এমন এক মহান ব্যক্তিত্ব, যার
ব্যক্তিত্বের সাথে তুলনা চলেনা অন্য কোন ব্যক্তিত্বের। তিনি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানব আল আমীন আস সাদিক-মুহাম্মদ সা.। যার সম্পর্কে রচনা বা লিখনির কোন অভাব নেই। আর লিখে বা আলোচনা করে শেষ করারও কোন সাধ্য নেই এই মহামানবের
জীবন চরিত। তাঁর দীর্ঘ ২৩ বছরের
বিরামহীন তৎপরতা অন্ধকার যুগকে পরিণত করেছে স্বর্ণযুগে। তাঁর ত্যাগ, পরিশ্রম, সীমাহীন সংগ্রাম ইত্যাদি ছিল একটি সুনির্দিষ্ট
উদ্দেশ্যে নিবেদিত। যে উদ্দেশ্য বর্ণিত হয়েছে সেই
মহা মানবের নিজস্ব জবানীতে অথবা তাঁর সাথীদের জবানীতে অথবা তাঁর নিয়োগ কর্তা বা
প্রেরণকর্তার ভাষায়। আমরা এ পর্যায়ে সেই সব জবানীর খন্ডিত অংশ এখানে উপস্থাপনের চেষ্টা করবো।
তিনি ছিলেন উত্তম
চরিত্রের অধিকারীঃ
আমরা এই সব আলোচনা এ জন্য
করবো যে, তিনি এমন এক ম্যাসেঞ্জার, যার চরিত্র সম্পর্কে তার নিয়োগকর্তা সন্তুষ্ট
হয়ে বলছেনঃ وَإِنَّكَ لَعَلى خُلُقٍ عَظِيمٍ “এবং নিশ্চয়ই আপনি উত্তম চরিত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত।” (আল ক্বালামঃ ০৪)
তিনি ছিলেন কুরআনের প্রতিচ্ছবিঃ
আর তিনি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানব নবী মুহাম্মদ
সা.। তাঁর জীবন চরিত সম্পর্কে তাঁর
সহধর্মীনি হযরত আয়েশা রা. এর উক্তিঃ كان خُلُقُه القُرآنَ “তার
চরিত্র ছিল আল কুরআন।” একথা থেকে এটাই বুঝা যায় যে,
কুরআনে যা ছিল, তাঁর জীবনে তার প্রতিচ্ছবি ছিল।
অপর দিকে কুরআনে অন্য জায়গায় কুরআন সম্পর্কে
বলা হয়েছেঃ وَلَقَدْ آتَيْنَاكَ سَبْعاً مِّنَ الْمَثَانِي وَالْقُرْآنَ الْعَظِيمَ “এবং আমরা আপনাকে সাতটি আয়াত প্রদান করেছি আর প্রদান করেছি শ্রেষ্ঠ
কুরআন”। (আল হিজরঃ ৮৭)
পাঠক লক্ষ করুন! কুরআনের
বৈশিষ্ট বর্ণনা করতে বলা হলো “الْقُرْآنَ الْعَظِيمَ - আল কুরআন আল আজীম”। অপর
দিকে নবীর চরিত্র বর্ণনা করতে বলা হলোঃ خُلُقٍ عَظِيمٍ “খুলুক্বুন আজীম”। দুই জায়গাতেই عَظِيمٍ ‘আজীম’ শব্দ চয়ন করা হয়েছে। এর তাৎপর্য হলোঃ বলার দিক দিয়ে কুরআন হচ্ছে
‘আজীম’। আর করার দিক দিয়ে রাসূল সা. এর
জীবন হচ্ছে ‘আজীম’। কুরআনে যা বলা হয়েছে, রাসূল সা.
এর জীবনে তা করা হয়েছে। তাই হযরত
আয়েশা রা. এর উক্তি যথার্থ “তার চরিত্র ছিল কুরআন”।
বিশ্বের মানচিত্রে যদি আমারা চোঁখ রাখি, তাহলে
দেখবো সারা বিশ্ব আজ অশান্তির দাবানলে জ্বলছে। গলাবাজি আর মিডিয়া সন্ত্রাসের কবলে আজ লাঞ্ছিত মানবতা। কথার সাথে মানুষের কাজের কোন মিল নেই। এ অবস্থায় প্রয়োজন এমন এক ব্যক্তিত্ব, যার
চরিত্র হবে অতুলনীয়। নবী মুহাম্মাদ
সা. এর আদর্শ অনুসরণই এখন বিশ্বপরিস্থিতিতে সময়ের দাবী। তাইতো মানব জাতির দিক নির্দেশনার জন্য
প্রেরিত ঐশীগ্রন্থ আল কুরআন জানাচ্ছে যে, যদি কোন মানুষ আল্লাহর ভালবাসা পেতে চায়,
তাহলে তার উচিত হচ্ছে ঐ মহামানবের অনুসরণ করাঃ قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللّهُ “হে নবী আপনি বলুন! যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস তাহলে আমার
অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন।” (আলে ইমরানঃ ৩১)
তিনি হলেন সকলের
জন্য আদর্শঃ
আর ঐ চরিত্রবান বা উত্তম
চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তিত্ব একাই একটি প্রতিষ্ঠান। সেই মহা মানবকে কুরআনে সূরা আল
আহযাবে বলা হয়েছে একজন মডেল বা আদর্শ হিসাবে। কুরআন বলছেঃ لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ “নিশ্চয়ই রাসূল সা. এর মাঝেই তোমাদের
জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ”। (আয়াতঃ ২১)
আর সূরা আল মুমতাহিনার ৪ নম্বর আয়াতে আদর্শ হিসাবে উ্ল্লেখ করা হয়েছে
মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহীম আ.কে। বলা হয়েছেঃ قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ “তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ ছিল
ইব্রাহিমের মাঝে”।
একই সূরার পরবর্তীতে ৬ নম্বর
আয়াতে বলা হয়েছেঃلَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيهِمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَمَن يَتَوَلَّ فَإِنَّ اللَّهَ هُوَ الْغَنِيُّ الْحَمِيدُ “এসব লোকের কর্মপদ্ধতিতে
তোমাদের জন্য এবং আল্লাহ ও আখেরাতের দিনের প্রত্যাশী লোকদের জন্য উত্তম আদর্শ
রয়েছে। এ থেকে যদি কেউ মুখ ফিরিয়ে নেয়
তাহলে আল্লাহ স্বয়ংসম্পূর্ণ ও প্রশংসিত।”
অতএব, তিনি কেবল আদর্শ নন,
বরং বংশগত ভাবেও তিনি আদর্শ। আর
সে কথা সকলেই জানা যে, আধুনা বিশ্বে বিরাজমান সকল দ্বীন বা ধর্মের এক জায়গায় গিয়ে
মিলন ঘটে। সেটা হচ্ছে হযরত ইব্রাহীম আ.। ইব্রাহীমপুত্র ইসহাক আ. এর বংশের মধ্যে অসংখ্য অগনিত
নবী রাসূল এসেছেন, যাদের মধ্যে দুইটি প্রধান ধর্মের ভিত্তি পাওয়া যায়। আর তা হলো ইহুদী ও নাসারা তথা ইহুদী ও খৃষ্টান। আর তাঁর প্রথম পুত্র হযরত ইসমাঈল আ. এর বংশে মাত্র একটি
ধর্মের ভিত্তি পাওয়া যায়। আর তা হলোঃ ইসলাম।
তিনি ছিলেন মানুষ
জাতির পথ প্রদর্শকঃ
মানব জাতি যখন রুহের জগতে। তখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা তাদেরকে উদ্দেশ্য করে
প্রশ্ন করেছিলেন, আমি কি তোমাদের মালিক নই-أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ ? তখন মানব জাতির প্রতিটি সদস্য একবাক্যে স্বীকারোক্তি করেছিলঃ হ্যাঁ,
অবশ্যই আপনি আমাদের মালিক-আমরা এই কথার সাক্ষ্য দিচ্ছিঃ قَالُوا
بَلَىٰ ۛ شَهِدْنَا । (সূরা আল আ’রাফঃ ১৭২)
এই ঘোষণার মাধ্যমে মানুষ জানিয়ে দিল যে, সে
মালিক নয়, বরং সে হচ্ছে গোলাম। মানে
সৃষ্টিগত ভাবে মানুষ আনুগত্যকারী। তার একজন
মালিক আছেন, সেই মালিকই মূলতঃ নিয়ম বানাবেন, আর তাকে গোলাম হিসাবে সেই নিয়মকে অনুসরণ
করতে হবে, নিয়ম অনুসরণের মাধ্যমে মালিকের আনুগত্য করতে হবে।
দুনিয়াতে মানুষ আসার পর দুনিয়ার মোহ তাদেরকে
তাদের সেই পরিচয়ের কথা ভুলিয়ে দিল। তাদের
সেই জন্মগত বা সৃষ্টিগত পরিচয়টাকে স্মরণ করে দেয়ার জন্য যুগে যুগে মালিক মানুষদের মধ্য
থেকে কিছু মানুষকে বাঁচাই করলেন। তাদের
পরিচয় হচ্ছে নবী এবং রাসূল। আর তারই
ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ যিনি আসলেন তিনি আমাদের রাসূল মহামানব নবী মুহাম্মদ সা.। মুহাম্মদ সা. আসলেন এবং চলে গেলেন। যেমন ইতিপূর্বে আরো নবী ও রাসূলগন তাদের দায়িত্ব
শেষ হওয়ার পর চলে গিয়েছিলেন। নবী ও
রাসূল চলে গেলেও তাদের শিক্ষা চলমান থাকবে অনন্তকাল। বিধায় মানুষ সেই শিক্ষা বা পথ নির্দেশকে অনুসরণ করে চলবে। নিজেকে গোলাম হিসাবে উপস্থাপন করে মালিকের
আনুগত্য করে চলবে। চিরশত্রু শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ
করা থেকে বিরত থাকবে। কুরআনে
হাকীমের নির্দেশঃ
وَلَقَدْ بَعَثْنَا
فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ فَمِنْهُم
مَّنْ هَدَى اللّهُ وَمِنْهُم مَّنْ حَقَّتْ عَلَيْهِ الضَّلالَةُ فَسِيرُواْ فِي الأَرْضِ
فَانظُرُواْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ
“প্রত্যেক জাতির মধ্যে আমি একজন
রাসূল পাঠিয়েছি এবং তার মাধ্যমে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি যে, আল্লাহর বন্দেগী করো এবং তাগূতের বন্দেগী পরিহার করো। এরপর তাদের মধ্য থেকে কাউকে আল্লাহ সঠিক পথের সন্ধান
দিয়েছেন এবং কারোর উপর পথভ্রষ্টতা চেপে বসেছে। তারপর পৃথিবীর বুকে একটু ঘোরাফেরা করে দেখে নাও যারা সত্যকে মিথ্যা বলেছে
তাদের পরিণাম কি হয়েছে।” (আন নাহলঃ ৩৬)
মানুষ যদি তার নিজের পরিচয়ের
সাথে সংগতি রেখে চলে তাহলে তা তার জন্য ভাল। কিন্তু যদি পরিচয় ভুলে শয়তানের পদাংক
অনুসরণ করে তাহলে তার পরিণতি কি হবে? সে সম্পর্কে আল কুরআন বলছেঃ
مَّنِ اهْتَدَى فَإِنَّمَا
يَهْتَدي لِنَفْسِهِ وَمَن ضَلَّ فَإِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَا وَلاَ تَزِرُ وَازِرَةٌ
وِزْرَ أُخْرَى وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّى نَبْعَثَ رَسُولاً
“যে ব্যক্তিই সৎপথ অবলম্বন করে, তার সৎপথ অবলম্বন তার নিজের জন্যই কল্যাণকর হয়। আর যে ব্যক্তি পথভ্রষ্ট হয়, তার
পথভ্রষ্টতার ধ্বংসকারিতা তার উপরই বর্তায়। কোনো বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না। আর আমি (হক ও বাতিলের পার্থক্য বুঝাবার জন্য) একজন পয়গম্বর না পাঠিয়ে দেয়া
পর্যন্ত কাউকে আযাব দেই না।” (বনি ইসরাঈলঃ ১৫)
وَيَوْمَ نَبْعَثُ فِي كُلِّ
أُمَّةٍ شَهِيداً عَلَيْهِم مِّنْ أَنفُسِهِمْ وَجِئْنَا بِكَ شَهِيداً عَلَى هَـؤُلاء
وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَاناً لِّكُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً وَبُشْرَى
لِلْمُسْلِمِينَ
“(হে মুহাম্মাদ! এদেরকে সেই দিন
সম্পর্কে হুঁশিয়ার করে দাও) যেদিন আমি প্রত্যেক উম্মাতের মধ্যে তাদের নিজেদের মধ্য
থেকে একজন সাক্ষী দাঁড় করিয়ে দেবো, যে তাদের
বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে এবং এদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবার জন্য আমি তোমাকে নিয়ে আসবো। (আর এ সাক্ষ্যের প্রস্তুতি হিসেবে) আমি এ কিতাব তোমার
প্রতি নাযিল করেছি, যা সব জিনিস পরিষ্কারভাবে তুলে ধরে এবং যা সঠিক পথনির্দেশনা, রহমত ও সুসংবাদ বহন করে
তাদের জন্য যারা আনুগত্যের শির নত করে দিয়েছে।” (আন
নাহলঃ ৮৯)
তিনি প্রেরিত হয়েছেন
৪টি মৌলিক দায়িত্ব নিয়েঃ
উত্তম চরিত্রের অধিকারী, কুরআনের
প্রতিচ্ছবি, উত্তম আদর্শের ধারক হিসাবে মানব জাতির পথ প্রদর্শনের জন্য দায়িত্ব
নিয়ে আসলেন এই ধরণীতে। তার সীমাহীন দায়িত্বের মাঝে মৌলিক দায়িত্ব গুলো বর্ণিত
হয়েছে কুরআনে হাকীমের আয়াতে আয়াতে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা বলেনঃ
رَبَّنَا وَٱبْعَثْ فِيهِمْ
رَسُولاً مِّنْهُمْ يَتْلُواْ عَلَيْهِمْ آيَٰتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلْكِتَٰبَ وَٱلْحِكْمَةَ
وَيُزَكِّيهِمْ إِنَّكَ أَنتَ ٱلعَزِيزُ ٱلحَكِيمُ
“হে আমাদের রব! এদের মধ্যে স্বয়ং
এদের জাতি পরিসর থেকে এমন একজন রাসূল পাঠাও যিনি এদেরকে তোমার আয়াত পাঠ করে
শুনাবেন, এদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেবেন
এবং এদের জীবন পরিশুদ্ধ করে সুসজ্জিত করবেন। অবশ্যি তুমি বড়ই প্রতিপত্তিশালী ও জ্ঞানবান।” (আল
বাকারাহঃ ১২৯)
এই আয়াত থেকে আমরা জানলামঃ
মুসলিম মিল্লাতের পিতা সাইয়্যিদুনা ইব্রাহীম আ. দোয়া করেছিলেন একজন রাসূল প্রেরণের
জন্য। আর সেই রাসুলের কাজ হবেঃ ১. আয়াত পাঠ করে শুনানো। ২. কিতাব শিক্ষা দেবেন। ৩.
