আলোচনা নোট - দাওয়াতে দ্বীন – মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম

দাওয়াত অর্থ কি?
– দাওয়াত (دعوة) আরবী শব্দ। এটি আমাদের অতি পরিচিত একটি শব্দ।
– দাওয়াত মানে ডাক দেয়া।
– আমরা মহব্বতের মানুষকে-যাদের আমরা ভালবাসি, তাদেরকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়াই। প্রিয় মানুষের জন্য ভাল ভাল খাবারের আয়োজন করি। যাকে ভালবাসি, তার সাথে সুখ-দূঃখ শেয়ার করি। ভাল জিনিসটা সবচেয়ে কাছের মানুষকে দান করি।
– “মহব্বতের মানুষকে ভাল জিনিসের প্রতি আহবান (দাওয়াত) করা, নিজ যোগ্যতা মতো করে বুঝানো, জানা বিষয় তার সাথে শেয়ার করা, নিজের পছন্দনীয় পথে তাকে নিয়ে আসার চেষ্টা করা-ইত্যাদি কাজের নাম-দাওয়াত।”
– “ভাল কাজের দিকে আহবান আর খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখার প্রচেষ্টা”র নাম দাওয়াত ইলাল্লাহ।
কুরআনে দাওয়াত শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে কমপক্ষে ১১টি অর্থে। যেমনঃ-
  1. দাওয়াত-ডাকা বা আহবান করা।
  2. তাবলীগ-পৌছিয়ে দেয়া।
  3. শাহাদাত-সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দান করা।
  4. বাশারা-সৎ কর্মের জন্য সু সংবাদ দান করা
  5. নাজারা-অপকর্মকারীদের জন্য শাস্তির সংবাদ দান করা।
  6. নাসাহা-কল্যাণ কামনা করা।
  7. ওয়াসা-সত্যের প্রতি ডাকা বা আহবান করা।
  8. জাহাদ-দ্বীন কায়েমের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা।
  9. আমর বিল মারূফ-সত্য ও ন্যায়ের নির্দেশ দান করা।
  10. নাহি আনিল মুনকার-অন্যায় অপকর্ম থেকে ফিরিয়ে রাখা।
  11. তাগাইয়্যির-অনৈতিক কর্মকে শক্তি দিয়ে পরিবর্তন করে দেয়া।
 মানুষের ফিতরাত-ভাল জিনিসের প্রতি উৎসাহিত করা, আর খারাপ জিনিস থেকে নিষেধ করা। যেমনঃ কোন রেস্টুরেন্টে খেলাম, খুব স্বাদ লাগলো। এসেই প্রচার শুরু করলাম-অমুক রেষ্টুরেন্টের খাবার ‘দারুন’। এজন্য রেস্টুরেন্টের মালিক কোন পয়সা দেয়না। কিন্তু আমরা আমাদের ফিতরতের কারণে ভাল জিনিসটার প্রচার করি। ভাল লাগলে প্রচার করা, মন্দ লাগলেও তাও প্রচার করা মানুষের স্বভাব বা ফিতরাত।
– সত্য ও সুন্দরের পথে আমি এসেছি। এই পথটা আমার কাছে ভাল লাগে, এই পথে চলে আমি মজা পাই, এই পথে চলে আমি উপকৃত হয়েছি। অতএব আমার ফিতরত দাবী করছে যে, যা আমার ভাল লেগেছে, যাতে আমি মজা পেয়েছি, যা থেকে আমি উপকৃত হয়েছে-তার কথা আপনজন, বন্ধু-স্বজনকে বলা। এই পথে তাদেরকে নিয়ে আসা। এই বলার কাজ আর নিয়ে আসার চেষ্টা করাই দাওয়াত।
– আমাদের চলার পথ আল্লাহর তৈরী। তাই আমাদের ডাকা হবে-দাওয়াত ইলাল্লাহ।
দ্বীন অর্থ কি?
