ্ঞাসা করলেন, এরপর কোনটি? রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, এরপর জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ্ ইবনু মাসঊদ রা. বলেন, এগুলো তো রাসূলুল্লাহ সা. আমাকে বলেছেনই, যদি আমি আরও বেশী জানতে চাইতাম, তাহলে তিনি আরও বলতেন (বুখারী)

§  পিতামাতাই একটা পরিবারের রূপকার আর পরিবার হলো একটি রাষ্ট্রের রূপকার

§  এখানে পারিবারিক ব্যবস্থা ও তার শৃংখলার দিকে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে

o স্বামী বঙ্গভবনে-স্ত্রী গনভবনে, এমন হবে না

o পরিবার শান্তির স্থল-পরিবারের দুই প্রধানের আনুগত্য

o ইসলামী রাষ্ট্র হবে পরিবার ভিত্তিক জীবন ব্যবস্থার মাধ্যমে

§  আগামী দিনের ইসলামী রাষ্ট্রঃ যা পরিচালিত হবে একটি সুদৃঢ় পারিবারিক ব্যবস্থার অধীনে, আন্তরিকতা, ভালবাসা, শ্রদ্ধা, সংহত সামাজিক দায়বদ্ধতার অধীনে

৩. ইসলামী রাষ্ট্রের তৃতীয় মূলনীতিঃ ইসলামী রাষ্ট্রের সামাজিক জীবন হবে পারস্পরিক সাহায্য সহযোগিতা, সহানুভূতি ও সুবিচারের ভিত্তিতে

﴿وَآتِ ذَا الْقُرْبَىٰ حَقَّهُ وَالْمِسْكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ﴾

আত্মীয়কে তার অধিকার দাও এবং মিসকীন ও মুসাফিরকেও তাদের অধিকার দাও

§  পথিক কোন গ্রামে পৌছলে তার আথিথেয়তা হবে

§  ইসলামী রাষ্ট্রে কোন ব্যক্তি পৌছলে সে প্রয়োজনীয় আতিথিয়েতা পাবে, সে নিজেকে অসহায় ভাববে না

§  মানুষ যার সাথে বসবাস করবে, তার হক সম্পর্কে হবে সচেতন কারো সহযোগিতা করলে করুনা করেছে মনে করবেনা মনে করবে হক আদায় করেছে

§  ইসলামী রাষ্ট্রের এ নিয়েমের জন্য মদীনার সমাজে ‘ওয়াজিব সাদাকা’, নফল সাদাকার নির্দেশ ছিল ছিল উত্তরাধিকার, ওসিয়াত, ওয়াকফ, এতিমদের অধিকার সংরক্ষণের ব্যবস্থা

§  সাহাবীদের আতিথিয়েতা এবং বাতি নিবানোর ঘটনা ইতিহাসে উজ্জল হয়ে রয়েছে

§  অতিথিদের কর্তব্য হলোঃ কোথাও তিন দিনের বেশী অবস্থান না করা

عَنْ أَبِي شُرَيْحٍ الْعَدَوِيِّ، قَالَ سَمِعَتْ أُذُنَاىَ، وَأَبْصَرَتْ، عَيْنَاىَ حِينَ تَكَلَّمَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ جَارَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ جَائِزَتَهُ ‏‏.‏ قَالَ وَمَا جَائِزَتُهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ‏يَوْمٌ وَلَيْلَةٌ وَالضِّيَافَةُ ثَلاَثَةُ أَيَّامٍ، فَمَا كَانَ وَرَاءَ ذَلِكَ فَهْوَ صَدَقَةٌ عَلَيْهِ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ.‏

হযরত আবু শুরাইহ আল আদাউয়ী রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সা যখন কথা বলেছিলেন, তখন আমার দু’কান শুনছিলো ও আমার দু’চোখ দেখছিলো তিনি বলছিলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের উপর ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে সম্মান করে যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের উপর ঈমান করে সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে তার প্রাপ্যের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হল মেহমানের প্রাপ্য কি, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি বলেনঃ একদিন একরাত ভালরূপে মেহমানদারী করা আর তিন দিন হল (সাধারণ) মেহমানদারী, আর তার চেয়েও বেশী হলে তা হচ্ছে তার প্রতি অনুগ্রহ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের দিনের বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে অথবা নীরব থাকে (বুখারী)

§  মুমিনের গুনাবলীর আলোচনা সূরা আল মাআ’রিজে বলা হয়েছেঃ

﴿وَٱلَّذِينَ فِىٓ أَمْوَٰلِهِمْ حَقٌّۭ مَّعْلُومٌۭ﴾﴿لِّلسَّآئِلِ وَٱلْمَحْرُومِ﴾

যাদের সম্পদে নির্দিষ্ট হক আছে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের। (আয়াতঃ ২৪-২৫)

§  আগামী দিনের ইসলামী রাষ্ট্রঃ যেখানে পৌছলে মানুষ নিজেকে অসহায় মনে করবে না বরং পূর্ণ আতিথেয়তা পাবে যেখানকার অসহায় মানুষ স্বচ্ছলদের দ্বারা অভিভাবকত্ব পাবে

৪. ইসলামী রাষ্ট্রের চতূর্থ মূলনীতিঃ ইসলামী রাষ্ট্রে সর্বক্ষেত্রে অপচয় করা যাবে না

﴿وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا﴾﴿إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ ۖ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُورًا﴾

তোমরা অপব্যয় অপচয় করনা অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই আর শয়তান তার রবের অকৃতজ্ঞ

§  ইসলামী রাষ্ট্রের তহবিল এবং নিজস্ব সম্পদ সব কিছুর আমানতদার আমরা এগুলোর অপচয় করা যাবেনা

§  রাষ্ট্র প্রধান হিসাবে বিরাট সফর সঙ্গী নিয়ে বিদেশ ভ্রমন, সফরে মেয়ে এবং মেয়ের শাশুড়ীকে সফরসংগী করা অপচয় নয়কি

§  সম্পদ আল্লাহর নিয়ামত তা আল্লাহ নির্দেশিত পথে ব্যয় করতে হবে যেখানে মানুষ রাতে বিজলী পায়না-সেখানে শিখা অনির্বান জালিয়ে বিদ্যুতের অপচয় করা হয।।

§  আল্লাহর নামে দিতে নাই; কিন্তু গান বাজনাতে খরচ করা হয়

§  আরবী ভাষায় অপচয় বুঝাতে দুইটি আরবী শব্দ ব্যবহার করা হয় ১. ইসরাফ (إسراف), ২. তাবযীর (تبذير)

1. ইসরাফঃ ইসরাফ অর্থঃ সীমালঙ্ঘন, অপচয়, অপব্যয়, অমিতব্যয়, বাড়াবাড়ি, মাত্রাতিরিক্ততা, অপরিমিতি ইত্যাদি আরবী ভাষা বিশেষজ্ঞরা ইসরাফ শব্দকে ব্যয় করা ও খাওয়ার সাথে নির্দিষ্ট করেছেন 

o ভাষাতত্ত্ববিদ শরীফ আলী জুরজানী ‘ইসরাফ’ এর সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবেঃ

الإسراف هو إنفاق المال الكثير في الغرض الخسيس وتجاوز الحد في النفقة، وقيل: أن يأكل الرجل ما لا يحل له، أو يأكل مما يحل له فوق الاعتدال، ومقدار الحاجة-

ইসরাফ’ হল কোন হীন উদ্দেশ্যে প্রচুর অর্থ-সম্পদ ব্যয় করা এবং ব্যয়ের ক্ষেত্রে সীমা লঙ্ঘন করা

o কেউ কেউ বলেন, কোন ব্যক্তির অবৈধ বস্ত ভক্ষণ করা অথবা তার জন্য যা কিছু হালাল তা অপরিমিত ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত আহার করা

o আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

 ﴿كُلُوا مِن ثَمَرِهِ إِذَا أَثْمَرَ وَآتُوا حَقَّهُ يَوْمَ حَصَادِهِ ۖ وَلَا تُسْرِفُوا ۚ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ﴾

এগুলোর ফল খাও যখন ফলবান হয় এবং এগুলোর ফসল কাটার সময় আল্লাহর হক আদায় করো আর সীমা অতিক্রম করো না কারণ সীমা অতিক্রমকারীদেরকে আল্লাহ পছ্ন্দ করেন না (আল আনআ’মঃ ১৪১)

﴿يَا بَنِي آدَمَ خُذُوا زِينَتَكُمْ عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍ وَكُلُوا وَاشْرَبُوا وَلَا تُسْرِفُوا ۚ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ﴾

হে বনী আদম! প্রত্যেক ইবাদাতের সময় তোমরা নিজ নিজ সুন্দর সাজে সজ্জিত হও  আর খাও ও পান করো কিন্তু সীমা অতিক্রম করে যেয়ো নাআল্লাহ সীমা অতিক্রমকারীদেরকে পছন্দ করেন না। (আল আ’রাফঃ ৩১)

o হযরত উমরা রা. বলেনঃ

إياكم والبطنة في الطعام والشراب فإنها مفسدة للجسد مورثة للفشل مكسلة عن الصلاة وعليكم بالقصد فيهما فإنه أصلح للجسد وأبعد من السرف