হিকমাত শিক্ষা দেবেন। ৪. পরিশুদ্ধ করবেন।
ইব্রাহীম আ. এর দোয়ার প্রেক্ষিতে আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়াতায়ালা মুহাম্মদ সা. কে প্রেরণ করে আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। আর তার কাজ হলো তাই, যা ইব্রাহীম আ. তার দোয়াতে আবেদন করেছিলেন।
لَقَدْ مَنَّ اللّهُ عَلَى
الْمُؤمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولاً مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ
آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُواْ
مِن قَبْلُ لَفِي ضَلالٍ مُّبِينٍ
“আসলে ঈমানদারদের মধ্যে তাদেরই
মধ্য থেকে একজন নবী পাঠিয়ে আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। সে তাঁর আয়াত তাদেরকে শোনায়, তাদের
জীবনকে পরিশুদ্ধ ও সুবিন্যস্ত করে এবং তাদেরকে কিতাব ও জ্ঞান শিক্ষা দেয়। অথচ এর আগে এই লোকেরাই সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত ছিল।” (আলে ইমরানঃ ১৬৪)
একই কথা প্রতিধ্বনী শোনা যায় কুরআনের নিম্নোক্ত
আয়াতেওঃ
هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ
رَسُولاً مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ
وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ
“তিনিই মহান সত্তা যিনি উম্মীদের মধ্যে তাদেরই একজনকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন যে তাদেরকে তাঁর আয়াত শুনায়,
তাদের জীবনকে সজ্জিত ও সুন্দর করে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত
শিক্ষা দেয়। অথচ ইতিপূর্বে তারা স্পষ্ট গোমরাহীতে
নিমজ্জিত ছিল।” (আল জুমুয়াঃ ০২)
كَمَآ أَرْسَلْنَا فِيكُمْ
رَسُولاً مِّنْكُمْ يَتْلُواْ عَلَيْكُمْ آيَاتِنَا وَيُزَكِّيكُمْ وَيُعَلِّمُكُمُ
ٱلْكِتَابَ وَٱلْحِكْمَةَ وَيُعَلِّمُكُم مَّا لَمْ تَكُونُواْ تَعْلَمُونَ
“যেমনিভাবে (তোমরা এই জিনিসটি থেকেও সাফল্য লাভের সৌভাগ্য
অর্জন করেছো যে,) আমি তোমাদের মধ্যে স্বয়ং তোমাদের থেকেই
একজন রাসূল পাঠিয়েছি, যে তোমাদেরকে আমার আয়াত পড়ে শুনায়, তোমাদের জীবন পরিশুদ্ধ করে সুসজ্জিত করে, তোমাদেরকে
কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয় এবং এমন সব কথা তোমাদের শেখায়, যা তোমরা জানতে না।” (আল বাকারাহঃ
১৫১)
لَقَدْ مَنَّ ٱللَّهُ عَلَى
ٱلْمُؤمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولاً مِّنْ أَنْفُسِهِمْ يَتْلُواْ عَلَيْهِمْ
آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلْكِتَابَ وَٱلْحِكْمَةَ وَإِن كَانُواْ
مِن قَبْلُ لَفِي ضَلالٍ مُّبِينٍ
“আসলে ঈমানদারদের মধ্যে তাদেরই
মধ্য থেকে একজন নবী পাঠিয়ে আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। সে তাঁর আয়াত তাদেরকে শোনায়, তাদের
জীবনকে পরিশুদ্ধ ও সুবিন্যস্ত করে এবং তাদেরকে কিতাব ও জ্ঞান শিক্ষা দেয়। অথচ এর আগে এই লোকেরাই সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত ছিল।” (আলে ইমরানঃ ১৬৪)
তিনি প্রেরিত হয়েছেন সুসংবাদ দানকারী
ও ভীত প্রদর্শণকারী হিসাবেঃ
মানুষের দায়িত্ব হলো, নবী যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ
করা। নবীর দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের কাছে
পৌছে দেয়া। সেই পৌছে দেয়ার দায়িত্ব তিনি পালন
করেছেন কখনো সুসংবাদ দানকারীর ভূমিকায়, আবার কখনো ভীতি প্রদর্শণকারী হিসাবে। যেমনটা বলা হয়েছে আল কুরআনেঃ
إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ بِٱلْحَقِّ
بَشِيراً وَنَذِيراً وَلاَ تُسْأَلُ عَنْ أَصْحَابِ ٱلْجَحِيمِ
“(এর চাইতে বড় নিশানী আর কি হতে পারে যে) আমি তোমাকে
পাঠিয়েছি সত্য জ্ঞান সহকারে সুসংবাদ দানকারী ও ভীতি প্রদর্শনকারী রূপে। যারা জাহান্নামের সাথে সম্পর্ক জুড়েছে তাদের জন্য তুমি
দায়ী নও এবং তোমাকে জবাবদিহি করতে হবে না।” (আল বাকারাহঃ
১১৯)
وَبِٱلْحَقِّ أَنْزَلْنَاهُ
وَبِٱلْحَقِّ نَزَلَ وَمَآ أَرْسَلْنَاكَ إِلاَّ مُبَشِّراً وَنَذِيراً
“এ কুরআনকে আমি সত্য সহকারে
নাযিল করেছি এবং সত্য সহকারেই এটি নাযিল হয়েছে। আর হে মুহাম্মাদ! তোমাকে আমি এছাড়া আর কোনো কাজে পাঠাইনি যে, (যে মেনে নেবে তাকে) সুসংবাদ দিয়ে দেবে এবং (যে মেনে নেবে না তাকে) সাবধান
করে দেবে।” (বনি ইসরাঈলঃ ১০৫)
তিনি ছিলেন নিঃশর্ত আনুগত্যের আঁধারঃ
মানবতার দায়িত্ব হচ্ছে রাসূলকে নিঃশর্তভাবে মেনে
নেয়া। তিনি যা করতে বলেন, তা করা আর যা
করতে নিষেধ করেন, তা না করা। তিনিই নিঃশর্ত
আনুগত্যের একান্ত আঁধারঃ
وَمَآ أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ
إِلاَّ لِيُطَاعَ بِإِذْنِ ٱللَّهِ وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذ ظَّلَمُوۤاْ أَنْفُسَهُمْ
جَآءُوكَ فَٱسْتَغْفَرُواْ ٱللَّهَ وَٱسْتَغْفَرَ لَهُمُ ٱلرَّسُولُ لَوَجَدُواْ ٱللَّهَ
تَوَّاباً رَّحِيماً
“(তাদেরকে জানিয়ে দাও) আমি যে
কোন রাসূলই পাঠিয়েছি, এ উদ্দেশ্যেই পাঠিয়েছি যে, আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী তার আনুগত্য করা হবে। আর যদি তারা এমন পদ্ধতি অবলম্বন করতো যার ফলে যখন তারা নিজেদের উপর জুলুম
করতো তখন তোমার কাছে এসে যেতো এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতো আর রাসূলও তাদের জন্য
ক্ষমার আবেদন করতো, তাহলে নিসন্দেহে তারা আল্লাহকে ক্ষমাকারী
ও অনুগ্রহশীল হিসেবে পেতো।” (আন নিসাঃ
৬৪)
তিনি ছিলেন মানবতার প্রতি প্রেরিত
রাসূলঃ
মনে রাখতে হবে রাসূল সা. এসেছেন মানুষের জন্য
এবং এব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা স্বয়ং সাক্ষ্য প্রদান করছেনঃ
مَّآ أَصَابَكَ مِنْ حَسَنَةٍ
فَمِنَ ٱللَّهِ وَمَآ أَصَابَكَ مِن سَيِّئَةٍ فَمِن نَّفْسِكَ وَأَرْسَلْنَاكَ لِلنَّاسِ
رَسُولاً وَكَفَىٰ بِٱللَّهِ شَهِيداً
“হে মানুষ! যে কল্যাণই তুমি লাভ
করে থাকো তা আল্লাহর দান এবং যে বিপদ তোমার উপর এসে পড়ে তা তোমার নিজের উপার্জন ও
কাজের বদৌলতেই আসে। হে মুহাম্মাদ! আমি তোমাকে মানব জাতির জন্য
রাসূল বানিয়ে পাঠিয়েছি এবং এরপর আল্লাহর সাক্ষ্য যথেষ্ট।” (আন নিসাঃ
৭৯)
তিনি প্রেরিত হোননি পাহারাদার হিসাবেঃ
যে রাসূলকে আমাদের প্রতি প্রেরণ করা হয়েছে ভীতি
প্রদর্শণকারী ও সুসংবাদদাতা হিসাবে, তাকে দারগা বানিয়ে পাহাদার সাজিয়ে পাঠানো হয়নি। বরং তারতো কাজ হলো হেদায়াতের বাণী মানুষের দুয়ারে পৌছানো, তাদেরকে
পরকালীন ভয়ংকর আযাবের ভয় দেখানো এবং অনুগত বান্দার জন্য আল্লাহর অফুরন্ত নিয়ামতের সুসংবাদ
শোনানো।
مَّنْ يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدْ
أَطَاعَ ٱللَّهَ وَمَن تَوَلَّىٰ فَمَآ أَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيظاً
“যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য
করলো সে আসলে আল্লাহরই আনুগত্য করলো। আর যে
ব্যক্তি মুখ ফিরিয়ে নিলো, যাই হোক, তাদের উপর
তো আমি তোমাকে পাহারাদার বানিয়ে পাঠাইনি।” (আন নিসাঃ
৮০)
رَّبُّكُمْ أَعْلَمُ بِكُمْ
إِن يَشَأْ يَرْحَمْكُمْ أَوْ إِن يَشَأْ يُعَذِّبْكُمْ وَمَآ أَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ
وَكِيلاً
“তোমাদের রব তোমাদের অবস্থা
সম্পর্কে বেশী জানেন। তিনি চাইলে তোমাদের
প্রতি দয়া করেন এবং চাইলে তোমাদের শাস্তি দেন। আর হে নবী! আমি তোমাকে লোকদের উপর হাবিলদার করে পাঠাইনি।” (বনি ইসরাঈলঃ ৫৪)
তিনি প্রেরিত হয়েছেন মানুষকে আল্লাহর
অনুগত বানাতেঃ
সকল রাসূলের ন্যায় নবী মুহাম্মদ সা.ও প্রেরিত
হয়েছেন মানুষকে আনুগত্যের সবক দিতে। তারা মানুষের
সামনে সেই সবক তুলে ধরেছেন। কিন্তু মানুষ
সহজে তা গ্রহণ করেনি। বরং উল্টো
তার বিরোধীতা করেছে। ফলে রাসূলকে
নানাবিধ বিপদ আর কষ্টের মোকাবেলা করতে হয়েছে।
وَلَقَدْ أَرْسَلنَآ إِلَىٰ
أُمَمٍ مِّن قَبْلِكَ فَأَخَذْنَٰهُمْ بِٱلْبَأْسَآءِ وَٱلضَّرَّآءِ لَعَلَّهُمْ يَتَضَرَّعُونَ
“তোমার পূর্বে অনেক মানব গোষ্ঠীর
কাছে আমি রাসূল পাঠিয়েছি এবং তাদেরকে বিপদ ও কষ্টের মুখে নিক্ষেপ করেছি, যাতে তারা বিনীতভাবে আমার সামনে মাথা নত করে।” (আল
আনআমঃ ৪২)
তিনি জিজ্ঞেসিত হবেন
এবং জিজ্ঞেসিত হবে উম্মতেরাওঃ
যে রাসূল ধরণীতে আল্লাহর পক্ষ
থেকে প্রেরিত হয়েছেন, সেই রাসূল দুনিয়াতে এসেছিলেন কিছু দায় দায়িত্ব নিয়ে। সেই
দায়িত্ব সম্পর্কে তিনি তার মালিকের কাছে জিজ্ঞেসিত হবেন। একই ভাবে রাসূলের দেয়া
সুসংবাদ আর সতর্কবাণী অনুযায়ী তার উম্মাতের উপরও বেশ কিছু দায়িত্ব বর্তায়। সেই
দায়িত্ব তারা পালন করেছিলেন কি করেননি-সে সম্পর্কে উম্মতেরাও আল্লাহর সমীপে
জিজ্ঞেসিত হবেন।
فَلَنَسْأَلَنَّ ٱلَّذِينَ
أُرْسِلَ إِلَيْهِمْ وَلَنَسْأَلَنَّ ٱلْمُرْسَلِينَ
“কাজেই যাদের কাছে আমি রাসূল
পাঠিয়েছি তাদেরকে অবশ্যি জিজ্ঞাসাবাদ করবো। এবং রাসূলকেও জিজ্ঞাসা করবো (তারা পয়গাম
পৌছিয়ে দেবার দায়িত্ব কতটুকু সম্পাদন করেছে এবং এর কি জবাব পেয়েছে)।” (আল আ’রাফঃ ৬)
তিনি প্রেরিত হয়েছেন শিক্ষা
ও সত্য সহকারেঃ
যে রাসূলকে আমাদের কাছে পাঠানো
হয়েছে, আমরা ঈমান আনার জন্য তার সাথে একটি শিক্ষাও পাঠানো হয়েছে। রাসূলের দায়িত্ব
হলো সেই সত্য শিক্ষাটা ছাড়া আর কিছু না বলা। আল্লাহ যেমন বলতে বলেন, তেমন করে বলা।
وَإِن كَانَ طَآئِفَةٌ مِّنكُمْ
آمَنُواْ بِٱلَّذِيۤ أُرْسِلْتُ بِهِ وَطَآئِفَةٌ لَّمْ يْؤْمِنُواْ فَٱصْبِرُواْ حَتَّىٰ
يَحْكُمَ ٱللَّهُ بَيْنَنَا وَهُوَ خَيْرُ ٱلْحَاكِمِينَ
“যে শিক্ষা সহকারে আমাকে পাঠানো
হয়েছে, তোমাদের মধ্য থেকে কোন একটি দল যদি তার প্রতি ঈমান আনে
এবং অন্য একটি দল যদি তার প্রতি ঈমান না আনে তাহলে ধৈর্যসহকারে দেখতে থাকো, যতক্ষণ না আল্লাহ আমাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেন। আর তিনিই সবচেয়ে ভাল ফায়সালাকারী।” (আল আ’রাফঃ ৮৭)