– الدِّينِ (দ্বীন) আরবী শব্দ। কুরআনে হাকীমে ‘দ্বীন’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ৪টি অর্থে।
– “ইক্বামাতে দ্বীন” বই থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
একঃ প্রতিদান বা বদলা।
[مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ]ঃ “প্রতিদান দিবসের মালিক।” (ফাতিহাঃ ০৪)
[كَلَّا بَلْ تُكَذِّبُونَ بِالدِّينِ]ঃ “না, তা নয়। বরং তোমরা প্রতিদান দিবসকে মিথ্যা মনে কর।” (ইনফিতারঃ ০৯)
দুইঃ আনুগত্যআত্মসমর্পণ।
[أَفَغَيْرَ دِينِ اللّهِ يَبْغُونَ وَلَهُ أَسْلَمَ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ]ঃ “এরা কি আল্লাহর আনুগত্য ছাড়া অন্য কিছু চায়? অথচ আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সবাই তাঁরই নিকট আত্মসমর্পণ করছে।” (আলে ইমরানঃ ৮৩)
[فَاعْبُدِ اللَّهَ مُخْلِصاً لَّهُ الدِّينَ]ঃ “আল্লাহর প্রতি আনুগত্যকে নিরংকুশ (খাস) করে তাঁর দাসত্ব কর।” (যুমারঃ ০২)
[وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لاَ تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ لِلّهِ]ঃ “তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক, যে পর্যন্ত ফিতনা শেষ না হয় এবং আনুগত্য শুধু আল্লাহরই বাকী থাকে।” (বাকারাঃ ১৯৩)
তিনঃ আনুগত্যের বিধান বা পদ্ধতি।
[إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللّهِ الإِسْلاَمُ]ঃ “নিশ্চয় আল্লাহর নিকট একমাত্র ইসলামই আনুগত্যের বিধান (জীবন বিধান)।” (আলে ইমরানঃ ১৯)
[وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الإِسْلاَمِ دِيناً فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ]ঃ “যে ইসলাম ছাড়া অন্য প্রকার আনুগত্যের বিধান চায়, তার থেকে সেটা গ্রহণ করা হবে না।” (আলে ইমরানঃ ৮৫)
[ شَرَعَ لَكُم مِّنَ الدِّينِ مَا وَصَّى بِهِ نُوحاً وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى وَعِيسَى أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ]ঃ “তোমাদের জন্য আনুগত্যের বিধান ধার্য করা হয়েছে-যা নূহ আ.কেও নির্দেশ করা হয়েছিল এবং যা তোমার নিকট অহী করেছি এবং যা ইব্রাহীম আ., মূসা আ. ও ঈসা আ.কেও নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তোমরা দ্বীনকে কায়েম কর এবং এ বিষয়ে মতবিরোধ করো না।” (আশ শূরাঃ ১৩)
[هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ]ঃ “তিনি সে সত্ত্বা, যিনি তাঁর রাসূলকে হেদায়াত ও আনুগত্যের একমাত্র সত্য বিধান সহ পাঠিয়েছেন যেন (রাসূল) তাকে (বিধান) আর সব রকমের আনুগত্যের বিধানের উপর বিজয়ী করেন।” (সাফঃ ০৯)
[الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِيناً]ঃ “আজ তোমাদের আনুগত্যের বিধান (জীবন বিধান) পূর্ণ করে দিলাম।” (মায়িদাঃ ০৩)
চারঃ আইনরাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা।
[وَقَالَ فِرْعَوْنُ ذَرُونِي أَقْتُلْ مُوسَى وَلْيَدْعُ رَبَّهُ إِنِّي أَخَافُ أَن يُبَدِّلَ دِينَكُمْ أَوْ أَن يُظْهِرَ فِي الْأَرْضِ الْفَسَادَ]ঃ “ফিরাউন বলল, আমাকে ছাড়, আমি মূসাকে হত্যা করবো। সে তার রবকে ডেকে দেখুক। আমি আশংকা করি যে, সে তোমাদের আইন ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা বদলিয়ে দেবে অথবা (অন্ততপক্ষে) দেশে বিশৃংখলা সৃষ্টি করবে।” (মুমিনঃ ২৬)
[مَا كَانَ لِيَأْخُذَ أَخَاهُ فِي دِينِ الْمَلِكِ]ঃ বাদশার আইনে অন্য কাউকে ধরা যায় না। অর্থাৎ যে চুরি করেছে তাকেই ধরতে হবে। দেশের আইনে দোষীর বদলে অন্য কাউকে ধরা যায় না।” (ইউসুফঃ ৭৬)
[وَلَا تَأْخُذْكُم بِهِمَا رَأْفَةٌ فِي دِينِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ]ঃ “যদি তোমরা মুমিন হও তাহলে (যিনার শাস্তি দেবার সময়) আল্লাহর আইনের ব্যাপারে তোমাদের মনে তাদের প্রতি যেন দয়া না জাগে।” (নূরঃ ০২)
[قَاتِلُواْ الَّذِينَ لاَ يُؤْمِنُونَ بِاللّهِ وَلاَ بِالْيَوْمِ الآخِرِ وَلاَ يُحَرِّمُونَ مَا حَرَّمَ اللّهُ وَرَسُولُهُ وَلاَ يَدِينُونَ دِينَ الْحَقِّ]ঃ “তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করা যারা আল্লাহ ও আখেরাতের দিনের প্রতি ঈমান আনে না এবং আল্লাহ যা হারাম করেছেন তাকে হারাম গন্য করে না এবং আল্লাহর দ্বীনের আনুগত্য করে না।” (তাওবাঃ ২৯)
দাওয়াতে দ্বীনের শরয়ী মর্যাদা কি?