তোমরা সীমাতিরিক্ত পানাহার থেকে সাবধান থাক কেননা অতিরিক্ত পানাহার শরীরের জন্য ক্ষতিকর, অকর্মন্যতা আনয়ন কারী ও ছালাত থেকে অলসকারী তোমরা পানাহারের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর কেননা পরিমিত পানাহার শরীরের জন্য উপকারী এবং অপচয় থেকে বেঁচে থাকতে সহায়তা করে’

2.তাবযীরঃ তাবযীর অর্থঃ অপচয়, অপব্যয়, বাজে খরচ, অমিতব্যয় ইত্যাদি আরবী ভাষা বিশেষজ্ঞরা তাবযীরকে বীজ ছিটানো ও নিক্ষেপ করা অর্থে ব্যবহার করেছেন এ থেকে শব্দটি রূপকভাবে অর্থঃ সম্পদ অযথা ব্যয় করার অর্থে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে

o ফকীহগন তাবযীর এর সংগা দিয়েছে এইভাবেঃ عدم إحسان التصرف في المال وصرفه فيما لا ينبغي সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার না করা এবং তা অনুচিত কাজে ব্যয় করা’

§  ইসরাফ ও তাবযীর বিষয়ে আমরা কয়েকটি প্রসিদ্ধ উক্তি এখানে উল্লেখ করলামঃ

o من أنفق درهما في غير حقه فهو سرف যে ব্যক্তি অনর্থক কাজে এক দিরহামও খরচ করল সেটাই অপচয়’ (আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.)

o كُلْ ما شِئتَ والبَسْ ما شِئتَ، ما أخطَأَتْك خَلَّتانِ: سَرَفٌ أو مَخِيلةٌ তুমি যা ইচ্ছা খাও এবং যা ইচ্ছা পরিধান করো, যতক্ষণ না দুটি দোষ তোমার মধ্যে আসেঃ অপচয় বা অহংকার

o كفى بالمرءِ سَرَفًا أن يأكُلَ كُلَّ ما اشتهى মানুষের অপচয়ের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা ইচ্ছা তাই খায়” (উমর রা.)

o للمُسرِفِ ثلاثُ علاماتٍ: يشتري بما ليس له، ويأكُلُ بما ليس له، ويَلبَسُ ما ليس له অপচয়কারীর তিনটি লক্ষণ রয়েছেঃ (১) এমন কিছু কেনা যা তার সামর্থ্যের বাইরে (২) এমন কিছু খাওয়া যা তার সামর্থ্যের বাইরে (৩) এমন কিছু পরা যা তার সামর্থ্যের বাইরে” (ওয়াহ্‌ব ইবনে মুনাব্বিহ)

o لو أنَّ رَجُلًا أنفَقَ مِثلَ أحُدٍ في طاعةِ اللهِ تعالى، لم يكُنْ مِن المُسرِفين যদি কেউ আল্লাহর আনুগত্যে পাহাড়ের মতো উহুদের সমপরিমাণ সম্পদ ব্যয় করে, তবুও সে অপচয়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে না” (মুজাহিদ রাহি.)

o كنتُ أطوفُ مع مجاهِدٍ بالبيتِ، فقال: لو أنفَقَ عَشَرةَ آلافِ دِرهَمٍ في طاعةِ اللهِ ما كان مُسرِفًا، ولو أنفَقَ دِرهمًا واحدًا في معصيةِ اللهِ كان من المُسرِفين “আমি মুজাহিদের সাথে কাবা তাওয়াফ করছিলাম, তখন তিনি বললেনঃ যদি কেউ আল্লাহর পথে দশ হাজার দিরহাম ব্যয় করে, তবুও সে অপচয়কারী নয় কিন্তু কেউ যদি এক দিরহামও আল্লাহর অবাধ্যতায় ব্যয় করে, তাহলে সে অপচয়কারী হবে” (উসমান ইবনে আসওয়াদ)

o التَّبذيرُ هو أخذُ المالِ من حَقِّه، ووَضعُه في غيرِ حَقِّه، وهو الإسرافُ অপব্যয় হলো, সম্পদকে তার যথার্থ অধিকার থেকে সরিয়ে অন্যত্র ব্যয় করা এটাই হচ্ছে অপচয়” (ইমাম মালিক রাহি.)

o التَّبذيرُ إنفاقُ المالِ في غيرِ حَقِّه، ولا تبذيرَ في عَمَلِ الخيرِ অপচয় হলো, সম্পদকে তার প্রকৃত প্রয়োজনের বাইরে ব্যয় করা তবে নেক কাজে অপচয় নেই” (ইমাম শাফেয়ী রাহি.)

o الإسرافُ ما قصَّر به عن حقِّ اللهِ অপচয় হলো, যা আল্লাহর হক আদায়ে কমতি সৃষ্টি করে” (ইয়াস ইবনে মুআবিয়া)

o خُذْ بحَظِّك من العُزلةِ، ولا تأخُذَنَّ إلَّا حلالًا، وجانِبِ الإسرافَ، واقنَعْ من الدُّنيا بالكَفافِ নিঃসঙ্গতা থেকে নিজের অংশ গ্রহণ করো, কেবল হালাল (বৈধ) জিনিস গ্রহণ করো, অপচয় (অতিরিক্ত ব্যয়) থেকে দূরে থাকো এবং দুনিয়া থেকে প্রয়োজনমাফিক (যতটুকু প্রয়োজন) তা-ই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকো” (হারিছ ইবন আসাদ আল-মুহাসিবি)

o عليك بالقَصدِ بَيْنَ الطَّريقتَينِ؛ لا مَنعَ ولا إسرافَ، ولا بُخلَ ولا إتلافَ. لا تكُنْ رَطبًا فتُعصَرَ، ولا يابِسًا فتُكسَرَ، ولا تكُنْ حُلوًا فتُستَرَطَ  ، ولا مُرًّا فتُلفَظَ...“তুমি দুটি পথের মাঝে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করো; যেন না হয় নিষেধাজ্ঞা, না হয় অপচয়, না হয় কৃপণতা, না হয় অপব্যয় তুমি এমন নরম হয়ো না যে মানুষ তোমাকে চিপে নিংড়ে নেয়, আবার এমন কঠিনও হয়ো না যে তারা তোমাকে ভেঙে ফেলে তুমি এমন মিষ্টিও হয়ো না যাতে সবাই তোমাকে গিলে ফেলে, আবার এমন তিক্তও হয়ো না যে সবাই তোমাকে বর্জন করে দেয়..” (আবুল মানসুর সালাবী)

§  আগামী দিনের ইসলামী রাষ্ট্রঃ যেখানে কোন ধরণের অপচয় করা হবে না, কোন ধরণের বিলাসিতার সুযোগ থাকবে না

৫. ইসলামী রাষ্ট্রের পঞ্চম মূলনীতিঃ ইসলামী রাষ্ট্রে আর্তমানবতার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে

﴿وَإِمَّا تُعْرِضَنَّ عَنْهُمُ ابْتِغَاءَ رَحْمَةٍ مِّن رَّبِّكَ تَرْجُوهَا فَقُل لَّهُمْ قَوْلًا مَّيْسُورًا﴾

যদি তাদের থেকে (অর্থাৎ অভাবী, আত্মীয়-স্বজন, মিসকীন ও মুসাফির) তোমাকে মুখ ফিরিয়ে নিতে হয় এজন্য যে, এখনো তুমি প্রত্যাশিত রহমতের সন্ধান করে ফিরছো, তাহলে তাদেরকে নরম জবাব দাও

§  ইসলামী রাষ্ট্রে অভাবী, আত্মীয়-স্বজন, মিসকীন, মুসাফির সকলের সাথে ভাল ব্যবহার করতে হবে আপনি সহযোগিতা করতে অসমর্থ হলেও ভাল ব্যবহার তার প্রাপ্য

§  আপনি আপনার সম্পত্তি ভাগ বাটওয়ারা করছেন এমন সময় যদি আপনার আত্মীয়-স্বজন ও এতিম মিসকিনদের কেউ এসে যায়, তাহলে সূরা নিসাতে আল্লাহ অর্ডার করছেনঃ

﴿وَإِذَا حَضَرَ الْقِسْمَةَ أُولُو الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينُ فَارْزُقُوهُم مِّنْهُ وَقُولُوا لَهُمْ قَوْلًا مَّعْرُوفًا﴾