حَقِيقٌ عَلَىٰ أَنْ لاَّ أَقُولَ
عَلَى ٱللَّهِ إِلاَّ ٱلْحَقَّ قَدْ جِئْتُكُمْ بِبَيِّنَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ فَأَرْسِلْ
مَعِيَ بَنِيۤ إِسْرَائِيلَ
“আমার দায়িত্বই হচ্ছে,আল্লাহর নামে সত্য ছাড়া আর কিছুই বলবো না। আমি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে নিযুক্তির সুষ্পষ্ট প্রমাণসহ এসেছি। কাজেই তুমি বনী ইসরাঈলকে আমার সাথে পাঠিয়ে দাও।” (আল আ’রাফঃ ১০৫)
তিনি প্রেরিত হয়েছেন
সাক্ষ্য হয়েঃ
রাসূল যে সত্য নিয়ে এসেছেন সেই
সত্যের সাক্ষ্য প্রদান করার জন্য তিনি নিজেই সাক্ষ্য হয়ে প্রেরিত হয়েছেন। বিধায় তার
বর্ণিত সকল বিষয় তার কাজে, তার আমলে আমরা দেখতে পাই।
يٰأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ إِنَّآ
أَرْسَلْنَٰكَ شَٰهِداً وَمُبَشِّراً وَنَذِيراً
“এবং তাদের জন্য আল্লাহ বড়ই
সম্মানজনক প্রতিদানের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। হে নবী! আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষী বানিয়ে।” (আল আহযাবঃ ৪৫)
তিনি প্রেরিত হয়েছেন
সত্য দ্বীনের সাথে হেদায়াত নিয়েঃ
তিনি প্রেরিত হয়েছে দ্বীনে হক
নিয়ে। যার বর্ণনা করা হয়েছে কুরআনে হাকীমের তিন তিনটি স্থানে একই ভাষায়।
هُوَ ٱلَّذِيۤ أَرْسَلَ رَسُولَهُ
بِٱلْهُدَىٰ وَدِينِ ٱلْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى ٱلدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ ٱلْمُشْرِكُونَ
“আল্লাহই তার রাসূলকে পথনির্দেশ
ও সত্য দীন সহকারে পাঠিয়েছেন যাতে তিনি একে সকল প্রকার দীনের উপর বিজয়ী করেন, মুশরিকরা একে যতই অপছন্দ করুক না কেন।” (আত তাওবাহঃ ৩৩)
هُوَ ٱلَّذِيۤ أَرْسَلَ رَسُولَهُ
بِٱلْهُدَىٰ وَدِينِ ٱلْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى ٱلدِّينِ كُلِّهِ وَكَفَىٰ بِٱللَّهِ
شَهِيداً
“আল্লাহই তো সে মহান সত্তা যিনি
তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীন দিয়ে পাঠিয়েছেন যেন তাকে সমস্ত দ্বীনের উপর
বিজয়ী করে দেন। আর এ বাস্তবতা সম্পর্কে আল্লাহর সাক্ষ্যই
যথেষ্ট।” (আল ফাতহঃ ২৮)
هُوَ ٱلَّذِيۤ أَرْسَلَ رَسُولَهُ
بِٱلْهُدَىٰ وَدِينِ ٱلْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى ٱلدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ ٱلْمُشْرِكُونَ
“তিনিই সেই মহান সত্তা যিনি তাঁর
রাসূলকে হিদায়াত এবং ‘দ্বীনে হক’ দিয়ে পাঠিয়েছেন যাতে তিনি এ দ্বীনকে অন্য সকল
দ্বীনের উপর বিজয়ী করেন, চাই তা মুশরিকদের কাছে যতই অসহনীয় হোক না
কেন।” (আস সাফঃ ০৯)
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো যে, হেদায়াতের আলো আর সত্য দ্বীন সকলের কাছে
ভাল মনে হবে এমন কোন কথা নয়। বিশেষ করে চিরন্তন ভাবে দুই শ্রেণীর
মানুষের কাছে সত্য দ্বীন আর হেদায়াত অপছন্দনীয় হয়ে থাকে। আর তারা হলোঃ ১. মুশরিক। ২. কাফের।
لَقَدْ أَرْسَلْنَا
رُسُلَنَا بِٱلْبَيِّنَاتِ وَأَنزَلْنَا مَعَهُمُ ٱلْكِتَابَ وَٱلْمِيزَانَ لِيَقُومَ
ٱلنَّاسُ بِٱلْقِسْطِ وَأَنزَلْنَا ٱلْحَدِيدَ فِيهِ بَأْسٌ شَدِيدٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ
وَلِيَعْلَمَ ٱللَّهُ مَن يَنصُرُهُ وَرُسُلَهُ بِٱلْغَيْبِ إِنَّ ٱللَّهَ قَوِيٌّ
عَزِيزٌ
“আমি আমার রাসূলদের সুস্পষ্ট
নিদর্শনসমূহ এবং হিদায়াত দিয়ে পাঠিয়েছি। তাদের
সাথে কিতাব ও মিযান নাযিল করেছি যাতে মানুষ ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। আর লোহা নাযিল করেছি যার মধ্যে বিরাট শক্তি এবং মানুষের
জন্য বহুবিধ কল্যাণ রয়েছে। এটা
করা হয়েছে এজন্য যে, আল্লাহ জেনে নিতে চান কে তাঁকে না দেখেই
তাঁকে ও তাঁর রাসূলদেরকে সাহায্য করে। নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ অত্যন্ত শক্তিধর ও মহাপরাক্রমশালী।” (আল
হাদীদঃ ২৫)
তিনি প্রেরিত হয়েছেন পৌছানোর দায়িত্ব
নিয়ে-গ্রহণ করাবার জন্য নয়ঃ
রাসূল প্রেরিত হোননি মানুষকে ধরে ধরে তার নিয়ে
আসা সত্য দিন মানুষকে জোর করে গ্রহণ করানোর জন্য। বরং তিনি কেবল পৌছানোর দায়িত্ব নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন। রাসূলের অনুসরণ করে উম্মাতের দায়ীগন এখনও যখন কোন বক্তব্য প্রদান করেন, তখন বক্তব্য
শেষ করে তারা একটি কথা বলেন। আর তাহলো
وَمَا
عَلَيْنَا إِلاَّ ٱلْبَلاَغ –আমার দায়িত্ব পৌছে দেয়া ছাড়া আর কিছু নয়।
فَإِن تَوَلَّوْاْ فَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ
مَّآ أُرْسِلْتُ بِهِ إِلَيْكُمْ وَيَسْتَخْلِفُ رَبِّي قَوْماً غَيْرَكُمْ وَلاَ تَضُرُّونَهُ
شَيْئاً إِنَّ رَبِّي عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ حَفِيظٌ
“যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিতে চাও
তাহলে ফিরিয়ে নাও, কিন্তু যে পয়গাম দিয়ে আমাকে তোমাদের
কাছে পাঠানো হয়েছিল তা আমি তোমাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছি। এখন আমার রব তোমাদের জায়গায় অন্য জাতিকে বসাবেন এবং তোমরা
তাঁর কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। অবশ্যি
আমার রব প্রতিটি জিনিসের সংরক্ষক।” (হুদঃ ৫৭)
كَذَلِكَ أَرْسَلْنَاكَ فِيۤ
أُمَّةٍ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهَآ أُمَمٌ لِّتَتْلُوَاْ عَلَيْهِمُ ٱلَّذِيۤ أَوْحَيْنَآ
إِلَيْكَ وَهُمْ يَكْفُرُونَ بِٱلرَّحْمَـٰنِ قُلْ هُوَ رَبِّي لاۤ إِلَـٰهَ إِلاَّ
هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ مَتَابِ
“হে মুহাম্মাদ! এহেন মাহাত্ম
সহকারে আমি তোমাকে নবী বানিয়ে পাঠিয়েছি এমন এক
জাতির মধ্যে যার আগে বহু জাতি অতিক্রান্ত হয়ে গেছে, যাতে
তোমার কাছে আমি যে পয়গাম অবতীর্ণ করেছি তা তুমি এদেরকে শুনিয়ে দাও, এমন অবস্থায় যখন এরা নিজেদের পরম দয়াময় আল্লাহকে অস্বীকার করছে। এদেরকে বলে দাও, তিনিই আমার রব,
তিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই, তাঁরই উপর আমি
ভরসা করেছি এবং তাঁরই কাছে আমাকে ফিরে যেতে হবে।” (আর
রা’দঃ ৩০)
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلاً
مِّن قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجاً وَذُرِّيَّةً وَمَا كَانَ لِرَسُولٍ أَن
يَأْتِيَ بِآيَةٍ إِلاَّ بِإِذْنِ ٱللَّهِ لِكُلِّ أَجَلٍ كِتَابٌ
“তোমার আগেও আমি অনেক রাসূল
পাঠিয়েছি এবং তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান সন্তুতি দিয়েছি। আর আল্লাহর অনুমতি ছাড়া নিজেই কোন নিদর্শন এনে দেখাবার শক্তি কোন রাসূলেরও
ছিল না। প্রত্যেক যুগের জন্য একটি কিতাব রয়েছে।” (আর রা’দঃ ৩৮)
قَالَ إِنَّمَا ٱلْعِلْمُ عِندَ
ٱللَّهِ وَأُبَلِّغُكُمْ مَّآ أُرْسِلْتُ بِهِ وَلَـٰكِنِّيۤ أَرَاكُمْ قَوْماً تَجْهَلُونَ
“সে বললোঃ এ ব্যাপারের জ্ঞান
শুধু আল্লাহরই আছে। যে পয়গাম দিয়ে আমাকে পাঠানো হয়েছে আমি
সেই পয়গাম তোমাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিচ্ছি। তবে আমি দেখছি, তোমরা অজ্ঞতা প্রদর্শন করছো।” (আল আহক্বাফঃ ২৩)
فَإِنْ أَعْرَضُواْ فَمَآ أَرْسَلْنَاكَ
عَلَيْهِمْ حَفِيظاً إِنْ عَلَيْكَ إِلاَّ ٱلْبَلاَغُ وَإِنَّآ إِذَآ أَذَقْنَا ٱلإِنسَانَ
مِنَّا رَحْمَةً فَرِحَ بِهَا وَإِن تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيهِمْ
فَإِنَّ ٱلإِنسَانَ كَفُورٌ
“এখন যদি এরা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে হে নবী, আমি তো আপনাকে তাদের জন্য রক্ষক
হিসেবে পাঠাইনি। কথা পৌঁছিয়ে
দেয়াই কেবল তোমার দায়িত্ব।
মানুষের অবস্থা এই যে, যখন আমি তাকে আমার রহমতের স্বাদ আস্বাদন
করাই তখন সে তার জন্য গর্বিত হয়ে ওঠে। আর যখন তা নিজ হাতে কৃত কোন কিছু মুসিবত আকারে তার উপর আপতিত হয় তখন সে চরম
অকৃতজ্ঞ হয়ে যায়।” (আশ শুরাঃ ৪৮)
তিনি প্রেরিত হয়েছেন
সতর্ককারী হিসাবেঃ
যে কথাটি পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে যে, রাসূল
প্রেরিত হোননি মানুষকে ধরে ধরে তার নিয়ে আসা সত্য দিন মানুষকে জোর করে গ্রহণ করানোর
জন্য। বরং তিনি কেবল পৌছানোর দায়িত্ব নিয়ে
প্রেরিত হয়েছেন। একই ভাবে রাসূলের কাজ হলো মানুষকে
সতর্ক করা। কুরআনে বারবার এই দায়িত্বের বিষয়টি
প্রতিধ্বনিত হয়েছে।
إِنَّآ أَرْسَلْنَٰكَ شَٰهِداً
وَمُبَشِّراً وَنَذِيراً
“হে নবী, আমি তোমাকে সাক্ষ্যদানকারী, সুসংবাদ দানকারী
এবং সতর্ককারী হিসেবে পাঠিয়েছি।” (আল ফাতহঃ ০৮)
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا فِيهِمْ
مُّنذِرِينَ
“এবং তাদের মধ্যে আমি সতর্ককারী
রাসূল পাঠিয়েছিলাম।” (আস সাফ্ফাতঃ ৭২)
إِنَّآ أَرْسَلْنَاكَ بِٱلْحَقِّ
بَشِيراً وَنَذِيراً وَإِن مِّنْ أُمَّةٍ إِلاَّ خَلاَ فِيهَا نَذِيرٌ
“আমি তোমাকে সত্য সহকারে
পাঠিয়েছি সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী বানিয়ে। আর এমন কোন সম্প্রদায় অতিক্রান্ত হয়নি যার মধ্যে কোন সতর্ককারী আসেনি।” (ফাতিরঃ ২৪)
وَمَآ أَرْسَلْنَاكَ إِلاَّ
كَآفَّةً لِّلنَّاسِ بَشِيراً وَنَذِيراً وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ ٱلنَّاسِ لاَ يَعْلَمُونَ
“আর (হে নবী!) আমি তো তোমাকে
সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী করে পাঠিয়েছি কিন্তু বেশীর
ভাগ লোক জানে না।” (সাবাঃ ২৮)
وَمَآ أَرْسَلْنَاكَ إِلاَّ
مُبَشِّراً وَنَذِيراً
“হে মুহাম্মাদ। তোমাকে তো আমি শুধুমাত্র একজন সুসংবাদ দানকারী ও সতর্ককারী
করে পাঠিয়েছি।” (আল ফুরক্বানঃ ৫৬)
তিনি প্রেরিত হয়েছেন
মানুষ হিসাবেঃ
যে রাসূলকে আল্লাহ দুনিয়ায়