– ইসলামী শরীয়ার উৎস ৪টি। যথাঃ ১.কুরআন। ২.সুন্ন্াহ্। ৩.ইজমা। ৪.কিয়াস।
১. কুরআনঃ 
– দাওয়াত দানের নির্দেশ দিচ্ছেন আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কুরআনেঃ
]ادْعُ إِلِى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ [
“ডাক তোমার রবের পথের দিকে, হিকমাত ও উত্তম ওয়াজের মাধ্যমে। আর লোকদের সাথে পরস্পর বিতর্ক কর উত্তম পন্থায়। (নাহলঃ ১২৫)
২. সুন্নাহ্ঃ 
– রাসূলের কাজ (فعل) উম্মতের জন্য শাফেয়ী মাযহাবে ফরজ। রাসুলের নির্দেশ (امر) উম্মতের জন্য হানাফী মাযহাবে ফরজ।
– রাসূলের কাজ (فعل) ঃ
]الَّذِينَ يَتَّبِعُونَ الرَّسُولَ النَّبِيَّ الأُمِّيَّ الَّذِي يَجِدُونَهُ مَكْتُوباً عِندَهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَالإِنْجِيلِ يَأْمُرُهُم بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَاهُمْ عَنِ الْمُنكَرِ[
“যারা অনুসরণ করে বার্তাবাহক উম্মি নবীর, যাঁর উল্লেখ তারা তাদের নিকট রক্ষিত তাওরাত ও ইনজীলে লিপিবদ্ধ পায়, যিনি তাদেরকে সৎকাজের আদেশ দেন এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করেন।” (আরাফঃ ১৫৭)
– রাসুলের নির্দেশ (امر) ঃ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو,أَنَّ النَّبِيَّ(صـ)قَالَ: بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً
“আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী (সাঃ) বলেছেন, একটি আয়াত হলেও তা আমার পক্ষ থেকে পৌছিয়ে দাও।”(বুখারী)
عن ابن مسعودٍ (رضـ) قال سمعت رسول الله (صـ) يقول: نضَّر اللهُ إمرَأً سمع منا شيئاً فبلَّغه كما سمعه فرُبَّ مبلّغٍ أوْعَى له مِنْ ساَمِعْ
“ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সা. কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ সেই ব্যক্তির মুখ উজ্জল করুন, যে আমার হাদীস শুনেছে এবং যেভাবে শুনেছে সেভাবেই তা অন্যের নিকট পৌছিয়েছে। কেননা অনেক সময় যাকে পৌছানো হয়, সে ব্যক্তি শ্রোতা অপেক্ষা অধিক রক্ষণাবেক্ষণকারী বা জ্ঞানী হয়ে থাকে।”(তিরমিযী)
– হেরা গুহায় اقرأ পাওয়ার পর দাবী ছিল নবী সা. দাওয়াতী কাজ করবেন। কিন্তু তিনি কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লেন। আল্লাহ বললেনঃ [قُمْ فَأَنذِرْ][يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ] “হে কম্বল আচ্ছাদনকারী। উঠো। এবং সতর্ক করো।” (মুদ্দাস্সির ঃ ১-২)
– রাসূলের জিন্দেগীর পুরোটাই ছিল দাওয়াতে দ্বীন। কুরআনে নবীর পরিচয় দেয়া হয়েছে এভাবেÑ
]يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِداً وَمُبَشِّراً وَنَذِيراً[ ]وَدَاعِياً إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجاً مُّنِيراً [
“হে নবী ! আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে এবং সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে। আর আল্লাহর অনুমতিক্রমে তার দিকে দাওয়াতকারী রূপে ও উজ্জল প্রদীপরূপে।”(আহযাবঃ ৪৫)
– মেরাজে নামাজ ফরজের আগে ১২ বছর দাওয়াতে দ্বীনেরই কাজ করা হতো।
৩. ইজমাঃ 
– সাহাবীরা বুঝেছেনঃ ইসলাম এমন এক জিনিসের নাম, যা গ্রহণ করার দাবী হল, এর উপকারিতা অন্যের কাছে উপস্থাপন করে তাকে এই পথে নিয়ে আসা।
– সকল সাহাবীর কবর মক্কা অথবা মদীনায় নাই কেন? কারণ ‘দাওয়াত’ পৌছানোর জন্য তারা দূরে-বহুদূরে চলে গেয়েছিলেন।
– বাহরাইনে ইসলাম পৌছে আবু বকরের সময়। কিভাবে পৌছলো? দাওয়াতের কারণে।
৪. কিয়াসঃ
– বিজ্ঞাপন প্রচার করা। কারণ প্রচারেই প্রসার। যেমনঃ
# জিনিস যেইটা ভাল, দাম তার একটু বেশীই।
# রবি-জ্বলে উঠুন আপন শক্তিতে।
# বাংলালিংক-যেখানেই দিন বদলের চেষ্টা, সেখানেই বাংলা লিংক।
দাওয়াত কেন দেবেন?
১. দাওয়াত দেয়াঃ আল্লাহ্র নির্দেশ পালনের জন্য।
]ادْعُ إِلِى سَبِيلِ رَبِّكَ [
“তোমার রবের পথের দিকে ডাকো।” (নাহলঃ ১২৫)
]يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ [
“হে রাসূল। আপনার উপর আপনার রবের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ কিতাবের তাবলীগ করুন। এ দাওয়াতী কাজ যদি না করেন, তবে রেসালাতের দায়িত্ব পালন করা হয়নি।” (মায়িদাহঃ ৬৭)
]فَلِذَلِكَ فَادْعُ وَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءهُمْ[
“তুমি এখন সে দ্বীনের দিকে দাওয়াত দাও। আর তোমাকে যেমন হুকুম করা হয়েছে, তার উপর মজবুতির সাথে থাকো। আর এই লোকদের ইচ্ছা-বাসনা অনুসরণ করোনা।” (আশ শুরাঃ ১৫)
২. দাওয়াত দেয়াঃ রাসূল সা. এর নির্দেশ পালনের জন্য।
عن أبي سعيد الخدري (رضــ) قال: سمعت رسول الله (صـــ) يقول: ্রمَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَراً فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ، فَإنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وَذَلِكَ أَضْعَفُ الإيمَانِগ্ধ.
“হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে বর্ণিত। নবী করীম সা. বলেছেন, তোমাদের কেহ যদি কোন অন্যায় কাজ অনুষ্ঠিত হতে দেখে, তাহলে সে যেন তা তার হাত দিয়ে ঠেকায়। আর যদি তার সে শক্তি না থাকে, তাহলে যেন মৌখিক নিষেধ করে। যদি সে মৌখিক বারণ করতে অপারগ হয়, তাহলে যেন অন্তরে উক্ত কাজকে ঘৃণা করে। আর অন্তরে ঘৃণা পোষণ করাটা হলো ঈমানের দূর্বলতম লক্ষণ।” (মুসলিম)
لِيُبَلِّغِ الشَّاهِدُ الغَائِبَ، فَإنَّ الشَّاهِدَ عَسَى أَنْ يُبَلِّغَ مَنْ هُوَ أَوْعَى لَهُ مِنْهُ
বিদায় হজ্জে নবী সা. বলেছিলেনঃ “হে উপস্থিত সাহাবীরা! তোমরা আমার অনুপস্থিত উম্মতের নিকট আমার পয়গাম পৌঁছে দেবে।” (বুখারী-মুসলিম)
৩. দাওয়াত দেয়াঃ খেলাফতের দায়িত্ব পালনের জন্য।
]وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلاً مِّمَّن دَعَا إِلَى اللَّهِ [
“এর চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে, যে আল্লাহর দিকে ডাকে।” (ফুস্সিলাতঃ ৩৩)
৪. দাওয়াত দেয়াঃ ব্যক্তিগত ভাবে সকলের দায়িত্ব।
]يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ [ ]قُمْ فَأَنذِرْ[ ]وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ [
“হে আবৃত শয্যা গ্রহণকারী। উঠ সাবধান কর, আর তোমার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষনা কর।” (মুদ্দাস্সিরঃ ১,২,৩)
৫. দাওয়াত দেয়াঃ দলের দায়িত্ব।
]وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ[
“তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল অবশ্যই থাকবে, যারা মানব জাতিকে কল্যাণের দিকে দাওয়াত করবে, সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজে বাঁধা দেবে, তারাই সফলকাম।” (আলে ইমরানঃ ১০৪)
৬. দাওয়াত দেয়াঃ রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
]الَّذِينَ إِن مَّكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنكَرِ[
“এরা তো ঐসব লোক, যাদেরকে আমি দুনিয়ার ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব দান করলে তারা নামাজ কায়েম করে, যাকাত আদায় করে এবং সৎ কাজের আদেশ দেয় ও অসৎকাজে বাঁধা দান করে।”(হজ্জঃ ৪১)
৭. দাওয়াত দেয়াঃ আখেরাতের মুক্তির জন্য।
]يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَى تِجَارَةٍ تُنجِيكُم مِّنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ[ ] تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ [
“হে ঈমানদারগন! আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি ব্যবসায়ের সন্ধান দেবো, যা তোমাদেরকে কঠিন আযাব থেকে মুক্তি দেবে? তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন এবং আল্লাহর পথে অর্থ-সম্পদ ও জান-প্রাণ দিয়ে জিহাদ করো। এটাই তোমাদের জন্য অতিব কল্যাণকর যদি তোমরা তা জান।”(সাফঃ ১০-১১)
৮. দাওয়াত দেয়াঃ মুসলিম উম্মার মিশন।
]كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللّهِ [
“তোমরা সেই সর্বোত্তম জাতি, মানুষের কল্যাণের জন্য (কাজ করতে) যাদের বাঁছাই করা হয়েছে। (তোমাদের কাজ হল) তোমরা সৎ কাজের আদেশ দেবে আর অসৎ কাজ থেকে (মানুষকে) বিরত রাখবে। আর ঈমান রাখবে আল্লাহর প্রতি। (আলে ইমরানঃ ১১০)
]يُؤْمِنُونَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَأُوْلَـئِكَ مِنَ الصَّالِحِينَ[
“তারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে এবং তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করে। আর তারা কল্যাণকর কাজে দ্রুত ধাবিত হয় এবং তারা নেককারদের অন্তর্ভূক্ত।” (আলে ইমরানঃ ১১৪)
]وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاء بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلاَةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللّهَ وَرَسُولَهُ أُوْلَـئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللّهُ إِنَّ اللّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ[
“আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা একে অপরের বন্ধু, তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে,আর তারা সালাত কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। এদেরকে আল্লাহ শীঘ্রই দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।” (তাওবাঃ ৭১)
৯. দাওয়াত দেয়াঃ সত্যের সাক্ষী হওয়ার জন্য।
] يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُونُواْ قَوَّامِينَ لِلّهِ شُهَدَاء بِالْقِسْطِ [
“হে ঈমানদারগন! তোমরা আল্লাহর জন্য সত্যের সাক্ষী হয়ে দাড়াও।” (আল-মায়েদাঃ ৮)
]وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن كَتَمَ شَهَادَةً عِندَهُ مِنَ اللّهِ[
“যার কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন সাক্ষ্য বর্তমান রয়েছে, সে যদি তা গোপন করে তাহলে তার চাইতে বড় জালেম আর কে হতে পারে?” (আল-বাকারাঃ ১৪০)
] وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطاً لِّتَكُونُواْ شُهَدَاء عَلَى النَّاسِ وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيداً [
“এভাবে আমি তোমাদের একটি উত্তম জাতি রূপে গড়ে তুলেছি-যাতে করে তোমরা গোটা মানব জাতির জন্য সত্যের সাক্ষ্যদাতা হতে পার এবং রাসূল সা. যেন তোমাদের জন্য সাক্ষ্য বা নমূনা হন।”(বাকারাঃ ১৪৩)
১০. দাওয়াত দেয়াঃ মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে।
عن حذيفة َابنِ الْيَمَانِ قال قال رسولُ اللهِ (صـ) لَتَأْمُرُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ وََلتَنْهَوُنَّ عَنِ الْمُنْكَرِ وَلَتَحَاضُّنَّ على الخَيرِ اَوْ لَيَسْحضتِنَّكُمُ اللهُ جَمِيْعًا بِعَذَابٍ اَوْ لَيُؤَمِّرَنَّ عليكم شَرَارَكُمْ ثُمَّ يَدْعُوْا خِيَارُكُمْ فَلاَيَسْتَجَابُ لَهُـــمْ
“হুযাইফা ইবনে ইয়ামান রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেনঃ তোমরা অবশ্যই মারূফ এর আদেশ করবে, মুনকার হতে নিষেধ করবে এবং কল্যাণময় কাজ করার জন্য উৎসাহিত করবে। অন্যথায় আল্লাহ্ যে কোন আজাবের মাধ্যমে তোমাদেরকে ধ্বংস করে দেবেন অথবা তোমাদের মধ্য থেকে সর্বধিক পাপাচারী, অন্যায়কারী ও জালিম লোকদেরকে তোমাদের শাসনকর্তা নিযুক্ত করে দেবেন। তখন তোমাদের সৎ লোকেরা মুক্তি লাভের জন্য দু’আ করবে; কিন্তু তা কবুল করা হবে না।” (তিরমিযি)
১১. দাওয়াত দেয়াঃ খারাপ কাজ থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য।
]أَتَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنسَوْنَ أَنفُسَكُمْ وَأَنتُمْ تَتْلُونَ الْكِتَابَ أَفَلاَ تَعْقِلُونَ[
“তোমরা মানুষের নিকট ভাল কাজের আদেশ কর অথচ নিজের জীবন সংশোধনের ব্যাপারে উদাসীন থাক। অথচ তোমরা আল্লাহর কিতাব পড়ছ। তোমরা কি ভাবনা।” (বাকারাঃ ৪৫)
– দাওয়াত দেয়া-মানে নিজের চারপাশে একাধিক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা।
১২. দাওয়াত দেয়াঃ নিজ আমলের ব্যালেন্স বাড়ানোর জন্য।
– নিজের আমল নামার জন্য একেকটি ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্ট ওপেন করা।
عن ابن مسعودٍ (رضـ) قال سمعت رسول الله (صـ) يقول: نضَّر اللهُ إمرَأً سمع منا شيئاً فبلَّغه كما سمعه فرُبَّ مبلّغٍ أوْعَى له مِنْ ساَمِعْ
“ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সা. কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ সেই ব্যক্তির মুখ উজ্জল করুন, যে আমার থেকে কিছু শুনলো এবং যেভাবে শুনলো সেভাবেই তা অন্যের নিকট পৌছালো। কেননা অনেক সময় মুবাল্লিগের চেয়ে যাকে পৌছানো হয়, সে ব্যক্তি জ্ঞানী হয়ে থাকে।”(তিরমিযী)
عَنْ أَبِي مَسْعُودٍ الْأَنْصَارِيِّ قَالَ:جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ (صَـ) فَقَالَ: إِنِّي أُبْدِعَ بِي فَاحْمِلْنِي,فَقَالَ:مَا عِنْدِي, فَقَالَ رَجُلٌ:يَا رَسُولَ اللَّهِ,أَنَا أَدُلُّهُ عَلَى مَنْ يَحْمِلُهُ,فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ (صَـ):مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ, أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ (صـ) قَالَ:مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى, كَانَ لَهُ مِنْ الْأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ, لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا, وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلَالَةٍ, كَانَ عَلَيْهِ مِنْ الْإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ, لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا
১৩. দাওয়াত দেয়াঃ সংগঠনে প্রকৃত অবস্থান তৈরীর জন্য।
– কামান্ডার হিসাবে অধীনস্ত সৈনিক তৈরী করা। যেমনঃ কন্সটেবল, হাবিলদার, জাবত্ব।
দাওয়াত কি দেবেন?