ধন-সম্পত্তি ভাগ-বাঁটোয়ারার সময় আত্মীয়–স্বজন, এতিম ও মিসকিনরা এলে তাদেরকেও ঐ সম্পদ থেকে কিছু দিয়ে দাও এবং তাদের সাথে ভালোভাবে কথা বলো (আয়াতঃ ৮)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَا ابْنَ آدَمَ مَرِضْتُ فَلَمْ تَعُدْنِي‏.‏ قَالَ يَا رَبِّ كَيْفَ أَعُودُكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ‏.‏ قَالَ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ عَبْدِي فُلاَنًا مَرِضَ فَلَمْ تَعُدْهُ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ لَوْ عُدْتَهُ لَوَجَدْتَنِي عِنْدَهُ يَا ابْنَ آدَمَ اسْتَطْعَمْتُكَ فَلَمْ تُطْعِمْنِي.‏ قَالَ يَا رَبِّ وَكَيْفَ أُطْعِمُكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ‏.‏ قَالَ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّهُ اسْتَطْعَمَكَ عَبْدِي فُلاَنٌ فَلَمْ تُطْعِمْهُ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ لَوْ أَطْعَمْتَهُ لَوَجَدْتَ ذَلِكَ عِنْدِي يَا ابْنَ آدَمَ اسْتَسْقَيْتُكَ فَلَمْ تَسْقِنِي‏.‏ قَالَ يَا رَبِّ كَيْفَ أَسْقِيكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ قَالَ اسْتَسْقَاكَ عَبْدِي فُلاَنٌ فَلَمْ تَسْقِهِ أَمَا إِنَّكَ لَوْ سَقَيْتَهُ وَجَدْتَ ذَلِكَ عِنْدِي.‏

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিনে বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম; কিন্তু তুমি আমার খোজ-খবর রাখনি সে বলবে, হে পরওয়ারদিগার! আমি কী করে তোমার খোজ-খবর করব, অথচ তুমি সারা জাহানের প্রতিপালক আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, আর তুমি তার সেবা করনি তুমি কি জানতে না যে, তুমি তার সেবা-শুশ্রুষা করলে তার কাছেই আমাকে পেতে হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়োছিলাম; কিন্তু তুমি আমাকে খেতে দাওনি সে বলবে, হে আমার পরওয়ারদিগার! আমি কি করে তোমাকে আহার করাতে পারি! তুমি তো সারা জাহানের প্রতিপালক তিনি বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে আহার চেয়েছিল? তুমি তাকে খেতে দাওনি তুমি কি জানতে না যে, যদি তুমি তাকে আহার করাতে, তাহলে তা অবশ্যই আমার কাছে পেতে হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে পানীয় চেয়েছিলাম; কিন্তু তুমি আমাকে পানি পান করাওনি সে বলবে, হে আমার পরওয়ারদিগার! আমি কী করে তোমাকে পান করাব, অথচ তুমি সারা জাহানের প্রতিপালক আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানীয় চেয়েছিল, তুমি তাকে পান করাওনি যদি তুমি তাকে পান করাতে, তবে তা আমার কাছে পেতে(মুসলিম)

§  আগামী দিনের ইসলামী রাষ্ট্রঃ যেখানকার অস্বচ্ছল মানুষদের প্রতি সম্মাণ প্রদর্শণ করা হবে

৬. ইসলামী রাষ্ট্রের ষষ্ঠ মূলনীতিঃ ইসলামী রাষ্ট্রে অর্থ ব্যয়ে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা হবে

﴿وَلَا تَجْعَلْ يَدَكَ مَغْلُولَةً إِلَىٰ عُنُقِكَ وَلَا تَبْسُطْهَا كُلَّ الْبَسْطِ فَتَقْعُدَ مَلُومًا مَّحْسُورًا﴾﴿إِنَّ رَبَّكَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَن يَشَاءُ وَيَقْدِرُ ۚ إِنَّهُ كَانَ بِعِبَادِهِ خَبِيرًا بَصِيرًا﴾

নিজের হাত গলায় বেঁধে রেখো না এবং তাকে একেবারে খোলাও ছেড়ে দিয়ো না, তাহলে তুমি নিন্দিত ও অক্ষম হয়ে যাবে তোমার রব যার জন্য চান রিযিক প্রশস্ত করে দেন আবার যার জন্য চান সংকীর্ণ করে দেন তিনি নিজের বান্দাদের অবস্থা জানেন এবং তাদেরকে দেখছেন

§  কৃপন ও অপচয়কারীর মধ্যম পন্থা

§  মানুষের স্বভাব সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছেঃ

﴿وَإِذَا مَسَّهُ ٱلْخَيْرُ مَنُوعًا﴾

আর যে-ই সচ্ছলতার মুখ দেখে অমনি সে কৃপণতা করতে শুরু করে। (আল মাআ’রিজঃ ২১) 

§  উম্মতে মুহাম্মাদী মধ্যমপন্থীঃ

﴿وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا﴾

আর এভাবেই আমি তোমাদেরকে একটি ‘মধ্যপন্থী’ উম্মাতে পরিণত করেছি (আল বাকারাহঃ ১৪৩)

§  ইসলামী রাষ্ট্র ও তার জনগন প্রয়োজনীয় কাজে অর্থ ব্যয়ে উদার হবে, কার্পন্য পরিহার করবে আবার বেহুদা কাজে কোন অর্থ ব্যয় করবেনা

﴿إِنَّ رَبَّكَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَن يَشَاءُ وَيَقْدِرُ ۚ إِنَّهُ كَانَ بِعِبَادِهِ خَبِيرًا بَصِيرًا﴾

তোমার রব যার জন্য চান রিজিক প্রশস্ত করে দেন, আর যার জন্য চান করেন সংকীর্ণ তিনি তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে ওয়াকিফহাল এবং দেখছেন

§  আয়াতে বলা হয়েছেঃ وَلَا تَجْعَلْ يَدَكَ مَغْلُولَةً এটি একটি রূপককথা কৃপণতা অর্থে এই কথা বলা হয়েছে হাত খোলা ছেড়ে দেয়া মানে বাজে খরচ করা

o আমরা যদি ইসলামী রাষ্টের ৪র্থ মূলনীতির সাথে এটা মিলিয়ে পড়ি, তাহলে বিষয়টি পরিস্কার হবে সেখানে বলা হয়েছে, অপচয় করা যাবে না আর এখানে বলা হচ্ছে হাত গলার সাথে বেঁধে রেখো না এর মানে কৃপণতা করে অর্থ ব্যবস্থার স্বাভাবিক আবর্তন রুখে না দেয়া, আবার অপব্যয়ী হয়ে অর্থনীতিকে ধ্বংস না করা বরং এই দুইয়ের মাঝখানে একটি ভারসাম্য নীতি গ্রহণ করা

o এই নীতি গ্রহণ করলে অহংকার, প্রদর্শনেচ্ছামূলক, লোক দেখানো খরচ, বিলাসিতা, ফাসেকী ও বেহায়াপনা ছড়ায় এমন কাজে অর্থ ব্যয় না করে জনকল্যাণমূলক কাজে অর্থ ব্যয় হবে

o যারা অপচয় করে তারা শয়তানের ভাই অপচয় বিষয়ে ইতিপূর্বে আমরা আলোচনা করেছি

§  কুরআনে অন্যত্র বিষয়টাকে বলা হয়েছে এভাবেঃ

﴿وَٱلَّذِينَ إِذَآ أَنفَقُوا۟ لَمْ يُسْرِفُوا۟ وَلَمْ يَقْتُرُوا۟ وَكَانَ بَيْنَ ذَٰلِكَ قَوَامًۭا﴾

তারা যখন ব্যয় করে তখন অযথা ব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না বরং উভয় প্রান্তিকের মাঝামাঝি তাদের ব্যয় ভারসাম্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। (আল ফুরক্বানঃ ৬৭)

§  আল্লাহর রাসূলের হাদীসে বর্ণিত হয়েছেঃ

وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه أَنَّ رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم، قَالَ اتَّقُوا الظُّلْمَ فَإنَّ الظُّلْمَ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ القِيَامَةِ. وَاتَّقُوا الشُّحَّ ؛ فَإِنَّ الشُّحَّ أهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ . حَمَلَهُمْ عَلَى أنْ سَفَكُوا دِمَاءهُمْ، وَاسْتَحَلُّوا مَحَارِمَهُمْ.

হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, তোমরা অত্যাচার করা থেকে বাঁচো, কেননা অত্যাচার কিয়ামতের দিন অন্ধকার স্বরূপ আর তোমরা কৃপণতা থেকে দূরে থাকো কেননা, কৃপণতা পূর্ববর্তী লোকেদেরকে ধ্বংস করেছে এ কৃপণতা তাদেরকে নিজেদের রক্তপাত করার এবং হারামকে হালাল জানার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে(মুসলিম)

§  ইতিহাস সাক্ষী দেয় প্রতিষ্ঠিত মদীনা রাষ্ট্রে

১. অপব্যয় ও বিলাসিতার বহু নীতি প্রথাকে আইনগত ভাবে হারাম করা হয়

২. অযথা অর্থ ব্যয়ের পথ বন্ধ করতে কৌশল অবলম্বন করা হয়

৩. সমাজ সংস্কারের মাধ্যমে অপব্যয়ের বহু রসম-রেওয়াজ বিলোপ করা হয়

৪. অপব্যয়ের পথে বাঁধা প্রদান করতে রাষ্ট্রকে এখতিয়ার দেয়া হয়

৫. যাকাত ও সাদাকার বিধানের মাধ্যমে কৃপণতাকে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়

৬. সম্পদ জমা করে অর্থের আবর্তনের পথ বন্ধ করা সকল সম্ভাবনা নির্মূল করা হয়

৭. সমাজে জনমত সৃষ্টির মাধ্যমে দানশীলতা ও অপব্যয়ের মাঝে পার্থক্য তুলে ধরা হয় কৃপণদের তিরস্কার করা, অপব্যয়কারীকে নিন্দা করা, সম্পদ ব্যয়ে ভারসাম্য রক্ষাকারীকে মর্যাদা প্রদান এবং দানশীলদের কদর করার মাধ্যমে নৈতিক ও মানসিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়

§  ধনী এবং গরীব আল্লাহ নির্ধারিত এটা ভাংগা যাবেনা

§  কেউ থাকবে গছতলায়, আর কেউ সাত তলায় কেউ খাবে আর কেউ খাবেনা

§  সবাই মুদীর হলে সমস্যা কোথায়?

§  সবাই নেতা হলে সমস্যা কোথায়?

§  প্রধানমন্ত্রী এবং সুইপার সব সমান হয়ে গেলে প্রধানমন্ত্রীর ঘর নিজেই ঝাড় দিতে হবে

§  আগামী দিনের ইসলামী রাষ্ট্রঃ যেখানে কোন কৃপণতার সুযোগ যেমন থাকবে না, তেমনি সকল বিষয়ে হাত খোলে খরচ করাকেও নিরুৎসাহিত করা হবে

৭. ইসলামী রাষ্ট্রের ষষ্ঠ মূলনীতিঃ ইসলামী রাষ্ট্রে ভ্রণ হত্যা নিষিদ্ধ থাকবে

﴿وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُمْ خَشْيَةَ إِمْلَاقٍ ۖ نَّحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَإِيَّاكُمْ ۚ إِنَّ قَتْلَهُمْ كَانَ خِطْئًا كَبِيرًا﴾

দারিদ্রের আশংকায় নিজেদের সন্তান হত্যা করো না আমি তাদেরকেও রিযিক দেবো এবং তোমাদেরকেও আসলে তাদেরকে হত্যা করা একটি মহাপাপ

§  কুরআনে অন্যত্র বলা হয়েছেঃ

﴿وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُم مِّنْ إِمْلَاقٍ ۖ نَّحْنُ نَرْزُقُكُمْ وَإِيَّاهُمْ﴾

দারিদ্রের ভয়ে নিজের সন্তানদেরকে হত্যা করো না, আমি তোমাদেরকে জীবিকা দিচ্ছি এবং তাদেরকেও দেবো  

﴿قَدْ خَسِرَ الَّذِينَ قَتَلُوا أَوْلَادَهُمْ سَفَهًا بِغَيْرِ عِلْمٍ وَحَرَّمُوا مَا رَزَقَهُمُ اللَّهُ افْتِرَاءً عَلَى اللَّهِ ۚ قَدْ ضَلُّوا وَمَا كَانُوا مُهْتَدِينَ﴾

নিসন্দেহে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যারা নিজেদের সন্তানদেরকে নির্বুদ্ধিতা ও অজ্ঞতাবশত হত্যা করেছে এবং আল্লাহর দেয়া জীবিকাকে আল্লাহর সম্পর্কে মিথ্যা ধারণাবশত হারাম গণ্য করেছে নিসন্দেহে তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং তারা কখনোই সত্য পথ লাভকারীদের অন্তরভুক্ত ছিল না (আনআমঃ ১৪০)

﴿وَإِذَا تَوَلَّىٰ سَعَىٰ فِي الْأَرْضِ لِيُفْسِدَ فِيهَا وَيُهْلِكَ الْحَرْثَ وَالنَّسْلَ ۗ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الْفَسَادَ﴾

যখন সে কর্তৃত্ব লাভ করেপৃথিবীতে তার সমস্ত প্রচেষ্টা-সাধনা নিয়োজিত করে বিপর্যয় সৃষ্টি এবং শস্যক্ষেত ও মানব বংশ ধ্বংস করার কাজে অথচ আল্লাহ (যাকে সে সাক্ষী মেনেছিল)বিপর্যয় মোটেই পছন্দ করেন না। (আল বাক্বারাহঃ ২০৫)

§  অথচ আমাদের সমাজ বলে আপাততঃ আর নয় ছেলে হোক মেয়ে হোক-দু‘টি সন্তানই যথেষ্ট

§  ইসলামী রাষ্ট্রে জন্মনিয়ন্ত্র করা যাবেনা, এটা হত্যার শামীল

§  আমাদের সরকার গুলোর শ্লোগান “মানুষ বাড়ছে-জমি বাড়ছেনা”

§  জমিতে ফসল দেন কে?

§  বৃষ্টি দেন কে?

§  বিজ্ঞানের প্রভাবে উচ্চ ফলন/ তিন ফসলী-এ ব্রেন কে দিলেন?

§  জন্ম নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে যিনাকে উৎসাহিত করা হয় জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতির সূচনা হয়েছে অর্থনৈতিক চিন্তার ভিত্তিতে কুরআনের এই আয়াত সেই চিন্তার ভিতে আঘাত করেছে

o প্রাচীনকালে দারিদ্রের কারণে শিশু হত্যা ও গর্ভপাত করানো হতো

o আধুনিক যুগে সেই ধারাবাহিকতাই জন্ম নিয়ন্ত্রন বা গর্ভনিরোধ

o ইসলাম খাবার গ্রহণকারীর সংখ্যা কমানের প্রচেষ্টা বন্ধ করে খাবার গ্রহণকারীর হাতকে কাজে হাতে পরিণত করতে শক্তি ও যোগ্যতা নিয়োগের নির্দেশ করে

o এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ জানিয়ে দিচ্ছেন যে, রিযিকের ব্যবস্থা করা মানুষের অধীন নয় বরং যিনি সৃষ্টি করেছেন, তার দায়িত্ব রিযিকের ব্যবস্থা করা এজন্য তিনি যমীনকে আবাদ করেছেন পূর্ববর্তীদের যেমন করে রিযিক দিয়েছেন, বর্তমানদেরও তেমন করে রিযিকের ব্যবস্থা করবেন

﴿وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيهَا مَعَايِشَ وَمَن لَّسْتُمْ لَهُ بِرَازِقِينَ﴾﴿وَإِن مِّن شَيْءٍ إِلَّا عِندَنَا خَزَائِنُهُ وَمَا نُنَزِّلُهُ إِلَّا بِقَدَرٍ مَّعْلُومٍ﴾

এবং তার মধ্যে জীবিকার উপকরণাদি সরবরাহ করেছি তোমাদের জন্যও এবং এমন বহু সৃষ্টির জন্যও যাদের আহারদাতা তোমরা নওএমন কোনো জিনিস নেই যার ভাণ্ডার আমার কাছে নেই এবং আমি যে জিনিসই অবতীর্ণ করি একটি নির্ধারিত পরিমাণেই করে থাকি (আল হিজরঃ ২০-২১)

﴿وَمَا مِن دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا ۚ كُلٌّ فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ﴾

ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী এমন কোন প্রাণী নেই যার রিযিকের দায়িত্ব আল্লাহর ওপর বর্তায় না এবং যার সম্পর্কে তিনি জানেন নাকোথায় সে থাকে এবং কোথায় তাকে সোপর্দ করা হয় সবকিছুই একটি পরিষ্কার কিতাবে লেখা আছে (হুদঃ ৬)

§  ইতিহাস বলে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে রিযিক বৃদ্ধির উপকরণ বেড়েছে যেমনঃ হাইব্রিড ধান, ডেইরি ফার্ম, সমুদ্রে মাছ ধরা ইত্যাদি

§  আল্লাহর সৃষ্টি কাঠামোতে রদবদল করা শয়তানী কাজঃ

﴿لَّعَنَهُ اللَّهُ ۘ وَقَالَ لَأَتَّخِذَنَّ مِنْ عِبَادِكَ نَصِيبًا مَّفْرُوضًا﴾﴿وَلَأُضِلَّنَّهُمْ وَلَأُمَنِّيَنَّهُمْ وَلَآمُرَنَّهُمْ فَلَيُبَتِّكُنَّ آذَانَ الْأَنْعَامِ وَلَآمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللَّهِ ۚ وَمَن يَتَّخِذِ الشَّيْطَانَ وَلِيًّا مِّن دُونِ اللَّهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُّبِينًا﴾﴿يَعِدُهُمْ وَيُمَنِّيهِمْ ۖ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلَّا غُرُورًا﴾