প্রেরণ করেছেন, তাদেরকে ভিন্ন কোন জাতি যেমনঃ জ্বীন, ফেরেশতা বা অন্য কিছু থেকে
প্রেরণ করা হয়নি। বরং মানুষের হেদায়াতের জন্য, মানুষকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য, মানুষকে
সতর্ক করার জন্য মানুষের মধ্য থেকেই রাসূল প্রেরণ করা হয়েছে। যাতে করে যাদের প্রতি
তিনি প্রেরিত হয়েছেন, তারা যেন এমন কথা বলার সুযোগ না পায় যে, উনি যা বলছেন বা
করছেন, তাতো জ্বীন বা ফেরেশতাদের পক্ষে করা সম্ভব, মানুষদের পক্ষে তা করা সম্ভব নয়।
وَمَآ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ
إِلاَّ رِجَالاً نُّوحِيۤ إِلَيْهِمْ فَٱسْأَلُواْ أَهْلَ ٱلذِّكْرِ إِن كُنْتُم لاَ
تَعْلَمُونَ
“হে মুহাম্মাদ! তোমার আগে আমি
যখনই রাসূল পাঠিয়েছি, মানুষই পাঠিয়েছি, যাদের
কাছে আমি নিজের অহী প্রেরণ করতাম। যদি তোমরা নিজেরা না জেনে থাকো তাহলে বাণীওয়ালাদেরকে জিজ্ঞেস করো।” (আন নাহলঃ ৪৩)
তিনি প্রেরিত
হয়েছিলেন তার জাতির ভাষায়ঃ
আরেকটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
বিষয় হলো রাসূলকে কোন ভাষায় প্রেরণ করা হবে? যখন কোন নবী বা রাসূলকে কোন
সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে, তখন সেই জাতির ভাষায় বা সেই জাতির ভাষাভাষী
ব্যক্তিকে নবী বা রাসূল হিসাবে বাঁচাই করা হয়েছে। যাতে করে যাদের কাছে তিনি
প্রেরিত হয়েছেন, তাদের বক্তব্য ও মনোভাব তিনি বুঝতে পারেন এবং একই ভাবে রাসূলের
বক্তব্য ও মনোভাবও তারা বুঝতে পারে। নবী মুহাম্মদ সা. ও তার ব্যতিক্রম নন। তিনি
আরবে প্রেরিত হয়েছেন বলে আরবের ভাষায় আরববাসী ব্যক্তি মুহাম্মদ সা.কে নবী বা রাসূল
হিসাবে প্রেরণ করা হয়েছে।
وَمَآ أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ
إِلاَّ بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ فَيُضِلُّ ٱللَّهُ مَن يَشَآءُ وَيَهْدِي
مَن يَشَآءُ وَهُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْحَكِيمُ
“আমি নিজের বাণী পৌছাবার জন্য
যখনই কোন রাসূল পাঠিয়েছি, সে তার নিজের সম্প্রদায়েরই ভাষায় বাণী
পৌছিয়েছে, যাতে সে তাদেরকে খুব ভালো করে পরিষ্কারভাবে বুঝাতে
পারে। তারপর আল্লাহ যাকে চান তাকে পথভ্রষ্ট
করেন এবং যাকে চান হেদায়াত দান করেন। তিনি প্রবল পরাক্রান্ত ও জ্ঞানী।”
(ইব্রাহীমঃ ০৪)
তিনির নাম মুহাম্মদ;
যে নাম কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে ৪বারঃ
কুরআনে ‘মুহাম্মাদ’ শব্দটি ৪টি আয়াতে ৪বার
এসেছে এবং সে সব জায়গায় মুহাম্মদ সা. এর পরিচয় দেয়া হয়েছে বিভিন্ন ভাবে। যেমনঃ
সুরা আলে ইমরানের ১৪৪ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করা
হয়েছে এই ভাবেঃ
وَمَا مُحَمَّدٌ إِلاَّ رَسُولٌ
قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ الرُّسُلُ أَفَإِن مَّاتَ أَوْ قُتِلَ انقَلَبْتُمْ عَلَى
أَعْقَابِكُمْ وَمَن يَنقَلِبْ عَلَىَ عَقِبَيْهِ فَلَن يَضُرَّ اللّهَ شَيْئاً وَسَيَجْزِي
اللّهُ الشَّاكِرِينَ
“মুহাম্মাদ একজন রাসূল বৈ তো আর
কিছুই নয়। তার আগে আরো অনেক রাসূলও চলে গেছে। যদি সে মারা যায় বা নিহত হয়, তাহলে কি পেছনের দিকে ফিরে যাবে? মনে
রেখো, যে পেছনের দিকে ফিরে যাবে সে আল্লাহর কোন ক্ষতি করবে না, তবে যারা আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হয়ে থাকবে তাদেরকে তিনি পুরস্কৃত করবেন।”
নবী এবং রাসূলরা পরিবারতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার
জন্য যেমন আসেন না, তেমনি তারা স্বজনদের কল্যাণের জন্যও আসেননা। বিধায় তাদের কাজে কর্মে নাই কোন স্বজনপ্রীতি
বা আত্মীয়করণ। নবী মুহাম্মদ সা.ও তার ব্যতিক্রম
নন। প্রসংগতঃ নবী মুহাম্মদ সা. এর
কোন ছেলে সন্তান জীবিত ছিলেন না বা আল্লাহ তাঁর কোন ছেলে সন্তানকে জীবিত রাখেননি।। কিন্তু তার একজন বাপ ডাকা সন্তান ছিল। সেই সন্তান যাতে তার মিশনে কোন প্রভাব না ফেলতে
পারে, সেজন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা সূরা আল আহযাব এর ৪০ নম্বর আয়াতে জানিয়ে দিলেনঃ
مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا
أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ
اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيماً
“(হে লোকেরা!) মুহাম্মাদ তোমাদের
পুরুষদের মধ্য থেকে কারোর পিতা নয়। কিন্তু
সে আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আর
আল্লাহ সব জিনিসের জ্ঞান রাখেন।”
নবী মুহাম্মদ সা. এর অনুসারীদের বৈশিষ্ট সম্পর্কে
সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا
الصَّالِحَاتِ وَآمَنُوا بِمَا نُزِّلَ عَلَى مُحَمَّدٍ وَهُوَ الْحَقُّ مِن رَّبِّهِمْ
كَفَّرَ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَأَصْلَحَ بَالَهُمْ
“আর যারা ঈমান এনেছে নেক কাজ
করেছে এবং মুহাম্মদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তা
মেনে নিয়েছে-বস্তুত তা তো তাদের রবের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত অকাট্য সত্য কথা। আল্লাহ তাদের খারাপ কাজগুলো তাদের থেকে দূর করে দিয়েছেন এবং তাদের অবস্থা শুধরে দিয়েছেন।” (মুহাম্মাদঃ
০২)
مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ اللَّهِ
وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاء عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاء بَيْنَهُمْ تَرَاهُمْ رُكَّعاً
سُجَّداً يَبْتَغُونَ فَضْلاً مِّنَ اللَّهِ وَرِضْوَاناً سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِم
مِّنْ أَثَرِ السُّجُودِ ذَلِكَ مَثَلُهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَمَثَلُهُمْ فِي الْإِنجِيلِ
كَزَرْعٍ أَخْرَجَ شَطْأَهُ فَآزَرَهُ فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوَى عَلَى سُوقِهِ يُعْجِبُ
الزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا
الصَّالِحَاتِ مِنْهُم مَّغْفِرَةً وَأَجْراً عَظِيماً
“মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। আর যারা তাঁর সাথে আছে তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে আপোষহীন এবং নিজেরা পরস্পর দয়া পরবশ। তোমরা যখনই দেখবে তখন তাদেরকে রুকূ ও সিজদা এবং আল্লাহর করুণা ও সন্তুষ্টি
কামনায় তৎপর পাবে। তাদের চেহারায় সিজদার
চিহ্ন বর্তমান, যা দিয়ে তাদেরকে আলাদা চিনে নেয়া যায়। তাদের এ পরিচয় তাওরাতে দেয়া হয়েছে। আর ইনযীলে তাদের উপমা পেশ করা হয়েছে এই বলে যে,
একটি শস্যক্ষেত যা প্রথমে অঙ্কুরোদগম ঘটালো। পরে তাকে শক্তি যোগালো তারপর তা শক্ত ও মজবুত হয়ে স্বীয়
কাণ্ডে ভর করে দাঁড়ালো। যা কৃষককে খুশী করে
কিন্তু কাফের তার পরিপুষ্টি লাভ দেখে মনোকষ্ট পায়। এ শ্রেণীর লোক যারা ঈমান আনয়ন করছে এবং সৎকাজ করেছে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও
বড় পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।” (আল ফাতহঃ ২৯)
নবীর মুখে নবী আগমনের উদ্দেশ্য
তিনি এসেছে হেদায়াত আর ইলম নিয়েঃ
হযরত আবু মুসা রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীস-যা
সহীহ বুখারীতে উল্লেখ করা হয়েছে। রাসূল সা. বলেছেনঃ
مَثَلُ مَا بَعَثَنِي اللَّهُ
بِهِ مِنَ الْهُدَى وَالْعِلْمِ كَمَثَلِ الْغَيْثِ الْكَثِيرِ أَصَابَ أَرْضًا، فَكَانَ
مِنْهَا نَقِيَّةٌ قَبِلَتِ الْمَاءَ، فَأَنْبَتَتِ الْكَلأَ وَالْعُشْبَ الْكَثِيرَ،
وَكَانَتْ مِنْهَا أَجَادِبُ أَمْسَكَتِ الْمَاءَ، فَنَفَعَ اللَّهُ بِهَا النَّاسَ،
فَشَرِبُوا وَسَقَوْا وَزَرَعُوا، وَأَصَابَتْ مِنْهَا طَائِفَةً أُخْرَى، إِنَّمَا
هِيَ قِيعَانٌ لاَ تُمْسِكُ مَاءً، وَلاَ تُنْبِتُ كَلأً، فَذَلِكَ مَثَلُ مَنْ فَقِهَ
فِي دِينِ اللَّهِ وَنَفَعَهُ مَا بَعَثَنِي اللَّهُ بِهِ، فَعَلِمَ وَعَلَّمَ، وَمَثَلُ
مَنْ لَمْ يَرْفَعْ بِذَلِكَ رَأْسًا، وَلَمْ يَقْبَلْ هُدَى اللَّهِ الَّذِي أُرْسِلْتُ
بِهِ. قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ قَالَ إِسْحَاقُ وَكَانَ مِنْهَا طَائِفَةٌ قَيَّلَتِ
الْمَاءَ. قَاعٌ يَعْلُوهُ الْمَاءُ، وَالصَّفْصَفُ الْمُسْتَوِي مِنَ الأَرْضِ.
“আল্লাহ তায়ালা আমাকে যে
হিদায়ত ও ইলম দিয়ে পাঠিয়েছেন তার দৃষ্টান্ত হল যমীনের উপর পতিত প্রবল বৃষ্টির ন্যায়। কোন কোন ভূমি থাকে উর্বর যা সে পানি শুষে নিয়ে প্রচুর পরিমানে ঘাসপাতা এবং
সবুজ তরুলতা উৎপাদন করে। আর কোন কোন ভূমি থাকে কঠিন যা পানি আটকে
রাখে। পরে আল্লাহ তায়ালা তা দিয়ে মানুষের উপকার করেন; তারা নিজেরা পান করে ও (পশুপালকে)
পান করায় এবং তার দ্বারা চাষাবাদ করে। আবার কোন কোন জামি আছে যা একেবারে মসৃণ ও সমতল; তা না পানি আটকে রাখে, আর না কোন
ঘাসপাতা উৎপাদন করে। এই হল সে ব্যাক্তির
দৃষ্টান্ত যে দ্বীনের জ্ঞান লাভ করে এবং আল্লাহ তায়ালা আমাকে যা দিয়ে প্রেরণ
করেছেন তাতে সে উপকৃত হয়। ফলে সে নিজে শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা
দেয়। আর সে ব্যাক্তির দৃষ্টান্ত-যে সে দিকে মাথা তুলে
তাকায়ই না এবং আল্লাহর যে হিদায়ত নিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি, তা গ্রহণও করে না।”
তিনি এসেছেন সকল সৃষ্টির জন্যঃ
দুনিয়াতে যত নবী রাসূলের
আগমন ঘটেছে, তাদের সকলেই প্রেরিত হয়েছেন কোন না কোন জাতি-সম্প্রদায় কিংবা কোন একটি
সুনির্দিষ্ট এলাকার জন্য। কিন্তু নবী মুহাম্মদ সা. হলেন ব্যতিক্রম। তিনি প্রেরিত হয়েছেন সারা দুনিয়ার সকল মানুষের জন্য। ৬টি বিষয় যা কেবল নবী মুহাম্মদ সা.কে প্রদান করা হয়েছে, অন্য কোন নবীকে দেয়া
হয়নি। হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন যে, রাসূল সা.