– নবী-রাসূলরা যে দাওয়াত দিয়েছেন, তাই দাওয়াতের বিষয়। যেমনঃ
১. নূহ আ. এর দাওয়াতঃ
]لَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحاً إِلَى قَوْمِهِ فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُواْ اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـهٍ غَيْرُهُ إِنِّيَ أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ[
“আমি নূহ (আঃ) কে তাঁর কাওমের নিকট পাঠিয়েছিলাম। তিনি তারঁ কাওমকে ডাক দিয়ে বললেন, হে আমার কওম! তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কর-আল্লাহ্ ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ বা প্রভূ নেই।”(আরাফঃ ৫৯)
]إِنَّا أَرْسَلْنَا نُوحاً إِلَى قَوْمِهِ أَنْ أَنذِرْ قَوْمَكَ مِن قَبْلِ أَن يَأْتِيَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ [ ]قَالَ يَا قَوْمِ إِنِّي لَكُمْ نَذِيرٌ مُّبِينٌ[. ]أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاتَّقُوهُ وَأَطِيعُونِ [
“আমি নূহকে তার জাতির কাছে পাঠিয়েছিলাম (এ নির্দেশ দিয়ে) যে, একটি কষ্টদায়ক আযাব আসার আগেই তুমি তাদেরকে সাবধান করে দাও। সে বললো, হে আমার জাতি, আমি তোমাদের জন্য একজন সতর্ককারী (বার্তাবাহক, আমি তোমাদের জানিয়ে দিচ্ছি) যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তাঁকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।” (নূহঃ ১-৩)
২. হুদ আ. এর দাওয়াতঃ
]وَإِلَى عَادٍ أَخَاهُمْ هُوداً قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُواْ اللّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـهٍ غَيْرُهُ أَفَلاَ تَتَّقُونَ[
“এবং আদ জাতির প্রতি আমি তাদের ভাই হুদ (আঃ) কে পাঠিয়েছিলাম। তিনি বললেন, হে আমার দেশবাসী! তোমরা আল্লাহ্র দাসত্ব কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন ইলাহ নেই।”(আরাফঃ ৬৫)
৩. সালেহ আ. এর দাওয়াতঃ
]وَإِلَى ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحاً قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُواْ اللّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـهٍ غَيْرُهُ[
“এবং ছামুদ জাতির প্রতি তাদের ভাই ছালেহ আ. কে পাঠিয়েছিলাম। তিনি তার দেশবাসীকে ডাক দিয়ে বললেন, হে আমার কওমের লোকেরা ! তোমরা আল্লাহ্র দাসত্ব কবুল কর। তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নাই।”(আরাফঃ ৭৩)
৪. শুয়াইর আ. এর দাওয়াতঃ
]وَإِلَى مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْباً قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُواْ اللّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـهٍ غَيْرُهُ[
“এবং মাদইয়ান বাসীদের প্রতি তাদেরই ভাই শোয়াইর আ. কে পাঠিয়েছিলাম। তিনি তার কওমকে ডাক দিয়ে বললেন, হে আমার কওম! তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কবুল কর। তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নাই।”(আরাফঃ ৮৫)
৪. মুসা আ. এর দাওয়াতঃ
]وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مُوسَى بِآيَاتِنَا أَنْ أَخْرِجْ قَوْمَكَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ[
“আমি তো মুসা আ. কেও স্বীয় নিদর্শনাদিসহ পাঠিয়েছিলাম। তাকেও নির্দেশ দিয়েছিলাম যে, তুমি নিজের জাতির লোকদেরকে অন্ধকার হতে বের করে আলোর দিকে নিয়ে এসো।”(ইব্রাহীমঃ ০৫)
৫. মুহাম্মদ সা. এর দাওয়াতঃ
أيها الناس قولوا لااله الا الله تفلحوا ..
“হে মানব জাতি তোমরা ঘোষনা কর আল্লাহ ছাড়া সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী আর কেউ নেই-তাহলে তোমরা সফল হবে।”( আল হাদীস)
]قُلْ هَـذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَاْ وَمَنِ اتَّبَعَنِي[
“হে নবী! তুমি তাদের সুস্পষ্ট বলে দাও যে, এটাই আমার একমাত্র পথ, যে পথে আমি আল্লাহ্র দিকে আহবান জানাই প্রমানের উপর কায়েম থেকে আমি ও আমার সংগী সাথীরা।”(ইউসুফঃ ১০৮)
]مَا قُلْتُ لَهُمْ إِلاَّ مَا أَمَرْتَنِي بِهِ أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمْ[
“আপনি যা হুকুম দিয়েছিলেন, তার বাইরে আমি তাদেরকে আর কিছুই বলিনি। তা হলোঃ আল্লাহর বন্দেগী করো, যিনি আমারও রব এবং তোমাদেরও।” (আল মায়িদাহঃ ১১৭)
]وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ[
“প্রত্যেক জাতির মধ্যে আমি একজন রাসূল পাঠিয়েছি এবং তার মাধ্যমে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি যে, আল্লাহর বন্দেগী করো এবং তাগুতের বন্দেগী পরিহার করো।” (আন নাহলঃ ৩৬)
]فَأَرْسَلْنَا فِيهِمْ رَسُولاً مِنْهُمْ أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ أَفَلَا تَتَّقُونَ[
“তারপর তাদের মধ্যে স্বয়ং তাদের সম্প্রদায়ের একজন রাসূল পাঠালাম যে তাদেরকে দাওয়াত দিল এই মর্মে যে,) আল্লাহর বন্দেগী করো, তোমাদের জন্য তিনি ছাড়া আর কোন মাবূদ নাই, তোমরা কি ভয় করো না?: (আল মুমিনুনঃ ৩২)
]وَأَنْ اعْبُدُونِي هَذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيمٌ [
“এবং আমারই বন্দেগী করো, এটিই সরল-সঠিক পথ।” (ইয়াসিনঃ ৬১)
﴿وَادْعُ إِلَى رَبِّكَ وَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِينَ﴾
“তোমার রবের দিকে দাওয়াত দাও এবং কখনো মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত হয়ো না।”(কাসাসঃ ৮৭)
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ, أَنَّ مُعَاذًا قَالَ: ((بَعَثَنِي رَسُولُ اللَّهِ (صَـ) قَالَ: إِنَّكَ تَأْتِي قَوْمًا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ, فَادْعُهُمْ إِلَى شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ, فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ, فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ, فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ, فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ فَتُرَدُّ فِي فُقَرَائِهِمْ, فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ, فَإِيَّاكَ وَكَرَائِمَ أَمْوَالِهِمْ, وَاتَّقِ دَعْوَةَ الْمَظْلُومِ, فَإِنَّهُ لَيْسَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ اللَّهِ حِجَابٌ))
আমাদের সামগ্রিক দাওয়াতঃ 
১. কালেমার দাওয়াত।
২. খেলাফতের দাওয়াত।
৩. জাহান্নাম থেকে মুক্তির দাওয়াত।
দাওয়াত কাদের কাছে দেবেন?