যাকে আল্লাহ অভিশপ্ত করেছেন (তারা সেই শয়তানের আনুগত্য করছে) যে আল্লাহকে বলেছিল, আমি তোমার বান্দাদের থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ নিয়েই ছাড়বো আমি তাদেরকে পথভ্রষ্ট করবো তাদেরকে আশার ছলনায় বিভ্রান্ত করবো আমি তাদেরকে হুকুম করবো এবং আমার হুকুমে তারা পশুর কান ছিঁড়বেই আমি তাদেরকে হুকুম করবো এবং আমার হুকুমে তারা আল্লাহর সৃষ্টি আকৃতিতে রদবদল করে ছাড়বেই যে ব্যক্তি আল্লাহকে বাদ দিয়ে এই শয়তানকে বন্ধু ও অভিভাবক বানিয়েছে সে সুস্পষ্ট ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন  সে তাদের কাছে ওয়াদা করে এবং তাদেরকে নানা প্রকার আশা দেয়কিন্তু শয়তানের সমস্ত ওয়াদা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয় (আন নিসাঃ ১১৮-১২০) 

§  জন্ম নিয়ন্ত্রণের কুফলঃ

1.  বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হয়

o উচ্চশ্রেণীর মানুষ জন্ম নিয়ন্ত্রণ করে, নিম্নশ্রেণীর মানুষ করে না ফলে সম্ভ্রান্ত মানুষ কমতে থাকে

o মেধা শুন্য পৃথিবীর সৃষ্টি হয় কারণ আদর ও সুখে লালিত সন্তানেরা কষ্ট সহিষ্ঞু হয় না সাধারণতঃ কষ্ট করে বড় হওয়া সন্তানেরাই মেধাবী হয়

o বৃদ্ধদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, যুবকের সংখ্যা কমে যায়

2.  ব্যভিচার ও কুৎসিত রোগের প্রসার হয়

3. তালাকের আধিক্য দেখা দেয়

4. জন্মের হার কমে যায়

5. নারী স্বাস্থের জন্য ক্ষতির কারণ

6.  সামাজিক অস্থিরতা দেখা দেয়, নৈতিক ক্ষতি দেখা দেয়

§  আগামী দিনের ইসলামী রাষ্ট্রঃ যেখানে জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিষিদ্ধ থাকবে একই সাথে জন্ম নিরুদের সকল পথও বন্ধ করে দেয়া হবে

৮. ইসলামী রাষ্ট্রের অষ্টম মূলনীতিঃ ইসলামী রাষ্ট্রে যিনা ও যিনা উদ্রেককারী সকল বিষয় নিষিদ্ধ থাকবে

﴿وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا ۖ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا﴾

যিনার কাছেও যেয়ো না, ওটা অত্যন্ত খারাপ কাজ এবং খুবই জঘন্য পথ

§  যেনা ব্যভিচার একটা জগন্য অপরাধ

§  ইসলামী রাষ্ট্রের দায়িত্ব হল যেনা এবং যেনাকে উৎসাহ দেয় এমন সব উপাদান বন্ধ করা যেমন-ব্লু ফিলম, পিনআপ ম্যাগাজিন ইত্যাদি

§  “যিনার কাছেও যেয়ো না” এই বিধান যেমন ব্যক্তির জন্য, তেমন রাষ্ট্রের জন্য

o ব্যক্তি যিনার কাছে যাবে নাঃ ব্যক্তি যিনার কাছে শুধু যাবেনা, তা নয় বরং যিনার পথে নিয়ে যায় এমন সকল ধরণের আকর্ষণ সৃষ্টিকারী বস্তু থেকেও দূরে থাকবে

o রাষ্ট্র যিনার কাছে যাবে নাঃ সমাজে যিনা, যিনার আকর্ষণ সৃষ্টি করে, যিনার কারণ হয় এমন সব পথ রাষ্ট্র বন্ধ করে দেবে রাষ্ট্র এজন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করবে, প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রদান করবে, প্রয়োজনীয় অনুশীলন করবে, সামাজিক পরিবেশের সংস্কার করবে ইত্যাদি

§  ইসলামী রাষ্ট্রে যিনা এবং যিনার অপবাদ-এই দুইটিকে ফৌজদারী অপরাধ হিসাবে গন্য করা হয়

§  ইসলামী রাষ্ট্র এই বিধান বলে পর্দার বিধান জারি করে, অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতার প্রচার বন্ধ করে দেয় মদপান,নাচ, গান, ফিলম, ছবির উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা জারী করে

§  ইসলামী রাষ্ট্র যিনার পথ বন্ধ করতে দাম্পত্য আইন প্রণয়ন করে বিবাহকে সহজ করে

§  মুমিনের গুনাবলী আলোচনা করতে গিয়ে সূরা আল মুমিনুনে বলা হয়েছেঃ

﴿وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ﴾﴿إِلَّا عَلَىٰ أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ﴾﴿فَمَنِ ابْتَغَىٰ وَرَاءَ ذَٰلِكَ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْعَادُونَ﴾

নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে, নিজেদের স্ত্রীদের ও অধিকারভুক্ত বাঁদীদের ছাড়া, এদের কাছে (হেফাজত না করলে) তারা তিরষ্কৃত হবে না, তবে যারা এর বাইরে আরো কিছু চাইবে তারাই হবে সীমালংঘনকারী(আয়াতঃ ৫-৭)

§  আর সূরা আল মাআ’রিজে বলা হয়েছেঃ

﴿وَٱلَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَـٰفِظُونَ﴾﴿إِلَّا عَلَىٰٓ أَزْوَٰجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَـٰنُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ﴾﴿فَمَنِ ٱبْتَغَىٰ وَرَآءَ ذَٰلِكَ فَأُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلْعَادُونَ﴾

যারা নিজেদের লজ্জাস্থান নিজের স্ত্রী অথবা মালিকানাধীন স্ত্রীলোকদের ছাড়া অন্যদের থেকে হিফাযত করে স্ত্রী ও মালিকানাধীন স্ত্রীলোকদের ক্ষেত্রে তারা তিরস্কৃত হবে না তবে যারা এর বাইরে আর কেউকে চাইবে তারা সীমালংঘনকারী (আয়াতঃ ২৯-৩১)

§  আর সূরা আল আনআ’মে বলা হয়েছেঃ

﴿وَلَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ﴾

প্রকাশ্যে বা গোপনে অশ্লীল বিষয়ের ধারে কাছেও যাবে না (আয়াতঃ ১৫১) 

§  রাহমানের বান্দাদের গুণাবলী আলোচনা করতে গিয়ে সূরা আল ফুরকানে বলা হয়েছেঃ

﴿وَٱلَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ ٱللَّهِ إِلَـٰهًا ءَاخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ ٱلنَّفْسَ ٱلَّتِى حَرَّمَ ٱللَّهُ إِلَّا بِٱلْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ ۚ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ يَلْقَ أَثَامًۭا﴾

তারা আল্লাহ‌ ছাড়া আর কোন উপাস্যকে ডাকে না, আল্লাহ‌ যে প্রাণকে হারাম করেছেন কোন সঙ্গত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না এসব যে-ই করে সে তার গোনাহের শাস্তি ভোগ করবে। (আয়াতঃ ৬৮)

§  আগামী দিনের ইসলামী রাষ্ট্রঃ যেখানে যিনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ শুধু থাকবেনা বরং যিনার উদ্রেককারী সকল বিষয়ও নিষিদ্ধ থাকবে

৯. ইসলামী রাষ্ট্রের নবম মূলনীতিঃ ইসলামী রাষ্ট্রে সকল ধরণের বেআইনী হত্যা নিষিদ্ধ

﴿وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ ۗ وَمَن قُتِلَ مَظْلُومًا فَقَدْ جَعَلْنَا لِوَلِيِّهِ سُلْطَانًا فَلَا يُسْرِف فِّي الْقَتْلِ ۖ إِنَّهُ كَانَ مَنصُورًا﴾

আল্লাহ যাকে হত্যা করা হারাম করে দিয়েছেনসত্য ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করো না আর যে ব্যক্তি মজলুম অবস্থায় নিহত হয়েছে তার অভিভাবককে আমি কিসাস দাবী করার অধিকার দান করেছি  কাজেই হত্যার ব্যাপারে তার সীমা অতিক্রম করা উচিত নয়,  তাকে সাহায্য করা হবে

§  কেবল অন্যকে হত্যা নয়, বরং নিজেকে হত্যা তথা আত্মহত্যাও এই বিধানের অন্তর্ভূক্ত। মানুষ হত্যা যেমন অপরাধ, আত্মহত্যাও তেমন অপরাধ।

§  মানুষ নিজেকে নিজের প্রাণের মালিক এবং সেই মালিকার বলে নিজেকে খতম করে দেয়ার অধিকারী মনে করা একটি ভূল ধারণা। প্রকৃত পক্ষে এর মালিকা হলো আল্লাহর। বিধায়, নিজেকে খতম করাতো দূরের বিষয় নিজেকে অনুপযোগী কোন কাজে ব্যবহার করার অধিকারও বান্দার নেই।