বলেছেনঃ
فُضِّلْتُ عَلَى الأَنْبِيَاءِ
بِسِتٍّ أُعْطِيتُ جَوَامِعَ الْكَلِمِ وَنُصِرْتُ بِالرُّعْبِ وَأُحِلَّتْ لِـىَ الْغَنَائِمُ
وَجُعِلَتْ لِـىَ الْأَرْضُ طَهُوْرًا وَمَسْجِدًا وَأُرْسِلْتُ إِلَـى الْـخَلْقِ
كَافَّةً وَخُتِمَ بِىَ النَّبِيُّونَ
“ছয়টি জিনিস দিয়ে আমাকে
অন্যান্য নবীগণের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। ১. আমাকে বহুলার্থবোধক সংক্ষিপ্ত বাক্যাবলী দেওয়া হয়েছে। ২. আতঙ্ক দিয়ে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। ৩. গনীমতের মাল আমার জন্য হালাল করা হয়েছে। ৪. পৃথিবীকে আমার জন্য মসজিদ ও পবিত্রকারী বানানো হয়েছে। ৫. আমি সারা সৃষ্টির জন্য প্রেরিত হয়েছি। আর ৬. আমাকে দিয়ে নবুঅতের সমাপ্তি ঘটানো হয়েছে।” (মুসলিম)
তিনি এসেছেন বন্টনকারী হয়েঃ
হযরত জাবির ইবনু আবদুল্লাহ
রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
আমাদের আনসারীর এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। সে তার নাম মুহাম্মদ রাখার ইচ্ছা করল। মানসূর রাহি. সূত্রে
বর্ণিত হাদীসে শুবা বলেন, সে আনসারী
বলল, আমি তাকে আমার ঘাড়ে তুলে নিয়ে নবী সা. এর কাছে এলাম। আর সুলাইমান রাহি. বর্ণিত হাদীসে শুবা বলেন, সে আনসারী বলল, আমি তাকে আমার ঘাড়ে তুলে
নিয়ে নবী সা. এর কাছে এলাম। আর সুলাইমান রাহি. হাদীসে
বর্ণিত রয়েছে যে, তার একটি
পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। তখন সে তার নাম মুহাম্মদ
রাখার ইচ্ছা করে। রাসূলুল্লাহ সা. বলেন,
سَمُّوا بِاسْمِي، وَلاَ تَكَنَّوْا
بِكُنْيَتِي، فَإِنِّي إِنَّمَا جُعِلْتُ قَاسِمًا أَقْسِمُ بَيْنَكُمْ.
তোমরা আমার নামে নাম রাখ। কিন্তু আমার কুনিয়াতের অনুরূপ কুনিয়াত রেখনা। আমাকে বণ্টনকারী করা হয়েছে। আমি তোমাদের মধ্যে বণ্টন
করি।
আর হুসাইন রাহি. বলেন, রাসূল সা. বলেছেন,
بُعِثْتُ قَاسِمًا أَقْسِمُ
بَيْنَكُمْ.
আমি বণ্টনকারীরূপে প্রেরিত হয়েছি। আমি তোমাদের মধ্যেবণ্টন
করি।
আর হযরত আমর জাবির রা. থেকে
বর্ণনা করেন যে,
أَرَادَ أَنْ يُسَمِّيَهُ الْقَاسِمَ
فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ سَمُّوا بِاسْمِي وَلاَ تَكْتَنُوا بِكُنْيَتِي.
সে ব্যাক্তি তার সন্তানের
নাম কাসিম রাখতে চেয়েছিল, তখন নবী
সা. বলেন, তোমরা আমার নামে নাম রাখ, আমার
কুনিয়াতের অনুরূপ কুনিয়াত রেখ না। (বুখারী)
তিনি এসেছেন জাওয়ামিউল কালিম হয়েঃ
মানবতার মুক্তির বাণী নিয়ে
আসা রাসূলের কথা যাতে মানুষ সহজে বুঝতে পারে, সেজন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা
মেহেরবানী করে তার প্রিয় রাসূলের কথার মাঝে এমন বৈশিষ্ট প্রদান করেছেন, যা আর
কাউকে প্রদান করা হয়নি। তার তা হলো তিনি অল্প কথায় অনেক অর্ধবোধক
বিবরণ বুঝাতে পারতেন। তার জন্য তাকে বলা হয় জাওয়ামিউল কালিম বা
কম কথায় বেশী অর্থবোধক বিষয় বুঝানোর ক্ষমতা সম্পন্ন।
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে
বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সা. বলেছেনঃ
بُعِثْتُ بِجَوَامِعِ الْكَلِمِ،
وَنُصِرْتُ بِالرُّعْبِ، وَبَيْنَا أَنَا نَائِمٌ رَأَيْتُنِي أُتِيتُ بِمَفَاتِيحِ
خَزَائِنِ الأَرْضِ، فَوُضِعَتْ فِي يَدِي.
আমি `জাওয়ামিউল কালিম’
(ব্যাপক অর্থবোধক সংক্ষিপ্ত বাক্য) সহ প্রেরিত হয়েছি এবং আমাকে প্রভাব দ্বারা সাহায্য করা
হয়েছে। একবার আমি ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে পেলাম, পৃথিবীর ভাণ্ডারসমুহের চাবি আমাকে
দান করা হয়েছে এবং তা আমার হাতে রেখে দেওয়া হয়েছে। (বুখারী)
তিনি এসেছেন শিক্ষক রূপেঃ
আল্লাহর প্রেরিত এই মহামানব
মানুষের প্রয়োজনীয় সকল বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করেছেন শিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে। সেই বিষয় হোক দুনিয়াতে চাল চলনে বলনে কিংবা আধ্যাত্মিকতায়। সকল বিষয়ে তিনি ছিলেন মানবতার মহান শিক্ষক।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর
রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সা. তাঁর কোন এক হুজরা থেকে বের হয়ে এসে
মসজিদে প্রবেশ করেন। তখন সেখানে দুটি সমাবেশ
চলছিল। একটি সমাবেশে লোকজন কুরআন তিলাওয়াত ও আল্লাহর যিকরে
মশগুল ছিল এবং অপর সমাবেশে লোকজন শিক্ষাগ্রহণ ও শিক্ষাদানে রত ছিল। নবী সা. বলেনঃ
كُلٌّ عَلَى خَيْرٍ هَؤُلاَءِ
يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ وَيَدْعُونَ اللَّهَ فَإِنْ شَاءَ أَعْطَاهُمْ وَإِنْ شَاءَ
مَنَعَهُمْ وَهَؤُلاَءِ يَتَعَلَّمُونَ وَيُعَلِّمُونَ وَإِنَّمَا بُعِثْتُ مُعَلِّمًا.
فَجَلَسَ مَعَهُمْ .
সকলেই কল্যাণকর তৎপরতায় রত
আছে। এই সমাবেশের লোকজন কুরআন তিলাওয়াত করছে এবং আল্লাহর
নিকট দুআ‘ করছে। তিনি চাইলে তাদের দান করতেও পারেন আবার চাইলে নাও
দিতে পারেন। অন্যদিকে এই সমাবেশের লোকেরা শিক্ষাগ্রহণ ও
শিক্ষাদানে রত আছে। আর আমি শিক্ষক হিসাবেই প্রেরিত হয়েছি। অতঃপর তিনি এদের সমাবেশে
বসলেন। (ইবনু মাযাহ)
তিনি এসেছেন রহমত হয়েঃ
যেমন তিনি শিক্ষক হয়ে প্রেরিত হয়েছেন, তেমনি
তার চারিত্রিক বৈশিষ্টের মাঝে রয়েছে দয়া, ভালবাসা, মহানুভবতা, আদর, সোহাগ। তিনি মানুষকে ভালবেসেছেন শিক্ষকের ন্যায় পিতার
মতো স্নেহ দিয়ে। তিনি ছিলেন দয়ার
সাগর। তার দয়া আর মাহানুভবতা
ছিলনা কেবল মুমিন আর মুসলমানদের জন্য। বরং তার দয়া বিস্তুত ছিল তামাম বিশ্বের সকল সৃষ্টির জন্য।
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, বলা হলো, ইয়া
রাসূলাল্লাহ! মুশরিকদের বদদোয়া করুন। তিনি বলেনঃ
إِنِّي لَمْ أُبْعَثْ لَعَّانًا،
وَلَكِنْ بُعِثْتُ رَحْمَةً.
আমি অভিশাপকারীরূপে প্রেরিত হইনি। বরং আমি রহমত রূপে প্রেরিত হয়েছি। (মুসলিম)।
হযরত আবু হুরায়রা রা.
বর্ণিত আরেক হাদীসে রাসূল সা. বলেছেনঃ
إِنَّمَا أَنَا رَحْمَةٌ مُهْدَاةٌ
নিশ্চয় আমি আল্লাহ তা’আলার
পাঠানো অনুগ্রহ। (বায়হাকী)
কুরআনে হাকীমের সূরা আল
আম্বিয়ার ১০৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ
وَمَآ أَرْسَلْنَاكَ إِلاَّ
رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
হে মুহাম্মাদ! আমি যে তোমাকে
পাঠিয়েছি, এটা আসলে দুনিয়াবাসীদের জন্য আমার রহমত।
তিনি এসেছেন কিয়ামতের কাছাকাছি সময়েঃ
দুনিয়ায় আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়াতায়ালা যত নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন, তার মধ্যে সর্বশেষ যে রাসূল প্রেরণ করা
হয়েছে, তার নাম নবী মুহাম্মদ সা.। কিয়ামত অবধি তাঁর পর আর
কোন নবী কিংবা রাসূল আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত হবে না।
সাহল ইবনু সা’দ রা. থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন আমি নবী সা. এর মধ্যমা ও শাহাদাত আঙ্গুলী
দ্বারা ইশারা করে এ কথা বলতে শুনেছি যে,
بُعِثْتُ أَنَا وَالسَّاعَةُ
هَكَذَا.
আমি ও কিয়ামত প্রেরিত হয়েছি এ দুটির মত (কাছাকাছি)। (মুসলিম)
তিনি এসেছেন নিরক্ষর উম্মাহর নিকটঃ
আমাদের নিকট প্রেরিত
আল্লাহর রাসূলের অন্যতম মু’জিজা বা অলৌকিতা হলো, তিনি কোন প্রতিষ্ঠানে বা
গৃহশিক্ষকের নিকট সনাতন শিক্ষা গ্রহণ করেননি। যেহেতু তিনি শিক্ষক হয়ে প্রেরিত হয়েছে, তাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা তাকে
দুনিয়াতে কোন মানুষের ছাত্র বানাননি। বিধায় তিনি যেমন পড়তে
জানতেন না, তেমনি তিনি লিখতেও জানতেন না। সহজ বাংলায় যাকে বলা হয়
নিরক্ষর। একই ভাবে তিনি যাদের কাছে প্রেরিত হয়েছিলেন, তারাও
ছিল নিরক্ষর। যারা কোন ধরণের লেখাপড়া জানতো না। অথচ তার প্রতি নাযিল করা হয়েছে এমন কিতাব, যার রচনাশৈলী যে কোন সাহিত্যের
তুলনায় অতি উচ্চাঙ্গের। তার প্রতি প্রেরিত কিতাবের রচনাশৈলী
কিতাব বারবার বিশ্ববাসীকে চ্যালেঞ্জ করেছে তার ন্যায় একটি আয়াত বা সূরা রচনা করতে। কিন্তু আজ অবধি সেই চ্যালেঞ্জ কেউ গ্রহণ করেনি।
হযরত তউবাই ইবনু কা’ব রা.
হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সা. জিবরীল আ.এর সাক্ষাৎ পেয়ে বললেনঃ
يَا جِبْرِيلُ إِنِّي بُعِثْتُ
إِلَى أُمَّةٍ أُمِّيِّينَ مِنْهُمُ الْعَجُوزُ وَالشَّيْخُ الْكَبِيرُ وَالْغُلاَمُ
وَالْجَارِيَةُ وَالرَّجُلُ الَّذِي لَمْ يَقْرَأْ كِتَابًا قَطُّ. قَالَ يَا مُحَمَّدُ
إِنَّ الْقُرْآنَ أُنْزِلَ عَلَى سَبْعَةِ أَحْرُفٍ .
হে জিবরীল! আমি একটি
নিরক্ষর উন্মাতের নিকট প্রেরিত হয়েছি। এদের মধ্যে প্রবীণ, বৃদ্ধ,
কিশোর ও কিশোরী আছে এবং এমন লোকও আছে যে কখনো কোন লেখাপড়াই করেনি। তিনি বললেনঃ হে মুহাম্মাদ! কুরআন তো সাত রীতিতে অবতীর্ণ হয়েছে। (তিরমিযি)
তিনি এসেছেন তরবারী নিয়েঃ
রাসূল শুধু শিক্ষক বা
রাহমাত হয়ে কিংবা আধ্যাত্মিকতার শিক্ষা দিতে আসেননি। বরং তিনি যে সত্য দ্বীন নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন, তাকে সমাজে বাস্তবায়িত করতে
এসেছেন। আর সেই বাস্তবায়নের কাজে যখন কায়েমী স্বার্থবাদীরা
বাঁধার সৃষ্টি করবে, তখন তাদের সাথে সংঘাত অনিবার্য। এমতাবস্তায় তিনি কি তার মিশন বন্ধ করে দেবেন? না! বরং সকল বাঁধার বৃন্দাচল
অতিক্রম করে তিনি যাতে তার মিশনকে সফলতার মনজিলে পৌছাতে পারেন, সেজন্য প্রয়োজনে
তিনি শক্তি প্রয়োগ করবেন। এজন্য তিনি সত্য দিন, আধ্যাত্মিকতা আর
রাহমাতের সাথে সাথে তরবারি সহ প্রেরিত হয়েছেন।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার
রা. কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সা. বলেছেন,
بُعِثْتُ بِالسَّيْفِ حَتَّى
يُعْبَدَ اللهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَجُعِلَ رِزْقِي تَحْتَ ظِلِّ رُمْحِي وَجُعِلَ الذِّلَّةُ
وَالصَّغَارُ عَلَى مَنْ خَالَفَ أَمْرِي وَمَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
আমি তরবারি-সহ প্রেরিত হয়েছি, যাতে
শরীকবিহীনভাবে আল্লাহর ইবাদত হয়। আমার জীবিকা রাখা হয়েছে
আমার বর্শার ছায়াতলে। অপমান ও লাঞ্ছনা রাখা হয়েছে আমার আদেশের
বিরোধীদের জন্য। আর যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদেরই দলভুক্ত।
(আহমাদ)
তিনি এসেছেন উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা দিতেঃ
নৈতিকতা ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট মানুষকে পৌছায়
উন্নতির চরম শিখরে। তরবারি সহ রাসূল
প্রেরিত হলেও তার সফলতার মূল চাবিকাঠি হলো তার উত্তম চরিত্র। মানুষের মাঝে যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট রয়েছে,
তাকে লালন করে তার পূর্ণতা প্রদানের মাধ্যমে বিশ্বমানবতাকে একদল চরিত্রবান ভালমানুষের
নেতৃত্ব উপহার দিতে তিনি এসেছেন।
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে
বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সা. বলেনঃ
إِنَّمَا بُعِثْتُ لِأُتَمِّمَ
صَالِحَ الأَخْلاقِ.