১.কাফের।
২.মুশরেক।
৩. মুনাফেক।
৪.জাহেল।
আমাদের দাওয়াত ঐ জাহেল সম্প্রদায়ের প্রতি যারাঃ
ক. চিন্তায় বিভ্রান্ত মুসলমানদের কাছে।
খ. ঘুমন্ত মুসলমানেদের কাছে।
গ. কর্মে বিচ্যুত মুসলমানদের কাছে।
ঘ. শোষক সম্প্রদায়ের কাছে।
ঙ. নিপীড়িত আদম সন্তানদের কাছে।
দাওয়াত কিভাবে দেবেন?
– আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেনঃ
] ادْعُ إِلِى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ[
“ডাক তোমার রবের পথের দিকে, হিকমাত ও উত্তম নসীহতের সাথে। আর লোকদের সাথে পরস্পর বিতর্ক কর উত্তম পন্থায়। (নাহলঃ ১২৫)
তাই দাওয়াত দিতে হবেঃ
১. হিকমাতের মাধ্যমে।
২. মৌখিক বক্তব্যের মাধ্যমে।
৩. চরিত্রের মাধ্যমে।
হিকমাতের মাধ্যমে দাওয়াতঃ
ক. সম্প্রীতি স্থাপন।
খ.শুভাকাংখীর ভূমিকা পালন।
গ. উদাহরণের মাধ্যমে ভূল ধারণার অপনোদন।
ঘ. সমস্যা মোকাবেলায় সহযোগিতা।
ঙ. আপ্যায়ন।
চ. উর্ধ্বতন দায়িত্বশীলদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া।
ছ. পরিবেশ প্রদান।
মৌখিক বক্তব্যের মাধ্যমে দাওয়াতঃ
ক. ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার।
খ. প্রোগ্রামে নিয়ে আসা।
গ. বই বিলি এবং এ সুযোগে বইয়ের বিষয়বস্তুর আলোকে বক্তব্য উপস্থাপন করে ধারণা পরিষ্কার করা।
ঘ. অডিও, ভিডিও, সিডি ও ভিসিডি বিতরণ।
ঙ. ব্যক্তির প্রতি আকৃষ্ট না করে রাসূল সা.এ আদর্শের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি।
চরিত্রের মাধ্যমে দাওয়াতঃ
ক. উত্তম ব্যবহার।
খ. অপসংস্কৃতি থেকে দূরে থাকা (অশ্লীল ফিল্ম ও ম্যাগাজিন ও ওয়েব সাইট পরিহার)।
]وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ [
“এবং যারা তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।” (আল মুমিনুনঃ ০৫)
গ. নামাজ (রূহ ওয়ালা নামাজ-নিয়মিত জামাতের সাথে)।
]إِنَّنِي أَنَا اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدْنِي وَأَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي [
“অবশ্য অবশ্যই আমি আল্লাহ্, আমি ছাড়া আর কোন ইলাাহ নেই, একমাত্র আমার ইবাদত কর, নামাজ কায়েম কর আমার জিকিরের জন্য। (তা-হাঃ ১৪)
ঘ. ঋণ না নেয়া।
]وَالَّذِينَ إِذَا أَنفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَلِكَ قَوَاماً [
“তারা খরচ করার সময় বেহুদাভাবে অপব্যয় করে না। আবার কৃপনতাও করে না। বরং দু’টোর মাঝখানে মধ্যম নীতি অবলম্বন করে চলে।” (আল ফুরকানঃ ৬৭)
ঙ. পারত পক্ষে ঋণ না দেয়ার চেষ্টা করা।
চ. কথা ও কাজের গরমিল পরিহার করা।
]يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ [ ]كَبُرَ مَقْتاً عِندَ اللَّهِ أَن تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُونَ [
“হে মুমিনগন! তোমরা এমন কথা কেন বল যা নিজেরা করোনা? আল্লাহর কাছে এটা অত্যৗল্প অপছন্দনীয় কাজ যে, তোমরা এমন কথা বলো যা করো না।” (আস সাফঃ ২,৩)
ছ. ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা অতি সম্পর্ক না হওয়া।
জ. সমস্যায় পাশে দাড়ানো।
দাওয়াতী কাজ না করার পরিণাম কি?