§  আল্লাহ মানুষকে প্রাণ দিয়ে তার একটি সময় ঠিক করে দিয়েছেন। সেই সময় পর্যন্ত পরীক্ষার হলে থাকতে হবে। পরীক্ষা ভাল হোক বা খারাপ, আমাদেরকে পরীক্ষা হলে অবস্থান করতেই হবে। পরীক্ষা হল থেকে পলায়ন করার কোন অধিকার বান্দাকে দেয়া হয়নি।

§  আত্মহত্যার মাধ্যমে মূলতঃ মানুষ দুনিয়ার ছোট ছোট কষ্ট, লাঞ্ছনা ও অপমানের হাত থেকে নিজের ছাড়িয়ে নিয়ে নিয়ে বড় ধরণের এবং দীর্ঘস্থাযী একটি কষ্ট ও লাঞ্ছনার দিকে পালিয়ে যায়।

§  মানুষ হত্যা করা যাবে ৫টা কারণেঃ

১. নরহত্যাকারী-কিসাস

২. দ্বীন ইসলামের পথে বাঁধা সৃষ্টিকারী

৩. ইসলামী রাষ্ট্র মূলোৎপাটনের চেষ্টাকারী

৪. বিবাহিত যিনাকারী

৫. মুরতাদ

§  فَقَدْ جَعَلْنَا لِوَلِيِّهِ سُلْطَانًاতার অভিভাবককে আমি সুলতান দান করেছি” – এখানে সুলতান মানে হলো প্রমান-যার ভিত্তিতে কিসাস দাবী করা হয় এর মানে হলোঃ

o হত্যা মামলায় আসল বাদী সরকার নয় আসল বাদী নিহত ব্যক্তির অভিভাবক

o হত্যাকারীকে বাদী মাফ করে দিতে পারে অথবা কিসাসের বদলে রক্তপণ গ্রহণ করতে পারে

o হত্যাকারীকে রাষ্ট্র ক্ষমা করে দেয়ার এখতিয়ার রাখে না

§  নিহত ব্যক্তির ওলীর বাড়াবাড়ীঃ

o তাকে কেসাস দাবীর অধিকার দেয়া হয়েছে

o এক জায়গায় খুনের বদলে অন্য স্থানে খুন একজনের বদলে অন্যজনকে হত্যা করার সুযোগ নাই

o হত্যাকারীকে কষ্ট দিয়ে মেরে ফেলা যাবে না

o হত্যাকারীকে মেরে ফেলার পর তার লাশের উপর মনের ঝাল মেঠানো যাবে না

o রক্তপণ গ্রহণ করা হলে, তারপর আর কোন রিয়েকশন দেখানো যাবে না

§  বিচারকের বিরুদ্ধে লাঠি মিছিল করে বিচার ব্যবস্থাকে ভয় প্রদর্শণ করা যাবে না

§  হত্যাকারীকে নিহত ব্যক্তি অভিভাবক হত্যা করবে না বরং হত্যার কাজ করবে আদালত কোন ব্যক্তি বা দল নিজ দায়িত্বে হত্যার প্রতিশোধ নিতে পারবে না দায়িত্ব সরকারের সরকার আদালতেরন মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবে

§  বিষয়টি কুরআনের অন্যত্র উপস্থাপিত হয়েছে এভাবেঃ

﴿وَٱلَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ ٱللَّهِ إِلَـٰهًا ءَاخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ ٱلنَّفْسَ ٱلَّتِى حَرَّمَ ٱللَّهُ إِلَّا بِٱلْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ ۚ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ يَلْقَ أَثَامًۭا﴾

তারা আল্লাহ‌ ছাড়া আর কোন উপাস্যকে ডাকে না, আল্লাহ‌ যে প্রাণকে হারাম করেছেন কোন সঙ্গত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না এসব যে-ই করে সে তার গোনাহের শাস্তি ভোগ করবে। (আল ফুরকানঃ ৬৮)

﴿وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ ۚ ذَٰلِكُمْ وَصَّاكُم بِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ﴾

আল্লাহ যে প্রাণকে মর্যাদা দান করেছেন ন্যায় সংগতভাবে ছাড়া তাকে ধ্বংস করো না তিনি তোমাদের এ বিষয়গুলোর নির্দেশ দিয়েছেন, সম্ভবত তোমরা ভেবে-চিন্তে কাজ করবে (আল আনআ’মঃ ১৫১) 

§  আগামী দিনের ইসলামী রাষ্ট্রঃ যেখানে হত্যা সংঘটিত হবে কেবল আদালতের মাধ্যমে হত্যার অন্য সকল দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে

১০. ইসলামী রাষ্ট্রের দশম মূলনীতিঃ ইসলামী রাষ্ট্রে এতিমের সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

﴿وَلَا تَقْرَبُوا مَالَ الْيَتِيمِ إِلَّا بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ حَتَّىٰ يَبْلُغَ أَشُدَّهُ﴾

ইয়াতীমের সম্পত্তির ধারে কাছে যেয়ো না, তবে হ্যাঁ সুদপায়ে, যে পর্যন্ত না সে বয়োপ্রাপ্ত হয়ে যায়

§  ইসলামী রাষ্ট্রে যে সব নাগরিক নিজেরা নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করার ক্ষমতা কিংবা যোগ্যতা রাখে না, ইসলামী রাষ্ট্র তাদের স্বার্থ রক্ষা দায়িত্ব নেবে

§  আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেনঃ أنا وليُّ مَن لا وليَّ لَهُ যার কোন অভিভাবক নেই আমি তার অভিভাবক

§  কুরআন ও হাদীসের দিকে যদি আমরা দৃষ্টি দেই, তাহলে দেখতে পাইঃ

﴿فَأَمَّا ٱلْيَتِيمَ فَلَا تَقْهَرْ﴾

কাজেই এতিমের প্রতি কঠোর হয়ো না (আদ দুহাঃ ৯)

﴿أَرَءَيْتَ ٱلَّذِى يُكَذِّبُ بِٱلدِّينِ﴾﴿فَذَٰلِكَ ٱلَّذِى يَدُعُّ ٱلْيَتِيمَ﴾

তুমি কি তাকে দেখেছো যে আখেরাতের পুরস্কার ও শাস্তিকে মিথ্যা বলছে? সে-ই তো এতিমকে ধাক্কা দেয় (আল মাউনঃ ১-২)

وَعَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَا وَكَافِلُ الْيَتِيمِ لَهُ وَلِغَيْرِهِ فِي الْجَنَّةِ هَكَذَا وَأَشَارَ بِالسَّبَّابَةِ وَالْوُسْطَى وفرَّجَ بَينهمَا شَيْئا.

হযরত সাহল ইবনু সা’দ রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ আমি এবং ইয়াতীমের লালন-পালনকারী, সে ইয়াতীম নিজের হোক বা অন্য কারো হোক জান্নাতে এরূপ হবো, এ কথা বলে তিনি নিজের তর্জনী ও মধ্যমা অঙ্গুলি দ্বারা ইঙ্গিত করলেন তখন দু’ অঙ্গুলির মধ্যে সামান্য ব্যবধান ছিল (বুখারী)

خيرُ بيتٍ في المسلمينَ، بيتٌ فيه يتيمٌ يُحْسَنُ إليه، وشَرٌّ بيتٍ في المسلمينَ، بيتٌ فيه يتيمٌ يُساءُ إليه

মুসলিমদের সর্বোত্তম বাড়ি হচ্ছে সেই বাড়ি যে বাড়িতে ইয়াতীমের সাথে ভালো আচরণ করা হয় আর মুসলিমদের সর্বনিকৃষ্ট বাড়ি সেটি যে বাড়িতে ইয়াতীমের সাথে মন্দ আচরণ করা হয় (ইবনে মাযাহ)

﴿وَآتُوا الْيَتَامَىٰ أَمْوَالَهُمْ ۖ وَلَا تَتَبَدَّلُوا الْخَبِيثَ بِالطَّيِّبِ ۖ وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَهُمْ إِلَىٰ أَمْوَالِكُمْ ۚ إِنَّهُ كَانَ حُوبًا كَبِيرًا﴾

এতিমদেরকে তাদের ধন-সম্পদ ফিরিয়ে দাও ভালো সম্পদের সাথে মন্দ সম্পদ বদল করো না আর তাদের সম্পদ তোমাদের সম্পদের সাথে মিশিয়ে গ্রাস করো না এটা মহাপাপ (আন নিসাঃ ২)

﴿إِنَّ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ أَمْوَالَ الْيَتَامَىٰ ظُلْمًا إِنَّمَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ نَارًا ۖ وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيرًا﴾

যারা এতিমদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা আগুন দিয়ে নিজেদের পেট পূর্ণ করে এবং তাদেরকে অবশ্যি জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুনে ফেলে দেয়া হবে  (আন নিসাঃ ১০)

 ﴿وَلَا تَقْرَبُوا مَالَ الْيَتِيمِ إِلَّا بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ حَتَّىٰ يَبْلُغَ أَشُدَّهُ﴾