সর্বোত্তম স্বভাব-চরিত্রের
পূর্ণতা দান করার জন্যই আমি প্রেরিত হয়েছি। (আবু দাউদ, আল আদাবুল মুফরাদ)
তিনি প্রেরিত হয়েছেন সহজ করার জন্যঃ
রাসূল সা. সব সময় সহজ করার পক্ষপাতি ছিলেন। যখনই তার সামনে দুইটি বস্তু অপসন হিসাবে পেশ করা হতো, তখন তিনি সহজটা গ্রহণ করতেন। কারণ তিনি সহজ করার জন্যই প্রেরিত হয়েছেন।
হযরত আবু হুরায়রাহ্ রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক বেদুঈন লোক মসজিদে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব
করল। উপস্থিত লোকজন তাকে পাকড়াও করতে উদ্যত হলে
রাসূলুল্লাহ সা. তাদের বললেনঃ
دَعُوهُ وَأَهْرِيقُوا عَلَى
بَوْلِهِ دَلْوًا مِنْ مَاءٍ، فَإِنَّمَا بُعِثْتُمْ مُيَسِّرِينَ وَلَمْ تُبْعَثُوا
مُعَسِّرِينَ .
তাকে ছেড়ে দাও এবং তার
প্রস্রাবের উপর এক বালতি পানি ঢেলে দাও।
তোমাদেরকে নরম ব্যবহার করার জন্যে পাঠানো হয়েছে, কঠোর
ব্যবহারের জন্যে নয়।
(নাসায়ী)
তিনি প্রেরিত হয়েছেন পরীক্ষার জন্যঃ
হাদীসে কুদসীর বিবরণ অনুযায়ী আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়াতায়ালা তার রাসূলকে পরীক্ষা করার জন্য এবং রাসূলের মাধ্যমে অন্য সকলকে পরীক্ষা করার
উদ্দেশ্যে রাসূলকে দুনিয়াতে প্রেরণ করা হয়েছে। দীর্ঘ একটি হাদীসের একাংশ এমন, যা ইমাম মুসলিম সংকলন করেছেন। হাদীসটি হযরত ইয়ায ইবনু হিমার আল মুজাশিঈ রা.
বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সা. ভাষণরত অবস্থায় বললেনঃ শোন, আমার
প্রতিপালক আজ আমাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা থেকে তোমাদেরকে এমন বিষয়ের শিক্ষা দেয়ার
জন্য তিনি আমাকে আদেশ করেছেন, যে বিষয়ে তোমরা অজ্ঞ। তা হল এই যে, আমি আমার
বান্দাদেরকে যে ধন-সম্পদ দিয়েছি তা পরিপূর্ণরূপে হালাল। আমি আমার সমস্ত বান্দাদেরকে একনিষ্ঠ (মুসলিম) হিসাবে
সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাদের নিকট শয়তান এসে তাদেরকে দ্বীন
হতে বিচ্যুত করে দেয়। আমি যে সমস্ত জিনিস
তাদের জন্য হালাল করেছিলাম সে তা হারাম করে দেয়। অধিকন্তু সে তাদেরকে আমার সাথে এমন বিষয়ে শিরক করার জন্য নির্দেশ দিল, যে বিষয়ে আমি কোন ফরমান পাঠাইনি। আল্লাহ তাআলা পৃথিবীরবাসীদের প্রতি নযর করে কিতাবীদের কতিপয়
লোক ব্যতীত আরব-আজম সকলকে অপছন্দ করেছেন। অতঃপর
তিনি বললেনঃ
إِنَّمَا بَعَثْتُكَ لأَبْتَلِيَكَ
وَأَبْتَلِيَ بِكَ وَأَنْزَلْتُ عَلَيْكَ كِتَابًا لاَ يَغْسِلُهُ الْمَاءُ تَقْرَؤُهُ
نَائِمًا وَيَقْظَانَ.........
তোমাকে পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে
এবং তোমার দ্বারা অন্যদেরকে পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে আমি তোমাকে দুনিয়াতে প্রেরণ
করেছি এবং তোমার প্রতি আমি এমন কিতাব অবতীর্ণ করেছি যা পানি কখনো
ধুয়ে-মুছে ফেলতে পারবে না। ঘুমন্ত
ও জাগ্রত অবস্থায় তুমি তা পাঠ করবে। ......
তিনি এসেছেন মুর্তি ভাঙতে এবং সম্পর্ক গড়তেঃ
মুসলিম শরীফের একটি হাদীসে হযরত আমর ইবনে আবাসা
আস সুলামী রা. এর ইসলাম গ্রহণের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে তাঁর নিজের ভাষায়। দীর্ঘ হাদীসে
এক স্থানে তিনি রাসূল সা.কে প্রশ্ন করেনঃ আপনি কে? তিনি বলেনঃ আমি একজন নবী। আমর রা.
আবার প্রশ্ন করেনঃ নবী কি? তিনি বলেনঃ আল্লাহ আমাকে পাঠিয়েছেন। পূণরায় আবাসা রা. প্রশ্ন
করেনঃ তিনি আপনাকে কোন জিনিস দিয়ে পাঠিয়েছেন। উত্তরে আল্লাহর রাসূল সা. বলেনঃ
أَرْسَلَنِي بِصِلَةِ
الأَرْحَامِ وَكَسْرِ الأَوْثَانِ وَأَنْ يُوَحَّدَ اللَّهُ لاَ يُشْرَكُ بِهِ
شَىْءٌ
তিনি আমাকে আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুন্ন
রাখতে, মূর্তিকে ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ করতে, আল্লাহ
এক বলে ঘোষণা করতে এবং তার সাথে কোন কিছু শারীক না করতে পাঠিয়েছেন।
তিনি প্রেরিত হয়েছেন নবী রাসূল প্রেরণের ধারাবাহিকতায়ঃ
নবী মুহাম্মদ সা. আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত হয়েছেন। বিষয়টি পৃথিবীবাসীর জন্য নতুন কোন বিষয় নয়। বরং মানুষের হেদায়াতের পথ দেখানোর জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জাতির কাছে ধারাবাহিক ভাবে অসংখ্য নবী ও রাসূলদের প্রেরণের ধারাবাহিকতায়ই
নবী মুহাম্মদ সা. এর প্রেরণ। সকল নবী
প্রেরণের ধারাবাহিকতায় তিনি হচ্ছেন শেষ নবী বা রাসূল। যার বিবরণ আমরা খুঁজে পাই কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে। যেমনঃ
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ
فِي شِيَعِ ٱلأَوَّلِينَ
“হে মুহাম্মাদ! তোমার পূর্বে আমি
অতীতের অনেক সম্প্রদায়ের মধ্যে রাসূল পাঠিয়েছিলাম।” (আল
হিজরঃ ১০)
تَٱللَّهِ لَقَدْ أَرْسَلْنَآ
إِلَىٰ أُمَمٍ مِّن قَبْلِكَ فَزَيَّنَ لَهُمُ ٱلشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ فَهُوَ وَلِيُّهُمُ
ٱلْيَوْمَ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
“আল্লাহর কসম, হে মুহাম্মাদ! তোমার আগেও বহু জাতির মধ্যে আমি রাসূল পাঠিয়েছি। (এর আগেও এ রকমই হতো) শয়তান তাদের খারাপ কার্যকলাপকে তাদের
সামনে সুশোভন করে দেখিয়েছে (এবং রাসূলদের কথা তারা মানেনি)। সেই শয়তানই আজ এদেরও অভিভাবক সেজে বসে আছে এবং এরা মর্মন্তুদ শাস্তির উপযুক্ত
হচ্ছে।” (আন নাহলঃ ৬৩)
ثُمَّ بَعَثْنَا مِن بَعْدِهِم
مُّوسَىٰ بِآيَٰتِنَآ إِلَىٰ فِرْعَوْنَ وَمَلإِيْهِ فَظَلَمُواْ بِهَا فَٱنْظُرْ كَيْفَ
كَانَ عَٰقِبَةُ ٱلْمُفْسِدِينَ
“তারপর এ জাতিগুলোর পর (যাদের কথা ওপরে বলা হয়েছে) আমার নিদর্শনসমূহ
সহকারে মূসাকে পাঠাই ফেরাউন ও তার জাতির প্রধানদের কাছে। কিন্তু তারাও আমার নিদর্শনসমূহের উপর জুলুম করে। ফলতঃ এ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কি হয়েছিল একবার
দেখো।” (আল আ’রাফঃ ১০৩)
ثُمَّ بَعَثْنَا مِن بَعْدِهِ
رُسُلاً إِلَىٰ قَوْمِهِمْ فَجَآءُوهُمْ بِٱلْبَيِّنَٰتِ فَمَا كَانُواْ لِيُؤْمِنُواْ
بِمَا كَذَّبُواْ بِهِ مِن قَبْلُ كَذَٰلِكَ نَطْبَعُ عَلَىٰ قُلوبِ ٱلْمُعْتَدِينَ
“তারপর নূহের পর আমি বিভিন্ন
পয়গম্বরকে তাদের কওমের কাছে পাঠাই এবং তারা সুষ্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে তাদের কাছে আসে। কিন্তু যে জিনিসকে তারা আগেই মিথ্যা বলেছিল তাকে আর মেনে
নিতে প্রস্তুত হলো না। এভাবে আমি সীমা
অতিক্রমকারীদের দিলে মোহর মেরে দেই।” (ইউনুসঃ ৭৪)
ثُمَّ بَعَثْنَا مِن بَعْدِهِمْ
مُّوسَىٰ وَهَـٰرُونَ إِلَىٰ فِرْعَوْنَ وَمَلإِيْهِ بِآيَـٰتِنَا فَٱسْتَكْبَرُواْ
وَكَانُواْ قَوْماً مُّجْرِمِينَ
“তারপর মুসা ও হারুনকে আমি
তাদের পরে আমার নিদর্শনসহ ফেরাউন ও তার সরদারদের কাছে পাঠাই। কিন্তু তারা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের অহংকারে মত্ত হয় এবং তারা ছিল অপরাধী
সম্প্রদায়।” (ইউনুসঃ ৭৫)
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ
أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ ٱعْبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجْتَنِبُواْ ٱلْطَّاغُوتَ فَمِنْهُم
مَّنْ هَدَى ٱللَّهُ وَمِنْهُمْ مَّنْ حَقَّتْ عَلَيْهِ ٱلضَّلالَةُ فَسِيرُواْ فِي
ٱلأَرْضِ فَٱنظُرُواْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ ٱلْمُكَذِّبِينَ
“প্রত্যেক জাতির মধ্যে আমি একজন
রাসূল পাঠিয়েছি এবং তার মাধ্যমে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি যে, “আল্লাহর বন্দেগী করো এবং তাগূতের বন্দেগী পরিহার করো।” এরপর তাদের মধ্য থেকে কাউকে আল্লাহ
সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন এবং কারোর উপর পথভ্রষ্টতা চেপে বসেছে। তারপর পৃথিবীর বুকে একটু ঘোরাফেরা করে দেখে নাও যারা
সত্যকে মিথ্যা বলেছে তাদের পরিণাম কি হয়েছে।” (আন
নাহলঃ ৩৬)
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحاً
وَإِبْرَاهِيمَ وَجَعَلْنَا فِي ذُرِّيَّتِهِمَا ٱلنُّبُوَّةَ وَٱلْكِتَابَ فَمِنْهُمْ
مُّهْتَدٍ وَكَثِيرٌ مِّنْهُمْ فَاسِقُونَ
“আমি নূহকে ও ইব্রাহীমকে পাঠিয়ে ছিলাম এবং তাদের উভয়ের বংশধরের মধ্যে নবুওয়াত ও
কিতাবের প্রচলন করেছিলাম। তারপর
তাদের বংশধরদের কেউ কেউ হিদায়াত গ্রহণ করেছিল এবং অনেকেই ফাসেক হয়ে গিয়েছিল।” (আল হাদীদঃ ২৬)
إِنَّآ أَرْسَلْنَا نُوحاً
إِلَىٰ قَوْمِهِ أَنْ أَنذِرْ قَوْمَكَ مِن قَبْلِ أَن يَأْتِيَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
“আমি নূহকে তাঁর জাতির কাছে
পাঠিয়েছিলাম (এ নির্দেশ দিয়ে) যে, একটি কষ্টদায়ক আযাব আসার
আগেই তুমি তাদেরকে সাবধান করে দাও।” (নুহঃ ০১)
إِنَّآ أَرْسَلْنَآ إِلَيْكُمْ
رَسُولاً شَاهِداً عَلَيْكُمْ كَمَآ أَرْسَلْنَآ إِلَىٰ فِرْعَوْنَ رَسُولاً
“আমি তোমাদের নিকট একজন রাসূল পাঠিয়েছি তোমাদের জন্য সাক্ষী স্বরূপ যেমন ফেরাউনের নিকট একজন রাসূল পাঠিয়ে ছিলাম।” (আল
মুজ্জাম্মিলঃ ১৫)
وَلَقَدْ أَخَذَ ٱللَّهُ مِيثَاقَ
بَنِيۤ إِسْرَآئِيلَ وَبَعَثْنَا مِنهُمُ ٱثْنَيْ عَشَرَ نَقِيباً وَقَالَ ٱللَّهُ
إِنِّي مَعَكُمْ لَئِنْ أَقَمْتُمُ ٱلصَّلاَةَ وَآتَيْتُمُ ٱلزَّكَاةَ وَآمَنتُمْ بِرُسُلِي
وَعَزَّرْتُمُوهُمْ وَأَقْرَضْتُمُ ٱللَّهَ قَرْضاً حَسَناً لأُكَفِّرَنَّ عَنْكُمْ
سَيِّئَاتِكُمْ وَلأُدْخِلَنَّكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا ٱلأَنْهَارُ فَمَن