১. সত্যের সাক্ষ্য গোপন করার অপরাধে জালিম সাব্যস্ত হবেন।
২. ইসলামের চলমান অগ্রযাত্রায় বাাঁধা সৃষ্টি কারী বলে গন্য হবেন।
৩. দুনিয়াতে কাফেররা মুসলমানদের উপর বিজয়ী হবে।
৪. জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর কাজে শামিল না হওয়ায় কঠিন শাস্তি পেতে হবে।
৫. আমল খারাপ হয়ে যাবে (অনেক আলেম আমরা দেখেছি, যারা ঘুষ দেন, যাদের আমল-এমনকি নামাজ পর্যন্ত ঠিক নেই)।
দায়ীর গুণ কি কি হওয়া উচিত?
একদা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এর নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল-“আমি ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ এর কাজ করতে চাই। তিনি তাকে বললেন-“তুমি কি এই কাজের উপযুক্ততা অর্জন করেছো” সে বলল-“আমি তো তাই আশা করি”। তিনি বললেন-“আল্লাহর কিতাবের তিনটি আয়াতের অসম্মান করার আশংকা না থাকলে তুমি একাজে নামতে পার।” সে বলল “এ গুলো কোন কোন আয়াত? আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বললেনঃ [أَتَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنسَوْنَ أَنفُسَكُمْ] (তোমরা কি লোকদের ভালো কাজের কথা বল, অথচ নিজেরা তা ভূলে যাও?) এ উপর কি ভালভাবে আমল করেছো? সে বললো, “না”। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেনঃ [لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ] (তোমরা এমন কথা কেন বল যা নিজেরা করনা?) এর উপর কি ভালোভাবে আমল করেছো? সে বলল, “না” আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বললেনঃ [ وَمَا أُرِيدُ أَنْ أُخَالِفَكُمْ إِلَى مَا أَنْهَاكُمْ عَنْهُ] (আমার ইচ্ছা এটা নয় যে আমি তোমাদেরকে যা নিষেধ করি তা নিজে করবো।) তুমি কি এর উপর ভালোভাবে আমল করেছো? সে বলল, “না”। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, “তাহলে তোমার নিজের উপরেই প্রথমে দাওয়াতের কাজ শুরু কর।”
দায়ীর মাঝে যে সব গুণ থাকা উচিতঃ
১. ধীরতা।
عن أنس (رضـ) قال: بَيْنَمَا نَحْنُ فِي المَسْجِدِ مَعَ رَسُولِ الله (صـ)، إذْ جَاءَ أعْرَابِيٌّ، فَقَامَ يَبُولُ فِي المَسْجِدِ، فَقَالَ أصْحَابُ رَسُولِ الله (صـ):مَهْ مَهْ. قال رَسُولُ الله (صـ):্রلا تُزْرِمُوهُ، دَعُوهُগ্ধ.فَتَرَكُوهُ حَتَّى بَالَ. ثُمَّ إنَّ رَسُولَ الله (صـ) دَعَاهُ فَقَالَ لَهُ: ্রإنَّ هَذِهِ المَسَاجِدَ لا تَصْلُحُ لِشَيْءٍ مِنْ هَذَا البَوْلِ وَلا القَذَرِ، إنَّمَا هِيَ لِذِكْرِ الله عَزَّ وَجَلَّ، وَالصَّلاةِ، وَقِرَاءَةِ القُرْآنِগ্ধ. أوْ كَمَا قال رَسُولُ الله (صـ) قال: فَأمَرَ رَجُلاً مِنَ القَوْمِ، فَجَاءَ بِدَلْوٍ مِنْ مَاءٍ، فَشَنَّهُ عَلَيْهِ. متفق عليه
২. কমকথা।
৩. প্রাঞ্জল।
৪. সদাতৎপর।
৫. স্বচ্ছ জ্ঞান।
৬. দৃঢ় ঈমান।
]إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا [
৭. আন্তরিকতা।
৮. অনুপম আল্লাহ্ ভীতি।
৯. আল্লাহর উপর ভরসা।
]وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ [
“তারা কেবলমাত্র তাদের রবের উপরই তাওয়াক্কুল করে।” (আল আনফালঃ ২)
১০. রাসূল সা. ও সাহাবায়ে কিরামাদের অনুসরণের তীব্র আকাংখা।
১১. সাংগঠনিক দায়িত্ব সর্বদা মনে রাখা।
১২. নির্ভেজাল আনুগত্য।
]إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِينَ إِذَا دُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَن يَقُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا [
“মুমিনদের যখন আল্লাহ্ ও তার রাসূলের পক্ষ থেকে কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য ডাকা হয়, তখন তাদের মুখ থেকে মাত্র এই দু’টি কথা উচ্চারিত হতে পারে বা হওয়া উচিত-তাহলো আমরা এ নির্দেশ মনোযোগ দিয়ে শুনলাম এবং বিনা দ্বিধায় মাথা পেতে নিলাম।” (নূরঃ ৫১)
১৩. সুষ্ঠু পরিচালনা।
১৪. পরিশ্রম প্রিয়তা।
দায়ীর গুনাবলী কিভাবে অর্জন করবেন?
১. কুরআনকে নিবিড় ভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে।
২. সালাত।
৩. সাংগঠনিক কাজ কর্মে সবসময় ব্যস্ত থাকা।
৪. সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সংগ্রামী জীবন গড়ে তুলা।
৫. রাসূল সা.এর মহৎ জীবন সামনে রাখা।
৬. আল্লাহর সাথে সম্পর্ক রাখা।

Post a Comment

0 Comments