আর তোমরা প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত এতীমের সম্পদের ধারে কাছেও যেয়ো না, তবে উত্তম পদ্ধতিতে যেতে পারো। (আল আনআমঃ ১৫২)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏"‏ اجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ ‏"‏‏.‏ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَمَا هُنَّ قَالَ ‏"‏ الشِّرْكُ بِاللَّهِ، وَالسِّحْرُ، وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّبَا، وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيمِ، وَالتَّوَلِّي يَوْمَ الزَّحْفِ، وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلاَتِ ‏"‏‏.‏

হযরত আবু হুরায়রা রা. নবী সা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে তোমরা বিরত থাকবে সাহাবীগন বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সেগুলো কি? তিনি বললেন, (১) আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা (২) যাদু (৩) আল্লাহ তাআলা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, শরীয়ত সম্মত ব্যতীরেকে তাকে হত্যা করা (৪) সুদ খাওয়া (৫) ইয়াতীমের মাল গ্রাস করা (৬) রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং (৭) সরল প্রকৃতির সতী মুমিন নারীদের অপবাদ দেওয়া (বুখারী)

§  আগামী দিনের ইসলামী রাষ্ট্রঃ যেখানে এতিমদের সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে এবং এতিমদের সকল অধিকার প্রদান করা হবে

১১. ইসলামী রাষ্ট্রের একাদশ মূলনীতিঃ ইসলামী রাষ্ট্রে সন্ধি ও চূক্তি লংঘন করা যাবে না

﴿وَأَوْفُوا بِالْعَهْدِ ۖ إِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْئُولًا﴾

প্রতিশ্রুতি পালন করো, অবশ্যই প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে তোমাদের জবাবদিহি করতে হবে

§  এটি ব্যক্তিগত নৈতিকতার ধারা নয় বরং ব্যক্তিগত নৈতিকতার সাথে সাথে রাষ্ট্যীয় নৈতিকতার ধারা যদি ইসলামী রাষ্ট্র হয়, তাহলে সেখানে সকল জাতীয় ও পররাষ্ট্রনীতিতে এই নীতি কার্যকরী হবে

§  সূরা আল মাআ’রিজে বলা হয়েছেঃ

﴿وَٱلَّذِينَ هُمْ لِأَمَـٰنَـٰتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَٰعُونَ﴾

যারা আমানত রক্ষা করে ও প্রতিশ্রুতি পালন করে (আয়াতঃ ৩২)

§  সূরা আল মুমিনুনে মুমিনের গুনাবলী আলোচনা করতে গিয়ে একই ভাষা বলা হয়েছেঃ

﴿وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ﴾

যারা নিজেদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে (আয়াতঃ ৮) 

§  হাদীসে বলা হয়েছেঃ

وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَلَّمَا خَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَّا قَالَ لَا إِيمَانَ لِمَنْ لَا أَمَانَةَ لَهُ وَلَا دِينَ لِمَنْ لَا عَهْدَ لَهُ.

আনাস রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. এরূপ খুৎবা খুব কমই দিয়েছেন যাতে এ কথা বলেননি যে, যার আমানাতদারী নেই তার ঈমানও নেই এবং যার ওয়াদা-অঙ্গীকারের মূল্য নেই তার দীনও নেই (বায়হাক্বী-এর শু’আবুল ঈমান)

§  আগামী দিনের ইসলামী রাষ্ট্রঃ যেখানে সকল ধরণের সন্ধি এবং চূক্তি শতভাগ পালন করা হবে

১২. ইসলামী রাষ্ট্রের দ্বাদশ মূলনীতিঃ ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবসায়িক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে

﴿وَأَوْفُوا الْكَيْلَ إِذَا كِلْتُمْ وَزِنُوا بِالْقِسْطَاسِ الْمُسْتَقِيمِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا﴾

মেপে দেবার সময় পরিমাপ পাত্র ভরে দাও এবং ওজন করে দেবার সময় সঠিক দাঁড়িপাল্লায় ওজন করো এটিই ভালো পদ্ধতি এবং পরিণামের দিক দিয়েও এটিই উত্তম

§  ব্যক্তি ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বা পারস্পরিক লেনদেনে এই নীতি মেনে চলবে

§  ইসলামী রাষ্ট্র হাট বাজার ও দোকান পাটে মাপজোক ও দাঁড়িপাল্লার তত্ত্বাবধান করবে ওজনে ও মাপে কম দেয়া বন্ধ করবে

§  ইসলামী রাষ্ট্র বানিজ্যিক ও অর্থনৈতিক লেনদেনে বেঈমানী ও অন্যের অধিকার হরণের পথ রোধ করবে

§  এই ব্যবস্থা দুনিয়ার কল্যাণ ও আখেরাতেরও কল্যাণ দুনিয়াতে এর ফল হলোঃ পারস্পরিক আস্তা প্রতিষ্ঠিত হয়, ক্রেতা বিক্রেতা পরস্পরের উপর ভরসা করে, ব্যবসাতে উন্নতি আসে, রাষ্ট্রে সমৃদ্ধি দেখা দেয় আর এক্ষেত্রে ঈমানদারী ও আল্লাহভীতি আখেরাতে শুভ পরিণাম নিয়ে আসে

﴿الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا ۗ وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا ۚ فَمَن جَاءَهُ مَوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّهِ فَانتَهَىٰ فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللَّهِ ۖ وَمَنْ عَادَ فَأُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ﴾

কিন্তু যারা সুদ খায় তাদের অবস্থা হয় ঠিক সেই লোকটির মতো যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল করে দিয়েছে তাদের এই অবস্থায় উপনীত হবার কারণ হচ্ছে এই যেতারা বলেঃ “ব্যবসা তো সুদেরই মতো অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করে দিয়েছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম কাজেই যে ব্যক্তির কাছে তার রবের পক্ষ থেকে এই নসীহত পৌছে যায় এবং ভবিষ্যতে সুদখোরী থেকে সে বিরত হয়সে ক্ষেত্রে যা কিছু সে খেয়েছে তাতো খেয়ে ফেলেছেই এবং এ ব্যাপারটি আল্লাহর কাছে সোপর্দ হয়ে গেছে আর এই নির্দেশের পরও যে ব্যক্তি আবার এই কাজ করেসে জাহান্নামের অধিবাসী সেখানে সে থাকবে চিরকাল। (আল বাকারাহঃ ২৭৫) 

﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ إِلَّا أَن تَكُونَ تِجَارَةً عَن تَرَاضٍ مِّنكُمْ ۚ وَلَا تَقْتُلُوا أَنفُسَكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا﴾

হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরস্পরের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ে ফেলো না লেনদেন হতে হবে পারস্পরিক রেজামন্দির ভিত্তিতে আর নিজেকে হত্যা করো না নিশ্চিত জানো, আল্লাহ তোমাদের প্রতি মেহেরবান। (আন নিসাঃ ২৯)

﴿وَأَوْفُوا الْكَيْلَ وَالْمِيزَانَ بِالْقِسْطِ﴾

ওজন ও পরিমাপে পুরোপুরি ইনসাফ করো, প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর আমি ততটুকু দায়িত্বের বোঝা যতটুকু তার সামর্থের মধ্যে রয়েছে (আল আনআমঃ ১৫২)

﴿رِجَالٌ لَّا تُلْهِيهِمْ تِجَارَةٌ وَلَا بَيْعٌ عَن ذِكْرِ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ ۙ يَخَافُونَ يَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِيهِ الْقُلُوبُ وَالْأَبْصَارُ﴾

যারা ব্যবসায় ও বেচাকেনার ব্যস্ততার মধ্যেও আল্লাহর স্মরণ এবং নামায কায়েম ও যাকাত আদায় করা থেকে গাফিল হয়ে যায় না তারা সেদিনকে ভয় করতে থাকে যেদিন হৃদয় বিপর্যস্ত ও দৃষ্টি পাথর হয়ে যাবার উপক্রম হবে। (আন নূরঃ ৩৭)

﴿يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِذَا نُودِىَ لِلصَّلَوٰةِ مِن يَوْمِ ٱلْجُمُعَةِ فَٱسْعَوْا۟ إِلَىٰ ذِكْرِ ٱللَّهِ وَذَرُوا۟ ٱلْبَيْعَ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌۭ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ﴾

হে ঐ সব লোক, যারা ঈমান এনেছো, জুমআ’র দিন যখন নামাযের জন্য তোমাদের ডাকা হয় তখন আল্লাহর যিকরের দিকে ধাবিত হও এবং বেচাকেনা ছেড়ে দাও এটাই তোমাদের জন্য বেশী ভাল যদি তোমাদের জ্ঞান থাকে  (আল জুমুআঃ ৯)

عَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيْجٍ قَالَ قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَيُّ الْكَسْبِ أَطْيَبُ؟ قَالَ عَمَلُ الرَّجُلِ بِيَدِهِ وَكُلُّ بَيْعٍ مَبْرُوْرٍ