كَفَرَ بَعْدَ ذٰلِكَ مِنْكُمْ فَقَدْ ضَلَّ سَوَآءَ ٱلسَّبِيلِ
“আল্লাহ বনী ইসরাঈলদের থেকে
পাকাপোক্ত অংগীকার নিয়েছিলেন এবং তাদের মধ্যে বারোজন ‘নকীব’ নিযুক্ত করেছিলেন। আর
তিনি তাদেরকে বলেছিলেনঃ আমি তোমাদের সাথে আছি। যদি তোমরা নামায কায়েম করো, যাকাত
দাও, আমার রাসূলদেরকে মানো ও তাদেরকে সাহায্য করো এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দিতে থাকো, তাহলে
নিশ্চিত বিশ্বাস করো আমি তোমাদের থেকে তোমাদের পাপগুলো মোচন করে দেবো এবং তোমাদের এমন সব বাগানের মধ্যে প্রবেশ করাবো যার তলদেশ দিয়ে ঝরণাধারা
প্রাবাহিত হবে। কিন্তু এরপর তোমাদের
মধ্য থেকে যে ব্যক্তি কুফরী নীতি অবলম্বন করবে, সে আসলে
সাওয়া-উস-সাবীল তথা সরল সঠিক পথ হারিয়ে ফেলেছে।” (আল মায়িদাহঃ ১২)
وَكَمْ أَرْسَلْنَا مِن نَّبِيٍّ
فِي ٱلأَوَّلِينَ
“পূর্ববর্তী জাতিসমূহের মধ্যেও
আমি বার বার নবী পাঠিয়েছি।” (আয যুখরুফঃ ০৬)
وَكَذَلِكَ مَآ أَرْسَلْنَا
مِن قَبْلِكَ فِي قَرْيَةٍ مِّن نَّذِيرٍ إِلاَّ قَالَ مُتْرَفُوهَآ إِنَّا وَجَدْنَآ
ءَابَآءَنَا عَلَىٰ أُمَّةٍ وَإِنَّا عَلَىٰ ءَاثَارِهِم مُّقْتَدُونَ
“এভাবে তোমার পূর্বে আমি যে
জনপদেই কোন সতর্ককারীকে পাঠিয়েছি, তাদের স্বচ্ছল লোকেরা একথাই
বলেছে, আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে একটি পন্থার অনুসরণ করতে
দেখেছি। আমরাও তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করছি। (আয যুখরুফঃ ২৩)
قَٰلَ أَوَلَوْ جِئْتُكُمْ
بِأَهْدَىٰ مِمَّا وَجَدتُّمْ عَلَيْهِ آبَآءَكُمْ قَالُوۤاْ إِنَّا بِمَآ أُرْسِلْتُمْ
بِهِ كَافِرُونَ
“প্রত্যেক নবীই তাদের বলেছেন, তোমরা তোমাদের বাপ-দাদাদের যে পথে চলতে দেখেছো আমি যদি তোমাদের তার চেয়ে
অধিক সঠিক রাস্তা বলে দেই তাহলেও কি তোমরা সেই পথেই চলতে থাকবে? তারা সব রাসূলকে এই জবাবই দিয়েছে, যে দ্বীনের দিকে
আহবান জানানোর জন্য তুমি প্রেরিত হয়েছো, আমরা তা অস্বীকার
করি।” (আয যুখরুফঃ ২৪)
وَسْـَٔلْ مَنْ أَرْسَلْنَا
مِن قَبْلِكَ مِن رُّسُلِنَآ أَجَعَلْنَا مِن دُونِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ءَالِهَةًۭ يُعْبَدُونَ
“তোমার পূর্বে আমি যত রাসূল
পাঠিয়েছিলাম তাঁদের সবাইকে জিজ্ঞেস করে দেখো, আমি উপাসনার
জন্য রাহমান খোদা ছাড়া আর কোন উপাস্য নির্দিষ্ট করেছিলাম কিনা?” (আয যুখরুফঃ ৪৫)
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مُوسَىٰ
بِآيَـٰتِنَآ إِلَىٰ فِرْعَوْنَ وَمَلإِيْهِ فَقَالَ إِنِّي رَسُولُ رَبِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ
“আমি মূসাকে আমার নিদর্শনসমূহসহ ফেরাউন ও তার
সভাসদদের কাছে পাঠিয়েছিলাম। সে গিয়ে
তাদের বলেছিলোঃ আমি বিশ্ব-জাহানের রবের রাসূল।” (আয
যুখরুফঃ ৪৫)
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلاً
مِّن قَبْلِكَ مِنْهُم مَّن قَصَصْنَا عَلَيْكَ وَمِنْهُمْ مَّن لَّمْ نَقْصُصْ عَلَيْكَ
وَمَا كَانَ لِرَسُولٍ أَن يَأْتِيَ بِآيَةٍ إِلاَّ بِإِذْنِ ٱللَّهِ فَإِذَا جَـآءَ
أَمْرُ ٱللَّهِ قُضِيَ بِٱلْحَقِّ وَخَسِرَ هُنَالِكَ ٱلْمُبْطِلُونَ
“হে নবী, তোমার আগে আমি বহু রাসূল পাঠিয়েছিলাম। আমি তাদের অনেকের কাহিনী তোমাকে বলেছি আবার অনেকের কাহিনী তোমাকে বলিনি। আল্লাহর হুকুম ছাড়া কোন নিদর্শন দেখানোর ক্ষমতা কোন
রাসূলেরই ছিল না। অতঃপর যখন আল্লাহর হুকুম এসেছে তখন
ন্যায়সঙ্গতভাবে ফায়সালা করা হয়েছে এবং ভ্রান্ত কাজে লিপ্ত ব্যক্তিরা ক্ষতিগ্রস্ত
হয়েছে।” (আল মু’মিন বা গাফিরঃ ৭৮)
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مُوسَىٰ
بِآيَاتِنَا وَسُلْطَانٍ مُّبِينٍ
“আমি মূসাকে আমার নিদর্শনসমূহ এবং আমার পক্ষ থেকে আদিষ্ট
হওয়ার সুস্পষ্ট প্রমাণ সহ পাঠিয়েছিলাম।” (আল মু’মিন বা গাফিরঃ ২৩)
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ
رُسُلاً إِلَىٰ قَوْمِهِمْ فَجَآءُوهُم بِٱلْبَيِّنَاتِ فَٱنتَقَمْنَا مِنَ ٱلَّذِينَ
أَجْرَمُواْ وَكَانَ حَقّاً عَلَيْنَا نَصْرُ ٱلْمُؤْمِنينَ
“আমি তোমার পূর্বে রাসূলদেরকে
তাদের সম্প্রদায়ের কাছে পাঠাই এবং তারা তাদের কাছে আসে উজ্জ্বল নিদর্শনাবলী নিয়ে। তারপর যারা অপরাধ করে তাদের থেকে আমি প্রতিশোধ নিই আর
মুমিনদেরকে সাহায্য করা ছিল আমার দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত।” (আর
রূমঃ ৪৭)
وَلَوْ أَنَّآ أَهْلَكْنَاهُمْ
بِعَذَابٍ مِّن قَبْلِهِ لَقَالُواْ رَبَّنَا لَوْلاۤ أَرْسَلْتَ إِلَيْنَا رَسُولاً
فَنَتَّبِعَ آيَاتِكَ مِن قَبْلِ أَن نَّذِلَّ وَنَخْزَىٰ
“যদি আমি তার আসার আগে এদেরকে
কোন আযাব দিয়ে ধ্বংস করে দিতাম তাহলে আবার এরাই বলতো, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের কাছে কোন রাসূল পাঠাওনি কেন, যাতে আমরা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবার আগেই তোমার আয়াত মেনে চলতাম?” (ত্বা-হাঃ ১৩৪)
وَمَآ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ
مِن رَّسُولٍ إِلاَّ نُوحِيۤ إِلَيْهِ أَنَّهُ لاۤ إِلَـٰهَ إِلاَّ أَنَاْ فَٱعْبُدُونِ
“আমি তোমার পূর্বে যে রাসূলই
পাঠিয়েছি তার প্রতি এ অহী করেছি যে, আমি ছাড়া আর
কোনো ইলাহ নেই কাজেই তোমরা আমারই বন্দেগী করো।” (আল আম্বিয়াঃ ২৫)
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحاً
إِلَىٰ قَوْمِهِ فَقَالَ يٰقَوْمِ ٱعْبُدُواْ ٱللَّهَ مَا لَكُمْ مِّنْ إِلَـٰهٍ غَيْرُهُ
أَفَلاَ تَتَّقُونَ
“আমি নূহকে পাঠালাম তার সম্প্রদায়ের
কাছে। সে বললো, হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! আল্লাহর
বন্দেগী করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন মাবুদ নেই, তোমরা কি ভয় করো না?” (আল মু’মিনুনঃ ২৩)
فَأَرْسَلْنَا فِيهِمْ رَسُولاً
مِّنْهُمْ أَنِ ٱعْبُدُواْ ٱللَّهَ مَا لَكُمْ مِّنْ إِلَـٰهٍ غَيْرُهُ أَفَلاَ تَتَّقُونَ
“তারপর তাদের মধ্যে স্বয়ং তাদের
সম্প্রদায়ের একজন রাসূল পাঠালাম (যে তাদেরকে দাওয়াত দিল এ মর্মে যে,) আল্লাহর বন্দেগী করো, তোমাদের জন্য তিনি ছাড়া আর কোন
মাবূদ নেই, তোমরা কি ভয় করো না?” (আল মু’মিনুনঃ ৩২)
ثُمَّ أَرْسَلْنَا مُوسَىٰ
وَأَخَاهُ هَارُونَ بِآيَاتِنَا وَسُلْطَانٍ مُّبِينٍ
“তারপর আমি মূসা ও তার ভাই
হারুনকে নিজের নিদর্শনাবলী ও সুস্পষ্ট প্রমাণ সহকারে ফেরাউন ও
তার রাজ পারিষদদের কাছে পাঠালাম।” (আল মু’মিনুনঃ
৪৫)
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَآ إِلَىٰ
ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحاً أَنِ ٱعْبُدُواْ ٱللَّهَ فَإِذَا هُمْ فَرِيقَانِ يَخْتَصِمُونَ
“আর আমি সামূদ জাতির কাছে তাদের ভাই সালেহকে (এ পয়গাম সহকারে) পাঠালাম যে, আল্লাহর বন্দেগী করো এমন সময় সহসা তারা দু’টি বিবাদমান দলে বিভক্ত হয়ে
গেলো।” (আন নামলঃ ৪৫)
وَلَوْلاۤ أَن تُصِيبَهُم مُّصِيبَةٌ
بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيهِمْ فَيَقُولُواْ رَبَّنَا لَوْلاۤ أَرْسَلْتَ إِلَيْنَا رَسُولاً
فَنَتَّبِعَ آيَاتِكَ وَنَكُونَ مِنَ ٱلْمُؤْمِنِينَ
“(আর আমি এজন্য করেছি যাতে) এমনটি যেন না হয় যে, তাদের নিজেদের কৃতকর্মের বদৌলতে কোন বিপদ তাদের উপর এসে যায়, আর তারা বলে, হে আমাদের রব! তুমি কেন আমাদের কাছে
কোন রাসূল পাঠাওনি? তাহলে তো আমরা তোমার আয়াত মেনে চলতাম
এবং ঈমানদারদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।” (আল
ক্বাসাসঃ ৪৭)
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحاً
إِلَىٰ قَوْمِهِ فَلَبِثَ فِيهِمْ أَلْفَ سَنَةٍ إِلاَّ خَمْسِينَ عَاماً فَأَخَذَهُمُ
ٱلطُّوفَانُ وَهُمْ ظَالِمُونَ
“আমি নূহকে তাদের সম্প্রদায়ের
কাছে পাঠাই এবং সে তাদের মধ্যে থাকে পঞ্চাশ কম এক হাজার বছর। শেষ
পর্যন্ত তুফান তাদেরকে ঘিরে ফেলে এমন অবস্থায় যখন তারা জালেম ছিল।” (আল আনকাবুতঃ ১৪)
তিনির সাথে যুগের ধারাবাহিকতায় বিরোধীতা করা হয়েছেঃ
পৃথিবীর ইতিহাস বলে যারা নিজের পরিচয়ের সাথে প্রতারণা
করেছে এবং আল্লাহকে মালিক বা জীবন পদ্ধতি দাতা মনে না করেই নিজেই নিজের জন্য জীবন পদ্ধতি
বানিয়ে নিয়েছে, তখন রাসূলগন তাদেরকে সত্য ও সুন্দরের বাণী শুনালেও তারা তাদেরকে গ্রহণ
করেনি। বরং বিভিন্ন ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
لَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحاً
إِلَىٰ قَوْمِهِ فَقَالَ يَاقَوْمِ ٱعْبُدُواْ ٱللَّهَ مَا لَكُمْ مِّنْ إِلَـٰهٍ غَيْرُهُ
إِنِّيۤ أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ
“নুহকে আমি তার সম্প্রদায়ের কাছে
পাঠাই। সে বলেঃ হে আমার স্বগোত্রীয় ভাইয়েরা! আল্লাহর ইবাদত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর
কোন ইলাহ নেই। আমি
তোমাদের জন্য একটি ভয়াবহ দিনের আযাবের আশংকা করছি।” (আল আ’রাফঃ ৫৯)
وَمَا مَنَعَ النَّاسَ أَن
يُؤْمِنُواْ إِذْ جَاءهُمُ الْهُدَى إِلاَّ أَن قَالُواْ أَبَعَثَ اللّهُ بَشَراً رَّسُولاً
“লোকদের কাছে যখনই কোনো
পথনির্দেশ আসে তখন তাদের একটা কথাই তাদের ঈমান আনার পথ রুদ্ধ করে দেয়। কথাটা এই যে, আল্লাহ কি
মানুষকে রাসূল বানিয়ে পাঠিয়েছেন?” (বনি ইসরাঈলঃ ৯৪)
وَإِذَا رَأَوْكَ إِن يَتَّخِذُونَكَ
إِلَّا هُزُواً أَهَذَا الَّذِي بَعَثَ اللَّهُ رَسُولاً
“তারা যখন তোমাকে দেখে, তোমাকে বিদ্রূপের পাত্রে পরিণত করে। (বলে), “এ লোককে আল্লাহ রাসূল করে পাঠিয়েছেন?”