হযরত রাফে বিন খাদীজ রা. বলেন, জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রসূল! কোন উপার্জন সবচেয়ে বেশি পবিত্র?’ উত্তরে তিনি বললেন, সবচেয়ে পবিত্র উপার্জন হল, যা মানুষের নিজ হাতের কাজ এবং সদুপায়ে ব্যবসার মাধ্যমে করা হয় (আহমদ)

§  হালাল ব্যবসা ৫ ধরণেরঃ

(১) মুরাবাহঃ লাভ-লোকসানের ভিত্তিতে নগদ মূল্যে ক্রয়-বিক্রয়ের একক ব্যবসা

(২) মুয়াজ্জালঃ ভবিষ্যতে নির্ধারিত কোন সময়ে এক সাথে অথবা কিস্তিতে উভয় পক্ষের সম্মতিতে মূল্য পরিশোধের শর্তে ক্রয়-বিক্রয়

(৩) সালামঃ ভবিষ্যতে নির্ধারিত কোন সময়ে সরবরাহের শর্তে এবং তাৎক্ষণিক উপযুক্ত মূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে নির্দিষ্ট পরিমাণ শরী‘আত অনুমোদিত পণ্য সামগ্রীর অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় 

(৪) মুযারাবাঃ এক পক্ষের মূলধন এবং অপরপক্ষের দৈহিক ও বুদ্ধিভিত্তিক শ্রমের সমন্বয়ে যৌথ ব্যবসা এ পদ্ধতিতে লভ্যাংশ তাদের মাঝে চুক্তিহারে বণ্টিত হবে

(৫) মুশারাকাঃ মূলধন ও লভ্যাংশের ব্যাপারে দুই বা ততোধিক অংশীদারের মধ্যকার চুক্তি অনুসারে ব্যবসা

§  কতিপয় অবৈধ (হারাম) ব্যবসাঃ

1.     হারাম জিনিস বিক্রয় করা

2.     ধোঁকাপূর্ণ বিক্রয়

3.    দ্রব্যমূল্য নিয়ে খেলা করা

4.    পণ্য মজুদদারি করা

5.    বাজারে কৃত্রিম হস্তক্ষেপ করা

6.     মুনাফাখোরি ও ধোঁকাবাজি করা

7.    বারবার কিরা-কসম করা

8.    মাপে ওজনে কম করা

9.     চোরাইমাল ক্রয় করা

10. সুদি ব্যবসা

§  আগামী দিনের ইসলামী রাষ্ট্রঃ যেখানে ব্যবসা হবে হাল তারিকায় সকল ধরণের ব্যবসায়িক সিন্ডিকেডকে ভেংগে ফেলা হবে এবং সকল ধরণের অস্বচ্ছতা নির্মূল করা হবে

১৩. ইসলামী রাষ্ট্রের ত্রোয়োদশ মূলনীতিঃ রাষ্ট্রে অনুমানকেন্দ্রীক সিদ্ধান্ত বর্জন করতে হবে

﴿وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ ۚ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَٰئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا﴾

এমন কোনো জিনিসের পেছনে লেগে যেয়ো না সে সম্পর্কে তোমার জ্ঞান নেই নিশ্চিতভাবেই চোখ, কান ও দিল সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে

§  মানুষ চলবে জ্ঞানের পিছনে, ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের ধারণা বা অনুমানের পিছনে নয়

§  ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার সকল ক্ষেত্রে তথা নৈতিক ব্যবস্থায়, আইনে, রাজনীতিতে, দেশ শাসনে, জ্ঞান-বিজ্ঞানে, কারিগরি বিদ্যায় এবং শিক্ষা ব্যবস্থায়-সকল ক্ষেত্রে মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে জ্ঞানের ভিত্তিতে-ধারণা ভিত্তিতে নয়

§  দুষ্ট মত থেকে চিন্তা ও কর্মকে মুক্ত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছেঃ

1.     নৈতিকতার ক্ষেত্রে কুধারণা থেকে দূরে থাকা এবং কোন ব্যক্তি বা দলের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ছাড়া দোষারোপ না করা

2.     আইনের ক্ষেত্রে নিছক সন্দেহ বশত কারো বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করা

3.    অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে অনুমানের ভিত্তিকে গ্রেফতার, মারধর, জেলা আটক না করা

4.    বিজাতিদের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে অনুসন্ধান কারো কারো বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ বা সন্দেহের ভিত্তিতে গুজব না ছড়ানো

5.    শিক্ষা ব্যবস্থায় তথাকথিত জ্ঞান, আন্দাজ-অনুমান, দীর্ঘসুত্রীতাময় ধারণা ও কল্পনা নির্ভর জ্ঞান-এ গুলোকে অপছন্দ করা

6.     আক্বীদা বিশ্বাসের ক্ষেত্রে ধারণা, কল্পনা ও কুসংস্কারের মূলোৎপাটন করে ঈমানদারদেরকে শুধুমাত্র আল্লাহ ও রাসূল সা. প্রদত্ত জ্ঞানের ভিত্তিতে প্রমাণিত বিষয় মেনে নেয়া শিক্ষা দেয়া

§  আগামী দিনের ইসলামী রাষ্ট্রঃ যেখানে সকল ধরণের সিদ্ধান্ত হবে উপযুক্ত দলীল প্রমানের ভিত্তিতে অনুমান নির্ভর কোন ধরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে না

১৪. ইসলামী রাষ্ট্রের চতূর্দশ মূলনীতিঃ ইসলামী রাষ্ট্রে অহংকার বর্জিত অবস্থায় জীবন পরিচালিত হবে

﴿وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا ۖ إِنَّكَ لَن تَخْرِقَ الْأَرْضَ وَلَن تَبْلُغَ الْجِبَالَ طُولًا﴾

যমীনে দম্ভভরে চলো না তুমি না যমীনকে চিরে ফেলতে পারবে, না পাহাড়ের উচ্চতায় পৌঁছে যেতে পারবে

§  এর মানে হলোঃ ক্ষমতার গর্বে অহংকারীর মতো আচরণ করা।

§  এই নির্দেশ ব্যক্তিগত ও জাতীয় উভয় ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য।

§  এই নির্দেশের আলোকে মদীনায় যে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়, তার শাসকরা ছিলেনঃ

1.     মদীনা শাসকবৃন্দ, গভর্ণর ও সিপাহসালারদের জীবনে ক্ষমতাগর্ব ও অহংকারের ছিঁটেফোটাও ছিল না।

2.     যুদ্ধরত অবস্থায়ও কখনো তাদের মুখ থেকে দম্ভ ও অহংকারসূচক কোন কথা বের হতো না।

3.    তাদের চাল চলন, উঠা বসা, পোশাক পরিচ্ছদ, ঘর বাড়ী, সওয়ারী ও সাধারণ আচার আচরণে নম্রতা ও কোমলতা ফকিরী ও দরবেশীর চাপ স্পষ্ট দেখা যেতো।

4.    তারা যখন কখনো বিজয়ী বেশে শহরে প্রবেশ করতেন তখন দর্প ও অহংকার সুলভ আচরণের মাধ্যমে মানুষের মনে ভীতি ভাব সৃষ্টির কোন চেষ্টা দেখা যেতো না।

§  সূরা আল ফুরকানে রাহমানের বান্দা কারা? তার আলোচনা করতে গিয়ে বলা হয়েছেঃ

﴿وَعِبَادُ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى ٱلْأَرْضِ هَوْنًۭا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ ٱلْجَـٰهِلُونَ قَالُوا۟ سَلَـٰمًۭا﴾

রাহমানের (আসল) বান্দা তারাই যারা পৃথিবীর বুকে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং মূর্খরা তাদের সাথে কথা বলতে থাকলে বলে দেয় (আয়াতঃ ৬৩)

§  লুকমান হাকীম তার ছেলেকে উপদেশ দিয়ে গিয়ে যে কথা গুলো বলেছেন, তা কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথেঃ

﴿وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِى ٱلْأَرْضِ مَرَحًا ۖ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍۢ فَخُورٍۢ﴾﴿وَٱقْصِدْ فِى مَشْيِكَ وَٱغْضُضْ مِن صَوْتِكَ ۚ إِنَّ أَنكَرَ ٱلْأَصْوَٰتِ لَصَوْتُ ٱلْحَمِيرِ﴾

আর মানুষের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কথা বলো নাপৃথিবীর বুকে চলো না উদ্ধত ভঙ্গিতে, আল্লাহ‌ পছন্দ করেন না আত্মম্ভরী ও অহংকারীকেনিজের চলনে ভারসাম্য আনো এবং নিজের আওয়াজ নীচু করো সব আওয়াজের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ হচ্ছে গাধার আওয়াজ। (লুকমানঃ ১৮-১৯)

§  আগামী দিনের ইসলামী রাষ্ট্রঃ যা পরিচালিত হবে তাকওয়ার ভিত্তিতে সকল ধরণের অহংকার বর্জিত অবস্থায়


আমার প্রস্তুতকৃত অন্যান্য দারসুল কুরআন পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

 

Post a Comment

0 Comments