(আল ফুরকানঃ ৪১)
মানুষের হাজারো বিদ্রুপ করলেও আল্লাহ তার নিয়মের
উপর থাকেন অটল। কেবলমাত্র তাদেরকে শাস্তি প্রদান
করেন, যারা সীমালংঘন করে।
وَمَا كَانَ رَبُّكَ مُهْلِكَ
الْقُرَى حَتَّى يَبْعَثَ فِي أُمِّهَا رَسُولاً يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِنَا وَمَا
كُنَّا مُهْلِكِي الْقُرَى إِلَّا وَأَهْلُهَا ظَالِمُونَ
“আর তোমার রব জনপদগুলো ধ্বংস
করেন না যতক্ষণ না তাদের কেন্দ্রে একজন রাসূল পাঠান, যে তাদের
কাছে আমার আয়াত শুনায়। আর আমি
জনপদগুলো ধ্বংস করি না যতক্ষণ না সেগুলোর বাসিন্দারা জালেম হয়ে যায়।” (আল কাসাসঃ ৫৯)
لَقَدْ أَخَذْنَا مِيثَاقَ
بَنِيۤ إِسْرَائِيلَ وَأَرْسَلْنَآ إِلَيْهِمْ رُسُلاً كُلَّمَا جَآءَهُمْ رَسُولٌ
بِمَا لاَ تَهْوَىٰ أَنْفُسُهُمْ فَرِيقاً كَذَّبُواْ وَفَرِيقاً يَقْتُلُونَ
“বনী ইসরাঈলের থেকে পাকাপোক্ত
অংগীকার নিয়েছিলাম এবং তাদের কাছে অনেক রাসূল পাঠিয়েছিলাম কিন্তু যখনই তাদের কাছে
কোন রাসূল তাদের প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা বিরোধী কিছু নিয়ে হাযির হয়েছেন তখনই কাউকে
তারা মিথ্যুক বলেছে এবং কাউকে হত্যা করেছে।” (আল
মায়িদাহঃ ৭০)
وَمَآ أَرْسَلْنَا فِي قَرْيَةٍ
مِّن نَّبِيٍّ إِلاَّ أَخَذْنَا أَهْلَهَا بِٱلْبَأْسَآءِ وَٱلضَّرَّآءِ لَعَلَّهُمْ
يَضَّرَّعُونَ
“আমি যখনই কোন জনপদে নবী
পাঠিয়েছি, সেখানকার লোকেদেরকে প্রথমে অর্থকষ্ট
ও দুঃখ-দুর্দশায় সম্মুখীন করেছি, একথা
ভেবে যে, হয়তো তারা বিনম্র হবে ও নতি স্বীকার করবে।” (আল আ’রাফঃ ৯৪)
سُنَّةَ مَن قَدْ أَرْسَلْنَا
قَبْلَكَ مِن رُّسُلِنَا وَلاَ تَجِدُ لِسُنَّتِنَا تَحْوِيلاً
“এটি আমার স্থায়ী কর্মপদ্ধতি। তোমার পূর্বে আমি যেসব রাসূল পাঠিয়েছিলাম তাদের সবার
ব্যাপারে এ কর্মপদ্ধতি আরোপ করেছিলাম। আর
আমার কর্মপদ্ধতিতে তুমি কোনো পরিবর্তন দেখতে পাবে না।” (বনি
ইসরাঈলঃ ৭৭)
وَلَقَدْ جَآءَكُـمْ يُوسُفُ
مِن قَبْلُ بِٱلْبَيِّنَاتِ فَمَا زِلْتُمْ فِي شَكٍّ مِّمَّا جَآءَكُـمْ بِهِ حَتَّىٰ
إِذَا هَلَكَ قُلْتُمْ لَن يَبْعَثَ ٱللَّهُ مِن بَعْدِهِ رَسُولاً كَذَلِكَ يُضِلُّ
ٱللَّهُ مَنْ هُوَ مُسْرِفٌ مُّرْتَابٌ
“এর আগে ইউসুফ তোমাদের কাছে
স্পষ্ট নিদর্শনসূমহ নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু
তোমরা তাঁর আনীত শিক্ষার ব্যাপারে সন্দেহই পোষণ করেছো। পরে তাঁর ইন্তিকাল হলে তোমরা বললেঃ এখন আর আল্লাহ কোন রাসূল পাঠাবেন না। এভাবে আল্লাহ তাআ’লা সেসব
লোকদের গোমরাহীর মধ্যে নিক্ষেপ করেন যারা সীমালংঘনকারী ও সন্দেহ প্রবণ হয়।” (মু’মিন বা গাফিরঃ ৩৪)
وَمَا كَانَ رَبُّكَ مُهْلِكَ
ٱلْقُرَىٰ حَتَّىٰ يَبْعَثَ فِيۤ أُمِّهَا رَسُولاً يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِنَا وَمَا
كُنَّا مُهْلِكِي ٱلْقُرَىٰ إِلاَّ وَأَهْلُهَا ظَالِمُونَ
“আর তোমার রব জনপদগুলো ধ্বংস
করেন না যতক্ষণ না তাদের কেন্দ্রে একজন রাসূল পাঠান, যে তাদের
কাছে আমার আয়াত শুনায়। আর আমি
জনপদগুলো ধ্বংস করি না যতক্ষণ না সেগুলোর বাসিন্দারা জালেম হয়ে যায়।” (আল ক্বাসাসঃ ৫৯)
وَإِذَا رَأَوْكَ إِن يَتَّخِذُونَكَ
إِلاَّ هُزُواً أَهَـٰذَا ٱلَّذِي بَعَثَ ٱللَّهُ رَسُولاً
“তারা যখন তোমাকে দেখে, তোমাকে বিদ্রূপের পাত্রে পরিণত করে। (বলে), এ লোককে আল্লাহ রাসূল করে পাঠিয়েছেন?”
(আল ফুরকানঃ ৪১)
وَمَا مَنَعَ ٱلنَّاسَ أَن
يُؤْمِنُوۤاْ إِذْ جَآءَهُمُ ٱلْهُدَىٰ إِلاَّ أَن قَالُوۤاْ أَبَعَثَ ٱللَّهُ بَشَراً
رَّسُولاً
“লোকদের কাছে যখনই কোনো
পথনির্দেশ আসে তখন তাদের একটা কথাই তাদের ঈমান আনার পথ রুদ্ধ করে দেয়। কথাটা এই যে, “আল্লাহ কি
মানুষকে রাসূল বানিয়ে পাঠিয়েছেন?” (বনি ইসরাঈলঃ ৯৪)
مَّنِ ٱهْتَدَىٰ فَإِنَّمَا
يَهْتَدي لِنَفْسِهِ وَمَن ضَلَّ فَإِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَا وَلاَ تَزِرُ وَازِرَةٌ
وِزْرَ أُخْرَىٰ وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّىٰ نَبْعَثَ رَسُولاً
“যে ব্যক্তিই সৎপথ অবলম্বন করে, তার সৎপথ অবলম্বন তার নিজের জন্যই কল্যাণকর হয়। আর যে ব্যক্তি পথভ্রষ্ট হয়, তার
পথভ্রষ্টতার ধ্বংসকারিতা তার উপরই বর্তায়। কোনো বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না। আর আমি (হক ও বাতিলের পার্থক্য বুঝাবার জন্য) একজন পয়গম্বর না পাঠিয়ে দেয়া
পর্যন্ত কাউকে আযাব দেই না।” (বনি ইসরাঈলঃ ১৫)
إِذْ جَآءَتْهُمُ ٱلرُّسُلُ
مِن بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ أَلاَّ تَعْبُدُوۤاْ إِلاَّ ٱللَّهَ قَالُواْ
لَوْ شَآءَ رَبُّنَا لأَنزَلَ مَلاَئِكَةً فَإِنَّا بِمَآ أُرْسِلْتُمْ بِهِ كَافِرُونَ
“সামনে ও পেছনে সব দিক থেকে যখন
তাদের কাছে আল্লাহর রাসূল এলো এবং তাদেরকে বুঝালো
আল্লাহ ছাড়া আর কারো দাসত্ব করো না তখন তারা বললোঃ আমাদের রব ইচ্ছা করলে ফেরেশতা
পাঠাতে পারতেন। সুতরাং তোমাদেরকে যে
জন্য পাঠানো হয়েছে আমরা তা মানি না।” (ফুসসিলাতঃ
১৪)
إِذْ أَرْسَلْنَآ إِلَيْهِمُ
ٱثْنَيْنِ فَكَذَّبُوهُمَا فَعَزَّزْنَا بِثَالِثٍ فَقَالُوۤاْ إِنَّآ إِلَيْكُمْ مُّرْسَلُونَ
“আমি তাদের কাছে দু’জন রাসূল
পাঠিয়ে ছিলাম এবং তারা দু’জনকেই প্রত্যাখ্যান করেছিল; তখন আমি তৃতীয় জনকে সাহায্যার্থে পাঠিয়ে ছিলাম এবং তাঁরা সবাই বলেছিল,
“তোমাদের কাছে রাসূল হিসেবে আমাদের পাঠানো হয়েছে।” (ইয়াসিনঃ ১৪)
وَمَآ أَرْسَلْنَا فِي قَرْيَةٍ
مِّن نَّذِيرٍ إِلاَّ قَالَ مُتْرَفُوهَآ إِنَّا بِمَآ أُرْسِلْتُمْ بِهِ كَافِرُونَ
“কখনো এমনটি ঘটেনি যে, আমি কোন জনপদে কোন সতর্ককারী পাঠিয়েছি এবং সেই জনপদের সমৃদ্ধিশালী
লোকেরা একথা বলেনি যে, তোমরা যে বক্তব্য নিয়ে এসেছ আমরা তা
মানি না।” (সাবাঃ ৩৪)
بَلْ قَالُوۤاْ أَضْغَاثُ أَحْلاَمٍ
بَلِ ٱفْتَرَاهُ بَلْ هُوَ شَاعِرٌ فَلْيَأْتِنَا بِآيَةٍ كَمَآ أُرْسِلَ ٱلأَوَّلُونَ
“তারা বলে, বরং এসব বিক্ষিপ্ত স্বপ্ন, বরং এসব তার মনগড়া বরং এ
ব্যক্তি কবি। নয়তো সে
আনুক একটি নিদর্শন যেমন পূর্ববর্তীকালের নবীদেরকে পাঠানো হয়েছিল নিদর্শন সহকারে।” (আল আম্বিয়াঃ ০৫)
وَمَآ أَرْسَلْنَا قَبْلَكَ
إِلاَّ رِجَالاً نُّوحِيۤ إِلَيْهِمْ فَاسْئَلُوۤاْ أَهْلَ ٱلذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لاَ
تَعْلَمُونَ
“আর হে মুহাম্মাদ! তোমার পূর্বেও
আমি মানুষদেরকেই রাসূল বানিয়ে পাঠিয়েছিলাম, যাদের কাছে আমি
অহী পাঠাতাম। তোমরা যদি
না জেনে থাকো তাহলে আহলে কিতাবদেরকে জিজ্ঞেস করো।” (আল আম্বিয়াঃ ০৭)
وَمَآ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ
مِن رَّسُولٍ وَلاَ نَبِيٍّ إِلاَّ إِذَا تَمَنَّىٰ أَلْقَى ٱلشَّيْطَانُ فِيۤ أُمْنِيَّتِهِ
فَيَنسَخُ ٱللَّهُ مَا يُلْقِي ٱلشَّيْطَانُ ثُمَّ يُحْكِمُ ٱللَّهُ آيَاتِهِ وَٱللَّهُ
عَلِيمٌ حَكِيمٌ
“আর হে মুহাম্মাদ! তোমার পূর্বে
আমি এমন কোনো রাসূল ও নবী পাঠাইনি (যার সাথে
এমন ঘটনা ঘটেনি যে) যখন সে তামান্না করেছে। শয়তান তার তামান্নায় বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে। এভাবে শয়তান
যাকিছু বিঘ্ন সৃষ্টি করে আল্লাহ তা দূর করে দেন এবং নিজের আয়াত সমূহকে
সুপ্রতিষ্ঠিত করেন, আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়।” (আল হাজ্জঃ ৫২)
ثُمَّ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا
تَتْرَا كُلَّ مَا جَآءَ أُمَّةً رَّسُولُهَا كَذَّبُوهُ فَأَتْبَعْنَا بَعْضَهُمْ
بَعْضاً وَجَعَلْنَاهُمْ أَحَادِيثَ فَبُعْداً لِّقَوْمٍ لاَّ يُؤْمِنُونَ
“তারপর আমি একের পর এক নিজের
রাসূল পাঠিয়েছি। যে জাতির কাছেই তার রাসূল এসেছে সে-ই তার
প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে,আর আমি একের পর এক জাতিকে ধ্বংস করে গেছি
এমনকি তাদেরকে স্রেফ কাহিনীই বানিয়ে ছেড়েছি, --অভিসম্পাত
তাদের প্রতি যারা ঈমান আনে না।” (আল মু’মিনুনঃ
৪৪)
وَمَآ أَرْسَلْنَا قَبْلَكَ
مِنَ ٱلْمُرْسَلِينَ إِلاَّ إِنَّهُمْ لَيَأْكُلُونَ ٱلطَّعَامَ وَيَمْشُونَ فِي ٱلأَسْوَاقِ
وَجَعَلْنَا بَعْضَكُمْ لِبَعْضٍ فِتْنَةً أَتَصْبِرُونَ وَكَانَ رَبُّكَ بَصِيراً
“হে মুহাম্মাদ! তোমার পূর্বে যে
রাসূলই আমি পাঠিয়েছি তারা সবাই আহার করতো ও বাজারে চলাফেরা করতো। আসলে আমি তোমাদের পরস্পরকে পরস্পরের জন্য পরীক্ষার
মাধ্যমে পরিণত করেছি। তোমরা
কি সবর করবে? তোমাদের রব সবকিছু দেখেন।” (আল ফুরক্বানঃ ২০)
قَالَ إِنَّ رَسُولَكُمُ ٱلَّذِيۤ
أُرْسِلَ إِلَيْكُمْ لَمَجْنُونٌ
“ফেরাউন (উপস্থিত লোকদের) বললো, “তোমাদের কাছে প্রেরিত তোমাদের এ রাসূল সাহেবটি তো দেখছি একেবারেই পাগল।” (আশ শুআ’রাঃ ২৭)
I believe that if a man like
Prophet Muhammad was to assume the dictatorship of modern world. Would success
in solving it's problem in a way that would being in men needed peace and
happiness.
“আমার বিশ্বাস নবী মুহাম্মদের
মত কোন ব্যক্তি যদি বর্তমান বিশ্বের একনায়কের পদে আসীন হতেন, তাহলে তিনিই বর্তমান বিশ্বের
সমস্যাবলীর এমন সমাধান দিতে পারতেন। যার ফলে
সমস্ত বিশ্বে কাংখিত শান্তি ও সুখ নেমে আসত।” (জর্জ
বার্ণাডশ)
আমার লিখা অন্যান্য আর্টিক্যাল সমূহ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
0 Comments